JustPaste.it

পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প

 

 

> হিজাব: শান্তি ও নিরাপত্তার আসমানি ব্যবস্থা –Shaikh Zubair Al Hasan (https:// www.youtube.com/watch?v=a3jbU_KV-js&t=66s)

> বোন! কে হবে আপনার আদর্শ (https:// www.youtube.com/watch?v=zYBC_IWJkqU)
> মোবারকবাদ তোমায় হে বোন (https:// www.youtube.com/watch?v=6alULjfsLfc)

> বোন! লজ্জা হোক আপনার অলঙ্কার (https:// www.youtube.com/watch?v=GN9fvPbqX8Q)
> প্রিয় বোন তোমাকে বলছি -শাইখ যুবাইর আল হাসান (হাফিজাহুল্লাহ) (https:// www.youtube.com/watch?v=XgmlFo0X9t4)
> হে বোন! গিবত থেকে বাঁচুন -শাইখ যুবাইর আল হাসান (https:// www.youtube.com/watch?v=6YJUIBSfWg4&t=5s)
> হযরত উম্মে সুলাইম (রা.) -শাইখ যুবাইর আল হাসান (হাফিজাহুল্লাহ) (https:// www.youtube.com/watch?v=wAnxzWtv0m4)
> বিবাহের পূর্বে ৭টি প্রস্তুতি নিন, ইন শা আল্লাহ সুখী দাম্পত্য লাভ করবেন (https:// www.youtube.com/watch?v=A65AcOmnNiA)

> ইসলামের প্রথম শহীদ সুমাইয়া রা. –শাইখ হাম্মাদ সুলাইমান হাফিজাহুল্লাহ (https:// www.youtube.com/watch?v=p54TyYaCpQ8)

> এক হাজার পুরুষের চেয়ে উত্তযে নারী || শাইখ খালিদ আর রশিদ (হাফিঃ) (https:// www.youtube.com/watch?v=tsO76R1aR18)

> Don't Be Sad হতাশ হবেন না (https:// www.youtube.com/watch?v=Ar6nJ56XvW4)

> হে বোন আপনাকে বলছি (https:// www.youtube.com/watch?v=ykajpfb1nMU)

.

 

 

 

কখনো বাসায় হুট করে কোনো পুরুষ এসে যদি আমাকে দেখে যেতো সে দিনটা আমি ইস্তেগফার করেই কাটিয়ে দিতাম। সারাটাদিন কাঁদতাম। মেনে নিতে পারতাম না।
প্রায় ১ টা বছর আমি আয়নার সামনে যাই নি।দেহ থেকে আত্মার পরিচর্যা ছিলো আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আয়নার সামনে কখনো গেলেও পুরো দেহ ঢাকা থাকতো।
মাথার ওড়না সারা গায়ে জড়িয়ে ঘুমাতে যেতাম।ভয় হতো, যদি আর সকাল না দেখি তবে কি ওরা আমাকে বেপর্দায় পাবে বিছানায়!
চোখগুলোও ঢেকে বের হতাম। কোনো পুরুষ যদি চোখের দিকে তাকাতো আমি লজ্জ্বায় গুটিসুটি হয়ে যেতাম। হাঁটার সময় দেয়াল ঘেঁষে হাঁটতাম। ভুলক্রমে যদি কারো শরীর আমাকে স্পর্শ করে ফেলে,যদি আমার রব্ব অসন্তুষ্ট হয়ে যান! সারাদিন রব্বের তাসবীহ পড়তাম,তাঁর প্রশংসা করার সৌভাগ্য কয়জন ই পায়! কি যে প্রশান্তি সারাটাক্ষন নিজের প্রভুকে ভালোবাসার মাঝে।
সেই সময়টাতে মনে হতো, আল্লাহ যদি আমাকে আজ ই নিয়ে যান,আমার ভয় নেই। আমার মরতে ভয় নেই। আমি অধির আগ্রহে আমার রব্বকে দেখার জন্য অপেক্ষা করতাম। মনে হতো, বেঁচে থাকার চেয়ে আল্লাহ'র দিকে ফিরে যাওয়াই তো অধিক আনন্দের।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে রেবেকার চোখ মুখ অন্ধকারে ছেয়ে গেলো। জানালার গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে অনর্গল কেঁদেই চলেছে সে। অনিমেষ চাহনি, নির্বাক-ধূসর চেহারার রেবেকাকে দেখে মনে হবে যেন প্রাণহীন নিথর একটি দেহ।
মাস খানেক আগে এক ছেলের সাথে রেবেকার পরিচয় ঘটে ফেসবুকের অবদানে।নাম ইয়াসরিব।
ছেলেটি সুদর্শন,সুন্নাহ মেনে চলে। কি সুন্দর দাঁড়ি!যেন এই ছেলেটিই তার স্বপ্নের পুরুষ।ধীরে ধীরে রেবেকা দূর্বল হয়ে গেলো তার প্রতি।
কীভাবে যেন দু'জন সম্পর্কে জড়িয়ে গেলো।
এই সম্পর্কের নাম প্রেম,ওরফে যিনা।
অতঃপর শয়তান তাদের ব্যভিচার পর্যন্ত নিয়ে গেলো।
জানালা দিয়ে বৃষ্টির ঝাপটা রেবেকার মুখে এসে পড়লো। অন্ধকার রাত। রাত এখনো তিনটে বেজে সতেরো মিনিট। হাতের ডায়েরিটা বিছানায় রেখে জানালা ঠেকানো মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে।
কি ভেবে যেন রেবেকা উঠে দাঁড়ালো। চোখ মুখ মুছে ওয়াশরুমের দিকে হাঁটলো। অযূ সেরে জায়নামাজটা বিছালো।
আসমান সমান গুণাহের বোঝা নিয়ে সিজদায় ঝুকে পড়লো। অতঃপর...
পুরো বাড়ি হু হু কান্নার শব্দে ছেয়ে আছে। রেবেকার দাফন হয়েছে বিশ মিনিট আগে। সকালে রেবেকার সিজদাবনত লাশ অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে জায়নামাজে।
রেবেকার ছোট বোন তনিমা।
লাশের পিছু পিছু গিয়ে বকুল তলায় দাঁড়িয়ে ছিলো কিছুক্ষণ সময়।
আহ! সেই বকুল তলা,কত স্মৃতি, কত মূহুর্ত কেটেছে এইখানে রেবেকার সাথে।
বকুল তলা থেকে কবরস্থান দেখা যায়।
বোনের দাফন স্বচক্ষে দাঁড়িয়ে দেখছে তনিমা।
দু'চোখ আজ শুকিয়ে গেছে।
পিঠাপিঠি বয়সের দু'জন। শৈশব, বেড়ে ওঠা সব কিছুতেই রেবেকার স্মৃতি মিশে একাকার হয়ে আছে।।তনিমার হৃদপিণ্ড এই শোক প্রকাশের মতো শক্তি পাচ্ছে না।দাফন শেষ হলে শেষবারের মতো বোনকে বিদায় জানিয়ে বাড়ি ফিরে আসে তনিমা।
কিছুতেই কলিজার টুকরা বোনের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না সে৷ বাড়ি ফিরে রেবেকার রুমটাতে ঢুকে খাটে কোণে এসে বসলো সে।
বিছানায় হাত বুলাতে গিয়ে চোখে পড়ে জানালার পাশে একটা খোলা ডায়েরি রাখা। হাতে নিয়ে আবিষ্কার করলো রেবেকার লিখা শেষ কথাগুলো...
"আজ আমার ভয় বড্ড ভয় হচ্ছে। আমি মরে গেলে কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াবো রব্বের সামনে? আমি কি জবাব দেব এত নাফরমানির? আমি কি করে এত বড় অকৃতজ্ঞ হয়ে গেলাম! তার অগণিত অনুগ্রহ ভোগ করে তারই হুকুম অমান্য করি? আমার তাক্বওয়া কোথায়?
নাফরমানদের যদি নিজের জীবন নেয়ার অনুমতি থাকতো আমি তা ই করতাম! আমার এই নগন্য জীবন নিয়ে রব্বের পবিত্র পায়ের নিচে রাখতাম আর বলতাম - মাফ করো ইয়া রব্ব! আমাকে সাজা দিয়ো না, আমার শক্তি নেই তোমার সাজা সহ্য করার।
ফজর হলে এই পাপী দেহ আর অন্তর নিয়ে সালাত আদায় করবো কী করে ? কোন মুখে নিয়ে কথা বলবো তোমার সাথে? যে জিহ্বায় তোমার নাম নিই,সেই জিহ্বায় কি করে খারাপ কথা উচ্চারণ করি আমি?
হে প্রিয় হৃদয়, তোমার তাক্বওয়া এতোই সামান্য ছিলো যে কামনা-বাসনার কাছে তা বিক্রি হয়ে গেছে!
তুমি কি জানতে না, হারাম কাজে একবার পোষাক ছাড়িয়ে নেয়া মানে নিজের ঈমান খুলে রাখা?
তুমি কি জানতে না, যিনায় লিপ্ত হওয়া নারী-পুরুষ কিয়ামত পর্যন্ত উলঙ্গ অবস্থায় শাস্তি পেতে থাকবে?
তুমি কি জানতে না, নিজের গোপনাঙ্গ প্রদর্শনকারী নারীর উপর মহান রব্বের অভিশাপ?
আর কত?
তাওবাহ করে আবার গুণাহ, আবার তাওবাহ আবার গুণাহ! আবার! আবার! আবার!
আর কত?
আর কত?
যদি আজ ই তোমার মৃত্যু হয়, তবে এই অপবিত্র দেহ আর অপবিত্র আত্মা নিয়ে তুমি আল্লাহ'র সামনে কি করে দাঁড়াবে?
ওও আল্লাহ, আমি এ কি করেছি নিজের সাথে?
এই কেমন পরিণতি আমার হয়েছে?
আমি কি ঈমানের সাথে মরতে পারবো না রব্ব?
আল্লাহ রে, তোমার পবিত্র নামের কসম করে তা রাখি নি। তুমি তবুও আমাকে অনুতপ্ত হওয়ার সুযোগ দিচ্ছো। তবুও আমার নিশ্বাস বন্ধ করে দিচ্ছো না!।
কত দয়াময় তুমি ইয়া রব্ব! কত দয়াময় তুমি!
আমার জীবন তোমার জন্য কোরবান হোক..."
রেবেকার আর ফজর দেখে নি.....

.

....................................................

 

শয়তানের কুমন্ত্রনা : অবৈধ প্রেম ও তার ভয়াবহ পরিণতি

 

আসসালামু  আলাইকুম।

আমি আর এ যন্ত্রনাটা নিতে পারছি না।  লাস্ট ৪/৫ মাস ধরে....
আমার বয়স ১৭ বছর।  গত ১ বছর আগে ক্লাসমেট এর সাথে রিলেশান হয়। তার আগে কখনও কোনো ছেলের সাথে কথা বলতাম না। খুব বেশি প্রয়োজন হলে অন্য কাউকে দিয়ে বলাতাম কারন ইসলামে ছেলে মেয়ের বন্ধুত্ব এলাও না।  কিন্তু ছেলেটা আমাকে অনেকদিন ধরেই পছন্দ করতো এবং জানিনা কেন আমি তার সাথে কোনো কথা না বলে কোনো সময় না কাটিয়েই তার প্রতি দুর্বল হয়ে যাই। সে আমাকে ফেবুতে মেসেজ করে ও আমাদের কথা হয়।  আমি তাকে ভালোবাসি স্বীকার করি আর বোঝাই যে ভালো কোথাও চান্স পেলে তারপর আবার কথা বলবো কারন আমি যথেষ্ট ভালো স্টুডেন্ট।  বাবা মার অনেক প্রত্যাশা আমায় নিয়ে।  আমি তাকে ৪/৫ দিন কথা বলেই ব্লক করে দেই কিন্তু তাকে ছড়া থাকতে কস্ট হচ্ছিলো।  ৭/৭ দিন পর বল্ক খুলে মেসেজ দেই।  তখন আমাদের মধ্যে কথা হয় সে কোনো দিন আমার ছবি পাবে না,  আমরা দেখা করবো না,  সে বিয়ে এর আগে আমাকে ছুতেও পারবে না। কিন্তু কিছুদিন পরেই সে খুব আবদার করে ছবির জন্য, হিজাব পড়া হলেও চাই।  তার আবদার না রেখে পারি না। আস্তে আস্তে ফোন কল।  পরে লক ডাউন হয়ে যায় রিলেশানের ৩ মাস পরেই।  তখন সারাদিন রাত কথা হতে থাকে। আগে পড়াশোনার ফাঁকে কথা হতো কিন্তু আস্তে আস্তে পড়াশোনা খারাপ হয় আর লক ডাউনে সারাদিন অবসর। সে ভিডিও কলের আবদার করে,  না না করেও তার ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে রাজি হই।  তখন হিজাব করে কথা হতো।  সে অনেক ভালোবাসত এখনও বাসে কিন্তু সে কোনো কথাই রাখে নি।  আমাকে হিজাব খুলে দেখতে চায়।  অনেক কান্না করি যেদিন প্রথম হিজাব খুলে চুল দেখাই  কারন আমি সবসময় পর্দা করতাম সবার সামনে।  কিন্তু সে সবসময়ই অনেক ভালোবাসা দিয়ে বোঝাতো আমিও বুঝতাম।  কিন্তু আস্তে আস্তে অনেক নোংরা জিনিস শুরু হয়।  তাকে বারবার বলেছি যে আর না আমার কষ্ট হয়।  সে বুঝতো আর কথা দিত এবারই শেষ।  আবার ভাংত কথা।  আমি তাকে বলতাম যে নোংরা লগে এসব নামাজের প্রতি আগ্রহ কমে যায়।  কিন্তু সে বারবার ই বলে এবারই শেষ।  কিন্তু তার ভালোবাসাটা মিথ্যা না।  তার আবদার আমার ডিপ্রেশন সব মিলিয়ে আমরা দেখা করি।  ভেবেছিলাম তাকে বলবো যে খুব কষ্ট হয় এগুলো আর আবদার করো না।  কিন্তু সে বুঝেও বোঝে না।  এরপর আমরা যতবার দেখা করি কিস,শরীরে হাত দেওয়া চলতে থাকে।  আমার ভয়, হতাশা বাড়তে থাকে।  আমাদের মধ্যে ৪ বার ফিজিক্যাল রিলেশন হয়েছে কিন্তু সে আমাকে জোড় করে কিছু করে নি প্রতিবার ভালোবাসা দিয়ে বোঝাতো।  এখন সে আবারও কথা দিয়েছে আর এসব চাইবে না। 
কিন্তু আমি ভেতর থেকে শেষ হয়ে গেছি।  আমি সারারাত কাঁদি,  বাবামার সাথে ছোট ভাইয়ের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হয় না।  তাকে হারানো কথা ভাবলে মাথা খারাপ হয়ে যায়।  ভেতরে ভেতরে চিৎকার করি।  আমি নিজের কষ্ট কাউকে বলতে পারি না।  তাকে বললে সে বোঝে না।  তার কথা আচ্ছা আমি তো আর এসব চাই না তুমি কেন কষ্ট পাচ্ছ।  আমি যখন তাকে এসব বলি যে কষ্ট হচ্ছে পারছি না আর আমি।  আমাকে একটু সাপোর্ট দাও । সে বলে যে কি সাপোর্ট দেবো। আমার সে ছাড়া কোরো বন্ধু নেই।  আমি ইন্ট্রোভার্ট। সে আমাকে বোঝে না।  আমি সবসময় মনে হয় অনধকার ঘরে দরজা দিয়ে থাকি আর তাই করি অধিকাংশ সময়।  
লেখাপড়া পিছিয়ে গেছি।  পড়তে বসলে মাথা ব্যাথা করে।  আমার মনে হয় আমি বাবা মা কে ঠকাচ্ছি আর তাকেও বারবার ব্রেকআপ এর কথা বলে কষ্ট দিচ্ছি।  কিন্তু সে আমাকে আর সামলাতে পারে না।  যখন আমার অস্বাবিক আচরনে সে একটু বিরক্ত হয় বা রেগে যায় আমার মনে হয় সুইসাইড করি। তাকে ছড়া আমি বা আমাকে ছাড়া সে কেউই বাঁটতে পারবো না।  কিন্তু তার না বোঝা গুলো বা আমার কথার গুরুত্ব না দেওয়া গুলো মানতে পারছি না।  আমি আগে টানা 7/8 ঘন্টাও পড়ছি এখন ৩০ মিনিটও পড়তে পারি না।  যদি নিজের সমস্যা নিয়ে ভাবতে যাই খুব মাথ্যা যন্ত্রনা হয়।  নতুন করে শুরু করতে চাই কিন্তু পারি না।  বারবার মনে হয় তাকে ছেড়ে চলে যাই,  রাস্তায় ইচ্ছা করে অসাবধানে হাটি মনে হয় ওর সামনে যেন একসিডেন্ট হয় ও যেন আমার মূল্যটা বোঝে।  ৩ বার হাত কাটছি। আমি আর সহ্য করতে পারছি না কিছুই।
(cltd)

.

শয়তান কিভাবে এই পর্দানশীল বোনকে ধাপে ধাপে আস্তে আস্তে বড় পাপের দিকে নিয়ে গেল। হে আমার ভাই ও বোনেরা শয়তান কে বিন্দু মাত্র সুযোগ দিয়েন না। শয়তানের কৌশল ও চক্রান্ত খুবই জটিল ও মারাত্মক। শয়তান ধাপে ধাপে ছোট ছোট পাপের মাধ্যমে বড় পাপের দিকে নিয়ে যায়। ঈমান আমল সব শেষ করে দেয়। 

.

‘আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না; সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৬৮)

‘হে মুমিনরা! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ কোরো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২০৮)

মহানবী (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই শয়তান মানুষের শিরা-উপশিরায় বিচরণ করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১২৮৮)

.

এখনো সময় আছে ফিরে আসুন। ফিরে আসুন আপনার সবচেয়ে দয়ালু সবচেয়ে ক্ষমাশীল প্রতিপালকের কাছে। সময় শেষ হবার আগেই ফিরে আসুন। হারাম সম্পর্কের আগুন থেকে ফিরে আসুন। তাওবাতুন নাসুহা (খাঁটি তাওবা) করে ফিরে আসুন। মালাকুল মউত আসার আগেই ফিরে আসুন।

--------------------------------------------------

 

প্রথমেই বলে নেই, ঘটনাটি যে ভাইয়ের তার অনুমতি নিয়েই লেখা হচ্ছে এবং তার কোন পরিচয়ও প্রকাশ করা হচ্ছে না। তাই এটা গীবত এবং গোপন গুনাহ প্রকাশের ভেতর পড়বে না ইন শা আল্লাহ।
 
গতকাল ফজরের পর এক ভাইয়ের সাথে মসজিদুল হারমের চত্তরে দেখা হয়। ম্যাসেঞ্জারে নক করে খুব জরুরী একটি প্রয়োজনে দেখা করতে চাচ্ছিলেন। সেই সুবাদে আমরা মিট করি।
 
কী ব্যাপার, জানতে চাইলে তিনি বেশ অনেকক্ষন কোন কথা বলতে পারছিলেন না কান্নার কারনে। পরবর্তীতে কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার পর বললেন, ভাই! আমি খুব বড় এক গুনাহতে লিপ্ত হয়ে গিয়েছি। 
 
বললাম, আল্লাহ তো সব গুনাহই মাফ করেন। আর আপনি আছেনও অনেক পবিত্র একটি জায়গায়। তাওবা করেন, ইন শা আল্লাহ আল্লাহ তাআলা সব গুনাহই মাফ করবেন। আমাকে ডিটেইলস বলার দরকার নেই।
 
উনি বললেন, না ভাই! আপনি একটু শুনেন এবং পরামর্শ দিন। 
 
রাজি হওয়াতে তিনি যেই গুনাহের বিবরন দিলেন, গায়ের পশম দাড়িয়ে যাওয়ার মত। 
 
সংক্ষেপ কথা হলো, তার পরিচিত একজন মহিলা এবার মাহরাম ছাড়া সম্পুর্ন একা হজ্বে এসেছেন। এজেন্সি থেকে ব্যবস্থা করেছে। অন্যান্য মহিলাদের সাথে তিনিও চলে এসেছেন। তো হজ্বের আগে থেকেই তিনি বিভিন্ন বিষয়ে জটিলতায় পড়ছেন। খাবার দাবারে সমস্যা, শারিরিক অসুস্থতা ইত্যাদি। যেহেতু বাকি সবাই তাদের ফ্যামিলির সাথে এসেছেন, তাই কারো থেকে সেভাবে হেল্পও পাচ্ছেন না। 
 
এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে সেই মহিলা এই ভাইয়ের কাছে হেল্প চায়। এবং সেই ভাইও মানবতার খাতিরেই তাকে হেল্প করা শুরু করেন। একটা পর্যায়ে তারা একসাথেই যেয়ে হোটেল থেকে খেয়ে আসতেন, মসজিদে একসাথে আসতেন, এমনকি সেই ভাই আরাফা থেকে মুযদালিফাতে আসা, কংকর মারাসহ যাবতীয় কাজগুলোতে তাকে পাশে থেকে সহযোগীতা করতে থাকেন। 
 
আশা করছি, কিছুটা হলেও আঁচ করতে পারছেন, সহযোগীতার উদ্দেশ্যে প্রথমে এগিয়ে এলেও তাদের ভেতরকার সম্পর্ক আরও এডভান্স হয়ে গিয়েছে। 
 
হজ্বের পর। অফুরন্ত সময় সবার। কোন কাজ নেই। দুনিয়াবী ব্যস্ততা নেই। সেই ভাই প্রতিদিন দেখা করতে তার হোটেল যান। গল্পগুজব করেন। অবশেষে যা ঘটার তাই ঘটে। কোন এক সন্ধ্যায় তারা চুড়ান্ত পাপে লিপ্ত হয়ে পড়েন।
 
অবাক করা বিষয় হলো, এই দুজনই বিবাহিত। দেশে তাদের ফ্যামিলি আছে। এবং তাদের ভেতর হজ্বে আসার আগে কেবল হাই/ হ্যালো ছাড়া আর কোন ধরনের কোন সম্পর্কই ছিল না।
 
———————-
এই ঘটনায় কে বেশি দোষী কে কম, তা নির্ণয়ের জন্য এই পোস্ট দেয়া হয় নি। গোনাহ দুজন থেকেই হয়েছে, তাওবা করা উভয়ের জন্যই জরুরী। 
 
তবে সর্বপ্রথম যেই ভুলটা হয়েছে, তা হলো সেই বোনের মাহরাম ছাড়া হজ্বে আসা। আল্লাহ এবং তার রাসুলের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তিনি যদি এখানে না আসতেন, এরকম অপরাধে তিনি জড়াতেন না, অন্যকেও লিপ্ত করতেন না। নানা ধরনের লজিক এবং যুক্তি আমরা দেখালেও, খাইর বারাকাহ এবং আমানের ফায়সালা যে ১৪০০ বছর আগের সেই রাসুলের পরামর্শের ভেতরই নিহিত, তা আমাদের অনেকে মানতেই চান না।
 
তাছাড়া কেবল এই গুনাহের জন্য বলছি না, হজ্জ উমরাহর সফর অন্য যে কোন সফর থেকেই ভিন্ন। এই পুরো সফরটাই একদিক থেকে যেমন ইবাদত, তেমনি এখানে এমন কিছু কার্যক্রম রয়েছে, যেগুলো একজন মাহরাম ছাড়া একজন মহিলার জন্য সম্পন্ন করা সো টাফ। 
 
তাই যারা সামনে একাকী সফরের চিন্তা করছেন, তারা আশা করি আরেকবার একটু ভেবে দেখবেন।….
 
- রিজওয়ানুল কবির।
-------------------------------------

 

 

 

#পর্দায়প্রত্যাবতন
#গল্প ০১

 

গতকাল আমরা বোনদের কাছে নিজের পর্দায় প্রত্যাবর্তন এর গল্প পাঠাতে আহ্বান করেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ! বেশকিছু বোন নিজের পর্দায় ফেরার গল্প আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। তা এখন ধারাবাহিকভাবে এক এক করে পোস্ট করা হবে ইন শা আল্লাহ।

আমার জন্ম প্র্যাকটিক্যাল ইসলাম মানা ফ্যামিলিতে হয় নি। যদিও আমার বাবা-মা নামাজ ঠিকমতোই আদায় করেন। কিন্তু ইসলামের অন্যান্য নিয়ম নিয়ে এখানে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমি আমাদের দেশের অধিকাংশ মেয়ের মতোই বড় হয়েছি। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাজগোজ করে গিয়েছি, বেপর্দা চলা-ফেরাও করেছি। এভাবেই এইচএসসি পাস করলাম।

এডমিশন পরীক্ষা দিলাম, বি এস সি নার্সিং এ চান্স হলো। কলেজে যাওয়ার পরও কিছুদিন বেপর্দা চলা-ফেরা করেছি। নামাজ ঠিকমতো আদায় করি নি।

তারপর ওয়েটিং লিস্ট থেকে ১৫ দিন পর একটা নতুন মেয়ে ভর্তি হলো এবং আমার রুমমেট হলো সে। তার মাধ্যমেই নামাজে মনোযোগ আসলো, অবশ্যই হয়তো আল্লাহর রহমত ছিলো। রুমমেট ছিলো উছিলা মাত্র।

লাস্ট যেদিন বেপর্দা বের হয়েছিলাম সেদিনের অনুভূতি এখনো মনে আছে। রাস্তার লোকজনের চাহনি আমাকে আরো বিব্রত করে তুলছিলো। ওই দিন মাঝপথে অন্যদের রেখে জোর করে ফিরে এসেছিলাম হোস্টেলে।

আসরের নামাজে বসে অনেক কেঁদেছি, তওবা করেছিলাম আর ক্ষমা চেয়েছিলাম আল্লাহর কাছে। আল্লাহ আমার সেই দুয়া কবুলও করেছেন। ওই সময় একটা হারাম রিলেশনের আবেগেও পড়েছিলাম। যদিও রিলেশন ছিলো না। কিন্তু মগজে ওসব চিন্তাই থাকতো সব সময়। আমি আবারো আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলাম। দোয়া করলাম। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমায় হেদায়াত দিয়েছেন, আমার দোয়া কবুল করেছেন। আর সেই সময় পরিচয় হয় মেডিকেল এবং নার্সিং এর কিছু আপুদের সাথে। তাদের উসিলায় আল্লাহ আমাকে আরও হেদায়াত দান করেন।

নিয়মিত তাফসির, ইসলামিক আলোচনার প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। তারপর একদিন সাহস করে হাত ও পা এর মোজা কিনি, ফেসবুক থেকে সব পিকচারও ডিলেট করি। বন্ধুর সংখ্যা আস্তে আস্তে সীমিত করে ফেলি। যদিও সম্পূর্ণ পারিনি, এখনও চেষ্টা করছি। বাড়িতে পর্দার জন্য তেমন বাধা দেয় নি। কিন্তু গায়রে মাহরাম সম্পর্কে তারা একেবারেই অজ্ঞ। হাত ও পা মোজা নিয়ে ফ্যামিলির কয়েকজন নেগেটিভ মনোভাব দেখিয়েছে, মুখে কিছুই বলে নি। কিন্তু বাসায় সবসময় পরপুরুষের আনাগোনা লেগেই আছে। হয় আব্বার পরিচিত লোকজন, দূরের আত্মীয় নয়তো বাসায় আশেপাশের লোকজন। তখন যে কেমন লাগে নিজেকে বলে বোঝাতে পারবো না। কিন্তু পরিবারকেও বোঝাতে পারি না।

লক ডাউনে বাসায় আটকে পড়ে এভাবেই চলছে সব। প্রথম প্রথম কান্না আসতো। কিন্তু এখন আর আসে না। আল্লাহ হয়তো আমার উপর নারাজ তাই আমার মনটাকে কন্ট্রোল করতে পারছি না। দুনিয়ার নেশায় মত্ত হয়ে যাচ্ছি দিন দিন। তবুও বার বার দোয়া চাইছি আল্লাহ যেনো আমাকে তাঁর পথে অটল রাখেন।

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3466200306728038

...........................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ০২

 

আমরা বোনদের কাছে নিজের পর্দায় প্রত্যাবর্তন এর গল্প পাঠাতে আহ্বান করেছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ! অনেক বোন নিজের পর্দায় ফেরার গল্প আমাদের কাছে পাঠিয়েছেন। তা ধারাবাহিকভাবে পোস্ট করা হচ্ছে। আজ ২য় পর্ব।

সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠা আসা, আমার মধ্যে ধর্মের প্রতি অগাধ বিশ্বাস, আল্লাহর প্রতি ভরসা সবসময়ই ছিল। যখন মাধ্যমিকে পড়তাম তখন আমার এক ধার্মিক বান্ধবী টিফিন পিরিয়ডে বাড়ি থেকে ভাত খেতে গেলে, সাথে যোহর সালাত আদায় করে আসত।আমি যোহর সালাত আদায় করতে পারতাম না, আমার বাড়ি থেকে স্কুল দূরে ছিল। আমি শুধু ভাত খেয়েই যেতাম। আমি সবসময় তার সঙ্গ পাওয়ার চেষ্টা করতাম। তাঁর প্রতি আমার প্রচন্ড রকম শ্রদ্ধাবোধ ছিল। আমি তার পাশে বসে বসে যোহর সালাত আদায় করতে না পারার জন্য আফসোস করতাম। পরিবার থেকে দ্বীনের জ্ঞান বলতে, মক্তবে পড়তাম, সেখানে যা পড়াই তো তাই। এর বেশি ইসলাম সম্পর্কে জানার আমার কোন সুযোগই ছিল না।

২০১৬ সালে এ গ্রেড নিয়ে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হলাম। প্রথম স্বপ্ন ভঙ্গ এখানেই হলো এ+ পাই নি। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ইসলাম ধর্ম বই ছিল না, ছিল শুধু মানবিক বিভাগে। আমার কেমন যেন খুব কষ্ট লাগত, ইসলাম ধর্ম বই পড়তে না পারার জন্য। আমার মনে হত, ইসলাম সম্পর্কে না পড়ার ফলে, দ্বীন থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। বুকের ভেতর শূণ্যতা, হাহাকার কাজ করত। মনে হত,আমি কি যেন হারিয়ে ফেলেছি। আলহামদুলিল্লাহ্ ছোট থেকে ব্রিলিয়ান্ট ছিলাম, রেজাল্ট তো ফার্স্টই থাকত। আমি কলেজে প্রথম প্রথম বোরকা পরে যেতাম, মা-বাবা বকাবকি করতো অনেক। পরে বোরকা ছেড়ে এপ্রোন পড়তাম শুধু।

মোটামুটি আধুনিক হয়ে উঠছি, তাতে মা-বাবা অনেক খুশিই ছিল। কলেজের কিছু দ্বীনি (আমার ধারণা, বাকিটা আল্লাহ্ জানেন) বোন আমাকে বোরকা পড়তে বলতো, চুল ঢেকে রাখতে বলতো। তবে মোটামুটি শালীন ছিলাম। এরপর স্কুলের এক জুনিয়র বোনের মাধ্যমে আমি "পর্দা - The Sign of Modesty" গ্রুপে যুক্ত হলাম। আলহামদুলিল্লাহ্! এরপর থেকে আল্লাহ্ আমাকে পরিবর্তন করে দিলেন।

দুনিয়ার সব কিছু ছেড়ে দিলাম, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে আমার জন্য একটা বিয়ের প্রস্তাব আসল। পাত্র সম্পর্কে কোনকিছু না জেনে আমার মা-বাবা পারিবারিকভাবে দেখা সাক্ষাতের ব্যবস্থা করল। আমি পাত্রের সামনে গিয়ে কান্না করে দিলাম ভয়ে, বিয়ে সম্পর্কে তেমন বুঝ ছিল না। আর এটা জানতাম পাত্র দ্বীনি না, আধুনিক। আমি শিউর ছিলাম, পাত্র আমাকে পছন্দ করবে না। আমারও পাত্র পছন্দ হয় নি, আমি অবশ্যই চেহারার দিকে তাকাই নি। শুধু পায়ের দিকে দেখে, আমি একদম না ছিলাম, কারণ টাখনুর উপরে কাপড় পড়ে নি।

