JustPaste.it

নফসের জিহাদ
-শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

 

 

.

নফসের জিহাদ (১ম পর্ব)
-শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

.
আল্লাহ কুরআনে বলেন:
وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَن َهْدِي َن َّهُمْ سُب ُلَنَا   ۚ وَإِ َّ ن اللَّ هَ لَمَعَ الْمُحْسِ نِي َ ن
﴾العنكبوت : ٩٦﴿
"আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায় তাদেরকে আমি অবশ্য অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে আছেন।"
(সূরা আনকাবূত: ৬৯)
এই আয়াতের অর্থসমূহের মধ্যে এবং শুধুমাত্র এই অর্থ নয় যে, 'ব্যক্তির নিজের প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াই' যাকে আরবিতে জিহাদ আন-নফস (جهاد النفس) বলা হয়েছে। এই আয়াতের অর্থসমূহের মধ্যে একটি হল জিহাদ আন-নফস যার মানে ব্যক্তির নিজের প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াই। চলুন আমরা শব্দ দুইটি বিশ্লেষণ করি। প্রথম শব্দটি হল জিহাদ আর দ্বিতীয়টি আন-নফস।
কু-প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াই বলতে আমরা কি বুঝি? ইবনুল কাইয়্যিম (র.) এর মত আলিমরা নিজের প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শ্রেণিবিন্যাস করেছেন। এবং এটায় মনোযোগ দিন কারণ পরবর্তীতে আমরা খুতবার প্রথমে যা বলেছি তার উপর ভিত্তি করে একটা উদাহরণ দিব।
প্রথমটি হচ্ছে নফসে লাওয়্যামাহ যার প্রবৃত্তি নিজেকে দোষারোপ করে।  
সে গুনাহ করে অথবা করতে যাবে এমন সময় সে ভাবে এবং নিজেকে বলে, আমি কেন এটা করেছিলাম অথবা আমার এটা করা উচিত নয়। সে নিজেকে দোষারোপ করে যা ভাল। এটা এই জীবনে ভাল কিন্তু নফসে লাওয়্যামাহ আখিরাতের জীবনেও ঘটতে পারে যা ভাল নয়। সুতরাং প্রথমটি নফসে লাওয়্যামাহ। আপনি যদি দুনিয়ার জীবনে গোনাহের জন্য নিজেকে দোষারোপ করেন, এটাই প্রকৃতপক্ষে তাওবাহ। 
দ্বিতীয়টি হল নফসে মুতমা'ইন্নাহ, আপনার নফস আপনাকে নেক কাজ করার কথা বলে। বলে, মসজিদে যাও। যদি কোন গোনাহ হয় অথবা গোনাহের আগ্রহ হয়, আপনি তা থেকে নিবৃত্ত থাকেন কারণ নফসে মুতমা'ইন্নাহ আপনাকে হিদায়াতের পথ অনুসরণের কথা বলে।
আল্লাহ কুরআনে বলেন:
﴾يَا أَي َّت ُهَا الن َّفْسُ الْمُطْمَئِنَّةُ ﴿٧٢﴾ ارْجِ عِي إِلَ ٰ ى رَبِّ ِ ك رَاضِيَةً مَّرْضِيًَّ ة ﴿٧٢
﴾فَادْخُلِي فِي عِبَادِي ﴿ ٧٦﴾ وَادْخُلِي جَنَّتِي ﴿٠٣﴾ ﴿الفجر
(নেককার লোককে বলা হবে) হে প্রশান্ত আত্মা! তোমার রব-এর দিকে ফিরে এসো সন্তুষ্ট হয়ে এবং (তোমার রব-এর) সন্তুষ্টির পাত্র হয়ে। অতঃপর আমার (নেক) বান্দাহদের মধ্যে শামিল হও। আর আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।
(সূরা ফজর ২৭-৩০)
অনেক কবরে স্মৃতিস্তম্ভ থাকে এবং স্মৃতিস্তম্ভে এই আয়াতটি লেখা হয়। এই আয়াতের প্রকৃত অর্থ, হে সুন্দর ও পবিত্র আত্মা, আমাদের নিকট আস। তুমি সন্তুষ্ট এবং আমরাও তোমার প্রতি সন্তুষ্ট, আমার সন্তুষ্টি এবং আমার জান্নাতের দিকে আস। এটা হচ্ছে নফসে মুতমা'ইন্নাহ।
শেষেরটা নফসে আম্মারাহ বিস-সু, এটা হচ্ছে সেই নফস যা গোনাহের দিকে ঠেলে দেয়। এখন পর্যন্ত আমরা তিনটি পেলাম। প্রথমটি যেখানে প্রবৃত্তি নিজেকে দোষারোপ করে এবং নিজের করা কর্ম বা করতে যাওয়া কর্মের জন্য পরিতাপ করে। এটা দুনিয়াতে ভাল কিন্তু আখিরাতে নয়। আপনি আখিরাতে পরিতাপ করবেন কিন্তু এটা আপনার জন্য কোন কাজেই আসবে না। দ্বিতীয়টি হচ্ছে আপনার সেই প্রবৃত্তি যা আপনাকে ভাল কাজের কথা বলে এবং হারাম থেকে দূরে থাকতে বলে। এবং সর্বশেষটি হচ্ছে নফসে আম্মারাহ বিস-সু যা আপনার মধ্যে গোনাহ করার বাসনা জাগিয়ে তুলে এবং হারাম কাজ করার প্ররোচনা দেয়। যখন আমি এটা বলছি আপনার নিজেকে যাচাই করা উচিত আপনি কোনটির আওতায় পড়েন। যাইহোক, আপনি একই সময়েও তিনটির প্রত্যেকটির আওতায়ও পড়তে পারেন। আপনার জীবনের মাস এবং দিনগুলোতে এমনকি জীবনের এক দিন আপনি সকালে জাগ্রত হন এবং বলেন: 
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ 
হামদ-প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য, যিনি (নিদ্রারূপ) মৃত্যুর পর আমাদেরকে জীবিত করলেন, আর তাঁরই নিকট সকলের পুনরুত্থান।
এটা হচ্ছে নফসে মুতমা'ইন্নাহ, ভাল প্রবৃত্তি। তারপর আপনি বের হন আপনার প্রবৃত্তি ও আমাদের চারপাশে থাকা গোনাহসমূহ সাথে নিয়ে কাজ করেন এবং আপনি হয়ত একটা গোনাহ করেও ফেলতে পারেন। এটা হচ্ছে নফসে আম্মারাহ বিস-সু। তৃতীয়টি আপনি বাড়িতে ফিরলেন এবং বললেন আমি এটা করেছি, ওটা করেছি। আমি অনুতপ্ত। এটা হচ্ছে নফসে লাওয়্যামাহ। তিনটির প্রত্যেকটি একই দিনে ঘটতে পারে।  
আপনি এই তিনটির প্রত্যেকটি নিয়ে কাজ করতে পারেন এবং শক্তিশালী করে তুলতে পারেন যেমন আপনি আপনার দেহকে শক্তিশালী করেন। মানুষ পরিশ্রম করে, ওজন তুলে তাদের পেশিকে শক্তিশালী করে তুলার জন্য। আপনিও একটি প্রবৃত্তিকে অন্যটির তুলনায় শক্তিশালী করে তুলতে পারেন। অনবরত গোনাহ করতে থাকলে আপনার যে প্রবৃত্তি আপনার গোনাহের কারণ তা হবে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। গোনাহ ও কুমন্ত্রণা হতে বিরত থাকলে নফসে মুতমা'ইন্নাহ সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী হবে।
.
চলবে ইনশাআল্লাহ 
#নফসের_জিহাদ ০১
#শায়খ_আহমাদ_মুসা_জিবরীল
.
https://www.facebook.com/AhmadJibrilBn/photos/a.822721524581348/1252366341616862/

..................................................


