JustPaste.it

রমজানের প্রস্তুতি : মুমিনের পথ ও পাথেয়

 

 

রমজান অন্য সব সাধারণ মাসের মতোই একটি মাসের নাম। কিন্তু ফজিলত, বরকত ও রহমতের কারণে এর রয়েছে অনন্য মর্যাদা। বাকি এগারো মাসের তুলনায় এ মাসটি তেমনই উজ্জ্বল ও মহিমাময়, আকাশের নক্ষত্ররাজির মাঝে সূর্য যেমন দীপ্তময়। এমন মর্যাদা ও ফজিলতের মহান মাস আমাদের সামনে উপস্থিত। আর কিছুদিনের মধ্যেই মাসটি সৌভাগ্য ও আখিরাতের অবর্ণনীয় অফার নিয়ে আমাদের মাঝে আগমন করবে। যে মাস হলো কুরআন অবতরণের, তাকওয়া অর্জনের ও রহমত বর্ষণের।
.
প্রতি বছর একবারের জন্য আসে এ মাসটি। তাই আমাদের হায়াত যেই ক’বছর, রমজানও পাই সেই ক’টা। এর মাধ্যমেই আমাদের আখিরাতের পুঁজি অর্জন করে নিতে হবে, পূর্ণ করতে হবে আমাদের পূণ্যের শূন্য ডালাগুলো। সময় স্বল্প, পুঁজির প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। তাই মাসটিকে খুবই সতর্কতা ও সচেতনতার সহিত কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। উদাসীনতাবশত এ মহান মাসটি যেন হেলায়-খেলায় কেটে না যায়, সেজন্য আমাদের কিছু কর্মসূচি তৈরি করে মাসটিকে সেভাবে কাটানো উচিত।
রমজান মাস কীভাবে কাটাব, তার জন্য বিভিন্নজনের বিভিন্ন পরিকল্পনা থাকে। কেউ পুরো রমজান নফল ইবাদতেই কাটিয়ে দেন, কেউ কুরআনের প্রতি অধিক জোর দেন, কেউ সাদাকার পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। মোটকথা, প্রত্যেকেই তার সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, সুন্দর একটি রমজান কাটানোর। সুন্দর একটি রমজান কাটানোর জন্য আমরা বাছাই করে কিছু আমল ও ইবাদাতের লিস্ট তৈরি করেছি। এতে আমাদের জন্য রমজানের ফজিলত ও বরকত ভালোভাবে অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
.
১. প্রতিদিন ন্যূনতম দুই ঘণ্টা কুরআন তিলাওয়াত করবে। এটা এক বৈঠকে একসাথেও হতে পারে, কিংবা আলাদা আলাদা বৈঠকে ভিন্ন ভিন্ন সময়েও হতে পারে। তিলাওয়াত অবশ্যই সুন্দরভাবে তাজবিদের সহিত পড়া উচিত, তাড়াহুড়ো কাম্য নয়। আর আলিম হলে অবশ্যই অর্থ বুঝে বুঝে পড়বে। অনেকে শুধু খতমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য মাখরাজ, তাজবিদ ইত্যাদির পরোয়া না করে খুব দ্রুত তিলাওয়াত করে। কিন্তু এটা উচিত নয়। উত্তম হলো, ধীরস্থিরভাবে অর্থ বুঝেশুনে পড়া; যদিও এতে খতমের সংখ্যা কম হোক।
.
২. প্রতিদিন এক ঘণ্টা আলাদাভাবে কুরআন তরজমা ও তাফসির অধ্যয়ন করবে। চাই তা বাংলা থেকে হোক কিংবা উর্দু থেকে বা আরবি থেকে। তরজমা ও তাফসির বাছাইয়ের জন্য অবশ্যই নির্ভরযোগ্য কোনো আলিমের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। নিজে নিজে বাছাই করতে গেলে বিভ্রান্তির আশঙ্কা আছে। এক্ষেত্রে জেনারেল ভাইদের জন্য তাফসিরে মাআরিফুল কুরআন বা তাওজিহুল কুরআন তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে সহজ হবে। সময় ও আগ্রহ থাকলে তাফসিরে ইবনে কাসিরও দেখা যেতে পারে।
.
৩. পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাআতের সহিত পড়ার ইহতিমাম করবে। তবে ফজরের জামাআতের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা, সুবহে সাদিকের শেষ সময় নিয়ে বেশ মতানৈক্য আছে। সাহরির প্রচলিত শেষ সময় থেকে কমপক্ষে বিশ মিনিট পর জামাআত হলে সেটাই নিরাপদ। এর আগে হলে সেটা সুবহে কাজিব হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই এক্ষেত্রে সতর্কতা কাম্য। সাহরি খাওয়া প্রচলিত শেষ সময়ের মধ্যেই শেষ করলে আর এর বিশ-পঁচিশ মিনিট পর সালাত আদায় করলে সিয়াম ও সালাত দুটিই নিরাপদ থাকে।