যেই ভাবা সেই কাজ, পাত্র আমাকে পছন্দ করে নি। এরপর থেকে আরেক সংগ্রাম মা শুধু বলে আমার প্রেমের সম্পর্ক আছে, সেজন্য কান্না করছি। তাদের নাকি মান-সম্মান চলে গেছে। আমি আমার কষ্ট, মাকে খুব করে বোঝানোর চেষ্টা করতাম, মা শুধু অপমান করতো, কটু কথা বলত। আমি খুব কষ্ট পেতাম, সালাতে আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতাম। তবুও তখন বোরকা পড়তে দিতো না। আমি খুব করে চাইতাম, পর্দা করার জন্য। কিন্তু আমাকে বোরকা কিনে দেওয়া হতো না, আমি কান্নাকাটি করতাম। মা-বাবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম, আর আল্লাহর কাছে দু'আ করতাম।

২০১৮ তে এইচএসসি দিলাম আইসিটি পরীক্ষা খারাপ হলো, আমার সে কি টেনশন! আমার মরে যাওয়ার মত অবস্থা হলো। পরিবার শুধু অপমান করত। আমার বেঁচে থাকা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছিলো। পরীক্ষা খারাপ হওয়ার পর থেকে ইসলাম একদম খুব কঠিনভাবে আঁকড়ে ধরলাম। সব বিধি-বিধান পালন করা শুরু করে দিলাম। পরিবারের সদস্যদের অপমানে, আঘাতে আমার হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছিল।

আমি নিশ্চিত ছিলাম আমি ফেইল করব, কিন্তু আমি আল্লাহর কাছে দু'আ করা ছাড়ি নি, ভরসা ছাড়ি নি। আল্লাহ আমার দু'আ কবুল করেছেন। আমি পাস করেছি ২০১৮ তে এ গ্রেডে। বিশ্বাস করুন, আল্লাহ্ আমাকে অলৌকিকভাবে পাস করিয়ে দিয়েছেন। আইসিটি বহুনির্বাচনিতে আমি ফেইল করতাম। আমাকে আল্লাহ্ সাহায্য করেছেন। একদম অলৌকিকভাবে আমি পাস করেছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে শেষ করা যাবে না। এরপর পরিপূর্ণ পর্দা করতে চাইতাম, কিন্তু মা বোরকা কিনে দিতো না।

"হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব : ৫৯)।

আমি আল্লাহর কাছে দু'আ করতাম। নিজের টিউশনির টাকা দিয়ে বোরকা নিছি, তবুও পরিপূর্ণ পর্দা করতে পারতাম না। ২০১৮ তে ভার্সিটির কোচিং করেছি, চান্স হয় নি। সেটার জন্য অনেক অপমান সহ্য করতে হয়েছে। আমার অবশ্যই ভার্সিটিতে পড়ার তেমন ইচ্ছা ছিল না, মহিলা কলেজে পড়ার ইচ্ছা ছিল।

যে ব্যক্তি শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করেন তিনি তার জন্য সহজ করে দেন।২০১৮ তে অনার্সে ভর্তির জন্য টাকার প্রয়োজন ছিল। বাবার ব্যাংক ব্যালেন্স ছিল। মা কিছুতেই সঞ্চয় করা টাকা দিয়ে ভর্তি করাতে রাজি হয় না। মা বলে ঋণ নিয়ে ভর্তি করাব। আমি নাছোড়বান্দা! ঋণ নেওয়া টাকা দিয়ে ভর্তি হবোই না। শেষ পর্যন্ত সেই বছরে ভর্তি হই নি। মা বদদোয়া করত, বলে আজকে তো সুদ হারাম বলে ঋণ নিয়ে পড়তেছো না।

দেখিও, তোমার জামাই সুদখোর হবে। আমি কান্না করতাম, শুধু দু'আ করতাম আল্লাহ্ যেনো আমাকে হারাম থেকে বাঁচান।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যেভাবে রিবার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন সেটা অন্য গুণাহর ক্ষেত্রে করেননি -

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না কর তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও… (আল বাক্বারাহ, আয়াত : ২৭৮-২৭৯)।

তারপর থেকে শুধু দু'আ করতাম আল্লাহ্ যেন হালাল ইনকামের টাকা দিয়ে এডমিশন নিতে পারি। ২০১৯ সালের প্রথম দিকের চার মাস একটা দাখিল মাদরাসায় টির্চিং করেছি। এরপর যন্ত্রণা খুব বাড়তেছিল। দ্বীন পালনের জন্য মা শুধু বদদোয়া করত, আমি এখানে সেখানে যাই না কেন, পর্দা করি বুড়ি সাজসি কেন, বিয়ে দিতে পারবে না এসব বলতো। শারীরিক, মানসিক যন্ত্রণায় আমি ভেঙে পড়তাম। সিদ্ধান্ত নিলাম প্রাইভেট কোম্পানীতে চাকরি করব। আমি ভাবলাম, নিজের খরচ নিজেই চালাতে পারলে মা কন্যাসন্তান বোঝা মনে করবে না। অন্তত দ্বীন পালনে বাধা দিবে না।

সেই ভাবা সেই কাজ, চাকরির জন্য চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে ইন্টারভিউ দেওয়া শুরু করলাম। একটা প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউতে ঠিকে জয়েনিং এর জন্য গেলাম, তারা বলে বোরকা পরতে পারবে না। জয়েনিং না করে চলে আসছি। আরেকটা প্রতিষ্ঠানে জয়েনিং করেছি ৩-৪ দিন ডিউটি করলাম। একদিন ম্যানেজার কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার নাম করে হাত স্পর্শ করলো। আমি জানি না, এই স্পর্শ ইচ্ছাকৃত ছিল নাকি অনিচ্ছাকৃত ছিল। এর পর দিন থেকে চাকরি ছেড়ে দিলাম। আর যাই নি। আমি আল্লাহর কাছে সবসময় দু'আ করতাম, আল্লাহ্ পর্দা মেনটেইন করতে পারি এরকম একটা হালাল উপার্জনের ব্যবস্থা করে দিন।

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি তুমি আল্লাহরজন্য কিছু ছাড়, আল্লাহ তাআলা এরবিনিময়ে তোমাকে এমন কিছু দান করবেন,
যা তোমার ছেড়ে দেয়া বস্তু থেকে অনেকউত্তম হবে।
[মুসনাদে আহমাদ, হাদিসের মান : সহিহ]।

আলহামদুলিল্লাহ্, আল্লাহ্ দু'আ কবুল করেছেন। চট্টগ্রাম শহরে এক বোন অনেক সাহায্য করেছে, থাকা খাওয়া সব দিক দিয়ে। আল্লাহ্ বোনকে উত্তম প্রতিদান দান করুক।

এরপর শহরে ছেড়ে গ্রামে চলে আসলাম। পরিবারের কত অপমান সহ্য যে আমি করেছি, আমার নিজের কাছে ভাবতে অবাক লাগে। আল্লাহ্ আমাকে ধৈর্য দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ্। গ্রামে এসে টিউশনি আবার শুরু করলাম, তাতে অনেক কটু কথা শুনতাম। মা বলত বিয়ে না করে, প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করো। অথচ আমি বিয়ের জন্য আল্লাহর কাছে প্রত্যেক সময়ই দু'আ করে যাচ্ছিলাম। মার একথা বলার কারণ হলো, মার পছন্দে আমি বিয়ে করতে রাজি হয় না। তিনি আমার জন্য শুধু সম্পদশালী, দ্বীনহীন ছেলে নির্বাচন করে। দ্বীনি ছেলেকে বিয়ে দিতে রাজি হয় না, মায়ের দ্বীনি ছেলে পছন্দ না।

২০১৯ সালে সেপ্টেম্বরের দিকে নিজের টাকা দিয়ে অনার্সে ভর্তি হলাম মহিলা কলেজে। পরিপূর্ণ পর্দা শুরু করতে পারলাম। আলহামদুলিল্লাহ্, আল্লাহ্ আমার দু'আ কবুল করেছেন।

২০২০ সালের প্রথম দিকে এক দ্বীনি ছেলের প্রস্তাব আসল। আমাদের পক্ষ থেকে সব পছন্দ হয়েছে। তাদের পরিবার ও আমাকে অনেক পছন্দ করেছে। ছেলে খুব বেশি পরিমাণ দ্বীনি ছিল (আল্লাহ্ ভালো জানেন) আমারও অনেক পছন্দ হয়েছে। ফাইনাল কথা হওয়ার আগে, ছেলে পক্ষ থেকে না করে দিল। কারণ হলো, আমাদের বাড়ির কেউ একজন নাকি বলেছে, মেয়ের মা-বাবা ভালো না। তারা ধারণা করলো মা-বাবা দ্বীনি আর ভালো না হলে মেয়েও ভালো হবে না। আমি একটু ভেঙে পড়লাম। সব ঠিকঠাক হয়ে ভেঙে গেলো। এই কথা মনে হলে সালাতে কান্না আসত।

"হতে পারে কোন বিষয় তোমরা অপছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হতে পারে কোন বিষয় তোমরা পছন্দ করছ অথচ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। বস্তুত আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না।" (সূরা বাকারা, আয়াত : ২১৬)।

আল্লাহ্ সহজ করে দিয়েছেন। আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকলাম।ইবাদতে বেশি সময় দিলেও মা বকাবকি করে। সব সৎকাজে বাধা প্রদান করে। আমি ধৈর্য ধারণ করি, আল্লাহ্ সহজ করে দিয়েছেন।

'ইয়া মুকাল্লিবাল ক্বুলুব সাব্বিত ক্বালবি আলা দ্বীনিক'!

দু'আ প্রার্থী!

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3465007776847291/

...............................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ০৩


গত ৯ মাস আগেও আমি চুল খোলা রেখে টপস-জিন্স পড়া ছাড়া বাইরে বের হতাম নাহ। নামাজ কাজা হলে ও মনে অশান্তি কাজ করতো নাহ। সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪/৫ টা পর্যন্ত কলেজ, কোচিং নিয়ে বাইরে বাইরে দৌড়াদৌড়ি চলতো। হিজাব ব্যবহার করতাম শুধু মাত্র নিজের ফ্যাশন হিসেবে। পর্দা করার জন্য নাহ। সারাক্ষণ ছবি তুলতাম আর ফেসবুকে আপলোড দিতাম। সত্যি বলতে আমার বাসার সবাই মানে আম্মু-আব্বু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়লেও কখনও আমাকে পর্দা করা নিয়ে, নামাজ পড়া নিয়ে কোনো প্রেশার দেয়নি। নিজের লাইফ নিয়েও কোনোরকম চাপ দেয়নি। যা হয়েছে সব আমার ইচ্ছাতেই হয়েছে।

৯ মাস পর!

আল্লাহ আমাকে হেদায়েত দিয়েছেন আমার এক বান্ধবীর মাধ্যমে। যে আগে থেকে মোটামুটি পর্দা করতো। সে বললো, "চল এইবার আমরা দু'জন একই রকমের দু'টো বোরকা কিনি"। আমি আবার তাদের কথা বেশি শুনতাম। তাছাড়াও আমি গার্লস কলেজে পড়ি। গার্লস কলেজের প্রায় বেশিরভাগ মেয়েই পরিপূর্ণ পর্দা করে। আর তাদের সাথে মোটামুটি আমার ভাবটাও বেশি। কলেজ ছুটির পর যখন তারা ওয়াশরুমে গিয়ে বোরকা, নিকাব, হাত মৌজা, পা মৌজা পড়তো আমি তখন ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম কতো সুন্দরই না লাগছে তাদের। তখন আমার ও ইচ্ছা করতো ওদের মতো পরিপূর্ণ পর্দা করে চলার।

তারপর যে ভাবা সেই কাজ, আমার ঐ বান্ধবীর সাথে সেইম দু'টো কুচকুচে কালো বোরকা কিনি। বোরকা কিনে বাসায় আনতেই আম্মু আর ছোট ভাই বলেই ফেললো "দেখবো, এই ভূত মাথায় কয়দিন থাকে"!

সেদিন কিছুই বলতে পারিনি তাদের। আত্মীয়-স্বজন তো খোঁটা দেওয়ার জন্য একচুলও জায়গা রাখেনি। যেখানে তাদের সাপোর্ট আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল, তারাই আমাকে হাসির পাত্র বানিয়ে দিয়েছিলো।

যাই হোক, বোরকা কেনার পরদিন যখন তা পরে কলেজে গেলাম আমার সব দ্বীনি বান্ধবীরা এত্তো এত্তো খুশি হয়েছিলো। তারাই একমাত্র আমাকে পর্দা করার জন্য অনুপ্রাণিত করলো। এবং সেদিনই হাত মৌজা, পা মৌজা সব কিনে ফেলি। এরপর ফেসবুক থেকে এক এক করে সব ছবি ডিলিট করি। তারপর চিন্তা করি, আচ্ছা শুধু পর্দা করলে/ছবি ডিলিট করলেই কি শেষ?

নামাজ পড়া শুরু করলাম। তাহাজ্জুদ এর নামাজ থেকে শুরু করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত পড়লাম। আল্লাহর রহমতে ঐদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমার কোনো নামাজ কাজা হয়নি, আলহামদুলিল্লাহ। সেদিন থেকে আমার মন থেকে সব আফসোস হতাশা যেনো এক এক করে মুছে যেতে লাগলো। অন্তরে এক প্রকার শান্তি অনুভব হতে লাগলো। কোচিং বাদ দিয়ে দিলাম। যাতে বাইরে বেশিক্ষণ থাকলে নামাজ কাজা না হয়।

বাসায় টিচার রাখলাম। রাস্তা দিয়ে যখন আগে চলাফেরা করতাম বখাটে ছেলেদের এক একটা কথায় গা ঘিন ঘিন করতো। কিন্তু এখন বোরকা পরে তাদের সামনে হেঁটে গেলে তারা আমায় চিনতেও পারে না বরং মাথা নিচু করে রাখে। তখন যে কি শান্তি লাগে।
নিজেকে নিজের কাছে খুব দামী মনে হয়।

কিছুদিন আগে গ্রুপে আমার কিছু ছবি পোস্ট করেছিলাম, আপুমনিরা অনেক অনেক ভালোবাসা দিয়েছিলো। আমার আগের ছবি তাদের জন্যই দেয়া। আর আমার এই পরিবর্তনের বাস্তব অভিজ্ঞতা তোমাদের সাথে শেয়ার করার একমাত্র কারণ হলো, আমার মতো যেসব বোনেরা পর্দা করার পরিকল্পনা করছো, নিজেকে পরিবর্তন করতে চাচ্ছো কিন্তু লোকের নানান কথার ভয়ে করতে পারছো না, তাদের বলছি তোমরা লোকের কথা কানে নিও না। লোকেরা তোমাকে নিয়ে দু'একদিন হাসিতামাশা করবে। পরে তোমার এই দীর্ঘ পরিবর্তন দেখে তারাই বলবে "ইশশশ! ওর মতো যদি পরিপূর্ণ পর্দা করতে পারতাম"!

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3466035340077868/

................................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ০৪

 

আমি ছিলাম দ্বীনের সম্পূর্ণ বিপরীত। আমার আব্বু-আম্মু অনেক ইবাদতগুজার মানুষ, সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। কিন্তু আমি তাদের মেয়ে হয়েও ছিলাম পুরাই উল্টো। সবার ছোট হওয়াতে তেমন শাসনও করতেন না, নিজের ইচ্ছামতোই চলতাম!
.
তবে পরীক্ষা আসলে হয়ে যেতাম আম্মু-আব্বুর পারফেক্ট উত্তরসূরি। তখন শুধু নামাজের জন্য অপেক্ষা করতাম, কখন আল্লাহর কাছে চাইবো ভাল ফলাফলের আশায়। কেননা এইটুকু জানতাম আল্লাহর কাছে যা চাই তাই পাই।
.
তাই যখন যা মন চাইতো আল্লাহর কাছে চাওয়ার জন্যই স্রেফ নামাজ পড়া। যা চাইতাম তা পাইতামও আলহামদুলিল্লাহ্‌। কিন্তু পেয়ে গেলেই আল্লাহর অনুগ্রহ ভুলে গিয়ে আবার পূর্ববতী জীবনে ফিরে যেতাম। যেমনটা কুরআনে আছে -
.
"মানুষ যখন দুঃখে-কষ্টে নিপতিত হয় তখন দাঁড়িয়ে, শুয়ে, বসে আমাকে স্মরণ করে; আর যখন উদ্ধার করি তখন ভুলে যায়।"
.
আমার অবস্থা ছিল অনেকটা সেইরকমই।
তবে হ্যাঁ যারা আল্লাহর কথা বলতো, ইসলামের কথা বলতো তাদেরকে খুব সম্মান করতাম। শুনতে ভালো লাগতো, মনে হতো এইবার ঠিক হয়ে যাবো। কিন্তু হওয়া আর হতো না!
.
এমন করতে করতে কলেজ লাইফ শেষ হয়ে যায়। তখনও দ্বীন নিয়ে আমার তেমন মাথাব্যাথা নেই।
এরপর ভার্সিটিতে নিজের পছন্দ মত সাবজেক্ট নিয়ে ভর্তি হলাম। তবে কোন ভার্সিটিতে এডমিশন নিবো সেটার চয়েজ আমার ছিল না, ছিল পরিবারের!
এটার জন্য পরিবারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। হয়তো এই ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়াই ছিল আমার জন্য দ্বীনে ফেরার প্রথম ধাপ, আলহামদুলিল্লাহ্‌ !
.
'ইসলামিক ভার্সিটি' বলে জীবনে প্রথম বোরকা আর হিজাব পরা শুরু করলাম। সেটাতে কোন মনের টান ছিলনা, স্রেফ ভার্সিটির রুলস ছিল তাই পরতাম।
শুধু ভার্সিটি যাওয়ার সময়ই পরা হতো, অন্যসময় গায়েব।
.
আমাদের ভার্সিটিতে কয়েকটা এরাবিক সাবজেক্ট ছিল! সেগুলো আবার আমি বেশ উৎসাহের সাথে করতাম। অনেকের কাছে শুনতাম এই ক্লাসগুলো খুব বোরিং লাগতো, কিন্তু আমার কাছে বেশ ভালো লাগতো! ওই যে বললাম কেউ ইসলাম নিয়ে কথা বললে ভালোই লাগতো, কিন্তু মানতে পারতাম না!
.
এভাবেই শুরু করি চুরি পর্দা! চুরি পর্দা এজন্যই বলা যে, যখন ইচ্ছা করতাম যখন ইচ্ছা ছাড়তাম। যার সাথে না ছিল অন্তরের প্রশান্তি, না ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি !
তখনও আমি জানতাম না মেয়েদের জন্য পর্দা করা ফরজ।
.
একদিন আপু আর ভাইয়া (আপুর হাসবেন্ড) আসলো আমাদের বাসায়। হঠাৎ আপু ডাকলো কিছু ছবি দেখাতে। আমিও গেলাম! বেশ অনেক আগের ছবি ছিল ল্যাপটপে। কোন ছবি কোন সময়ের তোলা, এই নিয়ে কথা হচ্ছিল। অনেকটা স্মৃতিবিচরণ যাকে বলে!
তো ভাইয়া একটার পর একটা ছবি দিচ্ছেন, আর প্রশ্ন করছেন কোনটা কখনের বলো তো শামীম (আপু)/মিমি! আমরা দুইজন বলি! ছবিগুলো দেখতে মজাই লাগছিল।
.
কিন্তু সেইদিনই যে আমার দ্বীনে ফেরার শেষ ধাক্কাটা খাবো জানতাম না। যাকে বলে 'ট্রাইট্রেশন'! হয়তো ভাইয়া টার্গেট নিয়ে এগুচ্ছিল, আমি বুঝতে পারিনি। ভাইয়া একের পর এক ছবি স্ক্রল করতে থাকেন। হঠাৎ একটা ছবিতে থেমে গিয়ে আমাকে বলে এই লিখাটা মন দিয়ে পড়ো! লিখাটা ছিল এমন -
.
"মানুষ চাইলে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারে, মৃত্যু থেকে নয়। অথচ মানুষ চাইলে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারে, মৃত্যু থেকে নয়।"
.
লিখাটা পড়ে আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না!
আমার নিরবতা দেখে ভাইয়া বললেন, বুঝছো এটা?
আমি কিছু বলার আগে ভাইয়া বলল, তুমি জাস্ট একবার চিন্তা করো, এই যে তুমি এখন এখানে বসে আছো কাল পর্যন্ত বেঁচে থাকবা তার কি কোন গ্যারান্টি আছে? অথচ তুমি যদি তওবাহ করে ফিরে আসো, কাল মরলেও তুমি জান্নাতে যাবা এটা কিন্তু নিশ্চিত! আমি হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম!
.
তারপর ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করতে লাগলাম, একের পর এক প্রশ্ন। আর ভাইয়ার উত্তর গুলো সত্যি খুব ইন্টারেস্টিং লাগছিল!
আমি বললাম : জীবনে তো অনেক গুনাহ করে ফেলেছি, আল্লাহ কি মাফ করবেন?
- ভাইয়া কয়েকটা আয়াত বলে আমাকে নিশ্চিত করলো যে, পাহাড় সমপরিমাণ গুনাহ করেও যদি তওবাহ করে আল্লাহ ক্ষমা করবেন। তার মধ্যে ভাইয়া এটাও জানিয়ে দিলেন আমরা প্রতিনিয়ত কি কি হারাম কাজে জড়িত; যেমন : গান-বাজনা!
.
আমি আবার প্রশ্ন করি : ভাইয়া আমি তো অনেক গান শুনি আমি কি পারবো ছাড়তে?
- তখন আমাকে বুঝানোর জন্য ভাইয়া নিজের অতীতের খাতা আমার সামনে তুলে ধরলেন। গানের প্রতি ভাইয়ার নাকি আমার চেয়েও হাজারগুণ আসক্তি ছিল, কিন্তু এখন গানের সাউন্ড শুনলে পালিয়ে যান যখন থেকে জানছেন গান-বাজনা হারাম। এমন আরো অনেক অনেক কথা। সবকিছুর পিছনে উদ্দেশ্য একটাই, আমাকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়া।
.
ভাইয়া বলতেছিলেন আর আমি চুপচাপ শুনছিলাম!
ভাইয়া আবার বললেন, যদি আমি এতকিছু ত্যাগ করতে পারি তুমি কেন পারবা না? শুধু চেষ্টা করতে হবে!
.
এরমধ্যে পর্দা করা ফরজ এটাও আমাকে জানিয়ে দিলেন। আর আমার বেপর্দার কারণে দাইয়ূসরা জাহান্নামে যাবে এটাও বললেন। আমি জানতাম না দাইয়ূস কাকে বলে। তাই আবার জিজ্ঞেস করলাম।
ভাইয়া বলল : তোমার আব্বু, ভাইয়া, স্বামী, বড় ছেলে তারা দাইয়ূস। যারা একটা বেপর্দা মেয়ের জন্য জাহান্নামে যাবে।
.
শুনে বুকের ভিতর হু হু করে উঠলো। আমার জন্য আমার কাছের মানুষগুলো জাহান্নামে যাবে, মনে মনে এটা ভাবতেই কলিজা ছিড়ে যাচ্ছিল। তখন বললাম - আমি চেষ্টা করবো, পর্দা করতে! তবে আবার ভাবছি মানুষজন কি বলবে, হঠাৎ পর্দা শুরু করলে? তখন ভাইয়া আবার বলতে শুরু করলেন!
.
যখন তোমাকে কেউ কিছু বলবে, তুমি এইটা ভাববা যে সে কি বলল না বলল তাতে আমার কি আসে যায়?
আমি যেমন মাটি দিয়ে তৈরী সেও তো মাটিরই তৈরী। কথাটা আমার বেশ ভালো লাগলো।
.
এরপর আরো কিছু প্রশ্ন করেছিলাম ইসলাম নিয়ে যা আপাতত মনে নেই। সেইদিনই ঠিক করে ছিলাম আমি পরিপূর্ণ ইসলামের পথে আসবো!
.
কিন্তু ওই যে মানুষ কি বলবে, ওই গন্ডী থেকে হঠাৎই বের হতে পারলাম না! এর দুইদিন পর ঘুরতে গেলাম!
পরিবারের সবাই ছিল ভাইয়াও ছিল। তখনও বোরকা, নিকাব না পরেই বের হয়েছিলাম।
.
তখন ভাইয়া আমাকে আর আপুকে উদ্দেশ্য করে বললেন, এই যে তোমরা বেপর্দা বের হয়েছ তার গুনাহ কিন্তু আমার নামেও যুক্ত হবে। তখন আমি পন্ডিত বললাম, শুরু করবো আর কয়েকদিন পর।
.
ভাইয়া বললেন : যদি বাসা পর্যন্ত যাওয়ার আগেই মারা যাও, আল্লাহকে কি বলতে পারবা আল্লাহ আমি শুরু করতাম!
.
লাস্ট ধাক্কাটা খেয়েই ফেললাম! সেইদিনই ছিল আমার লাস্ট বেপর্দা ঘর থেকে বের হওয়া আলহামদুলিল্লাহ!
.
তারপর থেকেই নিকাব শুরু। বিভিন্ন ইসলামিক লেকচার শোনা শুরু করে দিলাম, টুকটাক জানার চেষ্টা শুরু। ভার্সিটিতে এক ফ্রেন্ড ছিল, যে ছিল আমার স্কুল ফ্রেন্ডও! সেও হঠাৎ চেইঞ্জ হয়েছিল। তার হঠাৎ চেইঞ্জ দেখে, আমি তার সাথে মেলামেশা বাড়িয়ে দিলাম। তার থেকে জানতে পারলাম হাত-পা ঢাকাও ফরজ। তখন থেকে শুরু করলাম পরিপূর্ণ পর্দা।
.
পরে বুঝতে পারলাম যেটাকে আমি পরিপূর্ণ পর্দা ভেবে বসে আছি আদৌ তা পরিপূর্ণ হয়নি। কেননা তখনও আমি রং-বেরং এর হিজাব দিয়ে, নিকাব পরতাম। যার ফলে আমার প্রতি অন্যের আকর্ষণ জন্মাতে পারে। তাই নিজেকে পুরোপুরি চেইঞ্জ করার চেষ্টায় মেতে উঠলাম! আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমার জন্য সবকিছু সহজ করে দিলেন।
.
পর্দা তো শুরু করলাম। পর্দা শুরু করলেও নামাজ আর হারাম কাজে ছিলাম গাফেল। একদিন পরি তো আরেকদিন পরি না। তাই কিছুতেই পরিপূর্ণ শান্তি পাচ্ছিলাম না। কারণ তখনও আল্লাহ আমার প্রতি অসন্তুষ্ট।
.
তারপর শুরু করলাম নিয়মিত নামাজ পড়া। আর নিয়মিত আল্লাহর কাছে চাইতে থাকলাম, আল্লাহ যেন আমাকে সমস্ত হারাম কাজ থেকে ফিরিয়ে আনেন। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে থাকি; যেসব গুনাহ আমাকে সম্পূর্ণ তোমার কাছাকাছি আসতে দিচ্ছেনা, তা থেকে তুমি আমাকে মুক্ত করো! আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমার রব আমার কথা শুনেছেন। তিনি আমাকে হেদায়াত দান করলেন। ধীরে ধীরে সমস্ত হারাম থেকে সরে আসলাম!
.
আসলে সবকিছুর পিছনে আমার রবের অনুগ্রহই ছিল। কত মানুষই তো দ্বীনের দাওয়াহ পেয়েও জাহেলিয়াতে থেকে যায়। তিনি যদি অনুগ্রহ না করতেন, অনুশোচনার আলো আমার মনে জ্বালিয়ে না দিতেন আমি হেদায়াত পেতাম না। আলহামদুলিল্লাহ্‌, আমার রব আমাকে আলোর পথের সন্ধান দিয়েছেন।
.
আর ভাইয়ার কাছে আমি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ। দোয়া করি আল্লাহ ভাইয়াকে নেক হায়াত দান করুন। আর দ্বীনের দাঈ হিসাবে কবুল করুন। প্রতি নামাজে দাঁড়ালে ভাইয়ার জন্য মুখে দোয়া করতে হয়না, অন্তর থেকে চলে আসে।
.
এই ছিল জাহেলিয়াত জীবন থেকে আমার দ্বীনে ফেরার কাহিনী। এখনো অনেককিছু জানা বাকি অনেককিছু শেখা বাকি।
.
সবাই দোয়া করবেন আল্লাহ যেন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাকে এই হেদায়াতের পথে অবিচল রাখেন।

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3467948659886536/
.....................................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ০৫


