বিশেষ নফল নামাজ সিরিজ (ইশরাক, দোহা, চাশত, আওয়াবিন, যাওয়াল, সালাতুল হাজত, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুল ইস্তিখারা, তাহিয়্যাতুল অজু, সালাতুত তাহাজ্জুদ, তাহিয়্যাতুল মাসজিদ, সালাতুত তাওবাহ, সালাতুল কুসুফ)
বিশেষ নফল নামাজ সিরিজের সকল পর্বের লিংক: লিংক কাজ না করলেও সমস্যা নাই। সব লেখা নিচে দেয়া আছে।
.
প্রথম পর্ব: ইশরাক, দোহা, চাশত
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3439424536157837&id=1698393090260999
.
দ্বিতীয় পর্ব: আউয়াবিন ও চাশত
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3449330001833957&id=1698393090260999
.
তৃতীয় পর্ব: যাওয়ালের নামাজ
.
চতুর্থ পর্ব: সালাতুল হাজত
.
পঞ্চম পর্ব: সালাতুত তাসবিহ
.
ষষ্ঠ পর্ব: সালাতুল ইস্তিখারা
.
সপ্তম পর্ব: তাহিয়্যাতুল অজু
.
অষ্টম পর্ব: সালাতুত তাহাজ্জুদ
.
নবম পর্ব: তাহিয়্যাতুল মাসজিদ
.
দশম পর্ব: সালাতুত তাওবাহ
.
একাদশ ও শেষ পর্ব: সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রহণের নামাজ (সালাতুল কুসুফ)
--------------------------------------
তাহাজ্জুদের নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নফল নামাজ হলো ইশরাকের নামাজ।
.
ইশরাক, দোহা এবং চাশত একই নামাজ কীনা, এসব নামাজের সময়, নিয়ম ও রাকাতসংখ্যা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
.
❖ ইশরাক নামাজের পরিচয় ও ফজিলত:
.
ইশরাক মানে প্রভাত, সকাল, সূর্যোদয়। আনাস (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে পড়বে, এরপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে যিকির করবে, এরপর সূর্যোদয় হলে (সূর্যোদয়ের ১৫/২০ মিনিট পর) দুই রাকাত নামাজ পড়বে, তার জন্য পরিপূর্ণ হজ্ব ও ‘উমরার সওয়াব লেখা হবে।’’ কথাটি তিনি জোর দিয়ে তিনবার বলেন। [তিরমিযি, আস-সুনান: ৫৮৬; হাদিসটি হাসান]
.
হাদিসে এই নামাজের কোনো নাম বর্ণিত হয়নি। তবে, বিদ্বানগণের নিকট এই নামাজ ইশরাকের নামাজ বা সূর্যোদয়ের নামাজ হিসেবে পরিচিত।
.
❖ দোহা ও চাশতের নামাজের পরিচয়:
.
‘দোহা’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো, দিনের প্রথম প্রহর। ফার্সিতে একে বলা হয় ‘চাশত’। অতএব, দোহা এবং চাশত একই নামাজ। পরিভাষায় সূর্যোদয়ের পর সূর্যের তাপ কিছুটা প্রখর হওয়ার পর যে নামাজ পড়া হয়, সেটিকেই দোহার নামাজ বলা হয়।
.
❖ দোহার (চাশতের) নামাজের মহান ফজিলত:
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের শরীরের প্রতিটি জোড়ার জন্য (শুকরিয়াস্বরূপ) প্রতিদিন সকালে সাদাকাহ দিতে হয়। (জেনে রেখো) প্রত্যেক তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) সাদাকাহ; প্রত্যেক তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) সাদাকাহ; প্রত্যেক তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) সাদাকাহ; প্রত্যেক তাকবির (আল্লাহু আকবার) সাদাকাহ; সৎ কাজের আদেশ সাদাকাহ এবং অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা সাদাকাহ। আর এসবের পক্ষ হতে দোহার (চাশতের) দুই রাকাত নামাজই যথেষ্ট হবে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৭০৪]
.
হাদিসে কুদসিতে এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আদম সন্তান, তুমি দিনের প্রথম ভাগে আমার জন্য চার রাকাত আদায় করো; আমি তোমার (দিনের) শেষ ভাগের জন্য যথেষ্ট হবো।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ৪৩৭; হাদিসটি সহিহ]
.
হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ বলেন, আল্লাহ তার বাকি দিনের প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট হবেন এবং তার অপছন্দনীয় বিষয়গুলো তার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন। [মুবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াযি: ২/৪৭৮]
.
❖ দোহার (চাশতের) নামাজের রাকাতসংখ্যা:
.
আয়িশা (রা.) বলেন, ‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত দোহার নামাজ ৪ রাকাত পড়তেন। তবে, আল্লাহ চাহেতো কখনো তা বৃদ্ধি করতেন।’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭১৯]
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিনে দোহার (চাশতের) ৮ রাকাত নামাজ পড়েছেন। [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৯১]
.
শারহুল জামি’ আস সহিহ গ্রন্থে এসেছে, সাহাবিদের মধ্যে আম্মাজান আয়িশা পড়তেন ৬ রাকাত; ইবনু উমার ২ রাকাত, সা’দ ও আম্মাজান উম্মু সালামাহ ৮ রাকাত, আলি ইবনু আবি তালিব ৪ রাকাত পড়তেন। রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমা‘ইন।
.
আলিমগণের বড় অংশের মতে, দোহার (চাশতের) নামাজ সর্বনিম্ন ২ রাকাত এবং সর্বোচ্চ ১২ রাকাত পড়া যায়। তাঁরা তাঁদের পক্ষে দলিল দিয়েছেন। তবে, শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু সলিহ আল উসাইমিন (রাহ.) বলেন, ‘‘(দোহার নামাজের) সর্বোচ্চ রাকাত নির্ধারিত নয়। কেননা আয়িশা (রা.) হতে (উপরে) বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, ‘‘আল্লাহ চাহেতো এর চেয়ে অধিক পড়তেন’’ (নির্দিষ্ট বাউন্ডারি দেওয়া হয়নি)।’’ [শারহুল মুমতি’: ৪/৮৫]
.
তবে, হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী নবিজি অধিকাংশ সময় ৪ রাকাত আদায় করতেন, যেমনটি আমরা পূর্বেই পড়লাম।
.
❖ দোহার (চাশতের) নামাজের সময়:
.
সূর্যোদয়ের ১৫/২০ মিনিট পর থেকেই দোহার (চাশতের) নামাজ পড়া যায়। তবে, দোহার (চাশতের) নামাজের উত্তম সময় হলো, সূর্যের তাপ যখন প্রখর হয়। এই সময় থেকে নিয়ে দিনের দ্বিপ্রহর শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দোহার (চাশতের) নামাজের সময় থাকে।
.
❖ দোহা আর ইশরাক কি এক নামাজ?
.