.
৪. তারাবিহর সালাত হলো সুন্নাতে মুআক্কাদা আইন। আর জামাআতে পড়া সুন্নাতে মুআক্কাদা কিফায়া। তারাবিহ নিয়মিত ত্রিশদিনই মসজিদে গিয়ে আদায় করা উচিত। তবে দু’ক্ষেত্রে মসজিদে যাওয়া ঠিক হবে না। এক : যেখানে অত্যধিক দ্রুত সালাত আদায় করা হয়। দুই : যেখানে বিনিময় নিয়ে খতম তারাবিহ পড়ানো হয়। এ দুই ক্ষেত্রে ইশার ফরজ সালাত মসজিদে পড়লেও তারাবিহ মসজিদে না পড়ে বাড়িতেই কিছু মানুষকে নিয়ে জামাআতের সহিত আদায় করবে। কাউকে না পেলে তবুও একাকি পড়াই ভালো।
.
৫. সম্ভব হলে রমজানে কিয়ামুল লাইল, জিকির-আজকার, তিলাওয়াত, দ্বীনি কিতাব অধ্যয়ন ইত্যাদির মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ করবে। নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়া এবং এটাকে ধীরে ধীরে এমন অভ্যাসে পরিণত করা উচিত, যাতে সারা বছরই তা নিয়মিত পড়ার তাওফিক হয়। পাশাপাশি অধিকহারে আল্লাহর নিকটে ইসতিগফার ও কান্নাকাটি করবে। যেকোনো আমলের অভ্যাস তৈরি করার জন্য রমজানই সবচেয়ে উত্তম সময়। তাই তাহাজ্জুদসহ অন্যান্য ভালো আমলের অভ্যাস এ মাস থেকেই তৈরি করে নেওয়া উচিত।
.
৬. কম ঘুমানোর চেষ্টা করবে। কারণ, এটা দুনিয়ার জীবনে মুমিনের জন্য সবচেয়ে বড় অফারের মাস। আমরা দুনিয়ার জীবনে সাধারণত কোনো বড় অফার পেলে তা অর্জনের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকি। শত কষ্ট হলেও সেটা পাওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। অথচ রমজান হলো মুমিনের জীবনে আখিরাতের সবচেয়ে বড় অফারের মাস। যত বেশি ঘুম হবে অফার গ্রহণ থেকে তত বেশি বঞ্চিত হতে হবে। তাই যথাসম্ভব ঘুম কমিয়ে সময় সেভ করে যত সাওয়াব ও ফজিলত অর্জন করে নেওয়া যায়, ততই লাভ।
.
৭. প্রতিদিন ন্যূনতম একজনকে ইফতার খাওয়ানোর চেষ্টা করবে; সামান্য পানি বা খেজুর দিয়ে হলেও। বাড়িতে দাওয়াত দিয়ে এনেও খাওয়ানো যায়, প্যাকেটে বা পাত্রে করে বাসায়ও পাঠিয়ে দেওয়া যায়। অসহায়, গরিব, মুসাফির, আলিম, আত্মীয়স্বজন ও পড়শীদের মধ্য থেকে যে কাউকেই বেছে নেওয়া যেতে পারে। তবে মুত্তাকি ও দ্বীনদারদের প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা করবে। আর দ্বীনদার ও মুত্তাকি আলিম হলে তো আরও বেশি উত্তম। তবে সামর্থ্য একটু ভালো হলে সব শ্রেণির লোককেই খাওয়াবে।
.
৮. রমজানে বাড়ির মা-বোন-স্ত্রীদের রান্নার ব্যস্ততা অনেক বেশি থাকে। তাই সময় করে রান্নাঘরেও কিছু কিছু সময় ব্যয় করবে। এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি সুন্নাত, যা কেবল রমজানের জন্যই নির্ধারিত নয়। তাই সারা বছরে না পারলেও রমজানে এটা নিয়ে একটু ফিকির করা যেতে পারে। সাহরির সময় ঘুম থেকে আগে আগে উঠে বাড়ির লোকদের ও পড়শীদের জাগিয়ে দেবে। এরপর নিজেও রান্নার কাজে মা-বোন-স্ত্রীদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করার চেষ্টা করবে।
.
৯. এ মাসে সবর ও ইসারের গুণে গুণান্বিত হওয়ার চেষ্টা করবে। অযাচিতভাবে কাউকে গালিগালাজ বা কারও সমালোচনা করবে না। হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি থেকে পুরোপুরি দূরে থাকবে। সবার প্রতি, বিশেষত নিজের অধীনস্ত চাকর-কর্মচারী, ছাত্র-ছাত্রী, সন্তান-সন্তুতিসহ সব ধরনের লোকদের প্রতি সদয় হবে। রাগ হজমের চেষ্টা করবে এবং ব্যাপকভাবে ক্ষমা করে দেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবে। আর এসব সৎ গুণ এমনভাবে অর্জন করার চেষ্টা করবে, যাতে তা সারা বছর; বরং সারা জীবনের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়।