পেজে একটা পোস্ট দেখলাম প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখার আহ্বান। তাই আমিও লিখে ফেললাম আমার দ্বীনে ফেরার গল্প। আজ থেকে ২ মাস আগের গল্প।
.
প্রথমে বলে রাখি আমি দ্বীন সম্পর্কে অবগত থাকলেও তেমন পালন করতামনা। (আল্লাহ মাফ করুক) নামাজ পড়তাম ১/২ ওয়াক্ত। একাডেমিক পড়া গুরুত্ব দিতাম।আর পর্দা করতাম বোরকা আর হিজাব। তবে মুখ খোলা থাকতো কারণ আমার শ্বাসকষ্ট ছিলো। মুখ ঢেকে রাখলে নিশ্বাস আটকে যেতো। আর আমারও ব্যাপারটা নিয়ে অপরাধবোধ ছিলো না। হিজাব পরলেও লিপস্টিক আর মাঝে মাঝে আইলাইনার দেওয়া হতো। এভাবে চলছিলো দিনগুলো।
.
গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকেই ডিপ্রেশনে ছিলাম।ভার্সিটি এডমিশনে পরাজিত যোদ্ধা। কাছাকাছি পজিশনে থেকেও অল্পের জন্য মিস করলাম। সবার কটুক্তি, মা-বাবা ও অপমান করতে ভুলতো না।ডিপ্রেশনের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিলাম। মাঝেমধ্যে মনে হতো আত্মহত্যা করি (আসতাগফিরুল্লাহ)। এভাবে চলতেছিলো সব।
.
এর মধ্যে একদিন রাতে ঘুম আসছিলো না। আমার কোনো একটা অঙ্গের অসুস্থতা বোধ করছিলাম। এ ব্যাপারে ডিটেইলস না বললেই ভালো হবে। হঠাৎ ফেসবুকে একটা পোস্ট দেখি যেখানে বলে যে আমার অসুস্থতা টা ক্যান্সারের লক্ষণ। তাও আবার লাস্ট স্টেজ। একবার ভাবুন কেমন লাগবে তখন? সারারাত ঘুমাই নাই। শুধু ভাবতেছিলাম মারা গেলে কি জবাব দিবো। অনেকদিন পর ফজর পড়ার সুযোগ হলো।তারপর কিছুক্ষণ একটু প্রশান্তি অনুভব করলাম।
.
সেদিন কলেজে যাওয়ার সময় ডিসিশন নিলাম আজকে থেকে মুখ খোলা রাখবো না। একটু কষ্ট হয়েছিলো। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো তবুও মুখ ঢেকে রাখছি। নামাজ ও পড়তে শুরু করলাম। সবগুলো গান একসাথে ডিলিট করলাম। ব্যাপার টা সহজ না।অনেকদিনের গান শোনার অভ্যাস। গান মুখস্থ রয়ে গেছে। হুট করে চলে আসতো মুখে।
.
ডাক্তারের কাছে যাবো ভাবছি সেদিন থেকেই লকডাউন। স্কুল কলেজ ছুটি ঘোষণা। আমারও বাড়ি ফেরা। ডাক্তার দেখানো হলো না। পরিবারের কাউকে অসুস্থতার কথা জানায়নি। শুধু দোয়া করতাম। আর ভাবতাম মরতে তো হবে। হয়তো সুস্থ হবো তবে মৃত্যু তো একদিন আসবে। আমাকে তো কবরে যেতে হবে, আমলনামার হিসাব দিতে হবে। পরবর্তীতে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিই। তিনি আশ্বস্ত করেন ক্যান্সারের লক্ষণ না। আলহামদুলিল্লাহ। না আমি আবার আগের মত হয়ে যাই নি। এখনো দ্বীনের পথে আছি।
.
আল্লাহ যা করেন তা আমাদের জন্য কল্যাণকর।দেরিতে হলেও বুঝতে পারছি। ভার্সিটিতে চান্স পেলে আমি হয়তো আরও গুনাহে লিপ্ত হয়ে যেতাম। ফ্রি-মিক্সিং এর ছোঁয়াতে নিজেকে ধরে রাখতে পারতাম না।প্রেজেন্টেশন এর নামে নন-মাহরামদের সামনে প্রদর্শন করতে হচ্ছে না। সবাই জানে এখন স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি অবস্থা। এখন যেখানে পড়ি চাইলে সেখানেও নিজেকে জাহিলিয়াদের মত প্রদর্শন করতে পারি। কিন্তু খুশির খবর এই যে দ্বীন পালনে বাঁধা নেই। এসব ভাবলে এখন মন থেকে একটা কথা চলে আসে আলহামদুলিল্লাহ আমি ভার্সিটিতে চান্স পাই নি। আমার এখন আর মন খারাপ হয় না।
.
আগে অনেক গান শুনলেও মন খারাপ ভাব যেতো না। উল্টো মন খারাপ হয়ে যেতো। ফানি ভিডিও দেখতাম। তবুও শূন্যতা কাজ করতো। মুখ খোলা রাখা আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিভোর থাকা আমি যদি খিমার পড়তে পারি আপনিও পারবেন। সব আপুদের কাছে অনুরোধ রইলো ফিরে আসেন আল্লাহর পথে। খুব বেশি কষ্ট হবে না। কষ্ট হলেও মানসিকভাবে আপনি সন্তুষ্ট থাকবেন।
.
যার সাথে আজকে বন্ধু ভেবে কথা বলছেন তারা কখনো কাজে আসবে না। বরং হাশরের মাঠে ওদের জন্য আপনি বিচারের সম্মুখীন হবেন। নন মাহরাম কেউ ভাই হতে পারে না। আপনি হয়তো তাকে ভাই ডাকেন আর তার সাথে কথা বলাটাও জায়েজ মনে করেন। আপনি হয়তো জানেন ও না আপনাকে নিয়ে সে কি ভাবে। জানলে আপনি তার সাথে কথা বলতেন না। অনেকে নন মাহরাম কাউকে ভাই ডেকে কথা বলাকে জায়েজ মনে করে আর কেউ বুঝাতে আসলে বলবে "আমরা ভাই-বোনের মত দেখি। আপনাদের মন মানসিকতা নিচু।"
.
অনেক বোন ছবি দেয় ফেসবুকে তাদের বলছি আপু শুধু শুধু কেন অন্যের মনোরঞ্জন করছেন? কেন সবাইকে গুনাহের সাক্ষী বানাচ্ছেন? আপনার কি কোনো লাভ হচ্ছে? একবার ভাবুন আপনি ছবিগুলো নন মাহরামদের দেখিয়ে কি লাভ পাচ্ছেন? আজকে রাতে যদি আপনার মৃত্যু হয় ছবিগুলো ফেসবুক থেকে সরানোর সময় পাবেন তো?
.
এখন তো একটা নতুন ট্রেন্ড শুরু হয়েছে Sky challenge, Flower challenge। এই চ্যালেঞ্জের খপ্পরে পরে কতজন এই রামাদানেও বেপর্দা ছবি আপলোড দিচ্ছেন। আচ্ছা এই চ্যালেঞ্জ আপনার কি লাভ দিয়েছে? নিজের শরীরকে প্রদর্শন করে আপনি কি খুশি? আপনি কি এতটাই সস্তা যে কেউ চাইলে আপনাকে দেখতে পারবে? যে কেউ আপনাকে নিয়ে তার কামনা বাসনা পূর্ণ করতে পারবে?
.
আপনার থেকে অন্যরা দেখছে তারাও বেপর্দা ছবি দিতে উৎসাহিত হচ্ছেন। অনেক ছেলেরাও কমেন্ট করছে সেখানে। আবার তারা রোজাও রাখছেন। এটাই কি আপনাদের সংযম? আমি রোজা রাখতে অনুৎসাহিত করছি না। না খেয়ে থাকা টা সংযম না।আল্লাহ হেদায়েত দান করুক বোনগুলোকে।
.
যারা নিজেকে পরিবর্তন করতে সাহস পাচ্ছেন না তাদের জন্য সহজ নিয়ম বলি। সবকিছু একসাথে পরিবর্তন না করতে পারলেও আস্তে আস্তে করুন।আল্লাহর কাছে সাহায্য চান।
১. নামাজ মিস দিবেন না
২. পর্দা করুন। বোরকা আর হিজাব না। শরীয়ত মোতাবেক পর্দা।
৩. ফেসবুকে সব ছবি ডিলিট করে দেন।
৪. নন মাহরামদের ব্লক দিন। বিপরীত লিঙ্গের বন্ধু থেকে সাবধান।
৫. গানগুলো ডিলিট করে দিন। দেখবেন কতটা শান্তি পাবেন।
৬. অল্প হলেও কোরআন তিলওয়াত করুন। পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটান।
৭. রিলেশনশিপে থাকলে সম্ভব হলে পরিবারের সাথে কথা বলে বিয়ে করে নিন। আর না হয় তওবা করে রবের দিকে ফিরে আসুন। আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।
.
উপরের ৭ টা নিয়ম ৭ দিনের টার্গেট নিন। দেখবেন খুব সহজ হয়ে গেছে। এভাবে নিজের মত করে প্রত্যেক দিন টার্গেট নিন। আমি নমুনা করে দিলাম। আপনারা আপনাদের ইচ্ছা মত করে টার্গেট নিন।
.
এই নিয়মগুলো মেনে চলতে প্রথম দিকে কষ্ট হবে।কটুক্তি শুনতে হবে। তবুও ফিরে আসুন। তওবা করুন।ইনশাআল্লাহ আপনি সুখী হবেন। কত মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। আপনি এখনও সুস্থ আছেন। রবের দিকে ফিরে আসার সুযোগ পাচ্ছেন। কাজে লাগান।
.
আমার লিখাটার একটাই উদ্দেশ্য একজন ও যদি নিজেকে পরিবর্তন করে। এতবড় একটা প্লাটফর্ম পেয়েছি দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য আমার লিখা দিয়ে। কেন মিস করবো?
.
সবাই আমার শারীরিক সুস্থতার জন্য দোয়া করবেন। আমি যাতে আর কখনও পথভ্রষ্ট না হই আর একজন দ্বীনদার স্বামী পাই। আর ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3468389713175764/
...................................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ০৬

 

দ্বীনের ব্যাপারে সিরিয়াস হওয়া শুরু করি ২০১৭ সালের দিকে। সেই সময়টায় নিজের সাথে সবচেয়ে বেশি মানসিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিলাম। চারপাশে এতো মানুষ, তাও ছিলাম একা। একই চিন্তাভাবনার মানুষগুলোর সাথে তৈরী হলো ভাবনার অমিল। মানসিক টানাপোড়েনের একটি কারণ ছিলো পর্দা করতে না পারা। আমার দ্বীনকে ভালোবাসছি, দ্বীন অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করছি অথচ পর্দা করতে পারছিনা বিষয়টা খুব পীড়া দিতো।

প্রথমে হিজাব দিয়ে শুরু করলাম। চেষ্টা করতাম নিজেকে যাতে আকর্ষণীয় না লাগে সেভাবে থাকার। ছবি তোলা বাদ দিলাম।

মাঝেমধ্যে খুব কান্না আসতো। কেউ যেন আমাকে ঠিক বুঝতে পারছেনা। এমনকি আমি নিজেও না। নিজেকে খুব হিপোক্রেট মনে হতো যেহেতু পর্দা শুরু করতে পারছিলামনা আবার অন্যদিকে পর্দা করতেও চাইতাম। আল্লাহর কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা বলে সাহায্য চেয়ে গেলাম।

আল্লাহর রহমতে একটা সময় পর্দা করা শুরু করি।

প্রথম যেদিন নিকাব করি ওইদিন মাস্টার্স ফাইনালের ভাইভা ছিল। সেই একই ক্যাম্পাসে ভিন্ন এক আমি সেই একই মানুষদের মুখোমুখি হতে যাচ্ছিলাম যারা অন্য এক আমাকে চিনতো।

ক্যাম্পাসে যাওয়ার পর আমার মোটেও সংকোচবোধ হয়নি। শুধু একটা বিষয়ই তখন ভেবেছিলাম, একজন মুসলিম নারী হিসেবে এতোদিন বেপর্দা চলার কারণেই বরং আমার সংকোচ হওয়ার কথা ছিলো। তাহলে এখন পর্দা করে চলতে কিসের সংকোচ!

ভাইভা বোর্ডে দুই-একজন শিক্ষক আমার এমন পরিবর্তন দেখে কটুকথা শোনাতেও ছাড়েননি। কোনো দলে যোগ দিলাম কিনা তাও জানতে চাইলেন।
তবে আলহামদুলিল্লাহ, ভাইভাতে নিকাব খুলতে বলা হয়নি।

পরিবার থেকে প্রথমদিকে একটু বিরক্তি ছাড়া আর কোনো বিপত্তির মুখোমুখি হতে হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ।

প্রথম দিকে পর্দা শুরুর পর অল্পকিছুদিন গায়রে মাহরাম নিকটাত্মীয়দের সাথে পর্দা করতে পারছিলামনা। এজন্য হীনমন্যতায় ভুগতাম। এদিকে সামনে ঈদ আসছিলো। ঈদের সময় দেখা যায় আত্মীয়-স্বজন প্রায় সবাই একসাথে বাসায় বেড়াতে আসেন। নাহ, গায়রে মাহরাম আত্মীয়দের সামনে আর বেপর্দা বের হওয়া চলেনা। আমি কে, কী, কেন, কীভাবে - এই প্রশ্নগুলোর উত্তর স্ট্রিক্টলি চিরচেনা সবাইকে জানানো খুব দরকার।

ঈদের দিন মুখ ঢেকে বাসায় বসে রইলাম। আত্মীয়দের সামনেও মুখ ঢেকে বের হচ্ছি দেখে আমার বাসার মানুষজন একটু আশ্চর্য এবং বিব্রত হয়ে গেলেন। পর্দা করছি দেখে আত্মীয় ল-স্বজনদের মধ্যে এটা নিয়ে কিছুটা কৌতুহল ছিল। কেউ এসে হেসে হেসে জানতে চাইল কোনো কিছুতে যোগটোগ দিলাম কিনা। মুখে কিছু হলো কিনা।

আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ সহায়তা করেছেন। সবার সাথে যে আমার খাতির থাকতে পারেনা এবং তাদের সাথে গায়রে মাহরাম এর বাউন্ডারি আছে যা তাদের অতিক্রম করার কোনো অধিকার নেই সেটা পর্দার মাধ্যমে বিনা বাক্যব্যয়ে তাদেরকে জানিয়ে দেয়া সম্ভব হলো।

আত্মীয়-স্বজনের তরফ থেকে এমনও হয়েছে এক গায়রে মাহরাম আত্মীয় তাদের সামনে আমার নিকাব করাটা অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে বলে নিকাব টেনে খুলতে চেয়েছিলেন। তবে সবমসময় আল্লাহর রহমতে জিদ ধরে দ্বীনের ব্যাপারে কঠোরতা অবলম্বন করার চেষ্টা করেছি।

ভাবতেই ভয় লাগে আমি যদি সেই দ্বীনের বুঝহীন, বেপর্দা অবস্থায় মারা যেতাম! তাছাড়া আমার বেপর্দা ছবিগুলো কী আমার জন্য গুনাহে জারিয়াহ হতোনা?

বোনেরা আজ আপনি পর্দা না করলে ঠিকই আপনার মৃত্যুর দিন পর্দা করবেন। আজ আপনি গায়রে মাহরাম মানছেন না। আপনার মৃত্যুর দিন ঠিকই গায়রে মাহরামের সাথে আপনার লাশের পর্দা রক্ষা করা হবে। তাহলে বলুন, দুনিয়াতে আপনার প্রাণহীন দেহের পর্দা আখিরাতে আপনার কোন উপকারে আসবে?

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3470213612993374/

..................................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ০৭

 

জীবনে চলার পথটা যত সহজ বলে আমরা মনে করি ঠিক তত সহজ নয়। সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারাটাকেই আমরা জীবন যুদ্ধ বলে মনে করি, জীবন যুদ্ধ তাকেই বলে যে করুণাময়, দয়াবান আল্লাহর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে থাকে, তার ইবাদতে মশগুল হতে পারে।

জীবনে ততটাও উশৃংখল ছিলাম না। সমাজের সাথে বন্ধু-বান্ধবী, আত্মীয়-স্বজন এবং ভার্চুয়াল জগৎ এর সাথে চলাটাই ছিল আমার জীবন। নামাজ পড়তাম কিন্তু সেইভাবে কখনো ফিল করতাম না। নামাজ কাজা হলেও আফসোস করতাম না। ক্লাস ৯/১০ এর সময় আম্মু বলে বলে নামাজ পড়াতো। কলেজ লাইফে নামাজ-রোজা রেগুলার হতো অন্য কিছুই না।

বাংলা, হিন্দি গান শুনতাম কিন্তু গজল ২/১টার বেশি জানা ছিল না। ভার্চুয়াল জগৎ এর কোনো কিছুই ব্যবহার করা ছাড়া ছিল না, কম বেশি সব ব্যবহার করেছি। নাচতে খুব ভালবাসতাম। বই পড়তে খুব ভালবাসি কিন্তু ইসলামিক বই পড়তাম না। অনেক কিছুই করতাম না যাতে আমার আল্লাহ রব্বুল আলামীন সন্তুষ্ট হয় (আল্লাহ মাফ করুন)।

প্রায় তিন মাস আগে আমার এক কাজিন এর বিয়ের অনুষ্ঠান হয় হলুদে অনেক সেজেছিলাম মেচিং ড্রেস, জুতা, সাজ, গয়না, চুল ছেড়ে দিয়ে নাচা, খুব মজাও করেছি অনুষ্ঠানে। শাড়ী পরা, সাজা সবই হল তখন হঠাৎ কেউ একজন আল্লাহর কথা বললো কেন এইসব করছি গুনাহ হচ্ছে ইত্যাদি অনেক কিছু বলেছিল (তাকে অনেক ধন্যবাদ আল্লাহ তাকে নেক হায়াত দান করুক)।

তখন কেন জানি নিজের প্রতি গিল্টি ফিল হতে থাকল। অনেক কিছু ফিল করতে থাকলাম এত সাজ এত কিছু দিয়ে কি হবে এসবের একটাই মানে নিজেকে অন্য কারো কাছে প্রেজেন্ট করা তখন ভাবলাম আমার তোহ নিজেকে আল্লাহর কাছে প্রেজেন্ট করার কথা আর আমি! সেই দিন থেকেই ভাবলাম আর কত আল্লাহর থেকে নিজেকে দূরে রাখব। তারপর দিনে ফেসবুকে, ইন্সটাগ্রামে ভার্চুয়াল জগৎ নিজেকে প্রেজেন্ট করা সব কিছু ডিলিট করলাম।

পর্দা করা শুরু করলাম। ইসলামিক বই পড়া, হিন্দি গান সব ডিলিট করা এবং অন্যান্য যা কিছু আছে তা থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলা যতটুকু পারছি। ইনশাআল্লাহ আরো পারব যদিও আমার কাছে এইটি একটু কঠিন হবে/হচ্ছে তবুও নিজেকে আল্লাহ দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় আছি। আল্লাহর রহমতে ইনশাআল্লাহ আশা করি আমি একদিন সব দিক থেকে সফল হব। এখন মনে হচ্ছে এই জীবনটাই অনেক সহজ, সচ্ছল, স্বাধীনতা পূর্ণ। সেই মানুষটির প্রতি এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

আল্লাহ আমাকে বুঝার তৌফিক দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর দরবারে লাখ লাখ শুকরিয়া।

Everyone has to change one time.

"আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে দ্বীনের বুঝ দান করেন।" (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3470990792915656/

...................................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ০৮

 

ছোট থেকেই আমি আধুনিকমনা ছিলাম। এমন এক পরিবারে বড় হয়েছি যেখানে নামাজ রোজা আর কোরআন পাঠ এই কয়টা কাজ করলেই ইসলাম পালন হয় বলে জেনেছি। পর্দা করতে কখনো কাউকে দেখিনি তাই আধুনিকমনা হওয়াটা স্বাভাবিক। বলতে গেলে হাফ মুসলিম, হাফ আধুনিক।

সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে হওয়ার কারণে পোশাকে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগাতে পারতাম না কিন্তু মনে মনে ইচ্ছাকে পুষিয়ে রেখেছিলাম। তথাকথিত ভালো স্টুডেন্ট হওয়ার দরুন সব প্রোগ্রামে আমার ছিলো অবাধ অংশগ্রহণ। সকল ধরনের প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পহেলা বৈশাখের প্রোগ্রাম কোন কিছু বাদ যেতোনা। একটা পারফেক্ট অলরাউন্ডার মেয়ে ছিলাম বলা যায় (সমাজের ভাষায়)
নামাজ ও পড়া হতো মাঝে মাঝে। একটা সময় পর এমন হলো রমজান মাস ছাড়া নামাজ পড়া আর হয়ে উঠতোনা, কোরআন মাজীদও ছুঁয়ে দেখতাম না। ব্যস্ত লাইফে ধর্ম পালনের সময় কই!

এভাবে চলতে চলতেই ভর্তি হলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজেকে প্রকাশ করার এক উন্মুক্ত মঞ্চ পেয়ে গেলাম। কি নেই এখানে। পর্দাশীল মেয়েরাও এখানে এসে আধুনিক পোশাকে নিজেকে রাঙিয়ে নেয় আর আমিতো একধাপ এগিয়ে।

তবে একটা বোরকা পরতাম আমি। পর্দা মনে করে পরতাম না কিন্তু। সবসময় ভাবতাম বোরকা দিয়ে কিভাবে আরো স্মার্ট, আকর্ষণীয় করে তোলা যায় নিজেকে। এ যুগের মডার্ন বোরকা, সাথে রং বেরংয়ের হিজাব একেকদিন একেক স্টাইলে পরে ক্যাম্পাসে যেতাম। কোন বিশেষ দিন বা প্রোগ্রাম থাকলে বোরকা খুলে শাড়ি পরে ঘুরার বাহানা খুঁজতাম। কখনো কেউ আমাকে পর্দার কথা বললে খুব রেগে যেতাম আমি। সবার মতো করেই বলতাম পর্দা মানে হলো নারীকে শেকলে বন্দী করা,পর্দার নাম করে নারী জাতিকে পেছনে ফেলা রাখাই এর উদ্দেশ্য (নাউজুবিল্লাহ)

স্বল্প জ্ঞান থাকার জন্য অনেকের সাথেই তর্কে লিপ্ত হতাম এই নারীবাদী ব্যাপার নিয়ে। কখনো স্বপ্নেও চিন্তা করিনি আমি কখনো পর্দা করবো। যারা করে এবং বলে তাদের একটু অন্য চোখেই দেখতাম আমি,ধর্মের নামে বেশি বাড়াবাড়ি (আল্লাহ মাফ করুক)। ক্যাম্পাসে প্রোগ্রাম হলো সেখানে স্টেজ পারফরম্যান্স করলাম। সবার সামনে ডান্স করে আল্লাহর অবাধ্যতার চরম সীমা পার করে ফেললাম। কিন্তু এতো গোমরাহি ছিলো আমার মধ্যে একটু অনুশোচনাও হয়নি আমার। মনে হচ্ছিল পরিপূর্ণ আধুনিক হতে পেরেছি এতোদিনে।

নামাজ মানেই আলসেমি আর জগতের সবচেয়ে ভারী কাজ মনে হতো আমার কাছে। কখনো নামাজ পড়লেও ফজর আর এশা কোনদিন পড়া হতো না। পড়তে পারতামই না কেন জানি। সারারাত জেগে ফজরের আজান দিলে ঘুমোতে যাওয়া ছিলো চিরন্তন অভ্যাস।এক কথায় অন্ধকারের অতল গহ্বরে ডুবে ছিলাম আমি।

কিন্তু মহান আল্লাহ হয়তো চাইছিলেন এই অধম পাপী বান্দাকে আলোর পথ দেখাতে। সেবার ছুটি পেয়ে ঢাকায় ভাইয়ার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। রাতের খাবারের সময় হলে খেতে বসার আগে ভাইয়া পিসিতে একটা ইসলামিক ভিডিও অন করে দিয়ে খেতে বসলো। আমিতো যারপরনাই বিরক্ত। ইসলামিক ভিডিও দেখতে খুব অস্থির আর বিরক্ত লাগতো। কিছু করার ছিলো না তাই শুনতে লাগলাম। ভিডিওটি ছিলো জান্নাতের বর্ণনা নিয়ে। এতো মনোরম আর সুন্দর বর্ণনা আমি আর কোথাও শুনিনি। মনে হলো হঠাৎ করে একটা ধাক্কা খেলাম আমি। যতই শুনছিলাম আমার বুক ভেঙে কান্না আসতে লাগলো। মনে হচ্ছিল আমিতো এই অপার সুন্দর জান্নাতের ঘ্রাণ ও পাবোনা। আমি যে চরম পাপী!

মুহূর্তেই আমার চিন্তা চেতনার আগাগোড়া পরিবর্তন হয়ে গেলো। জান্নাতের বাসিন্দা হওয়ার লোভ লেগে গেলো। খাওয়া শেষ করে কোনকিছু না ভেবেই ভাইয়া কে বললাম আমি পর্দা করবো। আমাকে মার্কেটে নিয়ে যাও আমি সাধারণ বোরকা কিনবো। ভাইয়া শুনে অবাকই হলো কিছুটা কারণ আগে ভাইয়া নিকাব করার জন্য চাপ দিলে রাগারাগি করতাম, ঘর থেকে নিকাব করে বের হয়ে রাস্তায় গিয়ে খুলে ফেলতাম আবার বাসায় ঢুকার আগে লাগিয়ে ঢুকতাম এতোটা নীচ কাজও করেছি।

যাই হোক একদিন পরেই আমি সেখান থেকে চলে আসলাম। তখনো বোরকা পরিবর্তন করতে পারিনি তাই যেটা ছিলো সেটার উপরেই নিকাব পরা শুরু করলাম। শুরুতে অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে হঠাৎ এমন পরিবর্তন কেন, এটা কি সবসময়ের জন্য নাকি কয়েকদিনের জন্য আরো অনেক কিছু। নিকাব পরলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসতো, মাথা ব্যথা করতো প্রচুর তাই কষ্ট সহ্য করে অভ্যাস করতে লাগলাম।সেই সাথে জীবনের পুরো রুটিন চেঞ্জ করে ফেললাম। ৫ ওয়াক্ত নামাজের সাথে তাহাজ্জুদ পড়ার চেষ্টা করলাম। আল্লাহর কাছে অনেক সাহায্য চেয়েছি যেন এই অন্ধকার পথ থেকে ফিরে আসতে পারি। পূর্বের অগণিত পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে লাগলাম। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ সাহায্য করেছেন আমাকে।

আস্তে আস্তে ঢিলা জিলবাবের সাথে হাত মোজা পা মোজা পরা শুরু করলাম। যেই আমি নিকাব করলে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতো এখন সেই আমির জন্য নিকাবই অক্সিজেন। মনে হয় আল্লাহ আমাকে এক নতুন জীবন দান করেছেন। নিজেকে আবৃত করার মাঝে এত্তো সুখ! এতো প্রশান্তি! আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর কাছে অনেক শুকরিয়া তিনি আমাকে হেদায়েতের ছায়াতলে জায়গা দিয়েছেন।
একটা ধাক্কা আমার জীবন পরিবর্তন করে দিয়েছে।এখন জীবনের একটাই লক্ষ্য জান্নাতের জন্য নিজেকে তৈরি করা। সেই অপার সুন্দর জান্নাতের লোভ আমাকে গ্রাস করেছে।

এখনো অনেকবার শয়তানের ধোঁকায় পরি, আল্লাহর আদেশ অমান্য করি তবু আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে যাই।পাপে জর্জরিত এই বান্দী কে আল্লাহ ক্ষমা করবেন কিনা জানিনা তবু আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাই। কারণ কে আছে মহান দয়ালু আমার রব্বুল আলামিনের মতো!

যেসব বোনের এখনো পর্দা শুরু করতে পারছেন না তাদের বলবো পর্দার অন্তরালে যে কি অপার শান্তি আর পরিতৃপ্তি তা একবার অাস্বাদন করে দেখুন! প্রথমে পদক্ষেপটা নিন বাকিটা আল্লাহ সাহায্য করবে। হাদিসে এসেছে,
“কেউ আল্লাহর দিকে আসার জন্য এক বিঘত অগ্রসর হলে তিনি তার দিকে এক হাত এগিয়ে আসেন।
কেউ এক হাত আসলে তিনি দু'হাত এগিয়ে আসেন।
কেউ আল্লাহর দিকে হেঁটে আসলে তিনি তার দিকে দৌঁড়ে যান।"

এই সমাজ এই আধুনিকতা রঙিন পর্দার আড়ালে এক ধ্বংসের রাজ্য। এর মাঝে শুধু অশান্তি ছাড়া আর কিছুই নেই। প্রকৃত সুখ তো নিজেকে মুক্তোর মতো ঢেকে রাখাতেই। এতেই নারীর প্রকৃত মর্যাদা আর সম্মান। আল্লাহ আমার মতো পাপী বান্দাদের ক্ষমা করুন, আমাদের হেদায়েত দান করুন আমিন।

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3472626859418716/

....................................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ০৯

 

বিয়ে হয়েছে ১ বছর ৮ মাস৷ একজন ছাত্রী + গৃহিণী। আমার ২ ভাই । একজন বড় আর একজন ছোট। ছোট বেলা থেকে মা খুব শাসনে রাখতো। এইদিকে যাওয়া যাবে না, ঐ দিকে যাওয়া যাবে না। বান্ধবীদের সাথে ঘুুড়া যাবে না, আড্ডা দেওয়া যাবে না। কখনও ভাইয়া তার বন্ধুদের বাসায় আনতো না। কারণ আমি আছি তাই। তাও ভাইয়া ২-৩ জন খুব বন্ধু আসতো আর তাদের সাথে আমার খুব কথা হতো।

তখনও পর্দা সর্ম্পকে কিছুই জানতাম না। আমার ছেলে বন্ধুও ছিলো। আম্মু বা আমার Family কখনও কোনো ছেলে বন্ধু নিয়ে অভিযোগ করতো না। কারণ কোচিং এ পড়তে ছেলে-মেয়ে একসাথে হলে হেল্প পাবে তাই হয়তো। আমি ৮ম-৯ম শ্রেণি থেকে হিজাব পড়তাম। তাও বাধ্য হয়ে পড়ছিলাম কারণ তখন আমি আমার সব চুল ফেলে দিছিলাম অনেক চুল পড়তো তাই। তো এভাবে আমার দিন চলছিলো।

ছেলে বন্ধুদের সাথে কথা-বার্তা, হাসাহাসি, বান্ধবীদের বিএফ-দের সাথে কথা বলা। তারপর কলেজে উঠলাম তখনও ছেলে-মেয়ে একসাথে ছিলো। আমার School এর সব মেয়ে ছিলো। কোনো ছেলে ছিলো না। তো কলেজে উঠার পড় আমি হিজাব খুব বেশি পড়তাম না। মাঝে মাঝে পড়তাম যখন মন চাইতো। ১ দিন পড়লে ১০ দিন পড়তাম না হিজাব। এভাবে কলেজ জীবন শেষ হলো।

তারপর অর্নাস (শুধু মেয়েরা ছিলো) এ উঠলাম তখন থেকে আমি হিজাবটা রেগুলার পড়া শুরু করলাম । স্যারের কাছে পড়তাম তখনও সাথে ৮-৯ জন মেয়ে ছিলো। কিন্তু যখনি কলেজে কোনো অনুষ্ঠান হতো তখন শাড়ি পড়ে, চুল ছেড়ে, সাজগোজ করে যেতাম বা মাঝে মাঝে বান্ধবীর সাথে বাহির হলে চুল ছেড়ে বের হতাম বা হিজাব পড়লেও ওড়না ঠিক থাকতো না। কারণ তখন জানতাম না পর্দা করা ফরজ বা কিভাবে পর্দা করতে হয়। নামাজ পড়তাম তাও ৫ ওয়াক্ত পড়তে পারতাম না। ফজর তো কখনও পড়তাম না ( মহান আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুক ) ।

তারপর অর্নাস ফাইনাল ইয়ারে আমার বিয়ে হয় আলহামদুলিল্লাহ। আমার শাশুড়ী বোরখা পড়ে, শ্বশুড় বাড়ির সবাই ধার্মিক। বিয়ের কিছুদিন পর আমি হানিমুন এ যাই Cox's Bazar । তখন টপস, জিন্স পড়ে ছিলাম। আমার Husband কখনও আমাকে কিছু বলে না চলাফেরা নিয়ে। তারপর ঢাকায় আসি শ্বশুড় বাড়ি থাকা শুরু করি। মাঝে মাঝে ঘুড়তে যেতাম সেজেগুজে আর হিজাব পড়ে। সবার সাথে হাসাহাসি, দেবরদের সাথে কথা বলা হাসাহাসি করে।

একদিন বাসার সামনে ওয়াজ-মাহফিল আয়েজন করা হলো। তো আমি যাবো কেমন হয় ওয়াজ। আমার ছোট দেবর বললো ভাবী যেতে হলে আপনাকে বোরখা পড়ে যাতে হবে। কারণ সবাই বোরখা পড়ে আসছে। এখন কি করবো আমার তো বোরখা নাই। তারপর আমার শ্বাশুড়ীর আগে একটা বোরখা ছিলো অনেক মোটা সেটা পড়লাম সাথে হিজাব দিয়ে মুখ বাধঁলাম। এই শুরু হলো আমার বোরখা পড়া। তারপর রাতে বাসায় আসলাম। আমার জামাই দেখে তো খুব খুশি। তারপরের দিন কোচিং গেলাম বোরখা পড়ে হিজাব দিয়ে মুখ বেঁধে। সবাই তো অবাক সাথে সবাই খুশি।

তারপর জামাই আমাকে একটা বড় নেকাব কিনে দিলো আর আমার একটা বান্ধবী ( সে পুরা খাস পর্দা করে) আমাকে হাত মোজা, পা মোজা গিফট করলো। তারপর থেকে আমি পর্দা সর্ম্পকে জানলাম। এর পর কোথাও গেলে আমি সম্পূর্ণ পর্দা করে যেতাম আলহামদুলিল্লাহ। বাহিরের কোনো ছেলের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলাম। Facebook থেকে সব ছেলে বন্ধুদের unfriend করে দিলাম। আমার সব ছবি delete করে দিলাম। জামাই এর কোনো বন্ধুর সাথে কথা বলা বাদ দিলাম ।

যখন জামাই এর সব বন্ধু মিলে ঘুরতে যায় তাদের বউদের নিয়ে তখন আমি নেকাব, হাত-পা মোজা পড়ে যেতাম। ইভেন খাওয়ার সময় নেকাব খুলতাম না আলহামদুলিল্লাহ। কারো বিয়েতে আমি নেকাব, হাত-পা মোজা, বোরখা পড়ে যেতাম। এতো কিছু করা কিন্তু কখনও সহজ ছিলো না আমাকে অনেক কিছু শুনতে হয়ছে যেমন, তালেবান, ভূত, জঙ্গি, বুড়ি ইত্যাদি। এমন সময় গেছে বাহিরে কেউ আমার সাথে কথা বলতো না।

কারো বিয়েতে গেলে দেখতাম সবাই সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলতেছে কিন্তু আমার সাথে কেউ কথা বলে নাই। আমি এক কোণে বসে থাকতাম। তখন আমার পাশে একজন ছিলো আমার জামাই । সে সব ছেড়ে আমার সাথে বসে থাকতো, আমাকে হাসাঁতো আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ।

২০১৯ এর শেষে আমার জামাই এর কয়েকটা বন্ধুর বিয়ে হয় তো সবাই তার বউদের সাথে আসছিলো বন্ধুর বিয়ে খেতে। আমার জামাইও আমাকে নিয়ে গেছে তখন দেখলাম তার বন্ধুদের বউরা কত সুন্দর করে সেজেগুজে আসছে আর আমি নেকাব পরা তারপর উপরে চশমা। কিছু আমার দেখা যায় না। ঐদিন এর পর থেকে কেমন জানি লাগতো। মনে হইতো হয়তো আমার জামাই সবার সামনে লজ্জা পায় আমাকে নিয়ে। ১-২ মাস আমার কেমন জানি লাগতো খালি ভাবতাম কেন আমি এতো তাড়াতাড়ি পর্দা করা শুরু করলাম। আমার এতো সুন্দর শাড়ি গুলো কেন পরি না বা পরে কেন জামাই সাথে বাহিরে যাই না।

আবার ভাবতাম নেকাব পড়া কেন শুরু করলাম। নেকাব না পড়লেও তো হইতো। বুড়া বয়স হলে এগুলো পড়তাম। আসলে এগুলো সব শয়তানের কাজ ছিলো। এমনও হতে পারে মহান আল্লাহ পরীক্ষা ছিলো। কিন্তু আমি হার মানি নি কারণ একদিন আমার জামাইকে আমি বললাম "আচ্ছা আমি এভাবে চলি তাই তোমার লজ্জা লাগে তাই না"। সে বললো কখনও না আমার অনেক ভালো লাগে। যখন দেখি কেউ আমার বউ এর সাথে হাসি, ঠাট্টা করে না। তখন থেকে আমার আর কখনও মন খারাপ হয় না। ঘরে হিজাব পরে থাকতাম যখন দেবর ঘরে থাকতো বা কোনো নন-মাহরম ঘরে থাকতো। গরমে যখন হিজাব পড়ে কাজ করতাম তখন আমার এতো সর্দি লাগছিলো, এতো ঠান্ডা লাগছিলো কিন্তু কেন জানি আমার কখনও এগুলোতে একটু খারাপও লাগতো না। আরও তখন মনে হতো মহান আল্লাহ আমার উপর খুশি।

ঘরেও পর্দা করা শুরু করছিলাম মানে দেবর এর সামনে নেকাব পড়ে থাকাটা কিন্তু পারি নাই কারণ এতে শ্বশুড় বাড়ির লোকজন খুব নারাজ হয়ে গেছে। আমাকে শুনতে হইছিলো যে জামাইকে আলাদা নিয়ে থাকতে চাই তাই এমন শুরু করছি। সবার এক কথা যে মুখ দেখানো যাবে। তারপর শুনতে হইলো এতো যখন পর্দা করো দেবরে সামনে তাহলে কে গত ঈদে দেবরকে নিয়ে ঘুরতে গেছো কেন । আমি হার মানলাম। সেদিন থেকে শুধু মনে হয় মহান আল্লাহ আমার উপর নারাজ। এভাবেই চললো। এরপর আসলো করোনা ভাইরাস। এখন ছেলে মেয়ে সবাই মুখ ঢেকে রাখে। তো একদিন বাসায় কিছু মেহমান আসলো।

ননদের জামাই আর কিছু মেহমান তখন আমি চিন্তা করলাম কিভাবে পর্দা করবো তাদের সামনে। পরে আমি মাস্ক পড়ে তাদের সামনে গেলাম। তারা আমার চেহারা দেখতে পারে নাই আলহামদুলিল্লাহ। এরপর সবাই চলে গেলে গ্রামে। কোনো নন-মাহরম আমাকে দেখে না আলহামদুলিল্লাহ।

আমার জামাই বলছে "তুমি যেভাবে খুশি চলো এতে আমার কোনো সমস্যা নাই "। আমার বড় দেবর যে বাহিরে থাকে সে বলছে ফোনে "ভাবী আপনাকে দেখতে হবে এমন কোনে কথা নাই , আপনি আমার দুলাভাই বা ছেলে আত্মীয়দের সামনে ওড়না দিয়ে নেকাব করে যাবেন। কেউ কিছু বললে আমাকে বইলেন। আমি আব্বু-আম্মুর সাথে কথা বলবো।" আলহামদুলিল্লাহ। বাসার ২ জনের সাপোর্ট পাইছি। এখন আমি আর হার মানবো না। মহান আল্লাহ আদেশ আমাকে মানতেই হবে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে আমি সামনের পরীক্ষাগুলো তে পাস করতে পারি। সত্যি বলতে পর্দা এখন আমার অহংকার। আলহামদুলিল্লাহ এখন আমি আল্লাহর ফরজ বিধান মানতে পারছি। আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ।

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3473219206026148/

.........................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ১০

 

এখনো মনে আছে আব্বু যখন প্রথম হিজাব কিনে দিয়ে বলেছিলেন "এখন থেকে এটা পরে স্কুলে যেতে হবে!" তখন প্রথম দিন স্কুলে পরে যেয়ে সেকি কান্না। কেনো হিজাব করতে বললেন উনি? আমি কি ভালো মেয়ে না? এইসব কতো অভিমান, প্রশ্ন মনে জমা হয়েছিলো!

