দ্বীনে ফেরার গল্প - আমার রবের কাছে ফেরার গল্প
.
>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"
.
>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক
https://justpaste.it/facebook_page_grp_link
.
>> র্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট
.
>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের pdf লিংক (৪০০+ বই)
.
>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.
https://justpaste.it/islamicappvideo
.
>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?
.
>> কুরআন এবং আপনি
.
>> কখনও ঝরে যেও না …
.
>> ফজরে আমি উঠতে পারি না
.
>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1
.
>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr
.
>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম
.
>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়
.
>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব
.
>> স্বার্থক মুনাজাত
.
>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ
.
>> তাহাজ্জুদ সিরিজ
.
>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব
.
>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)
.
>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ
.
>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ
.
>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল
.
>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf
.
>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)
.
>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir
.
>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh
.
>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5
.
>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1
.
>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j
.
>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে। সবগুলো বিষয়ের লিংক এক জায়গায় রাখা হয়েছে। এই লিংকটা শেয়ার করতে পারেন।
https://justpaste.it/48f6m
.
এটা রাশেদ নামক এক ব্যক্তির গল্প। সে তার গল্প বলল এ ভাবেঃ
আমার বয়স ত্রিশের বেশি হবে না যখন আমার স্ত্রী আমাদের প্রথম সন্তানের জন্ম দিয়েছিল। আমি এখনো সে রাতের কথা ভাবি। সে রাতেও আমি পুরনো অভ্যাসের ন্যায় আমার বন্ধুদের সাথে অনেক রাত অবধি বাইরে ছিলাম। রাতটা ছিল অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তায় পরিপূর্ণ; তারচেয়েও বেশি পরচর্চা, খোশগল্প আর অন্য লোকদের নিয়ে ঠাট্টা-তামাশায় ভর্তি। আমি বেশিরভাগ সময়ই ছিলাম অন্যদের হাসানোতে পারদর্শী; অন্যদের নিয়ে উপহাস করতাম আর আমার বন্ধুরা কেবল হাসত আর হাসত। আমার মনে আছে সেই রাতে আমি তাদেরকে অনেক হাসিয়েছিলাম। অন্যদের নকল করার এক অদ্ভুত প্রতিভা ছিল আমার- আমি আমার কন্ঠস্বর নকল করতে পারতাম যতক্ষণ না অবধি যাকে আমি ঠাট্টা করছি হুবহু তার কন্ঠস্বরের মত হত। আমার বিধ্বংসী তামাশার হাত থেকে কেউ রেহাই পেত না; এমনকি আমার বন্ধুরাও না; কেউ কেউ আমার মুখের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আমাকে এড়িয়েও চলত। আমার মনে আছে সেই রাতে আমি এক অন্ধ ব্যক্তিকে নিয়ে উপহাস করছিলাম যাকে আমি মার্কেটে ভিক্ষা করতে দেখেছিলাম। সবচেয়ে বাজে যা করেছিলাম তা ছিল আমি আমার পা তার সামনে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম- যাতে সে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যায় আর তারপর সে মাথা ঘুরিয়ে হতবিহ্বলের মত এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিল।
আমি যথারীতি রাতে দেরি করে বাসায় ফিরলাম এবং আমার স্ত্রীকে আমার জন্য অপেক্ষা করতে দেখলাম। তার অবস্থা ছিল ভয়াবহ, কাঁপা-কাঁপা গলায় সে আমাকে জিজ্ঞেস করলঃ “রাশেদ….এত রাত অবধি কোথায় ছিলে?”
“কোথায় আর থাকব, মঙ্গল গ্রহে ছিলাম!” আমি ব্যঙ্গভরে বললাম, “অবশ্যই আমার বন্ধুদের সাথে ছিলাম।”
তাকে চরমভাবে পরিশ্রান্ত দেখাচ্ছিল, আর অনেক কষ্টে সে চোখের পানি আটকে রেখেছিল। সে বলল, “রাশেদ, আমি প্রচন্ড ক্লান্ত। মনে হচ্ছে বাচ্চা জন্মানোর সময় এসে পড়েছে।” তার গাল বেয়ে এক চিলতে নির্বাক অশ্রু ঝরে পড়ল।
আমি অনুভব করলাম যে আমার স্ত্রীকে আমি অনেক অবহেলা করেছি। আমার উচিত ছিল তার যত্ন নেয়া আর এতগুলো রাত দেরি করে বাইরে না থাকা…..বিশেষ করে যখন সে নয় মাসের গর্ভবতী ছিল। আমি তড়িঘড়ি করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম; তাকে ডেলিভারি রুমে নিয়ে যাওয়া হল আর ঘন্টার পর ঘন্টা সে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে পার করছিল।
আমি ধৈর্য্যের সাথে বাচ্চা জন্মাবার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু তার ডেলিভারি ছিল অনেক জটিল আর আমি অনেকক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছিলাম এবং তারপরে আমি নিজেও ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। তাই হাসপাতালে আমার ফোন নাম্বার রেখে বাসায় চলে গেলাম যাতে তারা আমাকে ভালো কোন খবর দিতে পারে। একঘন্টা পর তারা আমাকে ‘সালিম’ এর জন্মের সুসংবাদ দিয়ে অভিনন্দন জানাল। আমি তাড়াতাড়ি হাসপাতালে ছুটে গেলাম। যখনই তারা আমাকে দেখল, তখনই আমাকে সেই ডাক্তারের সাথে দেখা করতে বলল যে আমার স্ত্রীর ডেলিভারির দায়িত্বে ছিল। “কিসের ডাক্তার?” আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,“আমি আমার সন্তান সালিমকে দেখতে চাই!”
তারা বললঃ “প্রথমে ডাক্তারের সাথে দেখা করুন”।
আমি ডাক্তারের কাছে গেলাম, তিনি আমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলতে লাগলেন এবং আল্লাহর হুকুমের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ
“আপনার সন্তানের চোখে মারাত্মক রকমের বিকৃতি রয়েছে আর দেখে মনে হচ্ছে যে তার দৃষ্টিশক্তি নেই।” আমার মাথা নত হয়ে গেল যখন আমি কান্না আটকাবার জন্য যুদ্ধ করছিলাম…মার্কেটের সেই অন্ধ লোকটির কথা মনে পড়ল যাকে আমি ল্যাং মেরে ফেলে দিয়েছিলাম অন্যদের হাসানোর জন্য।
সুবহানাল্লাহ! যেমন কর্ম তেমন ফল! আমি মনমরা হয়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থাকলাম…কি বলব তা আমার জানা ছিল না। তারপর আমার স্ত্রী ও বাচ্চার কথা মনে হল। আমি ডাক্তারকে তার সহানুভূতিশীলতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আমার স্ত্রীকে দেখতে গেলাম। আমার স্ত্রী দুঃখী ছিল না। সে আল্লাহর হুকুমের প্রতি আস্থাশীল ছিল… সে ছিল হৃষ্টচিত্ত…কতবারই না আমাকে সে নিষেধ করেছিল অন্যদের প্রতি তামাশা না করতে! “পরনিন্দা করো না,” সে সবসময় আমাকে বারংবার এ কথা বলত…আমরা হাসপাতাল ছাড়লাম আর সালিমকে আমাদের সাথে নিয়ে আসলাম।
বাস্তবে আমি ওর প্রতি খুব একটা মনযোগী ছিলাম না। আমি এমনভাব করতাম যেন সে আমাদের সাথে নেই। যখন সে চিৎকার করে কাঁদত, তখন আমি শোয়ার ঘরে পালিয়ে যেতাম সেখানে ঘুমানোর জন্য। আমার স্ত্রী তার বেশ ভালো দেখাশোনা করত আর ওকে খুব ভালোবাসত। কিন্তু আমি নিজে ওকে ঘৃণাও করতাম না আবার ভালোবাসতেও পারতাম না।
সালিম বড় হতে লাগল। সে হামাগুড়ি দিতে শুরু করল, তার হামাগুড়ি দেয়ার ধরনটাও ছিল অদ্ভুত। যখন তার বয়স প্রায় এক বছরের কাছাকাছি, সে কথা বলা শুরু করল আর আমরা আবিষ্কার করলাম যে সে পঙ্গু। আমার কাছে মনে হল সে আমার ঘাড়ে আরো বেশি বোঝাস্বরূপ হয়ে দাঁড়াল। তার পরে আমার স্ত্রী উমার ও খালিদের জন্ম দিল। বছর কেটে যেতে লাগল আর সালিম এবং তার ভাইয়েরাও বড় হতে লাগল।ঘরে বসে থাকতে আমার কখনোই ভালো লাগত না, সবসময়ই আমি বন্ধু-বান্ধবদের সাথে বাইরে থাকতাম…আসলে আমি ছিলাম তাদের কাছে খেলনার মত(তাদের ইচ্ছেমাফিক তাদের আমোদিত করতাম)।
আমার স্ত্রী কখনোই আমার সংশোধনের পেছনে হাল ছাড়ত না। সে প্রতিনিয়ত আমার হেদায়াতের জন্য দু’আ করত। আমার বেয়াড়া স্বভাবের প্রতি সে কখনোই রাগান্বিত হত না, কিন্তু তার মনটা খুবই খারাপ হত যখন সে দেখত আমি সালিমকে বাদ দিয়ে তার অন্য ভাইদের প্রতি মনযোগ দিচ্ছি। সালিম বড় হতে লাগল আর সেই সাথে তাকে নিয়ে আমার চিন্তাও বেড়ে যেতে লাগল। আমার স্ত্রী তাকে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ স্কুলে ভর্তি করানোর ব্যাপারে আমাকে বললে আমি কিছু মনে করি নি।
বছর পার হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা আসলে আমি অনুভব করি নি। আমার দিনগুলো ছিল প্রায় একই রকম। কাজ, খাওয়া, ঘুম আর বন্ধুদের সাথে বাইরে আড্ডা মারা। এক শুক্রবারে, আমি সকাল ১১টার সময় ঘুম থেকে উঠলাম। আমার জন্য তা ছিল অনেক তাড়াতাড়ি। আমার দাওয়াত ছিল এক মজলিসে যাওয়ার, তাই আমি কাপড়-চোপড় পড়ে সুগন্ধী মাখলাম আর বেরিয়ে যেতে উদ্যত হলাম। আমি শোবার ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম আর তখনই সালিমকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলাম! এটা ছিল প্রথম বার যখন আমি সালিমকে তার শৈশবের পর কাঁদতে দেখেছি। দশ বছর কেটে গিয়েছে, আর আমি তার প্রতি মনযোগ দিই নি! আমি তখন তাকে এড়িয়ে যেতে চাইলাম, কিন্তু পারলাম না…আমি শুনতে পেলাম সে তার মাকে ডাকছে। আমি তার দিকে মুখ ঘুরালাম ও তার পাশে গেলাম।
জিজ্ঞেস করলামঃ “সালিম! তুমি কাঁদছ কেন?”
আমার গলা শুনে সে কান্না থামিয়ে দিল। তারপর যখন সে বুঝতে পারল আমি তার খুব কাছে, সে তার ছোট ছোট হাত দিয়ে চারপাশে হাতড়াতে লাগল। তার সমস্যা কি? আমি আবিষ্কার করলাম যে সে আমার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে চাইছিল! মনে হচ্ছিল সে যেন বলছে, “এখন তুমি আমাকে দেখছো! এই দশ বছর তুমি কোথায় ছিলে!” আমি তাকে অনুসরণ করতে লাগলাম…সে তার রুমে চলে গেল। প্রথমে সে আমাকে তার কান্নার কারণ বলতে চাইছিল না। আমি তার সাথে শান্ত থাকার চেষ্টা করলাম…সে আমাকে তার কান্নার কারণ বলতে শুরু করল আর আমি তা শুনে কেঁপে উঠছিলাম।
আপনারা কি জানেন সেই কারণটা কি? তার ভাই উমার, যে কিনা তাকে মসজিদে নিয়ে যায়, দেরি করেছিল। আর যেহেতু, দিনটা ছিল জুমুআ’, সালিম প্রথম কাতারে জায়গা পাবে কিনা এই ভেবে ভয় পাচ্ছিল। সে উমারকে ডাকছিলো…তার মাকে ডাকছিলো…কিন্তু কেউই সাড়া দিচ্ছিল না, তাই সে কাঁদছিল। তার দৃষ্টিহীন চোখ থেকে ঝরে পড়া অশ্রুর দিকে আমি তাকিয়ে থাকলাম। তার বাকি কথাগুলো আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। আমি আমার হাত তার মুখের ওপর বুলিয়ে বললামঃ “সালিম! তুমি কি এজন্যই কাঁদছিলে?”
সে বলল, “হ্যাঁ।”
আমি আমার বন্ধুদের কথা ভুলে গেলাম, ভুলে গেলাম আমার দাওয়াতের কথা আর তাকে বললামঃ “কেঁদো না সালিম। তুমি কি জানো তোমাকে আজ কে মসজিদে নিয়ে যাবে?”
“অবশ্যই উমার….কিন্তু সে সবসময় দেরি করে।”
আমি বললাম, “না, আমি তোমাকে নিয়ে যাবো।”
সালিম হতবাক হয়ে গেলো…সে এটা বিশ্বাস করতে পারছিল না। ভাবছিল আমি বুঝি তার সাথে ঠাট্টা করছিলাম। তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল আর সে আবারো কাঁদতে লাগল। আমি নিজ হাতে তার চোখের পানি মুছে দিলাম, তারপর তার হাত ধরলাম। আমি তাকে মসজিদে গাড়ীতে করে নিয়ে যেতে চাইলাম। সে না করল আর বলল, “মসজিদ কাছেই…আমি সেখানে হেঁটে যেতে চাই।” হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ, এ কথাই সে আমাকে বলল।
আমি মনে করতে পারছিলাম না যে শেষ কবে মসজিদে প্রবেশ করেছিলাম, কিন্তু সেবার প্রথমবারের মত আমি ভয় পাচ্ছিলাম ও অনুশোচনায় ভুগছিলাম এত বছর ধরে আমি কি অবহেলা করেছি ভেবে। মসজিদ মুসল্লীতে পরিপূর্ণ ছিল, তারপরেও আমি সালিমের জন্য প্রথম কাতারে একটা স্থান খুঁজে পেলাম। আমরা একসাথে জুমু’আর খুতবা শুনতে লাগলাম, এবং সে আমার পাশে সালাত আদায় করল। কিন্তু বাস্তবে, আমিই ওর পাশে সালাত আদায় করেছিলাম।
সালাতের পর সালিম আমাকে একটা কোরআন এনে দিতে বলল। আমি অবাক হয়ে গেলাম! সে তো অন্ধ ছিল, সে কিভাবে তা পড়বে? আমি তার অনুরোধ প্রায় ফেলে দিচ্ছিলাম, কিন্তু সে কষ্ট পাবে এই ভয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম তার অনুরোধকে সম্মান জানাব। আমি তাকে কোরআন দিলাম। সে আমাকে সূরা কাহফ খুলতে বলল। আমি সূচিপত্র দেখে পাতা উল্টাতে লাগলাম যতক্ষণ না সূরাটা পাই। সে কোরআনটা আমার কাছ থেকে নিলো, তার সামনে রাখল আর সূরাটা তিলাওয়াত করতে শুরু করল…চোখ বন্ধ করে…ও আল্লাহ! পুরো সূরাটাই তার মুখস্থ ছিল।
আমি নিজের কাছে লজ্জিত হয়ে গেলাম। আমি একটা কোরআন নিলাম…অনুভব করলাম আমার পেশিগুলো যেন কাঁপছে…আমি পড়তে থাকলাম তো পড়তেই থাকলাম। আমি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করলাম আমাকে মাফ করে দিতে ও সরল পথে পরিচালনা করতে। আমি আর সহ্য করতে পারছিলাম না…আমি শিশুর মত কাঁদতে শুরু করলাম। মসজিদে তখনো কিছু লোক সুন্নত সালাত আদায় করছিল… তাদের উপস্থিতিতে আমি লজ্জাবোধ করছিলাম, তাই আমি কান্না থামাতে চেষ্টা করলাম। আমার কান্না দীর্ঘ শ্বাসযুক্ত ফোঁপানোতে পরিণত হল। কেবলমাত্র অনুভব করলাম একজোড়া ছোট হাত আমার মুখের ওপর এসে পড়েছে, আর আমার অশ্রু মুছে দিচ্ছে। এটা ছিল সালিম! আমি তাকে বুকে টেনে নিলাম…তার দিকে তাকালাম। নিজেকে বললাম…তুমি(সালিম) অন্ধ নও, বরং অন্ধ তো আমি, কারণ আমি সেই সব দুষ্ট লোকদের দ্বারা বিভ্রান্ত হচ্ছিলাম যারা আমাকে জাহান্নামের আগুনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল। আমরা বাড়ি ফিরে এলাম। আমার স্ত্রী সালিমকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তা করছিল, কিন্তু তার দুশ্চিন্তা আনন্দময় অশ্রুতে পরিণত হয়ে গেলো যখন সে শুনল যে আমি সালিমের সাথে জুমু’আর সালাত পড়েছি।
সেই দিন থেকে আমার কখনো জামাতে সালাদ আদায় করা বাদ পড়ে নি। আমি আমার খারাপ বন্ধুদের সঙ্গ ত্যাগ করেছিলাম…আর মসজিদে যেসব সৎ লোকদের সাথে পরিচয় হয়েছিল, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করলাম। তাদের সাথে মিলে আমি ঈমানের মধুরতার স্বাদ আস্বাদন করলাম। তাদের কাছ থেকে শিখলাম কোন জিনিসগুলো দুনিয়া থেকে আমার মনযোগ সরাতে পারবে। আমি কখনোই হালাকা(যে মজলিসে আল্লাহর যিকির হয়) কিংবা বিতরের সালাত বাদ দিতাম না। একমাসের মধ্যেই আমি পুরো কোরআন বেশ কয়েকবার পড়ে ফেললাম। আল্লাহ্ আমার পরনিন্দা ও অন্যদের ব্যঙ্গ করার গোনাহ ক্ষমা করবেন, এই আশায় আমি আমার যবান আল্লাহর যিকিরে সিক্ত করলাম। আমি আমার পরিবারের নৈকট্য অনুভব করলাম। আমার স্ত্রীর চোখে আগে যে ভয় ও অনুকম্পা মিশ্রিত দৃষ্টি ছিল, তা দূর হয়ে গেল। সালিমের মুখ থেকে এখন আর এক চিলতে হাসি কখনোই অদৃশ্য হয় না। তাকে দেখলে মনে হতো যেন সে এই দুনিয়ার সব কিছুর মালিক। আমি আল্লাহকে তাঁর এই অফুরন্ত নিয়ামতের জন্য অশেষ ধন্যবাদ দিতে লাগলাম।
একদিন আমার সৎ বন্ধুরা মিলে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে দূরবর্তী এক জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা করল। তাদের সাথে যাওয়ার ব্যাপারে আমি ইতস্তত করছিলাম। আমি ইসতিখারার সালাত আদায় করলাম ও আমার স্ত্রীর সাথে আলোচনা করলাম। ভেবেছিলাম সে হয়তো না করবে…কিন্তু এর উল্টোটাই ঘটল! সে খুবই খুশি হল এমনকি আমাকে উৎসাহিতও করল…কারণ অতীতে সে আমাকে দেখেছে ওর সাথে কোন আলোচনা না করেই খারাপ কারণে আমি অনেক জায়গা ঘুরে বেরিয়েছি। আমি সালিমের কাছে গিয়ে আমার ভ্রমণের ব্যাপারে বললাম। অশ্রুসজল নয়নে সে আমাকে তার ছোট্ট বাহুদ্বয় দ্বারা জড়িয়ে ধরল…
আমি সাড়ে তিন মাসের জন্য বাড়ীর বাইরে ছিলাম। সেই সময়ে, আমি সুযোগ পেলেই আমার স্ত্রী-সন্তানদের সাথে যোগাযোগ করতাম। আমি তাদেরকে প্রচন্ডভাবে মিস করতাম…আর হ্যাঁ, সালিমকে কিভাবে মিস করতাম। আমি তার গলার আওয়াজ শুনতে চাইতাম…যবেত্থেকে আমি সফরে বেরিয়েছিলাম, একমাত্র সেই আমার সাথে কথা বলেনি। আমি যখনই ফোন করতাম, তখনই হয় সে স্কুলে থাক নতুবা মসজিদে থাকত। যখনই আমি আমার স্ত্রীকে বলতাম সালিমকে আমি কত্ত মিস করি, তখনই সে অত্যন্ত তৃপ্তির হাসি হাসত, কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটল একবারই, যেবার আমি তাকে শেষ ফোন করেছিলাম। আমি তার আগের হাসি শুনতে পেলাম না। তার কন্ঠস্বর ছিলভিন্ন । আমি তাকে বলেছিলাম, “সালিমকে আমার সালাম জানিয়ো,” আর সে বলেছিল, “ইনশাল্লাহ্,” অতঃপর সে চুপ ছিল।
অবশেষে আমি ঘরে চলে আসলাম। আমি দরজার কড়া নাড়লাম। আমি আশা করছিলাম হয়তো সালিম দরজা খুলবে, কিন্তু দরজায় খালিদকে দেখে খুবই অবাক হলাম, তার বয়স চার বছরের বেশি ছিল না। আমি তাকে কোলে নেয়ার পর সে বাবা! বাবা! বলে তীক্ষ্ণ চিৎকার দিল। ঘরে ঢোকার পর আমার অন্তরে কেন জানি চাপা একটা উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
আমি আল্লাহর নিকট অভিশাপগ্রস্ত শয়তান হতে পানাহ্ চাইলাম…স্ত্রীর দিকে এগিয়ে গেলাম…তার চেহারা ছিল অন্যরকম। যেন মনে হচ্ছিল সে খুশী হবার ভান করছে। আমি তাকে খুটিয়ে দেখতে লাগলাম আর জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার কি হয়েছে?” সে বলল, “কই, কিছু হয়নি তো।” হঠাৎ করে আমার সালিমের কথা মনে পড়ল। তাকে জিজ্ঞেস করলাম “সালিম কোথায়?” সে মাথা নিচু করে ফেলল। কোনো জবাব দিল না। তার গাল বেয়ে উষ্ণ অশ্রু নেমে এল।
“সালিম! কোথায় আমার সালিম?” আমি চিৎকার করে শুধালাম।
ঠিক সেই মূহুর্তে আমি খালিদকে তার নিজের ভাষায় বলতে শুনলাম, “বাবা…থালিম আল্লাহর কাছে জান্নাতে চলে গেছে…”
আমার স্ত্রী আর সহ্য করতে পারছিল না। সে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। সে প্রায় মেঝেতে পড়ে যাচ্ছিল, এবং রুম থেকে বেরিয়ে গেল। পরে আমি জানতে পারলাম যে আমার আসার দুসপ্তাহ আগে সালিম জ্বরাক্রান্ত হয়েছিল, তাই আমার স্ত্রী তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল…জ্বর আরো মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল ও সালিম সেরে উঠছিল না…যতক্ষণ না তার আত্মা দেহত্যাগ করেছিল।
এই দুনিয়া যদি তার বিশালতা সত্ত্বেও তোমার সামনে সংকীর্ণ হয়ে পড়ে, আর তোমার আত্মা যদি তার ভার সইতে না পেরে তোমাকে ছেড়ে যেতে উদ্যত হয়, তখন বলে ওঠোঃ “ও আল্লাহ্।” যদি সমাধান না থাকে, পথগুলো খুব বন্ধুর হয়ে পড়ে এবং রজ্জুগুলো যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় আর তোমার আশা নিঃশেষ হয়ে যায়, তখন ডাক দাওঃ “ও আল্লাহ।”
আল্লাহ্ সালিমের মৃত্যুর পূর্বে তার মাধ্যমে তার পিতাকে সঠিক পথে আনতে ইচ্ছা করেছিলেন। কত করুণাময়ই না আল্লাহ্!
“অনেক বড় কাজও নিয়্যাতের কারণে ক্ষুদ্র হয়ে যায় আবার অনেক ক্ষুদ্র কাজও বড় হয়ে যায় কেবলমাত্র নিয়্যাতেরই কারণে…..।
.......................................
.
এক স্বামীর গল্প যিনি তার স্ত্রীর দিকে তাকাতেও লজ্জা পেতেন
.
পড়ে দেখুন আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ধৈর্যশীলদের প্রতিদান কত উত্তম। এটা পড়ার পর আপনার অনুভূতিটা হবে অন্যরকম। মন থেকে দোয়া আসবে, জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে যেন আমরা আল্লাহ্র উপর ভরসা রাখতে পারি ধৈর্য ধরতে পারি। নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম পরিকল্পনাকারী ও প্রতিদানকারী। আর মনে পরবে সেই আয়াতটি- "হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (২ঃ ১৫৩)
[এ গল্পটি বলেছিলেন কার্ডিওভাসকুলার সার্জন প্রফেসর খালিদ আল জুবাইর, তারই এক লেকচারে। ]
একবার আমি আড়াই বছরের এক বাচ্চার চিকিৎসা করি। এটা ছিল এক মঙ্গলবার এবং বুধবারে বাচ্চাটির স্বাস্থ্য বেশ ভালই ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ১১.১৫ এর দিকে ... আমি কখনই ঐ সময়টার কথা ভুলতে পারবো না তখনকার প্রচন্ড আলোড়নের কারনে। এক নার্স আমাকে এসে জানালো যে একটি বাচ্চার হৃদযন্ত্র এবং শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি বাচ্চাটির কাছে গেলাম এবং প্রায় ৪৫ মিনিটের মত কার্ডিয়াক মাসাজ করলাম। এই পুরো সময়টা জুড়ে হৃদপিন্ড কাজ করে নি। তারপর, আল্লাহর ইচ্ছায় পুনরায় হৃদপিন্ড তার স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপ শুরু করলো এবং আমরা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম। আমি শিশুটির পরিবারকে তার অবস্থা সম্পর্কে জানাতে গেলাম। আপনারা হয়ত জানেন যে, রোগীর পরিবারকে তার খারাপ অবস্থা সম্পর্কে জানানোর বিষয়টা কতটা বিব্রতকর। একজন চিকিৎসকের জন্য এটা সবচাইতে কষ্টসাধ্য কাজগুলোর একটি যদিও এর দরকার আছে। তাই আমি বাচ্চার বাবাকে খুজতে লাগলাম কিন্তু পাচ্ছিলাম না। তখন আমি বাচ্চাটির মাকে দেখতে পেলাম। আমি তাকে জানালাম যে রোগীর গলায় প্রচুর রক্তক্ষরন হৃদপিন্ডের এই হঠাৎ অচলাবস্থার কারন; আমরা রক্তক্ষরনের সঠিক কারন বলতে পারছি না এবং আশংকা করছি তার মস্তিষ্ক মরে গেছে। ...
আপনাদের কি মনে হয়? এ কথা শুনে বাচ্চাটির মায়ের প্রতিক্রিয়া কি ছিল? সে কি কান্না শুরু করেছিল? আমাকে দোষারোপ করছিলো? না। এমন কিছুই হয় নি। বরং তিনি বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ! (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার)” এবং চলে গেলেন। প্রায় ১০ দিন পর, বাচ্চাটি নড়তে শুরু করলো। আমরা আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করলাম এবং খুব আনন্দিত হলাম এ কারনে যে তার মস্তিষ্কের অবস্থা বেশ ভালই ছিল। ১২ দিন পর বাচ্চাটির হৃদযন্ত্র আবার বন্ধ হয়ে গেল সেই একই জায়গায় রক্তক্ষরনের ফলে। আমরা ৪৫ মিনিটের মত আরেকটা কার্ডিয়াক মাসাজ করলাম কিন্তু এবারে আর কাজ হল না, হৃদপিন্ড চালু হলো না। আমি বাচ্চার মাকে জানালাম যে, আর কোন আশা নেই। তখন সে বলল, “আলহামদুলিল্লাহ! হে আল্লাহ, যদি ওর সুস্থতায় কোন মঙ্গল থেকে থাকে তবে ওকে সুস্থ করে দাও, হে আমার প্রভু!” আল্লাহর অশেষ রহমতে একটু পরে বাচ্চার হৃদপিন্ড আবার সচল হলো। একজন অভিজ্ঞ ট্রাকিয়া বিশেষজ্ঞ রক্তক্ষরন বন্ধ করতে সক্ষম হওয়ার পর হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা পর্যন্ত এই ছেলেটি আরো ৬ বার এরকম হৃদপিন্ডের অচলাবস্থার স্বীকার হয়েছিল। ইতোমধ্যে সাড়ে তিন মাসের মত হয়ে গেছে এবং বাচ্চাটি সুস্থ হচ্ছিল বটে কিন্তু চলাফেরা করতে পারছিল না। তারপর যখনই সে একটু করে চলতে আরম্ভ করলো, এর চাইতেও অদ্ভুত এবং বিরাট আরেক মস্তিষ্কের সমস্যা দেখা দিল তার, যা আমি কখনও এর আগে দেখি নি। আমি তার মাকে এই মারাত্নক ঝামেলার কথা জানালাম এবং তিনি কেবল বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ!” এবং চলে গেলেন। আমরা অনতিবিলম্বে বাচ্চাটিকে অন্য একটি সার্জিকাল ইউনিটের হাতে তুলে দিলাম যারা মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র নিয়ে কাজ করে এবং তারা বাচ্চাটির চিকিৎসা চালিয়ে যেতে লাগলো। তিন সপ্তাহ পর বাচ্চাটি মস্তিষ্কের জটিলতা কাটিয়ে উঠলেও নড়াচড়া করতে পারছিল না। আরো দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেল এবং এখন অদ্ভুত এক রক্তদূষণের স্বীকার হলো এবং শরীরের তাপমাত্রা প্রায় ৪১.২ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে (১০৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট) উঠলো। আমি পুনরায় বাচ্চার মাকে এই ভীষন নাজুক পরিস্থিতির বিষয়ে অবহিত করলাম এবং তিনি বরাবরে মতনই ধৈর্য্য ও দৃঢতার সাথে বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ! হে আল্লাহ, যদি ওর সুস্থতায় কোন মঙ্গল থেকে থাকে, তবে ওকে সুস্থ করে দাও।” ৫ নং বেডের বাচ্চার পাশে বসে থাকা এই মায়ের সাথে কথা শেষে আমি গেলাম ৬ নং বেডের আরেক শিশুর কাছে। এই শিশুটির মা কাঁদছিল এবং চিৎকার করছিল, “ডাক্তার! ডাক্তার! কিছু একটা করেন। আমার ছেলের শরীরের তাপমাত্রা ৩৭.৬ ডিগ্রী সেঃ (৯৯.৬৮ ডিগ্রী ফাঃ) সে মারা যাচ্ছে! সে মারা যাচ্ছে!” আমি অবাক হয়ে বললাম, “ঐ ৫ নম্বর বেডের মায়ের দিকে তাকান। তার সন্তানের ৪১ ডিগ্রী সেঃ (১০৬ ডিগ্রী ফাঃ) এর ওপরে জ্বর। এরপরেও উনি শান্ত রয়েছেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করছেন।” সে বললো, “ঐ মহিলার কোন বোধশক্তি নেই এবং কি হচ্ছে সে বিষয়ে কোন জ্ঞান নেই।” ঠিক এই মুহুর্তে আমার মনে পড়ে গেল রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর একটা হাদিসের কথা ... “আগন্তুকদের জন্য সুসংবাদ!” কেবল দুইটি শব্দ ... কিন্তু এই শব্দ দুটো নিঃসন্দেহে একটা পুরো জাতিকে আলোড়িত করবার ক্ষমতা রাখে। আমার দীর্ঘ ২৩ বছরের চিকিৎসা জগতের জীবনে এই বোনটির মত ধৈর্য্যশীল আর কাউকে দেখি নি। আমরা বাচ্চাটির যত্ন চালিয়ে যেতে লাগলাম এবং ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ছয় মাস কেটে গেছে এবং বাচ্চাটি অবশেষে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে বেরিয়েছে রিকভারি ইউনিট থেকে। হাটতে পারে না, দেখতে পায় না, শুনতে পাচ্ছে না, নড়তে পারছে না, হাসছে না ... এবং এমন নগ্ন বুক নিয়ে বেরিয়ে এসেছে যেন হৃদপিন্ডের স্পন্দনগুলো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। শিশুটির মা নিয়মিত পোশাক পরিবর্তন করানো ইত্যাদি চালিয়ে যাচ্ছিলেন এবং ধৈর্য্যশীল থাকলেন আর ছিলেন আশাবাদী। আপনারা কি জানেন পরবর্তীতে এর কি হয়েছিল? আপনাদেরকে সে বিষয়ে বলবার আগে বলুন, এই শিশুটির সম্পর্কে আপনারা কি ধারনা করেন যে কিনা এত এত কঠিন রোগ-শোক, বিপদের মুখোমুখি হয়ে এসেছে? এবং এই মৃত্যুপথযাত্রী শিশুর সহনশীল মায়ের কাছে আপনারা কি আশা করেন যার কেবল মাত্রা আল্লাহতা’আলার কাছে দু’আ আর সাহা্য্যের প্রত্যাশা করা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না? আপনারা জানেন আড়াই বছর পর কি হয়েছিল? এই শিশুটি সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করে ছিল আল্লাহতা’আলার অশেষ রহমত এবং এই পরহেযগার মায়ের পুরষ্কার হিসেবে। সে এখন তার মায়ের সাথে দৌড়ে বেড়ায় যেন কোন দিনই তার কিছুই হয় নি এবং সে সুঠাম স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠেছে যেমনটি আগেও ছিল। গল্প এখানেই শেষ নয়। এটা সে জিনিস নয় যা আমাকে আলোড়িত করেছিল এবং আমার চোখে পানি নিয়ে এসেছিল। যে জিনিসটি আমায় কাদিয়েছিল তা হচ্ছে, বাচ্চাটি হাসপাতাল থেকে বের হবার প্রায় বছর দেড়েক পর অপারেশন ইউনিটের একজন আমাকে জানালো যে একলোক, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ আমার সাথে দেখা করতে চায়। আমি তাদের পরিচয় জানতে চাইলে সে বলল সে চেনে না। তো আমি তাদের দেখার জন্য গেলাম এবং দেখলাম এরা সেই ছেলেটির মা-বাবা আমি যার চিকিৎসা করেছিলাম। ছেলেটির তখন পাঁচ বছর এবং একটি ফুটফুটে ফুলের মতন স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠেছে এরই মাঝে যেন তার কখনই কিছু হয় নি। তাদের কোলে চার মাস বয়সী আরেকটি ছোট বাচ্চা ছিল সেদিন। আমি তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালাম এবং কৌতুক করে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম এই কোলের বাচ্চাটি কি তাদের ১৩ তম নাকি ১৪ তম সন্তান। তিনি আমার দিকে চমৎকার এক হাসির সাথে তাকালেন যেন আমার জন্য তার করুণা হচ্ছে। তিনি বললেন, “সদ্য ভূমিষ্ট এই শিশুটি আমাদের দ্বিতীয় সন্তান, আর আপনি যার চিকিৎসা করেছিলেন সে ছিল আমাদের প্রথম সন্তান যাকে আমরা পেয়েছিলাম ১৭ বছরের অনুর্বরতার পর। এই শিশুটিকে পাবার পর, সে এমন সব বিপদের সম্মুখীন হয়েছে যা আপনি নিজেই দেখেছেন।“ একথা শুনে, আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না এবং এরই মাঝে আমার চোখ দুটো কান্নায় ভিজে উঠেছে। আমি তারপর হালকাভাবে লোকটির হাত ধরে টেনে আমার রুমে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম তার স্ত্রীর সম্পর্কে। “কে আপনার এই স্ত্রী যিনি ১৭ বছরের বন্ধাত্বের পর পাওয়া পুত্রের এত মারাত্নক সব বিপর্যয়ের মূহুর্তগুলোতেও প্রচন্ড ধৈর্য্যের সাথে মোকাবিলা করেছেন? তার অন্তর বন্ধা হতে পারে না। অবশ্যই সেটা বিশাল ঈমানের দ্বারা উর্বর।” আপনারা জানেন তিনি কি উত্তর করেছিলেন? ভালো করে শুনে রাখুন হে আমার প্রানপ্রিয় ভাই ও বোনেরা। তিনি বলেছিলেন, “আমার সাথে এই মহিলার বিয়ে হয়েছিল ১৯ বছর ধরে এবং এই দীর্ঘ সময়ে আমি কখনও তাকে কোন সংগত কারন ছাড়া তাহাজ্জুদ সালাত ছেড়ে দিতে দেখি নি। আমি দেখিনি তাকে কখনও পরনিন্দা করতে, অযথা গল্প-গুজবে মত্ত হতে কিংবা মিথ্যা বলতে। যখনই আমি বাড়ি থেকে বের হয় বা ফিরে আসি সে নিজে দরজা খুলে দেয়, আমার জন্য দু’আ কর এবং আমাকে আপ্যায়ন করে। এবং সে যা কিছু করে সে সর্বোচ্চ ভালবাসা, যত্ন, সৌজন্য এবং মমত্বের পরিচয় রাখে।” লোকটি শেষ করলো এভাবে, “নিশ্চয়ই, ডাক্তার সাহেব, সে যে সমস্ত আদর্শ আচরন ও মমত্ববোধের সাথে আমার সাথে আচরন করে, আমি এমনকি তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকাতেও লজ্জাবোধ করি।” তাই আমি তাকে বললাম, “সত্যিই। ঠিক এমনটিই সে আপনার কাছ থেকে প্রাপ্য।” এখানেই শেষ।
আল্লাহ বলেন,“এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যখন তারা বিপদে পতিত হয়, তখন বলে, নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো।।“ (সুরা আল বাকারাহ ১৫৫-১৫৬)
(হে আল্লাহ আমাদের সবাইকে ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে তোমার কাছে বেশি বেশি সাহায্য প্রার্থনা করার তাওফিক দাও। আমাদেরকে ধৈর্যশীলদের দলে অন্তর্ভুক্ত করে নাও।)
.........................................
.
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প = পর্ব (১-২৯)
.
#অন্যরকম_ভাবনা
আমার লিস্টের প্রিয় বোনগুলোর প্রতি আহ্বান!
আলহামদুলিল্লাহ্,আমার ফ্রেন্ডলিস্টটা এক ঝাঁক দ্বীনি বোন দিয়ে পরিপূর্ণ এক ফ্রেন্ডলিস্ট মাশাআল্লাহ বারাকাল্লাহ!💖
তো এই বোনগুলোর ভিতর অধিকাংশই আমার মত জেনারেল লাইনে পড়ুয়া।আল্লাহর অশেষ রহমত,এদের বেশিরভাগ অনেক আগেই আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার সবচেয়ে বড় নেয়ামত হেদায়েত,সেই হেদায়েত প্রাপ্ত!অনেকেই সম্প্রতি হেদায়েত পেয়ে মহান রবকে খুঁজে পেয়েছে।নর্দমায় ছুঁড়ে ফেলেছে নিজের গাফেল জীবন আর নিজের নফসের সাথে নিজের পরিবারের সাথে যুদ্ধ করে খুঁজে চলেছেন জান্নাতের পথ!আল্লাহ সহজ করে দিন আমার সেইসব বোনদের এই জান্নাত খুঁজে ফেরার পথে।
#তো_যা_আসলে_বলতে_চাচ্ছিলাম_সেটা_হচ্ছে,
কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে?কোন মানুষটার জন্য?কিভাবে?কেমন করে এই দ্বীনের পথে আসা?জাহেলিয়াত কে পেছনে ফেলে কিসে প্রভাবিত হয়ে রব্বে করীমের দিকে ফিরে আসা?এই গল্প গুলো জানতে চাই,অন্য বোনদের কে জানাতে চাই যেন আমার সেই বোনগুলোও ফিরে আসে যারা এখনো দয়াময় রবকে ভুলে আছে,রবের বিধান কে ভুলে আছে!
এখন কথা হলো এই ঘটনা কিভাবে জানবো?
সংক্ষেপে বলি,দ্বীনের পথে আসা আমার বোনগুলো,আপনারা আপনার দ্বীনে ফেরার গল্প,আপনার রবকে খুজে পাওয়ার গল্প অত্যন্ত যত্ন সহকারে লিখে আমার ইনবক্সে শেয়ার করবেন।(বাংলায় লিখতে হবে)
আমি সেই লেখা আমার টাইম লাইনে শেয়ার করবো(পরিচয় গোপন রাখা হবে, কেউ চাইলে পরিচয় প্রকাশ করতে পারেন)। অবশ্যই সত্য কথা লিখবেন,মিথ্যার আশ্রয় নিবেন না।
(মহান আল্লাহ কিন্তু সব দেখছেন)।
এভাবে এক একটা লেখা আমি আমার টাইম লাইনে শেয়ার করবো যেগুলো আমার লিস্টের অন্য বোনেরা লাইক,শেয়ার করবে এবং গল্প টা পড়ার পর নিজের মূল্যবান মন্তব্য কমেন্ট বক্সে লিখবে।আর এভাবেই দ্বীনে ফেরার দাওয়াহ,পর্দার দাওয়াহ,গাফেল থেকে নেককার বান্দী আমাতুল্লাহ হওয়ার দাওয়াহ ছড়িয়ে পড়বে অন্য বোনদের টাইম লাইনে!হয়তো তা হেদায়েতের কারণ হবে আমাদেরই মত কোনো এক বোনের, ইনশাআল্লাহ!
এভাবে সবার লেখা শেয়ার করার পর সাড়া জাগানো, গাফেল হৃদয়েও হেদায়েতের ঝড় তোলা সেরা সেরা লেখা গুলো সিলেক্ট করবো এবং আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা যদি আমার হায়াত রাখেন তবে সেই সিলেক্ট করা নির্বাচিত লেখাগুলো একত্র করে একটা বই বের করার চেষ্টা করবো ইন--শা--আল্লাহ।💖💖💖
(ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ)
গল্পের হেডলাইন হবে
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
তো বোনেরা,শুরু হয়ে যাক নিজেই নিজের গল্প লেখা!💘
আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন।
পোস্ট টা কপি অথবা শেয়ার করে অন্য বোনদেরকেও দেখার সুযোগ করে দিবেন এবং কপি করলে অবশ্যই আমাকে ট্যাগ দিবেন।যদি আপনি নিজে অংশগ্রহণ না করেন,অন্য কেউ অংশগ্রহণ করলে আপনার মাধ্যমে লেখা আমার পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিলেও হবে ইনশাআল্লাহ।
#শামছুন্নাহার রুমি
................................................
.
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ১
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আলহামদুলিল্লাহ্,, আল্লাহ তা'আলা আমাকে হিদায়াত দান করেছেন প্রায় এক বছর আগে।।আমার জন্ম একটা নামমাত্র মুসলিম পরিবারে,,যেখানে ইসলাম মানা শুধু রমজানের সাওমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।আমাদের পরিবারে আমরা দুই বোন,,বাবা আর মা।। পরিবারের কেউ এক ওয়াক্ত সালাতও আদায় করে না,,যদিও এখন আলহামদুলিল্লাহ্ আমার মা আর বোন কিছুটা সালাত শুরু করেছে।।ছোট বেলা থেকে কখনো বাবা মাকে বলতে শুনিনি নামায পড়তে হবে রোযা রাখতে হবে,,বরং তারা সব সময় চেয়েছেন তাদের মেয়ে অনেক ভালো করে পড়াশুনা করুক,,একজন ভালো ডাক্তার হোক।।দৈনিক ৫ ওয়াক্ত সালাত তো দূরে থাক পড়াশুনার প্রব্ললেম হবে বলে রোযাও রাখতে দেন নি,,আর আমিও রাখি নি।।আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্যই ছিল মেডিকেল এ চান্স পাওয়া অন্য কোনো দিকে কখনো আমার খেয়াল ছিল না।।দ্বীনের বুঝ না থাকলেও আমি কখনো উশৃঙ্খল ছিলাম না,,তাই এলাকায় ভদ্র মেয়ে হিসেবেই পরিচিত ছিলাম।। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি সরকারী মেডিকেলে চান্স পাই,,বাসা থেকে প্রথম বারের মত বাইরে কোথাও থাকার সুযোগ পেয়ে যাই।।
শুরু হয় আমার একার পথ চলা,,একদিকে নতুন পরিবেশ অন্যদিকে মেডিকেল এর প্রচুর প্রেশারে ডিপ্রেশড হয়ে যাই।।অনেক বন্ধুবান্ধবের সাথে পরিচয় হয়।শুরু হয় ফ্রি মিক্সিং,,একদম জাহেলি জীবন যাকে বলে।।প্রচুর গান শুনতাম,,প্রচুর হ্যাং আউট আরফেসবুকে এই সবকিছুর পিক দেয়া।।এত কিছুর পরও কই জানি একটা কমতি ছিল।।দিন শেষে আমি একা।।এভাবেই আমার দিন কাটছিল।।হঠাত ফেসবুকে একটা পোস্টকে আল্লাহ আমাকে হেদায়তের উসিলা করে দেন,,আলহামদুলিল্লাহ সেই থেকে শুরু।। একদিনেই গান শোনা চিরদিনের মতো বন্ধ করে যায়,,শুরু হয় হেদায়াতের পথে চলা।।তবে আমার জন্য সবকিছু এত সহজ ছিলো না।।ফেসবুকে এত পিক ডিলিট করতে না পেরে আর গায়েরে মাহরামদের এভোয়েড আগের আইডিটা ডিলিট করে দিলাম।নতুন আইডি খুললাম আর পরিবার থেকে আমার চেঞ্জটা এত সহজে মেনে নেয়নি,,তাদের মতে শুধু নামায আর রোযা রাখলেই হবে,,পরদা করার কোনো দরকার নেই।।যখন তাদেরকে বুঝাতে গেলাম তখনই ঝামেলা শুরু হলো।।বলতে লাগলো আমি জঙ্গি হয়ে যাচ্ছি কি না!!!অনেক বুঝানোর পরেও যখন তারা মানে নাই,,তখন আমি লুকিয়ে পর্দা করা শুরু করি আজ ৫ মাস হলো।।আলহামদুলিল্লাহ্ কলেজে আমি পরিপূর্ণ পর্দা করার চেস্টা করছি,,বাসায় কেউ জানে না আমার বোন ছাড়া।বাসায় যাওয়ার সময় আবার ত্রিপিছ পরেই যাই,,তখন অনেক কষ্ট হয়।।।সারাদিন রাত বাবা মার জন্য দুয়া করি যেন তারা হেদায়াত পান আর এমন একজন জীবনসঙ্গীর আশা করি যিনি আমাকে এই জাহিলিয়াত থেকে বের করে নিয়ে যাবেন।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2415827698680600&id=100007601799490
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক:
#শামছুন্নাহার রুমি
.....................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ২
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আসসালামু আলাইকুম!!
গত ২৯/১২/২০১৯ইং তারিখে আমি ময়মনসিংহের একটি মহিলা মাদ্রাসার সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিই। অতি সামান্য একজন মেয়ে আমি, দ্বীনের বিষয়ে তেমন ইলমও আমার নেই। ঢাকার কোনো এক নামকরা কলেজে পড়ুয়া ছাত্রীর যেভাবে চলাফেরা করা উচিত তার ব্যতিক্রম ছিল না আমার চলাফেরা। আমি সেই ছোট থেকেই মহান আল্লাহকে চেনার যে পিপাসা, সেটা বুকে নিয়ে এক ক্লান্ত পথিকের ন্যায় ছুটে চলেছিলাম। নিজেকে দ্বীনের পথে রাখার চেষ্টা করেছি।
নবম শ্রেণি থেকে এক ফ্রেন্ড এর অনুপ্রেরণায় নিজেকে পর্দায় আবৃত করতে পেরেছিলাম। কিন্তু আমার পরিবারের কঠোর নির্দেশ, আমাকে নামকরা ডাক্তার হতে হবে, বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে আমাকে। আমিও সেই লক্ষ্যে নিজেকে অগ্রসর করছিলাম। জেএসসিতে জিপিএ-৫ সহ গোল্ডেন এসএসসি তে ৯৫% মার্কস নিয়ে বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য একটা ভালো কলেজে ভর্তিও হলাম। আমার মতোই আমি পর্দার মাঝে রেখে নিজেকে কলেজের কার্যাদি সম্পন্ন করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু নামিদামি কলেজ হলে যা হয়!!
সেখানে আমার পরিধানকৃত পোশাক ছিল নিষিদ্ধ। তাই আমাকে বাধ্য হয়ে পর্দা ছিন্ন করতে হয়। তখন থেকেই নিজের ভেতরে এক অনুশোচনার সৃষ্টি হয় - " দুনিয়ার প্রতিটা আনাচে-কানাচে স্রষ্টার রহমতে পরিপূর্ণ আর সেখানে আমার মতো এক নাফরমানি নিজের স্বপ্ন পূরনের জন্য আমার রবকে অবজ্ঞা করছি!!
এতে না হয় আমি আমার বাবা-মার স্বপ্ন পূরন করতে পারলাম কিন্তু বিনিময়ে তো আমি আমার স্রষ্টাকে হারিয়ে ফেলছি, সেটাতো উচিত নই। ছোট থেকে আজ অব্দি প্রভুর নিকটে আমি যা চেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ তার কোনোটাই অপূর্ণ রাখেন নি তিনি। তবে আজ কেনো আমি আমার দুনিয়ার জন্য তাকে হারিয়ে ফেলছি?
আমি যদি ডাক্তার হতে পারি তাহলে হয়তো সকলের স্বপ্ন পূরণ হবে কিন্তু আলটিমেটলি সেটা কি কারো কোনো কাজে আসবে? কবর তো আর আমার এমবিবিএস সার্টিফিকেট দেখে আমাকে কিংবা আমার বাবা-মাকে ছেড়ে দিবে না!"
এমন হাজারো ভাবনা আমাকে ঘিরেছিলো সেদিন তবে আমার কিছুই করার ছিল না। শুধুমাত্র একটা পথই ছিল,, হয়তো আমাকে আমার সারাজীবনের সকল স্বপ্ন, চাওয়া-পাওয়া বিসর্জন দিয়ে অর্থাৎ দুনিয়াবি চিন্তা বাদ দিতে হবে নাহয় আমাকে গাফেল হয়ে থাকতে হবে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যা হওয়ার হবে আমি প্রথমটাই বেছে নিবো।
এখন সকলকে বুঝাতে হবে আমার চাওয়াটা। ভাইয়াকে বল্লাম খুব ভয়ে, আল্লাহর অশেষ রহমতে বলার সাথে সাথেই উনি সহমত প্রকাশ করলেন। তবে আর কেউ আমাকে মাদ্রাসায় দিতে রাজি নয়। অনেকের অনেক কথা। এতো ভালো কলেজ ছেড়ে এখন কেনো এইসব হুজুরের লেবাসের ইচ্ছা?
মাদ্রাসার পড়ার কোনো দাম নাই,কি হবে সেটা পড়ে?
আরো অনেককক আজেবাজে কথা শুনতে হয়েছিল। সমাজের লোকজনও আমার পর্দাটাকে ভালোভাবে নিতো না তবে সবাই নয়।অনেকেই আমাকে সাপোর্ট করেছিল। তবে আমি নিরাশ হইনি। কারণ আমি আমার প্রভুকে পেতে চাই আর সেটা যেকোনো কিছুর বিনিময়ে হলেও।
সবার নানান কথা শুনে আমি জেদ করে কলেজে যাওয়া অফ করে দিই। এতেও কারো মন্তব্যের শেষ নেয়। কিন্তু আমার সে মন্তব্য কানে নিলে চলবে না। এভাবে দীর্ঘ ৪ মাস আমাকে লড়াই করতে হয়েছিলো সকলের মতের বিরুদ্ধে। অবশেষে আমি সফল আলহামদুলিল্লাহ।তবে প্রকৃত সফলতা আমার এখনো আসেনি। সেদিনই আমি পরিপূর্ণ সফলতা অর্জন করতে পারবো যেদিন প্রভু তার দ্বীনের পথে আমাকে কবুল করে নিয়ে হাশরের মাঠে তার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন।
আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আমি আমাকে সম্পূর্ণ রব্বুল আলামীনের তরে সপে দিতে পারি....
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনে ফেরার ১ম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2415943412002362&id=100007601799490)
দ্বীনের ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
...............................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ৩
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
২০১৭ সালের সম্ভবত মার্চ মাস চলছে।আমার ছোট ভাই তখন ভীষণ অসুস্থ।ওকে হসপিটালে ভর্তি করার জন্য আমার মা আমার ভাইকে নিয়ে গেছেন।ফ্যামিলির সবাইর আল্লাহর উপর একটা ভরসা ছিলো বড় কোন অসুখ হবেনা ডাক্তার মেডিসিন দিবেন ব্যস কমে যাবে।
ভাই যেদিন ডাক্তারের কাছে যায় অইদিন ভাইয়ের রিপোর্টএর অপেক্ষা করতে করতে আমি দুপুরে ঘুমিয়ে পড়ি যোহরের নামায না পড়েই।বিকেলে আমার আব্বু আমার রুমে এসে আমাকে আস্তে করে ডাক দেন আমার নাম ধরে।এতো শীতল গলায় আমার আব্বু আমাকে ডাক দিচ্ছেন নিশ্চয়ই কোন বিপদ হয়ছে এটা অটোমেটিক ভাবে আমার মনে এসে যায় ঘুমের ঘোরে।আমি লাফ দিয়ে উঠে বসি এবং দেখি আব্বুর মুখটা আটকে রাখা কান্নার দমকে আমাকে বললেনঃওর তো (ভাইয়ের কথা) রিপোর্ট ভালো না রে।বড় অসুখ হয়ে গেছে।তুই তো জানিস বড় অসুখ টা কি।তোর মামা ফোন দিয়ে বললেন ওর অবস্থা ভালো না"।আব্বু চলে যান রুম থেকে।
ব্যস এই এতোটুকুই কথা!আর আমি বিছানায় বসে ছিলাম স্তব্ধ হয়ে।পুরো শরীরটা আমার ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিলো সেদিন।কিভাবে বিছানা থেকে নেমেছি ঠিক জানিনা সুকেসের উপরে রাখা জায়নামাজ দেখে বুক ফেটে আমার কান্না আসে তখন।আব্বু দেখে ফেলবেন বিধায় বাথরুমে গিয়ে আমি হাউমাউ করে কান্না করতে থাকি আল্লাহ আমার ভাই,আমার ভাই আল্লাহ!তুমি আমার ভাইটাকে ভালো করে দাও।আমার ভাই বাচবেনা এতো বড় অসুখ আর বাচবেনা তুমি পারবে সব কোন মেডিসিন লাগবেনা তুমি রিপোর্ট এর খবর টা মিথ্যে করে দাও।বলে হাউমাউ করে বুক ফাটা কান্নায় ভাসছিলাম বাথরুমে বসে পড়েছিলাম।আমার মনে তখন এইটাই বিধেছিল,এইতো দুনিয়া আমার ভাই মারা যাবে কবরে চলে যাবে আর দুনিয়া নেই এটা তুচ্ছ কিচ্ছু নেই এখানে।আমি মারা গেলে কি নিয়ে যাবো এটাই দুনিয়া।আমার তো নিয়ে যাওয়ার কিছুই নেই।বুক ফাটা কান্না এসেছিল।
তখন আমার বুঝে ছিলোনা এটা বাথরুম কারন আমার কান্না করার জায়গা কোথাও নেই।আমার আব্বু আমার কান্না দেখে সহ্য করতে পারবেন না।অযু করে এসে অনেকক্ষণ পর আমি আসরের নামায পড়ি।নামাযে কান্নার চোটে আমি নিজেকে রাখতে পারছিলাম না।সিজদাতে সেদিন আমি গিয়ে শুধু এ কথা বলেছি আল্লাহ তুমি আমাকে মাফ করে দাও প্লিজ আল্লাহ আমি গোনাহগার কিভাবে তুমাকে বলবো।আজ আমার প্রয়োজনে তোমাকে বলছি এর আগে ভুল করেও একবারও তুমায় আল্লাহ বলিনি সিজদায় গিয়ে তুমি এ গাফেল প্রতারককে মাফ করে দাও।আমাকে তুমার বানিয়ে নাও।আমি আর তুমাকে ছেড়ে যাবোনা তুমার জন্য সব বাদ দিয়ে দিবো সব।তুমি আমার ভাইকে সুস্থ করে দাও।তারপর কেটে গেছে কিছু দিন,,,,,,,
নতুন পথ।এ পথে হাটা হয়নি আগে।এ পথে পথিকের হাটা ছিলো সপ্নের মত,আর শান্তির বার্তায়।
এ পথে হাটতে গিয়ে প্রচুর গান মুভি ডিলেট করেছিলাম।এককথায় কোন কিছু রান্নাঘরে রান্না করতে শাকসবজি বানাতে গেলেও গান শুনতাম প্রচুর মুভি দেখতাম।মুভি দেখায় এতোটা দক্ষ ছিলাম যে কখন কোন মুভি মুক্তি পাচ্ছে কতটা সিনেমা হলে তা অনেকেই আমার কাছে থেকে জেনে নিতো।এই আমি ওইদিনের পর থেকে সব কিছু ডিলিট করে দেই এবং সেই সাথে আল্লাহকে বলি আল্লাহ আমাকে মাফ করে দাও।পুরো কুরআন তিলায়াত ডাউনলোড করি শাইখ শুরাইমের।একজন নায়কের এতো ভক্ত ছিলাম যে সবাই আমাকে ওই নায়কের পাগল ভক্ত বলতো গর্বে আমার ভেতর টা ভরে যেতো।(রাব্বিগফিলী)
একটা ডায়েরী ছিলো আমার অসংখ্য পিকচার ওই নায়কের নিজ হাতে লাগিয়েছিলাম ডায়েরী ঠাসা ছিলো নায়কের পিকচার দিয়ে।আমার আম্মু ওই ডায়েরী টা ফেলে দিতে চাইসিলেন অনেক বলসেন তুই এই গজব ডায়েরীটা ফেলে দে ওটা বাসায় রাখলে কখনোই ফেরেশতারা আসবে না।কত অনুনয় অনুরোধ করতেন আমি কিচ্ছু শুনতাম না সযত্মে রেখে দিতাম ডায়েরীটা।কিন্ত আল্লাহ আমাকে নতুন এক জীবনের সন্ধান দেয়া পরে ওই ডায়েরী আমি আগুনে পুড়িয়ে ফেলি।একটা একটা নায়কের পিকচার ছিড়ে আগুনে ফেলছিলাম আর আমার বুক ফেটে কান্না আসছিলো সেদিন।আল্লাহকে বলেছিলাম আল্লাহ ওই পিকচার গুলো তুমার ভয়ে তুমার সন্তুষ্টির জন্য আমি আগুনে পুড়াচ্ছি। তুমি আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাচিয়ে দিও।ওইদিনের কান্নায় মনে হচ্ছিলো আমার রব্বকে আমি পেয়েছি খুজে।কারন আমার সবচাইতে দূর্বলতা ছিলো এই অভিনেতার প্রতি।একসময় ভাবতাম সব ছেড়ে দিলেও ওই নায়ক কখনোই না।কি পাগলই না ছিলাম আমি।আর এই আমাকে আল্লাহ টেনে তুললেন।কখনোই ফ্রি মিক্সিং এ জড়িত ছিলাম না।আইডিতে আত্নীয় ভাইরা ছিলো বিভিন্ন সিনেমা খেলাধুলার পেজে লাইক দেয়া ছিলো।এইটা মেনে নিতে পারছিলাম না।তাই নতুন আইডি ওপেন করি ননমাহরামমুক্ত।পর্দা করতাম না মোটেও।পর্দা করাটা আমার কাছে আজাব মনে হতো,,আমার আম্মু আব্বু আমার বেপর্দায় শংকিত ছিলেন।একটা সময় নিজেকে আবৃত করে ফেলি।নিজেকে দুনিয়া থেকে আলাদা করে ফেলি মাহরাম ছাড়া কারো সামনে বের হওয়ার সাহস আর হয়নি।
আত্নীয়রা ভেবেছিল আমার চেঞ্জ হওয়া সাময়িক মোহ মাত্র।কিন্তু তাদেরকে বুঝাতে পারিনি সেদিন বিকেলে আমার ভাইয়ের ক্যান্সারের কথাটা আমার জীবনটাকেই আমার রব্ব পালটে ফেলেছেন।
আমার দুনিয়াটা এখন আমার চারদেয়ালেই বন্দি।বারান্দায় বেরুতে আমার ভয় হয় কেউ আমাকে দেখে ফেলবে।আত্নীয় স্বজনরা আমাকে এখন মানসিক রোগী বলে।।কলেজে যাই যথারীতি বলা হয় ইসলামি ছাত্রীসংস্থাতে নাম লিখাইসো নাকি!দুইবছর আগে দেখলাম একভাবে এখন দেখি আরেকভাবে,এইটা কি নতুন স্টাইল শুরু করসস,হুজুর কারো সাথে লাইন টাইন করে একদম হুজুরনি হয়ে গেসোস।এক্সাম হলে অসংখ্য কথা বলা হয়ে থাকে যতক্ষন না চোখ দিয়ে পানি না আনাবে ততক্ষন পর্যন্ত চলতেই থাকে।আলহামদুলিল্লাহ।
আমার ফ্যামিলির মানুষরা চিন্তিত এতো ভালো রেজাল্ট পড়াশোনা করে তুই চাকরী করবিনা,,তুই না এডভোকেট হতে চেয়েছিলি,,এই একা রুম থেকে কোন কেউ বসে নেই তোকে নেয়ার জন্য,পর্দা করেও চাকরী করতে পারিস,তোর জন্য আমরা পাগল হয়ে যাবো,,তুই জানিস তুই মানসিক রোগী,উন্মাদ।প্রতিনিয়ত আমাকে এসব শুনতে হয় আমি বিমর্ষ হয়ে যাই বুক ফেটে আমার কান্না আসে রব্ব ছাড়া কেউ নেই আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও রব্ব দম বন্ধ হয়ে আসে আমার,তারা সবাই আমাকে অসামাজিক পাগল বলে কেনো।বলুক,,রব্ব আমি আজীবন তোমার পথে হাটতে চাই।আমি মানসিক রোগী গাফিল তোমার জন্য দুনিয়া উৎসর্গ করতে চাই,অসামাজিক হতে চাই যতোটা অসামাজিক হলে তোমার কাছে জান্নাতে একটা ঘর পাওয়ার দাবি করতে চাই।।।
ও হ্যা আরেকটি কথা,সেদিন আমার ভাইয়ের ক্যান্সার হওয়ার রির্পোট টা ভূল এসেছিলো।এক সপ্তাহ পরে ডাক্তার জানিয়েছেন আমার ভাইয়ের ক্যান্সার হয়নি সামান্য মেডিসিন খেলে ও সুস্থ হয়ে যাবে।শুকরিয়ায় অবনত হয়েছিলাম রব্বের প্রতি আমি আমার ফ্যামিলি।আমার ফ্যামিলির মানুষ আমি ভাবি
এটা কি ছিলো আসলে,ভাইয়ের ক্যান্সার রোগটা ছিলো আমার রব্বের পক্ষ থেকে হেদায়াতের উছিলা।তিনিই জানেন কাকে কিভাবে পথ দেখাতে হয়।না হলে কখনোই এক সপ্তাহ পরে রির্পোট ভূল এসেছে এটা ডাক্তার জানাতেন না।আমার আল্লাহ সর্বশক্তিমান মহাপরিকল্পনাকারী।
আমার প্রত্যাবর্তন সব প্রশংসা তোমার তরে।।
হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী!আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর সুদৃঢ় করে দাও।(তিরমিযী)
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনের ফেরার ২য় গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2416499705280066&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
.....................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ৪
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
২০১৭ সাল৷ সবে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স ভর্তি হয়েছি। জীবন যাপনে দুরন্তপনা। ফ্যাশন সচেতন। তবে পারিবারিক সঠিক শাসন ছিলো বলে উগ্র কখনোই ছিলাম না৷ ফ্যাশন সচেতন থাকলেও শালিনতার সীমা কখনো লংঘন করিনি। অন্যদের মত ফেসবুকে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটানো ছিলো নেশা। এমনিতে কখনো চ্যাট ইনবক্সে কখনো কাউকে রিপ্লাই করতাম না৷ কিন্তু শয়তানের ধোঁকা যখন আসে তখন নিজেকে আটকানো মুশকিল হয়ে যায়।
হঠাৎ চ্যাট ইনবক্সে নক এলো। আমিও জানিনা কি মনে করে রিপ্লাই করলাম৷ ব্যস শুরু সেই থেকেই। কি এক অদ্ভুত আকর্ষন! ভালো লাগা! তীব্র মনের টান! এরপর দেখা হওয়া, এক সাথে সময় কাটানো, রিকশায় ঘুরা, রেস্টুরেন্টে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে কথপোকথন... দূর্বলতা আমার ই বেশী ছিলো। তবে কখনোই বলিনি সেটা তাকে৷ আসলে আমাদের মাঝে প্রেম নামক সম্পর্কটা ছিলো না। সে এক অজানা ভালো লাগায় আমার কাছে আসতো৷ আমিও নিজেকে আটকে রাখতে পারতাম না সে ডাকলে।
সে তার অতীতের দুঃখ ভাগ করে নিতো আমার সাথে। ভালবাসতো একটি মেয়ে কে। মেয়েটির অনত্র বিয়ে হয়ে যাওয়া তে তার জীবন ছন্নছাড়া হয়ে গেছে। সে নাকি কোনদিন আর কাউকে বিশ্বাস করতে পারবে না৷ আমি জিজ্ঞেস করতাম, তাহলে কেন আসেন আমার কাছে? জবাবে বলতো,, জানিনা৷ আপনাকে খুব ভালো লাগে। আপনাকে না দেখলে কষ্ট হয়৷ তবে সেটা ভালবাসা নয়।৷ এভাবে চলতে থাকে৷ আমি তার জন্য এক প্রকার উন্মাদের মত হয়ে যাই। আমার বান্ধবীরা বুঝাতো আমাকে কিসের পিছনে ছুটছিস? এটা তো মরিচিকা।।
হুট করে সে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। আবার নিজের মন চাইলে হুট করে কোথা থেকে যেন চলে আসে। সে আমাকে নিয়ে নিজের মন মর্জি করতে থাকে। আমার মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়। এদিকে তার খোঁজ নেই বেশ কয়েকদিন। যোগাযোগ করে না। আমি পড়তে পারিনা। খেতে পারিনা৷ রাতে ঘুমাতে পারিনা৷ মনে সুখ নেই৷ মাস্টার্সের একটা পরীক্ষা মিস হয়ে যায় প্রিপারেশন খারাপ থাকায়। পরে অবশ্য সাপ্লিমেন্টারী দিয়েছিলাম সেই পরীক্ষার। পরীক্ষা শেষ হলো। রেজাল্ট দিলো। যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাই পরীক্ষা শেষ হওয়ার সপ্তাহ খানিকের মধ্যই রেজাল্ট দিয়ে দেয়। ডিসিশন নিলাম এই ডিপ্রেশন থেকে বের হতে হলে আমাকে ব্যস্ত জীবন বেছে নিতে হবে। একটা জব এ জয়েন করলাম। শুরু হলো আমার ব্যস্ত জীবন। হঠাৎ আবার তার ফোন৷ জানালাম জব করছি। অফিসের ঠিকানা নিয়ে দেখা করতে এলো। আমি আবার নিজের মাঝে প্রান ফিরে পেলা৷
একদিন অফিস থেকে বের হয়ে গাড়ি পাচ্ছিলাম না। তাকে মোবাইলে ম্যাসেজ দিলাম। গাড়ি পাচ্ছি না। একটু পৌঁছে দিবেন?
সেঃ আমি খুব বিজি।
ঐদিন কেন জানি খুব ঘৃনা হলো নিজের উপর। বাসায় পৌঁছেই ডিসিশন নিলাম ফোন নম্বর পাল্টে ফেলব। পরদিন ঠিক তাই করলাম। পাল্টে ফেললাম নিজের ফোন নম্বর। কিন্তু মনের ভিতরের কষ্টের ঝড় তো থামে না। বান্ধবীরা প্রবল মানসিক সাপোর্ট দিচ্ছে। কিন্তু কোন কিছুই আমার কষ্ট কে দমাতে পারছে না।
হঠাৎ একদিন ফেসবুকে চোখে পড়লো কুরআনের আয়াত "আমি আমার অসহনীয় দুঃখ আমার বেদনা আল্লাহর কাছে নিবেদন করছি" (সূরাঃ ইউসুফ,৮৬)।
এই একটি আয়াত পাল্টে দিলো আমার জীবন৷ নিজের সমস্ত দুঃখ কষ্ট আমার রব্বের কাছে উৎসর্গ করে দিলাম। তার কাছে সাহায্য চাইলাম হে রব! আমার মনে শান্তি ফিরিয়ে দিন৷ আমাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিন মাবুদ।
রব্বের তরফ থেকেই এক গায়েবী আদেশ এলো যেন তার পথেই সমস্ত শান্তি।
শুরু হলো আমার সিরাতুল মুস্তাকিমে চলা।
প্রথমে জব ছাড়লাম। এরপর বোরকা ও নিকাপ শুরু করলাম।
নিজের জীবনের সব গোনাহ'র জন্য রব্বের কাছে লজ্জিত হয়ে তওবাহ করলাম। খাস নিয়তে ক্ষমা চাইলাম।
তবে এই সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ চলা সহজ ছিলো না। পর্দার ক্ষেত্রে পারিবারিক বাঁধা ছিলো। মাস্টার্স করেও জব করব না এমন ডিসিশনে সবাই নারাজ ছিলো। অনেক কটু কথা, আঘাত সহ্য করতে হয়েছে৷ আত্বিয় স্বজনরা জংগি বলেছে।
বলে দিলাম বিয়ে করতে ইচ্ছুক। সংসারী হব।
কিন্তু টাকা ওয়ালা পাত্রের কাছে দ্বীনি পাত্ররা হেরে যায়। শুরু হল আমার আরেক সংগ্রাম। নিজের লোভ কে দমিয়ে শুধু রব্বে করিম কে বলেছি আমার জন্য উত্তম সংগী মিলিয়ে দিন। যার মাঝে আপনার জন্য মুহব্বত আছে।
হারিনি৷ লোভের কাছে নিজেকে নত করিনি। ভরসা ছিল আমার রব আমাকে নিরাশ করবেন না৷ হ্যা, করেন ও নাই। এখন আমার স্বামীই আমার সব৷ এত বেশী ভালবাসি তাকে যে সব সময় শুধু রব কে এটাই বলি,, মরে গেলে আর কিছু না হোক। এই মানুষটার হাতের একটু খানি মাটি যেন কবরে পাই। শুধু এই দুনিয়াতে নয়৷ জান্নাতেও আমি তাকেই চাই। ইনশাআল্লাহ।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনে ফেরার ৩য় গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2416670488596321&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
....................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ৫
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সৌদি আরবে। আমার বাবা ধার্মিক ও আমার ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন। তিনি খুব ছোট্ট বেলা থেকেই আমায় কুর'আন পড়া শিখিয়েছিলেন। আমার বাবার প্রবল ইচ্ছা ছিল তিনি তার সন্তানকে ৭ বছর বয়স থেকেই নামাজ পড়াবেন। যেমন কথা তেমন কাজ। তিনি আমার ৭ বছর বয়স থেকেই নামাজকে আমার জীবনে পাকাপোক্ত করে দিয়েছিলেন।
দিন চলতে থাকে। ক্লাস ৪ এ অধ্যয়নরত অবস্থায় আমরা দেশে চলে আসি। এখানকার পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। আশেপাশের মানুষের আচরণ আমার মনে দাগ কাটে। যার ফলে আস্তে আস্তে ইসলাম থেকে দূরে সরে যেতে থাকি। কাজিন আর বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে প্রচুর গান শুনতাম। আমি স্কুলে স্কার্ফ পড়ে যেতাম। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই বুঝতে পারলাম এই স্কুলে স্কার্ফ পড়া যাবে না।
গরমের দিন স্কার্ফ পড়লে আমি নাকি অসুস্থ হয়ে যাব, এই তাদের যুক্তি ছিল তখন.!! ক্লাসমেটরাও কেউ হিজাব পড়ত না সেইভাবে। সব জায়গায় বোরকা পড়তাম শুধু কোচিং এ যাওয়ার সময় সালওয়ার কামিজ পড়তাম আর রুমে প্রবেশ করার পর ওড়না মাথা থেকে সরিয়ে ফেলতাম। ইসলাম থেকে আস্তে আস্তে সরে গেলেও নামাজটা ছাড়িনি।
যখন ক্লাস সেভেনে উঠলাম, তখন এক স্যার আমাদের ইসলাম শিক্ষা ক্লাস নিতেন। উনি আমার সম্পর্কে জানতেন। যেহেতু আমার বাবা ইসলামের বেসিক জিনিসগুলো শিখিয়েছিলেন তাই ক্লাসে আমি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর সহজেই দিতে পারতাম৷ আর একারণেই ইসলাম শিক্ষা স্যার আমায় যথেষ্ট স্নেহ করতেন। এই ব্যাপারটা যখন বুঝতে পারলাম, তখন ইসলামকে জানার আগ্রহ আরও বেড়ে গেল। উনি আমায় যথেষ্ট অনুপ্রেরণাও দিতেন।
একদিন উনি ক্লাসে পোশাক, পর্দা ও বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক বিষয়ে ৩০ মিনিট আলোচনা করলেন। উনি যা যা বলেছিলেন তার প্রতিটি কথা আমি বিশ্বাস করতাম। কিন্ত তা সত্বেও আমার মনের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে গেল। সেদিন আমি স্যারের কথাগুলো শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। স্কুল থেকে বাসায় ফিরে যোহর সালাত পড়ার সময় যে মনোযোগ টা সেদিন আমি পেয়েছিলাম তা হয়ত এরপরে আর কোনোদিন পাইনি৷
সেদিন থেকে আমার ভাবান্তর শুরু হল। প্রথমে আমি ভেবেছিলাম যে ক্লাসের সবার মধ্যেই মনে হয় এই লেকচার টা শোনার পর ভাবান্তর হবে। কিন্ত না, আল্লাহ হয়ত সেদিন শুধু আমার জন্য স্যারের ওই কথাগুলোয় হেদায়েতের ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন। সেদিনের পর গান যথাসম্ভব পরিহার করেছি। পিস টিভির মাধ্যমে ইসলামকে আবার জানতে শুরু করি। দ্বীনের পথে আসার পর নতুন সংগ্রাম শুরু হয়। প্রত্যেকটা সংগ্রামে আল্লাহ আমায় সাহায্য করেছেন।
আমি হাজার পাপী, নীচ হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ আমায় কখনো নিরাশ করেন নি। আমলের খাতা এখনো শূন্য। এখনো আমি উদাসীন। এখনো অনেক কিছু বাদ আছে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অনেকটা পথ বাকি। আমি জাহিলিয়াতে ডুবে যাচ্ছিলাম, আল্লাহ রক্ষা করেছেন। দিনশেষে আমি যে বুঝতে পারি আমায় আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে, এই বোধটা আগে আমার ছিল না। এই বুঝটা যে আল্লাহ আমায় দিয়েছেন এই জন্য আল্লাহর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এখনো হেদায়েতের পথে হাঁটা অনেকটা বাকি।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনে ফেরার ৪র্থ গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2416874725242564&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
.......................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ৬
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর অশেষ রহমত যে আল্লাহ তার অসংখ্য বান্দা বান্দীর মধ্যে আমাকে তার হেদায়েতের ছায়ায় স্থান দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ যার শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যাবে না
প্রথমেই বলি আমার আগের জীবন সম্পর্কে। আমি ছিলাম মোটামুটি মর্ডান স্টাইলিশ একটা মেয়ে
আব্বু ছিলো ধার্মিক আর আম্মুও ছিলো মোটামুটি।
আমরা তিন বোন এক ভাই আমি ছিলাম তৃতীয় জন। তো আমরা ভাইবোন কেউই আল্লাহর পথে ছিলাম না যেটা আমার আব্বুর জন্য ছিল খুবই কষ্টের বিষয়। তোহ স্কুল জীবনে সিক্স থেকেই বোরখা পড়তাম তবে তা ছিল আব্বুর ভয়ে । আব্বুর অগোচরে তখন নাচ গান সবাই করছি কারণ খুবই ভালো লাগতো। কলেজে উঠেও সেম অবস্থা। এমন ছিলো যে ঘুমাতে যাওয়ার সময় গান শুনতে শুনতে যাইতাম আর উঠতাম ও গান নিয়েই।
সেসময় রিলেশনশিপে ও জড়িয়ে গিয়েছিলাম। এককথায় প্রায় আমার চলাফেরার সবই ছিল হারাম পথে।আল্লাহ মাফ করুক 😓। তবে এত এত গুনাহ করলেও বাহিরে শান্তশিষ্ট আর ভদ্রভাবেই চলতাম
নামাজ পড়তাম তাও আব্বু আম্মুর বার বার বলার কারণে তবে বাদও যাইতো ।আব্বু তাবলীগ করে যার কারণে আমাদের বাসায় ও দেশ বিদেশের অনেক জামাত আসতো ।আমিও গেছি তবে বাসায় এসে যা তাই। তবে ইচ্ছা ছিলো জীবনে পর্দা করবো কোনোএকদিন।
জামাত আসলে বাসায় একটা আন্টি আসতো যে আমাদের অনেক বুঝাইতো যখন আসতো তখনই বুঝাতো আমাদের কিভাবে চলা উচিত আল্লাহর পথেই শান্তি আরও অনেক কিছু । তার এত বোঝানোতে মাঝে মাঝে মন নরম হতো দু'দিন পর সব ভুলে যাইতাম । শেষ যেদিন আবারও বুঝাইলো তার পরদিন পর্যন্ত মনেহয় নামাজ পড়েছিলাম পরে বাদ দিছি তার কিছুদিন পর একদিন রাতে স্বপ্ন দেখছিলাম আমি একটা রাজমহলে আছি যেখানে ফ্লোরে অল্প পানি আর আমার চারপাশে অনেক সাপ।এক কথায় যেখানে পা দিচ্ছি ওখানেই সাপ। আমি আবার আগে থেকেই মাঝে মাঝে সাপ বিচ্ছুর স্বপ্ন দেখতাম আর কেন জানি না স্বপ্ন দেখলে মনে হতো এটাই আমার কবরের আজাব কবরের পরিণতি তাই এমন স্বপ্ন দেখলে কিছুদিন নিয়মিত নামাজ হতো।
তো সেদিন কেমন মনটা হঠাৎ পাল্টে গেল মনে মনে বললাম আর নামাজ বাদ দেবোনা পর্দা করবো এই ভেবে আবার মনে হলো নাহ পর্দা বিয়ের দাওয়াত খেয়ে এসে করবো (তখন একটা দাওয়াত ছিল) , ঐ দিন থেকে করবো সেই দিন থেকে করবো মানুষ কি ভাববে এমন নানা ভাবনা শুরু একদিন কি একটা খুজতে গিয়ে
হাদিসের বই গুছাতে থাকলাম তো একটা বই পেলাম বইটা অনেক পুরাতন এবং পাতলা নাম স্বামীর খেদমত ও পর্দা এমনই কিছু একটা ।তো সেটা পাশে রেখে বই গুছিয়ে রেখে ওটা পড়তে লাগলাম।
বইয়ে আহামরি কিছু ছিলো না তবে আমার খুব ভালো লাগলো মনে মনে বললাম আমি কোথাও যাব না পর্দা এখন থেকে করবো,যে যা ভাবে ভাবুক ।
সেই দিন থেকে শুরু বাহিরে যাওয়া বাদ দিলাম।ফোন থেকে সব গান ডিলিট করলাম ফেসবুকে পিক ছিলো সেসবও ডিলিট দিলাম আলহামদুলিল্লাহ।
পরিবার নিয়ে কোনো সমস্যা হয় নি আমার তবে বাহিরে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। একটা সংস্থা থেকে ব্লকের কাজ শিখতে গেছিলাম প্রথম দিনই অপমান করছে মুখ না খোলার জন্য পরে আবার ডাকছে। তারপর শুরু হলো অনার্স প্রথম বর্ষ পরীক্ষা সেখানে পর্দার জন্যে কথা শুনতে হলো শেষমেশ স্যার পুলিশের ভয় দেখালো ১৫-২০মিনিট পর মহিলা ডেকে ভেরিফাই করলো এটা ছিল প্রথম বর্ষের পরে আসলো দ্বিতীয় বর্ষ যা ছিল খুবই কষ্টের ।
দ্বিতীয় বর্ষে এমন একটা দিন যায় নাই অপমানিত হতে হয় নাই বিশেষ করে ম্যাডামগুলা ভেরিফাই করার সময় কি বলছে আর না বলছে তার হিসাব নাই। শেষ পরীক্ষার দিন রুম থেকে বের করে দিছে প্রায় ৩০মিনিট ঘুরে ঘুরে ভেরিফাই হতে হয়েছে কান্না চলে আসছে তাদের কথায় ছিল তোমার দিকে কে তাকিয়ে থাকবে? সবাই নিজেরে নিয়ে ব্যস্ত, চলে যাও ভেরিফাই করবো না পরীক্ষা দিতে হবে না তোমার।
তবে এত কিছু বলেও ভেরিফাই করছে এটাই আলহামদুলিল্লাহ তবে এটা ভেবে ভালো লাগছে যে এটা আল্লাহর জন্য করছি প্রতিদান ও আল্লাহ ই দিবে দোয়া করি আল্লাহ উনাদের হেদায়েত দান করুক আমিন। আমার দুই বোন এখনও ঠিকমত নামাজ পড়ে না ।বলে বলে এক ওয়াক্ত দুই ওয়াক্ত পড়ে সবাই দোয়া করবেন যেন আল্লাহ ওদের ও হেদায়াত দান করেন, ভাইটাকে বড় আলেম হওয়ার তৌফিক দেন আর আমার জন্যও দোয়া করবেন আমি যেন আল্লাহর হুকুম গুলো মেনে চলতে পারি।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনে ফেরার ৫ম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2417373631859340&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
..........................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ৭
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আসসালামু আলাইকুম।
আজ থেকে ২ বছর আগে হিদায়াত পাই আলহামদুলিল্লাহ।
জানিনা এই হিদায়াত আমি আজ পর্যন্ত কতোটুকুই ধরে রাখতে পারছি।
আমার বাবা হুজুর,ভাই বোনের মধ্যে আমি বড়,এবং রাগী,বদমেজাজি উশৃঙ্খল ছিলাম বেশ।
ছোট্ট থেকেই জানতাম শুধু নামাজ পড়া,আর মাথায় কাপড় দেওয়াটাই একজন মুসলিমের দায়িত্ব।
কেউ আমাকে কখনো নামাজ পড়ার গুরুত্ব, বা চুল ঢেকে রাখার গুরুত্ব বুঝিয়ে বলে নি,
শুধু কথায় কথায় মেরে,হাত-পা ভেঙ্গেই বলা হয়েছে "আজ মাথায় কাপড় দিস নি কেন?
আজ নামাজ পড়িস নি কেন?"
এভাবে মারধোর করে কি কাউকে দ্বীনের বুঝ দেওয়া যায়?
আমাকেও দেওয়া যায় নি। যা করতাম তা শুধু ভয়েই,, মারের ভয়েই নামাজ পড়তাম,মাথায় কাপড় দিতাম ব্যাস এইটুকুই।
আর গান-মুভি, প্রচুর দেখা হতো।
আরে জানতামই এসব হারাম, বা এসব দেখলে চোখের জিনা,শেষ বিচারের দিন শাস্তি হিসেবে চোখ,কানে আগুনের শীশা ঢেলে দেওয়া হবে।
হুজুর পরিবারে থেকেও গাফেল ছিলাম,,আমার চারপাশটাই গাফেল ছিলো।
যা দেখছি তাই শিখেছি,
চারপাশের বোনদের থেকে এটা আয়ত্ত করে নিয়েছিলাম কিভাবে ছেলে ফ্রেন্ড বানানো যায়,কিভাবে প্রেম করা যায়।
যাক এভাবে সেভাবে গাফেল জিন্দেগী আর মারধোর খেয়ে ১০ টা বছর আমার হেলায় চলে গিয়েছিলো।
এস.এস সি পরীক্ষার পর নানুবাড়ি পাঠানো হয় আমাকে,এখন থেকে এখানেই থেকে পড়ালেখা চালাতে হবে তাই।
আহ আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস নেই,,,প্রচুর খুশি হই কেউ আর এক মাথার কাপড় দেওয়ার জন্য কথায় কথায় গায়ে হাত তুলবে না,হাত ভেঙ্গে দিবে না নামাজ না পড়লে।
যাক নানুবাড়ির দিনগুলো ভালোই কাটতে লাগলো,,,ফেইসবুকে একাউন্টস খুলা ছিলো,
একদিন হুট করেই একজনের সাথে পরিচয়,
অত:পর প্রণয়...দীর্ঘ কটা মাস হারামেই কেটে গেলো!
কিন্তু নানুবাড়ি আসার পর ইন্টার ফার্ষ্ট ইয়ারের লাস্ট থেকে ফেইসবুকে "মুসলিম নারী" গ্রুপের পড়াগুলো দেখে আমি নামাজের প্রতি মনোযোগী হই। মনোযোগী বলতে একেবারে পাঁচ ওয়াক্তই পড়া হয়। গ্রুপের বোনরা এতো সুন্দর করে বুঝিয়ে বুঝিয়ে লিখতো তা আমার মনে গেঁথে যেত। আমার হেদায়েতের উসিলা এই গ্রুপটাই।
আল্লাহ গ্রুপের কার্যক্রমে যারা রয়েছেন সেই সকল আপুদের উত্তম জাঝা দান করুন।
দোয়া রইলো অসংখ্য,, আর বিশেষ করে জুমানাপুর জন্য ভালোবাসা অবিরাম,,গ্রুপের আরো সকল আপুদের জন্য ও ভালাবাসা রইলো।
আপনারা যদি না থাকতেন তাহলে আমার কি হতো,,আমার রব্ব আপনাদের উসিলায়ই আমাকে আজ আলোর পথ দেখিয়েছেন বলেই ভালো মন্দটা বুঝতে শিখেছি।
নইলে তো জ্যান্ত পশুর মতোই ছিলাম।
আল্লাহ মাফ করুক আমায়।
তো নামাজের প্রতি মনোযোগী হওয়ার পর পরই কেমন যেন আস্তে আস্তে পালটে যাচ্ছিলাম আমি।
হঠাৎ ককরে একদিন শুনি ওর অন্যজনের সাথে রিলেশন,,তারপর রাগ, জেদ নিয়ে ব্রেকাপ।
কি কষ্ট……শয়তান মনে কতো কথা উঠিয়ে দেয়,আগের স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়ে বিষ ছড়িয়ে দেয় ভেতরটায়।
গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করি তার সাথে কথা বলার,,কিন্তু নিজের আত্মসম্মানবোধটা প্রখর ছিলো,,তাই বলতে পারছিলাম না।
বারবার আল্লাহকে বলি,,কষ্ট তো কমে না।
ঘুমের ঔষধ একের উপ্রে খাই কিন্তু ঘুম তো হয় না,,কি এক অসহ্য যন্ত্রণা।
পরে নিজেকে আটকে রাখতে পারি নি,,আবার কথা বলে ফেলি,,এখন ফ্রেন্ডস হয়ে কথা বলি,
কিন্তু দিন যায় মনে শান্তি আসে না,,
আগের মতো নাই,,রিলেশনের পর ফ্রেন্ডশিপ বিষাক্ত লাগে,চারপাশ বিষাক্ত লাগে।
তাহাজ্জতের মোনাজাতে নিজের কষ্টের কথা বলি না কমে না কষ্ট,,,বাড়তেই থাকে।
পাগল পাগল লাগে নিজেকে।
একদিন রাতে কষ্টগুলো সহ্য হচ্ছিলো না,
বুকে কোরআন চেপে ধরে,,আর্তনাদ করে বলেছিলাম আল্লাহকে,,,,
"ইয়া আল্লাহ আমার কষ্ট হচ্ছে,,তুমি কি দেখো না?"আমার কষ্ট হচ্ছে আল্লাহ………
ব্যাস পরদিন থেকেই যেন নতুন জীবন ফিরে পেলাম আমি,,
গ্রুপের পোষ্টে দেখতে পেলাম রিলেশন হারাম,
খুব সুন্দর করেই মার্জিত ভাষায় আপুরা বুঝায়।
বুঝে গেছি আলহামদুলিল্লাহ।
পরদিন ওকে আনফ্রেন্ড করে দেই,
ফেইসবুকে বেপর্দা অন্য মেয়েদের পিক ছিলো সেগুলো ডিলিট করে দেই।
অদ্ভুত আমার কষ্ট হচ্ছিলো না,,আমি আনফ্রেন্ড করে দিব্যি ছিলাম,,কথা না বলেও দিন চলে যাচ্ছিল।
ব্যাস সমাপ্তি,,হিজাব দিয়ে মাথায় কয়েক প্যাচ দিতাম ফার্স্ট ইয়ার থেকেই,,কিন্তু ফার্স্ট ইয়ারের লাস্ট থেকেই নিকাবের গুরুত্ব বুঝি,,
মোনাজাতে আল্লাহর কাছে বলি আজ থেকে নিকাব করবো তো কাল থেকেই,হয়ে উঠে না আর। তো একদিন আবারও নিকাব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট পড়ি,,আহা আল্লাহ আমায় কিভাবে আস্তে আস্তে হিদায়াতের পথে এগিয়ে নিচ্ছেন,,,ওড়না নিয়ে নিকাব করে,এভাবে কয়েকদিন যায় তারপর মনে হয় এভাবে ঠিক হচ্ছে না নিকাব,মানুষ আড়চোখে তাকায়,সুন্দর লাগছে কমেন্ট ও করে ফেলে কতোজ তাহলে এই পর্দাটা আমার হচ্ছে না,,এভাবে একদিন পরিপূর্ণ পর্দা নিয়ে মুসলিম নারী
গ্রুপ থেকে আরেকটা পোষ্ট দেখি,,শুরু করি সেই থেকেই।
কলেজ যাই ছেলেরা সাইড দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়,
বাসের সিটে কোন পুরুষ বসে না পাশে,,আমি একা সিটে বসে থাকলেও পাশে বসে না।
কি সম্মান,,অনুভব করি তাকওয়ার পোশাক,আল্লাহকে ভালোবেসে গায়ে জড়িয়ে নেওয়ায়ই এই সম্মান।
তারপর আসে ছেলে ফ্রেন্ডস,,পর্দা করেও ছেলেদের সাথে কথা বলতে আমার হাশফাশ লাগে।
মনে হয় আমি কি পর্দা করছি? তাহলে ওদের সাথে কথা বলছি কেন?
দেখুন আপুরা কিভাবে আল্লাহ আমায় একটু একটু করে এগিয়ে দিচ্ছেন।
প্রশ্নগুলো আল্লাহই কি করে মনে তুলে দিচ্ছেন।
দায়িত্ব আমায় খুঁজে বের করা এর উত্তর।
মাহরাম-গায়রে মাহরাম কি? কাকে বলে?
আমার বাপ দাদা কেউই বলে নি,,
এগুলো কি আমি জানতাম ও না।
ইসলামিক পোষ্টেরর মাধ্যমে জানতে পারি।
কষ্ট হচ্ছিলো ওরা আমায় হেল্প করতো,
কলেজ যেতাম না,নোট থাকলে ওরা ছবি তুলে ইনবক্সে পাঠাতো,,,মেয়ে ফ্রেন্ডসরা বরাবরই হেল্প করতো না,,ওদের থেকে হেল্প খুব কমই পেতাম। ভাবছিলাম যদি কথা না বলি,যদি আনফ্রেন্ড করে দেই তো কলেজের খবরাখবর পাবো কি করে? বা নোটসগুলো?
নিজের পড়ার খরচ চালাতে আমি টিউশনি করি তাই কলেজে যেতাম না,কলেজে পড়াটাও তেমন হতো না,তাই যাওয়া হতো না আরও।
কলেজে যাওয়া আসা পুরো ১০ টাকা,,ভাবতাম এই ১০ টাকা বাঁচিয়ে দিলে পরীক্ষা ফি,রেজিস্টার ফি দিতে পারবো।
কারণ পড়ার খরচটা বাবা দেন না,উনার কথা পড়া বাদ দেও!মায়ের কথায় পড়ি।
তাই চাল+ডাল বেচে টেচেই টেন পাশ করিয়ে নানুবাড়ি দিলেন নানুবাড়িরা পড়ার খরচ চালাবে বলে,,কিন্তু মানুষ নিজের চিন্তায় বাচে না টানবে অন্য বুঝাকে?
হাসলাম! এখানে এসে টিউশনি আমার আল্লাহ কয়েকটা যোগিয়ে দেন,,,ব্যাস সংগ্রামটা এখান থেকেই।
যদি ব্যস্ত না থাকতাম তাহলে হয়তো সব ভুলাটাও আমার পক্ষে সম্ভব হতো না।
অবশেষে নিজের সাথে অনেক বুঝাপড়া করে সব ছেলে ফ্রেন্ডসদের লিস্ট থেকে আনফ্রেন্ড করে দেই। এই ভেবে আল্লাহ সাহায্য করবেন,আল্লাহর জন্য এসব ত্যাগ কিছুই না।
প্রথম প্রথম কষ্ট হচ্ছিলো ভীষণ,কিন্তু একসময় ভুলে যাই,,,সিম চেঞ্জ করে ফেলি।
ছবি,গান ডিলিট করে ফেলি।
একটা গান ডিলিট করতে গিয়ে কেন জানি কলিজা কেপে উঠছিলো,,হাত কাঁপছিল গানটা ডিলিট করতে গিয়ে,,এতোটা পছন্দের ছিলো সেই গানটা,,,কিন্তু না চোখ বন্ধ দাতেদাত চেপে শুধু এটাই বলেছি,,"আল্লাহর সন্তুষ্টির আগে কিছুই না,,এর বিনিময়ে আল্লাহ জান্নাত যদি দিয়ে দেন……আল্লাহ আমায় ক্ষমা করে দেন"
ব্যাস এটাও ডিলিট দিয়ে দেই,,,
কান্না আসছিলো গানটা ডিলিট দিয়া,,মন উশখুশ করছিলো,,,একটা দিন পুরো আফসোস লাগছিলো গানটার জন্য।
পছন্দের ছিলো ভীষণ। তারপর ও সহ্য করে নেই,,এবং একেবারে সেদিন থেকেই গানের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মে যায়, এখন এমন কোথাও বাজনা গান শুনলেই মেজাজ বিগড়ে যায়।
রাগি,জেদি আমিটাও একদম বদলে যাই।
আমার পর্দা পরিবারেরর অনেকেই মানতে পারছিলেন না,,অনেকের অনেক কটুক্তি শুনতে হয়েছে,হচ্ছে।
হুজুর পরিবার থেকেও এমন কটুক্তি পর্দা নিয়ে শুনবো ভাবিনি,,,
যাক সেদিন থেকে নামাজে জন্য আর মার খেতে হয় নি আমায়,,,আর মাথায় কাপড় না দেওয়ার অপরাধে কেউ আঘাত করে না মাথায়।
আগে মানুষকে ভয় পেয়ে নামায, মাথায় কাপড় পড়তাম,,,
আর এখন আমার রব্বকে ভয় পেয়ে,তাকে ভালোবেসেই আমার মাথায় কাপড় সবসময়ই থাকে।
বাচ্চাদের দ্বীন শিখাতে চান? অনুরোধ করবো বাবা-মায়েদের মারধোর করে দ্বীন শিক্ষা দিবেন না। সন্তানকে বুঝিয়ে শুনিয়ে দ্বীনের শিক্ষা দিন।
নইলে আমার মতোই গাফেল হয়ে যাবে,,
রব্ব যদি আমায় হিদায়াত না দিতেন আজও হয়তো মানুষের ভয়ে নামাজ পড়তাম।
কিন্তু রব্ব আমার দিকে দয়ার দৃষ্টি দিয়েছেন,তাই জাহেলিয়াত থেকে ফিরতে পেরেছি।
সবশেষে অসংখ্য জাঝাকিল্লাহ "মুসলিম নারী" পরিবারকে………♥
আমার জন্য দোয়া করবেন আপুরা,,
আল্লাহ যেন হেদায়েতের পথে আমায় অটল রাখেন।
ও সুন্দর,ঈমানী মৃত্য নসীব করান।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনে ফেরার ৬ষ্ঠ গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2417571921839511&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
..........................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ৮
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আসসালামুআলাইকুম
.
তথাকথিত মুসলিম ব্যাংকে চাকরী করে বাবা,এমন এক পরিবারের মেয়ে আমি!
ছোট বেলা থেকে নামাজ এর বিষয়টা মাথায় ছিলো, তবে রোজা রাখাতে সমস্যা করতেন বাবা। অনেক আদরের মেয়ে হওয়ায় রোজা রাখলেও দরকার পড়লে আসরের সময় ও ইচ্ছা করে জোর করে পানি খাইয়ে দিতেন!
তখন আমার নামাজ ফরজ ছিলো! অতিরিক্ত ভালোবাসেন বাবা, যেটা সব বাবারাই করে।
তবে এটা একটি বাড়াবাড়ি ই ছিলো। শুধু একটাই কথা আমার মেয়ের যাতে কোনো কিছুতেই কষ্ট না হয়!
যাই হোক,পড়াশোনায় সব সময় ভালো হওয়ার সুবাধে মেডিকেল এ পড়ার ইচ্ছা ছিলো আমার এবং পরিবারের ও।
তার জন্য বাবা ভালো স্কুলে পড়ানো থেকে শুরু করে টিউশন কোনো কিছুরই কমতি করেন নি।
সব ঠিক ঠাক ছিলো... হঠাৎ যখন মেডিকেলে পরীক্ষা দিলাম তখন ই ঘটলো সমস্যা। আমি টিকলাম না সরকারী মেডিকেল এ!
অথচ,আর কোনো কিছুর জন্য প্রিপারেশন ও নেইনি আমি!
কোনো ভবেই মানতে পারছিলাম না বিষয়টা, পরিবার ও একেবারে ভেঞ্জে পড়ে।
পরের বার আবার ও ট্রাই করবো ভাবলাম, তখনো টিকলাম না!
তখন সে কি অবস্থা আমার।
ডিপ্রেশনে পুরা ডুবে ছিলাম... এখন মনে হয় যদি তখন আমি টিকে যেতাম মেডিকেলে তাহলে হয়তো আমি আমার রব্ব কে চিনতেই পারতাম না। একটা জিনিস সরিয়ে নিয়ে আমার জন্য আরো কত বড় একটা জিনিস আমার রব্ব আমাকে দিয়ে দিলেন আলহামদুলিল্লাহ!
অনার্সে এডমিট হলাম মহিলা একটা কলেজে!
তখন ফেবুতে খুবই একটিভ থাকতাম,টাইম স্পেন্ট করার জন্য। এই ভাবে হোয়াটস আপ এ ও কিছু গ্রুপে এড হয়ে, পর্দা -মাহরাম এগুলা র বিষয়ে জানলাম।
এর আগের সময়টা খুবই ভয়ানক ছিলো!
আমি নারীবাদী হয়ে গেলাম, মেয়েদের বিয়ে দেবে কেনো? কেনো অন্যের ওপর ডিপেন্ডেন্ট হবে একটা মেয়ে, এই সেই আরো কত কি! বিয়ে কে সম্পূর্ণ রুপে অস্বীকার করতাম(আল্লাহ মাফ করুন) সাথে গান শুনা, আর সিনেমা-সিরিয়াল দেখা তো ছিলোই! (ইয়া আল্লাহ মাফ করো)
অনেক ভাবলাম যে এটা তো ঠিক হচ্ছেনা তখন আল্লাহর সাহায্যে হুট করেই গান শুনা আর মুভি দেখা অফ করে দিলাম।
অনার্স এর ২য় ইয়ার এ প্রথম আমি পুরো পরীক্ষা দিই নিকাব করে, এটা আমার জন্য কত বড় এচিভম্যান্ট ছিলো তা বলার মতো না। অথচ এর আগে কখনো ই আমি নিকাব করে থাকিনি!
আস্তে আস্তে সব কিছু বুঝলাম
একদিন হাতমোজা কিনে আনলাম আর কালো একটা ওড়না, যাতে বোরকার ওপর এটা ও পরতে পারি।
এতেই ঘটলো সমস্যা। মা খুবই নারাজ হলেন,"আমি ও তো পর্দা করি, তোমার এত কিছু লাগবে কেনো?
কেউ বিয়ের কথা তো আগাবেই না, কেউ জানবে ও না এখানে কোনো মেয়ে আছে, এই ভাবে এত কম বয়সে বয়স্ক সাজার কি আছে আরো কত কি!
"
তবে আমি ছিলাম আমার সিদ্বান্তে অটল।
ননমাহরাম রা বাসায় আসলেও দুরত্ব রাখতে চাই, যদিও পারিনা পুরোপুরি
তখন খুবই খারাপ লাগে...
অনেকে অনেক কথা বলে, বিশেষ করে পরিবার আমাকে এভাবে দেখতে চায়না।
বাবা তো খুবই খারাপ ভাবেন ওগুলা!
.
যাই হোক, বাবার টাকা যেহেতু ব্যাংকের টাকা, তাই আমি চাই আমি নিজে যাতে ইনকাম করতে পারি হালাল ভাবে।
যাতে প্রচুর দান করতে পারি!
.
আর আমাদের দেশের যা অবস্তা তাতে তো মেয়েদের পর্দা করে চাকরী করাটা অনেক কষ্টকর!
.
একটা মাদ্রাসায় ইংরেজীর টিচার হিসাবে ঢুকছি, তবে মনে হয় না বেশিদিন ঠিকতে পারবো! পর্দা'র ঠিকটাক ব্যাবস্থা হচ্ছেনা।প্রিন্সিপাল এর সামনে যেতে হয় প্রায়শই! যদিও আমি চোখ নিচের দিকে রাখি, তবে এভাবে চলাটা কষ্টকর।যেটা খুবই অস্বস্তিকর আমার জন্য.
মহিলা টিচাররা ও আছে,উনারা কখনো ফ্রি টাইমে নানাধরনে গসিপ করে থাকেন! যেটা গীবত হয়ে যায়। এবং অনেক সময় গান ও শুনেন, ফ্রি টাইম পাছ করার জন্য,তখন খুবই খারাপ লাগে। কোনো ভাবে উঠে যেতেও পারিনা। তবে তা ও তখন কোনো একটা বাহানা ধরে উঠে যাই ওদের থেকে। এটা অবশ্য ওরা ও হয়তো বুঝে! যেটা ওদের ও খারাপ লাগার কথা! এতো হুজুরির কি দরকার এই টাইপ আর কি!
অনেকে তো বলছেও, যদি এত পর্দা করতে হয় তাইলে চাকরী করবা কেন?
দোয়া করবেন সবাই যাতে খুব তাড়াতাড়ি একজন উওম জীবন সঙ্গী পেয়ে যাই!
যে আমার জান্নাতে যাওঅার সাথী হয়! যার হাত ধরে জান্নাতেও হাঁটতে পারি..
যিনি আমাকে দ্বীনের পথে হাঠতে আরেকটু সহযোগীতা করেন!
.
একটা মেসেজ সবার জন্য,প্লিজ ফিরে আসুন আপুরা,এখনো তো বেঁচে আছি আমরা,এখনো তওবার সুযোগ আছে,যখন মরে যাবো তখন তো আর এই সুযোগ থাকবেনা!
তাই তাড়াতাড়ি ফিরে আসুন, অন্তত প্রথমে গান-মুভি এগুলা শুনা/দেখা বাদ দেন, দেখবেন বাকিগুলাও ইনশা'ল্লাহ ঠিক হয়ে যাবে!
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনে ফেরার ৭ ম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2418266605103376&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
............................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ৯
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
নাম প্রকাশে ইচ্ছুক নয় আপু।নিজের টা নিজের আর আমার রবের কাছে লুকিয়ে রাখতেই পছন্দ করি।তারপর আজ তোমার পোস্টটা পড়ার পর বলতে ইচ্ছে হলো যদি কারো উপকারে আসে তাই।আল্লাহ তোমার নেক আশাগুলো পূরন করুক।রিয়ার গুনাহ থেকে আমাদের হেফাজত করুক।।।আমিন...