নফসের জিহাদ (২য় পর্ব)
-শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

.
তারপর কিছু আলিম চতুর্থ আরেকটি শ্রেণিতে ভাগ করেন যার উল্লেখ কুরআনে নেই এবং সম্ভবত বর্তমান সময়ের মুসলিমদের অধিকাংশই এই শ্রেণিতে পড়বে। নফসে গাফিলাহ, নিরুদ্বেগী প্রবৃত্তি। ভাল মানুষেরা আসলে সে তাদের সাথে ভাল। খারাপ মানুষেরা আসলে সে তাদের সাথে খারাপ। কী উদ্দেশ্য নিয়ে বেঁচে আছেন? আমি বিয়ে করতে চাই এবং সন্তান-সন্ততি চাই। এটাই আমার জীবন। মহিলারা? সন্তান-সন্ততি লালন-পালন করতে চান এবং শুধু এটাই! তাদের চিন্তায় ইসলামের জন্য কোন জায়গা নেই। এরা হচ্ছে সেই লোকেরা যাদেরকে আল্লাহ জন্ত-জানোয়ারের সাথে তুলনা করেছেন।
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ ٱلْجِنِّ وَٱلْإِنسِۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ ءَاذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَآۚ أُو۟لَٰٓئِكَ كَٱلْأَنْعَٰمِ بَلْ هُمْ أَضَلُّۚ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْغَٰفِلُونَ 
আমি বহু সংখ্যক জ্বীন আর মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে দেখে না, তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে শোনে না, তারা জন্তু-জানোয়ারের মত, বরং তার চেয়েও পথভ্রষ্ট, তারা একেবারে বে-খবর।
(সূরা আরাফ ১৭৯)
তাদেরও হৃদয় রয়েছে এবং তা স্পন্দিত হয় কিন্তু তারা কোনকিছুতে গভীরভাবে মগ্ন হতে পারে না। তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না। কেন তারা দেখে না? আপনাকে বিবাহ করা, সন্তান-সন্ততি ও নাতি-নাতনী, অবসরে দোলানো চেয়ারে স্ত্রীর সাথে বসে নাতি-নাতনীদের দেখার চেয়েও বৃহত্তর কিছুর জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তারা তাদের হৃদয়ে সত্যকে ধারণ করতে পারে না, তারা বুঝতে পারে না তারা কি উদ্দেশ্য নিয়ে বেঁচে আছে। তাদের কান আছে, কিন্তু তারা সত্যকে বা তাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য শুনতে পারে না। উপসংহারটা কি? 
أُولَ ٰئِكَ كَالأْ َن ْعَاِ م
তারা জন্তু-জানোয়ারের মত, যারা তাদের দ্বীন ও ইমানের জন্য বাঁচে না। জন্ত-জানোয়ারের জ্ঞাতিত্ব আছে, বাচ্চা আছে। কিন্তু আল্লাহ বলেন না, তারা শুধু জন্তু-জানোয়ারের মতই না,
بَلْ هُمْ أَضَ ُّ ل
জন্তু-জানোয়ারেরা তাদের চেয়ে উত্তম। গাধা জানে তাকে কি জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সে জানে সে দুনিয়াতে আছে তার পিঠে মানুষকে বহন করার জন্য কিন্তু একজন মানুষ জানে না তাকে ইসলাম, তার দ্বীনের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। একটা গরু জানে তাকে দুধ ও পরবর্তীতে মাংস দেয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে মানুষ তা খেতে পারে। সে তা জানে কিন্তু একজন মানুষ জানে না তাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য কি? 
قُلْ إِنَّ صَلَاتِى وَنُسُكِى وَمَحْيَاىَ وَمَمَاتِى لِلَّهِ رَبِّ ٱلْعَٰلَمِينَ 
বল, আমার নামায, আমার কুরবানি, আমার জীবন, আমার মরণ (সব কিছুই) বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই (নিবেদিত)।
(সূরা আন'আম ১৬২)
আল্লাহ বলেন সালাত, কুরবানি এবং
مَحْيَا َ ى
আমার পুরো জীবন
আল্লাহ কুরআনে ইয়াহিয়া (আ) এর অধিক জ্ঞান থাকার কথা বলেছেন।
يَٰيَحْيَىٰ خُذِ ٱلْكِتَٰبَ بِقُوَّةٍۖ وَءَاتَيْنَٰهُ ٱلْحُكْمَ صَبِيًّا 
(তার পুত্রের কাছে নির্দেশ আসল) ‘হে ইয়াহ্ইয়া! এ কিতাব (তাওরাত) সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর।’ আমি তাকে বাল্য কালেই জ্ঞান দান করেছিলাম।
(সূরা মারইয়াম: ১২)
আলিমগণ বলেন আল্লাহ তাকে বাল্যকাল থেকেই জ্ঞান দান করেছেন কারণ তিনি সবসময়ই জানতেন তাকে তার দ্বীন ও আল্লাহর উপর ইমান আনার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। এই জন্যই আল্লাহ বলেছেন তার জ্ঞান ছিল। চতুর্থ শ্রেণি অর্থাৎ যারা তাদের জীবনযাপনে নির্বোধ তাদের  জন্য এটাই প্রথম আলোচ্য বিষয়।
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
#নফসের_জিহাদ ০২
#শায়খ_আহমাদ_মুসা_জিবরীল
.
https://www.facebook.com/AhmadJibrilBn/photos/a.822721524581348/1266014700252026/

........................................................


নফসের জিহাদ (৩য় পর্ব)
-শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

.
আল্লাহ তাদেরকে চেতনাহীন মানুষ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আমরা ইসলামের অনুসারী নয় প্রত্যেক মানুষকেই বলি (ইসলাম অনুসরণের মাধ্যমে) জীবন সঞ্চার করুন। এটা আমরা বলছি না।
أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ 
যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই কি জানেন না?
(সূরা মুলক ১৪)
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ ٱسْتَجِيبُوا۟ لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمْ لِمَا يُحْيِيكُمْۖ 
ওহে ইমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ডাকে সাড়া দাও যখন তোমাদেরকে ডাকা হয় (এমন বিষয়ের দিকে) যা তোমাদের মাঝে জীবন সঞ্চার করে।
(সূরা আনফাল ২৪)
ইবন আব্বাস ও ইবন মাসঊদ (রাদি.) বলেন তুমি যদি শোন:
يَا أَي ُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا
ওহে ইমানদারগণ!
আপনি মনযোগ দিন। আপনি মনযোগ দিন কারণ 'যারা আল্লাহর উপর ইমান এনেছ' আমি বলছি না, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি বলছেন। আল্লাহ বলছেন, যারা আল্লাহর উপর ইমান এনেছ আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ডাকে সাড়া দাও যখন তোমাদেরকে ডাকা হয় যা তোমাদের মাঝে জীবন সঞ্চার করে। জীবন? আমরা সবাই জীবিত। আপনি যদি জীবিত না হোন তাহলে কীভাবে সাড়া দেন? আল্লাহ আপনাকে বলছেন আপনি যদি আল্লাহ ও তার রাসূলের ডাকে সাড়া না দেন তাহলে আপনি মৃত। (ডাকে সাড়া দিয়ে) জীবন সঞ্চার করুন।
أَوَمَن كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَٰهُ وَجَعَلْنَا لَهُۥ نُورًا يَمْشِى بِهِۦ فِى ٱلنَّاسِ كَمَن مَّثَلُهُۥ فِى ٱلظُّلُمَٰتِ لَيْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَاۚ كَذَٰلِكَ زُيِّنَ لِلْكَٰفِرِينَ مَا كَانُوا۟ يَعْمَلُونَ 
যে ব্যক্তি মৃত ছিল, তাকে আমি জীবিত করলাম, তার জন্য আলোর ব্যবস্থা করলাম যার সাহায্যে সে মানুষের মাঝে চলাফেরা করে, সে কি তার মত যে অন্ধকারে নিমজ্জিত, যাত্থেকে সে কক্ষনো বেরিয়ে আসতে পারবে না। এটা এজন্য যে, কাফিররা যা করছে তা তাদের জন্য চাকচিক্যময় করে দেয়া হয়েছে।
(সূরা আন'আম: ১২২)
আপনি কি জানেন এখানে জীবিত ও মৃত বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? যে ইসলামকে অনুসরণ করে সে জীবিত আর যে করে না সে মৃত।
أَوَمَن كَا َ ن مَيْتًا
মৃত ব্যক্তি। সে হাটছে তার হৃদস্পন্দন হচ্ছে, সে দেখে এবং শুনে কিন্তু ওয়াল্লাহি আযিম আল্লাহ বলেন, সে মৃত।
... وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِ َّ ن لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا
আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা হবে সংকীর্ণ….’
(সূরা তাহা: ১২৪)
আল্লাহ বলেন মা'ঈশাহ (معيشة) তিনি বলতে পারতেন
حَيَاةً ضَنكًا
হাইয়্যাহ মানে জীবন, কিন্তু আল্লাহ পথভ্রষ্ট লোকদের ব্যাপারে বলতে গিয়ে জীবন শব্দটি না ব্যবহার করে অন্য শব্দ ব্যবহার করলেন।
একটি সংকীর্ণ জীবন। কিন্তু, তিনি বললেন:
مَعِيشَةً ضَنكًا
দুয়ের মধ্যে পার্থক্য হল হায়াহ হচ্ছে সে যে মুসলিম, ইসলামের অনুসরণ করে, তাকে সৃষ্টির উদ্দেশ্য জানে এবং নিজের জীবন ও আল্লাহ তাকে যা দিয়েছেন সেগুলো সেই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ব্যয় করে। যে এরকম করে না, তার হৃদস্পন্দন আছে, সে শোনে এবং দেখে কিন্তু তার জীবন সেই জীবন নয় যা আল্লাহ কুরআনে উল্লেখ করেছেন এবং চেয়েছেন। আল্লাহ তাদেরকে প্রকৃত জীবন সঞ্চার করে নিতে বলছেন।
আপনি প্রবৃত্তির চারটি প্রকারভেদ সম্পর্কে জানলেন এবং আপনি এই চারটির মধ্যে যেটি বেছে নিবেন তা অনুযায়ী আখিরাতে গৃহীত হবেন। আপনি যদি আপনার খাহেশাতকে আল্লাহর পথের উপর প্রাধান্য দেন তাহলে আখিরাতে আল্লাহর এই আয়াত অনুযায়ী গৃহীত হবেন।
أَن تَقُولَ نَفْسٌ يَٰحَسْرَتَىٰ عَلَىٰ مَا فَرَّطتُ فِى جَنۢبِ ٱللَّهِ وَإِن كُنتُ لَمِنَ ٱلسَّٰخِرِينَ 
যাতে কাউকে বলতে না হয়- হায় আফসোস! আমি আল্লাহর প্রতি (আমার কর্তব্যে) অবহেলা করেছিলাম, আর আমি তো ঠাট্টা বিদ্রূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।
(সূরা যুমার: ৫৬)
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
#নফসের_জিহাদ ০৩
#শায়খ_আহমাদ_মুসা_জিবরীল
.
https://www.facebook.com/AhmadJibrilBn/photos/a.844408112412689/1272971429556353/