যদিও আমার পরিবার এর থেকে বেশি পর্দা করার কথা কখনও বলেনি। শুধুমাত্র মাথায় তেনা পেঁচানোতেই তারা খুশি ছিলেন। সেই সুযোগ আমিও খুব ভালোভাবেই কাজে লাগাই। পরিবারকে খুশি রেখে হিজাবের মাধ্যমেই নিজেকে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করতে থাকি।

কলেজ লাইফও এভাবেই চলে গেলো। দ্বীনের জ্ঞান বলতে কিছুই ছিলোনা। নতুন নতুন ছেলে ফ্রেন্ড বানানো, তাদের সাথে ফোনে কথা বলা, গল্পগুজব, হ্যাংআউট এইসবই ছিলো আমার জীবন। কয়েকজন মেয়ে ফ্রেন্ড ছিলো ঠিকই কিন্তু তাদের কাছ থেকে দ্বীনের দাওয়াত কখনও পাইনি। বরং তারাই আমার মতো মফস্বল থেকে উঠে আসা মেয়েকে কীভাবে এই শহরের পরিবেশে স্মার্ট হওয়া যায় সেটাই বেশি শিখিয়েছিল। সব খারাপ কাজেই তাদের হেল্প পেতাম সবার আগে।

তখন আত্মীয়ের বাসায় থাকায় সবসময় ওরা আমায় বাসা থেকে বের করতে পারতনা। এটা ছিলো আমার উপর আল্লাহর বিশেষ রহমত। এইজন্য মন খারাপ হতো খুব বেশি আর চিন্তা করতাম ভার্সিটিতে কবে এডমিট হবো! কারণ, আমার মনে হতো ভার্সিটি লাইফ হচ্ছে সবচেয়ে মজার লাইফ। কোনো বাঁধাধরা থাকবেনা, ইচ্ছেমত যা খুশি তা করতে পারবো। যখন ইচ্ছে হবে ঘুরবো, আড্ডা দিবো, সবসময় টিপটপ হয়ে থাকব, সব প্রোগ্রামে এটেন্ড করবো, পারফর্ম করবো এক কথায় সবাই আমাকে চিনবে স্মার্ট বলবে এটাই সবসময় কল্পনা করতাম।

আলহামদুলিল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে এই জাহেলিয়াতের জীবনে প্রবেশ করতে দেন নাই। আব্বুর ইচ্ছায় ভার্সিটিতে এডমিশন টেষ্ট আর দেওয়া হয়নি, ভর্তি হই মেডিকেল কলেজে।

মেডিকেলে শুরু থেকেই হিজাব করা পুরোপুরি ছেড়ে দিই। নরমাল মাথায় ওড়না দিয়ে ক্লাস করতাম। মাঝে মাঝে বাইরে বোরকা হিজাব পরে গেলেও মন থেকে ভালোবেসে কখনো করা হয়নি। তবে তখন থেকেই কিছু সিনিয়রকে দেখে ধীরে ধীরে বোরকার প্রতি আলাদা ভালোবাসা তৈরি হয়। মনে হতো ইশশ্ আমিও যদি এইভাবে হিজাব নিকাব করতে পারতাম! হয়তো এই আফসোস টাই আল্লাহর কাছে বেশি পছন্দ হয়েছিলো।

এইজন্য কীভাবে জানি আমার পরিচয় হয় কয়েকজন আপুর সাথে যারা নিয়মিত হোস্টেলে তাফসীর প্রোগ্রাম করতেন। তাদের তাফসীর প্রোগ্রামে প্রথম দিকে ফর্মালিটি মেইনটেইনের জন্য গেলেও ধীরে ধীরে টান অনুভব করতে থাকি। আপুদের কথাবার্তা, আচরণ, ইলম এইগুলা আমাকে অনেক আকৃষ্ট করে। একবার এক তাফসীর প্রোগ্রামে আমাকে কোরআন তেলাওয়াত করতে বলা হয়েছিলো। কিন্তু শুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করতে পারিনা বলে শেষ পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হয়নি ওইদিন। সেই থেকে মনের মধ্যে আফসোস ছিলো এবং আল্লাহর কাছে মন থেকে চাইতাম "হে আল্লাহ, আমাকে শুদ্ধভাবে কোরআন শিখার সুযোগ করে দাও"।

তারপর ধীরে ধীরে আমার পরিবর্তন হওয়া। থার্ড ইয়ার থেকে প্রথমে হিজাব তারপর বোরকা নিকাব শুরু করি।হঠাৎ করে নিকাব শুরু করা অনেক কঠিন ছিলো কারণ আমার ব্যাচমেট কেউ নিকাব করতোনা। বারবার নিজের সাথে যুদ্ধ করে আল্লাহর অশেষ রহমতে শেষ পর্যন্ত শুরু করতে পেরেছিলাম।

ফ্যাশনেবল হিজাব বোরকা দিয়ে শুরু করে আলহামদুলিল্লাহ আজ আমি কালো বোরকা নিকাবে নিজেকে আবদ্ধ করতে পেরেছি। সেই সাথে কাছাকাছি একটা মহিলা মাদ্রাসায় কোরআন শুদ্ধকরণ কোর্সে ভর্তি হয়েছি।

নিজেকে বদলানো শুরু করার সাথে সাথে আমার জন্য সবচেয়ে বড় ফিতনা হয়ে দাঁড়ায় ফ্রেন্ড সার্কেল এবং বয়ফ্রেন্ড। তাদের সঙ্গ ত্যাগ করে একা একা থাকা আমার মতো মেয়ের জন্য অনেক কঠিন ছিলো। বিশেষ করে মেডিকেলের এক্সাম গুলো রিডিং পার্টনারের (বয়ফ্রেন্ড) হেল্প ছাড়া পাশ করা সম্ভব ছিলোনা।

এতোদিনের অভ্যাস হঠাৎ করে ছেড়ে দিয়ে নিজে নিজে পড়াশোনা করা আর অমাবস্যায় চাঁদ দেখা আমার জন্য একই ছিলো। তারপরও আলহামদুলিল্লাহ দুনিয়াবি চিন্তা বাদ দিয়ে আল্লাহর জন্য গ্রুপ স্টাডি করা ছেড়ে দেই। এইজন্য এক্সাম খারাপও করি কিন্তু তাতে মনের মধ্যে বিন্দুমাত্র আফসোস ছিলোনা।

এরপর ধীরে ধীরে গান, অ্যানিমেশন, মুভি দেখা, ছেলেদের আনফ্রেন্ড করা, ফেবুতে ছবি ডিলিট করে একদম গুরাবা হয়ে থাকা কোনো কিছুই ছেড়ে দিতে এতটা কষ্ট হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ এখন আর একা থাকা কঠিন মনে হয়না। আল্লাহর জন্য কিছু করলে উনি নিজেই মনের মধ্যে সুকুন ঢেলে দেন।

এই লকডাউন আমার জন্য আল্লাহর আরেক রহমত। হোস্টেলে পর্দা করতে পারলেও জয়েন ফ্যামেলি হওয়ায় বাড়িতে পর্দা কখনোই করতে পারতামনা।বাসায় নিকাব করবো সেই চিন্তা করার সাহসও কখনই পাইনি। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ শেষ পর্যন্ত আমাকে সেই সাহস দিয়েছেন পর্দা শুরু করার। এখন আমি বাড়িতে খিমার পরি, নিকাব করি। এইজন্য সারাক্ষণ চোর পুলিশের মতো ভয়ে থাকতে হয়, কখন কে রুমে চলে আসে। এই নিয়ে অনেকের অনেক কথা শুনেছি, হাসির পাত্র হয়েছি তাও নিকাব করা ছেড়ে দিইনি।কারণ, বারবার শুধু এই কথা মাথায় ঘুরে দুনিয়ার মানুষের জন্য আমি আমার আল্লাহকে হারাতে পারবনা।

এখন আমার কাছে এই আনস্মার্ট গেয়ো কালো বোরকা খিমারকেই সবচেয়ে বেশি স্মার্ট পোশাক মনে হয়। বেপর্দা হয়ে গায়রে মাহরামের সামনে যাওয়া কল্পনাই করতে পারিনা। ইনশাআল্লাহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বেপর্দা আর হবোনা। আল্লাহর কাছে শুধু একটাই প্রার্থনা 'একজন উত্তম সঙ্গী' যে আমাকে পরিপূর্ণ পর্দার সাথে রাখবে এবং আমার ফ্রেন্ড না থাকার অভাব দূর করবে। যার সাথে আমি জান্নাতেও একসাথে থাকার স্বপ্ন দেখতে পারব ইনশাআল্লাহ।

আল্লাহর কাছে আমার এই প্রত্যাবর্তন খুব সহজে হয়নি। দীর্ঘ ২ টা বছর সাধনার পর আজ আমি এই জায়গায়। এখনো বারবার হোঁচট খাই, ঈমানের লেভেল উঠানামা করে, শয়তানের ওয়াসওয়াসায় পরে যাই তারপর আবার তাওবা করি। আমি জানি আমার রব সবচেয়ে বেশি দয়ালু কারণ তোমাকে ডেকে যে কখনো নিরাশ হয়নি প্রভু।

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3474912065856862/

.............................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ১১

 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মুসলিম দেশ হলেও এখানের বাকি ৯০% ভাগ মুসলিম পরিবারের মত আমার পরিবার ও তেমনই, ইসলাম বলতে কেবল ৫ ওয়াক্ত নামায, রোজা আর হজ্জ বুঝে। বাকি ইসলামের ব্যাপারে ব্যাপক ব্যাপক উদাসীনতা। (ইয়া আল্লাহ তাদের ও যেনো হেদায়েত করুন শীঘ্রই)।

পর্দা বলতে খুব ছোট থেকে বুঝতাম একদম নানী দাদীর বয়স হলে বোরকা, নেকাব এসব পড়তে হবে, তার আগে না। কিন্তু বিগত কিছু বছর যাবত হিজাব পড়ার যে ফ্যাশন চালু হয়েছে, তার খাতিরে এখন না হয় পথে ঘাটে বেপর্দা-উশৃংখল চলাচল এখন কমে গিয়েছে অনেকটা আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু তারপরও তা যে আসলেই পর্দা না তা বুঝার সাধ্য ছিল না আমার।

ক্লাস ৮ এ জে.এস.সি. এক্সামের পর এক চাচার বাসায় বেড়াতে যাই বেশ খানিকটা সময় থাকার জন্য। সেখানের সবাই কম বেশি হিজাব পড়ত, (তারাও শুরু থেকে যে পর্দা করত তা না নতুন ফ্যাশনের খাতিরে তারাও মাথায় হিজাব প্যাঁচাত (আসতাগফিরুল্লাহ কারো দোষ ধরার উদ্দেশ্যে নয় বরং নিজের জীবনের সব বলার জন্যই তুলে ধরা)। তাদের এসব দেখে আমার ভারী ভালো লেগেছিলো, তাই আমিও ওদের বাসা থেকে আসার পর থেকে হিজাব করা শুরু করি। স্কুল যাবত এভাবেই চলেছিল। কিন্তু তখন ও যে হিজাব কি তা বুঝে নয় বরং ফ্যাশনের জন্য পড়তাম (আল্লাহুম্মাগ ফিরলী)।

এভাবে স্কুল পার হলো। স্কুলে থাকতে সব ধরনের টিভি সিরিয়ালে মগ্ন ছিলাম, নাচ গান শিখে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতাম। কতই না গাফেল ছিলাম। অবশ্য আমার এই এসব কাজের জন্য আমার মা বাবা দাইয়্যুসের ভূমিকায় ছিলো (ইয়া আল্লাহ আমার পিতা-মাতাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী করুন)। কারণ এসব গান, নাচের প্রতি আমার মোটেও ইচ্ছা ছিল না বরং তাদের জোড়াজুড়িতেই করতে হত। স্কুল পর্যন্ত বেশ আদর্শ ছিলাম পড়ালেখায় ব্যবহারে সবখানে। ছোট থেকে হিজাব না করলেও অশালীন ভাবে চলি নাই কোনদিন তারপরো যে পর্দা ভঙ্গ হত তখনও। মা-বাবার কথা মত তখন পর্যন্ত অবাধ্য ছিলাম না।

স্কুলের পর কলেজের পর্বটাই ছিল আমার জীবনের সব থেকে বড় জাহেলিয়াতের পর্ব। কি ছিলাম কি হয়ে গিয়েছিলাম পুরো উল্টো। কলেজে উঠে বান্ধবীদের টিটকারি আমাকে ধ্বংস করার মুল কারণ ছিল। কারণ তাদের বাবা মা তাদের সাথে ফ্রেন্ডের মত ছিল, তাদের সব ছাড় দিত। সব জাহেলিয়াতে ছাড় দিত তথাকথিত মডার্ণ বাবা মা। তাদের সাথে মিশে একটা জিনিস খুব আফসোস করতাম আমার বাবা মা এমন কেন না? সব কিছুতে মানা করে কেন? পরে আমাকে এমন ফিল করানো হল যে আমি সব থেকে বঞ্চিত একটা মেয়ে যার নেই কোনো স্বাধীনতা (যা ফিতনার মূল কারণ)। অবশ্য তারাও কারো না কারাও দ্বারা এই পথে এসেছে।যদিও সব কিছুর মূলে তো ছিলো শয়তানের আশকারা। হায়রে তখন যা যা পাপ থেকে বেঁচে ছিলাম তাই নিজে আফসোস হত কেন আমি করতে পারি না সবাই করে। হায় আল্লাহ কতই না বিপথগামী ছিলাম।

স্কুল, কলেজ দুইটাই মহিলা হওয়ায় আর কোনো কোচিং ও কখনো করি নি। তাই কখনো ছেলে বন্ধু হওয়ার সুযোগটা হয়ে উঠে নি, এটা নিয়েও আরেক খোঁচা যা বেশ গায়ে লেগেছিল তাই কলেজের কিছু মাস যাওয়ার পর ফেইসবুক খুলি যা আমার জীবনকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায় পুরোপুরি। মাস যেতে যেতে এতই মত্ত হতে লাগলাম যে আস্তে আস্তে ছেলে বন্ধু বানাতে শুরু করি ভার্চুয়ালি। লুকিয়ে লুকিয়ে এভাবে দিন, মাস বছর যায়, ছেলে বন্ধু তো বানালামই সাথে বয়ফ্রেন্ড ও বানিয়ে ফেলেছিলাম (আসতাগফিরুল্লাহ)।

এর পর থেকে আমার অধঃপতন হতেই থাকে। যে কিনা একসময়ের গোল্ডেন ধারী ছিল সে না পড়ালেখা করত, না নামাজ কালাম, স্কুলে থাকলে এক্সাম আর রেসাল্টের আগেই নামায পড়তাম ব্যস। আর কুরআন পড়া হত ডেইলি হুজুর ছিলো বিধায়। কিন্তু কলেজের এই দুই বছর যেন জীবনটাকে শেষ ও করে দিল। কুরআনে হাত ও দিই নাই এই দু'বছর (আসতাগফিরুল্লাহ) যার দরুণ ভুলেই গিয়েছিলাম কুরআন পড়া।

এইচ.এস.সি এক্সামে খুব একটা ভালো রেসাল্ট করি নি। তবে তার আফসোস এতটা ছিল না কারণ তখন আমার মধ্যে আর মেধাবী ছাত্রীর মত সিরিয়াসনেস চলে গিয়েছিল। এডমিশন টেস্টের টাইমটাই আমার জন্য টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়ায়। কোথাও না টিকার দরুণ একটা বড় সড় বিপদ পিছু লেগেছে। তা না হয় নাই বলি, কিন্তু এটাও আমার জাহেলিয়াতের একটা অংশ ছিল যা আমি সিরিয়াসলি নি নাই দেখে এমন টা হয়েছিল যা এখনো পিছা ছাড়ছে না। অবশ্য এই বিপদটাই আমার হেদায়েতের উসিলা হয়েই আসছিল। এই বিপদটাই আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিল যে জীবন আমি এতদিন যাপন করছিলাম।

ভার্সিটিতে টিকি নাই দেখে আফসোস হত শুরুতে, কিন্তু বর্তমানে যে ভার্সিটিতে আছি আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। ইসলামী সবকিছুই। সবাই ভাবে ক্যাম্পাসের কারণেই এমন হয়েছি। কিন্তু আসলে আল্লাহ যাকে চান হেদায়েত করে আর সেই দ্বীনে আসতে পারে তার আগে না। ক্যাম্পাস ইসলামী হলেও এখানে আশপাশের বেশিরভাগই রুলসের কারণেই হিজাব আর গায়ে ফ্যাশনেবল বোরকা পড়ে। আল্লাহর ভয়ে পড়ে খুব কমই।

তবে এটা ঠিক এখানে দ্বীন মেনে পর্দা করার পরিবেশ পুরোপুরি আছে আলহামদুলিল্লাহ। যা অন্য কোথাও চাইলেও পেতাম না হয়ত। কলেজে উঠে বোরখা করতাম। কিন্তু তাতে ছিল আধুনিকতার ছোঁয়া। ভার্সিটিতে উঠার আগেই টের পেয়েছিলাম বিপদের কারণে আমার চলা ঠিক না, তবে এক নিমিষে তো আর সব শেষ করা যায় না। প্রথম বছর নিজেকে গুছানোর চেষ্টা করলাম নিজের আইডি ডিলিট করে দিলাম। যাতে সব নষ্টামি একেবারেই ছেড়ে দিতে পারি, গান শুনা ও বন্ধ করে দিলাম, আসলে কোন গর্দভে বলে যে গান শুনলে হালকা ফিল হয়, তা জানা নেই কিন্তু তা মানুষকে যে আরো ফিতনার দিকে ধাবিত করে তা বর্তমানে টের পাচ্ছি।

এই প্রথম বছরেই ধীরে ধীরে সব হারাম থেকে সরে আসা শুরু করি আলহামদুলিল্লাহ সফল ও হই। আস্তে আস্তে বিভিন্ন ইসলামিক গ্রুপে এড হতে লাগলাম আর বাদ দিলাম লাইফের জাহেলিয়াতি মিমস, গান এসব যা জীবনকে বারে বারে ইসলাম বিমুখ করে দেয়। ছবি তুলার অনেক নেশা ছিল। নিজের ফোন থেকে নিজের হাজার হাজার ছবি ডিলিট করতে প্রথমে কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু পরে পরে আস্তে আস্তে মনোবল যত বাড়তে লাগল আল্লাহর প্রতি ততই ভালোবাসা জাগতে লাগল আর দুনিয়ার প্রতি মায়া উঠতে লাগল। জান্নাত কত টা সুন্দর, জাহান্নাম কতটা ভয়াবহ আগে জাস্ট শুনেছিলাম কিন্তু বিভিন্ন গ্রুপের পোস্ট দেখে এসব উপলব্ধি করতে পারি। আসলে একটা জিনিসের ভালো খারাপ দুইটাই আছে। আগে খারাপটা করে ফেলেছিলাম আর এখন ভালো টাই পুরোটা জুড়ে আলহামদুলিল্লাহ।

আর আগ থেকেও খুব ইচ্ছা ছিল যে ইশ! মহানবী (সাঃ) এর যুগে হতাম কতই না ভালো হত, সব জানতে পারতাম পিউর ভাবে। আল্লাহ সেই ইচ্ছা ও পূর্ণ করে দিলেন। আসলে আল্লাহর কাছে আসতে চাইলে আল্লাহ উসিলা করেই দেয়। আর সেই থেকে ফিরে আসলাম সব থেকে তাওবা করতে লাগলাম বারে বারে এখন যে বুঝি জীবনে ইস্তিগফারের ভূমিকা কি! এখন আলহামদুলিল্লাহ অনেক জানতে পেরেছি ইসলামের ব্যাপারে পরিবারে সবাইকে জানাই কিন্তু আফসোসের ব্যাপার বাসায় টিটকারি শুনতে হয় আসছে হুজুর, দুইদিন আগে না এসব করেছো। খুব কষ্ট হয়। কিন্তু নিত্যদিনে অনেক হাদীস আর আল্লাহর বাণী জেনে নিজের সব কষ্ট লাগব হচ্ছে প্রতিনিয়ত জান্নাত লাভের লোভে। আল্লাহর কাছে ফিরে আসা শুরু করেছিলাম জান্নাতের লোভে। কিন্তু এখন আল্লাহকে ভালোবেসেই দ্বীনের পথে নিজেকে আনয়ন করছি আলহামদুলিল্লাহ।

আগে গান শুনে দিন পার করতাম এখন কুরআন তিলাওয়াত শুনে ওয়াজ শুনে পার করি। আগে নামায না পড়ে টিভি ফোনে জাহেলিয়াতে মশগুল ছিলাম, এখন নামায পড়ে কুরআন তিলাওয়াত করে দিন কাটে আলহামদুলিল্লাহ। আগে নিজের জন্য দোয়া করতাম এখন সবার জন্য দোয়া করি। কারণ যে অন্যের জন্য দোয়া করে ফেরেশতা তার জন্য দোয়া করে। আগে বেপর্দা মেয়েদের দেখে তাদের মত চলতে পারতাম না দেখে আফসোস হত (আল্লাহুম্মাগ ফিরলী) আর এখন এমন বোনদের দেখে তাদের জন্য দুঃখ হয়,যাতে আল্লাহ তাদের জলদি ফিরিয়ে আনে এসব থেকে। কারণ তারা বুঝছেনা তারা কতই না ক্ষতি করছে নিজের। কারণ আমি নিজেও আগে এমন ছিলাম অনেকটা। আগে হিংসা অহংকার জানা অজানায় নিজেকে গ্রাস করত, তাতে নিজের কত আমল নষ্ট করেছি আল্লাহ জানে।আগে যা নিজে কেন্দ্রিক ছিলাম।

যখন থেকে জেনেছি আমাদের নবী (সাঃ) বলেছেন নারীদের জাহান্নামে বেশি দেখা যাবে তাই বেশি দান সাদকা করতে। কিন্তু এখন তো নিজে উপার্জন করি না তাই সৎ কাজে অন্যকে উপদেশ দেওয়া ইসলামের ব্যাপারে জানানো এমন সাদকার ব্যাপারে মনোযোগ দিচ্ছি। আগে বেশ ইচ্ছা স্বাবলম্বী হওয়ার দুনিয়া পদচারণ করার। আর এখন ঘরের কোণেই নিজেকে আবদ্ধ রাখতে ইচ্ছা করে। বেশি বেশি এখন খারাপ চিন্তা আসলেও নিজেকে দোয়ায় ব্যস্ত রাখি।আগে মুখে সারাক্ষণ গান লেগে থাকত আর এখন মুখে দোয়া আলহামদুলিল্লাহ। আসলেই সব আল্লাহর দান। আগে না নেকী কামানোর চিন্তা ছিল, না কবরে আর কিয়ামতের করুণ অবস্থা থেকে নিজেকে বাচাঁনোর চিন্তা ও ছিলো না। এক সময় মরতে হবে জানতাম কিন্তু মানতাম না। আগে দুনিয়াবি জিনিসের চিন্তায় মগ্ন থাকতাম। এখন কবর আর আখিরাতের ভয়াবহতা দেখে প্রতিক্ষণ কেবল নিজের আমল কিভাবে বাড়াবো সেই চিন্তা আসে। আগে রমজান আসত যেত খবর থাকত না। এখন আলহামদুলিল্লাহ রমজানকে সর্বোচ্চটা কাজে লাগানোর কথা মাথায় ঘুরপাক খায়।

আসল পর্দা তো কেবল নিজেকে ঢেকে রাখা নয় মাহরাম মেইনটেইন করাটাও যে তার একটা অংশ। এটাই এখন বড় বাধা আজকের দিনে। কারণ ছোট থেকে তো সবার সাথেই ছিলাম বড় হয়েছি। তবুও তা মেনে চলার চেষ্টা করি আলহামদুলিল্লাহ। আর এখন তো আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাকে এমন ভাবে আমার মনকে গড়ে দিয়েছেন যে দুনিয়ার কিছুই আমার কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে না। আল্লাহর রাস্তায় যা যা ত্যাগ করা হয়, আল্লাহ তার জন্য উত্তম প্রতিদান দেন এটা শুনার পর প্রথমে ত্যাগ ভেবে সব ছেড়েছিলাম কিন্তু এখন ত্যাগ না ভালোবাসায় সব থেকে দূরে আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবার দোয়া প্রার্থী যেনও এভাবে দ্বীনের পথে নিজেকে ধরে রাখতে পারি।

এখন প্রতিনিয়ত নিজেকে এভাবে ধরে রেখে দ্বীনে চলা আর কেবল একটা উত্তম জীবন সঙ্গী পেয়ে যাতে আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে ধরে রেখে জান্নাত পেতে পারি। আমার পরিবারের সবাই হেদায়েত প্রাপ্ত হয়ে যাতে দ্বীনের পথে চলতে পারে সেই চিন্তা। সকল মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহ রহমত বজায় রাখুক।

মানুষ মাত্রই ভুল। এখনো শয়তানের ওয়াসওয়াসায় ভুল হয়ে যায় সাথে সাথে ইস্তিগফার ও করে ফেলি। কিন্তু এখন যে প্রকৃত শান্তির পথে আছি তা বলে বুঝাতে পারবো না। যারা এখনো নিজেকে শুধরাতে পারেননি তারা কেবল নিজের ধর্ম ইসলামকে একবার জানা শুরু করুন। আপনা আপনি সব বুঝে যাবেন ইসলাম আসলেই কত সুন্দর। আমরা মানুষরাই এই সমাজটাকে জাহেলিয়াতির দিকে নিয়েছি। ইসলাম আমাদের পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা উপহার দিয়েছে যেখানে এক ভাই আরেক ভাই থেকে তার উপস্থিতি, অনুপস্থিতি দু'টোতেই মৌখিক, শারীরিক দুইভাবেই আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া থেকে মুক্ত। আফসোস আমরা মানি না।

আর এটা উপলব্ধি করতে পেরেছি যে চুপ থাকা টা কত বড় নিয়ামত। একবার চুপ থাকতে পারলে সব ধরনের পাপের উৎস থেকেই পাপ আর প্রশ্রয় পাবে না। কিন্তু আমরা আল্লাহর ডাকে সাড়া না দিয়ে শয়তানের ডাকে সাড়া দি (আসতাগফিরুল্লাহ) আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা সকল মুসলিম উম্মাহ কে হেদায়েত করে বিপথ থেকে যেনো ফিরিয়ে আনে। সব গুনাহ বেশিরভাগ আমাদের মেয়েদের দ্বারাই হয় আর আমরা মেয়েরাই জাহান্নামে বেশি সংখ্যার হব (আল্লাহুম্মাগ ফিরলী)।

আমাদের নবী (সাঃ) বলেছেন -
১. চুপ থাক।
২. নিজের গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হও (তাওবা কর)।
৩. নিজ গৃহে অবস্থান কর।
বিশ্বাস করুন বোনেরা যদি এই ৩ টাই আমরা করতে পারি আমরা অধিকাংশ গুনাহ থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারব।

আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি করতে পেরেছি ইস্তিগফার আর চুপ থাকায় মুক্তির পথ। একটা পরামর্শ দিব যত পারেন ইসলামকে জানেন। এই জানার মাধ্যমেই আল্লাহ আমার উপর রহম করে হেদায়েত প্রাপ্ত করেছেন। পর্দা থেকে শুরু করে হারাম হালাল বজায় রেখে চলা। যত জানবেন তত গর্ব হবে মুসলিম হিসেবে আল্লাহ আপনাকে পাঠিয়েছেন আর ততই নিজেকে ভাগ্যবান মনে হবে। নিজেকে আল্লাহর দিকে এক পা এগিয়ে দেখুন আল্লাহ তার থেকেও বেশি গুণ আপনাকে কাছে টেনে নিবেন।

আর ফিরে আসা বান্দাকে আল্লাহ অত্যাধিক ভালোবাসেন। তাই তাকে বেশি বেশি আগলে রাখেন। ফিরে আসার পর থেকে জীবনে কষ্ট আর কষ্ট মনে হবে না আর কিছু পান না পান শান্তি টা কখনো হারাবে না জীবন থেকে। তখন বুঝেবেন আসলেই জীবনে কোনো কিছুই স্থায়ী না। তো কেনো এই অস্থায়ী মানুষগুলোর জন্য নিজেকে গুনাগার করছেন। এরা তো কিয়ামতে কোনো কাজেই আসবে না। এদের জন্য আল্লাহকে কেনো অগ্রাহ্য করছেন?