.
১০. সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে। যারা শিরক-বিদআতে লিপ্ত ছিল, তারা সঠিক বিষয়টি জেনে এসব থেকে সারাজীবনের জন্য তাওবা করে নেবে। যারা কবিরা গুনাহে অভ্যস্ত ছিল, তারা চিরজীবনের জন্য কবিরা গুনাহ ছেড়ে দেবে। আর যারা সগিরা গুনাহে অভ্যস্ত ছিল, তারা আজীবনের জন্য সগিরা গুনাহ ছেড়ে দেবে। আর যারা সব ধরনের গুনাহ থেকে দূরে ছিল, তারা নফল-মুসতাহাব-সুন্নাত ইত্যাদি আমলের প্রতি আরও যত্নবান হবে। এভাবে সবাইকে একটি স্তরে হলেও উন্নতি করার চেষ্টা করতে হবে।
.
১১. রমজানের শেষ দশকে নিজ এলাকার মসজিদে ইতিকাফে বসবে। শাইখ, মুরশিদ, উসতাদ—এমন বিভিন্ন স্তরের মানুষের সাথে ইতিকাফে বসার অজুহাতে নিজ এলাকা ছেড়ে দূরে কোথাও সফর করা উচিত নয়। তবে ভিন্ন কোনো কারণে কেউ তাদের সাথে আগে থেকেই অবস্থান করলে সেক্ষেত্রে তাঁদের সাথে ইতিকাফে বসতে কোনো সমস্যা নেই। নিজের এলাকার হক আগে মেটাবে, তারপর অন্য জায়গার ফিকির করবে। ইতিকাফে বসার জন্য কারও থেকে কখনো কোনো ধরনের বিনিময় গ্রহণ করবে না।
.
১২. রমজানে দান-সদকা বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে। অন্য মাসে এক হাজার টাকা দান করার অভ্যাস থাকলে এ মাসে দুই হাজার বা ততোধিক পরিমাণ দান করার চেষ্টা করবে। তালিবুল ইলমদের খোঁজখবর নিয়ে তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করবে। তাতব্য-তালাশ করে গরিব আলিমদের প্রতি অধিক খেয়াল রাখবে; বিশেষত যারা কারও কাছে হাত পাতে না, কারও কাছে সাহায্য চাইতে লজ্জাবোধ করে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এদের পরিবারগুলোর দেখাশোনা করা অনেক বিনিময়ের কারণ হবে, ইনশাআল্লাহ।
.
১৩. সাদাকাতুল ফিতর আদায়ে কার্পণ্যতার পরিচয় দেওয়া যাবে না। আধা সা গমের হাদিসের ভিত্তিতে জনপ্রতি ৫০-৬০ টাকা ফিতরা আদায় করা ব্যাপকভাবে সবার জন্য উচিত নয়। বরং সামর্থ্য থাকলে অধিক দামি নিসাবের ফিতরা আদায় করার চেষ্টা করবে। আধা সা গম তো সর্বনিম্ন মূল্যের ফিতরা। ধনী বা সামর্থ্যবান হলে আধা সা গমের পরিবর্তে এক সা খেজুর, কিসমিস বা পনিরের দামে ফিতরা আদায় করার চেষ্টা করবে। এক সা’ এর পরিমাণ বর্তমান পরিমাপে প্রায় সাড়ে তিন কেজির মতো হয়।
.
১৪. রমজানে জাকাতের টাকা আদায় করলে বেশি ভালো। নিসাব পরিমাণ অর্থ থাকলে এ মাসেই জাকাত হিসাব করে আদায় করা যেতে পারে। বছর শেষ হওয়ার আগেও জাকাত দেওয়া যায়। তাই নিসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর এক চান্দ্র বছর অতিক্রান্ত না হলেও রমজান মাসে অগ্রীম বছরের জাকাত দিয়ে দিলে লাভ বেশি। এতে সওয়াব অনেকগুণে বেশি হয়। জাকাত ভালোভাবে বুঝেশুনে উপযুক্ত খাতে ব্যয় করা জরুরি। নিজের মনমতো যেকোনো জায়গায় চোখ বন্ধ করে জাকাত দেওয়া উচিত নয়।
.
১৫. অনলাইন ও গুনাহের উপকরণগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে। অনলাইন মাধ্যমগুলো একান্ত দ্বীনি প্রয়োজনে ব্যবহার করলেও সময় নির্দিষ্ট করে সীমিত সময়ের জন্য ব্যবহার করবে। সবসময় এতে এক্টিভ থাকলে এবং অন্যান্য সময়ের মতোই এতে সময় ব্যয় করলে ইবাদতের মজা পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে। এমনিতেও অনলাইন-মাধ্যমগুলো বর্তমানে গুনাহ ও সমালোচনার আখড়াকেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অন্যান্য সময়ে তো বটেই, রমজানে এসব ক্ষেত্রে আরও বেশি সতর্ক থাকার চেষ্টা করবে।