প্রখ্যাত ফকিহ ও হাদিস বিশারদ ইমাম আবু বকর জাসসাস (রাহ.) বলেন, অধিকাংশ আলিমের মতে, ইশরাক এবং দোহার নামাজ একই। [আহকামুল কুরআন: ৩/৫৫৯]
.
মুহাদ্দিসগণ দোহা এবং ইশরাকের নামাজকে একই নামাজ গণ্য করেছেন। তবে, সুফিগণ আলাদা গণ্য করেছেন। [যাকারিয়া কান্ধলভি, ফাতহুল মুলহিম: ৪/৬৩৪]
.
ইমাম ত্বিবি তাঁর শারহুল মিশকাতে বলেছেন, ইশরাক হলো দোহার প্রথম সময়। মূলত দুটো একই নামাজ। শায়খ ইবনু বায, ইবনু উসাইমিন (রাহ.)-সহ আরবের আলিমগণের মতও তাই।
.
❖ উপসংহার:
.
মূল কথা হলো, ইশরাক এবং দোহা (চাশত) একই নামাজ। শুধু সময়ের পার্থক্যের কারণে এদের নাম ভিন্ন হয়েছে। ইশরাক হলো দোহার প্রথম সময়। যদি জামাতে ফজর আদায় করে, নামাজের স্থানে বসে থেকে যিকর করে, অতঃপর সূর্যোদয়ের ১৫/২০ মিনিট পর আদায় করা হয়, তবে এটিকে ইশরাক বলা হয়। আর সূর্য কিছুটা প্রখর হওয়ার পর (সকালের নাস্তার সময়ে) আদায় করলে এটিকে ‘দোহা’ (চাশত) বলা হয়। মৌলিকভাবে দুটোই দোহার নামাজ।
.
একই দিনে ইশরাক ও দোহার (চাশতের) নামাজ আদায় করাও জায়েয। কোনো (ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নাত বা নফল) নামাজের নিয়ত যেহেতু মুখে পড়তে হয় না (শুধু অন্তরে ইচ্ছাপোষণ করতে হয়), সেহেতু ইশরাক এবং দোহার (চাশতের) নামাজেও অন্তরে ইচ্ছাপোষণ করাই যথেষ্ট।
.
#Tasbeeh
--------------------------------------------
.
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের নামাজ ‘সলাতুল আওয়াবিন’ (আল্লাহ-অভিমুখীদের নামাজ)
.
(আওয়াবিন নামাজের পরিচয়, এর সময়, রাকাতসংখ্যা এবং চাশতের নামাজের সাথে এর পার্থক্য আছে কীনা—দলিলসহ বিস্তারিত)
.
❂ আওয়াবিন নামাজের পরিচয়:
.
আওয়াব (أَوَّابٌ) শব্দের অর্থ হলো বারবার প্রত্যাবর্তনকারী। অর্থাৎ, আল্লাহর দিকে বারবার প্রত্যাবর্তনকারী—আল্লাহমুখী ব্যক্তি। সলাতুল আওয়াবিন হলো, আল্লাহর দিকে বারবার প্রত্যাবর্তনকারীদের নামাজ।
.
❂ আওয়াবিন নামাজের সময়:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—
.
صلاة الأوابين إذا رمضت الفصال (رواه مسلم)
.
‘‘আওয়াবিন নামাজ (এর সময়) হলো, যখন উটের বাচ্চা (সূর্যের) প্রখর উত্তাপ অনুভব করে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৬৩১]
.
ইমাম আহমাদের ‘মুসনাদ’ এবং ইবনু আবি শাইবার ‘মুসান্নাফে’ আরো বর্ধিত বর্ণনা এসেছে, ‘‘আওয়াবিন নামাজ (এর সময়) হলো, দোহার (চাশতের) সময়ে যখন উটের বাচ্চা (সূর্যের) প্রখর উত্তাপ অনুভব করে।’’
.
অর্থাৎ, দোহার (চাশতের) নামাজের সময়ে আওয়াবিনের নামাজ পড়তে হয়। তাহলে, আওয়াবিন আর দোহার (চাশতের) নামাজ কি একই?
.
উত্তর হলো: হ্যাঁ, আওয়াবিন এবং (দোহার) চাশতের নামাজ একই। হাদিসে স্পষ্ট ভাষায় দোহার (চাশতের) নামাজকে আওয়াবিনের নামাজ বলা হয়েছে।
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দোহার (চাশতের) নামাজের প্রতি কেবল সে-ই যত্নবান হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে অধিক প্রত্যাবর্তনকারী। আর এটি ‘সলাতুল আওয়াবিন’ বা আল্লাহর দিকে অধিক প্রত্যাবর্তনকারীদের নামাজ।” [হাকিম, আল-মুসতাদরাক: ১১১৬; আলবানি, সহিহুল জামে’: ৭৬২৮ হাদিসটি হাসান]
.
অন্য হাদিসে আরো স্পষ্টভাবে নবিজি বলেন—
صلاة الضحى صلاة الأوّابين
‘‘চাশতের নামাজ হলো আওয়াবিনের নামাজ।’’ [আলবানি, সহিহুল জামে’: ৩৮২৭; হাদিসটি সহিহ]
.
অতএব, এটা নিশ্চিত হলো যে, দোহা বা চাশতের নামাজকে আওয়াবিনের নামাজ বলা হয়েছে একাধিক হাদিসে। সকল মুহাদ্দিস (হাদিস বিশারদ) একবাক্যে বলেছেন, দোহার নামাজই আওয়াবিনের নামাজ।
.
❂ তাহলে মাগরিবের পর আওয়াবিনের নামাজের বিষয়ে কী বলা হবে?
.
তাবি‘ঈ মুহাম্মাদ ইবনু মুনকাদির (রাহ.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে নামাজ পড়ে, সে আওয়াবিনের নামাজ পড়ে।’’ [ইবনু মুবারক, আয যুহদ; হাদিসটি দুর্বল]
.
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজের পর ছয় রাকাত নফল নামাজ পড়বে, এসবের মাঝাখানে খারাপ কোনো কথা বলবে না, আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে ১২ বছরের নফল ইবাদাত করার নেকি দান করবেন।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ৪৩৫; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১১৬৭; হাদিসটি বেশ দুর্বল]
.
অন্য বর্ণনায় এসেছে, যে ব্যক্তি বিশ রাকাত পড়বে, তার জন্য জান্নাতে একটি বাড়ি তৈরি করা হবে। [তিরমিযি ও ইবনু মাজাহ; হাদিসটিতে দুর্বলতা আছে]
.
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম শাওকানি (রাহ.) বলেন, আওয়াবিনের নামাজ শুধু দোহার (চাশতের) সময়েই হতে হবে, এমনটি জরুরি নয়। এটি দোহার সময়েও হতে পারে, মাগরিব থেকে ইশার মধ্যবর্তী সময়েও হতে পারে। যেহেতু দুর্বল বর্ণনা অনেকগুলো এসেছে এবং সালাফদের (পূর্বসূরি নেককারদের) বিরাট অংশ এ সময় (নফল) সলাত আদায় করতেন বলে প্রমাণিত আছে, সেহেতু বিষয়টির পক্ষে এটি একটি দলিল। আল্লামা মুবারকপুরি (রাহ.) এতে একমত পোষণ করেছেন। ইমাম মুনাভি (রাহ.)-ও এ ধরনের কথা বলেছেন। এই তিনজনই বড় মাপের মুহাদ্দিস ছিলেন। [নাইলুল আওত্বার, তুহফাতুল আহওয়াযি, ফায়দ্বুল ক্বাদির]
.