ফিরে আসার প্রথম ধাপ - ইসলামকে নিয়ে জানা শুরু করেন। আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কেমন ছিলেন। তিনি জীবদ্দশায় ও কেঁদে কেঁদে ইয়া উম্মাতি ইয়া উম্মাতি করেছিলেন। কিয়ামতেও তিনিই একমাত্র আমাদের জন্য চিন্তা করবেন। আর আমরা তার উম্মাহ হিসেবে কেমন একবার তফাৎ করেই দেখুন না আপনা আপনি সব জেনে যাবেন।

আল্লাহ কাউকে জলদি হেদায়েত দান করেন কাউকে দেরীতে। সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ আমার ক্ষেত্রে বেশ খানিক টা আমাকে অপেক্ষা করান নি। আলহামদুলিল্লাহ।

আল্লাহ আমাদের সকল মুসলিম উম্মাহকে হেদায়েত বজায় রেখে দ্বীনের পথে আনয়ন করুক।

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3476101179071284/

............................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ১২

 

আপনজনদের মৃত্যু, প্রিয় জিনিস হারানোর মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা বোঝার তৌফিক দিয়েছেন দুনিয়াটা নশ্বর।

৬ জানুয়ারী ২০১৯।
রাতে ফোন আসে নানা মারা গেছে! এই খবরটা অনেক বেশী কষ্টের ছিল, মাত্র একসপ্তাহ আগেও যে মানুষটা আমাদের বাসায় এসেছিল আজ হুট করেই লাশ হয়ে গেলো! নানার মৃত্যুর আগে আমার আত্নীয়দের মধ্যে এত কাছের কেউ মারা যায়নি। অনেক বেশি শকড্ হয়ে গেছিলাম। (আল্লাহ জান্নাতে নানার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিন)

প্রায় দুই তিনমাস পর আমার ছোট বোন মাদ্রাসা থেকে ফেরার পথে এক্সিডেন্ট করে! আমরা তিন বোন, ভাই নেই। এক্সিডেন্টের খবর শুনে আব্বা আম্মা একরকম পাগলই হয়ে গেলো। না, বোনটা মারা যায়নি। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে প্রায় পনেরো দিনের মত হাসপাতালে ছিল। বাড়িতে এসেছিল ৫ই মে ২০১৯। তারপরও অনেক দিন ট্রিটমেন্ট করতে হয়েছিল।

৬ মে ২০১৯।
আজ রাত থেকে সেহরী খেতে হবে। রামাদ্বান শুরু...
কিন্তু আজ আমার SSC পরীক্ষার রেজাল্টও দিবে! বরাবরই খুব ভাল স্টুডেন্ট ছিলাম। যেকোনো প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতাম। শিক্ষকরাও অনেক স্নেহ করতো। বলতে গলে সবার কাছে খু্ব ভদ্র মেধাবী ছাত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলাম। স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো!
যেহেতু পরীক্ষা ভাল দিয়েছিলাম তাই রেজাল্ট নিয়ে এক্সপেকটেশন অনেক বেশি ছিল।

রেজাল্ট শুনার পর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো!কেমিস্টিতে F আসলো। এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছিলামনা, কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি আমি ফেল করতে পারি! অথচ আমার চেয়ে খারাপ স্টুডেন্টরা দিব্যি পাশ করে গেলো। অনেক বেশি ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। সবকিছু ভুলে থাকার জন্য সারাদিন শুয়ে থাকতাম, নয়তো ফোন ঘাটাঘাটি করতাম, গান শুনতাম। কিন্তু এসব করেও মনে কিছুতেই শান্তি পেতামনা। কোনো কিছুর কমতি নেই, যা চাইতাম তাই পেতাম তারপরেও অন্তর প্রশান্ত ছিলনা। অশান্তির কারনটাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি চাওয়া-পাওয়া, প্রাপ্তিগুলো অনেক বেশিই দুনিয়ামুখী ছিল। এজন্যই অন্তর তৃপ্ত ছিলনা!

তিন-চারটা ফেসবুক একাউন্ট খুলেছিলাম। সারাদিন অহেতুক পোস্ট-কমেন্ট করতাম! আইডিগুলো ফেমাস ছিল, অনেক লাইক-কমেন্ট হতো পোস্টে! হায় আফসোস! কিন্তু সেগুলো আমার জন্য গুনাহে জারিয়া ছিল।

রমাদ্বানের রোজাও রাখতাম, কোরআনও পড়তাম, নামাজও পড়তাম। কিন্তু দুঃখের বিষয়, নিজের নফসের দাসত্ব আর শয়তানের ধোঁকায় দুনিয়া আমায় এতটাই পেয়ে বসেছিল যার কারনে ইবাদত করেও শান্তি পেতামনা!

১৭ মে ২০১৯।
চাচাতো বোনটা হুট করেই পরকালে পাড়ি জমায়।তরতাজা মেয়েটা মারা যায়। বয়সতো খুব বেশি হয়নি সবে মাত্র ২৫-৩০ হবে হয়তো! আমাদের ধারনা ৮০ বছরে আমরা মারা যাব। কিন্তু এই কম বয়সের মৃত্যুগুলো বিবেককে নাড়া দেয়। জানিয়ে দেয় মৃত্যু তো তোমার দু'চোখের মাঝে যতটুকু ব্যবধান তার থেকেও কাছে আছে। চাচাতো বোন মারা যাবার আগে পাশের বাড়ির আরেকটা আন্টিও মারা গেছে। (আল্লাহ জান্নাতে ওদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিন)

২০ মে ২০১৯।
এক মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটা মৃত্যু!
দাদাও চলে গেলো দুনিয়ার মায়া ছেড়ে! (আল্লাহ জান্নাতে দাদার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিন)
একটার পর একটা বিপদ যেনো পিছু লেগেই আছে। এটাই মহান রবের উত্তম ফয়সালা যদিও আপাতদৃষ্টিতে সেটা আমাদের কাছে খারাপ লাগে।

এতগুলো মৃত্যু দেখার পরেও আমার বিবেকের দরজা খুলেনি। মৃত্যুর ভয়ে দুনিয়ার মায়াটা তখনও ছাড়তে পারিনি!

টনক নড়লো যখন আমার বড় বোনটা কালোযাদুর প্রভাবে মৃত্যু পথযাত্রী হয়ে গিয়েছিল। এই বছরটাকে মনে মনে ঘৃণা করতে থাকি কিন্তু কে জানতো এটাই আমাদের হেদায়েতের বছর!

খুব কাছের মানুষ কৌশলে যখন ক্ষতি করতে চায়, তখন সেটা খুবই মর্মান্তিক। এটা অনেক লম্বা একটা জার্নি ছিল। বোনের মাঝে যাদুর প্রভাব অনেকদিন ধরেই ছিল কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনি। তিন চারদিনের ব্যবধানে বোনের অবস্থা খুবই আশংকাজনক হয়ে গেলো। বাড়িতে কান্নার হিড়িক পড়ে গেলে।

আত্মীয়স্বজনরা দেখতে আসছিল, সবাই ভেবেছিলাম এটাই হয়তো শেষ দেখা! হয়তো পরিবারের মধ্যে আরেকটা মৃত্যু ঘনিয়ে এসেছে!

কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা আমার বোনটাকে হায়াতে তাইয়্যেবা দান করেছে। মৃত্যুকে এত কাছ থেকে দেখে আমার বোনটা নিজেকে পরিবর্তন করছিল। আব্বাও বাড়ির আশপাশ পর্দা টানিয়ে দিলো! কিন্তু পর্দা টানানোর উদ্দেশ্য ছিল আর কেউ যেন আমাদের কাপড়, চুল সংগ্রহ করে ক্ষতি করতে না পারে।

ততদিনে আমিও পর্দাই থাকার চেষ্টা করছি। বাইরের পুরুষের সামনে না গেলেও বাড়ির গাইরে মাহরাম দুলাভাই, আঙ্কেল, কাজিনদের সামনে যেতাম। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর ভাবলাম এটা আমার কেমন পর্দা! বাইরে যায়না অথচ ঘরে গাইরে মাহরামদের সামনে তো ঠিকই যায়! কাকে ধোঁকা দিচ্ছি আমি নিজের রব্বকে যিনি অন্তর্যামী! না আমিতো নিজেকে নিজেই ধোঁকা দিচ্ছি।

কিন্তু খাস পর্দা করাটা আমার জন্য সহজ ছিলনা। অন্য গাইরে মাহরামের সাথে দেখা না হলেও ভাইয়ার (দুলাভাই)সাথে দেখা হয়ে যেত। সারাদিন সামনে না পড়লেও দুপুরে খাওয়ার সময় দেখা হয়েই যেত। যেহেতু আমার ভাই নাই সুতরাং আব্বা আম্মা বলেছিল দুলাভাই ই তোমাদের ভাইয়া। উনিও আমাদের স্নেহ করতেন!

কিন্তু তাই বলেতো আর পর্দার সাথে আপোষ চলেনা, কোনো যুক্তি খাটেনা। পর্দা যে আমার রবের পক্ষ থেকে ফরয বিধান। খুব খারাপ লাগতো পরিপূর্ণ পর্দা না করতে পেরে। আব্বা আম্মাকে বলতেও পারছিলাম না খাস পর্দা করতে চাই! যখন খুব বেশি অস্বস্তি লাগতো তখন ঐ বিশাল আকাশ পানে তাকিয়ে মালিককে বলতামঃ ও আল্লাহ! আমার পর্দা করা সহজ করে দিন।আমিযে আপনার প্রিয় বান্দা হতে চাই! সত্যিই ভাবিনি আল্লাহ এত তাড়াতাড়ি দোয়া কবুল করবেন। এত সহজ করে দিবেন।

একদিন ভাইয়া খেতে আসলো। আর আমি বোরকা পড়ে রান্না ঘরে গিয়ে বসে ছিলাম। জানি সবাই অসন্তুষ্ট হয়েছিল হয়তো। কিন্তু আমার রব্ব তো নিশ্চয় খুশি হয়েছিল। ব্যস, আর কি চাওয়ার আছে দুনিয়াতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া! আলহামদুলিল্লাহ।

এত এত লাইক কমেন্টযুক্ত আইডি গুলা ডিএক্টিভেট করে দিলাম। হাত-পা মোজা কিনে আনলাম। অতীত মুছে ফেললাম।

এখনও ভাইয়া আসে, কাজিনরা আসে কিন্তু আমার পর্দার কোনো ক্ষতি হয়না। আলহামদুলিল্লাহ আমার পরিবারের সবাইকে আল্লাহ পর্দার গুরুত্ব, মর্যাদা বোঝার তৌফিক দিয়েছেন। আমার পরিবারের সবাই পর্দা করে। এখন বাড়িতে গাইরে মাহরাম আসলে আব্বা দেখাশুনা করেন। এখন কেউ আমার কন্ঠ শুনুক সেটাও আমি ভাবতে পারিনা। আল্লাহ সহজ করে দিয়েছেন, অকল্পনীয়ভাবে সাহায্য পাঠিয়েছেন।

হ্যাঁ, এবার রিএক্সাম দিয়েছি। তবে সম্পূর্ণ অন্যভাবে হাতে পায়ে মোজা পড়ে লিখেছি। যদিও লিখতে অসুবিধা হয়েছে কলম পিছলিয়ে গেছে বহুবার, হাতের লেখা খারাপ হয়েছে । কিন্তু এতদিন যে প্রশান্তি খুঁজছিলাম উন্মাদের মত সেটা পেয়ে গেছি, আলহামদুলিল্লাহ। একবছর মাত্র একবছরের ব্যবধানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদের জীবনটাকে প্রশান্তিতে সাজিয়ে দিয়েছেন। বছর ঘুরে আবার রামাদ্বান এসেছে, কিন্তু এই রামাদানটা আমার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ট রামাদ্বান। এটাই তো সবচেয়ে বড় পাওয়া যে কাফনের কাপড়টা আমার পর্দার প্রথম কাপড় হয়নি। মৃত্যুর আগেই পর্দা করতে পারছি। না,এটা আমার অর্জন নয় এটা কেবলই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার দয়া।

যে মেয়েটা বেপর্দা হয়ে ঘুরে বেড়াতো সেই মেয়েটাই আজকে কাঠফাটা গরমের মধ্যেও ঘরের একমাত্র জানালাটাও খুলেনা গাইরে মাহরাম দেখার আশংকায়। যখন আপাদমস্তক নিজেকে ঢেকে বাইরে বের হয়ে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার মুখে খালা/চাচি ডাক শুনি তখন মনে অনাবিল প্রশান্তিতে ছেড়ে যায়। আর অস্পষ্ট কন্ঠে ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে আলহামদুলিল্লাহ।

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3477989088882493/

................................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ১৩

 

ছোটবেলা থেকেই সাজগোজের উপর অনেক ঝোঁক ছিল। আম্মুর সব সাজগোজের জিনিস নামিয়ে একা একা সাজতাম। সেই পিচ্চিকাল থেকেই শাড়ি পড়তে ভালো লাগত। আম্মুর শাড়ি, ওড়না এমনকি হাতের সামনে কিছু না পেলে কাঁথা দিয়ে শাড়ির মত পেঁচিয়ে আয়নার সামনে বসে থাকতাম। আর প্রত্যেক ঈদেতো ম্যাচিং করে সব না কিনলে আমার ঈদই হতো না। আব্বুও খুশিমনে সব কিনে দিত। অভ্যাসগুলো বড় হয়েও রয়ে গেছিলো।

আর পাচঁটা সাধারণ মুসলিম পরিবারের মতই ছিল আমাদের পরিবার। ধর্ম বলতে নামায, রোযা, ঈদ, হজ্জ এসবই বুঝতাম। মা, চাচি, খালা সবাই বোরকা পড়ত।কিন্তু শুধু বাইরে গেলেই। আর কাজিনদের কেউই তেমন পড়ত না। বিয়ের পর আবার সেই কাজিনদের দেখতাম বোরকা পড়তে। এসব দেখে ছোটবেলায় মনের অজান্তেই একটা কথা মাথায় সেট হয়ে গেল। সেটা হচ্ছে "বিয়ের পর বোরকা পড়তে হয়"। এই জানতাম প্রায় ক্লাস ৭/৮ পর্যন্ত।

একদিন আম্মুর কোন এক ইসলামি বই পড়তে গিয়ে প্রথম জানলাম বালেগ হওয়ার পর সব মেয়েদেরই "মাথার চুল" ঢাকা লাগে বাইরে গেলে। একটা চুল দেখা গেলে ৭০ হাজার সাপ হয়ে কবরে কামড়াবে। এই টাইপের কিছু একটা।

পড়েই শেষ তেমন মাথা ঘামাই নি। কারণ আমার সমবয়সী কেউই মাথা ঢাকত না। পরিবারে না। ক্লাসেও খুব বেশি হলে ৩/৪ জন। বাসা থেকেও কখনো হিজাব বা পর্দা নিয়ে কিছু বলে নি। নামায ও তেমন পড়া হত না। দেখা যেত শবে বরাত, শবে কদর, রেজাল্টের আগের দিন এই বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে পড়তাম। আব্বু আম্মু সবসময় নামায পড়ত। আমাকেও মাঝে মাঝে বলত। কিন্তু তেমন গায়ে লাগাতাম না।

এভাবেই যাচ্ছিল দিনকাল। আমার এখনো মনে পড়ে আমি স্কুল কলেজে কখনো পড়ালেখার জন্য বকা খাই নি। শুধু একটা জিনিসের জন্য বকা খেতে হয়েছে সেটা হচ্ছে 'সাজগোজ'। নতুন নতুন হেয়ার স্টাইল শিখতাম আর সেগুলো এপ্লাই করে স্কুল কলেজে যেতাম।

এমন যেতে যেতে ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার সময় এসে গেল। সবাই বলত পাবলিকে চান্স পেলে লাইফে আর কোন চিন্তা নেই। তাই যেভাবেই হোক পাবলিকে চান্স পেতেই হবে। সারাজীবন টপ স্কুল কলেজে পড়ে এসেছি। আর এখন যদি পাবলিকে চান্স না পাই মুখ দেখানো যাবে না। দিন রাত খেটে পড়তে লাগলাম। আর চোখের সামনে দেয়ালে কাগজ দিয়ে বড় করে 'সমাবর্তন' লিখে রাখলাম যাতে চোখ পড়লেই মোটিভেশন আসে। তখন অবশ্য কিছুদিন নামায পড়েছিলাম। আর দোআ করতাম যাতে চান্স পাই।

অবশেষে চান্স পেলাম। তাও পছন্দের সাবজেক্টে। কিন্তু এরপর পরই নামায আর কন্টিনিউ করতে পারলাম না। কিছুদিন খুব খারাপ লাগল যে আমি আমার উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আল্লাহর ইবাদাত করলাম যখন তা পেয়ে গেলাম তখন আবার ছেড়ে দিলাম। কিন্তু এই খারাপ লাগাটাও কিছুদিন পর চলে গেল।

ক্লাস শুরু হলো। নতুন জীবন। সব কিছুকে রঙিন চশমা লাগিয়ে দেখিছিলাম। এভাবেই কেটে গেল ভার্সিটি লাইফের প্রায় দেড় বছর।

একদিন ফেসবুকিং করছিলাম। এমন সময় একটা নিউজে চোখ আটকালো। কোন এক পাবলিক ভার্সিটির একটা স্টুডেন্ট রোড এক্সিডেন্ট করেছে। মেয়েটার ছবিও দেয়া হয়েছে। বোরকা পড়া একটা মেয়ের লাশ রাস্তায় পড়ে আছে। দেখেই সাথে সাথে এই কথা মাথায় আসল "আমি তো ভেবেছিলাম ভাল কোথাও চান্স পেলে লাইফ সেটেলড! ভালো চাকরি সহজেই পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন যদি আমি হুট করে এই মেয়েটার মত মারা যাই তখন আমার কি হবে!"

এর কিছুদিন পর কিয়ামত নিয়ে একটা লেকচার শুনি। প্রায় এক ঘন্টার উপরে ছিল ভিডিওটা। সেটাই ছিল আমার লাইফের প্রথম শোনা/দেখা কোন ইসলামিক লেকচার।আমার মনে দাগ কেটেছিল লেকচারটা। এরপর থেকেই ইসলামিক লেকচার শুরু করি। নামাযে কিভাবে যেন রেগুলার হয়ে গেলাম। অবশ্যই আল্লাহর সাহায্য ছিল দেখে পেরেছি। এভাবে ২/৩ মাস কেটে গেল। হিজাব পড়ব পড়ব করে আর পড়া হচ্ছিল না।

একদিন এশার নামাযের শেষ রাকাতে লম্বা একটা সিজদাহ দিয়ে নামায শেষ করলাম। সাথে সাথেই মনে হল অনেক দেরী হয়েছে। আর পিছানো ঠিক হবে না। কালকে থেকেই আমি হিজাব পড়ব। ভার্সিটির ফ্রেন্ডের জানালাম কালকে আমি হিজাব পড়ে ক্যাম্পাসে যাবে। এখন থেকে রেগুলার হিজাব পড়ব। তাদের রিপ্লাই দেখে বুঝাই গেল যে কথাটা হজম করতে পারেনি তারা।

এরপর দিন গেলাম হিজাব পড়ে। আমার কোন হিজাব ছিল না। জরজেটের ওড়না কোন মতে পিন দিয়ে আটকিয়ে গিয়েছিলাম। একটু পর পর খুলে যাচ্ছিল আর আমি ওয়াশরুমে দৌঁড়াচ্ছিলাম ঠিক করার জন্য। ক্লাসের অনেকেই এসে জিজ্ঞেস করছিলঃ 'কিরে! কতদিনের জন্য ধরলি?' আমি জাস্ট হাসি দিয়ে ইগনোর করছিলাম। সেদিন ক্লাস শেষেই মার্কেটে গেলাম হিজাব কিনার জন্য।

তখনও জানতাম মাথায় কাপড় পেচালেই পর্দা হয়ে যায়। আর ভাবতাম যারা হিজাব পড়ে তারা ধার্মিক দেখেই পড়ে। কিন্তু এই ভুল আস্তে আস্তে ভাঙল। অনেকে সুন্দর লাগে দেখে হিজাব পড়ে, অনেকে চুলের প্রোটেকশনের জন্য, আবার অনেকে বয়ফ্রেন্ড বলেছে সেজন্য!

এভাবে ৪/৫ মাস কেটে গেল। আমি ইসলামিক লেকচার শুনছি ডেইলি। আস্তে আস্তে নিজের দ্বীনকে জানছিলাম। আর জীবনের প্রথমবারের মত বাংলা অর্থ জেনে কুরআন পড়ছি। তখন যে অন্তরে কিরকম একটা প্রশান্তি কাজ করত বলে বুঝানো যাবে না।

রোজা চলে আসছে। একদিন সকালে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য বাসে বসে আছি। দেখি বাসে সামনে আগাগোড়া কালো বোরকা পড়া কে যেন বসে আছে। এমন ৫/৬ দিন খেয়াল করলাম। বুঝলাম বাইরের কেউ না, স্টুডেন্টই হবে। বাসের সবাইকেই তো চিনি কিন্তু ওই মেয়েটা কে বুঝতে পারছিলাম না। একদিন হঠাৎ মেয়েটা আমাকে ডাক দিল। পরিচিত কন্ঠ শুনেই চিনতে পেরে গেলাম তখন। ওকে এইভাবে দেখে ভিতর থেকে কে যেন বলে উঠলঃ 'ও যদি নিজেকে এভাবে বদলে ফেলতে পারে তাহলে তুই কেন মাথার এক টুকরো কাপড়েই আটকে আছিস? তোরও সামনে আগাতে হবে।'

সেই রোজায় প্রথম আমি রোজা মানে কি উপলব্ধি করলাম। আর ঠিক করলাম এখন থেকে বোরকা পড়ব আর মুখ ঢাকব। ঈদে নতুন জামার পরিবর্তে বোরকা কিনলাম।

প্রথম যেদিন বোরকা পড়ে ক্লাসে গেলাম অনেকেই চিনে নি। যেহেতু হিজাব দিয়ে মুখ ঢাকা ছিল। ফ্রেন্ড সার্কেলের মেয়েরা ব্যাপাটা ভালো হিসেবে নেয় নি। বাট ছেলেগুলো ইন্সপায়ার্ড করছিল। আমার মনে আছে আমি যখন আমার সার্কেলের সবাইকে বললাম ক্লাস টাইমেও মুখ ঢেকে ক্লাস করব তখন আমারই একটা মেয়ে ফ্রেন্ড হিজাব টান দিয়ে আমার মুখ খুলে ফেলে বলে 'তুই কিন্তু বেশিই করছিস, ক্লাসের বাইরে মুখ ঢাকলেই পারিস' হঠাৎ ওর এই কাজে বেশ রাগ উঠল, কিন্তু এরপরই মনে হল ও জানে না দেখেই এমন করেছে। একসময় তো আমিও জানতাম না। আমিও ভাবতাম চুল ঢাকা যখন ফরয মানুষ এমন আগাগোড়া ঢেকে রাখে কেন! তাদেরও আমার বেশি বেশি মনে হত।

আস্তে আস্তে আমার ফেসবুক থেকে সব ছবি ডিলিট করে দেই। সবাইকে রিকোয়েস্ট করি ডিলিট করার জন্য। কেউ করে, কেউ করে নি। হিজাব দিয়ে মুখ বাধতে অসুবিধা হয় দেখে নিকাব কিনি সাথে হাত মোজা পা মোজা।

সেইসময় আমি জানতে পারি মাহরাম, নন-মাহরাম নিয়ে। ছেলে ফ্রেন্ডগুলা থেকে আস্তে আস্তে দূরে সরে আসি। মেয়েগুলাও আমাকে ইগনোর করতে থাকে। আমিও বুঝতে পেরে তাদের সাথেও কথা বলা কমিয়ে দেই। পরে অবশ্য মেয়েগুলার সাথে সব ঠিকঠাক হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও একটা গ্যাপ রয়েই যায় আমাদের মাঝে।

এরমাঝে সেই বাসের মেয়েটাকে আর দেখিনা। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলাম ও পড়ালেখা ছেড়ে দিছে। অনেকেই অনেক কিছু বলছিল। বেশি ধার্মিক হয়ে গেছে, ইসলামে কি মেয়েদের পড়ালেখা করা বারণ! হেন তেন আরো অনেক কিছু।নকিন্তু আমি তো জানি কারণটা কি। 'ফ্রী মিক্সিং'। আমি আর ও একদিন আফসোস করছিলাম এটা নিয়ে। বাসায় থাকলে ভালো লাগে কিন্তু ক্যাম্পাসে যখন আসি তখন অস্থিরতা কাজ করে। বিবিএ শেষ হলেই শেষ। আর আগানোর ইচ্ছা নেই আমার। ও ও বলছিল ছেড়ে দিবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ছাড়বে আমিও ভাবি নি।নমেয়েটার ঈমান কত দৃঢ় ছিল। কিন্তু ওকে আর বলা হল না ওর পর্দা আমার জন্য একটা সাইলেন্ট ম্যাসেজ ছিল। ওকে ধন্যবাদও দেয়া হল না।

একেতো ফ্রী মিক্সিং! তার উপর ভাইভাতে টিচারদের পর্দার জন্য ইনসাল্ট আমার ভার্সিটির প্রতি অনীহা জন্মে যায়। বাসায় একবার বলেছিলাম ছেড়ে দিব দ্বীনি লাইনে পড়তে চাই কিন্তু কেউই মানল না। সবাই বুঝাল বিবিএ যাতে শেষ করি। আমিও ভাবলাম আল্লাহ আল্লাহ করে কোন মতে শেষ হোক।

আলহামদুলিল্লাহ! একসময় রাস্তা দিয়ে চলার সময় অনেকেই তাকিয়ে থাকত। কিন্তু পর্দা করার পর আমি পার্থক্য বুঝতে পেরেছি। এখন নিজেকে অনেক সম্মানিত মনে হয় নিজের কাছেই। আমাকে দেখার অধিকার যার তার নেই। এটা ভাবতেই ভালো লাগে। যখন বাসে ভাড়া নেয়ার টাইমে হেল্পার মাঝে মাঝে "আন্টি, ভাড়া দেন" বলে তখন ভালোই লাগে।

রেগুলার যখন নামায পড়ছিলাম তখন বাসার সবাই খুশি হয়েছিল। বাট পর্দা নিয়ে একটু প্রব্লেম হয়েছে। এত পর্দা না করলেও হয়। এভাবে ঢেকে থাকলে বিয়ে হবে কিভাবে! বিয়ের পর পর্দা করিস। পড়ালেখা করলি চাকরি কেন করবি না। এসব শুনতে শুনতে মুখস্থ হয়ে গেছে। এছাড়া পরিবারের পছন্দের অনেক প্রপোজাল দ্বীনি না হওয়ার জন্য না করে দিয়েছি সেজন্য মাঝে মাঝে মনোমালিন্য হয়। এইসবের উত্তর অনেক বার দিয়েছি কিন্ত তাও এই কথাগুলোই বার বার শুনতে হয়। তাই এখন আর কিছু বলি না।

আমাদের বেশিরভাগ পরিবারের নন মাহরাম নিয়ে না জানার কারণে বাইরের নন মাহরাম থেকে ফ্যামিলির নন মাহরাম মানা অনেক কঠিন। ছোটবেলা থেকেই একসাথে বড় হয়েছি কাজিনরা। ছেলে কাজিনদের নিজের আপন ভাই হিসেবে দেখতাম। সেজন্য আমার এখনো এই ব্যাপারটা নিয়ে স্ট্রাগল করা লাগছে। সেজন্য বাড়িতে খুব কমই যেতে চাই।

এখন আল্লাহর কাছে দুআ করি আল্লাহ যাতে আমাকে চক্ষুশীতলকারী স্বামী আর পরিবার দেয় যেখানে আমি স্বাধীন ভাবে পর্দা করতে পারব। দ্বীন মেনে চলতে পারব।

প্রতিটা ক্ষেত্রে শয়তানের ওয়াসওয়াসা আর নিজের নফসের সাথে যুদ্ধ করতে হয়। দ্বীনের পথে চলার সময় হোঁচট খাই আবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। এভাবেই চলছে জীবন। আল্লাহর জন্য কিছু স্যাক্রিফাইস করার পর যে প্রশান্তি পাওয়া যায় তা আর কিছুতে পাওয়া যায় না।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়াত দান করুক। আমাদের পর্দা করার মর্যাদা বুঝার তৌফিক দান করুক। আমিন।

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3479920775355991/

...............................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ১৪

 

চারিদিক তোলপাড়!

এবার কার জান কবজ হবে? সবার দৌঁড়াদৌড়ি...
লোকজন বলছে মালাকুত মউত আসছে...কারো জান কবজ করতে...সবাই দৌঁড়ে পালাচ্ছে।

কোন দিকে আসছে মালাকুত মউত? এদিকেই আসছে দেখি। কার জান কবজ করবে? আমার? কক্ষনো না! এত তাড়াতাড়ি আমি মরবো কেন? আমার কত কাজ বাকি! কিন্তু মালাকুল মউত তো এগিয়ে আমাদের দিকেই আসছে! হতে পারে আমার কাছে এসে আমার সাথেই শুয়ে থাকা আমার বান্ধবীর জান কবজ করবে। আমি এ যাত্রায় বেঁচে যাবো হয়তো...(কতোটা স্বার্থপর চিন্তা-ভাবনা!)

কিন্তু এ কি! মৃত্যুর ফেরেশতা আমার খাটের পাশে এসে দাঁড়ালো কেন? তাহলে কি আমিই...?

সারাজীবন স্রষ্টার কত অবাধ্যই না ছিলাম! যেভাবে যা করার উচিত ছিল সেভাবে হয়নি। আমলনামা তো শূণ্য! সেখানে স্রষ্টার অবাধ্যতাই বেশি। কিন্তু শুনেছি খারাপ মানুষের মৃত্যুর আগে মৃত্যুর ফেরেশতারা ভয়ংকর চেহারা নিয়ে আসে। কিন্তু আমার সামনে শুভ্র পোষাকে এসেছে কেন? তাহলে কি আমি জান্নাতে যাবো? কিন্তু আমার আমলনামা তো সেটা বলেনা!

খুবই স্বল্প সময়ে এতোসব ভাবনা বারবার উঁকি দিচ্ছে মনে। বারবার পুরো জীবনের অর্জিত আমলনামা চোখের সামনে ভেসে উঠছে! নাই, কিচ্ছু নাই! আমার ভাবনার জন্য মৃত্যুর ফেরেশতা তো অপেক্ষা করবেনা। তিনি আমার জান কবজ করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিল। একি! না! না! প্লিজ আল্লাহ! আমাকে একটা বার সময় দিন! আমাকে ভাল কাজ করার সুযোগ দিন! প্লিজ! আমি এখন মারা গেলে আমাকে জাহান্নামে যেতে হবে। আমি জাহান্নামে যেতে চাইনা। তওবা! এখনই তওবা করি। কালিমা পড়ি! কিন্তু এখন পড়ে কি লাভ হবে! মৃত্যুর ফেরেশতা দেখার পর তওবা করেতো লাভ নেই। আগেই করা উচিত ছিল। জান কবজের জন্য ফেরেশতার হাত আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। আর অনেক কাকুতি মিনতিসহ আল্লাহর কাছে বারবার প্রাণ ভিক্ষা চাইছি। আর হাত দিয়ে মৃত্যুর ফেরেশতার হাত সড়িয়ে দিলাম।

নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। চোখে পানি। আমি মরিনি! এই তো একটু আগেই আমার খাটের পাশে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঠিক এভাবেই তো আমি শুয়ে ছিলাম। স্বপ্ন দেখলাম! স্বপ্ন এতোটা বাস্তব কিভাবে হয়! একই রুম, একইভাবে শোয়া, একই বিছানা!

