JustPaste.it

বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ

 

 

সবকিছুর আগে আমাদের ইমান :
দুনিয়ার সবকিছু বরবাদ হয়ে যাক, স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা, পরিবার-পরিজন, ধন-সম্পদ; এমনকি নিজের প্রাণ পর্যন্ত কুরবান হয়ে যাক, তবুও একজন মুমিন কখনো নিজের মহামূল্যবান ইমান বিসর্জন দিতে পারে না। সবার আগে আমাদের ইমান, সবকিছুর আগে আমাদের ইমান। শেষ জমানায় এ ইমান রক্ষা করাটাই হয়ে দাঁড়াবে সবচে বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। আগে বিষয়টি অনেকেই না বুঝলেও পৃথিবীর চলমান রূঢ় বাস্তবতায় ধীরে ধীরে অধিকাংশই এখন বুঝতে শুরু করেছে। সময় গড়ানোর সাথেসাথে বিষয়টি হয়তো আরও বেশি উপলব্ধ হবে। তাই তিমির রাতের অন্ধকারের মতো ফিতনার সময় আসার আগেই আমাদের ইমান নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আজ থেকে সাড়ে চোদ্দোশ বছর পূর্বেই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে এমন ফিতনার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন, যখন মানুষ সকাল-বিকাল ইমানহারা হতে থাকবে। সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ فِتَنًا كَقِطَعِ اللَّيْلِ الْمُظْلِمِ، يُصْبِحُ الرَّجُلُ مُؤْمِنًا وَيُمْسِي كَافِرًا، أَوْ يُمْسِي مُؤْمِنًا وَيُصْبِحُ كَافِرًا، يَبِيعُ دِينَهُ بِعَرَضٍ مِنَ الدُّنْيَا
‘আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আঁধার রাতের অংশের মতো ফিতনা আসার আগেই তোমরা সৎ আমলের দিকে অগ্রসর হও। সে সময় সকালে কেউ মুমিন থাকলে বিকেলে কাফির হয়ে যাবে কিংবা বিকেলে মুমিন থাকলে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার সামগ্রীর বিনিময়ে সে তার দ্বীন বিক্রি করে দেবে।’ (সহিহু মুসলিম : ১/১১০, হাদিস নং ১১৮, প্রকাশনী : দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)
বিশুদ্ধ সনদে আবু দাউদের বর্ণনায় অতিরিক্ত এসেছে :
عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: كُنَّا قُعُودًا عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ، فَذَكَرَ الْفِتَنَ فَأَكْثَرَ فِي ذِكْرِهَا... يُصْبِحُ الرَّجُلُ فِيهَا مُؤْمِنًا، وَيُمْسِي كَافِرًا، حَتَّى يَصِيرَ النَّاسُ إِلَى فُسْطَاطَيْنِ، فُسْطَاطِ إِيمَانٍ لَا نِفَاقَ فِيهِ، وَفُسْطَاطِ نِفَاقٍ لَا إِيمَانَ فِيهِ، فَإِذَا كَانَ ذَاكُمْ فَانْتَظِرُوا الدَّجَّالَ، مِنْ يَوْمِهِ، أَوْ مِنْ غَدِهِ 
‘আব্দুল্লাহ বিন উমর রা. বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট বসা ছিলাম। অতঃপর তিনি ফিতনা নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। এসংক্রান্ত আলোচনা অনেক দীর্ঘ করলেন। ...সে সময় সকালে কেউ মুমিন থাকলে বিকেলে কাফির হয়ে যাবে। একপর্যায়ে সকল মানুষ দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। একভাগ হবে ইমানের শিবির, যেখানে সামান্য নিফাক থাকবে না। আরেকভাগ হবে নিফাকের শিবির, যেখানে ইমানের লেশমাত্র থাকবে না। পরিস্থিতি যখন এমন হবে, সেদিনই বা পরের দিন তোমরা দাজ্জালের (আবির্ভাবের) অপেক্ষা করো।’ (সুনানু আবি দাউদ : ৪/৯৪-৯৫, হাদিস নং ৪২৪২, প্রকাশনী : আল-মাকতাবাতুল আসরিয়্যা, বৈরুত)
বর্তমান ফিতনার এ মহাদুর্যোগপূর্ণ সময়ে হাদিস দুটি আমাদের জন্য রিমাইন্ডার হিসেবে মুখস্থ রাখা দরকার। বলা তো যায় না, কাকে কখন কী অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়। তবে আর যাই হোক না হোক, ইমান বিকিয়ে দুনিয়া ও আখিরাত বরবাদ করার মতো বোকামি করা যাবে না। পাশে কেউ থাকুক বা না থাকুক, ইমান সবার আগে। আর কিছু থাক বা না থাক, ইমান সবকিছুর আগে। সদা মনে রাখতে হবে, শত বিপদ ও মুসিবতে পতিত হলেও আমাদের ইমান সবার আগে, আমাদের ইমান সবকিছুর আগে।

 

 

.
প্রথম পর্ব

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2558308090936157&id=1698393090260999
.
দ্বিতীয় পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2569008916532741&id=1698393090260999
.
তৃতীয় পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2577170365716596&id=1698393090260999
.
চতুর্থ পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2579615632138736&id=1698393090260999
.
পঞ্চম পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2591631330937166&id=1698393090260999
.
ষষ্ঠ পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2594725363961096&id=1698393090260999
.
সপ্তম পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2603063573127275&id=1698393090260999
.
অষ্টম পর্ব
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2608302182603414&id=1698393090260999

.

 

#বিশুদ্ধ_ঈমান (প্রথম পর্ব)

 

আলহামদুলিল্লাহ্! আল্লাহর ইচ্ছায় আজ থেকেই আমাদের আকিদা সিরিজ শুরু হতে যাচ্ছে!
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
সর্বশেষ জান্নাতি ব্যক্তিটি আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাবে। কারণ ইতোমধ্যে সে আগুনে পুড়তে পুড়তে প্রায় কয়লা হয়ে যাবে। আল্লাহ্ তাকে ধুয়ে-মুছে সাফ করে দেবেন। সে ভাববে, তার চেয়ে বেশি নিয়ামত জান্নাতে আর কাউকে দেওয়া হয়নি। কারণ, যখন তাকে বলা হবে, দুনিয়ার সমান বিশাল জান্নাত তার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে, তখন সে আল্লাহকে বলবে, ‘আপনি বাদশাহ হয়ে আমার সাথে ঠাট্টা করছেন?’ এটি বলার সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবারা হাসতেন। সর্বশেষ তার জন্য এই দুনিয়া এবং আরো দশগুণ (দশ দুনিয়ার সমান) দেওয়া হবে। [সহিহ বুখারি: ৬৫৭৪, সহিহ মুসলিম: ৪৮০]
.
এটি হলো সর্বশেষ জান্নাতি ব্যক্তির ঘটনা। ঈমান এমনই মূল্যবান সম্পদ—যদি এটি কারও কাছে থাকে, তবে সে পাপের প্রায়শ্চিত্য ভোগ করে হলেও একদিন অনাবিল সুখের স্থান জান্নাতে যাবে। তবে, এই ঈমান বা বিশ্বাসটা হতে হবে নিখাদ—এতে কোনো ভেজাল থাকবে না; শির্ক থাকবে না; কুফর থাকবে না।
.
ঈমান তথা সঠিক ইসলামি আকিদা-বিশ্বাস মুমিন জীবনের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। কারণ এই ঈমানের চেতনা দিয়েই তার পুরো জীবন পরিচালিত হয় এবং এই ঈমান দিয়েই তার জান্নাত নির্ধারিত হয়। সুতরাং শির্কমুক্ত বিশুদ্ধ ঈমান সম্পর্কে জানা প্রত্যেকের উপর ফরজ। আমরা ধারাবাহিকভাবে আমাদের নতুন এই ‘ঈমান সিরিজ’ কন্টিনিউ করবো ইনশাআল্লাহ্।
.
বিষয়টি খুব বেশি চটকদার নয়, তাই অনেকে আগ্রহবোধ করেন না। অথচ এই ঈমানের বিশুদ্ধতা না থাকলে দুনিয়া এবং আখিরাত বরবাদ হয়ে যাবে। তাই, সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে, আপনারা আমাদের ঈমান সিরিজের প্রতিটি লেখা শেয়ার করবেন অথবা কপি করবেন। অসংখ্য মানুষ নামেমাত্র মুসলিম হিসেবে জীবনযাপন করছে, অথচ তার ঈমান-আকিদা বিশুদ্ধ নয়। আপনার একটি শেয়ার বা কপির মাধ্যমে একজন মানুষও যদি সঠিক পথের দিশা পায়, তবে আপনি মহাসৌভাগ্যের অধিকারী হয়ে যাবেন।
.
আল্লাহ্ চাইলে সকল গুনাহ্ ক্ষমা করবেন, কিন্তু শির্কের গুনাহ্ ক্ষমা করবেন না। শির্ক হলো, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কাউকে ইবাদতের যোগ্য মনে করা, অন্য কাউকে সৃষ্টিজগতের প্রতিপালনকারী মনে করা, অন্য কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করা।
.
শির্কের আরও অনেক ধরণ আছে, যা আমরা জানি না। কারণ শির্কের বিষয়গুলো খুবই সূক্ষ্ম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “এই উম্মতের শির্ক রাতের আঁধারে কালো পাথরের উপর কালো পিঁপড়ার পদচারণার চেয়েও সূক্ষ্ম বা গুপ্ত।” [সহিহুল জামি’: ৩/২৩৩, হাদিসটি সহিহ]
.
সুতরাং, শির্ক সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে, যদি আমরা জাহান্নাম থেকে বাঁচতে চাই এবং জান্নাতে যেতে চাই। পাশাপাশি তাওহিদ তথা আল্লাহর বিশুদ্ধ একত্ববাদ সম্পর্কেও জানতে হবে। কারণ তাওহিদে বিশ্বাসী প্রতিটি ব্যক্তি জান্নাতে যাবে। সর্বশেষ জান্নাতি ব্যক্তি তাওহিদের কারণেই জান্নাতের অধিকারী হবে। সুতরাং এ বিষয়েও জানা জরুরি। আমরা ধীরে ধীরে সবই আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ্।
.
#সহিহ_আকিদা

 

#বিশুদ্ধ_ঈমান (দ্বিতীয় পর্ব)

 