আমি সাধারন একটা মুসলিম পরিবারের মেয়ে।।।আরবি পড়া বলতে আমাদের দেশে মসজিদ বা মকতোবে যেটা পাই ওটাই পেয়েছি।।।জেনারেল লাইনে পড়ালেখা করেছি।আব্বু আম্মু 2 জনই সাধারন ছিলেন।আম্মু নামাজ ও কোরআন পড়তেন যেমনটা আমাদের দেশের সাধারন মায়েরা করে থাকেন।।আব্বু ছিলেন ব্যাবসায়ী এবং আধুনিক একজন মানুষ।।আমরা 5 বোন 1ভাই।আমি বোনদের মধ্যে তৃতীয়।আব্বু আমাদের সব ভাই বোনদের(বিশেষ করে মেয়েদের) খুব ভালোবাসতেন।
পরিবারে অভাব জিনিসটা তেমন একটা ছিল না।নামাজ ভালো লাগলে পড়তাম না লাগলে নাই,রমজানে রোজা রাখতাম বাট আম্মু বলত সবগুলা রাখতে হবে না শরীর খারাপ হবে তাই(এখন আম্মু একটু চেন্জ হয়ছে)।এককথায় জীবন টা ছিল দ্বীন পালনের ব্যাপারে অতি সাধারন।আমার Doctor হওয়ার ইচ্ছা ছিল।যখন ইন্টারে সবে উঠলাম তখনি আব্বু হঠাৎ করে মারা যায়😢😢😢।তখন দুঃখ পেয়েছিলাম ঠিকই বাট আমার রবকে তখনও চিনতে পারি নাই😢😢😢।
H.S.C exm. কয়েক দিন আগে আমার বিয়ে হয়।আমার husband একজন প্রবাসী।ইন্টার শেষ করার পর আর পড়া হয় নাই।জীবনের নতুন গল্প শুরু।সংসারে মন দিলাম।আমার রব আমাকে খুব ভালো বর ও ঘর দুটোই দান করেছে(আলহামদুল্লিলাহ)।আমার শ্বশুর বাড়ির সবাই ছিল আরো আধুনিক।আমার শ্বাশুড়ি ছাড়া কেই তেমন নামাজ পড়ত না(আমার চাইতেও আরো খারাপ তাদের অবস্থা দ্বীনের দিক দিয়ে)।আমিও ডুবে গেলাম দুনিয়ার মিথ্যা সুখ নামক চোরাবালির মধ্যো😢😢😢।।।
গান,বাজনা,নাচানাচি কোনটাই বাধ নেই এই সংসারে।বিয়ের দেড় বছরের মাথাই আমার স্বামী 6 মাস থাকার পরও যখন বেবী হচ্ছে না তখন থেকেই শুরু হলো অন্য জীবন(রুমি আপুর ভাষায় বলতে ইচ্ছে করছে-মূলত এটাই সুখের জীবন,যে জীবন রবকে চিনায়,রবের দিকে ফিরিয়ে আনে তার গুনাহগার বান্দাকে)।।তখনও পুরোপুরি চিনতে পারিনি আমার রবকে😢😢😢।।আমার আম্মু পাশের বাড়ির এক হুজুর থেকে যাস্ট পানি পড়া আনে আর হুজুর নাকি বলছে আমাকে তাহাজ্জুত নামাজ পড়তে।।তখন পানি পড়াটা রেখে মনে মনে বললাম ফজর পড়তেই যেখানে বিরক্ত লাগে সেখানে তাহাজ্জুত পড়ব(বিরক্ত)😢😢।
পরে অনেক ডাক্তার দেখালাম কাজ হলো না।এরপর নামাজ নিয়মিত পড়তে থাকলাম,,,সাথে তাহাজ্জুত।।2 মাস পর স্বামি চলে গেলেন।তাহাজ্জুত পড়ার সময় আমি এক অন্য রকম সত্বাকে অনুভব করতে পেরেছিলাম(যা আগে কখনই পাইনি)।6 মাস পর আমার স্বামি আবার দেশে আসলেন।কিন্তু কোন কাজই হলো না।ডাক্তাররা কোন সম্যাসাই খুজে পেলেন না আমাদের।।এরপর আমি আমার স্বামির মধ্যে কিছু চেন্জ দেখলাম(আলহামদুলিল্লাহ)।সেও আমার মত তার রবের খোজ করছে(আলহামদুলিল্লাহ)দুজোনেই এক সাথে তাহাজ্জুত পড়তাম।।।
5 মাস থাকার পর আবার ও চলে যায়(নিরাশ হয়ে শেষের মাসে আমি ঔষধ খাওয়া,ডাক্তার দেখানো সব বন্ধ করে দেই)।।ও চলে যায়😢😢তখন বিয়ের 3 বছর শেষ হয়ে 4 বছরে পা রাখলাম😢😢।।বাট ও চলে যাবার 20 দিন পর আমি বুঝতে পারি আমি প্রেগনেন্ট😍😍।।সবাই খুব খুশি হয়েছিল।বাট বেশি দিন স্থায়ী হলো না খুশিটুকু,,,2019 এ রমজান মাসে 1.5 মাসের মাথায় বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে যায়।।খুব কষ্ট হয়েছিল সেদিন😭😭😭।।পরে আবার চোখে পরলো কোরআনুল কারিমের সেই আয়াতখানা(হতাশ হয়ো না উঠো সেজদা কর ও কাঁদো)।।।
রমজান মাসে এড হলাম রুমি আপুর সাথে(আমার দ্বীনি বোন,আল্লাহর জন্য ভালোবাসি ওনাকে)।।ওনার অনেক ভালো ভালো পোস্ট গুলো আমায় অনুপ্রেরনা দেয়েছিল।।।আমার রবকে চিনতে সহজ করেছে।।রুমি আপুর এক পোস্টে পড়েছিলাম আল্লাহ নাকি কারো ওপরে খুশি হলে শুধু তাকে দান করেন এমন না খুশি হয়ে তার কাছ থেকে নিয়েও যান❤❤(আলহামদুলিল্লাহ)।।।ওনার মত আরো অনেক দ্বীনী বোনদের সাথে এড হলাম(আলহামদুলিল্লাহ)।।।
ইন্টারনেটে বড় বড় আলেম ও হুজুরদের থেকে সহি ইসলামের ব্যাপারে জানতে এবং যতুটুকু পারি নফসের সাথে যুদ্ধ করে মানতে শুরু করলাম।এখন আর তেমন কষ্ট হয় না(আলহামদুলিল্লাহ)।।।আগে আমার আপুর সাথে বাহিরে গেলে আমাকে বলত আমি ওর মেয়ে😢😢।ছোট জাকে,বোনকে বলত ওরা বড় আমি ছোট😢😢।।আর এখন 15 বছরের ছোট ভাইকে নিয়ে বাইরে গেলে বলে ওর মা,রাস্তাই সমানে খালাম্মা খালম্মা বলে ডাকে😍😍😍।।।আর আমিও খুশি এই ডাকে(রুমি আপু বলেছিল রবের কথা মানতে গিয়ে চাচি ডাক শুনে প্রশান্তির বাতাস বয়😍😍)আমার সেই অবস্থা।।।
বাট ঘরে এখনও আল্লাহর আইন মানতে পারছি না, দেবর,ভাশুর,বাড়ির গায়েরে মাহরাম সবার সাথেই দেখা দিতে হচ্ছে।।।আল্লাহ আমাকে তার সকল আইনগুলো সঠিকভাবে মানার তাওফিক দান করুক।।।আমিন।।আমার জন্য দ্বীন ইসলামকে সহজ করে দিক।।আমিন।।দোয়ার দরখাস্ত রইল আমার দ্বীনি মুসলিম বোনদের কাছে💌💌💌💌।।।আল্লাহ আমার সকল মুসলিম বোনদের মনের নেক আশাগুলো পূরন করুক❤❤।।আমিন।।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনের ফেরার ৮ম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2419176748345695&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
......................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ১০
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আলহামদুলিল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আ'লামিন।
প্রথমে ই বলি এটা দ্বীনে ফেরার না,রাস্তা চেনার গল্প।দ্বীনে ফেরা হয়েছিল কি না তা আমলনামা হাতে পাওয়ার পর বুঝতে পারব,তখন জান্নাতে যেয়ে ফেরার গল্পটা শুনাব ইং শা আল্লাহ।
____________________________
ছোটথেকেই দেখেছি মা-বাবা কে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে।মাঝে মাঝে আমি আর আমার বড় ভাই ও দাঁড়াতাম নামাজে।যখন আমরা নামাজ শেষ করতাম দেখতাম আমাদের পিছনে ফল,খাবার রাখা।আম্মু বলতেন ফেরেশতা কে দিয়ে আল্লাহ পাঠিয়েছেন নামাজ পরার পুরস্কার। পরে বুঝি সেটা আম্মু ই করত,নামাজে আগ্রহ বাড়ানোর জন্য।তখন আসলে আম্মু জানত না যে বাচ্চাদের সাথেও সত্যকথা বলতে হয়।তিনি তার মত চেস্টা করে গেছে আমাদের দুই ভাই-বোন কে নামাজ পড়াতে,কোরাআন পড়া শেখাতে।প্রতি বার ই আমার ভাই এর জন্য আরবী শিক্ষক রাখা হত আর শিক্ষক সমুহ একবছর যাবত হরফ ই চেনাত, যদিও ভাই সব অক্ষর উচ্চারণ ও লিখতে পারত।
কালক্ষেপণ করে টাকা নেয়ার এই অভিনব উপায়ে আম্মু তখন বিরক্ত।ওর কোরাআন শিখা তখন বাদ।
একদিন বাসার পিছনে খালের ওপারে এক মহিলা মাদ্রাসায় আমাকে শুধু সকালে সহিসশুদ্ধ কোরাআন শেখার জন্য দিল,এক,দেঢ় বছর শুধু আলিফ বা পড়ায়।যদিও ক্বফ থেকে শুরু করে 'হা' সব উচ্চারণ ই পারতাম তবুও আমায় একই পড়া দেয়,এবার আমিও বিরক্ত।প্রতিদিন যেয়ে বড় গ্রুপের সুরা মশক করত,শুনে বেশ কয়েকটা শিখে ফেল্লাম।তারপর আবার আব্বুর বদলী তে জায়গা বদল।ভাই ssc পাশ করে ঢাকা চলে গেল।আমি একা,কস্ট হত,খারাপ লাগত।বেশ কিছু ছোটখাট বিপর্যয় চলছে,আমি তখন ছন্নছাড়া।ভাই ভার্সিটির টপ স্টুডেন্ট, সাথে ট্রেন্ডি ও।ওর কাছ থেকেই ইংলিশ মুভি দেখা,গান শোনার হাতে খড়ি।Numb,Hazard,Walk Alone,Do u know আরও প্রচুর গান মুখস্ত।
হলিউড এর সেলেব দের ফলো করি,পোশাক-জিন্স,টপ্স।আমার বাবা-মা আসলে জানতেন মুসলিম হলে নামাজ রোযা করতে হয় নিয়মিত।পর্দার বিষয়ে তারা কিছুই জানত না।আমার মত এত ভাল ছাত্রী,(স্মার্ট!) মেয়েকে নিয়ে আমার আত্নিয়ের বুক গর্বে ভরে উঠত।বলা হয়নি আমি তখন মাঝে মাঝে নামাজ পড়তাম আমার এক বান্ধবীর প্রভাবে।ও ও নামাজ ধরত,ছাড়ত।আসলে আমরা আমলের বই দেখে আমল করতাম ৩০ দিন পড়লে আশা পুরন হয় টাইপ,আশা ও পুরন হয় না,আমরাও নামাজ বাদ দেই,এর মধ্যে হুজুর রেখে কোরাআন পড়া শেখাল।আমি জিন্স পড়ে,মাথায় কোনরকম Scarfs পরে পরতাম।একদিন একজন এ অবস্থায় দেখে হুজুর কে বল্ল আপনার ছাত্রীর এমন পোশাক কিছু বলেন না!
জবাবে হুজুরের উত্তর ছিল,একবারে সব ঠিক করতে গেলে কিছুই ঠিক হবে না।ইলম অর্জন করার পর ও নিজেই সব ছেড়ে দিবে।
আলহামদুলিল্লাহ, এখন বুঝি হেকমত পূর্ন দাওয়াহ কতটা কার্যকর!
তখন রাতে একা ঘুমাতে ভয় পাই,একদিন হঠাৎ মনে হল,ভয় পেলে আম্মু কে ডাকি চলে আসে,কিন্তু মৃত্যুর সময় তো কাউকে ডাকতে পারব না!কি অদ্ভুত অনুভূতি।
বিভিন্ন কারনে নামাজ পড়ি,ছাড়ি।Ssc তে ৫+ পাওয়ার পর ক্যান্টনমেন্ট এ ভর্তি হই।ফোনে একটা হারাম সম্পর্ক ও হয় কিন্তু দেখা করা সম্ভব ছিল না।অনেক কথা হত,কথা বলতে বলতে রাত শেষ।যদিও দেখা হত না কিন্তু সম্পর্ক টা চলল,বছরের পর বছর!জী,বছরের পর বছর____ আল্লাহুম্মাগফিরলি।
ইন্টারের পর রাজশাহী মেডিকেল এ চান্স হল কিন্তু এতদূর একা পড়তে বাসা থেকে ছাড়ল না,ভর্তি করল কাছের প্র্ইভেট ইউনিভার্সিটিতে Science faculty তে।আমি যে সাবজেক্ট এ পড়তাম তাতে অনার্স শেষ হলেই জব।কিন্তু আমি ভালবাসায়!এতই অন্ধ ওই জব করলে ঢাকা থাকতে হবে, আমার ইচ্ছা ছিল bf কে বিয়ে করে ওর সাথেই গ্রামে থাকা।এত ভাল সাবজেক্ট ছেড়ে ন্যাশনাল এ ভর্তি হলাম!!
এক ডাক্তার এর সাথে বিয়ের কথা হচ্ছিল, কিন্তু আমার তিব্র আন্দোলন এর মুখে বাবা-মা সে বারের মত বিয়ের আশা ছেড়ে দিল,আর ও তখন খুব করে চাকরি খুজছে,সারাদিন রাত এক করে পড়ে,চাকরী হলেই আমায় বিয়ে করে নিয়ে যাবে।তখন কয়েক মাস ও ঢাকায় ছিল কোচিং এর জন্য,জিবনে প্রথম কারো সাথে রিকশায় বসা,আইসক্রিম খাওয়া এটাই আমার জন্য অনেক,স্বপ্নের মত।
এর মধ্যেই একদিন নানু স্ট্রোক করলেন, কয়েকদিন পর মারা গেলেন।জিবনে অনেক মানুষের মৃত্যু দেখেছি,কিন্তু তখন মনে হল এই প্রথম আমি জানলাম মানুষ আসলেই মারা যায়,প্রথম অনুভব করলাম।নামাজ শুরু করলাম,নতুন ভার্সিটি তে ওড়না হিজাব পড়ে যাই,আর ততদিনে আমার ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে,ভাবি ও মোটামুটি ধার্মিক,নিয়মিত নামাজ আদায় করে।ভাই ও নামাজ পড়ে নিয়মত,প্রইভেট ফার্মে জব করও দাড়ি,টাখনুর উপর প্যান্ট।সেদিনের ট্রেন্ডি ছেলে দেখে কে বলবে? (বারাকাল্লাহু লাকা)
নানু মারাযাবার কয়েকমাস পরেই ভাইয়ের মেয়ে বাবু হল,হার্টে ছিদ্র থাকায় খুব কস্টে ২দিন সব চেস্টা ব্যার্থ প্রমান হল।যেই হাত দিয়ে কোলে নিয়ে আগের দিন ছোট ফুটফুটে শরির টার নড়াচড়া দেখছিলাম পরের দিন সেই হাত দিয়ে ফুলের মত মিস্টি নিথর দেহখানি ধরেছিলাম, পরপর দুটি মৃত্যু নাড়া দিয়ে গেল।মনে হচ্ছিল স্পঞ্জ দিয়ে কেউ জিবনের সব রং শুষে নিয়েছে।বাসায় সবার মন খারাপ।নানু মারা যাবার পর থেকেই।
যখন হাইস্কুলে পড়তাম তখন থেকে ই জানতাম খ্রীস্টান ধর্মের সাথে ইসলামের সাদৃশ্য, বিচের বিবেচনা করার পর মনে হল খ্রিস্টান ধর্ম অপূর্ণ যেটার পূর্নতা দেয় ইসলাম।আর হিন্দু ধর্ম নিয়ে অনেক সিরিয়াল,শো দেখার পর মনে হল হিন্দু ধর্ম কে আমার অযৌক্তিক মনে হল।এবার তখন ভাবা শুরু করেছিলাম হয় ইসলাম সত্য নাহয় কোন সৃষ্টি কর্তা নেই(নাউযুবিল্লাহ)কিন্তু যদি সৃষ্টি কর্তা না থাকে,পরকাল না থাকে তাহলে তো খুবই অন্যায়, দুনিয়ায় হওয়া অনাচারের বিচার হবে না!নাহ,অবশ্যই প্রতিপালক আছেন,তিনি তখন হ্রিদয়ে এটা বদ্ধমূল করে দিলেন,আলহামদুলিল্লাহ। (এটা স্কুলে পড়াকালীন সময়ের ভাবনা)কিন্তু এই ভাবনা পর্যন্ত ই সিমাবদ্ধ ছিল।
নানুর মারা যাওয়া পর ই নিয়মিত নামাজ শুরু করি আর তখন থেকে নিয়মিত পিসটিভি দেখে ইসলাম সম্পর্কে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছিল,তারপর হঠাৎ পিসটিভি বন্ধ হয়ে গেল, ভাইয়ের বাবুর মৃত্যুর কস্ট,অবসাদ সব মিলে একরাশ বিষন্নতা।কি মনে করে একদিন গুগোল এ হাদিসের বই খুজছিলাম,বুখারি ছাড়া কোন বই এর নাম জানতাম না,১০টা পার্ট ই ইফা: এর পিডিএফ ভার্সন নামিয়ে পড়া শুরু করলাম।ইসলাম নিয়ে জানছি আর হারাম রিলেশনে অশান্তি অনুভব করছি।ওর চাকরি হল,ভাবলাম এবার বিয়ে,ও ওর বাড়িতে জানাল,আমি আমার বাসায় বলার আগে একবার ইস্তেখারা করে নিলাম,স্বপ্ন টা বুঝলাম না তবে মনে করেছিলাম পজিটিভ।কিন্তু না,আমার বাড়িতে জানানোর আগেই বুঝলাম সে চলে যাবে,অন্য কাউকে বিয়ে করবে।!
যার জন্য আমার মত Ambitious একটা মেয়ে ক্যারিয়ার বাদ দিয়ে,সব স্বপ্ন বিসর্জন দিল তার এই ব্যাবহার পুরোপুরি ভেংগে দিল আমাকে,ভাবলাম সব শেষ।মনে হল কেন এত ভাল সাবজেক্ট, ভার্সিটি ছেরেছিলাম। পরে বুঝেছি, আমার অন্তরের শূন্যতাই আমাকে আমার রবের কাছে এনেছিল,এসব ই আমার রবের নেয়ামত।আমি এখন জানি আল্লাহর সাথে বান্দার একটা সম্পর্ক থাকে,সিজদায় যেয়ে কেঁদে দুয়া করা কতটা শান্তির বুঝতে পারি।
সমস্ত প্রাশংসা সেই সত্ত্বার যিনি আমি হাজার,লক্ষ,কোটি ভুল করার পর ও রাস্তা দেখিয়েছেন, আমি যে ভার্সিটি তে পড়তাম প্রথমে, সেখানে হিজাব নিষিদ্ধ ছিল,যে কারোনেই ভার্সিটি ছাড়া হোক,ভালোই হয়েছে, নতুন ভার্সিটিতে পর্দা করে যেতে পারি,নামাজ পড়তে পারি সময়মত আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ বান্দাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন,তিনিই উত্তম পরিকল্পকারী।
এত নিয়ামত পাওয়ার যোগ্য আমি ছিলাম না,আল্লাহ দয়া করে দিয়েছেন।এখনো আমি চুড়ান্ত অবাধ্য-গাফেল, পারি না নেয়ামত এর শুকরিয়া আদায় করতে,তবু তিনি নেয়ামত দিচ্ছেন, মহান আমার আল্লাহ।পিছনের দিকে তাকালে বুঝি এই রাস্তা চেনায় আমার বিন্দু মাত্র কৃতিত্ব নেই,এই জার্নি শুধুই তার দয়া।কেবল পথচলা শুরু "ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুবি সাব্বিত ক্বলবি আলা দ্বীনিক"আমার বাবা-মা এখন ইসলাম সম্পরকে আগের চেয়ে বেশি জানেন,মানেন।আমার ভাইয়ের আবার একটা মেয়ে বাবু হয়েছে।
জীবনে পাওয়ার হিসেব না করে, না পাওয়ার হিসেব করতে থাকি আমরা।
কিসে কল্যান শুধু আল্লাহ জানেন।আমার লেখা দিব কিনা চিন্তা করতে করতে একসময় সিদ্ধান্ত নিলাম লিখব,রবের কতটা দয়া তা প্রকাশ করার জন্য।আবার ও বলছি,এটি বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়ার গল্প,এমন গল্প বেচে থাকলে পজিটিভ, নেগেটিভ যেভাবেই হোক তৈরি হতে থাকবে,বিচারদিবসের দিন ফাইনালি বোঝা যাবে আদৌ এই অধম দ্বীনে ফিরেছিল কি না।
"নিশ্চয়ই কাফির ছাড়া কেউ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না"(আয়াত নাম্বার টা মনে নেই)
আল্লাহুম্মাগফিরলি, আল্লাহুম্মাগফিরলি,মহান আল্লাহ আমাকে ও আপনাদের বিচারদিবসে মাফ করুন, দ্বীনে অটল থাকার তৌফিক দান করুন।
আমিন
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনের ফেরার ৯ নাম্বার গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2420002344929802&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
.............................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ১১
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
ইন্টার লাইফ পার করেছি ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে খুব মজায়।মহিলা কলেজ এ পরতাম বিধায় কোনো ছেলে বন্ধু ছিলো না।তাছাড়া ছোট বেলা থেকেই গার্লস স্কুলে পড়ে এসেছি।ঘুরাঘুরি পছন্দ করতাম খুব।তাই দেখা যেতো ক্লাস বাদ দিয়ে বান্ধবীদের নিয়ে বেশিরভাগ টাইম ঘুরতাম, খেতাম, আর সে ছবি আপলোড দিতাম ফেসবুকে।পারিবারিক শাসনে থাকায় উগ্র ছিলাম না কখনোই।পড়াশোনায় সময় কম দেওয়ায় ইন্টারে রেজাল্ট টা খারাপ আসে।বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল মেডিকেলে পড়াবে।কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন আমি পারিনি পূরণ করতে ইন্টারে জিপিএ কম থাকায়।সেসময়টায় বাবা মায়ের কষ্ট টা খুব ভেতর থেকে ফিল করেছিলাম।
অবশেষে ফুফাতো ভাইয়ার পরামর্শে ২০১৯ এ বাবা আমাকে ভর্তি করান কমার্সের একটা প্রফেশনাল কোর্সে।নতুন করে স্বপ্ন দেখলাম ক্যারিয়ার বিল্ড আপের।আর বাবা মাকে খুশি করার।
২০১৯ জানুয়ারি ৩০। প্রথম ক্লাস থেকেই আমি খুব মন দিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। আর ঐ ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মতো কম্বাইন্ড ক্লাস শুরু আমার।অনেক ছেলে বন্ধু হয়েছিল।
১৯ ফেব্রুয়ারি আমার আইডি তে একটা রিকুয়েস্ট আসে।আইডিতে অনেক ইসলামিক পোস্ট ছিলো যেগুলো পড়ে খুব ভালো লাগলো।এক্সেপ্ট করে জানতে পারলাম উনি আমাদের ক্যাম্পাসেরই এক সিনিয়র ভাই। নিজ থেকেই মেসেজ করেন।
রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম।প্রথম দিনই কল দিয়ে অনেকক্ষণ কথা বললেন।আর রিকুয়েস্ট করলেন যেনো ফেসবুকের ছবি সব ডিলিট করে দিই।বদনজর সম্পর্কে অনেক কিছু জানালেন।উনার প্রতিটি কথা আমার খুবই ভালো লাগল আর অনেক ইসলামীক কথা দিয়ে এমন ভাবে বুঝিয়ে বললেন আমি অবশেষে ডিসিশন নিয়ে নিলাম ছবি ডিলিট করার।২১ ফেব্রুয়ারি ছবি ডিলিট করে দিলাম।উনি আমাকে পড়াশোনায় ও হেল্প করতেন।উপদেশ দিতেন মিথ্যা কথা না বলার, গীবত না করার।আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দিতেন।বিভিন্ন ইসলামীক লেকচারের ভিডিও দিতেন। নামাজের গুরুত্ব, শাস্তি যেদিন জানলাম, নামাজ পড়তে শুরু করলাম ঠিকঠাক। তখনও বড় ভাইয়ের মতো রেসপেক্ট করে প্রতিটা কথা মানতাম ইসলামের বিধি বিধানের প্রতি দূর্বলতার জায়গা থেকে।
এরপর একদিন উনি আমাকে দেখা করার কথা বললেন। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বোরখা পড়ে দেখা করবো। তুলে রাখা বোরখা আলমারি থেকে নামিয়ে পড়লাম।৪ মার্চ প্রথম দেখা করি।আর আমি সেদিন থেকে বোরখা রেগুলার পরা শুরু করলাম।১৪ মার্চ ৪র্থ বারের দেখায় উনি বলেন "ভালো করে পড়াশোনা করো। আমি আমার পরিবারে তোমার কথা জানাবো।" শুনেই আমি একটু অবাক হলেও খুব খুশি হই। কারণ এমন একজন মানুষ আল্লাহর পথে চলতে সহায়ক হবেন ভেবেই। হারাম সম্পর্কের ব্যপারে আমার তেমন জ্ঞান তখনও ছিলো না। জড়িয়ে পড়েছিলাম হারাম সম্পর্কে।
কিন্তু খুব বেশি দিন এগুলো না যোগাযোগ।এরপর আর দেখা হয়নি। শুধু ফোনেই কথা হতো। কিছুদিন পরে উনি যোগাযোগ কমিয়ে দেন। আমার সে সময় টা খুব খারাপ লাগতো। আমি বুঝতাম না এই অস্থিরতা কি করলে যাবে আমার।
অবশেষে ২৯ মার্চ একটা খারাপ সিচুয়েশন তৈরী করে বাজে বিহেভ করে। ভেবেছিলাম হয়তো সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু উনি ৩০ তারিখ একটা লম্বা ভয়েজ রেকর্ড এ আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দেন আর কোনো সম্পর্কে তিনি থাকতে চান না। আমি উনার জন্য পারফেক্ট না। আমি যেনো মেনে নিতে পারছিলাম না।
এই কষ্ট টা থেকেই আমি মুলত আমার রবকে খুঁজে পাই। আমি তখন রাতে সিজদায় এতো কাঁদতাম। আমার জীবনের বিগত পাপ গুলোর জন্য, সব ভুল সিদ্ধান্তের জন্য। আমি youtube এ universal vision এর লেকচার গুলো শুনতাম। তখন কোন চ্যানেল এর একটা হারাম সম্পর্ক রিলেটেড একটা ভিডিও সামনে আসলো। নামটা ঠিক মনে নাই। ভিডিওটা দেখার পর অনুশোচনায় নামাজে তওবা করে কাঁদলাম খুব। আর কখনো এমন হারাম কাজে না জড়ানোর ওয়াদা করলাম।
কোরআন পড়া শুরু করলাম নিয়মিত।অল্প অল্প মুখস্থ করার চেষ্টা করতাম, আর অর্থ পড়তাম।কি অদ্ভুত এক প্রশান্তি আসতো আলহামদুলিল্লাহ।আমি তাহাজ্জুদে নিয়মিত হয়ে গেলাম। জানি না মাঝরাতে এলার্ম বেজে উঠলে auto মনে চলে আসতো আমার শুয়ে থাকলে চলবে না।রবের সন্তুষ্টির জন্য দাঁড়িয়ে যেতাম। আমার সিজদায় গেলেই পাপ গুলোর জন্য কান্না পেতো। ননমাহরাম সম্পর্কে জানার পর থেকেই বন্ধুদের সাথে দূরত্ব বাড়ালাম। আস্তে আস্তে চেনা জগতে খুব অচেনা হয়ে গেলাম।
কিন্তু আল্লাহর পথে চলা খুব সহজ হয়নি পরিবার থেকেও বাঁধা আসতে শুরু করলো।হিজাব নাই।আমি পর্দা করতাম বড় ওড়না দিয়ে।পরিপূর্ণ পর্দা সম্পর্কে জানার পর অল্প কিছু টাকা জমিয়ে যেদিন প্রথম হাত মোজা কিনলাম মা তো সেই রাগ।তাও জোর করে পড়া শুরু করলাম।সামর্থ্যের মধ্যে যা ছিলো তা দিয়েই পর্দা করি।মা তো সন্দেহ করা শুরু করলেন। বকা দিতো খুব।অতিরিক্ত কিছুই ভালো না,জঙ্গির দলে নাম লিখাইছো নাকি। এসব বলতো। কষ্ট পেতাম না। রবের কাছে ধৈর্য্য ধারণের তাওফিক্ব চেয়ে দুয়া করতাম।
বাসায় কেউ আসলে সামনে যেতে চাইতাম না।মা বলতো নতুন কাহিনী শুরু করছো? দেখছিনা আগে কেমন চলছো।এমন আরও অনেক কথা শুনতে হয়েছে। মা মাঝে মাঝেই আমার ফোন নিয়ে নিতো। যেই মা ছাড়া সন্তানের আপন কেউ হয়না দুনিয়ায় সেই দিনগুলোতে মা কে বড়ো অচেনা লাগতো।মনটা ভেঙ্গে যেতো, কিন্তু রবকে রাতের অন্ধকারে সিজদায় কেঁদে বলতাম কারো কটু কথায় কষ্ট পাইনা, ধৈর্য্য দাও,ক্ষমা চাইতাম,পরিবারের সবার হিদায়াতের জন্য দুআ করতাম।।অনেক আপুকে দেখতাম অনলাইনে জিলবাব এর পিক দিতো।শখ হতো কেনার।কিন্ত সামর্থ্য আর হতো না।আর বাসায় তো বলাই যাবেনা। তারপর অল্প কিছু টাকা দিয়ে রবকে ভালোবেসে কোরআন কে বুঝবো বলে অনলাইনে একটা একাডেমীতে ভর্তি হলাম।
একঝাঁক দ্বীনি বোনের সংস্পর্শ পেলাম।।আলহামদুলিল্লাহ সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।রব উনাদের উছিলায় নতুন নতুন শেখার তাওফিক্ব দিয়েছেন।আলহামদুলিল্লাহ এরপর রব আমাকে ফিরিয়ে দিলেন যা নিয়ে নিয়েছিলেন তার চাইতে উত্তম। আমি সেই ইন্সটিটিউট ছেড়ে ৬ মাস পর একটা ভালো সাবজেক্ট নিয়ে অন্য এক ভার্সিটিতে অনার্সে ভর্তি হলাম। শুরু থেকেই ননমাহরাম avoid শুরু করলাম। আল্লাহই সহজ করে দিলেন। মেডিকেল related subject নিয়ে পড়ছি।আল্লাহ চান তো ইচ্ছে আছে মেডিকেল ল্যাব এ জব করে মানুষের সেবা করার।এখন প্রায় ১ বছর...
আল্লাহ আমার পরিবারের সবাইকে আলহামদুলিল্লাহ নামাজী করেছেন।মায়ের মন কিছুটা নরম হলো।এখন আগের মতো বকে কম।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনে ফেরার ১০তম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2420763328187037&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
.....................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ১২
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আমার পরিবার পরিবেশ কিছুই ইসলামিক না! ছোট থেকেই নাচ গান ছবি আকা লেখাপড়া এই সব ছিল আমার লক্ষ্য! বাসায় সবাই তাই ই চাইতো! হ্যাঁ তবে নামাজ পড়া কোরআন পড়ার শিক্ষাও দিয়েছিলেন কিন্তু পরিবেশ আর পরিবার সব কিছু মিলিয়ে হয়ে ওঠেনি! এমনকি আমার এই ১৮ বছর বয়সে ও আমি একবার ও কোরআন খতম দিতে পারিনি! আম্মু নামাজ পড়তে বললেও আমার রাগ হতো তখন! কখনো পড়তাম কখনো পড়তাম না!
এক পর্যায়ে এসে নামাজ পড়া ছেড়ে দিয়ে সব ধরনের পাপ কাজে যুক্ত হলাম! তেমন ভাবে কেউ কখনো আল্লাহ ইসলাম এই সব কিছু নিয়ে বলেনি! বলা যায় অনেক বছর আমি ইসলামের থেকে দুরে ছিলাম! শুধু বিশ্বাস করতাম যে আল্লাহ আছেন কিন্তু কোনো ইবাদত করতাম. না!
২০১৮ সালে ssc এক্সাম দেই! তো ইচ্ছে ছিল খুলনার কলেজে পড়ব আর ইঞ্জিনিয়ার হবো! ssc দিয়ে খুলনাতে আসি! সেই খান থেকেই আমার একার পথ শুরু হয়! খুলনাতে আমি এক থাকি! খুলনাতে এসেই বোরকা পড়া শুরু করলেও পর্দা করাটা তেমন জরুরি ছিল না.আমার কাছে! বলা যায় বোরকা পড়েও বেপর্দায় থাকা!
কলেজে আমার একটা ফ্রেড এর সাথে পরিচয় বেশ ধার্মিক মেয়েটা! ও আমাকে নামাজ পড়তে বলত. কিন্তু তাও গায় লাগাতাম না! গান ছিল আমার প্রান! গান মুভি এই সব ছাড়া আমার দিন যেত না! ফেসবুকে ছেলেদের সাথে কথা বলাও ছিল আমার প্রতিদিন এর রুটিন! তো আমার সেই ফ্রেড ২০১৯ সালেই এপ্রিল মাসে (ঠিক মনে নেই) মেবি আমাকে একটা ইসলামিক গ্রুপে এড করে! আমি কখনো এই ধরনের গ্রুপে যাই না কিন্তু কি বুঝে যেন গ্রুপে ঢুকলাম! আসলে.সবই আল্লাহর ইচ্ছে! আল্লাহ যে আমাকে এভাবে হেদায়েত দিবেন ভাবতে পারি নি! তো গ্রুপে অনেক ইসলামিক কথা দেখি কেমন যেন একটা নেশা হয়ে যায়!!
আসলে ইসলাম যে এতো সুন্দর আমি তখন অনুভব করি! ২০১৯ সালেই আমি প্রথম রমজান মাসে একা একা সব গুলো রোজা রাখি! তারপর ইউটিউব এ ওয়াজ শোনা শুরু হয়! আস্তে আস্তে আমার মন ইসলামের দিকে ঝুকে যায়!! গান শোনা বন্ধ করে দি ছেলেদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেই ফেসবুকে পিক দেওয়া ও বন্ধ করে দেই এমনকি হাতের পিক ও দেই না! নামাজ রোজা পাশাপাশি অনেক নফল ইবাদত শুরু করে দেই!! পরিপূর্ণ পর্দা করা শুরু করি! আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি এতো খুশি আছি!! বলা যায় আমি এখন পরিপূর্ণ ইসলামের মধ্যে নিমজ্জিত আছি!! আমার পরিবর্তন শুধু আমার পরিবার বা ফ্রেড রা না পুরো দুনিয়া আবাক!!
এখন আমার প্রতিদিন অনেক প্রশ্নের জবার দেওয়া লাগে আমার এমন পরিবর্তন কেন? এমন হুজুর সাজ কেন? এমন ভুতের মতো থাকি কেন? সবাই প্রশ্নের একটা জবাব আল্লাহ হেদায়েত দিছেন! এখন নিজে উদ্দোগ নিয়ে কোরআন পড়ি!! আমার এই পরিবর্তন টা কেউ আমাকে সাপোর্ট করেনি!! সবাই আমাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে, হাসি তামাশা করে!! কিন্তু আমি জানি আমার আল্লাহ আছেন আমার সাথে! আমি আমার ভাই কেও ইসলামের ব্যাপারে শিক্ষা দেই মাঝে মাঝে! আল্লাহ যে আমাকে এমন ভাবে পরিবর্তন করে দিবেন আমি কল্পনা নাও করি নাই!!
এখন তো জীবনে কোনো বিপদ আসলে আগে মনে পড়ে আল্লাহ আছেন তো তাকে বলব!! শয়তান অনেক বার অনেক ভাবে আমাকে ইসলাম থেকে সরাতে চাইছে কিন্তু আল্লাহ আমার সাথে আছেন বলে পারে নি!
যারা নতুন দ্বীনের পথে আসছেন তাদের উদ্দেশ্যে একটা কথা বলব :ইসলামে আসার পর এমন ও হবে আপনার আপন মানুষ চলে যাবে! সমাজের নানা মানুষ নানান কথা বলবে অপমান করবে তামাশা করবে কিন্তু কখনো এই সব এ কান দিবেন না নিজেকে আল্লাহর ইবাদত এ গড়ে তুলুন দুনিয়া ও আখিরাত দুইটাই সুন্দর হবে!!
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনে ফেরার ১১তম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2421420354788001&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
..........................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ১৩
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালার কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া যে তিনি আমায় তার সিরাতুল মুস্তাকিমের পথের অনুসারি করেছেন।
জাহিলিয়াতের মধ্যে ডুবে ছিলাম এক সময়।
খুব ছোট্ট বেলায় মাকে হারাই। তারপর থেকে দাদা দাদীর কাছে থেকে মানুষ হওয়া। ক্লাস ফ্রোরে থাকা কালীন দাদা মারা যায়।
তারপর বোনের বিয়ের পর, আপু আমাকে তারকাছে নিয়ে যায়। সেখান থেকেই লিখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছি। দুনিয়াবি লিখাপড়া নিয়েই ছিলাম সচেতন। এটার জন্যই জীবনে যত বকাবকি শুনেছি। ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান ছিলো খুবই নগন্য। ছোট বেলায় মক্তব, আর বড় হওয়ার পড় ক্লাশের ইসলাম শিক্ষা বইয়ের মধ্যে আবদ্ধ ছিলো ইসলামিক জ্ঞান।
আপুদের ছিলো জয়েন ফ্যামিলি। হালাল-হারাম,পর্দা, মাহরাম,গায়রে-মাহরাম এসব কোন কিছুর জ্ঞানই ছিলোনা। মুসলিম পরিবারে জন্ম হয়েও আমরা ছিলাম অনেকাংশে গাফেল। ইসলামের কোন ধরনের মৌলিক শিক্ষাই পালন করতাম না। মন চাইলে নামাজ পড়তাম, আর রমজান মাস আসলে ইচ্ছা হলে রোজা রাখতাম।
চারপাশের পরিবেশ ছিলো খুবই খারাপ। কথায় আছেনা সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। আমার বেলায়ও ঠিক তেমন হলো।
বন্ধু বান্ধবী,আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশি কারো কাছ থেকেই দ্বীনের জ্ঞান পাইনি।
হারাম সম্পর্কের মধ্যে ডুবে ছিলাম এক সময়। এর জন্য পরিবারের কাছেও অনেক লাঞ্ছিত হয়েছি। (আল্লাহুমাগফিরলি)
ইন্টারে পড়াকালীন ফোন কিনে ফেসবুক একাউন্ট খুলি,সেই থেকে শুরু হলো ভার্চুয়ালের মাধ্যমেও বিভিন্ন হারাম কাজে জড়িয়ে পড়া।
ফেসবুকে নিত্য নতুন ছবি দেওয়া নিজের কিংবা বিভিন্ন বেপর্দা নারীদের। টিবি সিরিরাল, নাচ গান, মুভিদেখা, আড্ডা দেওয়া, আর বিভিন্ন ধরনের দিবস উপলক্ষে পার্টি প্রোগ্রাম করা এসব ছিলো আমার নিত্য দিনের সঙ্গি।
একসময় কেউ একজন আমাকে "মুসলিম নারী" গ্রুপের মধ্যে এড করে দেয়। একদিন সেখানে হারাম রিলেশনের ব্যাপারে একটা পোষ্ট দেখতে পাই। তারপর সেদিনই এসব হারাম সম্পর্কের ইতি টানলাম। আলহামদুলিল্লাহ
পরিচিত একভাই একটা দ্বীনী বোনকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারপর থেকে ওই বোন প্রতিনিয়ত আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে দ্বীন সম্পর্কে বুঝাতে থাকে। ফেসবুক থেকে সব ছবি সরিয়ে ফেলতে বলে।
পর্দা সম্পর্কে নাসিহা দেয়। প্রথম প্রথম ওনাকে আমার খুব বিরক্ত লাগত।
আল্লাহ্র অশেষ রহমতে আমি আস্তে আস্তে ওই আপুর কথামত নিজের ভুল বুঝতে পারি।
ফেসবুক থেকে নিজের এবং সকল বেপর্দা নারীদের ছবি ডিলিট করে দেই। মিউজিক শোনা হারাম জেনে ফোন থেকে সব গান, নাটক ইত্যাদি ডিলিট করে দেই।
সব অপরিচিত ছেলেদের আনফ্রেন্ড করে দেই।
বিভিন্ন ধরনের ইসলামিক পেইজ গ্রুপ ইত্যাদিতে জইন করি। ইসলামিক লেকচার শুনি আর ইসলামিক বই পড়া শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ
ওই আপুটা প্রতিনিয়ত আমার খোঁজ নিত। নামাজ কুরআন পড়ার জন্য বলতে থাকতো। প্রথম প্রথম না শুনলেও পরবর্তীতে লজ্জায় পড়ে হলেও ঠিকমত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতাম। কুরআন পড়তাম।
আপুর কথা মত একসময় আমি সহিহভাবে পর্দা করা শুরু করি। একটা জব ছিলো আমার, পর্দার গুরুত্ব বুঝতে পেরে, জবটা আমি ছেড়ে দেই।
আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাকে ওই প্রিয় বোন টার মাধ্যমে হিদায়াত দান করেছেন।
আল্লাহ তাকে দুনিয়াতে এবং আখেরাতে ভালো রাখুক।
হিদায়াত এমন একটা জিনিস যেটা পাওয়ার থেকেও রক্ষা করা বহুগুনে কঠিন।
যেহেতু আমার পরিবার, চারদিকের পরিবেশ আমার জন্য অনুকূল নাহ। তাই আমাকে প্রতিনিয়ত শয়তানের ধোকায় পড়ে নফসের সাথে যুদ্ধ করতে হয়।
এই জীবনে আমার দুনিয়াবি তেমন কোন চাওয়াই নেই। এখন শুধু একটাই চাওয়া। আমি যেন একজন উত্তম দ্বীন্দদার জীবন সঙ্গী পাই। ভালো একটা দ্বীনি পরিবার পাই। যাদের মাধ্যমে আমি আমার দ্বীনকে যথাযথভাবে পালন করতে পারবো।
দোয়া করবেন আমার জন্য আল্লাহ যেন আমাকে মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত দ্বীনের উপর অটুট থাকার তাওফিক দান করে।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনে ফেরার ১২তম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2422110064719030&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
.......................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ১৪
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আসসালামু আলাইকুম বুঝতে পারছি না কোথায় থেকে শুরু করবো, লেখার হাত পাকা না যেহেতু বোনেরা ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন! 💞
আমার ফ্যামিলিটা কনসারভেটিব ছিলো বটে তবে দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে ওতোটা নয়। সিয়াম পালনে গুরুত্ব থাকলেও স্বলাত আদায়ে কেউ নিয়মিত ছিলেন না।
মা বাবার চোখের মনি আমরা দুই বোন। আমাদের নিয়ে তাদের অনেক স্বপ্ন। তবে তার সবই যে দুনিয়াবি! লেখাপড়া তে সবসময় প্রেসার দিতেন মা বাবা যতোটা প্রয়োজন, কিন্তু দ্বীন পালনের ক্ষেত্রে তার একটুও না। পড়াশোনা বাদে অবসর সময়ে গান, নাটক সিনেমা আরো কত কি। কিছুই বাদ যেতো না আমার লিস্ট থেকে। এসবেই ডুবে থাকাই গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়ে দাড়িয়েছিল একটা সময়! পর্দা ওভাবে না করলেও অশালীন ভাবে চলিনি কিন্তু তাতো নাজাতের জন্য যথেষ্ট ছিলো না! এভাবেই দুনিয়ার রঙিন জীবন কেটে যাচ্ছিলো। যখন যা চাচ্ছি তাই পাচ্ছি। মা বাবার আদরের মেয়ে!
এভাবেই এইচ এস সি পাড় করি আলহামদুলিল্লাহ! কিন্তু তার আগে থেকেও প্রচুর বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। তবে আমার মা বাবা কিছুতেই রাজি হচ্ছিলেন নাহ! তারা চাচ্ছিলেন আমি পড়াশোনা করে ভালো একটা পর্যায়ে যাবো। কিন্তু পরীক্ষার পর এতো বেশি প্রপোজাল আসা স্টার্ট করে তখন আত্মীয়দের বুদ্ধিতে বাবা রাজী হয়ে যান!
ছেলে প্রবাসী, মোটামুটি সম্পদশালী আলহামদুলিল্লাহ, আর ছেলে দেশে থাকা অবস্থায় আমাকে দেখে পছন্দ করে। এবং খুব করে সে এবং তার ফ্যামিলি মা বাবাকে বুঝায় বিয়ের পরও আমাকে পড়াশোনা করাবে। তাই শুভকাজে বেশি দেরী করেন নি উনারা। পরীক্ষার পর দুইমাসের মাথায় বিয়ে হয়ে যায়।
বিয়ের পর সম্পূর্ণ নতুন জীবন কিন্তু সে জীবনের তিক্ততা ছাড়া আর কিছুই পাচ্ছিলাম না 🙂।
তারা যেভাবে বলে কয়ে নেয় তার বিপরীত ব্যবহার করে আমার সাথে!
সব ব্যবহার এখানে প্রকাশ করবোনা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাকে গীবতকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত না করুন।
আমাকে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আন্ডারে একটা ভার্সিটিতে ভর্তি করে দেয়া হয় ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টে।অথচ এর থেকে অনেক ভালো একটা লাইনে পড়তে পারতাম হয়তো।
তারা আমার লেখাপড়া ইন্ডিরেক্টলি বন্ধ করে দেন। কোন প্রকার প্রাইভেটও পড়তে দেয়না বা বইও কিনে দেয়া হয় না। আরও বিভিন্ন কষ্টে কাটতে থাকে আমার জীবন।সবার কাছ থেকেই কমবেশি কষ্ট পেতে থাকি, যেটা আমি এখানে বুঝাতে পারবোনা বলে । সেই হতাশা ভুলতে আরও গাফেল হয়ে যাই! রাতের প্রায় অর্ধেক অংশ কাটাই নাটক, মুভি, গান এসব নিয়ে। আর দিনে কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলেও ছাড় নেই।
সব হতাশা মিলিয়ে একটা সময় নিজেকে অসুস্থ মনে হয়, দম বন্ধ হয়ে আসে। মা বাবার সাথেও শেয়ার করিনা 💔।কারো সাথে শেয়ার না করতে পেরে। বুক ভারী হয়ে আসতো। শুধু কাঁদতাম আর শান্তি খুঁজে বেড়াতাম ফোনের স্ক্রিনে ক্রল করে!!!আহারে জীবন 🙂
একদিন ইংলিশ সং শুনতে শুনতে হঠাৎ একটা ইসলামিক ভিডিও সামনে আসে। সেটাতে একটু ঢু মারি। কিছু মনে করে না যাস্ট এমনি। শুনতে থাকি নবীজি(সঃ) -এর মেরাজের কাহিনী।
খুব ভালো লাগছিলো শুনতে কারণ ওভাবে জানতামও না! শোনার পর খুব ভালো লাগে এরপর ঐ চ্যানেল টাতে ঢুকি। দেখি জীবন-মৃত্যু -জীবন টাইটেলের একটা সিরিজ। এবার ১ম পর্ব টা শুনতেই বুকটা কেমন কেপে ওঠে। রুদ্ধশ্বাস হয়ে যাচ্ছিলাম! দরজা টা বন্ধ করে ফ্লোরে শুয়ে হেডফোন কানে দিয়ে ১০ টা পর্বই শেষ করি।
তখন আমি আর আমার মাঝে নেই।
কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে যাই, অঝোরে কাঁদতে থাকি। রব্বের দিকে উদ্দেশ্য করে কথা বলতে থাকি।
'হে আল্লাহ আমি যে অনেক গুনাহে জর্জরিত। কি করবো! তুমি কি ক্ষমা করবা আমাকে! এই নগন্য বান্দিকে!!!!'
আস্তে আস্তে একটু স্বাভাবিক হই। মনেপ্রানে চেষ্টা করি সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়ার। এক দিনের ব্যবধানে আমুল পরিবর্তন আসে আমার জীবনে! যে কিনা সারাক্ষণ রবের অবাধ্যতায় কাটাতাম, সেই আমি সম্পূর্ণভাবে নিজেকে বদলে ফেলতে চেষ্টা করি,,, নামাজ, পর্দা,আমল শুরু করে যে কোন ছোট বড় গুনাহের কাজ বর্জন করার চেষ্টা করি।। হঠাৎ এই পরিবর্তন তারাও মেনে নিতে পারেনা, অনেক বাধা বিপত্তি আসে পর্দার ক্ষেত্রে! সবাই এও বলে জ্বীন টিন ধরেনাই তো আবার!! 💔
তবুও রব্বে কারীমের সন্তুষ্টির জন্য সব সহ্য করে যেতে থাকি আর তাদের হিদায়তের দু'আ করতে থাকি।
আর মহান রব যা আমায় দেন এর বিনিময়ে
*'আমার পরিবারের সবাই এখন নামাজী আলহামদুলিল্লাহ 💞
*আমার দুইবছর গ্যাপ যাওয়া লেখাপড়া আবার শুরু এবার থার্ডিয়ার আলহামদুলিল্লাহ 💞
*আমার পর্দা এখন অনেকটাই সহজ আলহামদুলিল্লাহ 💞
*আমি এখন শ্বশুড় শ্বাশুড়ির বৌমার থেকে মেয়েই বেশী আলহামদুলিল্লাহ 💞
এবং সবশেষে এবার যেটা পেলাম দাওরায়ে হাদিস (আলেমা)অনলাইন কোর্সে ভর্তি হতে পেরেছি। ক্বওমীর আন্ডারে পরীক্ষা দিতে পারবো। আলহামদুলিল্লাহ 💞।
এখন মনে হয় সারাদিন রবের সিজদায় পড়ে থাকলেও কম হবে।
আমার রব আমাকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। ধৈর্য্য ধরে রবের উপর ভরসা করে আজ আমি অনেক কিছু পেয়েছি। এখন চাই শুধু বাকি জীবন টা রবের ইবাদতে যেনো কাটাতে পারি 💞
দু'আয় শামিল রাখবেন এই বোনকে 💗
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনে ফেরার ১৩ তম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2422878704642166&id=100007601799490)
(দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
...........................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ১৫
প্রিয় নওমুসলিম বোনটার তাঁর রবকে খুজে পাওয়ার অসাধারণ ঘটনা।পড়তে গিয়ে আমি কেঁদেছি।❤️
হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও সে কতইনা চেষ্টা করেছে তাঁর পালনকর্তা তাঁর সৃষ্টিকর্তা কে খুঁজে পেতে,আর আমরা জন্মসূত্রে মুসলিম হওয়ার মত পরম সৌভাগ্য অর্জন করেও রব্বে করীমের মনোনিত বিধান থেকে কত দূরে অবস্থান করি!(আল্লাহুম্মাগফিরলী)
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আমাদের সবাইকে হেদায়েতের পথে অটল রাখুন।
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আসসালামুআলাইকুম,
আমি আল্লাহর এক পাপী তাপি অধম বান্দা। এক হিন্দু পরিবারে আমার জন্ম।মা বাবা আর দুই ভাইয়ের একমাত্র ছোট বোন।
আলহামদুলিল্লাহ বেশ কয়েক বছর হলো আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেছি।হিন্দু পরিবারে জন্ম হলেও হিন্দু ধর্মের প্রতি আমার কখনো বিশেষ দুর্বলতা ছিল না।তাই সেই ছোট বেলায় বান্ধবীদের টিফিন থেকে গরুর গোস্ত খেতে আমি একটুও দ্বিধা বোধ করতাম না। যখন আমার বয়স তের কি চৌদ্দ বছর বয়স তখন এক প্রতিবেশী মামী আমাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিল।ধর্ম আসলে কি সে বয়সে এ ব্যাপারে গভীর উপলব্ধি না থাকলেও আমি তার কথা দ্বারা সাময়িক প্রভাবিত হই। তাই খাবার আগে নিয়মিত বিসমিল্লাহ, আজানের সময় মাথায় কাপড় দেওয়ার মতো কিছু আমলে আমি অভস্ত্য হয়ে পরি।
কিন্তু কিছুদিন পর আমার মা তা আঁচ করতে পেরে আমার মাথা তাদের মত করে ঝালাই করে আর সেই সময় মামিও তাদের বাসা চেঞ্জ করে চলে যায়। পারিবারিক শাসন আর সময়ে সাথে তাই আমি আবার হিন্দু রীতিনুযায়ী চলতে থাকি।
এরপর প্রায় আট বছর পর... আমি তখন বিবিএস এর পাশাপাশি ডি.এস.এম.এস তৃতীয় বছরের ছাত্রী।পার্সোনালি ইন্টার্নি করার জন্যে বাসার পাশে এক চেম্বারে এক ডাঃ আপুর সাথে বসি। তিনি একটু অন্য রকম কথাবার্তা আমাকে বলতেন।
মারফতি লাইনের,আধ্যাত্মিক জগতের।তার কথা মতে মানুষ আল্লাহর জিকির করতে করতে এমন এক পর্যায়ে চলে যেতে পারে যে তখন সে জিকির না করলেও তার রুহ,কল্ব সব সময় জিকির করে আর তা সে চাইলেই অনুভব করতে পারে। এমন কি মাটি,গাছের জিকির ও সে বুঝতে পারবে।আমি তার কথায় খুব ইন্টারেস্ট ফিল করি।তাই আমি তার কথানুযায়ী টানা ৪০ দিন ২০০০ বার করে আল্লাহর জিকির করি। মোরাকাবায় বসে সকাল সন্ধ্যা আল্লাহর ধ্যানে বসি। আলহামদুলিল্লাহ ৪০ দিন না যেতেই আমি আমার কল্বের জিকির অনুভব করতে পারি।
এর মর্ধ্যবর্তী সময়ে আমার এক আপুর সাথে পরিচয় হয়( বান্ধবীর বড় বোন)। তার নাম নুরনাহার। আপুটিও মা শা আল্লাহ খুব দ্বীনদার ছিলেন। তিনি আমাকে ইনডিরেক্টলি ইসলামের দাওয়াত দিত। খুব চালাকির সাথে হিন্দু ধর্মের ব্যাপারে কটু কথা না বলে ইসলামিক বই আমাকে পরতে দিতেন।বই গুলি পড়তে পড়তে আমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগ্রত হতে লাগলো। সেই সময়ে আমি জাকির নায়েকের অনেক লেকচার শুনতাম। তখন আমার মনে হিন্দু ধর্ম নিয়ে অনেক সন্দিহান মূলক প্রশ্ন জাগতো। তাই হিন্দু ধর্মের অনেক বই ঘাটাঘাটি করে পরতে থাকি। গীতা,বেদের কয়েক খন্ড সহ আরও কিছু বই। যা পরতে পরতে সে ধর্মের প্রতি আমার ঘৃণা আরও পাকাপোক্ত হতে লাগলো। আমি সেই সময় আমার মনের জাগ্রত প্রশ্ন ও তার খুজে পাওয়া উওর আমার নিজস্ব একটি খাতায় লেখা শুরু করলাম।
এভাবে করে একসময় আমি স্থির করলাম,আমি আল্লাহর গোলাম। আমাকে তার নির্দেশিত দ্বীনের পথেই চলতে হবে।এ পথে চলা আমার জন্য যে খুব সোজা হবে না তা আমি বুঝেছিলাম,তবু আমাকে চলতে হবে।গোপনে নিভৃতে আমি আমার আমল চালিয়ে গেলাম। আমি আমার ঘর থেকে সব ছবি সরিয়ে ফেলাম।আল্লাহর এবাদত করবো বলে,নামাজ সহি ভাবে আদায় করবো বলে।আমার এ ধর্মান্তরিত হবার কথা শুনে এক তাবলিগের আপু আমাকে ফ্রী তে আরবি শিক্ষার সুযোগ করে দিলেন। আমার বাসা থেকে তার বাসার দুরত্ব ২-৩ মিনিট।প্রতিদিন আমি প্রচন্ড ভয় নিয়ে বাসা থেকে বের হতাম আরবি শিক্ষার জন্য। কারন তখন অলরেডি বাসায় কিছুটা আচ করতে পেরে গিয়েছিল।
আমার মা, মামা, ভাই, বাবা তাদের সবার চোখ কে ফাকি দিয়ে আমি যেন এই দুই তিন মিনিটের দুর্গম পথ পারি দিতাম। বার বার পিছ ফিরে দেখতাম কেউ দেখছে কিনা।আমাকে আমার আরবি মেম সাহস যোগাতেন। বলতেন কুরআন শিক্ষার জন্য যত কদম পা ফেলে আসছো ততোই তোমার নেকি লেখা হচ্ছে। চিন্তা করো না আখিরাতে এর ফল পাবে।
সে সময় একটি হিন্দু পরিবারে অবস্থান করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় আমার জন্য খুব সহজ ছিল না😥। মা আমার সাথে ঘুমাতো তাই খুব সাবধানে ফজরের নামাজ আমাকে পড়তে হতো। কখনো বসে, কখনো ইশারায়। যোহরে আমি আমার স্টুডেন্টের বাসায় নামাজ পড়ে নিতাম। আর আসরে আরবি পড়ে চেম্বারে গিয়ে (ততো দিনে আমার নিজস্ব চেম্বার হয়ে গিয়েছিল) নামাজ পড়ে নিতাম। মাগরিবের টাও চেম্বারে পড়ে নিতাম। এশার টা পড়তে আমার খুব ঝামেলা হতো। তাই বিছানায় মার পাশে শুয়ে ইশারায় পরে নিতাম। জানি না আল্লাহ কবুল করেছেন কিনা, তবু নিয়ত তো আল্লাহ অবশ্যই দেখেছেন।
এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রচন্ড চাপের মাঝে আমার দিন কাটছিল।অপর দিকে মা.... মায়ের মন সব বুঝে!।আমি চুল ছেড়ে খুব স্টাইল করে চলতে পছন্দ করতাম। কপালে বড় টিপ,চোখে কাজল না দিলে চলতোই না।শিল্পএকাডেমির ছাত্রী দের মতো কিছুটা চলতে চাইতাম। কিন্তু হঠাৎ আমি ভ্রু প্লাক করা,টিপ দেয়া ছেড়ে দিয়ে চুল বেঁধে মাথায় কাপড় দিয়ে চলা শুরু করায় মায়ের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছিল।এরপর আমার উপর অনেক জাদু টোনা করা শুরু হলো। কিন্তু এসবে আমার তেমন রিয়াকশন ছিল না। কারন আল্লাহতালার ও তার কালামের উপর আমার অগাদ বিশ্বাস ছিল। আমি সকাল সন্ধ্যা তিন কুল,আয়তুল কুরসি পরে নিজের রুকইয়া নিজেই করতাম।আলহামদুলিল্লাহ।
তখন আমার মাঝে অনেক পরিবর্তনের মাঝে আর একটি পরিবর্তন ছিল নিজের দীর্ঘদিনের প্রেমিকের সাথে ফোনে কথা বলতে দ্বিধা পোষন করা। হ্যা,সে সময় আমার এক বয়ফ্রেন্ড ছিল(আলহুম্মাগফিরলি)। আমি তাকে জানিয়ে দেই কথা বলতে হলে সম্পর্কে বৈধ করতে হবে।সে সব শুনে তার চাকরি ছেড়ে চলে আসে। কারন আমাকে বিয়ে করতে হলে আমাকে অফিসিয়ালি মুসলিম হতে হবে,তারপর বিয়ে। এই লং প্রসেসিং এ সে আমার পাশে থেকে বিবাহ সম্পন্ন করে। আলহামদুলিল্লাহ।
কিন্তু বিয়ের পর ও দেড় বছর আমি আমার পরিবারের সাথে ছিলাম। আমি ভাবতেই পারছিলাম না কিভাবে আমি আমার মুসলিম হওয়ার কথা আমার পরিবার কে জানাবো। আল্লাহর দরবারে কত না রাত আমি কেঁদেছি, কতই না তাকে বলেছি আমার এই কংকরময় পথ টাকে সহজ করার জন্যে 😥।
যখন জানতে পারলাম আমার ভাই লন্ডন থেকে আসছে,আমার বিয়ে ফাইনাল করতে। তখন যেন গা টা দেয়ালে ঠেকে গেল। অনেক প্লেন মাফিক, অনেক অনেক সহজ জুগিয়ে, আল্লাহতালার উপর ভরসা করে একদিন আমি আমার বাবা আর মামা কে আমার চেম্বারে ডেকে আমার স্বামী সহ আমার মুসলিম হওয়া এবিড ডেবিট আর আমাদের বিয়ের সকল কাগজ পত্র দেখিয়ে সব খুলে বললাম।সেখান থেকে আমি সরাসরি আমার শশুড়বাড়ি চলে আসলাম। চিরদিনের জন্য আমার মা বাবা কে ছেড়ে, আমার ভাইদের ছেড়ে😥😢😭।
এভাবে আমার দ্বীনের পথে আসা।তবে জানি না কতটুকু আমি আজ দ্বীনের পথে আছি না দুনিয়াবি মোহে ডুবে যাচ্ছি। সকলে আমার জন্য দুয়া করবেন যেন আমার মৃত্যু ইমানের সহিত হয়।আমার পরিবারের সকলকে যেন হেদায়েত দান করেন দয়াময় রব।আমি তাদের সবাইকে নিয়ে জান্নাতে যেতে চাই।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
দ্বীনে ফেরার ১৪তম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2428233307440039&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
.........................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_আসার_গল্প
গল্প নাম্বার: ১৬
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ...
কোনকিছু এতো ভালোবেসে লেখা যায় তা আমার আগে জানা ছিলো না...আজ হেদায়াতের কথা লিখতে গিয়ে অজানা এক ভালোলাগা কাজ করছে..হয়তো এখনও ঠিক সেভাবে ফেরা হয়নি আমার রবের কাছে,যেভাবে ফেরার কথা ছিলো,,কিন্তু তবুও আলহামদুলিল্লাহ হেদায়াতের স্বাদ আমি পেয়েছি,,আমি প্রতিনিয়ত অনুভব করছি.."হেদায়াত" শব্দটির কথা মনে হলে বা নিজের ভেতর এই পরিবর্তন দেখে মনের গভীর থেকে ”আলহামদুলিল্লাহ'” শব্দটি ভেসে আসে..❤
.
জন্মের পর থেকেই অভাবের তাড়না আর বাবা মায়ের ঝগড়াঝাটি নিত্যদিনের সঙ্গী ছিলো...অবস্থানে সবার ছোট ছিলাম বলে বড়দের কষ্টটা কিছুটা বুঝতাম,,আপুদের ত্যাগ,,আমার এতো মেধাবী ভাইয়াদের ঝরে পড়া,,ঘরে টাকার অভাব,,ভাইয়ের বিদেশ যাওয়ার জন্য সব জায়গা জমি বিক্রি,,কিন্তু যাওয়া হয় নি,,উপরন্তু বোনের বিয়ের জন্য মায়ের সব গয়না,,বোনদের গয়না বিক্রি,, আত্নীয়দের তাড়িয়ে দেওয়া,,তিরস্কার করা,,এর ওপর কাউকে না জানিয়ে ভাইয়ের বিয়ে করার ফলে নানা কথা শুনা ইত্যাদি ইত্যাদি ঘটনাগুলো চোখের সামনে সচরাচর ঘটতেই থাকতো..যদিও বয়স কম হওয়ায় আমাকে এইগুলো নিয়ে ভাবতে হতো না...তবে এগুলো আমাকে খুব স্পর্শ করতো...ভাবতাম আমি তো ক্লাস ৫ এ...যখন আমি ৮ এ উঠবো তখন হয়ত ভাইয়া বিদেশ গিয়ে অনেক টাকা পাঠাবে,,আমরা ইনেক সুখী হবো,,আম্মু আব্বুও টাকা পয়সা নিয়ে ঝগড়া করবে না আর...আত্নীয়রাও আমাদেরকে আর তীরস্কার করবে না,,আর কখনো কারো হাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না...কিন্তু নাহ! তা আর হলো না..ক্লাস ৫ পেরিয়ে ৮ পেরিয়ে আমি কলেজে পা দিলাম..দুখ কষ্ট আর পিছু ছাড়ে না...বোনদের বিয়ে দিয়ে নিঃস্ব অবস্থা...অনেক কষ্ট করে কলেজে ভর্তি হলাম..তারপর শুরু হলো প্রতিদিনের ভাড়া নিয়ে ঝামেলা..পড়া একদম শেষ শেষ এর পর্যায়ে...তখন বাবা মা ডিছিশন নিলেন আমাকে নানুবাড়ি পাঠিয়ে দিবেন..বাড়ি থেকে কলেজে যেতে আসতে লাগতো ২০ টাকা,,সেই ২০ টাকা সপ্তাহে ৩ দিন বের হতো না,,,আর নানুবাড়ি থেকে যাতায়াত খরচ লাগতো ১০ টাকা,,তাই নানুবাড়ি পাঠিয়ে দিলেন আমাকে...😓
.
২০১৩ সালের শুরু থেকেই আমার নানুবাড়ির জীবন শুরু,,সেইসাথে শুরু সংগ্রামী জীবন...
একটি মেয়ের জীবনের রঙীন স্বপ্ন যে সময় শুরু হয়,,সেই সময়টাই আমার জীবনের সবথেকে কলুষিত সময় ছিলো...নানু মামি আর খালার অবহেলা,,তিরস্কার,,খারাপ ব্যবহার আর অপমানই ছিলো আমার নিত্যদিনের সংগী...কাজের মেয়ের মতো খাটুনী,, পড়তে না দেয়া,,কথায় কথায় অপমান এগুলো নিয়েই আমার বাঁচা ছিলো..বাবার পয়সা নেই বলেই আমাকে পরের বাড়ি এভাবে বড় হতে হলো...স্বপ্নগুলো এভাবেই শুরু হওয়ার আগেই ঝরে পড়লো...আমার বয়সি আমার মামার মেয়ে ছিলেন,,একইসাথে পড়তাম...কিন্তু অর দুনিয়া আর আমার দুনিয়ার মাঝখানে ছিলো এক আকাশ ব্যবধান...ও ঘুম থেকে উঠতো দেরি করে,,উঠতেই মা অর জন্য খাবার নিয়ে হাজির হতো,,মুখে তুলে খাইয়ে দিতো,,কলেজ এর জন্য রেডি করে নিজ হাতে চুল বেঁধে দিতো,,তারপর কলেজ এর গাড়ি এসে অকে নিয়ে যেতো,,আর আমি? আমি সেই সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘর বাইর সব ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে,,নানুর কাপড় ধুয়ে,,মামিকে রান্নাঘরে সাহায্য করে,,খালার মেয়েগুলোকে মুখে তুলে খাইয়ে দিয়ে,,কাপড় পরিয়ে স্কুলের জন্য রাস্তায় নিয়ে গাড়িতে তুলে দিয়ে এসে সবাইকে সকালের খাবার খাইয়ে,নিজে খেয়ে রেডি হয়ে অনেক জায়গা হেটে মেইন রোডে গিয়ে গাড়ির জন্য অনেকক্ষণ দাড়িয়ে ,, কখনো বা পুরুষের সাথে বসে কলেজে যেতে হতো...ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস..কলেজে যাওয়ার সময় কেউ ভাড়া ব্যতীত এক পয়সাও দিতো না,,টিফিন টাইমে খাওয়ার জন্য মনটা বড় ছটপট করতো...প্রতিদিন ঘরে ফিরে এসেই ঠিক একইভাবে কাজ করতাম...রাতে সবাইকে ঘুম পাড়িয়ে নিজে যখন ঘুমাতে যাবো তখন নানু বলতেন উনার হাত পা টিপে দিতে।এভাবে রাত ১-২ টা বাজতো,,তারপর ঘুমাতাম....এই কাজগুলো যে করতাম এতে আমার কোনো দুঃখ ছিলো না,,দুঃখ আমার একটাই ছিলো,,কাজে লেইট হলে,,কাজে ভুল হলে,,কাজে একটু হেরফের হলে আমাকে এতো কথা শুনানো হতো,,আমার বাবাকে নিয়ে কটুকথা বলা হত,,আমার ভাইয়ের চরিত্র নিয়ে উল্টাপাল্টাকথা শুনতে হত, আমার চরিত্রও এমন হবে,, ভাইয়ের মত নষ্ট হবো,,গরিবের মেয়ে হয়ে এতো ভাব কেনো এই কথাগুলাই শুনতে হত..আবার কলেজে যেতেও বাধা দেয়া হতো..ঘরে কিছু একটা নিখোঁজ হলেই আমাকে সন্দেহ করা হতো,,শুধু সন্দেহই নয়,,কোনো প্রমান ছাড়াই আমাকে অপমান করা হত,,অপবাদ দেওয়া হতো..এভাবেই কাটলো বছরের পর বছর...আমি কখনই কাউকে এসব বলতাম না,,ভাবতাম মা বাবা শুনলে কষ্ট পাবে,,আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে...বাবার খুব স্বপ্ন ছিলো ক্লাস ফাইভ আর এইটে স্কলারশিপ পাওয়া উনার এই মেয়েটা এইচএসসিতেও এসএসসির মতো রেজাল্ট ধরে রাখবে,,
কিন্তু এইচএসসিতে খুব একটা ভালো রেজাল্ট হয়নি..যদিও আমি আলহামদুলিল্লাহ যথেষ্ট ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম...তারপর শুরু হলো আমার ইউনিভার্সিটি লাইফ,,অনার্স সেকন্ড ইয়ারে ওঠার পর একজন সিনিওর ভাইয়ার সাথে পরিচয় হয়,,আলাপচারিতার এক পর্যায়ে অনেক ভালোই সম্পর্ক হয়,,উনাকে সব কথা শেয়ার করতাম,,উনি আমাকে খুবই সাপোর্ট করতেন..উনি সবসময় পর্দা করার জন্য বলতেন,,আমার সকল দুঃখ আমি উনার কাছে বলতাম..
.
তারপর আমার মামাতো বোনের বিয়ে হয়ে যায়,,আমাকেও বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়..আমার ইউনিভার্সিটি যাওয়ার খরচ উনারা আর দিতে পারবেন না,,আমিও চলে আসি বাড়িতে..আমার ইমিডিয়েট বড় ভাই বিদেশ চলে যান,,আরেক বড় ভাই একটা চাকরি পান..আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ
এতোকিছুর পরেও কোথায় যেনো অশান্তি ছিলো ঘরের মাঝে,,অভাব পিছু ছাড়লো না..পড়াশোনাটা মোটামুটি চললো...এইভাবে এক পর্যায়ে আবারো নানুবাড়ি থাকার প্রয়োজন শুরু হলো..বড় আশা নিয়ে আবারো বাড়ি ত্যাগ করলাম,,ভাবলাম এইবার হয়তো সবাই ভালোবাসবে,,সবাই বুঝবে আমি অসহায়,, কিন্তু না।।।আবারো শুরু....সালটা ছিলো ২০১৮...
এই অবস্থার মাঝেই কেউ একজনকে আমার খুব ভালো লাগতো..হারাম সম্পর্কে জড়িয়েও জড়ানো হয়নি,,কারন পরিণয় হওয়ার আগেই জানতে পারলাম অর রিলেশন আছে অন্য একজনের সাথে সেটাও আমাকে খুব খুব কষ্ট দিলো...এভাবেই কাটতে থাকতো দিন,,তবে সিনিয়ার সেই ভাই আমার পাশে থেকে সাহস আর অনুপ্রেরণা দিয়েছেন প্রতিটা মুহুর্তে..
তো সেদিন ছিলো আমার বার্থডে,,আমাকে আমার দুই একজন ফ্রেন্ড কলেজে যাওয়ার পর উইশ করলো,, এই এতটুকুই,,তারপর ক্লাস করে আমার এক বান্ধবীর সাথে ব্যাংকে গেলাম,,সেখানে গিয়ে একটু লেইট হয়ে গেলো,,অর জরুরী কাজ ছিলো বলে..বিকেল ৪ টার আগেই নানুবাড়িতে এসে ডুকতেই দেখি খুব থমথমে অবস্থা.. কেউ আমার সাথে বলতেছে না,,হঠাৎ আমার মা আমাকে কল দিয়ে যা তা বলতে লাগলেন,,নানু নাকি কলেজে গিয়ে আমাকে খোঁজে পায়নি (যদিও উনি কলেজের ভেতর ডুকেন নি,,গেটে দাঁড়িয়ে আমাকে না দেখে চলে আসেন।আমি সেটা পরে সেই পরিচিত সিএনজি ড্রাইভারের কাছ থেকে জানি,,তাছাড়া নানু যেই টাইমে কলেজে যান সেই টাইমে আমি চার তলায় ক্লাসে করতেছিলাম),, তারপর আমাকে নাকি পায় নি,, আমি না কি কোন ছেলের সাথে কোথায় চলে গেছি..ইজ্জত ডুবিয়ে দিয়েছি..আমি কুনো কথা বলি না,,,চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তেই আছে..কাউকে হ্যা না কিছু বলতে পারি না,,বোন কল দিয়ে উনিও ইচ্ছেমতো কথা শুনালেন...আমি আবারো কথা বলি না..সেদিন খুব কেদেছি,,কেউ আমাকে বুঝলো না,,ফেরেশতার মত মানুষের ওপর অপবাদ দিলো..সিনিয়ার সেই ভাই আমাকে দুনিয়ার মায়া থেকে সরে আসার জন্য অনেক ইন্সপায়ার করলেন,,উনি আগে থেকেই ফুল পর্দা করার জন্য ইন্সপায়ার করতেন,,সেদিনও বললেন,বুঝালেন..উনার কথায় আমিও খুব ইন্সপায়ার্ড হলাম,,সেদিন উনি আমার চোখ খুলে দিলেন..
সেই রাত্রে আমি তাহাজ্জুদের সময় আচমকা ভাবেই জেগে ওঠি,,দেখি রাত ৩ টা..
সেই প্রথম বুঝলাম আমার রব আমাকে ডাকছেন...আমি ও আমার রবের কাছে মন প্রাণ খুলে সব বললাম,,আহ! সেই সেজদাহ,,সেই কান্না,,সেই কষ্ট,,সেই আর্তনাদ,, সেই ভাঙন আমার রব ছাড়া আর কে দেখেছিলো সেদিন...সেদিনই বুঝলাম তিনিই আমার রব,,সেদিনই বুঝলাম এ দুনিয়া আমার আসল ঠিকানা নয়,মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম,আর কারো গোলামি নয়,একমাত্র আমার রবের গোলামি করেই জীবনের শেষ দিনের অপেক্ষা করবো,,জান্নাতে গিয়ে সুখের দেখা পাবো..ইন শা আল্লাহ
.
ধীরে ধীরে শুরু করলাম পর্দা,,মাহরাম নন মাহরাম মানা শুরু করলাম,,ধরলাম রাসূলের পথ,,পেয়ে গেলাম অমূল্য রত্ন "হিদায়াত",,শুরু করলাম নতুন জীবন...❤
যদি এক বাক্যে বলি আমার হিদায়াতের গল্প তবে বলবো আমার রবের সেই বানীই আমার গল্পের সারাংশ~
" এবং তিনি তোমাকে পেয়েছেন পথহারা অবস্থায় অতঃপর পথ প্রদর্শন করলেন " (৯৩ঃ৭)
.আলহামদুলিল্লাহ
আজও আমার সংগ্রাম চলতেছে,,আজও আমি অসহায়,,আজও আমি দুঃখে কষ্টে জর্জরিত...তবে আজ আমি আর একা নই,,আজ আমি হেদায়াতপ্রাপ্ত,,আজ আমার সাথে রয়েছেন আমার রব,,রয়েছে সবর...:)
হয়তো এই সংগ্রাম আমার মৃত্যুর ঠিক আগ মুহুর্ত পর্যন্ত চলতে থাকবে,,হয়তো এ দুনিয়ায় কখনই সুখের দেখা পাবো না,,হয়তো সব স্বপ্ন এভাবেই ভেংগে চুরমার হতে থাকবে,,কিন্তু তবুও আমার মাঝে এক ফোটা আফসোস কাজ করবে না..কেননা আমি তো এই দুনিয়ায় সুখ চাই না;আমি আঘাত চাই,,যে আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হবে আমার হৃদয়,,যে আঘাত আমাকে আমার রবের আরো কাছে নিয়ে যাবে,,যে আঘাত আমাকে পুড়িয়ে খাঁটি সোনায় পরিণত করবে..আমি নির্দিধায় আঘাতগুলোকে স্বাগতম জানাবো...:)
তাই তো মোনাজাতে আমার রবকে বলি,,"হে আমার রব,যত সংগ্রাম দাও,,যত কষ্ট দাও,,যত ভাঙন দাও,,সব মাথা পেতে নেবো,,তুমি শুধু বিনিময়ে আমাকে জান্নাতে তোমার ঘরের কাছে একটু ঠাঁই দিও,,একটু জায়গা দিও..”
আমার সেই মোনাজাতে আমি তাদের হিদায়াতের জন্য দোয়া রাখি যারা আমাকে শিখিয়েছে জীবনের মানে কি...
আজও আমি আমার মোনাজাতে রাখি সেই মানুষটিকে,হৃদয়ের গহীন থেকে দোয়া করি সেই মানুষটির জন্য,যে আমাকে দেখিয়েছে নতুন জীবনের সন্ধান...❤
.
আলহামদুলিল্লাহি আলা কুল্লি হাল...😊
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনে ফেরার ১৫তম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2430366643893372&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
....................................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ১৭
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আসসালামুআলাইকুম
আমি এখন এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
হেদায়াত প্রাপ্ত হয়েছি ইন্টারে ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার কিছুদিন আগে।
আমার বাসায় ইসলামি মাইন্ডের বলতে ভাইয়াই একটু ইসলামি হুকুম আহকাম সম্পর্কে সচেতন ছিলেন।
আব্বু আম্মুও ইসলাম মানতো তবে তা নামাজ, রোজা, সত্য কথা বলা, সুদ ঘুষ না খাওয়া এগুলো মানতো। একেবারেও বেইসলামিক ছিলেন।
তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত আম্মুকে পাশে পেয়েছি। কারণ আমি যখন তৃতীয় শ্রেণীতে উঠি তখন আম্মু জবে জয়েন করে। টানা সাত বছর জব করেন আম্মু। যখন আম্মুকে কাছে দরকার তখন আম্মু দূরে ছিল।
এই সাত বছরে আম্মুর অভাব ভাইয়া পূরণ করতো। আম্মুর অভাব কি ভাইয়াকে দিয়ে পূরণ হয়???
আম্মু না থাকায় আর আমি একটা ছোট মেয়ে বলে সবাই খুব আদর করত(এখনো করে)। তখন অতিরিক্ত আদর আর কম শাষনে অনেকটা জেদি টাইপের ছিলাম। কেউ জোরে একটা কথাও বলতো না।
এভাবে চলছিল। যখন পিএসসি পরীক্ষার আগে ভাইয়া একটি ইসলামি সংগঠনে যুক্ত হয়। সেই সুবাদে বাড়িতে অনেক ইসলামি বই এবং হাদীস বই থাকতো। সেগুলো পড়তাম তবে অমনোযোগী হয়ে। তারপর আস্তে আস্তে একটু একটু ইসলামের পথে আসতেছিলাম ভাইয়ার উছিলায়।
৭ম শ্রেণী থেকে বোর্কা পরা শুরু করি।
তারপর হাদীস এবং বড় আপুদের নসিহতে একটু একটু করে ইমপ্রুভ হয়। জেএসসি পরীক্ষার সময় থেকে মুখে নিকাব পরা শুরু করি। আর তখন শুধু ফজরের নামাজ মাঝে মাঝে ৩/৪ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম। ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে রমজানে সব রোজা রাখা শুরু করি।
নবম শ্রেণীতে ফেসবুক আইডি ওপেন করি তখন থেকেই অধঃপতন শুরু হয়।
তখন থেকে ডিজিটাল হেজাব পরতাম।
এসএসসি পরীক্ষার সময় মাথায় উটের কুজের মতো হেজাব করতাম মুখে নিকাব দিতাম না তবে বোর্কা পরতাম।
কলেজে ভর্তির পর শুরু হয় মূল উৎশৃঙ্খলতা। কলেজে থ্রিপিস পরে যেতাম।
বোর্কা পরা একেবারে বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম।
দুইটা হেজাব দিয়ে উটের কুঁজের সাইজে হেজাব করতাম।
ইন্টার প্রথম বর্ষ এভাবেই চলছিল।
তখন আম্মু জব করতো না আর। নামাজের জন্য আম্মু চাপ দিত তবে কখনো আমাকে পর্দা করার তাগীদ দেয় নাই।
ইন্টার প্রথম বর্ষে শুধু ফজরের নামাজটাই পড়তাম অন্যগুলো খুব একটা পড়া হতো না।
আমাদের এলাকায় মাদ্রাসার কিছু বড় আপুরা প্রতি শুক্রবারে ছাত্রীদের নিয়ে ইসলামি বিষয় নিয়ে আলোচনা করত।
ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষার আগে আমার এক ফুপি (আমার ছোট) আমাকে ঐ তাফসীর ক্লাসে ডাকতো কিন্তু আমি এই উছিলায় ঐ উছিলায় যেতাম না। এক শুক্রবারে ভাইয়া মেসে থেকে বাসায় এসেছিল সেদিনও ফুপি ডাকতে এসেছিল।
সেইদিনও যেতে না চাইলে ভাইয়া অনেক বকা দিয়েছিলো। ফলে সেইদিন গেলেও পরবর্তী একসপ্তাহে যায় নাই।
তারপরের সপ্তাহে ডাকতে আসলে আম্মু পরীক্ষার কথা বলাই যায় নাই।
তারপরের সপ্তাহে ডাকতে এলে যাওয়া শুরু করলাম(মন থেকে নয়)
এভাবে যেতে ঐ আপুদের প্রোগ্রামগুলো ভালো লাগতে শুরু করল তারপর শত ঝড় বৃষ্টিতেও যেতাম।
তারপর ফেব্রুআরি ২০১৯ থেকে ব্যক্তিগত প্রতিবেদন লেখা শুরু করি।
তারপর থেকে এইতো আস্তে আস্তে দ্বীনের পথে হাঁটা শুরু করি।
মার্চ ২০১৯ থেকে ফেসবুকে মেল ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।
তারপর আমি নিয়মিত কোরআন হাদীস ইসলামি বই পড়া শুরু করি।
নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। শ'রয়ী পর্দা করি।
আম্মুকে নসিহত করে আম্মুও নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। আব্বুও নামাজ পড়ে নিয়মিত।
এখন দ্বীনের পথে চলতে আমাকে সবাই সাহায্য করে আলহামদুলিল্লাহ।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
দ্বীনে ফেরার ১৬তম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2431097367153633&id=100007601799490
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
..........................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ১৮
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
ছোট বেলায় খুবই শান্তশিষ্ট ছিলাম। স্কুলের ম্যডাম স্যারেরা আমাকে খুব আদর করতেন। ক্লাস ৫ পর্যন্ত খুবই ভাল ছাত্রী ছিলাম। সিলেটের সবচেয়ে নামকরা বালিকা হাই স্কুলে যখন ভর্তি হলাম তখন থেকেই পড়ালেখায় ফাটল ধরতে শুরু করলো। স্কুলের ব্রিলিয়ান্ট ব্রিলিয়ান্ট ছাত্রীদের সামনে নিজেকে লিলিপুট মনে হতো। সেই হতাশই আমাকে পড়ালেখায় পিছিয়ে দিয়েছিলো। আমার পরিবার মোটামোটি ধার্মিক। আমাকে সব সময় ৫ ওয়াক্ত নামাযের তাগিদ দিতেন। একদিন সালাত পড়ি তো তিনদিন পড়িনা। এরকমই চলছিল। কলেজে পদার্পণ করলাম। কথায় আছে না,পিপীলিকার পাখা গজার মরিবার তরে। আমার বেলায়ও তাই হলো। আমার মধ্যে অবশিষ্ট যা ধার্মিকতা ছিল সব উবে গেল। মর্ডার্ণ বান্ধবিদের সাথে মিশতে মিশতে কখন যে আমিও মর্ডার্ণ হয়ে গেলাম টেরই পাইনি। আড্ডা,মাস্তি,কলেজ ফাকি দিয়ে বন্ধুদের সাথে পার্টি যেন নিয়মিত রুটিন হয়ে গেল। যদিও আমি গার্লস স্কুল,গার্লস কলেজেই পড়েছি তারপরও ছেলে বন্ধুর অভাব ছিল না। শুধু রামাদ্বানেই নিজের ধার্মিকতা বহাল রাখতাম। কলেজ লেভেল শেষ করতে না করতেই প্রথম ভালবাসার অধ্যায়ে হেরে গিয়ে মারাত্মকভাবে ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর থেকেই ডুবে গেলাম দুনিয়াবি নেশায়। বুদ হয়ে থাকতাম দুনিয়ার চাকচিক্যময় জগতে। ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে লাগলাম অন্ধকার জগতে। সেই অন্ধকার জগতটা আমার প্রতিদিনকার নেশায় পরিণত হয়ে গেল। সারাদিন মোবাইল,বন্ধুদের সাথে ফোনে কথা বলা, ফেসবুকিং এসব না করলে যেন আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে যেত। নিজেকে এসব কাজেই ব্যস্ত রাখতাম। ইন্টার দেয়ার পর বোরকা বানিয়েছিলাম ঠিকই কিন্তু সেই বোরকাকে নিজ কাজের স্বার্থে ব্যবহার করতাম। তারপর একদিন শখের বশে শিক্ষকতার চাকরি শুরু করি বাসার পাশেরই একটা হাই স্কুলে।
এরই মধ্যে আমার আপন খালা আমাদের পাশের ঘরেই ভাড়া দিয়ে আমাদের বাসায় উঠেন। খালার চার মেয়ে যারা অনেক আগেই ইসলামের পথে হাঁটা শুরু করেছে। তাদের সাথে গল্প করতাম কিন্তু ভালো লাগত না। তারা শুধুই ইসলাম সম্পর্কে কথা বলত যা আমার চরম বিরক্ত লাগত। তাদের এড়িয়ে চলতাম। প্রয়োজনে খালার বাসায় যেতাম আবার সাথে সাথেই চলে আসতাম।
একদিন গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেলাম কথার এক প্রসঙ্গে আমার চাচীরা আমার সামনে আমার খালাতো বোনদের প্রশংসায় মেতে উঠলেন। এক চাচী অন্য চাচীকে বলতে লাগলেন "জানো ওর খালাতো বোনরা অনেক ধার্মিক। তারা নাকি টিভিও দেখেনা।'' উনারা আগে থেকেই আমার খালাতো বোনদের কথা জানতেন। তাদের প্রশংসা শুনে আমার ভেতরটা কেন জানি মুচড় দিয়ে উঠল!! মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলাম আমার প্রশংসা তো কেউ এভাবে করবে না?? মাঝে মাঝে চিন্তা করতাম আমার খালাতো বোনরা কত ইসলামিক। তারা মরলেই ডাইরেক্ট জান্নাতে চলে যাবে। অথচ আমি পারবো না। আমি ভাবতাম অন্ধকার জগত থেকে ফেরার কোন পথ আমার জন্য আর খোলা নেই। এই জগতে একবার পা বাড়ালে আর বের হওয়া যায় না। আর তাছাড়া আমার বিগড়ে যাওয়া দেখে আমার পরিবার আমাকে ঘৃণার চোখে দেখতে লাগলেন। আম্মু,আব্বু কথায় কথায় খালাতো বোনদের প্রশংসা করতেন আর আমাকে ধিক্কার জানাতেন। অবশ্য আমার জন্য আব্বু,আম্মুও হেদায়াতের দুয়া করতেন। কিন্তু আল্লাহ তো বলেই দিয়েছেন-
"তুমি যাকে ভালবাস তাকে সৎপথ দেখাতে পারবে না, বরং আল্লাহ্ই যাকে চান সৎ পথে পরিচালিত করেন, সৎপথপ্রাপ্তদের তিনি ভাল করেই জানেন।"(সূরা আল ক্বাসাস ৫৬)
আর এদিকে আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম আমার আর কখনো বিয়ে হবে না। আমার মতো মেয়েকে সব জেনে শুনে কে বিয়ে করবে? কারণ আমি চাইতাম যে আমাকে বিয়ে করবে সে যেন আমার সব কিছু জেনেই বিয়ে করে। কেননা বিয়ের পর আমার সম্পর্কে জানলে তো আমার সংসারই টিকবে না। এসব নিয়ে সবসময় চিন্তায় মগ্ন থাকতাম। আর চরম হতাশা আমাকে গ্রাস করে ফেলতো। কয়েকবার আত্মহত্যারও চেষ্টা করি।
তার ঠিক কয়েকমাস আগেই আমার জীবনে এক আগন্তুকের প্রবেশ হয়। সে আমার সব কিছু জেনেও আমাকে প্রচুর ভালবাসত। আমি চাচ্ছিলাম না আমার মতো মেয়ের জন্য তার জীবনটা নষ্ট হোক। তাই তাকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই দূরে ঠেলে দেই। আমি তাকে বলেছিলাম "যদি তুমি আমার ভাগ্যে থাকো তাহলে আল্লাহ ঠিকই আমাদের এক করে দিবেন। আর তুমি তো বেকার,বেকার ছেলের সাথে কোন বাবা মাই তার মেয়েকে বিয়ে দিবে না। আগে একটা চাকরি হোক তারপর দেখা যাবে।" এটা বলে তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই। যদিও খুব কষ্ট হচ্ছিল কিন্তু আমি চাইতাম সে ভালো থাকুক। আমার এই দূরে ঠেলে দেয়াই তার জন্য উত্তম হয়েছিল সেটা সে পরে বুঝতে পেরেছিল। আমার জন্য সে ডিপ্রেশনে চলে যায়। যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার কারণে সে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিল, আর প্রচুর পাগলামি করতো। তারপর একদিন সেই ডিপ্রেশনই তাকে রবের সান্নিধ্যে নিয়ে যায়। কিন্তু আমি তো পারছিলাম না!! তারপর থেকেই কেন জানি মন খারাপ হলেই খালাতো বোনদের কাছে চলে যেতাম। তাদের কথাবার্তা আমার ভালো লাগতে শুরু করলো। কোন একদিন গল্পে গল্পে তারা বলল আল্লাহ নাকি সব গুনাহ মাফ করে দেন যদি বান্দা খাস দিলে তওবা করে। আমি এই কথা শুনে অবাক হলাম। আমি ভাবতাম আমার আকাশচুম্বী গোনাহ আল্লাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। আমি ভাবতাম আমি তো নিশ্চিত জাহান্নামী। অথচ কোরআনের সেই আয়াত আমার অজানা ছিল
"যারা তাওবাহ করবে, ঈমান আনবে আর সৎ কাজ করবে। ফলে এরাই জান্নাতে প্রবেশ করবে, এদের প্রতি এতটুকু যুলম করা হবে না।"(সূরা মারইয়াম আয়াত ৬০)
আমি এটাও জানতাম না যে,
"যারা তাওবাহ করবে, ঈমান আনবে, আর সৎ কাজ করবে। আল্লাহ এদের পাপগুলোকে পুণ্যে পরিবর্তিত করে দেবেন; আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু।" (সূরা আল ফুরকান আয়াত ৭০)
তওবা কিভাবে করতে হয় তা আমার জানা ছিল না। আমার কাজিনরা আমাকে শিখিয়ে দিলো। তারপর কোন এক রমযানে আমার বদলে যাওয়া শুরু হলো যা আমি নিজেই টের পাইনি। প্রচুর দোয়া করতে লাগলাম নিজের হিদায়াতের জন্য।
একদিন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেললাম আজ থেকে টিভি দেখা,গান শোনা বন্ধ। আমি আমার এই ওয়াদা রক্ষা করতে পেরেছিলাম আলহামদুলিল্লাহ।
তিনি তাঁর বান্দাহদের তাওবাহ ক্ববূল করেন, পাপ ক্ষমা করেন আর তিনি জানেন তোমরা যা কর।"(সূরা আশ শূরা ২৫)
তারপর তাওবাহর আরো কিছু ভিডিও দেখে বালিশে মুখ চেপে কাঁদতে লাগলাম যাতে কেউ কান্নার আওয়াজ না পায়। কারণ এগুলো দেখলে আমার পরিবার আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করেন। যেহেতু আমার রুম পেরিয়ে বাথরুমে যাওয়া লাগত সেই সুবাদে রাতে আমার ভাই প্রায়ই দেখত আমি সালাত পড়ছি। এগুলো দেখে সে আমাকে ভন্ড বলতে লাগলো। বলতো এরকম ভন্ডামী বেশি দিন থাকবেনা। এরকম বলার কারণ ছিল। এর আগে বহুবার আমি আমার পরিবারকে কথা দিয়েছিলাম ভাল হয়ে যাব কিন্তু আমি আমার কথা রাখিনি।
তারপর একদিন প্রতিজ্ঞা করলাম আজ থেকে মাহরাম মেইনটেইন করব। সেই দিন আমার এক কাজিন আসছিলেন লন্ডন থেকে প্রায় ১০ বছর পর যাকে নিজের আপন বড় ভাইয়ের মত ভাবতাম। উনার সাথে দেখার করার জন্য আমাকে বলা হলো। আমি বললাম পর্দা ছাড়া যাবো না। আমার আব্বু,আম্মু আমাকে বললেন পর্দা ছাড়াই উনার সামনে যেতে। আমি মানতে নারাজ। অনেক বুঝানো আর কথাকাটাকাটির পরও আমাকে পর্দা সহ যেতে দিতে চাননি। আমিও নাছোড়বান্ধা। পর্দা,নিকাব করেই উনার সামনে যাই এবং কুশলাদি বিনিময় করে চলে আসি। হাত পা কাপছিল। ভাইয়া কিছুই মনে করেননি যেহেতু উনি শিক্ষিত আর লন্ডন প্রবাসী। আমার পরিবর্তনকে স্বাভাবিকভাবেই নিলেন। তারপর আরেকদিন আমার চাচাত ভাইদের সামনে যাদের সাথে (খুনসুটি লেগেই থাকত) যখন পর্দা করে বের হলাম তখন অনেক কথা শুনতে হয়েছে যা আমার হৃদয়কে রক্তাক্ত করেছে। আমার পরিবার আমার পর্দা করাকে নিয়ে হাসাহাসি করলেন। কেউ কেউ তো আমার অতীত দিয়ে আমাকে ছোটও করলেন!! সেইদিন খুব কেঁদেছি কিন্তু ভেঙ্গে পড়িনি।
পড়ালেখা ছেড়ে দিলাম। পরীক্ষার জন্য আমার ২ ওয়াক্তের সালাত কাযা পড়া লাগত। চিন্তা করলাম যখন আল্লাহ বলবেন দুনিয়াবি পড়ালেখার(যা আসলেই কোন কাজে লাগবে না) জন্য কেন আমার আদেশকে ছোট করে দেখেছো? তখন কি জবাব দিব?? তাই আল্লাহর খুশির জন্য পড়ালেখা ছেড়ে দিলাম। দুনিয়াবি পড়ালেখার দরকার আছে ভবিষ্যতে কাজে আসবে। কিন্তু আমার তো কোন ভবিষ্যত নেই,আর আমার জব করারও কোন ইচ্ছে নেই তাই ছেড়ে দিছি। এদিকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে লাগলো। আমি জানিয়ে দিলাম দ্বীনদার ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না। এই নিয়ে আমাকে প্রচুর কথা শুনতে হইছিল। এর মধ্যেই আমার মানসিক চাপ বাড়তে লাগলো। অন্ধকার জগতটা আমার ক্ষতি করার জন্য আমার পেছনেই লেগে থাকলো। এরই মধ্যে হঠাৎ আবার সেই আগন্তকের আগমন। সে খবর পেয়েছে আমি দ্বীনের পথে আসার চেষ্টায় আছি। কিন্তু পারছিলাম না আমার অতীতের জন্য। তাই সে হঠাৎ করেই তার পরিবারকে দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো। আমার বাবা মাও রাজি হয়ে গেলেন। শেষমেশ আল্লাহর হুকুমে সেই হেদায়াতপ্রাপ্ত আগন্তুকের সাথেই আমার বিয়ে হলো।
মাঝে মাঝে ভাবি,আমার মতো গুনাহগারকে আল্লাহ তাঁর নিজ অনুগ্রহে অনেক বড় বড় বিপদ থেকে রক্ষা করলেন আর আমিই কিনা উনার অবাধ্য হতাম,নাফরমানি করতাম। উনি চাইলেই তো আমাকে জাহান্নামের পথেই রাখতে পারতেন?? কিন্তু আমার রব তা করেননি কারণ তিনিই তো রাহমানুর রাহিম,গাফুরুর রাহীম। পৃথিবীর শত শত মানুষের মধ্যেও আমি একজন ভাগ্যবতী আলহামদুলিল্লাহ। কারণ আমাকে উনার রহমত দ্বারা ঘিরে রেখেছেন। হিদায়াতের পর অনেক অনেক দুয়া কবুল করেছেন যা আমার জন্য মিরাকল ছিল।
এখন আমি অনেক ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ। শ্বশুর বাড়িতেও পর্দা করে চলি,কোন সমস্যা হয় না। আর আমার পরিবার?? আগে আব্বু,আম্মু সবাইকে বলতেন সে পাগল হয়ে গেছে তাই এরকম চলে আর এখন বুক ফুলিয়ে গর্ব করে বলেন "আমার মেয়ের হেদায়াত হয়েছে।" মাঝে মাঝে আমার আব্বুকে ছোট করার জন্য অনেকে আমার প্রসঙ্গ টেনে আনে। তৎক্ষনাৎ আব্বু বলে উঠেন "আমার মেয়ের আগের কথা বাদ দিয়ে এখন সে কিরকম চলে সেটা বলো।" কবরে ভালো থাকার জন্য যদিও সেরকম আমল করতে পারেছি কি না আমার জানা নেই!! তারপরও আমি তো তওবা করে অন্ধকার জগত থেকে আমার রবের অনুগ্রহে ফিরে এসেছি সিরাতুল মুস্তাক্বিমের পথে।
ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুবি সাব্বিত ক্বালবি আ'লা দ্বীনিক।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
দ্বীনে ফেরার ১৭তম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2433215160275187&id=100007601799490
দ্বীনের ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
.......................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ১৯
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
ঢের সুখের ফানুস উড়িয়ে আমোদ গুনা আমার কাছে উদ্দেশ্যেটাও ভাবনাহীন...
অপসংস্কৃতির কবলে পড়া টিনএজাররা যেমন লাইফ লিড করে তার ব্যাতিক্রম ছিলনা কোনো ভাবে.. তবে পারিবারিক শিক্ষার কারণে শালীনতার চর্চা করতাম।
পারফেক্ট কেউ না হলেও সুপরিচিত ছিলাম কিছু সাংস্কৃতিক অর্জন ও মেধাক্রমের জন্য! জীবনের মানে বলতে সেগুলুকেই বুঝতাম….অসুস্থ সামাজিক মানসিকতা আর অপসংস্কৃতির করাল গ্রাস আমায় ধীরে ধীরে হাতিয়ারে পরিণত করছিল (আল্লাহুম্মাগফীরলি)
কিন্তু আদতে আমি ভাল নেই। কেমন যেন অপ্রাপ্তি এছাড়াও পরিবারেও আকাঙ্ক্ষিত অর্জনটা আমি পাইনি। সব মিলিয়ে জীবনটা বিষিয়ে উঠছিল।
আমি বুঝতে শুরু করি এই রঙের আড়ালের দুনিয়ায় আমাকে নিয়ে থাকা অপছন্দ, হিংসা আর তীব্র কানাঘুষা... আর চূড়ান্ত পর্যায়ে আমার ব্যার্থতা!
শুভ্রতার ছোঁয়ায় থাকতে ভীষণ আকৃষ্ট হতাম.... কিন্তু আমি যে তার যোগ্য নই!
শান্তি খুঁজতাম মরীচিকায়.. রবের ভালবাসা হতে দূরত্বে থেকে...
এছাড়াও এক ঘটনা এবং পরবর্তী আশংকা ভীষণ রকম কুঁড়ে খাচ্ছিল আমায় ( প্রকাশে অনিচ্ছুক)!
বিদগ্ধ আত্মা খুঁজে ফিরছিল প্রশান্তির আভা! তিক্ততার ভারে নুয়ে পড়া আমিত্বটা সদা হাসির আড়ালে শোয়ান.. ছদ্মবেশ গুলো খোলাসা হওয়ার কফিন জমা পড়তো। আর ভীষণরকম তেঁতো অনুভূতির নিত্য দাফন……
এরি মধ্যে কোনোভাবে আমি জানতে পারি "আসহাবে কাহফদের" ঘটনা। আচমকা নাড়া দিয়ে যায় আমায়। আসহাবে কাহফদের একজন দোয়া করলে অসম্ভবটা ৩০৯ বছর পর সেই দোয়া কবুল হলোই আর মানুষের কিয়ামাত সম্পর্কে ভুলধারণার খন্ডনে যে নিদর্শন তা আমায় আলোড়িত করে যায়.!
এমন স্রষ্টা ছাড়া কেউই করতে পারেনা! কি নিদারুণ কৌশল.. ঘটনাবহ ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হলো এমনভাবে যে কেউ সন্দেহের অবকাশ রইলো না।
" এটা ঐ মহান কিতাব যাতে কোনো সন্দেহ নেই,মুত্তাকীদের জন্য পথ নির্দেশ"[-সূরা বাক্বারা :০২]
কে আমি .?? প্রকৃতির সবই কি এমন খেলো!? বিশুদ্ধতা অস্তিত্ব..!?
প্রকৃতি সম্পর্কে কুরআনের সুনিপুণ এবং সূক্ষ বর্ণনাগুলো নিয়ে জানা শুরু করলে আরো বেশি প্রভাবিত হতাম!
ভীষন দোলা দিয়ে যাওয়া সেই ঘটনায়(আসহাবে কাহফ) একটা শক্ত স্ট্যান্ড তৈরি হয় রবের প্রতি.. সালাত পড়ি( আগেও তথাকথিত মুসলিম হিসেবে পড়া হলেও এটা অনেক ভিন্ন অনুভূতির উদ্রেক করেছিল) চাইলাম যেন আমি সঠিক পথ পাই যা আমায় শান্তি দিবে...
এরপরের ঘটনাগুলো অলৌকিক.. যখনি কোনো সংশয়ের দানা বেঁধে যায় তখনি একদমি ভিন্নভাবে সমাধান পেয়ে যাই।রবের প্রতি কৃতজ্ঞতা বাড়তে থাকে…..
ড. জাকির নায়েকের প্রত্যেকটা লেকচার,বিধর্মীদের সাথে প্রমাণ করা যে ইসলামই শ্রেষ্ঠ অসাধারণ লাগতো আমার। এভাবেই যাত্রা নতুন দিগন্তে ……
এবার স্থির হলাম আমাকে সব ঝেড়ে নিতে হবে! জাহিলিয়্যা হতে বের হওয়ার পালা।রবের সাহায্য চেয়ে নেমে পড়লাম.. বিশ্বাস করুন কেমন ভাবে পথ উন্মোচিত হচ্ছিল আমি জানিইনা।নতুন কিছু করবো;অস্বাভাবিক ভাবেই সুগম হয়ে যাচ্ছিল!!
হঠাৎ এক ভিন্ন আমাকে আবিষ্কার করলাম..
অকস্মাৎ স্নিগ্ধতা আমার দখলদার!কেমন ঘোর ঘোর উবে থাকা রোজ! যেকোনোএকটা নিয়মাত আমাকে আরো এগিয়ে দিচ্ছিল(প্রকাশে অনিচ্ছু) আমার গ্রহনযোগ্যতাই বদলে দিচ্ছে এভাবে...। প্রকৃতি যেন আমার মতো করেই..........
অপার কৃতজ্ঞতায় সিক্ত হই প্রতিটিবার।
এতো ভালোবাসে রব আমায়! কিসের মোহে বিকিয়ে দিব!?
শুরু হয় এক ভিন্ন যাত্রা! আমি যা ছেড়েছি সবকিছুর সর্বোত্তম বদলা রব আমাকে দিয়েছেন! (আলহামদুলিল্লাহ)
দ্বীন পালনে আমি যে বিরূপ প্রভাবে পড়িনি তা না।
হালকা বাধা, দু চারটা কটুক্তি, সবার গ্রহনযোগ্যতার বৈপরীত্ব ;আগে এই সেই করছে এখন আসছে পীর সাজতে,তোর মুখে হাদিস মানায় না,নিজে এই আর আমাদেরকে... ব্লা ব্লা অনেক মন্তব্য ঘরে বাহিরে শুনতে হয়। কিন্তু কখনোই তা আমার রবের অনুগ্রহ ছাপিয়ে ইমপর্টেন্স পায়নি! কারন এরা হলো তারা যারা নিজেদের গুনাহ ঢেকে পিঠ বাচাতে আমাকে এমন মন্তব্য করে!!
" কানাঘুষা তো শয়তানের কাজ,মুমিনদের অন্তরে দুঃখ দেয়ার জন্য!"- [সূরা মুজাদালাহ্:১০]
এসময় আরো কিছু বুঝতে পারি আলহামদুলিল্লাহ! আমার প্রত্যাবর্তীত জীবনে তূলনামূলক ভালোরাই আমায় ভালোবাসে। ব্যাপারটা আরো ইন্টারেস্টিং!ইসলামী আইনের বিপরীতেগেলে ব্যাক্তি হতে রাষ্ট্র পর্যায়ে সৃষ্ট অনিয়ম আমার বিশ্বাসের পথে চলাকে বেগবান করে….
ইসলামের শুরু হতে এখনো পর্যন্ত মুশরিকদের নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্র এবং সর্বোপরি গণহত্যা সহ সব কৌশলে ইসলামকে মুছে দিতে চাইলেও তা সর্বকালীন শ্রেষ্ঠ ধর্ম হিসেবে অভিযোজিত হওয়া!
এসবকিছুই আমাকে দেখিয়ে দিচ্ছিল যে ইসলামই একমাত্র সঠিক সুস্পষ্টধর্ম!
শূন্যতার পূর্ণতা দিয়ে যেই রব অশেষ করুণা হতে আমায় হিদায়াত দিলেন ;সেই নাফরমান আমিও হারিয়ে ফেলি নিজেকে আবার ফিরে আসি,বিশ্বাসের স্থানকে আরে দৃঢ় করে!!