এই স্বপ্নটা আমার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টিয়ে দিয়েছিল। আমি জানি এ আমার রবের পক্ষ থেকে ম্যাসেজ ছিল। আমার জন্য ওয়ার্নিং ছিল। আমাকে বদলাতে হবে। আমাকে যে জন্য এই দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছে সেটা না করে আমি কিসের পিছনে ছুটছি! অনেকক্ষণ কান্নাকাটির পর কিছুটা রিল্যাক্স ফিল করলাম।

মাথার ভিতর নানা জল্পনাকল্পনা! পরিবার সাধারণ মুসলিম। কোন রকম ফরজ আমল করা পরিবার। তবে পরিবারে উগ্রতা কিংবা চরমভাবে ইসলামবিদ্বেষী মনোভাব কখনোই ছিলনা আলহামদুলিল্লাহ।

সবসময় নামাজে দোয়া করতাম হোস্টেল থেকে বাসায় ফিরে যেন আল্লাহ আমাকে সমস্যায় পড়তে না হয়। কিন্তু একবারে প্রথম থেকেই গায়রে মাহরাম মেইন্টেইন করে পর্দা করার কথা তারা কি মেনে নিবে? ভাববে পাগল হয়ে গেছি। নয়তো কেউ ব্রেইন ওয়াশ করেছে। তাহলে? শয়তান আমাদের চিরশত্রু। তাই আমিও আল্লাহর সাহায্য চেয়েই শুরু করলাম আমার দ্বীনের পথের যাত্রা।

প্রথম ধাপে আব্বাকে বলে বোরকা বানিয়ে ফেললাম। এরপর আস্তে আস্তে ক্রমাগতভাবে তাদের হিদায়াতের দোয়া ও নসীহাহ করতে লাগলাম। পর্দা না মানার কারণে সমাজে সৃষ্ট নানা সমস্যা নিয়ে আব্বা-আম্মাকে বুঝাতাম। তারাও বুঝতো আলহামদুলিল্লাহ। তখনও তারা জানেনা আমার পরিকল্পনা কি! আমার টার্গেট ছিল তাদেরকে আগেই বুঝতে দেয়া যাবেনা। তারাও শয়তানের কুমন্ত্রণায় আমাকে বাঁধা দেয়া শুরু করবে। অশ্লীলতার প্রশ্রয় কিংবা উশৃঙ্খল চলাফেরা কোন সময়েই পরিবারে এলাওড ছিলনা। তাদের বোঝানোর জন্য আমারও দরকার ছিল জ্ঞানার্জনের। সেটা অনেক আগে থেকেই শুরু করেছিলাম। যাতে কেউ কিছু বললে কুরআন হাদীসের আলোকে তাদের বোঝাতে পারি।

জীবনে এমন কোন ইচ্ছা নেই বাবা পূরণ করেনি। বললাম "আব্বু এই দেখো এটাকে খিমার বলে। এটা পড়লে অনেক ভাল পর্দা হয়। অনলাইনে সেল করে এসব।" বাবা সম্মতি জানালেন। আর আমিও অর্ডার করে ফেললাম। আরেক ধাপ এগুলাম। পরিবার সবই মেনে নিলো। কিন্তু আজকালকার যুগে শিক্ষা মানেই যেন চাকরি করার একটা ঝোঁক। চাকরি করবেনা? তাহলে এত পড়লে কেন? কিন্তু মেয়েদের শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য টাকা কামাই এই মেন্টালিটি কখনোই ছিলনা। পরিবার মেনে নিতে পারছিলোনা আমার সামনে এত সুন্দর উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে আমি নষ্ট করবো!

অনেকের মনে দোটানা থাকে। কিন্তু আমার মনে ছিলনা। আমি জানি আমার লক্ষ্য কি? আমার কখনোই আফসোস হয়নি আমার অর্জিত এডুকেশনাল সার্টিফিকেটগুলোর জন্য। এগুলো তুচ্ছ যদি আমি জাহান্নামে যাই। আর এগুলো আমাকে জান্নাতে পৌঁছাতে পারবেনা। পড়াশোনা কিংবা চাকরি এগুলো মানুষের জীবনের একটা ছোট্ট অংশ, আর কখনোবা জরুরত। কিন্তু এগুলোই জীবন নয়। এগুলোর জন্যেই শুধু আমরা বাঁচিনা।

নিকাব করা শুরু হল। তাতেও মন ভরেনি। আমাকে আরো তাকওয়া অর্জন করতে হবে। সর্বাংগ ঢাকতে হবে। আব্বুকে একদিন সাহস করে বললাম হাত মোজা কিনে দিতে। তিনিও রাজি হলেন, নিয়ে আসলেন আলহামদুলিল্লাহ। পরের টার্গেট পা মোজা। একদিন জরুরী কাজে বাহিরে গেলাম। পায়ে মোজা ছাড়া সব ঢাকা। এর আগে কত্ত আকুতি মিনতি করেছি আল্লাহর কাছে সাহায্যের জন্য যেন তিনি আমাকে আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করেন। চলতে চলতে আব্বু হঠাৎ বলে উঠলেন, কেমন দেখা যাচ্ছে তোমাকে! হাতে মোজা পড়েছো? পায়ে পড়োনি কেন? ঐ দিন বললানা কেন পা মোজাও এনে দিতাম! আমি আকাশ থেকে পড়লাম। চশমার ভিতর দিয়ে দু'চোখ ভিজে আসলো মহান রবের প্রতি কৃতজ্ঞতায়।

আমার পরের টার্গেট ছিল গায়রে মাহরামদের সামনে যাবোনা। এরই মাঝে পরিবারকে বুঝাতাম পর্দা মানে কি! আল্লাহ কোন পর্দার কথা বলেছেন! সবাই যেভাবে চলে সেটা পর্দা না। একক পরিবার হওয়ায় বাসায় লোকজন তেমন আসতোনা। রিলেটিভসরাও দূরে দূরে থাকতো। কিন্তু হঠাৎ-ই মেহমান আসার খবর এলো। ৯/১০ দিন থাকবে। গায়রে মাহরাম রিলেটিভস আছে দুজন। কিন্তু কিভাবে শুরু করবো? কি বলবো তাদের? সাহায্য চাইতাম বারবার। আব্বু-আম্মুকে সাহস করে বললাম, উনার সামনে কিন্তু আমার যাওয়া যাবেনা! তারাও হ্যাঁ হ্যাঁ করলো।

একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। হোস্টেলে থাকাকালীন আমি অনেক দু'আ করতাম আল্লাহ যেন পরিবারকে আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে না দেয়। আমাকে যেন সাহায্য করেন। হোস্টেল থেকে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে আসার পর দেখেছিলাম আমার দু'আ আল্লাহ কবুল করেছেন। ছোট ভাইও হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। দাঁড়ি রাখা শুরু করেছে। জ্ঞান পিপাসুর মত একটার পর একটা ইসলামী বই কিনে আর পড়ে। আব্বুও বুদ হয়ে থাকতো বই নিয়ে। আল্লাহ তা'আলা এভাবেই সবাইকে হিদায়াত দিয়েছিলেন আলহামদুলিল্লাহ। তাই আমার কাজও সহজ হয়েছে অনেক আলহামদুলিল্লাহ্‌ (পর্দার ব্যাপারে)।

আলহামদুলিল্লাহ যেদিন রিলেটিভসরা আসলো আগে থেকে বোরকা, খিমারসহ পড়ে তৈরি হয়ে রইলাম। সালাম দিলাম। তারাও যা বুঝার বুঝে নিলো। সেই ৯/১০ দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে পর্দায় জড়াতাম। একেবারে রাতে ঘুমানোর আগে রুমে গিয়ে খুলতাম সব। সারাদিন এভাবেই যেত। কখন কে চলে আসে তার ঠিক নেই তাই সারাদিন এভাবেই থাকতাম পর্দা করে।

এখন পরিবারও আমাকে সাপোর্ট করে আলহামদুলিল্লাহ। তারাও টুকটাক নিজ এড়িয়ার মধ্যে দাওয়াতি কাজ করে। সবাইকে দ্বীনের পথে আসার আহ্বান করে। বাসায় কোন পুরুষ এলে কিংবা বাহিরের কাজগুলো ঘরের পুরুষরাই করেন। পুরুষ গেস্ট এলে মেহমানদারিও তারাই করেন।

আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাকে ফেরাননি। তবে আত্মীয়, প্রতিবেশিদের কটুকথা থেমে থাকেনি। আমিও কম যাইনি। তাদের কথা শুনে হাসিমুখে কুরআন সুন্নাহের আলোকে যুক্তি দিয়ে কথা বলতাম। কেউ পারতোনা আমাকে আটকাতে! (তবে মানতোও না তারা) কারো কটু কথায় এক ফোটা চোখের জল আমি ফেলিনি। আমার কাছে চোখের পানির মূল্য অনেক। এই পানি যেখানে সেখানে ফেলতে নেই। ফেলতে হয় শুধু আমার রবের জন্য।

এরই মাঝে নিজেকে গড়ার চেষ্টা করেছি। দ্বীনের জ্ঞানার্জনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ... এখনো অনেকটা বাকি...

অনেকেই হয়তো ভাববেন আমার জীবনে তাহলে কোন পরীক্ষা নেই, স্ট্রাগল নেই। আসলে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের সবাইকে একভাবে পরীক্ষা নেন না। একেকজনের পরীক্ষা নেন একেকভাবে। আর আমি আজ প্রায় ৬/৭ বছর ধরে এখনো পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছি। ঈমানের পরীক্ষা। নতুন এক ভোরের অপেক্ষা...আরো অনেক দু'আ কবুলের অপেক্ষা...চোখের পানির পিছনে লুকায়িত নানা স্বপ্নগুলো সত্যি হবার অপেক্ষা...আমি জানি আমার রব প্রতিটার চোখের পানির প্রতিদান একদিন ঠিকই দিবেন ইন শা আল্লাহ...

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3480954918585910/

.............................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ১৫

 

আমার জন্ম আর দশটা বাঙালি মুসলিম পরিবারের মতই একটা পরিবারে৷ উত্তরাধিকার সূত্রে যতটুকু দ্বীনি জ্ঞান পাওয়ার কথা ঠিক ততটুকুই পেয়েছি! কিন্তু আল্লাহর রহমতে দ্বীনের প্রতি আগ্রহ ছিল আমার ছোটবেলা থেকেই। কোথাও ইসলামের ব্যাপারে কোন লেখা দেখলেই পড়তাম৷ ইসলামী লেকচার দেখতাম।

কিন্তু দুনিয়াবি জীবনের ব্যস্ততায় তা আর পালন করা হয়ে উঠে নি। তবে নামাজ পড়তাম বেশ ছোট থেকেই। শুধু পড়তে হয় বলেই পরতাম আসলে, নামাজ যে আল্লাহ রব্বুল আলামীন এর সাথে সরাসরি কথোপকথন তা উপলব্ধি করতে পারতাম না। শুধু নামাজ রোজাতেই আমার মুসলিম পরিচয় আটকে ছিল। তাও মাঝে মাঝে ছুটে যেত। নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত আর ঈদই যে ইসলাম না বরং ইসলাম যে সম্পূর্ণ একটা জীবন ব্যাবস্থা, আমাদের জীবনের প্রতি ধাপেই যে তা প্রয়োগ করতে হবে সেটা খুব কমই অনুধাবন করতে পারতাম।

কখনো পর্দা করা হয় নি। হিজাবও পরিনি কখনো। নাচ-গান, মুভি দেখা, ফ্রি মিক্সিং, বন্ধু বান্ধবীদের সাথে ঘুরতে যাওয়া, ছবি আপলোড, সেজেগুজে বেড়ানো, ভার্সিটির র্যাগ ট্যুর, র্যাগ তে সক্রিয় অংশগ্রহণ সহ আরো অনেক কিছুই করেছি যে গুলো তখন পাপ হিসেবে অনুধাবন ও করি নি (আস্তাগফিরুল্লাহ, আল্লাহ যেন আমাকে মাফ করেন)। এমনকি কেউ বাধাও দেয় নি এই সবে। উল্টো অনেকে বাহবা দিয়েছে।

অনার্স ফাইনালের পর বেশ কিছু দিন অবসর পাই। তখন আমি আরো বেশ কয়েক জন স্কলার এর লেকচার দেখা শুরু করি। কিছু জিকির ও দোয়া কালেক্ট করি। প্রতি নামাজের পর সেগুলো পড়তাম। এত শান্তি লাগত পড়তে। এগুলো পড়ার জন্যই তখন আর নামাজ মিস করতাম না। রেগুলার কুরআন পড়াও শুরু করি অর্থ সহ। আর বিস্মিত হতে থাকি যে আল্লাহতা'য়ালার কথা এত সুন্দর আগে তো এভাবে বুঝিনি। আল্লাহর কাছে খুব করে হেদায়েত চাইতাম তখন।প্রায় দুই-তিন মাস আমি সেজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে শুধু হেদায়েতই চেয়েছি।

এর মধ্যে আমার যেসব গুনাহ হয় সেগুলো আস্তে আস্তে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করি। ইসলাম নিয়ে আরও জানার চেষ্টা করি। তখন বুঝতে পারি যে ইসলাম সম্পর্কে আমাদের জানাশুনা কত কম। কি যে জানি না আমরা তাও জানি না। আমি তখন ইসলামের সৌন্দর্য অনুধাবন করতে পারি। আল্লাহতা'য়ালার বিধান মেনে চললে জীবন যে কত সহজ তা বুঝতে পারি। বেপর্দা হয়ে ঘুরাঘুরি করতে তখন মনে কেমন যেন একটা অপরাধবোধ কাজ করত। মৃত্যুর কথা খুব মনে হত বিশেষ করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় । যদি এখনি মারা যাই তবে কি হবে আমার পরিণাম এই ভেবে এত অস্থির লাগত।

এর মধ্যে একদিন রাত এ হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে যায় কোন কারণ ছাড়াই আর কেমন যেন লাগতে থাকে। কিছুতেই আর ঘুমাতে পারছিলাম না। মনে হল আমি বুঝি মারা যাব এখন। তখনই আমি উঠে একটা লিস্ট করি যে এই মুহুর্তে যদি আমি মারা যাই তাহলে কি কি গুনাহের জন্য আমার শাস্তি হবে। আর আল্লাহর কাছে চাই যে এই সবকিছু যেন আমি খুব তাড়াতাড়ি বাদ দিতে পারি৷ আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তারঁ এই পাপিষ্ঠ বান্দার প্রতি দয়া করেছেন। এর দুই দিনের মধ্যেই আমি পর্দা করার সিদ্ধান্ত নেই। ফেসবুকের সব ছবি ডিলিট করে দেই, সব পেইজ, গ্রুপ আনফলো করে দেই।

পরিবারের কিছু সদস্য ও কাছের কিছু বান্ধবী ছাড়া অন্য সবাইকেও আনফলো করে দেই। আমি একবারে জিলবাব দিয়ে শুরু করতে পেরেছি পর্দা যে আমি জীবনে একবার হিজাবও পরিনি। আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন। জিলবাব কিনার পর যখন প্রথম পরে দেখলাম তখন খুব দমবন্ধ লাগছিল। উপরন্তু আমি চশমা পরি। সেই গ্লাসও ঘোলা হয়ে যাচ্ছিল নিশ্বাসের কারণে। কোন ভাবেই সামলাতে পারছিলাম না। আমি শুধু আমার রবকে বলছিলাম তুমি আমার জন্য এই পথ সহজ করে দাও। আল্লাহ তায়ালা আমার কথা রেখেছেন। পরের দিন আমার মাস্টার্স এর প্রথম ক্লাস ছিল। ক্লাসে যখন আমি জিলবাব পরে গেলাম আর কোন অস্বস্তিই লাগে নি। কি রহমত আমার মহান রব এর।

এক রাতের ব্যবধানে এই অস্বস্তি দূর হয়ে যাওয়া আমার রব এর রহমত ছাড়া আর কি। এই কথা আমি যখনই মনে করি আমার চোখে পানি চলে আসে। এখনো আসছে। আগে যে সব গুনাহ গুলো করতাম সেগুলো ছাড়তে আমার একটুও খারাপ লাগে নি। বরং এগুলো ছাড়তে পারার যে আনন্দ তা নিজে অনুভব না করলে বলে বুঝানো সম্ভব না। আগে যেমন নিজেই সেজেগুজে ঘুরতাম কিন্তু এখন এই অবস্থায় কাউকে দেখলে তার হেদায়েত এর জন্য দুয়া করি। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে তার এই আলোর পথে রাখেন।

প্রথম প্রথম মানুষের কথা শুনতে হয়েছে। কার পাল্লায় পরেছি, কোন দলে যোগ দিয়েছি কিনা, চাকরি পাব কিনা, ভার্সিটিতে সমস্যা হবে কিনা ইত্যাদি। আফসোস এই চিন্তা গুলো যদি তারা আমার আখিরাত নিয়ে করত। দুয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন সবাইকে হেদায়েত দান করেন। তবে তাদের কথা আল্লাহর রহমতে আমার উপরে কোনই প্রভাব ফেলে নি। কারণ তাদের কেউই তো আমার হয়ে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করবে না। তাদের কথায় আমি কান দিবই বা কেন। আমার রব এর খুশিই আমার খুশি। ততদিনে আমি বুঝে গেছি আমার সব থেকে আপন তো আমার রবই। সবার থেকে সব কিছু থেকে বেশি যে আমি আমার রবকে ভালবাসি।

একদিন এমনই কিছু কথা কানে আসার পর কুরআন পড়ছিলাম যোহর এর ওয়াক্তে। তখন আমি সূরাহ হিজর পরছিলাম। পড়তে পারতে ৯৫ ও ৯৭ আয়াতে আমার চোখ আটকে যায় যেখানে আল্লাহ বলছেনঃ

"ঠাট্টা-বিদ্রূপকারীদের বিরুদ্ধে তোমার জন্য আমিই যথেষ্ট!"

"আমি জানি, তারা যে সব কথা-বার্তা বলে তাতে তোমার মন সংকুচিত হয়।"

সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! এরপর তো আর কোন কথাই থাকে না।

দ্বীনের পথে আমি প্রতিনিয়ত একটু একটু করে অগ্রসর হচ্ছি। আমার রব এর বিধান সম্পর্কে জানছি। খারাপ স্বভাব গুলো বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছি। যদিও শয়তান ওয়াসওয়াসা দিয়েই যাবে প্রতিনিয়িত। আমিও আল্লাহ তায়ালার নিকট তওবা ও মাফ চেয়েই যাব ইনশাআল্লাহ।

একটা অনলাইন মাদ্রাসাতে ভর্তি হয়েছি৷ এক পারা কুরআন হিফজ করেছি। সবই আমার মহান রব এর দয়ায়৷ আমি শুধু নিয়ত করেছি বাকিটা আল্লাহ তায়ালাই সহজ করে দিয়েছেন। আমার কোন রকম কষ্ট করতে হয়নি। অনেকেই অনেক রকম অজুহাত দিয়ে থাকি আমরা যে এই বয়সে হিফজ করতে পারব না, এত গরমে পর্দা করতে পারব না। তাদের বলছি আপনার কাজ শুধু খাস নিয়ত করা। তারপরই দেখুন না আল্লাহ কিভাবে সব সহজ করে দেন।

এখন বুঝি সত্যিকার অর্থে নামাজ পড়তে কেমন লাগে। আল্লাহর ইবাদত করা, তার নির্দেশিত পথে চলতে পারার যে শান্তি তা পার্থিব কোন কিছুতে নেই। জীবনের মূল্যবান সময়গুলো যে কিভাবে নষ্ট করেছি আগে খুব আফসোস হয় ভাবলে। কত কিছু করার আছে, কত কিছু জানার আছে। তবুও আল্লাহর শুকরিয়া করে আমার মত নগন্য বান্দার শেষ করার কোন উপায় নেই, তিনি যে আমার মত জাহেলিয়াতে থাকা বান্দাকে এই আলোর পথ দেখিয়েছেন। খুবই দ্রুত আমার মনকে পরিবর্তন করে দিয়েছেন। নইলে কি যে হতো আমার পরিণাম! ভাবলেই গা শিউরে ওঠে।

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3482685401746195/

................................................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ১৬

 

আল্লাহর পথে প্রত্যাবর্তনের গল্প! আমি এটাকে বলব 'নিজেকে বদলে দেওয়ার গল্প'!শতভাগ দ্বীন আঁকড়ে ধরা তো দূরের কথা এখনো হয়তো দ্বীনের সিঁকিভাগ নিয়ে টানাটানি করছি!
.
বদলে যাওয়ার গল্পটা একেকজনের একেকরকম।
.
আমরা বেশিরভাগ মুসলিমই জন্মসূত্রে আর পারিবারিকভাবে মুসলিম থাকি। ছোট থেকেই ইসলামের মৌলিক বিষয় গুলো জানা হলেও উপযুক্ত পরিবেশ আর অভিভাবকের অভাবে অনুধাবন আর উপলব্ধিতে ঘাটতি রয়ে যায়। ফলে দেখা যায়, সঙ্গ আর পড়ালেখার সুবাদে আমরা সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে যাই।
শতকরা ৯০ ভাগ মানুষের দ্বীনের পথ থেকে দূরে থাকার ক্ষেত্রে এনজাইম হিসেবে থাকে ফ্রেন্ড সার্কেল।
একটা দ্বীনি সার্কেলের অভাবে কত শত তরুণ-তরুণী পথভ্রষ্ট হয়। হারামের অন্ধকার পথে হারিয়ে যায়।
.
আমি পারিবারিকভাবে হুজুর ফ্যামিলির সন্তান হলেও জেনারেল লাইনে পড়ুয়া স্টুডেন্ট হওয়াই বাবার মৃত্যুর পর আস্তে আস্তে সহজেই বন্ধু-বান্ধব দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যাই। ইসলাম মানতাম পারিবারিক অনুশাসনের জন্যই। পর্দা বলতে এপ্রোনের সাথে হিজাব পড়ে মুখ ঢাকতাম। কিন্তু অকেশনালী মুখ খোলা থাকত। পর্দার গুরুত্বও বুঝতাম নাহ।
.
কলেজের টেস্ট পরীক্ষার সময় থেকে বোরখা পড়া শুরু করি। ভালো লাগতো তাই।
.
বান্ধবীদের সাথে পুরো কলেজ দাপিয়ে বেড়াতাম। আমার ফ্রেন্ড গ্রুপ স্যারদের কাছেও আমার গ্যাং নামে পরিচিত হয়ে যায়। ঘুরতে যেতাম। কলেজ বাঙ্ক দিতাম। যার ফলে রেজাল্ট অনেক নিচে নেমে যায়। রেজাল্টের পর খুউব কান্না করি। এরপর নানু বাড়ী থেকে ঘুরে এসে বাসায় মাস দেড়েক একেবারে দম আটকে পড়াশোনা করলাম!
.
স্বপ্ন হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়!
.
এত অবাধ্যতার মধ্যেও মহান রব্ব আমাকে নিরাশ করেননি। ভার্সিটিতে চান্স পেলাম। এটা ছিল অনেক ডিফিকাল্টিজের গল্প। ভর্তির পর ক্লাসে আসা যাওয়া কষ্টের হবে ভেবে শহরে বান্ধবীর সাথে ব্যাচেলর বাসায় থাকা শুরু করলাম।
.
স্বাধীন জীবন।
.
আমিও "একদিন পর্দা না করলে কিছু হবেনা" এর স্রোতে ভেসে গেলাম। চলে বোরখা, হিজাব দিয়ে মুখ ঢাকা আর ক্লাসে গরম লাগলে মুখ খুলে ফেলা।
.
আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে ডিপার্টমেন্টের ক্লোজ একজন সিনিয়র ভাইয়া জিজ্ঞেস করেছিলেন, "বোরখা পড়িস। নিক্বাব করিস। কেন?" আমি সেদিন কোনো সন্তুোষজনক উত্তর দিতে পারিনি। বলেছিলাম, "আগে থেকে করি। ফ্যামিলিও এমন। আর এগুলো ছাড়া আনইজি লাগে তাই।" এখন মনে পড়লে আমি নিজেই কেমন স্তব্ধ হয়ে যাই।
.
এই জীবনে শাড়ি না পড়া আমারও প্রথমবারের মতো শাড়ি পড়ে প্রদর্শনের দুর্ভাগ্য হয়ে যায়! একটা ফ্রেন্ড সার্কেলও জুটে যায়! তাদের সাথে দিন-রাত আড্ডা, ক্যাম্পাস-শাটল-প্যারেড-টিউশন, ব্যস!
.
এভাবে একসময় ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল চলে আসে। দেখলাম ঝুড়িতে কিচ্ছু নেই। সব কিছু অফ দিয়ে হুট করে বাড়িতে চলে আসলাম। একটু পড়াশোনা করে মোটামুটি কাভার দিলাম।
----------------
গল্প চেঞ্জ হয় এখানে।
আমাদের পরীক্ষা গুলো অনেক লং টাইম প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন মাস ধরে হয়। দশটা পরীক্ষা, গ্যাপ অনেক বেশি। ফলে সবার সাথে দেখা আর যোগাযোগ কমে যায়।
.
আমার আগে থেকেই ইসলামিক ড্রেসাপের পেইজ "One Ummah Bd" তে লাইক ছিল। ওদের নিক্বাব, জিলবাব, খিমার গুলো ভালো লাগত। সুন্দর লাগত।
এরপর "পর্দা - The Sign of Modesty", "Naseehah - দ্বীনি পরামর্শ" , "Taqwa" ইত্যাদি এরকম গ্রুপগুলোর সাথে যুক্ত হই।
.
চেঞ্জ হওয়ার একটা ওয়ে হলো ক্যাম্পাসে কিছু খেতে গেলে নিক্বাব খুলে খেতে হত। এটা আমার অস্বস্তি লাগত। আমি ভাবছিলাম এমন কিছুর কথা, যার জন্য নিক্বাব খুলতে হবে না। তখন আমি উপায় পেয়ে যাই ওয়ান উম্মাহ বিডির হুডি নিকাব। টিউশনের টাকা জমিয়ে কিনে ফেলি।
.
এবার শুরু অবাকের পালা। এক্সামের পর যখন ক্লাস শুরু হয়, আমার এমন গেটাপ দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়। জিজ্ঞেস করে, কাহিনী কি?
.
আমি তখন র্যাগ ডে তেও যাইনি। বিভিন্ন প্রোগ্রাম, কনসার্ট ইচ্ছাকৃত মিস দিতাম। এরপর ডিপার্টমেন্ট ট্যুরও বাদ দিলাম।
.
অনেকেই জিজ্ঞেস করে চঞ্চল এই আমি হঠাৎ করে সবার মাঝে এত নীরব হয়ে গেছি কেন? অথচ আমার কাছে কোনো গল্প নেই। এ তো অনেক দিনের ভাবনা-চিন্তার ফসল।
.
এরপর হাতে টাকা আসলে একদিন আমি কালো জিলবাবও কিনে ফেলি।
অদ্ভুত শান্তি কাজ করত।
.
কিন্তু এই নিক্বাব আর জিলবাব নিয়ে ইনস্পিরেশনের পাশাপাশি কটু কথা বলার লোকও কিন্তু কম ছিল না। স্টিল আছে। ফ্যামিলি বা ফ্যামিলির বাইরে। তাদের কথা বা কাজ মেনশন করব না। আল্লাহ হিদায়াহ দান করুক।
.
এখনও পুরোপুরি নানা পারিপার্শ্বিকতায়, জ্ঞানের কমতি থাকায়, নিজের দীনতায় পুরোপুরি পর্দা মেইনটেইন করতে পারি না। তবে চেষ্টা করে যাই, টু বি বেটার মুসলিম। ইসলামকে নিত্য নতুন জানার আগ্রহ পাই। নতুন আমলের সুযোগ পাই।
.
আলহামদুলিল্লাহ! গত রমজানের চেয়ে এই রমজান বেটার করার সুযোগ পেয়েছি (আমলের দিক থেকে, কতটুকু কবুল হয়েছে জানিনা। কবুলের মালিক তো রব্ব।)।
.
গত কালকের আমি থেকে আজকের আমি কতটুকু সংশোধিত হয়েছি, কতটুকু জানি, কতটুকু আমল করছি আমার কাছে সেটাই বেস্ট মনে হয়।
আমি এটাই ফলো করি।
.
আমরা বারবার হাজারবার ভুল করেও রবের দিকে প্রত্যাবর্তন করব। এটাই আশরাফুল মাখলুকাতের বৈশিষ্ট্য। নিশ্চয়ই আল্লাহ উত্তম সাহায্যকারী।
বাহিরের পোশাক-পরিচ্ছেদ নিজের ভেতরে আসলেই পরিবর্তন আনে। বিষয়টা একদিনে না, আপনি ধীরে ধীরে উপলব্ধি করবেন।
.
আপনি রাতারাতি সব কিছু ছেড়ে দিয়ে সুফী-সন্ন্যাসী হতে পারবেন নাহ। ইসলাম সন্ন্যাস যাপন উৎসাহিতও করেনা। কিন্তু আপনাকে শুদ্ধ হওয়ার চেষ্টা অবশ্যই করতে হবে। নিজের নফসের বিরুদ্ধে, শয়তানের ওয়াস-ওয়াসার বিরুদ্ধে।
.
আল্লাহ আমাদের চেষ্টা দেখেন। নিয়ত দেখেন।
.
"সকল ‘আমলই নিয়তের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।" (সহীহ বুখারী : ৬৯৫৩)
.

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3485421584805910/
..................................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ১৭

 

ছোটবেলা থেকে জীবনের মেইন ফোকাস ছিল পড়াশুনা। বরাবরই ক্লাসে প্রথম হতাম আর চাইতাম ডাক্তার হতে পারি যেন। আম্মু বাসায় সালাতের কথা বললেও কখনো প্রেশার দেননি। নিজের মতোই চলতাম। যখন যেভাবে ইচ্ছে হতো।

হঠাৎ করেই ক্লাস ৯ এ থাকতে বান্ধবীরা সবাই মিলে বোরখা পড়া শুরু করি। ওই সময় ওই বুঝটা কেন এসেছিল এখন মনে পড়েনা। সেসময় ৫ ওয়াক্ত সালাত ও পড়তাম। মোটামুটি মনে হচ্ছিলো আমি বুঝি হেদায়েত পেয়ে গেছি!

ঝামেলাটা শুরু হয় কলেজে উঠে। কলেজে ঢাকায় এসে ভর্তি হই। এরপর চিরাচরিত ভোগের জীবনে ডুবে যাই। সালাত ছেড়ে দিই। বোরখা ও ছেড়ে দিই।(আল্লাহুম্মাগফিরলী) যদিও হিজাব টা তখনো ছাড়িনি।

কলেজে জীবনের শেষে এসে হিজাবটাও ছেড়ে দিই!
কিছু ছেলে ফ্রেন্ড ও জুটে যায়! মোট কথা উৎশৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে যাই।

এত টা অবাধ্যতার পরও আল্লাহ তায়ালা আমার উপর থেকে রহমত তুলে নেননি। এডমিশনে এসে সরকারি মেডিকেলে চান্স হলো। মেডিকেলে ঢুকেই আগের মতো লাইফ চলতে থাকলো। ফ্রেন্ডস বাড়তে লাগলো, হাসি-তামাশা, বেপর্দা ঘুরতে যাওয়া, হারাম রিলেশন আরো আরো অনেক কিছু। দিনের পর দিন এক্সেটলি কতদিন সেজদা দেইনি মনেও পড়তো না।

মেডিকেলে ঢুকার এক বছর পর ভুলটা ভাঙলো যখন কোন একটা কারণে চরম মাত্রায় ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলাম। নিজের ভিতর চরম শূণ্যতা আর হাহাকার কাজ করতো। সারাক্ষণ অশান্তিতে থাকতাম। এই অশান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যই সালাত ধরলাম একদিন! দেখলাম শুধু সালাত পড়লেই শান্তি লাগে।আর কিছুতে শান্তি নেই!