একবার রাসুলুল্লাহ ﷺ এক আনসারি সাহাবির বাগানে প্রবেশ করলেন, তখন সেখানে দুটি উট লড়াই করছিল এবং কাঁপছিল। যখন রাসুলুল্লাহ ﷺ এদের নিকটে গেলেন, তখন উট দুটি তাদের ঘাড় যমিনে ঝুঁকিয়ে দিলো। সাথের লোকটি বলে উঠলেন, ‘উট আপনাকে সিজদা করেছে।’ তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ (তার কথাকে নাকচ করে) বললেন, ‘‘যদি কেউ কাউকে সিজদা করার অনুমতি থাকতো, তবে আমি স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম, তার স্বামীকে সিজদা করার জন্য। তা এইজন্য যে, আল্লাহ্ তাআলা স্বামীর হক স্ত্রীর উপর অনেক বড় করেছেন। (কিন্তু এটারও অনুমতি নেই)। [সহিহ ইবনু হিব্বান: ৪১৬২]
.
মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট দুটো অঙ্গ হলো: নাক ও কপাল। এই দুটো সিজদার প্রধান অঙ্গ। সিজদা পাওয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার। অতএব, কোনো #পীরকে বা #মাজারে সিজদা দেওয়া সম্পূর্ণ #হারাম এবং #শির্ক। যদি কেউ কোনো পীর, কোনো প্রাণী বা অন্য কোনো কিছুকে ইবাদতের উদ্দেশ্যে সিজদা দেয়, তবে সে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমতে #মুশরিক (কাফির) হয়ে যাবে। তবে, যদি কেউ শুধু ‘সম্মান প্রদর্শনার্থে’ কোনো মাজারে বা কাউকে সিজদা করে (তার কাছে কিছু না চায় বা তার ইবাদত না করে), তবে সে অনেকের মতে কাফির হবে না, কিন্তু নিঃসন্দেহে কবিরা গুনাহগার হবে। কারণ, এভাবে সিজদা দেওয়া কঠিন হারাম।
.
রাসূল ﷺ মৃত্যুর পূর্বে পাঁচটি বিষয় বলেছিলেন। এর মাঝে একটি ছিলো: ‘‘তোমাদের পূর্ববর্তী কত উম্মত তাদের নবী ও বুজুর্গদের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। সাবধান! তোমরা কবরকে সিজদার স্থান বানিও না। আমি সেটি থেকে তোমাদের নিষেধ করছি।’’ [সহিহ মুসলিম: ৫৩২]
.
এই হাদিস থেকে বুঝতে পারছি, বুযুর্গদের কবর তথা মাজারকে সিজদার স্থান বানানো যাবে না। মাজারে সিজদা দেওয়া যাবে না।
.
মু‘আয (রা.) সিরিয়া থেকে ফিরে এসে নবীজিকে সিজদা করেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে মু‘আয! এ কী?’’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখতে পেলাম, সেখানকার লোকেরা তাদের ধর্মীয় নেতা ও শাসকদের সিজদা করে। তাই আমি মনে মনে আশা পোষণ করলাম যে, আমি আপনার সামনে তাই করবো।’ তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ‘‘তোমরা তা করো না। কেননা আমি যদি কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ ছাড়া অপর কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে।’’ (কিন্তু সেটিরও অনুমতি নেই) [ইবনু মাজাহ: ১৮৫৩, বাইহাকি: ১৪৭১১]
.
যেখানে স্বয়ং রাসূলকে সিজদা দেওয়ার অনুমতি নেই, সেখানে কোনো পীর, দরবেশ বা অন্য কোনো কিছুকে সিজদা দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।
.
কিছু লোক বলে, ফেরেশতারা আদমকে সিজদা দিয়েছিলো, ইউসুফ (আ.)-কে তার ভাইয়েরা সিজদা দিয়েছিলো। তাই, আমাদের জন্যও এ ধরনের সম্মানসূচক সিজদা বৈধ। তাদের এই কথা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর ও ভুল। কারণ আদম (আ.) ও ইউসুফ (আ.)-এর শরিয়ত (জীবনবিধান) আমাদের জন্য অনুসরণীয় নয়। এককথায়, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসার পর পূর্ববর্তী সকল নবীর শরিয়ত রহিত হয়ে গেছে। যেমন: দাউদ (আ.)-এর উম্মতদের জন্য শনিবারে মাছ শিকার করা অবৈধ ছিলো। অথচ, আমাদের এরকম রেস্ট্রিকশন নেই। সুতরাং, পূর্ববর্তী নবীদের উদাহরণ টানা যাবে না।
.
সর্বশেষ দুটো কথা:
কোনো ব্যক্তিকে যদি দেখেন, মাজারে বা কাউকে সিজদা দিচ্ছে, তবে সাথে সাথেই তাকে ‘মুশরিক’ বলবেন না। কারণ এদেশের প্রচুর মানুষ গণ্ডমূর্খ। এরা এই সিজদার ভয়াবহতা সম্পর্কে জানে না। অজ্ঞতার কারণে আলেমগণ এই শ্রেণির লোকদের সরাসরি ‘মুশরিক’ (কাফির) বলেন না; কবিরা গুনাহগার বলেন। কিন্তু কেউ যদি এটা জানে যে, পীর বা মাজারে কিংবা অন্য কোনো কিছুকে সিজদা দেওয়া শির্ক, তবুও সে ইবাদত বা প্রার্থনার উদ্দেশ্যে সিজদা করে, তবে সে মুশরিক (কাফির) হয়ে যাবে। সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। তাকে নতুন করে কালিমা পড়ে মুসলিম হতে হবে।
.
#সহিহ_আকিদা

#বিশুদ্ধ_ঈমান (তৃতীয় পর্ব)

 

কোনো অমুসলিমের মৃত্যুতে আমাদের কী করা উচিত? উল্লাস করা নাকি দুঃখ করা?
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
❂ যদি কোনো অমুসলিম তথা কাফির ইসলামের সাথে শত্রুতা না করে নিরীহভাবে জীবনযাপন করে এবং এভাবেই মারা যায়, তবে তার ব্যাপারে মুমিনের মনে এজন্য দুঃখ আসবে যে, সে ঈমানহারা হয়ে কবরে চলে গেলো। তবে, তার প্রতি কোনোরকম ভালোবাসা দেখানো যাবে না। আবার তাকে নিয়ে উল্লাস করারও কিছু নেই।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা মৃতদের গালি দিও না; কেননা তারা তাদের কৃতকর্মে পৌঁছে গেছে।’’ [সহিহ বুখারি: ১৩৯০]
.
❂ তাদের জন্য কি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা যাবে? ‘‘শান্তিতে থাকুন’’ (RIP—Rest in peace) ইত্যাদি বলা যাবে?
.
উত্তর হলো, না। তাদের জন্য কোনোভাবেই ক্ষমাপ্রার্থনা করা যাবে না এবং তাদের কল্যাণ কামনা করা যাবে না। ইসলামের জন্য আবু তালিবের অবদান বলে বা লিখে শেষ করা যাবে না। কিন্তু সে ঈমান আনার সৌভাগ্য লাভ করতে পারেনি। নবীজি দাঁত কামড়িয়ে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সে কাফির অবস্থায়ই মৃত্যুবরণ করে। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা চাইতে থাকেন আল্লাহর কাছে। তখন আল্লাহ্ আয়াত নাযিল করে বলেন—
.
‘‘নবী ও মুমিনের উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, যদিও তারা আত্মীয় হয়—একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।’’ [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ১১৩]
.
এবার বলুন, যে-আবু তালিব তার জীবন বাজি রেখে ভাতিজা মুহাম্মাদকে সাপোর্ট দিয়ে গেছে, তার জন্যও ক্ষমা প্রার্থনার অনুমতি নেই, তবে আপনি আর কার জন্য শান্তি কামনা করেন?
.
মুশরিক তথা কাফিরের ব্যাপারে ইসলামে কেন এত কঠোরতা যে, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাও চাওয়া যাবে না?
.
উত্তর হলো: যে আল্লাহ্ আপনাকে মায়ের পেট থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত রিযিক দিয়েছেন, এই পৃথিবীর আলো বাতাস উপভোগ করিয়েছেন, সেই আল্লাহ্কে আপনি বিশ্বাস করেন না। আপনার মত নিমকহারাম আর কে আছে? আল্লাহ্ কত সুন্দর করে বলছেন—
.
‘‘কীভাবে তোমরা আল্লাহর সাথে কুফর করছো, অথচ তোমরা ছিলে মৃত? অতঃপর তিনি তোমাদেরকে জীবিত করেছেন, এরপর তিনি তোমাদের মৃত্যু দেবেন অতঃপর জীবিত করবেন, তারপর তারই নিকট তোমাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে। তিনিই জমিনে যা আছে সব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তারপর আসমান সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন এবং তাকে সাত আসমানে সুবিন্যস্ত করলেন। আর সবকিছু সম্পর্কে তিনি সম্যক জ্ঞাত।’’ [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৮-২৯]
.
❂ যদি কোনো কাফির মুসলিমদের সাথে শত্রুতা করে থাকে এবং সারাজীবন মুসলিমদের ক্ষতির চেষ্টা করে থাকে, তবে তার মৃত্যুতে মুসলিমরা আনন্দ করবে। এটাই সুন্নাহ।
.
‘আব্দুল্লাহ বিন আবু আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আবু জাহলের মাথা কর্তনের ব্যাপারে সুসংবাদ দেওয়া হলে তিনি দুই রাকাত (শুকরিয়ার) নামাজ পড়লেন।’ [ইবনু মাজাহ: ১৩৯১]
.
❂ সাধারণভাবে কোনো কাফিরের সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না, সে যতই আপন হোক।
.
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরিকে প্রিয় মনে করে। তোমাদের মধ্য থেকে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই জালিম।’’ [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ২৩]
.
এমনকি কেউ কাফিরের সাথে বন্ধুত্ব করলে নিজেই কাফির হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। আল্লাহ্ সতর্ক করে বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমরা ইহুদী ও খৃস্টানদের আওলিয়া (বন্ধু বা অভিভাবক) হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা (বরং) একে অপরের বন্ধু। যে কেউ তাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, সে (হবে) তাদেরই একজন। নিশ্চয় আল্লাহ জালিমদের হিদায়াত দেন না।” [সূরা মায়িদাহ, আয়াত: ৫১]
.
❂ তাহলে কি আমরা জীবিত কাফিরদের সাথে সর্বদা খারাপ আচরণ করবো? ইসলাম কি এটাই বলে?
.
উত্তর হলো, না। বরং আমরা সবার সাথেই সদাচরণ করবো। প্রয়োজনে তাদের সাথে লেনদেনও করবো। তবে, আমাদের ভালোবাসা কেবল মুমিনদের জন্য থাকবে। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করেনি এবং তোমাদেরকে স্বদেশ থেকে বহিষ্কার করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদের নিষেধ করেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন।’’ [সুরা মুমতাহিনা, আয়াত: ০৮]
.
#সহিহ_আকিদা

#বিশুদ্ধ_ঈমান (৪র্থ পর্ব)

 

এক ইহুদী নারী একবার নবীজিকে দাওয়াত করে। সে একটি ভুনা বকরী পেশ করে, কিন্তু তাতে বিষ মিশিয়ে দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেটি থেকে আহার করেন এবং তাঁর সাথে থাকা কয়েকজন সাহাবিও আহার করেন। হঠাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে ওঠেন, ‘‘তোমরা তোমাদের হাত গুটিয়ে নাও। কারণ এটি (খাবারটির ধরণ) আমাকে অবহিত করেছে যে, এটি বিষযুক্ত।’’
.
(বিষক্রিয়ার ফলে) বিশ্‌র আল-আনসারী (রা.) মারা যান। নবীজি ইহুদী নারীকে ডেকে এনে প্রশ্ন করেন, ‘‘তুমি যা করলে, তা করতে কোন জিনিস তোমাকে প্ররোচিত করেছে?’’ সে বললো, ‘আপনি যদি সত্য নবী হয়ে থাকেন, তাহলে আমি যা করেছি তাতে আপনার ক্ষতি হবে না। আর যদি আপনি বাদশাহ হয়ে থাকেন, তাহলে আমি আপনার থেকে মানুষকে শান্তি দিতে চাইলাম।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিলে পরে তাকে হত্যা করা হয় (যেহেতু সে বিষযুক্ত খাবার দিয়ে একজনকে হত্যা করেছে)। অতঃপর নবীজি যে ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন, সে সম্পর্কে বলেন, ‘‘আমি সর্বদা সেই লোকমার ব্যথা অনুভব করছি, যা আমি খায়বারে (ইহুদি নারীর দাওয়াতে) খেয়েছিলাম। এই সময়ে তা আমার প্রধান ধমনি কেটে দিচ্ছে।’’ [আবু দাউদ: ৪৫১২, হাদিসটি হাসান সহিহ]
.
কিছু লোক দাবি করেন, নবীজি ইলমুম গায়েব তথা অদৃশ্যের খবর জানতেন! নাউযুবিল্লাহ্! যে গুণের অধিকারী কেবল আল্লাহ্, সেটিকে তারা নবীজির জন্য সাব্যস্ত করেন!
.
উপরের হাদিসটি থেকে আমরা কী শিখলাম? নবীজি গায়েব তথা অদৃশ্যের খবর জানতেন? তিনি যদি অদৃশ্যের খবর জানতেনই, তবে কেন নিজে এই বিষযুক্ত খাবার খেলেন আর কেন তাঁর সামনে একজন সাহাবি এই খাবার খেয়ে মারা গেলেন, তবুও তিনি কিছু বললেন না?
.
আচ্ছা, আরো স্পষ্ট দুটো আয়াত আমরা দেখে নেই। তাহলে আর কোনো সন্দেহের অবকাশ থাকবে না।
.
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘(হে নবী) আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান (তা ব্যতীত)। আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে কল্যাণের প্রাচুর্য পেয়ে যেতাম; আর কোনো অনিষ্ট আমাকে স্পর্শ করতো না।’’ [সূরা আল আ’রাফ, আয়াত: ১৮৮]
.
অন্যত্র আল্লাহ্ বলেন, ‘‘বলুন, আল্লাহ ব্যতীত নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে কেউ গায়েবের খবর জানে না এবং তারা জানে না যে, তারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে।’’ [সূরা আন নামল, আয়াত: ৬৫]
.
তারা কিছু অস্পষ্ট হাদিস এনে নিজেদের পক্ষে দলিল দিতে চায়। তাদের আমরা বলি, মূলত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব তথা অদৃশ্যের তথ্য সেটুকুই জানতেন, যেটুকু তাঁকে জানানো হতো। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘এবং তিনি নিজ ইচ্ছায় কিছু বলেন না, যতক্ষণ না তাঁর নিকট ওহি নাযিল হয়।’’ [সূরা আন-নাজম আয়াত: ৩-৪]
.
একটি দীর্ঘ হাদিসে মা আয়িশা (রা.) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি এরূপ বলে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ওহি ব্যতীত কাল কি হবে তা জানাতে পারেন, সে-ও আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দিলো। কেননা আল্লাহ পাক বলেন, ‘বলুন, আসমান ও জমিনে আল্লাহ ছাড়া গায়েবসংক্রান্ত কোন কিছু কেউই জানে না’ [সহিহ মুসলিম: ৩৪৭]
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমরা আমাদের হৃদয়ের মণিকোঠায় রাখি। আমরা তাঁর সম্মানে জীবন উৎসর্গ করতেও দ্বিধা করি না। কিন্তু তাঁর শানে আমরা এমন কিছু বলি না, যা আল্লাহর কিতাবের সাথে সাংঘর্ষিক হয়। ‘নবীজি গায়েব জানেন’ এ ধরনের কুফরি আকিদা আমরা লালন করি না।
.
আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ।
.
#সহিহ_আকিদা