চার মাযহাবের গ্রন্থেই এসেছে—মাগরিব থেকে ইশার মধ্যে সালাতুল আওয়াবিন আদায় করার কথা। সুতরাং ফকিহদের বিরাট এক জামাত এই সময়ে আওয়াবিন পড়ার বৈধতার কথা বলেছেন।
.
এই পর্যায়ে একটি বিষয় ভালোভাবে বুঝতে হবে: মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে ‘আওয়াবিন নামাজ’ পড়ার বিষয়ে কোনো সহিহ বর্ণনা নেই। তবে, মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে সাধারণ নফল নামাজ পড়ার ব্যাপারে একাধিক সহিহ হাদিস রয়েছে এবং সালাফদের মাঝে এর ব্যাপক নজির রয়েছে।
.
সাহাবি হুযাইফা (রা.) বলেন, ‘আমি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তাঁর সাথে মাগরিবের নামাজ আদায় করলাম। তিনি মাগরিবের পরে ইশা পর্যন্ত নফল নামাজে রত থাকলেন।’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২২৯২৬; হাদিসটি সহিহ]
.
আনাস (রা.) বলেন, ‘সাহাবায়ে কিরাম মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে সজাগ থেকে অপেক্ষা করতেন ও নফল নামাজ আদায় করতেন।’ [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩২১; হাদিসটি সহিহ]
.
ইমাম হাসান আল বাসরি (রাহ.) মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী নফল নামাজকেও তাহাজ্জুদের নামাজ বলে গণ্য করতেন। [প্রাগুক্ত; ইবনু আবি শাইবাহ, আল-মুসান্নাফ: ২/১৫; আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১/৩১৩; বর্ণনাটি সহিহ]
.
হাফিয ইরাকি (রাহ.) সাহাবি ও তাবি‘ঈগণের বিরাট এক জামাতের নাম উল্লেখ করেছেন, যারা এসময় নফল নামাজ আদায় করতেন।
.
❂ উপসংহার:
.
সহিহ হাদিসের আলোকে মুহাদ্দিসগণের বক্তব্য হলো, আওয়াবিন দ্বারা মূলত দোহা বা চাশতের নামাজ সাব্যস্ত হয়। অর্থাৎ, দোহার নামাজই আওয়াবিনের নামাজ। যে দোহার (চাশতের) নামাজ পড়বে, তার আওয়াবিনের নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তবে, আওয়াবিন/চাশতের নামাজ সূর্যোদয়ের পরপর না পড়ে সূর্যের তাপ একটু প্রখর হলে পড়া উত্তম। সাধারণত অধিকাংশ মানুষ যখন সকালের নাস্তা করে, সে সময়টা হলো উপযুক্ত সময়। আনুমানিক সকাল ৮/৯-টার দিকে।
.
তবে, কোনো কোনো মুহাদ্দিস এবং চার মাযহাবের ফকিহদের বড় এক জামাতের মতে, মাগরিব থেকে ইশার সময়টুকুও আওয়াবিনের নামাজের জন্য গণ্য হবে। তাঁরা একাধিক দুর্বল দলিল পেশ করেছেন। একই বিষয়ে অনেকগুলো দুর্বল হাদিস একত্র করলে অনেক সময় কোনো হাদিসকে বিশুদ্ধতায় উত্তীর্ণ করা হয়। তাঁদের মতে, এই নামাজ কমপক্ষে ৬ রাকাত, তবে ২০ রাকাত উত্তম।
.
আমাদের কর্তব্য হলো, যেহেতু দোহার (চাশতের) নামাজই আওয়াবিন হিসেবে সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, সেহেতু এর উপর জোর দিয়ে আমল করা। পাশাপাশি, যেহেতু মাগরিবের পর থেকে ইশার সময়টুকু সাধারণ নফল নামাজের জন্য একাধিক সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত এবং সাহাবিগণ ও তাবি‘ঈগণ এ সময়ে গুরুত্বের সাথে সাধারণ নফল নামাজ আদায় করতেন, সেহেতু এ সময়ে সাধ্যানুযায়ী নফল নামাজ আদায় করা। আল্লাহই সর্বাধিক ভালো জানেন।
.
#Tasbeeh
--------------------------------------------
তাহাজ্জুদ নামাজের সমতুল্য যাওয়ালের নামাজ—অপরিচিত আমল, কিন্তু মর্যাদা অধিক।
▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
✪ যাওয়ালের নামাজের পরিচয় ও সময়:
.
যাওয়াল (زَوَال) অর্থ: বিলোপ, উধাও, মধ্যাহ্ন, দ্বিপ্রহর ইত্যাদি। সূর্য যখন ঠিক মাথার উপর থেকে পশ্চিম আকাশে হেলতে শুরু করে, তখন যোহরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর যোহরের সূচনাতেই পড়তে হয় যাওয়ালের নামাজ। অর্থাৎ, যোহর শুরু হওয়ার পরপর নফল চার রাকাত নামাজ পড়াকে বলা হয় যাওয়ালের নামাজ।
.
হাদিসে এসেছে, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সূর্য ঢলার পর চার রাকাত পড়তেন। এ ক্ষেত্রে তিনি চার রাকাত শেষ করার পূর্বে সালাম ফেরাতেন না। [আলবানি, তাখরিজু মিশকাতিল মাসাবিহ: ১২২৬; সনদ সহিহ]
.
✪ যাওয়াল নামাজের মর্যাদা ও রাকাতসংখ্যা:
.
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যোহরের পূর্বের চার রাকাত নামাজ ভোররাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ) সমতুল্য।’’ [আলবানি, সহিহুল জামি’: ৮৮২, হাদিসটি হাসান]
.
আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি করিম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিনিয়ত (পশ্চিমাকাশে) সূর্য ঢলার সময় চার রাকাত নামাজ পড়তেন। একবার আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! (আপনাকে দেখছি) সূর্য ঢলার সময় চার রাকাত প্রতিনিয়তই পড়ছেন!’ তিনি বললেন, “সূর্য ঢলার সময় আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং যোহরের নামাজ না পড়া পর্যন্ত বন্ধ করা হয় না। তাই, আমি পছন্দ করি যে, এই সময় আমার নেক আমল (আসমানে) উঠুক।” আমি বললাম, ‘এ নামাজের প্রত্যেক রাকাতেই কি কিরাত আছে?’