.....................................................


নফসের জিহাদ (৪র্থ পর্ব)
-শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

.
আপনি যদি আপনার খাহেশাতকে আল্লাহর পথের উপর প্রাধান্য দেন তাহলে আখিরাতে আল্লাহর এই আয়াত অনুযায়ী গৃহীত হবেন।
أَن تَقُولَ نَفْسٌ يَٰحَسْرَتَىٰ عَلَىٰ مَا فَرَّطتُ فِى جَنۢبِ ٱللَّهِ وَإِن كُنتُ لَمِنَ ٱلسَّٰخِرِينَ 
যাতে কাউকে বলতে না হয়- হায় আফসোস! আমি আল্লাহর প্রতি (আমার কর্তব্যে) অবহেলা করেছিলাম, আর আমি তো ঠাট্টা বিদ্রূপকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম।
(সূরা যুমার: ৫৬)
আপনি বলেন, হে আমার রব! নিঃসন্দেহে আমি পূর্বের জীবনে ভুল করে ফেলেছি। আমি দুনিয়ার জীবনকে প্রহসন হিসেবে গণ্য করেছিলাম, আমার নিকট সেটা তামাশা ছিল। আমার জীবনটা ছিল শুধুমাত্র বিয়ে করা, সন্তান জন্ম দেওয়া, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল ও ডাক্তার হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ। 
أَوْ تَقُولَ لَوْ أَنَّ ٱللَّهَ هَدَىٰنِى لَكُنتُ مِنَ ٱلْمُتَّقِينَ 
অথবা এ কথা যেন বলতে না হয় যে, আল্লাহ যদি আমাকে সঠিক পথ দেখাতেন, তাহলে আমি অবশ্যই মুত্তাক্বীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।
(সূরা যুমার: ৫৭)
হয়ত, এতে আল্লাহর দোষ ছিল(নাউজুবিল্লাহ)। এটা আপনি  আল্লাহর সামনেই বলছেন। আল্লাহ যদি আমাকে হিদায়াত দিতেন তাহলে আমি হক্ব পথের অনুসারী হতাম।
أَوْ تَقُولَ حِينَ تَرَى ٱلْعَذَابَ لَوْ أَنَّ لِى كَرَّةً فَأَكُونَ مِنَ ٱلْمُحْسِنِينَ 
অথবা শাস্তি দেখার পর কাউকে যেন বলতে না হয়, আমাকে যদি একবার (পৃথিবীতে) ফিরে যাবার সুযোগ দেয়া হত, তাহলে আমি সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।
(সূরা যুমার: ৫৮)
তখন আপনি জাহান্নাম দেখবেন এবং বলবেন হে আল্লাহ! আমাকে আরেকটা সুযোগ দিন।
بَلَىٰ قَدْ جَآءَتْكَ ءَايَٰتِى فَكَذَّبْتَ بِهَا وَٱسْتَكْبَرْتَ وَكُنتَ مِنَ ٱلْكَٰفِرِينَ 
(তাকে উত্তর দেয়া হবে) না, বরং তোমার কাছে আমার নিদর্শন এসেছিল, তখন তুমি সেগুলোকে মিথ্যে বলে অস্বীকার করেছিলে, অহংকার করেছিলে আর কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।
(সূরা যুমার: ৫৯)
তুমি আমার মুজিযা পেয়েছিলে, আমার শিক্ষা তোমার কাছে পৌছেছিল, তুমি আমার আয়াত শুনেছিলে কিন্তু তুমি এগুলো থেকে দূরে সরে গিয়েছিলে। তুমি খতিবের খুতবা শুনেছিলে, দারস শুনেছিলে, বয়ান শুনেছিলে কিন্তু এগুলো অমান্য করেছিলে। অনেক দেরি হয়ে গেছে। এই কারণেই আপনাকে নফসে মুতমা'ইন্না'র উপর গুরুত্ব দিতে হবে এবং কাজ করতে হবে যেন আপনি অন্য নফসগুলো ঘায়েল করতে পারেন। (যে নফস আপনাকে সর্বক্ষণ গোনাহের দিকে ঠেলে দেয়)
এই বিষয়ে অনন্য প্রশ্ন হল আপনি কীভাবে জানবেন কোনটি আপনাকে গোনাহের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, শয়তান নাকি নফস? আমি আপনাকে সহজ রাস্তাটা বলে দিতে পারি। রাসূলুল্লাহ সল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন শয়তান রমাদানে শৃঙ্খলিত  থাকে। আল্লাহ তাদেরকে জড়ো করেন এবং শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেন, এই কারণে আপনি রমাদানে কম গোনাহ করেন। শয়তান যদি শৃঙ্খলে আবদ্ধই থাকে তারপরেও কেন আপনি গোনাহ করেন? আমাদের এই দেশে ক্লাবগুলো এখনও খোলা আর গোনাহও হচ্ছে। উত্তর হচ্ছে আমাদের এই খুতবার বিষয়টি অর্থাৎ নফস যা আপনাকে গোনাহের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সুতরাং আপনি কীভাবে জানবেন যে কি করে বিরুদ্ধে লড়তে হবে? কোনটা শয়তানের পক্ষ থেকে কোনটা নফসের পক্ষ থেকে?
উত্তরটা খুব সহজ। যদি এটি আপনাকে গোনাহের পর গোনাহের দিকে ঠেলে দিতে থাকে এবং সেই গোনাহগুলো ভিন্ন ভিন্ন হয় তাহলে এটা শয়তানের কারসাজি কারণ  যতক্ষণ না সে আপনাকে দিয়ে গোনাহ করাচ্ছে আপনি কোন গোনাহ করছেন তার পরোয়া সে করে না। এটা হতে পারে শির্ক হতে পারে বিদাত। 
শয়তান তার কারসাজি আল্লাহ সম্পর্কে সন্দেহ তৈরির মাধ্যমে শুরু করে। উদাহারণস্বরূপ, এই মসজিদ কে সৃষ্টি করেছে, এই দালান কে সৃষ্টি করেছে, এই আকাশ কে সৃষ্টি করেছে? আল্লাহ সৃষ্টি করেছে। আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? এইভাবেই শয়তান কাজ করে। এটায় কাজ না হলে সে বিদাতের দিকে যায় তাতেও কাজ না করলে সে গোনাহের দিকে যায় যা তার সবশেষ কারসাজি। যতক্ষণ না আপনি তার ফাঁদে পা দেন ততক্ষণ আপনি যাই করেন না কেন যে তার পরোয়া করে না।
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
#নফসের_জিহাদ ০৪
#শায়খ_আহমাদ_মুসা_জিবরীল
.
https://www.facebook.com/AhmadJibrilBn/photos/a.822721524581348/1280129468840549/

..................................................