.
১৬. কোনো গুনাহের অভ্যাস থাকলে এ মাসেই তা থেকে স্থায়ীভাবে তাওবা করে নেবে। আজীবনের জন্য এসব ছেড়ে দেওয়ার সংকল্প করবে। যেমন : মুভি-নাটক দেখা, পর্নো দেখা, গেম-খেলায় আসক্ত থাকা, অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা করা, অনলাইনের নানা ফিতনায় আক্রান্ত হওয়া, কুদৃষ্টির অভ্যাস থাকা ইত্যাদি। কেননা, এ মাসে শয়তান বন্দী থাকে। তাই খুব শক্তভাবে সুদৃঢ় নিয়ত করে গুনাহ ছেড়ে লাগাতার একমাস আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করলে আশা করা যায়, আল্লাহ তা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে দেবেন।
.
১৭. অন্যান্য কাজ থেকে অবসর হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় দ্বীনি বইপুস্তক পড়বে। বই পড়ে ও আলিমদের বিভিন্ন হালকায় গিয়ে ইলম অর্জন করবে। সুন্নাহসম্মত দুআ-আজকার মুখস্থ করবে। বাড়ির লোকদের নিয়ে কিছু সময় দ্বীনি কথাবার্তা বলবে। কুরআন ভালো জানা থাকলে বাড়ির লোকদের কুরআন শিক্ষা দেবে। এককথায় বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে পুরোপুরি দ্বীনি পরিবেশ কায়েম করে ফেলবে। গিবত, সমালোচনা, বিদ্বেষ থেকে নিজেও দূরে থাকবে, অন্যদেরকেও এ থেকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে।
.
১৮. যারা কুরআন হিফজ করতে চায়, তাদের জন্য এ মাসটি সবচেয়ে সেরা। এমনিতেই এটা কুরআর অবতীর্ণ হওয়ার মাস, তদপুরি এ মাসে শয়তান বন্দী থাকে, গুনাহের পরিমাণ অনেক কমে আসে। এ মাসে মেধা ও চিন্তাচেতনাও থাকে ঝকঝকে ও পরিচ্ছন্ন, পাশাপাশি আল্লাহর রহমত ও বরকতের বারিধারা তো আছেই। তাই প্রতিদিন কিছু কিছু করে কুরআন হিফজ করলে এক সময় পুরো কুরআনই হিফজ হয়ে যাবে। এ কাজে কোনো সঙ্গী পেলে আরও বেশি ভালো। সেক্ষেত্রে হিফজটা আরও শক্তিশালী হবে।
.
১৯. শবে কদর পাওয়ার উদ্দেশ্য রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি রাতই পুরোপুরি গুরুত্ব দিয়ে ইবাদত করবে; বিশেষ করে বেজোড় রাতগুলোতে। শুধু সাতাশ তারিখের অপেক্ষায় থেকে অন্যান্য রাতে গাফলতি করবে না। কেননা, শবে কদর শেষ দশদিনের যেকোনো রাতেই হতে পারে। যে রাত হাজার মাসের চাইতেও দামী, এমন মহান রাত পাওয়ার জন্য একমাস জাগতে হলে সেটাও তো কম হয়ে যায়। তাই এর জন্য দশ রাত জাগাকে কঠিন না ভেবে এসব রাতে ইবাদতের পূর্ণ স্বাদ পাওয়ার চেষ্টা করবে।
.
২০. রমজান শেষে বেশিরভাগ মানুষই ইদের কেনাকাটার জন্য মার্কেটে যায়। সেসময় দুটি জিনিসের বড় অভার পরিলক্ষিত হয়। এক : দৃষ্টির হিফাজত। দুই : ব্যাপক অপচয়। নারীদের ভীড়ে খুব কম মানুষই দৃষ্টির হিফাজত করতে পারে। আর অপচয়, সে তো এখন ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একেকজনের জন্য তিন-চার-পাঁচ সেট করে জামা কেনা হয়; অথচ পাশের বাড়ির গরিব পরিবারটি ইদের দিন ভালো খাবার পর্যন্ত খেতে পারে না। রমজানের মতো পবিত্র মাসে আমাদের এসব ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকা দরকার।
.
আমরা আমাদের জানামতে ভালো কাজের কিছু লিস্ট ও দিকনির্দেশনা তৈরি করেছি। এগুলো কেবল রমজানকে ভালোভাবে কাটানোর একটি পদ্ধতি মাত্র। কেউ চাইলে এতে আরও অনেক কিছু কমবেশও করে নিতে পারে। মোটকথা, রমজানটা সবার ভালো কাটুক, এটাই আমাদের প্রত্যাশা। সুন্দর একটি রমজান কাটানো সত্যিই বড় সৌভাগ্যের বিষয়! আল্লাহ তাআলা আমাদের রমজান মাসের আজমত ও পবিত্রতা অক্ষুণ্ণ রেখে আখিরাতের চিরস্থায়ী আ্যকাউন্ট ভারী ও সমৃদ্ধ করার তাওফিক দান করুন।