তিনি বললেন, “হ্যাঁ।” আমি বললাম, ‘তার মাঝে কি পৃথককারী সালাম আছে?’ (অর্থাৎ, দুই রাকাত পর সালাম ফেরানো আছে?) তিনি বললেন, “না।” (অর্থাৎ, এক সালামে চার রাকাত। যেভাবে আমরা যোহরের চার রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়ি, ঠিক সেভাবে)
[তিরমিযি, আশ-শামাইল: ২৪৯; হাদিসটি সহিহ]
.
✪ এটি কি যোহরের চার রাকাত সুন্নাত নামাজ নাকি অন্য কোনো নফল নামাজ?
.
➤ ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রাহ.) বলেন, এই চার রাকাত নামাজ যোহরের সুন্নাত নয়, বরং এটি অন্য নামাজ, যা তিনি (নবিজি) সূর্য ঢলার পর পড়তেন। আর এই স্বতন্ত্র আমলটি করার পেছনে কারণ হলো, এটি দিনের ঠিক মধ্যভাগ ও সূর্য ঢলার সময়। এর রহস্য হলো—আল্লাহ ভালো জানেন—এটি দিনের মধ্যভাগ, যার অবস্থান রাতের ঠিক মধ্যভাগের বিপরীতে। দিনের মধ্যভাগে সূর্য ঢলার পর আসমানের দরজাসমূহ খোলা হয় আর রাতের মধ্যভাগের পর আসমানে মহান আল্লাহর অবতরণ ঘটে (যা সহিহ হাদিসে আছে)। সুতরাং এ দুটি আল্লাহর নৈকট্য ও রহমতের সময়। [ইবনুল কাইয়িম, যাদুল মা‘আদ]
.
➤ ইমাম গাযালি, ইমাম মুনাউয়ি, হাফিয ইরাকি, আল্লামা মুবারকপুরিসহ অনেকেই স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, যোহরের চার রাকাত সুন্নাত এবং যাওয়ালের চার রাকাত সুন্নাত ভিন্ন ভিন্ন নামাজ। [ইহয়াউ উলুমিদ্দিন, ফায়দ্বুল ক্বাদির, মির‘আতুল মাফাতিহ, তুহফাতুল আহওয়াযি]
.
➤ হানাফি মাযহাবের ফকিহদের একাংশ, ইমাম বায়যাবি (রাহ.)-সহ অনেক আলেমের মতে, হাদিসে যাওয়ালের নামাজ দ্বারা মূলত যোহরের চার রাকাত সুন্নাত উদেশ্য। তাঁরা আবদুল্লাহ্ ইবনু সায়িব (রা.)-এর হাদিসের ব্যাখ্যায় এই মত পেশ করেছেন। [আদ দুররুল মুখতার: ২/১৩]
.
তবে, এই মতটির পক্ষে শক্তিশালী স্পষ্ট কোনো দলিল পাওয়া যায় না।
.
তাহলে আমরা বুঝলাম—

যাওয়ালের নামাজ চার রাকাত।

একত্রে চার রাকাত পড়তে হয়, যেভাবে যোহরের চার রাকাত সুন্নাত পড়া হয়।

যাওয়ালের নামাজ এবং যোহরের চার রাকাত ভিন্ন ভিন্ন নামাজ।

যোহরের চার রাকাত সুন্নাত তাকিদপূর্ণ; এটি ত্যাগ করা যাবে না। পক্ষান্তরে যাওয়ালের নামাজ মুস্তাহাব আমল; আদায় করলে নেকি হবে, আদায় না করলে কোনো অসুবিধা নেই।

যাওয়ালের নামাজ যোহরের ওয়াক্ত শুরুর সাথে সাথেই পড়তে হয়। বেশি দেরি না করে, যাওয়ালের নামাজ আনুমানিক সাড়ে বারোটার মধ্যে পড়ে নেওয়াই উত্তম।
.
#Tasbeeh
--------------------------------------------
সালাতুল হাজত বা ‘প্রয়োজন পূরণের নামাজ’: আদায়ের নিয়ম ও এই সংক্রান্ত সংশয় নিরসন
▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬
ইবরাহিম (আ.) তাঁর স্ত্রী সারাকে নিয়ে সফর করছিলেন। তৎকালীন মিসরের লম্পট শাসক সারাকে তার দরবারে ডাকে। শাসকের লাম্পট্য সম্পর্কে সবাই জানতো। তাই, সারা সেখানে গিয়ে প্রথমেই অজু করে নামাজ আদায় করেন। এরপর দু‘আ করেন, ‘‘হে আল্লাহ! এই কা[ফে]রকে তুমি আমার উপর বিজয়ী করো না।’’
.
একটু পর লম্পট বাদশাহ সারার দিকে কুদৃষ্টি দেয় এবং লালসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তার দিকে এগিয়ে আসে। সাথে সাথে লম্পট বাদশাহ’র হাত-পা অবশ হয়ে পড়ে। তিন-তিন বার ব্যর্থ হয়ে অবশেষে সারাকে সে সসম্মান মুক্তি দেয়। এছাড়া বহু মূল্যবান উপঢৌকনসহ তার খেদমতের জন্য হাজেরাকে তার সাথে পাঠিয়ে দেয়। [বুখারি, আস-সহিহ: ২২১৭]
.
অতএব, আমরা জানলাম—বিশেষ নামাজ ও দু‘আর ফলে আল্লাহ্ সারাকে হেফাজত করেছিলেন।
.
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘ওহে, যারা ঈমান এনেছো! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো।’’ [সুরা আল বাকারাহ, আয়াত: ১৫৩]
.
❖ উপরে উল্লিখিত বিশুদ্ধসূত্রে বর্ণিত ঘটনা এবং কুরআনের আয়াত থেকে বোঝা যায়, বান্দা সমস্যায় পড়লে উত্তমরূপে অজু করবে, দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে এবং আল্লাহর কাছে দু‘আ করবে। এটি মূলত আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার নামাজ। বিপদে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনায় সাধারণভাবে দুই রাকাত নফল পড়ে দু‘আ করার ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই। কেউ চাইলে বেশিও পড়তে পারে।
.
❖ কিন্তু দুই রাকাত বা চার রাকাত নামাজকে বিশেষভাবে ‘সালাতুল হাজত’ নামকরণ করা এবং নামাজ শেষে বিশেষ কোনো দু‘আর মাধ্যমে প্রার্থনা করা—এসব ব্যাপারে আলেমদের মাঝে কিছু মতানৈক্য আছে।
.
❖ ‘সালাতুল হাজত’ নামকরণ এবং নির্দিষ্ট দু‘আর মাধ্যমে এই নামাজ পড়ার ব্যাপারে কোনো সহিহ হাদিস নেই। অতএব, ‘সালাতুল হাজত’ নাম নিয়ে, নির্দিষ্ট একটি দু‘আর মাধ্যমে সালাতুল হাজত পড়া যাবে না (সাধারণভাবে দুই রাকাত নামাজ পড়ে সাহায্য চাইতে অসুবিধা নেই); সৌদি আরবের ফতোয়া বোর্ড লাজনাহ দায়িমা এই মত দিয়েছে। তবে, ফিকহ বিশ্বকোষ মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহতে বলা হয়েছে, চার-চারটি মাযহাবেই সালাতুল হাজতের বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নামাজ ও দু‘আ স্বীকৃত। অধিকাংশ ইমামের মতে, যদি কোনো দুর্বল হাদিস অধিক দুর্বল না হয়, সহিহ কোনো হাদিসের বিরোধী না হয় এবং হাদিসের মূল ভাবটি অন্য কোনো সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, তবে সেই দুর্বল হাদিসটির উপর আমল করা বৈধ।
.