#বিশুদ্ধ_ঈমান (৫ম পর্ব)

 

কোনো অমুসলিম ভালো কাজ করলেও কি জাহান্নামে যাবে? আইনস্টাইন, নিউটন, মেন্ডেলা—এঁরাও কি জাহান্নামে যেতে পারে?
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
প্রথমেই আমরা একটি হাদিস বর্ণনা করছি। আইয়ামে জাহেলিয়ার (মূর্খতার যুগের) সময়েও ইবনে জুদ‘আন নামের এক ব্যক্তি মানুষের ব্যাপক উপকার করতো। কিন্তু সে ঈমান না নিয়েই মৃত্যুবরণ করে। তাকে নিয়ে সাহাবিগণ কনফিউজড (সন্দিহান) ছিলেন। পরে নবীজি বিষয়টি ক্লিয়ার করেন।
.
একদিন আয়িশা (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আল্লাহর রাসূল! জাহেলি যুগে ইবনে জুদ‘আন আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করতো, গরিব-মিসকিনদের খাবার খাওয়াতো; এই সব কাজ তার কোনো উপকারে আসবে কি?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘‘না, এসবে তার কোনো উপকার হবে না; কারণ সে কখনো বলেনি—
رَبِّ اغْفِرْ لِي خَطِيئَتِي يَوْمَ الدِّينِ.
‘হে আমার রব! বিচারের দিনে আমার গোনাহ-খাতা মাফ করে দিও!’ ’’ [সহিহ মুসলিম: ২১৪]
.
হাদিসে মূলত এটি বুঝানো হয়েছে যে, ইবনে জুদ‘আন ঈমান না আনায় কখনো জান্নাতের অধিবাসী হতে পারবে না। তবে, আল্লাহ্ চাইলে তার শাস্তি কমাতে পারেন কিংবা হয়ত তাকে তার ভালো কাজের প্রতিদান দুনিয়াতেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অতএব, কেউ যদি ঈমানহীন অবস্থায় মারা যায়, তবে সে জাহান্নামে যাবে। মেন্ডেলা, আইনস্টাইন বা এরকম ‘মানব-কল্যাণকর’ কেউ যদি ঈমান না এনে মারা যান, তবে তাদেরও একই পরিণতি হবে।
.
নিশ্চয়ই যারা ঈমানহীন অবস্থায় কবরে যাবে, সে জাহান্নামী হবে। কখনই সে জান্নাতে যেতে পারবে না। তবে, তার ভালো কাজের প্রতিদান অন্য উপায়ে সে পাবে। যেমন: অন্যের প্রতি সহানুভূতি, দুঃখ দূর করা, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, মা-বাবার সেবা, সৃষ্টির সেবা, আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা ইত্যাদি। কিন্তু, সেই প্রতিদান হয়তো দুনিয়ার জীবনে সুখ-শান্তি লাভের মাধ্যমে হবে অথবা পরকালে শাস্তি হালকা হওয়ার মাধ্যমে।
.
তবে, কোনো অমুসলিম পরকালের চিরস্থায়ী নাজাত—কুরআনের ভাষায় চূড়ান্ত সফলতা—কখনও পাবে না। কেননা, পরকালে নাজাত তথা মুক্তির জন্য ‘ঈমান’ পূর্বশর্ত। [ফায়দ্বুল বারি: ১/১৩৬, নববি, শারহু মুসলিম: ৩/৮৭]
.
আনাস ইবনু মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, ‘‘কাফির যদি দুনিয়াতে কোন নেক আমল করে, তবে এর প্রতিদানস্বরূপ দুনিয়াতেই তাকে জীবনোপকরণ প্রদান করা হয়ে থাকে। আর মুমিনদের নেকি আল্লাহ তা‘আলা আখিরাতের জন্য জমা করে রেখে দেন এবং আনুগত্যের প্রতিফলস্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পৃথিবীতেও জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।’’ [সহিহ মুসলিম: ৬৯৮৩]
.
ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো মুসলিম কিংবা কাফির ভালো কাজ করলে আল্লাহ তার প্রতিদান দেন।’’ আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ কাফেরকে কী জাতীয় প্রতিদান দেন?’ রাসূলুল্লাহ উত্তর দেন, ‘‘যদি সে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে বা দান করে কিংবা অন্য কোনো ভাল কাজ করে, তাহলে আল্লাহ এর প্রতিদান তার সহায়-সম্পদে, সন্তান-সন্ততিতে, স্বাস্থ-সুস্থতায় এবং অনুরূপ বিষয়ে দান করেন।’’ আমরা পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, ‘পরকালে সে কী জাতীয় প্রতিদান পাবে?’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, ‘‘বড় আযাব হতে ছোট আযাব।’’ [আল মুসতাদরাক আ’লা সহিহাইন: ৩০০১, মুসনাদ বাযযার: ৯৪৫]
.
সুতরাং, প্রিয় ভাই-বোনেরা! নিজের ঈমানকে বিশুদ্ধ করুন। এই ঈমানের মূল্য দুনিয়ার কোনো কিছুর সমান হবে না। আল্লাহর দেওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হলো ঈমান। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন, ঈমানের কদর করুন। আর অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে, যেন কোনো অমুসলিমের প্রতি অন্তরে ভালোবাসা না আসে। আমরা তাদের ভালো কাজের প্রশংসা করবো, এপ্রিশিয়েট করবো, তাদের সাথে সদাচরণ করবো, তাদের সাথে লেনদেনও করবো। কিন্তু কখনই তাদের সাথে অন্তরঙ্গতায় যাবো না, তারা মারা গেলে তাদের জন্য ক্ষমা চাবো না, RIP লিখবো না। আমরা পূর্বে এ প্রসঙ্গে আরেকটি পোস্ট দিয়েছি। কমেন্টে সেটি পাবেন।
.
#সহিহ_আকিদা

#বিশুদ্ধ_ঈমান (ষষ্ঠ পর্ব)

 

প্রথমে একটি ছোট ঘটনা বলি।
.
সম্রাট আকবরকে এক জ্যোতিষী বলেছিলো, সম্রাট আর মাত্র ৩ বছর বাঁচবে। এতে সম্রাট ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো এবং বিষণ্ন মনে পায়চারি করতে লাগলো।

এটি দেখে বীরবল জ্যোতিষীকে বললো, ‘আপনার নিজের আয়ু কত হিসেব করুন তো!’ অনেকক্ষণ হিসাব-নিকাশ করে জ্যোতিষী বললো, ‘আরো পঁচিশ বছর।’ বীরবল তখনি তরবারি দিয়ে এক কোপে জ্যোতিষীর কল্লা কেটে ফেললো! এরপর বাদশাহকে বললো, ‘দেখলেন তো জাঁহাপনা, জ্যোতিষীর গণনা কতটা ভুল?’ [ঘটনাটির বিশ্বস্ততা জানা নেই]
.
ভালো করে জেনে রাখুন—রাশিফল বর্ণনাকারী ও জ্যোতিষীর কথা (হোক সেটি মানুষ, টিয়াপাখি বা অন্য কিছু) বিশ্বাস করা দ্বারা একজন ব্যক্তি সরাসরি কাফির হয়ে যায়।
.
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কোন গণক বা জ্যোতিষীর কাছে যায় এবং তার কথা সত্য বলে বিশ্বাস করে, সে ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ কুরআনকে অবিশ্বাস করে।’’ [আবু দাউদ: ৩৯০৬, তিরমিযি: ১৩৫, সহিহুল জামে’: ৫৯৩৯, হাদিসটি সহিহ]
.
কীভাবে সে কুরআনকে অস্বীকার করে?
.
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘বলুন, আল্লাহ ব্যতীত নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে কেউ অদৃশ্যের খবর জানে না এবং তারা জানে না যে, তারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে।’’ [সূরা আন নামল, আয়াত: ৬৫]
.
সুতরাং, কেউ যদি জ্যোতিষীর কাছে যায় এবং জ্যোতিষীর ভবিষ্যদ্বাণী সত্য ও সঠিক বলে বিশ্বাস করে, তবে আল্লাহর বিশেষ গুণকে অন্যের সাথে মিলানোর মাধধ্যমে শির্ক করার কারণে এবং কুরআনের কথাকে অবিশ্বাস করার কারণে সে মুশরিক ও কাফির হয়ে যাবে।
.
তবে, কেউ যদি শুধু অভিজ্ঞতার জন্য যায় এবং জ্যোতিষীর কথাকে সত্য বলে বিশ্বাস না করে, তবে সে কাফির হবে না, কিন্তু কবিরা গুনাহগার হবে এবং ৪০ দিন পর্যন্ত তার নামাজ কবুল হবে না।
.
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো জ্যোতিষীর গিয়ে কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করবে, তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল হবে না।” [সহিহ মুসলিম: ২২৩০, আহমাদ: ১৬২০২]
.
এর কারণ হলো, সে জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে নিজের ঈমানকে অবমূল্যায়ন করেছে, আল্লাহর কথার সাথে খামখেয়ালিপনা করেছে। সে এমন একটি জঘন্য শির্কের ব্যাপারে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ তো দূরের কথা, ঘৃণাও দেখাতে পারেনি।
.
তবে, অবশ্যই তাকে নামাজ পড়ে যেতে হবে। কারণ নামাজ কবুল হওয়া এক বিষয় আর নামাজের আবশ্যকতা সম্পন্ন করা আরেক বিষয়। নামাজ বাদ দিলে ফরজ ত্যাগের গুনাহ হবে, যেটি আরো ভয়ানক। সুতরাং সে নামাজ পড়বে এবং তাওবাহ্ করবে।
.
যারা জ্যোতিষী ও রাশিফল বর্ণনাকারীদের কথা বিশ্বাস করে, তারা বড় ধরনের বোকা। যে জ্যোতিষী নিজেই ফুটপাতে থেকে কষ্টে জীবিকা নির্বাহ করে, সে যদি নিজের ভবিষ্যতের ব্যাপারেও জানতো, তবে তো তার এই অবস্থা থাকার কথা না। এদের নিজেদের জীবনেই হতাশার শেষ নেই। এরা মিথ্যুক এবং ভণ্ড ও প্রতারক।
.
খোদ নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত অদৃশ্যের খবর এবং ভবিষ্যতের বিষয়াবলী জানতেন না। তবে, যেটুকু তাঁকে জানানো হতো, সেটি ভিন্ন। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘(হে নবী) আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান (তা ব্যতীত)। আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে কল্যাণের প্রাচুর্য পেয়ে যেতাম; আর কোনো অনিষ্ট আমাকে স্পর্শ করতো না।’’ [সূরা আল আ’রাফ, আয়াত: ১৮৮]
.
#সহিহ_আকিদা