নফসের জিহাদ (৫ম পর্ব)
-শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

.
নফস বিভিন্ন প্রকারের। নফস গুনাহের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দিনের পর দিন নারী আর মদ নিয়ে পড়ে থাকা যদি আপনার নফস আপনাকে আপনার নফসের উপর অনেক কাজ করতে হবে। প্রথম প্রকারে আমরা বলি:
أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَا ِبِ الرَّجِ ي مِ
সে যাবে এবং ফেরার সময় আরেকটা গুনাহ নিয়ে ফিরবে। যেভাবে আমরা আজকে আলোচনা করব যেভাবে আপনাকে আপনার নফসে উপর কাজ করতে হবে। এভাবেই আপনি এই দুই প্রকারের(নফস ও শয়তান) মধ্যে পার্থক্য করবেন।
ইবনুল কাইয়্যিম (রাহি.) বলেন, জিহাদের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। প্রথম প্রকার নিজের প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ। আমাদের প্রবৃত্তি রয়েছে। আল্লাহ আপনার মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি প্রবৃত্তি দিয়েছেন যেমন প্রবৃত্তি দিয়েছেন খাদ্য ও সম্পদের প্রতি। আপনাকে এই প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 
আপনাকে আদিষ্ট জিনিস না করার প্রবৃত্তিও দেয়া হয়েছে। আসরের সালাত আদায়ের সময় হয়েছে এবং আপনার করার মত অনেক কাজ আছে কোনটিকে আপনি বাদ দিবেন? সুতরাং আপনাকে এর (প্রবৃত্তির) উপর কাজ করতে হবে। সুতরাং প্রথমটি হল প্রবৃত্তি।
ইবনুল কাইয়্যিম (রাহি.) বলেন দ্বিতীয়টি হচ্ছে ইলম অর্জনের জন্য কষ্ট মুজাহাদা। ইলমবিহীন মুসলিম আবার কেমন মুসলিম? আজকে আপনি যদি ইন্টারনেটে একটা গ্রুপে বা কোথাও একটা ইসলামিক প্রশ্ন করেন তাহকে প্রত্যেকেই তার মতামত দিবে। আপনি কি মনে করেন, এটা হালাল নাকি হারাম? এই যামানায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যেকেই একেকজন শায়খ।
আল্লাহ কুরআনে বলেন:
قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّىَ ٱلْفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلْإِثْمَ وَٱلْبَغْىَ بِغَيْرِ ٱلْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُوا۟ بِٱللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِۦ سُلْطَٰنًا وَأَن تَقُولُوا۟ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ 
বল, ‘আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা, পাপ, অন্যায়, বিরোধিতা, আল্লাহর অংশীদার স্থির করা যে ব্যাপারে তিনি কোন প্রমাণ নাযিল করেননি, আর আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের অজ্ঞতাপ্রসূত কথাবার্তা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
(সূরা আ'রাফ: ৩৩)
আল্লাহর সম্পর্কে না জেনে কথা বলা কবীরা গোনাহের অন্তর্ভুক্ত। আপনি পাবলিক প্লেসে গিয়ে তাদের আইনসংক্রান্ত একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন তারা বলবে ভাই এখানে একজন ভাল আইনজীবী আছে তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু যদি প্রশ্নটা হয় হালাল বা হারামের, তাহলে এই যামানায় প্রত্যেকেই একেকজন শায়খ। 
সুতরাং ইবনুল কাইয়্যিম (রাহি.) বলে দ্বিতীয় প্রকার হল ইলম অর্জনে কষ্ট মুজাহাদা। কুরআনের মজলিশ, তাফসীরের মজলিশ, আপনার গাড়িতে একটা টেপ লাগিয়ে আপনার কাজে যাওয়া ও আসার সময় লেকচার অথবা কুরআন শুনুন। (এটা শায়খ আমেরিকার প্রেক্ষাপটে বলেছেন। আপনি আপনার অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিন) রিয়াদুস সালেহিন কিনুন অথবা সিরাতের উপর বই কিনুন। ইলম অর্জন করুন।
তিনি বলেন তৃতীয় প্রকার হল ইসলামী ইলমকে আমলে পরিণত করা। এটাই প্রকৃত মুজাহাদা। ইলম অর্জন করা অনেক সহজ। আল্লাহ আমাদের পূর্বে বনী ইসরাইলদের (ইহুদি) বলেছেন, তারা হল পিঠে কিতাব বহনকারী গাধার মত। একটা গাধা তার পিঠে তাওরাত বহন করলে তা থেকে কি পাবে? আপনি কি জানেন এর দ্বারা আল্লাহ কি বুঝিয়েছেন? তাদের ইলম রয়েছে কিন্তু তারা সেই ইলমকে আমলে পরিণত করে না সেই মুসলিমের মত যে কিনা কুরআন পিঠে বহন করে। এটা হচ্ছে ইবনুল কাইয়্যিম (রাহি.) উল্লেখিত তৃতীয় প্রকার।
চতুর্থ প্রকার হল সেই ইলমের ব্যাপারে দাওয়াত দেওয়া। আপনি যদি আপনার ভাইয়ের কোন ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখতে পান তাহলে সে ব্যাপারে তাদের সাথে কাজ করুন। তারপর তাকে ইসলামিক ইলম অর্জনের পথে অবিচল থাকার ব্যাপারে বলুন। উদাহরণস্বরূপ, একজন মহিলা হিজাব পড়ে। সে জেনেছে হিজাব পড়া ফরজ সুতরাং সে তা পড়া শুরু করেছে। হতে পারে তার আত্মীয়রা তার সাথে ঝামেলা করছে, হতে পারে তার বস তার সাথে ঝামেলা করছে অথবা রাস্তায় সে ঠাট্টা-মশকারির শিকার হচ্ছে। আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে। আল্লাহ লুকমানকে বলছেন তার ছেলেকে বলার জন্য:
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِى ٱلْأَرْضِ مَرَحًاۖ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ 
অহংকারের বশবর্তী হয়ে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কর না, আর পৃথিবীতে গর্বভরে চলাফেরা কর না, নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।
(সূরা লুকমান: ১৮)
ধৈর্য ধরুন। কষ্ট যাতনা ছাড়া আপনি কখনই একজন আদর্শ মুসলিম হতে পারবেন না।  এটা অসম্ভব। আপনি কখনোই কষ্ট যাতনা ব্যতীত একজন প্রকৃত মুসলিম হতে পারবেন না।
.
চলবে ইনশাআল্লাহ
#নফসের_জিহাদ ০৫
#শায়খ_আহমাদ_মুসা_জিবরীল
.
https://www.facebook.com/AhmadJibrilBn/photos/a.822721524581348/1287407491446080/

.................................................