তবু গুনাহের ভারে জর্জরিত💔
" তিনি তোমাকে পেয়েছিলেনপথের দিশাহীন;অতঃপর দেখালেন সঠিক পথ"-[সূরা আদ্ব-দ্বোহা:০৭]
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
দ্বীনে ফেরার ১৮তম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2434003206863049&id=100007601799490
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
.............................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ২০
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আল্লাহর পথে ফিরে আসার গল্প।❤❤❤
আমাদের সমাজে নরমালি হিজাব নিকাব বোরকা পরে বাইরে গেলে আবার মাঝে মধ্যে নিকাব না পরলে ও নন মাহরাম মাহরাম না মানলে ও কখনো পাঁচ, চার, তিন রাকাত নামাজ পরলে,রমজান মাসে আবার নামাজ রোযা পুরোপুরি ঠিক এরকম মানুষকে কিন্তু ধার্মিক মনে করা হয়। সেরকমই ধার্মিক ছিলাম আমি( আল্লাহুম্মা মাগফিরলি) কেউ কেউ হুজুরনি ও ডাকতো।মোটামোটি একটা ধার্মিক ফেমেলি আমার মা বাবা নামাজ,রোযা হালাল হারাম বেচে চলার চেস্টা করতেন আলহামদুলিল্লাহ।
মিউজিক ফ্লিম মোটামোটি দেখতাম বাংলা ছবি আর কি।ছোটবেলা থেকে অন্য সবার থেকে বুঝ ছিল আমার। স্কুল পাস করেছি ছেলে দের সাথে কথা বলা এসব মোটেই ভালো লাগতো না। কাজিনরা ও আড়ালে ভাবওয়ালি বলতো।তবে চেহারা ফর্সা না হওয়ায় হয়তো তেমন ঝামেলায় পরতে হয়নি। যাই হোক কলেজ জীবন শুরু হলো সেখানেই শুরু হলো আমার অধঃপতন।বন্ধুর প্রভাব যে নিজের ওপর পরে তা আমি বুঝি সেদিকে না যাই। কোনো ছেলের সাথে কথা বলতাম না তবে একটা ছেলের সাথে ধীরে ধীরে ফ্রি হতে চললাম।এই ফ্রি হওয়া আর বন্ধুত এমন পর্যায়ে গেলো দিনরাত চ্যাটিং করা, কলেজ, কোচিং এক কথায় ঘুমানো বাদে অল টাইম কথা হতো
যে আমি কখনো ছেলে দের সাথে কথাই বলিনি তার এই অবস্তা।
হারাম সমপর্ক চলতে থাকলো আল্লাহর কসম এই সমপর্ক যতদিন ছিল আমি কখনো একটু শান্তি পাইনি। দিনরাত চরম অশান্তিতে ছিলাম মোটামোটি ২ বছর।ওর প্রতি এত বেশি দূবর্ল ছিলাম পাগল লাগতো যা বলতো তাই করতাম,এক কথায় ও হেপি থাকুক এটা চাইতাম যে করেই হোক।আমি তখন এই সমপর্ক হারাম, কি রকম গুনাহ এতটা জানতাম না আসলে।ভাবতাম বিয়ে হয়ে গেলে তো ঠিক আছে।আমি এক ঘোরের মধ্যে ছিলাম যেন। ভাবতে কস্ট হয় এখন আমার হায় কত গাফেল ছিলাম!!! এভাবেই কোনোরকম দিন কাটছিল।
আমার একটা অভ্যাস ছিল আমি কস্ট পেলেই তাহাজ্জুদ পরতাম আমার বাবা তাহাজ্জুদ পরতেন ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি।তো যে কথা বলছিলাম এক সময় আমাদের সমপর্ক টা আর রইলোনা ও কথা বলতোনা টিক সেই সময় আমি ব্লাক মেজিক এর রোগি ছিলাম। একে তো অসুস্থ তার উপর যার সাথে এক মিনিট কথা না বলে থাকতে পারিনা সে কথাই বলেনা।আমার অবস্তা খুব খারাপ হতে থাকলো হসপিটাল এ কাটতে থাকলো দিন কস্ট যে কি আমি সে সময় বুঝে ছিলাম আল্লাহু আকবর খুব কাদতাম যে ইয়া রব আমাকে একটু শান্তি দিন প্লিজ। এই কটিন সময়ে আমি বুঝেছিলাম শান্তিদাতা একমাত্র আমার রব,আর দুনিয়ার মধ্যে যদি কেউ আপন থাকে সে হলো মা,বাবা।
বলে রাখি আমি দাড়াতে পারতাম না তবে নামাজ মিস দিতাম না কস্ট হলেই তাসবিহ পরতাম আল্লাহকে ডাকতাম কাদতাম সে কান্নাই আজ আমাকে এত দুর এনেছে।মনে পড়ে এত কাঁদতাম আমার মনে হত পুরো পৃথিবী কাপছে। সেই সময় আমি স্মার্ট ফোন কিনি তখন ইউটিউব এ ওয়াজ শুনতাম ছোটবেলা থেকেই ইসলামিক বই, ওয়াজ এসব এর মত আকৃষ্ট ছিলাম তো ফোন পেয়েই শুনা হতো বিভিন্ন লেকচার। ড.আব্দুল্লাহ জাহাংগির এর লেকচার , বাসিরা মিডিয়া,উম্মাহ নেটওয়ার্ক এর ভূমিকা ছিল বেশি আমার পরিবর্তনে। ধীরে ধীরে পরিবতর্ন হতে শুরু করলাম। যেদিন জেনেছিলাম গান শুনলে কানে আগুনের শিসা ঢুকানো হবে সেদিন এর পর আর কখনো গান শুনিনি আলহামদুলিল্লাহ।
এভাবে চলছিল সবকিছু ভালোই যেহেতু ফেমিলি মোটামোটি ধার্মিক ছিলেন তাই সবাই আমার পরিবতর্নে খুশিই হয়েছিলেন বিপওি ঘটলো মাহরাম মেইনটেইন করতে এটা কাউকে বুঝানো যায়না।এইসময় ফেসবুক খুলি বিভিন্ন ইসলামিক গ্রুপে এড হই এর মধ্যে অনুপ্রানিত হয়েছি মুসলিম নারী গ্রুপ থেকে, জাইনাব আপু,নয়ন তারা মুন,ইভা আফরিন,উসমি আপু, জুমানা আপু এনাদের পর্দা নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট, অভিঙতা পড়ে উৎসাহিত হয়েই আমি শুরু করি মাহরাম নন মাহরাম মেনে চলা। শুরু হয় এক নতুন যুদ্ধ যা প্রতিনিয়তই করে তুলেছি নানান জনের তিরস্কার, রিলেটিভ দের মানসিক নির্যাতন আল্লাহু আকবর।মা বাবা ভাই বোন মোটামোটি সাপোর্ট করেছেন।
মনে পড়ে এক রাত আমি রুম লক করে আছি কাজিনরা দরজায় ডাকছে কিছু বলতে না পেরে এক সময় সিজদায় পরে যাই আর কাঁদছিলাম হে আমার রব আমাকে
সাহায্য করুন এই বুঝি ওরা আমাকে দেখে ফেললো।শেষ পর্যন্ত রব সহজ করে দিলেন আলহামদুলিল্লাহ। দ্বীন মেনে চলার ট্রাই করছি আর ওর সাথে ও মাঝে মাঝে কথা হতো তবে সেটা রিলেশন এমন কিছুনা যেহেতু ফ্রেন্ড তো হটাৎ করেই যোগাযোগ অফ করা সহজ ছিলনা।মাস দুয়েক পরে কোনো না কোনো ভাবে কথা হয়ে যেতো।তখন ও আমি সব কিছু মেনে চললে ও ওকে ভুলতে পারছিলামনা তারপর ধীরে ধীরে মনের যেনাহ ও জানতে পারলাম রবের কাছে কাকুতি মিনতি করে পানাহ চাইতাম ওর কথা মনে হলেই ও ভালো থাকার ওর হেদায়াত এর দুয়া করতাম।
প্রতিবারই কোনো না কোনোভাবে ওর সাথে কথা হলে বলতাম ইয়া রব আর যেন না হয় আমি চাইনা দুজনই গুনাহগার হই। একবার চার মাস পর ওর মেসেজ পেয়ে সিজদাহ পড়ে কাদছিলাম আর বলছিলাম ইয়া রব আমি চাইনা আপনার কাছ থেকে দূরে যেতে একটু ঠাঁই দেন প্লিজ আপনার কাছে আমাকে আর হারামে জড়ায়েননা রব। এর পর ওর সাথে কথা বলি বুঝিয়ে বলি ও মোটামোটি দ্বীন বুঝতো আমার পরিবতর্ন ও জানতো যদি রব সাহায্য না করতেন আমি হয়তো পরে যেতাম অন্ধকার গর্তে তবে না আমার রব প্রতিবারই আলো জ্বালিয়ে পথ দেখিয়েছেন। এরপর টোটালি যোগাযোগ অফ হয়ে যায়।
আমি সবসময়ই চাইছি ও ভালো থাকুক আর ভালো থাকার পথ তো আমার রবের দেখানো পথ আমার সব দুয়ায় নিজের জন্য যা দুয়া করি ওর জন্য সেইম আল্লাহ যেন উভয়কেই মাফ করেন আর উওম জীবন সঙী দান করেন ঈমান নিয়ে মরার তৌফিক দান করেন।আমার বিশ্বাস একদিন ও ও দ্বীনের পথে আসবে। প্রতিনিয়ত নফসের সাথে যুদ্ধ করছি আর যদি বেচেঁ থাকি তাহলে এমন জীবনসঙ্গীর অপেক্ষায় এমন একজন মানুষের জন্য দুয়া করি যে বলবে কখনো যেন পর্দার খেলাফ না হও, যে হবে আমার এই প্রতিনিয়ত যুদ্ধের সঙী।আমি ক্লান্ত হয়ে গেলে যে বলবে প্রিয় দুনিয়া তো সুখের জন্য নয় আরেকটু ধৈর্য ধরো ইনশাল্লাহ জান্নাতে কোনো কস্ট থাকবেনা।যদি বেচেঁ থাকি আমার রব এই চাওয়াটা পূরন করবেন কিনা জানি না। তবে আমি আমার রবের রহমত থেকে নিরাশ হইনা ভীত, শংকিত হয়ে আশা রাখি আমার রব আমাকে ক্ষমা করবেন আর আমাকে নিরাশ করবেন না।তিনিই তো বলেছেন তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইওনা❤।
সবার কাছে দুয়ার আর্জি রইলো গুনাহ মাফ করে রবের কাছে যেন যেতো পারি।
শামছুন্নাহার রুমি আপুকে জাজাকিল্লাহ খায়রান। উহিব্বুকি ফিল্লাহি ❤।
(লেখালেখির অভ্যাস নেই গুছিয়ে লিখতে পারিনি ভুল হলে মাফ করবেন প্লিজ।)
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
দ্বীনে ফেরার ১৯তম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2437562373173799&id=100007601799490
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
...............................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ২১
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আমি নিজে নতুন যা যা জানতাম ইসলাম সম্পর্কে তাদের সাথে তা শেয়ার করতাম৷ তারাও খুব এঞ্জয় করতো আলোচনা গুলো। তারা প্র্যাক্টিসিং না হলেও তাদের আগ্রহ দেখে আমি আরো উৎসাহ পেতাম৷
একদিন ক্লাস এইটে বার্ষিক মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় একটা বই পুরস্কার পেলাম। নাম "কোরান ও সুন্নাহের আলোকে কবিরা গুনাহ"৷ ওয়াল্লাহী, বইটা পড়ে আমি জান্নাত সম্পর্কে যতটুকু না জানতাম তার চেয়ে বেশি জাহান্নাম সম্পর্কে ধারনা পেয়ে গেলাম৷ প্রতিটা ছোট খাটো গুনাহের শাস্তির কথা এমন ভাবে বর্ননা করা ছিলো বইয়ের মধ্যে রাতে ঘুমানোর সময়ও আমার সেগুলার কথা মনে পড়ে চোখ বেয়ে পানি পড়তো৷ ভাবতাম, আমি কত গুনাহের সাথে জড়িয়ে আছি৷ আমাকে কি এমনভাবে শাস্তি দিবেন রব? তখন মনে হলো, " রব আমাকে জান্নাত না দিন, তবুও যেনো আমাকে জাহান্নামের ধারেকাছেও না নেন৷ দরকার হলে জান্নাতের বাইরের দরজাতে ফেলে রাখুন, তবুও আমাকে যেনো জাহান্নামে না দেন। আমি পারবোনা এমন শাস্তি সহ্য করতে।"
তারপর থেকে যে আমি জান্নাতের যাওয়ার সহজ পন্থার খোঁজ করতাম সে আমি খোঁজ করতে লাগলাম কি কি করলে জাহান্নাম থেকে বাঁচা যাবে।
সে সময় পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে জানলাম। সেই সম্পর্কে শাস্তির কথাও জেনে গেলাম। কিন্তু বাসার মানুষগুলো আমাকে পর্দা করতে দিতোনা। আম্মু বলতো বুড়ির মতো লাগে। আমাকে রাস্তার কেউ দেখে থাকেনাই৷ পর্দা না করলেও অশালীন উচ্ছৃঙ্খল পোশাক পড়তাম না। তবুও আমি তো জানি, আমার রব আমাকে কতটুকু পর্দা করতে বলেছেন।
বাসায় হাজার খোটা সহ্য করেও হিজাব করতাম। তবে কোথাও বেড়াতে গেলে, বিয়ে বাড়িতে গেলে আমাকে হিজাবও করতে দিতোনা। তখন অপরাধ বোধ কাজ করতো মনে। কতবার যে কেঁদেছি রবের কাছে। তখন মনে হতো, কতই না ভালো হতো আমি যদি এক আলেম পরিবারে জন্মাতাম৷ ছোট থেকেই আমার রবকে চিনতে পারতাম আমি।
তারপর ক্লাস নাইনে এক বড় নামকরা সরকারি স্কুলে চান্স পেলাম। ভর্তি হলাম। স্কুলে হেজাব পড়ে যেতে চাইলে বাসায় বড় বোন আর আম্মু হিজাব টেনে নিয়ে ফেললো। বললো, হিজাব পড়লে মানুষ নাকি আমাকে মাদ্রাসার স্টুডেন্ট মনে করবে৷ পথেঘাটে মানুষ জংগী শিবির সন্দেহ করে নিয়ে যাবে৷
আমার মনে যে কি চলতো তখন সে শুধু আমি জানি আর আমার রব জানে। ক্লাস নাইন থেকে কোচিং এ যেতে হয়েছিলো বলে বার বার পোশাক চেঞ্জ করার ঝামেলার অজুহাতে অনেক কান্নাকাটি করে বোরকা নিয়েছিলাম। আমাকে যেখানেই যাই বাধা দিতো হেজাব পড়তে। আরো কটু কথা। কথাগুলো তীরের বাণের মতো বুকে বিধতো। আমার আশেপাশে আমাকে উৎসাহ সাহস দেওয়ার মতো কেউই ছিলোনা। এক অজানা ভয় কাজ করতো। একদিকে আমার রব আরেকদিকে আমার পরিবার। বয়সে ছোট হওয়ায় কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারতাম না আমি৷ ছোট বাচ্চার মতো নিরবে আল্লাহকে বলতাম, আমাকে কেনো এমন পরীক্ষায় ফেলছেন। এখন আলহামদুলিল্লাহ, এমন মনে হয়না। এখন বুঝি, আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে দুনিয়ার পরীক্ষার মাধ্যমে তার নিকটে যেতে পারার সবচেয়ে বড় সুযোগ তৈরি করে দেন৷
এস এস সি এক্সামের পর ফেসবুক একাউন্ট খুলি৷ অনেক গুলো ইসলামিক গ্রুপের সাথে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলাম৷ আলহামদুলিল্লাহ ফেসবুকও আমার হেদায়াতের উছিলা। কেননা যতটুকু না অপকৃত হয়েছি তার চেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছি। ফেসবুকের মাধ্যমে আমি ইসলামের সহীহ আক্বীদার বিষয়গুলোর সাথে পরিচিত হয়েছি। ইসলামিক বইয়ের গ্রুপে এড হয়ে বই সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা নিই টাকা জমিয়ে অনেক ইসলামিক বই কিনেছি। আলহামদুলিল্লাহ। ইন্টারে উঠার পর আল্লাহ দুইটা দ্বীনি ফ্রেন্ড দিয়েছেন। তারা আমাকে বিভিন্ন দ্বীনি ভাইয়ের দ্বীনি বোনের লিখা পাঠাতো। উৎসাহ পেতাম। তারা আমাকে পর্দা করতে আলহামদুলিল্লাহ অনেক সাপোর্ট করেছে। আল্লাহর রহমতে আমি এখন নিকাব হাতমোজা,পা মোজা সব পড়ি আলহামদুলিল্লাহ। যেদিন প্রথম এভাবে বাইরে বের হয়েছিলাম বলে বুঝাতে পারবোনা আমার অনুভুতি৷ মনে হলো পৃথিবীর সব প্রশান্তি যেনো আমার মনে এসে ভীড় জমিয়েছে।
যখন প্রথম স্ট্রিক্টলি শারীয়াহ পর্দা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তখন ফেমিলি থেকে বাধা আসলে একটা কথাই বলেছিলাম, "তোমরা আমাকে যাই বলো আমি সব শুনবো। তবে আমার রবের কোনো আদেশের সাথে তোমাদের চাওয়া আমি কম্প্রোমাইজ করবোনা৷ আমাকে ঘর থেকে বের করে দাও বা কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দাও, আমি যে পথে চলছি সে পথ থেকে ফিরে আসবোনা৷ তোমরা আমাকে হাজার কথা বুঝাও, শাসন করো আর যাই করো, এসব বৃথা। আমি আমার লক্ষ্য থেকে ফিরে আসবোনা।"
আলহামদুলিল্লাহ, এই কথাগুলো বলার পর থেকে তারা আমাকে আগের মতো কিছু বলে না। ঘরে পরিস্থিতি আল্লাহ তায়ালা আমার জন্য আগের চেয়ে অনেক সহজ করে দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ।
এখন বাইরে আমাকে দেখলে অনেক ফ্রেন্ড মনে করে কোনো বড় আলেম পরিবারের মেয়ে আমি৷ আলহামদুলিল্লাহ। ভুল হলেও ভালো লাগে শুনতে কথাটা। এখন কারো কথায় আগের মতো কস্টও পাইনা৷ আফসোস হয় তাদের জন্য। তবে তাদের হেদায়াতের জন্য রবের কাছে দোয়া করি। এখন আমি এইচ এস সি ক্যান্ডিডেট। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তায়ালার কাছে আমি কোনোদিন কিছু চেয়ে নিরাশ হইনি আলহামদুলিল্লাহ। যা চেয়েছি তাই দিয়েছেন। বরং তার চেয়ে উত্তম দিয়েছেন৷ বোনেরা আমার জন্য দোয়া করবেন, আমার মৃত্যুটা যেনো ঈমানের চাঁদর জড়ানোর সহিত আল্লাহ তায়ালা দেন৷ আমিন। আমাকে যেনো আল্লাহ তার এক প্রিয় বান্দী হিসেবে কবুল করে নেন। দুনিয়ায় আমলের ঝুলি যে এখনো শুন্য। জানিনা, কি নিয়ে দাড়াবো আমি আখিরাতে রবের সামনে। বোনেরা, সালাতের শেষে আল্লাহ তায়ালার এই অধম বান্দীকে দোয়ায় স্মরনে রেখো৷
"বুকের খাতায় খুব যতনে
একটা স্বপন আঁকি
ফিরদাউসের ফুল বাগানে
আমি হবো পাখি!"
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
(দ্বীনে ফেরার ২০ তম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2445715189025184&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ২২
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আসসালামুআলাইকুম ,
আমার দ্বীনের পথে আসার গল্প একটু লম্বা। ধর্য্য নিয়ে পড়ুন ইনশাআল্লাহ আপনদের জীবনে অনেক পরিবর্তন আসবে ।তো এবার শুরু করি আমার গল্প-
মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি আমি। আমার মা সব সময় নামাজ পড়তেন । তিলাওয়াত করতেন সাধ্যমতন।বাবা নামাজ পড়তেন। তবে মাঝে মাঝে মা কে দেখেছি বাবাকে প্রেশার দিচ্ছেন নামাজের জন্য। তবে এখন বাবাও নামাজী। আমি আমার ভাইরা নামাজ না পড়লে আম্মা মারতেন।মারের ভয়ে আমরা নামাজ পড়তাম। জেনারেল লাইনে পড়াশুনা করেছি। তবে আমি পড়াশুনায় ভালো ছিলাম। মুখস্ত করতে ছিলাম পারদর্শী। মানবিক বিভাগ থেকেই আমার রেজাল্ট ছিল খুব ভালো। স্বপ্ন দেখতাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হব।। বাবা আমাকে খুব আদর করতেন তবে বাবার ইচ্ছা ছিলো বিয়ের বয়স হলে আমাকে বিয়ে দিবে। বিয়ের পর হাজবেন্ড তার ইচ্ছা হলে পড়াবে ।এইচ এস সি পাস করলাম। রেজাল্টও হল অসাধারণ। শুরু হল আমার ভর্তি যুদ্ধ। বাবাকে অনেক কষ্টে রাজী করালাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার জন্য। আমার ধারণা ছিলো আমার ঢাবিতে হবেই যে কোন সাবজেক্টে। আর আমি হলে থাকব। বাবা আর বিয়ে দিতে পারবে না। মানে বাবাকে বলব পড়া শেষ হোক বিয়ে পরে করব। তারপর চাকরী করব। বাবা মাকে হেল্প করব।বাবা মনে মনে আমার জন্য পাত্র খোঁজছিল । উপযুক্ত পাত্র পেলে আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে। আমিও মনপ্রাণ দিয়ে পড়তাম ভর্তি পরীক্ষার জন্য। আর ভাবতাম ভালো কিছুতে চান্স পেলে বাবা বিয়ে দিতে পারবে না।পরীক্ষা দিলাম ঠিকই । তবে চান্স পেলাম না। পরবর্তীতে সরকারিতে ভর্তি হলাম । বাবা তার মধ্যেUK এর এক পাত্রের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করলেন। আমি আপত্তি করলাম । কিন্তু বিয়ে আটকাতে পারলাম না। বাবা বল্লেন মেয়ে উপযুক্ত হলে বিয়ে দিতে হয়। আজকাল অনেক নোংরামী হয় । আমি পাপের ভাগীদার হব না। বাবার উপর তখন না করতে পালাম না । তবে মনে মনে অনেক কষ্ঠ পেলাম। আমি মনে মনে ভাবলাম আমার পড়াশুনার জগৎ থেকে আমাকে আমার বাবা বের করে দিল। আমি সাধারণ গৃহীনী হব। বিয়ে ঠিক হওয়ার ৮ মাস পর শ্বশুড় বাড়ীতে আমাকে উঠিয়ে নেন। আমি মাঝখানের ৭ মাস ডিপ্রেশনের মাঝে ছিলাম। কেমন হয়ে গিয়েছিলাম। সারাদিন ভাবতাম আমার স্বপ্নগুলো কেমন হঠাৎ নষ্ট হয়ে গেল। কেন এমন হলো? আমার আর বেঁচে কী হবে।
বিয়ে হল । আলহামদুলিল্লাহ আমার হাজবেন্ড অনেক কেয়ারিং । উনাকে বিয়ে পর ২য় দিন আমি সব খোলে বলি। উনি বল্লেন ঠিক আছে আমি তোমাকে পড়াব ।আমি ভাবলাম আমার হাজবেন্ড স্বান্তনা দিচ্ছেন। কিন্তু না পরবর্তীতে আমি তার প্রমাণ পেলাম । আমি যখন UK আসলাম তিনি আমাকে একটা স্পিকিং কোর্সে ভর্তি করালেন। আমার কথা ছিলো কোর্স শেষ করে অন্য যেকোন বিষয়ে একটু পড়ব । তারপর চাকরী করব।
কিছুদিন নতুন স্বপ্নে হাবুডুবু করছিলাম । তবে বেশীদিন আমার স্বপ্ন টেকে নী। অনেকে আমার বাচ্চা হয়না কেন এটা নিয়ে প্রেসার দিতে শুরু করলেন। আমার হাজবেন্ড বল্লেন কান দিও না ওসব কথায়। তুমি তেমার পড়া চালিয়ে যাও। কিন্তু সারাদিন ঐসব চিন্তা করতে করতে ভাবলাম বেবী নিব। আর বেবী নিয়েই পড়ব।হাজবেন্ডকে বল্লাম । তিনি রাজী হলেন । তবে অনেকদিন গেল আমার বেবী কনসিভ হচ্ছিল না। শ্বশুড়বাড়ীর সবার কথায় আমি প্রচন্ড ভেঙ্গে পরছিলাম। আমার আম্মাকে বিষয়টা বলি উনি বলেন বেবী হলে সব ঠিক হবে তুই বেবী নে। তবে আমি কাউকে বুঝাতে পারতাম না বেবী আমার নেয়ার বিষয় না এটা আল্লাহ দিলে হবে। আমি নামাজ পড়তাম আর দোয়া করতাম । ৭ মাস চলে গেল .. অবশেষে আমি আর আমার হাজবেন্ড চিন্তা করলাম আমরা ডাক্তার দেখাব। আমরা ডাক্তারের যেদিন অ্যপয়েন্টমেন্ট করব ঐ দিন আমার শরীর কেমন খারাপ হল। একটু জ্বর হল। আমার সন্দেহ হল ।ইউরিন টেস্ট করলাম নেগেটিভ আসল। আমার হাজবেন্ড বল্লেন ব্লাড টেস্ট করে ফেলি তাহলে ধরা পরবে । আমরা ব্লাড টেস্ট করালাম। ডাক্তার বল্লেন আমি প্রেগনেন্ট। আলহামদুলিল্লাহ ,ঐদিন কত্ত খুশী হয়েছিলাম আমরা দুজন।তখনও আমার গাফেল হৃদয় বুঝেনী আমার রব আমাকে কত্ত বড় নিয়ামত দিছেন।অনেক মানুষ সারা জীবন কান্না করে বেবী পায়না আর আমি কতো সহজে পেলাম।
সবাই খুব খুশী হলেন। বেবী হওয়ার ১ মাস আগে আমার কোর্স শেষ হল। শ্বাশুড়ী বল্লেন বেবী হওয়ার পর আমি যা পড়ার পড়ব এখন আর বাইরে যাবে না। মেনে নিলাম তার কথা । বেবী হল। তবে আমার আর পড়া শুরু হল না। বাচ্চাকে নিয়ে আমি অন্য দুনিয়ায় ঘুরপাক খেতে লাগলাম। তবে নতুন মা হিসেবে আমার কিছু ভূল ছিল বাচ্চা পালনে। বিষয়টা অনেকের পছন্দ হচ্ছিল না। বাচ্চা অসুস্থ হলে আমাকে দোষারোপ করতেন। অনেক কঠিন সময় যাচ্ছিলো । কতরাত যে কেঁদেছি। আল্লাহকে বলতাম আমি কী করেছি আমার কতো সুন্দর স্বপ্ন ছিলো। বিয়ে হয়ে সব শেষ। বেবী হলো তবে ঠিকমত তো মা হতে পারলাম না। আমার কারণে বাচ্চা অসুস্থ হয়। আমি কেন পারি না। আমি তখন নিজেও জানতাম না আমি ডিপ্রেসড ছিলাম। বেবী হওয়ার পর নতুন মায়েদের ক্ষেত্রে এটা খুব কমন ব্যাপার । যেটাকে মেডিকেল সাইন্সে বলা হয় পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশান ।
আমাকে আমার হাজবেন্ড ছাড়া কেউ বুঝতেননা। বাবা মা কে খুব মিস করতাম। একা ফিল করতাম ।আর এখানে অনেকের খারাপ ব্যবহার ও কটুক্তি আমাকে আরও ডিপ্রেশানের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল। কত কন্না করতাম । তখন ফেসবুকে মাঝে মাঝে কিছু আয়াত চোখে পরতো । মনে হতো কেউ আমার কথার উত্তর দিচ্ছেন। আশ্চর্য লাগতো যখনই মন খারাপ হতো তখনই এমন কিছু আয়াত আসত আর মন শান্ত হয়ে যেত। এভাবে আরও কিছুদিন গেল। আমি একটা পোস্টে পরেছিলাম ১ বার দূরূদ পড়লে ১০ টা নিয়ামত আসে । আমি মনে মনে সারাদিন দূরূদ পড়তাম। আরেকটা জিনিস তখন উপলব্ধি করেছি পারিবারিক কলহ কারো সাথো শেয়ার করলে বিষয়টা আরো বাড়ে। কিছু মানুষ আমার কাছ থেকে কথা শুনে আরেক জনকে বলে দেন । বিষয়টা পরে আমার জন্যই মারাত্নক হয়ে যেতো।
এজন্য আমি চুপ থাকতে শিখলাম। কেউ আমাকে ঐসব বিষয় নিয়ে জিজ্ঞেস করলেও এড়িয়ে যেতাম । ঐ সময় একদিন ফেসবুকে একটা পেইজ “নারীদের আমল ঘর” গ্রূপে এড হই। আলহামদুলিল্লাহ ঐ গ্রূপের আপুদের লিখা পড়ে পড়ে আমার মনের চেন্জ আসে। আমি সবর করার গুরুত্ব বুঝলাম। ক্ষমা করা শিখলাম।আল্লাহর ফয়সালা যে বেস্ট বিষয়টা বুঝতে শিখলাম। শুরু করলাম ইসলামিক বই পড়া।
।হাজবেন্ডকে বল্লাম আমি বুরকা পড়ব। তিনি আপত্তি করলেন না। গান শুনা বন্ধ করলাম। আমি খেয়াল করলাম আমি যে দিন গান শুনি আমার বিপদ হয়। তাই পুরো পুরি অফ করে দিলাম। টিভি দেখাও বন্ধ করলাম। নামাজে মনযোগী হলাম। তিলাওয়াত করতাম রোজ।
আমি আবার কনসিভ করলাম জন্ম হল আমার আরেক সন্তানের । তার জন্মের সময় প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছিল । মন থেকে দোয়া করলাম। আমার দোয়া কবুল হল । খুব সহজেই জন্ম হল। তাড়াতাড়ি সুস্থও হয়ে গেলাম। যেখানে প্রথম সন্তানের জন্মের পর আমার ১৫ দিন লেগে গিয়েছিলে নড়তে পারতাম না ব্যথায় সেখানে দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের পর ঐ দিন রাতেই তাকে আমি খাইয়েছি। হেঁটে টয়লেটে গেছি। সব আমার দোয়ার ফল । আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করছেন।আমি মনে মনে শুকরিয়া আদায় করছিলাম। কারন আমি প্রতিদিন নামাজ পড়ে চাইতাম আল্লাহ যেন এবার আমাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করেন । ডিপ্রেশনে না ফেলেন। আমি বলতাম হে আল্লাহ আমার বড় ছেলেটা মাত্র ২ বছরের আমি অসুস্থ হলে একে কীভাবে রাখব আবার নতুন বেবী কী করে রাখব। আমাকে বিপদ দিয় না মাবূদ।
দোয়াটি হলো—
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া আখলিফ-লি খাইরাম মিনহা।
এছাড়াও ইস্তেগফার করতাম , দূরূদ পড়তাম।
আলহামদুলিল্লাহ এবার আর ডিপ্রেশান হল না।কারও কটুক্তিও আমার কষ্ট দিত না। আমি এভাবে চিন্তা করতাম কেউ আমার ক্ষতি করতে পারবেনা । আমার রব আমার সাথে আছেন। খুব শক্তি মনেবল পেতে লাগলাম নীজ থেকেই। এযেন এক অন্য আমি।
সুন্দর সুন্দর আমল দোয়া নোট করে রাখতে লাগলাম। ইস্তিখারা করতে শিখলাম, হাজত নামাজ এর মর্ম বুঝলাম। তাহাজ্জুদ এর স্বাদ উপলব্ধী করলাম। যেদিন তাহাজ্জুদ মিস হত ভাবতাম আমি দিনে কী গোনাহ করেছি যার জন্য আল্লাহ আমরা আমল থেকে সরিয়ে দিছেন। আবার তওবা করতাম ,কাঁদতাম।
আমার ছোট ছেলে হঠাৎ অসুস্থ হল। ৯ দিন ডায়রিয়া। কত কিছু করলাম কমে না , ডাক্তার স্যালাইন দিতে বলে দিলাম কাজ হয় না। কোন ঔষধও এতো ছোট বাচ্চাকে তারা দেয় না। আমার ছেলের পাজরের হাড় দেখা যাচ্ছিলো এমন অবস্থা হল।ডাক্তার হসপিটাল এডমিট করতে বল্লেন। আমি ৩ দিন নিয়ে থাকলাম । তার কমে না ।একই ভাবে পাতলা পানির মতন পায়খানা হচ্চিল। খুব ভয় পেতে লাগলাম।বড় ছেলেটা বাসায় আমাকে ছাড়া কান্না করতো, মন খারাপ করে থাকতো। আমিতো আসতে পারতাম না। আমি সবসময় মনে মনে আমার নেক আমলের ওসিলা ধরে দোয়া করতাম। হসপিটালে থাকার তৃতীয় দিন রাত ২ টায় আমার ছেলের অবস্থা আরও খারাপের দিকে গেল। ঘুমাতে পারছিলোনা। ডাক্তার অনেক টেস্ট করেও পাচ্চিলেন না কেন এমন হচ্ছে। আমি বার বার তাহাজ্জুদের জন্য অপেক্ষা করে দোয়া করলাম । আমার ছেলে কোল থেকে নামে না খালি কোলেই থাকতে চায়। ৩টায় অনেক বমি করল। আমি নার্সের কাছে রেখে তাড়াতাড়ি গোসল করে তাকে জড়িয়ে রাখলাম। হঠাৎ করে সে কেমন নিস্তজ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। আমি নামাজে দড়ালাম । আমি আমার জীবনে এমন করে কাঁদিনী। আল্লাহকে বল্লাম হে মাবূদ, তুমি আমার সব বিপদ তাড়িয়ে দিয়েছো। আমার বেবী হতো না , তুমি দিয়েছ। আমার মনের সব কষ্ট দূর করেছ। মুক্তি দিয়েছ ডিপেরেশান থেকে। তুমার হাজার নিয়ামত গোনে শেষ করতে পারব না। গাফেল ছিলাম আমাকে দ্বীনের পথ দেখিয়েছ। তবুও গুনাহ করি । ভূল হয় ইয়া মবূদ। আমি তো মানুষ । ভূল তো হবে । দয়া কর প্রভূ আমার বুকের ধনকে সুস্থ কর। ওযে কষ্ট সহ্য করতে পারতেছেনা। আমি দোটানায় পরেছি বড় ছেলেটা কী করছে ,কী খাচ্ছে জানি না। তুমি দোয়া কবূল কর। কাল সকালে আমাকে বাসায় পৌছে দাও। এভাবে দোয়া করলাম। নাক আর চোখের পানিতে আমার ওড়নার খানিকটা ভিজে গেল। নামাজ পড়ে ছেলের কাছে শুয়ে থাকলাম কেমন শান্তিতে ঘুম আসল। হঠাৎ ফজরের আজান শুনে ঘুম ভাঙ্গল । আমার ছেলে তখনও ঘুমাচ্ছে। আমি নামাজ পড়লাম। নার্স বল্লেন ছেলেকে একটু স্যালাইন দিতে আমি হাফ ফিডার খাওয়ালাম । শুনলাম আবার পায়খানা করতেছে ডায়পার খুলে দেখ পায়খানা খানিকটা শক্ত। পাতলা নয়। নার্স দেখে অবাক! নার্স ডায়পার টেস্ট করতে নিলেন। আমি মনে মনে শুকরিয়া জানাতে লাগলাম। আমি দোয়ার রহস্য আরও অনুধাবন করলাম । আমার শরীর কাঁপছিলো । তারপর আরও দুই বার করল । তবে যত সময় গেলো শক্ত হতে লাগল। ১০ টায় জাক্তার টেস্ট করে বল্লেন আমি ছেলেকে নিয়ে বাসায় যেতে পারি তবে ২ দিন দুধ দিব না খালি পানি আর স্যালাইন । আমার হাজবেন্ডকে কল করলাম । তিনিও অবাক সব শুনে। বাসায় আসতেই আমার বড় ছেলে খুশীতে আত্নহারা। আমি নামাজ পড়ে শুকরিয়া জানালাম । এভাবে আমি আল্লাহ মহব্বত ,দোয়ার রহস্য , দোয়ার শক্তি বুঝলাম।
ছোট বড় সব আমল করতে চেষ্টা করা শুরু করলাম। কাহফ সূরা আগে কঠিন লাগত। অলসতায় পড়তে পারতাম না । কিন্তু বর্তমানে প্রত্যেক শুক্রবার পড়ি। আমার মনে অন্যরকম অনুভূতি আসে । আমি জানি আমার রবের কথা মিথ্যা নয়। তিনি আমার এক জুম্মাহ থেকে অন্য জুম্মাহকে আলোকিত করে দিবেন সূরা কাহফ তিলাওয়াতের জন্য। সত্যি আলোকিত হয়েছে আমার জীবন। আমি ছোটবেলা কোরআন পড়া শিখেছি ।তবে পরবর্তীতে গাফেল হয়ে স্কুলের পড়ায় ব্যস্ত হয়ে তাজউইদে ভূল ধরেছিল। হঠাৎ কয়েকজন আপুর সাথে পরিচয় হয়। তারা গ্রূপে তাজউইদ শেখান। আমি তাদের গ্রূপে এড হয়ে তাওজউইজ সহকারে কোরআন পড়া শিখতেছি তখন আরো দুজনের সাথে পরিচয় হয় উনাদের গ্রূপেও পড়ে অনেক কিছু শিখি। আলহামদুলিল্লাহ এখন শুদ্ধ করে কোরআন পড়তে পারি।
এর পর আমার মনে হল কোনদিন যদি আমার হাতের কাছে কোরআন না থাকে তাহলে কী আমি কোরআন তিলাওয়াত করব না। আবার শুনলাম কোরআন হাফেজার মা বাবাকে হাশরের দিন নূরের মুকূট পড়াবেন আল্লাহ। আমিতো বাবামার জন্য কিছু করতে পারিনী । তাই এখন কোরআন হিফজ করতেছি। আলহামদুলিল্লাহ কিছু সূরা করেছি। জানিনা আমার হায়াতে তা সম্ভব হবে কী না। তবে সবার কাছে দোয়া চাই আমার স্বপ্ন যেন সত্যি হয়। বিশ্বাস করুন আমার এখনো অনেক সমস্যা আসে ।তবে আমি যখনি সমস্যায় পরি আমি নামাজে দাড়াই, সিজদায় মন খুলে বলি। মন থেকে দোয়া করি। দোয়ার পর নিজেই উপলব্ধি করি দোয়া কবূল হয়েছে কী না।
সব কিছু আমার রবের সঠিক পরিকল্পনা তিনি আমাকে তাঁর কাছে টেনে নিছেন।
আমি দোয়া করি আমার বাচ্চাদের যেন আমি সদকায় জারিয়া রূপে রেখে যেতে পারি দুনিয়ায়।
আমার সিজদারত অবস্থায় মৃত্যু হয়।তওবা করতে পারি ও তা যেন আমার রব কবূল করেন। মরার পর আমার নবীর কাছে যেন আমার ছোট্ট একটা ঘর হয়। আমি এখন সব কিছুর মধ্যে সৌন্দর্য্য উপলব্ধি করি। আমি বিশ্বাস করি আমার সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি যদি এতো সুন্দর হয় তাহলে তিনি না জানি কত্ত সুন্দর!
একএকটা দিন যায় আর আমি চিন্তা করি আমি আমার প্রভূর সাক্ষাতের দিনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। ইনশাআল্লাহ তিনি আমাকে জান্নাত দিবেন । বিনা হিসেবে দিবেন কেননা আমি তাঁর কাছে ভিক্ষা চাই জান্নাত। আর তিনি কাউকেই খালি হাতে ফেরাননা। খালি হাতে ফেরাতে লজ্জাপান।
যে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, কিছু চায়, তিনি তাকে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা লজ্জাশীল, দয়ালু। বান্দা তাঁর কাছে দুই হাত তুললে তিনি তাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’ (আবু দাউদ)।
সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য ।
জীবনের সুন্দর মুহূর্তগুলো ফ্রেমে বন্দী করতে ভালই লাগে। হুম একসময় আমিও করতাম। পোষ্ট করতাম। আলাদা আলাদা এলবাম করতাম। বিয়ের কতো ছবি ওয়াশ করেছিলাম। যত্ন করে তুলে রেখেছিলাম। অনেকদিন এভাবেই কাটিয়েছি।
কোনদিন কেনজানি মনে হল এলবাম হাইড করে রাখি। অনলি মি করে রাখলাম।এভাবে কাটলো আরও কিছু দিন।
ইসলামিক কোন এক বইয়ে ফটো তোলা আর ঘরে রাখার বিষয় সম্পর্কে পড়ছিলাম মনে হয় এক পৃষ্ঠা।তারপর ইউটিউবে কয়েকজনের লেকচার শুনে মনে একটা ভয় জাগ্রত হল।ফেসবুকের সব পিকচার ডিলিট করলাম। তবুও আত্নীয় স্বজনের ট্যাগকৃত কিছু রয়ে গেছিলো ।গত কয়েকদিন আগে তাও ডিলিট করছি।
তারপর চিন্তা করলাম ঘরেতো ওয়াশ করা পিকচার রয়ে গেছে। কী করব?ভাবলাম এমন একজায়গায় সরিয়ে রাখি যেন কেউ না পায়। রাখলামও সরিয়ে।মনে মনে চিন্তা করলাম এগুলি আমার বিয়ের ছবি । অনেক স্মৃতি ,থাক । ছেলেরা বড় হলে তাদের দিব আর বলব কাউকে যেন না দেখায় । ওরা যেন যত্ন করে রাখে।
দু রাত এরকম কেটে গেলো। কেমন একটা অশান্তি অনুভব করছিলাম। বলাযায় না যদি ছেলেদের পুরোপুরি বুদ্ধি হওয়ার আগে আমি মারা যাই। ওরাতো বুঝবে না । পিকচার শেয়ার করবে। আর কবরে আমি আজাব ভোগ করব।
অনেক চিন্তা ভাবনা করে নিজের সাথে নিজের কথা বলে অবশেষে সব গুলি নষ্ট করে দিছি।এবার খুব শান্তি লাগতেছে।
পাপ করেছিলাম ।ইনশাআল্লাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন।
খুব কষ্ট হচ্ছিল ছবিগুলো কুচি কুচি করতে। নানাভাইয়েরও কয়েকটা ছবি ছিলো । আমার পানচিনিতে আমার দাদীর পিকচার ছিলো। খুব কান্না আসছিলো।কিন্তু নাহ কী হবে এসব দিয়ে?দুদিনের দুনিয়া !একদিনতো দুনিয়াই থাকবে না। যে মাটির উপর চরে খাচ্ছি সে মাটিই আমায় গ্রাস করবে।ছবি দিয়ে কী হবে??
কারও কাছে আমার পিকচার থাকলে দয়া করে ডিলিট করে দিবেন।
আর আমাকে আমার পিকচার ট্যাগ করবেননা ।
আমাকে অনেকে পাগল বলতে পারেন সমস্যা নাই বলুন।
আমার সৃষ্টি কর্তার কথা মানতে হলে যদি নিজেকে পাগল বলে প্রমাণ করতে হয় তাতে আমি রাজি।এটা আমার হেদায়াতের পথ চলা আলহামদুলিল্লাহ❤️
🌟🌟🌟🌟🌟🌟🌟🌟🌟🌟🌟🌟🌟
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
দ্বীনে ফেরার ২১তম গ্রল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2454554144807955&id=100007601799490
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
...............................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ২৩
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আমার লাইফ স্টাইল জাহেলি ছিলো। ফ্যামিলি মডারেট ইসলাম পালন করে। সবাই মোটামুটি ভদ্র।তার মধ্যে আমিই ছিলাম উগ্র।যার কারণে প্রতিনিয়ত শুনতে হত আমার কারণে বাবা জাহান্নামে যাবে😥। এই কথা শোনে আমি হাসতাম আমি পাপ করলে আমি জাহান্নামে যাবো এইটাই। কিন্তু বাবা কেন!!কখনো আমাকে আংগুল দিয়ে দিয়ে দেখিয়ে দেয়নি যে বাবা দাইয়ুস হওয়ার কারণে জাহান্নামে যাবে।
কারণ রাসুল্লাহ সাঃ বলেছেন, "দাইউস কখনো জান্নাতে যাবেনা" (মুসনাদে আহমেদ) শুধু জাহান্নামের টিকেট টাই রিগুলার আমাকে দেওয়া হত।কিন্তু কখনো বলা হতো না কিভাবে জান্নাতে যাওয়া যায়। আমার মধ্যে ইসলামের ছিটেফোঁটা ইবাদত ছিলো কিন্তু সেটা কখনো তাকওয়ার কারণে নয়,বরং আশেপাশের পরিবেশ কে ফলো করে ফরমালিটি মেইনটেইন করা যাকে বলে আর কি।প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ভালো মনুষ্যত্ব থাকে যেটা জাগিয়ে তুলতে হয়।কিন্তু সেটা জাগানোর চেষ্টা না করে আমাকে জাহান্নামের টিকেট দিলেই আমার মন খারাপ হত কেনো আমাকে এমন বলে ভালো পথ টা ত দেখিয়ে ও দেয়না কেউ।আশে পাশে কিছু মানুষের কোরান তিলোয়াত শুনলে মনটা জুড়িয়ে যেতো কিন্তু ছোট বেলায় মক্তবে ও কখনো যাওয়া হয়নি তেমন একটা। সহিহ কোরান শিখতে চাইলেও সেই সুযোগ হয়ে উঠেনি কখনো।কারণ মাথার মধ্যে এইটাই সেট আপ হয়েছিলো যে কোরান তিলোয়াত ইমপরট্যান্ট নয় ইমপরট্যান্ট হলো ইংলিশ,ম্যাথ এ পারদর্শী হওয়া তাই শিশির ভেজা সকালে উঠে কোচিং এ যাওয়া।
পরিবেশ আমাকে তখন থেকে বানিয়েছিলো ক্যারিয়ার মুখী।
মাথায় কাপড় না দেওয়ার কারণে বকা শোনলে ও দেখতাম পাশের বড়জনেরা মাথায় কাপড় দিলেও তারা সতর নিয়ে জ্ঞ্যাত নন বলে গায়ের মাহরাম এর সামনে সতর ই খোলা রাখতো।তখন থেকে পর্দা মানে জানতাম পাশের মানুষের কথা থেকে বেঁচে যাওয়া।পরিবেশ আমাকে এইটাই শিখিয়েছিলো বলে পর্দা বলত্র মাথা ডেকে রাখা টা কে গুরুত্ব দেওয়া হত শুধু
সারাক্ষণ কটু কথায় শুনতে হতো কখনো কেউ বুঝিয়ে বলতো না কিছু।তাই আমিও থাকতাম খুব হতাশায়
হঠাৎ একদিন,,
আমার এক আংকেল(বাবার মামাতো ভাই)যিনি আমার সেইম এইজ এর।প্রিমিয়ার লীগ এর ক্রিকেটার ছিলেন।কিন্তু উনার মা খেলে টাকা ইনকাম হারাম বলে সেটা সাপোর্ট করতোনা।মা মারা যাওয়ার পর উনি সব ছেড়ে দিয়ে দ্বীনের পথে চলে আসেন।আর আমাকে মেয়ের মত আদর করতো বলে উনার কথা শোনতাম তাই একদিন আমাকে ডেকে বললো আমার পর্দা করাটা পারফেক্ট নয়।কিভাবে পর্দা করতে হবে ডিটেইলস বুঝিয়ে বল্লেন।আমি ত রুপকথার কাহিনী শোনি মত গভীর মনযোগ দিয়ে শোনছিলাম।উনাকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে হোস্টেলে ফেরার পথে বড় একটা উড়না গায়ের উপর মুড়িয়ে নিলাম।কারণ তখন আমার স্টকে পর্দা করার মত কোনো কাপড় ই ছিলো না বল্লেই চলে।সব ই ফ্যাশনিস্ট টাইপের ছিলো।আমার এই বড় উড়না ড্রেস এর সাথে যাচ্ছিলোনা বলে অনেকেই হাসছিলো। কিন্তু আমার সেদিন মনে অনেক প্রশান্তি লাগছিলো আর মনে হচ্ছিলো আমি ত মেয়ে সস্তা নয় এইভাবে আজ থেকে নিজেকে ঢেকে রাখবো ইনশাআল্লাহ।
সেদিন থেকে নামাজ আর পর্দা শুরু করি মন থেকে। ধীরে ধীরে আমার গেট আপ টা প্রাই খালার মত হয়ে যাওয়াতে আমাকে নিয়ে ফ্রেন্ড রা হাসতো।কিন্তু এইসব ইগনোর করতাম। কারো সাথে মিশতাম না কারণ তখন নিজে ওদের অনুসরণ করে আবার ভুল পথে যাবো এই ভয়টাই কাজ করতো। একদিন যখন কোরানের এই আয়াত টা পড়লাম,"হে নবী আপনি আপনার স্ত্রী, কন্যা,এবং মুমিন নারীদের বলে দিন তারা যেনো জিলবাবের কিদাংশ শরীরের উপরে ঝুলিয়ে দেয়"( সূরা আহজাব ৫৯)
সেদিন থেকে নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে মুড়িয়ে ফেললাম,ঠিক যেমনভাবে ডায়মন্ড অর্নামেন্ট প্যাকেটে মুড়িয়ে থাকে।নামাজ আর পর্দা কে এমন ভাবে নিয়েছিলাম নামাজের সময় যত গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকুক ইগনোর করতাম কারণ নামাজ টা নিজ রুমে সাচ্ছন্দ্য পড়ার মাঝে এক ভালো লাগা কাজ করতো।
তখন ও আমার গান,মুভির অভ্যাস ছিলো বাড়ি গেলাম আবার আংকেল টা আমার কাছে আবার আসলো।কেউ যখন আমার ভুল ধরিয়ে দিতে পারেনি উনি পারছিলেন বলে উনিই আপন হয়ে গিয়েছিলো খুব তাই উনার অপেক্ষায় থাকতাম।উনি এসে বললো গান,নাচ এইসব হারাম আল্লাহর কাছ থেকে মন কে দুরে নিয়ে যায়। উনি আমাকে উদাহারণ দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন পান খাওয়ার অভ্যাস ছাড়তে হলে আমলকি খেয়ে তার অভ্যাস দুর করতে হবে।এই বলে কিছু ইসলামিক লেকচার আর ইসলামিক গান দিলেন।সেদিন থেকে গান এর পরিবর্তে ইসলামিক গান,আর মুভির বদলে ইসলামিক লেকচার শোনতাম। এইভাবে একদিন গান,মুভির অভ্যাস টা পরিপূর্ণ ভাবে চলে গেলো আলহামদুলিল্লাহ।
এইদিকে রমজান মাস আসলো। ২০১৯ সালের রমজান। আমার জীবনে ভুলার মত নয় সেই রমজান। একসময় রমাজন মাস আসতো শপিং করার জন্য। প্রায়৩০ দিন ধরেই মার্কেটে ঘুরাঘুরি করার জন্য।আবার রোজা ও রাখতাম পাশের মানুষের কাছে লজ্জা পাবো এই ভয়ে।রোজা মাসে আমি খেয়ে খেয়ে দৌড়ালে লোকে কি বলবে এই ছাড়া আর কোনো ফিলিংস ছিলোনা।কিন্তু সেই রমজান ই আমাকে প্রথম বারের মত আনন্দ দিয়েছিলো এত, সেই আনন্দ আমার মন ই জানে কিভাবে ফিল করছিলাম আলহামদুলিল্লাহ। কারণ আমি একমাত্র তখন ই তাকওয়ার কারণে রোজা রাখতে শুরু করলাম।সেই রমজানেই আমি পরিপূর্ণ ভাবে আমার রবের প্রেমে মগ্ন হয়ে যায়।তখন ই বুঝলাম রমজান মাস আসে ইবাদতের জন্য।যখন জানতে পারলাম নবী সাঃ বলেছেন, "রমজান মাসে প্রত্যেক আমলের সওয়াব ১০ থেকে ২৭ গুন বাড়িয়ে দেওয়া হবে" সেই সওয়াবের লোভে সত্যিই বের হওয়া হয়নি।সেই ঈদ ই ছিলো প্রথম ঈদ আমি বের হওয়ার ভয়ে শপিং করিনি।
রমজানে মাসে ফ্রেন্ড রা ইফতার পার্টিতে ইনভাইট করলে আমি এটেন্ড না করায় খুব অপমান।যখন জানতে পারলো আমি ফরজ নামাজ আর পর্দার ক্ষতি হবে বলে সেই পার্টিতে যেতে আপত্তি জানাচ্ছি আমাকে নিয়ে উপহাস আর অপমানের পরিমাণ টা অনেক বাড়িয়ে দিলো।সেদিন থেকে জাহেল ফ্রেন্ড দের ক্ষণিকের জন্য বাদ ই দিয়ে দিলাম।
কিন্তু আমি হোস্টেলে আসলে খুব একা আমাকে বুঝে বা বুঝাবে এমন কাউকে পেতাম না অনলাইন বা অফলাইন কোথাও না।একা ত থাকা যায়না।আমি আবার ছোট কিছু প্রয়োজন হলেও আল্লাহর কাছে আবদার করতাম সেই সুবাধে আল্লাহ মিলিয়ে দিলেন অনলাইনে এক বোন চিটাগং এর (আমি যেখানে থাকি)।যেই আপু টা ও ক্রিকেটার +মডেলিং ছেড়ে দ্বীনের পথে এসেছেন।উনার একটা দ্বীনি সার্কেল ও ছিলো সেটার সাথে আমাকে এড করা হয়।এর পর থেকে নতুনভাবে উনাদের সাথে ফ্রেন্ড শিপ।ঈমানী সম্পর্ক। আল্লাহর জন্য ভালোবাসা পরস্পরের প্রতি। সবার সাথে দেখা কথা খুব এনজয় করতাম কারণ উনাদের সাথে আমার কথা,লাইফ স্টাইল যায়।
"যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাউকে ভালোবাসলো যে ঈমানকে পরিপূর্ণ করলো" (আবু দাউদ)
এর পর থেকেই আল্লাহর জন্য ভালোবেসে অনেক বোন পেয়ে গেলাম অনলাইনে।মনে হয় খুব কাছের কেউ।হারিয়ে যাওয়া আপন বোন।
তখন আমার অনার্স ফাইনাল রানিং তাই খুব বেশী কোরান হাদীস স্টাডি করার সময় হয়ে উঠতোনা। কিন্তু একবার সুরার বাংলা অনুবাদ পড়ে এতই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম সব বাদ দিয়ে এই স্টাডি তে সময় দেওয়া শুরু তখন থেকে।
এইভাবে নিজের সব শোধরানো ধীরে ধীরে যেদিন যেটা পড়তাম হাদিস সেটা মানার চেষ্টা করতাম৷
আমার অনার্স ফাইনাল যখন রানিং এক্সাম হল এ মুখ খোলার জন্য খুব প্রেসার দেওয়া হত।এমন কি একদিন প্রায় ৩০ মিনিট লিখতে দেওয়া হয়নি।স্যার রাগ করে খাতা ছুটে দিয়েছিলেন।কিন্তু রক্ষা করার মালিক ত আমার রব।আমি নিরবে আল্লাহ কে ডাকতাম কারণ ৪ ঘন্টা মুখ খোলে রাখা আমার পক্ষে সম্ভব ই ছিলোনা এই ফিতনার জুগে।সত্যিই অন্য এক টিচার আচমকা এসে বলতেন তুমি বসো খোলতে সমস্যা হচ্ছে বুঝি।এইভাবে আল্লাহ রক্ষা করতেন আলহামদুলিল্লাহ। খুব ভালো রেজাল্ট করে অনার্স শেষ করলাম আলহামদুলিল্লাহ।
এর মধ্যে আমি টিউশন করতাম ছেলে স্টুডেন্ট (দশম), ভাবলাম সে ত গায়ের মাহরাম। আর অন্য টিউশন যেখানে পর্দা মানতে সমস্যা হতো সব ছেড়ে দিলাম সাচ্ছন্দে।
তখন আবার বাড়ি গেলাম সেই আংকেল আবার এসে আমার কাছে জিজ্ঞেস করে ফ্রেন্ড দের মাঝে দ্বীনের দাওয়াত দিই কিনা।আমি অনেক কষ্ট নিয়ে বুঝালাম আমাকে তারা কত অপমান করে সেটা।আংকেল আমাকে বুঝালো রাসুল্লাহ সাঃ আর সাহাবীগণ কত নির্যাতিত হয়েছেন তবু্ও কি তারা দাওয়াত বন্ধ করে দিয়েছেন। হুম মাথায় আসলো যারা খারাপ আচরণ করে তাদের কাছে টেনে নেওয়ায় উত্তম এইটাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য।তখন কাছের ফ্রেন্ড দের মাঝে দাওয়াতের কাজ করা শুরু করলাম।এর মধ্যে আমার ল্যাকিংস যেটা ছিলো কোরান শিখা তার জন্য অনেক বেশী খুজতেছিলাম একজন মহিলা আরবী শিক্ষিকা।সত্যিই পেয়ে গেলাম।এক ফ্রেন্ড কে বুঝিয়ে ওকে নিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করলাম যাত্রা সহিহ পদ্ধতিতে কোরান শিখার।আলহামদুলিল্লাহ অনেক টাই সফল।এইদিকে ফ্রেন্ড টা ও ইসলাম অনেক টা বুঝতে সক্ষম হই।
আবার বাড়ি গেলাম।আংকেল আসলেন আর বল্লেন আমার ক্যারিয়ার ছাড়তে হবে। মেয়েদের জন্য ক্যারিয়ার বলতে কিছুই নেই।তখন রেগে গিয়ে ওয়াজ করে দিলাম উনাকে,"আমি সেল্ফ রিয়েলেন্ট হতে চাই,জামাইর উপর ডিপেনডেন্ট হতে চাইনা, ছেলেরা মেয়েদের ডমিনেট করে হ্যান ত্যান"
বেচারা আংকেল মন খারাপ করে চলে গেলেন।
এইবার সিদ্ধান্ত আমি জব করবো তা ও পর্দা মেইনটেইন করে । বাবার সপ্ন পুরণ ও ত দরকার।তাই ৪১তম বি সি এস জন্য পড়া শুরু করলাম। কিন্তু কোচিং এ গেলে কখনো ছেলেরা জায়গা না পেয়ে পাশে বসলে আমি সহ্য করতে না পেরে কান্না আসতো।হোস্টেলে পড়ার সুবিধা ছিলোনা বলে লাইব্রেরী তে কয়দিন পড়তে গিয়ে দেখি অবশ্যই চারপাশে গায়ের মাহরাম।আফসোস আমি এই পরিবেশ চাচ্ছিনা।একদিন সাহস নিয়ে স্যার কে বল্লাম কোচিং এ কি মেয়েদের জন্য আলাদা লাইব্রেরি করা যায়না??
স্যার সেটা সম্ভব নয় বলে বুঝিয়ে দিলেন।আমি বুঝেই গেলাম এই কোচিং আমার জন্য নয় সেদিন থেকে সেটা বাদ।
এর মধ্যে কয়েকটি জব এর পরীক্ষা ও দিয়েছি মুখ খোলার জন্য খুব প্রেসার দেয়নি।লাস্টে ৪১ তম ফর্ম ফিল আপ করতে গিয়ে দেখি কান খোলা ছবি লাগবে!!!যাক বাধ্য হয়ে করলাম। কিন্তু যা শিউর হলাম এই অবস্তায় এক্সাম হল এ থাকা লাগবে।
বুঝতেই বাকি রইলো না জব এক্সাম আমার জন্য আসেনি।
এর মধ্যে বাড়ি গিয়ে আপুর কর্মস্থলে গিয়েছিলাম উনার সাথে ঘুরতে।লান্স এর সময় চলে আসলো তখন খেতে বসলো সবাই। আমি ত কিভাবে খাবো সেটা নিয়ে চিন্তিত। আপু সাজেস্ক করলো একদিন মুখ খোললে সমস্যা নাই।কিন্তু আমার শরীর কেঁপে উঠলো এইটা কেমনে সম্ভব!!যাইহোক আমি অন্য জায়গায় গিয়ে কেউ না দেখে মত খেয়ে নিলাম।কিন্তু নামাজ!!!আমি ত নামাজের সময়ে ঘর থেকে বের হতাম না এই গুরুত্বপূর্ণ আর তৃপ্তিময় কাজ কি বাইরে করে আনন্দ পাওয়া যায়!!কিন্তু সেদিন কষ্ট করে বেন্স এ কেমন করে সালাত আদায় করা লাগলো।
সেইদিন টা আমাকে বুঝিয়ে দিলো একজন মুমিন নারীর জন্য জব আসেনি।কিন্তু হালাল একটা রিজিক লাগবে সেটা নিয়ে টেনিশন কাজ করতো।
শহরে চলে আসা পর্দার উপকরণ গুলি অনলাইনে কিনতাম মাঝে মধ্যে।একটা বড় নেকাব খুঁজছিলাম যেটা ফুল বড়ি কাভার করে কিন্তু কত দাম স্টুডেন্ট বলে সাহস হয়ে উঠেনি নেওয়ার। মার্কেট থেকে কাপড় নিয়ে নিজে বানিয়ে দেখলাম অল্প খরচ পড়লো। অবাক হলাম এতো লাভ করার কি অল্প লাভ করে ছেড়ে দিলেই ত কিছু বোন সহজে পর্দা ও করতে পারবে। এইটা ভেবে অনলাইনে পেইজ খুলে সেল করা শুরু করলাম পর্দার উপকরণ গুলি কোয়ালিটিফুল কিন্তু সুলভমুল্যে ।আলহামদুলিল্লাহ পেইজে ভালো রিভিও আসতেছে প্রতিনিয়ত।এইদিকে মিরাক্কেলের মত আল্লাহ আমার লাইফে হালাক রিজিকের ও ব্যাবস্থা করে দিলেন আলহামদুলিল্লাহ।
এর পর ও ভয়ে কখন কোন ফিতনায় জড়িয়ে যায়।জানি জীবনে বড় পরীক্ষা থেকেই গেলো যেটা এখনো ফ্যামিলি জানেনা আমি জব এর চিন্তা ছেড়েছি।জানলে হইতো ঝড় তুফান আসবে।ভয় কিসের আমার রব ত আছেন।
তখন মনে পড়ে যায়,"ভয় পেয়ো না,আমি তোমাদের সাথেই আছি আমি সব শুনি এবং দেখি"(সুরা ত হা ৪৬)
প্রত্যেক প্র্যাক্টিসিং মুসলিম মুসলিমাহ দের উপর এই পরীক্ষা থাকেই।যে আল্লহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লহই যথেষ্ট (আত তালাক ৩)
একমাত্র আপনার রব ই আপনার রক্ষাকারী।
নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের ভালোবাসেন(সূরা আল ইমরান ৭৬)
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
দ্বীনে ফেরার ২২তম গল্পের লিংক
(https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2498997393696963&id=100007601799490)
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
.......................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ২৪
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবুহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
"আমি জীবনে যে ধাক্কা খেয়ে আমার রবকে চিনেছি"
লিখাটা বড় করে ফেলার জন্য দুঃখিত।
প্রায় ১ বছর আগের কথা যখন ডেঙ্গু জ্বর মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছিলো মানুষ মারা যাচ্ছিলো।যার ই প্লেটলেটস এক লাখ এর নিচে চলে যেতো হাজারে নেমে যেতো সেই মারা যেতো।তো ওইসময় আমাদের ঘরে ফার্স্টে আমার আম্মুর হয়।আম্মুর আরও অনেক সমস্যা শরীর এ।আমাদের আর্থিক অবস্থা তখন এত খারাপ ছিলো যে আম্মুকে হস্পিটালাইজড করা সম্ভব হচ্ছিলো না।পরে বাবা আর আমি দুইজন এ মিলে আমাদের পরিচিত এক ডক্টর কাকু আছেন যিনি আমার আব্বুকে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করেন তার কাছে যাই তার একটা ছোটখাটো ক্লিনিক আছে।২-১ জন রোগী শুইয়ে চিকিৎসা করার মতো ২ টা বেড আছে কিন্তু ভর্তি রাখেন না।গিয়ে আম্মুকে দেখাই তিনি টেস্ট করে দেখেন ইমিডিয়েট আম্মুকে স্যালাইন না দিলে আম্মু আর বাঁচবেনা আম্মুর প্লেইটলেটস একেবারে কমে গিয়েছিলো।পরে আম্মুকে ইমিডিয়েট স্যালাইন দেয় সেই স্যালাইন উঁচু করে ধরে ধরে ৩০ টাকার রাস্তা হেঁটে হেঁটে বাসায় এসেছি টাকা ছিলো না আহারে কি দিন ছিলো সেটা!!
হাত ভেঙে আসতো উঁচু করে ধরে রাখতে রাখতে নিচু করলেই আম্মুর হাত দিয়ে ব্লাড উঠে যেতো।আম্মুকে তো কাকুর ওখানে রাখা সম্ভব ছিলো না আর হস্পিটালাইজড করাও সম্ভব ছিলো না।তারপর আম্মুকে কি করে বাঁচাবো বুঝতেসিলাম না এক দিনে ৩ টা ইঞ্জেকশন লাগতো ২ দিন পর পর ব্লাড টেস্ট।আর তাকে প্রতিদিন ৩ বেলা কাকুর কাছে নেয়াও সম্ভব ছিলো না।পরে রিকুয়েষ্ট করলাম আমি আর আব্বু যে দয়া করে আপনি একটু আমাদের বাসায় গিয়ে ২ বেলা ইঞ্জেকশন টা দিয়ে দিবেন আমি না হয় আম্মুকে ১ বেলা কষ্ট করে নিয়ে আসবো আপনার কাছে পরে উনি রাজি হয়। উনি খুব ভালো আল্লাহ উনাকে নেক হায়াত দান করেন যেনো। উনি আমাকে অনেক মেন্টালি সাপোর্ট দিয়েছেন।
যাইহোক পরে স্যালাইন ধরে ধরে প্রতিদিন আম্মুকে নিয়ে যেতাম কাকুর ক্লিনিক এ কেননা স্যালাইন খুলতে গেলে আম্মুর ব্লাড উঠে যেতো তাই হাতে সুই ও স্যালাইন সহই নিয়ে যেতাম।সে কি যে কষ্ট আমার!!
আব্বু তো সারাদিন পেট এর দায়ে দোকানে চলে যেতেন।
মা আমাকে চুলার কাছে তেমন যেতে দেয়না খুব আগলে রাখে সেই আমি রান্না বান্না মায়ের সেবাসহ কেমন যেনো অসহায় হয়ে পড়েছিলাম তারউপর চারদিকে সবাই মারা যাচ্ছিলো।
আমি রান্না করতে করতেও এসে দেখে যেতাম মায়ের প্রাণ টা আছে তো!!!
রিলেটিভস রা কেউ আম্মুকে দেখতেও আসছিলো না তাদের হবে এমন টা ভেবে হয়তো।
আমি যেনো সারা দুনিয়ায় একা হয়ে গেছিলাম।পরে ৫-৬ দিন যেতে আম্মু একটু সুস্থের দিকে কিন্তু হাতে ক্যানেলা লাগানো টাইমলি ইঞ্জেকশন দিতে নিয়ে যেতে হয়।
এর মধ্যেই একদিন রাতে আব্বুর বেহাল দশা ১০৪ জ্বর।আম্মু কিন্তু তখন ও বেডে।
সকালে আব্বুকে নিয়ে গেলাম কাকুর কাছে টেস্ট করালাম ধরা খেলো আব্বুর ডেঙ্গু+টাইফয়েড জ্বর।
আব্বুর অবস্থা আম্মুর চেয়ে বেশি খারাপ হয়ে গেলো।কাকু বললেন আব্বুকে ইমিডিয়েট কিছু একটা করতে হবে সাথে সাথে স্যালাইন দিলো নিয়ে এলাম বাসায়।আব্বু আম্মু দুজনের হাতেই ক্যানেলা।আমি কিছুক্ষন আব্বুকে ধরে খাওয়াই কিছুক্ষন আম্মুকে খাওয়ানোর চেষ্টা করি কিছুক্ষন নামাজ পড়ে হাউমাউ করে কেঁদে আল্লাহ কে বলি আমার আব্বু আম্মুকে ভিক্ষা দেন তারা ছাড়া আমার কেউ নেই আমাকে আর আমার ছোট ভাইকে এতিম কইরেন না।
আব্বু আম্মু তারাও আমার সাথে ভালো ব্যবহার করতেননা অসুখ ছিলো যে মেজাজ বিগড়ে থাকতো,খেতেচেতোনা,দুজনেরই হুশ থাকতোনা,ব্যথায় কেঁদেই ফেলতেন।আহা আমি নিজেকে নিজেই বলি তারা তো অসুস্থ করুক খারাপ বিহেভ তারা বেঁচে থাকুক।
মাঝে আমার ফুফাতো বোন এসে ২-৩ দিন থেকে গেছে তার কথা আর কি বলবো তার ও তো সংসার আছে।
আব্বু আম্মু অসুস্থ থাকাকালীন আমাকে এর মধ্যে কেউ একদিন এক বেলা রান্না করেও দিয়ে যায়নি রিলেটিভসরা,আর কি খাচ্ছি না খাচ্ছি খোজ ও নেয়নি দেখতে আসবে তো দূর।আমাদের বাসার সেকেন্ড ফ্লোর এর আন্টি এসে আমাকে এমন অসহায় দেখে কেঁদে ফেলে ১০০০৳ দিয়ে বলেছে তুমি উনাদের ভালো কিছু খাইয়ে সুস্থ করে তুলো।
( আপন এর চেয়ে পর ভালো) ১০ দিন হয়ে গেছিলো তারা দুজনেই বেড এ আব্বুর অবস্থা ভালো না আম্মু এখন ও ব্যথায় উঠতেই পারেনা।
এরমধ্যেই একদিন আমার কি যেন হয়েছে আমি বাম চোখ খুলতেও পারিনা,চোখ বন্ধ ও করতে পারিনা খালি চোখে কি একটা কিসের গুতো লাগে আর চোখ থেকে পানি পরে চোখের ব্যথায় মাথা ব্যথা করে।
এই অবস্থায় ই তাদের সেবা করেছি আর নিজে কাকুর থেকে ড্রপ নিয়ে ইউস করেছি কিন্তু চোখ কিছুতেই ভালো হয়না।কাকু চোখ দেখে বললেন চোখে এমন কিছু ঢুকেছে যেটা চোখের কর্নিয়ায় ভালো করে বেঁধে গেছে সেটার খোচায় চোখ ভিতরে কেটে গেছে চক্ষু হাসপাতাল গিয়ে অপারেশন করতে হবে।সেদিন ব্যথায় রাতে জ্বর চলে আসে আমার।
আচ্ছা আমার তো আব্বু আম্মু বিছানায় আমাকে এখন কে নিয়ে যাবে হস্পিটাল এ?কেউ নেই তো যাকে বলি সেই ই বিজি কোন না কোন সমস্যা সবার।
যাদের জন্য আমার জান টাও দিতে প্রস্তুত আমি তারাও বিজি ছিলো সেদিন।পরে আম্মু বললেন আমার স্যালাইন শেষ হোক আমি ই নিয়ে যাবো।
লিমনকে (আমার ১৪ বছরের ছোট ভাই) রেখে গেলাম আব্বুর কাছে।অসুস্থ মাকে নিয়েই গেলাম নিজের চোখ বাঁচাতে।
হস্পিটাল এর সবাই সেদিন ভাবছিলেন আমার মাকে মেবি ভর্তি করতে নিয়ে গেছি কারণ ওইযে হাতে সুই এর ক্যানেলা তারউপর শরীর দুর্বল তাই হেলান দিয়ে বসে ছিলেন আমার কাঁধে।
পরে দীর্ঘ সময় পর ডক্টর আসলেন মেশিন দিয়ে দেখলেন আমার চোখে ইট এর কণা ঢুকেছে।সেটা বের করে আনতে অপারেশন লাগবে আর ঘা শুকাতে ও সময় লাগবে মেডিসিন নিতে হবে।জীবনে কোনদিন অপারেশন করা লাগবে তাও আবার চোখের সেটা ভাবিনি কারণ আমি এগুলা অনেক ভয় পাই।আমাকে যখন অপারেশন থিয়েটার এ নিয়ে যায় এবং বেডে শুইয়ে হাত উপরে করে চোখ এর পাপড়ি গুলো আটকে দিয়েছে মেশিন দিয়ে, আমার রব জানে তখন আমার মনের অবস্থা কেমন ছিলো,জীবনে এমন ভয় পাইনি। আমি মাকে নিয়েই ঢুকি নাহলে আমি অপারেশন করাবোনা বলি।অবশেষে অপারেশন হলো আমার জননী তখন আমার হাত টা শক্ত করে ধরে ছিলেন।আর ভয় করেনি।
কিন্তু অপারেশন এর পর প্রায় ২ ঘন্টা আমি চোখে দেখতে পাইনি।সেদিন বুঝেছিলাম চোখ আল্লাহ সুবহানাওয়াতা'লার দেয়া কতো বড় নেয়ামত আর এই চোখ দিয়েই আমরা কতোই
সেদিন বুঝেছিলাম চোখ আল্লাহ সুবহানাওয়াতা'লার দেয়া কতো বড় নেয়ামত আর এই চোখ দিয়েই আমরা কতোইনা রবের অবাধ্যতায় লিপ্ত হই।
আল্লাহুম্মাগফিরলি!!!
ডক্টর বললেন চোখে মেডিসিন দেয়ায় এমন হয়েছে ভয় পাওয়ার কিছু নেই আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে বাসায় গিয়ে ৩ বেলা ড্রপ ইউস করেন মেডিসিন গুলো খান আর চশমা টা ইউস করেন।তারপর মা আর আমি বাসায় আসলাম।
মা আমাকে ড্রপ দিয়ে দিতো আমি মাকে জুস করে খাওয়াতাম,মা আমাকে নিজের কোলে শুইয়ে বুঝ দিতেন,বলতেন____
"মারে যার কেউ নেই তার আল্লাহ আছেন ভয় পাস কেন আল্লাহ হায়াত থাকতে কাউকে নিবে না এইটা আমদের ঈমান এর পরীক্ষা দেখোসনা এমন বিপদের সময় এ কেউ পাশে নাই সবাই বিজি এর মানে কি জানস আল্লাহ বুঝাইতে চায় দেখো যখন কেউ পাশে থাকে না তখন আমি ঠিক ই থাকি।"
আমার চোখ ভালো হয়ে গেলো আলহামদুলিল্লাহ।কিন্তু রাতে আবার জ্বর আসলো টেস্ট করালাম ডেঙ্গু পজেটিভ তবে একটা স্যালাইন দিলেই নাকি ভালো হয়ে যাবো অতদূর যায়নি আব্বু আম্মুর মতো। পরে আমি আর গায়ে স্যালাইন নেইনি এমনিতে ইঞ্জেকশন নিয়েছি কারণ আব্বুকে তো দেখতে হবে।এদিকে আব্বুকেও সেবা করেছি মা আর আমি মিলে ততদিনে মা অনেকটা সুস্থ। আমিও মেডিসিন নিয়ে ভালো হলাম। তারপর মা মেয়ে মিলে আব্বুকে যত্ন করলাম।মহান রাব্বুল আলামীন আমার আব্বুকেও সুস্থ করে দিলেন তবে আব্বুর একটা হাতে একটু শক্তি কমে গেছে টাইফয়েড এর কারনে তবুও আলহামদুলিল্লাহ যে আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
অবশেষে আমার ডাক শুনে শিফাদানকারী আমার আব্বুকেও সুস্থ করে দিলেন আলহামদুলিল্লাহ।
এ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম বিপদের দিনে যখন কেউ পাশে থাকে না তখন আরশের মালিক ঠিক ই পাশে থাকেন।
সেদিন থেকেই শপথ নিয়েছি যতো ধরনের হারাম এর মধ্যে,গুনাহ এর মধ্যে লিপ্ত আছি সব ছেড়ে দিয়ে আমি তার হয়ে যাবো যিনি আমাকে এই বিপদে দেখেছেন,যিনি আমার এই বিপদেও আমার রিযিক বন্ধ করেননাই।
মিথ্যা বলবোনা পরে অবশ্য আমার ২-১ জন আত্বীয় স্বজন এসেছিলেন দেখতে তবে সেটা আমার আল্লাহকে চেনার পরে আগে না।
সেদিন থেকে আল্লাহকে বলেছি আমি হয়ে উঠবো গাফেল এক বান্দা থেকে আমাতুল্লাহ।তোমার সন্তুষ্টির জন্য যা যা করা লাগে আমি করবো।
পরিপূর্ণ পর্দা করা শুরু করেছি
(আগেও হিজাব পড়তাম তবে সেটা পর্দার জন্য না স্টাইল এর জন্য আরকি)
মাহরাম গায়রে মাহরাম মেইনটেইন করে চলা শুরু করেছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা শুরু করেছি।
(আগেও করতাম সেটা ২-১ ওয়াক্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতো)
গান-বাজনা -তামিল মুভি বাংলা নাটক সব ফোন/ল্যাপটপ থেকে ডিলিট দিয়ে সে জায়গায় বসিয়ে নিয়েছি নিজের মনের মতো ক্বারীদের তিলাওয়াত,এ্যারাবিক নাশিদ,বাসিরা,রেইন ড্রপস,আলোর পথ (আরও আছে নাম মনে নেই) চ্যানেল এর মতো কিছু ইউটিউব চ্যানেল কে মনে স্থান দিয়ে দিয়েছি নিয়মিত এদের ভিডিও ফলো করা শুরু করেছি।প্রিয় শায়খদের লেকচার শুনে শুনে নিজের বদঅভ্যাসগুলো বদলেছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করা শুরু করলাম অর্থ বুঝে শুধু মাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট ও তারঁ সাথে কথা বলার এক মাধ্যম হিশেবে।
(আগেও তিলাওয়াত করতাম তবে সেটা ছিলো খতম দিয়ে সবাইকে বলে বেড়ানোর জন্য)
কুরআন এর তাফসীর পড়ি।
বুক সেল্ফ টা হাদীস এর বই,প্রিয় লেখক আরিফ আজাদ সহ আরও কিছু লেখকের বই দিয়ে সাজালাম।
দ্বীনের পথে আসার পর সব ফ্রেন্ড ট্রেন্ড হাওয়ায় উড়ে গেছে। যদিও আমার তেমন কোন আত্মার সম্পর্কের ফ্রেন্ড ছিলোনা।মানে সুসময়ের বন্ধুরা আরকি!তারা নাই সব চলে গেছে আমার সাথে কথায় বনেনা কি করবে?তাতে কি আল্লাহ কি আমাকে উত্তম কাউকে দেননি?
আমি পেয়েছি আমার অনেকগুলো দ্বীনি বোন যারা আমায় সর্বদা সাপোর্ট দেয় আমার মন খারাপ হলে যাদের ঘুম হয়না।
ফ্রেন্ড চলে গেছে আগে কষ্ট পেতাম এখন একটা আয়াত পড়লেই শান্তি লাগে,
হাশরের ময়দানে মানুষ যখন আফসোস
করে বলবে,
"হায় আফসোস!!আমি যদি তাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম!"
তারপর বাবা দাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন মসজিদের পথ ধরেছিলেন সেদিন এর পর থেকে,ভাই কুরআন পড়ে নামাজ পড়ে এখন নিয়মিত,মা আগে থেকেই পরহেজগার মানুষ এখন পর্দাও করে আলহামদুলিল্লাহ।
আমি এখন পড়াশুনার পাশাপাশি (মেয়েদের ড্রেস/গয়ণা) এসব নিয়ে বিজনেস করি,আব্বুর ব্যবসাও মোটামুটি আলহামদুলিল্লাহ ভালোই চলে আমাদের অবস্থাও অনেকটাই ভালো হয়ে গেছে আগের চেয়ে।আল্লাহ সুবহানাওয়া তা'আলার দয়া,রহমত ও অশেষ নিয়ামত এর সাগরে ডুবে আছি।
আমরা এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
'বেলা ফুরাবার আগে' বই তে পড়েছি,
"আল্লাহর দিকে ফিরে আসার জন্য খুব জমকালো আয়োজনের দরকার হয় না। কেবল আন্তরিক তাওবা আর চোখের পানিই তো!"
নিজের জীবনের সেই কঠিনক্ষনে আমি যা উপলব্ধি করেছিলাম তা
'বেলা ফুরাবার আগে' বইটি পড়ে আরও একবার মনে পড়ে গেলো।পড়তে পড়তে মনে হয়েছে যেনো লেখক আমার জন্যই এই লাইনগুলো লিখেছেন।
এমন কঠিনতর বিপদে আশেপাশে কাউকে পাচ্ছেন না।এমনকি অন্ধকারে আপন ছায়াটাও মিলিয়ে যায়।আপনার এতদিনের সুহৃদ,প্রিয় বন্ধু,প্রিয় স্বজনদের কেউই এই দুর্দিনে আপনার পাশে নেই। নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে,অকূল দরিয়ার একটি ডুবুডুবু নৌকার আপনি আপনি একাই যাত্রী। এই নৌকা যেকোনো মুহূর্তেই তলিয়ে যাবে।এমন সময়ে আপনি যখন আশাহত হয়ে রবের কাছে ফরিয়াদ করে বলেন,
'মাবুদ!আজকে আমাকে সাহায্য করার মতন কেউ নেই'।তখন আপনার রব বলেন______
"মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত্ব"
(সূরা-রুমঃ৪৭)
প্রিয়জনেরা বিচ্ছেদ ঘটিয়ে দূরে চলে গেছে।জীবন নামের চোরাবালির সাথে আর পেরে উঠছেন না কোনভাবেই।খুব অসহায়বোধ করছেন!
তখন যদি মুখ ফুটে বলেন,
'আল্লাহ আমার পাশে আজ কেউই আর অবশিষ্ট নেই'
তখন আপনার ডাক শুনে আল্লাহ বলেন_____
"ভয় পেয়ো না!আমি তোমাদের সাথেই আছি!আমি সব শুনি এবং দেখি!"
(সূরা-তহাঃ৪৬)
যে পথে বেলা ফুরাবার আগে একবার চলেই এসেছি কবরে যাওয়ার আগ পর্যন্ত যেনো থাকতে পারি দোয়ার দরখাস্ত রইলো সবার কাছে।
ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য যাজাকুমুল্লাহু খাইরান।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোন)
দ্বীনে ফেরার ২৩ তম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2513025545627481&id=100007601799490
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#শামছুন্নাহার রুমি
......................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ২৫
এবারের গল্প টা কোনো বোনের আপন রবের দিকে ফেরার গল্প নয়।গায়ে কাঁটা দেওয়া,চোখ ঝাপসা হয়ে আসা গল্পটা এক বোনের শ্রদ্ধেয় পিতার হিন্দু ধর্ম ছেড়ে ইসলামে প্রবেশের গল্প।
আমি পুরো লেখাটা এক নাগাড়ে পড়েছি,পড়তে পড়তে হেঁচকি দিয়ে কেঁদেছি।পুরো টুকু পড়ুন,কাঁদুন আপনিও!
ও আমার রব,তুমি কতই না মেহেরবান।যে তোমার দিকে ফিরতে চেয়েছে আর সে তোমার গায়েবী সাহায্য পাবে না তা কি করে হয়?মুসলিম হয়েও এখনো যারা রবের দিকে ফিরতে পারোনি তবে ফিরবে আর কবে?
সময় যে বয়ে চলে যায়!
(বোনটার পাঠানো লেখা হুবুহু তুলে দেওয়া হয়েছে।লেখাটা নয়াদিগন্ত পত্রিকায় ও ছাপা হয়েছিল।)
-----------------------------------------
দুনিয়ার মোহ যতোই শক্তিশালি হোক না কেন, আল্লাহকে পাওয়ার বাসনার কাছে জীবনের সকল বাধা ক্ষীণ ৷ সৃষ্টিকর্তার সান্যিধ্যের খোজে কিছু হৃদয় গলতে চায়,জ্বলতে চায়,কারণ এ অস্থিরতা ও ব্যাকুলতায় আছে তৃপ্তি পরিতৃপ্তি ৷
প্রত্যেক জাহেলিয়া কর্মে রয়েছে ঘনঘটা আধাঁর,যাদের চোখে পর্দা পড়েগেছে তারা সে আঁধার দেখতে পায় না,আধাঁরকে যে আলো ভেবে গোটা জীবন কাটিয়ে দেয় তার মতো হতোভাগ্য আর কে আছে? কিছু পবিত্র হৃদয় অন্ধকারে থেকেও আলোক রশ্মি হাতড়ে বেড়ায়,তারা তাদের জীবনের তৃপ্তি তালাশ করে পিপাসার্ত পথিকের মতোন,ঠিক তখনি অন্ধকার থেকে বের হবার লড়াই চলে সে সকল হৃদয় সমূহে,এরপর সে হৃদয় নূরের পথের অপেক্ষায় থাকে,যখন রবের ডাক আসে তখন সে হৃদয় ছুটে চলে,ছুটে চলে পরম শান্তি ও প্রশান্তির খোজে ৷
হিন্দু সমাজে ব্রাহ্মণ বংশের মর্যাদা শীর্ষে, ব্রাহ্মণরা চাইলে যে কাউকে একঘরে করে দিতে পারে,তাদের সামনে অন্য তিন জাতের (ক্ষত্রিয়,বৈস্য,সূদ্র) লোকেরা মাথা নিচু করে রাখতে বাধ্য, হিন্দু সমাজের সকল সুযোগ-সুবিধা এই ব্রাহ্মণদেরই যেন প্রাপ্য ৷ সামাজিক বৈষম্য রক্ষায় ব্রাহ্ম্য সমাজ দৃঢ় প্রত্যয়,যাই হোক না কেন নিজেদের মান মর্যাদার কাছে সকল কিছু তুচ্ছ ৷
কঠোরতায় পরিপূর্ণ এ ব্রাহ্মণ বংশের সন্তান
জন্ম থেকেই যে মানুষটি শিরক-কুফরে লালিত হয়েছে, যার শৈশব-কৈশোর এবং যৌবন কেটেছে নানান পূজা-অর্চনায়,তার প্রত্যাবর্তন যে কতো কঠিন তা চিন্তা করলে যে কারোরই বোধগম্য হবে ৷
ব্রাহ্মণ পরিবারের মানুষজন সব কিছুতেই একরোখা ও অতিধর্মপ্রাণ ৷ এমনি এক কঠিন মানুষ ব্যারিস্টার নগেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী ৷ ব্যারিস্টার নগেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী ও কুসুম কুমারী দেবীর ছয় সন্তান, এ ছয় সন্তানের মধ্যে স্বপন কুমার তৃতীয় ৷ বাবা-মায়ের ইচ্ছে স্বপন কুমার পন্ডিত হবে এবং ব্রাহ্মণ বংশের মর্যাদা রক্ষায় ভূমিকা রাখবে ৷ এ বিবেচনায় ৭ বছরের ছোট্ট স্বপন কুমারকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলিকাতায় আত্মীয়র বাড়ি ৷
জন্ম ভূমি ছেড়ে বিশাল এক স্বপ্নই স্বপন কুমারের এখানে আসার কারণ ৷ মায়ের জন্য মানষিক অস্থিরতা তার স্বপ্ন পূরণে পরিশ্রমের পিছনে জাদুর মতো কাজ করলো যেন ৷ পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হলো আরও বেশি ৷ পর্যায়ক্রমে মাধ্যমিক এরপর উচ্চমাধ্যমিক শেষ করতঃ সংস্কৃত ভাষার উপর কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেন ৷
এরপর সেই লক্ষে পৌছাবার জন্য প্রস্তুতি স্বরুপ ধর্ম বিষয়ক প্রতিষ্ঠান চব্বিশ পরগোণা জেলার অন্তর্গত খরদহ অবস্থিত সাংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় (টোল) ভর্তি হতে হয়,এখানে বেদ এর পান্ডিত্ব অর্জনে কেটে যায় কয়েক বছর ৷ স্বপন কুমার এর শিক্ষক ছিলেন তৎকালিন ভারতের ৫০লক্ষ হিন্দুদের দেবতা এবং খরদহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চেন্সেলর ভগবান শিবশক্তি ৷
বলা বাহুল্য,ভগবান শিব শক্তি মহান রবের ইচ্ছায় স্ব-পরিবারে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন পরবর্তীতে যার নাম হয় ডক্টর ইসলামুল হক্ব ৷
সদ্য পন্ডিত স্বপন কুমার; বেদের গবেষনায় তার মন-মস্তিষ্ক একাকার যেন ৷ হিন্দু ধর্মগ্রন্থ চারি বেদ এর অন্যতম অথর্ব বেদ এর একাবিংশ নম্বর শলোকটি ( যাহা গুরুমন্ত্র হিসেবে প্রযোজ্য) তার হৃদয়ে সৃষ্টি করেছে সবুজ ঘাসে শিশির ছোয়ার এক আবরণী রুপরেখা ৷ যথাক্রমে শলোক____________
"লা ইলাহাং হরতিঃ পাপং,ইল্লোঃ ইলাহাং পরম্ পদং,জন্ম বৈকুন্ঠ পরঃ,তপঃ ইনু,তাতং,আদ্য অক্ষরং "ম" অন্তঃ অক্ষরং "দ" নরত্তোমম নরাশংস জপি নামো মুহাম্মাদাং ,মরুর স্থলং বাসিনিং" এ অর্থ সর্ব পন্ডিতজন বিদিত বিধায় উল্লেখ্য করলাম না ৷
পন্ডিত স্বপন কুমারের বিচলিত মন ,স্রষ্টার খোজে মন উচাটন ;হৃদয়ের এ অস্থিরতা যেন হক্বের যাত্রা পথের শুরুয়াত ৷
মাল্য অভিষেকে সদ্য পন্ডিত স্বপন কুমারকে বরণ করে নিলো সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ পরিবারটি,স্বপ্ন পূরণ করে স্বপন কুমার এখন পন্ডিত তাই পূজার মাধ্যমে স্বপন কুমারকে তার পরিবার এবং গ্রামের সাধারণ হিন্দুও স্বাগতম জানাতে কৃপণতা করেনি,সাক ঢাঁকের মাধ্যমে জমজমাট পূজার আয়োজন করা হলো __________ ব্রাহ্মণ পরিবারের প্রথানুযায়ী প্রথমে ভগবান এরপর অন্যরা এ আয়োজনের মিষ্টান্নসহ অন্যান্য খাবারের স্বাদ গ্রহণ করবে ৷
এত বড় আয়োজন যার জন্য তাকে পূজার জন্য তৈরী করারও একটি নিয়ম বা কু সংস্কার যাই বলি না কেন তাও আছে এ পরিবারটিতে ,তাই স্বপন কুমারকে গঙ্গার পানি ও পঞ্চগব্য দ্বারা ধৌত করা বাড়ির মন্দিরে কিছু সময় নির্জনতার জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রাখাা হলো ৷ কয়েক ঘন্টা অতিক্রান্ত হবার পর পূজার জন্য স্বপন কুমার তৈরী তখন দরজা খুলে স্বপন কুমারকে নিতে আসলো পরিবারের সদস্যরা,কিন্তু একি, খাবারে ভরপূর থালা গুলো খালি কী করে?
মমতাময়ী মা হতবাক,মূহুর্তের মধ্যেই খবর পৌছেগেছে পরিবারটির মাথা স্বপণ কুমারের পিতা ব্যারিস্টার নগেন্দ্রনাথের কাছে,পিতার মনে তখন প্রশ্ন এতো বড় অন্যায় সদ্য পন্ডিত ছেলেটা কী করে করতে পারলো? এ যে কু লক্ষন,এ যে অধর্মের কাজ ৷ নাহ পিতার বোধগম্য হয় না স্বপন এ কাজ করেছে,ছুটে এলেন নগেন্দ্রনাথ মন্দিরে,এসেই গুরু গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন,ভগবানের সাথে এ বেয়াদবি কী করে করলে তুমি?
কিছুক্ষন নিরব থেকে,অত্যন্ত শান্ত কন্ঠে স্বপন কুমার বললো,শ্রদ্ধেয় পিতা আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম এবং দরজা খোলা মাত্রই জেগেছি,তবে ভগবান তো জেগেছিলেন পূর্বেও আর এখনো,সুতরাং এ সম্পর্কে তো ভগবানই উত্তর দিতে পারবে,
হয়তো ভগবান ভক্ষন করেছে নয়তো যে করেছে তাকে ভগবান দেখেছে,আপনারা যদি তার কাছে জানতে চাইতেন আমি আশা করি তিনি সঠিকটা জানাবেন!"
এতক্ষনে লোকে ভরপূর মন্দির এবং বাড়ি;চুপসে থাকা পিতা এখন রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন তুমি কি মজা করছো? তুমি কী করে বলছো মাটির একটি মূর্তি খাবার খাবে আর আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিবে?? তোমার স্পর্ধা দেখে আমি অবাক না হয়ে পারছি না স্বপন! সদ্য পন্ডিত স্বপন কুমার বললেন, আপনার কথা অনুযায়ী যদি ভগবান উত্তর দিতে অক্ষম হয় তবে কী মাটির তৈরী এ স্রষ্টার পূজা বৃথা নয় হে পিতা?
স্বপন কুমারের কথা শেষ হতে না হতেই হৈ চৈ পড়েগেছে সবার মধ্যে,পন্ডিত হয়ে এ কি অধর্মের কথা মুখে উচ্চারণ করছে স্বপন কুমার,এ কথা সে কথা কতো কথা সবার ! স্বপন কুমার আরও কিছু কথা যোগ করলো এ সুযোগে "আমি বেদের পন্ডিত তাই বেদ সম্পর্কে আমার চেয়ে ভালো আপনারা জানেন না,বেদের মধ্যে স্পষ্ট ভাসায় উল্লেখ্য রয়েছে,সৃষ্টি কর্তা একজন,আর আমরা যেভাবে সৃষ্টি কর্তার আঁকার তৈরী করি,পূজা করি সেভাবে তিনি প্রকাশিত নয় "
স্বপণ কুমারের এ কথা গুলো তার অস্থির অতৃপ্ত হৃদয়ের কিছু গুপ্ত উক্তি সমূহেরই প্রকাশ ছিলো মাত্র ৷ সকলের সামনে পন্ডিত ছেলের এমন অধর্মের উক্তিতে অগ্নি শর্মা পিতার ধৈর্যের বাধ যেন ছিন্ন ভিন্ন এইবার, রাগে টেনে হিচরে গৃহ অভ্যন্তরে নিয়ে উত্তম মধ্যম দিলো তার পিঠে,পিতা যখন ঘর্মাক্ত দেহ,তখন সিথিল হলো বেতের চলমান আঘাত |
মমতাময়ী মায়ের দৌড়ঝাপ ছেলের অচল দেহের সচলের পরিসেবায় ৷ সুউচ্চ ব্রাহ্মন পরিবারের বউ এর চোখে আজ বাধহীন অশ্রু, এ যেন কৃষকের আবাদি ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরিতাপ ,হয়তো এর চেয়েও বেশি কিছু ৷ মা যে ,সন্তানের দুঃখ্যের জন্য মায়ের মনের অবস্থার নিরুপণ কি কোন শব্দে গুচ্ছে সম্ভব ?
অতঃপর,কেটেগেলো কয়েক দিন ৷ গ্রামের উচ্চ বিত্ত নিম্ন বিত্ত এইবার সবার এক দাবি নব্য পন্ডিতের মুখে ধর্ম গ্রন্থের বাণী শোনবে তারা ৷ পন্ডিত ও যেন এ সুযোগের ই অপেক্ষায় ছিলেন ৷
বাড়ির মন্দিরের সামনে স্বপন কুমার দন্ডায়মান ,বলতে আরম্ভ করলেন তিনি; একটি গ্রামের চেয়ারম্যান যেমন দুজন হতে পারেনা,একটি দেশের প্রধান যেমন দুজন হতে পারেনা,ঠিক তেমনি করে সার্বিক আধিপত্য বিস্তারকারী দুজন হতে পারেন না,তিনি একক,তার আঁকার নেই,অদৃশ্যে ব্যপ্তি তাঁর,আমরা তাঁকে যেভাবে আঁকার প্রদান করি তিনি সেভাবে প্রকাশিত নন, স্রষ্টা অবশ্যই হবেন তিনি যিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান ৷
এ দিকে সবার প্রশ্ন এ কি বলছে এ পন্ডিত,পন্ডিতরা তো অধর্মের কথা বলেনা,বলেতো ধর্মের কথা ,এ পন্ডিতের ভাষায় এ কি ধরনের নিম্ন কথা বের হচ্ছে ,এ তো শোনাও পাপ ৷ অভিযোগ সাথে সাথে বাতাসের মতোন চলেগেলো নগেন্দ্রনাথ ব্যানার্জির কাছে ৷ ছেলের কথা আর আচরণে বিগত কয়েকদিন যাবৎ এমনিতেই তিনি ছিলেন বিরক্ত,আর সে দিন এতো আঘাতের পরও আজ তার মুখে এসব কথা আবার ,এতো অতিরিক্ততে পরিণত হয়েছে ৷
নাহ আর সহ্য করা যায় না,প্রয়োজনীয় কাজে বাড়ির বাইরে থাকা মানুষটি দ্রুত বাড়ি ফিরলেন,স্বপন কুমারের বড় দুই ভাই পিতার রাগান্বিত অবস্থায় আরও পেট্রল ঢাললো যেন ৷ এরপর সবাই মিলে পন্ডিত নগেন্দ্রনাথ কে বন্দি করলো গৃহ অভ্যন্তরে, রক্তের মানুষজন পাষবিক এক নির্যাতন চালালো নগেন্দ্রনাথের উপর ৷ পিতা-ভ্রাতাদের অত্যাচারের পরও স্বপন কুমারের হৃদয় আকাশে নূরানী নূর জ্বলতে আরম্ভ করলো ৷
অন্যদিকে ব্রাহ্মন বংশের কঠোরতায় স্বপন কুমারকে নিয়ে তাদের অতি কঠিন এক সিদ্ধান্ত হলো,স্বপন কুমারের মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটাতে হবে,উক্ত চিন্তা থেকে স্বপন কুমারের মাথায় কাচের আঘাত করা হলো দফায় দফায় ৷ ধর্মীয় বিলুপ্তির মস্তিষ্ক স্বপন কুমারকে দন্ড দিতে দিতে যখন স্বপন কুমারের দেহ নিথর,তখন তাকে মেঝেতে ফেলে সবাই ক্লান্ত শরীর নিয়ে গৃহ ত্যাগ করলো ৷
মমতাময়ী মা তাৎক্ষনিক সকলের অলক্ষে স্বপন কুমারকে মুক্ত করার মানসে গৃহে ঢুকেন এবং নিজ হাতে দড়ি খোলে দেন,ঘন্টা ক্ষানেক পর মমতাময়ী মা দরদী মাখা কন্ঠে বললেন,স্বপন কলিজার টুকরা আমার,তোমার চিন্তায় যিনি স্রষ্টা,আমি প্রার্থনা করি তিনি তোমায় রক্ষা করুন এবং সঠিক পথের নির্দেশনা দিক ৷ অতঃপর আধমরা শরীরের স্বপন কুমারকে মা একটি থলে দিলেন এবং বললেন চলে যাও বাবা,দূরে চলে যাও ,এ স্থান এ রক্তের আত্মীয় তোমার জন্য নিরাপদ নয়,তোমার মতে স্রষ্টা যিনি তিনি তোমায় রক্ষা করুন,আমি তোমাকে সে পথেই দিয়ে দিলাম ৷
ভারাক্রান্ত জীর্ণশীর্ণ স্বপন যখন বাড়ির পথ পেরিয়ে নদী অতিক্রমরত অবস্থায় ঠিক তখন স্বীয় বড় ভাই কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হয় অসহায় প্রাণ স্বপন কুমার ৷ স্বপন কুমার অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে ,তাকে বস্তায় বন্দী করে ফেলে দেওয়া হয় বলেশ্বর নদীতে ৷ স্বপন কুমারর জানেন না নদীতে তার অবস্থানের সময়কাল কতটুকু,বা কী করে গভীর নদী থেকে প্রান্তে পৌছালো।
যখন জ্ঞান ফিরলো তখন স্বপন কুমারের চর্ম চক্ষুতে নূরানী চেহারার একজন মানব মূর্তি ,দাড়ি গুলো সাদা কালো আকারের এবং সাদাসিধে,একটা পাঞ্জাবী পরিহিত লোকটি ক্ষিন হাসি দিয়ে বললেন কেমন লাগছে এখন? আমি বাধ্যগত একজন ছাত্রের মতো উত্তর দিলাম বেশ ভালো লাগছে,কিন্তু এখানে আমি ! নূরানি চেহারার লোকটি বললো,সব আল্লাহর ইচ্ছে,তিনিই মিলিয়ে দিয়েছেন।
তা বাবা বস্তা বন্দী কেন করা হয়েছিলো আপনাকে,শ্বাস প্রশ্বাস অবশ্য চালু ছিলো তখনো,তাই ভাবলাম এই সুযোগে আখেরাতের সঞ্চয় করি,আচ্ছা আপনার শরীরেরর এমন অবস্থা কেন? স্বপন কুমারের মনে হলো লোকটি যেন আপন কারো ব্যথায় সর্বোচ্চ ব্যাথিত,অথচ স্বপন কুমার জীবনের প্রথম তাকে দেখলো ৷ স্বপন কুমার ভাবলো; আপন যখন ঘর ছাড়া করলো,সর্বোচ্চ নির্যাতনের পর বস্তা বন্দী করে নদীতে ফেলে দিলো তখন শক্তিমান পরম করুনাময় এ প্রশ্বাস চালু রেখেছেন এবং আমাকে ফিরিয়ে এনেছেন এই লোকটিকে মাধ্যম করে ,আহ! কি সুন্দর তাঁর পরিকল্পণা,কি রহস্যময় তাঁর কর্ম ,তিনি তো আমায় সর্বোক্ষন দেখছেন,তবে তো আমার হৃদয়ের ঘোর আঁধারের কথা এবং ঘোলা এ অস্বস্তি স্বম্পর্কেও তিনি জ্ঞাত ৷
অতঃপর,যখন নূরানি চেহারার লোকটি স্বপন কুমার কর্তৃক আসল অবস্থার কথা জানতে পারলেন তখন আওলাদে রাসূল মস্তফা আল মাদানী ( রহঃ) এর কাছে নিয়ে গেলেন ৷
উষর মরুর তপ্ত বালুকায় পিপাসার্ত পথিক যখন কঠিন পিপাসায় ঢুকরে কেঁদে ওঠে তখন অপর্যাপ্ত পানি সে পিপাসার্ত পথিক কে যেমন শান্তি ও তৃপ্তির শীতল স্পর্শ অনুভূতি এনে দেয় ,ঠিক তেমনি ব্রাহ্মণ স্বপন কুমার প্রথম সাক্ষাতেই ঈমানের আলোক রশ্মির নতুন পরশে আন্তরিক শীতলতার অনুভূতিতে নিজেকে আবদ্ধ করে ৷
১৯৬৮ সালে মুস্তফা আল মাদানী সাহেবের হাতে হাত রেখে ব্রাহ্মণ বংশের পন্ডিত স্বপন কুমার উচ্চারণ করেন বিশ্ব মানতবার মুক্তির সনদ "লা ইলাহা ইল্লাল্লোহু মুহাম্মাদূর রাসূলুল্লাহ"৷ স্বপণ কুমারের নতুন নাম "আবদুর রহমান" এরপর ক্রমে ক্রমে সহ্য করতে হয়েছে শারিরিক আঘাত ও প্রচন্ড মানষিক চাপ ৷ পারিবারিক প্রচেষ্টায় জেলের আঁধার গৃহে বন্দী থাকতে হয়েছে এবং দুইটা গুলি আজও তাঁর হাটুর নিচে ঈমানের অগ্নী পরীক্ষা বহন করছে ৷ আল্লাহর জন্য ছাড়তে হয়েছে কলিজার মা-বাবা, ভাই-বোন; সহ্য করতে হয়েছে নিজ বংশের নির্মম নির্যাতন এবং নিজ পিতা কর্তৃক হয়েছেন ত্যাজ্য পূত্র ৷ আহ! পৃথিবীর যোগ-বিয়োগের কতো চমৎকার সূত্র ,শিক্ষাদীক্ষায় যিনি ছিলেন হিন্দু সমাজের ভরপূত্র,ঈমান গ্রহনের কারণে আজ তিনি ত্যাজ্য পূত্র ৷
নব মুসলিম আবদুর রহমান শৈশব কৈশর যৌবন,কোন কালেই ইসলাম ও মুসলমানদের সহ্য করতে পারতো না,দূরত্ব বজায় রেখে চলার পরও আল্লাহর মেহেরবানীতে আধাঁর সরে গিয়ে আলোক উজ্জল পথে আসতে পেরেছে,এ এক দ্বি-পার্থিব অর্জন তার জন্য, মৃত্যুর আগে এবং পরের অর্জন ৷
অনেক চরড়াই-উৎরাই এরপর মুস্তফা আল মাদানী হুজুরের প্রচেষ্টায় আবদুর রহমান কে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ভারতের শাহরানপুর মাদ্রাসায় ৷ মাস্টার্স কম্প্লিট করার পর মাদ্রাসায় প্রথম সারিতে পড়তে আসা নানান পারিপার্শ্বিক সমস্যার একটি ৷ কিন্তু না,আবদুর রহমান যতোটা কঠিন ভেবেছিলেন মাদ্রাসার সুহৃদ শিক্ষকগন ও ছাত্র ভাইদের ব্যবহার বাস্তব চিত্র বহু গুণে সহজ করে দিলো ৷ আবদুর রহমানের মনে হতে লাগলো নিজ সহোদর ভাই যেন মুচকি হাসি দিয়ে তাকে পরম শান্তির দিকে স্বাগতম জানাচ্ছে ৷
মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে নতুন মুসলিম আবদুর রহমান আল্লাহর কামেল বান্দাদের অনেকের সাক্ষাত পেয়েছেন; কস্তুরীর ঘ্রাণে কাঁদা যেমন সুগন্ধী হয়ে ওঠে ঠিক তেমনি তাকওয়ার পরিশুদ্ধতায় ঈমানি নূরের পরশে আবদুর রহমানের মন,মস্তিষ্ক হয়ে ওঠলো ঈমানদীপ্ত ৷ প্রশান্ত হৃদয়ে তার প্রতিটা ক্ষণ কাটতে লাগলো,আল্লাহকে পাবার আশা - চেষ্টায় একাকার আবদুর রহমান ৷
নতুন এ সালাত আদায়কারীর প্রতিটি মোনাজাতে থাকে বাবা-মায়ের জন্য বিশেষ দুআ, দ্বীনে ফেরার দুআ, এ দুআর পর আবদুর রহমান যে প্রাশান্তি অনুভব করে তা বর্ণনাতীত ৷ সদ্য মুসলমান আবদুর রহমানের দৃঢ় বিশ্বাস আল্লাহ তার দুআ কবুল করবেন কিন্তু সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছে ছিলো ভীন্ন ৷ এক বছর যেতে না যেতেই বাবা-মায়ের মৃত্যুর সংবাদ তার কাছে পৌছে; আবার হৃদয় বিষন্নতায় ছেয়ে গেলো,আধাঁরে ডুবে গেলো তার কিছু সুপ্ত স্বপ্ন ,বন্ধ হয়েগেলো প্রার্থনার সেই প্রশান্তির অনুভব ৷
নিশ্চুপ আবদুর রহমান মায়ের শূণ্যতার কাছে থমকে গেলেন ক্ষণিক সময়ের জন্য ৷ অতঃপর আল্লাহ তার হৃদয়ে ফের প্রশান্তি দিলেন ৷ আল্লাহ সুবহানা ওয়াতায়ালার করুণার শিশিরে সিক্ত হলো আবদুর রহমানের হৃদয় ৷ শিক্ষক মণ্ডলির গভীর মমতা আর সহপাঠীদের ভালোবাসায় ভগ্ন হৃদয় আবার তাজা হতে লাগলো ৷ নব্য দ্বীনে ফেরা কলিজায় আল্লাহর প্রেমে সিক্ত হবার দৃঢ় ভালোবাসা স্থায়ীভাবে স্থান করে নিলো ;অতঃপর দ্বীনি শিক্ষা অর্জনের পথ ক্রমান্বয়ে শেষ হলো ৷
আল্লাহ যাকে হেদায়াতের পথে আনতে চান শত প্রতিবন্ধকার পরও সে পথ থেকে তাকে কেউ বিচ্যুত করতে পারে না ; একজন ব্রাহ্মণ যে সৃষ্টি কর্তাকে চিনতোই না,রব্বে জুলজালাল অন্ধকার থেকে টেনে বের করে তাকে তার সৃষ্টি কর্তাকে চিনিয়েছেন, দ্বীন ইসলামের অন্তর্ভূক্ত করেছেন এবং বর্তমানে ইসলামের উপর অটল রেখেছেন,এ এক বড় পাওয়া আমার বাবার জন্য ৷
তিনি শত নির্যাতনের পরও পরিবার ছেড়ে মুসলিম হয়েছিলেন বলেই তার সন্তানেরা মুসলিম বাবা-মা পেয়েছে ৷ বাবা আমাদের ভাইবোনদের প্রথম শিক্ষক,ইসলামের প্রতিটি বিষয়ে যার রয়েছে অসম্ভব রকমের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা ৷ রব্বে কারীম প্রতিটি বালুকণার হিসেব রাখেন, অবশ্যই জুলুমের বিচার তিনি কঠিন থেকে কঠিনতর করবেন এবং মাজলুমকে দিবেন চিরস্থায়ী জান্নাত ৷ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা সূরা বাকারার ১৫৫নং আয়াতে ধৈর্যশীলদের জন্য সুসংবাদ দিয়েছেন,আমাদেরকে যেন মহান রব সুসংবাদ প্রাপ্ত বান্দাদের কাতারে শামিল করেন!