#বিশুদ্ধ_ঈমান (সপ্তম পর্ব)

 

শনির দশা বা কোনো শুভ-অশুভ (যেমন লাকি সেভেন, আনলাকি থার্টিন ইত্যাদি) বিশ্বাস করা শির্ক—ঈমানভঙ্গের কারণ!
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো কিছু অশুভ বিশ্বাস করা শির্ক।’’ কথাটি তিনি তিনবার বলেন। [তিরমিযি: ৪/১৬০, ইবনু হিব্বান: ১৩/৪৯১ (সহিহ)]
.
আল্লাহর রাসূল অন্যত্র বলেন, ‘‘অশুভ বা অমঙ্গল ভেবে যে তার কর্ম বা যাত্রা পরিত্যাগ করলো, সে শির্ক করলো।’’ [মুসনাদ আহমাদ: ৭০৪৫, সহিহাহ: ৩/১৩৯ (সহিহ)]
.
শায়খ আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহ. বলেন, ‘যদি কেউ বিশ্বাস করেন যে, অমুক দিবস, রাত্রি, মাস, তিথি, সময়, বস্তু, দ্রব্য বা ব্যক্তির মধ্যে শুভ বা অশুভ কোন প্রকারের ক্ষমতা বা এরূপ প্রভাব কাটানোর ক্ষমতা আছে, তবে তা শির্ক আকবার (বড় শির্ক, যার মাধ্যমে মানুষ মুশরিক হয়ে যায়) বলে গণ্য হবে। আর যদি এরূপ বিশ্বাস পোষণ না করেন, বরং সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, ভালো-মন্দ, শুভ-অশুভ—সকল কিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ, কিন্তু কথাচ্ছলে এরূপ কিছু বলে ফেলেন, তবুও তা শির্ক আসগার (ছোট শির্ক) বলে গণ্য হবে। (তবে, ব্যক্তি মুশরিক হবে না)।’ [কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকীদা, পৃষ্ঠা: ৩৮৩]
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের এই সংক্রান্ত ভুল চিন্তার সংশোধন করে দিতেন। যেমন: হাদিসে এসেছে, ‘‘পেঁচা অশুভ নয়।’’ [আবু দাউদ: ৩৯২১, সহিহ] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘‘ভূত-প্রেত বা দৈত্য বলে কিছু নেই।’’ [আবু দাউদ: ৩৯১৩, হাসান সহিহ]
.
ঠিক সেভাবে হস্তরেখা নির্ণয়, রাশিফল বলা, আকিক পাথরের বিশেষ ক্ষমতা, শনি ও মঙ্গল বারকে অপয়া মনে করা, অমাবস্যায় অমঙ্গল ধারণা করা, প্রথম কাস্টমারকে বাকি দিলে ব্যবসা লস হবে ভাবা, যাত্রাপথে হোঁচট খেলে অকল্যাণের আশঙ্কা ইত্যাদি সবই ভিত্তিহীন।
.
আবদুল্লাহ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘কোন বস্তুকে অলক্ষুণে মনে করা ‘শিরক’, কোন বস্তুকে অলক্ষুণে মনে করা শিরক।’’ একথা তিনি তিনবার বললেন। আমাদের কারো মনে কিছু জাগা স্বাভাবিক, কিন্তু আল্লাহর উপর ভরসা করলে তিনি তা দূর করে দিবেন।’’ [আবু দাউদ: ৩৯১০, সহিহ]
.
মাসিক আল কাউসারের ‘প্রচলিত ভুল’ ফিচারে মাওলানা আবদুল মালেক হাফিযাহুল্লাহ্ লিখেছেন, ‘কোনো মাস, দিন বা রাতকে অশুভ মনে করা, বিশেষ কোনো সময়কে বিশেষ কাজের জন্য অশুভ ও অলক্ষুণে মনে করা—সবই জাহেলিয়াতের কুসংস্কার। এর সাথে মুসলিমের কোনো সম্পর্ক নেই।’ [ডিসেম্বর, ২০১৮ সংখ্যা]
.
যারা ভুলক্রমে শুভ-অশুভ ইত্যাদি কোনো শির্কি কথা বলে ফেলবে, সে কাফফারা (প্রায়শ্চিত্য) হিসেবে পড়বে—
.
اللَّهُمَّ لَا خَيْرَ إِلَّا خَيْرُكَ، وَلَا طَيْرَ إِلَّا طَيْرُكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ
.
[আল্লাহুম্মা লা খাইরা ইল্লা খায়রুকা, ওয়ালা ত্বয়রা ইল্লা ত্বয়রুকা, ওয়ালা ইলাহা গাইরুকা]
.
অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার কল্যাণ ছাড়া কোন কল্যাণ নেই; আপনার শুভাশুভত্ব ছাড়া কোন শুভ-অশুভ নেই এবং আপনি ছাড়া কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই। [সিলসিলা সহিহাহ: ৩/১৩৯]
.
আমাদের উচিত, অন্তত নিজের ফ্যামিলির যেসব সদস্য অজ্ঞতাবশত এরকম ভ্রান্ত আকিদা-বিশ্বাস লালন করছেন, তাদেরকে সতর্ক করা। পাশাপাশি নিজের পরিচিত-অপরিচিত সবার কাছেই এই বিভ্রান্তিকর বিশ্বাসের ব্যাপারে সতর্ক বার্তা পৌঁছে দেওয়া। তবে তা করতে হবে অত্যন্ত আন্তরিকতা, দরদ, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে।
.
#সহিহ_আকিদা

#বিশুদ্ধ_ঈমান (৮ম পর্ব)

 

ইসলামে বদ নজর (evil eye) বলতে কি আদৌ কিছু আছে? থাকলে এর প্রতিকার কী?
▬▬▬▬▬▬◄◖❂◗►▬▬▬▬▬▬
জি, বদ নজর একটি সত্য বিষয়। এটার উপর বিশ্বাস রাখা ফরজ। কারণ এটি অসংখ্য বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এটি অস্বীকার করা কুফরি।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা বদ নজর থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো। কেননা বদনজর সত্য।’’ [ইবনে মাজাহ: ৩৫০৮, (সহিহ)]
.
আল কুরআনেও বদনজরের প্রসঙ্গ এসেছে একাধিক স্থানে। তার একটি নিচের আয়াতে—
.
‘‘(ইয়াকুব আ.) বললেন, হে আমার প্রিয় সন্তানগণ! তোমরা (শহরে) কোনো একটি প্রবেশ পথ দিয়ে (একসাথে) সবাই প্রবেশ করো না বরং বিভিন্ন প্রবেশপথ দিয়ে প্রবেশ করো। আমি তোমাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা কোন বিপদ থেকে রক্ষা করতে পারবো না।’’ [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৬৭]
.
ইসলামের শ্রেষ্ঠ মুফাসসিরগণ তথা কা’ব, মুজাহিদ, যাহহাক, কাতাদা এবং সুদ্দি (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেছেন যে, ইয়াকুব (আ.) বদ নজরের ভয়ে এমনটি বলেছিলেন। কেননা তার সন্তানরা খুবই সুন্দর সুঠাম দেহের অধিকারী ছিলেন। বদনজরের ক্রিয়া বাস্তব। তবে, একই সাথে তিনি এটিও বলেছেন যে, এ ব্যবস্থা আল্লাহর তাকদিরকে প্রতিহত করতে পারবে না। তিনি যা চাবেন তাই হবে। [ইমাম ইবনু কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আযিম: ২/৪৮৫]
.
বদ নজর কত ভয়ানক বিষয় তা নিচের দুটো হাদিস থেকে সহজে বোঝা যায়।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘বদ নজর মানুষকে কবর পর্যন্ত পৌঁছে দেয় এবং উটকে ডেগচি পর্যন্ত।’’ [সহিহ আল জামে’: ১২৪৯ (সহিহ)]
.
অন্যত্র তিনি বলেন, ‘‘বদ নজর (এর খারাপ প্রভাব) সত্য। এমনকি যদি কোন বস্তু তাকদিরকে অতিক্রম করতো, তবে বদ নজর তা অতিক্রম করতো। সুতরাং তোমাদের যখন (এর প্রভাবমুক্ত হওয়ার জন্যে বিশেষ) গোসল করতে বলা হয়, তখন তোমরা গোসল কর।’’ [সহিহ মুসলিম: ২১৮৮, সহিহ বুখারি: ৫৭৪০]
.
অতএব, বদ নজর থেকে বাঁচতে বিশেষ গোসল করতে হবে (যা উপরের হাদিসে এসেছে) এবং শরিয়তসম্মত ঝাড়-ফুঁক করতে হবে।
.
আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বদ নজর থেকে বাঁচার জন্যে ঝাড়-ফুঁক করার নির্দেশ দিতেন।’ [সহিহ বুখারি: ১০/১৭০, সহিহ মুসলিম: ২১৯৫]
.
#সহিহ_আকিদা
.

©Tasbeeh
Page link- https://www.facebook.com/TasbeehZikr/

.

©Nusus
Page link- https://www.facebook.com/FromNusus

.

>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ


📷 তাওহিদ বা ইমান ভঙ্গকারী বিষয়সমূহ :

অজু-সালাত-সিয়ামসহ বিভিন্ন ইবাদত বিনষ্ট হওয়ার যেমন কিছু কারণ আছে, ঠিক তেমনই সকল ইবাদতের মূল ইমান বা তাওহিদ ভঙ্গেরও কিছু কারণ আছে। কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের বিষয় হলো, বিভিন্ন আমল ভঙ্গের কারণ আমাদের জানা থাকলেও সকল আমলের ভিত্তিমূল ইমান ভঙ্গের কারণগুলো আমরা অধিকাংশ মুসলিমই জানি না; অথচ ওগুলোর চাইতে এটা জানার গুরুত্ব অনেকগুণে বেশি। কেননা, যে জিনিস যত দামী হয়, তা বিনষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করাটাও তত গুরুত্বপূর্ণ হয়। দুনিয়ার জীবনে একজন মুমিনের জন্য যেহেতু ইমানই সবচেয়ে দামী ও গুরুত্বপূর্ণ, তাই এটা বিনষ্ট হওয়ার কারণসমূহ জেনে তা থেকে ইমানকে রক্ষা করাটাও তার কাছে সবচেয়ে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য হবে—এটাই স্বাভাবিক।

ইমান ভঙ্গের কারণ কয়টি, এ নিয়ে অনেক আলিম ও গবেষকের মাঝে সংখ্যাগত কিছু মতপার্থক্য থাকলেও এটা মৌলিক কোনো মতভিন্নতা নয়। বস্তুত গুরুত্বের বিচারে কেউ কমসংখ্যক কারণগুলো উল্লেখ করেন আর কেউ একটু বিস্তারিত বলতে গিয়ে প্রকার বৃদ্ধি করেন। কারও আলোচনায় একটার মধ্যেই একাধিক কারণ চলে আসে, আবার কারও আলোচনায় প্রত্যেকটিকে আলাদা আলাদা করে বিচার করা হয়। এজন্যই বিভিন্নজনের কথা বা আলোচনায় সংখ্যাগত কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। অবশ্য দুয়েকটি বিষয়ে মৌলিক মতভিন্নতাও রয়েছে। আমরা সব কারণ যাচাই-বাছাই করে ও এতে পরিমার্জন-পরিশোধন করে মোট দশটি কারণ নির্ণয় করেছি। এ দশটির মাঝেই ইমান ভঙ্গের মৌলিক সব কারণ চলে এসেছে। ইমান ভঙ্গের এ দশটি কারণ মুখস্ত করলে ইমানের পরিচর্যা করা এবং ইমান বিনষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সহজ হবে, ইনশাআল্লাহ। আমরা নিম্নে সংক্ষিপ্তাকারে কারণগুলো উল্লেখ করছি।