নফসের জিহাদ (৬ষ্ঠ পর্ব)
-শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

.
এর পরেরটা হল শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ। ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) একে বিভিন্ন শাখায় ভাগ করেছেন এবং জিহাদের অন্যান্য প্রকারভেদ উল্লেখ করেছেন। আমি আপনাদের সাথে আমাদের খুতবা সংশ্লিষ্ট বিষয় অর্থাৎ যাকে আমরা নফসের জিহাদ বলছি সেটা নিয়ে কথা বলেছি। কতক তাবেয়ী জিহাদের ময়দান থেকে ফেরার সময় এই বিষয়টি উল্লেখ করতেন। আসলে কিছুলোক এটাকে হাদিস বলে। কিন্তু এটা জাল হাদিস। কিন্তু তাবেয়ীদের থেকে এটা সহিহ এবং অসংখ্য তাবেয়ী থেকে বর্ণিত। তারা যখন জিহাদের ময়দান থেকে ফিরতেন তখন তারা বলতেন, “আমরা ছোট জিহাদ থেকে বড় জিহাদের দিকে যাচ্ছি”। আপনি কি জানেন বড় জিহাদ কি? দুনিয়ার জীবনের জিহাদ (তাদের নিজেদের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ)। তারা এটাকে জিহাদের ময়দানে গিয়ে যুদ্ধ করার চেয়েও নিজেদের নিকট কঠিন মনে করতেন।
কতক তাবেয়ী বলতেন যে নিজের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদে জয়ী হতে পারে না সে ব্যর্থ। ওয়াল্লাহি! কীভাবে একজন মুসলিম নিজেকে মুসলিম দাবি করতে পারে এবং দুনিয়াতে সফল হতে পারে যখন সে নিজের নফসের রিরুদ্ধে জিততে পারে না? আপনি কীভাবে পারেন? কীভাবে একজন মুসলিম বিজয়ের দিকে তাকাতে পারে যখন সে নিজের নফসের বিরুদ্ধেই বিজয় অর্জন করতে পারে না। তাদের কতক বলতেন যে নিজের নফসের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করে না যে গোনাহ করে তার দাস। সেই গোনাহের দাস মানে এই নয় যে সে আসলে বার, ক্লাব, গীবত, অন্য মুসলিমকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা এবং নেককার মুমিনদের ব্যাপারে (খারাপ) বলাকে ইবাদাত করে।
বরং গোনাহে দাসত্ব মানে হল, গোনাহ তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। এবং আপনি জানেন বিচার দিবসে কি ঘটবে? যারা গিবতের দাসত্ব করত করত তারা বিচার দিবসে আসবে। দাসত্ব? আমি তো শুধুমাত্র অভ্যস্ত ছিলাম? না আপনি দাসত্ব করেছিলেন। যারা ক্লাব ও নারীর প্রতি আসক্ত ছিল তারা এই গোনাহে দাস হিসেবে বিচার দিবসে উপস্থিত হবে কারণ এই গোনাহগুলো তাকে নিয়ন্ত্রণ করত।
اَفَرَءَیۡتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـهَهٗ هَوٰىهُ وَاَضَلَّهُ اللّٰهُ عَلٰی عِلۡمٍ وَّخَتَمَ عَلٰی سَمۡعِهٖ وَقَلۡبِهٖ وَجَعَلَ عَلٰی بَصَرِهٖ غِشٰوَةً ؕ فَمَنۡ یَّهۡدِیۡهِ مِنۡۢ بَعۡدِ اللّٰهِ ؕ اَفَلَا تَذَكَّرُوۡنَ 
তবে কি আপনি লক্ষ্য করেছেন তাকে, যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজ ইলাহ্‌ বানিয়ে নিয়েছে? আর তার কাছে জ্ঞান আসার পর আল্লাহ তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তিনি তার কান ও হৃদয়ে মোহর করে দিয়েছেন। আর তিনি তার চোখের উপর রেখেছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পরে কে তাকে হেদায়েত দিবে? তবু কি তোমরা উপদেশ গ্ৰহণ করবে না?
(সূরা জাসিয়াহ ৪৫: ২৩)
রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবাদের এমনভাবে গড়ে তুলেছিলেন যেন তারা অন্য কিছুর উপর বিজয়ী হবার আগে নিজেদের নফসের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। সহীহ মুসলিমের হাদিসে রাবিয়াহ আল আসলামি (রাদি.) বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর খেদমত করতাম। তিনি রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দাস ছিলেন না বরং এমন একজন যে কিনা রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছ থেকে শেখার জন্য তার সাথে থাকতেন এবং তাকে সাহায্য করার গৌরব অর্জন করেছিলেন। 
তিনি বলেন একদিন সকালে আমি গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাতে ওযু করতে পারেন এজন্য পানি নিলাম। তিনি জরুরত পূরণ করলেন। আমি সেখানে পানি নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম যাতে আমি পানি ঢালতে পারি এবং তিনি ওযু করতে পারেন। আমি তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম দেখে তিনি খুবই খুশি হলেন। তিনি বলেন, রাবিয়াহ তোমার যা ইচ্ছা হয় তা আমার কাছে চাও? তুমি তা পাবে।
রাবিয়াহ বলেন আমার মন এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করছিল। তিনি ভাবছিলেন কি চাইবেন? কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জান্নাতে আপনার সঙ্গী হতে চাই। আমি এর চেয়ে বেশি কি চাইতে পারি? আপনি জানেন রাবিয়াহ'র বয়স কত ছিল? তিনি তখন সতের বছর বয়সের তরুণ যুবক। এই যুবকদের দিকে তাকান। তারা কীভাবে চিন্তা করত তা দেখুন। আমাদের কয়জন এমন বলতাম? আপনি যদি আমাকে বলেন তাহলে আমি ব্লুমফিল্ড হিলে একটা বাড়ির কথা বলতাম। রাবিয়াহ, একজন তরুণ যুবক বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি জান্নাতে আপনার সঙ্গী হতে চাই। কীভাবে আপনি রাবিয়াহ'র মত হবেন?
فأعني على نفسك بكثرة السجود
নিজের নফসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম কর ও বেশি বেশি সিজদা কর। (মুসলিম)
আপনি হয়ত বেশি বেশি সিজদা করতে চান না। নফসের জিহাদ, নিজের নফসের বিরুদ্ধে কঠোর সংগ্রামে লিপ্ত হন এবং আল্লাহর নিকট বেশি থেকে বেশি সিজদা করুন। অন্যান্য সাহাবারা এরকমই ছিলেন।
.
চলবে ইনশাআল্লাহ।
#নফসের_জিহাদ ০৬
#শায়খ_আহমাদ_মুসা_জিবরীল
.
https://www.facebook.com/AhmadJibrilBn/photos/a.844408112412689/1388257371361091/

.................................................


নফসের জিহাদ (৭ম পর্ব)
-শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

.
আপনি হয়ত জেনে থাকবেন, রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগমনের পূর্বে সাহাবারা তাদের সময়কার সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ ছিলেন। রোমান ও পারসিকরা তাদের আক্রমণ করত না তার একমাত্র কারণ ছিল তাদের আক্রমণ করার মত আসলে কিছু ছিল না। মক্কা? এমন এক শহর যেখানে কিছুই নেই। তাদের সেখানে কোন প্রয়োজন নেই। কিছু একটার পরিবর্তন হল। সেটা কি? যখন তারা নিজেদের নফসের বিরুদ্ধে বিজয়ী হলেন তখন তারা পুরো বিশ্বের উপর বিজয়ী হলেন। তের বছরের মধ্যে তারা পুরো বিশ্বকে নেতৃত্ব দিলেন। এটা কীভাবে ঘটল? তারা রাসূল(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আগমনের পূর্বে যেমন রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ ছিলেন পরেও তেমনি রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ ছিলেন। আমরাও রক্ত-মাংসে গড়া মানুষ সুতরাং আমরাও তাদের মত হতে পারি। কি হয়েছিল? যখন তারা নিজেদের নফসের বিরুদ্ধে বিজয়ী হল তখন আল্লাহ তাদের বিজয়ী করে দিলেন।
রাসূল(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে পাঠানোর পূর্বে সেখানে পতিতালয় ছিল। ইতিহাসের কিতাবে সেগুলোকে লাল পতাকা ওয়ালা ঘর বলা হত। রাসূল(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর আগমনের পরের একশ বছরে মাত্র ছয়জনকে জিনা-ব্যভিচারের জন্য হয় বেত্রাঘাত বা পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছে। মক্কা ও মদিনায় ব্যাপক পতিতালয় থেকে একশ বছরের মধ্যে মাত্র ছয়বার জিনা-ব্যাভিচার। কি এমন পরিবর্তন ঘটেছিল? তারা বিজয়ী হয়েছিলেন কারণ তারা নিজেদের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছিল।
তারা ছিল অসৎ, দক্ষ প্রতারক ও চোর। রাসূল(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর আগমনের পর তাদের কি এমন হয়েছিল? রাসূল(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর আগনের পরবর্তী একশ বছরে চারজনের হাত কাটা হয়েছিল। কি এমন পরিবর্তন ঘটেছিল? রাসূল(সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)তাদেরকে তাদের নফসের উপর বিজয়ী করে গড়ে তুলেছিলেন। এটা তাদেরকে এমন করে তুলেছিল যেমনটা আমরা আজ তাদের দেখছি এবং কিয়ামতের আগপর্যন্ত মানুষ দেখে যাবে।
هُوَ الَّذِیۡ بَعَثَ فِی الۡاُمِّیّٖنَ رَسُوۡلًا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتِهٖ وَیُزَكِّیۡهِمۡ وَیُعَلِّمُهُمُ الۡكِتٰبَ وَالۡحِكۡمَةَ   وَاِنۡ كَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ ۙ 
তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তার আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতিপূর্বে তারা ছিল ঘোর পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।
[সূরা জুমআ ৬২: ০২]
এটা ছিল ইসলাম। যতবার উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) অন্তরে অহংকার অনুভব করতেন ততবারই তিনি খুতবার মিম্বারে দাঁড়িয়ে যেতেন। তিনি একটা ভূমিকা দিয়ে শুরু করতেন। তোমরা জানো আমি কে ছিলাম? লোকেরা তাকে দেখে ভাবত  আজ উমারের কি হল? তিনি বলতেন, আমি ছিলাম উমায়ের (ছোট উমার)। তারপর মানুষ আমাকে উমার ডাকতে লাগল। এখন তারা আমাকে খলিফাতুল মুসলিমীন বলে ডাকে। তোমরা কি জানো আমি কে ছিলাম? আমি বকরি পালতাম ও সেগুলোকে নিয়ে মক্কার প্রান্তভাগে চড়াতাম। যখন কোন বকরি পায়খানা করত তখন আমি নিজ হাতে সেই বকরির পশ্চাভাগ পায়খানা পরিষ্কার করতাম। তিনি এরকম আরও অপছন্দনীয় জিনিস নিয়ে বিস্তারিত বলতেন এবং তারপর মিম্বার থেকে নামতেন। আলী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)তাকে বললেন, “আপনি কি করছেন? আপনি শুধু নিজের স্তর নিচে নামাচ্ছেন মাত্র। আপনি কেন এমন করছেন?” তিনি আমি অন্তরে অহংকার বোধ করছিলাম তাই আমি নিজেকে নিছে নামাতে চাইলাম। উসমান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি তার বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। তিনি বসে বসে কাঁদতেন আর নিজেকে বলতেন, “খলিফাতুল মুসলিমীন হবার পূর্বে তুমি ছিলে উমার তার পূর্বে তুমি ছিলে উমায়ের। উমার! আল্লাহ তোমাকে শাস্তি দেয়ার পূর্বে তাকে ভয় কর।” এটাই হচ্ছে নফসের জিহাদের পূর্ণাঙ্গ রূপ। এই কারণেই তারা ছিলেন বিশুদ্ধ মানুষ।
আমাদের প্রত্যেকেরই দোষত্রুটি রয়েছে এবং এই কারণেই আমরা দ্রুত আল্লাহর নিকট তাওবা করি। একজন মানুষ কীভাবে তার নফস ও গোনাহ দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে? ইবনুল কায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, কীভাবে আপনি আপনার নফসের বিরুদ্ধে জিহাদে পরাজিত হতে পারেন যেখানে নূহ (আলাইহিস সালাম) ৯৫০ বছর এই জিহাদের মধ্য দিয়ে গিয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন। যেখানে ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) তার এই জিহাদের কারণে বিশাল অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন, যাকারিয়া (আলাইহিস সালাম) কে তার এই জিহাদের কারণে কেটে দুই টুকরা করে ফেলা হয়েছিল, ইয়াহিয়া (আলাইহিস সালাম) কে তার এই জিহাদের কারণে গলা কেটে ফেলা হয়েছিল, এই জিহাদের কারণে মুহাম্মদ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কার লোকেদের দ্বারা নির্মমভাবে নিপীড়িত ও উৎক্ষেপিত করেছিল। তারা তাকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত। এমনকি তার নাম নিয়েও বিদ্রুপ করত। রাসূল (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবাদের শান্ত করতে ও তাদের সান্ত্বনা দিতে বলতেন, তারা অন্য কাউকে নিয়ে বলছে। ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যদি তারা এমন সব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে পারেন তাহলে আপনি কেন আপনার নিজের নফসের বিরুদ্ধে জিহাদেই বিজয়ী হতে পারবেন না?
.
চলবে ইনশাআল্লাহ।
#নফসের_জিহাদ ০৭
#শায়খ_আহমাদ_মুসা_জিবরীল
.
https://www.facebook.com/AhmadJibrilBn/photos/a.822721524581348/1399724210214407/