এবার আল্লাহ তায়ালা সাহায্য করলেন। ফেইসবুকের বিভিন্ন ইসলামিক পেইজ আর গ্রুপ দেখতাম শুধুই।এরই মধ্যে কলেজের একটা প্রোগ্রামে ডান্স করার কথা ছিল আমার। রিহার্সেল ও করেছিলাম। একদিন এরকমই ফেইসবুক দেখছিলাম। একটা পোস্ট দেখে আটকে গেলাম। সাথে সাথে মনে হলো যদি আমি এত ছেলের সামনে নাচার করার মতো পাপের কাজ করি আমি আর বাঁচবো না। জানি না ওইদিন এরকম কেন মনে হয়েছিল। সেইদিন থেকেই শুরু! আমি সিদ্ধান্ত নিলাম পুরোপুরি আল্লাহ তায়ালার পথে ফিরে আসবো।
ওই প্রোগ্রাম এ যাবো না সিদ্ধান্ত নিলাম। কলেজে হিজাব ধরলাম। ৫ ওয়াক্ত সালাত ধরলাম। ফেইসবুক থেকে সব ছবি ডিলিট করলাম। নন-মাহরামদের আনফ্রেন্ড করলাম। কিন্তু এভাবে শান্তি পাচ্ছিলাম না।

ঠিক এক মাসের মাথায় ভাবলাম শরীয়াহ মোতাবেক পর্দা করবো। আমার সাথে আমার একজন ফ্রেন্ড ও যোগ দিলো। কিন্তু তখন জিলবাব বা খিমার সম্পর্কে কোন আইডিয়াই ছিল না। সারা শহর হন্যে হয়ে খুঁজেও কিছুই পেলাম না সঠিক পর্দা করার মতো। সেদিন খুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম।

কিন্তু না, আল্লাহ তায়ালা এবার ও তাঁর বান্দাকে সাহায্য করলেন। জিলবাবের খোঁজ পেলাম একজনকে পরিহিত অবস্থায় দেখে। অনলাইনে অর্ডার করলাম।

ব্যস ১ সপ্তাহের মধ্যে চলে আসলো জিলবাব এর পরদিনই ক্লাসে পড়ে গিয়েছিলাম। যেদিন এভাবে যাই, আমার নিজেকে এতই সম্মানিত মনে হচ্ছিলো যে সম্মান আমি কোনদিন কারো কাছ থেকে পাইনি। এই সম্মান আমাকে শুধুই আমার রব দিয়েছেন। হলে এসে প্রচুর কেঁদেছিলাম ওইদিন। কিভাবে আমি নিজের সম্মান এতদিন ধরে নষ্ট করেছি নিজের হাতে এটা ভেবে।

এরপর আমাকে পিছনে ফিরতে হয়নি আলহামদুলিল্লাহ। দেড় বছর হলো এই পথে আছি।এখন আমার লক্ষ্য হিফজ করা, আরবি শেখা।সেইপথেই আগাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ। মাঝে মধ্যে মনে হয় নর্দমা থেকে উঠে আসা একটা মেয়েকে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা নিজের ছায়ায় আশ্রয় দিয়েছেন।যতই দিন যায় ইসলাম নিয়ে মুগ্ধ হই শুধুই।

এখনো স্ট্রাগল করে যাচ্ছি নিজের আখলাক নিয়ে।নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চারিত্রিক গুণের কিছুটা হলেও নিজের মধ্যে যেইদিন পুরোপুরি ধারণ করতে পারবো, ওইদিন পরিপূর্ণ শান্তি পাবো।

মহান রব্বুল আলামীন যাতে আমায় কবুল করে নেন।

"রব্বানা তাক্বব্বাল মিন্না ইন্নাকা আংতাস সামিউল আলিম।"

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3488002034547865/
..................................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ১৮

 

যখন আমি ক্লাস ৫ এ পড়তাম তখন থেকেই আমার রোজা, নামাজ পড়ার প্রতি একটা আগ্রহ কাজ করতো। রোজার মাস আসলেই কান্নাকাটি করতাম রোজা রাখার জন্য, আম্মু-আব্বু কেউ রাখতে দিতেন না৷ জোরপূর্বক রাখতাম কয়েকটা। তখন এতটা বুঝতাম না আসলে কেন রোজা রাখি, নামাজ পড়ি?
বোঝানোর কেউ ছিলো না বলতে গেলে।

ছোট বেলা থেকে বেড়ে উঠা যৌথ পরিবারে। পর্দা তো দূরের কথা, নামাজটাও পড়তে দেখতাম না কাউকে (আল্লাহ মাফ করো)।

একটা ট্রেন্ড বলা যায় যে, "রোজা আসলেই আল্লাহর ইবাদত করতে হবে বেশি বেশি, কোরআন পড়তে হবে। এছাড়া ধরেও দেখবো না, সারা বছর কোথায় থাকে কোরআন তাও মনে হয় খোঁজ নিতেন না"। তাই আমিও এত গুরুত্ব দিতাম না, আমিও রোজার মাস ছাড়া এতটা নামাজও পড়তাম না। বুঝানোর মতো কেউ ছিলো না।

আম্মু আলহামদুলিল্লাহ নামাজ পড়তেন আমরা ৩ বোন, আমি ২য়। আম্মু সবাইকেই ডাক দিতেন সকালে নামাজ পড়ার জন্য কিন্তু আমরা উঠতাম না। আমার বাবা কোনসময় বলতেন না যে "মা, নামাজ পড়।"
ও-ই আম্মু যদি পড়ে তাহলে আমাদের ও পড়তে বলতেন। আম্মু না পড়লে তাহলে তো হইছে (বেঁচে গেলাম)

আমাদের পরিবার এর কেউই ধার্মিক না। নামাজ না পড়লেও কেউ বুঝাতেন না।

স্কুলে পড়তাম খুবই চঞ্চল ছিলাম। বড় যত হচ্ছি আরো বেয়াদব হয়ে যাচ্ছিলাম (না নামাজ পড়তাম, না পর্দা করতাম স্টাইল করে চলাফেরা করতাম)।

আর আম্মু-আব্বু দুজনেই পছন্দ করতেন একটু স্মার্ট ভাবে চলাফেরা করবে মানুষ ভালো বলবে। ক্ষ্যাত ভাবে চললে মানুষ কি বলবে? ভালো ভালো পোশাক পড়ে বাহিরে যাবে। তাই আমিও ওইভাবেই চলতাম আমরা তিন বোনই এমন ছিলাম।

ছেলে ফ্রেন্ড ছিলো, কথা বলতাম, ঘুরতাম মজা করতাম ফেইসবুক এ এডিক্টেড হয়ে গিয়েছিলাম প্রচুর ছেলেদের সাথে কথা বলতাম। ক্লাস ৭ এ পড়ি তখন। একদিন হঠাৎ ইচ্ছে হলো যে বোরকা পড়বো ভালো হয়ে যাব। মুখ ঢেকে চলবো। আম্মুকে বললাম, আম্মু সবসময় বলতো (আমি ঘোমটাওয়ালি পছন্দ করি না, ঘোমটার নিচে ঠুমকা নাচে, আব্বু ও এমনি)।

অনেক কষ্ট লাগলো কথাটা শুনে...

যাই হোক অনেক কষ্টে ম্যানেজ করে বোরখা পড়ার অনুমতি নিলাম। কিন্তু মুখ খোলা রাখতে হবে। মানলাম সেভাবেই চলতে থাকলাম আস্তে আস্তে ছেলে ফ্রেন্ড বাদ দিয়ে দিলাম...

আস্তে আস্তে মুখ ঢেকে চল্লাম আম্মু-আব্বুর বিরুদ্ধে যেয়ে। কারন ছেলে সব ফ্রেন্ড আমাক চিনে আমাকে রাস্তায় দেখলেই তো কথা বলতে চাইবে তাই আমি মুখ ঢাকা শুরু করি সবকিছু থেকে আড়াল হয়ে যাই।
বন্ধুর সংখ্যা কমিয়ে আনি নিজের জীবনের কথা সরন করতে থাকি কি কি করলাম জিবনে কতই না গুনাহ করছি আল্লাহ কি মাফ করবে?

পর্দা করা মেয়েদের দেখলে কেমন যেন এক অনুভব হতো মনে৷ তাকিয়েই থাকতাম আর ভাবতাম যদি আমিও এইভাবেই পরিপূর্ণ পর্দা করতে পারতাম আল্লাহ কতই না খুশি হতেন। পরিবার এর কারণে এতটা হয়ে উঠতো না।

ক্লাস ৮ এ উঠে একটা দ্বীনি বোন পাই। ও পর্দা করতো মুখ ঢেকেই ক্লাস করতো তখন আমি মুখ ঢাকতাম না। ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হলো আর একটা মেয়ে আমার ফ্রেন্ড ছিলো সে ও মুখ ঢেকে চলতো। আমি মুখ খোলা রাখতাম তাই আমাকে ওই মেয়ে অনেক কিছুই বলত চুপ করে শুনতাম কি করবো আমার ইচ্ছে থাকলেও আমি ফ্যামিলির কারণে পারছিলাম না।

একসময় আসল...

আমার এক চাচা হাফেজ মাওলানা উনি আসছেন উনি যখনই আসে আমি তার কাছে আমার মন এর সব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতাম উনি আমাকে সব বুঝিয়ে দিতেন।আলহামদুলিল্লাহ, আস্তে আস্তে পর্দা সম্পর্কে সবকিছু জানলাম ক্লাস ৯ এর শুরু থেকে শুরু করলাম পর্দা করা ভালোভাবে পরিপূর্ণ ভাবে। মাহরাম, নন মাহরাম মেনে চলতে থাকলাম একান্ত নিজে থেকে..

আর হ্যাঁ তখনো কিন্তু ফ্যামিলি থেকে সাপোর্ট পাইনি। একবার রোজার মাস আসল হঠাৎ রাতে বমি করেছি, বমি করে শুয়েছি, সেহরিতে খাব নিয়ত আছে রোজা মিস দিব না। উঠলাম, খাব এই মুহূর্তে আম্মু-আব্বু দু'জনই বকা দিলো ইচ্ছা মতো। কি দরকার? আল্লাহ জানে কে ব্রেইন ওয়াশ করল ওরে। জামাত-শিবির এই সেই। জঙ্গির পাল্লায় পড়লে শেষ। আমি চুপ হয়ে কান্না করতে করতে শেষ। ওইদিন আল্লাহ যদি আমাকে ধৈর্য না দিতেন আমি মনে হয় আর বাঁচতাম না। তাদের কথা না শুনেই রাখলাম রোজা, ফরজ ইবাদত আল্লাহর হুকুম এটা কারো কথায় না মানা খুবই খারাপ।

অনেক কষ্টের দিন কাটিয়েছি। আজও নানা রকম পরীক্ষার সম্মুখীন হই আল্লাহই সাহায্য করেন।

বর্তমানে পরিপূর্ণ পর্দা করি। নামাজ কালাম পড়ি। সবাইকে বুঝাই আল্লাহর রহমতে আমি শুরু করার পর থেকে আম্মু, বড় বোন, ছোট বোন সবাই পর্দা করে চলি। আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো লাগে। মনে মনে বলি তাই তো আল্লাহ বলেছেন (আমাদের তিনি পরীক্ষা করেন, কষ্টেরর পরে সুখ আসবে ইনশা আল্লাহ) আর তাই হলো এখন আম্মু, আম্মুর ভুল বুঝতে পেরেছে। বলে, আমি এতদিন ঠিক ছিলাম না মা। আমি বলি, আল্লাহ তোমাকে হিদায়েত দান করেছে। তাঁর কাছে শুকরিয়া জানাও আর তওবা করো।

আল্লাহ সবাইকে হিদায়েত দান করুক।

বর্তমানে আমি এইচ এস সি দিবো। যখন ইন্টার ১ম ইয়ারে পড়ি। পরীক্ষার হলে একটা ম্যাডাম আসে গার্ড দিতে খুবি স্টাইলিশ ছিলেন আমি তো নিকাব পড়া, হাত মোজা পড়া তো খাতা সাইন করে আর আমার দিকে তাকায় আমিই একমাত্র হলে পর্দা করা একজন মেয়ে। কলেজে ছেলে মেয়ে একসাথে, আমি আরও আগেই নিকাব খুলি না। আর আমি কারো সাথেই তেমন কথা বলতাম না। চুপচাপ পরিক্ষা দিচ্ছি ও-ই যে ম্যাডাম ওর নজর আমার দিকে। হঠাৎ করে বলে যে, এ-ই মেয়ে তুমি কথা বলো কেন। আমি বলি যে ম্যাডাম আমি কারো সাথেই কথা বলিনি আমার সামনে ছেলে, পিছে ছেলে। ম্যাডাম আরও ধমক মারা শুরু করলো আমি চুপ। আমার ব্যাঞ্চ এর সামনে এসে বলছে যে, "কি পরে আছো? মুখ ঢেকে একদম আজকালকার মেয়েরা যা ফ্যাশন করা শিখেছে। বাহিরে নামাজ তো মনে হয় পড়ে না এক ওয়াক্ত আবার...তুমি মুখ খুলবা কি না?"

আমিঃ দেখেন ম্যাডাম, আমি কথা বলিনি আপনি নাহয় আমাকে অন্য কোথাও বসান।
ম্যাডামঃ খুলবি কি না?
আমিঃ না।
ম্যাডামঃ ইসলাম সম্পর্কে বেশি জান? সূরা নিসা লাইন টু লাইন পড়ে দেখিস কোথায় বলসে মুখ ঢাকার কথা?
আমিঃ চুপ হয়ে আছি...
ম্যাডামঃ হঠাৎ করে এসে আমার নিকাবের ফিতাটা খুলে দেয় পিছনে দিয়ে।

আমি কান্না করছি আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইছি আল্লাহ তুমি ছাড়া কেউ নাই যে এ-ই মুহুর্তে আমাকে সাহায্য করবে। সব স্টুডেন্ট চুপ হয়ে আছে কেউ প্রতিবাদ কিভাবে করবে। ম্যাডাম কিছু বললে ওদের পরীক্ষা নষ্ট হবে।

আমার খাতা নিয়ে গেল ম্যাডাম আমি আবার নিকাব বেধে সিদ্ধান্ত নিলাম প্রধান শিক্ষকের কাছে যাব। তাও যেতে দিল না। পরীক্ষা ও দিতে দিলেন না। আমিও ঘাড় ত্যাড়ার মতো বসেই আছি আর কান্না করছি। কেউ কিছু বললেই ছোট বেলা থেকেই কান্না করে ফেলি।

অতঃপর লাস্ট মুহুর্তে আমাক খাতা দেয় লিখতে আমি আর লিখি নাই খালি খাতা জমা দিয়ে বাসায় এসে পরি। এসে আম্মুর কাছে বলি, আম্মু চাচ্ছিল বিচার করতে আমি ভয় এ বলি যে না দরকার নাই। তাও আম্মু বিচার দেয়। যাই হোক আমার একটা ভয় কাজ করছিল যে ম্যাডাম কে আমি কিছু বললে উনি আমার সাথে আরও খারাপ ব্যাবহার করবে। ঠিক তাই হলো ।

আম্মু বিচার দেওয়ার পরে উনি আকার ইংগিতে আমাকে শুনাতো (আমি সরকারি চাকরি করি আমার নাম এ বিচার দিয়ে কেউ আমার চাকরি বাদ দিতে পারবি না)

কয়েকদিন পর হঠাৎ দেখি ম্যাডাম কি চেঞ্জ আমি তো অবাক আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তা'লা উনাকে হিদায়েত দান করেছে। উনি ক্লাসে আসে বোরখা পড়ে। কি যে প্রশান্তি লাগলো মনে। আসলেই বলে, কিরে তোরা নামাজ পরেছিস? পর্দা করবি, মাথায় উড়না কই?

আমি দেখি আর আমার মনে অনেক আনন্দ লাগছিলো...

বাসায় আম্মু কে জানাই আম্মু বলে দেখছিস আল্লাহ কার কখন হিদায়েত দান করে কেউ জানে নাহ। তোর উছিলায় আজকে সে এ-ই ভালো পথে আসলো...

আমি বলি আসলেই মা ঠিক বলছো। যাক এতেই আমি খুশি, আলহামদুলিল্লাহ।

(ছোট্ট বোনের লেখা, একটু এলোমেলো হয়েছে। আশা করি সবাই তার মনের ভাবটা বুঝে নিবেন।)

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3491331740881561/
..............................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ১৯

 

আম্মুর নিয়্যত ছিল মেয়েকে ৮ম ক্লাস থেকে পর্দা করাবেন, তিনি তা করেছেনও আলহামদুলিল্লাহ্।

তারপর ৯ম ক্লাসে আম্মু আমাকে বোরখা নিয়ে দেন।
আমার বোরখা পড়া শুরু; কখনো শর্ট, কখনো লং, কখনো মুখ ঢাকা, কখনো মুখ খোলা।

নানী, দাদী, মামা, খালা বাড়ি বা যে কোন ধরনের অনুষ্ঠান, বিয়ে বাড়িতে গেলে বোরখা হিজাব ছাড়াই যেতাম। এটা আসলে কোন ধরনের পর্দা ছিল, জানিনা আমি, সত্যি বলতে আমার বুঝ ছিলনা,আম্মু বোরখা দিয়েছে তাই পড়া, আল্লাহুম্মাগফিরলি।

আমার আব্বু আম্মুর কাছেও কখনো এই বিষয় গুলো দৃষ্টিকটু লাগেনি, শালীন ভাবে চলাটাই তাদের কাছে পর্দা ছিল; বরং আমাদের আত্মীয়স্বজন এর কাছে আমি বেশ পর্দানশিন(!) হিসেবেই পরিচিত ছিলাম।
পরিবেশটাই ছিল এমন।

কিন্তু আব্বু আম্মু নামাজের প্রতি কঠোর ছিলেন।নামাজে ছিল অনিয়ম, অলসতা। কোনদিন ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়নি, কখনো দুই, কখনো তিন ওয়াক্ত। প্রচুর বকাবকি করত নামাজ নিয়ে, আমি এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিতাম। আল্লাহ ক্ষমা করুক।

এই পর্দা নিয়ে আমি কলেজ লাইফও পার করলাম এবং এর মধ্যে আমি একটি হারাম পথেও পা বাড়িয়েছিলাম। আস্তাগফিরুল্লাহি ওয়া আতুবু ইলাইহ্।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিকে যখন কোনভাবেই আমাকে নামাজে আগ্রহী করা যাচ্ছিল না। আম্মু একটা বুদ্ধি আঁটলেন। আমাদের এলাকায় একজন ধার্মিক মহিলার কাছে গিয়ে বলে আসলেন তিনি যেন আমাকে কুরআন পড়ার জন্য ডাকেন কারো মাধ্যমে, আর আমি আসলে যেন কুরআন হাদীসের কিছু ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর হাদীস শুনান, বেনামাজীদের নিয়ে। সেসময় আমি সেই হারাম পথ থেকে বের হয়ে এসেছিলাম, আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ।

মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েছিলাম পুরোপুরি। একদিন সেই আন্টি আমাকে ডাকেন,তার কাছে আমি কুরআন পড়ি, তিনি আমাকে কিছু হাদীস শুনান। আমি জানিনা আমি যাই শুনছিলাম তাই ভাল লাগছিল, এত বেশি ভাল লাগছিল। মনে হচ্ছিল আমাকেই সব বলা হচ্ছে।তারপর আমি নিজে থেকেই সেই আন্টির কাছে যাওয়া শুরু করলাম। আল্লাহ উনাকে নেক হায়াত দান করুন। আমার তখন কেমন যেন এক তৃষ্ণাবোধ শুরু হলো, অনেক কিছু জানার তৃষ্ণা। বিভিন্ন শাইখদের লেকচার শোনা শুরু করলাম, বইপত্র ঘাটাঘাটি, কুরআনকে কাছে টেনে নিলাম। আর যেহেতু তখন আমি মানসিক ভাবে দূর্বল ছিলাম, খুব সহজেই আল্লাহর কাছে নিজেকে সঁপে দিলাম, তওবা করলাম, আমার সব দুঃখ কষ্ট তাঁর কাছে বললাম, অনেক অনেক কাঁদলাম, শুধু মনে হচ্ছিল আমি তাঁর এক নগণ্য দাসী, এতদিন তার অবাধ্যতা করেছি তাঁর ই দুনিয়ায়। আমার কাছে এখন মনে হয় সেই গুণাহ ই ছিল আমার হিদায়াতের ওসিলা। আল্লাহু আ'লাম।

সেই জানার তৃষ্ণাই একদিন আমাকে বুঝিয়ে দিল আমার এই পর্দা আল্লাহর পর্দার শরীয়তের সাথে ফাজলামি ছাড়া আর কিছুই না। সিদ্ধান্ত নিলাম পুরোপুরি কালো পোশাকে আবৃত করে ফেলব নিজেকে, আর কোনদিন কখনো পর্দা ছাড়া বের হবোনা। মাহরাম নন-মাহরাম সম্পর্কেও জানতে পারলাম। তখন ক্যাম্পাসে আমার ফ্রেন্ড সার্কেলে ছেলেফ্রেন্ডও ছিল, আর ততদিনে আমি এও বুঝতে পারছিলাম যে আমার জীবনে এমন বন্ধু দরকার যাকে দেখলেই আল্লাহর কথা স্মরণ হবে,সেরকম ফ্রেন্ড আমার ছিলনা। সেই মুহুর্তে আমাকে আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন একটি মুহুর্ত পার করতে হয়েছে, যখন আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমাকে যে ভাবেই হোক ফ্রেন্ড সার্কেল চেঞ্জ করতে হবে।

আমি যখন প্রথম পুরোপুরি পর্দা শুরু করি ২০১৬ সালে, আমার আব্বু আম্মুই প্রথমে মেনে নিতে পারছিলেন না, ওই যে বলেছিলাম, মোটামুটি শালীন ভাবে চলাটাই তাদের কাছে পর্দা। তারাই আমাকে অনেক ধরণের কথা শুনাতে লাগলেন, ভয় পাচ্ছিলেন আমি কোন ভুল পথে চলে যাচ্ছি। আত্মীয়স্বজন এর কথা তো আছেই।

আলহামদুলিল্লাহ। আর এদিকে প্রথমত আমার এমন বাহ্যিক চেঞ্জ, তার উপর আমার এমন ইগনোরেন্স আমার ফ্রেন্ডদেরকে খুব কষ্ট দিয়েছে। আল্লাহ তা'আলা তাদের সবাইকে হিদায়েত দান করুক। আমি নিজেও অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম সে সময়। সেই কষ্টে ধৈর্য ধারণের প্রতিদান হিসেবেই সম্ভবত আল্লাহ তা'আলা আমাকে কিছু আল্লাহ ওয়ালা বন্ধু মিলিয়ে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ। আমি যেমন চেয়েছিলাম সেরকম দ্বীনি পরিবেশ আল্লাহ তা'আলা আমার চারপাশে সৃষ্টি করে দিয়েছেন, দিচ্ছেন।

আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, তাঁর শুকরিয়া যতই আদায় করি ততই কম মনে হয়।

এই ছিল আমার পর্দায় আসার গল্প।আমার নিজের সাথে যুদ্ধ এখনো চলছে, এখনো অনেক কথা শুনতে হয় আলহামদুলিল্লাহ। মাহরাম মেইন্টেইন করতে পারিনা এখনো আত্মীয়দের কাছে গেলে।

আল্লাহ সহজ করে দিবেন এক সময় ইন শা আল্লহ্।
সবাই দু'আ করবেন। আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি নিয়েই যেন মৃত্যু বরণ করি।

বিঃদ্রঃ আব্বু আম্মু এখন আলহামদুলিল্লাহ অনেক বুঝেন। তারা পর্দা নিয়ে আর কোন কমেন্ট করেন না।উল্টো আমি কখনো হাত মোজা পা মোজা পড়তে ভুলে গেলে, আম্মুই দৌঁড় দিয়ে এনে দেন। মোজা ছাড়া যেন বের না হই।

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3496608383687230/
...............................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ২০

 

গত ৬ মাস আগেও বোরখা কি তা আমি জানতাম না।এমনকি কখনো হিজাবও পরিধান করিনি এবং মাথায় ওড়না দেওয়াও তো দূরে থাকুক। বেপর্দা ভাবে চলা-ফেরা করা, ফেসবুকে ছবি ছাড়া,ছেলেদের সাথে আড্ডা দেওয়া, বন্ধুত্ব করা এগুলো ছিলো আমার কাছে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু হঠাৎই এই স্বাভাবিক ব্যাপারগুলো আমার কাছে অস্বাভাবিক হয়ে উঠতে থাকে।

১ জানুয়ারি ২০১৯ সাল। যেহেতু আমার মধ্যে ইসলামের সঠিক ইলম ছিলো না তাই সকলের মতো আমিও সেদিন হ্যাপি নিউ ইয়ার পালন করতে ফ্রেন্ডের সাথে বের হওয়ার প্ল্যান করি। তাই সকাল ১১ টায় আমার দরজায় আমার বেস্টু কড়া নাড়ে। খুলতেই হতভম্ব। একি ও দেখি পুরোই চেঞ্জ।হাত-পা মোজা পরে একবারে একজন পর্দানশীন নারী হয়ে গেছে। সেই প্রথম আমি উপলব্ধি করি পর্দার গুরুত্ব। আর আমার আম্মুও ওকে দেখে খুব খুশি হয় আর বলে মা একটু আমার মেয়েকে বুঝাও। তখন ও বলেছিলো ইন শা আল্লাহ আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। তারপর যাই হোক এসব কথা বাদ দিয়ে ওর সাথে বের হয়ে যাই। (বলে রাখা ভালো ও কয়েক দিন ধরে পর্দায় এসেছে।তাই আমাদের সাথে যেতে রাজি হয়েছিল।)

ধীরে ধীরে আমার বেস্টুর আল্লাহর জন্য ত্যাগ আমাকে মুগ্ধ করে। যে কিনা এতো স্টাইলের পোক ছিলো সে আজ একমাত্র আল্লাহকে ভালোবেসে সব ছেড়ে দিয়ে এইরকম সাদাসিধা লাইফ লিড করছে...!!! তাছাড়া আল্লাহর জন্য ত্যাগ করায় আল্লাহ ওকে যে সম্মান দিচ্ছিলো তা দেখে তখন আমার খুবই ঈর্ষা হতে আরম্ভ করে। কিন্তু তখনও নিজেকে পরিবর্তন করার চিন্তা সাহস করে মাথায় আনতে পারিনি।

যাই হোক, আমার ওই বেস্টু ধীরে ধীরে আমাকে ইসলামিক বই দিতে শুরু করে। প্রথমে আমার এগুলা ভালো লাগতো না, খুব বিরক্ত হতাম। কিন্তু ওরে কিছু বলতে পারতাম না। শুধু ওর খাতিরে ওর দেওয়া বই গুলা ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েও পড়তাম। একদিন ও আমাকে প্যারাডক্সিকাল সাজিদ-১ বইটা দেয়। সেই থেকে শুরু হলো আমার নিজেকে পরিবর্তন করার ইচ্ছার ধাপ।

একে একে ও আমাকে আরগুমেন্টস অফ আরজু, দ্যা রিভার্টাস সহ আরও অনেক ইসলামিক বই দিতে থাকে। এগুলা পড়তে পড়তে কেমন যেনো একটা অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হতে থাকে। তখন শুরু হলো দ্বিধা-দ্বন্দে ভোগা। একবার মনে হচ্ছিলো নিজেকে চেঞ্জ করি আবার নানা চিন্তায় ইচ্ছাটা হারিয়ে যাচ্ছিলো।

তখন থেকে শুরু করলাম বিভিন্ন ইসলামিক ভিডিও দেখা (মিজানুর রহমান আজহারি & ডাঃ জাকির নায়েক এই দুজনের ভিডিও বেশি বেশি দেখতাম।) এছাড়া ইউটিউবে পর্দা নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও দেখতেই লাগলাম। যার ফলে বছরের মাঝেই একবার পর্দা করার চিন্তা করেছিলাম। কিন্তু শয়তানের ওয়াসওয়াসায় তা আর হয়ে উঠলো না।

তারপর আমার থেকে এই পরিবর্তনের চিন্তা হারিয়ে যেতে থাকে। একটা সময় আবার এগুলো ভুলে গিয়ে সেই পুরনো দিন যাপন করি। আর এরই মাঝে আমার জন্মদিন চলে আসে। তাই আমার ওই বেস্টু আমাকে আমার জন্মদিনে "কুররাতু আইয়ুন" বইটা উপহার হিসেবে দেয়। এমনকি এই বইটাও আমার পড়ার কোনো ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু এই বইটাও ওর মন রক্ষার্থে পড়তে হয়। কিন্তু যখন বইয়ের লেখাগুলো পড়তেছিলাম একটা সময় উপলব্ধি করি যে আমি যে জীবন যাপন করছি তা আসলে ভুল। এর মধ্যে আবার ভিডিও দেখা শুরু করে দেই। তখন সব মিলিয়ে আবার নিজেকে চেঞ্জ করার ইচ্ছে জন্মায়। তবে এইবার দৃঢ় সংকল্প করেছি আর যাই হোক হয় চেঞ্জ হবো না হয় এগুলোর চিন্তা সব বাদ দিয়ে দিবো।কারণ সামনে আমার এইচএসসি টেস্ট এক্সাম। আমি এতোটাই দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগতাছিলাম যে একটা সময় ডিপ্রেশনে পড়ে যাই।কি করবো বুঝতেছিলাম না। সেকুলার পরিবারে জন্মগ্রহণ করলে যা হয়। কাউকে যদি প্রশ্ন করি এখন আমার কি করা উচিত তো একেক জনের থেকে একেক উত্তর পাই। যার ফলে আরো কনফিউজড হয়ে যাই।

একবার মনে হয় আমি আমার রবের কথা মতো চলি আবার মনে হচ্ছিল আমিতো কখনও বোরখা পড়ি নাই। যদি হঠাৎ করে পর্দা করি তবে লোকে কি বলবে তাছাড়া পর্দা করে তো আমি কখনো চাকরি করতে পারবো না। কেননা আমার ছোটো থেকে খুব স্বপ্ন ছিল যে আমি নিজে ইনকাম করবো। তাহলে তো সেটা আর হবে না। এইগুলোর সাথে সাথে আবার টেস্টের চিন্তা খুবই খারাপ একটা সময় পার করছিলাম। যেহেতু তখন বিভিন্ন ইসলামিক গ্রুপে এড হয়েছিলাম সেখানে অনেক মোটিভিশনাল পোস্ট এবং কুরআনের আয়াত পড়েছিলাম। তাই যখন আর কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিলাম না সবশেষে তখন আমি আমার আল্লাহর কাছেই সাহায্যের জন্য যাই। তখন থেকে জোর করে নামাজ আদায় করতে থাকি। আর প্রতিটি নামাজের মোনাজাতে আল্লাহর কাছে সাহায্য আর হেদায়েত চাইতে থাকলাম।

আলহামদুলিল্লাহ..... আল্লাহ আমাকে সাহায্যও করেন এমনকি হেদায়েতও করেন।

আমি নামাজ নিয়ে একটা স্বপ্ন দেখি। যেটা দেখার পর আমি অনেক ভয়ে পেয়েছিলাম এবং সেইদিনের পর থেকে আর নামাজ ছেড়ে দেয়নি আল্লাহর রহমতে। আগে নামাজের সময় পেতাম না। কিন্তু এখন সবার আগে নামাজের সময়টা বের হয়।

যখন নামাজ ধরলাম তখন থেকে বাহিরে বোরখা না পরে বের হতে লজ্জা লাগা শুরু করলো। তাই কিছুদিন যাওয়ার পর আম্মুকে পর্দার সকল কিছু কিনে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। কিন্তু তখন আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো না। তাই আম্মুর কাছে টাকা না থাকায় সে আমাকে তা কিনে দিতে অমত পোষণ করল।কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ আমার এসএসসিতে পাওয়া স্কলারশিপের টাকার কথা মনে পড়ে।তারপর কিছু না ভেবেই সেইখান থেকে টাকা নিয়ে মার্কেটে চলে যাই। আলহামদুলিল্লাহ তারপর পর্দার সকল কিছু কিনে আনি। আর এইভাবেই আল্লাহ আমাকে হেদায়াত করেছেন।

আলহামদুলিল্লাহ... আলহামদুলিল্লাহ.... আলহামদুলিল্লাহ...