❖ আমরা উপরে সহিহ হাদিস ও কুরআনের আয়াত দ্বারা জেনেছি যে, বিপদে বা প্রয়োজন পূরণে সাধারণভাবে নফল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া বৈধ এবং উত্তম, তাই একই ভাবসম্পন্ন সালাতুল হাজতের বিশেষ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নামাজের উপর আমল করা বৈধ।
.
❖ আবদুল্লাহ্ ইবনু আবি আওফা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহর কাছে বা কোন আদম-সন্তানের কাছে যদি কারো কোন প্রয়োজন অনুভূত হয়, তবে সে যেন অজু করে এবং খুব সুন্দরভাবে যেন তা করে। পরে যেন দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। এরপর, সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে ও রাসুলের উপর দরুদ প্রেরণ করে; অতঃপর এই দু‘আটি পড়ে—
.
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيْمُ سُبْحَانَ اللّٰهِ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ الْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ أَسْأَلُكَ مُوْجِبَاتِ رَحْمَتِكَ وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ وَالْغَنِيْمَةَ مِنْ كُلِّ بِرٍّ وَالسَّلَامَةَ مِنْ كُلِّ إِثْمٍ لَا تَدَعْ لِيْ ذَنْبًا إِلَّا غَفَرْتَهُ وَلَا هَمًّا إِلَّا فَرَّجْتَهُ وَلَا حَاجَةً هِيَ لَكَ رِضًا إِلَّا قَضَيْتَهَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِيْنَ
.
অর্থ: আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি অতি সহিষ্ণু ও দয়ালু। সকল দোষ-ক্রটি থেকে পবিত্র তিনি; মহান আরশের রব। সকল প্রশংসা আল্লাহর, তিনি জগতের রব। আপনার কাছেই আমরা চাই, আপনার রহমতআকর্ষণকারী সকল পূণ্যকর্মের উসিলায়—আপনার ক্ষমা ও মাগফিরাত আকর্ষণকারী সকল ক্রিয়া-কর্মের বরকতের, সকল নেক কাজে সাফল্য লাভের এবং সব ধরনের গুনাহ থেকে নিরাপত্তা লাভের। আমার এমন কোনো গুনাহ যেন না থাকে, যা মাফ হবে না। কোন সমস্যা যেন এমনভাবে বিদূরিত না হয়, যাতে সমাধান থাকে না আর আমার এমন প্রয়োজন—যাতে রয়েছে আপনার সন্তুষ্টি—তা যেন অপূর্ণ না থাকে; হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’’ [ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৩৮৪; তিরমিযি, আস-সুনান: ৪৭৯; হাদিসটি দুর্বল]
.
এতএব, আমাদের সামনে দুটো পদ্ধতি আছে। একটি পদ্ধতি সর্বসম্মতভাবে জায়েয এবং সুন্নাত। আরেকটি পদ্ধতি কিছু আলেম বাদে প্রায় সকল আলেমের মতে জায়েয।
.
[১ নং পদ্ধতি:]
ব্যক্তি প্রথমে ভালোভাবে অজু করবেন, এরপর সুন্দরভাবে দুই রাকাত ‘সালাতুল হাজত’-এর নফল নামাজ পড়বেন। নামাজ শেষ করে আল্লাহর প্রশংসা করবেন, নবিজির উপর দরুদ প্রেরণ করবেন। সর্বশেষ, উপরে বর্ণিত দু‘আটি করবেন এবং সাথে নিজের প্রয়োজন নিজের মত করে যেকোনো ভাষায় বলবেন। এই নিয়মে সালাতুল হাজতের নামাজ ও দু‘আ পড়া চার মাজহাবেই স্বীকৃত; তবে, কিছু সংখ্যক আলিম এই পদ্ধতিকে নাকচ করেছেন হাদিসটি দুর্বল হওয়ায়।
.
উল্লেখ্য, কেউ চাইলে সালাতুল হাজতের নামাজের ভেতরেই দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠকে বসা অবস্থায় সালাম ফেরানোর আগে উপরের দু‘আটি পড়তে পারেন। এক্ষেত্রে দু‘আর পূর্বে আলাদাভাবে আল্লাহর প্রশংসা ও নবির উপর দরুদ পাঠ করতে হবে না। তাশাহহুদ এবং দরুদ পাঠ করে হাজতের দু‘আটি পড়বেন। আরো কিছু দু‘আ করার থাকলে আরবিতে বলবেন। এরপর সালাম ফেরাবেন।
.
[২ নং পদ্ধতি:]
কোনো বিশেষ নাম (যেমন: সালাতুল হাজত) বা নির্দিষ্ট দু‘আকে জরুরি না মনে করে, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার জন্য সাধারণভাবে নফল নামাজ পড়া। এরপর নিজের মতো করে দু‘আর আদব ও নিয়ম অনুসরণ করে দু‘আ করা। দু‘আর অন্যতম আদব হলো: প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করা, এরপর দরুদ পড়া এবং এভাবেই দু‘আ সমাপ্ত করা। উপরে দুর্বল হাদিসে বর্ণিত দু‘আটি পড়ার বাধ্যবাধকতা নেই। চাইলে এই দু‘আটিকে জরুরি মনে না করে পড়তে পারেন আবার নিজের মতো করে দু‘আ করতে পারেন। এই পদ্ধতিতে নামাজ পড়া ও দু‘আ করা সর্বসম্মতভাবে জায়েয।
.
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘ওহে, যারা ঈমান এনেছো! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো।’’ [সুরা আল বাকারাহ, আয়াত: ১৫৩]
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করবে, এরপর পূর্ণরূপে দুই রাকাত নামাজ পড়বে, আল্লাহ্ তার চাওয়ার বিষয় দান করবেন—শীঘ্রই অথবা কিছু কাল পর।’’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৬/৪৪৩; হাদিসটির সনদ সহিহ]
.
সর্বশেষ কথা হলো: আমরা মনে করি, এই দুটো পদ্ধতিই জায়েয। তবে, ২ নং পদ্ধতিটি নিরাপদ।
.
হুযাইফা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন সংকটে পড়তেন, তখন নামাজে দাঁড়াতেন।’ [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩১৯; হাদিসটি সহিহ]
.
#Tasbeeh
--------------------------------------------
সালাতুত তাসবিহ নামাজের বিবরণ: জীবনে একবার হলেও এই নামাজ পড়তে বলা হয়েছে হাদিসে। [এই নামাজের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে আলেমগণের মতপার্থক্য আছে]
.
