আল্লাহর মাস সিরিজ (Nusus)
আল্লাহর মাস সিরিজ
.
প্রথম পর্ব:
.
দ্বিতীয় পর্ব:
.
#আল্লাহর_মাস (প্রথম পর্ব)
‘আল্লাহর মাস’ মুহাররাম শুরু হতে বাকি আছে মাত্র এক দিন অথবা দুই দিন। মুহাররাম হলো, আরবি চন্দ্রবছরের প্রথম মাস। এই মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক বেশি। সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো।
.
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট সংরক্ষিত ফলকে (বছরে) মাসের সংখ্যা বারোটি—আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। সেগুলোর মধ্যে চারটি (মাস) সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান; সুতরাং এর মধ্যে তোমরা (গুনাহ করার মাধ্যমে) নিজেদের প্রতি জুলুম করো না।” [সুরা তাওবাহ, আয়াত: ৩৬]
.
আর সেই চারটি মাস হলো: জিলকদ, জিলহজ, মুহাররাম ও রজব। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৩১৯৭]
.
‘মুহাররাম’ মানে সম্মানিত। মাসটির সম্মানের দিকটির কারণেই এমন নামকরণ হয়েছে।
.
আলিমগণের বড় একটি অংশের মতে, রমাদানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ মাস হলো মুহাররাম। [ইমাম ইবনু রজব, লাত্বাইফুল মা‘আরিফ, পৃষ্ঠা: ৭৯-৮০]
.
সব মাসই আল্লাহর, তবে মুহাররাম মাসকে হাদিসে বিশেষভাবে বলা হয়েছে শাহরুল্লাহ তথা ‘আল্লাহর মাস’। [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৪৫]
.
মূলত মাসটির বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদার কারণেই এই নামে অভিহিত করা হয়েছে। যেভাবে সকল মাসজিদই আল্লাহর ঘর, কিন্তু কা’বা শরিফের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা থাকায় এটিকে বিশেষভাবে বায়তুল্লাহ তথা ‘আল্লাহর ঘর’ বলা হয়। [ইমাম ইবনু রজব, লাত্বাইফুল মা‘আরিফ, পৃষ্ঠা: ৮১-৮২]
.
এই মাসের প্রধান আমল দুইটি: নফল রোজা রাখা ও বেশি বেশি তাওবাহ-ইস্তিগফার পাঠ করা।
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “রমাদানের পর সর্বোত্তম রোজা হলো আল্লাহর মাস মুহাররাম (মাসের রোজা)।” [মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৪৫]
.
সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) সম্মানিত মাসগুলোতে রোজা রাখতেন। [ইমাম ইবনু আবি শাইবাহ, আল-মুসান্নাফ: ৪/২৯২; বর্ণনাটির সনদ সহিহ]
.
ইবনু উসাইমিন (রাহ.) বলেন, অনেক ফকিহ মুহাররামের সারা মাস ধরে রোজা রাখা উত্তম বলেছেন। তাঁরা উপরে বর্ণিত সহিহ মুসলিমের হাদিসটিকে দলিল হিসেবে সামনে এনেছেন। তবে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাররামের সারা মাস রোজা রাখেননি।
.
মুহাররামের প্রথম দশ দিন রোজা রাখা যায়। কারণ, সালাফগণ মুহাররামের প্রথম দশককে মর্যাদাপূর্ণ বলেছেন। তবে, এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ কোনো হাদিস আছে কি না আমাদের জানা নেই। তাছাড়া মুহাররামের প্রথম দশ দিন জিলহজের প্রথম দশক বা রমাদানের শেষ দশকের মত নয়। তাই, মুহাররাম মাসের যে কয় দিন সুবিধা হয়, রোজা রাখা উত্তম। তবে, ১০ তারিখ আশুরার রোজা গুরুত্ব সহকারে রাখা উচিত।
.