...................................................


নফসের জিহাদ (৮ম পর্ব)
-শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

.
আমরা জিহাদ আন-নফস শব্দটির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছি। এখন আপনাদেরকে আমাদের প্রত্যেককে নফসের জিহাদ করতে হয় এমন একটি উদাহরণ দিতে চাই। কালিমার সাক্ষ্য দেওয়ার পর ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক আদেশ হল সালাত। আপনারা সালাত ত্যাগের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমার চেয়ে ভাল জানেন। কিন্তু আমি সালাত নিয়ে কথা বলতে চাই না। উম্মাহর দিকে তাকান - শতকরা কত ভাগ সালাত আদায় করে আর কতভাগ সালাত আদায় করে না।
আপনি একথা বলতে পারেন না যে আমার অন্তরে ঈমান আছে। আপনি যদি সালাত আদায় না করেও বলেন আমার অন্তরে ঈমান আছে তাহলে আপনি মিথ্যুক। রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যদি তারা আল্লাহ সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখত তাহলে তারা তাদের কর্মের মাধ্যমে এটা প্রদর্শন করত।
সূরা আসরে একই জিনিস বলা হয়েছে:
সময়ের শপথ। নিশ্চয় মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিপতিত। কিন্তু তারা নয়, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে এবং পরস্পরকে উপদেশ দিয়েছে হকের আর উপদেশ দিয়েছে ধৈর্যের।
[সূরা আসর ১০৩: ১-৩]
যদি তারা সত্যিই আল্লাহর উপর ঈমান আনত তাহলে তাদের কর্মের দ্বারা তা প্রদর্শন করত। আপনি বলতে পারেন না যে আমার অন্তর পবিত্র এবং আমি কাউকে কষ্ট দেই না। আপনাকে এটা করে দেখাতে হবে। আল্লাহ বলেছেন দিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে এবং আপনি যদি তা না করেন তাহলে আপনার হাশর হামান, কারূন ও ফিরআউনের সাথে হবে। এটা এর নূন্যতম পরিণাম। সে মুসলিম না কাফির আমি সেই মতভেদে যেতে চাই না। এই বিতর্কটাকে একপাশে সরিয়ে রাখুন। কিন্তু সহীহ হাদিস অনুসারে এর সর্বনিম্ন পরিণাম হল হামান, কারূন ও ফিরআউনের সাথে হাশর। যে সালাত আদায় করে না এটা তার শাস্তি। উম্মাহর কতভাগ লোক সালাত আদায় করে? আমি আসলে এটা নিয়েও কথা বলতে চাই না। এই সালাত আদায়কারীদের মধ্যে কতভাগ সময়মত ফজরের সালাত আদায় করে? আমি এটা নিয়েই কথা বলতে চাই।
আমি হলফ করে বলতে পারি উম্মাহর শতকরা দুই বা তিনভাগের চেয়েও কম লোক নিয়মিত ওয়াক্তমত ফজরের সালাত আদায় করে। উম্মাহর কতজন সময়মত ফজর আদায় করে? এটাই নফসের জিহাদ। আপনি যদি এতে বিজয়ী হতে না পারেন তাহলে ওয়াল্লাহি আপনি ব্যর্থ! আপনি ঘুমাতে চান? এটা আপনার শরীরের জন্য আরামদায়ক।
কিন্তু যখন আপনি শুনেন:
الصلاة خير من النوم 
“ঘুম থেকে সালাত উত্তম।”
আর আপনি ঘুমাচ্ছেন। এটা আপনার শরীরের জন্য আরামদায়ক কিন্তু আপনার তো আল্লাহর সাথে শান্তির প্রয়োজন। যখন আপনি ঘুমাচ্ছেন আর শুনছেন:
الصلاة خير من النوم 
আপনি আমরা পূর্বে যে আয়াত উল্লেখ করেছি তার মতই মৃত। ঘুমের মৃত্যু নয় বরং আপনার অন্তর মৃত। যখন আপনি ঘুম থেকে জাগেন এবং আল্লাহর ডাকে সাড়া দেন তখন আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক প্রাণবন্ত হয় তার মত যে অন্ধকার সরিয়ে আল্লাহর পথে আসে। 
যখন আপনি শুনেন:
الصلاة خير من النوم 
আপনি জানেন এখন ফজরের সময় আর আপনি তখনও ঘুমাচ্ছেন। আপনি আসলে শয়তানের দাস। আপনি যদি জেগে উঠেন ও সালাত আদায় করেন তখন আপনি আল্লাহর বান্দা।
আমরা জানি ঘুমের চেয়ে সালাত উত্তম। তারপরেও যখন এটা শুনে আমরা ঘুমাই আমরা আসলে শুয়োর, গাধা ইত্যাদি পশুর মত। আপনিও ঘুমাচ্ছেন সেগুলোও ঘুমাচ্ছে বেশিরভাগ মানুষও তাই। যখন আপনি জেগে উঠেন আপনি সেই অল্পসংখ্যক পূণ্যবান মুমিনদের মত যারা বলে, “হে আল্লাহ! আমি হাজির”। হে আল্লাহ! আপনি আমার কাছ যাই চান আমি সাড়া দিতে প্রস্তুত। 
রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ফজরের সালাত জামাতে আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত্রি ইবাদতের সওয়াব পেল। পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর আপনি সবচেয়ে ভাল যে কাজগুলো করতে পারেন তার মধ্যে রাতে ঘুম থেকে উঠে সালাত আদায় অন্যতম। আল্লাহর নিকট কেঁদে চোখের পানি ফেলুন এবং আপনার যা প্রয়োজন তা চান। আপনি ফজর জামাতে আদায় করলে সেই রাত্রে অর্ধেক রাত্রি ইবাদতের সওয়াব পাবেন। আর সেই রাত্রে ইশার সালাত জামাতে আদায় করলে পুরো রাত্রি ইবাদতের সওয়াব পাবেন। এই পুরস্কার শুধু ইশা ও ফজরের সালাত জামাতে আদায়ের জন্য। কত সহজ কাজ!
.
চলবে ইনশাআল্লাহ।
#নফসের_জিহাদ ০৮
#শায়খ_আহমাদ_মুসা_জিবরীল
.
https://www.facebook.com/story.php?story_fbid=1435893753264119&id=822674151252752

.................................................