📷 এক : গাইরুল্লাহর ইবাদত করা

এটা হলো উলুহিয়্যা বা কাউকে উপাস্য বানানোর ক্ষেত্রে শিরক। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর পূজা করা বা কাউকে ইবাদতের উপযুক্ত মনে করা—এটা কুফর হওয়ার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। কোনো মুমিন গাইরুল্লাহর ইবাদত বা তাতে বিশ্বাসী হলে তার ইমান বিনষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ. لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
‘বলুন, আমার সালাত, আমার ইবাদাত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগতসমূহের রব একমাত্র আল্লাহরই জন্যে। তাঁর কোনো শরিক নেই। আর আমাকে এ আদেশই করা হয়েছে এবং আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আমিই প্রথম।’ (সুরা আল-আনআম : ১৬২-১৬৩)

শাইখ সুলাইমান ইবনে আব্দুল্লাহ রহ. বলেন :
وقد نص العلماء من أهل المذاهب الأربعة، وغيرهم في باب حكم المرتد، على أن من أشرك بالله فهو كافر، أي: عبد مع الله غيره بنوع من أنواع العبادات.
‘চার মাজহাবের উলামায়ে কিরাম এবং অন্য সকলেই ‘মুরতাদের হুকুম’ অধ্যায়ে বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শিরক করবে, অর্থাৎ আল্লাহর সাথে অন্য কারও ইবাদত করবে, চাই তা যে প্রকারের ইবাদতই হোক না কেন, সে কাফির।’ (তাইসিরু আজিজিল হামিদ : ১৮৮, প্রকাশনী : আল-মাকতাবুল ইসলামি, বৈরুত)

📷 দুই : রুবুবিয়্যার ক্ষেত্রে শিরক

রুবুবিয়্যার ক্ষেত্রে শিরক হলো, এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, সৃষ্টির কর্তৃত্বকারী আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ আছে। যেমনটি জাহিল লোকগণ অনেক অলিদের ব্যাপারে এ বিশ্বাস রাখে যে, তাদের হাতে বিভিন্ন বিষয়ের কর্তৃত্ব ও বিপদ দূর করার ক্ষমতা রয়েছে। অনুরূপ শিয়া ইমামিয়া, ইসমাইলিয়া ও বাতিনি সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে, সৃষ্টিজগতে তাদের ইমামদের অদৃশ্য ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব রয়েছে। এসব বিশ্বাস সব শিরকপূর্ণ। কোনো মুমিন এমন বিশ্বাস রাখতে পারে না। কেউ এমন বিশ্বাস রাখলে তার ইমান চলে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
‘আর আল্লাহ যদি তোমার ওপর কোনো কষ্ট আরোপ করেন, তিনি ছাড়া আর কেউ নেই, যে তা দূর করবে। আর আল্লাহ যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে এমন কেউ নেই, যে তাঁর অনুগ্রহ প্রতিহত করবে। তাঁর বান্দাদের মধ্যে তিনি যাকে ইচ্ছা কল্যাণ দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ইউনুস : ১০৭)

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
مَا يَفْتَحِ اللَّهُ لِلنَّاسِ مِنْ رَحْمَةٍ فَلَا مُمْسِكَ لَهَا وَمَا يُمْسِكْ فَلَا مُرْسِلَ لَهُ مِنْ بَعْدِهِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
‘আল্লাহ মানুষের প্রতি যে রহমত খুলে দেন, কেউ তা নিবারণ করতে পারে না এবং যা কিছু তিনি রুদ্ধ করেন, এমন কেউ নেই, যে তার পরে তা উন্মুক্ত করতে পারে। তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা ফাতির : ২)

আল্লাহ তাআলা অপর এক আয়াতে বলেন :
قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَا يَمْلِكُونَ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ وَمَا لَهُمْ فِيهِمَا مِنْ شِرْكٍ وَمَا لَهُ مِنْهُمْ مِنْ ظَهِيرٍ
‘বলুন, তোমরা ওদেরকে ডাকো, যাদেরকে তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে ইলাহ মনে করো। ওরা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে অণু পরিমাণ কিছুর মালিক নয় এবং এতদুভয়ে ওদের কোনো অংশ নেই। আর ওদের কেউ তাঁর সহায়কও নয়।’ (সুরা সাবা : ২২)

📷 তিন : দ্বীনের অকাট্য বিধানকে অস্বীকার করা

একজন মুমিনের জন্য দ্বীনের অকাট্য সব বিধানের ব্যাপারে স্বীকৃতি থাকা আবশ্যক। যদি কেউ দ্বীনের এমন অকাট্য কোনো বিষয়ে মিথ্যারোপ বা অস্বীকৃতি প্রদর্শন করে, তাহলে তৎক্ষণাৎ তার ইমান বিনষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الظَّالِمُونَ
‘তাঁর চেয়ে বড় জালিম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কিংবা আল্লাহর আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে? নিশ্চয়ই অপরাধীরা সফলকাম হবে না।‘ (সুরা আল-আনআম : ২১)

আল্লামা ইবনে আবুল ইজ রহ. বলেন :
فَلَا خِلَافَ بَيْنَ الْمُسْلِمِينَ أَنَّ الرَّجُلَ لَوْ أَظْهَرَ إِنْكَارَ الْوَاجِبَاتِ الظَّاهِرَةِ الْمُتَوَاتِرَةِ، وَالْمُحَرَّمَاتِ الظَّاهِرَةِ الْمُتَوَاتِرَةِ، وَنَحْوِ ذَلِكَ، فَإِنَّهُ يُسْتَتَابُ، فَإِنْ تَابَ، وَإِلَّا قُتِلَ كَافِرًا مُرْتَدًّا
‘মুসলমানদের মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো বিরোধ নেই যে, কোনো ব্যক্তি যদি দ্বীনের অকাট্য ও সুস্পষ্ট ওয়াজিব বা হারাম বা এ জাতীয় (অকাট্য) কোনো বিধানকে অস্বীকার করে; তাহলে তাকে তাওবা করতে বলা হবে। সুতরাং তাওবা করলে তো ভালো; নতুবা তাকে কাফির ও মুরতাদ হিসেবে হত্যা করা হবে।’ (শারহুল আকিদাতিত তাহাবিয়্যা : ২/৪৩৩ (মুআসসাসাতুর রিসালা, বৈরুত)

আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَجَحَدُوا بِهَا وَاسْتَيْقَنَتْهَا أَنْفُسُهُمْ ظُلْمًا وَعُلُوًّا فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِينَ
‘তারা (ইহুদিরা) অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন করে নির্দেশগুলো প্রত্যাখ্যান করল; যদিও তাদের অন্তর এগুলোকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছিল। অতঃপর দেখুন, বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কেমন হয়েছিল।’ (সুরা আন-নামল : ১৪)

আল্লাহ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করেন :
قَدْ نَعْلَمُ إِنَّهُ لَيَحْزُنُكَ الَّذِي يَقُولُونَ فَإِنَّهُمْ لَا يُكَذِّبُونَكَ وَلَكِنَّ الظَّالِمِينَ بِآيَاتِ اللَّهِ يَجْحَدُونَ
‘অবশ্যই আমি জানি, তারা যা বলে তা তোমাকে নিশ্চয়ই কষ্ট দেয়। কিন্তু তারা তো (কেবল) তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে না; বরং এই জালিমরা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকেই অস্বীকার করে।’ (সুরা আল-আনআম : ৩৩)

আল্লাহ আরও তাআলা বলেন :
مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
‘যার ওপর জবরদস্তি করা হয় এবং তার অন্তর বিশ্বাসে অটল থাকে, সে ব্যতীত যে কেউ বিশ্বাসী হওয়ার পর আল্লাহতে অবিশ্বাসী হবে এবং কুফরির জন্য মন উম্মুক্ত করে দেবে, তাদের ওপর আপতিত হবে আল্লাহর গজব এবং তাদের জন্যে রয়েছে মহাশাস্তি।’ (সুরা আন-নাহল : ১০৬)

📷 চার : হারামকে হালাল বা হালালকে হারাম মনে করা

শরিয়তের হারামকে হারাম জানা আর হালালকে হালাল জানা ইমানের জন্য অন্যতম শর্ত। অতএব, কেউ যদি দ্বীনের প্রমাণিত কোনো হারামকে হালাল দাবি করে বা অন্তরে হালাল মনে করে কিংবা প্রমাণিত কোনো হালালকে হারাম দাবি করে বা অন্তরে হারাম বলে বিশ্বাস করে, তাহলে তার ইমান চলে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
قَاتِلُوا الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلَا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ
‘তোমরা যুদ্ধ করো আহলে কিতাবের ওই লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও হাশর দিবসের প্রতি ইমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম; (তাদের সাথে ততক্ষণ যুদ্ধ করো) যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিজিয়া প্রদান করে।’ (সুরা আত-তাওবা : ২৯)

ইমাম ইবনে আব্দিল বার রহ. বর্ণনা করেন :
وَقَالَ عَدِيُّ بْنُ حَاتِمٍ: أَتَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي عُنُقِي صَلِيبٌ فَقَالَ لِي: يَا عَدِيَّ بْنَ حَاتِمٍ: أَلْقِ هَذَا الْوَثَنَ مِنْ عُنُقِكَ. وَانْتَهَيْتُ إِلَيْهِ وَهُوَ يَقْرَأُ سُورَةَ بَرَاءَةٍ حَتَّى أَتَى عَلَى هَذِهِ الْآيَةِ {اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ} [التوبة: [31 قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا لَمْ نَتَّخِذْهُمْ أَرْبَابًا، قَالَ: بَلَى، أَلَيْسَ يُحِلُّونَ لَكُمْ مَا حُرِّمَ عَلَيْكُمْ فَتُحِلُّونَهُ، وَيُحَرِّمُونَ عَلَيْكُمْ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكُمْ فَتُحَرِّمُونَهُ؟ فَقُلْتُ: بَلَى، قَالَ: تِلْكَ عِبَادَتُهُمْ.
‘আদি বিন হাতিম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, গলায় ক্রুশ ঝুলানো অবস্থায় আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আসলাম। তখন তিনি বললেন, হে হাতিমপুত্র আদি, তোমার গলা থেকে এ মূর্তি ফেলে দাও। তিনি সুরা তাওবা তিলাওয়াতকালীন আমি তাঁর নিকট পৌঁছলাম। তিনি সুরা তাওবা তিলাওয়াত করতে করতে যখন এ আয়াত اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ [‘তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের পণ্ডিত ও সংসার বিরাগীদেরকে তাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে।’ সুরা তাওবা : ৩১] পর্যন্ত পৌঁছলেন তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমরা তো তাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করিনি! তিনি বললেন, হ্যাঁ করেছ। তোমাদের জন্য যা হারাম করা হয়েছিল তারা কি তা হালাল করেনি, যদ্দরুন তোমরাও তা হালাল বলে গ্রহণ করেছ? আর তোমাদের জন্য যা হালাল করা হয়েছিল তারা কি তা হারাম করেনি, যদ্দরুন তোমরাও তা হারাম বলে গ্রহণ করেছ? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, এটাই ছিল তাদের ইবাদত ও উপাসনা।’ (জামিউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাজলিহি : ২/৯৭৫, হা. নং ১৮৬২, প্রকাশনী : দারু ইবনিল জাওজি, সৌদিআরব)