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোন,যার শ্রদ্ধেয় পিতার এমন নাটকীয় প্রত্যাবর্তণের কারণে বোনটাও আজ মুসলিম পরিবারের সন্তান! আলহামদুলিল্লাহ্)
দ্বীনে ফেরার ২৪তম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2668741103389257&id=100007601799490
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ২৬
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবুহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আসসালামু আলাইকুম। প্রথমেই শুকরিয়া জানাচ্ছি, মহান রব্বুল আলামিন কে,যিনি এই অধম বান্দা টিকে দ্বীনের পথ দেখিয়েছেন। আমি দ্বীনের পথে এসেছি প্রচণ্ড হতাশা আর মানসিক অশান্তি থেকে। এর আগে আমার পূর্বের জীবন নিয়ে সংক্ষেপে বলি।
আমার পরিবার ছিল আর ১০ টা সাধারণ মুসলিম পরিবারের মত। নামায পড়া, রোজা রাখা মানেই ধার্মিক। মাথায় কাপড়, হিজাব দিয়ে চলাই পর্দা এটাই বুঝতাম। ছোট থেকেই পরিবারের অন্যান্য আত্মীয় স্বজনেরা আমাকে তথাকথিত ধার্মিক মেয়ে বলতো কারণ- রমজানে রোজা রাখতাম জোর করে, হাদিস যা জানতাম মানার চেষ্টা করতাম, ভদ্র, শান্ত, স্টাইলিশ ড্রেস/ হেয়ার কাট পছন্দ করতাম না, সাজতাম না ইত্যাদি।গার্লস স্কুলে পড়তাম।বড় মেয়ে বলে আমাকে আম্মু স্কুল, এমনকি কলেজেও নিয়ে আসা যাওয়া করত।ঢাকা শহরে থেকেও অনেক শান্ত এবং সাধারণ মেয়ে ছিলাম।পরিবারের কারো মধ্যেই দ্বীনের সঠিক বুঝ টা ছিলো না। আমার দাদা ইমাম ছিলো। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বাচ্চা বুড়ো সবাইকেই কোরআন শিক্ষা দিয়েছেন।
এস এস সি এর পর আমি হিজাব পড়া শুরু করি।কারণ শুনেছিলাম- চুল খোলা থাকলে পরপুরুষ দেখলে, ১ টা চুলে ৭০ টা সাপ হবে, আর দংশন করতে থাকবে।আর আমার চুল মাশা আল্লাহ অনেক বড় আর ঘন ছিলো তখন। হিজাব আর ছাড়ি নি। কলেজ লাইফে।
তখন থেকেই আমি প্রচুর গান প্রিয় ছিলাম, সারাদিন সময় পেলেই গান শুনতাম, আর মুখে সারাদিন লেগেই থাকতো। আস্তাগফিরুল্লাহ
এডমিশনের সময় প্রচুর পড়তাম, নামাজ ও পড়তাম, গান ও শুনতাম। পছন্দের সিংগার দের গান দিয়ে ফোন ভরা ছিলো।গিটারের খুব শখ ছিলো। এজন্য আমাকে জন্মদিনে গিফট হিসেবে গিটার দেয়া হয়।কিন্তু তখন আমার অনেক খারাপ সময় যাচ্ছিলো। কারণ আমার মেডিকেলে চান্স হয়নি। আমি এত কান্না কাটি করেছিলাম, এত ভেঙ্গে পড়েছিলাম, এত হতাশ হয়ে পড়েছিলাম সেটা যারা এই সিচুয়েশনে পড়েছে তারাই বুঝবে।বাসা থেকে সেকেন্ড টাইম এর জন্য রাজি ছিলো না।একটা ভালো পাব্লিক এ ভেটেরিনারি তে চান্স পেয়ে যাই আর ওইখানেই ভর্তি হই। মাঝে আমাকে বিয়েও দিতে চায় পরিবার থেকে এক কাজিন এর সাথে। সেটা নিয়েও অনেক কাহিনি আছে তা আর না বলি
অনেক কষ্টে বিয়ে ভাঙ্গি আমি।
এতটুকু পর্যন্ত ও জীবন টা মোটামোটি সহজ ছিলো। ভার্সিটি তে যাওয়ার পড়েই আমার সবকিছু অন্য রকম হয়ে যায়। প্রথম ২ টা বছর ছিল্য আমার জীবনের সবচেয়ে জাহেলিয়াতের ২ টা বছর।প্রথমে ভার্সিটি তে হঠাৎ পরিবার ছাড়া হয়ে সবকিছু সামলাতে পারছিলাম না। গণরুমে উঠে আস্তে আস্তে হিজাব ছাড়তে লাগলাম সময়ের অজুহাতে।প্রথম সপ্তাহেই কয়েকটা কালাচারাল অর্গানাইজেশন থেকে আপু আসলো কাদের কিসে ইন্টারেস্ট তারা শিখিয়ে দিবে।১.৫ মাস পর প্রোগ্রাম। নাচে আগ্রহ ছিলো আগে থেকেই,লাজুক ছিলাম বলে আগে করতে পারি নি। এখন এমন সুযোগ পাওয়ায় কিভাবে হাতাছাড়া করি!!ব্রেইনওয়াসড হয়ে গেছিলাম,তখন কি জানতাম আমি কি করছি!!! আল্লাহুম্মাগফিরলি।
আস্তে আস্তে লজ্জা কমে গেল, ৩০০০+ মানুষের সামনে পারফর্ম করতে হবে যে!একসময় অনেক রিহার্সাল হল, প্রোগ্রাম ও শেষ হল। কত প্রশংসা সবার!!আমি ক্লাসিকাল করতাম।অনেক পরিচিত হয়ে গেলাম সবার কাছে। এই বেশি পরিচিত হওয়াই আমার কাল হল।নতুন নতুন সমস্যা যোগ হতে থাকলো। আমি আগে এমন ফ্রি মিক্সিং পরিবেশে মিশি নি। কিন্তু এখানে এসে আস্তে আস্তে সবাইকে সহজ ভাবে নিলাম।
এর আগে শুনেছি ইভ টিজিং, নিজের সাথে তেমন গুরুতর কিছু হয়নি।কিন্তু এখানে এমন ই হল।প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এটা করে,ওটা করে, এসিড, থ্রেট কত কিছু শুনেছি। এখানে তেমন ই হয়েছে। আমি তখনো নতুনই। ১ম সেমিস্টার ও শেষ হয়নি।যখন বুঝতাম যে এ মানুষের মতলব ভালো না তখন ইগ্নোর করতাম।আর তারাই আমার শত্রু হয়ে যেত। আমাকে এমন ই থ্রেট দিত আমাকে একা পেলে যেকোনো কিছু করতে পারে। এখানে আমি যত সহজে বলছি তত সহজ ছিলো না। আমি তখন আমার কিছু তথাকথিত বান্ধুবি- বন্ধু দের আচরণ দেখেছি । বিপদে মানুষ কিভাবে নিচের গা বাচিয়ে চলে। যখন এভাবে পারে নাই, তখন আমার নামে অপবাদ দিলো, সেসব আমি মানুষ এর কাছে শুনতাম আর এত কানতাম, এত কষ্ট পেতাম! আমি এটা মেনে নিতেই পারি না।
এভাবে আমার কিছু শত্রু তৈরি হয়, যাদের আমি পাত্তা দিতাম না। এত এত ডিস্টার্ব এ শেষে বাধ্য হয়ে আমি এটা বলি যে আমার এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেছে(মিথ্যা) আমি জানতাম একজন কে বললে পুরো ভার্সিটি ছড়ায় যাবে কথাটা। আর দেখতাম আমার ফ্রেন্ড রা আমার সামনেই যাই করুক পিছে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে কথা বলে / যার সাথে যেমন করলে সুবিধা তেমন তাল মিলিয়ে চলে। এভাবেই একের পর এক ধাক্কা
এভাবেই ১ বছর শেষ। ভাবলাম সেকেন্ড ইয়ার থেকে হিজাব ধরবো। হিজাব শুরু করলাম ঠিক ই। কিন্তু এবার আরো ২ টা নতুন প্রোগ্রাম যোগ হল।৩ টা প্রোগ্রাম আমার হাতে,তার উপর নিজের কোরিওগ্রাফি। আমি বুঝতেছিলাম না কি করবো। হিজাব পরে নাচানাচি করা তো সম্ভব না। এটা খুব ই লজ্জার।২ টা জিনিস পরস্পর সাংঘর্ষিক। তাও আমি নাচ না ছেড়ে সেই ৩ মাসের জন্য আবার হিজাব ছাড়লাম মাথায় কাপড় দিতাম, আবার ঠিক ই রিহার্সাল করলাম
কি হাস্যকর ব্যাপার!
আল্লাহ আমাকে মাফ করুক।
৩ টা প্রোগ্রাম শেষে আগের চেয়ে বেশি প্রশংসা। কিন্তু আবারো সেই অসভ্য ব্যাক্তি ঝামেলা শুরু করলো।ডিস্টার্ব শুরু করলো। আমি যতই এড়িয়ে যাই না কেনো আমাকে কোন ভাবেই শান্তি দিচ্ছিলো না। আমার ফ্রেন্ডরা পর্যন্ত আমাকে একা ছেড়ে দিলো। ফ্রেন্ডরা ঝামেলার ভয়ে দূরে সরে গেলো তা আমি তাদের আচরণে বুঝতাম। হাসি মুখে সবার সাথে কথা বলতাম, কিন্তু আমার মনে সারাক্ষণ কি চলতো তা শুধু আমি আর আমার রব জানে
আমার কিছু কিছু নামের ফ্রেন্ড আমার পিছে পিছে বদনাম করতো,অনুমান করে কথা ছড়াতো যার সব ই ছিলো মিথ্যা আমি কোনো না কোনো ভাবে তা শুনতে পারতাম আর প্রচুর কাঁদতাম
আমি তো কারো কোনো ক্ষতি করি নি! তাহলে এরা আমার সাথে কেনো এমন করতেছে!মানসিক অশান্তি তে আমার কাউকেই ভালো লাগতো না।কিন্তু তাও সবার সাথে হেসে কথা বলতাম। সারাদিন পর রুমে এসে শান্তিমত কাঁদতেও পারতাম না গণরুম বলে,কাঁথা দিয়ে কাঁদতাম ।এত মানুষের মধ্যে থেকেও আমি একা। আস্তে আস্তে সবকিছু তে ইনএক্টিভ হয়ে গেলাম।কাউকে কিছু বুঝতে দেইনি।ঐ অসভ্য ব্যাক্তি আমার সংঠনে এক্টিভ হয়ে গেলো। আমি আর এত নিতে পারতেছিলাম না। প্রোগ্রাম এর পর ভাবি এবার আর কোনভাবেই হিজাব ছাড়বো না।আমি তখনো নামাজে অনিয়মিত ছিলাম।
২য় বছরের শেষের দিকে প্রথম গণরুমের আমার এক বান্ধুবি ইউসুফ( আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবি কে নিয়ে যে সিরিয়াল টা আছে সেটা দেখতে বলে(এটা দেখা ঠিক না)। যদিও এগুলা দেখা ঠিক না, কিন্তু তখন তো এত বুঝি নাই,আমি টানা দেখে সব শেষ করে ফেলি এক্সাম এর মাঝে। আমি দেখে কি বলবো, আমার মনে হয়েছে আমরা এত অকৃতজ্ঞ! একেক জন নবী রাসুল কত কষ্ট সহ্য করেছেন, আর আমি সামান্য এইটুক এই ভেঙে পড়ি,তারা কত শোকর গুজারি বান্দা ছিলেন, ধর্মপ্রাণ ছিলেন, আর আমি এত গুনাহ করে বেড়াচ্ছি!কিভাবে সবকিছু তে ছাড় দিয়ে চলি। কিছুই তো করলাম না আল্লাহ এর জন্য!আমি এত কেঁদেছি কিছু কিছু এপিসোড দেখে! আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার একটা উসিলা ছিলো। এক্সাম শেষে বাসায় গেলাম ডিসেম্বরে। সাথে 'তিনিই আমার রব' 'প্যারাডক্সিকাল সাজিদ' বই ২টা নিয়ে আসি রুমমেট দের থেকে। তখন মিজানুর রহমান আজহারির শর্ট ভিডিওতে গুলা সামনে আসতো। খুব ভালো লাগতো কথা গুলো। আস্তে আস্তে খুঁজে খুঁজে দেখা শুরু করি। নামাজে একদম রেগুলার হওয়ার ট্রাই করি।
নিজেকে নিয়ে চিন্তা করা শুরু করি, আমি কি ছিলাম! কেন আমার জীবনে এত সমস্যা! আমার কি করা উচিত ছিলো! আমি কি করছি!এইযে নাচ গানে সময় নষ্ট করছি আমার লাভ কি! শুধুমাত্র মানুষের বিনোদন আর একটু প্রশংসা!! আমার সময় শক্তির অপচয়।এ মানুষ গুলোই সামনে বাহবা দিবে পিছে বদনাম করবে।বিপদে কাউকে পাওয়া যাবে না। আমি তো আমার আখিরাত কে ধ্বংস করছি!! হায় আল্লাহ,আমিতো অনেক পাপ করতেছি, নিজের ইচ্ছায় জেনে শুনে পাপ করতেছি। আমি যদি মারা যাই আমার কি হবে!কেউ তো আমার জন্য সুপারিশ করবে না।কবরে কি হবে, কিভাবে আমি আযাব সহ্য করবো!আমক যদি তওবা করার সুযোগ না পাই!
ইশ, আমি যদি অনেক ভালো হতাম, কত ভালো হত! আমার রব কত মহান। এমন পাপি বান্দা কেও সুযোগ দিয়েছে,রিজিক দিচ্ছে।আর আমি কি!!
২০২০ সাল।এই নতুন বছর টা একদম অন্য রকম করতে চেয়েছিলাম।তাহাজ্জুদ ও পড়েছিলাম মনে হয়। তাহাজ্জুদ পড়লে এত শান্তি লাগতো!কিন্তু উঠতে পারতাম না।আলহামদুলিল্লাহ এই বছর টায় আমার জীবন একদম ই পরিবর্তন হয়ে গেলা, যাকে বলে রবের দিকে প্রত্যাবর্তন বিভিন্ন ইসলামিক গ্রুপ আর পেইজে যুক্ত হতে থাকি।এসব পোস্ট গুলো আমাকে নতুন অনেক কিছু জানতে সাহায্য করে।অনুপ্রেরণা দেয়।ফজরেই উঠতে প্রথম প্রথম কষ্ট হত। এক বান্ধুবি কে কল দেয়ার জন্য বলি+ এলার্ম দেই।এভাবে আস্তে আস্তে নিজেকে সর্বক্ষন পরিবর্তনের চেষ্টায় থাকি।
স্পেরো গ্রুপে প্রথম আশফিকার পোস্ট দেখি। অনেক ভালো লাগে ওর কথা আর লিখা। রিকু দেই। এরপর আরো অনেক দ্বীনি বোন দের এড দেই কারনে আমার ফ্রেন্ডলিস্ট সব সেকুলার, মডারেট মুসলিম দিয়ে ভর্তি ছিলো। রিনু আপু, পুস্প আপু,উস্মি আপু দের ও দিয়েছিলাম।শুধু রুমি আপু এক্সেপ্ট করে নাই।আপুর ফ্রেন্ডলিস্ট ফুল ছিলো। যাই হোক, একদিন একটা পোস্ট সামনে আসে, কেয়ামত এর আলামত।এর মধ্যে একটা ছিলো- "নর্তকীদের কদর বেড়ে যাবে"
এটা দেখে আমার নিজেকে যে কোন অবস্থানে মনে হচ্ছিলো! এই লাইন টা আমাকে আসলেই হিট করে অনেক। নৃত্যশিল্পী, ড্যান্সার, নর্তকী একি তো! ছিহ! আমি কোন পর্যায়ের মানুষ হয়ে গেলাম!আল্লাহুম্মাগফিরলি! নিজের উপর ঘৃণা চলে আসে।
মনে মনে ভাবি কোনভাবেই আর সম্ভব না।জানুয়ারি তে ভার্সিটি যাই, কিন্তু মুখে খোলা থাকলেও শান্তি লাগতো না। সারাদিন মনে হত কেউ যদি আমাকে না দেখতো!কত ভালো হত! ক্লাস শেষে ডিরেক্ট হলে আসতাম। আর সারাদিন নিকাব,বোরকা, জিলবাব এসব দেখতাম অনলাইনে।মনে স্থির করেই নেই যে, নেক্সট বার বাসায় গিয়ে বোরকা- নিকাব নিয়ে আসবো।আম্মুকে বলে দেই।তার পরের সপ্তাহেই বোরকা নিকাব কিনে নিয়ে আসি আম্মুর সাথে গিয়ে।
ফেব্রুয়ারি, প্রথম দিন ক্লাসে একদম অন্যরকম ভাবে আমি যাই, নিজের ভিতর এমন একটা ভালো লাগতেছিলো! এত শান্তি লাগতেছিলো যে বলে বুঝাতে পারবো না।অনেকেই অবাক হয়ে গেছিলো।এভাবেই ২-১দিন যাওয়ার পর ফেসবুকে ছবি দেয়া রিলেটেড একটা গল্প দেখলাম। সেটা পড়ে অনেক ভয় লাগলো, আর আমার তো অনেক ছবি আছে এতদিনের দেয়া। আমিও যদি হুট করে মারা যাই!সারাজীবন কবরে থেকেও গুনাহ হতে থাকবে।তাড়াতাড়ি করে সেই ২০১৬ -২০১৯ সব পিক সরিয়ে ফেলি।অনলি মি/ডিলিট।
আমি তখনো প্রচুর গান শুনতাম।ফেভারিট সিংগার দের বাছাই করা ২০৪ টা গান রাখছিলাম ফোনে।মুখস্ত হয়ে যেত সব। একটা পোস্ট দেখেছিলাম গান শুনা নিয়ে। কত পাপ, কত শাস্তি! এটা তো আমাদের জন্য হারাম।কত নিশ্চিন্তে শুনতে থাকি! এই অবস্থায় যদি মারা যাই! গানের নেশা থেকে মুক্তির উপায় লিখা ছিলো পোস্ট টায়।আমি সাথে সাথে প্লে লিস্ট এ যাই। তখন এটা আমার জন্য অনেক কঠিন ছিলো যেহেতু আমি অনেক গানে আসক্ত ছিলাম। সিলেক্ট করে অল ডিলিট দিয়ে দিলাম,যখন কাজ টা করছিলাম চোখে পানি চলে আসছিলোআল্লাহ এর সন্তুষ্টির জন্য তুমি একটা পছন্দের জিনিস ছেড়ে দেও, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করবেন।
তার জন্য একটু কষ্ট তো সহ্য করাই লাগবে।
তখনো সংগঠন থেকে আমাকে ডাকছিলো, প্রোগ্রামের সিজন চলছে।আমি জানিয়ে দেই আজীবনের জন্য ছেড়ে দিছি।কেউ যেন আর রিকুয়েস্ট না করে। তারপর ও কিছু মানুষ প্রশ্ন করত কেন?আমি হঠাৎ পর্দা শুরু করলাম কেন?কোন বিশেষ কারণ আছে কিনা?হুজুর হয়ে গেছি,নাচবো কিনা! আরো কত প্রশ্ন একেক জনের!এসব প্রশ্ন আমাকে অনেক কষ্ট দিত।একে তো নিজে সারাক্ষণ ভাংগা গড়ার মধ্যে আছি, তার মধ্যে মানুষের এত এত প্রশ্ন। সবার থেকে দূরে সরে আসতে লাগলাম।একা থাকতাম অনেক,অনেক কাঁদতাম।নামাজে দাড়ালেই কান্না আসতো শুধু।আস্তাগফিরুল্লাহ পড়তে থাকতাম সারাক্ষণ। খুঁজে খুঁজে পাপ ও হারাম কাজ গুলো বাদ দিতে থাকলাম। এর মধ্যে আমি কিছু বই কিনেছি অনলাইন থেকে -ফেরা,গুরাবা,ফজর আর করব না কাযা,বেলা ফুরাবার আগে।এই বইগুলো ও আমাকে অনেক হেল্প করে এসব থেকে ফিরে আসতে।
ছেলে বেস্ট ফ্রেন্ড ও মেয়েদের থাকতে পারে না।তাহলে আমার এই ফ্রেন্ড থেকেও দূরে যেতে হবে। প্রথমে কঠিন হলেও আস্তে আস্তে সব সহজ করে দেয় আল্লাহ।আমি সবসময় মুনাজাতে বলতাম যেনো এসবকিছু ছাড়া আল্লাহ আমার জন্য সহজ করে দেয় যেগুলো আমার জন্য কল্যাণকর না।
আল্লাহ আমাকে পুরোপুরি একা করে দিলো। যখন আল্লাহ কোন বান্দাকে ভালোবাসেন তখন বান্দাকে সবার থেকে দূরে নিয়ে যান,একা করে দেন।সুবহানআল্লাহ ।এত এত ভুলের পরেও আল্লাহ তার বান্দাকে তওবা করার সুযোগ দিয়েছেন
সারাক্ষণ কানতাম আর ক্ষমা চাইতাম আল্লাহ এর কাছে।আর বলতাম আমার মনকে শান্ত করে দিতে। এতসব এর পরেও কিছু মানুষ পিছে লেগে থাকতো আর আমার দোষ খুঁজে বেড়াতো।একের পর এক এভাবে পছন্দের জিনিস গুলো ছাড়া খুব একটা সহজ ছিলো না আমার জন্য।সেটা আমার আল্লাহই ভালো জানেন। আমি একদম চুপ হয়ে গেছিলাম।
মার্চ থেকে চলে আসলাম বাসায়।আমার বাকি ২ বোন ও ভালো নাচতো।অনেক প্রোগ্রাম করেছে স্কুল লাইফে।আমি বাসায় এসে ওদের কড়া ভাবে নিষেধ করি আর আযাবের ভয় দেখাই।সুযোগ পেলেই শায়েখ দের বিভিন্ন লেকচার ছেড়ে দিতাম। Baseera চ্যানেলের কোন ভিডিও দেখা বাদ রাখি নি।এত ভালো লাগতো শুনতে।আমি যা যা শিখেছি,জেনেছি ওদের সব বুঝাই। আমার পিচ্চি ভাই টা কে অনেক আগেই মাদ্রাসা তে দিয়েছিলো।আব্বু আম্মুর ইচ্ছা ওকে হাফেয বানাবে।দোয়া করবেন ওর জন্য। আমার বোনেরা নাচ ছেড়ে দিলো। ওরা অনেক স্টাইলিশ ছিলো। আল্লাহ এর রহমতে ওদের মধ্যেও পরিবর্তন আসে।এবারের রমজান আলহামদুলিল্লাহ এত সুন্দর একটা রমজান। এখন পর্যন্ত আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ রমজান।
আমার রবের শুকরিয়া তে চোখ ভিজে আসতো। ওরা সবাই আলহামদুলিল্লাহ ৫ ওয়াক্ত নামাজি হয়ে যায়।আলহামদুলিল্লাহ। কে আগে নামাজ পড়বে এর জন্যেও প্রতিযোগীতা ওদের মাঝে,চিন্তা করা যায়! আমার আল্লাহ সুবহানআল্লাহ ওয়া তায়ালা কত দয়ালু! তিনি চাইলে কি না সম্ভব। আমার ছোট বোন ও বোরকা শুরু করে তখন, আর এখন মেজ টাও। আমরা মা মেয়ে ৪ জন এখন পর্দা করি আলহামদুলিল্লাহ।বোরকা-নিকাব/খিমার।একেক বোন একেক সময় মোনাজাতে কেঁদে উঠতো, আমি জানি সেটা ছিলো অনুশোচনার.... প্রশান্তির কান্না।
আমি আর আমার বোন ভালো আর্ট পারতাম। ছোট থেকেই জানতাম প্রানি আকা ভালো না। এর গুনাহ আর শাস্তির গভীরতা অনুভব করিনি।২০+ মানুষের স্কেচ ছিলো। মানুষের স্কেচ করতে ভালো লাগতো। সেদিন ২ জন মিলে সব পুড়ে ফেলেছি, আলহামদুলিল্লাহ
আমরা আল্লাহ এর দিকে যতটুকু এগিয়ে যাবো, তিনি আরো দ্রুত আমাদের দিকে আসবেন।নিশ্চয় তুমি পাবে তুমি যা ছেড়েছো তার চেয়ে উত্তম।শীঘ্রই তোমার রব তোমাকে এত নিয়ামত দিবেন যে তুমি খুশি হয়ে যাবে।শুধু একটু সবর। এই আয়াতগুলো মনে শক্তি দেয় অনেক।আমাদের তো উচিত আখিরাতের সঞ্চয় করা, ২ দিনের দুনিয়া নিয়ে আমরা পড়ে আছি।দুনিয়া নিয়ে ব্যাস্ত থাকা তো আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য না।রুহ টা বের হয়ে গেলে তখন কি জবাব দিবো! বেলা ফুরাবার আগে -একটা চমৎকার বই। আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক।সবাইকে হারিয়ে আমি আমার রব কে পেয়েছি
চরম জাহেলিয়াত থেকে আজকের অবস্থায় এনেছেন।সব কিছুর জন্য অনেক অনেক শুকরিয়া।
দ্বীনে ফেরার পর ইসলাম নিয়ে যত জানি ততই নিজেকে জ্ঞানহীন মনে হয়।কিছুই জানি না আমি। স্কুল কলেযে প্লেস করা, গোল্ডেন পাওয়া, স্কলারশিপ পাওয়া দুনিয়াবি জ্ঞানের জন্য কত প্রচেষ্টা কত যুদ্ধ কিন্তু দ্বীনি ইলম শুন্য।সবকিছু খুঁজতাম ইউটিউব ফেসবুকে।দ্বীনি সার্কেল ছিলো না যাকে বার বার জিজ্ঞেস করবো। যেটুকু জানতাম কাউকে বল্লেই রেফারেন্স, চুপ হয়ে যেতাম জ্ঞানের স্বল্পতার কারণে।তখন IOM এর খোঁজ পেলাম।আমার পড়াশোনার স্বাভাবিক প্রেশার ই অনেক বেশি তাও আল্লাহ এর উপর ভরসা করে ৩ বছরের আলিম কোর্সে ভর্তি হয়ে গেলাম।আল্লাহ সবকিছু সহজ করে দিক।আমীন
স্বপ্ন দেখি একটা দ্বীনি পরিবারের। নিজেকে আগে গড়ে তুলি, তারপর একজন দ্বীনদার, চক্ষুশীতলকারী যে আমার দুনিয়া ও আখিরাতের সঙ্গী হবে।১বছরেই আমার পরিবারের অনেক পরিবর্তন দেখেছি।আব্বুও দাড়ি রাখে এখন। সব ই তার রহমত। আল্লাহ সবাইকে আর আমাকেও আরো হেদায়াত দান করুক।আমিন।
সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বোন)
দ্বীনে ফেরার ২৫তম গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2679650392298328&id=100007601799490
গল্প শেয়ারের আয়োজক
.....................................................
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ২৭
(লেখিকার পাঠানো লেখা হুবুহু তুলে দেওয়া হয়েছে)
আসসালামু আলাইকুম। প্রথমেই শুকরিয়া জানাচ্ছি মহান রব্বুল আলামীন কে,যিনি এই বান্দাটিকে দ্বীনের পথ দেখিয়েছেন। সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য। যিনি পথভোলা পথিককে আপন করে নিয়ে সকালে বের হয়ে যাওয়া পাখির মতো করে সন্ধ্যায় ঠিকই নীড়ে ফিরিয়ে আনেন। আমি হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া এক মেয়ে, আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানিতে সত্য ধর্মে দ্বীনের পথে ফেরার সৌভাগ্য হয় ২০২০ সালের ১৭ ই সেপ্টেম্বরে
আমার দ্বীনের পথে আসার আগে পূর্বের জীবন নিয়ে সংক্ষেপে বলি....
ছোটবেলা থেকে মা বাবা পরিবারের মানুষদের দেখাদেখিতে আমিও তখন মূর্তিকে আমাদের সৃষ্টিকর্তা মনে করে পুজো করতাম। পুজো-অর্চনা,বিভিন্ন রীতি নীতি এসবের মধ্যে নিয়মিত লেগে থাকতাম। স্কুল লাইফের আমার এক ফ্রেন্ড একদিন আমার সাথে মূর্তি পুজো আর হিন্দুদের উৎসব গুলো নিয়ে বলছিলো যে- " আচ্ছা তোরা যে মূর্তি পুজো করিস, মূর্তিকে দেবদেবী মনে করে প্রার্থনা করিস সেটা আসলে কি জন্য করিস"! আমি তাকে সাথে সাথেই জবাব করি যে - আমরা মূর্তির মাধ্যমে মূলত সৃষ্টিকর্তাকে ডাকি, মূর্তির মধ্যে আমাদের ভগবান থাকেন। সে তারপরে আমাকে বলে- "বিষয়টা নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখতে কেন এমন টা করা হয়, সৃষ্টিকর্তা কি কখনো আমাদের হাতে বানানো মূর্তিগুলোর সমান হতে পারে!!"
আমার সেই ফ্রেন্ডটি ছিল মুসলিম আর ধার্মিক মনের( আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দিক)।
সে তখন আমাকে হিন্দু ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন বিষয় কে ঘিরে প্রশ্ন করতো কেন আমরা এই কাজ গুলো করি! তার কথা গুলো আমাকে খুব অবাক করে তুলতো আর আমিও চিন্তা করতে থাকতাম যে, আসলেই তো! যিনি আমাদের কে সৃষ্টি করেছেন তাকে কি করে আমরা সাধারণ মানুষরা বানাতে পারি? আমি এই বিষয়ে আমার ফ্রেন্ডটির সাথে আলোচনা করতাম, আর সে আমাকে বলেছিল-মূর্তিগুলো তো মানুষের তৈরি করা, আর স্রষ্টা কে তো সৃষ্টি করা যায় না, স্রষ্টাই আমাদের সৃষ্টি করেন
এখান থেকে আমার বিশ্বাস টা আস্তে আস্তে উঠে আসে। আমাকে সে 'ফেরা' নামে একটা বই পড়তে দিয়েছিল, এই বই টাতে দুই বোন খ্রিস্টান ছিল এবং পরে তারা ইসলামের সত্যতা বুঝে ইসলাম গ্রহণ করেন। আমি বইটা পড়ার পরে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম, ইসলাম ধর্মকে নিয়ে জানার একটা আগ্রহ জন্মে।
"আল্লাহ এক, আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং তার সমতুল্য কেউ নেই" এই আয়াতের কথা টা যেদিন প্রথম জেনেছিলাম সেদিনই মহান আল্লাহর জন্য হৃদয় থেকে একটা টান অনুভব করতাম। এই অনুভূতি যে কি তা হয়তো বলে ব্যক্ত করা যাবে না! আমি তখন থেকে একটা ব্যাপার বুঝতে পারতাম যে, আমাদের সৃষ্টিকর্তা নিশ্চয়ই এমন কেউ হবেন, যিনি সব কিছুর ঊর্ধ্বে, যিনি কোন কিছুর মুখাপেক্ষী নন। উনি এমনই কেউ হবেন যিনি মানবিক সমস্ত চাহিদা মুক্ত, উনি আছেন, উনি দেখতে কেমন তা মানবজাতির জ্ঞানের বাহিরে, কল্পনার বাহিরে। আর আল্লাহ তায়ালার মনোনীত ধর্ম হচ্ছে ইসলাম
আস্তে আস্তে ইসলামের প্রতি একটা সফট কর্ণার সৃষ্টি হতে লাগলো,মন্দ ধারণা গুলো দূর হতে লাগলো, আগ্রহ তৈরি হলো অনেকখানি, শুরু করলাম একটু একটু করে ঘাটাঘাটি। মাঝে মাঝে কেমন যেন এলোমেলো লাগতো নিজেকে, অস্বস্তি হতো....কখনো কখনো ভয়ংকর রকমের মন খারাপ হয়েছে, খুব কেঁদেছি। তবুও ধৈর্য ধরে ছিলাম আলহামদুলিল্লাহ!
ভালো করে মনে নেই তবে একবার খুব মন থেকে প্রার্থনা করেছিলাম," আল্লাহ তুমি যদি সত্যি থেকে থাকো, প্লিজ আমাকে সঠিকটা বুঝার,জানার জন্য সুযোগ করে দাও....
এভাবে কিছুদিন কেটে গেলো...এর মাঝেই পেলাম জাকির নায়েকের ইসলামিক ভিডিও গুলো, দেখতে শুরু করলাম, ভালোই লাগলো, আরো দেখলাম। শুরু হলো একটু একটু করে আমার কনফিউশান গুলো ক্লিয়ার হওয়া আলহামদুলিল্লাহ!
ফেসবুকের মাধ্যমে আমি কিছু আলেমা দ্বীনি বোনদের সাথে কথা বলতাম, আমার মনে আসা প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার জন্য বলতাম। উনারাও আমাকে ইসলামের গুরুত্ব সৌন্দর্য, হালাল- হারামের বিষয়গুলো বুঝিয়ে দিত এবং আমার সেই বন্ধুটিও আমাকে অনেক সাহায্য করেছিল।মোবাইলর মধ্যে কুরআন অ্যাপস ডাউনলোড করে বাংলায় কুরআনের ওহী গুলো পড়তাম। ইউটিউবের মধ্যে Baseera মিডিয়ার লেকচার গুলো শুনতাম।
এভাবে ৫ মাস পরে আমি বুঝতে পারি যে ইসলাম ধর্মই হলো সত্য এবং আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের সৃষ্টিকর্তা এখন উচিত ইসলাম গ্রহণ করে সত্য ধর্মে আল্লাহর জন্য ফিরে আসা। কিন্তু এতোকিছু আমার মা বাবারা কেউ জানতো না। আমি বলিনি কারণ তারা এটা কখনোই মেনে নিতে চাইবে না। খুব কষ্ট হতো কিন্তু তাও মা বাবার কথা চিন্তা করে তো হিন্দু হয়ে থাকতে পারি না। তাই আল্লাহর উপরে ভরসা করেই ২০২০ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর বিকেল এর দিকে আমার এক দ্বীনি আপুর কাছে কালেমা পড়ে নিই আলহামদুলিল্লাহ। সেদিন সেই সময়ে আসরের আজান হচ্ছিল
আল্লাহর কাছে অনেক অনেক শুকরিয়া।
শুরু হলো নতুন জীবনের পথে পা বাড়ানো। প্রথম প্রথম ভয় করতো, মন খারাপ হতো। আস্তে আস্তে আল্লাহর রহমতে আমার মন খারাপ চলে যায়। আল্লাহ যে আমাকে তার হেদায়েতের স্নিগ্ধ পরশে আলোকিত করেছেন লুকিয়ে দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে আল্লাহর ইবাদত করি,নামায পড়া শিখি..যেদিন প্রথম সালাতে দাঁড়িয়েছিলাম, নির্জনে একটা কক্ষে আমি একদম একা, আমার রবের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ভয় করছিল ভীষণ, ঠিকমতোন পারবো কি পারবো না ভেবে চিন্তা হচ্ছিল। দুরুদুরু বুকে সালাত আদায় করে ফেলি আলহামদুলিল্লাহ
এভাবেই হিন্দু ধর্ম থেকে সত্য দ্বীনের পথ ইসলামে ফিরে আসা আমার হিন্দু ধর্মের মূর্তি পুজোর বিষয়টা আমার কাছে ভালো লাগতো না।এছাড়াও অনেক ভুল ত্রুটি চোখে পড়ে।
আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন সত্য ধর্মের পথ পেয়ে গেছি। ইসলাম কে ভালোবাসার পিছনে আমার রয়েছে হাজারো অনুভুতি। ইসলামের বিষয়গুলো বারবারই আমাকে মোহিত করে। ইসলামে কোন জাতপাত নেই। আল্লাহর সাথে কথা বলতে কোন মাধ্যমের দরকার হয় না। যেকোন সময় দুয়া বা ইবাদতের মাধ্যমে আমরা উনার সাথে কথা বলতে পারি।ইসলাম কিভাবে জীবনের প্রকৃত অর্থ কে বুঝিয়ে দেয়, জীবনের সব সমস্যার সমাধান উপস্থাপন করে তা আমাকে বারবারই মুগ্ধ করে তুলতো।
আসলে ইসলামের প্রতিটি বিষয় খুব মুগ্ধকর যা মানুষকে খুব সহজে বদলে দিতে পারে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শান্তি এনে দিতে পারে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কে করে তুলে অর্থময়। এই ইসলাম ধর্মই হলো একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ও মানবতার মুক্তির পথ যা কিয়ামত পর্যন্ত মানুষকে আলোর পথ দেখাবে। আরেকটি হলো পরোকালীন জীবনের আনন্দ। ইসলামের প্রতিটি বিষয় আমাদের জন্য সুফল বয়ে আনে ইন শা আল্লাহ ইসলাম যা হারাম করেছে তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর আর যা হালাল করেছে তা সত্যি কিন্তু উপকারী। আমার কাছে আজান দেয়ার ব্যাপার টাও অনেক ভালো লাগতো। কি সুন্দর!
ও আরেকটা কথা আমার কাছে 'আল্লাহ' নামটা ও ভালো লাগতো অনেক আগে থেকে। ছোটবেলায় যখন কোন ভুল করতাম বন্ধুদের সামনে বলতাম- 'আল্লাহ এরকম টা কেন হয়েছে, আল্লাহ এখন কি হবে'। বাসায় মায়ের সামনেও বলে ফেলতাম, মা বকা দিত। ইসলামের পর্দার বিষয়টা ও আমার কাছে ভালো লাগতো, ইসলামে মেয়েরা অনেক সম্মানিত, দামী অলংকার এর মতোন। দামী অলংকার কেউ খুলে রাখে না বরং ঢেকে রাখে। মেয়েদের পর্দার বিষয় টা এমনই।যাতে কোন মেয়েকে শ্লীলতাহানি তে না পড়তে হয়, কেউ যেন মন্দ দৃষ্টি না দেয় সে জন্য পর্দা করা ফরয।
ইসলাম নিয়ে যতই পড়েছি আমি উপলব্ধি করতে পারি যে, ইসলামই একমাত্র সত্য জীবন ব্যাবস্থা। আল্লাহ তায়ালাই আমাদের এক মাত্র রব একজন মুসলিমাহ হিসেবে, সমগ্র দুনিয়ার সকল মুসলিম ভাইবোনের পরিবারের অংশ হিসেবে এবং সত্য দ্বীনের অংশ হিসেবে আজ আমি গর্বিত
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
দ্বীনে ফেরার ২৬ নাম্বার গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2685608908369143&id=100007601799490
গল্প শেয়ারের আয়োজক
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ২৮
দাওয়াহ দেওয়ার ফলে একজন হিন্দু মুসলমান হয়ে যেতে পারে তাহলে দাওয়াহ দিতে থাকলে একজন মুসলিম কেন তাঁর রবের কাছে ফিরবে না,রবের বিধানের দিকে ফিরবে না?ইনশাআল্লাহ ফিরবে, দাওয়াহ এর কাজও চলবে।
বোনেরা,থামবে না তোমরা।দিতে থাকো তোমার রবের দিকে ফিরে আসার দাওয়াহ।কোনো না কোনো পাখি নিশ্চয় নীড়ে ফিরবে ইনশাআল্লাহ!
গল্প নাম্বার:২৮
লেখিকার পাঠানো লেখা হুবুহু তুলে দেওয়া হয়েছে।
"তিনি তোমাকে পেয়েছেন পথহারা অবস্থায় অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন।"
[সূরা দোহাঃ ৭]
আমি খুব 'সাধারণ মুসলিম' পরিবারের মেয়ে। 'সাধারণ মুসলিম' বলতে নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত এসব ব্যাপারে মুটামুটি সচেতন হলেও পর্দার ব্যাপারটা বুজতনা। ছোটবেলায় বাচ্চাদের মক্তবে পাঠানো, হুজুর রেখে কুরআন শিক্ষা দেওয়া, আর আধা মাথায় কাপড় দিয়ে সবার সাথে হাসি হাসি মুখ করে কথা বলা আর ভদ্রভাবে চলাফেরা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের ইসলাম। (আল্লাহ্ মাফ করুক)
আমার মা বাবা দুজনেই ছিলেন সরকারি চাকুরিজীবী। তাদের চাকরির সুবাদে আমাদের দাদাবাড়িতে থাকা হতো না। যেখানে থাকতাম তার পাশেই ছিল হিন্দুপাড়া। আমাদের জন্ম বেড়ে উঠা এখানেই। হিন্দুদের উলূধ্বনি, ঢাকের শব্দ শুনে আর বিভিন্ন আচারঅনুষ্ঠান দেখে দেখেই আমাদের বড় হওয়া। কোনটা শিরক কোনটা গুনাহ্ এগুলা আমরা বুজতাম না। নাস্তাগফিরুল্লাহ্। ছোটবেলায় আমাদের সাথের ছোট ছোট হিন্দু ছেলে মেয়েদের কুরবানির গোস্ত, গরুর কলিজা এগুলো খাওয়াতাম। তারাও লুকিয়ে খেত। আমরা ভাবতাম এগুলো খেলেই ওরা মুসলিম হয়ে যাবে।
যাই হোক এভাবে চলছিল দিন। যখন ক্লাস 9/10 এ পড়ি তখন সেই হিন্দু পাড়ার আমার থেকে বয়সে বড় কিন্তু ক্লাসে ছোট এক হিন্দু বান্ধবীকে বোঝাতাম মুসলিম হয়ে যেতে। যদিও আমি ছোট এবং ইসলাম সম্পর্কে অতবেশি বুঝি না, তবে এটুকু জানতাম যে কাউকে মুসলিম বানাতে পারার কারন হতে পারাটা অনেক সোয়াবের কাজ। তা ভেবেই তাকে দাওয়াত দেওয়া। সে ও বুঝতে পেরেছিল কিন্তু ও বলতো "আমি যদি মুসলিম হই তবে আমার বাবা আমাকে কেটে টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিবে"। যদিও এসএসসি পরীক্ষার পর ওর বিয়ে হয়ে যায় পারিবারিক ভাবেই।
আমি ততদিনে কলেজে পড়ি। বাসা থেকে দূরের কলেজে ভর্তি হওয়ায় ওখানে থেকেই পড়াশোনা করতে হতো। সেখানে যে মেসে থাকতাম ওখানে ছিল সিনিয়র দুইজন হিন্দু আপু। একজন খুব সাদামাটা আরেকজন ওভারস্মার্ট। তো একদিন ওই দুই আপুকে নিয়ে বসে জান্নাত জাহান্নমের বর্ণনা শুনালে সাদামাটাজন কান্না করে দিলেন আরেকজন খুব ভয় পেলেন। আমিও পেয়ে গেলাম ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার সুযোগ। তো যেই আপুটা ওভারস্মার্ট ছিল উনি খুব ভয় পেয়ে উনার বয়ফ্রেন্ডকে বললেন চল আমরা মুসলিম হয়ে যাই। এই কথা শুনে উনার বয়ফ্রেন্ড তো ক্ষেপে গিয়ে বললেন 'তোমার মাথায় এগুলো ভূত কে চাপিয়েছে?' আপুও আমার কথা বলে দিলেন। আর আমাকে ফোনে ধরিয়ে দিলেন। তখন যেহেতু মাহরাম ননমাহরাম বুজতাম না কথা বললাম (আস্তাগফিরুল্লাহ্)। উনি আমাকে খুব শাসালেন যেন আর কখনো আপুকে এসব না বলি। তার পর আপুরা ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মেস ছেড়ে দিল। তাদের সাথে আর কোনদিন দেখা হয়নি কথাও হয়নি।
“আল্লাহ্ যাকে সৎ পথে পরিচালিত করেন সেই সৎ পথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনও তার কোন পথ প্রদর্শনকারী অভিভাবক পাইবে না।”
[সূরা কাহাফঃ ১৭]
যাই হোক ২০১০ সালে আমি অনার্সে ভর্তি হই। ২০১৩ সালে হলে সীট পাই। সীট পাওয়ার আগে আল্লাহ্ পাকের কাছে শুধু দু'আ করতাম যেন আমার রুমে কোন হিন্দু/বৌদ্ধ/খ্রিস্টান কেউ না থাকে। যদিও আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে মাত্র দুজন ছিল মুসলিম। আর বাকি চারজনের একজন চাকমা(বৌদ্ধ, সে কিছু দিন আগে ইসলাম গ্রহন করেছে আলহামদুলিল্লাহ্), একজন গারো(খ্রিস্টান), একজন ত্রিপুরা(হিন্দু+বৌদ্ধ দুই ধর্মই পালন করে), আর একজন বাঙালি খ্রিস্টান! তবু ও চাইতাম আমার রুমে যেন এরকম কেউ না থাকে। কারন এমন কেউ থাকলে আমার নামাযে খুব ওসওয়াসা হতো। যদিও তখনো ইসলাম প্র্যাক্টিস করতাম না শুধু নামাযটাই পড়তাম তাও ইরেগুলার (আস্তাগফিরুল্লাহ্)। এর আগে সাবলেটে একবার এক হিন্দু রুমমেট ছিল সে রুমে মূর্তির ছবি রাখতো সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এমন দু'আ করা।
কিন্তু আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়া তা'আলার কি কুদরত হলে উঠে দেখি রুমমেটতো ভালো খোদ আমার বেডমেটই 'হিন্দু'! হিন্দু তো হিন্দু এমনই হিন্দু যাকে বলে কাট্টা হিন্দু!! সে হিন্দু ধর্মের সব কিছু মনে প্রাণে মেনে চলতো। প্রতি সপ্তাহে উপোস দেওয়া, মন্দিরে গিয়ে পূজা দেওয়া এমনকী মুসলিম রুমমেটদের রান্না কোনোকিছুও সে খেতো না, এমন কি কারো সাথে বেশি কথা ও বলতো না(পরবর্তীতে রুমমেটদের থেকে জেনেছিলাম)।
যাই হোক আমি এসব দেখে শুনে ক্ষেপে গিয়ে কোন চিৎকার করি নি। শুধু হেসেছিলাম আর মনে মনে বলেছিলাম হায় আমার আল্লাহ্ এই ছিল তোমার পরিকল্পনা! তবে আপুটা ছিল খুবই সহজ সরল বোকাসোকা প্রকৃতির। একটা উদাহরণ দেই ২০১৪/১৫ সালে ঢাকার মুটামুটি বিখ্যাত/কুখ্যাত যাই বলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মাস্টার্স করা একটা মেয়ে ফোন ব্যবহার করে না, ভাবা যায়!! যাই হোক... এই মেয়েটাই আমার দ্বীনের পথে আসার প্রধান মাধ্যম ছিল!!!
"...বস্তুতঃ আল্লাহ্ই সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী!"
[সূরা আল-আনফালঃ ৩০]
যদিও আমি তখন পরিপূর্ণ দ্বীন মানতাম না, অবশ্য অতকিছু জানতাম ও না (আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়াতুবু ইলাইহি)। তবে হলে উঠবার বছর খানেক আগে থেকে রেগুলার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার চেষ্টা করতাম। হলে নামায রুম ছিল বেশিরভাগ সময় ওখানেই নামায আদায় করতাম। রুমে হিন্দু আপু থাকলে নামাজ নিয়ে ওসওয়াসায় ভুগতাম। তবে রুমে ও পড়া হতো। এভাবেই চলছে দিন। যে মেয়েটা কারো সাথে কথা বলতেই লজ্জা পেত সেই মেয়ে আমার সাথে তার সব কথা শেয়ার করতে লাগলো। আমাকে ফজরে নামাজের জন্য ডেকে ও দিত। আর বলতো নামাজ তার খুব ভালো লাগে। সে আমার সিনিয়র হলেও আমরা একদম বান্ধবীর মতো হয়ে গেলাম। তার সাথে দুষ্টুমি খুনসুটি, মারামারি ও হতো মাঝে মাঝে। তার অনেক গুলো ভালো গুণ ছিল যেখানে হলের ভেতর অধিকাংশ মুসলিম মেয়েরাই ওড়না মাথায় দেয় না, মাথায় তো দূরে থাক ওরনার ব্যবহারই কম সেখানে তার মাথা থেকে কখনো ওড়না সরে না। আর সবসময়ই ফুলহাতা জামা পরে। আস্তে আস্তে আমি তার খুব ক্লোজ হয়ে যাই। আমার সব রান্না করা খাবার সে খেতো। তখন অন্য রুমমেটরা বলতো কিরে আমরা এত দিন একসাথে আছি আমাদের খাবার খাস না বেডমেটের খাবার তো ঠিকই খাচ্ছিস ইত্যাদি বলে টিপ্পনি কাটতো। (তার ভাষ্যমতে আমারমত করে কেউ তার সাথে মিশেইনি কখনো)।
এভাবে চলতে চলতে এক সময় সে পূজা দিয়ে প্রসাদ নিয়ে আসত। আমরা খেতাম। কিন্তু একদিন আমাকে খেতে বললে আমি বললাম যে খেতে পারবো না। সে বলে কেন খাবা না। তখন আমি বলি যে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর নামে উৎসর্গকৃত খাবার আমাদের জন্য হারাম! এটা শুনেই তার মনটা খারাপ হয়ে গেল।
তার পর সুযোগ বুঝে তাকে দাওয়াত দিলাম। এই যে আপনি এত ভালো, মাথা থেকে ওড়না সরে না, কারো সাথে ঝগড়া করেন না, কারো বদনাম করেন না এগুলো করে কি লাভ? আপনি মুসলিম হলে এসবের অনেক বিনিময় পেতেন ইনশাআল্লাহ্। কিন্তু কাফের অবস্তায় মৃত্যু হলে হবেনতো সেই জাহান্নামের লাকরি। মৃত্যুর পর যে চিতায় উঠবেন এভাবেই আজীবন জ্বলতে হবে। এটা শুনে সে ভয় পেয়ে যায়! আরো অনেক কিছু বলতাম ওগুলা বলতে গেলে একটা বই হয়ে যাবে। তবুও উদাহরন সরূপ বলি তাদের দেব দেবীদের (রাধা+কৃষ্ণ/কালি আরো যাদের সম্পর্কে যতটুকু জানতাম) এক একজনের ক্যারেকটার বিশ্লেষণ করে বলতাম এটা কোন ঈশ্বর বা দেবতার গুণ হতে পারে না। ঈশ্বর বা দেবতা হবে এমন যার কোন দোষ নেই। তারপর দেখি সে কোন রিয়েক্ট করে না বরং কনফিউসড। তখন ও বলে "জানো আমার বাবা বলে মুসলমানদেরই সুবিধা এক আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করা নিয়ে ব্যস্ত। আর আমাদের এত এত দেবতা কাকে রেখে কাকে সন্তুষ্ট করবো?!?" তার বাবা আবার মন্দিরের পুরোহিত। তার পর শুরু হলো আমার কার্যক্রম (আলহামদুলিল্লাহ্)! বললাম তোমার বাবা অশিক্ষিত গ্রামের মানুষ তাও ঠিকই বুজেছে আর তুমি শিক্ষিত হয়ে ও বোঝা না। দিন রাত তার কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতাম। যদিও ইসলাম সম্পর্কে এই নাচিজের জ্ঞান খুবই কম, তখন আরো কম ছিল (আস্তাগফিরুল্লাহ্)! যতটুকু ছিল ততটুকু উজাড় করে দিয়ে তাকে বোঝাতে থাকলাম। একপর্যায়ে দেখি সে উপোস দেওয়া, মন্দিরে গিয়ে পূজা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে! সুবহানআল্লাহি ওয়াবিহামদিহি!
এরই মাঝে জানতে পারলাম উনার বড়বোন একজন মুসলিম ছেলেকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। ব্যাস... আমাকে আর পায় কে। বড় আপু আবার প্রতিদিনই হলে আসতো আমার বেডমেটের জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে। তখন সুযোগ মত বলে ফেলতাম কি আপু একাই জান্নাতে যাবেন?!? তখন আপু হাসতো! আমি ভাবতাম আপু হয়তো উনার বোনকে দাওয়াত দেওয়ার ব্যাপারটা পজিটিভলী নিবেন। কিন্তু নাহ্। হলো তার উল্টো। আপু আমার বেডমেটকে খুব শাসিয়ে গেলেন। আমার কথায় যেন কান না দেন। কে শোনে কার কথা। আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়া তা'আলা তো সব পরিকল্পনা করেই রেখেছেন। তাঁর পরিকল্পনামাফিক সব কিছু হতে লাগলো এবং খুব দ্রুত। একদিন তার হাতে পেঁচানো একটা লালসুতা (দেবতাদের কি একটা হিসেবে যেন পরে) অনেকটা জোর করেই কেটে ফেলে দেই। উনার কাছে একটা কালী দেবীর(অশ্লীল) ছবি ছিল ঐটাও ছিড়ে ফেলে দেই আর বলি দেবীই যদি হয় এত অশ্লীল তার শীষ্যরা কেমন হবে। তখন উনি তেমন কিছুই বলে নি। তখন বুঝতে পারলাম সে ইসলাম গ্রহণের জন্য মুটামুটি প্রস্তুত!
"অতঃপর আল্লাহ্ যাকে হিদায়েত করতে চান তার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন..."
[সূরা আল-আনআমঃ ১২৫]
অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে ভাবলাম আমি চাইলেইতো আর কেউ হিদায়েতের পথে আসবে না। কিন্তু কারো হিদায়াতের কারন হতেতো চেষ্টা করতেই পারি। যাইহোক আল্লাহ্ আযযা ওয়াজাল অল্পকিছু দিনের মধ্যেই আমার সেই চেষ্টাকে কবুল করে নিলেন আলহামদুলিল্লাহ্! আপুকে কালিমা শিখালাম। এবং সে মনে প্রানে ইসলামকে তার ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করলো। সুবহানআল্লাহ্! আর তার নাম রাখলাম আয়েশা সিদ্দিকা!!
যেহেতু আমি নিজেই ইসলামের নিয়মকানুন অতটা জানতাম না তাই আয়েশা আপুকে নিয়ে পরেগেলাম টেনশনে। কিভাবে কি শিখাবো কোথাথেকে শুরু করবো ইত্যাদি। যাইহোক আল্লহর ওয়াস্তে শুরু করলাম কালিমায়ে তাইয়্যিবা মুখস্থ দিয়ে। তার পর সূরা ফাতিহা, ইখলাস শিখালাম অনেক কষ্টে। কারন আরবি উচ্চারণ গুলো করতে আর পড়তে তার অনেক কষ্ট হয়। পড়ার সময় মনে হতো তার প্রাণ বায়ু ওষ্ঠাগত! দাঁতগুলি বোধহয় খুলেই পরবে এবার!!!
যাই হোক বুঝতে পারলাম এভাবে হবে না। তাকে আরবি হরফ আর মাখরাজ থেকেই শেখাতে হবে। যদিও নিজেই অনেক দূর্বল তবুও বাসা থেকে ছোট ভাগ্নে ভাগ্নির কায়দা সহ আরবি হরফ মাখরাজ শেখার যত বই সব নিয়ে গেলাম।
কিন্তু সে রুমে সবার সামনে পড়বে না। সে বলেছিল আপাতত কাউকে না জানাতে। এখন আমি কি করি। হরফতো পড়াতে হবে জোরে না হলে মাখরাজ অনুযায়ী উচ্চারণ করাবো কিভাবে। সে বলে মাঠে চল। কি আর করা মাঠেই গেলাম। এভাবে কয়েকদিন করার পর মনে হলো নাহ্ এভাবে হবে না। ভালো কাউকে দিয়ে পড়াতে হবে। নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল যে আপুকে কিভাবে সব নিয়মকানুন শেখানো যায়। দু'আ করতে থাকলাম যেন তেমন কাউকে মিলেয়ে দেন। এবার ও আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়া তা'আলা এই নাচিজ অধমের ডাক কবুল করলেন খুব দ্রুতই। আলহামদুলিল্লাহ্!
হলের নামাজ রুমে একটা মেয়ে খুব সুন্দর কুরআন তিলাওয়াত করে। মনে মনে ভাবতাম ইশ্ ওর সাথে একটু কথা বলতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু টাইমিং এ হতো না। আল্লাহ্ আযযা ওয়াজাল এঁর অশেষ রহমতে একদিন মেয়েটাই আমার সাথে কথা বলতে আসে। আল্লাহু আকবার! (বলে রাখা ভালো ও ই ছিল আমাদের হলের একমাত্র ফুল পর্দা করা মেয়ে, ওকে দেখে ভাবতাম ও যদি পারে আমি কেন পারবো না। কিন্তু ও ই যে সেই মেয়ে এটা জানতাম না)। ওর নাম সুমাইয়া। আমাকে বলছিল 'আপু আপনি কি তালিমে যান।' আমি বললাম না তবে আমি খুঁজতেছি। পেলে যাব ইনশাআল্লাহ্। ও এক তালিমের পয়েন্টের সন্ধান দিল। আর তখনই ওকে বললাম তোমার তিলাওয়াত সুন্দর তুমি কি একজনকে মাখরাজ সহ আরবি হরফ গুলো শিখাতে পারবা? ও রাজি হয়ে গেল।
কিন্তু এখানে ও বিপত্তি। আমার বেডমেট একা একা পড়বে না সে যতক্ষণ পড়বে ততক্ষণ আমাকে তার পাশে বসে থাকা লাগবে!
তারপর একদিন সুমাইয়ার সাথে তালিমে গেলাম আয়েশা আপু সহ। সেখানে গিয়েই অনেক দ্বীনী বোন, আন্টিদের সাথে দেখা হলো। তাদের সহযোগিতায় আয়েশা আপুকে নিয়ে আমার টেনশন অনেকটাই কমে গেল আলহামদুলিল্লাহ্। তাদের মধ্যে মিথিলা আপু নামে একজন আপু ছিল অন্যতম। উনিই ছিলেন আমাদের পরবর্তী উসতাজা। মিথিলা আপুর কাছেই পরবর্তীতে আয়েশা আপু সহ আমি আর সুমাইয়া ও আরবি আর উর্দু পড়তাম! তাদের দেখে ভালো করে বুঝতে পারলাম পর্দার গুরুত্ব। এতদিন তো আয়েশা আপুকে কালিমার দাওয়াত দিতাম কিন্তু এখনতো পর্দার কথা ও বলতে হবে অথচ আমার মধ্যেই পর্দার বালাই নেই (আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়াতুবু ইলাইক)। যদিও মাথায় তথাকথিত হিজাব পেচাইতাম! কিন্তু এখন আরেকজনকে দাওয়াত দিতে হলে আগেতো নিজেকে পরিপূর্ণ পর্দা করতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে কিছুদিনের মধ্যেই শুরু করে দিলাম বোরকা, হিজাব,নিকাব, হাত পা মোজা পরা! এই হলো আমার দ্বীনের পথে আসার শুরু!
আয়েশা আপু খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট সেই সাথে বুকিশ ও মানে সারাক্ষণ তার হাতে বই থাকতো। চাকরির বই ক্লাসের বই কিছু একটা সবসময়ই তার হাতে থাকতো। অনার্সে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং এ ফার্স্টক্লাস। কিন্তু মাস্টার্স পরীক্ষার আগে আগে ইসলাম গ্রহন করায় সে আর চাকরির বই ও পড়ে না ক্লাসের বই ও খুব কম পড়ে। সে ব্যস্ত আরবি শিখতে। এখন এটা নিয়ে ও আপুর বড় বোন আর রুমমেটরা আমাকে কথা শোনায়। তো একদিন আপু আমাকে বলছে "মনি আমি যে মুসলিম হয়েছি স্বরসতী (হিন্দুদের বিদ্যাদেবী) যদি আমার উপর রাগ করে আমার রেজাল্ট খারাপ করে দেয়।" আমি বললাম হায় আল্লাহ্ এটা তুমি কি বললা এই একিন যদি থাকে তাহলে তো তুমি মুসলিমই হতে পারবা না। স্বরসতী বলে কোন কিছুর কোন অস্তিত্ব নাই। সব কিছুর মালিক এক মাত্র আল্লাহ্। তখন সে তওবা করে আর পড়া শুরু করে। আমি বললাম দেখো তুমি ফার্স্টক্লাস পাবেই ইনশাআল্লাহ্! আর পেলো ও তাই। আমি ওর রেজাল্ট এর দিন বাসায় ছিলাম। রেজাল্ট পেয়ে আপু প্রথমে আমাকে ফোন করে জানায়। আমি শুনে কান্না করে ফেলি। আনন্দের কান্না। কারন ও বলেছিল ওর একটা পরীক্ষা খুব বাজে হয়েছে। তখন থেকে দু'আ করতাম আল্লাহ্ আমার মানসম্মান রেখো। আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়া তা'আলা আমাকে অসম্মানিত করেন নি।
"হে রাজ্যাধিপতি আল্লাহ্! আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার নিকট থেকে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে নেন, যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। আপনারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান।"
[সূরা আল ইমরানঃ ২৬]
তার পর শুরু হলো নতুন বিপত্তি। হলে এখন আমরা তিন জন পরিপূর্ণ পর্দা করি। আমরা তিন জন একসাথে তালিমে যাই। কিন্তু হলসুপার আমাদের তিনজনকে দেখলেই শাসাতে শুরু করেন। এভাবে কেউ পর্দা করে, এলিয়েনের মত লাগে দেখতে, নিজেদের কি মনে করো পাদ্রি হয়ে গেছো, আর চিরচেনা "জঙ্গি" উপাধিতো আছেই। এভাবে হলে থাকা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। জঙ্গি তকমা গায়ে নিয়েই চলতে থাকলাম। আয়েশা আপু মাস্টার্স শেষ করে বের হয়ে গেলেন। সুমাইয়াকে তো জঙ্গি উপাধি দিয়ে হলছাড়াই করে দিল। আমি তখন বাসায় ছিলাম বলে আমাকে হলছাড়া করতে পারে নি। এই ছিল দ্বীনের পথে আসার পরবর্তী হললাইফ।
মিথিলা আপু ও ততদিনে চলে গেলেন ময়মনসিংহ।তবে আপু আমাদেরকে একটা মহিলা মাদ্রাসার সন্ধান দিয়েছিলেন। বলেছিলেন আমরা যেন ওখানে আমাদের পড়াটা কন্টিনিউ করি। কিন্তু আমার আর সুমাইয়ার হলো না। তবে আয়েশা আপু এখন সেই মাদ্রাসাতেই পড়াশোনা করছেন। সুযোগ পেলে আমি ও যাই। এখন আমি তার কাছে অনেক কিছুই শিখি।
আর আয়েশা আপুকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার দায়ে উনার বড় বোন ফাতিমা আপু আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে আয়েশা আপুর প্রচেষ্টায় আমাদের সম্পর্ক ভালো হয়ে যায়। আর আয়েশা আপুর ছোটবোন ও ইসলাম গ্রহণ করে! সুবহানআল্লাহ্। আর উনার বাবা মাকেও ইসলামে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সবাই দু'আ করবেন উনাদের পরিবারের জন্য। আল্লাহ্ যেন উনাদের সাথে সাথে উনাদের মা বাবাকেও কবুল করেন সেই সাথে এই নাচিজ অধমকেও!!!
আর আমার পরিবারে তেমন কোন সমস্যার সম্মুখীন হই নি। সবাই খুশিও হয়েছিল। তবে বিপত্তি বাঁধে চাকরি করবনা বলার পর, আর দ্বীনদার ছেলে বিয়ে করবো এটা বলার পর। সবাই খুব হতাশ হয়েছে কয়েকজন কথা ও শুনিয়েছে, এখনো শুনাচ্ছে। যদিও আমি আমার সিদ্ধান্তে অনর। তাই তারা কথা শুনিয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না।
যাই হোক আমি আমার গন্তব্যের পথ খুঁজে পেয়েছি এইজন্য আলহামদুলিল্লাহ্!
আলহামদুলিল্লাহ্ ফর ইসলাম!!
আলহামদুলিল্লাহ্ ফর এভরিথিং!!!
"হে আমাদের রব্ব! সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরসমূহকে বক্র করে দিবেন না এবং আপনার নিকট থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন, আপনিই তো সমস্ত কিছুর দাতা।"
[সূরা আল-ইমরানঃ ৮]
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
দ্বীনে ফেরার ২৭ নাম্বার গল্পের লিংক

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2690984931164874&id=100007601799490
গল্প শেয়ারের আয়োজক
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
গল্প নাম্বার: ২৯
লেখিকার পাঠানো লেখা হুবুহু তুলে দেওয়া হয়েছে
_______
এই গল্প টা একেবারে ডুবে যাওয়ার গল্প বরং ডুবতে ডুবতে আবার ভেসে উঠার গল্প। এই গল্প টা হারিয়ে যাবার গল্প নয় এবং নিজেকে নতুনভাবে ফিরে পাবার গল্প। অতীতের অন্ধকার জীবনের বলয় ভেঙে আলোকিত জীবনের দুয়ারে কড়া নাড়ার এই মূহুর্তগুলো একদিকে কষ্টমুখর হলেও অন্যদিকে সুখের বার্তাবাহক আমার রবের সান্নিধ্যে আসার গল্প।
ইবনুল ক্ব্যায়ুম আল জাওযিয়্যাহ (রহ.)বলেছিলেন, "আল্লাহতালাকে বাদ দিয়ে অন্তর যখন অন্যকিছুকে আঁকড়ে ধরে, আল্লাহ তায়ালা তাকে তাঁর আঁকড়ে ধরা জিনিসের উপরই নির্ভরশীল করে দেন, আর বেলাশেষে সে তার দ্বারাই প্রতারনার শিকার হয়।"
হে আমি আমার রবের থেকে বেশি ভালোবাসেফেলেছিলাম দুনিয়ার মানুষকে। দুনিয়াকে সন্তুষ্ট যা যা দরকার তাই করতাম কিন্তু আল্লাহর অবাধ্য হয়ে। আগে হিজাব ছাড়া বাইরে যেতাম না,নিয়মিত নামাজ পড়তাম, গান শুনতাম না।কিন্তু বিয়ের পর আমি অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়। আগের মতো আমল করি না।আমার আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে আমার মনে হচ্ছিলো আমি সুখেই আছি। কিন্তু এই সুখ বেশি দিন টিকেনি। একটার পর একটা ঝড় আসতে শুরু করে আমার জীবনে।যাদের খুশি করতে গিয়ে আমার রবকে ভুলেছিলাম সেই মানুষগুলোই কেমন জানি আস্তে আস্তে পাল্টে যাচ্ছে। অচেনা মানুষগুলোকে আপন করে চেষ্টা করেছি কিন্তু ভালোবাসাগুলো একতরফা ছিলো।
আসলে দোষটা মনে হয় আমারই আমিই হয়তো কারো মন জয় করতে পারিনি।বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসি কিছুদিনের জন্য কিন্তু এই আসা যে এতোমাস হয়ে যাবে বুঝিনি আমি।আমার কাছে দিনরাত তখন এক লাগতো। প্রচুর মানসিক যন্ত্রনায় ভুগতে লাগলাম। সারাক্ষন শুয়ে বসে গান শুনতাম, তখন আরো বেশি খারাপ লাগতো। কি করলে দোয়া কবুল হয় পাগলের মতো খুঁজতাম, ফেসবুকে বিভিন্ন দোয়া কবুলের পেইজ গ্রুপে এড হলাম,ইউটিউব এ সার্চ দিতাম, তাহাজ্জুদ পড়তাম সবকিছু করি কিন্তু আমার দোয়া আর কবুল হয়না।আমার এ অবস্থা দেখে আমার থেকে আমার পরিবার বেশি কষ্ট পেতো।ওরা দেখতো ওদের চোখের সামনে একটা জীবন্ত লাশের ছবি,,,,,।
হঠাৎ ফেসবুক এ এক বোনের সাথে আমার পরিচয় হয়, শারমিন আক্তার ঝোমা আপু। আমি আপুর কাছে তখন বলতাম আমার কষ্টগুলোর কথা।তখন আপু আমাকে বুঝাতেন সবর করার জন্য,আপুর সাথে কথা বললে আমার মনে হতো আমার কোনো কষ্ট নাই।এতো সুন্দরকরে আল্লাহর বানীগুলো আপু আমাকে বলতো কিভাবে আমার আল্লাহর উপর ভরসা করতে হয়,এতো দুর্যোগের মধ্যেও নিজেকে আল্লাহর কাছে কিভাবে সৎ রাখবো।আপু আমাকে শিখিয়েছে হাল ছেড়ে না দিয়ে আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করে দোয়া করে যাওয়ার জন্য।
আমি ততোদিনে অনেকটা পরিবর্তন হতে শুরু করেছি।ফেসবুক আইডি থেকে সব গান সরিয়ে দেয়,ছবি ডিলিট করি, গানের পেইজ, ফালতু পেইজ থেকে লিব নেই।ইসলামিক সব পেইজ এ নতুন করে এড হতে শুরু করি নিয়মিত নামাজ পড়া শুরু করি তখন আস্তে আস্তে ভিতরে কেমন জানি এক অন্যরকম প্রশান্তি লাগা শুরু হলো আলহামদুলিল্লাহ।
হঠাৎ করে কিছুদিন যাবত দাঁত ব্যথা শুরু হয়।ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়, নৌকায় এক লোক গান শুনছিলো, ততোদিনে আমি গান শুনা কমিয়ে দেয় কিন্তু শয়তান আমাকে গানের দিকে আকৃষ্ট করতে করতে চাচ্ছিলো আর আমি আমার আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছিলাম ঐ লোক যেনো গান অফ করে। কিছুক্ষন পর খেয়াল করলাম ঐ লোক গান শুনা অফ করে দিয়েছে।ডাক্তারের কাছে গিয়ে গিয়ে শুনি আশপাশ থেকে গানের আওয়াজ আসছে তখন আবার মনে মনে আল্লাহকে বলতে লাগলাম আল্লাহ ওরা যেনো গান শুনা অফ করে ওয়াজ শুনে কিছুক্ষন পর তাই হলো, সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ আল্লাহ আকবর।
এই ঘটনা আমি শারমিন আপুর কাছে বলি তখন তিনি আমাকে বলেন যে,
" আল্লাহ চায় তার বান্দি একনিষ্ঠ হয়ে তার কাছে ফিরে আসুক। "
আপুর এই কথাটা আমার অন্তরে গিয়ে লাগে। আমার চোখের অশ্রু যেনো থামছে না, এতো কেঁদেছিলাম আমি ওইদিন,এই কান্না ছিলো খুশির কান্না আলহামদুলিল্লাহ। আমি আমার আল্লাহর এতো এতো এতো অবাধ্য হয়েছিলাম কিন্তু আমার আল্লাহ আমাকে ছেড়ে যাননি, তখনও তিনি আমাকে ভালোবাসেছেন, তার কাছে ফিরে আসার জন্য আমাকে বার বার সুযোগ দিয়েছেন।
শারমিন আপু তখন আমাকে বলে এটা আল্লাহর একটা প্লেন ছিলো দুনিয়াটা যে একটা মরিচিকা তা বুঝানোর জন্য সেই মানুষগুলোকে কিছুটা দূরে সরিয়ে আপনার আসল ঠিকানা কোনটা চিনানোর জন্য।আল্লাহ আকবর আমার আল্লাহর প্লেন এতো সুক্ষ ছিলো আমাকে সঠিক রাস্তা দেখানোর জন্য আমি কিনা আমার সেই দয়ালু আল্লাহর প্রতি কত অভিযোগ করেছি।
আমি সেদিন থেকেই আমার আল্লাহ ্র জন্য নিজেকে পুরোপুরি পরিবর্তনএর চেষ্টা শুরু করি। আমি পর্দা শুরু করলাম আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু শয়তান নিজে কিছু করতে পারেনা তখন আপন মানুষের দারা কষ্ট দিতে চায় তেমনি পর্দা শুরুর পর থেকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে কিন্তু আমার আল্লাহ আমাকে ধৈর্য দিয়েছেন আমি হজম করেছি সব আলহামদুলিল্লাহ। ওরা যত কথাই বলুক আমি কিছু বলতাম না তখন আস্তে আস্তে আমার পরিবার ও পরিবর্তন হতে শুরু করে আলহামদুলিল্লাহ আমাকে আর আগের মতো কিছু বলে না পর্দা নিয়ে আলহামদুলিল্লাহ।
আমি নিজেকে আল্লাহর জন্য পরিবর্তন এর প্রায় একবছর আগে এক অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি।
আমি একটা ঘরে শুয়ে আছি কিন্তু চোখ বন্ধ আমার আম্মা পাশে দাঁড়িয়ে আছে। কে যেনো আমার আত্না নিয়ে চলে যাচ্ছে, কিন্তু আমি টের পারছিলাম না কিছুই, আমার কান্না শুরু করলো। কিন্তু দেখলো যে আমি "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ( সাঃ)" পড়ছি। তখন আমার আম্মা কান্না থামিয়ে বলতে লাগলো সুবহানাল্লাহ। আমার আত্মাকে কোথায় যেন নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো চারদিক থেকে শুধু কালিমা শরীফের ধ্বনি আসতে লাগলো আমার কানে আল্লাহ আকবর।কিছুক্ষন পর আমাকে আবার আগের জায়গায় আনা হলো সেখান থেকে আত্মা নিয়েছিলো আর আমাকে বলে গিয়েছিলো,
" তোমার এখানো গুনাহ মুছার বাকি আছে আরো তাই তোমাকে নেয়নি"।
কোথায় নিলো কারা নিলো কিছুই দেখিনি আমি শুধু অনুভব করেছি আমি।হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেলো ঘড়িতে তাকি দেখি ৩ঃ৩০ মিনিট বাজে এমনই হবে কিন্তু আমার সময় টা এখন খেয়াল আসছে না।
আমি এমন স্বপ্ন দেখেও পাত্তা দেয়নি, আমি আমার কাছের একজন এর কাছে বলেছিলাম স্বপ্নের কথাটা কিন্তু তখন ওনি আমাকে বলেছিলেন তুমি কি এমন পরহেজগার নাকি এমন স্বপ্ন দেখবা?
ওনার কথা শুনে আমার মন খারাপ হয়ে গেলো তাই আমিও আর আমলে নেয়নি এই স্বপ্ন।এই একবছর অনেক অবাধ্য হয়েছি আমি আমার আল্লাহর। কিন্তু একবছর পর আমি বুঝতে পেরেছি আমার আল্লাহ তখনই তার কাছে ফিরে আসার জন্য আমাকে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
হ্যাহ্যা এখনো রাত আসে দিন যায় কিন্তু আগের মতো আমার আল্লাহর অবাধ্যতাই কাটাই না। এখনো আমার আল্লাহর কাছে দোয়া করি হারানো মানুষগুলোকে ফিরে পাওয়ার জন্য কিন্তু দোয়া করাটাও এখন পাল্টেছে, আল্লাহ যেনো পুরোপুরি হিদায়ত দিয়ে আমার কাছে তাদের ফিরিয়ে দেন।যেনো একসাথে দ্বীনের পথে চলতে পারি। স্বপ্ন দেখি একটা দ্বীনি পরিবারের ।
এই কষ্ট আমার জন্য নিয়ামত ছিলো। আমি আমার আল্লাহকে খুঁজে পেয়েছি। আমার আল্লাহ আমাকে আলোর সন্ধান দিয়েছেন,আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল।
এ যাত্রা এখনো শেষ হয়নি, আরো বহুপথ বাকি। এখন বার বার আমার আল্লাহর বলা কথা গুলো আমি অনুভব করি।
" তিনি তোমাকে পথহারা অবস্থায় পেলেন অতঃপর পথ দেখালেন।"
তবে পরিপূর্ণ হেদায়েত পেয়েছিলাম কিনা তখনই বুঝতে পারবো আমার আল্লাহ যখন আমায় ডান হাতে আমলনামা দিবে।যেদিন আমার আল্লাহর সাথে আমার সাক্ষাত হবে সেদিনই আমি পরিপূর্ণ হবো।
(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোন)
দ্বীনে ফেরার ২৮ নাম্বার গল্পের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2723795271217173&id=100007601799490
দ্বীনে ফেরার গল্প শেয়ারের আয়োজক
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
1.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#দ্বীনের_পথে_ফেরা
Mon Ira Binte Yousuf
"তিনি তোমাকে পেয়েছেন পথহারা অবস্থায় অতঃপর পথ প্রদর্শন করেছেন।"
[সূরা দোহাঃ ৭]
আমি খুব 'সাধারণ মুসলিম' পরিবারের মেয়ে। 'সাধারণ মুসলিম' বলতে নামায, রোজা, হজ্ব, যাকাত এসব ব্যাপারে মুটামুটি সচেতন হলেও পর্দার ব্যাপারটা বুজতনা। ছোটবেলায় বাচ্চাদের মক্তবে পাঠানো, হুজুর রেখে কুরআন শিক্ষা দেওয়া, আর আধা মাথায় কাপড় দিয়ে সবার সাথে হাসি হাসি মুখ করে কথা বলা আর ভদ্রভাবে চলাফেরা করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল তাদের ইসলাম। (আল্লাহ্ মাফ করুক)
আমার মা বাবা দুজনেই ছিলেন সরকারি চাকুরিজীবী। তাদের চাকরির সুবাদে আমাদের দাদাবাড়িতে থাকা হতো না। যেখানে থাকতাম তার পাশেই ছিল হিন্দুপাড়া। আমাদের জন্ম বেড়ে উঠা এখানেই। হিন্দুদের উলূধ্বনি, ঢাকের শব্দ শুনে আর বিভিন্ন আচারঅনুষ্ঠান দেখে দেখেই আমাদের বড় হওয়া। কোনটা শিরক কোনটা গুনাহ্ এগুলা আমরা বুজতাম না। নাস্তাগফিরুল্লাহ্। ছোটবেলায় আমাদের সাথের ছোট ছোট হিন্দু ছেলে মেয়েদের কুরবানির গোস্ত, গরুর কলিজা এগুলো খাওয়াতাম। তারাও লুকিয়ে খেত। আমরা ভাবতাম এগুলো খেলেই ওরা মুসলিম হয়ে যাবে।
যাই হোক এভাবে চলছিল দিন। যখন ক্লাস 9/10 এ পড়ি তখন সেই হিন্দু পাড়ার আমার থেকে বয়সে বড় কিন্তু ক্লাসে ছোট এক হিন্দু বান্ধবীকে বোঝাতাম মুসলিম হয়ে যেতে। যদিও আমি ছোট এবং ইসলাম সম্পর্কে অতবেশি বুঝি না, তবে এটুকু জানতাম যে কাউকে মুসলিম বানাতে পারার কারন হতে পারাটা অনেক সোয়াবের কাজ। তা ভেবেই তাকে দাওয়াত দেওয়া। সে ও বুঝতে পেরেছিল কিন্তু ও বলতো "আমি যদি মুসলিম হই তবে আমার বাবা আমাকে কেটে টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিবে"। যদিও এসএসসি পরীক্ষার পর ওর বিয়ে হয়ে যায় পারিবারিক ভাবেই।
আমি ততদিনে কলেজে পড়ি। বাসা থেকে দূরের কলেজে ভর্তি হওয়ায় ওখানে থেকেই পড়াশোনা করতে হতো। সেখানে যে মেসে থাকতাম ওখানে ছিল সিনিয়র দুইজন হিন্দু আপু। একজন খুব সাদামাটা আরেকজন ওভারস্মার্ট। তো একদিন ওই দুই আপুকে নিয়ে বসে জান্নাত জাহান্নমের বর্ণনা শুনালে সাদামাটাজন কান্না করে দিলেন আরেকজন খুব ভয় পেলেন। আমিও পেয়ে গেলাম ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার সুযোগ। তো যেই আপুটা ওভারস্মার্ট ছিল উনি খুব ভয় পেয়ে উনার বয়ফ্রেন্ডকে বললেন চল আমরা মুসলিম হয়ে যাই। এই কথা শুনে উনার বয়ফ্রেন্ড তো ক্ষেপে গিয়ে বললেন 'তোমার মাথায় এগুলো ভূত কে চাপিয়েছে?' আপুও আমার কথা বলে দিলেন। আর আমাকে ফোনে ধরিয়ে দিলেন। তখন যেহেতু মাহরাম ননমাহরাম বুজতাম না কথা বললাম (আস্তাগফিরুল্লাহ্)। উনি আমাকে খুব শাসালেন যেন আর কখনো আপুকে এসব না বলি। তার পর আপুরা ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে মেস ছেড়ে দিল। তাদের সাথে আর কোনদিন দেখা হয়নি কথাও হয়নি।
“আল্লাহ্ যাকে সৎ পথে পরিচালিত করেন সেই সৎ পথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তুমি কখনও তার কোন পথ প্রদর্শনকারী অভিভাবক পাইবে না।”
[সূরা কাহাফঃ ১৭]
যাই হোক ২০১০ সালে আমি অনার্সে ভর্তি হই। ২০১৩ সালে হলে সীট পাই। সীট পাওয়ার আগে আল্লাহ্ পাকের কাছে শুধু দু'আ করতাম যেন আমার রুমে কোন হিন্দু/বৌদ্ধ/খ্রিস্টান কেউ না থাকে। যদিও আমার ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে মাত্র দুজন ছিল মুসলিম। আর বাকি চারজনের একজন চাকমা(বৌদ্ধ, সে কিছু দিন আগে ইসলাম গ্রহন করেছে আলহামদুলিল্লাহ্), একজন গারো(খ্রিস্টান), একজন ত্রিপুরা(হিন্দু+বৌদ্ধ দুই ধর্মই পালন করে), আর একজন বাঙালি খ্রিস্টান! তবু ও চাইতাম আমার রুমে যেন এরকম কেউ না থাকে। কারন এমন কেউ থাকলে আমার নামাযে খুব ওসওয়াসা হতো। যদিও তখনো ইসলাম প্র্যাক্টিস করতাম না শুধু নামাযটাই পড়তাম তাও ইরেগুলার (আস্তাগফিরুল্লাহ্)। এর আগে সাবলেটে একবার এক হিন্দু রুমমেট ছিল সে রুমে মূর্তির ছবি রাখতো সেই অভিজ্ঞতা থেকেই এমন দু'আ করা।
কিন্তু আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়া তা'আলার কি কুদরত হলে উঠে দেখি রুমমেটতো ভালো খোদ আমার বেডমেটই 'হিন্দু'! হিন্দু তো হিন্দু এমনই হিন্দু যাকে বলে কাট্টা হিন্দু!! সে হিন্দু ধর্মের সব কিছু মনে প্রাণে মেনে চলতো। প্রতি সপ্তাহে উপোস দেওয়া, মন্দিরে গিয়ে পূজা দেওয়া এমনকী মুসলিম রুমমেটদের রান্না কোনোকিছুও সে খেতো না, এমন কি কারো সাথে বেশি কথা ও বলতো না(পরবর্তীতে রুমমেটদের থেকে জেনেছিলাম)।
যাই হোক আমি এসব দেখে শুনে ক্ষেপে গিয়ে কোন চিৎকার করি নি। শুধু হেসেছিলাম আর মনে মনে বলেছিলাম হায় আমার আল্লাহ্ এই ছিল তোমার পরিকল্পনা! তবে আপুটা ছিল খুবই সহজ সরল বোকাসোকা প্রকৃতির। একটা উদাহরণ দেই ২০১৪/১৫ সালে ঢাকার মুটামুটি বিখ্যাত/কুখ্যাত যাই বলেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে মাস্টার্স করা একটা মেয়ে ফোন ব্যবহার করে না, ভাবা যায়!! যাই হোক... এই মেয়েটাই আমার দ্বীনের পথে আসার প্রধান মাধ্যম ছিল!!!
"...বস্তুতঃ আল্লাহ্ই সর্বশ্রেষ্ঠ পরিকল্পনাকারী!"
[সূরা আল-আনফালঃ ৩০]
যদিও আমি তখন পরিপূর্ণ দ্বীন মানতাম না, অবশ্য অতকিছু জানতাম ও না (আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়াতুবু ইলাইহি)। তবে হলে উঠবার বছর খানেক আগে থেকে রেগুলার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার চেষ্টা করতাম। হলে নামায রুম ছিল বেশিরভাগ সময় ওখানেই নামায আদায় করতাম। রুমে হিন্দু আপু থাকলে নামাজ নিয়ে ওসওয়াসায় ভুগতাম। তবে রুমে ও পড়া হতো। এভাবেই চলছে দিন। যে মেয়েটা কারো সাথে কথা বলতেই লজ্জা পেত সেই মেয়ে আমার সাথে তার সব কথা শেয়ার করতে লাগলো। আমাকে ফজরে নামাজের জন্য ডেকে ও দিত। আর বলতো নামাজ তার খুব ভালো লাগে। সে আমার সিনিয়র হলেও আমরা একদম বান্ধবীর মতো হয়ে গেলাম। তার সাথে দুষ্টুমি খুনসুটি, মারামারি ও হতো মাঝে মাঝে। তার অনেক গুলো ভালো গুণ ছিল যেখানে হলের ভেতর অধিকাংশ মুসলিম মেয়েরাই ওড়না মাথায় দেয় না, মাথায় তো দূরে থাক ওরনার ব্যবহারই কম সেখানে তার মাথা থেকে কখনো ওড়না সরে না। আর সবসময়ই ফুলহাতা জামা পরে। আস্তে আস্তে আমি তার খুব ক্লোজ হয়ে যাই। আমার সব রান্না করা খাবার সে খেতো। তখন অন্য রুমমেটরা বলতো কিরে আমরা এত দিন একসাথে আছি আমাদের খাবার খাস না বেডমেটের খাবার তো ঠিকই খাচ্ছিস ইত্যাদি বলে টিপ্পনি কাটতো। (তার ভাষ্যমতে আমারমত করে কেউ তার সাথে মিশেইনি কখনো)।
এভাবে চলতে চলতে এক সময় সে পূজা দিয়ে প্রসাদ নিয়ে আসত। আমরা খেতাম। কিন্তু একদিন আমাকে খেতে বললে আমি বললাম যে খেতে পারবো না। সে বলে কেন খাবা না। তখন আমি বলি যে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছুর নামে উৎসর্গকৃত খাবার আমাদের জন্য হারাম! এটা শুনেই তার মনটা খারাপ হয়ে গেল।
তার পর সুযোগ বুঝে তাকে দাওয়াত দিলাম। এই যে আপনি এত ভালো, মাথা থেকে ওড়না সরে না, কারো সাথে ঝগড়া করেন না, কারো বদনাম করেন না এগুলো করে কি লাভ? আপনি মুসলিম হলে এসবের অনেক বিনিময় পেতেন ইনশাআল্লাহ্। কিন্তু কাফের অবস্তায় মৃত্যু হলে হবেনতো সেই জাহান্নামের লাকরি। মৃত্যুর পর যে চিতায় উঠবেন এভাবেই আজীবন জ্বলতে হবে। এটা শুনে সে ভয় পেয়ে যায়! আরো অনেক কিছু বলতাম ওগুলা বলতে গেলে একটা বই হয়ে যাবে। তবুও উদাহরন সরূপ বলি তাদের দেব দেবীদের (রাধা+কৃষ্ণ/কালি আরো যাদের সম্পর্কে যতটুকু জানতাম) এক একজনের ক্যারেকটার বিশ্লেষণ করে বলতাম এটা কোন ঈশ্বর বা দেবতার গুণ হতে পারে না। ঈশ্বর বা দেবতা হবে এমন যার কোন দোষ নেই। তারপর দেখি সে কোন রিয়েক্ট করে না বরং কনফিউসড। তখন ও বলে "জানো আমার বাবা বলে মুসলমানদেরই সুবিধা এক আল্লাহ্কে সন্তুষ্ট করা নিয়ে ব্যস্ত। আর আমাদের এত এত দেবতা কাকে রেখে কাকে সন্তুষ্ট করবো?!?" তার বাবা আবার মন্দিরের পুরোহিত। তার পর শুরু হলো আমার কার্যক্রম (আলহামদুলিল্লাহ্)! বললাম তোমার বাবা অশিক্ষিত গ্রামের মানুষ তাও ঠিকই বুজেছে আর তুমি শিক্ষিত হয়ে ও বোঝা না। দিন রাত তার কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতাম। যদিও ইসলাম সম্পর্কে এই নাচিজের জ্ঞান খুবই কম, তখন আরো কম ছিল (আস্তাগফিরুল্লাহ্)! যতটুকু ছিল ততটুকু উজাড় করে দিয়ে তাকে বোঝাতে থাকলাম। একপর্যায়ে দেখি সে উপোস দেওয়া, মন্দিরে গিয়ে পূজা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে! সুবহানআল্লাহি ওয়াবিহামদিহি!
এরই মাঝে জানতে পারলাম উনার বড়বোন একজন মুসলিম ছেলেকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে। ব্যাস... আমাকে আর পায় কে। বড় আপু আবার প্রতিদিনই হলে আসতো আমার বেডমেটের জন্য খাবার রান্না করে নিয়ে। তখন সুযোগ মত বলে ফেলতাম কি আপু একাই জান্নাতে যাবেন?!? তখন আপু হাসতো! আমি ভাবতাম আপু হয়তো উনার বোনকে দাওয়াত দেওয়ার ব্যাপারটা পজিটিভলী নিবেন। কিন্তু নাহ্। হলো তার উল্টো। আপু আমার বেডমেটকে খুব শাসিয়ে গেলেন। আমার কথায় যেন কান না দেন। কে শোনে কার কথা। আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়া তা'আলা তো সব পরিকল্পনা করেই রেখেছেন। তাঁর পরিকল্পনামাফিক সব কিছু হতে লাগলো এবং খুব দ্রুত। একদিন তার হাতে পেঁচানো একটা লালসুতা (দেবতাদের কি একটা হিসেবে যেন পরে) অনেকটা জোর করেই কেটে ফেলে দেই। উনার কাছে একটা কালী দেবীর(অশ্লীল) ছবি ছিল ঐটাও ছিড়ে ফেলে দেই আর বলি দেবীই যদি হয় এত অশ্লীল তার শীষ্যরা কেমন হবে। তখন উনি তেমন কিছুই বলে নি। তখন বুঝতে পারলাম সে ইসলাম গ্রহণের জন্য মুটামুটি প্রস্তুত!
"অতঃপর আল্লাহ্ যাকে হিদায়েত করতে চান তার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন..."
[সূরা আল-আনআমঃ ১২৫]
অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে ভাবলাম আমি চাইলেইতো আর কেউ হিদায়েতের পথে আসবে না। কিন্তু কারো হিদায়াতের কারন হতেতো চেষ্টা করতেই পারি। যাইহোক আল্লাহ্ আযযা ওয়াজাল অল্পকিছু দিনের মধ্যেই আমার সেই চেষ্টাকে কবুল করে নিলেন আলহামদুলিল্লাহ্! আপুকে কালিমা শিখালাম। এবং সে মনে প্রানে ইসলামকে তার ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করলো। সুবহানআল্লাহ্! আর তার নাম রাখলাম আয়েশা সিদ্দিকা!!
যেহেতু আমি নিজেই ইসলামের নিয়মকানুন অতটা জানতাম না তাই আয়েশা আপুকে নিয়ে পরেগেলাম টেনশনে। কিভাবে কি শিখাবো কোথাথেকে শুরু করবো ইত্যাদি। যাইহোক আল্লহর ওয়াস্তে শুরু করলাম কালিমায়ে তাইয়্যিবা মুখস্থ দিয়ে। তার পর সূরা ফাতিহা, ইখলাস শিখালাম অনেক কষ্টে। কারন আরবি উচ্চারণ গুলো করতে আর পড়তে তার অনেক কষ্ট হয়। পড়ার সময় মনে হতো তার প্রাণ বায়ু ওষ্ঠাগত! দাঁতগুলি বোধহয় খুলেই পরবে এবার!!!
যাই হোক বুঝতে পারলাম এভাবে হবে না। তাকে আরবি হরফ আর মাখরাজ থেকেই শেখাতে হবে। যদিও নিজেই অনেক দূর্বল তবুও বাসা থেকে ছোট ভাগ্নে ভাগ্নির কায়দা সহ আরবি হরফ মাখরাজ শেখার যত বই সব নিয়ে গেলাম।
কিন্তু সে রুমে সবার সামনে পড়বে না। সে বলেছিল আপাতত কাউকে না জানাতে। এখন আমি কি করি। হরফতো পড়াতে হবে জোরে না হলে মাখরাজ অনুযায়ী উচ্চারণ করাবো কিভাবে। সে বলে মাঠে চল। কি আর করা মাঠেই গেলাম। এভাবে কয়েকদিন করার পর মনে হলো নাহ্ এভাবে হবে না। ভালো কাউকে দিয়ে পড়াতে হবে। নিজেকে খুব অসহায় লাগছিল যে আপুকে কিভাবে সব নিয়মকানুন শেখানো যায়। দু'আ করতে থাকলাম যেন তেমন কাউকে মিলেয়ে দেন। এবার ও আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়া তা'আলা এই নাচিজ অধমের ডাক কবুল করলেন খুব দ্রুতই। আলহামদুলিল্লাহ্!
হলের নামাজ রুমে একটা মেয়ে খুব সুন্দর কুরআন তিলাওয়াত করে। মনে মনে ভাবতাম ইশ্ ওর সাথে একটু কথা বলতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু টাইমিং এ হতো না। আল্লাহ্ আযযা ওয়াজাল এঁর অশেষ রহমতে একদিন মেয়েটাই আমার সাথে কথা বলতে আসে। আল্লাহু আকবার! (বলে রাখা ভালো ও ই ছিল আমাদের হলের একমাত্র ফুল পর্দা করা মেয়ে, ওকে দেখে ভাবতাম ও যদি পারে আমি কেন পারবো না। কিন্তু ও ই যে সেই মেয়ে এটা জানতাম না)। ওর নাম সুমাইয়া। আমাকে বলছিল 'আপু আপনি কি তালিমে যান।' আমি বললাম না তবে আমি খুঁজতেছি। পেলে যাব ইনশাআল্লাহ্। ও এক তালিমের পয়েন্টের সন্ধান দিল। আর তখনই ওকে বললাম তোমার তিলাওয়াত সুন্দর তুমি কি একজনকে মাখরাজ সহ আরবি হরফ গুলো শিখাতে পারবা? ও রাজি হয়ে গেল।
কিন্তু এখানে ও বিপত্তি। আমার বেডমেট একা একা পড়বে না সে যতক্ষণ পড়বে ততক্ষণ আমাকে তার পাশে বসে থাকা লাগবে!
তারপর একদিন সুমাইয়ার সাথে তালিমে গেলাম আয়েশা আপু সহ। সেখানে গিয়েই অনেক দ্বীনী বোন, আন্টিদের সাথে দেখা হলো। তাদের সহযোগিতায় আয়েশা আপুকে নিয়ে আমার টেনশন অনেকটাই কমে গেল আলহামদুলিল্লাহ্। তাদের মধ্যে মিথিলা আপু নামে একজন আপু ছিল অন্যতম। উনিই ছিলেন আমাদের পরবর্তী উসতাজা। মিথিলা আপুর কাছেই পরবর্তীতে আয়েশা আপু সহ আমি আর সুমাইয়া ও আরবি আর উর্দু পড়তাম! তাদের দেখে ভালো করে বুঝতে পারলাম পর্দার গুরুত্ব। এতদিন তো আয়েশা আপুকে কালিমার দাওয়াত দিতাম কিন্তু এখনতো পর্দার কথা ও বলতে হবে অথচ আমার মধ্যেই পর্দার বালাই নেই (আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়াতুবু ইলাইক)। যদিও মাথায় তথাকথিত হিজাব পেচাইতাম! কিন্তু এখন আরেকজনকে দাওয়াত দিতে হলে আগেতো নিজেকে পরিপূর্ণ পর্দা করতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে কিছুদিনের মধ্যেই শুরু করে দিলাম বোরকা, হিজাব,নিকাব, হাত পা মোজা পরা! এই হলো আমার দ্বীনের পথে আসার শুরু!
আয়েশা আপু খুব ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট সেই সাথে বুকিশ ও মানে সারাক্ষণ তার হাতে বই থাকতো। চাকরির বই ক্লাসের বই কিছু একটা সবসময়ই তার হাতে থাকতো। অনার্সে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং এ ফার্স্টক্লাস। কিন্তু মাস্টার্স পরীক্ষার আগে আগে ইসলাম গ্রহন করায় সে আর চাকরির বই ও পড়ে না ক্লাসের বই ও খুব কম পড়ে। সে ব্যস্ত আরবি শিখতে। এখন এটা নিয়ে ও আপুর বড় বোন আর রুমমেটরা আমাকে কথা শোনায়। তো একদিন আপু আমাকে বলছে "মনি আমি যে মুসলিম হয়েছি স্বরসতী (হিন্দুদের বিদ্যাদেবী) যদি আমার উপর রাগ করে আমার রেজাল্ট খারাপ করে দেয়।" আমি বললাম হায় আল্লাহ্ এটা তুমি কি বললা এই একিন যদি থাকে তাহলে তো তুমি মুসলিমই হতে পারবা না। স্বরসতী বলে কোন কিছুর কোন অস্তিত্ব নাই। সব কিছুর মালিক এক মাত্র আল্লাহ্। তখন সে তওবা করে আর পড়া শুরু করে। আমি বললাম দেখো তুমি ফার্স্টক্লাস পাবেই ইনশাআল্লাহ্! আর পেলো ও তাই। আমি ওর রেজাল্ট এর দিন বাসায় ছিলাম। রেজাল্ট পেয়ে আপু প্রথমে আমাকে ফোন করে জানায়। আমি শুনে কান্না করে ফেলি। আনন্দের কান্না। কারন ও বলেছিল ওর একটা পরীক্ষা খুব বাজে হয়েছে। তখন থেকে দু'আ করতাম আল্লাহ্ আমার মানসম্মান রেখো। আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্ সুবহানাহুওয়া তা'আলা আমাকে অসম্মানিত করেন নি।
"হে রাজ্যাধিপতি আল্লাহ্! আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার নিকট থেকে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে নেন, যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। আপনারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান।"
[সূরা আল ইমরানঃ ২৬]
তার পর শুরু হলো নতুন বিপত্তি। হলে এখন আমরা তিন জন পরিপূর্ণ পর্দা করি। আমরা তিন জন একসাথে তালিমে যাই। কিন্তু হলসুপার আমাদের তিনজনকে দেখলেই শাসাতে শুরু করেন। এভাবে কেউ পর্দা করে, এলিয়েনের মত লাগে দেখতে, নিজেদের কি মনে করো পাদ্রি হয়ে গেছো, আর চিরচেনা "জঙ্গি" উপাধিতো আছেই। এভাবে হলে থাকা যাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু কে শোনে কার কথা। জঙ্গি তকমা গায়ে নিয়েই চলতে থাকলাম। আয়েশা আপু মাস্টার্স শেষ করে বের হয়ে গেলেন। সুমাইয়াকে তো জঙ্গি উপাধি দিয়ে হলছাড়াই করে দিল। আমি তখন বাসায় ছিলাম বলে আমাকে হলছাড়া করতে পারে নি। এই ছিল দ্বীনের পথে আসার পরবর্তী হললাইফ।
মিথিলা আপু ও ততদিনে চলে গেলেন ময়মনসিংহ।তবে আপু আমাদেরকে একটা মহিলা মাদ্রাসার সন্ধান দিয়েছিলেন। বলেছিলেন আমরা যেন ওখানে আমাদের পড়াটা কন্টিনিউ করি। কিন্তু আমার আর সুমাইয়ার হলো না। তবে আয়েশা আপু এখন সেই মাদ্রাসাতেই পড়াশোনা করছেন। সুযোগ পেলে আমি ও যাই। এখন আমি তার কাছে অনেক কিছুই শিখি।
আর আয়েশা আপুকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার দায়ে উনার বড় বোন ফাতিমা আপু আমার সাথে কথা বলাই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। যদিও পরবর্তীতে আয়েশা আপুর প্রচেষ্টায় আমাদের সম্পর্ক ভালো হয়ে যায়। আর আয়েশা আপুর ছোটবোন ও ইসলাম গ্রহণ করে! সুবহানআল্লাহ্। আর উনার বাবা মাকেও ইসলামে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। সবাই দু'আ করবেন উনাদের পরিবারের জন্য। আল্লাহ্ যেন উনাদের সাথে সাথে উনাদের মা বাবাকেও কবুল করেন সেই সাথে এই নাচিজ অধমকেও!!!
আর আমার পরিবারে তেমন কোন সমস্যার সম্মুখীন হই নি। সবাই খুশিও হয়েছিল। তবে বিপত্তি বাঁধে চাকরি করবনা বলার পর, আর দ্বীনদার ছেলে বিয়ে করবো এটা বলার পর। সবাই খুব হতাশ হয়েছে কয়েকজন কথা ও শুনিয়েছে, এখনো শুনাচ্ছে। যদিও আমি আমার সিদ্ধান্তে অনর। তাই তারা কথা শুনিয়ে খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না।
যাই হোক আমি আমার গন্তব্যের পথ খুঁজে পেয়েছি এইজন্য আলহামদুলিল্লাহ্!
আলহামদুলিল্লাহ্ ফর ইসলাম!!
আলহামদুলিল্লাহ্ ফর এভরিথিং!!!
"হে আমাদের রব্ব! সরল পথ প্রদর্শনের পর আপনি আমাদের অন্তরসমূহকে বক্র করে দিবেন না এবং আপনার নিকট থেকে আমাদেরকে অনুগ্রহ দান করুন, আপনিই তো সমস্ত কিছুর দাতা।"
[সূরা আল-ইমরানঃ ৮]
❤💙💚💜💕💖💝💗
...............................................