 

>> মহিমান্বিত রজনী (লাইলাতুল কদর) সিরিজ, লাইলাতুল কদরের জন্য ১২ টি সহজ আমল এবং ইতিকাফের গুরুত্ব, ফজিলত, উদ্দেশ্য, আমল।
https://justpaste.it/1q3bs

 

মহামারী ও সঙ্কটময় মুহূর্তের কিছু আমল

 

 

করোনা ভাইরাসের বাস্তবতা কী আর তার ভয়াবহতাই বা কতটুকু, আজকের আলোচনা সেটি নিয়ে নয়। এটা নিয়ে অধিক প্যানিক ছড়ানোর পেছনে কী রহস্য বা ভবিষ্যতে এটা আমাদের জীবনে কতটা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে আমরা অন্যদিন বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। তবে এতে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে, ভাইরাসটি একেবারে উপেক্ষা করার মতো কোনো বিষয়ও নয়। এটা নিয়ে প্যানিক ছড়ানো কিংবা এটার ব্যাপারে একেবারে বেপরোয়া হওয়া কোনোটিই কাম্য নয়। বর্তমানে ব্যাপকভাবে দুটোই লক্ষ করা যাচ্ছে। আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ঠিক রেখে আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রেখে আমরা পরিচ্ছন্নতা ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করব, কিন্তু এটা নিয়ে মানুষের মাঝে অতিরিক্ত ভীতি ছড়াব না এবং তাদের জীবনযাত্রার স্বাভাবিক গতি বন্ধ করে হতাশায়ও নিমজ্জিত করব না।

 

এ সময়ে আমাদের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো, আমরা সর্বদা সহিহ মাসনুন দুআগুলোর ওপর আমল করতে থাকব এবং আল্লাহর কাছে সকল বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দুআ করতে থাকব। আজ আমরা ছোট্ট এ প্রবন্ধটিতে এমন কিছু মাসনুন দুআ উল্লেখ করব, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বিভিন্ন বালা-মুসিবত ও রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য শিক্ষা দিয়েছেন। এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আমরা যদি হাদিসে বর্ণিত এসব দুআ ও আমল করি তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ আমাদের সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করবেন। এগুলো যে কেবল করোনা ভাইরাসকেই রোধ করবে তা নয়; বরং আল্লাহর ইচ্ছায় তা অন্যান্য বালা-মুসিবতও দূর করবে। নিম্নে আমরা দুআ ও আমলগুলো সূত্র সহকারে সংক্ষেপে উল্লেখ করছি :

 

. বিভিন্ন ধরনের রোগ-ব্যাধি থেকে বেঁচে থাকার জন্য হাদিসে বর্ণিত নিম্নোক্ত দুআটি বারবার পড়তে থাকুন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ البَرَصِ، وَالْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الْأَسْقَامِ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউ’জুবিকা মিনাল বারাসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি ওয়া মিন সাইয়িইল আসকাম।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ ও সমস্ত দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’
সূত্র : সহিহু ইবনি হিব্বান : ১০১৭, সুনানু আবি দাউদ : ১৫৫৪, মুসনাদু আহমাদ : ১৩০০৪ -হাদিসটি সহিহ।
.
২. করোনাক্রান্ত বা অন্য কোনো বিপদে নিপতিত ব্যক্তিকে দেখলে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ুন; তাহলে আল্লাহর ইচ্ছায় জীবনে কখনো সে রোগ বা বিপদে নিপতিত হবেন না।

الحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي عَافَانِي مِمَّا ابْتَلاَكَ بِهِ، وَفَضَّلَنِي عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيلاً

উচ্চারণ : ‘আল-হামদু লিল্লাহিল্লাজি আ’ফানি মিম্মাবতালাকা বিহি ওয়া ফাজ্জালানি আলা কাসিরিম মিম্মান খালাকা তাফজিলা।’
অর্থ : ‘সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য, যিনি তোমাকে যে বিপদ দিয়েছেন তা থেকে আমাকে নিরাপদে রেখেছেন এবং তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির উপর আমাকে মর্যাদা দান করেছেন।’
সূত্র : সুনানুত তিরমিজি : ৩৪৩১, সুনানু ইবনি মাজাহ : ৩৮৯২, মুসনাদু আবি দাউদ তায়ালিসি : ১৩ -হাদিসটি হাসান।
.
৩. হাসপাতাল, কারও বাসা কিংবা অন্য কোথাও গেলে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ুন; ইনশাআল্লাহ সেখানে থাকাকালীন কোনো বিপদে আক্রান্ত হবেন না।

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

উচ্চারণ : আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা।’
অর্থ : ‘আমি আল্লাহ তাআলার পরিপূর্ণ বাক্যসমূহের মাধ্যমে তাঁর যাবতীয় সৃষ্টির ক্ষতি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’
সূত্র : সহিহু মুসলিম : ২৭০৮, সুনানুত তিরমিজি : ৩৪৩৭, সুনানুন নাসায়ি, কুবরা : ১০৩১৮ -হাদিসটি সহিহ।
.
৪. প্রত্যহ সকাল-বিকাল তিনবার করে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ুন; ইনশাআল্লাহ সেদিন আপনি আকস্মিক কোনো ক্ষতি বা বিপদে নিপতিত হবেন না।