শাইখ সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রহ. বলেন :
وأما استحلال المحرمات المجمع على حرمتها أو بالعكس فهو كفر اعتقادي لأنه لا يجحد تحليل ما أحل الله ورسوله أو تحريم ما حرم الله ورسوله إلا معاند للإسلام ممتنع من التزام الأحكام غير قابل للكتاب والسنة وإجماع الأمة
‘আর ঐকমত্যপূর্ণ হারামকে হালাল মনে করা বা এর উল্টো ঐকমত্যপূর্ণ হালালকে হারাম মনে করা কুফরে ইতিকাদি বা বিশ্বাসগত কুফর। কেননা, একমাত্র ইসলামবিদ্বেষী, বিধিবিধানের বাধ্যবাধকতা অস্বীকারকারী ও কুরআন-সুন্নাহ-ইজমা অগ্রাহ্যকারীরাই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক হালালকে হালাল আর হারামকে হারাম মানতে অস্বীকৃতি জানায়।’ (আত-তাওজিহ আন তাওহিদিল খাল্লাক : পৃ. নং ৯৮, প্রকাশনী : দারু তাইয়িবা, রিয়াদ)

📷 পাঁচ : দ্বীনবিমুখ বা ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া

ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া অর্থ দ্বীনের ব্যাপারে পুরোপুরি বিমুখতা প্রদর্শন করা। এমন বলা বা বিশ্বাস করা যে, আমার সাথে আল্লাহ ও রাসুলের বা ইসলামের কোনো শত্রুতাও নেই আবার কোনো বন্ধুত্বও নেই। আমি সবার ক্ষেত্রে সমতায় বিশ্বাসী ও সব ধর্মকেই সম্মানের চোখে দেখি। এমন কথা বলা বা বিশ্বাস করা নিঃসন্দেহে কুফরি।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُودًا
‘তোমাদের যখন বলা হয়, আল্লাহ তাআলা যা অবতরণ করেছেন তার দিকে এবং রাসুলের দিকে এসো, তখন মুনাফিকদের তুমি দেখবে যে, তারা তোমার নিকট হতে একেবারে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।’ (সুরা আন-নিসা : ৬১)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন :
وَيَقُولُونَ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالرَّسُولِ وَأَطَعْنَا ثُمَّ يَتَوَلَّى فَرِيقٌ مِنْهُمْ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَمَا أُولَئِكَ بِالْمُؤْمِنِينَ. وَإِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ مُعْرِضُونَ. وَإِنْ يَكُنْ لَهُمُ الْحَقُّ يَأْتُوا إِلَيْهِ مُذْعِنِينَ. أَفِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ أَمِ ارْتَابُوا أَمْ يَخَافُونَ أَنْ يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَرَسُولُهُ بَلْ أُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
‘তারা বলে, আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ইমান আনলাম এবং আমরা আনুগত্য স্বীকার করলাম। কিন্তু এরপর ওদের একদল বিমুখতা প্রদর্শন করে। ওরা নিশ্চিত মুমিন নয়। যখন তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কাছে তাদের মাঝে ফয়সালা করে দেওয়ার জন্য আহবান করা হয়, তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর যদি তাদের প্রাপ্য থাকে, তাহলে তারা বিনীতভাবে রাসুলের নিকট ছুটে আসে। তাদের অন্তরে কি ব্যাধি আছে? না তারা সংশয় পোষণ করে? না তারা ভয় করে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ওদের প্রতিও জুলুম করবেন? বরং ওরাই তো জালিম।’ (সুরা আন-নুর : ৪৭-৫০)

ইমাম ইবনে কাইয়িম জাওজিয়া রহ. বলেন :
وَأَمَّا كُفْرُ الْإِعْرَاضِ فَأَنْ يُعْرِضَ بِسَمْعِهِ وَقَلْبِهِ عَنِ الرَّسُولِ، لَا يُصَدِّقُهُ وَلَا يُكَذِّبُهُ، وَلَا يُوَالِيهِ وَلَا يُعَادِيهِ، وَلَا يُصْغِي إِلَى مَا جَاءَ بِهِ الْبَتَّةَ
‘কুফরে ইরাজ বা বিমুখতামূলক কুফর হলো, কর্ণ ও অন্তর দিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিমুখতা প্রদর্শন করা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সত্যায়নও না করা, আবার তার প্রতি শত্রুতাও না রাখা এবং তাঁর আনীত দ্বীনের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপও না করা।’ (মাদারিজুস সালিকিন : ১/৩৪৭, প্রকাশনী : দারুল কিতাবিল আরাবিয়্যি, বৈরুত)

📷 ছয় : দ্বীনের কোনো বিধান অপছন্দ করা

ইমান ঠিক থাকার জন্য দ্বীনের সকল বিধানের প্রতি নিঃশর্ত সন্তুষ্টি ও আনুগত্য প্রকাশ আবশ্যক। অতএব কেউ যদি কোনো দ্বীনের সুসাব্যস্ত কোনো বিধানের ব্যাপারে নাক ছিটকায় বা কোনো আইনের বিষয়ে অন্তরে বিদ্বেষ পোষণ করে, তাহলে তা যত ছোট বিধান-ই হোক না কেন, এতে তার ইমান বিনষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَالَّذِينَ كَفَرُوا فَتَعْسًا لَهُمْ وَأَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ. ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ
‘যারা কুফরি করেছে, তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ এবং তিনি তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দেবেন। এটা এজন্য যে, আল্লাহ তাআলা যা অবতরণ করেছেন, ওরা তা অপছন্দ করে। সুতরাং আল্লাহ তাদের কর্ম নিষ্ফল করে দেবেন।’ (সুরা মুহাম্মাদ : ৮-৯)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. শরিয়তের কোনো বিধান অপছন্দ করাকে ‘নাওয়াকিজুত তাওহিদ’ বা তাওহিদ ভঙ্গকারী বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণ উল্লেখ করে বলেন :
لأنه يعترف لله ورسوله بكل ما أخبر به ويصدق بكل ما يصدق به المؤمنون لكنه يكره ذلك ويبغضه ويسخطه لعدم موافقته لمراده ومشتهاه ويقول: أنا لا أقر بذلك ولا ألتزمه وأبغض هذا الحق وأنفر عنه فهذا نوع غير النوع الأول وتكفير هذا معلوم بالاضطرار من دين الإسلام والقرآن مملوء من تكفير مثل هذا النوع
‘কেননা, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রদানকৃত সকল সংবাদ স্বীকার করে; মুমিনরা যা সত্যায়ন করে, সেও তার সবই সত্যায়ন করে; এতৎসত্ত্বেও তাঁর প্রবৃত্তি ও কামনা বাসনার চাহিদা মোতাবেক না হওয়ার কারণে সে তা অপছন্দ করে, এর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে এবং অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। তখন সে বলে, আমি এটার স্বীকৃতি দেবো না এবং আঁকড়ে ধরব না। আমি এই হকের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করি এবং এটাকে ঘৃণা করি। এটা প্রথম প্রকার ভিন্ন আরেকটি প্রকার। এই ব্যক্তির কুফরি ইসলামের সুনিশ্চিত দলিল দ্বারা প্রমাণিত এবং পুরো কুরআনে এ প্রকারের কুফরে লিপ্ত ব্যক্তিকে কাফির বলার বিষয়টি ভরপুর।’ (আস-সারিমুল মাসলুল : ৫২২, প্রকাশনী : আল-হারাসুল অতনি, সৌদিআরব)

📷 সাত : আল্লাহ, রাসুল ও ইসলাম নিয়ে বিদ্রুপ ও গালিগালাজ করা

আল্লাহ, রাসুল ও ইসলামের বড় থেকে ছোট যেকোনো বিধানের ব্যাপারে যদি কেউ ঠাট্টা-বিদ্রুপ বা তুচ্ছ জ্ঞান করে কিংবা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে গালি দেয় তাহলে তৎক্ষণাৎ তার ইমান বিনষ্ট হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَحْذَرُ الْمُنَافِقُونَ أَنْ تُنَزَّلَ عَلَيْهِمْ سُورَةٌ تُنَبِّئُهُمْ بِمَا فِي قُلُوبِهِمْ قُلِ اسْتَهْزِئُوا إِنَّ اللَّهَ مُخْرِجٌ مَا تَحْذَرُونَ. وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ. لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ إِنْ نَعْفُ عَنْ طَائِفَةٍ مِنْكُمْ نُعَذِّبْ طَائِفَةً بِأَنَّهُمْ كَانُوا مُجْرِمِينَ
‘মুনাফিকরা আশঙ্কা করে এমন সুরা না আবার অবতীর্ণ হয়ে যায়, যা তাদের অন্তরের কথা ব্যক্ত করে দেবে। আপনি বলে দিন, তোমরা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে থাকো। তোমরা যা আশঙ্কা করছ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা প্রকাশ করে দেবেন। আপনি তাদেরকে প্রশ্ন করলে নিশ্চয়ই তারা বলবে, আমরা তো আলাপ-আলোচনা ও ক্রীড়া-কৌতুক করছিলাম। আপনি বলে দিন, তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসুলকে বিদ্রুপ করছিলে? ছলনা করো না; তোমরা ইমান আনার পর কুফরি করেছ। তোমাদের মধ্যে কোনো দলকে ক্ষমা করলেও অন্য দলকে শাস্তি দেবো; এজন্য যে, তারা ছিল অপরাধী।’ (সুরা আত-তাওবা : ৬৪-৬৬)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন :
وهذا نص في أن الاستهزاء بالله وبآياته وبرسوله كفر فالسب المقصود بطريق الأولى
‘আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রুপ কুফরি হওয়ার ব্যাপারে এই আয়াতটি সুস্পষ্ট। তাহলে গালি দেওয়ার ব্যাপারটি তো আর বলারই অপেক্ষা রাখে না।’ (আস-সারিমুল মাসলুল : ৩১, প্রকাশনী : আল-হারাসুল অতনি, সৌদিআরব)

তিনি আরও বলেন :
إن سب الله أو سب رسوله كفر ظاهرا وباطنا وسواء كان الساب يعتقد أن ذلك محرم أو كان مستحلا له أو كان ذاهلا عن اعتقاده هذا مذهب الفقهاء وسائر أهل السنة القائلين بأن الإيمان قول وعمل. وقد قال الإمام أبو يعقوب إسحاق بن إبراهيم الحنظلي المعروف بابن راهويه وهو أحد الأئمة يعدل بالشافعي وأحمد: قد أجمع المسلمون أن من سب الله أو سب رسوله عليه الصلاة والسلام أو دفع شيئا مما أنزل الله أو قتل نبيا من أنبياء الله أنه كافر بذلك وإن كان مقرا بما أنزل الله.
‘যদি কেউ আল্লাহ বা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে গালি দেয়; তাহলে সে ভেতর-বাহির উভয় দিক থেকে কাফির হয়ে যাবে। চাই গালিদাতা এটা হারাম মনে করুক বা হালাল মনে করুক অথবা কোনো ধরনের বিশ্বাসই না রাখুক। এটাই ফুকাহা ও আহলুস সুন্নাহর মাজহাব, যারা এ কথার প্রবক্তা যে, ইমান হলো কথা ও কাজের নাম। ইমাম শাফিয়ি রহ. ও ইমাম আহমাদ রহ.-এর সমপর্যায়ভুক্ত প্রখ্যাত ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুইয়া রহ. বলেন, মুসলমানদের এ ব্যাপারে ইজমা রয়েছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ বা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে গালি দেবে, সে কাফির হয়ে যাবে; যদিও সে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তা স্বীকার করে।’ (আস-সারিমুল মাসলুল : ৫১২, প্রকাশনী : আল-হারাসুল অতনি, সৌদিআরব)

📷 আট : আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও কাছে প্রার্থনা করা

আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোনো জীবিত বা মৃত ব্যক্তির নিকট সরাসরি কোনো কিছু প্রার্থনা করা সুস্পষ্ট শিরক, যা মানুষের ইমান বিনষ্ট করে দেয়। যেমন : পির-আউলিয়ার কাছে সন্তান চাওয়া, কোনো কবরবাসীর কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়া ইত্যাদি।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ. وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
‘আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও আহবান কোরো না, যা তোমার উপকারও করে না, অপকারও করে না। কারণ, এটা করলে তো তুমি সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। আর আল্লাহ যদি তোমার ওপর কোনো কষ্ট আরোপ করেন, তিনি ছাড়া আর কেউ নেই, যে তা দূর করবে। আর আল্লাহ যদি তোমার কল্যাণ চান, তবে এমন কেউ নেই, যে তাঁর অনুগ্রহ প্রতিহত করবে। তাঁর বান্দাদের মধ্যে তিনি যাকে ইচ্ছা কল্যাণ দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ইউনুস : ১০৬-১০৭)