নফসের জিহাদ (৯ম পর্ব)
-শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

.
আল্লাহ বলেন,
আর তোমাদের প্রত্যেকেই তার (জাহান্নামের) উপর দিয়েই অতিক্রম করবে, এটা আপনার রব এর অনিবার্য সিদ্ধান্ত।
[সূরা মারইয়াম ১৯:৭১]

যখন সাহাবারা এটা শুনেছিলেন তাদের জন্য এটা ছিল সমস্যা কারণ তারা সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করেছিলেন। এটা তাদের এক কান দিয়ে ঢুকে আরেক কান দিয়ে বের হয়ে যায়নি। এটা তাদের অন্তরে গেঁথে গিয়েছিল। যখন রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে সেই সেতুর বিবরণ দিলেন যা হবে তরবারির প্রান্তের চেয়ে ধারালো, চুলের চেয়েও চিকন এবং প্রত্যেককে তা অতিক্রম করতে হবে। আপনি কি জানেন সেখানে কোন জিনিস আপনাকে তা পার হতে সাহায্য করবে? ফজরের সালাত।

যারা অন্ধকারে হাটে তাদেরকে সুসংবাদ দিন। ফজরের সালাতের জন্য উঠে আলো জ্বালানোর জন্য, উযু করার জন্য ও মসজিদে যাওয়ার জন্য অন্ধকারে হাটে। ইশার সালাত আদায়ের জন্য মসজিদে যেতে গিয়ে অন্ধকারে হাটে। আপনি উজ্জ্বলতার সাথে সেতু অতিক্রম করবেন। আপনি কি জানেন সেখানে কোন জিনিস আপনাকে তা পার হতে সাহায্য করবে? আপনার নিজের উজ্জ্বলতা।

মুনাফিকদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,

আর যখন তারা সালাতে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে দাঁড়ায়।
[সূরা আন-নিসা ০৪: ১৪২]

তারা মুমিনদের বলবে:

তোমরা আমাদের জন্য একটু থাম, যাতে আমরা তোমাদের নূরের কিছু গ্ৰহণ করতে পারি।
[সূরা হাদীদ ৫৭: ১৩]

তাদেরকে বলা হবে:

তোমরা তোমাদের পিছনে ফিরে যাও ও নূরের সন্ধান কর।
[সূরা হাদীদ ৫৭: ১৩]

উজ্জ্বলতা ফজরের সালাত থেকে আসে। ফজরের সালাত আদায় ও তার জন্য অন্ধকারে হাটার কারণে আসে।

সহীহ মুসলিমে এসেছে, যে ব্যক্তি ঠান্ডার সময়ে দুই ঠান্ডার সালাত আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সবচেয়ে ঠান্ডার সময়ের সালাত হল ফজর অতঃপর ইশার সালাত।

আপনি মুনাফিক কি না জানতে চান? নিজেলে জিজ্ঞেস করুন আপনি সময়মত ফজরের সালাত আদায় করেন কি না? আমি মুনাফিক কি না?

“মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কষ্টকর সালাত হল ইশা ও ফজরের সালাত। তারা যদি এর ফজিলত জানত তারা হামাগুড়ি দিয়ে মসজিদে হাজির হত।”
(বুখারি ও মুসলিম)
.
চলবে ইনশাআল্লাহ।
#নফসের_জিহাদ ০৯
#শায়খ_আহমাদ_মুসা_জিবরীল
.
https://www.facebook.com/AhmadJibrilBn/photos/a.844408112412689/1441976705989157

..................................................


নফসের জিহাদ (১০ম পর্ব)
-শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

.
আপনারা কি বিচার দিবসে আল্লাহকে দেখতে চান? আমরা সকলেই জান্নাতে যেতে চাই কিন্তু জান্নাতে সর্বোত্তম জিনিস হচ্ছে আল্লাহকে দেখা। বুখারি ও মুসলিমে জারির আল বাজালি (রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিত। জারির বলেন, ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট ছিলাম। রাতটি ছিল পূর্ণিমার রাত। তিনি চাঁদের দিকে তাকালেন এবং বললেন: তোমরা যেভাবে এ চাঁদকে দেখছ, কোনোরূপ অসুবিধা হচ্ছে না, সেভাবেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে দেখবে।’ এটাই হচ্ছে সর্বোচ্চ চূড়া, এটাই জীবন। যারা দাবি করে দুনিয়াতে তারা সুখের জীবন কাটাচ্ছে যখন তারা আখিরাতে গিয়ে জানতে পারবে।

সে বলবে, ‘হায়! আমার এ জীবনের জন্য আমি যদি কিছু অগ্রিম পাঠাতাম?”
[সূরা ফজর ৮৯: ২৪]

প্রত্যেক জান্নাতি শুক্রবার জান্নাতের বাজারে আনন্দ করবে, রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), মুসা (আলাইহিস সালাম), আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) এবং আপনি যার সাথে সাক্ষাৎ চান তার সাথেই সাক্ষাৎ করতে পারবেন। আর সেখানে সেই পর্দা থাকবে যা সরে গেলে প্রত্যেকে আল্লাহকে দেখবে পাবে। আর যখন তারা আল্লাহকে দেখবে তারা চিন্তা করবে তারা এর পূর্বে জান্নাতে পাওয়া আনন্দের মধ্যে এর চেয়ে উত্তম কিছু পায়নি। আপনি কি আল্লাহকে দেখতে চান? সহিহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে, যদি তোমরা আল্লাহকে দেখতে চাও সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বের সালাত আদায় কর। (ফজর ও আসরের সালাত) আপনি যদি আল্লাহকে দেখতে চান তাহলে আপনাকে এটা করতেই হবে।

ইবন উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলতেন, কেউ যদি ফজরের জামাতে কেউ না আসত আমরা তাকে মুনাফিক মনে করতাম।

ওয়াল্লাহিল আযিম, যে ফজরের সালাত আদায় করে না তার জন্য রয়েছে কষ্টকর জীবন। আপনি কি তার সম্পর্কে জানেন যে ফজরের সালাত আদায় সময়মত আদায় করে না? আপনি আমেরিকান টয়লেটগুলোর কথা জানেন যেখানে পুরুষেরা দাঁড়িয়ে মূত্রত্যাগ করে? আপনি ফজর সময়মত আদায় না করলে আপনি শয়তানের কাছে সেই টয়লেটগুলোর মত। বুখারি ও মুসলিমে ইবন মাসউদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, সাহাবারা রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এক ব্যক্তির কথা বললেন, যে ফজরের সালাত আদায়ের জন্য জাগত না।

তিনি বললেন, শয়তান তার কানে মূত্রত্যাগ করে। কি জঘন্য! আল্লাহর সবচেয়ে অভিশপ্ত ও নিকৃষ্ট সৃষ্টি আপনার কানে মূত্রত্যাগ করে! আপনি যদি ফজরে ঘুম থেকে না জাগেন তাহলে আপনি শয়তানের মূত্রত্যাগ করার টয়লেটে পরিণত হলেন।
.
চলবে ইনশাআল্লাহ।
#নফসের_জিহাদ ১০
#শায়খ_আহমাদ_মুসা_জিবরীল
.
https://www.facebook.com/AhmadJibrilBn/photos/a.822721524581348/1448301972023297/

.................................................


নফসের জিহাদ (১১শ পর্ব)
-শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিযাহুল্লাহ)