মুহাররাম মাসের ১০ তারিখ তথা আশুরার দিনে রোজা রাখার ফজিলত ও গুরুত্ব অনেক বেশি। এ ব্যাপারে বেশ কিছু হাদিস এসেছে। সেটি নিয়ে আলাদা পোস্ট দেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ।
.
তাছাড়া মুহাররাম মাসে তাওবাহ্ ও ইস্তিগফারের আলাদা গুরুত্ব আছে; বিশেষত, আশুরার দিন।
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘...এই মাসে এমন একটি দিন রয়েছে, যেদিন আল্লাহ তা‘আলা একটি সম্প্রদায়ের তাওবাহ কবুল করেছেন। (ভবিষ্যতে) অন্যান্য সম্প্রদায়ের তাওবাহ কবুল করবেন।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৭৪১; ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৩২২; হাদিসটি দুর্বল, তবে বানোয়াট নয়]
.
------------------
#আল্লাহর_মাস (দ্বিতীয় পর্ব)
আলহামদুলিল্লাহ, মুহাররামের চাঁদ ওঠেছে। আজ সন্ধ্যা থেকে ১৪৪৪ হিজরি সাল শুরু হলো। যারা মুহাররাম মাসের ফজিলতপূর্ণ নফল রোজা রাখতে চান, তারা আজ রাতে সাহরি খেয়ে কাল থেকেই রাখতে পারেন।
.
আশুরার রোজা কবে, কীভাবে রাখবেন?
.
❑ আশুরা বলতে কী বোঝায়?
.
আশুরা শব্দটি আরবি ‘আশারাহ’ থেকে এসেছে। এর অর্থ দশ। আশুরা মানে দশম। ইসলামি পরিভাষায় মুহাররাম মাসের ১০ তারিখকে আশুরা বলে।
.
❑ আশুরার রোজার হুকুম:
.
আশুরার রোজা রাখা একটি নফল আমল। এর ফজিলত অনেক, তবে এটি ফরজ নয়।
.
আয়িশা (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথমে আশুরার দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন, পরে যখন রমাদানের রোজা ফরজ করা হলো, তখন যার ইচ্ছা (আশুরার) রোজা রাখতো আর যার ইচ্ছা রাখতো না। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ২০০১]
.
❑ আশুরার রোজার কারণ:
.
ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন—ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখছে। নবিজি বললেন, ‘‘এটি কী?’’ তারা বললো, ‘এটি একটি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা বনি ইসরাইলকে তাদের শত্রুর কবল থেকে বাঁচিয়েছেন। তাই মুসা (আ.) রোজা রেখেছেন।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘মুসার (অনুসরণের) ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার।’’ অতঃপর তিনি রোজা রাখেন এবং অন্যদের রোজা রাখার নির্দেশ দেন।” [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ২০০৪]
.
❑ আশুরার রোজার গুরুত্ব:
.
ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশুরার দিনের রোজার উপর অন্য কোনো দিনের রোজাকে প্রাধান্য দিতে দেখিনি।’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ২০০৬]
.
❑ আশুরার রোজার উপকারিতা:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি—তিনি (এর দ্বারা) পূর্ববর্তী এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।” [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ :১৯৭৬]
.
❑ আশুরার রোজা রাখার সঠিক পদ্ধতি:
.
আশুরার রোজা তিনভাবে রাখা যায়। উত্তম হলো, আশুরার দিন (মুহাররামের ১০ তারিখ) রোজা রাখা এবং আশুরার আগের দিন অথবা পরের দিন আরেকটি রোজা রাখা। তবে, শুধুু মুহাররামের ১০ তারিখ রাখলেও চলবে। এ ব্যাপারে আশুরার আরেকটি পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, ইনশাআল্লাহ। আগামী ৯ই আগস্ট আশুরা। অর্থাৎ ৮ই আগস্ট রাতে সাহরি খেয়ে ৯ই আগস্ট আশুরার রোজা রাখবেন।
.
---------------------
©Nusus
Page link- https://www.facebook.com/FromNusus
.