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন :
فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا
‘আল্লাহর সাথে অপর কাউকে ডেকো না।’ (সুরা আল-জিন : ১৮)

আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন :
لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ لا يَسْتَجِيبُونَ لَهُمْ بِشَيْءٍ
‘সত্যের আহবান একমাত্র তাঁরই। আর যারা তাঁকে ছাড়া অন্যদের ডাকে, তারা তাদের আহবানে কোনোই সাড়া প্রদান করে না।’ (সুরা আর-রাদ : ১৪)

আল্লামা শাওকানি রহ. বলেন :
وإخلاص التوحيد لا يتم إلا بأن يكون الدعاء كله لله، والنداء، والاستغاثة، والرجاء، واستجلاب الخير، واستدفاع الشر له ومنه لا لغيره ولا من غيره
‘সমস্ত দুআ বা প্রার্থনা আল্লাহর জন্য হওয়ার আগ পর্যন্ত তাওহিদ খাঁটি হতে পারে না। আহবান, সাহায্য-প্রার্থনা, আশা-আকাঙ্খা, কল্যাণ চাওয়া এবং অকল্যাণ দূর করতে চাওয়া ইত্যাদি আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহরই পক্ষ থেকে। অন্যের জন্য নয়, অন্যের পক্ষ থেকেও নয়। (আল-ফাতহুর রাব্বানি : ১/৩৩৮, প্রকাশনী : মাকতাবাতুল জাইলিল জাদিদ, সানআ)

তবে যেসব বিষয়ে আল্লাহ মাখলুককে সক্ষমতা দান করেছেন সেসব ক্ষেত্রে মাখলুককে মাধ্যম মনে করে তার সাহায্য চাওয়াতে কোনো সমস্যা নেই। যেমন কেউ গর্তে পড়ে চিৎকার করে বলতে লাগল, ভাই, আমাকে বাঁচাও, আমাকে সাহায্য করো। এ ঘটনায় তাকে সাহায্য করার মতো শক্তি ও সামর্থ্য আল্লাহ মাখলুককে দান করেছেন; তাই এখানে অসিলা বা মাধ্যম হিসাবে মাখলুকের কাছে সাহায্য চাওয়া শিরক হবে না। এভাবে দুনিয়ার অন্যান্য কাজে একে অপরের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চাওয়া সম্পূর্ণরূপে জায়িজ। এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কিরামের ইজমা রয়েছে।

‘আল-মাওস্আুতুল ফিকহিয়্যা’য় বলা হয়েছে :
اتَّفَقَ الْعُلَمَاءُ عَلَى أَنَّ الاِسْتِغَاثَةَ لِدَفْعِ شَرٍّ، أَوْ جَلْبِ نَفْعٍ مِمَّا يَمْلِكُهُ الْمَخْلُوقُ تَجُوزُ بِالْمَخْلُوقِينَ مُطْلَقًا، فَيُسْتَغَاثُ بِالْمُسْلِمِ وَالْكَافِرِ، وَالْبَرِّ وَالْفَاجِرِ
‘উলামায়ে কিরাম এ ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন যে, মাখলুকের সাধ্যের মধ্যে হলে তার কাছে কোনো অনিষ্ট দূরীকরণ বা কোনো সুবিধা অর্জনের জন্য সাহায্য চাওয়া বৈধ; চাই সে যে মাখলুকই হোক না কেন। অতএব, মুসলিম বা কাফির, ভালো বা মন্দ সব ধরনের লোকের কাছেই সাহায্য চাওয়া যাবে।’ (আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা : ৪/৩০, প্রকাশনী : অজারাতুল আওকাফ ওয়াশ শুয়ুনিল ইসলামিয়্যা, কুয়েত)

‘ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দায়িমা’-তে এসেছে :
الاستعانة بالحي الحاضر القادر فيما يقدر عليه جائزة، كمن استعان بشخص فطلب منه أن يقرضه نقودا أو استعان به في يده أو جاهه عند سلطان لجلب حق أو دفع ظلم.
‘জীবিত, উপস্থিত ও সক্ষম ব্যক্তির কাছে তার সাধ্যের মধ্যে হলে সাহায্য চাওয়া বৈধ। যেমন, কেউ কোনো লোকের কাছে সহযোগিতার জন্য কিছু টাকা ঋণ চাইল অথবা বাদশার নিকট কোনো অধিকার আদায় বা জুলুম দূর করতে তার শক্তি বা প্রভাবের সাহায্য কামনা করল।’ (ফাতাওয়াল লাজনাতিদ দায়িমা : ১/১৭৪, প্রকাশনী : রিয়াসাতু ইদারাতিল বুহুসিল ইলমিয়্যা ওয়াল ইফতা, রিয়াদ)

বুঝা গেল, মাখলুকের কাছের কোনো কিছু চাইলেই তা ইমান বিনষ্টের কারণ হবে না; বরং দেখতে হবে, যা চাওয়া হচ্ছে তা মাখলুকের সাধ্যে আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে তা শিরক হবে না এবং এতে কোনো সমস্যাও হবে না। যেমন লেনদেন, চলাফেরা, উঠাবসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরস্পরে সাহায্য চাওয়া। আর যদি তা বান্দার সাধ্যের বাইরে হয় তাহলে তা হবে শিরক এবং এর কারণে তার ইমান বিনষ্ট হয়ে যাবে। যেমন পিরের কাছে সন্তান চাওয়া, মৃত ব্যক্তির কাছে বিপদআপদ থেকে মুক্তি চাওয়া ইত্যাদি।

📷 নয় : আল্লাহর আইনের বিপরীতে ভিন্ন আইন প্রণয়ন

যেসব ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর স্পষ্ট বিধান ও আইন রয়েছে, সেসব আইনের বিপরীত ভিন্ন কোনো আইন প্রণয়ন করা সুস্পষ্ট কুফরি। কেননা, এটা শরিয়তের সাথে সরাসরি যুদ্ধ ও বিদ্রোহের নামান্তর। আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, শরিয়তের বিরুদ্ধে এমন সরাসরি অবস্থান পরিষ্কার কুফরি।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
‘তাদের কি এমন কিছু শরিক দেবতা আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের এমন সব বিধান তৈরি করে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না থাকত, তাহলে তাদের ব্যাপারে ফায়সালা হয়ে যেত। নিশ্চয়ই সীমালঙ্ঘনকারীদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সুরা আশ-শুরা : ২১)

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন :
وَالْإِنْسَانُ مَتَى حَلَّلَ الْحَرَامَ الْمُجْمَعَ عَلَيْهِ أَوْ حَرَّمَ الْحَلَالَ الْمُجْمَعَ عَلَيْهِ أَوْ بَدَّلَ الشَّرْعَ الْمُجْمَعَ عَلَيْهِ كَانَ كَافِرًا مُرْتَدًّا بِاتِّفَاقِ الْفُقَهَاءِ.
‘মানুষ যখন ঐকমত্যপূর্ণ হারামকে হালাল বানায় অথবা ঐকমত্যপূর্ণ হালালকে হারাম বানায় কিংবা ঐকমত্যপূর্ণ আইন পরিবর্তন করে, তখন সে সর্বসম্মতিক্রমে কাফির হয়ে যায়।’ (মাজমুউল ফাতাওয়া, ইবনু তাইমিয়া : ৩/২৬৭, প্রকাশনী : মাজমাউল মালিক ফাহাদ, মদিনা)

আল্লাহ তাআলা বলেন :
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا
‘তুমি কি তাদেরকে দেখোনি, যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে তারা বিশ্বাস করে? তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়; অথচ তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়।’ (সুরা আন-নিসা : ৬০)

শাইখ মুহাম্মাদ আমিন শানকিতি রহ. তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থীর কুফরি বর্ণনা করে বলেন :
وَمِنْ أَصْرَحِ الْأَدِلَّةِ فِي هَذَا: أَنَّ اللَّهَ جَلَّ وَعَلَا فِي سُورَةِ النِّسَاءِ بَيَّنَ أَنَّ مَنْ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى غَيْرِ مَا شَرَعَهُ اللَّهُ يَتَعَجَّبُ مِنْ زَعْمِهِمْ أَنَّهُمْ مُؤْمِنُونَ، وَمَا ذَلِكَ إِلَّا لِأَنَّ دَعْوَاهُمُ الْإِيمَانَ مَعَ إِرَادَةِ التَّحَاكُمِ إِلَى الطَّاغُوتِ بَالِغَةٌ مِنَ الْكَذِبِ مَا يَحْصُلُ مِنْهُ الْعَجَبُ ; وَذَلِكَ فِي قَوْلِهِ تَعَالَى: أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا [النساء : 60[
‘এ ব্যাপারে সবচেয়ে স্পষ্ট দলিল হলো, যা আল্লাহ তাআলা সুরা নিসায় সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন যে, যারা আল্লাহর আইন ভিন্ন অন্য আইনে বিচার প্রার্থনা করে, তারা নিজেদেরকে মুমিন দাবি করায় আল্লাহ তাআলা আশ্চর্যবোধ করেছেন। এটা কেবল এজন্যই যে, তাগুতের কাছে বিচার প্রার্থনা করা সত্ত্বেও মৌখিকভাবে তাদের ইমানের দাবি এমন চূড়ান্ত পর্যায়ের মিথ্যাবাদিতা, যাতে আশ্চর্য না হয়ে পারা যায় না। আর তা রয়েছে আল্লাহ তাআলার এই বাণীতে :
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا
“তুমি কি তাদেরকে দেখোনি, যারা দাবি করে যে, তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমার পূর্বে যা অবতীর্র্ণ হয়েছে, তাতে তারা বিশ্বাস করে? তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়। অথচ তাগুতকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট করতে চায়।” [সুরা নিসা : ৬০]’ ( আজওয়াউল বায়ান : ৩/২৫৯, প্রকাশনী : দারুল ফিকর, বৈরুত)

আল্লামা সাদি রহ. বলেন :
يعجب تعالى عباده من حالة المنافقين. {الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ} مؤمنون بما جاء به الرسول وبما قبله، ومع هذا {يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ} وهو كل من حكم بغير شرع الله فهو طاغوت. والحال أنهم {قد أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ} فكيف يجتمع هذا والإيمان؟ فإن الإيمان يقتضي الانقياد لشرع الله وتحكيمه في كل أمر من الأمور، فمَنْ زعم أنه مؤمن واختار حكم الطاغوت على حكم الله، فهو كاذب في ذلك.
‘মুনাফিকদের অবস্থা অবলোকনে আল্লাহ তাআলা আশ্চর্যবোধ করেছেন, যারা দাবি করে যে, তারা রাসুলের আনীত ও পূর্ববর্তী নবীদের আনীত কিতাবের প্রতি বিশ্বাসী; এতৎসত্ত্বেও তারা তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়। তাগুত হলো, প্রত্যেক ওই ব্যক্তি, যে আল্লাহর আইন ব্যতীত অন্য আইন দ্বারা বিচার ফয়সালা করে; অথচ তাদেরকে আদেশ দেওয়া হয়েছিল তাগুতকে অস্বীকার করার। সুতরাং এটা আর ইমান কীভাবে একত্র হতে পারে? কেননা, ইমানের দাবি হলো, আল্লাহর আইনের প্রতি আত্মসমর্পণ এবং সকল বিষয়ে আল্লাহকেই বিচারক ও বিধানদাতারূপে মেনে নেওয়া। সুতরাং যে নিজেকে মুমিন বলে দাবি করবে, আবার আল্লাহর হুকুমের ওপর তাগুতের হুকুমকে প্রাধান্য দেবে, সে ইমানের দাবিতে মিথ্যাবাদী।’ (তাফসিরুস সাদি : ১/১৮৪, প্রকাশনী : মুআসসাসাতুর রিসালা, বৈরুত)