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াজুররু মাআসমিহি শাইয়ুন ফিল আরজি ওয়ালা ফিস সামায়ি ওয়াহুয়াস সামিউল আলিম।’
অর্থ : ‘আল্লাহ তাআলার নামে, যাঁর নামের বরকতে আকাশ ও মাটির কোনো কিছুই অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’
সূত্র : সুনানু আবি দাউদ : ৫০৮৮, সুনানুত তিরমিজি : ৩৩৮৮, মুসনাদু আহমাদ : ৫২৮ -হাদিসটি সহিহ।
.
৫. দুআ ইউনুস বেশি বেশি করে পড়ুন এবং আল্লাহর কাছে বিপদ ও মহামারীতে আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করুন। এটা পড়ে দুআ করলে আল্লাহ দুআ কবুল করেন এবং বিপদ থেকে রক্ষা করেন।

দুআ ইউনুস : لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জালিমিন।’
অর্থ : ‘আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই আমি জালিমদের দলভুক্ত।’
সূত্র : সুনানুত তিরমিজি : ৩৫০৫, সুনানুন নাসায়ি, কুবরা : ১০৪১৬, ১০৪১৭; মুসনাদু আহমাদ : ১৪৬২ -হাদিসটি সহিহ।
.
৬. সকল প্রকার গুনাহ ও নাফরমানি পরিত্যাগ করে পুরোপুরিভাবে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করুন।খালিস দিলে তাওবা করে অধিক পরিমাণে ইসতিগফার করতে থাকুন। কেননা, ইসতিগফার করাবস্থায় আল্লাহ বান্দাকে আজাব দেন না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন :

وَمَا كَانَ ٱللَّهُ لِيُعَذِّبَهُمْ وَأَنتَ فِيهِمْۚ وَمَا كَانَ ٱللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ

'আর আল্লাহ এমন নন যে, আপনি তাদের মধ্যে থাকবেন অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন।' (সুরা আল-আনফাল : ৩৩)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবু হুরায়রা রা. বলেন- 'তোমাদের মাঝে দুটি নিরাপত্তা ছিল, যার একটি চলে গেছে। অর্থাৎ নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যু। কিন্তু আরেকটি রয়ে গেছে। অর্থাৎ ইসতিগফার।'
সূত্র : মুসতাদরাকুল হাকিম : ১৯৮৮; শুআবুল ইমান : ৬৪৫ - হাদিসটি সহিহ।
.
এক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ ইসতিগফারও পড়তে পারেন, আবার সাইয়িদুল ইসতিগফারও পড়তে পারেন। তবে সাইয়িদুল ইসতিগফার পড়াই অধিক উত্তম ও শ্রেষ্ঠ।

প্রসিদ্ধ ইসতিগফার : أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِيْ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الحَيُّ القَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

উচ্চারণ : ‘আসতাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।’
অর্থ : ‘আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও অবিনশ্বর। আর আমি তাঁর নিকট তাওবা (প্রত্যাবর্তন) করছি।’
সূত্র : সুনানু আবি দাউদ : ১৫১৭; সুনানুত তিরমিজি : ৩৫৭৭ -হাদিসটি সহিহ।