.
আরেকটি সহিহ হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যখন আপনি ঘুমান শয়তান আপনার মাথার নিকটে আসে। যখন বলা হয়, 
الصَّلََاةُ خَيرٌ منْ النَّوْمِ
ঘুম থেকে সালাত উত্তম।
শয়তান আপনার মাথার নিকট এসে বলে তোমার ঘুমানোর জন্য অনেক রাত বাকী আছে। ঠাণ্ডা! আপনাকে বিছানার আরাম থেকে বঞ্চিত হতে হবে, উযু করতে হবে, হয়ত গোসল করতে হবে, এটা করা আপনার জন্য অনেক কঠিন। উঠো না, শুয়ে থাক। সে তার মাথার পেছন দিকে একটি গিরা লাগায়। আপনি কি জানেন সেই গিরাটি কি? আমি আপনাকে বলব সেই গিরাটি আসলে কি?
আবার যখন বলা হয়, 
الصَّلََاةُ خَيرٌ منْ النَّوْمِ
ঘুম থেকে সালাত উত্তম।
সে আপনার মাথার পেছনে আরেকটা গিরা লাগায়। তৃতীয়বার সে একই কাজ করে।
যদি সে জাগে ও আল্লাহর প্রশংসা করে তাহলে একটি গিরা খুলে যায়।
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ
“সকল প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য, যিনি মৃত্যুর (ঘুম) পর আমাদের জীবন দান করেছেন এবং তার দিকেই আমাদের পুনরুত্থান।”
একটা গিরা খুলে যায়। সে যখন সালাতের জন্য উযু বা গোসল করে আরেকটা গিরা খুলে যায়। সে যখন সালাত আদায় করে তৃতীয় গিরাটিও খুলে যায়। আপনি কি জানেন যে এগুলো করে না তার কি হয়? এটা হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে সকালে তার চাকরিতে যায় আর তার বসের সাথে তার কোন ঝামেলা হয়। সেদিন তার জরিমানা হয় সেদিন সে অসুস্থ হয়, সেদিন পরিবারের কেউ মারা যায়, সেদিন কোন একটা ভোগান্তি আসে। অতঃপর সে সেদিন হতাশানিরোধী ঔষধ নেয় কারণ এ যেন গিরার উপর গিরা তার উপর আবার গিরা! প্রতিদিন মাত্র তিনটা গিরা, এগুলো আপনার জীবনের সমস্যা। আপনার জরিমানা হয়েছে? নিজেকে জিজ্ঞেস করুন আপনি ফজরের জন্য জেগেছিলেন কিনা? ভাইদের সমস্যা হলে তারা আমাকে ফোন দেয়। তারা বলে ওয়াল্লাহি শায়খ! আজকে আমি ফজর আদায় করতে পারিনি তাই আমার এটা হয়েছে। হ্যা, ওয়াল্লাহি! তুমি সঠিক।
আপনি জানেন কে বেশি সুখী? যে ফজরের সময় জাগে নাকি যে তখন ঘুমিয়ে থাকে? ওয়াল্লাহি! যে জাগে সে বেশি সুখী কারণ অন্যদের দিকে তাকান তাদের কামনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে। তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী নারী পেয়েছে, তাদের চাহিদা অনুযায়ী ক্লাব পেয়েছে, তাদের চাহিদা অনুযায়ী অর্থ পেয়েছে কিন্তু এতকিছুর পরেও সপ্তাহিক ছুটির দিনে তারা মাতাল হয়ে থাকে। তুমি যদি সত্যিই সুখী হও তাহলে কেন নিজের চেতন হারাতে চাও? তুমি যদি সত্যিই সুখী হও তাহলে কেন তোমাকে মারিজুয়ানা খেয়ে ভেঙ্গে পড়তে হবে? আমি বলি এই (আমেরিকা) দেশের লোকদের মধ্যে যারা অবৈধ নেশা, মদ ও বৈধ হতাশার ঔষধ নেয় এমন লোকদের হিসাব করুন। আপনি শতকরা খুব কম লোক খুজে পাবেন যারা ঠিক আছে। এগুলো শয়তানের সেই গিরা যা জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।
.
চলবে ইনশাআল্লাহ।
#নফসের_জিহাদ ১১
#শায়খ_আহমাদ_মুসা_জিবরীল
.
https://www.facebook.com/story.php?story_fbid=1457486827771478&id=822674151252752

.....................................................


নফসের জিহাদ (১২শ পর্ব (শেষ))
-শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিযাহুল্লাহ)

.
বিশ বছর ধরে চাকরি করছে এমন ভাইকে আপনি দেখবেন সে এটা বলে বেড়াচ্ছে। তাকে জিজ্ঞেস করুন সকাল সাতটায় সে কয়দিন অফিসে যেতে পারেনি? সে হয়ত বলবে দুইদিন এবং তৃতীয়দিন এমন হলে তার নাম খাতায় লিখে রাখা হবে। আপনি আপনার বসের জন্য এটা করতে পারছেন কিন্তু আল্লাহ'র জন্য পারছেন না যিনি আপনাকে সুন্দর দুইটি চোখ দিয়েছেন, সুন্দর চেহারা দিয়েছেন ও এই হাতদ্বয় দিয়েছেন যা এই দুনিয়ার অন্য কেউ দিতে সক্ষম নয়। তারা যদি আপনাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে আপনি আরেকটা চাকরি পাবেন কিন্তু আল্লাহ যদি আপনার চোখ নিয়ে নেন তাহলে আপনাকে আরেকটা চোখ দেয়ার মত কে আছে? এটা কি আপনার সকালে উঠে ফজরের সালাত আদায়ের জন্য যথেষ্ট নয়? আপনার যখন পরীক্ষা থাকে আপনি হয়ত সেই পরীক্ষার কয়েকঘণ্টা আগে ঘুমান। আপনি আপনার বাবা-মাকে বলেন আপনাকে জাগিয়ে দিতে। ওয়াল্লাহিল আযীম! আপনি তখন জেগে উঠেন। কিন্তু আল্লাহ'র জন্য? আল্লাহ'র জন্য কেউ জাগে না। এই বিষয়টিতে আমাদের কাজ করতে হবে।
সর্বশেষ ফজরে জাগার জন্য কিছু কার্যকর জিনিসের দ্বারা আমি আজকে শেষ করতে চাই। আমরা এটা নিয়ে কথা বলছি এবং একসময় বলা শেষ হবে। আমরা এটা অন্তরে ধারণ করে যাই এবং অন্যদের পৌছে দেই। আমরা আজকে থেকে আল্লাহর নিকট প্রতিজ্ঞা করি যে আজকের পর থেকে আমরা ফজর মিস করব না।
প্রথমত, আপনার অন্তরে ইখলাসের সাথে এই বিষয়টি ধারণ করে নিন যে আপনি ফজরে জাগবেন যেমন করে আপনি আপনার অন্তরে কাজে যাওয়ার জন্য জাগার বিষয়টি ধারণ করে থাকেন। আমি এমন মানুষদের চিনি যারা ২৫ বছর যাবৎ একটি মিনিটের জন্য কাজ মিস করেনি। ওয়াল্লাহি! আমি একজনকে চিনি যে আমার সামনে একটানা ২৫ বছর সময়মত কাজে যাওয়ার জন্য গর্ব করছিল। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কয়বার ফজর সময়মত আদায় করেছেন? একবারও না। এটা আল্লাহর জন্য করতে গেলে গুরুত্ব নেই কিন্তু একজন মধ্যম আয়সম্পন্ন ব্যক্তির জন্য করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ যে আপনাকে আল্লাহর ইচ্ছায় রিযিক দেয়? এটাই সর্বপ্রথম, আপনার অন্তরে এটা ধারণ করে নিন।
দ্বিতীয়ত, আপনাকে আগে আগে ঘুমাতে হবে। আপনি যদি আপনাকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারেন তাহলে আপনাকে আগে আগে ঘুমাতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এশারের পর গল্পগুজব অপছন্দ করতেন। এশার পর সরাসরি বিছানায়। এটা হচ্ছে আপনি যদি জানেন যে আপনি জাগবেন না। আপনি যদি জানেন আপনি জাগবেন তাহলে সজাগ থাকতে পারেন।
পরের বিষয়টি হল বাস্তবিক হোন। আপনার এলার্মের প্রয়োজন। দুই বা তিনজন ভাই সকালে একে অপরকে ফোন করতে পারেন। আমি এবং কিছু ভাই এ ব্যাপারে একমত। আপনি তাদেরকে ফোন করে তাদের সাথে মজা করুন। দেখবেন সে লাফ দিতে উঠে উযু করছে। আমাদের এরকম হতে হবে। এটা নফসের জিহাদের সবচেয়ে সহজ বিষয়। আমরা যদি এটা না করতে পারি তাহলে খারাপ কিছু একটা হচ্ছে।
.
আলহামদুলিল্লাহ, সিরিজটি শেষ হল।
#নফসের_জিহাদ ১২ (শেষ)
#শায়খ_আহমাদ_মুসা_জিবরীল
.
https://www.facebook.com/story.php?story_fbid=1457486827771478&id=822674151252752

..................................................

 

 

 

#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প

https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo

.

>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"

https://justpaste.it/5gol5

.

>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক

https://justpaste.it/facebook_page_grp_link

.

>> র‍্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট

https://justpaste.it/76iwz

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের pdf লিংক (৪০০+ বই)

https://justpaste.it/4ne9o

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.

https://justpaste.it/islamicappvideo

.

>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?

https://justpaste.it/6q4c3

.

>> কুরআন এবং আপনি

https://justpaste.it/5dds8

.

>> কখনও ঝরে যেও না …

https://justpaste.it/3bt22

.

>> ফজরে আমি উঠতে পারি না

https://justpaste.it/6kjl6

.

>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1

.

>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr

.

>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম

https://justpaste.it/7u5es

.

>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়

https://justpaste.it/8dccj

.

>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/6ttuf

.

>> স্বার্থক মুনাজাত

https://justpaste.it/1xf0t

.

>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ

https://justpaste.it/4hhtd

.

>> তাহাজ্জুদ সিরিজ

https://justpaste.it/4ja0n

.

>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/3dxi7

.

>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)

https://justpaste.it/7056k

.

>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ

https://justpaste.it/7fh32

.

>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ

https://justpaste.it/9icuq

.

>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল

https://justpaste.it/8gmtk

.

>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf

.

>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

https://justpaste.it/8vnly

.

>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir

.

>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh

.
>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5

.
>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1

.

>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j

.

>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে। সবগুলো বিষয়ের লিংক এক জায়গায় রাখা হয়েছে। এই লিংকটা শেয়ার করতে পারেন। 
https://justpaste.it/48f6m