2.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
দ্বীনে ফেরার গল্প? প্রত্যেকের কাছে নিজের দ্বীনে ফেরার ঘটনা শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গল্প। আজ আমার শ্রেষ্ঠ গল্প লিখতে যাচ্ছি ইন শা আল্লাহ্।
আমি একটু উগ্র ধরণের মেয়ে ছিলাম। ধরাকে সরা জ্ঞান করে সেই সরা নিয়ে লাটিম খেলা টাইপ মেয়ে। আরো ছিলাম প্রচুর ক্যারিয়ারিস্টিক, একটু নারীবাদী আর সেক্যুলার। 'সমাজের সাথে সংগতিপূর্ণ ইসলাম' মানতাম। ক্যারিয়ারিস্টিক হওয়ায় এডমিশনের সময়ে নিজের সব মনোযোগ রেখেছিলাম পছন্দের পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাওয়াতে। আগে যাও কিছুটা স্বালাত পড়তাম, এডমিশনের সময় সেটাও তলানিতে ঠেকেছিলো। বিভিন্ন ধরণের মানুষের সাথে যোগাযোগ হতে থাকে, সন্দেহবাদী, শয়তানপূজারী, সেক্যুলার, ড্রাগস ডিলার, ড্রাগসে আসক্ত, জীবনযুদ্ধে ব্যর্থ মানুষ- কেউই বাকী ছিলো না। একা থাকতাম তাই বাঁধা দেয়ার বা বুঝানোর মতো কেউ পাশে ছিলো না। আবার কোনো পাবলিকে পড়ার জন্য এতোটাই উতলা ছিলাম যে এইজন্য বাসা থেকে একা পালিয়ে যেতেও রাজি ছিলাম। এমনকি চান্স পাওয়ার পর কোথায় কোথায়, কার কার সাথে ঘুরবো সেসবও ঠিক করা ছিলো। এমনকি কাপড়-বই-টাকা সবকিছু পরিকল্পনা করা ছিলো। তবে আমার রবের পরিকল্পনা ছিলো ভিন্ন।
পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিলাম, এবার ফলাফলের অপেক্ষা। অসহ্য দিন কাটাচ্ছিলাম। পড়তে পড়তে দিন কাটতো, আর রাত অসহ্য মানসিক যন্ত্রণায়। স্বালাত পড়তে পারতাম না, 'কী যেন' বাঁধা দিতো। শুধু আল্লাহর কাছে দুআ করতাম আর অনুশোচনায় ভুগতাম। ফজরের আজানের আগে ঘুমোতে পারতাম না।
ঠিক ফলাফল প্রকাশের আগের রাত, এক ভদ্রলোক আমাকে প্রথমবারের মতো ইসলামের দাওয়াত দিলেন। বেশ ভালোভাবেই দাওয়াত দিলেন, যদিও এখন বুঝি যে উনার দাওয়াত দেয়ার পদ্ধতি বা সময় কোনোটিই ঠিক ছিলো না। আল্লাহ্ যেন উনাকে ক্ষমা করেন। উনি বুঝালেন রবের দিকে ফিরে আসাটাই সাফল্য, বারবার স্বালাত আদায়ের কথা বললেন। কিছু বই-ও কিনতে বলেন, আরিফ আজাদ ভাইজানের বইয়ের নামও বলেছিলেন হয়তো।
পরেরদিন দেখলাম আমি চান্স পেয়েছি, আল'হামদুলিল্লাহ্, আমার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে, জেগে জেগে যার স্বপ্ন দেখছিলাম প্রায় তিনবছর যাবত।
ফলাফল প্রকাশের দিন দুপুর থেকে শুরু করে সারাদিন বাইরে ছিলাম, সন্ধ্যা নামতে শুরু করলে ফিরে আসি, কোথায় ফিরে আসি আমার আল্লাহ্ ভালো জানেন। ইসলাম নিয়ে বই কোথায় মিলে জানতাম না, সাধারণ একটি বুকস্টোরে যাই, কয়েকটি বই কিনি। আরিফ আজাদ ভাইজানের বই যদিও ঐদিন কেনা হয় নি, উনার বই অনলাইনে অর্ডার দিই। প্রত্যাবর্তন বইটি বলা যায় দাগিয়ে দাগিয়ে পড়েছি। কীভাবে জানি না, আমি স্বালাত আদায় শুরু করি, অথচ আগে আমাকে বারবার বলেও স্বালাত পড়ানো যেতো না। সাজিদ সিরিজ পড়ে ইসলামিক বই পড়ার ঝোক চেপে যায়। তারপর আল'হামদুলিল্লাহ্ আর ফিরে তাকাতে হয় নি। একের পর এক বই পড়তে থাকি আর জানতে থাকি। একে একে ক্যারিয়ার নামের জাহেলি, ট্যুরের নামে অবাধ্যতা, বন্ধুত্বের নামের অশ্লীলতা - সব বাদ দিতে থাকি।
সবচেয়ে বড় স্টেপ ছিলো মাহরাম মানা, বিশেষত অনলাইনে। মাহরাম বিষয়ে আগে কখনো শুনি নি, আমার পরিবারেও এর চর্চা নেই। এটা শুরু করায় অনলাইনে কিছু দ্বীনি বোনের সহবত পেলাম, আল'হামদুলিল্লাহ্ আরো সহজ হয়ে গেলো। এরপর বড় স্টেপ ছিলো বুদ্ধিবৃত্তিক দাসত্ব থেকে মুক্তি। আমার মস্তিষ্ক ছিলো পশ্চিমা ধাঁচের। রীতিমতো নিজের সাথে লড়াই করে সেক্যুলারিজম, ফেমিনিজম, মডারেট ফিতনা থেকে মুক্তি পেয়ে চৌদ্দশো বছর আগের ইসলাম খুঁজে পেলাম আল'হামদুলিল্লাহ্। এক্ষেত্রে চিন্তাপরাধ বইটি কাজে লেগেছে।
এভাবেই চলে আসে ভার্সিটির প্রথম দিন। ততদিনে খাসপর্দা শুরু করেছি আল'হামদুলিল্লাহ্। ভার্সিটিতে পড়তে চাইতাম অবাধ স্বাধীনতার জন্য, অথচ ভর্তি হবার পর নিজেই নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি আল'হামদুলিল্লাহ্। একসময় লক্ষ্য করলাম আমি মোটামুটি দ্বীনের পথে চলে এসেছি, তবে আমার এ বিষয়ে ইলম নেই বললেই চলে। দ্বীনি শিক্ষা বলতে কুরআন-হাদীসের বাংলা অর্থ, কিছু বাংলা ইসলামিক বই আর ইউটিউবের কিছু লেকচার পর্যন্ত গিয়েছি। কোনো উস্তাদের অধীনে না থাকলে কুরআন হাদিসের অর্থ পড়ে অনেক ভুল ধারণার সৃষ্টি হতে পারে, আবার ভার্সিটিও বাদ দিতে পারছিলাম না। ভাবছিলাম হয়তো আর উপায় নেই, তখন আল্লাহ্ সন্ধান দিলেন ইসলামিক অনলাইন মাদ্রাসার। বর্তমানে ইলম অর্জন চলছে, সাথে একটু-আধটু দাওয়াহ্।
আহা! আমার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়! সহপাঠীদের অবাধ ফ্রি মিক্সিং, গায়েরে মাহরামদের সাথে ট্যুর, অশ্লীলতা, আড্ডা, ছবি আপলোড করা এসব দেখলে লজ্জা লাগে, কান্না পায়, আবার হাসিও আসে। আমিও তো এদের মতো হতে পারতাম, আমি তো সেটাই চাইতাম! আমার রব আমার উপর অনুগ্রহ করেছেন, আমাকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিদায়েত দান করেছেন।
এই ছিলো আমার শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গল্প। আদৌ দ্বীনের পথে ফিরতে পেরেছি কি না জানি না, তবে চেষ্টা চলছে। সকল প্রশংসা এক আল্লাহ তা'আলার যিনি সকল সৃষ্টির পালনকর্তা।
................................................
3.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
পোস্ট টপিকঃ #ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
○ শুরুর টুকরোঃ
আল্লাহ তা'য়ালা তার বান্দাদেরকে অনেক ভালবাসেন,অনেক বেশি ভালবাসেন।আল্লাহ চান বান্দাও অনুরুপ ভালবাসার প্রেমসাগরে ডুব দিক,তাকে ডাকুক, তার কাছেই মিনতি করুক, অন্তরের গহীনে সুপ্ত কথাটুকুন কেবল তারই সমীপে অর্পণ করুক। বান্দার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক কেবল আবদিয়াত ও দাসত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং সেটা প্রেম-ভালবাসা এবং ইশক-মুহাব্বতের অপুর্ব সম্মিলন।শুধু কেবল বান্দা বা দাসের জন্য কি এত সম্মান থাকে!সৃষ্টির সেরা হওয়ার গৌরব কাধে ঝুলে! শুধু বান্দা বা দাসের জন্য কি এত আদর-সমাদর, যত্ন-আপ্যায়ন, সম্মান-মর্যাদা,প্রেম-ভালবাসা মিশ্রিত ডাক শোভা পায়!"বান্দা আমাকে ডাক,আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব!"[১] এ তো বান্দার প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত ভালবাসার নিদর্শন বৈ কিছু নয়।
কিন্তু দুনিয়া বড় আশ্চর্য জায়গা।এখানে প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠার খেলায় নিমগ্নচিত্তে শৈশব থেকে কৈশোরে পা দিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো ছেলে সময়ের নিকশ আন্ধার সাতরিয়ে তারুণ্যের সিঁড়ি টপকে বার্ধক্যে উপনীত হয়।তারপর হঠাৎ একদিন সেই সিঁড়ির দুমরানো-মুচড়ানো ভাঙন শব্দাংশ বাস্তবতার স্বীকারোক্তি করে। নো বলে ছক্কা হাকানোর মত সুপ্রসন্ন চিত্তের অধিকারী কতিপয়ের মনে উঁকি দেয় কিছু প্রশ্নের উদ্রেক। কোত্থেকে এলো,কেন এলো আর কোথায় যাবে এসব প্রশ্নের কিয়দংশ বিলাস-জৌলুসে মত্ত দুনিয়ার মোহ,সুখ আর ভোগ-আনন্দের নেশার বৈষম্যভেদ্য ঝিল্লীর আবরণ ছিন্ন করে খুব সামান্যের ই চিন্তার জগতে আলোর বিচ্ছুরণ ছোটায়। কেউ খোঁজে পায় চিরসুখের নীড়, কেউবা হারায় আসল গন্তব্যপথের ঠিকানা, যেপথে হাসলেও শোনা যায় শান্তির কল্লোল ধ্বনি তেমনি কাঁদলেও শোনা যায় অভিকর্ষ পানে ছুটন্ত কৃতজ্ঞতার অশ্রুর তরঙ্গধ্বনি।
কবির ভাষায় "চলাও সেপথে মোরে, যেপথে তোমার প্রিয়জন গেছে চলি",সে পথেরই এক নব্য পথিকের গল্প শুনবো আজ এক 'আমি'র কন্ঠে।
○ নিষ্ঠুর বাস্তবতার চাক্ষুষ দৃষ্টান্তরূপঃ
সময়ের নিষ্ঠুর সংকীর্ন উপস্থিতি বিলাসমত্ত প্রবৃত্তির আত্নপ্রবঞ্চনাময় গতকালের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে আজকের বাস্তবতা থেকে নিজেকে আড়াল করতে দেয় না। আমিও আড়াল করতে পারছি না বন্ধু 'ধ্রুব' এর অল্প বয়সে মৃত্যুর সেই সময়টুকু নিজের স্মৃতি থেকে। কলেজ বন্ধ থাকলে যে ছেলেকে ঘুম থেকে উঠানো দায়, তাকে আর কেউ বিরক্ত করবে না ঘুম থেকে উঠার জন্য। আমি ছোট থেকে জন্মগত মুসলিম পরিচয় নিয়ে বড় হলেও সখ্য গড়ে উঠেনি ধর্মপ্রান তেমন কারো সাথে।মুটামুটি মডারেট শ্রেনীর ছেলেদের সাথে উঠাবসা হলেও সংশ্রব সংশয়বাদীদের সাথেই বেশি ছিল ।
সময়টা প্রায় তিন বছর আগের।হঠাৎ সংবাদ পেলাম ধ্রুব রোড এক্সিডেন্ট করেছে।বাইকের ড্রাইভিং সিটে সে ছিল।ফাকা রোডে পাল্লা দিয়ে ফুলস্পিডে চালানোর এক পর্যায়ে দুর্ঘটনায় মাথায় প্রচন্ড ব্যথা পায়। হাসপাতালে যখন নেওয়া হয় তখন সে অজ্ঞান।সেখান থেকে আইসিইউ, তারপর অন্তিম পানে যাত্রা।
বন্ধুর এ অকাল যাত্রা সেদিন খুব ভাবিয়ে তুলেছিল।হোস্টেলের রুমের সামনে দিয়ে কিছু তাবলীগি ছেলে প্রতিনিয়ত নামাযের জন্য ডেকে নিতে চাইত, জুনিয়রদের এ দাওয়াতে ভ্রুক্ষেপ করিনি তেমন। কিন্তু সেদিন ওর বাড়ি থেকে দাফন করে আসার পরদিন নিজে থেকেই মসজিদে গিয়েছিলাম।কিছু ছেলেদের দৃষ্টি আমাকে একটু বিড়ম্বনায় ফেলে দিলেও তারা যে খুব খুশি হয়েছিল তাদের চেহারা সে আশ্বাস জানান দিচ্ছিল। মৃত্যু এক ধ্রুব সত্য জানি, কিন্তু এটা যেন কেবল আমার কানেই পৌঁছেছিল এতদিন, অন্তরে প্রবেশ করেনি। বন্ধুর মৃত্যু আমার জন্য এক দ্বার উন্মুক্ত করে দিল।অন্তরে দহনজ্বালা অনুভব হচ্ছিল, চোখ থেকে সেদিন অশ্রু ঝরেছিল।
মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারে,স্বপ্ন হৃদয়ে লালন করতে পারে, স্বপ্নের তরঙ্গদোলায় দোল খেতে পারে কিন্তু সব স্বপ্নকে কি পূর্নতা দিতে পারে?আমার বন্ধু তো পারেনি। আমি পারবো!আমার দ্বারা সম্ভব! কারো কাছে অফুরন্ত হায়াতের নজরানা পেশ করলে হয়ত সম্ভব। কিন্তু সময় কি সে সুযোগ দিবে!
সময়ের জন্য আক্ষেপের বোকামি টুকুনও সময়কে এগিয়ে নিয়ে যায় নির্মম তুফানের উত্তাল স্রোতে ভাসিয়ে,উন্মোচিত করে নিঃসঙ্গতার দংশনে দংশিত হয়ে রুপমা,স্মৃতি আর কল্পনার রঙীন মায়াজাল ছিন্ন করে ভিন্ন এক বাস্তব সত্য।সেদিন থেকে উপলব্ধি হলো, "জলে না নেমে সাঁতার শেখা যেমন সম্ভব নয়" তেমনি বসে থেকে ইসলামকে পুরুপুরি শেখা সম্ভব নয়। আমাকেও ইসলাম শেখার জন্য সময় দিতে হবে,জানতে হবে নিজের গন্তব্য,গোছাতে হবে নিজের কিছু পুঁজি।যাত্রার আগে বানাতে হবে শিরক মুক্ত ঈমান, বিদাত ও রিয়ামুক্ত আমল।
○ স্বপ্নময় স্বপ্নাদেশঃ
একদিনের ঘটনা।
ক্লাসের পড়াশোনা শেষ করে রাতে বিছানায় ঘুমাতে গিয়েছি। হঠাৎ মনে হচ্ছিল, কি যেন একটা আমার বুকের উপর ভর করছে। হাত পা নড়াতে পারছিলাম না,মনে হচ্ছিল হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে।কালিমা বলার জন্য অন্তর ছটফট করছিল ,কিন্তু শরীর নাড়াব তো দূর, ঠোট দুইটাও নড়াতে পারলাম না।তারপর কোনোরকমে জিহ্বা নাড়িয়ে বা মনে মনে কালিমা পড়লাম।এর কিছুক্ষন পর ম্যাজিকের মত আমার ঘুম ভেঙে গেল।এরপর কান্নাকাটি করে মাফ চাইলাম আল্লাহ'র কাছে।
মরে যাব এই অনুভুতির জন্য ভয় যতটা পেয়েছিলাম তারথেকে বেশি মানসিক অস্থিরতা কাজ করতো । আমি তো মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত না,একদমই না,এই মুহুর্তে মারা গেলে আমি কি নিয়ে মাওলার দরবারে হাজিরা দিব! সত্যি কি আমার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে! হায়! আমার তো তাহলে সুযোগ শেষ হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু এই রিক্ত হস্তের যাত্রা কতটুকু শুভ হবে আমার!
প্রিয় পাঠক! বিশ্বাস করো,একটুও বাড়িয়ে বলছি না।তোমাকে যদি বুঝাতে পারতাম সেই দিনের অনুভুতি, নিদ্রালু চোখে তুমি যদি দেখতে আমার সেই অবস্থা! তাহলে নিশ্চিত বলতে পারি, তুমি তোমার আন্তরিকতা, স্নেহ আর মমতা মাখা পরশ আমায় বুলিয়ে দিতে।
মাঝেমধ্যে ভাবতাম আমি কি এগুলা নিজে থেকে কল্পনা করি?প্রতিদিন প্রায় একই ধরনের স্বপ্ন দেখতে লাগলাম,একই ঘটনাপ্রবাহ,একই থিম,একই অনুভুতি। কিছুদিন ভয় বেশি পেতাম,কিছুদিন একটু কম।মাঝেমাঝে ভয়ের মাত্রা এত বেশি হতো যে, ভাবতাম এই বুঝি শেষ, মরেই যাচ্ছি,মালাকুল মউত আসলো প্রায় রুহ বের করার জন্য।
এটা কি কোন বোবা জ্বিনের কাজ ছিল? আমি তো ঘুমের টুকটাক আমল করেই ঘুমাতাম। তাহলেও কি এই প্রশ্ন মুল্য পাবে! যদি পায়, তাহলে সেই বোবা জ্বিনদের প্রতি অফুরন্ত দোয়া,হয়ত তাদের এহেন কাজের ওসিলায় আল্লাহ আমার চিন্তাজগত আলোড়িত করেছেন,উন্মোচিত করেছেন এক দিগন্ত যার প্রতি আমি ছিলাম সম্পুর্ন বেখেয়াল।
ঘুম ভাঙার পর স্পষ্ট মনে থাকতো, স্বপ্নে কি কি ঘটেছে। একদিন বাসায় ভাগ্নি দেখে ফেললো এ ঘটনা।ঘুমের মধ্যে আমার অস্বস্থি অবস্থা দেখে ছুটে গিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয়।এরপর আর স্বপ্ন দেখলাম না। হারিয়ে গেল সেই স্বপ্নময় মুহুর্ত আর মরিচাধরা শুরু করলো সুঁচালো অনুভুতির দোয়ারে।কালের আবর্তনে আমিও হারিয়ে গেলাম রবের থেকে দুরে। নামায পড়তাম, কিন্তু সেই অনুভুতির স্বাদ কোথাও পেতাম না।
○ ভ্রাম্যমাণ পরিবেশেঃ
প্রফেশনাল পরীক্ষা শেষে অল্পকিছুদিনের ছুটি পাওয়া যায়। তার কিছুদিন আগে থেকে বন্ধুদের প্ল্যান, কক্সবাজার ট্যুর দিব। পরীক্ষা শেষ হওয়ার অনেকদিন আগ থেকেই পছন্দের কিছু জুনিয়র কিছু সময় একটা পরিবেশে কাটিয়ে আসার দাওয়াত দেয়। ছেলেগুলোর মায়াভরা কথায় মৃত্যুভয় আবার জেগে উঠে আমার। জিজ্ঞাসা করলাম-আমাকে জাহান্নাম থেকে বাচার একটা উপায় বলে দিতে পারবি?-"জ্বি ভাই।আপনি একাধারে চল্লিশ দিন তাকবীর উলা সহ নামাজ আদায় করলে আল্লাহ দু'টো পুরস্কার দিবেন।জাহান্নাম থেকে মুক্তি আর মুনাফিকদের তালিকা থেকে মুক্তি।"
এ আবার কঠিন কিছু নাকি! শুরু করলাম চল্লিশ পানে, সাতাশ তম দিন নামাযের জামাত মিস করলাম। মনে হচ্ছিল মাথাটা দেওয়ালে ঠুকে মারি।কিন্তু এটা তো সমাধান নয়।আবার শুরু করতে হবে সেই প্রথম থেকে। চল্লিশ যে পুরা করতেই হবে, কিন্তু হচ্ছে না।বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলাম খুব নিকটে গিয়েও।
পাঠক বন্ধু! সারাজীবন যে শুনে এসেছ "নামায অশ্লীলতা থেকে ফেরায়"[২] তার বাস্তব নমুনা যদি প্রত্যক্ষ করতে চাও,কুরানের আয়াতের বাস্তবায়ন নিজের জীবনে যদি করতে চাও, নামাযের মাধ্যমে অন্তরের প্রশান্তি যদি পেতে চাও,গুনাহের সমুদ্রে অবগাহন থেকে যদি নিজেকে বাঁচাতে চাও, মাওলা পাকের সান্নিধ্য যদি পেতে চাও, আমি তোমাকে বলব চল্লিশ পানে তুমিও যাত্রা করো। আজ থেকেই। এখন থেকেই নিয়্যাত করো। এর সুন্দর এক ফলাফল তুমি পাবে, বিশ্বাস করো তুমিও শামিল হবে সুপ্রসন্ন চিত্তের অধিকারীদের কাতারে।
পরীক্ষা শেষ হলো। বন্ধুদের আড্ডায় সবাই দিন তারিখ নির্ধারণ করলো কক্সবাজার ট্যুরের জন্য।আমিও যাবো তাদের সাথে এই নিয়তেই দিন গুনছিলাম। কিন্তু "আল্লাহ যে উত্তম পরিকল্পনাকারী।"[৩] হোস্টেলের এক বড় ভাই ট্যুরে যাওয়ার ব্যপারে ঈমানী কি কি ক্ষতি হতে পারে এ ব্যাপারে লম্বা লেকচার দিয়ে বসলেন। কিছু কিছু ইচ্ছায় শুনলাম, কিছু কিছু না শোনার ভান করে শুনলাম আর কিছু শুনলাম নিতান্তই বাধ্য হয়ে। উনি বলতে এসেছেন সময়টা ভ্রাম্যমাণ এক পরিবেশের কাটিয়ে আসতে যার নাম "দাওয়াত ও তাবলিগ।" দোদুল্যমান অবস্থায় রেখে উনি চলে গেলেন।
পরদিন সিদ্ধান্ত নিলাম ট্যুরে যাবো না। যাবো সেই পরিবেশে, যে পরিবেশ আত্নিক উন্নতি দিবে, অন্তরে প্রশান্তি দিবে, চোখে দিবে কৃতজ্ঞতার অশ্রুস্রোতের ফোয়ারা। কিন্তু সমস্যা হলো বাসায় বুঝানো নিয়ে। বাবা কিছুতেই যেতে দিবেন না।এ পর্যায়ে একটু বলে রাখি, বাসার পরিবেশ গতানুগতিক আধুনিকতায় পর্যবসিত। দ্বীনের প্রতি আগ্রহী হওয়াতে উনারা হয়ত ভাবছেন সেকেলে টাইপের কিছু হয়ে যাচ্ছি,যে কিনা সমাজ বিচ্যুত এক সত্ত্বা হবে, যার দৌড় কেবল মসজিদ পর্যন্ত থাকবে, সমাজের কোন কল্যানে সে কাজে লাগবে না।যেন সে এক পদার্থ থেকে অপদার্থের খাতায় নাম লিখিয়ে নিবে!
বাবা-মা সন্তানকে ভালবাসেন এটা স্বাভাবিক এবং সত্য যার কোন তুলনা নেই।কিন্তু আমার প্রতি আব্বা-আম্মার ভালবাসা তুলনার মাঝেও অতুলনীয়। হয়ত পৃথিবীর প্রত্যেক সন্তানের অনুভূতি এমনই এবং সে অনুভূতি অবশ্যই শ্রদ্ধাযোগ্য।বিপাকে পড়ে গেলাম, বাবা কিছুতেই যেতে দিতে নারাজ। মা কে বুঝিয়ে শুনিয়ে বললে মায়ের কথায় বাবা অনুমতি দিলেন কেবল তিনদিনের জন্য। তিনদিন শেষে বাবার ফোন, চলে আসার জন্য।কিন্তু মন যেন চাচ্ছিল আরো কিছুদিন থাকতে। এক বড় ভাইকে বিষয়টা জানালে তিনি শুনালেন অন্তর প্রশান্তকারী সেই হাদিসের বানী।"যে ব্যক্তি কোন মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে,আল্লাহ ঐ মানুষকে তার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দেন।আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে কোন মানুষকে অসন্তুষ্ট করে, আল্লাহ ঐ মানুষকে তার প্রতি সন্তুষ্ট করে দেন।"[৪]
বাসায় যোগাযোগ সম্পুর্ন বন্ধ করে দিয়ে থেকে এলাম আরো কিছুদিন। বাবা-মা এর জন্য দোয়া অব্যাহত রাখলাম, অন্তরে প্রশান্তি দিচ্ছিল ঐ হাদিসের বানীটুকু। আশায় বুক বেধেছি, আল্লাহ অবশ্যই বাবা-মায়ের মন নরম করে দিবেন। আল্লাহ আমাকে নিরাশ করেননি, দোয়া কবুল করেছেন।আলহামদুলিল্লাহ্।
একদিনের বয়ান। হুজুর বলছিলেন,বাবারা! আদম আ. কয়টা গুনাহ করেছিলেন? মাত্র একটা। আল্লাহর একটা হুকুম অমান্য করার জন্য যদি জান্নাত থেকে বের হয়ে যেতে হয়,তাহলে গুনাহের সমুদ্রে নিমজ্জিত থেকে জান্নাতের আশা করা কি বোকামি নয়? আদ জাতি,সামুদ জাতিকে কয়টা অপরাধের জন্য ধ্বংস করে দিয়েছিলেন! একটা অপরাধ যদি ধ্বংস হওয়ার জন্য যথেষ্ট হয় তাহলে আর কত অপরাধ করে তোমরা নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনতে চাইবে? আল্লাহ তোমাদের ছাড় দিচ্ছেন, ভেবে নিও তিনি ছেড়ে দিবেন না। সময় থাকতে কৃত অপরাধের ক্ষমা নিয়ে আল্লাহর কাছে হাজির হও। তোমাকে সহ সমস্ত কুল-ক্বায়েনাত ধ্বংস করে দিলেও আল্লাহর জবাবদিহিতার কোন ভয় নেই। কোন্ আল্লাহর সাথে নাফরমানীতে লিপ্ত হয়েছো যুবক! তওবা করে ফিরে আসো, এখনই সময়।
সেদিন রাতে অনেক কান্নাকাটির পর জীবনের সমস্ত গুনাহ থেকে তওবা করলাম,ওয়াদাবদ্ধ হলাম আর গুনাহে লিপ্ত হতে চাই না।আল্লাহ যেন আমাকে আমার নফসের উপর ছেড়ে না দেন,এই দোয়া করে মোনাজাত শেষ করলাম।আল্লাহ যেন কবুল করেন।আমিন।
কিছুদিন পর যখন ফিরলাম, হৃদয়ের জগতে কিছু অর্জন হলো কি হলো না বলতে পারি না,তবে আল্লাহর প্রতি ভালবাসা, আকুলতা ও ব্যাকুলতা যে বহুগুণ বেড়েছিল তা অনুভব করতে পেরেছিলাম।যাত্রার শুরুতে অন্তরের যে অবস্থা ছিল, মনে হল,তাতে কিছু পরিবর্তন এসেছে।অন্তর আরো শান্ত ও স্থির হয়েছে, হৃদয়ে কোমলতা স্পর্শ করেছে,অনুভব-অনুভূতি আরো গভীরতার স্বাদ আস্বাদন করেছে। হায়! আজও যদি সেই অনুভূতির ছিটেফোঁটাও অনুভব করতাম এ অভাগা অন্তরে!
○ কঠিনতম দিনগুলোঃ
শুরু হলো কঠিন পরীক্ষা।যে পরীক্ষা নিজের নফসের চাহিদার বিরুদ্ধে, নিজের মনচাহি জীবনের বিরুদ্ধে, প্রচলিত সমাজ আর কৃষ্টি কালচারের বিরুদ্ধে। জয়ী আমাকে হতে হবে, জয়ীরাই কেবল সু-সংবাদ পায় জান্নাতের অপার নাজ-নেয়ামতের। বাধা টাও প্রকট আকার ধারন করলো এখান থেকেই। বাসা থেকে বাধা,আত্নীয় স্বজন থেকে বাধা, সমবয়সী বন্ধুদের থেকে বাধা, মরুব্বি গোছের কিছু লোক থেকেও বাধা।এ যেন এক জীবনযুদ্ধ, দ্বীনি জজবার লড়াই, যে যুদ্ধের প্রতিপক্ষ রক্তের সম্পর্কেই বিদ্যমান থাকে।
জিন্স আর টি-শার্ট ক্রমে ক্রমে বাদ দিতে শুরু করলাম। মুখে দাড়ি রাখাও শুরু করলাম। এতেই সবচেয়ে করুন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে। "সব কিছু করো সমস্যা নাই, এই বয়সে দাড়ি নয়,দাড়ি রাখার বয়স হয়নি।" সবচেয়ে হাস্যকর উপহাস "বেটা, দাড়ি যে রেখেছো, বিয়ে সাদি করতে পারবে তো" শুনেছিলাম বয়োজ্যেষ্ঠ খুব কাছের ক'জনের থেকে।এক চিলতে হাসির রেখা টেনে নিশ্চুপ উত্তর জানিয়ে দিলাম।বুঝি না উনাদের মাথায় এ চেতনা কোথা থেকে এলো যে,দাড়ি রাখার বয়স হয় নি। বয়স যদি নাই বা হলো তাহলে মুখে দাড়ির রেখা পরিস্ফুটিত হবে কেন?
বন্ধু! যদি তুমিও দ্বীনের পথে অগ্রসর হও, দেখতে পাবে কিছু নামধারী ছদ্মবেশী সুশীল মুসলিম ই এসে তোমাকে বলবে "মোল্লার দৌড় তো মসজিদ পর্যন্ত!" তুমি দুঃখ করো না, নিরাশ হয়ো না।তুমি তো জানো, "আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।"[৫] তুমি বরং আলহামদুলিল্লাহ্ পড়ে শোকরিয়া আদায় করো। নরম ভাষায় হিকমাহ দিয়ে বলে দাও,"মসজিদের দৌড় তো সদুর জান্নাত পর্যন্ত। মোল্লাদের মন যদি মসজিদে লেগে থাকে তাহলে তো সেই মোল্লা হাশরের মাঠে আরশের ছায়ার নিচে থাকবে, আমি তো সেই মোল্লাই হতে চাই,তুমিও চাও।"
একে একে ফোন থেকে গান,মুভি ডিলিট করে দিলাম। প্রতিদিনকার রুটিন যেখানে অল্প হলেও গান শুনতাম, সেখানে সম্পুর্ন এই নেশা থেকে বের হয়ে আসলাম যখন শুনলাম গান শুনলে "অন্তরে মুনাফেকি সৃষ্টি হয়।"গানের বদলে এই স্থানে জায়গা দিলাম বিভিন্ন ইসলামি নাশিদ, প্রখ্যাত ক্বারীদের কুরআন তেলাওয়াত আর ইসলামি নাসিহা সম্বলিত বয়ান ও লেকচার। এ কাজটুকু একদিনে হয় নি, লেগেছে অনেকদিন,নিয়েছে অনেক সময়, ঝরিয়েছে অনেক অশ্রু তবে উপসম হয়েছে হৃদয়ের ব্যথা । অন্তরের ব্যাধির চিকিৎসা কত যে কঠিন!
এখানে একটি কাজ করতে একটু বেগ পেতে হয়েছে, সেটা হলো মাহরাম মেইন্টেইন করা আর বন্ধুত্বের সঙ্গ পরিবর্তন করা। বন্ধুদের সাথে হাসি-তামাশার পরিমান কমিয়ে দিলাম। কেউ কেউ বলল,"দু'দিনের মজুর,ভাতকে বলে অন্ন" সব হজম করলাম প্রতিউত্তর বিহীন। অল্পদিনেই দ্বীনি একটা সার্কেলের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলাম। রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ক্রমশ বের হয়ে আসলাম। প্রেমালাপে মুখরিত উপন্যাস আর গল্প থেকে নিজেকে গুটিয়ে ইসলামি বইয়ে মন ফেরালাম। নিকোটিনের কালো জাল ছিন্ন করলাম। সুন্নতী জীবনের ছোয়া গায়ে মাখতে শুরু করলাম। আমৃত্যু লেগে থাকতে চাই এই সুন্নতী জীবনে....
○ শেষাংশ কথনঃ
সময়ের ভাবনাহীন পৈশাচিক নিষ্প্রাণ স্রোত সমুদ্রের
উত্তাল তরঙ্গস্রোতের নির্মম কাঠিন্যতায় পর্যবসিত বার্ধক্যের অনুভূতি-উপলব্ধি মানুষের ব্যক্তিত্ববোধ বাড়িয়ে তীক্ষ্ণ করতে প্রচন্ড কৃপণ। নফসের ক্রিয়ায় হয়ত ভেবে বসেছিলাম, বার্ধক্যজনিত সাদা চুলে বাহারি নকশার সৌভাগ্য আমার হবে! কিন্তু নিশ্চয়তা কোথায়? মাথায় আমাদের থাকে না যে, সময় ক্ষয়ে যায়, সময় গলে যায়, সময় হারিয়ে যায়। দেখতে দেখতেই এ যৌবনোত্তাপের হিংস্র থাবা অবনমিত হয়ে যাবে। তার আগে গুছিয়ে নিতে হবে কিছু পুঁজি,যতক্ষণ আছে দুনিয়ার রুজি।
প্রিয় পাঠক বন্ধু!তোমার দোয়ায় আমাকেও একটু শামিল রেখো, কবুলিয়াতের দরজা তো উন্মুক্ত, আমি যেন কড়া নাড়তে পারি আর আমার মুনিব যেন আমাকে গ্রহন করে নেন মাকবুল চাদরের ছায়ায়।আমিন।
[গল্পের কথক 'আমি' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, অনুমতি সাপেক্ষে তারই জীবনের কিছু টুকরো ঘটনা অবলম্বনে রচিত ]
তথ্যসুত্রঃ
[১] সুরা মু'মিন-৬০
[২] সুরা আনকাবুত-৪৫
[৩] সুরা আনফাল-৩০
[৪] তিরমিজি-২৪২৪
[৫] সুরা আনফাল-৪৬
..................................
4.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
❤️আলোর পথে যাত্রা❤️
লেখাঃ Sameera Alamgir
রাত ১.৩০ টা।
ফেইসবুক স্ক্রলিং করে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেয়ার জন্য ক্লান্ত চোখ দুখানা বন্ধ করল মানহা...ঘুমের জগতে তলিয়ে যাওয়ার আগে
হঠাৎ করেই তার মনে প্রশ্ন জাগল...আচ্ছা এই মুহূর্তে যদি চিরনিদ্রায় শায়িত হয়ে যায় সে... মালাকুল মাউত এসে যদি তার রুহ কবজ করে নেয়???
সে ভাবতে শুরু করল তার সব গুনাহের কথা...সেই মহান রবের সাথে করা নাফরমানির কথা যিনি না চাইতেই কত নিয়ামত দান করছেন...কি জবাব দিবে সে কেয়ামতের দিন যখন তার রব জানতে চাইবেন এত নেয়ামত ভোগ করার পরও কেন সে সেই মহিমান্বিত সত্ত্বার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নি???
কেন সব কিছু জানা সত্ত্বেও তার রবের অবাধ্যতায় ডুবে ছিল??? থাকবে কি কোনো জবাব সেদিন...নাকি তাকেও সেই হতভাগাদের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে যাদেরকে জাহান্নামের ইন্ধন করা হবে???
ভাবতে ভাবতে মানহা খেয়াল করল তার চোখ বেয়ে খানিকটা পানি গড়িয়ে পড়ল...
এই ভাবনা আর বেশি দূর গড়ালো না...ভাবনাতেই রয়ে গেল....
বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেরোতে আরো দুবছর বাকি...সবে মাত্র অনার্স ৩য় বর্ষে পা দিল মানহা...মাত্র ১.৫ মাস ক্লাস করেই করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের জন্য সারাদেশ লকডাউন করে দিল...সবাই ঘরে বসেই ইন্টারনেটে বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ করছে...
লকডাউনের ১ মাস পার হয়ে গেল...মাঝে মাঝে অসহ্য লাগত তার...সারাদিন ঘরে বসে...সময় যেন কাটেই না...অসহ্য সময়টা যে তার জন্য কত বড় রহমত তা সে বুঝতে পারল ঠিক এক মাস পরেই...
১ সপ্তাহ পরেই শুরু হয়ে গেল পবিত্র রমজান মাস...মানহা এবার সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল...এই রমজান সে কোরআন অর্থসহ পড়বেই....
প্রথম দিন থেকেই খুব আগ্রহের সাথে কোরআন পড়া শুরু করল সে...পড়তে পড়তে খুব অবাক হয়ে খেয়াল করল কুরআনের প্রতিটি কথা যেন তাকে উদ্দেশ্যে করেই বলা হচ্ছে...এও কি সম্ভব!!!
যত পড়ছে মুগ্ধতা যেন তত বেড়েই চলছে...এমন এক শান্তি তাকে স্পর্শ করেছে যা হয়ত পৃথিবীর অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর ...
এভাবে করেই চলে এল সেই মহিমান্বিত রাত "লাইলাতুল কদর"...সালাতে দাড়াঁনোর পর মানহার ডুকরে কান্না আসল...অথচ এর আগের বছর সে মনে-প্রাণে চেষ্টা করেও দু-ফোটা চোখের পানি আনতে পারে নি..খুব কষ্ট পেয়েছিল সেদিন...সত্যিই মানহার রব খুব নারাজ ছিলেন তার উপর...
একে একে সব গুনাহ তার চোখের সামনে ভাসতে লাগল...সিজদায় গিয়ে সে আর নিজেকে থামাতে পারে নি...সকল গুনাহের কথা স্বীকার করে মাফ চেয়ে নিল মহান রবের কাছে যিনি সমুদ্রের ফেনা পরিমান গুনাহ নিয়ে হাজির হলেও ক্ষমা করে দেন...এবার দৃড় সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল মানহা... এক এক করে সব হারাম থেকে তার বের হয়ে আসতে হবে শুধুমাত্র সেই রবের জন্য যার কাছেই আমাদের সকলের একদিন ফিরে যেতে হবে...সে মহান রবের দুয়ারে দুহাত তোলে অশ্রুসিক্ত চোখে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে বলল তিনি যেন তাকে সারাজীবন সিরাতুল মুস্তাকিমের পথেই পরিচালিত করেন...
মহান রব তাকে নিরাশ করেন নি...তার দোয়া তিনি কবুল করে নিয়েছেন এবং তাকে হেদায়েতের পথে চলার তৌফিক দিয়েছেন... সুবহানাল্লাহ...মহান রব তার জন্য সবকিছু এতটাই সহজ করে দিলেন যে মাঝে মাঝে তার ভাবতেই অবাক লাগে... যা সে কখনো স্বপ্নেও ভাবে নি আজ তা হতে চলেছে...কৃতজ্ঞতাই মাথা নুয়ে আসে মানহার...
মানহা যেন এক অন্য মানহা এখন....সে যেন মাঝে মাঝে নিজেকেই চিনতে পারে না...এক প্রশান্ত হৃদয় যেন মহান আল্লাহ তাকে দান করেছেন...যেখানে শুধু ভালবাসা আর ভালবাসা...তার মনে হতে লাগল এতদিন সে চোখ থাকতেও অন্ধ ছিল...কান থাকতেও বধির ছিল...অন্তরে যেন তালা লাগানো ছিল...যা আজ সঠিক চাবির মাধ্যমে সে খুলতে পেরেছে...সে খুঁজে পেয়েছে তার দ্বীন...ইসলাম যা এক পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা...
আর এই রাস্তায় সে মোটেও একা নয়...মহান আল্লাহ মানহার জন্য ঠিক তারই মতো একজনকে দ্বীনি সঙ্গী ঠিক করে দিয়েছেন...যাকেও মহান রব হেদায়েতের পথে প্রতিষ্ঠিত করেছেন...কেমন করে জানি সময়টাও মিলে গেল..যার কথা বলছি সে মানহার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড রেহনুমা যাকে মানহা আদর করে ভালবাসা বলে ডাকে...আসলেই মানহা তাকে এখন আল্লাহর জন্য ভালবাসে যাকে সে জান্নাতেও সাথী হিসেবে চাই....আরো একজন আছেন...যার কথা না বললেই নয়...তাকে যখন মানহা বলেছিল...সে দ্বীনের পথে ফিরেছে...তখন সে বলল "আমি দোয়া করতাম আমার যেই বোনগুলো মুসলিম হয়েও অমুসলিমের মত চলছে তাদের আপনি হেদায়াত দিন"...আজ তাকে খুব করে বলতে চায় মানহা..." বান্ধবী তোর দোয়া আল্লাহ কবুল করেছে...ফিরিয়ে দেন নি তোকে"।।।
.....................................
5.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
লেখাঃ আমাতুল্লাহ নুর
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
প্রথমেই,
সকল সকল প্রশংসা আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার নামে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবন মধুর জীবন। তবে এ মধুময় জীবন বলতে মজমাস্তিতে ভরা জাহিলিয়াত এর জীবনকেই বুঝতাম। অসীম শুকরিয়া মহান রবের নিকট যিনি আমাকে ভার্সিটির জীবনে জাহিলিয়াত থেকে দ্বীনের মধুময় জীবনে পদার্পণ করিয়েছেন।
সে জীবন সম্পর্কেই এই অধম কিছু লিখতে যাচ্ছি.......
🌸 শুরুটাঃ
জন্মসূত্রে পাওয়া ধর্ম 'ইসলাম' কে আমরা যেন একটু বেশি অবহেলা করি। তবে সেকালেও আমি ছিলাম আমাদের সমাজের মডারেট ইসলামিক মাইন্ডের সেরা ভদ্র মেয়ে। তাই শুরুটা আকর্ষণীয় হবে কিনা বলতে পারছি না।
বরাবরই ধর্মভীরু প্রকৃতির ছিলাম, তাই নামাজ কালামে খুব একটা ঘাটতি ছিল না। আবার বন্ধু বান্ধবের সংখ্যাটাও নেহাত কম না।
সময়টা ২০১৯, এমনই এক বন্ধুর সাথে কথা বলার সময়, সে আল্লাহ তা'আলা ও প্রিয় রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে এমন সব তথ্য অপব্যাখ্যাস্বরুপ পেশ করল যা আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারলাম না। বুঝতে পারছিলাম কথাগুলো ভুল।
তৎক্ষণাৎ এক দ্বীনি বন্ধুর কথা মনে হতেই ফোন দিলাম। অতঃপর আলহামদুলিল্লাহ সে আমাকে সন্তোষজনক তথ্য দিল।
নিজের অপারগতার জন্য খুব লজ্জিত লাগছিলো......এরপর মনে হলো আমারও জানা দরকার। সেই থেকে একটু একটু শুরু......
এরপর এলো ২০২০। কভিড ১৯ এর আবির্ভাব, চারিদিকে মৃত্যুর খবর আর উৎকন্ঠায় দিনাতিপাত। মনে হতে লাগলো, আমিও যদি এই মৃত্যুর কাতারে সামিল হই কি হবে আমার?
আল্লাহর কাছে দুয়া করতে লাগলাম.... হঠাৎ করেই মনটা পরিবর্তন হয়ে গেল সুবহান আল্লাহ! সমস্ত হারাম হারাম থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলাম একরাতের সিদ্ধান্তে।
এইতো যাত্রা শুরু...............
🌸 ভার্সিটিতে দ্বীনঃ
যদিও সময়টা বেশিদিন পাইনি, কভিডের জন্য কিছুদিন পরেই সবকিছু অফ হয়ে গিয়েছিলো। তবু শুরুর পর অল্প কিছুদিন কাটানোটা মন্দ ছিলো না। মোটামুটি সবাই খুব এপ্রেশিয়েট করলো। পিছনে কি বলল তা কানে নেই না.....
একটা মজার ঘটনা বলিঃ
বহুদিন পর আবৃত্তিতে নাম লিখিয়েছিলাম ( কন্ঠের পর্দার বেপারে জানতাম না)। অডিশনেও টিকে গেলাম। অডিশনের দ্বিতীয় খিমার নিক্বাব পড়ে যাওয়ায় মিস বললেনঃ
--" আমাদের তো একটু সমস্যা আছে,তোমাকে নিক্বাব খুলে কবিতাটা বলতে হবে "
--" না মিস, এরকম হলে সম্ভব না "
-- আরেকজন প্রিয় মিস বললেনঃ " না, না, তুমি অবশ্যই অংশগ্রহণ করবে,ভালো আবৃত্তি কর, লাগলে নিক্বাব পড়েই করবে, মনে থাকে যেন "
এরপরের দিন মিস ফোন দিয়ে বললেন, মুখ খুলেই পড়তে হবে,,,,,,, আমিতো আলহামদুলিল্লাহ বাঁচা গেল।
আরেকদিন শুধু শুধু ক্লাসে দাঁড় করিয়ে রাখলো, আমি নাকি নিক্বাব পড়ে কথা বলছিলাম 😑 একটু বলেছিলাম অবশ্য, কিন্তু অন্য মেয়েরা বেশি বলছিলো......।
এর কিছুদিন পড়েই স্যার ম্যাডামরা মাস্ক পড়ে আসা শুরু করলেন, মনে মনে বলি, উচিৎ বিচার!!
এরপর ভার্সিটি বন্ধ, খুললে পড়ে কি পরিস্থিতি হয় সেটাই দেখার অপেক্ষায়..........
🌸শেষ কিছু কথাঃ
শেষ ভালো তো সব ভালো। সবে মাত্র হাটি- হাটি পা-পা করে আগাচ্ছি, মাঝে মাঝে দিশেহারা হয়ে যাই,আবার উঠে দাঁড়াই। শেষকালে জীবনের এক পরম উপলব্ধি শেয়ার করে কথা শেষ করছিঃ
পাব্লিক ভার্সিটিটে ভর্তির জন্য জানপ্রাণ দিয়ে চেষ্টা করেছিলাম, এরপর ঢা.বি আর জা.বি তে অল্প কিছু সিটের জন্য ভর্তি হতে পারিনি। অতঃপর মহিলা কলেজে ভর্তি হয়ে কিছুতেই মন বসাতে পারছিলাম না। ২য় বারপ্রচুর খেটেখুটে ঢাকার বাইরে ভার্সিটিতে প্লেস করলাম। কিন্তু বাসা থেকে দিলে না, এরপর আর আমার দুঃখ কে দেখে.........
তবু মনকে সান্ত্বনা দিতাম, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই।
৩ বছর পর এসে যে আল্লাহ তা'লার পরিকল্পনা বুঝতে পারব তা সত্যিই বুঝতে পারিনি। সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ!! মহিলা কলেজে পড়তে পেরে এখন আমার পর্দাপালনে শান্তি কে দেখে!
আমার জন্য আল্লাহর পরিকল্পনা ব্যতীত আর উত্তম পরিকল্পনা কিছু নেই। তাওক্কালতু আলাল্লাহ
আল্লাহ যা করেন বান্দার মঙ্গলের জন্যই........
তাই প্রিয় ভাই বোনেররা হতাশ হবেন না।মুমিনগণ কখনো হতাশ হয় না। আজ না হোক কাল আপনি তার কারণ ঠিকই উপলব্ধি করবেন।
................................................
6.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
বেশ দ্বিধায় ভুগছিলাম,কিছু লিখবো কি লিখবো না।গতকাল রাতে সূরা আদ-দূহার বাংলা তর্জমা ও তাফসির পড়তে গিয়ে আমার সাথে বেশকিছু মিল পাই।অবশেষে সিদ্ধান্ত নেই লেখার।এক্ষেত্রে বলে রাখি,আমি আমার দ্বীনে ফেরাকে ঠিক গল্প বলতে নারাজ,সম্পূর্ণটাই আল্লাহ'র অনুগ্রহ।
আল্লাহ বলেন,"তুমি তোমার রবের অনুগ্রহের কথা ব্যক্ত করতে থাকো"[সূরা আদ-দূহা,আয়াতঃ১১]
সেই অনুগ্রহের কথাই লিখতে যাচ্ছি,এর থেকে যদি একজন মানুষও অনুপ্রাণিত হয়-দ্বীনের পথে ফিরে আসে তবেই আমার উদ্দেশ্য সফল।ওয়ামা তৌফিকি ইল্লা বিল্লাহ।
মূল ঘটনাবলির দিকে যাওয়ার আগে একটু পেছনে ফিরে আমার পূর্বের অবস্থা কেমন ছিলো দেখে আসতে হবে।ঢাকার প্রথম সারির স্কুল,কলেজে পড়ার ফলে আর তথাকথিত ভালো স্টুডেন্ট হওয়ার সুবাদে ক্ষ্যাতি ভালোই ছিলো।আজ পেছনে তাকালে ফেলে আসা আমিকে দেখতে পাই সারাক্ষণ দুনিয়াবি চিন্তায় মগ্ন,ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত এক মানুষকে।খেলাধুলা,নাটক,গান,আবৃত্তি থেকে শুরু করে প্রেমটাও বাদ রাখিনি।আর মেয়ে বন্ধুর সংখ্যাও নেহাত কম ছিলোনা।কলেজ পেড়িয়ে অ্যাডমিশন।পলাশীর সেই বিখ্যাত প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি বলে সিদ্ধান্ত নেই ঢাকা ছাড়ার।ভাগ্যে জুটে যায় দেশের অন্যতম সেরা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়,সেই সাথে পছন্দের সাব্জেক্টও।
ছোটবেলা থেকে আমি খুবই প্রাণবন্ত,স্বাধীনচেতা।সেই স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ পাবো বাসা ছেড়ে,ঢাকা ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে-এই আশায় ঢাকা ছাড়ি।মানবজীবনের সব আশা জীবনের সব পর্যায়ে পূরণ হয়না,আমারও হয়নি।মা'কে ছেড়ে এই প্রথমবার থাকা,ভার্সিটির র্যাগ কালচার,মেসের জীবন-সব মিলিয়ে বিষিয়ে উঠেছিলাম।প্রায় পাঁচশতো কিলোমিটার দূরত্বের প্রেমেরও বিচ্ছেদ ঘটে এই সময়টায়,সে প্রায় বছর তিনেকের প্রেম।একসাথে এতকিছুর ধকল কিভাবে সামলাতে হয় তা আমার জানা ছিলোনা।শুধু জানা ছিলো এই সময়টায় হতাশার সাগরে ডুব দিতে হয়,কাঁদতে হয়,বিষণ্ণ হয়ে ঘুরে বেড়াতে হয়।এ সময়টা নেশার জগতে পা বাড়ারানোর উপযুক্ত সময়,নেশাদ্রব্যও সহজলভ্য।আল্লাহ কিভাবে সেই অন্ধকার জগৎ থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন তা ভেবে হাজার শুকরিয়া জানাই।ওই সময়টায় ঘুমের প্রচন্ড সমস্যা শুরু হলো।নামাজ কালামের খুব একটা বালাই না থাকলেও রাতে ঘুম না আসায় কি ভেবে কয়েকদিন তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করি।আমি তখনও এই আয়াতটা জানতামনা-
"অচিরেই তোমার রাব্ব তোমাকে এরূপ দান করবেন যাতে তুমি সন্তুষ্ট হবে" [সূরা দোহা,আয়াতঃ৫]
সময়ের সাথে সাথে মানিয়ে নেই কিছুটা।আবার ফিরে যাই আগের জীবনে,ছোট্ট একটা ক্ষত নিয়ে।আবার সেই দুনিয়াবী জীবন।
দুটি ঘটনা উল্লেখ করে পেছনের ঘটনার ইতি টানবো।আমাদের ভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেদের মেসে মেসে তাবলীগের ভাইয়ারা আসতো,দ্বীনের দাওয়াত দিতো।তাবলীগের প্রতি আমার সহজ ভাষায় একরকম "চুলকানী" ছিলো।এর কারণটা বেশ যৌক্তিক।ছোটবেলা থেকে অনেকবার বিকালে খেলার মাঝখানে দল বেঁধে তাবলীগের লোকজন আসতো,খেলা পন্ড হয়ে যেতো।দেখা যেতো দশ ওভার বোলিং করে ব্যাটিং আর পাইনাই!তো ওই ভাইরা তাবলীগে নিয়ে যেতে না পারলেও নামাজটা মোটামুটি শুরু করি,নিয়মিত না,ইচ্ছা হলে পড়ি-এমন অবস্থা।আর রাতে জেগে থাকলে তাহাজ্জুদ পড়া হয়।দ্বিতীয় ঘটনাটাও তাবলীগ নিয়েই।একদিন বিকালে তাবলীগের দুই ভাই এসে মসজিদে নিয়ে যায়,শুনলাম মসজিদে বেশ খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হয়েছে আমাদের জন্য।মূলত খাওয়ার উদ্দেশ্যেই যাওয়া,বয়ান আর শোনা হয়নি মন দিয়ে।তবে দোয়ার সময় মুরুব্বির কান্না দেখে দোয়াটা মন দিয়ে করেছিলাম।তবে বেশিরভাগের অর্থই জানতামনা,"রাব্বানা আতীনা ফিদ্দুনিয়া.....আযাবান্নার"।
প্রথম বছর এভাবেই পার হয়।এবছরটাও একইভাবে যাচ্ছিলো।ক্লাস-ল্যাব,বন্ধু-মেয়েবন্ধু,গানবাজনা সবই আগের মতো।হঠাৎ একদিন রাতে দুঃস্বপ্ন দেখি।সেদিন রুমমেটরা কেউ বাসায় ছিলোনা।স্বপ্ন দেখি আমি বা আমার পরিবারের কেউ মারা গেছে,বুঝিনাই সঠিক কে মারা গেছে,আমি কাঁদতেসি।এটুকুই।এটা বেশ ভাবায় আমাকে।তবে সেই ভাবনা মনের গভীরেই চাপা পড়ে থাকে,মাঝেমাঝে নাড়া দিতে থাকে।এরপর করোনার জন্য ভার্সিটি বন্ধ,চলে আসি নিজ বাসায়।
কিছুদিন পর মসজিদ বন্ধ হয়,আব্বুর মিলিটারি শাসনের ফলে বাপ-বেটার ঘরে একসাথে জামাতে নামাজ শুরু হয়।উল্লেখ্য আমার ছোটবেলাতেই আব্বু হজ পালন করে আসে,বাসায় মোটামুটি তাই ধর্ম-কর্ম করা হয়।অনিচ্ছা সত্ত্বেও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় শুরু হয়।এরপর পবিত্র রমজান।এরমধ্যে নিজের বা পরিবারের কারোর মারা যাওয়ার স্বপ্নের কথাটা মনে হতো প্রায়ই,আর অন্যদিকে করোনার প্রাদুর্ভাবও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছিলো।আমার একদিন জ্বর আসলো(সাধারণ ঠান্ডা-জ্বর)।নিজের মৃত্যুর কথা মনে হতে লাগলো।জীবনের হিসাব-নিকাশ শুরু করলাম।ভাবতে লাগলাম জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে,স্রষ্টার সম্পর্কে,আদৌ কি স্রষ্টা বলে কেউ আছেন?(নাউজুবিল্লাহ)
আমি মুসলিমই কেন?আমি যদি অন্য ধর্মে জন্মাতাম তাহলে কি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতাম?যদি এর উত্তর না'ই জানি তবে মানে কি থাকলে এতকিছুর!বেশ অস্থিরতাবোধ হতে লাগলো কিছুদিন।
জাকির নায়েককে চিনতাম।তার "The purpose of our life" লেকচার শুনলাম ইউটিউব থেকে।এরপর একের পর এক লেকচার শুনতে লাগলাম।সেখান থেকে শেখ আহমেদ দিদাত এর কথা জানতে পারি।তার "The Choice:Islam & Christianity" পড়া শুরু করি।দুইটা ভলিউম এই বইয়ের।এরপর উত্তর পাই কেন আমি খ্রিষ্টান না বা কেন খ্রিষ্টান হবো না আর ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব!নিজের মধ্যে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করি।
"ইসলামঃতত্ব ছেড়ে জীবনে" বইয়ের থেকে "There is a God:How the World's Most Notorious Atheist Changed His Mind" এই বইয়ের সন্ধান পাই,পড়া শুরু করি।"প্যারাডক্সিকাল সাজিদ" এর নাম আগেই শুনা ছিলো।১,২ দুটিই শেষ করি।নাস্তিকতার অন্তঃসারশূন্যতার বিষয়টা কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে সক্ষম হই।অন্যান্য ধর্মের সাথে ইসলামের পার্থক্য,ইসলামের মূল বিষয় সম্পর্কে পড়াশুনা করতে থাকি।এর মাঝে কুরআন এর বাংলা তর্জমা ও তাফসির পড়া শুরু করি,পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করতে চেষ্টা করি।
মাঝে একটা বিষয় বাদ পড়ে গেছে।এসবের মাঝে একটা সংশয় দানা বাঁধে।মাজহাব বিষয়ক,বুকে-নাভীতে কোথায় হাত বাঁধবো,জোরে আমীন না আস্তে আমীন,রাফাতুল ইয়াদাইন করবো কি করবো না আরও নানান প্রশ্ন মাথায়।আর ইউটিউবের একেক আলেমের একেক উত্তরে বিভ্রান্ত হচ্ছিলাম।এক্ষেত্রে কুরআন এর একটি আয়াত আমার ভরসার জায়গা হয়ে উঠে।
"তিনি তোমাকে পেলেন পথ সম্পর্কে অনবহিত, অতঃপর তিনি পথের নির্দেশ দিলেন"।[সুরা আদ-দুহা,আয়াতঃ৭]
তখন মসজিদে জুম্মা'র সালাত আদায় হলেও বাসা থেকে যাওয়ার পারমিশন ছিলো না।খতিব সাহেবকে প্রশ্ন করবো ভেবে রেখেছিলাম কিন্তু এত প্রশ্ন কিভাবে করবো আর করাটাও কতটুকু ঠিক হবে তা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছিলাম।অতঃপর আল্লাহ'ই পথ দেখিয়েছেন,এক বন্ধুর মাধ্যমে মেসেঞ্জারে ইসলামিক বিষয় পরামর্শের একটি গ্রুপে অ্যাড হই।আশ্চর্যজনকভাবে জানতে পারলাম সেখানে উপস্থিত শাইখ আমাদের ভার্সিটিতে নিয়মিত দারস করেন।মেসেঞ্জারে লম্বা সময় ধরে ফোনে কথা হয়,মনের সব প্রশ্ন করি।উনি ধৈর্য্য সহকারে উত্তর দেন।তকদীর,মাজহাব,জোরে আমীন-আস্তে আমীন এসব বিষয় মোটামুটি ক্লিয়ার হয়।নিয়মিত নানান বিষয়ে উনার সাথে কথা হয়,লাইভ দারসে অংশ নিতে থাকি।এছাড়াও সন্ধান পাই মুশফিকুর রহমান মিনার ভাই,আসিফ আদনান ভাই,শামসুল আরেফিন শক্তি ভাই সহ অনলাইনে লেখালেখি করেন এমন বেশকিছু মানুষের।সন্ধান পাই বেশকিছু গ্রুপের।দ্বীনের পথে চলা এটা ছিলো সবে শুরু
ঝড়ের বেগে নামাজ ধীরে ধীরে দীর্ঘায়িত হতে লাগলো,অর্থ বুঝে সময় নিয়ে সালাত আদায় করতে লাগলাম।আশ্চর্যজনকভাবে জীবনে একটাও নফল রোযা পালন না করলেও রমজানের পরপরই শাওয়াল মাসের ছয় রোজা পালন করি।আমার মাথায় একটা জিনিস সবসময় কাজ করতো,"আমি যেকোনো সময় মারা যেতে পারি।কবরে আমার কি অবস্থা হবে?"এর মধ্যে সূরা মুলক এর ফজিলত জানতে পারি,কবরের আযাব মাফ করার জন্য এই সূরা আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে।এরপর প্রায় দেড় মাস সময় নিয়ে একটু একটু করে মুখস্ত করে ফেলি(আলহামদুলিল্লাহ)। সন্ধান পাই আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারের।ইউটিউবে উনার লেকচার শুনতে থাকি।ইউটিউবের এত এত "আলেম" এর মাঝে পরিপূর্ণভাবে আস্থা রাখার মতো একজন মানুষ পাই।উনার লেখা "কুরআন সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা" পড়া শুরু করি।ইসলাম সম্পর্কে কত কম জানি তা নিয়ে আফসোস হতো অনেক।"এহইয়াউস সুনান পড়ি","রাহে বেলায়েত পড়ি"।স্যারের সাথে দেখা করবো ঠিক করি,আমি জানতামনা উনি দুনিয়ায় নেই।ইউটিউবের কমেন্ট সেকশনে চোখ পড়লে এ খবর জানতে পারি,কিছুদিন আগেও অপরিচতের তালিকায় থাকা মানুষটির জন্য খারাপ লাগে।আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুক,আমীন।
ড.বিলাল ফিলিপ্স এর ইসলামিক অনলাইন ইউনিভার্সিটির কোর্স শুরু করি,এক্ষেত্রে শরীফ আবু হায়াত অপু ভাই ধন্যবাদ প্রাপ্য।উনার বই থেকেই এর খোঁজ পাই।নোমান আলী খানকে জানতে পারি,তাঁর কুরআন এর আলোকে আলোচনাগুলো শুনে কুরআনকে ভালোভাবে শিখতে,আরবী শিখতে উদ্বুদ্ধ হই।দ্বীনি কিছু ভাই,বন্ধুদের সাহচর্যে আসি।এক্ষেত্রে একটি জিনিস বলে রাখা ভালো,কার কাছ থেকে কতটুকু নিতে হবে সেই বোধশক্তিটা একটু একটু করে তৈরি হতে থাকে।এতে বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ কমে যায়।বই পড়ার অভ্যাস পুরোনো,এই বিশাল অবসরকে ব্যস্ত করে তুলি অসংখ্য বই দিয়ে।ইসলাম সম্পর্কে জানার যে এখনও অনেক বাকি!
কয়েকমাস আগেও যেসব মানুষের সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিলোনা,যেসব বিষয়ে আমার ধারণা ছিলোনা আজ সেগুলোই আমার বড় আপন।আমি তো একেবারেই জানতামনা এদের কথা,এটা আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া আর কিইবা হতে পারে?
এক হাদিসে রাসূল(সা) বলেন," আল্লাহ বলেন... ... ...সে আমার দিকে এক বিঘত এগিয়ে আসে তাহলে আমি তার দিকে এক হাত নিকটবর্তী (অগ্রসর) হই। যদি সে আমার দিকে হেঁটে আসে আমি তার দিকে অতি দ্রুত আসি।"
-মুসলিম শরিফ,অষ্টম খন্ড,অধ্যায়-যিকির,দোয়া,তওবা ও ইস্তিগফার।
হাদিসটির আমার থেকে বড় প্রমাণ আর কি হতে পারে?
আমাদের সমাজের পরিবেশে,আমার পারিপার্শ্বিক অবস্থায় সঠিকভাবে দ্বীন ইসলাম পালন ধীরে ধীরে কঠিনতর হচ্ছে।ইসলাম পূর্ণাঙ্গভাবে মানতে গেলে "কাঠমোল্লা" উপাধি পেতে হয়,পুরোনো বন্ধুবান্ধবের বেশ কিছুর সঙ্গ ছাড়তে হয় অশ্লীলতা,গীবত থেকে বাঁচতে।টিভি থেকে দূরে থাকতে নিজের রুমে অধিকাংশ সময় কাটানো,গীবত আর পরনিন্দা থেকে বাঁচতে মানুষের সাথে মেলামেশা কমিয়ে দেওয়া,বান্দার হক রক্ষা করতে হাতের চিপ্সের প্যাকেটটা ডাস্টবিনে ফেলা(জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হলে দায় আমার ওপরও বর্তাবে নাহয়,কি জবাব দিবো তখন?) একটু কষ্টকর মনে হতে পারে।এক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপটাই সব,একবার আল্লাহ'র সন্তুষ্টির দিকে মনোনিবেশ করলে কোনোকিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনা।যেমন প্যান্টের তলা ক্ষয় করে ফেলা আমি যেদিন প্রথম টাখনুর উপর প্যান্ড ভাজ করে বাইরে যাই লজ্জা লাগতে থাকে।পরক্ষণেই মনে হয় আমি যা করছি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য,লোকলজ্জার ভয় তুচ্ছ মনে হয় তখন।একবারে হাজার হাজার গানের প্লেলিস্ট খালি করতে একটুও দ্বিধাবোধ হয়নি,কারণ আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি চাই।আর কারোর না।পুরোনো ফেসবুক আইডি ছেড়ে নতুন এই আইডি ওপেন করাও একই উদ্দেশ্যে।
"তোমার জন্য পরবর্তী সময়তো পূর্ববর্তী সময় অপেক্ষা শ্রেয় বা কল্যাণকর।"
-সূরা দ্বোহা,আয়াতঃ৪
পরবর্তীতে শ্রেষ্ঠ সময় পাওয়ার পথ তো সীরাতুল মুস্তাকিমের পথ,সেই পথে চলতে যতো বাধাই আসুক, পেরোতে হবে সব বাধা।
লকডাউনের শুরুতে পাপিষ্ঠ এই আমিকে আল্লাহ অনুগ্রহ করে দ্বীনের শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করেছেন।করোনায় তো আমি মারা যেতে পারতাম একদম শুরুতেই,বা রুমে ঝুলন্ত সিলিং ফ্যান খুলে পড়ে মরতে পারতাম যেকোনো সময়।কিন্তু আল্লাহ আমাকে সুযোগ দিয়েছেন।
"আপনার পালনকর্তা আপনাকে ত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি"[সূরা দ্বোহা,আয়াতঃ৩]
আমি এখন কিছুটা হলেও জানি আমি কেন ইসলামের অনুসারী,কেন শিয়া বা বিভ্রান্ত ফিরকার অনুসারী না হয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত এর অন্তর্ভুক্ত।আমার বিশ্বাসে পরিবর্তন এসেছে,দৃঢ় হয়েছে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা।দুনিয়ার সকল লোভ লালসার থেকে আমার কাছে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের একটি সেজদা বেশি প্রিয়।
পরিশেষে বলবো,আমি জানিনা কার দোয়া,কোন দোয়া আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কবুল করেছেন।আমার ফার্স্ট ইয়ারের অশ্রুসিক্ত সেই তাহাজ্জুদ? খাওয়ার উদ্দেশ্যে তাবলীগে গিয়ে মন থেকে করা সেই দোয়া?নাকি আব্বুর সবসময় করা দোয়া,"আমার পরিপার পরিজন সবাইকে নামাযী মুত্তাকি বানায় দাও"?সেই দুঃস্বপ্ন কি আসলেই তবে দুঃস্বপ্ন ছিলো নাকি তা ছিলো আমার প্রতি সতর্কবার্তা?আমি জানিনা।আমি শুধু জানি আল্লাহ আমাকে অনুগ্রহ করেছেন।দ্বীনের জ্ঞানের সাগরে আমি নিতান্তই তুচ্ছ।দ্বীনি এলেম অর্জন করার ধৈর্য্য,মেধা আর পরিশ্রম করার সামর্থ্যের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি।
..........................................
7.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগীতা_২০২০
পোস্ট টপিকঃ #ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
অাপন নীড়ের খোঁজে
লেখাঃঅাফসানা উর্মি
অার পাঁচটা সাধারন মুসলিম পরিবারের মতই সাধারন এক পরিবারে অামার জন্ম।যেখানে ইসলামের প্র্যাক্টিস বলতে শুধু নামাজ রোজার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।ছোটবেলা থেকে নামাজ কুরঅান শেখার জন্য মা বকা দিতো।ব্যস এতটুকুই।
যথেষ্ট স্বাধীন একটা জীবন ছিলো।পড়াশোনার জন্য পরিবার থেকে যতটা জোড়াজুড়ি করেছে দ্বীনের ব্যাপারে তার চার অানাও কিছু বলেনি।নামাজ কুরঅান তিলওয়াত করলেও সেগুলা নিয়মিত ছিলো না।তখন শুধু লক্ষ্য ছিলো পড়াশোনা করতে হবে,ভালো ক্যারিয়ার তৈরি করতে হবে সাথে অারো অনেক অাধুনিক দুনিয়াবি চিন্তা।তার বাইরে ফ্রেন্ড সার্কেল নিয়ে মজা, ঘুরাঘুরি,খাওয়া এগুলাই ছিলো জীবন।বোরখা পড়লেও সেটা পর্দার উদ্দেশ্যে ছিলো না।এমনকি মাঝে মাঝে এটাও ভাবতাম যখন জব করবো যখন তখন বোরখা ছেড়ে শুধু হিজাব পড়বো।শালীন থাকলেই তো হলো(অাস্তাগফিরুল্লাহ)।
২০১৮ এর শেষদিকে।হলের গণরুমে উঠা কয়েকমাস হয়েছে।সবকিছু বেশ ভালোভাবেই চলছিলো।খারাপ লাগার মত কিছুই ছিলো না।সবার হেদায়েতের গল্পের পেছনে একটা অসীলা থাকে।কিন্তু অামারটা একদম অামার রব থেকে সরাসরি পাওয়া।মানুষ একা থাকলে মাথায় অনেক কিছু ঘুরে।অামারটা একদম অন্যরকম।ঘুম থেকে উঠে কোন বড় দুসংবাদ পেলে যেমন খারাপ ও অস্হির লাগে অামার ঠিক সেরকম বোধ হতো।সকালে ঘুম থেকে উঠেই ভীষন মন খারাপ হয়ে যেতো কেন জানি না।কোনকিছুতেই শান্তি পেতাম না।কেন এমন হচ্ছে কিছুই বুঝতাম না।মাঝেমধ্যে রাতে হলের মুক্তমঞ্চে বসে অাকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।তখন নিজের অস্তিত্বটা খুব ভালো টের পেতাম।নিজেকে নিয়ে খুব ভাবতাম।কি করছি অামি!অামার কি হবে!অামার কি করা উচিত!কেন অামার এত বেশি খারাপ লাগছে!এই প্রশ্নগুলো সবসময় মাথায় ঘুরতো।
বরাবরই একটাই উত্তর পেতাম।অামার অাল্লাহর থেকে দূরত্ব অনেক অনেক বেড়ে গেছে।লাস্ট কবে অামি অাল্লাহকে ব্যাকুল হয়ে ডেকেছি মনে পড়ে না!এখনই মরে গেলে কি হবে অামার!নিশ্চিত জাহান্নাম।অামার তো কোন অামলই নাই।পেছনের দিকে তাকালে শুধু পাপের বোঝা,অবাধ্য জীবন ছাড়া অার কিছুই দেখি না।খুব কান্না পাইতো তখন অামার।একা একা খুব কাঁদতাম।কেন কাঁদতাম অামি জানি না।উপলব্ধি করলাম অাসলে এটা কোন জীবনই না।এভাবে জীবন চলে না।অামার বদলাতে হবে।অনেক বদলাতে হবে।
তারপর রেগুলার নামাজ অার কুরঅান তিলওয়াত শুরু করি।তখন অামি জানিনা দ্বীনের জন্য কি কি করতে হয়।কেন জানি তখন কারো সাথে মিশতে ভালো লাগতো না।যেসব ফ্রেন্ডদের ছাড়া কিছুই ভাবতে পারতাম না তাদের সঙ্গও তখন বিরক্ত লাগতো।একা থাকতে ভীষন ভালো লাগতো।ঘুরাঘুরির জন্য সবাই জোর করলেও যেতাম না।কোনরকম ক্লাশ শেষ করেই রুমে চলে অাসতাম।একা থাকতাম।
যে অামি ইসলামিক পোস্ট দেখলে স্ক্রল করে চলে যেতাম সেই অামি তখন এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি বেশি করতাম।এর বাইরে যেকোন পোস্ট খুব বিরক্ত লাগতো।ফানি,ড্রেস যত পোইজ অাছে ইসলামিক বাদে সব পেইজ অানলাইক অানফলো করা শুরু করি।অামার অাগের অাবোল তাবোল সব পোস্ট ডিলেট করে যেসব ইসলামিক পোস্ট ভালো লাগতো সেগুলা শেয়ার করতাম।এরপর শুরু হয় সবার সমালোচনা।কত ঢং দেখবো!ইসলামিক পোস্ট শেয়ার দিলেই কি হুজুর হয়ে যাবে নাকি!
খুব মনে হতো গান শোনা,নাটক-মুভি সব বাদ দিতে হবে।কিন্তু পুরোপুরি পারছিলাম না।বাদ দিলেও মাঝে মাঝে দেখা হয়ে যেতো।গান শুনলেই মনে হতো দুনিয়ার সমস্ত খারাপ লাগা অামার উপর ভর করেছে।মন ভালো করতে যেয়ে উল্টো কয়েকগুন খারাপ হয়ে যেত।এরপর হঠাৎ একদিন অামার চার বছরের পুরনো মেমরি কার্ডটা নষ্ট হয়ে যায়।অামার সেদিন কেন জানি এক বিন্দুও খারাপ লাগে নি।বরং খুশিতেই চোখে পানি চলে এসছিলো।এটা নিশ্চয়ই অামার রবের পরিকল্পনা।তিনি নিশ্চয়ই চান অামি এগুলো থেকো বিরত থাকি।সুবহানাল্লাহ।
তারপর তিলওয়াত অার Baseera media এর লেকচার শোনার অভ্যাস করি।এমনও হয়েছে তিলওয়াত শুনে কিছু না বুঝেও হাউমাউ করে কেঁদেছি।তবে এই কান্নাটা ছিলো অনেক প্রশান্তির।
ইসলামিক সাহিত্য বলে যে কিছু হয় সেটাই জানতাম না।ইসলামিক বই বলতে শুধু হাদিস কুরঅানই বুঝতাম।নামাজ শেষ করে নামাজরুমের বইগুলা ঘাটাঘাটি করে দুঅাগুলো মুখস্হ করতাম।তারপর একদিন কিছু বই হাদিয়া পেলাম।বই পড়ার তেমন অভ্যাস নেই।বই পড়া বলতে হুমায়ূন এর উপন্যাসই বুঝতাম।হিমু মিসির অালি পড়ে কত মুগ্ধ হয়েছি একসময়।ফেরা বই দিয়ে অামার ইসলামিক বই পড়া শুরু।কোন বই যে কারো ভেতর এতটা স্পর্শ করতে পারে অামার জানা ছিলো না।বইয়ের যত গভীরে যাই ততই মনে হয় ভেতরে হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে কেউ।পড়তাম অার চোখ ছলছল করতো।নিজেকে এত অধম,পাপী,অযোগ্য মনে হচ্ছিলো।মুসলিম হিসেবে অামি কতটা লজ্জিত!অালাহুম্মাগফিরলি।
অারো কিছু বই পড়ে বইয়ের প্রতি খুব নেশা বেড়ে গেলো।একাডেমিক বই কিনবো বলে বাসা থেকে টাকা নিয়ে পুরো টাকা দিয়ে ইসলামিক বই কিনে ফেললাম।এর মধ্যে সবার সাথে অনেক দূরত্ব বেড়ে গেছে।হাসি অাড্ডার মধ্যে থাকতাম না কারো।ক্লাশে ছেলেদের সাথেও প্রয়োজন ছাড়া কোন কথা বলতাম না।বান্ধবীদের সাথেও খুব কম কথা হতো।ক্লাশের ফাঁকে সবাই অাড্ডা দিতো অার অামি এক কোনায় ইসলামিক বই নিয়ে পড়তাম।দুই একটা সমালোচনা কিংবা খোঁচা ঠিকই কানে অাসতো।মুখ থেমে থাকলেও চোখ ঠিকই ছলছল করতো।
পর্দা করার ভীষন ইচ্ছে ছিল।তারপর পর্দা রিলেটেড বই পড়ার পর পর্দা শুরু করি অালহামদুলিল্লাহ ।প্রথমদিকে শুধু মুখে নিকাব করতাম নরমাল হিজাব দিয়ে।কেউ কেউ বলতো অামরা তো তোর মুখ দেখেছি এতদিন এখন অামাদের সামনে পর্দা করার কি অাছে!অামি বলতাম এতদিন ভুল করেছি বলে কি এখন বুঝার পরও ভুল করবো!অাল্লাহ অামাকে এখনো ভালো কাজের সুযোগ দিয়েছেন।রাসুল সঃ তো বলেছেন,"তোমরা ভালো কাজ করো।ভালো কাজ মন্দ কাজকে মিটিয়ে দেয়।"
কেউ কেউ বলতো ক্লাশে মুখ খুললেই হয়।পর্দা না করলেও এটা কোনকালেই অামার পছন্দ ছিলো না।ক্লাশে মুখ খুললে অাবার পর্দা কিসের!খুব ইচ্ছে ছিলো খিমার বা জিলবাব পড়ার।কিন্তু তখন মনোবল কিংবা অার্থিক সামর্থ্য কোনটাই ছিল না।বাড়িতেও বলতে পারবো না।যেটুকু টাকা জমতো বইয়ের পিছনে চলে যেত।এক বান্ধবীর সাথে একসাথে খিমার কেনার প্ল্যান করছিলাম।একদিন হঠাৎ দেখি সে খিমার পড়ে এসছে।তারপর অামার অার তর সইছিলো না।ওর থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে সেদিনই অামি খিমার কিনে অানি।তার কদিন পর হাত-পা মোজা কিনে পরিপূর্ণ পর্দা শুরু করি অালহামদুলিল্লাহ।
অাগে অনেক ছবি তুলা হতো।অামার ফোন থেকে সব ডিলেট করলেও অনেকের কাছে গ্রুপ পিক রয়ে যায়।সবাইকে রিকুয়েষ্ট করতে থাকি ডিলেট করার জন্য।অনেকে শোনে,অনেকে বাঁকা কথা শোনায়।নিষেধ করার পরও যখন কাউকে গ্রুপ পিক অাপলোড দিতে দেখতাম অামার কষ্টে বুকটা ফেটে যেতো।এত কাঁদতাম।তাদেরকে বুঝাতাম।এরপর শুরু হয় কঠিন মুহূর্ত।অামি হয়ে যাই সবার কানাঘুষার পাত্রী।কোথাও যেতাম না,বাইরে মুখ খুলে খেতাম না,ছবি তুলতাম না,কোন ক্লাশ পার্টিতে এটেন্ড করতাম না বলে কত যে কথা শুনেছি।অনেক খারাপভাবেও পেছনে অনেক কথা শুনেছি।সবটাই কানে অাসতো।সবর করতাম।অাল্লাহকে বলতাম তুমি তো দেখছো মাবুদ অামার চেষ্টাটুকু,অামার কতটা খারাপ লাগছে!
খুব কান্না পেত।কিছুই বলতাম না।মাঝে মাঝে মনে হয় দ্বীনের বুঝ অাসার পর অনেক বেশি অাবেগী হয়ে গেছি।যখনই নামাজে দাঁড়াতাম তখনই সবার নোংড়া সমালোচনাগুলো বেশি মনে পড়তো।এমনও হয়েছে পুরো নামাজে ঝরঝর করে চোখে পানি পড়তো।হলের নামাজরুমে নামাজ পড়তাম বলে একা রবের সাথে কথা বলার সুযোগ পেতাম না।অামার অভ্যাস কেউ পাশে থাকলে অামি শান্তিমত মোনাজাত করতে পারি না।এইজন্য এশার নামাজ সবসময় একটু দেরীতে পড়তাম।সবাই নামাজ শেষ করে চলে গেলে একা দীর্ঘ সময় নিয়ে মোনাজাত করতাম।ঘুমকাতুরে মানুষ অামি কেমনে যেন তাহাজ্জুদের সময় জাগা পেয়ে যেতাম।তখন নামাজ পড়ে অনেক সময় নিয়ে মোনাজাত করতাম।এই দুটো সময় অামার খুব খুব পছন্দের ছিলো।মোনাজাতে এত কান্না পাইতো।মনে হতো এই সময়টুকু শুধু অামার অার অামার রবের।হাউমাউ করে কাঁদতাম।মনের যত খারাপ লাগা যত চাওয়া সব বলতাম সব।অার চাইতাম অাল্লাহ তুমি অামার জন্য সহজ করো,সবার কটু কথা উপেক্ষা করে দ্বীনের প্রতি অামার মহব্বত তৈরি করে দাও।অামি যা কিছু করছি শুধু তোমার সন্তুষ্টির জন্য তুমি তো জানো।খুব হালকা লাগতো।অালহামদুলিল্লাহ এরপর সবার সব কথা গাঁ সওয়া হয়ে গেছে।শুধু ভাবতাম সব ধৈর্যের প্রতিদান অামার রবের নিকটে।
তারপর অাস্তে অাস্তে কিছু দ্বীনি সহবত অাল্লাহ মিলিয়ে দিয়েছেন।ফেসবুক অাইডি থেকে কিছু রিলেটিভ ছাড়া সকল নন মাহাররাম অানফ্রেন্ড করে দিই।অনেক দুনিয়াসক্ত,হাবিজাবি পোস্ট দেয় এমন বোনদেরও অানফলো করে দিই।এরপর সব দ্বীনি বোনদের এড দিই।এভাবেই অনলাইন অফলাইনে অনেক দ্বীনি বোন পেয়ে যাই যাদের সহচার্য শুধু অাল্লাহর কথায় স্মরণ করিয়ে দেয় অালহামদুলিল্লাহ।
এভাবেই ছোট বড় অনেক পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে চরাই-উৎরাই পার করে চলছে।অামার পরিবর্তনে অামার বাবা মায়ের কোন পজিটিভ বা নেগেটিভ কোন প্রতিক্রিয়া ছিলো না।তবে কিছু সিদ্ধান্তে তারা অামার উপর খুবই অসন্তুষ্ট,কিছুটা বিরক্ত।ক্যারিয়ার সচেতন মেয়েটা এখন ফ্রি মিক্সিং এ জব এর কথা ভাবতেই পারি না।কাছের কিছু অাত্মীয়ের কাছেও অনেক তাচ্ছিল্যেসূচক কথা শুনেছি।অনেক কষ্ট লাগে।তখন শুধু ভাবি সবকিছুই তো অামার অাল্লাহর জন্য।তিনি সন্তুষ্ট থাকলে অামার কিছু লাগবে না।যে নিয়ামত তিনি অামাকে দিয়েছেন তার শুকরিয়া করে অামি কোনদিন শেষ করতে পারবো না।অাল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ তার বদলে তিনি কয়েকগুন ফিরিয়ে দিবেন ইংশাঅাল্লহ।জান্নাতে কোন খারাপ লাগা থাকবে না।
পরিশেষে কিছু কথা বলতে চাই,,,,
অনেক ভাই বোন অাছেন যারা বুঝেন যে অাল্লাহর দিকে ফিরতে হবে।কিন্তু কিভাবে কি করবেন,কিভাবে শুরু করবেন বুঝতে পারেন না।তাদের জন্য নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু নসীহা--
★সবসময় ভাবুন অাপনার হিসেব শুধু অাপনাকেই দিতে হবে।অাপনার বাবা-মা ও দিবে না।এটা প্রতি মুহূর্তের জন্য মাথায় গেঁথে নিন।সমালোচনা কানে নিবেন না।অাল্লাহর সন্তুষ্টিই জীবনের উদ্দেশ্য।
★সলাত ও প্রচুর দুঅার মাধ্যমে অাল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করুন।তাহাজ্জুদ পড়তে পারলে অালহামদুলিল্লাহ।
★বোনেরা পর্দা শুরু করবো না ভেবে এখনই শুরু করুন।মৃত্যু কখন এসে যাবে অামরা কেউ জানি না।
★গান,নাটক-মুভিসহ সকল হারাম জিনিস ত্যাগ করুন।হারামে ডুবে থেকে হালালের স্বাদ কখনোই পাবেন না।
★ফেসবুক থেকে থেকে হাবিজাবি পেজ অানফলো করে দিন।এগুলো শুধু সময়ই নষ্ট করে।চাইলেও সবসময় ঠুনকো ঈমান নিয়ে এসব এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।অথেনটিক ইসলামিক পেইজ,ভালো ভালো অালেম,অনেক সুন্দর লিখালিখি করেন এমন দ্বীনি ভাইবোনদের লিখা ফলো করতে পারেন।
★দ্বীনি সহবত গড়ে তুলুন।অার দুনিয়াসক্ত,পাপের দিকে অাহ্বানকারী বন্ধুদের এড়িয়ে চলুন।এটা খুবই গুরত্বপূর্ণ।
★নন মাহাররাম অানফ্রেন্ড করে দিন।কারো পোস্ট ভালো লাগলে তাকে ফলো দিয়ে রাখুন।
★সম্ভব হলে বই পড়ার অভ্যাস করুন।বই অনেক বেশি মোটিভিটেড করে।সময়গুলো ভালোভাবে কাজে লাগে।
★অাপনার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য জান্নাত বানিয়ে নিন।
.............................................
8.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
- আলহামদুলিল্লাহ, ইসলামিক মাইন্ডেড পরিবার হওয়াতে ছোট থেকেই দ্বীনের প্রতি অন্যরকম একপ্রকার মহব্বত ছিল। সেই সুবাদে অনেক ছোট থেকেই নামায,রোযা পালন করার চেষ্টা করতাম। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথেই রবের সাথে দুরত্ব আস্তে আস্তে কমতেছিল। নামায পড়তাম কিন্তু নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত হতো না, মেয়েদের সাথে ফ্রি-মিক্সিং বা গলায় গলায় ভাব আচরণ কখনোই সাপোর্ট না করলেও কয়েকজন বান্ধবী বন্ধুদের লিস্টে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল(যদিও খুব অল্প কথা হতো মাঝেমধ্যে শুধু)। এভাবেই HSC শেষ হয়ে admission time চলে এসেছিল।
- মেডিকেলে পড়া স্বপ্ন থাকলেও তা সফল হলো না প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায়, আল্লাহ পাকের ইচ্ছায় ভর্তি হলাম রাবিতে লোকমুখে কথিত একটি স্বনামধন্য ডিপার্টমেন্টে।
- কিন্তু মনের প্রবল ইচ্ছা ডাক্তার হতেই হবে, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম 2nd time admission দেব। কিন্তু সবার থেকেই শুনতাম ভার্সিটি লাইফ মানেই আড্ডা, মাস্তি, enjoy, বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরাঘুরি, একসাথে খাওয়া-দাওয়া আরও কত কি!!! এককথায় সুখী হবার সমস্ত উপকরণের full package আপনি পাবেন পুরো free (আল্লাহুম্মাগফিরলী)। এখন কিছুটা হলেও উপলব্ধি করার তাওফিক আল্লাহ পাক দিয়েছেন যে, সত্যিই জাহান্নামের নিকৃষ্ট স্তরে পৌঁছানোর জন্য যত আসবাব(উপকরণ) প্রয়োজন তার full package ভার্সিটিতে বন্ধুত্ব বা bonding নামের আড়ালে যতটা সাশ্রয়ী package এ পাওয়া যায় তা আর কোথাও হয়তো পাওয়া যায় না। আল্লাহ পাক আমাদের সমসাময়িক,পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত ভাই-বোনদের হেফাজত করুন।
- লোকমুখে প্রসিদ্ধ ভার্সিটির এই সুখ সম্বন্ধে তাই আগ্রহ তৈরি হলো। সিদ্ধান্ত নিলাম ১ মাস ক্লাস করব তারপর 2nd time preparation নেব। মূলত উদ্দেশ্য ছিল তথাকথিত "ভার্সিটির সুখী জীবন" উপভোগ করা (আল্লাহ পাক মাফ করুন)। তাই শুরু হল নতুন (বিপথগামী) জীবন। আমরা একই কলেজের দুইজন ছিলাম আমাদের ডিপার্টমেন্টে, সেই হিসেবে ডিপার্টমেন্টে শুরু থেকেই আমাদের প্রায়োরিটি ছিল মোটামুটি ভালোই। অল্পদিনেই তৈরি হলো আমাদের কয়েকজনের(শুধু ছেলে) strong circle. ক্লাস শুরুর কয়েকদিনের মধ্যে সিনিয়র ভাই-আপুরা পরিচিতি হতে আসলেন, কিন্তু আমরা ছেলে-মেয়ে আলাদা কেন বসি, পরিচিত কেন হয়নি এখনো, কেন বন্ডিং নেই ইত্যাদি ইত্যাদি কত প্রশ্ন। তখন কথাগুলো খুব লেগেছিল। তাইতো সিনিয়ররা যেতেই ক্লাসের সামনে এসে শুরু করলাম আমার জ্বালাময়ী lecture. কথাগুলো শুনার পর সবাই সিদ্ধান্ত নিল আজ সারাদিন একসাথে ঘুরাঘুরি, পরিচিত হওয়া , পিক উঠানো, খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা ইত্যাদি ইত্যাদি হবে। পরিকল্পনা মাফিক তাই ই হলো সারাদিন। রাতে ধন্যবাদ দিয়ে অনেকেই মেসেজ করল আজকের দিনটি উপহার দেওয়ার জন্য। এভাবেই মোটামুটি চলতে থাকল পরবর্তী দিনগুলো, ক্লাস কম হতো, আর বাকি টাইম এভাবেই কাটতো, আর তেমন কিছু হলেই শুরু হতো আমার ঘেনঘেনানি lecture(আল্লাহ পাক মাফ করুন এখন খুব ভয় লাগে ঐ দিনগুলো মনে পড়লে)।
- 2nd time অনেক ভালো প্রস্তুতি নিলাম, কিন্তু মেডিকেলে চান্স পেলাম না। এমনকি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্টের পরেরদিন জাবিতে ভর্তি পরীক্ষা ছিল। সন্ধ্যার দিকে মেডিকেলের রেজাল্ট দিয়েছিল, আর কোচিং থেকে রিজার্ভকৃত গাড়ি ছিল রাত ৮ টার দিকে। খুব ভালো মনে আছে কাঁদতে কাঁদতেই গাড়িতে উঠেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ জাবিতে চান্স হলো এবং পরবর্তীতে রাবিতে একটা ইউনিটে ১ম হলাম। এই মুহূর্তে শুরু হলো চরম অস্থিরতা কোথায় ভর্তি হবো জাবিতে নাকি রাবিতে? এই সাবজেক্ট নাকি ঐ সাবজেক্ট?? পুরোটা সময় অস্থিরতায় কাটতেছিল। এভাবেই জাবিতেও ভর্তির date চলে আসল। এমনিতে জাবিতে পরিচিত তেমন কেউ ছিলনা, এক বন্ধুকে বললে সে এক ভাইয়ের নাম্বার দিয়েছিল আর বলল ভাইয়ের সাথে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সময় পরিচয়, এমনিতে তাবলীগ করে তবে খুব ভালো মানুষ।
- ফোন দিয়ে ভাইয়ের নিকট আসলাম ভর্তি হবার জন্য। আল্লাহ পাকের কি দয়া ভাইয়েরা এত সুন্দর ব্যবহার করেছিলেন, উনাদের ব্যবহারে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। যারা ছিল একেবারে অপরিচিত, মাত্র দ্বীনের খাতিরে আমাকে এত মহব্বত করেছেন তা সত্যিই অতুলনীয়। আমাকে বেডে রেখে উনারা ফ্লোরে থেকেছেন, যে কয়দিন ছিলাম পুরো মেহমানদারি করেছেন এমনকি নিজহাতে রান্না করে খাওয়াইছেন। লক্ষ্য করেছিলাম, আমি কোথায় ভর্তি হবো জাবিতে নাকি রাবিতে, এই পেরেশানিতে উনারাও সমানভাবে পেরেশান হয়ে গিয়েছিলেন যেমন এই বিষয়ে সিনিয়র ভাইদের কাছে পরামর্শ নেওয়া, স্যারদের কাছে জানা ইত্যাদি। যদিও ভর্তির প্রথম দিনটা থাকার নিয়তে গিয়েছিলাম(১ম মেরিটে ভর্তির সময় ৩দিন ছিল) কিন্তু কোথায় ভর্তি হবো এটা তখনো ফাইনাল করতে পারিনি। তাই প্রথম দিন সব সিগনেচার বা কাজগুলো শেষ করার পরও শুধু ব্যাংকে টাকা জমা না দিয়ে হলে চলে এসেছিলাম। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম জাবিতেই ভর্তি হবো এবং ৩য় দিনে ভর্তি হয়েছিলাম।
- ভর্তির এইদিনগুলির মধ্যেই একদিন ছিল তাবলীগের ভাইদের গাশতের দিন(দাওয়াতের আমল)। তাই আমিও ভাইদের সাথে শরীক হলাম। মাগরিবের পর একজন বড়ভাই অল্প সময় বয়ান করেছিলেন। আমি সত্যিই ব্যাকুল হয়ে গিয়েছিলাম ঐ বয়ান শুনে। আসলেই ঐ অনুভূতি কখনো বুঝানো সম্ভব নয়। বয়ান শেষে যখন ভাই জানতে চাইলেন কিছুদিন পর আল্লাহর রাস্তায় কিছু সময় দিয়ে নিজের ঈমান আমল মজবুত করার জন্য কেউ তৈরি আছে কিনা অর্থাৎ ১ চিল্লা(৪০দিন) বা ৩ চিল্লা(১২০দিন) বা কিছু সময়ের জন্য কেউ তাবলীগে যেতে চাই কিনা। তখন মনের অজান্তেই হাত উঠাইছিলাম আর নিয়ত করেছিলাম ১চিল্লাতে যাবার জন্য।
- আলহামদুলিল্লাহ এর কিছুদিন পরেই ভার্সিটির এক ভাইয়ের সাথে আল্লাহর রাস্তায় বের হয়েছিলাম (যদিও বাড়িতে এসে নিয়ত পাল্টিয়ে গিয়েছিল, ভেবেছিলাম ভাইয়েরা হল থেকে ফোন না দিলে আর যাব না,কিন্তু যাবার কয়েকদিন আগে এক ভাই ফোন দেওয়াতে আর না করতে পারিনি)।
- আলহামদুলিল্লাহ এরপর থেকেই রব্বে কারীমের শুধু দয়া আর দয়া অনুভব করলাম। সত্যিই আল্লাহ পাক আমাকে কত দয়া করে ওরকম দ্বীনি পরিবেশে নিয়ে গিয়েছিলেন তখনকার বিষাক্ত যিন্দেগী থেকে,আলহামদুলিল্লাহ। এখনও মনে হয় ঐ ৪০ দিন ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ৪০ দিন। প্রতিদিনই ইসলাম সম্পর্কে নতুন করে জানতে পারছিলাম, আর আবেগ-অনুভূতিতে নিজেকে হারিয়ে ফেলতাম। নিজেরাও যখন কাউকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে বাইরে যেতাম তখন সবধরনের কাকুতি-মিনতি সহকারে বুঝাতে চেষ্টা করতাম। আর প্রায় প্রতিদিনই বয়ান বা মুযাকারার পর শুরু হতো হাউমাউ করে আফসোসের কান্না। আহ!!!হেদায়েতের সুখ কত মধুর!!! চিল্লার শেষ দিকে উক্ত এলাকার অনেক লোকজনদের দাওয়াত করে মসজিদে জোড় করা হয়েছিল,আহ!!!কি আবেগঘন ভাষায় তাদেরকে দ্বীন মানার জন্য অনুরোধ করেছিলাম তা কিভাবে কাগজ-কলমে বুঝায়??? সত্যিই নবজীবন প্রাপ্ত ব্যক্তিই তো বোঝে জীবনের কতটা মূল্য!!!
- বাড়িতে এসে অনুভব করলাম এই ৪০ দিনে জীবনের অনেক কিছুতেই পরিবর্তন এসেছে। ব্যক্তিগত সুরত, পছন্দ, আবেগ-অনুভূতি, কাজকর্ম বা প্রায় প্রতিটি বিষয়ের চিন্তাধারাতেও এসেছে গভীর পরিবর্তন।
-কিছুদিন পরেই ভার্সিটির ক্লাস শুরু হবে। বাড়িতে এই কয়দিন সুন্নাতি পোশাক পড়লেও সবাই ভাবছিল ভার্সিটিতে হয়তো শার্ট-প্যান্ট বা জিন্স পরেই যাব, ওই মুহূর্তটা একটু কঠিন ছিল পরে আল্লাহ পাক খুব সহজ করেছিলেন। আহ!!!কি শান্তি সুন্নাতি লেবাসে, সত্যিই অসীম ও অবর্ণনীয়। এরপর fb থেকে অভিযান শুরু করলাম, বান্ধবী বা নন মাহরামদের block or unfriend করা। খুব ভালো মনে আছে, খুব close একটা হিন্দু বান্ধবী ছিল তাকে যখন বললাম আর কথা বলা সম্ভব না তখন সে বলেছিল,"দোস্ত,তুই দিনে only ১ বার কথা বলিস,বলেছিলাম সম্ভব না রে,আবার বলেছিল, আচ্ছা তাহলে সপ্তাহে ১ বার, আবার না বললে সে বলেছিল তুই তাহলে মাসে ১ বার কথা বলিস, সেবারও না সূচক কিছু বলেছিলাম। পরে আস্তে আস্তে দ্বীনের অন্যান্য বিষয়গুলো মেনে চলতে চেষ্টা করেছি।
-এরপর ভার্সিটিতে এসেও মোটামুটি কিছু কথা শুনতে হয়েছে বিভিন্নসময়ে তবে সেগুলো তখন ভালোই লাগতো শুনতে কেন জানি খারাপ লাগতো না।
-ফার্স্ট ইয়ারের শুরুর দিকে কিছু বন্ধু মেয়েদের সাথে কথা বলার জন্য ভালোই জোর করত। একজন বন্ধু এরকম ভাবে বুঝাইতেছিল যে, "আরে তুমি এখন ভার্সিটিতে পড়তেছ, এখন কি আর ছোট আছো, তাই সবার সাথে একটু ম্যাচ করে চলার চেষ্টা কর "। একথা শুনে মনে মনে হেসেছিলাম আর বলেছিলাম, বন্ধু তুমি হয়তো ভার্সিটিতে প্রথম পদার্পণ করেছ, কিন্তু এর নিকৃষ্ট স্বাদ কিছুটা হলেও আগে পেয়েছি(আল্লাহুম্মাগফিরলী)।
-ক্লাসের কোন একটা মেয়ে একবার বলেছিল, আরে ওর সম্পর্কে আমি খোঁজ নিয়েছি, আগে এরকম ছিলনা, হয়তো র্যাগের ভয়তে এরকম হুজুর হয়েছে টেনশন নিস না কিছুদিন পর দেখবি ঠিক হয়ে গেছে। মনে মনে হেসেছিলাম কথাগুলো শুনে আর আল্লাহ পাকের নিকট দুআ করেছিলাম যাতে এরকম কিছু না হয়।
- মনে আছে একদিন এক সিনিয়র আপু ক্লাসের মেয়েদের নাম বলতে বলেছিলেন কিন্তু প্রায় ২০ জনের মধ্যে শুধু ৩ জনের নাম বলতে পেরেছিলাম তাও একজনের নাম ভুল বলেছিলাম, এতে সেই আপু প্রচন্ড চটেছিলেন আর তার মধ্যে জমে থাকা পুরোটা ক্ষোভ আমার উপর তুলেছিলেন, সঙ্গে মডারেট ইসলাম শিক্ষা দিয়েছিলেন আমাকে,খুব কষ্ট পেয়েছিলাম ওইদিন। পরবর্তীতে ওই আপুর জন্যই সবচেয়ে বেশি দুআ করেছিলাম।
- একদিন এক বন্ধু ক্লাসের এক মেয়েকে জিজ্জাসা করেছিল, ক্লাসে সবচেয়ে কে ভালো? সে আমার এক বন্ধুর নাম বলেছিল। প্রশ্নকারী বন্ধু আমাকে ইশারা করে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েছিল সে নই কেন? জবাবে সেই মেয়েটা বলেছিল, " আরে ওটাতো সিলেবাসের বাইরে" জবাব শুনে মনে মনে হেসেছিলাম আর আল্লাহ পাকের শুকরিয়া আদায় করেছিলাম (আমি পাশে নিকটের বেঞ্চেই ছিলাম তাই শুনতে পাচ্ছিলাম)
- একদিন এক ছোট ভাইয়ের টাইমলাইনে আমার নাম মেনশন দেখলাম, তাকে কেউ জিজ্ঞাসা করেছে "ভার্সিটিতে কাকে কখনো কোন মেয়ের সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে দেখেনি"। সেই ছোটভাই এই গুনাহগারের নাম সেখানে লিখেছিল। সেদিন খুব দুআ করেছিলাম নিজের জন্য কেননা সবাই তো বাহ্যিকভাবে জানে ভিতরের অবস্থা তো আমিই সবচেয়ে ভালো জানি।।।
- কথাগুলো লিখবো কিনা খুব কনফিউজড ছিলাম তাইতো একেবারে শেষ মুহুর্তে লেখাটা জমা হবে হয়তো ইনশাআল্লাহ, এই আশায় লিখেছি যদি কোন ভাই বা বোনের দ্বীনের পথে চলতে বা দ্বীনের পথে ফিরে আসতে বিন্দুমাত্র সহায়ক হিসেবেও আল্লাহ পাক কবুল করেন। বাকি সমস্ত ধরনের রিয়া থেকে আল্লাহ পাক হেফাজত করুন।
- তবে মাঝে মাঝে ভাবি দুইটা ভার্সিটি জীবন কিন্তু কতটা ব্যবধান। আহ!!! কি দয়া রব্বে কারীমের!!!
-💗💗💗সত্যিই আল্লাহ পাক ই উত্তম পরিকল্পনাকারী।।।
- লেখায়ঃ মুহাম্মাদ নুরুজ্জামান।
..................................................
9.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।।
মধ্যবিত্ত ফেমিলির সবচেয়ে ছোট সদস্য হওয়ায় সবার খুব আদরের আমি।গ্রামের নির্মল পরিবেশে গতানুগতিক মুসলিম পরিবারের শাসনে বেড়ে উঠা।
ফেমিলিতে পাঁচওয়াক্ত নামজ নিয়মিত আদায় করে এমন সদস্য পাওয়াই দুষ্কর।আমিও মন চাইলে পড়তাম অন্যথায় ছাড়তাম।
দ্বীনের জ্ঞান ছিল না কোন কালেই।অবশ্য সারাউন্ডিংয়ে তেমন সোর্স ও ছিল না।সব ধরনের দশ্যিপনাই ছিল নিত্যসঙ্গী।
পড়াশোনায় মধ্যম লেভেলের স্টুডেন্ট হলেও অংকে ছিলাম পাকা।
তাইতো জেএসসি (জিপিএ-৫) পাসের পর বিজ্ঞানের ছাত্রী হওয়া।আর এখান থেকেই শুরু নামের শেষে "মেধাবী" ট্যাগ যোগ হওয়া।
সেইসাথে ভাইদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা "তোকে ডাক্তার হতে হবে"প্রবাদটি মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া।
কি আর করার! সময়ের সাথে সাথে পরীক্ষার খাতায় "আই ওয়ান্ট টু বি আ ডক্টর" লিখতে লিখতে আমারও এইম ইন লাইফ এখন ডক্টর হওয়া।
জ্ঞান-প্রজ্ঞার পাশাপাশি মানুষের কত গুন থাকে।সবার মত এত গুন নাই আমার।অবসর সময় গান শুনে,নাটক,মুভি(সাউথ ইন্ডিয়ান)দেখে পার করতাম।
তবে হ্যা আমার একটা বদঅভ্যাস আছে।বদঅভ্যাস না বলে বদনেশা বলাই ভালো!
আর সেটা হল খেলা (বিশেষত ক্রিকেট)দেখা।ভাইবোন একসাথে খেলা দেখার মজাই আলাদা।
হোম-আ্যওয়ে কোন সিরিজই আমার মিস যেত না।সাথে ওয়ার্ল্ড কাপ(ওডিআই,টি-টুয়ান্টি), ফ্রাঞ্চাইজি লিগ তো আছেই।
টেস্ট ম্যাচগুলোও(যা আমার ধৈর্য্য বাড়ায়) বাদ যেত না।বিশেষ করে অ্যাশেজ সিরিজ।
কেউ বারণ করতো না আমাকে।সবার কথা একটাই রেজাল্ট ঠিক থাকলে তো সমস্যা নেই।
তাই আমিও খেলা দেখতাম খুব, শুধু দেখতামই না এফএম রেডিও ভুমির(৯২.৮) সাথে কানে ইয়ারফোন গুজে রাত পার করতাম আইপিএল শুনে শুনে।
এ তো গেল ক্রিকেট।ফুটবলও আছে। ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ,এলক্লাসিকো,কোপা আমেরিকা,ইউরো কাপ, লা-লিগা,ইপিএল আপডেট রাখতাম সবসময়ই।
পরীক্ষার আগের রাতেও খেলার প্রাধান্যই ছিল বেশি। ম্যাথের সুত্রের মত স্কোর মনে রাখতাম।
সকালের প্রথম কাজই ছিল স্পোর্টস ২৪ (চ্যানেল-২৪) দেখা।
মানুষ যেখানে হলিউড-বলিউড মুভির ইমোশনাল সিন দেখে কাঁদে আমি সেখানে প্রিয় কোন টিমের পরাজয়ে কাঁদতাম।বাংলাদেশের পরাজয়ে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেতাম।
মাঝেমাঝে খাওয়াটা বন্ধ করে দিতাম।একেবারে ডিপ ডাইহার্ট ফ্যান যাকে বলে আরকি।
মেঝো ভাইয়ের একটা বুলি সবসময়ই কানে বাজতো মেয়ে মানুষ এত খেলা পাগল হলে হয়!!!