সাইয়িদুল ইসতিগফার : اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাতা’তু আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউ লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া ওয়া আবুউ লাকা বিজামবি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’
অর্থ : হে আল্লাহ, আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তো আপনারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য আপনার সঙ্গে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি আমার প্রতি আপনার যে নিয়ামত দিয়েছেন তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। কেননা, আপনি ছাড়া অন্য কেউ গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারে না।’
সূত্র : সহিহুল বুখারি : ৬৩০৬; সুনানুন নাসায়ি : ৫৫২২; সুনানুত তিরমিজি : ৩৩৯৩ -হাদিসটি সহিহ।
.
৭. প্রচুর পরিমাণে নিম্নোক্ত দুআটি পড়তে থাকুন। সকল বিপদ-আপদ থেকে বেঁচে থাকার জন্য এটা খুবই কার্যকর একটি দুআ।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ، وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ، وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ، وَجَمِيعِ سَخَطِكَ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন যাওয়ালি নি’মাতিকা ওয়া তাহাওউলি আফিয়াতিকা ওয়া ফুজাআতি নিকমাতিকা ওয়া জামিয়ি সাখাতিকা।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই নিয়ামত দূর হয়ে যাওয়া থেকে, আপনার দেওয়া সুস্থতা পরিবর্তন হয়ে যাওয়া থেকে, আপনার অকস্মাৎ শাস্তি আসা থেকে এবং আপনার সকল প্রকার অসন্তুষ্টি থেকে।’
সূত্র : সহিহু মুসলিম : ২৭৩৯; সুনানু আবি দাউদ : ১৫৪৫; মুসতাদরাকুল হাকিম : ১৯৪৬ -হাদিসটি সহিহ।
.
৮. সকাল-বিকাল নিম্নোক্ত দুআটি একবার করে পড়ুন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي وَآمِنْ رَوْعَاتِي اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ وَمِنْ خَلْفِي وَعَنْ يَمِينِي وَعَنْ شِمَالِي وَمِنْ فَوْقِي وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাহ, আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফি দিনি ওয়া দুনইয়াইয়া ওয়া আহলি ওয়া মালি, আল্লাহুম্মাসতুর আউরাতি ওয়া আ-মিন রাউআ’তি, আল্লাহুম্মাহফাজনি মিম বাইনি ইয়াদাইয়া ওয়া মিন খালফি ওয়া আন ইয়ামিনি ওয়া আন শিমালি ওয়া মিন ফাউকি ওয়া আউজু বিআজামাতিকা আন উগতালা মিন তাহতি।’
অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং আমার দীন, দুনিয়া, পরিবার ও সম্পদের নিরাপত্তা চাই। হে আল্লাহ, আপনি আমার দোষত্রুটিগুলো ঢেকে রাখুন এবং ভীতিপ্রদ বিষয়সমূহ থেকে আমাকে নিরাপদ রাখুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাকে হিফাজত করুন আমার সম্মুখ থেকে, আমার পিছন দিক থেকে, আমার ডান দিক থেকে, আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপর দিক থেকে। হে আল্লাহ, আমি আপনার মর্যাদার অসিলায় মাটিতে ধ্বসে যাওয়া থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি।’
সূত্র : সুনানু আবি দাউদ : ৫০৭৪, সুনানু ইবনি মাজাহ : ৩৮৭১; মুসনাদু আহমাদ : ৪৭৮৫ -হাদিসটি সহিহ।
.
৯. সকাল-বিকাল তিনবার করে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়ুন। ইনশাআল্লাহ সকল কিছুর জন্য এটা যথেষ্ট হয়ে যাবে।

সুরা ইখলাস : قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ، اللَّهُ الصَّمَد، لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَد

অর্থ : ‘বলুন, তিনি আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাঁকে জন্ম দেয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।’

সুরা ফালাক : قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ، مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ، وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ، وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ

অর্থ : ‘বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি প্রভাতের পালনকর্তার কাছে তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে; অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা গভীর হয়; গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে; আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।’

সুরা নাস : ،قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ، مَلِكِ النَّاسِ، إِلَهِ النَّاسِ، مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ، مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ

অর্থ : ‘বলুন, আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মানুষের পালনকর্তা, মানুষের অধিপতি ও মানুষের মাবুদের কাছে আত্নগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট থেকে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে—জিন ও মানুষের মধ্য থেকে।’
সূত্র : সুনানু আবি দাউদ : ৫০৮২, সুনানুত তিরমিজি : ৩৫৭৫; মুসনাদু আহমাদ : ২২৬৬৪ -হাদিসটি হাসান।
.
১০. সাধ্যমতো দান-সাদাকা করা উচিত। কেননা, দান-সাদাকার দ্বারা আল্লাহ তাআলা বান্দার আজাব মাফ করে দেন এবং বিপদ-আপদ দূর করেন। সহিহাইনে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের উদ্দেশ্য করে বললেন-
'হে নারীসমাজ, তোমরা সাদাকা করো। কেননা, আমি দেখেছি, জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক।'
সূত্র : সহিহুল বুখারি : ৩০৪, ১৪৬২; সহিহু মুসলিম : ৭৯, ৮৮৫ -হাদিসটি সহিহ।
হাফিজ ইবনু হাজার আসকালানি রহ. বলেন- 'এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, সাদাকা বান্দা থেকে আল্লাহর আযাব দূর করে দেয়।' (ফাতহুল বারি : ১/৪০৬)
.
হাফিজ ইবনু কাইয়িম আল-জাওজিয়া রহ. বলেন- 'বিভিন্ন ধরনের বালা-মুসিবত দূর করার ক্ষেত্রে সাদাকার রয়েছে আশ্চর্য প্রভাব। এমনকি তা ফাসিক, জালিম ও কাফিরের ক্ষেত্রেও কাজ করে। আল্লাহ তাআলা সাদাকার কারণে তাদের থেকে অনেক বিপদ-আপদ দূর করে দেন। এটা পুরো বিশ্ববাসী সবার নিকটই স্বীকৃত এক বাস্তবতা। সাদাকার এ আশ্চর্য প্রভাব ও উপকারিতার কথা সবাই একবাক্যে স্বীকার করে। কারণ, এটা সবার নিকট পরীক্ষিত একটি আমল।' (আল-ওয়াবিলুস সইয়িব : পৃ. নং ৩১)
.
সুতরাং আল্লাহর ওপর স্থির বিশ্বাস রাখুন এবং সুন্নাহ হিসেবে এসব দুআর পাশাপাশি সাধ্যমতো দান-সাদাকা করুন এবং সকল ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতাও অবলম্বন করুন। তাকদিরে মৃত্যু লেখা না থাকলে ইনশাআল্লাহ এতে আপনি সকল বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন। এসব দুআ ও আমল আপনার সারাজীবনই কাজে লাগবে; তাই সময়-সুযোগ করে সব মুখস্থ করে ফেলুন। বিশুদ্ধভাবে সুন্নাহ জানুন, সুন্নাহর ওপর আমল করুন এবং দুনিয়া-আখিরাতের সমূহ কল্যাণ অর্জন করুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধ সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন।