📷 দশ : মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাগুতকে সাহায্য করা

মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফির ও তাগুতকে সাহায্য-সহযোগিতা করা বা তাদের পক্ষে গোয়েন্দাগিরি করা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার নামান্তর। আর যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, সে ইমান থেকে বের হয়ে কাফির হয়ে যাবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
‘হে ইমানদারগণ, তোমরা ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে কেউ তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করলে সে তাদেরই মধ্যে গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।’ (সুরা আল-মায়িদা : ৫১)

ইমাম ইবনে কাইয়িম জাওজিয়া রহ. বলেন :
أَنَّهُ سُبْحَانَهُ قَدْ حَكَمَ – وَلَا أَحْسَنَ مِنْ حُكْمِهِ – أَنَّهُ مَنْ تَوَلَّى الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى فَهُوَ مِنْهُمْ: {وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ} [المائدة: 51[، فَإِذَا كَانَ أَوْلِيَاؤُهُمْ مِنْهُمْ بِنَصِّ الْقُرْآنِ كَانَ لَهُمْ حُكْمُهُمْ،
‘আল্লাহ তাআলা ফায়সালা দিয়েছেন -আর তাঁর চেয়ে উত্তম ফায়সালাকারী কে আছে!- যে ব্যক্তি ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। “তোমাদের মধ্যে হতে যে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে।” [সুরা আল-মায়িদা : ৫১] সুতরাং যখন কুরআনের ভাষ্যানুসারে কাফিরদের বন্ধুরা কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত বলে সাব্যস্ত হলো, তখন তাদের হুকুমও কাফিরদের মতোই হবে।’ (আহকামু আহলিজ জিম্মাহ : ১/১৯৫, প্রকাশনী : রামাদি, দাম্মাম)

শায়খ বিন বাজ রহ. বলেন :
وقد أجمع علماء الإسلام على أن من ظاهر الكفار على المسلمين وساعدهم عليهم بأي نوع من المساعدة، فهو كافر مثلهم، كما قال الله سبحانه: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ} وقال تعالى: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ{
‘উলামায়ে ইসলাম এ ব্যাপারে একমত যে, যে ব্যক্তি মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে যেকোনো প্রকারে সাহায্য-সহযোগিতা করবে, সেও তাদের মতো কাফির। যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
“হে ইমানদারগণ, তোমরা ইহুদি-খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা পরস্পর পরস্পরের বন্ধু। আর তোমাদের মধ্যে যে তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, সেও তাদের মধ্যেই গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।” [সুরা আল-মায়িদা : ৫১]

আল্লাহ তাআলা আরও বলেন :
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
“হে ইমানদারগণ, তোমরা স্বীয় পিতা ও ভাইদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ কোরো না, যদি তারা ইমান অপেক্ষা কুফরকে ভালবাসে। আর তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে তারা সীমালঙ্ঘনকারী।” [সুরা আত-তাওবা : ২৩]’ (মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বাজ : ১/২৬৯, মুহাম্মাদ বিন সাদ আশ-শুওয়াইয়ির কর্তৃক সংকলিত ও প্রকাশিত)

আল্লাহ আমাদের শিরকমুক্ত তাওহিদের ওপর জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন এবং এমন বিশুদ্ধ তাওহিদের ওপরই মৃত্যু দান করুন।

_মুফতি তাররেকুজ্জামান (হাফিজাহুল্লাহ)

.

 

>> ঈমান ভাঙ্গার দশটি কারণ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরিল (হাফি.) (0.5 MB)

https://drive.google.com/file/d/1KByFOcEAH97S8g-zDCinQNpj00iv3GqP/view?usp=sharing

https://mega.nz/file/pywlWRCa#Hj4ETAulB8ghvCrcONelkVrTEYQ5Vq0WeKt1RZ7mmAs

.

ইলম অর্জন করুন—বিভ্রান্তি থেকে বাঁচুন :


সন্দেহ নেই যে, ইলম শেখার গুরুত্ব সব যুগেই রয়েছে। নর হোক বা নারী, প্রতিটি মুসলিমেরই নিজের জীবনের প্রাসঙ্গিক সকল বিষয়ের বিধিবিধান জানা ও তৎসংশ্লিষ্ট ইলম শিক্ষা করা ফরজ। কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের বিষয় হলো, বর্তমানে সাধারণ মাসআলা-মাসায়িল তো দূরে থাক, অনেক মানুষের তাওহিদ ও ইমানের মতো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরও প্রাথমিক জ্ঞান নেই। অথচ ইসলামের নামে বিদআত ও কুসংস্কার পালনে তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকে সবচেয়ে বেশি। তারা অল্পতেই জান্নাত পেতে চায়, কষ্ট না করেই কামনা করে মুক্তির। কিন্তু না, কক্ষনোই নয়। অবশ্যই এর জন্য তাদের শ্রম দিতে হবে, সময় দিতে হবে এবং নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করতে হবে। নইলে কিয়ামত দিবসে ‘আমি তো অমুকের বয়ান শুনে কিংবা অমুকের কথা শুনে এমনটা করেছি’ বলে পার পাওয়া যাবে না। বস্তুত যাচাই-বাছাই না করে ভুল জায়গায় শ্রম দেওয়া বোকামি বৈ কিছু নয়।


বর্তমান সময়ে বিশুদ্ধ ইলম অর্জন করা অধিক আমল করার চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত তাওহিদ, ইমান, আকিদা, ফিতান, মালাহিম, কিতাল, মাগাজি, হিজরত ইত্যাদি-সংক্রান্ত ইলম শেখাটা অনেক অনেক বেশি জরুরি। পাশাপাশি তাহারাত, সালাত, সিয়াম ও সামর্থ্যবানদের জন্য হজ, জাকাতসহ অন্যান্য জরুরি ইবাদতের মাসায়িল তো রয়েছেই। এগুলো যদি আপনি সঠিক সোর্স থেকে শেখার চিন্তা না করে কেবল অমুক-তমুকের বয়ান-বিবৃতিকেই যথেষ্ট মনে করেন, তাহলে আপনার পদস্খলনের সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। অতি আবেগ ও চিল্লাচিল্লির যুগে সত্য বয়ান ও সঠিক বিধান খুব কম জায়গাতেই পাবেন। তাই আপনার যদি ইলম না থাকে বা ন্যূনতম যাচাইয়ের যোগ্যতা না থাকে, তাহলে বর্তমানের এ অন্ধকারাচ্ছন্ন ফিতনার জমানায় কুফর-শিরক ও গোমরাহির অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবেন। মনের অজান্তেই কখন যে নিজের মূল্যবান ইমানটিই হারিয়ে ফেলবেন, উপলব্ধিও করতে পারবেন না। তাই সঠিক সোর্স থেকে ইলম শেখার কোনো বিকল্প নেই।


শেষ জমানায় বক্তা হবে বেশি, আলিমের সংখ্যা থাকবে নিতান্তই কম। যারাও বা আলিম নামে পরিচিত, তাদের মধ্যেও প্রকৃত আলিম হবে হাতে গোনা। এসংক্রান্ত একটি বিশুদ্ধ হাদিসে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন :
إِنَّكُمْ قَدْ أَصْبَحْتُمْ فِي زَمَانٍ كَثِيرٍ فُقَهَاؤُهُ، قَلِيلٍ خُطَبَاؤُهُ، كَثِيرٍ مُعْطُوهُ، قَلِيلٍ سُؤَّالُهُ، الْعَمَلُ فِيهِ خَيْرٌ مِنَ الْعِلْمِ، وَسَيَأْتِي زَمَانٌ قَلِيلٌ فُقَهَاؤُهُ، كَثِيرٌ خُطَبَاؤُهُ، كَثِيرٌ سُؤَّالُهُ، قَلِيلٌ مُعْطُوهُ، الْعِلْمُ فِيهِ خَيْرٌ مِنَ الْعَمَلِ
‘আজ তোমরা এমন এক সময়ে আছ, যখন ফকিহদের সংখ্যা বেশি, বক্তাদের সংখ্যা কম, উত্তরদাতা অনেক বেশি, প্রশ্নকারী কম। এ জমানায় ইলমের চাইতে আমলই উত্তম। কিন্তু সত্বরই এমন এক জমানা আসবে, যখন ফকিহদের সংখ্যা হবে অল্প, বক্তাদের সংখ্যা থাকবে বেশি, প্রশ্নকারী হবে প্রচুর, উত্তরদাতা হবে কম। সে সময় আমলের চাইতে ইলমই উত্তম হবে।’ (আল-মুজামুল কাবির, তাবারানি : ৩/১৯৭, হা. নং ৩১১১; জামিউ বায়ানিল ইলমি ওয়া ফাজলিহি : ১/১১৪, হা. নং ১০৩)


তাই নিজেকে বাঁচানোর জন্য হলেও ইলম শিখুন। কোথা থেকে শিখবেন, সেটা আলাদা করে বলে দেওয়ার কিছু নেই। দুনিয়ার অধিকাংশ ভালো-মন্দ যাচাই করার ক্ষমতা থাকলে এখানেও ভালো-মন্দ যাচাই করতে পারবেন। দরকার কেবল শেখার অদম্য হিম্মত, কষ্ট করার সুদৃঢ় মানসিকতা ও ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জনে অবিচলতা। আপনি আল্লাহর ওপর ভরসা করে শুরু করে দিন; রাস্তাগুলো অটোমেটিক খুলে যেতে শুরু করবে ইনশাআল্লাহ। এসব ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষ হীনম্নন্যতায় ভোগে। ইলম শিখতে চাইলে আপনি যেমন শয়তানের কুমন্ত্রণা ও বাধা পাবেন, ঠিক তেমনই মানুষের পক্ষ থেকেও অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হবেন। মনে রাখবেন, বয়স ও অর্থের স্বল্পতা কখনো ইলম শেখার পথে অন্তরায় হতে পারে না। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র যাই বলুক না, আপনি আপনার ইপ্সিত লক্ষ্যে এগিয়ে যান। একদিন দেখবেন, সফল হলে তারাই প্রথম আপনাকে অভিনন্দন জানাবে, যারা একসময় আপনাকে ভর্ৎসনা করেছিল। আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দিন।

 

_মুফতি তাররেকুজ্জামান (হাফিজাহুল্লাহ)

.

 

#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প

https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo

.

>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"

https://justpaste.it/5gol5

.

>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক

https://justpaste.it/facebook_page_grp_link

.

>> র‍্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট

https://justpaste.it/76iwz

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের pdf লিংক (৪০০+ বই)

https://justpaste.it/4ne9o

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.

https://justpaste.it/islamicappvideo

.

>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?

https://justpaste.it/6q4c3

.

>> কুরআন এবং আপনি

https://justpaste.it/5dds8

.

>> কখনও ঝরে যেও না …

https://justpaste.it/3bt22

.

>> ফজরে আমি উঠতে পারি না

https://justpaste.it/6kjl6

.

>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1

.

>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr

.

>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম

https://justpaste.it/7u5es

.

>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়

https://justpaste.it/8dccj

.

>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/6ttuf

.

>> স্বার্থক মুনাজাত

https://justpaste.it/1xf0t

.

>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ

https://justpaste.it/4hhtd

.

>> তাহাজ্জুদ সিরিজ

https://justpaste.it/4ja0n

.

>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/3dxi7

.

>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)

https://justpaste.it/7056k

.

>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ

https://justpaste.it/7fh32

.

>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ

https://justpaste.it/9icuq

.

>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল

https://justpaste.it/8gmtk

.

>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf

.

>> দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প

https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo

.

>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

https://justpaste.it/8vnly

.

>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir

.

>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh

.
>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5

.
>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1

.

>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j

.

>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে। সবগুলো বিষয়ের লিংক এক জায়গায় রাখা হয়েছে। এই লিংকটা শেয়ার করতে পারেন। 
https://justpaste.it/48f6m