আর আমার উত্তর ছিল কোন খারাপ কাজে তো যাইনি!!!এভাবেই পার পেয়ে এসএসসিতে মারলাম ডাব্বা(জিপিএ-৫ মিসড)।
ফ্রেন্ডশীপ রিলেশনটার প্রতি বরাবরই ছিলাম দুর্বল।কাছের ফ্রেন্ডসরা সবাই যখন নামি-দামি কলেজে এডমিশন নেয় আর আমি সরকারি কলেজে তখন খুব একা হয়ে গিয়েছিলাম।
এসময়টায় খুব ডিপ্রেসড ছিলাম।মনে হল যেন জীবনে জিপিএ-৫ ই সব।
পাবলিক মেডিকেলে চান্সের জন্য এইচএসসি জিপিএ খুব ইম্পরট্যান্ট। তাই নিজেকে স্থির করলাম যেভাবেই হোক আমাকে এ+/গোল্ডেন পেতেই হবে।
কিছু নতুন ফ্রেন্ডস হল।দুঃখজনক হলেও সত্যি আমার ফ্রেন্ডস সার্কেলের ৯৫% ই ছিল ছেলে।
একজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছাড়া বাকি মেয়েদের সাথে শুধু বেঞ্চ শেয়ার করা।
তবে আলহামদুলিল্লাহ, আমার পা কখনো ভুল পথে যায়নি।দুটো বছর কঠোর পরিশ্রম করে আমি আমার সাফল্য(জিপিএ-৫) অর্জন করি। আলহামদুলিল্লাহ।
যাইহোক মেডিকেল এডমিশনের জন্য কোচিং করতে স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে ঢাকায় রওয়ানা হই।এই সেই ফ্রেন্ড যার উছিলায় আমার দ্বীনের পথে হাতেখড়ি।
এসময়কার অর্জন নিয়মিত পাঁচওয়াক্ত সালাত আদায় আর পর্দা করার ইচ্ছা জাগা।আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক আমিন।
কিন্তু তখনও দ্বীনের বীজ প্রস্ফুটিত হয়নি।
আল্লাহর ইচ্ছায় মেডিকেলে চান্স না হয়ে ভার্সিটিতে চান্স যেন দ্বীনের পথে হাটার মসৃণ রাস্তা।
নতুন জায়গা নতুন পরিবেশে পেয়ে গেলাম জান্নাতের একটুকরো জমির(হলের তালিম মজলিস) সন্ধান।
আলহামদুলিল্লাহ। তালিমে রেগুলার হতে লাগলাম।কিতাবের কথা, সিনিয়র আপুদের উৎসাহে উৎসাহিত হয়ে পর্দা করার চেষ্টা করা।
পাশাপাশি বড়বোনের ফেইসবুকে কিছু দ্বীনি বোন,গ্রুপ,সাইডে এড আমার দ্বীনের সোর্স বৃদ্ধি ছাড়া কিছুই না।
ফোন না থাকাকালীন কোন গানের রিংটোন দিব ঠিক করে রাখা আমার মিউজিক লিস্ট এখন ফাঁকা।ক্রিকেট দেখা কমানোর পাশাপাশি নাটক মুভি থেকে দূরে থাকা।
কিন্তু তথাকথিত মুসলিম ফেমিলিতে কি এসব চলে!!!ভাইদের সন্দেহ কোন জঙ্গির সংগ পাইলি নাকি?।
সেদিন আমার স্বল্প জ্ঞান তাদের কোন উত্তর দিতে পারেনি।তাই চুপ মেরে যেতাম।
বাড়ির সবার এক কথা পাঁচওয়াক্ত নামজ,রোযা করলেই হয়।মেয়ে মানুষের এত পর্দা করা লাগে না।বাড়ির সবার ভুল অদৃশ্যমান হলেও আমারটা দৃশ্যমান। আমি কোন ভুল করতে পারব না।
তাই নিজের মনকে স্থির করলাম আগে জ্ঞান অর্জন পরে উত্তর।আমাকে জানতে হবে যা আমার জানা নাই।
একদিন পুরোনো এক ফ্রেন্ড ফেইসবুকে নক দেয় আর কিছু কথা বলে। সে কিছু দ্বীনি লেখক -লেখিকা ভাই-বোনের সন্ধান দেয়।আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক আমিন।
বই পড়ার অভ্যাস কোনকালে না থাকলেও সেবার বইমেলা থেকে অনেকগুলো ইসলামিক বই কিনি।নতুন পাঠিকা হতে থাকি।
কিন্তু আমার মনে হল কোন দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের সহোবতে আসা উচিত।
কিন্তু ভার্সিটির পাশাপাশি তো আর মাদ্রাসায় যাওয়া পসিবল না।তাই অনলাইন ভিত্তিক মাদ্রাসার সন্ধান করতে থাকি।
একদিন লিস্টেরই কোন এক আপুর IOM এর একটি পোস্ট চোখে পরে।আগ্রহ নিয়ে ঔ আপুর সাথে কথা বলি।
আলহামদুলিল্লাহ আপু আমাকে আশ্বাস দিয়ে IOM এ ভর্তির আমন্ত্রণ জানায়।কিন্তু আমি তখনও স্থির করতে পারিনি কি করবো।
ভার্সিটি,IOM একসাথে মেইনটেইন করার পাশাপাশি খরচের সংশয় নিয়ে IOM Group এ একটা পোস্ট দিই।
সেখান থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য, কিছু দ্বীনি জেনারেল পড়ুয়া আপুদের কথা আর IOM এর সুনিপুণ কার্যপদ্ধতি আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে সহজ করে।
ফাইনালি ফেমিলির কাউকে না জানিয়ে কোনভাবে টাকা ম্যানেজ করে আলিম কোর্সে ভর্তি হয়ে যাই।আলহামদুলিল্লাহ আমি এখন IOMian.
I am learning & I will be learning......
পিচঢালা রাস্তায় ছোট-বড় কংক্রিট থাকবেই, তাই বলে কি রাস্তা পরিত্যাগ করব!!!না, কংক্রিট গুলোকে উপেক্ষা করেই মসৃণ পথের সন্ধানে বের হব।
...........................................
10.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
টপিক:- ভার্সিটিতে এসে দ্বীনে ফেরার গল্প
রচনার নাম :প্রত্যাবর্তন।
সানজিদা:- ফাহমিদা!
-আসছি,
- তাড়াতাড়ি কর,দেরি হয়ে যাচ্ছে তো!
- হ্যাঁ চল
- কি ব্যাপার তোকে কেউ এসিড মারলো নাকি
-মানে?
-তাহলে শরীরে কালো তেনা জড়ালি যে,
- আমি তো বোরকা পরলাম।
-তা তো দেখতেই পাচ্ছি,কোন হুজুরানির খপ্পরে পড়লি নাতো?
- কি যে বলিস, মুসলিম হিসেবে বোরকাতো পরতেই পারি তাই না!
- কিন্তু তা এত বছর পর মনে হল তোর?
পাশ থেকে ফারজানা বলল ভার্সিটির মাত্র দশ মিনিট বাকি বিতর্ক পরে করিস এখন তাড়াতাড়ি চল!
কথা না বাড়িয়ে তিনজন ছুটল ভার্সিটি পানে।
সানজিদা,ফাহমিদা ও ফারজানা তিনজন এবার ভার্সিটিতে উঠেছে।পার্শ্ববর্তী হওয়ার সুবাদে তিনজন একইসাথে ভার্সিটিতে যাতায়াত করে।তাদের বাড়ি থেকে ভার্সিটির দূরত্ব চার-কিলোমিটার।ক্লাস ওয়ান থেকে ভার্সিটি অবধি সানজিদা ও ফাহমিদা একসাথে লেখাপড়া করছে।আর ফারজানা গ্রামে পড়েছে বাড়ির পাশে ভার্সিটি না থাকায় নানুর বাড়ির পাশে হওয়ায় তাদের সাথে এবছর যুক্ত হয়েছে সে।
ভার্সিটির ছাত্রি হিসেবে তারা তিনজনই প্রচলিত কথিত আধুনিকতায় বিশ্বাসী; ফ্রিমিক্সিং,বয়ফ্রেন্ড,ছেলেফ্রেন্ড এসব অশ্লীলতা তাদের কাছে আধুনিকতা!
তাদের চিন্তাধারা অনেকটা এমন- ধর্ম-কর্ম এগুলো গ্রাম্য,অশিক্ষিত কিংবা বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ব্যক্তিদের জন্য চলে অন্যদের জন্য নয়; বিশেষ করে বিজ্ঞানমনস্কদের জন্য একেবারেই বেমানান!ফাহমিদা ও একই চিন্তায় বিশ্বাসী ছিল কিন্তু ইদানিং তার মধ্যে বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
দুইসপ্তাহ হলো সে বয়ফ্রেন্ডের সাথে ব্রেকআপ করেছে, বলেছে-আমার এসব ভালো লাগছে না,পারলে বাসায় প্রস্তাব পাঠিয়ে বিয়ে করো!
শুধু তাই নয় ছেলে ফ্রেন্ডদের সাথে মেলামেশা টোটাল বন্ধ করে দিয়েছে সে,বান্ধবীদের সাথে ঘুরাফেরা ও অনেক কমিয়ে দিয়েছে!
পরের দিনের ঘটনা দুপুরের বিরুতির সময় তারা তিনজন ক্যান্টিনে লাঞ্চে বসেছে,বান্ধবী ও ছেলে ফ্রেন্ডরা একত্রিত হয়ে হঠাৎ সামনে হাজির!কি ব্যাপার তোরা সবাই...?মুখের নেকাব টেনে বিষ্মিত কন্ঠে;জিজ্ঞেস করল ফাহমিদা!
নেক্সট উইকের ছাব্বিশে মার্চ আমরা সবাই দূরে কোথাও ঘুরতে বের হব সাথে তুই ও যাচ্ছিস! অনেকটা আদেশের সুরে বলল রাকিব। রাকিব ফাহমিদার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল কিন্তু ইদানিং সে তাকে ও এড়িয়ে যাচ্ছে ! রাকিব জানে ইচ্ছার বিপরীতে কারো সাথে মেলামেশা ইভটিজিং এর অন্তর্ভুক্ত তাই কিছু বলছে না!
নারে আমার সমস্যা আছে যেতে পারবো না-অসম্মতি
প্রকাশ করল ফাহমিদা,কারণ সে জানে গেলে পর্দার খেলাফ অনেক কিছু হবে তাই এককথায় নিষেধ করে দিয়েছে সে ,পাশে বসে মুখ চেপে হাসছে সানজিদা! কী অবাক হচ্ছিস?এটা আসলে আমার পরিকল্পনা,আমি জানতাম তুই যাবিনা! না গেলে আমরা জোরাজোরি করব না,তবে অবশ্যই তোকে তার কারণ বলতে হবে,আই মিন তোর কি হয়েছে সেটা খুলে বলতে হবে।
মুখ খুলল ফামিদা- আসলে কথাটা আমারও বলার ইচ্ছে ছিল কিন্তু দ্বিধাদ্বন্দ্বে বলা হয়নি,শুন তাহলে-গত দেড়-দুই মাস আগে আমি অসুস্থতার দরুন কয়েকদিন ক্লাসে ছিলাম না!ঘটনাটা ঘটেছিল তখন!রিকশায় করে ডাক্তার কাছ থেকে ফিরছিলাম,রাস্তায় মানুষ জড়ো দেখে নেমে সামনে গেলাম,একি এতো সালমা, হাত-মুখ রক্তে রঞ্জিত,মাথা থেঁতলে গেছে,সহসা ওপারে চলে গেল মেয়েটা!
কিন্তু সালমাটা কে? প্রশ্ন করল ফারজানা!আমার খালাতো বোনের বান্ধবী,কয়েকমাস আগে খালার বাসায় তার সাথে পরিচয়, এরপর থেকে প্রায় সময় মেসেঞ্জারে কথা হত তার সাথে,অনেক মেধাবী ছিল সে! সালমা নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিল, গত বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে মেয়েটা! তার ইচ্ছে ছিল ভার্সিটিতে ভালো ফলাফল অর্জন করবে এরপর চাকরি করে আগে নিজের পায়ে দাঁড়াবে পরে বিয়ের চিন্তা-ভাবনা।কিন্তু কি আশ্চর্য! চাকরি বাকরি তো দূরের কথা লেখাপড়া শেষের আগেই অবসান ঘটল তার স্বপ্নময় জীবনের।
ইতিপূর্বে অনেক মৃত্যু প্রত্যক্ষ করলেও এটি ছিল আমার জন্য সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম, ভাবনানায় পড়ে গেলাম আমিও তো জীবন নিয়ে অনেক দ্বিবা-স্বপ্নে বিভোর তার মত অকাস্মিক মৃত্যুর সম্যক্ষিণ আমি হবো না তার নিশ্চয়তা কি?আমাদের যে ভাবনা বৃদ্ধকালে এবাদত করে মৃত্যুর আগে ভালো হয়ে যাব সে পর্যন্ত হায়াতের গেরান্টিওতো কারো নেই।
যাইহোক পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য তাদের বাড়িতে গমন করলাম। সারা ঘরে কান্নার চিৎকার- চেচামেচি, হঠাৎ মৃত্যু হয়েছে তাই কেউই যেন মেনে নিতে পারছে না। জানাযার সময় হল সামনের রুমে কেউ না থাকায় চেয়ার নিয়ে সেখানে বসলাম।
নিয়ম অনুসারে তার পিতা কথা বলার পর জানাজা শুরুর আগে ইমাম সাহেব পাঁচ মিনিট বয়ান রাখলেন- "প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে" (সূরা নিসা-১৮৫)মৃত্যুর জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকা চাই "আর যখন নির্ধারিত সময় আসবে এক মুহূর্ত আগ পিচ করা হবে না"(সূরা আরাফ-৩৪)"আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই এবাদত এর জন্য"(সুরা যারিয়াত-৫৬)কাটাগাছ আমাদের কোনো কাজে আসে না বিধায় আমরা জালিয়ে ফেলে আর ফলগাছ হলে তার পরিচর্যা করি তদরুপ বদকার মানুষ জাহান্নামের আগুনের উপযুক্ত হয় আর নেক আমল করলে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতের দ্বারা পুরুষ্কৃত করেন"
বিকেলে বাড়িতে ফিরে আসলাম সালমার ছবি আর ইমাম সাহেবের বয়ান আমার স্মৃতিতে ভাসছিল রাতে ঠিকমতো ঘুম হলো না।
এরপর থেকে মনে আল্লাহর ভয় ও মৃত্যুর সংক্কা সৃষ্টি হল। আমাদের বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় সমবয়সী মহিলা মাদ্রাসার একজন ছাত্রি থাকে,নাম ফাতেমা তার থেকে বিভিন্ন ইসলামিক বই নিয়ে আস্তে আস্তে ইসলাম সম্পর্কে জানতে লাগলাম এবং নামজের জন্য আবশ্যকিয় সুরা শিখলাম।
ঘরে এবং ভার্সিটিতে কোথাও সমর্থে কেউ না থাকায়
প্রথম প্রথম উপহাসের ভয়ে দিধ্বা-দন্ধে থাকলে ও পরবর্তীতে দৃড় প্রত্যয়ে শুরু করলাম।
এখনো গোপনে নামাজ পড়ি, হিজাব পড়া আরম্ভ করলাম সবিশেষ আজকের বোরকা পরিধান,বাসা থেকে মুখ ফুঁটে কিছু না বললে ও হাব-ভাবে অসন্তষ্টি বোঝলাম।
এই হল আমার অন্ধকারাচ্ছন্ন রাস্তা হতে আলোকময় আঙ্গিনায় আসার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস...
.............................................
11.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
সময়টা ছিল বেশ ব্যস্ততার, উপলব্ধি করাটা সহজ তাদের জন্য, যারাই এইচএসসি পরীক্ষার ক্যান্ডিডেট হয়েছিলেন কোনো কালে। এসময়টায় এত ব্যস্ত থাকার পরেও কেন যেন বাসা থেকে একটু দূরে ঈশার নামাজান্তে পবিত্র কুরআনুল কারিম শিখার আসরে অংশগ্রহণ করার জন্য ছুটে যেতাম..! আহ ! কি মধুর প্রশান্তিময় ছিল সেসময়..! ছোট বেলায় গ্রাম্য মক্তবে পড়ার সুবাদে নামাজের প্রতি বেশ ঝোঁক ছিল। কিন্তু একটু বড় হতেই সেই ঝোঁক কোথায় যেন উবে গেল, টেরই পেলাম না..! আর, মক্তবের সেই পড়া মক্তবেই রেখে এসেছিলাম,কারণটা সিম্পল; আমাদের গ্রাম্য মক্তবে 'তাজউইদ' শিখানো হতোনা তাই সব ভুলে যেতাম নিমিষেই..! কুরআন শিখা থেকেই শুরু, শুরু হয়েছিল টার্নিং ব্যাক টু 'সিরাতিল মুস্তাকিম'..!
.
পরীক্ষার আগে আগে গিয়েছিলাম এক ভন্ডের সাথে আরেক ভন্ডের দরবারে..! মূল ফটকের সামনে বিশাল ব্যানারে লিখা ছিল 'বাবে রহমত'..! সেখান থেকে ফিরে আসার পরে বুঝলাম ব্যানারটার মূল নাম 'বাবে জাহান্নাম' হওয়ার দরকার ছিল। মানুষ কদমবুসির নামান্তে দেদারসে ঐ গর্দভটাকে সেজদা করসে..! এরপর ঐ ভন্ডের দরবারে আর কখনোই যাইনি..!
ঢাকায় থাকার কারণে ‘ICSB' এর ভাইয়েরাও ‘ইসলামের দাওয়াত' দিয়েছিলেন। তাদের সাথে আগে ভালোই যোগাযোগ ছিল, কারণ এই সংগঠনের ভাইদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল ❝ মেধাবী ছাত্রদের দ্বীনি দাওয়াত দেয়া ❞..! কিন্তু দু' একজন ব্যতিক্রমী ভাই বাদে তাদের ম্যাক্সিমামই আমল বিমুখ, বিশেষ করে সুন্নাহ'র ক্ষেত্রে অবহেলা করে থাকেন। তাই একসময় সংগঠনটির কর্মী হয়েও শেষপর্যন্ত ছেড়ে দেই..!
.
এইচএসসি পরীক্ষার পরপরই আমার আপন বড় ভাই ‘আইকন প্লাসে' ভর্তি করিয়ে দেন। ভাইয়ের স্বপ্ন আমাকে ‘ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ' চান্স পেতেই হবে। ভাই জবিতে ম্যাথে পড়েছিলেন, তাই আমাকে নিয়ে ভাইয়ের যত উচ্চাকাঙ্খা..! 'ঢাবির আই.ই.আর' এর অধীনস্থ 'ইউল্যাব কলেজে' ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সুবাদে শুরু থেকেই আমারও স্বপ্ন ঢাবিতে ভর্তি হওয়া..! দীর্ঘ ৩ মাসের কঠোর পরিশ্রম আর ফার্মগেটের লেগুনায় ঝুলে ঝুলে গিয়ে কোচিং করেছিলাম স্বপ্নের ঢাবিতে একটি সিট দখলের জন্য। কোচিংয়ের উইকলি পরীক্ষায়ও ‘ফার্স্ট টুয়েন্টিতে’ থাকতাম। মানবিকের ছাত্র বলে মানসিকভাবে খুবই স্ট্রং ছিলাম, আমার সিরিয়াসনেস দেখে ভাইয়ের বন্ধুদের অনেকেই তখন নিশ্চিত ছিলেন যে আমি ঢাবিতে চান্স পাবোই..! আমার সিরিয়াসনেস এমন ছিল যে নামাজের সময়বাদে ঘুমিয়েও এডমিশন টেস্টের পড়া পড়তাম..! একদিন রাত ১২টায় হঠাৎ ঘুম থেকে উঠেই কোচিংয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছিলাম, ভাই বললো একটু বারান্দায় গিয়ে দেখ নিচের দিকে..! ছয় তলা থেকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমি পুরোই হতবাক হয়ে যাই..!
যাইহোক, ঢাবির এডমিশন টেস্টের ৩ দিন আগে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে যাই, আর সুস্থ হই পরীক্ষার ৩ দিন পর..! পরীক্ষাটা দিয়েছিলাম হাত ক্যানোলা পরে, দিয়েছিলাম সেদিন ঢাবি ও জবিতে..! এরপরে যত পরীক্ষাই দিয়েছিলাম প্রায় সব পাবলিকেই চান্স হয়েছিল, কিন্তু স্বপ্নের ঢাবি..!
শেষপর্যন্ত ঢাকার অদূরে তথাকথিত ‘সেক্যুলারদের কালচারাল রাজধানীতে'ভর্তি হই, প্রত্নতত্ত্বে..! কিন্তু ঢাবির প্রতিটি রাস্তায় আঁকা আমার স্বপ্ন পূরণ হয়নি..! মজার ব্যাপার হচ্ছে আমার কিছু বন্ধু ঢাবিতে চান্স পেয়েও কুবিতে 'ল' পড়তে চলে আসে, আর আমি কুবিতে 'ল' পেয়েও ছেড়ে দেই..!
যাইহোক, ‘সেক্যুদের স্বর্গরাজ্যে' চান্স পাওয়ার পরে হলে সিট নেওয়ার জন্য চলে আসি..! নামে আবাসিক হলেও, কথিত ‘ভাই প্রথার' কারণে ৭ দিন গণরুমে ও ডিপার্টমেন্টে র্যাগ খেয়ে মসজিদে অবস্থান নেয়া শুরু করি..! এরপর তাবলীগের ভাইদের ব্যবহার ও আন্তরিকতা আমার সঙ্গী হয়..! 'আইসিএসবি' সংগঠনের এক ভাই আমাকে ভার্সিটি লাইফে তাবলীগ করাকে আবশ্যক বানিয়ে নিতে বলে..! কারণ, এটাই নাকি সবচেয়ে নিরাপদ ! অথচ, এটা সবাই জানে এই দুই মানহাযের ভাইদের মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য বিদ্যমান।
একদিন তাবলীগের শবগুজারীতে ‘মুসাইয়্যেব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর' ইসলামগ্রহণের বয়ান শুনি, আর মনে মনে নিজের ‘আইডল-ম্যান' হিসেবে জ্ঞান করা শুরু করি..! সেই বছর এক বড় ভাইয়ের দুটি কথা আমার সম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়..!
এক –❝ আমাদের আশা আর বাস্তবতার মধ্যে যত গ্যাপ কম হবে, জীবনের টাইমলাইনকে ইসলামাইজ করা তত সহজ হবে..! ❞
দুই– ❝ অন্যের জন্যে জায়েজ দেখা, আর নিজের জন্যে তাক্বওয়াকে অবলম্বন করা..! ❞
ভার্সিটির ক্লাসের প্রথমদিকে আমার বাহ্যিক কোনো পরিবর্তন না হওয়ার কারণে এক ‘চুলওয়ালা পিরসাহেবে'র [ হারাম রিলেশন ] পাল্লায় পড়ার মতো অবস্থা হয়েছিল..! যেহেতু, আমি আমার ‘আইডল-ম্যান’ ঠিক করে নিয়েছিলাম, তাই কৌশলে বিষয়টিকে ম্যানেজ করে নিয়েছিলাম..!
আর আমি জানি যে______
❝ যে ব্যক্তি যৌবনের সময়ে আল্লাহকে ভয় করবে, বার্ধ্যকের সময় যখন সে দুর্বল হয়ে পড়বে তখন আল্লাহ তাকে হেফাজত করবেন। আল্লাহ তার শ্রবণ শক্তি, দৃষ্টি শক্তি, শরীর ও বুদ্ধির মাঝে বারাকাহ দেবেন। ❞[১]
.
সেই বছরই তাবলীগে সফর করি, ফলস্বরূপ বাড়ি থেকে আমাকে একরকম অর্থনৈতিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়া হয়, যে বড় ভাই আমাকে এত কেয়ার নিতেন, তিনি আমাকে পাক্কা ১ বছর বয়কট করেন..! কয়েকবার আমার গজিয়ে উঠা দাড়িও কাটতে গিয়েছিলেন, কিন্তু যে মাওলার রংয়ে নিজেকে রাঙাতে চায়, তাকে কি আল্লাহ এভাবে অসহায় বানায়..(?)
صِبْغَةَ اللّٰهِ ۚ وَمَنْ اَحْسَنُ مِنَ اللّٰهِ صِبْغَةً وَّنَحْنُ لَهٗ عٰبِدُوْنَ
❝ আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করেছি। আল্লাহর রং এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে ? আমরা তাঁরই এবাদত করি। ❞[২]
يٰۤـاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْۤا اِنْ تَـنْصُرُوا اللّٰهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ اَقْدَامَكُمْ
❝ হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য কর, আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা (দ্বীনের উপর) দৃঢ়প্রতিষ্ঠ করবেন। ❞[৩]
সেসময়গুলোতে আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছিল ‘মুসাইয়্যেব ইবনে উমাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু' এর দ্বীনের জন্যে কুরবানি..! সফর শেষে এক ভাইয়ের সহায়তায় আল্লাহ বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছানোর পথ সহজ করে দেন..! এলাকায় এসে আমার ব্যাপারে 'আলিয়া মাদ্রাসা'র এক 'সুপারেন্টেন্ডেটে'র টিটকারি শুনি, ‘হেতে গাত লাগাইছে জুব্বা আবার মাথাত হাগও (পাগড়ী) লাগাইছে..!’ যা ছিল অত্যন্ত বেদনার..! ‘কেউ বলেছিল, ছেলেটা জঙ্গি হয়ে গেছে..!' এভাবেই, বিভিন্ন জনের টিটকারি শুনে অভ্যস্ত হয়ে যাই একসময়..! আর ধৈর্য ধারণ করতে থাকি..!
যাইহোক, ১ বছর অবর্ণনীয় মানসিক ও অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছিলাম! প্রয়োজনের তাগিদে ছোটখাটো একটা 'হালাল ফুডের অনলাইন নির্ভর' ব্যবসাও করেছি..! কারণ, আমাদের ক্যাম্পাসের সামনে আছে বেশকয়েকটা বিশাল গবেষণাগার, আশেপাশে টিউশনি পাওয়াও ছিল মুশকিল..! তবে, আশার কথা হল - এখন আমার ব্যাপারে পরিবার ও এলাকার সবার অভিমত আলহামদুলিল্লাহ..!
সেদিন আমি বুঝতে পারিনি কেন আমার রব আমায় ঢাবিতে চান্স দেয়নি (?) কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছিলাম–
وَعَسٰۤى اَنْ تَكْرَهُوْا شَيْـــًٔا وَّهُوَ خَيْرٌ لَّـکُمْۚ وَعَسٰۤى اَنْ تُحِبُّوْا شَيْـــًٔا وَّهُوَ شَرٌّ لَّـكُمْؕ وَاللّٰهُ يَعْلَمُ وَاَنْـتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ
❝ তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না। ❞[৪]
وَاللّٰهُ خَيْرُ الْمٰكِرِيْنَ
বস্তুতঃ আল্লাহই উত্তম পরিকল্পনাকারী।[৫]
এখন মাওলার কাছে আমার একটাই চাওয়া________
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ اِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً اِنَّكَ اَنْتَ الْوَهَّابُ
❝ হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ দেখানোর পর তুমি আমাদের অন্তরকে বক্র করে দিওনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদেরকে করুণা দান করো। নিশ্চয় তুমি মহাদাতা। ❞[৬]
#muzahid
তথ্যসূত্র:
___________________________________________
[১] ___[জামি আল-উলুম ওয়াল হিকামঃ ১/১৮৬]
[২] ___[সূরা আল বাকারা (البقرة), ১৩৮]
[৩] ___[সূরা মুহাম্মদ (محمّد), ৭]
[৪] ___[সূরা আল বাকারা (البقرة), ২১৬]
[৫] ___[সূরা আল আনফাল (الأنفال), ৩০]
[৬] ___[সূরা আল-ইমরান, ৮]
................................................
12.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#পোস্ট_টপিক: ভার্সিটিতে চান্সের সাথে আমার প্রত্যাবর্তন।
পশ্চিমা কালচারকে স্ট্যান্ডার্ড মেনে, বাপ-মায়ের দেখে রাখাকে পরাধীনতার শৃঙ্খল মনে করে সবকিছুতে সমান অধিকার খোঁজা আমার হালত ছিল বিশাল সমুদ্রে কুল কিনারা খুঁজে না পাওয়া অসহায় কিন্তু হার না মানা নাবিকের মত। নিজের বিস্তৃত ডানা গুটিয়ে নেওয়া আমাকে স্বস্তি দিয়েছে।ভুলের অট্টালিকা গড়ার মাঝপথে এসে হলেও স্বরুপ চিনতে পেরে তা আমি গুড়িয়ে দিতে পেরেছি।
বছর দুয়েক আগের কথা।এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে যে যার যার সুবিধার কোচিং এ ভর্তি হয়ে নিয়েছে আমি ছাড়া।বাদ পড়েছি শুধু আমি।কারন?যাত্রাপথের অসুবিধে,ছোকরাটোকরার উৎপাত,বিয়ে দিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ইত্যাদি।পরিবার আমার ধার্মিক না হলেও খুবই রক্ষণশীল।তো সেই যাত্রায় কোচিং-এ ভর্তি হওয়া না হলেও রবের ফয়সালায় ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পেরেছি।মাঝখানের অজ্ঞ কিশোরীর সংকটময় সময়ে রব্বকে চেনার গল্পটাই শুনুন আজ।
নিজেকে দিয়ে কিছু হবেনা মনে করা আমির দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটতো মন খারাপের নোনা জলে।নাটক-সিনেমা,নাচ-গান দেখে সাময়িক রিলিফ মিললেও অন্তরের স্বস্তি ছিলো কোহিনূর হিরা।এক মুঠো স্বস্তির খোঁজ করতাম মাইলের পর মাইল ফেবু স্ক্রল করে,ইউটিউবের ফানি ভিডিও আর হ্যাংআউট ফ্রেন্ডদের দুয়ারে।তাতে কি!চাওয়া পাওয়ার মালিককে যে চেনেই না তার আবার স্বস্তি কীসে?! মুভি শেষে পুরোনো মন খারাপেরা এসে বাসা বাধে।গানগুলো তো কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতো।ফ্রেন্ডসার্কেলের দৌড় মামা ট্রিট দাও,হ্যাংআউট আর আজাইরা মিমপোস্টে মেনশন পর্যন্তই ছিল।এভাবেই রাতদিন বইখাতা নিয়ে মন খারাপে চান্স পেলে সব চিল করা যাবে ভেবে কাটছিলো দিন।ফ্যামিলি মেম্বারদের সাথেও খুবেকটা ভালো সম্পর্ক ছিলো না।বাবা-মা তো প্রধান শত্রু।সব মিলিয়ে আমার পৃথিবীতে আমি খুব একা তখন।রবের সান্নিধ্যের মোক্ষম সুযোগ ছিলো আসলে সেটা।আহা! আমার রব আমাকে কতই না ভালোবাসেন।একাকিত্ব ঘুচবে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ভাবনায় আসা শুরু করলো যে এবার ভালো হয়ে যাওয়া আসলেই দরকার।আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে থাকা পুরোনো গাছগুলো যেনো আমাকে চুপচুপি বলতো যে তাদের ছায়াতলে বিশ্রাম নেওয়া অনেক পথিক ই এখন আর সেসব পথে হাঁটে না,যেগুলো আগে তারা চষে বেড়াতো ।বিশেষ করে সন্ধ্যার আগে আগে আকাশ দেখার সময় মনে হত একদিন আমার জীবনেরও সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসবে।ডুবে যাবে সূর্য, তলিয়ে যাবে জীবন। পৃথিবী থেকে চলে যেতে হবে, সবারই যেতে হবে এই বোধ টা আমাকে সবকিছু নিয়ে আরো সিরিয়াস হতে সাহায্য করে।পরকালে বিশ্বাস ছিল। কিন্তু পাথেয় তখন কিছু নেই বললেই চলে।ইউটিউবের কিছু ভিডিও আশা যোগাল।চাইলে যে আমিও পারবো জান্নাতে যেতে এই বোধ তৈরি হল।আসলে এর আগে ইসলাম সম্পর্কে যা জ্ঞান ছিল তা হচ্ছে নবী-রাসূলের যুগের মানুষেরা শুধু জান্নাতে যাবে।বাকী সব যত ভালোই হোক যত হুজুর ই হোক জাহান্নামেই যাবে কারণ জান্নাত অনেক কঠিন। এরপর আস্তে আস্তে নামাযে নিয়মিত হলাম।যদিও ফজর কাযা হত প্রায়ই রাতে ঘুমাতে দেরী হওয়ার কারণে।রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে ঘুমাতে যেতাম একেবারে।দু'আ একটাই "চান্স পাইয়ে দাও আল্লাহ",ভার্সিটির ফিতানাময় পরিবেশের ব্যাপারে কোনো ধারণা ই ছিল না।ফ্রিমিক্সিং,প্রপার পর্দা,মাহরাম-নন মাহরাম এসবের ছিটেফোঁটা জ্ঞান ও ছিল না।এরমধ্যে পরীক্ষা দিয়ে দিলাম নিজের জেলার ভার্সিটিতে সাথে প্রথম দু'আ কবুলের গল্প প্রত্যক্ষ করলাম।চেয়েছিলাম যেকোনো একটা সাবজেক্ট কিন্তু রব এতই দিলেন যে আমি খুশি হয়ে গিয়েছিলাম
চান্স পেয়ে নিজেই নিজের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম যে কোনোভাবেই আমার রব নারায হবেন এমন কিছু তে জড়াবো না।ক্লাস শুরু হবার আগেই মেসেঞ্জার গ্রুপ খোলা হল।সে কী কনভারসেশনের ঝড় রে বাবা!প্রথম প্রথম আমিও কথা বলতাম অনেক।ইউটিউবে এক শায়েখের লেকচারে উনি বলেছিলেন ছেলে বন্ধুদের সাথে তুমি যেভাবে কথা বল,তোমার বাবা-মামা-নানার সামনেও তুমি কি সেভাবে বলতে পারবে!এই স্কেলে আমি আটকে গিয়েছিলাম।অতঃপর কম্বাইন্ড গ্রুপে রাতবিরেত অব্দি চ্যাটিং,কে কার সাথে কোথায় ঘুরবেফিরবে,মুভি রিভিউ নানান খেজুরে আলাপ থেকে আমাকে বাঁচিয়ে নিলেন আমার রব্ব!ফেসবুকের কিছু গ্রুপ থেকে পর্দা সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম,এর আগেও আমার কাছে পর্দা মানে হাতের কব্জি, পায়ের কব্জি আর গলা মাথা ঢাকা।নিকাব নিয়ে নতুন করে জানলাম।ভার্সিটির ক্লাসে প্রথমদিন এবং আমার জীবনে প্রথমদিন আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢেকে পর্দা করে বাইরে বেরোলাম আমি।সুবহানআল্লাহ! আগে বোরকা-হিজাব পরা সত্ত্বেও ড্যাবড্যাব করে তাকানো চোখগুলো আমাকে খেয়ালই করলো না,অদ্ভুত মজা পেয়েছিলাম সেদিন।প্রথমদিন থেকেই ফ্রিমিক্সিং খুব করে এভয়ড করতাম।ধীরেধীরে ইসলামিক বই কিনি কিছু,ইসলামকে নতুন করে জেনেছি বইগুলো পড়ে ।ইমান অনেক সময় কমেছে অনেক সময় বেড়েছে।অনেক হোঁচট খেয়েছি এখানে এসে।তারপরও আমার রব আমাকে ত্যাগ করেননি।যখনই ডেকেছি তখনই সাড়া দিয়েছেন, ভুলগুলো শুধরে দিয়েছেন।
-আমাতুল্লাহ নিসা
..................................................
13.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_2020
#ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
অালহামদুলিল্লাহ্, যখন স্কুলে পড়তাম তখন এমন অনেক কিছু ছিলোনা যা এখন অতি সহজলভ্য। তখন দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাতাম লোকাল প্লেগ্রাউন্ড এ। বলা বাহুল্য যে, অামি ছোটবেলা থেকেই কিছুটা ইন্ট্রোভার্ট প্রকৃতির ছিলাম। শৈশব জীবন শুধু বাড়ি থেকে স্কুল স্কুল এভাবেই কেটেছে। মাঝে মধ্যে মাঠে যাওয়া হতো খেলতে। সাধারণত. কিছুটা স্ট্রিক্ট ফ্যামিলিগুলোতে যেমনটা হয়ে থাকে তেমন-ই বলা যায়। যতটুকু মনে পড়ে এগুলো স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরের দিনগুলোর হালত। এভাবে ধীরে ধীরে পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হলাম। অালহামদুলিল্লাহ্. এতদিন বেশ ভালোই কাটছিল জীবন। খেলাধুলো. ঘুরোঘুরি. বৃষ্টিতে ফুটবল নিয়ে মাতামাতি. সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে নিত্য মার খাওয়া. টিফিন ছুটিতে দৌড়োদৌড়ি(রেডি) খেলা, অাম্মুর ব্যাগ হতে রোজ টাকা চুরি, শুক্রবার ফ্যামিলির সঙ্গে দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া ইত্যাদি মিলিয়ে যেন এক অমায়িক অনুভূতি কাজ করতো সর্বদা।
কিন্তু এই সুখের জোয়ারে ভাটা দিতে আমার অপ্রস্তুতিতেই জীবনের এক ঘন কালো অধ্যায়ের শুরু। শ্রেণিতে কিছু বয়োজেষ্ঠ্য বন্ধু থাকার দরুণ মাস্টারবেশান এর সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। কিন্তু তখন ট্রাই করার মতো যথেষ্ট সাহস হয়নি। দিন যত যায় ততো ভুলে যাই এসব। এভাবে ষষ্ঠ শ্রেণী পার করে সপ্তম শ্রেণীতে পদার্পণ করলাম। এতটুকু পর্যন্ত রেজাল্ট আহামরি ভালো না হলে ও ছিলো মোটামুটি। এর মাঝে জীবনের তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। দিনে দিনে সহপাঠীদের নিকট এন্ড্রোয়েড ফোন এর ব্যবহার সাধারণ হতে দেখছিলাম। হঠাৎ একদিন টিফিন পিরিয়ডে ডিসকভার করলাম তারা জোট পাকিয়ে পর্ণ দেখছে। তখন অবশ্য বিষয়টির সাথে পরিচিত ছিলাম না। আলহামদুলিল্লাহ্, আমি কখনো তাদের সাথে এসব দেখতে যাই নি। কিন্তু সহপাঠীদের সঙ্গে মেলামেশাটা যেহেতু কিছুটা প্রয়োজন ও পাশাপাশি সাধারণ বিষয় ছিলো তার-ই পরিপ্রেক্ষিতে, তাদের থেকে মাস্টারবেশান এর তথাকথিত মজাদার অভিজ্ঞতা শুনতাম আর অবাক হতাম। এরই মধ্যে কখন যে ভেসে গেলাম টের ও পেলাম না। শুরু হলো এবার নিজের অভিজ্ঞতার পালা । তারপর থেকে ধীরে ধীরে শীতের পাতার মতো আমার সকল স্বপ্ন, আশা, সুূখ ঝরে পড়তে লাগলো। রবের অবাধ্যতার এটাই যে করুণ পরিণতি। ফ্যান্টাসীর দুনিয়ায় বিভোর হয়ে থাকা শুরু হলো। অষ্টম শ্রেণীতে রেজাল্ট ও আশান্বরুপ হলো না। এসব স্মৃতিগুলো ভাবলেই গা শিহরে ওঠে। যাই হোক, তড়িঘড়ি সেড়ে নবম শ্রেণীতে বাবার কথায় 'ব্যবসায় শিক্ষা' শাখায় ভর্তি হলাম। তখন ও কিন্তু আমার কর্মকান্ড গুলোকে খারাপ ভাবতাম না, নামাজ ও পড়তাম না। তাই যথারীতি আবার আগের জীবনে ফিরে গেলাম।
সেই একই রুটিনে গান-বাজনা,মাস্টারবেশান সহ ইত্যাদি গুনাহে নিমজ্জিত থাকলাম। এভাবেই পার হতে লাগলো জীবনযাত্রা। এ যেন এক গোলক ধাঁধা।
আল্লাহ্-সুবহানাহু-ওয়া-তা'আলা তাই তো বলেছেন,"পার্থিব জীবন তো খেল-তামাশা(ধোঁকা ও প্রতারণা) মাত্র (৪৭:৩৬)।"
এরই মধ্যে গুনাহের আগুন শিখায় জ্বালানী যোগাতে চলে এলো স্মার্টফোন। মামা উপহার দিয়েছিলো। "এই যে শুরু হলো বাধ ভাঙা উল্লাস আর নির্লজ্জতার উন্মুক্ত মাখামাখি যার মাসুল দিতে হয় আজ ও "। ভাসিয়ে দিলাম সকল অনুভূতি, স্বপ্ন এবং সর্ম্পকের বুননসমূহ পাপের মহাসমুদ্রে। না কেউ জানতো না কেউ বুঝতো। অকারণেই যেন এই অবাধ্যতা। মানুষ থেকে ধীরে ধীরে পশুতে পরিণত হওয়া এই আমাকে কেউ কখনো একটুকু কাছে টেনে নেয়নি আমার রব ছাড়া।
অতঃপর দশম শ্রেণিতে উঠে নিজের ভবিষ্যত ক্যারিয়ার নিয়ে মনে খোঁচা লাগল। এর পেছনে ইন্ধন জুগিয়েছিলো নবম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার বেপরোয়া পরিণতি। তখন পড়ালেখা করার উদ্যম থাকলে ও গুনাহ হতে বিরত থাকিনি। এই আত্মতুষ্টির কড়াল চোয়াল আমাকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে এই বলে যে, "যা-ই হোক না কেন পড়ালেখা তো হয়। এভাবেই পার হতে থাকে আত্মতুষ্টির চাদরে ঢাকা পরে যাওয়া আমার এই কলঙ্কিত জীবন। পুরো দীর্ঘ ৩-৪ বছরের গাদা গাদা গুনাহ্ করিয়ে যেন আমার নফস শান্ত হয়নি।
"আসলে নফস কখনো ক্লান্ত থাকে না, হয় আপনাকে ভালো কাজের দ্বারা নফসকে ব্যস্ত রাখতে হবে নয়ত নফস আপনাকে গুনাহে ব্যস্ত রাখবে।" - জনৈক
দশম শ্রেণীর শেষাংশে এসে ভর্তি হলাম কোচিং সেন্টার নামক মরণখুঁটি জিনাার কারখানায়। এখানে এসেই আমি হারিয়ে বসলাম আমার সর্বোচ্চ লজ্জা, সম্মান, ইজ্জত সবকিছু। হ্যাঁ, সবকিছুই । ধীরে ধীরে আবিষ্কার করতে লাগলাম এক নতুন আমিকে। রিলেশান, জাস্ট ফ্রেন্ড এগুলোর প্রতি আগে থেকেই ঝোঁক ছিল। তবে তা এখন পৌঁছেছে তীব্রতার লাগামহীন সীমানায়। "এগুলো ছাড়া আসলে বাঁচা অসম্ভব",এমনি মনে হতে লাগলো। এক মাস, দুই মাস, তিন মাস দিন যত যায় আমার ভেতরে এতদিনের লালন করা পশু ততোই শিকার ধরার আশায় মরিয়া হয়ে ওঠে। দিনকাল বেশ ভালোই কাটছিলো অন্তত আমার নফসের। মুখে মায়াবী হাসি ও আচরণে সুশীলতার ছাপ পাওয়া গেলে ও ভেতরটা পরিণত হয়েছিলো 'জানোয়ারে' ।
আফসোসের বিষয় বড়ো আফসোসের বিষয় , এখনকার উপলব্ধিগুলো যদি তখন হতো! যদি তখন নফসের ফাঁদে পা না বাড়াতাম। হায় আফসোস! কতো গুনাহ্ যে করেছি তার বিষয়,বিবরণ বিস্তারিত আল্লাহ্-সুবহানাহু-ওয়া-তা'আলা তো দেখেছেন উনার ফেরেস্তাগণ ও দেখেছে।
"এ কঠিন অতীত ফেটে যাওয়ার নয়, ধুয়ে যাওয়ার নয়, মিশে যাওয়ার নয়।"
এ বিষয়ে অশ্রুজুগল শুকিয়ে গেছে, কিন্তু কলম যেনো " থামবো না, থামবো না " কলরব তুলছে। হায়! যদি উল্টোটা হতো তবেই তো ভালো হতো ,তবেই তো কল্যাণ হতো। বস্তুত আবেগ যেমনই হোক তা কিছু একটা স্মৃতি রেখে যাবেই।
দিনে দিনে নিজের অবস্থা এমন খারাপ হয়েছিলো যে, চিন্তা শক্তি পুরো লোপ পেয়েছিল।
" রৌদ্রমুখর দিনে প্রকৃতির শ্যামল মন মাতানো বাতাসের শিহরন জাগানো পরশ, দলে দলে পাখির ডানামেলে আকাশ উদযাপন, মেঘের মেঘের গুরুম গুরুম শব্দে টিনের টিনের চালে ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টির মুক্ত শব্দের গাঁথা মালা ইত্যাদি তখন ছিলো কেবল ধোঁয়াশা।"
পর্ণ, চটিগল্প, মিউজিক, নেশা ও রিলেশান এর আকাঙ্খা আমায় গলাটিপে ধরেছিল। তবে একটা কথা শুধু আমি না গোটা পৃথিবীর কেউ অস্বীকার করতে পারবে না যে, আল্লাহ্-সুবহানাহু-ওয়া-তা'আলা কখনো তার নাফরমানির শাস্তি দেন নি বরং নিয়ামতের বারিধারা থামিয়ে দেন নি। আলহামদুলিল্লাহ্।
এসএসসি শেষ হলো ফলাফল ও প্রকাশিত হলো । ফলাফল যা খারাপ হয়েছে তা আমার নিজস্ব কামাই । আল্লাহ্-আয্ যা-ওয়া-যাল্ রক্ষা করেছিলেন। আমার রেজাল্ট এর আগের কয়েক মাস এখনো মনে পড়ে। তখনো আমি গুনাহে লিপ্ত ছিলাম । আর রেজাল্ট এর আগে তিন মাস ছুটি থাকে সাথে পড়ালেখার ও চাপ নেই । সব মিলিয়ে মজাই মজা অবস্থা । তবে তখন আমি গুনাহে লিপ্ত থাকলে ও আল্লাহর কাছে রেজাল্ট যাতে ভালো আসে তা নিয়মিত চাইতাম। ক্ষেত্রবিশেষে আরেকটি ভয়ানক ঘটনা মনে পড়লো যে, আমি ক্লাস-১০ এর শেষের দিকে কোচিং করা অবস্থায় একটা মেয়েকে প্রায়ই আল্লাহর কাছে চাইতাম । এ চাওয়া ছিলো শিশুমনের অবুঝ সরলতা। আল্লাহ্ কবুল করেছিলেন, অামায় যিনা থেকে রক্ষা করেছিলেন।
প্রসঙ্গে ফিরে আসি, রেজাল্ট দিয়ে আল্লাহ্-সুবহানাহু-ওয়া-তা'আলা হতাশ করেন নি। তো এটাই, কেউ যা-ই করুক না কেন আল্লাহর কাছে চাইলে কখনোই কেউ হতাশ হবে না।
এভাবে রেজাল্ট এলো কলেজের ও ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হলো। কিন্তু এর ই মাঝে ঘটে গেল 'ফেরা'। রেজাল্ট দেয়ার ঠিক এক মাস বা এর কিছু আগে থেকে আমার এক প্রতিবেশী নাস্তিক হয়ে যাচ্ছিল। সে মোটামুটি আমার বয়সের-ই ছিলো। সে আবার আমার সম্পর্কে মোটামুটি সব কিছুই জানতো। প্রায়ই সে নাস্তিকতা সংলিষ্ট বিভিন্ন প্রশ্ন তুলে ধরতো। যেহেতু আমি নাস্তিকতা অপছন্দ করতাম তাই তার যুক্তিতে মোড়ানো প্রশ্নগুলো উপেক্ষা করে চলতাম। আমার এখনো মনে পড়ে একদিন সকালে সে আমায় জিজ্ঞেস করেছিলো, "আচ্ছা আল্লাহ্ কি এমন কোনো পাথর বানাতে পারে যা তিনি নিজেই ওঠাতে পারবে না?" আমি হকচকিয়ে গেলাম, সেদিন প্রথম অবাক হলাম। আসলেই চিন্তার বিষয়, অনেককে জিজ্ঞেস ও করলাম। কিন্তু কেউ সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলো না।
ইউটিউবে যে এগুলোর উত্তর সহজলভ্য তা আমার জানা ছিলো না । পরে অবশ্য সে এগনোষ্টিক বন্ধুটি-ই আমাকে উত্তর দিয়েছিলো। সে ইসলাম ও নাস্তিকতা নিয়ে তার অনুসন্ধান চালিয়ে গেল। তার হাড়ভাঙা খাটুনীর পুরস্কার আল্লাহ্ তাকে দিয়েছিলেন। আমি তার পরিবর্তন এর ঘ্রাণ পেতে লাগলাম। বন্ধুটি ধীরে ধীরে দ্বীন এ আসতে লাগল। তার নিয়মিত সলাত আদায়, সারাদিন ইউটিউবে ইসলামিক লেকচার শোনা, আমাকে উপদেশ দেয়া আমাকে প্রতিনিয়ত অবাক ও একই সঙ্গে অনুপ্রাণিত করতে লাগল। যেহেতু সে আমার সর্ম্পকে, আমার সকল গুনাহের ব্যাপারে জানতো তাই বিষয়বস্তু বিবেচনায় দাওয়াহ্ দিতো। রবের দয়ার এই অপরূপ দৃষ্টান্ত আমি চিরদিন মনে রাখব। আল্লাহ্ তাকে এবং আমাদের সকলকে রহম করুক ,আমিন। আমার ও তার প্রতি ভালোলাগা কাজ করতে লাগল। তার মতো হতে ইচ্ছে করতে লাগল। মনে হতো এ যেন এক সুন্দর গন্তব্যের পথ।
ফলশ্রুতিতে, একদিন শরম-লজ্জা ভেঙে তার থেকে দুটো ইসলামিক এপস্ নিয়ে নিলাম। এপস্ দুটো ছিলো যথাসম্ভব 'গ্রীণ টেক ' এর 'আল-কুরআন' এপ ও বাংলা হাদীস এপ। এই ছিলো আমার দ্বীন এর নৌকায় প্রথম পা দেয়া। মাঝে একদিন হাজির হলো 'Talk Islam' এর 'What is the meaning of life' শীর্ষক ভিডিও নিয়ে। সে আমাকে শোনালো,বোঝালো । আলহামদুলিল্লাহ্ ,আমি ভাবলাম এবং কিছুটা অনুধাবন ও করলাম। তারপর হঠাৎ আরেকদিন বন্ধুটি 'মুক্ত বাতাসের খোঁজে' শীর্ষক একটি বই নিয়ে এলো এবং বললো, "এটা মাস্ট পড়বা । এটা তোমার অনেক প্রয়োজন। তোমার নিজের চেহারার অবস্থা দেখেছো? গাল ভেঙে কী অবস্থা হয়েছে তোমার।"
তখন ও আমি বাহিরে বের হলে ঠিক মতো আকাশের দিকে তাকাতে পারতাম না। চোখে পানি চলে আসতো শরীর দুর্বল হওয়ার ফলে। অর্থাৎ দ্বীন এর পথে পথ চলা শুরু হলে ও সবকিছু সর্ম্পকে জানা ও ছিলো না মানার ও কোনো গরজ ছিলো না। বইটি হাতে নিয়ে দেখলাম খুব সুন্দর প্রচ্ছদ,বেশ ভালো লাগলো। বইটি প্রকাশ করেছিল 'লস্ট মডেস্টি' । প্রথমে আমার নজর কাড়লো পেছনের কবিতাটি। যথারীতি পড়ে নিলাম , বোঝার চেষ্টা করছিলাম। আবার ছবি তুলে একটা মেয়েকে ও দিয়েছিলাম। যাই হোক, বই খুলে সূচিপত্র চেক করে যেটা ভালো লাগছিলো সেটাই পড়ছিলাম। বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম, সম্ভবত বাছাই করা দশ পৃষ্ঠা পড়ার পরেই মাথার ওপর বাজ ভেঙে পড়লো। আমি আর আমি নেই। বিশেষত পর্ণ ও মাস্টারবেশান এর ক্ষতিকর দিকগুলো এবং আল-কুরআনের প্রাসঙ্গিক আয়াত গুলো হৃদয়ে এমন নাড়া দিয়েছিলো যে,আমি জীবন নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। এরই মাঝামাঝিতে একদিন রাতে বন্ধু একটি পর্ণ নিয়ে বাসায় ফিরতে দেড়ি হয়ে গিয়েছিলো এবং সেদিন-ই আব্বু বাসায় দেড়িতে ফেরায় রাগে ফেটে পড়েছিল এবং মোবাইল ভেঙে দিলো। সেদিন এর ঘটনাটা ও আমায় নাড়া দিয়েছিল। আগের কথায় আসি, বইটি পড়ার পর থেকে "আমার কি হবে? হায়! আমার কি হবে? আমি শেষ , একদম শেষ", এমন চিন্তা আসতে লাগলো।
আলহামদুলিল্লাহ্ তারপর থেকেই শুরু হলো নফসের বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই। কখনো পা পিছলে গেলেই আল্লাহ্-আয্ যা-ওয়া-যাল্ আমাকে উঠে দাঁড়ানোর শক্তি দিতেন। তারপর ইউটিউবে 'উম্মাহ নেটওয়ার্ক' শীর্ষক চ্যানেল কী যে মনোবল জোগাতো বলার মত নয়। এসব কিছু্ই হয়েছিলো ৪-৫ মাস এর ব্যবধানে। আল্লাহ্-সুবহানাহু-ওয়া-তা'আলা 'লস্ট মডেস্টি' ও 'উম্মাহ নেটওয়ার্ক' সহ বিশ্বব্যাপী দাওয়াহর পেছনে যারা কাজ করছে তাদের পরিশ্রম কবুল করুক এবং তাদের কাজে বারাকাহ দান করুক,আমিন। আমাদের সকলকে দাওয়াহর কাজে অংশগ্রহন করার তৌফিক দান করুক। নির্যাতিত, অত্যাচারিত, নিপীড়িত মুসলিমদের ওপর রহম করুক। সকল মুজাহিদ ভাইদের শুহাদাহ্ কবুল করে নিক এবং আমাদেরকেও তাদের অর্ন্তভুক্ত করে নিক , আমিন।
স্কুল লাইফ পার করে এবার কলেজে ভর্তি হলাম। কলেজে গায়রে মাহারাম মেন্টেইন এর চেষ্টা করতাম। তবে বেশিরভাগ সময়-ই ফিতনায় পড়ে যেতাম। কলেজে পশ্চিমাদের মরণঘ্যাতি ফাঁদে পা দেয়নি ছিলোনা বললেই চলে। তাই কষ্ট হতো কিছুটা। আলহামদুল্লিাহ্ আল্লাহ্ সহজ করেেছেন। এভাবেই মূলত দ্বীনের পথে অগ্রগামী হওয়া। কলেজের শুরুর দিকের একটা মজার ঘটনা বলি, একদিন কলেজের একজন সিনিয়র শিক্ষক এসে ইনট্রোডাকশান দিয়েই কথা নেই বার্তা নেই হুট করে বলে বসলো, "আজ তোমাদের প্রতিভা দেখবো। কে কে গান পারো? আচ্ছা কেউ আবৃত্তি পারো? হাত তোলো । ....... কেউ কিছু পারো না?(কেউ হাত না তোলায়) নাকি লজ্জায় তুলছো না?(সবাই নিশ্চুপ) যেহেতু তোমরা স্বেচ্ছায় হাত তুলতে লজ্জা বোধ করছো, তাই আমি যাদের ডাকবো তারা কিছু কিছু করে দেখাবে", সম্ভবত এরকম কিছুই বলেছিলো।
দুর্ভাগ্যবশত ওনার বাছাইকৃতদের মধ্যে আমাকে ও শামিল করলেন। অামাদের শাখার রুম টা ছিলো গ্যালারি টাইপের ওখানে সাধারণত একটা স্টেইজ থাকে যেখানে উঠে স্যারেরা লেকচার দেন। সবাইকে ওই স্টেইজের উপরে উঠে নিজের কো-কারিকুলাম এক্টিভিটি প্রদর্শন করতে হয়েছিলো।
কেউ জোকস্, কেউ রুবিকস্কিউবের খেলা,কেউ বা আবৃত্তি পাঠ ইত্যাদি দক্ষতা প্রদর্শন করলো। যথাসময়ে আমার পালা আসলো।
হাতে মাইক, সম্মুখে প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী এবং সবার দৃষ্টি আমার দিকে ইত্যাদি মিলিয়ে পুরো একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি।
টগবগে জজবা ও বুকভরা সাহস নিয়ে দৃপ্ত কন্ঠে বলে ফেললাম," আমি বলব ইসলাম নিয়ে ।(সবাই জাস্ট সক্-ড)
এখানে একটি মেয়ের ও পর্দার ঠিক নেই ।" এটা বলতেই সব মেয়েদের চেহারায় রাগের স্ফুলিঙ্গ ফুটে ওঠে । স্যার পরিস্থিতি বেগতিক বুঝতে পেরে বললো," বাবা তুমি নেমে এসো । তোমার কিছু বলতে হবে না। "
তো এভাবেই পথ চলা। অনেক হোঁচট খেয়েছি এখনো খাই। আলহামদুলিল্লাহ্, আল্লাহ রক্ষা করছেন প্রতিনিয়ত।
আমার এই সংক্ষিপ্ত জীবনের কিছু অন্তদৃষ্টি:
নফস এমন একটা কারাগার যা আপনাকে বেঁধে রাখতে চাইবে তার ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠে। আপনার যেকোনো সিদ্ধান্তে নফস চড়াও হবে। নফসের গোলাম বনে গেলে এরকম সিভিয়ার পর্যায় হতে রবের দয়া ছাড়া বেঁচে ফেরা যায় না।
যেমন: নফস পূর্বে রিলেশান এর ফ্যান্টাসী দেখাতো এখন দেখায় বিয়ের।
তাই তো আমি নফসকে বলি সোলিটারি সেল। সোলিটারি সেল? হ্যাঁ....., সোলিটারি সেল।
-Asfaq Toiob
....................................................
14.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে নীলিমা। তড়িঘড়ি করে কোনো রকমে বোরখা নিকাব পড়ে ভার্সিটি বাসের উদ্দেশ্যে দৌঁড় দিল।
বাসে উঠতেই শশী বলে উঠলো আমাদের বোরখা ওয়ালী চলে আসছে রে। সাথে আরো ছেলে মেয়েরা তার সাথে ঠাট্টায় মেতে ওঠে। কিন্তু নীলিমা কোনো উত্তর দেয় না। সে মনে মনে তাদের হেদায়াতের জন্য দোয়া করে।
ভার্সিটির ক্লাস শেষে চলতি পথে শশী নীলিমা কে বলল " এই নীলিমা তোর হঠাৎ কি হলো রে? আগে কত্ত একটিভ ছিলি সবকিছুতে। ভার্সিটির অনুষ্ঠানে ও সরব থাকতি"। একটানে কথা গুলো বলে গেলো শশী। নীলিমা বলে, "আমার কিছু হয় নি বান্ধবী। আল্লাহ আমাকে হেদায়াত দিয়েছেন। এজন্য আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই। আগে কত খারাপ কাজ করেছি জেনে না জেনে। আল্লাহ আমাকে সহ তোদের সবাইকে ক্ষমা করুন।" কথা গুলো বলে সে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
এদিকে যে মারিয়াম কে নীলিমা পছন্দ করতো না এখন সেই তার বেস্ট ফ্রেন্ড। কারন তার ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তনে যে এই মারিয়ামের অবদান অনেক।
মারিয়াম হলো নীলিমার ভার্সিটি ফ্রেন্ড। যে তাকে পর্দা, মাহরাম, নন-মাহরাম সম্পর্কে যখনই বুঝাতো নীলিমা তখন খুব বিরক্ত হতো৷ কিন্তু এখন তো সে বুঝতে পেরেছে, মারিয়ামই তার প্রকৃত বন্ধু। এমন বন্ধুই তো প্রয়োজন যে জান্নাতে যাওয়ার পথ দেখিয়ে দিবে।
কিন্তু তার দ্বীনে ফেরা মোটেও সহজ ছিলো না। পরিবার থেকে শুরু করে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই তাকে কথা শোনালো। তারা বললো, হঠাৎ কার পাল্লায় পড়ে এমন হলো সে! ভার্সিটির প্রেজেন্টেশনে যে মেয়ে এত সাজুগুজু করে আসতো সেই মেয়ে এখন আপাদমস্তক কালো বোরখা-নিকাবে আবৃত হয়ে আসে। এছাড়া পদে পদে তাকে পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু সে তাদের কথায় দমে যায় নি। এতো দিনে যে সে ফিরে এসেছে রবের সান্নিধ্যে।
ভার্সিটিতে এসে মারিয়ামের মতো বান্ধবী পেয়ে সে সত্যিই অনেক খুশি। এখন তার একটাই চাওয়া সবাইকে নিয়ে সে জান্নাতে যেতে চায়।
আলোর দেখা
--------------------
<ইবনাত নূরী চৌধুরী>
......................................................
15.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা২০২০
চোখশোক
জোবায়েদ হোসেন
-------------------------
•••
আমাদের ডিপার্টমেন্টের বেশ তাকওয়াবান ছেলে সায়মন।
একসময় সে গান-মুভি নিয়ে দ্ব্যর্থহীনভাবে সময় কাটাতো।
বন্ধুরা মিলে যেখানেই আমরা গল্পের আসর বসাতাম, সেখানেই হুট করে মুভির কথা বলে উঠতো সায়মন।
এমনকি ফেসবুকের বিভিন্ন অশ্লীল-অরুচিকর গ্রুপে তাকে মুভির রিভিউ দিতে আমি দেখেছি।
ক্লাসের ফাঁকে অন্যের মোবাইলে অশ্লীলতার বারুদ ঢুকাতেও ওর দ্বিধাবোধ ছিল স্রেফ জঘন্য একটা শূন্য।
.
অকস্মাৎ সায়মনের মুভি থেকে সরে আসার নিমিত্তই বা কি?
জিজ্ঞেস করার জন্য ওর কাছে ছুটে গেলাম আমি আর শিহাব।
সায়মন চুপচাপ ক্লাসে বসে অনবরত বই গিলছে।
শিহাব জিজ্ঞেস করে উঠলো,
- কিরে সায়মন এখন আর মুভি-টুভি দেখা হয়?
- নারে ভাই, মুভি দেখা পুরোদস্তুর ছেড়ে দিয়েছি!
- কেন?
- আর বলিস না, নন মাহরাম চোখে পড়ে।
- মাশাআল্লাহ।
রাব্বে কারীম তোর চোখকে অবনত রাখুন।
- আমি বললাম, আরে ব্যাটা সব মুভিই কি খারাপ নাকি? বহু মুভিতেই সমাজের বাস্তব চিত্র ভেসে উঠে ওগুলো দেখলেই তো পারিস!
- হায়! একি বলিছিস জিহাদ তোকে শয়তান তো বেশ শক্তভাবেই জড়িয়ে ধরেছে। শিহাব বললো।
এটা শয়তানের স্রেফ একটা প্রতারণা-ফাঁদ বুঝলি?
আচ্ছা তোর বাবার তো মধুর ব্যবসা তাই-না?
- হুম কিন্তু হঠাৎ একথা কেন?
- সেটা না-হয় পরেই বুঝবি।
এর আগে বল–যদি তোদের একটা মধুর গামলায় এক চিমটি নোংরা-কদাকার পদার্থ পদানত হয় তখন সেটা আদৌও কি খাওয়ার উপযোগী থাকবে?
- ছিঃ ছিঃ কি যে বলিস।
সেটা তো আমি এক ঝটকায়ই পেলে দিবো।
- গুড!
এবার তাহলে তুই আমাকে বল, মুভি-ড্রামায় যখন কি-না গুটিকয়েক শিক্ষনীয় দৃশ্যের সাথে সিংহভাগই অশ্লীল যৌন সুড়সুড়িমূলক দৃশ্য দেখানো হয় তখন সেটা আদৌও কি গলাধঃকরণের উপযোগী থাকে?
- আসলেই তো এভাবে তো কখনো ভাবিনি!
আমি বলি।
যাহোক, এবার আমি আর শিহাবের কথোপকথন সমতায় আসলো।
.
এতক্ষন সায়মন চুপচাপ বসে ছিল।
এবার নড়েচড়ে বসে গলা খাঁকারি দিয়ে সে বলে উঠলো বেশ তো বলেছিস শিহাব৷
- নাহ! এ আর তেমন কি।
- আচ্ছা শিহাব-জিহাদ।
- হুম বল। আমরা দু'জনে সমস্বরে বলে উঠলাম।
- বর্তমান এ-ই ফিতনার যুগে আমার চক্ষুকে নত করতে কিসে খুব অনুপ্রাণিত করেছে জানিস?
- ওর দিকে অপলক তাকিয়ে আমি বললাম কিসে?
- আচ্ছা তোরা কি আল কুরআনের সূরা ক্বিয়ামাহ পড়েছিস?
- শিহাব বলে উঠলো হুম পড়েছি তো, কেন?
আমিও সায় জানালাম।
- এই সূরার ২২,২৩ নাম্বার আয়াতের অর্থ কি জানিস।সায়মন বললো।
- আমি আর শিহাব সমস্বরে বলে উঠলাম ঠিক খেয়াল আসছে নারে সায়মন!
- আচ্ছা আমিই বলছি ; আয়াত দুটির অনুবাদ হচ্ছে ‘সেদিন কিছু চেহারা খুব উজ্জ্বল দেখাবে। তারা তাদের রব্ব-এর দিকে তাকিয়ে থাকবে'[১]
আচ্ছা তোরা এখন আমাকে বল, যেই চোখ দিয়ে আল্লাহকে দেখবো সেই চোখ দিয়ে কি হারাম কিছু দেখা যায়?
- বিস্ময়ে আমি আর শিহাব পুরো 'থ'!
এইতো কিছুদিন আগে যেই ছেলে হারামের চোরাবালিতে অবিরত হাবুডুবু খাচ্ছিলো...সে-ই ছেলেই কি-না এখন সুমহান রবকে দেখার স্বপ্নে বিভোর হয়ে অশ্লীলতার পারদ গুড়িয়ে দিয়েছে।
এরপর সায়মন আমাদের বললো ওর অন্ধকার কুঠুরি থেকে আলোর নৈশভোজে ফেরার হ্রদয়বিদারক গল্প।
শিহাব ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
আমি দেখলাম, সায়মনের চোখের পানি টলমল করে বেয়ে পড়ছে।
ওর কান্না দেখে আমিও চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। হু হু করে ডুকরে কেঁদে উঠলাম।
তারপর, নীল আকাশের দিকে অপলক তাকিয়ে দু-হাত উঁচিয়ে রবের কাছে দুআ করলাম...হে আমার রব!
হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী।আমার অন্তরকে দ্বীনের পথে অটল-অবিচল রাখুন।
•••
'কাম্পাসের অসুস্থ পরিবেশে প্রতিনিয়তই সায়মনের কথা মনে হয়৷ রুম থেকে বেরুলেই কে যেন কানে কানে বলে যায়, এই চোখ দিয়ে আল্লাহকে দেখতে হবে, এই চোখে কি হারাম কিছু দেখা যায়?'[২]
-------------------------------
[১] আল ক্বিয়ামাহ
আয়াত [২২-২৩]
[২] তারাফুল পৃষ্ঠা ২৯
লাইন[১৪-১৬]
........................................................
16.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#ফিরে_আসার_গল্প
"ইস! তোর ঠোঁটটা এখনো ফুঁলে আছে! এবার এসব বাদ দে না রিমি। দেখলি তো ভালো কথা বলতে গিয়ে কেমন চড় খেলি। তাছাড়া ওরা সিনিয়র,সাথে রাজনীতিতে জড়িত।শুনেছি আপুর বিএফ নাকি বেশ পরিচিত।"
রিমির ঠোটে বরফ লাগাতে লাগাতে কথাগুলো বলে চলেছে কারিমা,ওর রুমমেট। মেয়েটা সাদাসিধে তবে অনেকটা ভীতু প্রকৃতির। সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে তটস্থ হয়ে থাকে প্রায় সময়।
আজ সিনিয়র এক আপু এসে ঠাস ঠাস করে রিমিকে চড় মেরেছে কারিমা,দিশা,লাবণিসহ অনেকের সামনে।বাকিদের ভাস্যমতে রিমি কোনো ভুল না করলেও সিনিয়র শায়লা আপু তা মানতে নারাজ। শাইলা আপু কিছুদিন আগে নিজের রুমে ড্রিংকস করেছিলো।হলে কোনো ধরনের মাদক আনা কড়াভাবে নিষেধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।এ কথাটাই রিমি গিয়ে বলে এসেছে হলের দায়িত্বে থাকা স্যারের কাছে।ব্যাস! বিষ্ফোরক দ্রব্যের মতোন জ্বলতে জ্বলতে হাজির শায়লা আপু।
-"কিরে,আর বরফ দিবো?"
কারিমা বরফটা হাতে ধরে বলে কথাটা।
আনমনা হয়ে রিমি তখন জানালার দিকে তাকিয়ে,
-"ঠোঁটে আর কি বরফ দিবি,আসল ক্ষতটা তো ভেতরে হলো।এতোগুলো মেয়ে মিলে আমাকে মার খেতে দেখলো! যখন দোষটা আমি করিই নি!"
কারিমা কেমন জানি গুটিয়ে আসে,
-"আমাকে মাফ করিস রিমি,আসলে ওদের হাত অনেক লম্বারে!"
-"হুমম,,ঠিক আছে।যা তুই খেয়ে নে।আমি নামাজ পড়ে একটু ঘুমাবো।"
গলতে থাকা বরফের বাটি নিয়ে নিজের বেডের দিকে চলে যায় কারিমা।দিশা আর লাবণি একটু আগে কোথায় জানি বেরিয়েছে।ওরা যে রিমিকে খুব একটা ভালো নজরে দেখেনা তা খুব ভালোই বুঝতে পারে রিমি। রিমির চালচলন,বেশভূষা নিয়ে প্রায় সময়ই কটাক্ষ করে তারা। বিশেষত পর্দা করা নিয়ে।তবে কারিমা সেরকম না,ওই যে বললাম ভীতু কিন্তু সাদাসিধে। মেয়েটা আগে থেকেই নামাজ পড়ে তবে ইদানিং রিমিকে দেখে পর্দার বিষয়ে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছে।আজ বিকেলেই তো ওর জন্য জিলবাব কিনতে যাবার কথা ছিলো।তা আর হলোনা!
নামাজ শেষে একগাদা চিন্তার বোঝা নিয়ে বালিশে মাথা ছোঁয়াতেই ফোনটা বেজে উঠলো,
-"আসসালামু আলাইকুম,হ্যা মা, বলো।"
-"ওয়ালাইকুমুস সালাম,কিরে তোকে কতবার কল দিলাম,ধরলি না কেন?ভালো আছিস তো?কিছু হয়নি তো?? "
এতো শোরগোলর ভিতর কখন ফোন বেজেছে তা টেরই পায়নি রিমি।
-"আসলে একটু বিজি ছিলাম তো তাই।আমি আলাহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।তোমরা?"
-"আলাহামদুলিল্লাহ ভালো আছি রে।তোর তো ছুটি হবে বলেছিলি! তা কবে হবে??? তোর বাবা এদিকে তোর মুখ চেয়ে বসে আছে। আজকাল নামাজ পড়তে দেখছি।ওনার ইচ্ছা মেয়ের কাছ থেকে কোরআন শিখবে। তুই ছুটি পেলে দেরি করিস না।"
ফোনটা কানে ধরে রেখে চুপ করে থাকে রিমি।দুচোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি গড়িয়ে গলা বেয়ে নেমে যায়।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জবাব দেয় ,
-"আলাহামদুলিল্লাহ, বাবা তাহলে নামাজ শুরু করেছে।আসবো মা,ইনশাআল্লাহ। আমার ছুটি দ্রুতই হবে।রাখি মা,আসসালামু আলাইকুম।"
ফোনটা রেখে জোরে কেঁদে ওঠে রিমি।আজকে সকালের ঘটনাটা কিছুতেই মন থেকে মুছে দিতে পারছেনা সে। কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে টের পায়না একদম।
____________________________
-"কাজটা কি ঠিক করলি শায়লা?"
পাশের বেড থেকে শায়লার দিকে তাকিয়ে বলে রুমকি।
কনুই দিয়ে চোখটা ঢেকে কি যেনো ভাবছিলো শায়লা।রুমকির কথাতে ফিরে তাকায় সে।
-"কোন কাজটা?"
রুমকি হাসে,হাসিতে কেমন একটা অপমানের সুর বাজে,
-"সকালে সেকেন্ড ইয়ারের মেয়েটাকে মারলি,রিমি।কাজটা কি ঠিক করেছিস? ও কি কখনো তোকে অসম্মান করেছে? নাকি কখনো নিজে ভালো সাজতে চেয়েছে?হ্যা,তালিমে অনেক কথা বলতো,নামাজ,কোরআনের দাওয়াত দিতো ঠিক তবে আমরা ওর কথা না মানলেও কখনো কি আমাদের ছোট করেছে অসম্মান করেছে???
তবে সেদিন তুই ভুল নয় অপরাধ করেছিলি।আমরা কেউ কখনো তোর কোনো কাজে বাধা দি নি।কেন জানিস??
তোর বান্ধবি হবার খাতিরে নয়! বরং নিজেদের সম্মান আর ভবিষৎ হারাবার ভয়ে।"
শায়লা অবাক চোখে তাকায়,
-"রুমকি...!"
-"মাফ করিস,আজ কথাটা বলতে বাধ্য হলাম।জানিনা কবে আমাকে নিয়ে আবার কি পরিকল্পনা করিস!"
প্রিয় বান্ধবির কথাতে বুকটা কেমন দুমড়ে মুচড়ে যায় শায়লার। খালি পায়ে এসে বারান্দার গ্রীল আঁকড়ে দাড়ায় সে।চারদিকে এতো আলোর মাঝেও নিজেকে কেমন আঁধারের আঁধার মনে হয় তার!রাতের শুরুতে দীর্ঘশ্বাস ভারি করে তোলে আশপাশের বাতাস!
দুর থেকে ভেসে আসে ট্রেনের ঝুকঝুক শব্দ!
_____________________
দিন কয়েক পর,
খুব ভোরে পানির শব্দে ঘুম ভাঙে রুমকির।একরাশ বিরক্তি নিয়ে পাশ ফিরে শুতেই জ্বলে ওঠে রুমের লাইট।বাকি একজন রুমমেট সহ রুমকিও বিরক্ত নিয়ে উঠে বসে।
-"কিরে শায়লা,এতো ভোরে ওখানে কি খুজছিস?"
শায়লা রুমকির দিকে না তাকিয়েই জবাব দেয়,
-"আমার জায়নামাজটা দেখেছিস? যেটা গতবার মা এসে জোর করে দিয়ে গেছিলো।"
রুমকি যারপরনাই অবাক হয়।উঠে এসে খুজে দেয় ওর জায়নামাজ। শায়লা ওড়নার ভাজে ভাজে লুকিয়ে ফেলে তার যত্ন করে কাটা চুলগুলো।জায়নামাজ বিছিয়ে দুহাত তুলে আত্নসমর্পন করে তার দিকে,যার কাছে আত্নসমর্পন করলে তিনি আগলে রাখেন পরম যত্নে।
মনোরম এই দৃশ্য দেখে রুমকি আর তার রুমমেট বেসিনের দিকে হাটে। অযু শেষে এসে দাড়ায় কিবলার দিকে মুখ করে।
নামাজ শেষে শায়লা বলে আজকে রিমির কাছে গিয়ে মাফ চাইবে।রুমকিও খুশি খুশি রাজি হয়ে যায়।ওরা তিনজনে মিলে সিড়ি বেয়ে উঠতে থাকে দোতলায়,এখন নিশ্চয় রিমি নামাজের জন্য উঠেছে।পরে গেলে আবার ওকে পাওয়া যাবেনা,ততক্ষণে ভার্সিটিতে ক্লাস
শুরু হয়ে যাবে।
দোতলায় গিয়ে ভেজানো দরজাটায় টুকটুক করে টোকা দিতেই দরজা খুলে দেয় কারিমা।ওদের তিনজনকে দেখে একটু অবাক হয়,সালাম দিয়ে ভেতরে বসতে বলে।
শায়লার চেহারা দেখেই অনেককিছু বুঝে নেয় কারিমা।
-"কি ব্যাপার কি হয়েছে রিমির?"
কারিমার দিকে তাকিয়ে জানতে চায় রুমকি,
-"ওর তিনদিন ধরে ভীষণ জ্বর আপু।কাল বিকেলে ক্লাস শেষে আসার পর থেকে একদমই বিছানাগত।"
শায়লা কেমন যেনো অপরাধবোধে ভুগতে থাকে।ছোট ছোট ধাপে গিয়ে বসে রিমির বেডে।ওর গরম হাতটা ধরেই কেঁদে ফেলে শায়লা!
-"বোন আমার,আমাকে মাফ করে দাও।আমি খুবই অনুতপ্ত। আল্লাহর কাছে মাফ চেয়েছি,কিন্তু তোমার কাছে মাফ না চাইলে শান্তি পাচ্ছিলাম না!"
রিমি ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে দেখে শায়লার চোখে দিয়ে অবিরাম পানি ঝরছে।দুহাত দিয়ে শায়লার হাতটা ধরে হাসে রিমি। বিশ্বজয়ের হাসি তার ঠোঁটে।
শায়লা নিজেকে সামলে নেয়।
-"ডাক্তার দেখানো হয়েছে?"
কারিমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে।
-"জি আপু,আমাদের এখানকার ডাক্তার এসেছিলেন।বলেছেন মেজর কিছু না। ঔষধ আনিয়েছি কালকেই।"
-"ঠিক আছে।"
রিমির শিয়রে কিছুক্ষণ বসে থাকে শায়লা।মাথায় হাত বুলায়।চোখের কোণে থাকা পানি মুছে দিতে দিতে নিজেও কেঁদে ফেলে।
রুমকি আর ওর আরেক রুমমেট কে ক্লাসে যেতে বলে রিমির কাছেই থাকে সে।কারিমাও আজ ক্লাসে যাবেনা।পানির বোতল হাতে কারিমা বেরিয়ে যেতে রিমির ফোন বেজে ওঠে।স্ক্রীনে "Ammu" নামটা দেখে রিসিভ করে সালাম দেয় শায়লা।রিমি তখন ঘুমে অচেতন।
-"ওয়ালাইকুমুস সালাম।কিরে রিমি,তোর ছুটি দেয়নি এখনো? কবে ছুটি দিবে রে? কতোদিন তোকে দেখিনা।"
শায়লা নিজের পরিচয় দিয়ে রিমির অসুস্থতার কথা জানাতে জানাতে রুমে চলে আসে কারিমা।পানির ভরা বোতলগুলো রেখে এসে দাড়ায় রিমির কাছে।
সব শুনে রিমির মা কাঁদতে শুরু করে। শায়লা রিমির কানে ফোনটা ধরতেই অনুভব করে ওর সারা শরির বরফের মতো শীতল হয়ে এসেছে। নির্বাক হয়ে যায় সে,তড়িঘড়ি রিমির শরিরে হাত দিয়ে কেঁদে ওঠে কারিমা।
ওদিক থেকে ফোনে ওর মা কেঁদে চলে,
-"রিমি,কি হয়েছে মা তোর? ছুটি কবে? নাহলে বল আমি আসছি!"
শায়লা কান্নাভেজা কন্ঠে ফোন কানে ধরে,
-"আন্টি,ওর ছুটি হয়ে গেছে।আপনারা আসেন ওকে নিয়ে যান।She is no more...!"
ফোনটা রেখে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে শায়লা।কারিমা ধপ করে বসে পড়ে ফ্লোরে,বিড়বিড় করে দোয়া পড়ে কাঁদতে থাকে। সদ্যপ্রস্তুত মেয়েরা ক্লাসে না গিয়ে ছুটে আসে রিমির ঘরের দিকে।
আজ যে শুধু রিমির ছুটি হয়েছে!ইহলোকের পাট চুকিয়ে ওপারে পাড়ি জমিয়েছে সে। সাথে ছুটি হয়েছে শায়লারও,জীবনের এক কালো অধ্যায় থেকে ছুটি নিয়ে আলো পথে হাটতে শুরু করেছে সবেমাত্র।
তবুও সে কাঁদে, সাথে বাকি সবাই কাঁদে।প্রিয়জনের কিছু ছুটিতে যে আনন্দ নেই....স্মৃতির যে ছুটি নেই!
______________________________
।।কবে তোর ছুটি হবে?।।
-ইসরাত জাহান আশরাফি
.....................................................
17.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
একটা খুব সাধারণ মুসলিম পরিবারের মেয়ে আমি। আমার পরিবার বাংলাদেশের বাকি ৮০% পরিবারের মতোনই ইসলাম মানে সাধারণ ভাবে। আমাকে মাঝেমধ্যে নামায কালাম নিয়ে বলে আর চলাফেরায় ও বেশ শালীনতার কথা বলেন। আর দশটা পরিবারের মতন আমার বাসায় ও হুজুর রাখা হয়েছিল ছোট বেলায়। কুরআন শিখেছি আলহামদুলিল্লাহ। নামায ও শিখিয়েছেন বাসায়। কিন্তু ইসলাম যে প্রকৃত জীবন ব্যবস্থা সেটা আমি জেনেছি বহুদিন পরে। মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেই কি মুসলিম হওয়া যায়! ইসলাম নিয়ে জানার লেভেল কতটুকু সেটাই তো প্রমাণ করে আমি মুসলিম কিনা!
আমার ছোটবেলায় আমার এক বান্ধবী থেকে শুনেছিলাম চুল দেখানো গুনাহ। এগুলো নাকি মস্ত বড় সাপ হয়ে আমাকে কামড়াবে কবরে। ছোট্ট আর সহজ সরল বাচ্চামি থেকেই ক্লাস ফাইভে আমার হিজাব করা শুরু। স্কুলের অ্যাসেম্বলি তে লুকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম কারণ ক্লাস ফাইভে আমাদের ড্রেস ছিল স্কার্ট আর শার্ট। কেও পায়জামা+ স্কার্ফ পরলে ডিসিপ্লিনের ব্রেক হতো এটা। তাই কোনো কোনো টিচার বকা দিতো। আমার দীর্ঘ দিন হিজাব করার তৌফিক আল্লাহ সুবহানা তায়ালা আমাকে দিয়েছেন। কলেজে উঠেই আমার বোরকা পরা শুরু। আহামরি ভাল মেয়ে আমি কখনোই ছিলাম না। তবে ফ্রি মিক্সিং কম ছিল জীবনে আলহামদুলিল্লাহ। ভার্সিটির এই গন্ডি আমাকে পথভ্রষ্ট করেছে একদিকে আবার এই ভার্সিটি আমাকে দ্বীন শিখিয়েছে নতুনভাবে।
আমি ভার্সিটিতে যেদিন নতুন এসেছিলাম ভুল ট্রেনে উঠে গিয়েছিলাম। আর এই ট্রেনে উঠে ভুল বন্ধুদের ভীড়ে আমার জীবন থেকে দেড় বছর কেটে গিয়েছিল। আড্ডা, ঘুরা, গান বাজনা কিছুরই কমতি ছিল না আমার। আমি বোরকা পর্যন্ত কখনো কখনো ছেড়েছি বন্ধুদের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে। আমি মিউজিক শুনেছি কারণ এটা ওদের সাজেস্ট করা মিউজিক ছিল যে। আমি বহুদূরের পথ ও পাড়ি দিয়েছি এই বন্ধুদের সাথেই। আমার জীবনে কিছুরই অভাব ছিল না আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু কোথাও একটা অভাব ছিল- মানসিক প্রশান্তির অভাব। আমি কোথাও শান্তি পেতাম না। ব্যস্ত দিন টা কেটে যেতো ভার্সিটির রং তামাশা দেখতে দেখতে। দিন শেষে বড্ড একা লাগতো নিজেকে। আমি বুঝতাম ই না এই অশান্তি, একাকীত্বের কারণ কী!
আমি জানিনা কেন আমার মন এতো বন্ধুমহলের ভীড়েও একাকীত্বে ভুগতো! মাঝেমধ্যে আর ওদের সাথে ছবি তুলতে ভাল লাগতো না। মাঝেমধ্যে ফেসবুক আমার অশালীন লাগতো। কখনো নিজের প্রোফাইল থেকে দু একটা ছবি ডিলিট করে দিতাম। আর লাইক কমেন্ট কিংবা সেল্ফি আমার ভাল লাগতো না। কেন যেন মিউজিক শুনলে বিরক্ত লাগে। আগের মতো রবীন্দ্রনাথের গান গুনগুন করতে মন টানতো না। কেন যেন বন্ধুবান্ধবদের মন থেকে ভাল লাগতো না আর।
মানুষ বড্ড অকৃতজ্ঞ আর এইজন্যই বোধহয় কান্না, দুঃখ পেলেই সে রব কে স্মরণ করে। সব ভাল রাখার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আল্লাহর কাছে খুব করে জানতে চাইতাম এই অশান্তির কারণ। গভীর রাতে কান্না করতাম আল্লাহর সাথে কথা বলার জন্য।
কয়েকদিন পরেই হঠাৎই মুখ টা অজান্তেই হিজাব দিয়ে ঢাকতে চেষ্টা করতাম। আর ছবি তুলা ও কমাতে লাগলাম। আগের সব জিনিস গুলোর উপর বিরক্ত লাগা, একাকীত্বে ভোগা থেকেই রবের দিকে প্রত্যাবর্তন শুরু। এরপর মাঝেমধ্যে বিলাল ফিলিপসের লিখা পড়ে ভাল লাগতো। এরই মধ্যে "ফেরা" বই টা কিনলাম। বইটা কিনে এক টানা পড়ে গিয়েছিলাম এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে। বইটা পড়ে আমার খুব আফসোস হয়েছিল কারণ ইসলাম কে জন্মগতভাবে পেয়েছি বলেই হয়তো এর মর্ম বুঝিনা আমরা। আস্তে আস্তে বন্ধুদের ছেড়েছি, পুরোনো পথ ছেড়ে নতুন ট্রেনে উঠেছি আলহামদুলিল্লাহ। কখনো এই ট্রেনে বড্ড একা লাগে নিজেকে। তবুও যার আল্লাহ সুবহানা তায়ালার দেওয়া হেদায়েত আছে, তার বিপদে আল্লাহ তো সাহায্যকারী হবেন ইন শা আল্লাহ।
ভার্সিটিতে প্রত্যাবর্তনের পরে বোরকা নিকাব করা আমি যেদিন প্রথম ক্লাসে গিয়েছিলাম সেদিন মানুষের হাজারো কথা বুকে বিঁধে গিয়েছিল। এখনো শুনি তবে কান দেইনা। (সেই স্মরণীয় প্রথম দিনের গল্প না হয় আরেকদিন বলব ইন শা আল্লাহ।) যে তার রবের কাছে এক চিলতে সুখ খুঁজে পায়, সে কি আর দুনিয়ার মানুষের কথা গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে পিছিয়ে যেতে পারে! যে আল্লাহর পথে এসেছে তার বহু শখের বিসর্জন দিয়ে, তাকে পিছিয়ে দেওয়া যাবেনা ইন শা আল্লাহ। "ইয়া রব্ব! আমাকে আপনার এই হেদায়েতের পথে অটল রাখবেন ইন শা আল্লাহ।"
কামরুননাহার মীম
#ভুল_ট্রেনে_দেড়_বছর
.......................................................
18.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
১.
মসজিদ থেকে সবার শেষে বেরিয়ে এলো আব্দুল্লাহ। শুক্রবার দিনটি ব্যস্ততা আর প্রশান্তিতে ভরা একটি দিন। যতো দ্রুত সম্ভব গন্তব্যে পৌঁছুতে হবে তাকে।
আকাশ আজ তিমিরাচ্ছন্ন। যখনই আব্দুল্লাহর মন খারাপ হয়, এক অজানা কারনেই মেঘমালা ঘিরে নেয় শহরটাকে। আজ কি তবে আবার মন খারাপ হবে?
হয়তো শুরু হবে ঝুম বৃষ্টি আর এক অজানা সৌর্ন্দয কেড়ে নেবে সবার দৃষ্টি। কিন্তু আব্দুল্লাহর হাতে সেই অপরুপ সৌর্ন্দয উপভোগ করার সময় নেই। যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হবে তাকে।
ওয়ালেট প্রায় ফাঁকা বললেই চলে। পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। তাই প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যকে তুচ্ছ করে এগিয়ে গেলো সে।
২.
- আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম।কি চাই?
- আমি আব্দুল্লাহ। আপনার ছোট ছেলের টিউশনির জন্য আমাকে আসতে বলেছিলেন।
- ও হ্যাঁ। ভেতরে এসে বসো। এতো দেরি করলে যে?
- আসলে বাড়ি টা খুঁজতে গিয়েই দেরি হয়ে গেছে।
- প্রতি দিন কিন্তু দেরি করলে চলবে না।
- জ্বি আচ্ছা।
- কোন বিভাগে পড়ছো?
- ফলিত রসায়ন।
- এর আগে কখনো পড়িয়েছ? কোনো অভিজ্ঞতা আছে?
- আমি প্রতিদিন প্রায় চার পাঁচ জনকে পড়াই।
- বাহ! ভালো কথা। তাহলে তুমি কাল থেকে পড়ানো শুরু করে দাও। আমার ছেলেটা এই বিষয়ে খুব দুর্বল। কিন্তু ভালো করতেই হবে, তাই যত লাগে লাগুক। এখন বসো, চা খেয়ে যেও।
আব্দুল্লাহকে কথা বলার তেমন কোনো সুযোগ দিলেন না ইকবাল সাহেব। কথা শেষ করেই পাশের ঘরে চলে গেলো। বয়স আনুমানিক ষাটোর্ধ। তবু কথার ভঙ্গিমা দেখে তা বুঝা অসম্ভব। শক্তি আর সামর্থের দিক দিয়ে মনে হয় তিনি কখনো অভাবের সাধ পাননি।
৩.
তাদের বিশাল বাড়ি। আব্দুল্লাহ যে ঘরে আছে সে ঘরটাও বেশ বড়। জানালার ওপাশের বাগান। আর রাস্তা টাও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। যেনো এই জানালা দিয়েই এক লাফে রাস্তায় নেমে যাওয়া সম্ভব। জানালার কাছে এসে দাড়াতেই দুশ্চিন্তার ভিড়ে নিজেকে হারিয়ে ফেললো আব্দুল্লাহ।
হাতে টাকা ছিলো না এত দিন। মায়ের মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন গ্রামে যায়নি। টিউশনির টাকাটা নিয়ে এবার সে গ্রামে ফিরবে। কিন্তু গ্রামে কার কাছে ফিরে যাবে? আপন বলতে কি কেও বাকি আছে? কেও কি আছে যে আব্দুল্লাহ কে তার পরিবার বলে মেনে নিবে?
হঠাৎ একটি দৃশ্য তার নজর কেড়ে নিলো।
কারা যেনো নব বধূর লাশ নিয়ে যাচ্ছে। কাছে কথাও শ্মশান আছে। বুক কেঁপে উঠলো সাহেদের। অবাস্তব জগতে পা রাখলো সে। কেও যেনো তার চোখের সামনে মৃতদেহ দাহ্য কারার জন্য এনেছে। দাউ দাউ করে আগুন জলছে লাশটায়। তার কানে ভেসে আসছে কাঠ পোড়ানো শব্দ।
৪.
আব্দুল্লাহ ছিল গ্রামের এক নাম করা হিন্দু পরিবারের ছেলে। সাগর নামটাই তখন তার একমাত্র পরিচয়। বাবা মারা গেছে সেই ছোটবেলায়। মায়ের আদরে পরিপূর্ন ছিল তার জগৎ। গ্রামের অভ্যস্ত জীবন যাপন আর মায়ের ভালোবাসা ছেড়ে শহরে পা রাখার একটাই উদ্দেশ্য ছিল তার। একটা ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া। তার উদ্দেশ্য পুরনও হয়েছিলো।
ভার্সিটির কাছেই হোস্টেল। যে ঘরে আবদুল্লাহর থাকার জায়গা হয়েছে সে ঘরেই জায়গা হয় আদনান নামের একটি ছেলের। আদনান ছিলো একজন হাফেজ। তার সাথে না মিশেও উপায় নেই। ভার্সিটির সবার সাথে খুব সহজেই বন্ধুত্ব হয়ে যায় আদনানের। কিন্তু তা নিয়ে আব্দুল্লাহর কোনো মাথা ব্যথা নেই।
শুধু সমস্যা একটাই। প্রতিরাতে আদনান কুরআন তেলাওয়াত করে। সেই তেলাওয়াত শুনতে শুনতে আব্দুল্লাহকে ঘুমিয়ে পড়তে হয়। আদনান আব্দুল্লাহর কোনো কাজে বাধা দেয় না তাই সে কিছু বলতেও পারে না। আবার নিজ র্ধমের ভয়ে সইতেও পারে না।
খুব ব্যস্ততা না থাকলে প্রায় প্রতিরাতেই আদনান কুরআন তেলাওয়াত করতো।
৫
সেই বার ছুটিতে প্রথম শহর থেকে গ্রামে ফিরলো আব্দুল্লাহ। প্রথম কয়দিন ঘুম হলো অন্যান্য দিন গুলির মতো। কিন্তু তারপর আর ঘুম হয় না।
ব্যস্ত জীবনে একটা অদৃশ্য অভাব ছিলো। আব্দুল্লাহ জানে না কেনো এতো দিন সেই অভাব তার চখে পড়েনি।আজ বহুদিন পর আবার সেই একেই অভাব,সেই একই কান্না। যেনো এক মিষ্টি সুর শুনতে চাইছে সে। কিন্তু পারছে না।
এভাবে যখন তিন চার দিন কেটে গেলো তার ধৈর্য শক্তি ফুরিয়ে এলো। আর কতো রাত এক অজানা কারনেই নিরঘুম রাত কাটাতে হবে তাকে তা সে নিজেও জানে না। মন্দিরের পূজা পার্বণ শুনলে যেনো তার মাথা ধরে যায়।
একদিন চলার পথে গ্রামের খুব পুরনো এক মসজিদের একদম সামনে এসে দাড়িয়ে পরলো আব্দুল্লাহ। চারপাশটা তখন খুব নিরিবিলি। হঠাৎ পেছন থেকে একজন লোক এসে বললো,
- দাড়াই আছেন কেন? ভিতরে চলেন।
- না। যাবো না।
- আরে মাগরিবের আজান হইবো এহনই। আপনে জোয়ান মানুষ। আপনের দোয়া আল্লাহর কাছে বেশি ভালা লাগবো। আর দেরি কইরেন না তো। ভিতরে চলেন।
লোকটি কাঁধে হাত রেখে তাকে ভেতরে আসতে বললো।
মাগরিবের আজান হচ্ছে। একে একে সবাই ঢুকলো। কিন্তু আব্দুল্লাহ ঢুকলো না। নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকলো মসজিদের প্রবেশ দ্বারে। স্থান, সময় আর পরিস্থিতি নিয়ে তার যেন কোনো মাথা ব্যথা নেই। যেন তার জন্য এটাই স্বাভাবিক।
৬.
ব্যস্ত শহরে ফিরে এসে আব্দুল্লাহ খুব আনন্দিত। আদনানের সাথে তার বেশ ভালো একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায় এতো দিনে। কুরআন শুনে ঘুমাতেও এখন আর কোনো সমস্যা হয় না তার। একদিন আদনানের এক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সাহেদ তার ধর্ম নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেলো।
- আচ্ছা কেও মারা গেলে তোরা সেই মৃত ব্যক্তিকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলিস কেনো?
- বলা হয় যদি আড়ম্বরতা, সৎকার এই সব ঠিক ঠাক হয় তাহলে তার আত্মা শান্তি পায়।
- আচ্ছা কখনো এমন হয় না যে, এক দেবী চাইছে একজন কে বাচিয়ে রাখতে আর আরেক জন চাইছে মৃত্যু দিতে, তখন কি করে তারা?
আব্দুল্লাহ কিছু সময় চুপ করে রইলো। তারপর বললো,
- ধর্ম নিয়ে তেমন কোনো ধারণ আমার নেই। তাই আজ তোকে কোনো যুক্তি দেখাতে পারছি না।
উত্তর খুঁজতে খুঁজতে এক সময় আব্দুল্লাহ তার ধর্মের নিয়ম কানুনের সাথে অন্য ধর্মের নিয়ম কানুনের পার্থক্য জানতে চাইলো। শুরু টা হলো ইসলাম দিয়েই। প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে বেশ কিছু বই কিনে ফেললো সে। রুম ভর্তি এক পাশে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কিত বই এবং অন্য পাশে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত বই।
শুরু টা যেখানে হয়েছিল একটা ছোট্ট প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে, সেখানে আব্দুল্লাহ জানতে পারলো, ইসলামের নানা বিধি বিধান। আরও জানতে পারলো তার ধর্মের বহু কুসংস্কার আর যুক্তিহীন বিশ্বাসের কথা।
৭.
প্রায় এক মাস পর আব্দুল্লাহ আদনান কে জানালো সে মুসলিম হতে চায়। বিষয় টা আদনান কে জানানো টাই যেনো ছিলো সাহেদের জন্য এক বিশাল যুদ্ধ।
- জানিস আদনান তুই খুব সুন্দর কুরআন তিলাওয়াত করতে পারিস।
- আলহামদুলিল্লাহ। সবটাই আল্লাহর রহমত।
- আমি ভাবছি.....
- কি ভাবছিস?
- না থাক। কিছু না।
- হুম বুঝেছি। কুরআন পড়বি?
আব্দুল্লাহ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে।কিভাবে বুঝতে পারলো সে?
- হ্যাঁ,পড়বো।
- চল তাহলে আমার সাথে।
কথাটা বলেই উঠে দাড়ালো আদনান।
- কোথায় যাবো?
- মসজিদে।
- কি!
- হ্যাঁ। তুই আমার সাথে মসজিদে যাবি। আর ভালো লাগে না তোকে ছাড়া একা একা মসজিদে যেতে। আজ থেকে আমরা এক সাথে যাবো মসজিদে নামাজ পড়তে। কিন্তু তার আগে তোকে কালেমা পড়তে হবে। আর বুঝে বুঝে পড়তে হবে।
৮.
ইসলামের নানা বিধি বিধান শিখতে শুরু করলো আব্দুল্লাহ।প্রবল আগ্রহের সাথে শিখছিলো সে। সবার প্রথমে সালাত আদায় করা শিখে নিলো।কিন্তু তার ইসলাম গ্রহণের বিষয়টি সে কাউকেই জানাতে রাজি হয়নি। কেবলমাত্র আদনানই জানে বিষয় টা।
৯.
ফজরের আযান দিচ্ছে। আব্দুল্লাহ ঘুম থেকে উঠে বসলো। হঠাৎ একটা ফোন আসলো। গ্রামের বাড়ি থেকে ফোন এসেছে। তার চাচা জানালো যে তার মা মারা গেছে।
তাকে গ্রামে যেতে হবে তার মায়ের মুখাগ্নির জন্য। সে সবেমাত্র দ্বীনে ফিরেছে। ভেবেছিলো সবার আগে মা কে জানাবে আর দ্বীনের দাওয়াত দিবে। কিন্তু এ কি হয়ে গেলো!
আব্দুল্লাহ ভেবে পেলো না কি করবে সে। সে তো ইসলাম গ্রহণ করেছে। তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব? তার মায়ের মুখাগ্নি দিতে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? আদনান কে কি কিছু জানাবে?
খুব ইচ্ছে হচ্ছে মাকে শেষ একটাবারের মতো দেখতে। আদনান কে কিছু না জানিয়েই গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো সে। একটা ভয় কাজ করছে তার মধ্যে।
১০.
গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেই ভাবছিলো সবাইকে তার ইসলাম গ্রহণের কথা জানাবে। কিন্তু তার মাকে সে শেষ বারের মতো দেখতে চায় তাই সে কিছুই জানাতে পারলো না। শুরু হলো মুখাগ্নির কাজ। মাকে চিতার কাঠের মাঝখানে রাখা হলো। মুখাগ্নি দিতে বললো তাকে তার চাচা। হাত কাঁপছে আব্দুল্লাহ। সে জানে এটা ঠিক না। সে দাড়িয়ে আছে চুপচাপ। তার পা কাঁপছে কিন্তু নড়ছে না। সবাই ভাবলো মায়ের মৃত্যু সহ্য করতে পারছে না সে। তার চাচা এসে তাকে এগিয়ে দিতে গেলো অমনি সে চিৎকার করে বললো,
- আমি এই কাজ করতে পারবো না।
- কিন্তু কেন?তোর মা রে মুখাগ্নি না করলে যে হের আত্মা শান্তি পাইবো না।
- আমি... আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি। তোমরা আমার মাকে আগুনে জ্বালিও না। সে খুব কষ্ট পাবে। পৃথিবীতে তো অনেক ভুল করেছে। এখন যদি তাকে আগুনে পুড়তে দাও তার যে আরও কষ্ট হবে।
- কিহ!তুই ইসলাম গ্রহণ করছস! তোর মা আইজ পর্যইন্ত আমাগো বাপ দাদার কায়দা কানুন অক্ষরে অক্ষরে মাইনা আইসে আর তুই মুসলমান হইছস!
- হ্যাঁ।আমি এখন মুসলিম। আপনাদের সব নিয়ম কানুন ভুল।তাই বলছি আমার মা কে আগুনে পুড়তে দিয়েন না।
- এরে বাইন্দা রাখ।আমাগো নিয়ম কানুন নিয়া কথা কইতে আইসে। বাপ দাদার ধর্ম ভুইলা গেছে।
তাকে সেখানেই বেধে রাখা হলো।তাকে দেখানো হলো তার মায়ের জ্বলন্ত দেহ।
১১.
আব্দুল্লাহর মা ছিলেন একজন সনাতন ধর্মালম্বী। অর্থাৎ ধর্মের নিয়ম কানুনের গভীর ভাবে পালন করতেন। যদিও পর্দার বিষয় টি তার ধর্মে ছিলো না, তবু ধ্যানধারনা ছিলো পুরাতন বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের মতো গভীর। আর তাই কখনো মাথার কাপড় পায়ে পড়েনি।
কিন্তু ইসলাম ছাড়া কোন ধর্ম পর্দা মানে? ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা মৃত্যুর পরও সাদা কাফনে আবৃত রাখে। আর এ তো এমন এক ধর্ম ছিলো যা মৃত্যু কালেও কষ্ট দেয়।
গায়ের কাপড় আগুনে পুড়লো। মাংসপিন্ডের একটি অংশও যেনো বাদ পড়েনি সেদিন আগুনে ছাই হবার জন্য। আব্দুল্লাহ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মানুষ পোড়া গন্ধে ভরে গেলো এলাকা।
আব্দুল্লাহ কে সে রাতে রাখা হলো এক পুরাতন মন্দিরের পাশের ঘরে তালাবদ্ধ করে। ঘুম নেই তার দু চখে। এভাবে প্রায় দুই দিন কেটে যাওয়ার পর এক রাতে হঠাৎ কে যেনো দরজার ও পাশ থেকে আব্দুল্লাহ কে ডাকলো।
- আব্দুল্লাহ জেগে আছিস?
- কে? আদনান?
- হ্যাঁ আমি।সেদিন তুই হোস্টেল থেকে চলে আসলি কিছু না জানিয়ে। পরে জানতে পারলাম তুই গ্রামে এসেছিস আর এখানে এসে শুনলাম তোকে এখানে বন্দি করে রেখেছে।
- আল্লাহ আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে।। আমি এতো দিন তো পথ হারা ছিলাম।
- ভেঙে পড়িস না।আল্লাহর পরিকল্পনা সব চাইতে সুন্দর।
সেদিন সকাল সকালই আদনান আর আব্দুল্লাহ শহরের উদ্দেশ্য রওনা হলো। ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রা পথে তারা ফজরের সালাত আদায় করলো মসজিদে। এটা সেই মসজিদ যেখানে এক সময় পা রাখার সাহস হয়ে উঠেনি তার। আজ সে মসজিদে তার রবের সাথে কথা বলেছে। একে একে বেরিয়ে এলো সবাই মসজিদ থেকে। কিন্তু আব্দুল্লাহ এলো না। আদনান বললো,
- কি ভাবছিস ?সবাই চলে গেছে। যাবি না?
- যাবো। তুই যা আমি আসছি।
নিজেকে খুব হালকা লাগছে তার। যেনো এক বিশাল পাথর নেমে গেছে তার বুক থেকে। একটা বড় নিঃশ্বাস ফেললো সে। মনের গহীন থেকে কেও বলে উঠলো,
"আমি তো তাঁর কাছ থেকে এসেছিলাম,
পথ হারালাম ভুলে।
ফিরেছি আজ তাঁরই কাছে,
থাকি যেনো প্রিয় হয়ে।"
.....................................................
19.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
রুপাই-এর সাথে আমার পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এ্যাডমিশন নেবার পর। ও আর আমি একই বাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করতাম। আমরা একই স্টপেজ থেকে উঠতাম আবার একখানে গিয়েই নামতাম।
বেচারি খুবই 'ইন্ট্রোভার্ট & শাই' টাইপের মেয়ে। ছেলে-মেয়েরা যখন জটলা বেধে একসাথে কিঁচির-মিঁচির করতে করতে বাসের জন্য অপেক্ষা করত তখন ওকে দেখতাম একটু দূরে একা দাড়িয়ে চুপচাপ সবাইকে দেখছে। এই স্বভাবের জন্যই ও আমার নজরে পড়ল। যখনই ওকে দেখতাম কাছে গিয়ে হাই-হ্যালোর সাথে টুকটাক কথাবার্তা চালাতাম। আস্তে আস্তে ঘণিষ্ঠতা বাড়তে থাকলো।
সম্ভবত পুরো ক্যাম্পাসে ও আমার সাথেই সব থেকে বেশি কথা বলত। তেমন বন্ধু-বান্ধবও ছিলনা ওর। ফার্স্ট সেমেস্টারের পর কোন গ্রুপের সাথেও দেখিনি। ক্লাসের বিরতিতে ও কমন রুম বা গাছের নিচে একাই বসে থাকত। আমার ক্লাস না থাকলে ওকে সঙ্গ দিতাম। ধীরে ধীরে ওর পরিবার, চিন্তা-ভাবনার, পরিকল্পনার সাথে পরিচিত হতে থাকলাম। মাঝে মধ্যে ওর কথা শুনে অবাক হতাম, এত অল্প বয়সী একটা মেয়ের মাথায় এসব কে ঢুকালো? তাও যে কিনা আবার বোরকা আর হিযাব পরে?
রুপাইয়ের জন্ম বাংলাদেশের এক কোণের সীমান্তবর্তী ছোট একটা জেলা শহরে। খুবই সাধারণ একটা মুসলিম পরিবারে। যেখানে ও মা ছাড়া কাউকে তেমন সিরিয়াসলি ধর্ম পালন করতে দেখেনি। এক বছর পার হওয়ার পরই হঠাৎ একদিন ওর বাবা মারা যান। ভাই-বোনেরা সবাই নাবালক হওয়ায় চাচাদের সংসারে আশ্রিত বলা যায়। মা সারাদিন সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকেন,ওর দিকে নজর দিতে পারেন না। ভাই-বোনদের সাথে বয়সের ফারাক। অন্তর্মুখী হওয়ায় তেমন কারো সাথে মিশতেও পারে না। জেদী, রাগী, অন্তর্মুখী রুপাই একা একাই বড় হতে থাকল....
চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় ওর জন্য স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে গৃহশিক্ষক ঠিক করা হলো যে ওর জীবন পাল্টে দিয়ে গেল। ভদ্রলোক ওকে দেশি-বিদেশ ডাকটিকিট আর মুদ্রা সংগ্রহ করে দিতেন, গল্পের বই পড়তে দিতেন। পড়ালেখা আর এক্সট্রাকারিকুলারের প্রতি উৎসাহিত করতেন। এতদিনের অমনোযোগী রুপাইয়ের দিন বদলে গেল। শিক্ষক ভদ্রলোককে রুপাই খুবই পছন্দ করত। অবশ্য পরিবারের বাকি সদস্যরাও তাকে পছন্দ করত। ওর কাজিনরাও ওর সাথেই তার কাছে টিউশন নিত। সমস্যা হলো কয়েক বছর বাদে রুপাই যখন আরেকটু বড় হল। আল্লাহ প্রদত্ত মেয়েলি রাডারে ধরা পড়ল খুব সুক্ষ্ণভাবে ওর সাথে টিউটর ভদ্রলোকের আচরণ বদলে যাচ্ছে। ওর মনের গহীন থেকে কেউ বলে উঠলো, এর থেকে পালাও। পরিবারের সবার ভৎসর্না এমনকি মাইর উপেক্ষা করে ও ভদ্রলোকের বাড়িতে আসা বন্ধ করল।
রুপাই আবার একা হয়ে গেল। তবে এবার ওর সঙ্গী হল বই। প্রথমে ভাইয়া, আপুর পাঠ্য বই পড়ে শেষ করল। তারপর ছোট চাচার কালেকশন আর বাংলা সাহিত্যে পড়ুয়া কাজিনের বই। নাইন/টেন পার করতে করতে রকিব হাসান, হুমায়ূন, জাফর, আনিসুলের সাথে অল্পবিস্তর শীর্ষেন্দু, সমরেশ, একখানা কাশেম বিন আবু বকর আর গোটা কয়েক তসলিমা নাসরিনও মস্তিষ্কে চালান করে দিল। যেহেতু তারদিকে কারো তেমন খেয়াল ছিলনা তাই সবার অজান্তেই তার মানসিকতা বদলে যেতে থাকল। প্রথমেই ধর্মাচারণের প্রতি অনীহা। মায়ের জোরাজুরিতে বোরকা -হিজাব পরা আর রমজানের রোজা পালনের মধ্যেই তার ইসলাম সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। বরং তসলিমাদের যুক্তিতে প্রভাবিত হয়ে বেশ নারীবাদ আর ধর্মের বিধি-বিধান নিয়ে ঠাট্টা করাও শিখল।
স্কুলে ও যাদের সাথে মিশত তাদের বিশেষ কুখ্যাতি ছিল। ক্লাসে টিচার রা কখনো তাদের পড়া ধরত না। মানে তারা কখনোই পড়া পারত না। সাথে নানা কুকর্ম তো আছেই। তবুও কি করে যেন 'মোটামুটি' ভাল স্টুডেন্ট আর শান্ত-শিষ্ট রুপাইয়ের বেশ ভাব হয়ে গেল। ওরা তাকে বেশ পছন্দ করত তাই নিজেদের নানা কুকীর্তিই শুধু বলত না সাথে রুপাইকে বেশ কয়েকটা প্রেমের প্রস্তাবও জুটিয়ে দিল! আবার সেই মনের মধ্যে থেকে কেউ বলল, 'পালাও'। আবার একা....
স্কুল শেষ করে ও খুজে খুজে এমন একটা কলেজ ঠিক করল যেখানে তেমন ক্লাস না করলেও চলে। শুনে খুব অবাক হয়েছিলাম, ও নাকি এইচএসসি-র পুরো দুই বছরে মাত্র '১দিন' ক্লাস করেছে। কলেজের পরীক্ষা গুলোতে এ্যাটেন্ড করতে গেলে টিচাররা বলত, 'তুমি কই থেকে আসলা?' এখনকার ভাষায় পুরাই 'কিএ্যাক্টাঅবস্থা' পরিস্থিতি! তবে ওর টিউশনের মেইটসগুলো ভাল ছিল। তারাই ওকেই কলেজের বিভিন্ন খোজ-খবর দিত।
এসময় রুপাই প্রেমে পড়ল 'মাসুদ রানা' নামক কাল্পনিক এক লুচ্চার। সাথে বুদ্ধদেব গুহ নামের এক অতি লিবারেল লেখক তার বিশেষ প্রিয় হল। হুমায়ূন আজাদের পাঠও নিল। আর সমরেশ এর জয়িতা হল তার 'রোল মডেল'। (আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া একা একা জয়িতা হওয়ার সাহস তার হয়নি।)
এক কথায় মাথাটা ভাগাড়ে পরিণত হল। তবে পড়াশোনা করায় আর বাইরে কোন দাগ না থাকায় তার চিন্তার বৈকল্য কেউ ধরতে পারল না। মা শুধু মাঝেমধ্যে নামায না পড়ার জন্য বকা দেয়! এটুকুই।
এইচএসসি-র পর রুপাই ঢাবি-র সোশ্যল সায়েন্স ফ্যাকাল্টির একটা বিষয়ে পড়ার সুযোগ পেল। সেখানেই ওর সাথে আমার পরিচয়। সে সময় রুপাই ছিল ভীষণ ক্যারিয়ার সেন্ট্রিক, বেশ লিবারেল আর খানিকটা নারীবাদি।তবে ইন্ট্রোভার্ট হওয়ায় ও লোক সমাগম এড়িয়ে চলত। তাই বসন্ত উৎসব,ভ্যালেন্টাইন ডে, পহেলা বৈশাখ, স্বরস্বতি পূজা এমনকি টিএসসির আড্ডা কোথাওই তাকে তেমন দেখা যেত না। যদিও অন্যদের ব্যাপারে তার তেমন আপত্তি ছিলনা। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, পোশাক আর প্রেম দুইটা ব্যাপারে সে বেশ পিউরিটান ছিল। তাকে কেউ কখনো অশালীন পোশাক পরতে দেখেনি। আর প্রেম করা ব্যাপারটাকেই সে ভীষন আনস্মার্ট মনে করত।
হলে সিট না পাওয়ায় তাকে মেয়েদের একটা প্রাইভেট হোস্টেলে উঠতে হল। সেখানে একমাত্র সেই পাবলিক এ পড়ে। বাকিরা প্রায় সবাই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দুয়েক জন চাকুরীজীবী।
ঘরকুনো রুপাই প্রথমবারের মত বিভিন্ন পরিমন্ডল থেকে আসা অনেকগুলো মানুষকে একসাথে দেখার সুযোগ পেল। পরের একটা বছর ছিল তার জীবনের সব থেকে শিক্ষনীয় সময়।
একটু সময় লাগলেও হোস্টেলের প্রায় সবার সাথে ওর বেশ ভালো র্যাপো তৈরি হয়ে গেল।
এ সময় তার গান শোনা আর মুভি দেখার নেশায় পেল। তাছাড়া পরিচিত মহলের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। একটু আধটু 'চিল' করার সুযোগও হলো। সিনিয়র রুমমেট রাকা আপু বেশ ডেসপারেট। তিনি চান, তারাও তাকে অনুসরণ করুক। কিছুদিন এমন চলল। আবার মনে সাইরেন বাজল। তবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া বেশি কসরৎ করতে হলো না। একটা ঘটনার পর রাকা আর অন্য রুমমেট দুজনেই হোস্টেল ছাড়ল। হোস্টেলে থাকতেই সে জানল মেয়েরা কিভাবে নষ্ট হয়। মফস্বল থেকে আসা মেয়েরা পুরোপুরি পরিবারের আওতার বাইরে এসে পুরো বেপারোয়া হয়ে যায়। কিছু মেয়ে আবার বোকা। না বুঝেই ফাঁদে পা দেয়। তবে সবারই একটা কমন সমস্যা। তাদের কারোরই কোন অনুসরণীয় আদর্শ নেই। যে বোরকা, হিযাব করে, নামায পড়ে তারও না। আবার যে উগ্র পোশাক পরে, ধর্মকর্মের কাছ দিয়েও যায় না তারও না। তাই তাদের বিপথগামী হওয়াটাও সহজ।
রুপাই একসময় হোস্টেল ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে উঠলো। আমিও একই হলে সিট বরাদ্দ পেলাম। সেখানেও একি অবস্থা। বরং বলা ভাল 'আরো ভয়াবহ'। প্রাইভেট হোস্টেলে নানা রেস্ট্রিকশান থাকে, এখানে সেসবের বালাই নেই। মাঝেমধ্যে এমন ঘটনা ঘটে পিলে চমকে ওঠে!
একদিন এক সতীর্থের মাধ্যমে মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী একটা গ্রুপের সাথে পরিচয় হল তার। জায়গাটা ছিল ফ্রি মিক্সিং আর ধর্ম থেকে কৌশলে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আখড়া। এটা অবশ্য সে পরে বুঝেছে। গ্রুপে তাকে বলা হয়েছিল, তারা পারস্পারিক আলোচনার মাধ্যমে সমাজ বদলের জন্য কাজ করছে। সেটা কিভাবে হয় কে জানে? এটাও বেশিদিন ভাল লাগল না।
অপছন্দের পরিবেশে থাকা খুব কষ্টের। সারাক্ষণ মানসিক অস্থিরতায় কাটে। আধ্যাত্মিক শান্তির খোঁজে রুপাই একদিন 'কোয়ান্টাম'- এ ভিড়ে গেল। ভাল ফল পেতে কোর্স করতে হবে। তবে আল্লাহর ইচ্ছাতেই কয়েকবার সিদ্ধান্ত নিয়েও তার কোর্স করা হলো না। একদিন এই মোহও কাটল।
সিক্সথ সেমেস্টারে এসে খেয়াল করলাম তার বেশ ধর্মে মতি হয়েছে। জাকির নায়েকের লেকচার সমগ্র পড়ছে। টিভিতে ভিডিও দেখছে। নামায পড়ছে। শবে মেরাজের রোজাও রেখে ফেলল। বেশ অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করে ফেললাম, ঘটনা কি? আগে ওকে কখনো তেমন ধর্মকর্ম করতে দেখিনি। লাজুক হেসে জানালো, এক ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় ঘটেছে। দুজনের কমন ইন্টারেস্ট আর মানসিকতার মিল থাকায় তাদের ঘণিষ্ঠতা বেড়েছে। উনি বেশ ধার্মিক। ওকে বুঝিয়েছে, অনেকের সাথে ফ্লার্ট করে বেড়ানো থেকে একজনের সাথে স্টেডি থাকা ভাল। 'হালাল ভালবাসা' আর কি!!! ভাবলাম সতর্ক করি! তারপর মনে হল ও যদি ভাল থাকে তো থাকুক না! শুভেচ্ছা জানালাম।
ও ব্যস্ত হয়ে গেল। এরপর ইন্টার্নশিপ করতে যাওয়ায় ক্যাম্পাসে কম আসত।
অনার্সের শেষদিন গুলোতে ওকে আবার আগের মত দেখতাম। একা, চুপচাপ। কোন কোনা, ঘুপচিতে একা বসে আছে। ও এতটাই চাপা কখনো নিজে থেকে কিছু বলত না।
বারবার জানতে চাওয়াই একদিন মুখ খুলল। গত কয়েক মাসে ওর জীবন অনেক পাল্টে গেছে। প্রথমত, ওর সেই 'ধার্মিক' ভদ্রলোকের সাথে ওর টিউনিং টা ঠিকমত হচ্ছেনা। ও এই সম্পর্ক থেকে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ও প্রথম বারের মত কোন ইমোশনাল এ্যাটাচমেন্ট এ গেছিলো প্লাস ও পরিবারে ঘটা একটা দুর্ঘটনার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কখনো কোন আ্যাফেয়ার রিলেশানে জড়াবে না। কিন্তু ও ঠিক সেটাই করেছিল। তাই মানসিক কষ্ট আর প্রবল অপরাধবোধ ওকে ভীষনভাবে ডিপ্রেসড করে দিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, একটা ইসলামী সংগঠনের আপুদের সাথে ওর সখ্যতা হয়েছে। তারা অনেকদিন ধরেই ওকে ধরার চেষ্টা করছিল কিন্তু ও আগ্রহী হয়নি। এখন তার এই মন খারাপ আর বিষন্নতার দিন গুলোতে তারা ভীষণ সাপোর্ট দিচ্ছে। ও আস্তে আস্তে আল্লাহ মুখী হচ্ছে।
এক সময় আমরা ক্যাম্পাস ছাড়লাম। ততদিনে রুপাই অনেক বদলে গেছে। নিকাব করতে শুরু করেছে। ছেলেদের সাথে কথা বলা প্রায় বন্ধ। ক্যারিয়ার সেন্ট্রিক চিন্তা ভাবনা থেকে সরে এসেছে। ও প্রায়ই বলত, ওর জীবনে ও বহুবার পা পিছলানোর শেষ মুহুর্তে গিয়ে সরে এসেছে। 'যা ইচ্ছা তাই করব' চিন্তা মনে লালন করা সত্ত্বেও ভেসে যেতে পারেনি। এইটা ওর ওপর আল্লাহর বিশেষ রহমত। এজন্য ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। আল্লাহ ওকে জাহেলিয়াতের এত রুপ দেখিয়েছেন পুনরায় সেখানে ফেরাকে ওর আগুনে ঝাপ দেয়ার মতই মনে হয়।
এত মানুষ দেখেছে যারা অস্থির হয়ে একটু ভাল থাকার জন্য কত রকম চেষ্টা করছে অথচ জানেই না হাটু ভেঙে কপালটা মাটি ঠেকালেই অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আল্লাহ ওকে সেই সৌভাগ্য দিয়েছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
এখন ওর নিজেকে সব থেকে নিশ্চিন্ত, নির্ভার বোধ হয়। বিশ্বজগতের নিয়ন্ত্রার হাতে নিজেকে সঁপে দেয়ার এটাই সব থেকে বড় প্রাপ্তি।
"নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা সবচেয়ে উত্তম পরিকল্পনাকারী।"
(আল- আনফাল: ৩০)
এটাই এখন রুপাইয়ের জীবনের মোটো। যা কিছু হারিয়েছে তার জন্য ওর দু:খ নেই। যা পেয়েছে তার তুলনায় সেগুলো কিছুইনা। তাইতো ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে। তার সাথে সংগঠনের আপু গুলোর জন্য আর সেই ভদ্রলোকের জন্যও দুআ করে। তার সাথে সম্পর্ক ভাঙার কষ্ট থেকেই রুপাই নতুন করে আল্লাহকে চিনেছে।
সংগঠনের আপুরা ওকে কোরআন, হাদীস, নানা ইসলামি বই পড়তে দিত। এগুলো ছিলো ওর ক্ষতের ঔষধ।
কোরআনের সহজ-সরল বাংলা অনুবাদ, রিয়াদুস সালেহীন আর একটা দুআর বই ছিল ওর নিত্যসঙ্গী। সাথে সীরাত, সাহাবী, তাবিঈদের জীবনী, আত্মশুদ্ধিমূলক বই। এ সময় পড়া খুররম জাহ মুরাদের 'সুবহে সাদিক' নিজেকে গুছিয়ে নিতে খুব হেল্প করেছিল।
এখন আগের মত যোগাযোগ না হলেও মাঝে মাঝে মেসেঞ্জারে আমরা নানা বিষয়ে চ্যাট করি। ও সব সময়ই বলে, আমাদের ইসলাম শেখানোর লোকের খুব অভাব। আমরা মুসলিম হিসেবে যাদের দেখি তারা কেউই আদর্শ মুসলিম নয়। পরিবারের সাথে বাজে ব্যবহার করে। দূর্ণীতি করে। জুলুম করে। বোনের হক ফাঁকি দেয়। মেয়েদের অসম্মান করে। এদের দেখি তারপর তসলিমাদের বই পড়ি। মনে হয়, ওরা তো ঠিকই বলেছে। ইসলামের প্রতি বিদ্বেষ জন্মে। আল্লাহর রাসূল (সা.) আমাদের জন্য যে দ্বীন রেখে গিয়েছেন তার স্বরুপ না জেনেই আমরা বিদ্রোহী হয়ে যাই।
আর আমাদের কোন আদর্শ নেই। আমি কার মত হব? সামনে কেউ নেই। কেউ আমাকে বলেনা, আইশা হও। খাদিজা হও। আদর্শকে সামনে না নিয়ে নিজেকে তৈরি করা যায় না।
আবার আমাদের ধর্মের সাথে আমাদের কর্মের মাঝে বিরাট ফারাক। ধর্ম যেন প্রাত্যাহিকের গুটি কয়েক রিচুয়াল। বাস্তব জীবনের সাথে এর কোন সম্পর্কই নেই। ফলে আমাদের কাজের মধ্যেও তার প্রতিফলন লক্ষ্যনীয় নয়। এটা যারা দ্বীন বুঝেনা তাদের ডিমোটিভেট করে। আবার অনেকেই ইসলামকে শুরুতেই এত কঠোর হিসেবে উপস্থাপন করে অন্যরা ভয়ই পেয়ে যায়। কত অতৃপ্ত হৃদয় যে কটা সহজ-সুন্দর কথা, একটু প্রশ্রয় পাবার জন্য হাহাকার করছে তা যদি বোঝাতে পারতাম!
তাছাড়া মেয়েদের জন্য এক ভয়াবহ বিপদ 'ফ্রি মিক্সিং'। যার শুরুটাও হয় ঘর থেকে। সেটা নিয়েও পরিবারের তেমন কোন চিন্তাই থাকে না।
আপনাদের বিরক্তি আর বাড়াবো না। এবার শেষ করতে হবে....
শেষ করার আগে বলি, আচ্ছা! রুপাই কি সম্পূর্ণ বদলে গেছে? না, ওর ট্রানজিশান এখনো সম্পন্ন হয়নি। মননে- মগজে দীর্ঘদিন ধরে জমতে থাকা ক্লেদ অল্পদিনে পরিষ্কার হয় না। তবে ও চেষ্টা করছে। হঠাৎ করে প্রচলিত ধারণাগুলো পায়ে ঠেলে যারা নতুন করে দ্বীন মানতে শুরু করে তাদেরকে পরিবারের চোখে কেমন ব্রাত্য হয়ে যেতে হয়, যারা হয়েছে তারাই তা জানে।
আবার দ্বীন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান না থাকায় বা পূর্বের ধ্যান-ধারনার প্রভাবে ভুল করলে দ্বীনি কমিউনিটিতেও সমালোচিত হতে হয়। ঠিক যেন 'না ঘরকা, না ঘাটকা' অবস্থা।
ও সব সময় আমাকে দুআ করতে বলে। আপনারাও ওর এবং আমার জন্য দুআ করবেন। আল্লাহ যেন আমাদের সবসময় সিরাতুল মুস্তাকিমের ওপর অটল থাকার তৌফিক দান করেন।
নটে গাছটি মুড়ালো,
রুপাইয়ের গল্প এখানেই ফুরালো।
...............................................
20.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
পোস্ট টপিক: #ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
নিস্তব্ধ রাতের পরে প্রভাত আসে। এরপর ধীরে ধীরে সূর্য তার আপন আলো ছড়িতে দিতে থাকে চারিদিকে। কখনও আকাশ কালো হয়ে মেঘ জমে। অন্ধকার, কালো মেঘ। বর্ষণের পর আবার সূর্য উকিঁ দেয়। জীবনে ভাঙ্গা-গড়া, আলো-অন্ধকারের খেলা চলতেই থাকে। ভ্রান্তির পথ ঠেলে খুঁজে নিতে হয় সত্যের পথ। সে পথ, যে পথে চলেছেন যারা জান্নাতি তারা। আমি সে পথের সন্ধান পেয়েছি ভার্সিটি লাইফে। (সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহর)
আমার জন্ম মোটামুটি একটি ইসলামিক পরিবেশে। তবে ইসলামের সব বিধিবিধান একেবারে মেনে নেওয়ার কোন তোড়জোড় নেই। শুধু নামাজ পড়লেই হয়ে যায় এমন অবস্থা। হয়েছেও তাই। হয়ত নামাজ পড়েছি, আবার ছেড়েছি। গান-বাজনা, নাটক-সিনেমা, হই-হুল্লোর, ফ্রি-মিক্সিং ইত্যাদিতে তাই অভ্যস্ত থাকাটাই স্বাভাবিক ছিল। অনেকটা মডারেট তত্ত্ব চর্চা যেটাকে বলা যায়। পড়াশুনায় বেশ সিরিয়াস ছিলাম খুব ছোট কাল থেকেই। অনেক উচ্চ এম্বিশান পোষণ করতাম। বড় হয়ে এটা করব, এভাবে করব ইত্যাদি। কিন্তু কখনও ভেবে দেখা হয়নি যা করতে চাচ্ছি তা কি ইসলাম সম্মত, নাকি শুধু দুনিয়ার পেছনেই ছুটে চলছি অবিরাম। এই অবিরাম ছুটে চলাই কি আমার উদ্দেশ্য? খুব একটি হিশেব মিলানোর ফুরসত হয়নি তখন।
গানের প্রতিও আসক্তি ছিল অনেক। নিয়মিত নামাজ পড়ার চেষ্টা করতাম, চাইতাম ইসলামিক বিধিবিধান মানতে কিন্তু আবার গানও শুনতাম বেশ। মনে হতো, "আরে একটু গান শুনলে আর এমন কি ক্ষতি হবে?(!)" তবে আস্তে আস্তে গান ও মিউজিকের ভয়াবহতা উপলন্ধি করেছি। হারাম কাজ করে সাময়িক শান্তি পাওয়া গেলেও সেটি এভার লাস্টিং হয় না। অন্তরে এক শূন্যতা আমাকে সব সময় ভুগিয়েছে। মনে হচ্ছে সব কিছু থাকার পরেও যেন কি নেই। এ এক অদ্ভুত শূন্যতা। আর এই শূন্যতা পূরণেই তাগিদেই চিনে ফেলেছি মহান রবের পথকে।
এইচএসসির রেজাল্ট মোটামুটি ভাল ছিল। খুব তোরজোড়েই ভার্সিটি এডমিশনের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি। অনেক পরিশ্রম করেছিলাম। তবে ভাগ্যের লিখন ঢাবিতে সুযোগ হয়নি। এতো হতাশ হয়ে পড়েছিলাম যে আর অন্য কোথাও পরীক্ষা দেওয়ার মতো মন-মানসিকতা ছিল না। সেই শূন্যতার মাত্রা আরও বেশি বাড়া শুরু করেছিল।
ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা বাড়িয়ে দিলাম। সব সময় নামাজ থেকে ফেরার পথে এক অন্য রকম শান্তি পেতাম। তারপর ইসলাম নিয়ে জানতে জানতে অনেক বিষয় পরিষ্কার হলো। জানলাম অন্তরে মহান রবের পরিপূর্ণ আনুগত্য না থাকলে সেই অন্তরে শূন্যতা সৃষ্টি হয় এবং সেই শূন্যতা অন্য কিছু দ্বারা পরিপূর্ণ হওয়া সম্ভব না। আস্তে আস্তে কোরআন তেলাওয়াতের উপর ঝোক বাড়ল। বাংলা অর্থ ঠিকঠাক না জানলেও পড়ে অন্তরে ভীষণ প্রশান্তির ধারা বয়ে যেত।
এরপরই পরিচিত হতে থাকি ইসলামিক বইয়ের জগতে সাথে। কিছু বই এমন যে, লেখক যেন শুধুমাত্র আমার জন্যেই লিখেছেন বইটি। আগে যে মডারেট তত্ত্ব মনের অজান্তে নিজের ভেতর ধারণ করতাম তা আস্তে আস্তে কমে যেতে লাগল। বই পড়ে জানতে পারলাম অনেক কিছু। অনুধাবন করতে পারলাম, যে মরীচিকার পেছনে আমরা ছুটে চলেছি সে মরীচিকার পথ ভ্রান্তির। এ পথে কোন কল্যাণ নেই। অনলাইনে ইসলামিক বই গুলো কেনা শুরু করলাম। পাশাপাশি শায়েখদের লেকচার গুলো আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছে। জানতে পারলাম গান-মিউজিক, হারাম রিলেশনের কুফল। মন উঠে গেল ওসব থেকে। পেয়ে গেলাম সত্য পথের সন্ধান। জানি, একজন একুশ শতকের তরুণ হয়ে এ পথ আমার জন্যে মসৃণ নয়। পথে পথে নানা বাধা। তবে এও মেনে নিয়েছি ইসলাম হলো একটি জীবন ব্যবস্থা, ইসলামের রঙে রাঙ্গিয়ে নিতে হবে আমাদের জীবন।
আলহামদুলিল্লাহ। চেষ্টা করে চলেছি এ পথে থাকার। সব সময় ভয় কাজ করে যদি আবার পথচ্যুত হয়ে যাই। পড়াশুনার দরুণ বুঝে ফেলেছি মডারেট তত্ত্ব কি আর ইসলাম মানে তো পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ। কিছু মানছি আর কিছু ছাড়ছি তা তো ইসলাম নয়।
দাড়ি রেখে দেওয়ার চেষ্টা করছি। যে আমাদের জন্যে রোজ হাশরে সাফায়ত করবে, যাকে আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালবাসা উচিত, জীবন সেই সুন্নাহের আলোকে গড়ে তুলার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন আর কোন বিষয়ে হতাশা কাজ করে না। বিপদ আসলে মনে করি এ হলো আল্লাহর তরফ থেকে পরীক্ষা। বিপদ হচ্ছে নিয়ামত স্বরূপ। আরও জেনেছি হতাশ হওয়া মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। বই গুলো পড়ে অনেক উপকৃত হয়েছি এবং যতটুক সম্ভব চেষ্টা করছি নিজের জায়গা থেকে চারিপাশে একটি ইসলামিক পরিবেশ তৈরী করার। ইচ্ছা আছে মুসলিম যুবকদের নিয়ে কাজ করার।
যদি আমাকে প্রশ্ন করা হয়, দ্বীনে ফেরার পথে সবচেয়ে টার্নিং পয়েন্ট কি? (!) আমি বলব, ইসলামিক বই অঙ্গনের সাথে পরিচিতি। (অবশ্যই আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া কোন কিছু সম্ভব না)। পাশাপাশি নিজে থেকেই যতটুকু পারি আমার ক্ষুদ্র ইলমে টুকটাক লিখালিখি করার। একজন অনুপ্রাণিত হলেও সেটি আমার জন্য অনন্ত সফলতা।
আমার যে সব ভাইয়েরা/বোনেরা ভ্রান্তির পথে আছেন কিংবা চেষ্টা করছেন দ্বীনে ফেরার তাদের জন্যে কিছু কথা। প্রথমেই আপনার জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জেনে নিন। কেন আপনাকে প্রেয়ণ করা হয়েছে পৃথিবীতে, কি আপনার দায়িত্ব। কোন পথ নাজাতের পথ। এই ভোগবাদী দুনিয়া আপনার সামনে অনেক রং উপস্থাপন করবে, তবে সেগুলো ধূসর মরীচিকা। আপনার চূড়ান্ত গন্তব্য জান্নাত, আর সেই চূড়ান্ত গন্তব্যে যাওয়ার পাথেয় হচ্ছে দ্বীন, ইখলাস ও আমল।
আমাদের নীড়ে ফিরতেই হবে। মনে রাখতে হবে একদিন দাড়াতে হবে মহান আল্লাহর সামনে। দিতে হবে আমাদের সমস্ত কাজের হিসাব। দ্বীনে ফিরলে যারা দ্বীনে ফিরতে চাচ্ছেন কিংবা করে যাচ্ছে সংগ্রাম, তাদের পথটি যেন সহজ হয় সেইজন্য কাজ করে যেতে হবে।
ভ্রান্তির পথ শেষে
নিয়ামুল ইসলাম আনান
.............................................
21.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
টপিকঃ
#ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
__________________________
টিনএজারদের একটা জগৎ-বিখ্যাত সমস্যা কি বলুন তো? মাত্রাতিরিক্ত আবেগ, তাই না? অলীক যল্পনা-কল্পনার আবেগে এইসময়টা একেবারে গদোগদো অবস্থা।
ঠিক তেমন আবেগটাই বর্তমানে আমাদের মডারেট মুসলিমদের মধ্যেও দেখা যায়।সেই সুবাদে আমার মধ্যেও ছিল আরকি।ধর্মের কথা শুনতেই আবেগ-জোয়ারে গা ভাসাতাম।কিন্তু মানার বেলায় কিছুই নাই।বছরে রমজান মাসে শুধু রেগুলার নামাজ পরতাম বাকি সময় হাওয়া ,ঠিক আজকালের শুধুমাত্র জুম্মা বারের হাজি দের মতো।বলিউডের শীর্ষ স্থান দখলকারী মুসলিম নায়ককে দেখে গর্বিত হতাম, টেলিভিশনে মুসলিম বেপর্দা মডেলকে দেখলে মুগ্ধ হতাম। বাহ্ সব জায়গাতেই আজ মুসলিম, এটাই বুঝি ইসলাম।কিন্তু আসলেই কি তাই? না হলে আমি কেন এমন ভাবতাম? কারণ -
অধিকাংশ মুসলিমের মতো আমারও ধর্মের আবেগ ছিল কিন্তু জ্ঞানের কৌটাটা ছিল নেহাৎ একটা ফাকা হাঁড়ি। মাত্রাতিরিক্ত বেয়ারা না হলেও যথেষ্ট পরিমাণে বেয়ারা ছিলাম নিজের চরম মাপের জাহিলি জীবনে। আমলনামাটা ছিল বড়সড় একটা গোল্লায় ভরাট। জীবনের ২২টা বছর পার করেছি নানান শরীয়াহ বর্হিভূত জাহিলিয়াতে (আল্লাহুম্মাগফিরলী)কেন? শুধুমাত্র এই সঠিক পরিবেশ আর জ্ঞানের অভাবে।
সেই জাহিলিয়াতের জ্ঞানশূন্য পৃষ্ঠাটা উল্টিয়ে অবশেষে আমার পরিবর্তনের শুরুটা হয় ভার্সিটির দ্বিতীয় বর্ষে এসে।পুরোপুরি দ্বীনে ফিরেছি তৃতীয় বর্ষে উঠে। মাঝের এই কচ্ছপ দৌড়ের ন্যায় দীর্ঘ একটা সময় লেগেছে আল্লাহ প্রদত্ত এই ক্ষুদ্র জীবনের মানে বুঝতে, ইসলাম সম্পর্কে বিস্তারিত জ্ঞান অর্জন করতে , এবং পরিশেষে নিজের প্রত্যাবর্তনের প্রারম্ভে আসতে।সেই প্রারম্ভের কথায় বলবো যার প্রধান উসিলা আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা'আলা করেছিলেন আমার দ্বীনি রুমমেটদের, আলহামদুলিল্লাহ (আল্লাহ তাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন)।
_________________________
শুরটা হয় হলের এ্যলোট দিয়ে,সেদিনও প্রতিবারের মতো সকাল সকাল হলে ধুম পরে ডরমেট্রোরির ৪৫ জনের রুম হয়েছে। আমাকে আর রাখে কে তখন? ট্রেন ফেল করা যাত্রীকে দেখেছেন নিশ্চয়? কিভাবে দৌড়ায় চলন্ত টেনের পেছনে মনে আছে? আমিও ঠিক সেভাবেই দৌড় দিলাম অফিসের নোটিশ বোর্ডের উদ্দেশ্যে।সাথে মনে মনে একটা দুয়াও জপতে আছি, "আল্লাহ আর যাই হোক খ-ব্লকে যেন রুম না হয় আমার।"
ডরমেট্রোরিতে উঠার পর থেকেই এই ব্লকটাকে কেন জানি আমার একদম পছন্দ না।তার ওপর সে ব্লকে পরিচিত কেউ নেই।বড় আপুদেরও তেমন চিনিনা।কিন্তু, আল্লাহর তো অন্য পরিকল্পনা, " তারা পরিকল্পনা করে এবং আল্লাহও কৌশল করেন, আর আল্লাহই সর্বোত্তম কৌশলী/পরিকল্পনাকারী (সূরা আনফাল- ৩০)"
মানে হচ্ছে পৌঁছাতেই দেখলাম রুম হয়েছে, তাও খ-ব্লকেই, "কি একটা যন্ত্রণা!!"
এতক্ষণ রুম হবে হবে ভেবে মনে মনে সাত আসমানে উড়তে থাকা আমি এক্কেরে ধপাস করে পড়লাম মাটিতে," না ভুল দেখছি না তো? দেখতেও পারি" চোখ কচলাতে কচলাতে আরো একবার লিস্টটা চেক করার সিদ্ধান্ত নিলাম, "কিন্তু না কোন ভুল নেই, এই তো খ-ব্লকই।" মাথা চৌরকির মতো আরো একটা চক্কর দিয়ে উঠল যখন উৎঘাটন করলাম খ-ব্লকের ২য় তলায় রুম, " হায় আল্লাহ কি করলে তুমি? "
ওদিকে খ- ব্লকের দ্বিতীয় তলায় আপুরা একটু বেশিই ধার্মিক। তার ওপর সে ব্লকে প্রতি সপ্তাহে তাফসির হয়।আর এদিকে অতি ধার্মিকদের দেখলে বুকে ধুকবুকানি শুরু হওয়া আমি।মিলে কখনো? "
আমি আগাগোড়াই ভাই ধর্মকর্ম মানতাম তবে এতো কমপ্লিকেটেড করতাম না ধর্মকে" কমপ্লিকেটেড করবোই বা কিভাবে ওই যে জ্ঞানের রাজ্য তো ঘোড়ার ডিমে পূর্ণ।ভাবতাম নামাজ,রোজা এগুলোতেই ইসলাম সীমাবদ্ধ। পর্দা-টর্দা ওসব না করেও শালীনভাবে চললেই জান্নাত পাবো। উপর থেকে ফ্রি মিক্সিং, নাচ-গান-সিনেমা-লাভ স্টোরি জাতীয় সিরিয়ালে আমি আবার ভীষণ এ্যডিক্টেড, তাই মনে মনে ভাবি ধার্মিক আপুদের থেকে ভালোয় ভালোই দূরত্ব বজায় রাখায় উত্তম ,না জানি তারা আবার কখন এসব নিয়ে নসিহত দিতে লেগে যায়।
মূলত এসব কারণেই ব্লকটার প্রতি আমার যত অনীহা আর ইগনোরেন্স।কিন্তু আপাতত চরমভাবে ফেঁসে গেছি আমি যাকে বলে "মাইনকা চিঁপায় ফাঁসা"। টেনশনে আমার ঘুম হারাম,ভাবনা একটায়, " এই রুমে উঠলে এত গুলো ধার্মিক আপুর মাঝে আমি জাতা কলে পিষা আটা না হয়ে যায়।"
কিন্তু কি করা,উপায় যেহেতু আর নাই, তাই আল্লাহ আল্লাহ করে উঠতেই হবে, যদিও চেষ্টা কম করিনি রুম চেঞ্জ করার, কিন্তু ম্যাম এক নাছোড়বান্দা।ছ্যাচড়ার মতো তিন-চারবার পেছন পেছন ঘুড়েও রুমটা চেঞ্জ করলেন না তো করলেনই না। অগত্য না পেরে শেষমেষ ওখানেই। উঠার পর পড়লাম আরেক মহা বিপাকে," এরা তো সেই সাত সকালে উঠে নামাজের জন্য একে ওপরকে ডাকাডাকি করে, কি একটা ঝামেলা!!" আমি পরে গেলাম লজ্জায় ,"এদের মতো সকালে নামাজ না পড়লে মান ইজ্জত থাকবে নাকি?" এর মধ্যে আবার আরেক সিনিয়র আপু বলে বসলেন," তোমাকে নামাজের জন্য সকালে ডাকবো রুহি?" ব্যস মরার ওপর খরার ঘা, নেহাৎ আবারো না পেরে বললাম,"জ্বি আপু ডাক দিয়েন"। সেই বিব্রতকর সিচুয়েশন থেকেই শুরু হলো ভালো কিছু, রেগুলার সকালে নামাজ পড়া (আলহামদুলিল্লাহ)। যদিও তখনও পুরোপুরি সব ওয়াক্তেরটা রেগুলার হতো না। মানে দুপুরে ক্লাস থাকলে নামাজ মিস, বিকেলে টিউশন থাকলে মিস,কিন্তু যতক্ষণ রুমে থাকি আপুদের সাথে,আলহামদুলিল্লাহ নামাজ হতো। কথায় আছে না- সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে।আমার অবস্থা ঠিক সেরকম।
এভাবে দেখতে দেখতে মাস পেরিয়ে যায় ,রুমমেট দের সাথে বন্ডিং টাও আগের চায়তে বেশ ভালো হয়। অতিরিক্ত ধার্মিকতায় আর বুকে ধুকবুকানি হয় না। তাদের চিনতে শিখি,জানতে শিখি।ইসলামের সৌন্দর্য অনুভব করি।আমার রুমের পরিবেশটাও এতো সুন্দর ছিল মাশাআল্লাহ, যে অবসরে সেখানে কুরআন হাদিস আলোচনা হতো, সকাল-সন্ধ্যা কুরআনের সূর উঠতো,রাতে তাফসির হতো,গীবত-অহংকার -বিলাসিতা টাইপ জিনিস গুলো ছিল না কখনোই। তার ওপর রুমমেটদের অমায়িক ব্যবহার।চিন্তাধারা বদলাতে লাগলাম।
কিন্তু পর্দা সম্পর্কে তখনও আমি বেশ উদাসীন। রুমের তিনজনই যখন বোরখা,নিকাব পড়তেন আমার বেশ আন-কমফর্ট ফিল হতো। আমি ছিলাম এদের মধ্যে একমাত্র বেপর্দা মেয়ে,যদিও এটা নিয়ে আপুরা কখনো কিছু বলতো না,তবুও লজ্জায় আমার মাথা কাটা অবস্থা। সময়ের সাথে আস্তে আস্তে পর্দা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার আগ্রহ বাড়ে,জানতে শুরু করলাম কখনো নেট, কখনো ফেসবুক, কখনো ইউটিউব আর কখনো বা আপুদের থেকেই। জানার পর আমার চেতনায় এক বৃহৎ পরিবর্তন আসতে লাগলো।
ধীরে ধীরে নামাজ নিয়েও আগের চেয়ে বেশ সেন্সিটিভ হয়ে গেলাম যার কারণে মুভি সিরিয়াল সহ বেশ কিছু হারাম কাজের প্রতি এ্যর্টাকশনটাও কমতে লাগলো। একটা কথা আছে," জীবনে যত পাপই কর না কেন, নামাজ ছেড়ো না।" কারণ কি?কারণ হলো আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার ভয়, দিনে পাঁচ বার আল্লাহর সামনে দাড়ানোর লজ্জা। আমার ক্ষেত্রে ঠিক সেটাই হয়েছিল। বেপর্দা ঘুরে, সিরিয়াল-মুভি-গান, ফ্রি মিক্সিং, হারাম সম্পর্ক নিয়ে সবসময় পড়ে থেকে আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে ভালোই লজ্জা লাগতো।"এসব কি করছি আমি " জবাবদিহিতার ভয় জাগতো।সেখান থেকেই সব কমে যায়।
তবে তখনও পরিবর্তনের যে পরিপূর্ণ ইফেক্ট, তা জাগ্রত হয়েছিল না।
এর মাঝে শুরু হলো ৩য় বর্ষ প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল।যেটা ছিল আমার জীবনের আসল ট্রার্নিং পয়েন্ট। এখানে প্লাস পয়েন্টটা ছিলো ফাইনাল পরীক্ষা উপলক্ষ্যে পাওয়া অবসর সময়।পরীক্ষার আগে প্রায় ২০দিন খানিক ছুটি পেয়ে গেলাম পড়ার জন্য।যে কারণে এখন প্রায় দিনরাত কুনো ব্যঙের মতো রুমেই শুয়ে-বসে পাড় করতে হয়, আগে যেখানে বাহিরেই থাকতাম। তো এই সুবাদে আপুরা যখন রুমে কুরআন হাদিসের তরজমা-তাফসির নিয়ে বসতেন সেগুলো আমার না চায়তেও শুনতে হতো।যার ফলে আরো অনেক ডিটেইলস জানতে পারলাম।
বাড়ন্ত জ্ঞানের সাথে সাথে কেন জানি মৃত্যু নিয়ে চিন্তা ভাবনাও তখন বাড়তে লাগল।পরিস্থিতি এমন হলো উঠতে, বসতে, শুতে, জাগতে,এমনি স্বপ্নেও এখন খালি নিজের মরার কথাই মনে জাগে। পরীক্ষার পড়া পড়ছি তাও সে ভয়, জীবনে যেখানে ক্লাসে ১-৫ এর বাহিরে কমই থাকছি ফেল তো দূরের কথা, সেখানে পরকালের পরীক্ষার জন্য আমি একেবারেই অপ্রস্তুত। এসব ভাবতে ভাবতে হুহু করে কেঁদে ফেলি মাঝেমাঝে। সে থেকে শুরু হয় আসল পরিবর্তন, আরো বেশি ডিটেইলস জানার আগ্রহ।ইউটিউবের সার্চ করে করে সব হক্কানি আলেমদের লেকচার শুনতে লাগলাম, বিস্তারিত জানতে লাগলাম আর ওদিকে হৃদয়ও গলতে লাগলো।
পরিবর্তনের একটা লম্বা প্রোসেস এর মধ্য দিয়ে আগাচ্ছিলাম,বিষয় গুলো শেয়ার করতেও লজ্জা পেতাম "না জানি,সবাই জানলে হাসবে। দোটানায় জীবন পাড় করেছি অনেক দিন পর্দা শুরু করবো কি করবো না, মানুষ কি বলবে হেনতেন সাতপাঁচ ভেবেছি অনেকদিন । অবশেষে মানুষ কি বলবে তার তোয়াক্কা মাথা থেকে অবর্জনার মতো ছুড়ে ফেললাম। চিন্তায় ছিল শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি।
সেদিন ছিল লাস্ট পরীক্ষা।আর পরীক্ষা শেষে ১৫-২০দিনের ছুটি।নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়ার জন্য একটা স্পেস খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আলহামদুলিল্লাহ এই ছুটিতে সে স্পেসটা আমি পেয়ে গেলাম।এই অবসরে ফ্রেন্ডলিস্টটা একটু ঝালাই করলাম,প্রোফাইলে যত ছবি ছিল সব সড়ালাম।অন্য যাদের কাছে ছবি ছিল তাদেরও সড়াতে বললাম।সাথে প্রস্তুতি নিলাম ছুটি শেষে সবকিছু কিভাবে ফেস করবো।
দেখতে দেখতে ছুটিও শেষ হয়ে গেল। প্রথম যেদিন ৩য় বর্ষ ২য় সেমিস্টারের ক্লাসে হাজির হলাম, তখন আমি ছিলাম অপাদমস্তক ঢাকা। দীর্ঘ ১৫-২০ দিনের স্পেস পেয়েও সেদিন এমন ঢেকেঢুকে ক্লাসে প্রবেশ করতে ভীষণ বিব্রতবোধ হচ্ছিলো। ভিতরে একটা উথাল পাথাল অবস্থা, না জানি সবাই কেমন রিয়েক্ট করবে। করলোও, "দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই অনেকে হেসে ওওও করে চিৎকার করেছিল।লজ্জায় আর অসস্থিতে পুরো ক্লাসটাইমে আর আশেপাশে তাকায় নি সেদিন।এতো রং ঢং করা আমি হুট করে এমন হুজুরনী বেশ ধরলে আশেপাশে তাকানোর সাহস থাকে নাকি? সাহস ছিলো না।
" সাবাই সব দেখে ফেলেছে, এখন আর এমন ঢেকেঢুকে কি লাভ?" পরবর্তীতে এ টাইপ শ'খানেক কথা শুনেছি। হুজুরনি, জঙ্গি,কালো ভূত,শিবির বিভিন্ন ট্যাগ পেয়েছি।ক্লাসমেটরা শুনিয়েছে, আত্নীয়স্বজন শুনিয়েছে এমনকি নিজের বাবা মাও ছেড়ে দেয় নি।কথাগুলো কাটাঁর মতো ফুটতো, বিশেষ করে যখন প্রিয়জনেরা বলতো। একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহ যে, সব কিছু সহজভাবে মেনে নেওয়ার তাওফিক দিয়েছিলেন তিনি তখন।খোঁচা দেওয়া মানুষের পাশাপাশি এমনসব বান্ধবী,বড় আপু,শুভাকাঙ্ক্ষীকে পাশে দিয়েছিলেন যারা আমাকে সাহস দিয়েছে, সাথে থেকেছে।
তখন আর আবসরে নাচ,গান থাকতো না। ফোন লিস্টের সবকয়টা প্রিয় গানকে সরিয়ে দিলাম ধীরে ধীরে।গান শোনার অভ্যাসটা যেহেতু অনেক পুরোনো একেবারে ছাড়া অসম্ভব, তাই প্লান করে কিছু নাশিদ ডাউনলোড করি যা মৃত্যু, কবর,পরকালের কথা মনে করায়। গানের নেশা উঠলে এই নাশিদগুলো শুনতাম। আলহামদুলিল্লাহ এভাবে গানের নেশাও কেটে যায়।
মুভি,নাটকের নেশা পুরোপুরি দূর করতে, বাকি থাকা অবসর সময়ে ব্যস্ত হলাম কিছু দ্বীন চর্চার কাজ নিয়ে, যেমন- কুরআন হাদিস পড়তাম, সন্ধ্যায় শুদ্ধ কুরআন শিক্ষা ক্লাসে জয়েন করলাম হলের এক প্রিয় আপুর কাছে। তাহাজ্জুদের অভ্যাস করলাম। আর এসব আমাকে এতোটা প্রশান্তি দিতো, কি বলবো যা অতিক্রান্ত এতগুলো বছরেও কখনো নসিবে জোটে নি। এ ফিলিংসগুলো লিখে প্রকাশ করার মতো নয় আসলে।
এভাবেই হাটি হাঁটি পায়ে বেরিয়েছিলাম নিজের জাহিলি জীবন থেকে।বিগত স্মৃতি গুলো এখনো উঁকি দেয় মাঝে সাঝে। ভীষণ বিদঘুটে অসহনীয় সেগুলো। শয়তানের ওয়াসওয়াসাও আসে অনেক।কিন্তু আল্লাহর রহমতে কষ্ট হলেও সব সয়তে পারি এখন,খুব বেশি খারাপ লাগলে আল্লাহর উদেশ্যে মন উজার করে কাঁদি।ফলসরূপ আশ্চর্যজনকভাবে তার কিছুক্ষনের মধ্যেই ওপরওয়ালার কুদরতে অন্তরটা শান্ত হয়ে যায়।আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল।
___________________
পরিসমাপ্তিতে এসে এই অধমের কাছে আসলে নসিহা দেওয়ার মতো তেমন কিছুই নেয় যা আছে সবই বাস্তব অভিজ্ঞতা।যা বলে- শুধু আবেগ যথেষ্ঠ নয় কারণ ইসলামের সৌন্দর্য্যটা আসলে স্বল্পজ্ঞান নিয়ে দূর থেকে অনুভব করা কখনোই সম্ভব না, বেড়াজাল মনে হবে, সব জায়গায় এতো রেস্টিকশান কেন এমন মনে হবে। কিন্তু কাছে এসে খুটিনাটি জানলে দেখবেন বেশ ভালো লাগবে এগুলোই ইসলামের সৌন্দর্য্য। নিজেকে যথেষ্ট পরিমাণে স্পেস দিতে হবে মাইন্ড সেটআপের জন্য।
জাহিলিয়াত ছেড়ে দ্বীনে ফেরা কখনোই সহজ নয়। নিজের জাহিলি জীবন, তথাকথিত সেই জীবনে ঘেরা প্রিয় মানুষ, হারাম সম্পর্ক অনেক কিছুই বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে, সবচেয়ে বড় বাঁধা হবে-আপনজনদের কটুক্তি। হৃদয়টা ক্ষত-বিক্ষত করতে সক্ষম যেগুলো।কিন্তু যারা সাহস নিয়ে একবার আল্লাহর সন্তুষ্টিকে সামনে রেখে নিজেকে পরিবর্তনের জন্য আগাবে, সময়ের বিবর্তনে তাদের অটোমেটিক সব সমস্যা সলভ হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ । আজ যেটা ভেবে ভীত- দিশাহীন মনে হবে, কিছুদিন বাদে সেগুলো ভেবেই ভীষন হাসি আসবে।এককথায় বললে জীবনের একটা সময় ,এনজয় করবেন আসলে এগুলোই।কারণ এগুলোই আল্লাহ আজ্জওয়া জালের রহমত।
_______________
(আত্মকথন)
লেখায়- ফরিদা ইয়াসমিন
.........................................................
22.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
পোস্ট টপিকঃ #ভার্সিটিতে_এসে_দ্বীনে_ফেরার_গল্প
"শেকড়ের সন্ধান"
-মোঃ এমদাদুল্লাহ তাফহীম
○ শুরুর টুকরোঃ
আল্লাহ তা'য়ালা তার বান্দাদেরকে অনেক ভালবাসেন,অনেক বেশি ভালবাসেন।আল্লাহ চান বান্দাও অনুরুপ ভালবাসার প্রেমসাগরে ডুব দিক,তাকে ডাকুক, তার কাছেই মিনতি করুক, অন্তরের গহীনে সুপ্ত কথাটুকুন কেবল তারই সমীপে অর্পণ করুক। বান্দার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক কেবল আবদিয়াত ও দাসত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং সেটা প্রেম-ভালবাসা এবং ইশক-মুহাব্বতের অপুর্ব সম্মিলন।শুধু কেবল বান্দা বা দাসের জন্য কি এত সম্মান থাকে!সৃষ্টির সেরা হওয়ার গৌরব কাধে ঝুলে! শুধু বান্দা বা দাসের জন্য কি এত আদর-সমাদর, যত্ন-আপ্যায়ন, সম্মান-মর্যাদা,প্রেম-ভালবাসা মিশ্রিত ডাক শোভা পায়!"বান্দা আমাকে ডাক,আমি তোমার ডাকে সাড়া দেব!"[১] এ তো বান্দার প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত ভালবাসার নিদর্শন বৈ কিছু নয়।
কিন্তু দুনিয়া বড় আশ্চর্য জায়গা।এখানে প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠার খেলায় নিমগ্নচিত্তে শৈশব থেকে কৈশোরে পা দিয়ে দাপিয়ে বেড়ানো ছেলে সময়ের নিকশ আন্ধার সাতরিয়ে তারুণ্যের সিঁড়ি টপকে বার্ধক্যে উপনীত হয়।তারপর হঠাৎ একদিন সেই সিঁড়ির দুমরানো-মুচড়ানো ভাঙন শব্দাংশ বাস্তবতার স্বীকারোক্তি করে। নো বলে ছক্কা হাকানোর মত সুপ্রসন্ন চিত্তের অধিকারী কতিপয়ের মনে উঁকি দেয় কিছু প্রশ্নের উদ্রেক। কোত্থেকে এলো,কেন এলো আর কোথায় যাবে এসব প্রশ্নের কিয়দংশ বিলাস-জৌলুসে মত্ত দুনিয়ার মোহ,সুখ আর ভোগ-আনন্দের নেশার বৈষম্যভেদ্য ঝিল্লীর আবরণ ছিন্ন করে খুব সামান্যের ই চিন্তার জগতে আলোর বিচ্ছুরণ ছোটায়। কেউ খোঁজে পায় চিরসুখের নীড়, কেউবা হারায় আসল গন্তব্যপথের ঠিকানা, যেপথে হাসলেও শোনা যায় শান্তির কল্লোল ধ্বনি তেমনি কাঁদলেও শোনা যায় অভিকর্ষ পানে ছুটন্ত কৃতজ্ঞতার অশ্রুর তরঙ্গধ্বনি।
কবির ভাষায় "চলাও সেপথে মোরে, যেপথে তোমার প্রিয়জন গেছে চলি",সে পথেরই এক নব্য পথিকের গল্প শুনবো আজ এক 'আমি'র কন্ঠে।
○ নিষ্ঠুর বাস্তবতার চাক্ষুষ দৃষ্টান্তরূপঃ
সময়ের নিষ্ঠুর সংকীর্ন উপস্থিতি বিলাসমত্ত প্রবৃত্তির আত্নপ্রবঞ্চনাময় গতকালের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে আজকের বাস্তবতা থেকে নিজেকে আড়াল করতে দেয় না। আমিও আড়াল করতে পারছি না বন্ধু 'ধ্রুব' এর অল্প বয়সে মৃত্যুর সেই সময়টুকু নিজের স্মৃতি থেকে। কলেজ বন্ধ থাকলে যে ছেলেকে ঘুম থেকে উঠানো দায়, তাকে আর কেউ বিরক্ত করবে না ঘুম থেকে উঠার জন্য। আমি ছোট থেকে জন্মগত মুসলিম পরিচয় নিয়ে বড় হলেও সখ্য গড়ে উঠেনি ধর্মপ্রান তেমন কারো সাথে।মুটামুটি মডারেট শ্রেনীর ছেলেদের সাথে উঠাবসা হলেও সংশ্রব সংশয়বাদীদের সাথেই বেশি ছিল ।
সময়টা প্রায় তিন বছর আগের।হঠাৎ সংবাদ পেলাম ধ্রুব রোড এক্সিডেন্ট করেছে।বাইকের ড্রাইভিং সিটে সে ছিল।ফাকা রোডে পাল্লা দিয়ে ফুলস্পিডে চালানোর এক পর্যায়ে দুর্ঘটনায় মাথায় প্রচন্ড ব্যথা পায়। হাসপাতালে যখন নেওয়া হয় তখন সে অজ্ঞান।সেখান থেকে আইসিইউ, তারপর অন্তিম পানে যাত্রা।
বন্ধুর এ অকাল যাত্রা সেদিন খুব ভাবিয়ে তুলেছিল।হোস্টেলের রুমের সামনে দিয়ে কিছু তাবলীগি ছেলে প্রতিনিয়ত নামাযের জন্য ডেকে নিতে চাইত, জুনিয়রদের এ দাওয়াতে ভ্রুক্ষেপ করিনি তেমন। কিন্তু সেদিন ওর বাড়ি থেকে দাফন করে আসার পরদিন নিজে থেকেই মসজিদে গিয়েছিলাম।কিছু ছেলেদের দৃষ্টি আমাকে একটু বিড়ম্বনায় ফেলে দিলেও তারা যে খুব খুশি হয়েছিল তাদের চেহারা সে আশ্বাস জানান দিচ্ছিল। মৃত্যু এক ধ্রুব সত্য জানি, কিন্তু এটা যেন কেবল আমার কানেই পৌঁছেছিল এতদিন, অন্তরে প্রবেশ করেনি। বন্ধুর মৃত্যু আমার জন্য এক দ্বার উন্মুক্ত করে দিল।অন্তরে দহনজ্বালা অনুভব হচ্ছিল, চোখ থেকে সেদিন অশ্রু ঝরেছিল।
মানুষ স্বপ্ন দেখতে পারে,স্বপ্ন হৃদয়ে লালন করতে পারে, স্বপ্নের তরঙ্গদোলায় দোল খেতে পারে কিন্তু সব স্বপ্নকে কি পূর্নতা দিতে পারে?আমার বন্ধু তো পারেনি। আমি পারবো!আমার দ্বারা সম্ভব! কারো কাছে অফুরন্ত হায়াতের নজরানা পেশ করলে হয়ত সম্ভব। কিন্তু সময় কি সে সুযোগ দিবে!
সময়ের জন্য আক্ষেপের বোকামি টুকুনও সময়কে এগিয়ে নিয়ে যায় নির্মম তুফানের উত্তাল স্রোতে ভাসিয়ে,উন্মোচিত করে নিঃসঙ্গতার দংশনে দংশিত হয়ে রুপমা,স্মৃতি আর কল্পনার রঙীন মায়াজাল ছিন্ন করে ভিন্ন এক বাস্তব সত্য।সেদিন থেকে উপলব্ধি হলো, "জলে না নেমে সাঁতার শেখা যেমন সম্ভব নয়" তেমনি বসে থেকে ইসলামকে পুরুপুরি শেখা সম্ভব নয়। আমাকেও ইসলাম শেখার জন্য সময় দিতে হবে,জানতে হবে নিজের গন্তব্য,গোছাতে হবে নিজের কিছু পুঁজি।যাত্রার আগে বানাতে হবে শিরক মুক্ত ঈমান, বিদাত ও রিয়ামুক্ত আমল।
○ স্বপ্নময় স্বপ্নাদেশঃ
একদিনের ঘটনা।
ক্লাসের পড়াশোনা শেষ করে রাতে বিছানায় ঘুমাতে গিয়েছি। হঠাৎ মনে হচ্ছিল, কি যেন একটা আমার বুকের উপর ভর করছে। হাত পা নড়াতে পারছিলাম না,মনে হচ্ছিল হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে।কালিমা বলার জন্য অন্তর ছটফট করছিল ,কিন্তু শরীর নাড়াব তো দূর, ঠোট দুইটাও নড়াতে পারলাম না।তারপর কোনোরকমে জিহ্বা নাড়িয়ে বা মনে মনে কালিমা পড়লাম।এর কিছুক্ষন পর ম্যাজিকের মত আমার ঘুম ভেঙে গেল।এরপর কান্নাকাটি করে মাফ চাইলাম আল্লাহ'র কাছে।
মরে যাব এই অনুভুতির জন্য ভয় যতটা পেয়েছিলাম তারথেকে বেশি মানসিক অস্থিরতা কাজ করতো । আমি তো মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত না,একদমই না,এই মুহুর্তে মারা গেলে আমি কি নিয়ে মাওলার দরবারে হাজিরা দিব! সত্যি কি আমার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে! হায়! আমার তো তাহলে সুযোগ শেষ হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু এই রিক্ত হস্তের যাত্রা কতটুকু শুভ হবে আমার!
প্রিয় পাঠক! বিশ্বাস করো,একটুও বাড়িয়ে বলছি না।তোমাকে যদি বুঝাতে পারতাম সেই দিনের অনুভুতি, নিদ্রালু চোখে তুমি যদি দেখতে আমার সেই অবস্থা! তাহলে নিশ্চিত বলতে পারি, তুমি তোমার আন্তরিকতা, স্নেহ আর মমতা মাখা পরশ আমায় বুলিয়ে দিতে।
মাঝেমধ্যে ভাবতাম আমি কি এগুলা নিজে থেকে কল্পনা করি?প্রতিদিন প্রায় একই ধরনের স্বপ্ন দেখতে লাগলাম,একই ঘটনাপ্রবাহ,একই থিম,একই অনুভুতি। কিছুদিন ভয় বেশি পেতাম,কিছুদিন একটু কম।মাঝেমাঝে ভয়ের মাত্রা এত বেশি হতো যে, ভাবতাম এই বুঝি শেষ, মরেই যাচ্ছি,মালাকুল মউত আসলো প্রায় রুহ বের করার জন্য।
এটা কি কোন বোবা জ্বিনের কাজ ছিল? আমি তো ঘুমের টুকটাক আমল করেই ঘুমাতাম। তাহলেও কি এই প্রশ্ন মুল্য পাবে! যদি পায়, তাহলে সেই বোবা জ্বিনদের প্রতি অফুরন্ত দোয়া,হয়ত তাদের এহেন কাজের ওসিলায় আল্লাহ আমার চিন্তাজগত আলোড়িত করেছেন,উন্মোচিত করেছেন এক দিগন্ত যার প্রতি আমি ছিলাম সম্পুর্ন বেখেয়াল।
ঘুম ভাঙার পর স্পষ্ট মনে থাকতো, স্বপ্নে কি কি ঘটেছে। একদিন বাসায় ভাগ্নি দেখে ফেললো এ ঘটনা।ঘুমের মধ্যে আমার অস্বস্থি অবস্থা দেখে ছুটে গিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয়।এরপর আর স্বপ্ন দেখলাম না। হারিয়ে গেল সেই স্বপ্নময় মুহুর্ত আর মরিচাধরা শুরু করলো সুঁচালো অনুভুতির দোয়ারে।কালের আবর্তনে আমিও হারিয়ে গেলাম রবের থেকে দুরে। নামায পড়তাম, কিন্তু সেই অনুভুতির স্বাদ কোথাও পেতাম না।
○ ভ্রাম্যমাণ পরিবেশেঃ
প্রফেশনাল পরীক্ষা শেষে অল্পকিছুদিনের ছুটি পাওয়া যায়। তার কিছুদিন আগে থেকে বন্ধুদের প্ল্যান, কক্সবাজার ট্যুর দিব। পরীক্ষা শেষ হওয়ার অনেকদিন আগ থেকেই পছন্দের কিছু জুনিয়র কিছু সময় একটা পরিবেশে কাটিয়ে আসার দাওয়াত দেয়। ছেলেগুলোর মায়াভরা কথায় মৃত্যুভয় আবার জেগে উঠে আমার। জিজ্ঞাসা করলাম-আমাকে জাহান্নাম থেকে বাচার একটা উপায় বলে দিতে পারবি?-"জ্বি ভাই।আপনি একাধারে চল্লিশ দিন তাকবীর উলা সহ নামাজ আদায় করলে আল্লাহ দু'টো পুরস্কার দিবেন।জাহান্নাম থেকে মুক্তি আর মুনাফিকদের তালিকা থেকে মুক্তি।"
এ আবার কঠিন কিছু নাকি! শুরু করলাম চল্লিশ পানে, সাতাশ তম দিন নামাযের জামাত মিস করলাম। মনে হচ্ছিল মাথাটা দেওয়ালে ঠুকে মারি।কিন্তু এটা তো সমাধান নয়।আবার শুরু করতে হবে সেই প্রথম থেকে। চল্লিশ যে পুরা করতেই হবে, কিন্তু হচ্ছে না।বারবার ব্যর্থ হচ্ছিলাম খুব নিকটে গিয়েও।
পাঠক বন্ধু! সারাজীবন যে শুনে এসেছ "নামায অশ্লীলতা থেকে ফেরায়"[২] তার বাস্তব নমুনা যদি প্রত্যক্ষ করতে চাও,কুরানের আয়াতের বাস্তবায়ন নিজের জীবনে যদি করতে চাও, নামাযের মাধ্যমে অন্তরের প্রশান্তি যদি পেতে চাও,গুনাহের সমুদ্রে অবগাহন থেকে যদি নিজেকে বাঁচাতে চাও, মাওলা পাকের সান্নিধ্য যদি পেতে চাও, আমি তোমাকে বলব চল্লিশ পানে তুমিও যাত্রা করো। আজ থেকেই। এখন থেকেই নিয়্যাত করো। এর সুন্দর এক ফলাফল তুমি পাবে, বিশ্বাস করো তুমিও শামিল হবে সুপ্রসন্ন চিত্তের অধিকারীদের কাতারে।
পরীক্ষা শেষ হলো। বন্ধুদের আড্ডায় সবাই দিন তারিখ নির্ধারণ করলো কক্সবাজার ট্যুরের জন্য।আমিও যাবো তাদের সাথে এই নিয়তেই দিন গুনছিলাম। কিন্তু "আল্লাহ যে উত্তম পরিকল্পনাকারী।"[৩] হোস্টেলের এক বড় ভাই ট্যুরে যাওয়ার ব্যপারে ঈমানী কি কি ক্ষতি হতে পারে এ ব্যাপারে লম্বা লেকচার দিয়ে বসলেন। কিছু কিছু ইচ্ছায় শুনলাম, কিছু কিছু না শোনার ভান করে শুনলাম আর কিছু শুনলাম নিতান্তই বাধ্য হয়ে। উনি বলতে এসেছেন সময়টা ভ্রাম্যমাণ এক পরিবেশের কাটিয়ে আসতে যার নাম "দাওয়াত ও তাবলিগ।" দোদুল্যমান অবস্থায় রেখে উনি চলে গেলেন।
পরদিন সিদ্ধান্ত নিলাম ট্যুরে যাবো না। যাবো সেই পরিবেশে, যে পরিবেশ আত্নিক উন্নতি দিবে, অন্তরে প্রশান্তি দিবে, চোখে দিবে কৃতজ্ঞতার অশ্রুস্রোতের ফোয়ারা। কিন্তু সমস্যা হলো বাসায় বুঝানো নিয়ে। বাবা কিছুতেই যেতে দিবেন না।এ পর্যায়ে একটু বলে রাখি, বাসার পরিবেশ গতানুগতিক আধুনিকতায় পর্যবসিত। দ্বীনের প্রতি আগ্রহী হওয়াতে উনারা হয়ত ভাবছেন সেকেলে টাইপের কিছু হয়ে যাচ্ছি,যে কিনা সমাজ বিচ্যুত এক সত্ত্বা হবে, যার দৌড় কেবল মসজিদ পর্যন্ত থাকবে, সমাজের কোন কল্যানে সে কাজে লাগবে না।যেন সে এক পদার্থ থেকে অপদার্থের খাতায় নাম লিখিয়ে নিবে!
বাবা-মা সন্তানকে ভালবাসেন এটা স্বাভাবিক এবং সত্য যার কোন তুলনা নেই।কিন্তু আমার প্রতি আব্বা-আম্মার ভালবাসা তুলনার মাঝেও অতুলনীয়। হয়ত পৃথিবীর প্রত্যেক সন্তানের অনুভূতি এমনই এবং সে অনুভূতি অবশ্যই শ্রদ্ধাযোগ্য।বিপাকে পড়ে গেলাম, বাবা কিছুতেই যেতে দিতে নারাজ। মা কে বুঝিয়ে শুনিয়ে বললে মায়ের কথায় বাবা অনুমতি দিলেন কেবল তিনদিনের জন্য। তিনদিন শেষে বাবার ফোন, চলে আসার জন্য।কিন্তু মন যেন চাচ্ছিল আরো কিছুদিন থাকতে। এক বড় ভাইকে বিষয়টা জানালে তিনি শুনালেন অন্তর প্রশান্তকারী সেই হাদিসের বানী।"যে ব্যক্তি কোন মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে,আল্লাহ ঐ মানুষকে তার প্রতি অসন্তুষ্ট করে দেন।আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে কোন মানুষকে অসন্তুষ্ট করে, আল্লাহ ঐ মানুষকে তার প্রতি সন্তুষ্ট করে দেন।"[৪]
বাসায় যোগাযোগ সম্পুর্ন বন্ধ করে দিয়ে থেকে এলাম আরো কিছুদিন। বাবা-মা এর জন্য দোয়া অব্যাহত রাখলাম, অন্তরে প্রশান্তি দিচ্ছিল ঐ হাদিসের বানীটুকু। আশায় বুক বেধেছি, আল্লাহ অবশ্যই বাবা-মায়ের মন নরম করে দিবেন। আল্লাহ আমাকে নিরাশ করেননি, দোয়া কবুল করেছেন।আলহামদুলিল্লাহ্।
একদিনের বয়ান। হুজুর বলছিলেন,বাবারা! আদম আ. কয়টা গুনাহ করেছিলেন? মাত্র একটা। আল্লাহর একটা হুকুম অমান্য করার জন্য যদি জান্নাত থেকে বের হয়ে যেতে হয়,তাহলে গুনাহের সমুদ্রে নিমজ্জিত থেকে জান্নাতের আশা করা কি বোকামি নয়? আদ জাতি,সামুদ জাতিকে কয়টা অপরাধের জন্য ধ্বংস করে দিয়েছিলেন! একটা অপরাধ যদি ধ্বংস হওয়ার জন্য যথেষ্ট হয় তাহলে আর কত অপরাধ করে তোমরা নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনতে চাইবে? আল্লাহ তোমাদের ছাড় দিচ্ছেন, ভেবে নিও তিনি ছেড়ে দিবেন না। সময় থাকতে কৃত অপরাধের ক্ষমা নিয়ে আল্লাহর কাছে হাজির হও। তোমাকে সহ সমস্ত কুল-ক্বায়েনাত ধ্বংস করে দিলেও আল্লাহর জবাবদিহিতার কোন ভয় নেই। কোন্ আল্লাহর সাথে নাফরমানীতে লিপ্ত হয়েছো যুবক! তওবা করে ফিরে আসো, এখনই সময়।
সেদিন রাতে অনেক কান্নাকাটির পর জীবনের সমস্ত গুনাহ থেকে তওবা করলাম,ওয়াদাবদ্ধ হলাম আর গুনাহে লিপ্ত হতে চাই না।আল্লাহ যেন আমাকে আমার নফসের উপর ছেড়ে না দেন,এই দোয়া করে মোনাজাত শেষ করলাম।আল্লাহ যেন কবুল করেন।আমিন।
কিছুদিন পর যখন ফিরলাম, হৃদয়ের জগতে কিছু অর্জন হলো কি হলো না বলতে পারি না,তবে আল্লাহর প্রতি ভালবাসা, আকুলতা ও ব্যাকুলতা যে বহুগুণ বেড়েছিল তা অনুভব করতে পেরেছিলাম।যাত্রার শুরুতে অন্তরের যে অবস্থা ছিল, মনে হল,তাতে কিছু পরিবর্তন এসেছে।অন্তর আরো শান্ত ও স্থির হয়েছে, হৃদয়ে কোমলতা স্পর্শ করেছে,অনুভব-অনুভূতি আরো গভীরতার স্বাদ আস্বাদন করেছে। হায়! আজও যদি সেই অনুভূতির ছিটেফোঁটাও অনুভব করতাম এ অভাগা অন্তরে!
○ কঠিনতম দিনগুলোঃ
শুরু হলো কঠিন পরীক্ষা।যে পরীক্ষা নিজের নফসের চাহিদার বিরুদ্ধে, নিজের মনচাহি জীবনের বিরুদ্ধে, প্রচলিত সমাজ আর কৃষ্টি কালচারের বিরুদ্ধে। জয়ী আমাকে হতে হবে, জয়ীরাই কেবল সু-সংবাদ পায় জান্নাতের অপার নাজ-নেয়ামতের। বাধা টাও প্রকট আকার ধারন করলো এখান থেকেই। বাসা থেকে বাধা,আত্নীয় স্বজন থেকে বাধা, সমবয়সী বন্ধুদের থেকে বাধা, মরুব্বি গোছের কিছু লোক থেকেও বাধা।এ যেন এক জীবনযুদ্ধ, দ্বীনি জজবার লড়াই, যে যুদ্ধের প্রতিপক্ষ রক্তের সম্পর্কেই বিদ্যমান থাকে।
জিন্স আর টি-শার্ট ক্রমে ক্রমে বাদ দিতে শুরু করলাম। মুখে দাড়ি রাখাও শুরু করলাম। এতেই সবচেয়ে করুন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে। "সব কিছু করো সমস্যা নাই, এই বয়সে দাড়ি নয়,দাড়ি রাখার বয়স হয়নি।" সবচেয়ে হাস্যকর উপহাস "বেটা, দাড়ি যে রেখেছো, বিয়ে সাদি করতে পারবে তো" শুনেছিলাম বয়োজ্যেষ্ঠ খুব কাছের ক'জনের থেকে।এক চিলতে হাসির রেখা টেনে নিশ্চুপ উত্তর জানিয়ে দিলাম।বুঝি না উনাদের মাথায় এ চেতনা কোথা থেকে এলো যে,দাড়ি রাখার বয়স হয় নি। বয়স যদি নাই বা হলো তাহলে মুখে দাড়ির রেখা পরিস্ফুটিত হবে কেন?
বন্ধু! যদি তুমিও দ্বীনের পথে অগ্রসর হও, দেখতে পাবে কিছু নামধারী ছদ্মবেশী সুশীল মুসলিম ই এসে তোমাকে বলবে "মোল্লার দৌড় তো মসজিদ পর্যন্ত!" তুমি দুঃখ করো না, নিরাশ হয়ো না।তুমি তো জানো, "আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।"[৫] তুমি বরং আলহামদুলিল্লাহ্ পড়ে শোকরিয়া আদায় করো। নরম ভাষায় হিকমাহ দিয়ে বলে দাও,"মসজিদের দৌড় তো সদুর জান্নাত পর্যন্ত। মোল্লাদের মন যদি মসজিদে লেগে থাকে তাহলে তো সেই মোল্লা হাশরের মাঠে আরশের ছায়ার নিচে থাকবে, আমি তো সেই মোল্লাই হতে চাই,তুমিও চাও।"
একে একে ফোন থেকে গান,মুভি ডিলিট করে দিলাম। প্রতিদিনকার রুটিন যেখানে অল্প হলেও গান শুনতাম, সেখানে সম্পুর্ন এই নেশা থেকে বের হয়ে আসলাম যখন শুনলাম গান শুনলে "অন্তরে মুনাফেকি সৃষ্টি হয়।"গানের বদলে এই স্থানে জায়গা দিলাম বিভিন্ন ইসলামি নাশিদ, প্রখ্যাত ক্বারীদের কুরআন তেলাওয়াত আর ইসলামি নাসিহা সম্বলিত বয়ান ও লেকচার। এ কাজটুকু একদিনে হয় নি, লেগেছে অনেকদিন,নিয়েছে অনেক সময়, ঝরিয়েছে অনেক অশ্রু তবে উপসম হয়েছে হৃদয়ের ব্যথা । অন্তরের ব্যাধির চিকিৎসা কত যে কঠিন!
এখানে একটি কাজ করতে একটু বেগ পেতে হয়েছে, সেটা হলো মাহরাম মেইন্টেইন করা আর বন্ধুত্বের সঙ্গ পরিবর্তন করা। বন্ধুদের সাথে হাসি-তামাশার পরিমান কমিয়ে দিলাম। কেউ কেউ বলল,"দু'দিনের মজুর,ভাতকে বলে অন্ন" সব হজম করলাম প্রতিউত্তর বিহীন। অল্পদিনেই দ্বীনি একটা সার্কেলের সাথে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলাম। রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে ক্রমশ বের হয়ে আসলাম। প্রেমালাপে মুখরিত উপন্যাস আর গল্প থেকে নিজেকে গুটিয়ে ইসলামি বইয়ে মন ফেরালাম। নিকোটিনের কালো জাল ছিন্ন করলাম। সুন্নতী জীবনের ছোয়া গায়ে মাখতে শুরু করলাম। আমৃত্যু লেগে থাকতে চাই এই সুন্নতী জীবনে....
○ শেষাংশ কথনঃ
সময়ের ভাবনাহীন পৈশাচিক নিষ্প্রাণ স্রোত সমুদ্রের
উত্তাল তরঙ্গস্রোতের নির্মম কাঠিন্যতায় পর্যবসিত বার্ধক্যের অনুভূতি-উপলব্ধি মানুষের ব্যক্তিত্ববোধ বাড়িয়ে তীক্ষ্ণ করতে প্রচন্ড কৃপণ। নফসের ক্রিয়ায় হয়ত ভেবে বসেছিলাম, বার্ধক্যজনিত সাদা চুলে বাহারি নকশার সৌভাগ্য আমার হবে! কিন্তু নিশ্চয়তা কোথায়? মাথায় আমাদের থাকে না যে, সময় ক্ষয়ে যায়, সময় গলে যায়, সময় হারিয়ে যায়। দেখতে দেখতেই এ যৌবনোত্তাপের হিংস্র থাবা অবনমিত হয়ে যাবে। তার আগে গুছিয়ে নিতে হবে কিছু পুঁজি,যতক্ষণ আছে দুনিয়ার রুজি।
প্রিয় পাঠক বন্ধু!তোমার দোয়ায় আমাকেও একটু শামিল রেখো, কবুলিয়াতের দরজা তো উন্মুক্ত, আমি যেন কড়া নাড়তে পারি আর আমার মুনিব যেন আমাকে গ্রহন করে নেন মাকবুল চাদরের ছায়ায়।আমিন।
[গল্পের কথক 'আমি' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, অনুমতি সাপেক্ষে তারই জীবনের কিছু টুকরো ঘটনা অবলম্বনে রচিত ]
তথ্যসুত্রঃ
[১] সুরা মু'মিন-৬০
[২] সুরা আনকাবুত-৪৫
[৩] সুরা আনফাল-৩০
[৪] তিরমিজি-২৪১৪
[৫] সুরা আনফাল-৪৬
....................................................
23.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
সে অনেক অনেক দিন আগের কথা।
যখন পড়তে শিখলাম কেবল। তখন থেকেই ইংলিশ লিটারেচারের প্রতি ভালোবাসা ছিল অসম্ভব, বেসম্ভব।
বাংলা মিডিয়ামের ছাত্রী আমি সবধরনের ইংরেজি গল্পের বই পড়া, ইংরেজি বলা পশ্চিমা বন্ধুবান্ধবদের সাথে মেশা, তেমন কালচার এডাপটেশনের চেষ্টা.. এসবের মধ্যে বড় হচ্ছিলাম।
ইংরেজি ছাড়া আর কোনো সাবজেক্ট ভালো লাগতো না, পড়তামও না, কাঁচাও ছিলাম অনেক।
ইচ্ছা ছিল, এডমিশন দিয়ে ইংলিশে পড়বো ভালো কোনো জায়গায়। আর সারাজীবন শুধু গল্পের বইই পড়বো।
আল্লাহ্ তা'আলা পূরণ করলেন স্বপ্ন।
আর প্রথম ক্লাসেই বুঝলাম আল্লাহ্ কোথা থেকে যেন আমার এত আধুনিক জীবনযাপনের মধ্যেও খানিকটা ইসলাম মনের কোনো এক কোণে রেখে দিয়েছিলেন।
হাজার বছর ধরে বা পদ্মা নদীর মাঝি-র সম্পর্কগুলো যেমন অসহ্য লাগতো, তার চেয়েও বেশি ঘৃণা আসতো যখন ছেলেমেয়ে এক ক্লাসে বসে সিলেবাসের কোনো কাল্পনিক মেয়ের আকর্ষণীয় শারীরিক বর্ণনা করা হতো।
ক্লাসে স্যাররা নিজেদের মত কবিতা, গল্প লিখতে দিতেন সবাইকে। আমার সমাজ, দেশ, সমস্যা, জন্ম মৃত্যু নিয়ে লিখা কেউ পছন্দ করতো না।
সবচেয়ে আলোচিত টপিক ছিল নারী পুরুষ প্রেম।
এমনকিছু ছিলনা যার উপমা নারীর সাথে করা হয়নি। অবশ্যই আমি ভালো উপমার কথা বলছি না।
তারপর একদিন ক্লাস নিতে এলেন এক ধবধবে সাদা দাড়িওয়ালা স্যার। তখনও আমি দাড়ি এত পছন্দ করতাম না কিন্ত স্যারকে দেখে মনে হতো, ভিনদেশীদের মধ্যে একজন আপন মানুষ পাওয়া গেল। স্যারের কথাই সম্ভবত আমার জীবনের একটা মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে একটা প্রচলিত কথা ছিল, “Be a bee to get a B.” মানে মাত্র বি গ্রেড পেতেও মৌমাছির মত পরিশ্রম করে পড়তে হবে।
স্যার বললেন, “Be a bee a to get a B. কিন্ত এই পরিশ্রমটা ইসলামে করলে? গোল্ডেন এ প্লাস!”
স্যার লিটারেচারকে কিভাবে কিভাবে যেন ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ইসলামেই নিয়ে আসতেন।
স্যারই বলেছিলেন, “আসলে সাহিত্যটা শখের বশেই পড়া উচিৎ ছিল শুধু, গল্পের মত। ক্যারিয়ার বানালে তুমি কিইবা করে যাবে জীবনে বলো। তোমার কবিতা কারো পেটে ভাত দিবে না, তোমার গল্পও কারো গায়ে জামা দিবে না। আমাকে বলার কেউ ছিল না, তোমাদেরও এখানে আসার আগে বলার কেউ ছিল না হয়ত। কিন্ত আল্লাহ্র সাথে দেখা হলে আমরা কি বলবো, কি রেখে গিয়েছিলাম আমরা?”
স্যার বললেন, “সাহিত্যের মানুষকে আল্লাহ্ কত শক্তি দিয়েছেন দেখো, নিজ থেকে এমনকিছু লিখ যা অন্য মানুষকে ভাবায়! এই শক্তিটা যদি হাতিয়ার বানানো যায় অন্যদের জীবনটাই বদলে দিতে?”
স্যারই প্রথম বলেছিলেন, “সবচেয়ে বড় লিটারেচার কোনটা জানো? আল কুরআন।”
অবাক হয়েছিলাম খুব। কিভাবে সম্ভব?
তারপর দেখলাম ক্লাস আর আগের মত ভালো লাগছে না। যে প্যাশন, ভালোবাসা নিয়ে পড়তে এসেছিলাম তা কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা। ভালোবাসার ডিপার্টমেন্টে অনেক খুঁত চোখে পড়তে লাগলো।
নামাজ পড়তাম না তেমন কিন্ত ক্লাসের সবখানে নারীমূর্তি আকা ছবি দেখে খারাপ লাগতো।
বোরখা পরতাম না কিন্ত মায়ের মত শিক্ষিকাদের অদ্ভুত উগ্র সাজগোজ দেখে অবাক লাগতো।
বন্ধু ছিল, কিন্ত অন্যদের মারামারিতে আমার গায়ে সামান্য ছোঁয়া লেগে গেলেও রিফ্লেক্সের মত চিল্লাচিল্লি করতাম।
মাত্র একমাসের মধ্যে ক্লাস আমার জন্য অসহ্য হয়ে গেল।
ওই সময়টা এত পাগলামির মত লাগছিলো এটা, তবুও মেনে নিতে পারছিলাম না। অনেকেই বলেছিল এটা একটা ঝোঁক মাত্র, কিছুদিন পরেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্ত ঠিক হচ্ছিল না।
স্যার বলতেন সাহিত্য দিয়ে ইসলামকে তুলে ধরার জন্য। আর, কখনওই ইসলামি সাহিত্য না পড়া আমি হতাশ হয়ে যেতাম। ক্লাস করতে পারলাম না। বাদ দিলাম। বাসায় অনেক ঝামেলা করে আবার নতুন করে শুরু করলাম এডমিশন কোচিং, কাঁচা সাবজেক্টের জন্য যেটা আসলেই অন্যদের সাহায্য করবে। কিছু করে রেখে যাওয়ার আশায়।
এই হলো, আমার ছোট্ট ভার্সিটি লাইফের ইসলামের অসংক্ষিপ্ত গল্প।
স্যারের সাথে আর কখনো দেখা হয়নি, তবে তার চেহারা মনে হলেও দু’আই আসে শুধু মন থেকে। আমি যেমন ভরা ক্লাসে একা ফিল করতাম, স্যারও এত বছর ধরে করে যাচ্ছেন হয়ত। তবে সেই একা সময়টায় সাথে ছিলেন শুধু আল্লাহ্, তিনি কি একাই আমাদের জন্য যথেষ্ট নন?
#ভার্সিটি_লাইফে_ইসলাম
.............................................
24.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#ভার্সিটি_লাইফে_ইসলাম
দেখবো তোমার দাড়ি কতোদিন থাকে!
আপাতত সেক্রিফাইস করো সামনে অনেক সুযোগ পাবা!
তোমারে তো ট্যাগ লাগিয়ে দিবে...!
ভার্সিটিতে চান্স পাওয়ার পর থেকে হলে আসার আগ পর্যন্ত এমন অনেক কথাই শুনেছি।কেউ হয়তো আশঙ্কায় বা কেউ সন্দেহের বশে ভালোবেসে অথবা অনিশ্চিত চ্যালেন্জের মতো করেই কথাগুলো বলেছিলো।
তবে এটা নিশ্চিত সবাই চেয়েছিলো আমি যেনো পরিবর্তন না হই,তারপরেও তাদের দেখা বাস্তবতা বা অভিজ্ঞতা সেসব কথা বলিয়েছে।
যদিও দ্বীনের জন্য চ্যালেন্জ নেওয়ার বা কষ্ট সহ্য করার নিয়াত ছিলো তারপরও শুরুর দিকে একটু ভয় পেতাম।
মনে বেজে উঠতো এই কোনো বড় ভাই বা নেতাগোছের ইয়ারমেট বলে ফেলে টাকনুর উপর প্যান্ট বা দাঁড়ির কথা!
হ্যা,একদম সিরিয়াসলি না হলেও নিয়মের বশে একথা শুনতে হতো,"এই---করোস নাতো?
প্রথম ছয় মাস যেনো ছয় বছর মনে হয়েছিলো!
একদিকে হলে থেকে এসব চাপ তারউপর সবার সাথে মানিয়ে নেওয়ার সাথে সাথে নিজেকে দ্বীনের উপর অটল রাখার সময়গুলো আজও চোখে ভেসে উঠে।
তবে শান্তি পেতাম হলের তাবলীগের বড় ভাইদের দেখে।কই দাঁড়ি,টুপি বা টাকনুর উপর প্যান্ট এরপর তেমন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়নি।
তবে সেসময় সবচেয়ে বড় চ্যালেন্জ ছিলো উপযুক্ত দ্বীনি বন্ধু খুঁজে বের করা।
ক্লাস,হল সবক্ষেত্রেই নিজের মনের মতো মানুষ খুঁজে বেড়াতাম।কারন,
রাসূল(সাঃ)বলেনঃ মানুষ তার বন্ধুর রীতি নীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে। [সুনান আবু দাউদ: ৪৯৩৩]
আলহামদুলিল্লাহ,আল্লাহ আমাকে নিরাশ করেননি।
আমি বিশ্বাস করি নিয়াত ঠিক থাকলে আল্লাহ আপনাকে নিরাশ করবেন না।
আমি পেয়েছি।সেইসব বন্ধুদের যারা আমার ঘনঘোর আঁধার দিনে আমার আলোর মশাল হয়ে সান্ত্বনা দেয়,আমার দ্বীনি বিষয়গুলোতে পরামর্শের ঝাঁপি খুলে বসে।
পা পিছলে পড়ে যেতে নিলে তারা হাত বাড়িয়ে আগলে রাখে।গুনাহের দিকে ধাবিত হলে আমরা একে অপরকে সাধ্যমত নাসিহত করি।কেউ হারামের দিকে উদ্যত হলে আমরা ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় বিভোর থাকি।
একদমও নিরস নই আমরা।খুনসুটি,বিনোদন,ঘুরাঘুরি আমরাও করি।
অন্যনরা যখন হারাম বিষয়ে আলোচনা করে,হারাম খাবারে একে অপরকে মজা হিসেবে উপস্থাপন করে,হারাম রিলেশনে সহায়তা করে তখন আমরা নিজেদের মতো করেই দ্বীনের মধ্যে থেকে আমাদের কাজগুলো করে নিতাম।
নিজেদের মধ্যেই প্রেজেন্টেশন বা রিপোর্ট করার গ্রুপ বানিয়ে নিয়েছি।
বিভিন্ন গ্রুপে ছেলেমেয়ে একসাথে থাকলেও আমাদের গ্রুপটা শুধুই ছেলেদের।
একবার স্যার আমাদের দশজন ছেলেকে এক গ্রুপে থাকার দরুন মজা করে বলেই ফেলেছিলো,"তোমরা কি নারীবিদ্বেষী নাকি"?
আমরা কিছুই বলতে পারিনি।মাথা নাড়াচ্ছিলাম আর মনে মনে ভাবছিলাম,"না স্যার,আমরাই বরং নারীদের উপযুক্ত মর্যাদা দিতে চাইছি"।
বন্ধুদের সাথে পরামর্শ করে ইসলামিক বই আদান-প্রদানের জন্য পরিচতদের মধ্যে গ্রুপ করেছি(লাইব্রেরি)।অনলাইনে যোগাযোগ হলেও অফলাইনেই বই দেই।বইগুলো নিজেদের কেনা।এতে যার কাছে যে বই নেই সেও সেই বই পড়তে পারে।এমনকি যারা ইসলামিক বই পড়তে উৎসাহি নয় তাদেরকে বই নিতে আমরা উৎসাহিত করি।
মজার ব্যাপার হলো ছাত্রাবস্থায় বিবাহিতদের জন্য বই উপহারের ব্যাবস্থা করেছি।
লকডাউনে আলোচনা করে ঠিক করেছি নিজেদের মধ্যে "কর্জে হাসানা" প্রজেক্ট চালু করবো ইনশাআল্লাহ।
সত্যি আমার গল্প অনেকটা বন্ধুকেন্দ্রীক হয়ে গেলো!
তারচেয়ে বড় সত্যি হলো নতুন পরিবেশে আপনি এমন বন্ধু ছাড়া টিকে থাকতে পারবেন না।
রাসূল(সাঃ) বলেন,
"কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘আমার মর্যাদার (আনুগত্যের) কারণে পরস্পরের বন্ধুত্বকারীরা কোথায়? আজ আমি তাদেরকে আমার ছায়া তলে আশ্রয় দেব। যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না।" (মুসলিম)
মরীচিকাময় দুনিয়ায় হারামের হাতছানির মাঝে এটা বড় প্রাপ্তি।
রাসূল সাঃ বলেন,যে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে (কাউকে) ভালবাসে এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে দান করে কিংবা না করে, সে তার ঈমান পূর্ণ করে নিল।’ [আবু দাউদ]
সবশেষে একটা বিষয়ে কথা বলা প্রয়োজন মনে করছি।দুঃখজনকভাবে ইসলামের মধ্যে দলাদলি হচ্ছে।বন্ধুত্ব করার সময় কি আপনি এরকম দল দেখে বন্ধুত্ব করবেন?
এর উত্তরে আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যারের একটি কথা মনে পড়ছে।তিনি বলেছিলেনঃ
"মানুষের বিচার দল দিয়ে নয়,আমল দিয়ে।যার দ্বীন যত বেশি তাকে তত বেশি ভালোবাসতে হবে।"
নির্দলীয় ইসলামেই আমি আমার ভার্সিটি লাইফ এবং বাকি সময়গুলো কাটাতে চাই।আল্লাহ আমাদের সেই তাউফিক দিন।।
|ভার্সিটি লাইফে ইসলাম |
Md Ehsanuddin Jweel
...........................................
25.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
টপিক:ভার্সিটি লাইফে ইসলাম
জীবনে সবাই স্বাধীন থাকতে চাই,কিন্তু এই স্বাধীনতা মানে কি অশ্লীলতা, বেহায়াপনার ছড়াছড়ি?অনেকেই মনে করে ঘর থেকে বের হতে পারলেই বোধহয় স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করা যায়।যেখানে সবাই মাই লাইফ, মাই রুলস এ চলাফেরা করতে পারবে।আসলে লাগামহীন ঘোড়ার মতো চললে কি জীবনের প্রকৃত সুখ আস্বাদন করা যায়?
গ্রামীণ পরিবেশে বড়ই সাধারণ ঘরের মেয়ে আমি। ছোটবেলা থেকেই অনেক লাজুক প্রকৃতির ছিলাম।এস এস সির পরে যখন ঘরের বাইরে বের হয়েছিলাম হাইয়ার স্টাডির জন্য,,আমার আব্বা আমাকে একটা কথাই বলেছিলেন,"শোন,যদি কখনো তোমাকে কেউ মারে,আমি কিন্তু কখনো জিজ্ঞাসা করবো না কেনো মারলো,বরং তোমাকে আমি আরেকটা থাপ্পড় দিবো।"
তার এই কথাটা আজও মাথায় রেখে চলাফেরা করার চেষ্টা করি।
কলেজে হোস্টেলে ছিলাম।তাই বাইরে বেরোনোর প্রয়োজন হলেই বোরকা পড়তাম,কিন্তু তার পেছনে ধর্মের উদ্দেশ্য ছিলো না।এব্যাপারে যথেষ্ট উদাসীন ছিলামও বটে।মহিলা কলেজ হওয়ার সুবাদে কোনো ছেলের প্রভাব পড়িনি তখনো।বোরকা পরতাম শুধুমাত্র লজ্জা নিবারণের জন্য।নামায কালাম পড়তাম ঠিকই, কিন্তু ইমান ছিলো ঘূণেধরা।
এডমিশন কোচিং থেকেই নিকাব পরে চলাফেরা করতাম।যেহেতু আগের থেকে কোনো ছেলের প্রভাব ছিলো না,তাই নিজের থেকে কোনো ছেলের সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে হতো না।মাথায় আগের থেকে ঢোকানো হয়েছে ভার্সিটিতে চান্স পেতেই হবে,যেহেতু সাধারণ পরিবারের ছিলাম। এভাবেই এডমিশন কোচিং এর সময় পার করে স্বপ্নের ভার্সিটিতে চান্স পাই।
ভার্সিটিতে প্রথম ক্লাস থেকেই বোরকা, নিকাব পরেই চলাফেরা করেছি।প্রথম দিনই ক্লাসে ঢুকতে লেইট হওয়ার কারণে প্রথম সারিতে বসতে হয়েছিলো।ক্লাস করার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত ধারণা ছিলো না একটুখানি পরে কোন পরিস্হিতির মুখোমুখি হতে হবে আমাকে।
ম্যাম ক্লাস থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরপরই কয়েকজন সিনিয়র ঢুকে যা বলেছিলো,তা শোনার জন্য আমি ভীষণ অপ্রস্তুত ছিলাম।তারা সবাইকে বলেছিল,"ভার্সিটিতে ছেলেমেয়েদের কোনো ভেদাভেদ নেই,তোমরা ছেলেমেয়ে একসাথে পাশাপাশি বসবে,আড্ডা দিবে, ঘোরাফেরা করবে তাহলে মন অনেক বড় হবে।এভাবে চলাফেরা করলে তোমরা অনেক বড় মনের মানুষ হতে পারবে।"
কথাগুলো শুনে আমি বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলাম।নতুন জায়গা,নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ সবমিলিয়ে একটা ভয় কাজ করতো।এই অবস্হায় সিনিয়রদের ডেইলি বলা কথাগুলোর একদিন জবাব দিয়েই ফেললাম।বলে রাখা ভালো আমার ক্লাসের ১২ জন মেয়ের মধ্য আমরা দুইটা মেয়ে নিকাব পরতাম সুতরাং অন্যদের এবিষয়ে কোনো মাথাব্যথাই ছিলো না।
আমি বলেছিলাম,ভাইয়া-
আমি ছেলেদের পাশে বসে,তাদের সাথে ফ্রি মাইন্ডের চলাফেরা করে,আড্ডা দেওয়া আমার দ্বারা সম্ভব না। আমার কাছে বিষয়গুলো খুবই অস্বাভাবিক।আমি এমনটা আগে কখনো করিনি।
আমার এমন গেয়ো টাইপের কথা শুনে এক সিনিয়র বলেছিলো যেহেতু তুমি আগে কখনো ভার্সিটিতে পড়নি,এখন পড়ছো,এখন থেকেই এগুলো মানতে হবে।
ঘুণেধরা ইমান হলেও আমি মন থেকে তাদের কথা কখনো মানতে পারতাম না।অনেক কান্না পেতো,নামাযে বলতাম, ও আল্লাহ আমায় কোথায় পাঠালে তুমি!খুবই কষ্ট পেতাম।
চোখের সামনে সবার ফ্রিমিক্সিং দেখেও ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই চলেছি।
এজন্য আমাকে অবশ্য অনেক উপাধি পেতে হয়েছে,যেমন:ব্যাকডেটেড,নানি,দাদি,খালাম্না,চাচি,জঙ্গি এবং আলিফ লায়লা এর মতো উপাধি।মনে মনে শুধু ভাবতাম,বোরকা পরে, নিকাব পরে কিভাবে আমি ফ্রি মিক্সিং চলাফেরা করি!
সময় এভাবে চলতে লাগলেও,ওয়াল্লাহি!সামনে আরো কতটা জটিল পরিস্হির মুখোমুখি হতে হবে ভাবতেও পারিনি।আসলো নবীনবরণ!ভার্সিটে নবীনবরণ নাকি সারাজীবন স্মৃতি হয়ে থাকে,সত্যিই তেমনই হয়েছিলো।যেহেতু ক্লাসের কোন মেয়েই প্রাক্টিসিং মুসলিম ছিলো না,সুতরাং তাদের সঙ্গদোষে, আর সিনিয়রদের বাধ্যবাধগতায় ঐদিন সব মেয়েকে শাড়ি পরতে হয়েছিলো।যেহেতু অনেক ভীতু ছিলাম,র্যাগ খাওয়ার ভয়ে বান্ধবীরা বলতো একদিন শাড়ি পরলে কিবা এমন হবে?আমরাতো এমন দিন আর পাবোনা,তুই হিজাবসহ শাড়ি পরিস কেমন!তাদের এরকম মিষ্টি কথায় ভিজে গিয়ে আমিও শাড়ি পরেছিলাম সেদিন,আস্তাগফিরুল্লাহ!যার কুফল আজও বয়ে বেড়াচ্ছি।
ক্লাসে স্যারেরা মুখ খুলতে বাধ্য না করলেও ভাইভার সময় একপ্রকারেরর জোরাজুরির সম্মুখীন হতে হতো।স্যার বলতো, জব করার সময় তো তোমাদের মুখ খুলতে হবে,তো এখন থেকেই নিজেকে প্রেজেন্ট করার অভ্যাস গড়ে তোলো।
যেহেতু ভঙ্গুর ইমান নিয়ে কোনোকিছু নিজের ইচ্ছায় করতে না চাইলেও একপর্যায়ে সবকিছু মেনে নিতে হতো।কিন্তু ইসলাম কি বলেছে,এবিষয়ে খুব স্ট্রংলি মেনে নিতাম না।
পরিবেশের প্রভাবে, ভীত থাকার কারণে,সঙ্গদোষে,ভঙ্গুর ইমান নিয়ে নিজে না চাইলেও বিভাগীয় ট্যুর,জন্মদিন সেলিব্রেশন,বিভাগীয় খেলা দেখা সহ অনেককিছু করতে হতো।এভাবে সকল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে।
তারপর হয়তো আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালা চেয়েছেন বলে,সঠিক হেদায়েত এর স্বাদ
পাওয়ানোর জন্য ফেসবুকের ইমান জাগানিয়া কিছু পেজ আর গ্রুপে যুক্ত হয়।এমনকি ইমানের উজ্জল রশ্মির মতো দীপ্তমাখা কিছু আপুর সন্ধ্যান পায়।যারা সকল পরিস্হিতে কিভাবে নিজেকে মোকাবেলা করেছেন, আর এটাই নিজের ভেতর প্রতিফলনের চেষ্টা করি।
আলহামদুলিল্লাহ্, মহান আল্লাহ সবকিছু সহজ করে দিয়েছেন।যদিও এখনো ভীষণ অঙ্গ,গাফেলই আছি, পরিপূর্ণ ইমানদারের ধারের কাছে যেতে পারিনি কিন্তু আগের মতো অতো ভীতু,ঘুণেধরা ইমান আর নেই।সুবহানআল্লাহ! আল্লাহু আকবার।
আর পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটাও বারবার মনে পড়ে,"হে আমার রব!আমি তোমাকে ডেকে কখনো নিরাশ হয়নি।"
সূরা মারইয়াম:৪
.................................
26.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#ভার্সিটি_লাইফে_ইসলাম
ছোট থেকেই পড়ালেখায় খুব মনযোগী ছিলাম। নামজসহ ইসলামী আদব ইবাদাত শিখেছি মায়ের কাছে। জায়নামাজে মা নামাজে দাঁড়ালে আমিও দাঁড়াইতাম মা মুনাজাতে কান্না করলে আমিও করতাম। যদিও বুঝতাম না কেন কাঁদতেছি!
বাবা অনেক বেশিই আদর করতেন। তবে লেখাপড়ার পিছনে খরচ করতে হয় এই কথাটা মানতে নিতান্তই নারাজ তিনি(এখন সেরকমটা নেই)। তাই টিফিনের টাকা জমিয়ে পরিক্ষার খাতা কেনাসহ পড়ালেখার অন্যান্য জায়গায় খরচ করতাম। পড়ালেখায় মনযোগী হওয়ায় মেধাবীদের কাতারেই নাম থাকতো সর্বদা।
ধর্মের ব্যাপারে সবসময়ই খুব মনযোগী ছিলাম। তৃতীয় শ্রেণিতে থাকতেই রমজানের ৩০ টা রোজা রাখা শুরু করে দেই। মসজিদ এবং ইমাম সাহেবের সাথে সম্পর্ক টা খুবই গভীর ছিলো। পাঁচ ওয়াক্ত নামজ জামাতে পড়ার জন্য প্রতিযোগিতা টা আমার ইমাম সাহেবের সাথেই ছিলো।
এভাবেই প্রাথমিক শিক্ষা জীবন কাটে আমার। ২০০৫ সালে বৃত্তি পরিক্ষা দিয়ে ট্যালেন্ট পুলে বৃত্তি পাই।
একদিন মসজিদে চাচাতো ভাই (তখন মাদরাসায় পড়তো) ঈমান ও আমলের বয়ান শুনালো। ঐদিনের কোনো কথাই আমার মনে নেই। তবে হলফ করে বলতে পারবো ঐদিন আমার মনের ভিতর আল্লাহ্ যেই নূর ঢেলে দিয়েছিলো সেই নূরের জন্য আজও আমি আল্লাহ্ পাকের রাস্তায় অটল।
জেদ ধরলাম মাদরাসায় পড়বো। হাফেজ হবো। বড় আলেম হবো। বাসা থেকে বাবা ভাইয়া কেউই মানতে নারাজ আমার জেদ। একদিন ভাইয়া কথায় কথায় বলে ফেললো মাদরাসায় পাতলা ডাল আর আলু ভর্তা ছাড়া আর কোনো খাবার নাই। আল্লাহ্ স্বাক্ষী সেদিনের পর থেকে আজও আলু ভর্তা ডাল আমার প্রিয় খাবার(মাদরাসায় যথেষ্ট ভালো খেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ)। ভাইয়ার বলা দেরি, ঘরে আমার খাওয়ার রুটিন বদলাতে দেরি হয়নি। সেই বেলা থেকেই টানা এক সপ্তাহ আলু ভর্তা ডাল ছাড়া আর কোনো তরকারি তে হাত দেইনি। আমার জেদের সাথে না পেড়ে বাবা মাদরাসায় দিতে বাধ্য হলো আলহামদুলিল্লাহ।
২০১০ সালে পাগড়ি নেই আল্লামা ইমরান মাজহারী(তখন লালবাগ শাহী মসজিদের খতিব ছিলেন) হুজুরের হাত থেকে। সেই বছরই সর্বকনিষ্ঠ হাফেজ হিসেবে এলাকার উপজেলা কেন্দ্রীয় থানা জামে মসজিদে নামাজ পড়াই।
তারপর শুরু হয় বাবার পালা। আমাকে আর ক্বওমিতে পড়াবেন না। কোনোভাবেই না। ভর্তি করালো ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসায় (আলিয়া) অষ্টম শ্রেণিতে ২০১২(২০১১ এর অর্ধেক শুনানি তে চলে যায়)।
সেখানেও ভালোই কাটে এক বছর। লেবাসে কোনো পরিবর্তন আসেনি তখনো। তারপর ৯-১০ এলাকার স্কুলে(বয়েজ স্কুল)। সেখানেও আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালোভাবেই লেবাস ধরে রাখতে পেরেছি(লেখাপড়ার কোনো খরচ ওখানে দিতে হয়নি)। ২০১০-১৬ (৭ বছর কেন্দ্রীয় মসজিদেই নামাজ পড়াই)।
তারপর কলেজ লাইফটা কাটে দুঃস্বপ্নের মতো। ছেলে মেয়ে একসাথে। ছোটো থেকেই মেয়েদের থেকে দূরে থাকতাম। ক্লাস-১০ পর্যন্ত মেয়েদের সাথে কথা বলার কোনো সুযোগই বের করিনি। কলেজেও কোনোদিন কোনো মেয়ের সাথে গিয়ে কথা বলিনি। দুই বছরে কলেজের সবথেকে ভদ্র ছাত্রের উপাদিটাও আমার গায়ে লাগানো হলো। একদিন বাংলা ম্যাম মাথায় টুপি পরে ক্লাস করার কারণে ভালোই অপমান করেছিলেন। সেদিন ক্লাসের সবাই ম্যাম এর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়েছিলো। আমিও মনে কষ্ট পেয়েছিলাম(আল্লাহুম্মাগফিরলি)। তবুও হাল ছাড়িনি। ক্যান্টনমেন্টের একটা কলেজে মসজিদ ছিলো না! আলহামদুলিল্লাহ আমরা আবেদন করে সেখানে মসজিদ চালু করে দিয়ে এসেছি।
স্কুল জীবনে ফিরে আসার পর থেকেই ডাক্তার হওয়ার অধীর এক মনোবাসনা সর্বদা কাজ করতো। ফার্স্ট টাইম মেডিক্যাল এ না হওয়ায় অন্য কোনো ভার্সিটিতে পরিক্ষা দেইনি। সেকেন্ড টাইমের জন্য ভালোভাবে লেগে পড়ালেখা শুরু করলাম। মেডিক্যাল এর দুইদিন আগে জাবির ডি ইউনিটের পরিক্ষা ছিলো। প্রস্তুতি কেমন জানার জন্য পরিক্ষা দিলাম। ভাগ্যের লিখন যা তাই হয়। ২৫ মিনিটের সেই পরিক্ষা দিয়ে আমি টিকে যাই জাবিতে। আর এক ঘন্টা বসে পরিক্ষা দিয়ে সেকেন্ড টাইমেও চান্স হয়নি মেডিক্যাল এ। সেবার রাবিতেও চান্স আসে। কিছু না ভেবেই জাবিতে ভর্তি হয়ে যাই। শুরু হয় জীবনের অন্যতম এক আধ্যাত্মিক অধ্যায়।
কালের বিবর্তনে সবার মন জয় করার এক বিশাল প্রজেক্ট(মনে মনে) নিয়ে বোধ হয় ঢুকেছিলাম ভার্সিটি জীবনে। সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে এসে নিজেকে যেন হারিয়ে না ফেলি সেই ভয়ে কাতর থাকতাম সর্বদা(এখনো আছে সেই ভয়)। তাবলীগ এর ভাইদের সাথে বরাবরই মধুর সম্পর্ক আমার (হয়তো তাঁদের জন্যই এখনো হারিয়ে যাইনি আলহামদুলিল্লাহ)। ঢাকায় টিউশনি করানোর জন্য তাঁদের সাথে যোগাযোগ অনেকটাই বিচ্ছিন্ন ছিলো। ঐদিকে বন্ধুদের মন রক্ষা করতে গিয়ে বারংবার মুফতি সাহেবের শরণাপন্ন হতে হতো(আমার মামা মুফতি সাহেব, এক মাদরাসার মুহতামিম)। পরিচয়পর্বে যেসব ভাই/আপুরা ধর্মবিরোধী কথা বা অযথা বিনাদোষে কারো উপর চড়া হয়ে যেতেন(আমাকে কোনোদিনও কেউ একটা কটু কথা বলেনি) তাঁদেরকে এখনো মন থেকে ভালোবাসতে পারিনি(চেষ্টা এবং আল্লাহ্ পাকের কাছে দোয়া করছি) । সব মিলিয়ে প্রথম বর্ষে সবার মন রক্ষা করতে গিয়ে আমি নিজের অবস্থান থেকে অনেক নিচে চলে গেছি সহজেই উপলব্ধি করতে পারি (আল্লাহুম্মাগফিরলি)। হয়তো কোনো বন্ধু মনে কষ্ট পেয়ে আমার অগোচরে আমাকে বকাও দিতে পারে এতটাই অধঃপতন হয়েছে আমার। ২০১৭-১৮ এডমিশন এর জন্য তারাবী পড়ানো হয়নি। তবে ১৯ এ আবার পড়াই। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবো আল্লাহ্ আমাকে যা দিয়েছেন বাকি জীবন সেজদায় পরে শুকরিয়ার মাঝে কাটিয়ে দিলেও খুব কম হয়ে যাবে।
অতঃপর সকলের কাছে দোয়া চাই। আল্লাহ্ আমাকে যেই নূর দান করেছেন তাঁর আর বিন্দুমাত্র অসম্মানী হতে দিতে আমি নারাজ ইন্~শা~আল্লাহ্। আর একটা কদমও পথভ্রষ্টতার পানে ফেলতে চাইনা ইন্~শা~আল্লাহ্।
লেখকঃ মুহাম্মাদ নাজমুল ইসলাম
......................................