 

--------------------------------------------------

 

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের (৪০০+) pdf লিংক
https://justpaste.it/4ne9o

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.
https://justpaste.it/islamicappvideo

>> রবের_কাছে_ফেরার_গল্পগুলো
https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo

>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"
https://justpaste.it/5gol5

>> র‍্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট
https://justpaste.it/76iwz

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.
https://justpaste.it/islamicappvideo

>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক
https://justpaste.it/facebook_page_grp_link

>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?
https://justpaste.it/6q4c3

>> কুরআন এবং আপনি
https://justpaste.it/5dds8

>> কখনও ঝরে যেও না …
https://justpaste.it/3bt22

>> ফজরে আমি উঠতে পারি না
https://justpaste.it/6kjl6

>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1

>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr

>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম
https://justpaste.it/7u5es

>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়
https://justpaste.it/8dccj

>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব
https://justpaste.it/6ttuf

>> স্বার্থক মুনাজাত
https://justpaste.it/1xf0t

>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ
https://justpaste.it/4hhtd

>> তাহাজ্জুদ সিরিজ
https://justpaste.it/4ja0n

>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব
https://justpaste.it/3dxi7

>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)
https://justpaste.it/7056k

>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ
https://justpaste.it/7fh32

>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ
https://justpaste.it/9icuq

>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল
https://justpaste.it/8gmtk

>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf

>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)
https://justpaste.it/8vnly

>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir

>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh

>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5

>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর (তাওহীদ সিরিজ, আকিদা সিরিজ, তাহাজ্জুদ, সালাত, আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ নিয়ে আলোচনা, ধূলিমলিন উপহার রামাদান, আলোর পথে যাত্রা, পরকালের পথে যাত্রা, শ্রেষ্ঠ মানুষেরা(নবীদের জীবনী), জীবন-মৃত্যু-জীবন, সীরাহ(রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনী), কুরআনের কথা, কোরআনের বিভিন্ন সূরার তাফসীর, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু, সাহাবীদের ঈমানদীপ্ত জীবনী, বোনদের প্রতি উপদেশ) অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1

>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j

>> রমজানের প্রস্তুতি : মুমিনের পথ ও পাথেয়
https://justpaste.it/5tziy

>> কাফির ও ইসলামের শত্রুদের মৃত্যু বা বিপদে আনন্দ প্রকাশ
https://justpaste.it/6ksvm

>> মহিমান্বিত রজনী (লাইলাতুল কদর) সিরিজ, লাইলাতুল কদরের জন্য ১২ টি সহজ আমল এবং ইতিকাফের গুরুত্ব, ফজিলত, উদ্দেশ্য, আমল।
https://justpaste.it/1q3bs

>> বিশেষ নফল নামাজ সিরিজ (ইশরাক, দোহা, চাশত, আওয়াবিন, যাওয়াল, সালাতুল হাজত, সালাতুত তাসবিহ)
https://justpaste.it/9n0kf

>> হাদিসের শিক্ষা সিরিজ
https://justpaste.it/4fywd

>> ইস্তিখারা সিরিজ
https://justpaste.it/2i736

>> আমাদের নবীজি (সাঃ) সিরিজ
https://justpaste.it/4c1tt

>> Words With Nusus সিরিজ
https://justpaste.it/6h968

>> বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিন (জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন)
https://justpaste.it/1s2vv

>> আশুরা দিবস : বাস্তবতা, পালনীয় ও বর্জনীয়
https://justpaste.it/3kn8w

>> বিবাহের কিছু আমল ও দু‘আ এবং সুখী দাম্পত্যজীবনের জন্য ১০টি করণীয়, স্ত্রীকে বশ করে রাখার টোটকা
https://justpaste.it/58k7y

>> দুআ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লেখাসমূহ, দুআ কবুলের সময় শর্তাবলী ও আদবসমূহ, দুআ কবুলের গল্পগুলো
https://justpaste.it/7ttq6

>> কুরআন কারীম নিয়ে আতিক উল্লাহ হুজুরের অসাধারন কিছু কথা ও উপদেশ
https://justpaste.it/8abde

.

>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে। সবগুলো বিষয়ের লিংক এক জায়গায় রাখা হয়েছে। এই লিংকটা শেয়ার করতে পারেন। 
https://justpaste.it/48f6m