❖ কেন এর নাম ‘সালাতুত তাসবিহ’?
.
সালাতুত তাসবিহ মানে তাসবিহ’র নামাজ। যেহেতু এই নামাজে প্রচুর পরিমাণে (৩০০ বার) তাসবিহ (আল্লাহর পবিত্রতা ও গুণ বর্ণনা) পাঠ করা হয়, তাই এই নামাজের নামকরণ হয়েছে সালাতুত তাসবিহ।
.
❖ এই নামাজের দলিল কী?
.
ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্বাস ইবনু আব্দিল মুত্তালিবকে বলেন, ‘‘হে চাচা! আমি কি আপনাকে (বিশেষ কিছু) দেবো না? আমি কি আপনাকে (গুরুত্বপূর্ণ কিছু) প্রদান করবো না? আমি কি আপনার নিকটে (উপঢৌকন) উপস্থাপন করবো না? আমি কি আপনার জন্য দশটি উপকার বর্ণনা করবো না, যা করলে আল্লাহ তা‘আলা আপনার—পূর্ব ও পরবর্তী, নতুন ও পুরাতন, ইচ্ছায় ও ভুলবশত, ছোট ও বড়, গোপন ও প্রকাশ্য—সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন?
.
আর সে দশটি উপকারি ব্যাপার হলো: আপনি চার রাকাত নামাজ পড়বেন। প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি সুরা পড়বেন। প্রথম রাকাতে যখন কিরাত (অর্থাৎ সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা) পড়া শেষ করবেন, তখন দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন:
.
سُبْحَانَ اللّٰهِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ وَلا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ
.
[সুবহা-নাল্লা-হি ওয়ালহামদু লিল্লা-হি ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার]
.
এরপর রুকুতে যাবেন এবং রুকু অবস্থায় (উক্ত দু‘আটি) ১০ বার পড়বেন। এরপর রুকু থেকে মাথা ওঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদায় যাবেন। সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন, অতঃপর ১০ বার পড়বেন। এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। অতঃপর, সিজদা থেকে মাথা ওঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এই হলো এক রাকাতে ৭৫ বার।
.
আপনি চার রাকাতেই অনুরূপ করবেন।
.
যদি আপনি প্রতিদিন (এই) আমল করতে পারেন, তবে তা করুন। আর যদি না পারেন, তবে প্রতি জুমু‘আয় (সপ্তাহে) একবার। যদি প্রতি জুমু‘আয় না করেন, তবে প্রতি মাসে একবার। আর যদি তাও না করেন, তবে জীবনে একবার হলেও এই আমল করুন।
.
[আবু দাউদ, আস-সুনান: ১২৯৭; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৩৮৭; আলবানি, সহিহুল জামি’: ৭৯৩৭]
.
❖ হাদিসটি কি সহিহ?
.
এই হাদিসটিকে ইমাম আবু দাউদ, ইবনু হাজার আসকালানি, শায়খ আলবানি (রাহ.)-সহ অধিকাংশ মুহাদ্দিস সহিহ বা হাসান (গ্রহণযোগ্য) বলেছেন। শুধু তাই নয়, আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদিস হিসেবে খ্যাত ইমাম আবদুল্লাহ্ ইবনু মুবারক (রাহ.) এই হাদিসের উপর আমল করেছেন। পরবর্তীতেও নেককার ব্যক্তিগণ এই আমল করেছেন। [ইবনু আবদিল বার, আত তামহিদ: ১/৬২]
.
তবে, মুহাদ্দিসগণের একটি অংশ হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন। তাঁদের মতে, এই হাদিসটির সনদ (ধারাবাহিক বর্ণনাসূত্র) সহিহ হলেও মতন (মূল টেক্সট) শায (অভিনব ও বিচ্ছিন্ন)। যাঁরা হাদিসটিকে দুর্বল অথবা মুনকার (আপত্তিকর) বলেছেন, তাঁদের মতে, এই আমলটি বিদ‘আত।
.
কিন্তু সনদের দিক থেকে হাদিসটিকে সহিহ বলাই যৌক্তিক। আল্লামা মুবারকপুরি, আযিমাবাদি, আলবানি, আহমাদ শাকিরসহ গত শতাব্দীর প্রখ্যাত হাদিসগবেষকগণের দৃষ্টিতে হাদিসটি বিশুদ্ধ ও আমলযোগ্য। সুতরাং, ইনশাআল্লাহ্ এর উপর আমল করতে পারেন।
.
❖ বিশেষ কিছু জ্ঞাতব্য:
.
(১) কোনো এক স্থানে উক্ত তাসবিহ পড়তে সম্পূর্ণ ভুলে গেলে বা ভুলে নির্দিষ্ট সংখ্যার চেয়ে কম পড়লে পরবর্তী যে রুকনেই (অর্থাৎ, দাঁড়ানো, রুকু, সিজদা অবস্থায়) স্মরণ আসুক, সেখানে সেই সংখ্যার সাথে এই ভুলে যাওয়া সংখ্যাগুলোও আদায় করে নেবে।
.
(২) আর এই নামাজে কোনো কারণে সাজদায়ে সাহু ওয়াজিব হলে সেই সাজদা এবং তার মধ্যকার বৈঠকে উক্ত তাসবিহ পাঠ করতে হবে না।
.
(৩) তাসবিহর সংখ্যা স্মরণ রাখার জন্য আঙ্গুলের রেখা গণনা করা যাবে না, তবে আঙ্গুল চেপে স্মরণ রাখা যেতে পারে।
.
(৪) সালাতুত তাসবিহর নামাজ দিনে বা রাতে যেকোনো সময়েই পড়া যাবে। তবে তিনটি হারাম সময় ব্যতীত।
.
(৫) এটি সাধারণ নফল নামাজ। সুতরাং নফলের নিয়তে পড়বেন।
.
❖ যেভাবে পড়বেন সালাতুত তাসবিহ:
.
প্রথমে নামাজ শুরু করবেন আল্লাহু আকবার বলে। এরপর সানা পড়বেন, এরপর সুরা ফাতিহা ও একটি সুরা মিলাবেন। এরপর ১৫ বার তাসবিহটি পড়বেন। তাসবিহটি হলো: সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
.
এরপর রুকুতে আরো ১০ বার পড়বেন।
.
এরপর রুকু হতে দাঁড়িয়ে “রাব্বানা লাকাল হামদ” পড়ার পরে আরও ১০ বার পড়বেন।
.
এরপর সিজদায় ১০ বার পড়বেন।
.
প্রথম সিজদা থেকে ওঠে বসে ১০ বার পড়বেন। (অর্থাৎ দুই সিজদার মাঝে বসা অবস্থায়)
.
এরপর দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে ১০ বার পড়বেন।
.
এরপর সিজদা থেকে ওঠে একটু সময়ের জন্য বসবেন; বসে আরও ১০ বার পড়বেন। মোট হলো: ৭৫ বার।
.