27.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
⬜◽ভার্সিটি লাইফে ইসলাম-
আমরা সবাই ভুল করি। এর মধ্যে সবচেয়ে ভালো আল্লাহ তালা ই বলেছেন যারা তাওবাহ করে।
আদম সন্তান আমরা ভুল করব তবে বেসিক কিছু জিনিস আমাদের মেনে চলা উচিত যাতে আমরা পরকালীন পরিক্ষায় আমরা পাস করতে পারি।
ইহকালীন যে কোন এক্সামে পাস যেমন আমরা কিছু নিয়ম সবাই ফলো করি তেমন ই,উদাহরণ হিসেবে আজকের এই প্রতোযোগীতার কথাই বলা যেতে পারে।এটি উতরানো জন্য কিছু বেসিক নীতিমালাআমাদের ফলো করতে হচ্ছে নয়তো আমরা ডিসকলিফাই।
সমস্যা অনেক এখন কিছু সমাধানও নিয়ে কথা কলা যাক...
*ভার্সিটি তে যে ৩টি কাজ সবার জন্য পালনীয় -
১। নামাজ পড়া
-সময় মতো
-তারতিলের সাথে
-সুন্দর ভাবে
২।জিনা থেকে দুরে থাকা
৩।মাদক থেকে দুরে থাকা
এ ৩টি যথাযথ ভাবে এই ভার্সিটি লাইফে পালন করলে আশা কারা যায় আল্লাহ আমাদের অন্য ছোট পাপ থেকে মুক্তি দিবেন এবং এগুলো মেইনটেন করলে অন্য পাপ থেকেও দুরে থাকা যাবে সর্বপরি আশা করা যায় এমতাবস্থায় আমরা মৃত্যুবরণ করলে আল্লাহ আমাদের পাশ করিয়ে দেবে।
আমিন।❤
...........................................
28.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা২০২০
# ভার্সিটি লাইফে ইসলাম
সে এসেছিল স্বপের আড়ালে এক চিলতে সূর্যের হাসি হয়ে....
জনমানবশূন্য উত্ত্যপ্ত মরুভূমিতে পথহারা কোনো পথিকের কাছে হয়ত পানির সন্ধান পাওয়াটাই স্বপ্ন, সফলতা। এই স্বপ্নের সন্ধানে সে পাড়ি যমাতে থাকে মাইলের পর মাইল। হঠাৎ দূরে দেখতে পায় মরিচীকা। মরিচীকাকেই তখন কাঙক্ষিত স্বপ্ন ভেবে ছুটতে থাকে তার পিছু পিছু। এই মরিচীকা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেই যে সে সার্থক! এই স্বপ্নের সন্ধানেই পার হয়ে যায় কত বিনিদ্র রজনী। ক্লান্ত, শ্রান্ত দেহটা যে আর চলতে চায় না! তবুও থামা যাবে না। স্বপ্নের দেখা যে পেতেই হবে! স্বপ্নের দেখা পাওয়ার জন্য প্রভুর দরবারে কত ফরিয়াদ! কত পছন্দের বস্তু কোরবানি করা! অবশেষে পেয়ে গেছি সপ্নের দেখা। পেয়ে গেছি পরম কাঙক্ষিত বস্তু।পেয়ে গেছি আমি ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ। প্রভু তাঁর কথা রেখেছেন। মন থেকে কিছু চাইলে প্রভু খালি হাতে ফেরান না, এই অধম বান্দাকেও তিনি ফিরিয়ে দেন নি।
কিন্তু এই সুযোগেই কি আমার আসল স্বপ্ন? এই সুযোগই কি আমার সফলতা? অবশেষে বুঝতে পারলাম, ছুটেছি আমি মরিচীকার পেছনে। যাকে সফলতা ভেবে নিজের চাওয়া পাওয়ার বস্তু কোরবানি করলাম সেতো ছিল মরিচীকা।
মরিচীকার পেছনে ছুটতে ছুটতে কখনো বাস্তবিকই পানির সন্ধান পেতে শুনেছেন? বলবেন এটাও আবার সম্ভব নাকি? বলব, সম্ভব। যদি সেটা হয় আপনার, আমার মালিকের পরিকল্পনা। হয়ত সেই ছোট ছোট কোরবানিগুলোই পছন্দ হয়েছিল প্রভুর। তাইতো সন্ধান দিলেন মহাসফলতার।
" জান্নাত, যার তলদেশ ঝর্ণা ধারা প্রবাহিত। আর এটাই মহাসফলতা। "
তোমার কাছে চেয়ে কিছু পাইনি, এমনটি হয়নি কভু। ২০ টি বছর আমার কাছে চেয়ে পাও নি কোনো কিছু। না চাইতেই দিলে আমায় হেদায়েতের বর্ষায় ভিজিয়ে। এই বর্ষার কি যোগ্য আমি?
আয়েশাঃ মারিয়া, এই মারিয়া। কতক্ষন ধরে ডাকছি, কোথায় হারিয়ে গেলি?
মারিয়াঃ কত সময় না পার হয়ে গেল জীবন থেকে আয়েশা। কতটা পরিবর্তন আজ আমার। এই আমিই যে তাহাজ্জুদে ঘন্টার পর ঘন্টা নিজের অতীতের জন্য অনুতপ্ত হয়ে পার করে দিতাম। ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দিতাম প্রভুর দরবারে চোখের জল ফেলে।সেই আমিই আজ তাহাজ্জুদ থেকে কত দূরে। এখনতো ফরজ টাও মাঝে, মাঝে কাযা হয়ে যায়!
আয়েশাঃ তুই চিন্তা করিস না। দেখ, বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। রহমতের ফোঁটা ঝরছে। এই সময়তো দোয়া কবুলের সময়। তুই দোয়া কর। ইনঁশা আল্লাহ, তোর মালিক এবারও তোকে ফিরিয়ে দেবেন না।
মারিয়াঃ (মনে মনে) হে আমার মালিক, আর একটিবার হেদায়েতের বর্ষায় ভিজতে চাই। আর একটিবার তোমার সাথে পথ চলতে চাই। আর একটিবার আমায় আগলে রাখ,যেমনটি রাখতে হেদায়েতের শুরুতে। প্রতিটি মুহূর্তে যেমন অনুভব করাতে, তুমি আমার সাথেই আছো, ঠিক সেই অনুভূতিটাই আর একটিবার দাও। হে প্রভু, আর একটিবার মন থেকে বলতে চাই,
" তোমায় সবকিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসি আমার মালিক।"
..............................................
29.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
পোস্ট টপিকঃ
#ভার্সিটি _লাইফে_ইসলাম
|| ইসলাম ইন মাই ইউনিভার্সিটি লাইফ ||
রুবিনা আক্তার
"তুই তো ভার্সিটিতে গিয়ে পুরাই আল্ট্রা মডার্ন হয়ে যাবি"
খুব কাছের এক আত্মীয়’র মুখে এ কথা শুনে আমার ইউনিভার্সিটি লাইফ শুরু হয়।
ছোটবেলা থেকেই কিছুটা ধার্মিক টাইপের মেয়ে ছিলাম। তবে ধার্মিকতা সালাত, সিয়াম, শালীন ড্রেসআপ, বোরখা, স্কার্ফেই সীমাবদ্ধ ছিলো। সাথে ছিল মুভি, নাটক দেখা, গান শুনা, খোলা মাইন্ডে ফ্রি মিক্সিং। মডার্ন মুসলিম আর কি!
যাই হোক, আল্লাহ তা’আলার অপার করুনা ছিল আমার প্রতি যার কারণে ক্যাম্পাসে প্রথম দিনেই ফুল পর্দায় আবৃত এক বোনকে দেখে নিজে নিজেই বেস্ট সিদ্ধান্তটা নিয়ে নেই। “মেয়েটা পর্দা করতে পারলে আমি কেন পারবোনা?" কী এক ভীষণ মুগ্ধতায় চোখটা যেনো ছুঁয়ে গিয়েছিল সেসময়!
হয়তো ছোট বেলা থেকেই নিজের শালীনতা নিয়ে খুতখুতে থাকার কারণে, আর এ আপাদমস্তক ঢাকার চেয়ে অন্য কিছু আর বেস্ট মনে হয়নি।
আমার জন্য আরো প্লাস পয়েন্ট ছিল মেয়েটা আমারই ব্যাচমেট ইভেন একই হলে সীট পরেছিলো। সব মিলিয়ে প্রথম থেকেই ছোটখাট দ্বীনি পরিবেশ পেয়ে যাই। আলহামদুলিল্লাহ।
যেহেতু এক প্রকার শখের বসেই পর্দা করা,তাই কেন পর্দা করছি, কুরআনে কিছু বলা আছে কি-না, কীভাবে এর সাথে বাকি সব কিছু মেইনটেইন করতে হবে কিছুই জানতাম না। ইসলাম নিয়ে কোন পড়াশুনা ছিল না, আবার ইসলাম নিয়ে কোন পড়াশুনা করতে হয় এটাও কল্পনার বাইরে ছিল। টুকটাক যা জানতাম তা মা’র থেকে শেখা ছিলো। তাই ইল্ম ছিল একদম শূণ্যের কোঠায়। আল্লাহকেও চেনার মতো চিনতাম না, ইসলাম প্রাকটিস করা তো দূরেই থাক! অন্যদিকে মাহরাম, নন-মাহরাম কী এই শব্দটাই আমার কাছে অপরিচিত ছিল।
জেনেছি অনেক পরে। দ্যাটস হোয়াই প্রথম দিকে নন মাহরাম মেইনটেইন করাও হতো না ভালো করে। শুধু আনইজি ফিলের কারণে ছেলেদের সাথে মিশতাম না। তবে ক্লাসমেট, পরিচিতদের সাথে টুকটাক কথা হতো। মোটকথা সব মিলিয়ে ঈমান একদম নড়বড়ে আর বিতিকিচ্ছিরি ছিল।
বাট এই কালো ড্রেসআপের কারণে কোন কনসার্টে, ক্যাম্পাসে যত্রতত্র ঘুরতে প্রচুর লজ্জা লাগতো। তবে ফুল পর্দা করার কারণে পুরা ক্যাম্পাসে পদচারনাও আমার জন্য সহজ হয়ে যায়। আর সবচেয়ে ব্লেসিং ছিলো যে, আল্লাহ আমাকে এই ড্রেসআপের ফলেই পরবর্তীতে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ফিতনা থেকে হিফাযত করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ। ..........
ফার্স্ট ইয়ার,সেকেন্ড ইয়ার এভাবেই কেটে যায়। মাঝখানে শুধু ক্যাম্পাসের তালিমে যাওয়া হতো টুকটাক। মেইন দ্বীন শেখার শুরু হয় সেকেন্ড ইয়ার শেষের দিকে ২০১৮ সাল থেকে মেবি। আর এর মাধ্যম হয় ফেইসবুক। কীভাবে যেন নাসিহা নামক এক গ্রুপের সাথে এড হয়ে যাই। এখান থেকেই শুরু হয় বাকি পথচলা। এ গ্রুপে ফেইসবুকে আর বিভিন্ন দ্বীনি গ্রুপের লিংক দেওয়া একটা পোস্ট পেয়েছিলাম।
একে একে সব গ্রুপ, পেইজ এ জয়েন করা শুরু করলাম। পাঠ্যাভ্যাস গ্রুপেও কীভাবে যেন জয়েন হয়ে যাই। যেখান থেকে বিভিন্ন বইয়ের সন্ধান পাই আর আমার ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা শুরু হয়। সাথে অনেক শায়েখদের ও খোঁজ পাই। তাদের লেকচারগুলোও টুকটাক শোনা শুরু করি। এভাবে আমার দ্বীন শেখার সার্কেল তৈরি হয়ে যায়। ফেইসবুক হয়ে যায় দ্বীন শেখার ছোটখাট একটা প্লাটফর্ম। পরবর্তীতে অবশ্য ফেইসবুক থেকেই কিছু দ্বীনি বোনের কাছ থেকে উস্তাজার খোঁজ পেয়ে একাডেমিক্যালি স্ট্যাডি শুরু হয়।
•
ছোটবেলা থেকেই সবার মনে স্বপ্ন থাকে বড় হয়ে আমি বুয়েটে, ঢাবি, মেডিকেল এ পড়তে চাই। আল্লাহ’র রহমতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে কেউ কেউ তাদের স্বপ্নের জায়গায় পড়ার সুযোগও পেয়ে যায়। শুরু হয় নতুন পথচলা। এই প্রথম বাবা মা’র অনুশাসন ছেড়ে উন্মুক্ত পরিবেশে নিজেকে আবিষ্কার করা। নতুন এক জগত, অফুরন্ত স্বাধীনতা। যাকে ঘিরে থাকে আমাদের সব রঙ্গীন স্বপ্নগুলো। যে পরিবেশে এসে কেউ চাইলে খুব ভালো একজন মানুষ হতে পারবেন, মেধার পূর্ন বিকাশ ঘটাতে পারবেন আবার কেউ চাইলে খুব খারাপ মানুষদের মধ্যে একজন হতে পারবেন।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে ইসলাম পালনের ক্ষেত্রে পুরো ক্যাম্পাসটাই আমাদের প্রতিকূলে। চারপাশে ফিত্নার ছড়াছড়ি। ইসলাম থেকে দূরে থাকার সব কিছুই এভেইলেবেল। ঈমান হরণের অসংখ্য উপকরণেও ক্যাম্পাস ভরপুর। যেকোন সময় আমাদের ঈমান ফল করতে পারে। সবমিলিয়ে ক্যাম্পাসের এ বৈরি পরিবেশে দ্বীন মানা কিছুটা কষ্টের।
অনেক মুসলিম ভাই-বোনকে দেখেছি যারা শুরুর দিকে কিছুটা ভদ্র, ধার্মিক টাইপের ছিলেন। বাট কিছুদিন যেতে না যেতেই তারা সম্পূর্ণ উগ্রভাবে লাইফ লিড করা শুরু করেন। এ লেভেলে এসে কেন জানি আমরা অনেকেই ইসলাম কে সেকেলে ভেবে দূরে থাকতে পছন্দ করি। যেটা আসলে খুবই প্যাথীটিক। অবাধ স্বাধীনতার ফাঁদে পড়ে কেউ দ্বীনকে বিসর্জন দিয়ে নাস্তিকতাকে গ্রহন করে ফেলে কেউ ইসলামকে আধুনিকতার সাথে নতুন ভাবে মানতে চায় অথচ ইসলাম শুরু থেকেই আধুনিক। হালের বিপরীতে দুই-চারজনকে চোখে পড়ে যারা নিজেকে গুটিয়ে রাখে আল্লাহর ভয়ে। বাট এমন তো হবার কথা ছিল না যেখানে ৮০% স্টুডেন্টই মুসলিম!
ভার্সিটি লাইফ আমাদের সবার জীবনের জন্য একটা মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট পার্ট। এ সময়টাতেই মানুষ বেস্ট কিছু করে নেক্সট লাইফের জন্য আর এ সময় টাতেই যদি আমরা আল্লাহকে ভুলে যাই, আল্লাহকে বেস্ট টা না দেই তবে কেমন হলো বলুন তো?
যেভাবেই হোক, যত কষ্টই হোক তবুও আমাদের দ্বীন মেনে চলতেই হবে। আল্লাহ’র দ্বীনকে আকড়ে ধরতেই হবে। আমাদের জন্য তো আখিরাতের জিন্দেগীই উত্তম। আল্লাহ’র কাছে সবাই জিজ্ঞাসিত হবো যৌবন কাল আমরা কীভাবে কাটিয়েছি? আর ভার্সিটি লাইফ হলো বেস্ট টাইম। এই টাইমটাই তো সবচেয়ে প্রপার টাইম মন দিয়ে পড়াশুনা করার, দ্বীনকে জানার, মানার, অপরকে দাওয়াহ দেওয়ার।
তাহলে উপায় কী? কীভাবে ক্যাম্পাসে নিজেকে দ্বীনের সাথে জুড়ে রাখা যায়? একটা স্টুডেন্ট একদম শুরু থেকেই কী কী মেইনটেইন করে চললে নিজেকে আল্লাহ’র পথে নিয়োজিত রাখতে পারবেন? এর কিছু কমন টিপস শেয়ার করি। ইন শা আল্লাহ পয়েন্ট গুলো ফলো করলে উপকৃত হওয়া যাবে।
১) নিয়মিত সালাত আদায়ঃ সালাত একটা ফরয ইবাদাত। এতে গড়িমসি করার কোন সুযোগ নেই। আপনি সর্বপ্রথম সালাতে নিয়মিত ও বিনয়ী হবেন। আপনার দৈনন্দিন রুটিন সালাত কেন্দ্রিক সাজাবেন, নট কাজ কেন্দ্রিক সালাত। আপনি যদি সালাতে নিয়মিত হোন তবে আপনার আর বাকি সব কিছুই মানা সহজ হয়ে যাবে। সালাত আপনার সব গুনাহ ধুয়ে মুছে সাফ করে দিবে। নিজেকে পিউরিফাই করতে সাহায্য করবে।
আপনি যদি সালাতে নিয়মিত না হয়ে থাকেন, তবে আজই আপনার সালাতে নিয়মিত হওয়া উচিত। আপনার জীবনকে সালাত কেন্দ্রিক আবর্তিত হতে দিন। পাশাপাশি অন্য ফরয কাজগুলোতেও কখনো হেলাফেলা করবেন না।
২) নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াতঃ আমরা সারাদিন অনেক কাজ করে থাকি, পড়াশুনা করে থাকি। কিন্তু এর ফাঁকে কুরআনটা যে একটু খুলে দেখবো এ ফুরসতটুকু আর হয়ে উঠে না। হৃদয় আল্লাহর বানীর চেয়ে অন্য কিছু বেশি আকৃষ্ট করতে পারে না। আজ আমাদের দ্বীন পালনে এতো হেলাফেলা এর অন্যতম কারণ কুরআন না পড়া। আই মিন অনুবাদ না পড়ার কারণে। আপনি যদি এখনো একবার অর্থসহ কুরআন না পড়ে থাকেন তবে আজ থেকেই শুরু করে দিন। আপনি যখন কুরআনের অর্থগুলো পড়বেন তখন নিজ থেকেই বুঝে যাবেন আল্লাহ আপনাকে কী কী করতে বলেছেন, কীভাবে চলতে বলেছেন। তারপর ধীরে ধীরে তাফসীরসহ পড়া শুরু করবেন।
হাজারো ব্যস্ততার ভীরে দৈনিক তাফসীর সহ ৩০ মিনিট কুরআন পড়তে ভুলবেন না। আর এটাতে নিজেকে নো কম্প্রোমাইজ জোনে রাখবেন৷ যা কিছুই হোক আমাকে মিনিমাম ৩০ মিনিট পড়তেই হবে।
৩) ইল্ম অর্জন করাঃ ঈমান, আমলের উপর নিজেকে টিকে রাখতে ইল্ম না জানা ছাড়া উপায় নাই। এই ইল্ম না থাকার কারণে প্রথম দিকে ভার্সিটিতে পথ চলতে পদে পদে আমার অসংখ্য ভুল হয়েছে।
ইল্ম ছাড়া আমলগুলোও কচুপাতার পানির মতো। যখন তখন গড়িয়ে পড়ে। আপনার আমল গুলোও ছুটে যেতে পারে। তাই অবশ্যই ইল্ম অর্জন করুন। প্রচুর বইপড়ুন পড়ার ফাঁকে ফাঁকে। ক্লাসে গেলে একটা করে বই রাখুন সাথে। ফোনে শায়েখদের লেকচার, কুরআন তিলাওয়াত রাখতে পারেন। ক্লাস শেষে অবসর টাইমটুকু ভালো কিছুতে ব্যয় করুন। আল্লাহ আপনার সময়ে বারাকাহ দান করবেন। সময় সুযোগ থাকলে উস্তাজ/উস্তাজার নিকট একাডেমিক্যালি পড়া শুরু করুন। তাহলে অনেকাংশেই আপনি ফিত্নার পরিবেশে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন।
৪) বন্ধু নির্বাচনঃ কথায় আছে সঙ্গ দোষে লোহা ভাসে। আপনি ভালোর সাথে মিশলে ভালোই পাবেন, খারাপের সাথে মিশলে খারাপটাই পাবেন। ভার্সিটিতে এসে ভালো থাকার দিক গুলো যদি বলি ফার্স্টেই থাকবে আপনি কাদের সাথে মিশছেন। আপনি যতই ভাল হন যদি আপনার চারপাশ ভাল না থাকে তবে কখনোই আপনি খুব ভালো থাকতে পারবেন না। বন্ধুদের দ্বারা কিছুটা এফেক্টেড আপনি হবেনই। সবার সাথেই মিশেন সেটা অন্য ব্যাপার বাট আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড কাকে বানাচ্ছেন সেদিকে খেয়াল রাখবেন।
রুমমেট বড় একটা ইস্যু। অচেনা পরিবেশে এই রুমমেটগুলোই আপনার সবচেয়ে আপনজন। দিন-রাত বলতে গেলে সারাক্ষণই তাদের সাথে থাকতে হবে। প্রথম থেকেই আমার রুমমেটগুলো ভালো হওয়ার কারণে ভার্সিটির নোংরা হাওয়া তেমন একটা গায়ে লাগে নি। আল্লাহ তাদের উত্তম জাযা দান করুন।
যদি আপনার রুমমেট ভালো ইসলামিক মাইন্ডের হয় তবে তো আলহামদুলিল্লাহ। বাট যদি দুনিয়াদার হয় তবে শীঘ্রই রুম চেঞ্জ করে নেওয়াটা বেটার হবে।
ভার্সিটিতে এসে প্রথম থেকেই হয়তো বুঝবেন না কে ভালো কে খারাপ। বাট কিছুদিন যেতে না যেতেই আপনি বুঝতে পারবেন। পরিচিত কোন দ্বীনদার ভাই আপু থাকলে তাদের সাথে মিশবেন, যে কোন প্রয়োজনে তাদেরকে জানাবেন ইন শা আল্লাহ তারাই আপনাকে হেল্প করবেন। রুমও তাদের মাধ্যমে চুজ করে নিবেন। মোটকথা ক্যাম্পাস লাইফটা নিজেকে দ্বীনি সহবতে রাখবেন। এতে আপনার দ্বীনের উপর টিকে থাকাটা ইজি হবে।
৫)নিজেকে রিমাইন্ড দেওয়াঃ আপনার পার্সোনাল একটা নোট রাখবেন। সেখানে আপনি আপনার ভালো, মন্দ গুনগুলো লিখে রাখবেন। সারাদিন আপনার কোন কোন আমল করা উচিত সেটা ছোট করে লিখে রাখবেন। কোন বই থেকে দরকারি কিছু পড়ে থাকলে রিমান্ডার হিসেবে লিখে রাখবেন। কয়েকদিন পর পর অথবা রেগুলার সেই নোটটা একবার করে চোখ বুলিয়ে নিবেন। এতে করে আপনি আপনার চেঞ্জটা ইজিলি ধরতে পারবেন।
আরো ভালো হয় যদি সুন্দর কিছু আয়াত বা সালাফদের উক্তি নিজের টেবিলে, দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখেন। এতে করে লেখাগুলো অলওয়েজ আপনার চোখে পড়বে। গুনাহ করতে গেলে সেগুলা আপনার চোখে ভাসবে। এতে করে শয়তানের ওয়াসওয়াসাই কম পড়বেন।
৬) স্ট্রিক্ট কর্নারঃ ভার্সিটি মানেই ফ্রি-মিক্সিং। এ থেকে রিলেশনের শুরু, গান-বাজনার হারাম প্রোগামে ভরপুর। প্রথম থেকেই নিজেকে স্ট্রিক্ট রাখবেন এসব ব্যাপারে। মনে এমন নিয়ত রাখা ছেলেরা মেয়েদের সাথে টোটালি কথা বলবেন না। মেয়েরা ছেলেদের সাথে টোটালি কথা বলবেন না । প্রয়োজনীয় কোন কিছু হলে সেটা ভিন্ন ব্যাপার। তখন টু দ্য পইন্টে কথা বলবেন।
ভার্সিটিতে আরেকটা ডাল-ভাত হলো ক্রাশ খাওয়া। ইসলামে যেটাকে যিনা বলে। ভার্সিটির ক্রাশ পেইজ, বন্ধুদের প্রেম হলে ট্রিট চাওয়া এসব থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন।
বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম যেমনঃ নবীণ বরণ, ক্লাস পার্টি, ডিজে পার্টি এমন আরো কিছু প্রোগ্রাম আছে এগুলো হতে শুরু থেকেই নিজেকে দূরে রাখবেন।
বড় ভাই- বোনেরা, ফ্রেন্ডরা আপনাকে অংশগ্রহণ করতে বলবেন। বকাও দিতে পারেন বাট আপনি নো এক্সকিউজ রিজনে থাকবেন। কেউ আল্লাহর দ্বীন মানতে চাইলে যদি শুরু থেকেই স্ট্রিক্ট থাকেন তবে আপনাকে কেউ ঘাটাবে না। উল্টাে আপনাকে সম্মান করবে, অন্য নজরে তাকাবে।
_______
এই তো- আলহামদুলিল্লাহ। জানিনা পইন্ট গুলো ফলো করলে কেউ উপকৃত হবেন কী-না বাট আমি আশাবাদী।
পাশাপাশি মনে বিশুদ্ধ নিয়ত রাখবেন। যা কিছু করবেন একমাত্র আল্লাহ'র সন্তুষ্টির জন্য করবেন। গোপন ও প্রকাশ্যে একমাত্র আল্লাহ আযযা ওয়া জালকেই ভয় করবেন৷ সুন্নাহগুলোও আকড়ে ধরবেন।
প্রচুর দু'আ করবেন আল্লাহ'র নিকট। আল্লাহ তা'আলা আপনাকে যেন দুনিয়ার সকল ফিত্না থেকে হিফাযত করেন।
সূরা আল ইমরানের ৮ নাম্বার আয়াত রেগুলার পড়বেন। ইয়া মুকাল্লিবাল ক্বুলুব দু'আটা পড়বেন।
ইন শা আল্লাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা ই আপনার জন্য যথেষ্ট হবেন।
__________
আর হ্যাঁ, আমি মডার্ণ হয়েছি তবে এসময়ের হাওয়ায় গা ভাসিয়ে নয়, মেবি। আল্লাহ আমাকে আমৃত্যু হিফাজত করুন।
বিদ্রঃ পোস্টের কলেবর বড় হয়ে গেছে। ভুল ত্রুটি মার্জনীয়।
.....................................
30.
#দারুল_ইহাদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগীতা_২০২০
#ভার্সিটি_লাইফে_ইসলাম
ভার্সিটি নামক স্বপ্নের জগতে এসে কেও খুজে পায়ে জীবনের উদ্দেশ্য।অন্ধকার কে সর্ব শক্তি দিয়ে দূরে ঠেলে দেয়।আবার কেও পথ হারায়।চেনা পথ হয়ে ওঠে অচেনা। অন্ধকার থেকে গভীর অন্ধকারে ডুবে যাওয়াটা সেখানে অসামান্য কিছু নয়।কিন্তু কেও খালি হাতে ফেরে না।কেও আলো নিয়ে ফেরে, তো কেও অন্ধকার।
জীবন সংগ্রামের একটা বড় ধাপ শুরু হয় এখানে।দিন কাটে, রাত কাটে। একটাই চিন্তা, একটাই স্বপ্ন আঁকড়ে ধরে। ঐ ভার্সিটিতে একটা সিট হবে আমার।সবার মতো আমার যাত্রা শুরু হয়েছিলো কঠোর পরিশ্রম আর আকাশ ছোওয়া স্বপ্ন দিয়ে।পড়তে বসলে একটাই চিন্তা, আচ্ছা আমি কি পারবো?পারবো একদিন মাথা উচু করে দাড়াতে ঐ ভার্সিটিতে? রাব্বুল আলামীন আমাকে সাহায্য কোরো।চিন্তার জগৎ থেকে নিজেকে মুক্ত করে আবার পড়ায় মন দিতাম।ফলাফলের সব শেষ মুহুর্ত টা যেনো আমাদের পাগল বানিয়ে দেয়। অবশেষে সেই প্রত্যাশীত দিনটিও ধরা দেয়।সেদিন কারো ঠোঁটের কোনে পাওয়া যায় স্বপ্ন গড়ার হাসি আবার কারো চোখের কোনে স্বপ্ন ভাঙার জল।আমার চোখে মুখে সেদিন দেখা দিয়েছিলো বিস্ময়ের ছাপ।এতো আনন্দ! এতো বড় পাওয়া! আর এমন সব আনন্দের মাঝে জানি না কেনো স্রষ্টাকে খুব সহজেই ভুলে যাই আমরা।আমিও গিয়েছিলাম।আমার রব যে আমার ডাক শুনেছেন সে কথা মনে রাখিনি সেদিন।
জীবনটাও তার গতিতে চলতে থাকে।ঠিক যেভাবে ছেলেটি বা মেয়েটি নিজের নাম আজাদির খাতায় লিখতে ভুলে না ঠিক সেভাবে দ্বীনের খাতায় তার নাম নিজের অজান্তেই মুছে যায়।।মুসলিম তখন সে কেবল মাত্র নামে। দ্বীন কে তো হারিয়েছে সেই কবে!পৃথিবীর মায়াবী জাল তাকে অনেক আগেই ঘিরে ফেলেছে।
ভার্সিটি নামক ইট পাথরের দালানে এসে কে কিভাবে বদলে যায় তা হয়তো সে নিজেও টের পায় না।
কেও হারাম সম্পর্কের পেছনে ছুটে বেড়ায় সুখের খোজে।বোঝে না সে এতো এক মরিচিকা।কেও আবার পর্নোগ্রাফিতে আসক্তি মেটাতে ব্যস্ত।আধুনিক হবার নামে শালীনতা কে ভুলতে বসেছে আজ সবাই।নেশায় বেস্তো ছেলেটি প্রসান্তির নামে বিষ নিচ্ছে দেহে।সব শেষে কেও খুজে চলেছে নিজের রব কে।তার প্রশ্ন,
স্রষ্টা কি আসলেই আছে?নাকি সবই প্রকৃতির দান?
আমিও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।বুঝেও না বুঝার ভান করেছিলাম। জানার আগ্রহ ছিলো না আমার মাঝে।আমাকে বুঝায় এমন কে আছে!
এই জীবনে এতো কষ্ট কেনো?কেনো সুখে আছি বলেও সুখ খুজে পাইনি? টাকার জন্য কোনো চাওয়া আটকে থাকতো না তবু রোজ রাতে না পাওয়ার কষ্ট আমায় তাড়া করে বেড়াতো কেনো?কোথায় যেনো একটা অভাব আছে কিন্তু কিসের অভাব?
দিন শেষে আসলে এমনই কিছু মানুষকে ডুবে যেতে হয় ডিপ্রেশনের কালো অন্ধকারে । কিন্তু সবাই কি বিষন্নতার ঘন অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসতে পারে?
কেও পারে তো কেও পারে না।কেও অন্ধকারে পথ হারায়।ভুল পথে পা বাড়ায়।আবার কারো জীবনে রাতের তমসাচ্ছন্নতার অবসান ঘটে। খুজে পায়ে সে প্রভাতের আলো। প্রত্যাবর্তন নামের এক অর্থ বহুল শব্দ তার মন কেড়ে নেয়।
আমার ও কেড়ে নিয়েছিলো।ভেবে নিয়েছিলাম কিছুতেই নিজেকে পৃথিবীর মায়াবী জালে জড়াবো না।আমার জীবন যেমন হবে আমার রবের জন্য, আমার মরন ও হবে আমার রবের জন্য।
তখন শুরু হলো এক নতুন যুদ্ধ।কাছে আসার যুদ্ধ। আমাকে যে রবের কাছে আসতে হবে।এই যুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাড়ায় চিত্তগ্রাহী জগৎ। পরিবর্তনের আভাস মানতে না পারা পরিবারও যেনো তারই একটি অধ্যায়।অন্যদের মতো কিছু সুখের মুহুর্ত খুজে ফিরতাম পুরনো বন্ধুদের মাঝে।ভার্সিটির সেই চিরো চেনা পথে খুজে বেড়াতাম এক মুঠো প্রশান্তির ছাঁয়া।
এক সময় আমার মনে হাজারো স্বপ্নের ভিড় জমে।ভাবতাম সব বদলে যাবে একদিন।যেই ভার্সিটি আজ প্রগতির নামে অশ্লিলতায় ভাসছে সেই ভার্সিটি একদিন আঁকড়ে ধরবে ইসলামকে।পুরোনো সেই মেয়েটিও নিজেকে কালো কাপোড়ে ঢেকে নিবে।এক সাথে আড্ডা দেওয়া ছেলেটাও বলবে চল ভাই নামাজে যাই।সেদিন আলোচনা - সংলাপে গিবত আর অশ্লীলতা থাকবে না।বরং থাকবে আমার রবের প্রশংসা। পর্দা করা মেয়েটিকে সেদিন কোনো শিক্ষক আর বলবে না,
আমরা তো বাবার মতো, আমাদের সামনে আবার পর্দা কিসের!?
ছেলেটিকেও জিজ্ঞেস করবে না,
সেদিনই তো মেয়েদের সাথে আড্ডা দিলে আজ তবে দাড়ি টুপি পোরে নাটক নাটক খেলবার কি দরকার?
কিন্তু ভার্সিটির ঐ প্রবেশ দারে যখন পা পড়ে তখন ফিরে আসতে হয় স্বপ্ন থেকে বাস্তবতায়।স্বপ্নের দেয়ালে দেখা দেয় ফাটল। ঘরের চার দেয়াল ছেড়ে যেখানে এসেছি সেখানে নেই ইসলামের ছায়া।ফ্রী মিক্সিং সেখানে নিত্তনৈমিত্তিক বেপার। হাসতে হাসতে গায়ে ঢলে পড়া দেখে কেও অবাক হয়না।কথার ছলে গায়ে হাত দেওয়াটা সেখানে বন্ধুত্ব নামে পরিচিত। অশ্লীল কথা বলতে না পারা ছেলেটা সেখানে আন স্মার্ট বলে বিবেচিত। সেল্ফি তুলতে না দেওয়া মেয়েটি হয়ে ওঠে সবার কাছে নির্বোধ।
ছোটো বেলা থেকে দেখে আসা সেই বন্ধু টিকে যখন বললাম হারাম সম্পর্ক ছেড়ে দিতে ঠিক সেদিনই শেষ হয়ে যায় আট বছরের পুরনো বন্ধুত্ব।ক্লাসের যেই শিক্ষিকাদের কাছে আমি ছিলাম প্রিয় ছাত্রী, আজ তাদের কাছে হয়ে উঠলাম মূর্খ।
দিন শেষে এতো অবহেলা আর অপমান এর পর যখন রব কে বুকের পাথর চাপা কষ্টের কথা বলতে যাই সব কিছুই কেমন যেনো মূল্যহীন লাগে।রব তো আমার সাথেই আছেন।আর কি চাই!
সব শেষে চাওয়া তো এটাই।
" ইয়া রাব্বুল আলামীন,
আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করো।তাদের পথ থেকে মুক্ত রাখো যারা হেদায়েত প্রাপ্ত হয়নি।বরং তাদের পথে আমাকে অবিচল রাখো যাদের উপর তোমার রহমত বর্ষিত হয়েছে।
ইয়া রাহমানুর রাহিম,
আমায় তোমার প্রিয় বান্দা করে নিও, তোমার পাশে একটু জায়গা দিও । "
সবে মাত্র দ্বীনে ফেরা স্রাবনীকে দেখে এমন বহু কথার ঝড় উঠলো অদ্রিজার মনে।
বেশি দিন হয়নি দ্বীনে ফিরেছে সে।চেনা জানা মানুষগুলো আজ খুব কষ্ট দিয়েছে স্রাবনীকে।ঠিক যেভাবে এক সময় অদ্রিজা কষ্ট পেয়েছিলো।
চোখ বন্ধ করে একটা বড় নিশ্বাস ছাড়লো অদ্রিজা।সে জানে না কেমন হবে স্রাবনীর অদেখা পরবর্তী দিন। জানে না কিভাবে স্রাবনী সামলে নেবে নিজেকে।স্রাবনী কি পারবে এই ছোট ছোট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হোতে?পারবে উত্তম পরিকল্পনাকারীর পরিকল্পনার অপেক্ষায় থাকতে? নাকি হারিয়ে যাবে ঘুটঘুটে অন্ধকারে?
শুধু জানে এভাবেই শত পরীক্ষার মাঝে কেটে গেছে বহু ভার্সিটিয়ানের ভার্সিটি লাইফে ইসলাম।
.....................................
31.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
পোস্ট টপিক- ভার্সিটি লাইফে ইসলাম।
ভার্সিটি কথাটা শুনলেই মনে হয় বিশাল একটা জায়গা, যার প্রশস্ত অনেক বেশি। যেখানে যেমন ইচ্ছা করে বেড়ানো যাবে। আসলেই তো তাই। এখান থেকে চাইলে একটা স্টুডেন্ট নিজেকে অনেক বেশি ভাল একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে। আবার চাইলে অনেক খারাপ একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারবে। এটা নির্ভর করে তার নিজের উপর সে কেমনটা চায়! আপনি যেভাবে চাইবেন ঠিক সেভাবেই গড়ে নিতে পারবেন। ভার্সিটি অনেক বেশি উদার। সে কোনো কিছুতে না করে না। আপনি যেমনটা চাইবেন ঠিক সেরকম টা পাবেন।
অনেকে মনে করেন ভার্সিটি মানেই হলো চিল করে বেড়ানোর জায়গা। বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মজা মাস্তি করে বেড়ানোর জায়গা। হ্যাঁ এগুলোও করে বেড়ানো সম্ভব। তবে যে শুধু এগুলো করে বেড়ানোর জন্যই এরকম না। আপনি চাইলে সবকিছু পরিমিত পর্যায়ে রেখে নিজেকে সুন্দর একটা জায়গায় নিয়ে যেতে পারেন। নিজেকে সুন্দর একটা ক্যারিয়ার উপহার দিতে পারেন। নিজেকে ইসলামের পথে রেখে সবকিছু করতে পারেন।
সাধারণত প্রথম বর্ষে নতুন ভর্তি হওয়ার পরে বেশিরভাগ স্টুডেন্টদের ভিতরই একটা কিউরিওসিটি কাজ করে। সেটা হল বেশিরভাগ স্টুডেন্টরা মনে করে চিল করে বেড়াতে হবে শুধু। যারা এরকম ধারণা ই ধরে রাখে সবসময়ের জন্য, তারা হয়তো খুব সহজেই নিজেকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে নিতে পারে না। আর যারা এই ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে গঠনমূলক ভাবে গুছিয়ে নেয় তারাই খুব সহজে এবং অল্প সময়ে ভাল কিছু একটা করতে পারে। নিজেকে একটা সুন্দর ক্যারিয়ার উপহার দিতে পারে।
আমার পরিচিত একজন এর কথা না বললেই নয়, সে ভার্সিটির প্রথম দুই বছর বন্ধু বান্ধব নিয়ে একটু বেশিই মজা মাস্তি করে বেড়াতো। বন্ধু থেকে বান্ধবী ই বেশি ছিল বলতে হয়। সে এখন নিজেকে এসব থেকে এত বেশি গুটিয়ে নিয়েছে সেটা কল্পনাতীত। এমনকি সে শুধু এসব থেকেই গুছিয়ে নেয় নাই, পাশাপাশি অনেক বেশি ইসলামিক মনো বিশিষ্ট হয়েছে। নিজে যতদূর সম্ভব ইসলাম মেনে চলে পাশাপাশি অন্যদেরকেও অনুপ্রানিত করে। এই দৃষ্টান্ত টা দিয়ে আমি এটা বুঝাতে চাচ্ছি যে, চাইলে খুব সহজে নিজেকে ভালো’র দিকে পরিবর্তন করে নেয়া সম্ভব। শুধু দরকার ইচ্ছা শক্তি।
অনেকে বলে নিজেকে পরিবর্তন করা সম্ভব না বা যে যেরকম, সে সেরকম ই থাকে। পরিবর্তন করলে নাকি তার মৌলিক বিষয়টা ই না কি থাকে না। এটা আমি একদম মানতে রাজি না। বরং আমি এটা বুঝি যে, মানুষ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। সে না চাইলেও পরিবর্তন হয়ে যায় কিছু বিষয়। যেমন, যদি বলি একটা মানুষ শিশুকালে যেরকম ছিল বয়ঃসন্ধি কালে সেরকম না। আবার যুবক বয়সে অন্যরকম। আবার তার পরের বয়সটায়ও অন্যরকম। একএক সময় একএক রকম চিন্তা শক্তি। এক এক রকম ভাবনা। এটা কী এক ধরনের পরিবর্তন না? অবশ্যই। আমার কাছে মনে হয় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। এজন্য বলব, একটা মানুষ যেমন ই থাকুক না কেন সে চাইলে নিজেকে সহজেই পরিবর্তন করে নিতে পারে ভালোর দিকে। শুধু প্রয়োজন ইচ্ছা শক্তি।
ভার্সিটি মানেই এই না যে সেখানে শুধু বন্ধু বান্ধব নিয়ে মজা মাস্তি করে বেড়াতে হবে। চাইলে আপনি নিজেকে ধর্মের পথে রেখেও সবকিছু মেনে চলতে পারেন। নিজেকে গঠনমূলক ভাবে গড়ে তুলতে পারেন। তাহলে নিজেকে উপহার দিতে পারবেন একটা সুন্দর জীবন।
আমার আর একজন পরিচিত মানুষের কথাও না বললেই নয়, সেও ইসলাম এর গুরুত্ব কতটা সেটা হয়তো সে অতটা বুঝত না বা এটার জন্য কী করনীয়, কী করনীয় না সেটাও করার প্রয়োজন মনে করত না। এমনকি এরকম মন মানসিকতাও ছিল না। তবে এখন সে যথাসম্ভব ইসলাম মেনে চলার চেষ্টা করে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রোযা রাখে, যে কারো সাথে চলাফেরা করে না, কথা বলে না, নিজেকে অনেকটা গুছিয়ে রাখে। এখন সে ইসলামিক মনো বিশিষ্ট।
এই দৃষ্টান্ত দিয়ে আমি আবারও বলতে চাচ্ছি যে, আপনি এখন যেমনই থাকুন না কেন চাইলেই নিজেকে পরিবর্তন করে সুন্দর পথে চলে আসতে পারবেন। শুধু প্রয়োজন ইচ্ছা শক্তি।
হোক না পরিবর্তন! ভালোর পথে।
.........................................
32.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
- “আপু, আম্মু বলেছে আমাকে আপনার সাথে দাঁড়াতে।”
লিসার মুখে কথাটা শুনে রীতিমত চমকে গিয়েছিলাম আমি। কারণ লিসার আম্মু, আমাদের ফিজিওলজি প্রফেসর, আমাকে খুবই অপছন্দ করেন। ডুবে গেলাম ফার্স্ট ইয়ারের দিনগুলোতে।
প্রথম প্রথম যখন আমরা ভর্তি হলাম, পুরো ক্যাম্পাসের আগ্রহ নতুন ব্যাচের ওপর। সবাই যেখানে গার্লফ্রেন্ড, সবচেয়ে সুন্দরী খুঁজছে সেখানে আশ্চর্যজনকভাবে আমি হয়ে গেলাম ক্যাম্পাসের ছোটবোন, স্যার ম্যাডামদের অতি আদরের ছাত্রী।
সবচেয়ে বেশি আদর করতেন ফিজিওলজি প্রফেসর। প্রথম আইটেমে সবাইকে যেখানে দশ বারোটা প্রশ্ন করেছিলেন, আমাকে মাত্র একটা। আইটেম ক্লিয়ার কিনা শিওর না হতে পেরে জিজ্ঞেস করলাম, “ম্যাম, আর কোশ্চেন ধরেননি যে।” ম্যাম হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “ওই প্রশ্নটাই সবচেয়ে কঠিন ছিল, তুমি মেইন বই থেকে বলেছো বাবা।” প্রতিটা ক্লাসেই ম্যাডাম বাবা, বাবা করতেন, সমস্যা হচ্ছে কিনা জিজ্ঞেস করতেন। এমনকি আমার রুচিশীল পোশাক নিয়েও প্রশংসা করতেন ম্যাম। ফ্রেন্ডরা ভাবতো, আমার নিশ্চয় উঁচু পদের কোনো রিলেটিভ আছে যার জন্য এমন করতো সবাই।
তার কিছুদিন পর আল্লাহ্ তা’আলার অশেষ রহমতে হিদায়াত মানে বুঝলাম। শরীয়াহ অনুযায়ী পর্দা করার মধ্যে পোশাকের আমূল পরিবর্তনের সাথে যে গণহারে সবার সাথে ভদ্রতার জন্য হেসে হেসে কথা বলা, বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা, ক্লাস পার্টি বাদ দিতে হয় সেটা প্রথম বুঝলাম।
অতএব, আমি শুনলাম এবং মানলাম।
ক্লাসে প্রথম নিকাব পরা আমি সবার সাথে কম মেশা শুরু করলাম। অন্য মেয়েরা হিজাব দিয়ে নিকাব পরতো, স্টাইলিশ বোরকা পরতো, আমি পরতাম একদম পুরোটাই কালো, কপাল বা ভ্রুও দেখা যেত না।
ক্যাম্পাসে আদরের আমাকে এবার স্যাররা ডাকা শুরু করলেন আই এস, তালিবান নামে।
ছেলেরাও আর কথা বলতে আসতো না আমার সাথে, বরং একটু সমীহ করে চলতো সবাই। আমার সামনে উল্টাপাল্টা বা বেশি ইয়ার্কি করতো না, ভীড়ের মধ্যেও জায়গা ছেড়ে দিতো আমার জন্য।
আমাদের টিউটোরিয়াল ক্লাসের জানলা ছিল কাচের। আর বাইরে সবসময় অন্যান্য ব্যাচের, গ্রুপের ছেলেরা থাকতো। তাই ক্লাসেও নিকাব খোলার অবকাশ ছিল না।
ম্যাম রাগ শুরু করলেন এই জায়গা থেকে।
“আমার সামনে মুখ খুললে কি হবে!” কিন্ত মুখ খুললে যে বাইরে থেকে সবাই দেখতে পায়, সেটা বুঝতে চাইতেন না।
একদিন ক্যাম্পাসে ঢোকার সময় আমাকে দেখে নাকি তার নাড়িভুঁড়ি উলটে আসছিল, ক্লাসে এসে বললেন।
কারণ? আপাদমস্তক কালো কাপড়ে ঢাকা তাই।
আমাদের শেষ আইটেম নিতে বসে মুখ খুলিয়ে ছাড়লেন, আর আমার কখনো প্লাক না করা জোড়া ভ্রুর দিকে তাকিয়ে বললেন, “তোমার ভ্রুর জন্যই তোমার ফেইল হবে, পাশ করতে পারবে না জীবনেও, বুঝছো? কেমন ঘিঞ্জি লাগে! ক্ষ্যাত, বিশ্রী! পোকার মত! ছি!”
ফার্স্ট প্রফ পাশ করে আর কখনো ম্যামের সামনে যাইনি। দেখলেও লুকিয়ে যেতাম।
দু'বছর পর ম্যামের মেয়ে লিসা, ভর্তি হলো আমাদেরই ক্যাম্পাসে। ম্যাম স্মার্ট বলতে যেমন বোঝেন, তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি স্মার্ট পোশাক আশাকে। লিসা আমার এক বান্ধবীকে বলেছিল, হোস্টেলে এলে আমার সাথে মিশতে ম্যাম ওকে নিষেধ করেছেন।
কিছু বলতে পারলাম না আমি।
তার কিছুদিন পর আমাদের ক্যাম্পাসে ফুটবল খেলা শুরু হলো। সেখানে আমাদের ব্যাচ আর লিসাদের ব্যাচের খেলায়, খেলার মধ্যেই আমাদের ব্যাচের কোনো এক নেতাগোছের ছেলে লিসাকে বিশেষ এক আঙুল দেখিয়ে বাজে ইশারা করেছিল। লিসা কাঁদতে কাঁদতে গেল প্রিন্সিপ্যাল স্যারের কাছে। দুই ব্যাচের অসংখ্য ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে স্যার লিসাকেই জিজ্ঞেস করলেন, ওই ইশারা মানে কি। অপ্রস্তুত মেয়েটা ইংরেজিতে কোনোমতে বলার পর, আবার জিজ্ঞেস করলেন, “অতো ইংরেজি বুঝিনা, বাংলায় বলো।” কান্না আটকে মেয়েটা ভদ্র বাংলায় বলার পরই স্যার সব্বার সামনে প্রচণ্ড অপমান করলেন লিসাকেই।
“নির্লজ্জ, বেহায়া মেয়ে! লজ্জা লাগে না স্যারদের সামনে এসব বলতে! খেলার মধ্যে ওর কি দায় লেগেছে তোমাকে এসব দেখানোর? খেলায় এসব খেলোয়াড়রা নিজেদের মধ্যে দেখায়, আর তুমি কি ভাবো নিজেকে!”
প্রচণ্ড হ্যারাসমেন্টের শিকার হলো মেয়েটা। প্রফেসর মা তাকে কোনো সাহায্যই করতে পারলো না। যেখানে যেত ক্যাম্পাসে, ছেলেরা ইচ্ছা করে করে সেই বাজে ইশারাটা দেখাতো, মুখে বলতো বাজে কথা। তার মুখের দিকে তাকানো যেত না। ক্লাসও নাকি করতো না আর তেমন।
সেই খেলার পর এই প্রথম ক্যাম্পাসে আরেকটা প্রোগ্রাম, আন্দোলন র্যালি। ছাত্র ছাত্রীদের সবার থাকা বাধ্যতামূলক। ভীড়ের মধ্যে লিসা আমার কাছে এসে বললো,
“আপু, আম্মু বলেছে আমাকে আপনার সাথে দাঁড়াতে। অন্যদের সাথে থাকতে আমারও ইচ্ছা করছে না আপু, আপনার সমস্যা হবে?”
#ভার্সিটি_জীবনের_স্মরণীয়_একটি_গল্প
...............................................
33.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
#ভার্সিটি_জীবনের_স্মরণীয়_একটি_গল্প
আমার নীড়ে ফেরা,
আমাদের নীড়ে ফেরা...
লেখাঃSadia Tahosin
সবেমাত্র হিজাব পরা শেষ করেছে শায়লা।আয়নায় নিজেকে কতটা সুন্দরী লাগছে দেখতে শুরু করল সে।ধুর!একদম ভাল দেখাচ্ছে না বলেই হিজাবের পিন খুলতে শুরু করল সে।
সেই সময়ই মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল।নীলার নাম ভেসে উঠল মোবাইলের স্ক্রিনে।শায়লা কলটি কেটে দিয়ে পুনঃরায় সুন্দর করে হিজাব পরতে শুরু করল।
মিনিট দু'য়েক বাদে আবার নীলার কল।এবারে শায়লা কল রিসিভ করেই বলল,"এইতো সিঁড়িতে আমি।আর দুই মিনিট।"
"মাইর খাবি কিন্তু! জলদি কর।সবাই চলে আসছে নিচে।" উত্তর দিল নীলা।
"বললাম তো বাবা চলে আসছি প্রায়।আর দুই মিনিট প্লিজ।" বলেই কেটে দিল শায়লা।
গত সপ্তাহেই আমি,নীলা এবং শায়লা শনিবারের ছুটিতে মার্কেটে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম টুকটাক কিছু কেনাকাটার জন্য।নীলা বলেছিল ফেরার সময় ফুচকা খেয়ে হলে আসার কথা।একটা দোকান নাকি ওর চেনা আছে যেখানে ভিতরে মেয়েদের বসার আলাদা জায়গা আছে।
এখানে নীলা সম্পর্কে কিছু বলে নেই আগে।সে খুব সাদামাটা একটা মেয়ে যার মুখে সবসময় মিষ্টি হাসি লেগেই থাকে।নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে আর পরিপুর্ণ পর্দা করে সে।নিকাব করার কারণে আমরা হাজার জোর করলেও সে কখনই বাইরে খেতে যেতে চায় না।
সেদিন যেহেতু নীলা নিজেই বাইরে ফুচকা খাওয়ার কথা বলেছে আমি আর শায়লা তো খুশিতে পাগলপ্রায়।নীলা বার বার বলে দিয়েছে দুপুরে খেয়ে,নামাজ পড়েই বেরিয়ে পড়বে। আর সব কাজ শেষ করে আসরের আগেই চলে আসবে হলে।আমি বলেছিলাম এত চিন্তা করছিস কেন মার্কেটের তিন তালাতেই মেয়েদের নামাজের জায়গা আছে ওখানেই পড়ে নেব।নীলা বলেছিল তাহলে তো অনেক ভাল হয়।
নীলার কল কেটে দেয়ার আরও মিনিট দশেক পরে শায়লা নিচে আসলো।এসেই বলতে শুরু করল,"প্লিজ প্লিজ প্লিজ রাগ করিস না তোরা প্লিজ।জানিনা কিভাবে যেন দেরি হয়ে গেল!"
"অনেক হয়েছে এবার চল।দেখ কয়টায় বের হওয়ার কথা আর কয়টা বাজে!"বললাম আমি।
মার্কেটে পৌঁছেই সবাই সবার মত কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে গেলাম।আসরের ওয়াক্তের আগে আগে নীলা সবাইকে তাড়া দিতে লাগল হলে ফেরত যেতে। আমি বললাম চিন্তা করছিস কেন এখানে নামাজের জায়গা আছে তো!সেখানেই পড়ে নিব।আর অনেক কেনাকাটা বাকি এখনো।
"আচ্ছা তোরা কেনাকাটা কর আমি গিয়ে নামাজঘরটা দেখে আসছি"বলল নীলা।
নিলা তিন তালায় গিয়ে জানতে পারল কি একটা কারণে আজ নামাজ ঘর বন্ধ আছে।নীলার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।নীলা দৌঁড়ে এসে আমাদের বলতে শুরু করল আজ নামাজ ঘর বন্ধ।আর দেরি করলে আসর মিস হয়ে যাবে এক্ষুণি আমাদের রওয়ানা দিতে হবে।
"পাশেই আরও দুইটা মার্কেট আছে সেখানে নিশ্চয় নামাজ ঘর থাকবে।"বলল শায়লা।
নীলা বলল,"চল তাহলে আগে খোঁজ নিয়ে আসি।"
আমাদের যাওয়ার তেমন আগ্রহ না দেখে নিলা বলল আচ্ছা আমিই দেখে আসছি।বলেই ছুটতে ছুটতে খোঁজ নিতে গেল সে। আর গিয়ে জানতে পারল সেখানে নামাজ ঘরই নেই।
আমাকে কল দিয়ে জানালো আর বলল,"বোন এখানে কোন নামাজ ঘর নেই এর থেকে বেশি দেরি করলে আমাদের তিনজনেরই আসর মিস হয়ে যাবে।"
নীলার তখনই চলে যাওয়ার বায়না শুনে আমি কিছুটা বিরক্ত হলাম।নীলা হয়ত বুঝতে পেরেছিল তাই সে আমাকে বলল,"নামাজ টা যে নিজের খাম খেয়ালিপনার জন্য মিস করবি কি জবাব দিবি বলত আল্লাহকে!"
আমি এবারেও চুপ ছিলাম।তাই সে আমাকে এবার কান্না জড়িত কণ্ঠে বলল,"আচ্ছা তোরা না যেতে চাইলে থাক আমি একাই চলে যাচ্ছি,নয়তো নামাজ টা মিস হয়ে যাবে।"
আমি শুধু বললাম পাঁচ মিনিট দাঁড়া। কলটা কেটে শায়লাকে বললাম,নিলা নিচে দাঁড়িয়ে আছে।একা চলে যেতে চাইছে।ওকে কিভাবে একা যেতে দেই বল? চল আজ চলে যাই।
শায়লা বলল,"নিলা তো নিজেই বলছিল ফুচকা খাবে কত পরিকল্পনা করে আসলাম আর নিজেই এত্ত তাড়াহুড়ো কেন করছে বুঝতে পারছি না!আমরাও তো নামাজ পড়ব তাইনা?কাজ শেষে হলে গিয়ে পড়ে ফেললেই তো হয়।"
একনাগাড়ে কথা গুলো বলেই শায়লা নীলাকে কল দিয়ে বলল,"ফুচকাটা অন্তত খেয়ে যাই আর তো এই মাসে আসাই হবেনা।"
নীলা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলল,"প্যাকেট করে নিয়ে আয়না!হলে গিয়ে খাব।"
"ধুর ফুচকা প্যাকেট করে নিয়ে গিয়ে খেতে মজা লাগে নাকি!নিজেই প্লান করলি আর এসে কি যে শুরু করলি!আচ্ছা আসছি আমরা ওখানেই দাঁড়া।"বলেই কল কেটে দিল শায়লা।
রওয়ানা হলাম আমরা হলের উদ্দেশ্যে।নীলা পুরো রাস্তা দোয়া করতে লাগল,"আল্লাহ নামাজটা যেন মিস না করি। আল্লাহ আর কখনওই এমন করবনা।এবারের মত মাফ করে দাও আল্লাহ।" সৌভাগ্যবশত রাস্তায় জ্যাম না থাকায় ত্রিশ মিনিটের পথ আমরা পৌঁছে গেলাম পনের মিনিটেই।নীলা গাড়ি থেকে নেমেই বলল,"কিছু মনে করিস না আমার একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে।তোরাও আয় দ্রুতপায়ে নয়তো নামাজের ওয়াক্ত চলে যাবে।"এ কথা বলেই ছুটতে শুরু করল নিলা।
আমি আর শায়লা অবাক চোঁখে তাকিয়ে দেখছিলাম আপাদমস্তক কালো বোরখায় ঢাকা মেয়েটা যে কিনা সবসময় ধীর পায়ে মাথা নিচু করে চলাফেরা করে সে কিনা রাস্তা দিয়ে দৌঁড়ে যাচ্ছে শুধুমাত্র ঠিক ওয়াক্তে নামাজ আদায়ের জন্য!
আমরাও এবার দ্রুতপায়ে হাঁটতে শুরু করলাম আর ভাবতে লাগলাম নীলার কথা আর নীলার প্রতি রবের ভালবাসার কথা।নীলা সবসময় আমাদের সময়মত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে বলত। বলত,"দেখ রব আমাদের কত ভালবাসে কত অনুগ্রহ করেছে আমাদের।"
কিন্তু আমরা কখনওই সেসব কথায় খুব একটা মন দিতাম না। এড়িয়ে গিয়ে অন্য কিছু বলা শুরু করতাম তবুও নীলা কখনই ক্লান্ত হত না।দেখা হলে শুরুতেই সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করত নামাজ পড়েছি কিনা!
এসব ভাবতে ভাবতেই আমরা নীলার রুমের সামনে পৌঁছে গেলাম।দেখলাম সে জায়নামাজে মোনাজাতে বসে কাঁদছে কিন্তু তার মুখটা যেন নূরের আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম।
হ্যাঁ, নীলা ঠিক সময়েই নামাজ আদায় করতে পেরেছে আলহামদুলিল্লাহ।
এবারে আমি শায়লার মুখের দিকে তাকালাম দেখলাম সেও নীলার দিকে তাকিয়ে ভাবনার জগতে হারিয়ে গেছে।
আমি শায়লাকে বললাম,"একেই হয়ত রবের সন্তুষ্টি বলে আর এটাই হয়ত রবের তাঁর প্রিয় বান্দার প্রতি রহমত আর ভালবাসা!"
সেদিন এই ঘটনায় আল্লাহ এর নির্দেশে নীলা আমাদের মনে হেদায়েরের বীজ বপণ করে দিয়েছিল।আর নিশ্চয়ই এটা ছিল আল্লাহ এর পরিকল্পনা।
"নিশ্চয় আল্লাহ তা'আলা সবচেয়ে উত্তম পরিকল্পনাকারী"
[সূরা আল আনফালঃ৩০]
সেদিন জীবনে প্রথম উপলব্ধি করেছিলাম নিয়মমাফিক শুধু জায়নামাজে দাঁড়ালেই হয়না,রবকে মন থেকে ভালবেসে তার ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেকে সপে দেয়াই হল আল্লাহ এর প্রতি ভালবাসা।
আল্লাহ আমাদের সকলকেই এই ভালবাসা অর্জনের তৌফিক দান করুক।
ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ্।
আর আমাদের সকলের আল্লাহ কে বলা উচিত,
"হে আমাদের রব আপনি হিদায়েত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন।নিশ্চয় আপনি মহা দাতা।"
[সূরা আলে-ইমরানঃ৮]
........................................
34.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
বিষয়ঃভার্সিটি লাইফের স্মরণীয় ঘটনা
বিকেলের ক্লাসগুলো এমনিতেই অনেক বোরিং লাগে।ক্লাস শেষ হতে হতে আসরের জামাত আর পাওয়া হয়ে ওঠে না।নিজেরাই পরে জামাতে পড়ে নিই।
সেদিন ক্লাস শেষে সবাইকে হলের গোলচত্বরে থাকতে বলেছিলাম কারন এসাইনমেন্টের কাজ নিয়ে মিটিং আছে সবার সাথে।
তবে তার আগে নামাজ পড়ে নিতে হবে।
আমি আর গ্রুপের আরেকজন আগে ওজু করে এসে দেখলাম অজ্ঞাত এক ভাই জামাতে নামাজ পড়াচ্ছেন।আমরা দুজন সেখানেই যোগ দিলাম।
আমাদের নামাজ শেষ হতে দেখি গ্রুপের আরো সাতজন অযু করে এসে একজনের ইমামত্বে জামাতে দাড়িয়েছে।
এরকম নামাজ পড়া অনেক সময়ই দেখি।তবে সেদিনের দেখাটা একটু ভিন্ন ছিলো।
নামাজের সেই দৃশ্যটায় আমার চোখ আটকে গেলো আর মুগ্ধ হয়ে আমি দেখতে থাকলাম।দেখতে দেখতে অনেকটা আবেগি হয়ে পড়েছিলাম।
মনে হচ্ছিলো আজীবন এ ছবি বাঁধিয়ে রাখি।
তাদের সাথে আমার প্রায় সাড়ে তিন বছরের পথচলা।ভার্সটির ফিতনাসংকুল পরিবেশে আমার সাথেই আছে ছায়ার মতো।এটা আমাদের গ্রুপ।
ভার্সিটিতে গ্রুপ তো অনেক আছে।তবে এখানে একটা ভিন্নতা হলো আমরা একে অপরকে ভালোবাসি দ্বীনের খাতিরে সাথে দুনিয়াবি কাজ তো হয়ই।
শুরুর গল্পটা কিন্তু এরকম ছিলো না।মনে মনে খুঁজতাম এমন ছেলেদের যারা নিয়মিত নামাজ পড়ে,দ্বীনের পথে থাকার সংগ্রাম করে।
সময়ের পরিক্রমায় আমরা দশজন হয়ে উঠেছিলাম।
একই গ্রুপের সব সদস্য এভাবে নামাজ পড়ে,দ্বীন মানার চেষ্টা করে আবার একাডেমিক কাজও করে, এমনটা তেমন চোখে পড়ে না।
অনেকেই ভার্সিটির দ্বীনি পরিবেশ নিয়ে হতাশায় ভোগে।তবে চেষ্টা করলে সেটা একসময় আনন্দে পরিণত হয়।
সবকিছু তৈরী করে দেওয়া থাকবে না।নিজের প্রয়োজনে তা গড়ে তুলতে হয়।
সেটা একসময় একটা স্ট্যান্ডার্ড হয়ে দাড়ায় যা নিজের তো বটেই উত্তরসূরিদের ও সাহসের পথ দেখায়। আশার আলো ফোটায়।
সেদিনের নামাজের দৃশ্য আমাকে স্মরন করিয়ে দিচ্ছিলো একটি ফুলে কখনো বসন্ত হয় না।তবে প্রতিটি বসন্ত শুরু হয় একেকটা ফুল দিয়ে।
ভাই,আমরা কি সেই ফুল হতে প্রস্তুত?
........................................
35.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
টপিক-
#ভার্সিটি_জীবনের_স্মরণীয়_একটি_গল্প
সেই লোকটা কি আসলেই শান্তিতে থাকে যার মধ্যে দুনিয়ার প্রতি লোভ থাকে?
মানুষের জীবনে খুব ছোট ছোট ঘটনা চিন্তার ছেদ ঘটায় যেটা হয়ত অনেক বড় ঘটনাতেও প্রভাব ফেলেনা।ঠিক অইরকম এক ছোট ঘটনা আমার চিন্তার জগতে দাগ কেটে ফেলেছিল।
সেদিন সন্ধ্যায় দুজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আপুদের নিয়ে ক্যাম্পাসে বের হয়ে তাদের জন্য বাদাম কিনার সময় একটা পিচ্চি ছেলে টাকা চেয়ে পিছন পিছন ঘুড়তেছিল।বয়স ৯-১০ হবে হয়ত। সাথে টাকা না নিয়ে যাওয়ার দরুণ আপুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছেলেটিকে দেওয়ার সাথে সাথেই বলে উঠলো,"আমার কোনো টাকা লাগবেনা আপু।আমি তো চোখ দিয়ে দেখে কাজকর্ম করে খেতে পারব,কিন্তু ঐ আপুকে তো অনেক কষ্ট করতে হয়।ছেলেটা টাকা না নিয়ে উল্টো তার থেকে দশ টাকা আমার হাতে জোর করে গুঁজে দিতে চাইল ভাই হিসেবে আপুকে দেওয়ার জন্য।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম বাচ্চাটার ভেতরের মানবিকতাবোধ দেখে।কথায় কথায় অনেক কিছু জানলাম তার সম্পর্কে।বাবা-মা নেই তার,থাকার মত জায়গা ও নেই।দাদুকে নিয়ে যখন যেখানে পারে,সেখানেই থাকে।অনেক চেষ্টা করেও একটা বাদাম ও দিতে পারলাম না তাকে।আমার জন্য দুয়া করবেন বলে দৌড়ে চলে গেল।
সেদিন রুমে ফিরে ভাবনার জগতে একদম ঢুকে গেলাম।ভাবতে লাগলাম কিসের পেছনে ছুটে যাচ্ছি আমরা?অপ্রয়োজনে কতকিছু কিনে অযথাই নষ্ট করতেছি,খাবার অপচয় করতেছি।অথচ দুবেলা সেই খাবার ই অনেকের জুটেনা।তার চেয়ে বড় কথা আমরা আমাদের মানবিকতাবোধ দিনদিন হারিয়ে ফেলছি,মানুষের কাছে নিজেকে নিয়ে বড়াই করার প্রতিযোগীতায় মত্ত হয়ে উঠেছি দিনের পর দিন।দুনিয়ার লোভে ছুটে যাচ্ছি অবিরাম।সেদিনের পর থেকে নিজেকে বদলানোর চেষ্টা শুরু হল আমার।অপ্রয়োজনীয় জিনিসের বাহুল্যতা একদম ই কমে গেল আর মন থেকে চাওয়া শুরু করলাম,আল্লাহ আমাকে সামর্থ্য দিলে এ পথশিশুদের নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়ার।আর বারবার এ আয়াতের কথা মনে হতে থাকল,
*তোমরা জেনে রাখ, পার্থিব জীবন ক্রীড়া-কৌতুক, সাজ-সজ্জা, পারস্পরিক অহমিকা এবং ধন জনের প্রাচুর্য ব্যতীত আর কিছু নয়।যেমন এক বৃষ্টির অবস্থা, যার সবুজ ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, এরপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তাকে পীতবর্ণ দেখতে পাও,এরপর তা খড়কুটা হয়ে যায়।আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ আর কিছুই নাহ *(সূরা হাদীদ,আয়াত ২০)
আসলে কিছু কিছু ছোট ঘটনাও আমাদের মনে দাগ কেটে যায়। অনেকের কাছে যেটা সামান্য ব্যাপার মনে হয়,একজনের কাছে হয়ত সেটা অসামান্য হয়ে উঠে।সামান্য হলেও এ ঘটনাটা আমার মনে অসামান্য প্রভাব ফেলেছিল।আল্লাহ আমাদের সবার মনকে ভাল দিকে পরিবর্তন করে দিক।আমীন
...................................................
36.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
টপিক : ভার্সিটি লাইফের স্মরণীয় একটি গল্প
আর মাত্র তিনজন! হার্টবিট যেন বেড়েই চলেছে মার'ইয়ামের। কি হবে! আদৌ কি সেভাবে সব হবে যেভাবে সে চেয়ে এসেছে এতদিন! নাকি তার দু'আ বিফলে যাবে!
আরো একজনের নাম ডাকা হয়ে গেলো। "ইয়া রব্বে কারীম! এই গুনাহগার বান্দীর সম্মান-মর্যাদা আজ একমাত্র তোমারই হাতে," আনমনেই বলে উঠলো মার'ইয়াম।
জেহেনে হিদায়াতের পরশ আর জাহিলিয়াতের সমুদ্রে ডুবে যাওয়া পরিবারে বসবাস - এটা খুব সম্ভবত পৃথিবীতে সবথেকে অস্বস্তিকর কম্বিনেশন। মার'ইয়াম বড় হচ্ছিলো এমনই একটা পরিবেশে যা বাইরে থেকে ইসলামের আবরণে আবৃত মনে হলেও দ্বীনের ছিটেফোঁটা ছিলোনা।
অথচ মার'ইয়ামের জেহেন পরিপূর্ণ ছিলো হিদায়েতের নূরে। পরিকল্পনা যে ছিলো স্বয়ং আল্লাহ আযযা ওয়া জাল-এর। যাক সে অন্য এক গল্প, হিদায়াহ এমন যেন বেহেশতী জেওর।
তথাকথিত মুসলিম পরিবারের চাপে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়াশোনা করতে চলে আসে মার'ইয়াম।প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার পরে আজ ভাইভার দিন।
পরীক্ষার হলে যাতে কারো চোখে না পড়তে হয় এজন্য ইচ্ছে করেই লাস্ট ডেইটে এডমিট তুলতে গিয়েছিলো। লাস্ট রোল হিসেবে পরীক্ষার হলের শেষে বসে যেমন তেমনভাবে ম্যানেজ করে নিক্বাবসহ পরীক্ষা দিতে পেরেছিলো। এতে যে অনেক শিক্ষকের চক্ষুশূল হয়ে গিয়েছিলো সেটা সে ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিলো।
বাড়িতে জানানোর পর তাকে নিক্বাব খুলে পরীক্ষা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিলো। সে বুঝে গিয়েছিলো তার পর্দার মর্যাদা রক্ষায় স্বয়ং আল্লাহ ছাড়া আর কারো উপর ভরসা করা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
তবে আজ ভাইভা বোর্ডে তিনজন ইন্টার্নালের সাথে দুজন এক্সটার্নাল থাকবেন। ইস্তেগফার পড়তে পড়তে সবার শেষ রোল হিসেবে তার নাম ডেকে গেলো পিওন। এতক্ষণের সমস্ত ভয়-শঙ্কা আর দোটানা হঠাৎ করেই যেন কোথায় উবে গেলো, ইমানের সাহসে যেন অন্তর কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গেল।
বিসমিল্লাহ বলে রুমে প্রবেশ করার আগেই দেখতে পেলো দুজন ইন্টার্নাল আর একজন এক্সটার্নাল কি যেন কাজে খুব ব্যস্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। ভেতরে ঢুকতেই দুজন শিক্ষক তাকে বসতে বলে নিজেরা কথা বলছিলো।
উপস্থিত এক্সটার্নাল (মেইল) মার'ইয়ামকে নিক্বাব খুলতে বললেন যাতে আইডেন্টিফাই করা যায়। ইন্টার্নাল (ফিমেল) ম্যামও বলছেন। ম্যামকে আলাদা করে চেহারা দেখানোর প্রস্তাব দেওয়ার আগেই উনারা জিজ্ঞাস করলেন মার'ইয়াম সবসময় নিক্বাব করে থাকে কিনা। মার'ইয়াম মাথা নেড়ে সায় দিতেই এক্সটার্নাল স্যার বললেন "নিক্বাব খোলার দরকার নেই মা," উনি ইন্টার্নাল ম্যামকে বললেন দরকার পড়লে পরে যেন উনি মার'ইয়ামকে আলাদা করে দেখে নেন।
সেই মূহুর্তে এক্সটার্নাল স্যারের কথাগুলো পৃথিবীর সবচাইতে সুমধুর শব্দ ঠেকলো। দু'ফোটা অশ্রু মুঠো করে রাখা হাতের উপর মনের অজান্তেই গড়িয়ে পড়লো। খুব সামান্য কিছু প্রশ্ন করেই মার'ইয়ামকে বিদায় দিলো তারা।
মার'ইয়াম যখন বাইরে এলো তখন অন্য সবার মতো কেউ তার জন্য অপেক্ষা করছিলো না। নেই কোনো বন্ধুবান্ধবের হই-হল্লা, নেই সবার সাথে আড্ডা দেওয়ার কোনো তাড়া।
তবে অন্য একটা শব্দ কানে এলো, ভার্সিটির মাসজিদ থেকে যোহরের আযান । হঠাৎ দুনিয়াটাকে খুব তুচ্ছ মনে হতে লাগলো মার'ইয়ামের, সবকিছু ছেড়ে মাসজিদের নিচতলার সেই রংচটা সবুজ জায়নামাজে সিজদায় তলিয়ে যেতে ইচ্ছে করলো।
............................................
37.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
টপিক: #ভার্সিটি_জীবনের_স্মরণীয়_একটি_গল্প
প্রথম ঢাকায় এসে লালমাটিয়ার একটা মহিলা হোস্টেলে বছর খানিক ছিলাম। বান্ধবীর সূত্রধরে ওঠা। রুমমেট হিসেবে পেয়েছিলাম সিনিয়র লিরা আপু আর জুনিয়র তামান্নাকে। বড়জন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষের ক্লাসে পড়েন। ছোট জন লালমাটিয়া কলেজে এইচএসসি ফার্স্ট ইয়ার স্টুডেন্ট।
স্বভাবে আমার বিপরীত হলেও একসময় ওদের সাথে ভাব হয়ে গেল। বিশেষ করে তামান্না তার নিজগুনে আমার ঘণিষ্ঠ হয়ে গেল।
লিরা আপু পোষাকে-আশাকে বেশ উগ্র। তার মুখে কোন মেয়ে বন্ধুর কথা শুনিনি, সবাই ছেলে। যদিও তার একটা স্টেডি 'প্রেমিক' ও ছিল। তামান্না হাওড় অঞ্চলের একটা জেলার উপজেলা শহর থেকে ঢাকায় এসেছে। সহজ- সরল, চমৎকার মিশুক একটা মেয়ে। সব বোর্ডাররা ওকে ভালবাসত।
একটু এ্যাগ্রেসিভ মুডের হওয়ায় লিরা আপুকে আমি এড়িয়েই চলতাম।
লিরা আপুর বাড়ি ছিল তামান্নার পাশের জেলায়, আমার আগে থেকেই ওরা এক সাথে থাকে তাই ঘণিষ্ঠতাও বেশি। প্রায়ই ওরা বাইরে এদিক সেদিক যেত।
তামান্না বেশ অবস্থা সম্পন্ন ঘরের মেয়ে। হোস্টেল ফিস ছাড়াও মোটা অংকের টাকা পেত বাড়ি থেকে। ওর বাবার মূল কনসার্ন ছিল মেয়েকে ঢাকায় রেখে উন্নত শিক্ষার সুযোগ করে দেয়া। তাই ওর পেছনে প্রচুর খরচ করতেন।
আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম তামান্নাকে নিয়ন্ত্রণ করে লিরা আপু। তামান্নার উগ্র পোশাক-পরিচ্ছদও লিরা আপুর অবদান। যদিও মেয়েটা মানসিকভাবে তখনো নষ্ট হয়ে যায়নি।
আমি সপ্তাহে ৬ দিনই সকালে ৭.৩০ টায় বের হতাম। আসতাম ২টার পর। যখন বের হতাম তখন লিরা, তামান্না গভীর ঘুমে। দুজনেই রাত জেগে ফোনে কথা বলত। আবার ফিরে দেখতাম লিরা আপু বাইরে, তামান্না রুমে। এক কথায় তামান্নাকে কখনো কলেজে যেতে বা টিউশনে যেতে দেখতাম না। রুমে তো পড়তই না। সম্পর্ক ঘণিষ্ঠ হওয়ার পর থেকে মাঝেমাঝে বলতাম, কলেজ যাওনা কেন? পড় না কেন? উত্তর দিত, যাই তো! তুমিতো তখন ক্লাসে থাক।
আমার মাথা ব্যাথা থাকা উচিৎ না তাও আল্লাহর ইচ্ছাতেই হোস্টেলের সার্বক্ষণিক স্টাফদের থেকে খোজ নিলাম তামান্না কলেজে যায় কিনা। সবাই বলল, না। মাঝেমধ্যে দেখতাম বিকালে বের হচ্ছে। বলত, টিউশনে যাই। ২৫/৩০ মিনিটের মাথায় ফিরে আসত।
লিরা আপুকে এসব বললে, এড়িয়ে যেত বা গা-ছাড়া কিছু একটা বলত। অথচ তামান্না তার কথা মতই চলত। তামান্নার খাবার থেকে পোশাক সব কিছুই নিজের মত ব্যবহার করতেন।
ধীরেধীরে বুঝলাম, তামান্না বাড়ি থেকে যে হিউজ টাকা নেয় লিরা আপু তার একজন বেনিফিশিয়ারি। বাইরে খাওয়া থেকে সাজ-পোশাক সব কিছুতেই তারও একটা ভাগ থাকে।
মাইগ্রেনের ব্যাথা শুরু হওয়ায় একদিন ক্যাম্পাস থেকে ফিরেই ঘুমিয়ে পড়েছি। হঠাৎ লিরা আর তামান্নার সমন্বিত কথার শব্দে জেগে দেখি, লিরা আপুর ডেস্কটপের মনিটর আড়াল করে দুজন দাড়িয়ে আছে। পরে জেনেছি লিরা আপুর বন্ধুদের থেকে নিয়ে আসা এক্স-রেটেড মুভি দেখছিল ওরা।
আরেকদিন দোতলাতে বান্ধবীর রুম থেকে একটু রাত করে নেমে হঠাৎ রুমে ঢুকেই দেখি লিরা আপু তামান্নাকে শরীর বিদ্যার পাঠ দিচ্ছে। খুব বিরক্ত লাগলেও চুপ ছিলাম। কিন্তু যেদিন তামান্নাকে লিরা আপু ওর বন্ধুর সাথে প্রেম করার জন্য নিয়ে গেল সেদিন সিদ্ধান্ত নিলাম কিছু একটা করতে হবে।
তামান্না ছিল হিন্দী সিরিয়ালের পোকা। একদিন সন্ধ্যায় লিরা আপু ছাত্র পড়াতে গেছে, তামান্না টিভি রুমে। হঠাৎ দেখি তামান্নার ফোনটা বিছানার ওপর। এই সুযোগ! চট করে ফোনের কনটাক্ট লিস্ট থেকে ওর আব্বুর নাম্বারটা বের করে সেইভ করে নিলাম। এর পর সেদিনই নিজের পরিচয় দিয়ে সব জানিয়ে ওনাকে টেক্সট করলাম।
২/৩ দিন পর হোস্টেলের কাউকে কিছু না জানিয়েই ওর বাবা এসে হাজির। তল্পিতল্পা গুটিয়ে ওকে সাথে নিয়ে চলে গেলেন।
সেই সময়টা আমার জন্য খুব কষ্টের ছিল। তামান্না আমাকে অনেক পছন্দ করত। আমিও ওর প্রতি খুবই স্নেহার্দ্র ছিলাম। ওর আহত চোখ বলছিল, আমি এমনটা করব ও ভাবতে পারেনি। আমি ওর দিকে তাকাতে পারছিলাম না। তবে ওর আব্বু আমার জন্য অনেক দুআ করেছিলেন।
তামান্না চলে যাওয়ার পর আমি হোস্টেলে খুব একা হয়ে গিয়েছিলাম। কান্না লাগত। মনে হত, কাজটা কি ভুল হল?
সব থেকে অবাক হতাম লিরা আপুর নির্লিপ্ততা আর স্বার্থপরতা দেখে। নিজে হাতে তামান্নাকে নষ্টামির পাঠ দিচ্ছিলেন। আবার ওর সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলতেন।
এসব দেখেই মনে হত, ওর বাড়িতে না জানালে যে অন্ধকারে ও নামছিল তাতে করে চমৎকার এই মেয়েটার জীবনটা পুরো খরচের খাতায় চলে যেত।
হোস্টেল থেকে যাওয়ার বছর দুয়েক পর হঠাৎ একদিন তামান্নার ফোন পেলাম। ওরা সপরিবারের আমেরিকাতে মাইগ্রেট করছে।
সেদিন ও আমাকে অনেক ধন্যবাদ দিয়েছিল। ও যে ভুল করছিল সেটা ও বুঝতে পেরেছে।
সেদিন টা ছিল আমার জীবনের ভীষণ একটা আনন্দের দিন।
তামান্নার সাথে পরিচয় এবং পরবর্তী ঘটনাবলী শুধু ভার্সিটি লাইফ না আমার পুরো জীবনেরই সব থেকে স্মরণীয় একটা ঘটনা।
আল্লাহ আমাকে এ পর্যন্ত হাতে গোনা যে কয়টা ভাল কাজ করার তৌফিক দিয়েছেন, এটা তারমধ্যে অন্যতম। আলহামদুলিল্লাহ। এর জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।
তামান্নাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। তবে ওর জন্য মন থেকে দুআ করি, ও যেখানেই থাকুক আল্লাহ যেন ওকে সব সময় অনেক, অনেক ভাল রাখেন।
..............................................
38.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
.
পোস্ট টপিকঃ- ভার্সিটি জীবনের স্মরণীয় একটি গল্প।
শিরোনামঃ- আমাদের বন্ধু রাশেদ এবং কিছু কথা।
লেখাঃ- আব্দুর রহমান
.
৫৬ হাজার বর্গমাইল আয়তনের সবুজ শ্যামল ছায়াবেষ্টিত আমাদের এই মাতৃভূমি বাংলাদেশ। দেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত দিনাজপুর নামক একটি জেলার এক অজপাড়াগাঁয়ে আমার জন্ম। যেখানের আলো বাতাসে আমি বড় হয়েছি। শৈশব, কৈশোর পার করে বর্তমানে যৌবনে পদার্পন করেছি। মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক এর গণ্ডি পেরিয়ে উচ্চশিক্ষার শুরুটা হয়েছিল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত দিনাজপুর সরকারি কলেজে।
এখানে আমাদের সাথে ঘটে যায় সারাজীবন স্বরণে রাখার মত একটি ঘটনা।
যা একই সাথে আমাদের জন্য আনন্দ, বেদনা এবং অসম্ভবকে সম্ভব করার প্রবল ইচ্ছার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। খুব সংক্ষেপে তুলে ধরছি-
আমরা দিনাজপুর সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র-ছাত্রী। আমাদের বন্ধু রাশিদুল ইসলাম। আমরা সবাই তাকে রাশেদ নামেই ডাকতাম। সে ছিল শান্ত-শিষ্ট ও মেধাবী একজন ছাত্র। ক্লাসের নিয়মিত ছাত্র হিসেবে তার ছিল সরব উপস্থিতি। লেখাপড়ায় ডিপার্টমেন্টের সেরাদের মধ্যে একজন। সে সবসময় চেষ্টা করতো জামায়াতের সাথে নিয়মিত নামায আদায়ের জন্য। আবার ফুটবল খেলায়ও পারদর্শী ছিল। জেলা শহরের বিভিন্ন ফুটবল খেলাগুলোয় তার অংশগ্রহণের জন্য নিয়মিত ডাক পড়তো। এভাবেই সবার সাথে হাসি আনন্দের মাঝেই অতিবাহিত হচ্ছিল ভার্সিটি লাইফের দিনগুলো। হঠাৎ একদিন সেখানে নেমে এলো দূর্যোগের ঘনঘটা।
তখন আমরা অনার্স চতুর্থ বর্ষের শেষ দিনগুলোর ক্লাস করছি। একদিন বিকেলে হঠাৎ তার পরিবারের পক্ষ থেকে শুনতে পাই রাশদকে আজ চিকিৎসার জন্য দিনাজপুর সরকারি হাসপাতালে আনা হয়েছে। আমরা তো যেন আকাশ থেকে পড়লাম। মাত্র এক সপ্তাহ আগেই তো আমরা তার সাথে ক্লাস করলাম। এ কদিনের মাঝেই আবার কি হলো। পরের দিন তাকে দেখতে হাসপাতালে যাবো এমন প্রস্তুতি নিচ্ছি ঠিক তখনি আবার খবর আসলো তার অবস্থা আরো গুরুতর হওয়ায় এই মুহূর্তে তাকে ইমার্জেন্সি বিমানে করে সৈয়দপুর হয়ে ঢাকা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এমন ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা তো সকলে হতভম্ব।
ঢাকায় গিয়ে তিনদিন ধরে বিভিন্ন পরিক্ষা-নিরীক্ষার পর ডাক্তারের কাছ থেকে জানা গেল রাশেদের অণ্ডকোষে ক্যান্সার হয়েছে। যার চিকিৎসা বাংলাদেশে সম্ভব নয়। চিকিৎসার জন্য দ্রুত যেতে হবে সিংগাপুর অথবা ইন্ডিয়া।
কিন্তু চাইলেই তো আর সিংগাপুর অথবা ইন্ডিয়া যাওয়া সম্ভব নয়। কেননা রাশেদের বাবা গ্রামের একটি স্থানীয় জুমআ মসজিদের ইমাম। সহায়-সম্পত্তিও তেমন কিছুই নেই।
বিভিন্নভাবে খোজ নিয়ে জানা গেলো ইন্ডিয়া গিয়ে চিকিৎসা করাতে হলে কমপক্ষে ৬ লক্ষ টাকার দরকার হবে। রাশেদের বাবা জানালেন নিজের যতটুকু সঞ্চয় আছে এবং আত্নীয় স্বজন অনেকের কাছে ধার-কর্য করে তিনি ২ লক্ষ টাকার মতো ব্যবস্থা করতে পারবেন। এর বেশি তার সামর্থ্য নেই।
দূঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমরা ক্লাসের পর সবাই একত্রিত হলাম। যেহেতু সময় খুব বেশি নেই তাই এক্ষনে আমরা রাশেদের জন্য সর্বোচ্চ কি করতে পারি এ নিয়ে আলোচনার জন্য। কিন্তু আমরা তো সবাই ছাত্র। অর্থ সহায়তা করার সামর্থ্য আমাদের তেমন নেই।
বিভিন্ন আলোচনা পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত হলো অর্থ সহায়তার সামর্থ্য আমাদের না থাকতে পারে কিন্তু নিজেদের শ্রমটুকু দিয়েই তো অনেক কিছু করতে পারি। সেক্ষেত্রে ক্যান্সার আক্রান্ত রাশেদ এর জন্য ছাত্র-শিক্ষক সহ সবার কাছে অর্থ সহায়তা চাইতে হবে। যেই ভাবা সেই কাজ।
সে মোতাবেক অনেক ভেবে আমাদের পরিকল্পনা প্রস্তুত করলাম। এর ফাকে আমরা রাশেদের বাবাকে বললাম জরুরি ভিত্তিতে ইন্ডিয়ার ভিসা ও পাসপোর্ট করার জন্য ব্যবস্থা নিতে। সবার আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হলো আমাদের অর্থ সহায়তা জোগাড় করার সম্ভাব্য খাত হতে পারে চারটি। যথা-
১। ডিপার্টমেন্টের স্যার-ম্যাডাম গণ ও কলেজের প্রিন্সিপাল।
২। নিজেরা সর্বোচ্চ কতটুকু সাহায্য করতে পারি।
৩। বড় ব্যবসায়ী, দোকান মালিক ও ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিদের থেকে সহায়তা আদায়।
৪। আরো বিভিন্ন কলেজের ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ মানুষদের থেকে আদায়।
কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে এগোলাম ঠিক এভাবে-
১। ডিপার্টমেন্টের স্যার ও ম্যাডামদের এ বিষয়ে বললে তারা নিজেরা কিছু অনুদান দিলেন এবং ডিপার্টমেন্ট এর পক্ষ থেকেও সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিলেন। প্রিন্সিপালের কাছে এ বিষয়ে আকুল আবেদন করা করা হলে তিনি কলেজের ফান্ড হতে সহায়তা করার আশ্বাস দিলেন। এবং রাশেদের বাবাকে একটি ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য বললেন। যাতে করে সেই অর্থ তার বাবার একাউন্টে ট্রান্সফার করা যায়।
২। নিজেদের খুব বেশি সামর্থ্য নেই। আমরা স্যারদের বললাম আমাদের চতুর্থ বর্ষের ফরম ফিলাপের সময় যাতে সবার কাছে ৫০০ টাকা করে বেশি নেওয়া হয়। এতে আমাদের ২৮০+ ছাত্র-ছাত্রীর সবার থেকে বেশকিছু টাকা উঠে আসবে।
৩। বিভিন্ন ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিদের থেকে সহায়তা পাওয়ার জন্য আমরা ক্যান্সার আক্রান্ত রাশেদের চিকিৎসা জন্য সাহায্যের আবেদন জানিয়ে বেশকিছু চিঠি কম্পিউটারে প্রিণ্ট করে ছাপানো হলো।
৪। চতুর্থ কাজটা ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। আর আমরা এসব কিছু আয়োজন করছিলাম কেবলমাত্র ৩৫+ ছাত্র-ছাত্রী মিলে। সেই মোতাবেক তিনটি ব্যানার ও হাতে বয়ে বেড়ানোর জন্য বিস্কুটের কার্টুন দিয়ে কিছু অস্থায়ী দানবাক্স বানানো হলো। ব্যানার ও দানবাক্সে রাশেদের চিকিৎসার জন্য কিছু অর্থ সহায়তার আবেদনের কথা লেখা ছিল। সেই ব্যানার ও দানবাক্স নিয়ে আমরা জেলার বিভিন্ন কলেজ ও ইউনিভার্সিটি গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছে সাহায্য চাইলাম। সবাই কিছু না কিছু সাহায্য করেছে। এভাবে বেশ কয়েকদিন দিনাজপুর সরকারি কলেজ, দিনাজপুর আদর্শ কলেজ ও হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পেইন করে সাহায্য উত্তোলন করলাম। মাত্র ছয় দিনে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকার সাহায্য উত্তোলন করে তার পরিবারকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রদান করা হলো। সপ্তম দিন আমরা কোন কালেকশনে বের হইনি। কেননা সবাই টানা ছয় দিন পরিশ্রম করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।
এদিকে ইন্ডিয়া যাওয়ার জন্য তাদের ভিসা পাসপোর্ট সবকিছু রেডি করা হয়েছে। আর কদিন পরেই ইন্ডিয়ায় চিকিৎসার জন্য রওনা হবে। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ছিল ভিন্ন। অবশেষে ১১/১১/২০১৭ তারিখ বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে আমাদের বন্ধুত্বের মধ্যমণি রাশেদুল ইসলাম (রাশেদ) মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা সকলেই যেন বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লাম। সকল মানুষকে একদিন মরতে হবেই। এটাই আল্লাহর বিধান। কিন্তু প্রিয় বন্ধুর মৃত্যুর খবরটা আমরা যেন কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। হে আল্লাহ তুমি তাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করো, আমিন।
পরদিন সকাল বেলা আমরা সবাই রাশেদের জানাযা নামাযে উপস্থিত হবো। কিন্তু রাশেদের বাড়ি বেশ দূরে হওয়ার ফলে মাত্র এক রাতের মধ্যে যানবাহন ম্যানেজ করতে বেশ সমস্যা হচ্ছিল। কলেজের প্রিন্সিপাল বললেন তোমরা কলেজ ছাত্র-ছাত্রীদের আনা নেয়ার জন্য নির্ধারিত যে বাস আছে সেটা নিয়েই যাও। আমরা সদলবলে উপস্থিত হয়ে রাশেদের জানাজার নামায আদায় করে আসলাম। এভাবেই সবাইকে কাঁদিয়ে কবরের মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলো একজন মেধাবী ছাত্রের প্রাণ।
এইযে এতদিন আমরা একসাথে ক্লাস, চলাফেরা ও আনন্দ করলাম কিন্তু সেই রাশেদ আজ আমাদের মাঝে নেই।আর কোনদিন দুনিয়ায় ফিরবেনা। পৃথিবীটা এমনই যে এখানে কারো জন্য কিছু থেমে থাকেনা। তবুও প্রিয় কারো মৃত্যু হলে ব্যথার ক্ষতটা অনেক বেশি গভীর হয়। আর তাইতো বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে রাশেদের স্মৃতি আকড়ে কেটে যায় আমাদের দিন মাস বছর।
.
➤ দুটি শিক্ষণীয় বিষয়ঃ-
১। বিপদ কখনো কখনো এমন আকস্মিকভাবে আসে যা হয়তো আমরা কল্পনাও করতে পারি না।
২। সবাই মিলে সম্মিলিত ভাবে কাজ করলে অনেক কিছু করা সম্ভব। এমনকি সেখানে অনেক অর্থের প্রয়োজন হলেও তা সমাধান করা যায়। দরকার শুধু একটু আন্তরিক প্রচেষ্টা।
.
➤ বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ-
১। উপরোক্ত বিষয়গুলোতে ফ্রি মিক্সিং বা গাইরে মাহরাম এর মত বিষয়গুলি পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। কেননা রাশেদ তার আচার আচরণ ও চলাফেরার মাধ্যমে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলেরই প্রিয় ছিল। সকলেই তাকে সাহায্য করার জন্য আন্তরিকভাবে নিবেদিতপ্রাণ ছিল। যদিও এখন ইসলামকে যেভাবে জানি তখন সেভাবে জানতাম না। তবে তার মৃত্যুর পর আমাদের অনেকেই প্রকৃত ইসলামে ফিরে এসেছে। কেননা আমাদের তখন চোখের সামনে একটি তাজা প্রাণ ঝরে যেতে দেখেছি। উপলদ্ধি করেছি মৃত্যু নিয়ে কঠিন বাস্তবতা।
২। এত ভালো কিছু করার পরেও কিছু মানুষের কটু মন্তব্য, নিজেদের উজ্জীবিত রাখার গল্প, ডিপার্টমেন্টের স্যার-ম্যাডামদের অনুপ্ররেণা, এমন কাজের জন্য নিজেদের পরিবার হতে উৎসাহ প্রদান এবং পুরো বিষয়ের মাঝে ঘটে যাওয়া বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার বর্ণনা ইত্যাদি লিখতে গেলে লেখা আরো অনেক বড় হয়ে যেতো। তাই খুব সংক্ষেপে লেখার ফলে বর্ণনা হয়তো খাপছাড়া লাগতে পারে।
.
➤ শেষ-কথনঃ-
পৃথিবীর নানা প্রান্তে আজও প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তারা হয়তো আমাদেরই বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয়-স্বজন কিংবা পাড়া প্রতিবেশী। মারা যাওয়ার আগে সামান্য চিকিৎসাটুকুও হয়তো তারা পাচ্ছে না। আপনাদের সকলের প্রতি অনুরোধ তাদের সহায়তার জন্য এগিয়ে আসুন। বিশ্বাস করুন এজন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন নেই। নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। কারণ সবার বিন্দু বিন্দু সহায়তা একখানে করলে সেটাই একসময় হয়ে ওঠে বিশাল সিন্ধুর সমান। এভাবে একটি প্রাণ দেখতে পারে নতুন করে আশার আলো। সবার এগিয়ে চলার পথ সুগম ও মসৃণ হোক এই কামনায় আমার লেখা এখানেই শেষ করছি।
............................................
39.
#দারুল_ইহদা_ভার্সিটিয়ান_দ্বীনি_পরিবার_রচনা_প্রতিযোগিতা_২০২০
পোস্ট টপিকঃ #ভার্সিটি_জীবনের_স্মরণীয়_একটি_গল্প
স্মৃতি জীবনের এক অদ্ভুত সঞ্চয়। মানুষের জীবন কেবলই বেড়ে ওঠার,ভেতরের খেয়াল খুশিতেই তা এগিয়ে যায়।ঘড়ির কাটা আর স্রোতস্বিনীর উত্তাল স্রোত কারো অপেক্ষায় বসে থাকে না। ঘড়ির নিষ্প্রাণ ব্যাটারি সাময়িক স্থিতির দেখা মিলিয়ে দিলেও জীবনের স্থিতি হয় কেবল মৃত্যলোকে যাত্রার মাধ্যমে। কিন্তু জীবনের এ চলমান প্রক্রিয়ায় হাজারো ঘটনার সুত্রপাত স্মৃতিতে রেখাপাত করে। কখনো সেসব স্মৃতি হৃদয়ে জাগরুক হয় জীবন চলার উন্মাদনা কমে আসার পর, কখনো জীবনের বহ্ন্যুৎসব শেষ হবার পর। আবার কখনো কখনো প্রতিমুহূর্তেই দু'চোখে ভেসে বেড়ায় কিছু স্মৃতি যা ভুলা যায় না, ভুলা সম্ভবও নয়।
ভার্সিটি জীবন এক নতুন অভিজ্ঞতা।এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বিভিন্ন মানসিকতার মানুষের সাথে পরিচয় হয়, বন্ধুত্ব হয়। আমারো পরিচয় হয়েছে কিছু মানুষের সাথে যাদের চোখ যেমন দেখেছি তেমনি দেখেছি সে চোখে হৃদ্যতা আর বন্ধুত্ব।জ্ঞান আর প্রজ্ঞা যেমন দেখেছি তেমনি কথা ও কাজের মিল দেখেছি। এরা কেবল কাপড় পরিহিত কিছু চেহারা নয়, মনুষ্যত্বে বলীয়ান সুন্দর মনের অধিকারীও বটে। ঠিক এমনই একজন বন্ধু আব্দুল্লাহ।
আব্দুল্লাহর গ্রামের বাড়ি আমাদের মেডিকেল কলেজের কাছেই। যেকারণে গ্রাম থেকে অনেক পেশেন্ট ডাক্তার দেখাতে আসতো প্রায়ই। ছেলেটাকে একটু বিড়ম্বনা পোহাতেও হতো,তবু হাসি খুশিই দেখতাম,এখনও দেখি। তেমনি একদিন তার দূর সম্পর্কের এক আত্নীয় হাসপাতালে ভর্তি। সাধারণত ও একাই যায়, কিন্তু সেদিন কি মনে করে আমিও যেতে রাজি হলাম।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের নেফ্রোলজি ওয়ার্ড।পেশেন্ট সেখানেই ভর্তি। আমরা দুজনে দেখতে গেলাম। সাধারণত চতুর্থ বর্ষের ছাত্র হিসেবে প্রেসক্রিপশন,ভর্তির কাগজ দেখা আর কিছু কাউন্সিলিং করা ছাড়া তেমন কিছু করার থাকেনা।তবুও এইটুকুতেই এই মানুষগুলোর অন্তরে জায়গা করে নেওয়া যায় খুব সহজেই।
ওয়ার্ডে গিয়ে দেখলাম পেশেন্ট সম্পুর্ন অজ্ঞান।রোগীর লোকদের সাথে কিছু কথা বলে, কিছু জিনিস বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসবো। এমন সময় হঠাৎ সবার চোখ পড়লো রোগীর মুখের দিকে।আমিও তাকালাম। যা দেখেছিলাম মনে হলে আজও গা শিওরে উঠে।
রোগ-জর্জরিত বুকের ক্ষয়িষ্ণু কিছু অস্পষ্ট আওয়াজ কুকড়ে-মুকড়ে দুই ঠোট ফেঁড়ে বের হচ্ছিল যেন। অজ্ঞান মহিলাটির চোখ হঠাৎ বড় হয়ে খুলে যায়,আবার বন্ধ হয়ে যায়।চোখ এর পাপড়ির কুঁচকানো ভাজ দেখে মনে হচ্ছিল কোন কিছুর ভয়ে ভীত হয়ে সজোরে কপাট বন্ধ করে মুক্তি পেতে চাইলেন।কপালের চামড়ার ভাজের অনবরত কম্পন পুরো মুখকেই জর্জরিত করেছে। স্যালাইন এর ক্যানুলা এক টানে ছিড়ে ফেলেছে। হাত আর পা তরপাচ্ছে। হঠাৎ সব নিস্তেজ হয়ে গেল । সর্বোচ্চ ২-৩ মিনিট হয়েছে। মুহুর্তেই সবাইকে স্তব্ধ করে দিয়ে হারিয়ে গেলেন তিনি। চিরনিদ্রায় মানুষ যেখানে হারায় তিনিও জায়গা কুড়িয়েছেন সেখানেই।
এতক্ষন তাকিয়েই ছিলাম একটানা । ঘোর কাটলো মহিলাটির মাথার পাশে উনার মেয়ের কান্নার আওয়াজ শুনে।
সময়ের ঘড়িটিকে সাময়িক বিরতি দিয়ে মহিলাকে যদি জিজ্ঞেস করা যেত, চোখে কি ভাসছিল উনার? কেনোইবা এমন অঙ্গভংগি প্রদর্শন করলেন?কেন কুঁচকেছিলেন কপালের রেখা?
ফুসফুস থেকে একটা শ্বাস বের হওয়া মানে তিলে তিলে অতীতের কাছে হেরে যাওয়া আর ভবিষ্যৎ সংকীর্ন হয়ে যাওয়া।এমনি করে একদিন সেই মুহুর্তটি চলে আসবে যখন শ্বাস নেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় বায়ু টুকুন ও কারো জন্য অবশিষ্ট থাকবেনা। ক্যারিয়ার গোছানোর মত সময় কাউকে দেওয়া হবে না। "তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরও অবস্থান করো, তবুও।" [ সুরা নিসাঃ আয়াত-৭৮ ]
মৃত্যু এক অবধারিত সত্য। অনন্ত জীবনের জন্য ভিন্ন এক জগতে অনুপ্রবেশ। মৃত্যুর কষ্ট টা আসলে কেমন? অনুভূতি টা কেমন?-জানিনা। জানা সম্ভব না। জানার সুযোগও নেই।
মৃত্যুর অনুভূতি না থাকলেও সেদিনের মৃত্যু পথযাত্রীকে দেখে অনুভূতি আরো তীক্ষ্ণ হয়েছে।অনুভূতির জগৎ আরো প্রসারিত হয়েছে। নিরেট বাস্তবতার নিরিখে ধারণা আরো স্বচ্ছ হয়েছে। জানিনা, সে মহিলা কেমন আছেন,কেমন ব্যবহার পেয়েছেন মহান রবের সাক্ষাতে। তবে তিনি কাউকে কিছু শিখাতে পেরেছেন অন্তিম যাত্রার সময়ে। আল্লাহ যেন এ উসিলায় উনাকে ক্ষমা করে দেন। আমিন।
হোস্টেলে ফিরে আসার পর অনেকের সাথে বিষয়টা শেয়ার করেছিলাম। প্রত্যেকেই যে অভিমত দিয়েছেন সেটা হলো, হয়ত তখন রুহ বের করা হচ্ছিল, আর সেটা করছিলেন এ কাজেই নিয়োজিত ফেরেশতাদল। ঘটনার বিবরণ যারা শুনেছে সবার কপালে চিন্তার যে ছাপ দেখেছিলাম এখনও মনে আছে স্পষ্ট ।
সময় পেরিয়ে গেলে অনুভূতি ভোঁতা হয়ে আসে। কিন্তু সেদিনের দেখা ঘটনা আজও চোখে ভাসে।এরপর আর এমন কিছু আজও দৃষ্টিগোচর হয়নি।ভার্সিটি জীবনের এমন আশ্চর্যজনক ঘটনা এটিই প্রথম। ঘটনাটা হয়ত কারো কাছে সামান্য আর সাধারণ কিন্তু এতে ছিল এক অসামান্য আর অসাধারণ প্রভাব, যা আমি আজও অনুভব করি।
গল্প থেকে শিক্ষাঃ
০১. মৃত্যু প্রত্যেকের জন্য অবধারিত। যেহেতু পালিয়ে নিজেকে বাঁচানো কখনোই সম্ভব না,তাই পাথেয় সংগ্রহের মাধ্যমে বাঁচার চেষ্টাই বুদ্ধিমানের কাজ।আর পাথেয় হল স্বচ্ছ ঈমান এবং ইখলাস যুক্ত এবং রিয়া মুক্ত আমল।
০২.খুব অল্প অথবা অতিবৃদ্ধ অথবা মাঝ বয়সী যেকোনো বয়সেই মৃত্যু আসতে পারে। তাই আমাদেরকে সকল গুনাহ ছেড়ে তাওবা করা উচিত।লোকলজ্জা ছেড়ে রবলজ্জা কে জীবনের পাথেয় বানানো উচিত।
.....................................................
আল্লাহর কাছে আসার গল্প pdf (58 MB)
https://drive.google.com/file/d/1OFKPgx8FebU6sSEMyfh4pUOtYcgRJCjh/view?usp=sharing
https://mega.nz/file/kzwwjABD#zsvNQZhtwOrIePkUeNPvqQqsF_PZp2p9ME1V3GkS3pU