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3510611562286912/
...............................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ২১

 

পর্দায় প্রত্যাবর্তনের ৬৬ দিন মাত্র!
যখন ক্লাস ৬-এ পড়তাম, নিজ থেকে বোরকা পরা শুরু করলাম। আমাদের পরিবার ইসলামিক চিন্তা চেতনায় বিশ্বাসী এবং সে অনুযায়ী চলে। 
জীবনে কখনও আব্বুকে নামাজ কাযা করতে দেখিনি। সেসময় আমার বোরকা নেওয়ায় অনেকে আর্লি নিলাম বলে কথা শুনাত। কিন্তু আম্মু আমাকে স্পষ্ট বলে দিয়েছিল, 'একবার পরলে ছেড়ে দেওয়া যাবে না।' আমি হ্যাঁ, হ্যাঁ বলে কাটিয়ে দিয়েছিলাম। 
এরপর এভাবেই চলতে থাকল। নতুন জামা পরার আনন্দের মতো ছিলো বিষয়টা। আমি কয়েকদিন বাদে বুঝলাম ব্যাপারটা সহজ নয়। সেসময় হিজাবের এত ডিজাইন বা ফ্যাশনের চল ছিল না। জাস্ট স্কার্ফ কিংবা ওড়না। পুরোপুরি পর্দা হতো না, কারণ চুল বেরিয়ে যেত। তবে ক্লাস ৮/৯ এর দিকে সেটা ঠিক করে ফেলেছিলাম। 
অনেকেরই মনে হবে এটা তো প্রত্যাবর্তনের গল্প হতে পারে না, যেহেতু ছোট থেকে বোরকা পরে। কিন্তু আসল ব্যাপার হলো বোরকা পরা আর পর্দা করা দু'টো আলাদা বিষয়।
আমি বোরকা পরতাম কিন্তু গৃহশিক্ষকের সামনে নয়, বোরকা পরতাম তবে ঈদে নয়। অনুষ্ঠান, পিকনিক, জন্মদিন, বিয়ে এসব জায়গায় বোরকা পরতাম না। 
আমি স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি অবধিও বোরকা ছাড়া চলিনি। বোরকা সময়ের সাথে আপডেট হয়েছে। হিজাবের ধরন আপডেট করছিলাম। কিন্তু বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা ঘুরতে গেলে বোরকা ছাড়াই যেতাম।
হ্যাঁ, ইসলামিক ব্যাকগ্রাউন্ড পরিবার হওয়ায় বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি বহুবার। আব্বু রাগ, আম্মুও রাগ তবুও যেতে দিতো। আহ্লাদের একমাত্র মেয়েকে ছাড় দিয়ে রেখেছিল। পুরোটা শাসনের আওতায় ছিলাম না। তবে অনেক ছোট থাকতে রোজা রাখতাম, নামাজ পড়তাম আবার ছাড়তাম। ফজরের নামাজ অনেক সময় টানা এক সপ্তাহ তো পড়তাম না।
আমি বোরকায় ছিলাম, পর্দায় না। আমি আমার পিঠাপিঠি চাচাতো ভাইদের সাথে বড় হয়েছি। একসাথে খাওয়া-বসা-ঘুমানো ছোট থেকে। বড় হয়ে শালীনতা রেখেছি। বড় হয়ে কেউ কখনো ফান করা, গায়ে হাত দিয়ে কথা বলা, কিংবা দুষ্টামির ছলে মারামারি ওটা বন্ধ হয়ে গেল। বাড়ি থেকে এই শিক্ষাটা সবার ভিতর ছিলো। কিন্তু ১৪ জন পুরুষ ব্যতীত বাকি সকলের সাথে পর্দা, সেটা কখনও ছিলো না। এখনও চেষ্টা চলছে, পুরোপুরি হতে সময় লাগছে। আল্লাহ তৌফিক দান করুক। 
আমি ভার্সিটি উঠার পর একটু বেশি খারাপ হয়ে গিয়েছিলাম। হারাম সম্পর্কে জড়িয়ে বোরকা ছাড়া বন্ধু-বান্ধবীরা ঘুরতাম। এর মাত্রা অধিক হারে বাড়ল। নামাজ থেকে দূরে সরে যেতাম, আবার কখনো পড়তাম। কিন্তু জীবনে আগের মতন রহমত-বরকত নেই এমনটা মনে হতে শুরু করল।
পড়াশোনা শেষ করে এখন বাড়িতে থাকাকালীন নিজের পূর্বের সব গুনাহগুলো যখন অনুধাবন করা শুরু করলাম, তখন বিভিন্নভাবে আমি প্রভাবিত হতে লাগলাম। দ্বীন নিয়ে পুরাতন অনেক ভিডিও আমাকে দ্বীনের পথে ফিরে আসতে অনুপ্রেরণা দিচ্ছিল। কখনও মানুষের কথায়, কখনও আম্মুর কষ্ট দেখে। 
আমার আম্মু কষ্টে বলেছিল, 'মানুষ মারা গেলে নতুন ক সন্তান রেখে গেলে তারা মৃত মা-বাবার জন্য দোয়া করে। আমার জন্য দোয়া করার কেউ থাকবে না, তোরা তো নামাজ-কালামই ঠিকমতো পড়িস না।' আমি চুপচাপ শুনে চোখের পানি ফেলছিলাম। 
২০২০ সালের মার্চে ছোট এক্সিডেন্ট করি। পায়ে সমস্যা হয়। সারাদিন শুয়ে থাকি। শুয়ে থেকে মনে হচ্ছিল জীবনের এতগুলো সময় কিভাবে হেলায় কাটালাম। জীবনটা এত সুন্দর, অথচ আমি আমার মাবুদের রহমত থেকে সরিয়ে নিচ্ছি নিজেকে। 
এসকল অনুধাবন আরো জোরালো এবং আরো প্রভাবক হিসেবে কাজ করল আমার ভাইয়ের রোড এক্সিডেন্ট। আলহামদুলিল্লাহ! বেঁচে গেছে। কিন্তু খুব খারাপ অবস্থা ছিল। হুট করে মনে হলো আমরা বিপদগামী, আল্লাহর দয়া আছে বলেই তিনি নানানভাবে বাঁচিয়ে রাখেন। 
আমার কাছে প্রতিটা জিনিস স্পষ্ট হওয়া শুরু করল। আমার মনে হচ্ছিল কখনও এর আগে এভাবে ভাবিনি। আল্লাহ আমার হেদায়েতের পথটা সহজ করে দিলেন। নিশ্চয়ই তিনি উত্তম হেদায়েতদাতা, আমার জন্য উত্তম পরিকল্পনাকারী। 
শুরু হলো লকডাউন। জীবনে আরেকবার দেখতে লাগলাম মানুষের মৃত্যুর ঢল। করোনায় প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। আমি মরবো নাকি বাঁচবো জানিনা। কিন্তু একদিন মরতে হবেই তাই মালাকুল মউত আসার আগেই তওবা করতে চাই এবং তওবা করলাম। আলহামদুলিল্লাহ! নিশ্চয়ই আমার মাবুদ এটাই চেয়েছিলেন। তিনি আমাকে কতইনা ভালবাসেন। 
আমি নামাজ ধরলাম, ইন শা আল্লাহ আর কখনও ছাড়ব না। নিজেকে পরিবর্তন শুরু করেছি। এখন বোরকা থেকে পর্দা করি। পরিপূর্ণ পর্দার চেষ্টায় নিজেকে সবসময় নিয়োজিত রাখি। আমি এখন এগুলো অনেক উপভোগ করি, আলাদা তৃপ্তি পাই। 
আমি ঈদটা পর্দায় কাটিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ! এটাই আমার জন্য বড় প্রত্যাবর্তন। আমার প্রত্যাবর্তন শুধু পর্দায় নয়, আমি আমার মাবুদের কাছে প্রত্যাবর্তন করেছি; ফিরে এসেছি, আলহামদুলিল্লাহ! 
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। কিন্তু এই পর্দা করা, সেটা ধরে রাখা; পর্দার মর্যাদা সমুন্নত রাখা কঠিন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে উত্তম হেদায়েত দান করুন। আমিন। 

 

https://web.facebook.com/groups/parda24hours/permalink/628443787760973/
...........................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ২২

 

‘পর্দায় প্রত্যাবর্তন’ কারো জন্য অনুপ্রেরণার গল্প, কারো কাছে জীবনের সব চেয়ে বড় সংগ্রাম...বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অধিকাংশ পরিবারেই ইসলাম পাঁচ স্তম্ভের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, সামাজিক ভাবে ও তাই, ব্যক্তিগত ভাবে আমি নিজে কখনোই তেমন ব্যাকগ্রাউন্ড পাইনি যে সেভাবে পর্দা করা কি জানবো বা পর্দা করবো, মা বাবা ক্যারিয়ার সেটেল করার জন্য ৪ বছর বয়সেই রেখে আসে নানুর কাছে, ঘুম থেকে উঠে মক্তবে পড়তে যেতাম ব্যাস, স্কুল এ থাকতে জেলা পর্যায়ে গিয়ে নেচেছি ও।

ছোটবেলায় বাবা মায়ের থেকে দূরে থাকার কারণে কোথাও একটা গ্যাপ থেকে যায় যা পরবর্তীতে আমার কৈশোর এ খুব বড়ো ডিপ্রেশনের আকার ধারণ করে, আস্তে আস্তে মামারা বিয়ে করে তাদের ফ্যামিলি বড় হয়, আমি যখন ক্লাস ১০ এ পড়ি বাবা স্ট্রোক করে মারা যান, মা চাকরি নিয়ে চলে যায় দূরে, আমি আমার বোন সহ মামাদের ঘাড়ের কেমন বোজা হয়ে রয়ে গেলাম, বোন অনেক ছোট বাস্তবতা বুঝে না তখন ও, ১৬ বছর বয়সী কিশোরী আমি হঠাৎ করেই খুব ম্যাচিউরড হয়ে গেলাম, বাবার মৃত্যুতে একদিকে মা কে অভয় দিলাম আরেকদিকে ছোট বোন সহ মামীর কাছে থাকার করুণ গল্প, আমার জীবন চলে গেলো ডিপ্রেশনের অন্ধকারে, এক পর্যায়ে নিজেকে রুমে বন্দী করে ফেললাম।

পর পর পাঁচ বার সুইসাইডের চেষ্টা, এরমধ্যেই মা জানতে পারল আমার কথা, আমাকে শিফট করলো ঢাকায় যেনো আমি এটলিস্ট এই দিক থেকে মুক্ত হই, ঢাকায় এসে একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটে ভর্তি হলাম, কিন্তু আগাগোড়া আমার ভেতরে ফোকলা আমি, নতুন প্লেস, মানুষ জন, যুগের সাথে তাল মেলাতে আমি হয়ে গেলাম সো কল্ড মডার্ন টিপটপ শহুরে মেয়ে, জিন্স, টপ,শার্ট পরা ডেইলি পাবলিক প্লেসে বেপর্দায় ঘুরাফেরা, বন্ধুদের সাথে আড্ডা সব ছিল নরমাল লাইফ...

অন্ধকারের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেলাম পর্ন আসক্তি আর রাবিং মাস্টারবেশন করে (আস্তাগফিরুল্লাহ), একটি হারাম রিলেশন এও জড়িয়ে গেলাম (সে পূর্ব পরিচিত ছিল, প্রবাসী, পরিবার ই জানতো এবং বিয়ের জন্য ২ বছরের টাইম নিয়েছিল), কিন্তু সে বুঝতে পারলো আমার ভেতর ফোকলা, চাপ না দিয়েই আমাকে ও নিজেকে হেদায়াতের পথ সম্পর্কে জানাতে চেষ্টা করলো (যত ভালই হোক হারাম হারাম ই থাকে) আমরা একসাথে ইসলাম নিয়ে বেসিক স্টাডি করতে থাকলাম,অনেকের বয়ান শুনতে লাগলাম, মাওলানা তারিক জামিল সাহেবের বয়ান শুনে আমার অন্তরের কোথাও একটা গিয়ে খোঁচা লাগলো (আল্লাহ উনাকে উত্তম প্রতিদান দিক)

আমার ভেতর পরিবর্তন আসতে শুরু করলো, আমি অনুতপ্ত হলাম, আমার মহান মালিকের দরবারে সেজদায় পরলাম, ক্ষমা চাইলাম, দোয়া করলাম, আল্লাহ আমার পর্দায় আসার পথ টি যেনো সহজ করে দেয়, এর মধ্যেই পড়ে গেলো করোনা কালীন লকডাউন আলহামদুলিল্লাহ, আমি যেহেতু ঢাকায় তাই সেলফ কোয়ারেন্টাইনে চলে গেলাম ২ মাস আমাকে কোনো গায়রে মাহরামের সামনে যেতে হয় নি, প্র্যাকটিস করতে গিয়ে এক পর্যায়ে আমার হারাম সম্পর্ক সম্মন্ধে জানলাম, তাকেও জানালাম, আমি সরে আসলাম কিন্তু কোথাও একটা শান্তি পাচ্ছিলাম না, সে ও অশান্তিতে ছিল, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে তওবা করে দোয়া করলাম, আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করলেন, কিন্তু পরিবার যেহেতু ২ বছর টাইম নিয়েছিল তাই তাদের কে জানানোর পরেও রাজি হলো না, শরীয়ত মোতাবেক আমরা বিয়ে করে নিলাম, চার জন সাক্ষী রেখে, শুধু খেজুর দিয়ে!

আলহামদুলিল্লাহ আমাদের জীবন আল্লাহ নিজের বরকতে পরিপূর্ণ করে দিল আলহামদুলিল্লাহ! ফরয নামায, রোজার পাশাপাশি আমরা দুইজনেই নফল, সুন্নত ইবাদত করা শুরু করি, পর্দায় নিজেকে আবদ্ধ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করি, লকডাউন থাকায় খিমার বা জিলবাব কিনতে পারছিনা কিন্তু সব গায়রে মাহরাম থেকে বেঁচে থাকি, বাসার মধ্যেই থাকি.... ইনশা আল্লাহ খুব শীঘ্রই হয়ত তাও শুরু করতে পারবো!

মানুষের অনেক কথা শুনি, পরিবারের অনেকেই আড়চোখে দেখে, ক্যাম্পাস খুললে হয়ত ওখানেও এমন বাধা আসবে কিন্তু আমি ফাইট ব্যাক করবো ইনশা আল্লাহ...

এখানে একটি কারণেই শেয়ার করলাম যেনো হোঁচট খেলে আবার নিজেই নিজের জন্য অনুপ্রেরণা হই, আমার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া চাইবেন আমি যেনো এই আলোর পথে থাকতে পারি, যেই অন্ধকার থেকে আল্লাহ আমাকে আলোয় এনেছেন আমি যেনো শয়তানের কুমন্ত্রণা বা দুনিয়াবি যাঁতাকলে পরে সেই অন্ধকারে তলিয়ে না যাই...

সবাইকে ধন্যবাদ সময় নিয়ে পড়ার জন্য, বোনদের উদ্দেশ্যে বলবো, যত পাপ ই করে থাকেন ক্ষমা করার মালিক আল্লাহ, কখনো এটা ভাবা যাবেনা আমি তো অনেক বড় পাপ করেছি আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন! মনে রাখবেন যত বড় আপনার পাপ তার থেকে লক্ষ লক্ষ গুণ বড় মহান আল্লাহর রহমত, বরকত, নিয়ামত...আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অত্যন্ত ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে পছন্দ করেন।

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3536533336361401/
.................................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ২৩

 

আমার পর্দা শুরুর গল্পটা ততো বড় নয়।

হাইস্কুলে উঠার পর থেকেই বাইরে বের হলেই উড়না দিয়ে ঘোমটা দিয়েই বের হতাম। আমার আম্মু আলহামদুলিল্লাহ্‌ দ্বীনি বুঝ ওয়ালা মানুষ ছিলেন। উনার কারণেই আজ আমার এত দূর আসা। আম্মু যেভাবে চলতে বলত সেভাবে চলতে চেষ্টা করতাম। সাজগোজ করে বের হওয়াটা আমি নিজেও তেমন পছন্দ করতাম না। সব সময় শালীনতা বজায় রেখেই চলতাম।
দশম শ্রেণিতে উঠার পর আম্মু আমাকে বোরকা পরা শুরু করার জন্য তাড়া দিতে থাকেন। বারবারই তিনি বলতেন অনেক দেরি হয়ে গেছে আর কত! এবার বোরখা পরা শুরু করো।

আমার কোনো ফ্রেন্ড এমন ছিল না যে দ্বীন সম্পর্কে জানত বা মানতো। মোটামুটি সকলেই ফ্যাশনেবল ছিল। এত দিনে আমি তাদের অনুসরণ করা শুরু করি।

এদিকে আম্মু বোরখা পরার জন্য চাপ দিতে থাকে। আমার কাছে মনে হত আমি এখনো ছোট, তাছাড়া আমার ফ্রেন্ডরা কেউই বোরখা পরে আমি পরলে কেমন দেখাবে....!!!

বোরখা কিনে দেওয়ার পর সেটা না পড়ে আলমারিতে তুলে রেখে দিয়েছিলাম। এতে আম্মু খুব রেগে গিয়েছিলেন। একদিন স্কুল ইউনিফর্ম পড়ে স্কুলে আসার জন্য রেডি হলাম। বের হওয়ার সময় আম্মু পথ আগলে দাঁড়ালো। সরাসরি বলে দিল বোরখা পরে বের হও, না হলে পড়ালিখা এখানেই শেষ! দরকার নাই এসব পড়ালিখার!

ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বরাবরের মত আম্মুর বাধ্য মেয়ে ছিলাম। যদিও বোরখা পড়তে মত ছিল না, তবে এব্যাপারে আম্মুকে কখন ও কিচ্ছু বলিনি।

সেদিনই প্রথম বোরখা নিকাব পরে প্রথম বাড়ি থেকে বের হওয়া। অন্য রকম ফিলিংস কাজ করছিল। নিঃশ্বাস নিতে যদিও একটু কষ্ট হয়েছিল।

বোরখা পরে স্কুলে যেতাম ঠিকই তবে পর্দা করা শুরু করি নি তখনও। মাঝেমধ্যে ফ্রেন্ডের সাথে বোরখা না পরেই কোনো দরকারে স্কুল থেকে বেরুতাম। ভাবতাম আম্মু তো দেখছে না, বোরখা না পরলে কি আর হবে। কখনো মাথায় আসত না আম্মু না দেখলে কি হয়েছে আল্লাহ তো দেখছেন। আল্লাহুম্মাগফিরলি! আল্লাহুম্মাগফিরলি!

এসএসসি শুরুর দিন গেইটে ডিউটিরত পুলিশরা বোরখা পরে যাওয়াতে একটু ঝামেলা করেছিল। জোর করে ঢুকে পড়লাম। সেদিনই বোরখা পরায় প্রথম বাধা আসল। কেমন যেন নিজেকে বিজয়ী বিজয়ী মনে হচ্ছিল। ক্লাসে অবশ্য রোরখা পরার জন্য স্যাররা কেউ কিছু বলে নি।

আস্তে আস্তে বোরখা নিকাবের প্রেমে পড়ে গেলাম। এসএসসির রেজাল্ট দিল। একটা কম্বাইন্ড কলেজে চাঞ্চ পেলাম। প্রথম ক্লাস করে বাড়িতে ফিরেই জানি দিলাম - এ কলেজে পড়ালেখা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
ছেলে মেয়ে একই সাথে ক্লাস, ফ্রী মিক্সিং জাস্ট বিরক্তিকর একটা পরিবেশ।

এরপর মহিলা কলেজে খোঁজ নিয়ে দেখলাম কোটা খালি আছে। এবার অনেকটা জেদ করে বসলাম। আমি মহিলা কলেজে ভর্তি হবো, অনেক কাঁদলাম। সকালে কিছু খেলাম না। বাবা মা বুঝাচ্ছিলেন মাত্র তো দুই ইয়ার, এত টাকা খরচ করে ভর্তি করালাম।

কান্নাকাটির জন্য এবার তারা মহিলা কলেজে ভর্তি করাতে রাজি হলেন।

মহিলা কলেজে গিয়ে আরেক ঝামেলা বোরখা পরে কলেজে প্রবেশ নিষেধ, ক্লাসে নিকাব করা যাবে না। কি আর করা! কলেজ ড্রেসের সাথে নিকাব করে যেতাম। আগের কলেজ থেকেও অনেক ভালো ছিল, সেটাই অনেক। আলহামদুলিল্লাহ্‌।

এসময় ভোটার আইডি কার্ডের ছবি তোলার ডেট পড়ল। সেখানে গিয়েও ঝগড়ার মত অবস্থা মুখ দেখালে চলবে না, কানও দেখাতে হবে।

এর কিছুদিন পর কাজিনের সুবাদে একটা কোম্পানিতে ৩ মাসের একটা অস্থায়ী জব পেলাম। এক মাস শেষে বস জানালো নিকাব করে অফিসে কাজ করা যাবে না, ফিল্ডে করা যাবে। একজন স্টুডেন্ট + নারী হিসেবে ফিল্ডে কাজ করা কঠিন ছিল। আর নিকাব ছাড়া কাজ করাও অসম্ভব। কিছুদিন পরেই তাদেরকে কাজ না করার কথা জানিয়ে বিদায় হয়ে এলাম। আলহামদুলিল্লাহ্‌।

এইচএসসি শেষেও একই সমস্যা সেই আগের কম্বাইন্ড কলেজে অনার্সে চান্স পেলা।। ভর্তি হলাম না। এক ইয়ার গ্যাপ দিলাম।

পরের বছরও একই কলেজ! অনেক চিন্তায় পড়ে গেলাম। শেষমেশ ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। মহিলা কলেজে আমার পড়ার মত কোন সাবজেক্ট ছিল না। তাই এত ঝামেলা।

এদিকে আরেকটা সরকারি কলেজে ডিগ্রীর জন্য আবেদন করলাম।

আল্লাহর কাছে মনের গভীর থেকে এই ব্যাপার নিয়ে দোয়া করতে লাগলাম। ইয়া রব্ব! আমার দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য যেটা ভালো হয় সেটাই কর। কোন কলেজে গেলে পর্দা রক্ষা করা যাবে সেটা বারবার মাথায় ঘুরছিল।

ফাইনালি অনার্সে ভর্তির সিদ্ধান্ত নিলাম। আছর নামায পড়ে এবার আল্লাহর কাছে একেবারে জোর দিয়ে দোয়া করলাম।

একটু পরেই মনের সিদ্ধান্ত বদলে গেলো, সেই কলেজে ভর্তি হবো না। অনেকটা মিরাকল মনে হলো।

পরে সরকারি কলেজে ডিগ্রীতে ভর্তি হলাম। সেটাও কম্বাইন্ড ছিল। তবে আগের কলেজ থেকে একটু ভালো। ক্লাস করিনি কখনও। ফাইনাল পরীক্ষা দিতে গেলাম আল্লাহকে স্মরণ করতে করতে। শুনেছি নেকাব করার জন্য নাকি স্যারদের কাছে অনেকেই হেনস্তা হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌ কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়াই নিকাব সহ পুরো পরীক্ষা দিলাম।

কোনো বিয়ে বা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও ফুল পর্দা করে যাই। খাওয়ার সময় যদিও একটু সমস্যা হয়। নিকাবের নিচ দিয়ে এখনও খেতে পারি না। তাই নিকাব খুলে মুখের উপর হাত দিয়ে রাখি, যেমনটা রোদ পড়লে সবাই মুখে হাত দেয়। আর সবচেয়ে আড়াআড়ি জায়গায় গিয়ে বসি। অনেকে অবশ্য ভালো চোখে নেয় না ব্যাপারটা।

অনেক কাছের মানুষও হুজুর ট্যাগ দিয়ে দূরে সরে থাকে।

এখন মাহরাম মেইনটেন করে চলার চেষ্টা করি সব সময়। সব সময় মাথায় রাখি মানুষকে খুশি করা নয় আল্লাহকে খুশি করাই আমার উদ্দেশ্য।
সবাই এই অধমটার জন্য দোয়া করবেন, যাতে একেবারে পরিপূর্ণ ভাবে পর্দা করতে পারি।

 

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3569540966393971
...........................................

 

#পর্দায়প্রত্যাবর্তন
#গল্প ২৪

 

▌পর্দায় আমার প্রত্যাবর্তন।
.
জীবন, সে তো ক্ষণিকের আনন্দঘন কিছু অনিশ্চিত সময় মাত্র। তাই বলে আমি যখন পৃথীবি ছেড়ে চলে যাবো, তখন পৃথিবীও আমার সাথে চলে যাবে এমন কিন্তু নয়। আমিহীন দুনিয়াটা ঠিক তার মতই রয়ে যাবে আপন বেগে। ভাবছেন কি সব বলছি, তাই না?
.
জ্বি, ঠিক তাই! কথিত মুসলিম পরিবারে আমার জন্ম হলেও, অনেক কিছুই আমার ইসলাম সম্পর্কে অজানা ছিলো। এখনো আছে তবে আগের চেয়ে কিছুটা কম।
.
জীবন এ প্রথম ইসলামকে নিয়ে ভাবতে থাকি ২০১৮ সালের ১৭ই এপ্রিল। যখন আমার বয়স ৩০ পার হয়ে গিয়েছিলো। হ্যাঁ, এই দিনটিই হলো আমার জীবনের বিশেষ দিন। যেদিন আমি নতুন করে নিজেকে বুঝতে শিখেছি, ইসলামকে জানার চেষ্টা করেছি।
.
অবশ্য বিনা কারণে যে এমনটি হয়েছে তা কিন্তু নয়।আসলে সেই দিন আমার বাবা আমাকে ছেড়ে একেবারেই চলে গেছেন ওপারে। খুব কেঁদেছিলাম সেদিন। কিন্তু জানতাম না কিছুই। কিভাবে মৃত বাবার জন্য দোয়া করতে হয়, কি করলে আমার বাবা ভালো থাকবেন।
.
সেদিন প্রথম আমি মন থেকে আল্লাহর অস্তিত্বকে অনুভব করেছিলাম। সেই থেকে শুরু আমার জীবনের নতুন অধ্যায়। হ্যাঁ, আমার বয়স ৩০ পার হবার পর আমি ইসলাম কে জানতে ও বুঝতে শিখেছি। ইসলামের ফরজ গুলো একাডেমিক ইসলাম শিক্ষা বইয়ে পড়ে জানলেও, মানতে হবে এই ভেবে পড়িনি। যাইহোক, আজ আমি আপনাদের শোনাবো আমার "পর্দায় প্রত্যাবর্তন" এর কাহিনী।
.
...
.
বাবার মৃত্যুর পর থেকে ইসলাম কে যতটুকু জানতে ও বুঝতে পেরেছি তার মধ্যে পর্দা মেয়েদের জন্য ফরজ, এটাও জেনেছি। কিন্তু ৩০ বছর পর একটা মর্ডান মেয়ের পর্দায় ফিরে আসা সহজ হয়না। কিছুটা পারিবারিক, কিছুটা সামাজিক কারণে।
.
বাবার মৃত্যুর পর থেকে আমি নিয়মিত নামায আদায়ের চেষ্টা করতাম। পর্দার চেষ্টা যে করিনি তা কিন্তু নয়। হিজাব, খিমার, এগুলো কিনে কিনে রাখতাম। কিন্ত পরা হয়ে উঠেনি। যদিও একদিন পরে বাসার সামনে হাটি, তাতেই প্রতিবেশীদের সমালোচনার ঝড় উঠে। কিছুটা নতুন বোরখাওয়ালী, সারাদিন বেপর্দা ঘোরে আর হাটতে বেরুলে পর্দা করে, নতুন ফ্যাশান ধরেছে, - এগুলো শুনে আর পরা হয় না আমার।
.
ফেসবুকের সুবাদে আমার এক বড় ভাইয়া আমাকে অনেক গুলো ইসলামী গ্রুপ, পেজ এগুলোতে জয়েন করিয়ে দেয়। আমারো পড়তে ভালই লাগে। এমনি এক গ্রুপের এডমিন আমি। আমরা কয়েকজন ভাই বোন মিলে, যে যা জানি, সেটুকুই গ্রুপের মাধ্যমে অন্যকে জানিয়ে দেবার চেষ্টা করি মাত্র।
.
একদিন সেই গ্রুপের এক ছোট ভাই (আমার খুব প্রিয়, শুধু ঝগড়া করে আমার সাথে) আমাকে বলতেছেন, আপু গ্রুপের জন্য পর্দা নিয়ে কিছু পোস্ট রেডি করা আছে, আপনি সেগুলো গ্রুপে দিয়ে দিয়েন। আমিই দিতাম কিন্ত মেয়েদের বিষয় তাই আপনি দিলেই ভালো হয়। আমিও কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেলাম।
.
আমার কাজ ছিল পর্দায় ফিরে আসা বোনেদের গল্পগুলো পর্ব আকারে গ্রুপে পোস্ট করা। কিন্তু বিলিভ ইট অর নট, প্রথম পর্ব যখন পোস্ট হলো, আমি যখন পর্বটি পড়তে যাবো, আমি পড়তে পারছিলাম না। খুব ভয় হচ্ছিলো।
.
মনে হচ্ছিলো যেখানে আমি নিজেই পর্দা করিনা সেখানে কি করে আমি অন্যদের পর্দার গল্প শোনাই। ১-২০ টি পর্ব একটি একটি করে পোস্ট হচ্ছিলো আর আমার অন্তর যেন দুমড়ে মুছড়ে যাচ্ছিলো। আমি পোস্ট গুলো পড়ার সাহস পাচ্ছিলাম না।
.
বার বার একটি আয়াত মনে পড়তো -

"হে ঈমানদারগণ! তোমরা কেনো এমন কথা বলো, যা তোমরা মেনে চলোনা?তোমরা যা করনা, তোমাদের তা বলা আল্লাহর কাছে অতিশয় অসন্তোষজনক।"
.
(সুরা আস-সাফ, আয়াতঃ১-২)
.
এরই মধ্যে আমার ভাইয়া সেই পোস্টের একটিতে কমেন্ট করেন, এভাবে তোমার গল্পটাও লিখে ফেলো। আমি তখন কেঁদে ফেলেছিলাম। সেদিনই কিছু না ভেবে, দুই সেট বোরখা কিনি, আর সেদিন থেকেই পরা শুরু করি।
.
সেদিনেও আমি কেঁদেছিলাম, মনে হচ্ছিলো, বোধয় আর আমার বাবাকে আমার বেপর্দা চলার জন্য আযাব ভোগ করতে হবেনা, কাঁদতে ছিলাম খুব কিন্ত কষ্টের জন্য নয়, সেই কান্না ছিলো আনন্দের, সুখের....
.
আল্লাহ আমাকে, আমার পরিবারের সবাইকে,আমার গ্রুপের সব ভাই -বোনদের তাঁর ভালবাসায় করে নিন। (আমিন)।
.
~ ফারজানা হোসাইন।
.

https://web.facebook.com/Parda24hours/photos/3672324619448938/
...........................................

 

 

 

পর্দায় প্রত্যাবতন -পর্দায় ফেরার গল্প pdf  (17 MB)

https://drive.google.com/file/d/1RDV5buGZ1Szf2E0P0oPe4TrewOwQ20kF/view?usp=sharing

https://mega.nz/file/Bu5WiI7L#ubpTHZ1zvVFNHlgPns-3hmL7X2yrp8-rVMsgR2v1fqM

 

 

 

>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"

https://justpaste.it/5gol5

.

>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক

https://justpaste.it/facebook_page_grp_link

.

>> র‍্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট

https://justpaste.it/76iwz

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের pdf লিংক (৪০০+ বই)

https://justpaste.it/4ne9o

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.

https://justpaste.it/islamicappvideo

.

>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?

https://justpaste.it/6q4c3

.

>> কুরআন এবং আপনি

https://justpaste.it/5dds8

.

>> কখনও ঝরে যেও না …

https://justpaste.it/3bt22

.

>> ফজরে আমি উঠতে পারি না

https://justpaste.it/6kjl6

.

>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1

.

>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr

.

>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম

https://justpaste.it/7u5es

.

>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়

https://justpaste.it/8dccj

.

>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/6ttuf

.

>> স্বার্থক মুনাজাত

https://justpaste.it/1xf0t

.

>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ

https://justpaste.it/4hhtd

.

>> তাহাজ্জুদ সিরিজ

https://justpaste.it/4ja0n

.

>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/3dxi7

.

>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)

https://justpaste.it/7056k

.

>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ

https://justpaste.it/7fh32

.

>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ

https://justpaste.it/9icuq

.

>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল

https://justpaste.it/8gmtk

.

>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf

.

>> দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প

https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo

.

>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

https://justpaste.it/8vnly

.

>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir

.

>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh

.
>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5

.
>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1

.

>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j

.

>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে। সবগুলো বিষয়ের লিংক এক জায়গায় রাখা হয়েছে। এই লিংকটা শেয়ার করতে পারেন। 
https://justpaste.it/48f6m