এরপর দ্বিতীয় রাকাতের জন্য ওঠে দাঁড়াবেন। প্রথমে সুরা ফাতিহা পড়বেন এবং অন্য সুরা পড়বেন। অতঃপর আবার ১৫ বার পড়বেন। এরপর রুকুতে ১০ বার, রুকু থেকে দাঁড়িয়ে ১০ বার, প্রথম সিজদায় ১০ বার, সিজদা থেকে ওঠে ১০ বার, দ্বিতীয় সিজদায় ১০ বার, এরপর সিজদা থেকে ওঠে বসবেন। বসে আরও ১০ বার পড়বেন। এরপর তাশাহ্হুদ পড়বেন। আরো হলো ৭৫ বার। মোট: ১৫০ বার।
.
এরপর তৃতীয় রাকাতের জন্য ওঠে যাবেন। এরপর সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা পড়ে ১৫ বার, রুকুতে ১০ বার, রুকু থেকে সোজা হয়ে ১০ বার, সিজদায় ১০ বার, সিজদা থেকে ওঠে ১০ বার, দ্বিতীয় সিজদায় ১০ বার এবং দ্বিতীয় সিজদা থেকে ওঠে অল্প সময় বসবেন। তখন আরও ১০ বার পড়বেন। পড়া শেষে আবার ওঠে দাঁড়াবেন। আরো হলো: ৭৫ বার। মোট: ২২৫ বার।
.
এরপর চতুর্থ রাকাতে প্রথমে সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা পড়ে ১৫ বার, রুকুতে ১০ বার, রুকু থেকে ওঠে ১০ বার, সিজদায় ১০ বার, সিজদা থেকে ওঠে ১০ বার, দ্বিতীয় সিজদায় আবার ১০ বার, সিজদা থেকে ওঠে বসবেন। বসে আরও ১০ বার পড়বেন। পড়ার পর তাশাহহুদ ও দরুদ পড়বেন। (জানা থাকলে) দু‘আ মাসুরাও পড়বেন। এরপর সালামের মাধ্যমে নামাজ শেষ করবেন। এই রাকাতে আরো হলো ৭৫ বার। মোট: ৩০০ বার।
.
❖ বিকল্প পদ্ধতি:
.
আবদুল্লাহ ইবনু মুবারক (রাহ.) আরেকটি পদ্ধতির কথা বলেছেন। সেই পদ্ধতিতে: সুরা ফাতিহার পূর্বে ১৫ বার, এরপর সুরা ফাতিহা ও অন্য সুরা মিলিয়ে ১০ বার, রুকুতে ১০ বার, রুকু হতে সোজা হয়ে ১০ বার, প্রথম সিজদায় ১০ বার, প্রথম সিজদা থেকে ওঠে বসা অবস্থায় ১০ বার এবং দ্বিতীয় সিজদায় ১০ বার। এক রাকাতে মোট: ৭৫ বার। এভাবে চার রাকাতে (৭৫*৪) মোট ৩০০ বার হয়। এই নিয়মে পড়াকেও আলিমগণ জায়েয বলেছেন। তবে, প্রথম নিয়মটি সহিহ হাদিসসম্মত এবং সেটিই উত্তম।
.
অনেক আলেমের মতে, এই নামাজের মধ্যে রুকুর তাসবিহ (সুবহানা রাব্বিয়াল আযিম) ও সিজদার তাসবিহ (সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা) পড়া জরুরি নয়। তবে পড়তে অসুবিধা নেই। এই নামাজের পর দু‘আ করা জরুরি নয়।
.
আল্লাহই ভালো জানেন।
.
------------------------------------
ইস্তিখারা নামাজের বিবরণ এবং এ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আলোচনা করা হলো।
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
ইস্তিখারা হলো, কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করলে, কাজটি করার পূর্বে আল্লাহর কাছে এর কল্যাণ চাওয়া এবং সেই কাজ যদ অকল্যাণকর হয়, তবে সেটি থেকে আশ্রয় চাওয়া। পাশাপাশি ইস্তিখারা করা হয় দুটো বৈধ কাজের মধ্যে কোনো একটিকে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে। ধরুন, একই সাথে দুটো চাকরির অফার এসেছে। দুটো চাকরিই হালাল। বুঝতে পারছেন না, কোনটিতে জয়েন করবেন কিংবা কোনটি আপনার জন্য অধিক কল্যাণকর হবে। তখন আপনি ইস্তিখারা করবেন। আশা করা যায়, আল্লাহ আপনাকে সঠিক পথ দেখাবেন।
.
❑ ইস্তিখারার পদ্ধতি:
.
প্রথমে অজু করে সাধারণ নফল নামাজের মতো দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়। বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। এরপর দু‘আ করতে হয়। দু‘আর মধ্যে হাদিসে বর্ণিত দু‘আটি অর্থের দিকে খেয়াল রেখে পাঠ করতে হয় এবং কল্যাণ লাভের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হয়।
.
জাবির ইবনু আবদিল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখনই কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার ইচ্ছা করবে, প্রথমে দুই রাকাত নামাজ পড়বে। এরপর বলবে—
.
اَللّٰهُمّ إِنِّيْ أَسْتَخِيْرُكَ بِعِلْمِكَ
আল্লাহুম্মা ইন্নী আসতাখীরুকা বি‘ইলমিকা
[হে আল্লাহ! আমি আপনার ইলমের উসিলায় আপনার কাছে (আমার উদ্দিষ্ট বিষয়ের) কল্যাণ চাই]
.
وَأَسْتَقْدِرُكَ بِقُدْرَتِكَ
ওয়া আসতাক্বদিরুকা বিক্বুদরাতিকা
[আপনার কুদরতের উসিলায় আপনার কাছে (কল্যাণ অর্জনের) শক্তি চাই]
.
وَأَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ الْعَظِيْمِ
ওয়া আসআলুকা মিন ফাদ্বলিকাল ‘আযীম
[আর আপনার কাছে আপনার মহান অনুগ্রহের কিছুটা আমি চাই]
.
فَإِنَّكَ تَقْدِرُ وَلاَ أَقْدِرُ
ফাইন্নাকা তাক্বদিরু, ওয়া লা আক্বদির
[কেননা, (সকল বিষয়ে) আপনার ক্ষমতা রয়েছে; আমার কোনো ক্ষমতা নেই]
.
وَتَعْلَمُ وَلاَ أَعْلَمُ
ওয়া তা‘লামু, ওয়া লা আ‘লাম
[আপনি (সবকিছু) জানেন, আমি কিছুই জানি না]
.
وَأَنْتَ عَلَّامُ الغُيُوْبِ
ওয়া আনতা ‘আল্লামুল গুয়ূব
[আপনি অদৃশ্যের সকল বিষয়ে সর্বজান্তা]
.
اَللّٰهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ
আল্লাহুম্মা ইন কুনতা তা‘লামু
[হে আল্লাহ! আপনি যদি জানেন]
.
أَنَّ هَذَا الأَمْرَ خَيْرٌ لِيْ
আন্না #হাযাল_আমরা খাইরাল লী
[#এই_কাজটি আমার জন্য কল্যাণকর]
.
فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ
ফী দী-নী, ওয়া মা‘আ-শী, ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী
[আমার দ্বীন, আমার জীবন-জীবিকা ও কাজের পরিণামের বিচারে]
.
فَاقْدُرْهُ لِيْ وَيَسِّرْهُ لِيْ
ফাক্বদুরহু লী, ওয়া ইয়াসসিরহু লী
[তাহলে আমার জন্য তা নির্ধারণ করে দিন এবং বিষয়টিকে আমার জন্য সহজ করে দিন]
.
ثُمَّ بَارِكْ لِيْ فِيْهِ
সুম্মা বা-রিক লী ফীহি
[অতঃপর এতে আমার জন্য বরকত দান করুন]
.
وَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ
ওয়া ইন কুনতা তা‘লামু
[আর, যদি আপনি জানেন]
.
أَنَّ هَذَا الأَمْرَ شَرٌّ لِيْ
.
فِيْ دِيْنِيْ وَمَعَاشِيْ وَعَاقِبَةِ أَمْرِيْ
ফী দী-নী, ওয়া মা‘আ-শী, ওয়া ‘আ-ক্বিবাতি আমরী
[আমার দ্বীন, আমার জীবন-জীবিকা ও কাজের পরিণামের বিচারে]
.
فَاصْرِفْهُ عَنِّيْ وَاصْرِفْنِيْ عَنْهُ
ফাসরিফহু ‘আন্নী, ওয়াসরিফনী ‘আনহু
[আপনি তা আমার থেকে সরিয়ে দিন এবং আমাকে তা থেকে ফিরিয়ে রাখুন]
.
وَاقْدُرْ لِيَ الْخَيْرَ حَيْثُ كَانَ
ওয়াক্বদুর লিয়াল খাইরা ‘হাইসু কা-না
[আর আমার জন্য কল্যাণের ফায়সালা করুন; তা যেখানেই হোক]
.
ثُمَّ أَرْضِنِيْ بِه
সুম্মা আরদ্বিনী বিহি
[অতঃপর তাতেই আমাকে সন্তুষ্ট রাখুন]
.
তিনি বলেন, দু‘আটির যে দুই জায়গায় هَذَا الأَمْرَ হাযাল আমর (যার অর্থ) ‘‘এই কাজটি’’ বলা আছে, সেখানে নিজ প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করবে। (কিংবা অন্তত মনে মনে সেটি কল্পনা করবে) [বুখারি আস-সহিহ: ১১৬৬; তিরমিযি, আস-সুনান: ৪৮০; আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৫৩৮]
.
দু‘আ শেষ করার পর মন যেদিকে সায় দেবে এবং যেভাবে কাজটি করা কল্যাণকর মনে হবে, সেটিকে সঠিক ভেবে কাজ শুরু করবেন। ধরুন, আপনার কোথাও যাওয়া দরকার আবার বাসার মধ্যেও থাকা দরকার। এমতাবস্থায় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। তখন ইস্তিখারা করবেন। ইস্তিখারার পর যদি মনে হয়, বাসায় থাকাটাই আপনার জন্য অধিক কল্যাণকর হবে, তাহলে আপনি সেটিই করবেন এবং ভেবে নিবেন, এই সিদ্ধান্তটি আল্লাহর পক্ষ থেকেই এসেছে আর এতেই আপনার কল্যাণ রয়েছে।
.
ইস্তিখারা করার সাথে সাথেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে হবে, বিষয়টি এমন নয়। গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজের জন্য ইস্তিখারা করলে এক বেলা বা কয়েক ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিনও অপেক্ষা করতে পারেন। তবুও সিদ্ধান্ত নিতে কষ্ট হলে প্রয়োজনে একাধিকবার ইস্তিখারা করতে পারেন। এটিও জায়েয। এরপর মন যেদিকে ঝুঁকবে, সেদিকেই কল্যাণ আছে ভেবে নেবেন। এর সাথে সাথে নিজের বিবেক-বুদ্ধির সাহায্য নেবেন এবং নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের সাথেও পরামর্শ করবেন।
.
.
----------------------------------------
অজুর পর দুই রাকাত নামাজের বিনিময়ে জান্নাতের ওয়াদা রয়েছে। এই নামাজকে বলা হয় ‘তাহিয়্যাতুল অজু’। এ সম্পর্কে কিছু মাসয়ালাসহ আলোচনা করা হলো।
▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
উকবা ইবনু আমির (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে, তারপর দাঁড়িয়ে তার চেহারা ও মনকে পুরোপুরি নামাজের দিকে ফিরিয়ে, যা পাঠ করছে তা জেনে-বুঝে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে এবং তাতে কোনো ভুল না করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ২৩৪; হাকিম, আল-মুসতাদরাক: ৩৫০৮; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৭০৫৪]
.
❖ তাহিয়্যাতুল অজুর নামাজের কতিপয় দিক:
.
(১) অজু অথবা গোসলের পর তাহিয়্যাতুল অজুর দুই রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব এবং নফল; এটি ফরজ বা ওয়াজিব নয়। সাধারণ নফল বা সুন্নাত নামাজের মতো দুই রাকাত নামাজ পড়বেন। বিশেষ কোনো নিয়ম নেই।
.
(২) অজু করার পরপরই এই নামাজ পড়তে হয়। আলিমগণ বলেন, অজুর অঙ্গগুলো পুরোপুরি শুকানোর আগেই এটি পড়তে শুরু করা; এর বেশি লেইট না করা। তার মানে এই নয় যে, অজুর পর অজুর অঙ্গগুলো মুছা যাবে না।
.
(৩) অজুর পর বিভিন্ন ওয়াক্তের সুন্নাত নামাজের আগে এটি পড়া যাবে। আবার, কেউ কুরআন তিলাওয়াত বা অন্য কোনো কারণে অজু করলেও এই নামাজ পড়া যাবে।
.
(৪) অজুর পরপর মাসজিদে প্রবেশ করলে তাহিয়্যাতুল অজু এবং তাহিয়্যাতুল/দুখুলুল মাসজিদ একত্রে আদায় করা যাবে। মানে ২ নামাজের নিয়ত একত্রে করে শুধু দুই রাকাত পড়লেই চলবে। তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সম্পর্কে অন্য পর্বে আলোচনা আসবে।
.
(৫) অজুর পর নামাজ পড়ে দু‘আ করলে আল্লাহ কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করবে, এরপর পূর্ণরূপে দুই রাকাত নামাজ পড়বে, আল্লাহ্ তার চাওয়ার বিষয় দান করবেন—শীঘ্রই অথবা কিছু কাল পর।’’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৬/৪৪৩; হাদিসটির সনদ সহিহ]
.
(৬) এই নামাজের উপর গুরুত্ব দিয়ে আমল করতেন বিলাল (রা.)। আল্লাহ্ এর বিনিময়ে তাঁকে বিরাট মর্যাদা দান করেছেন।
.
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাল (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে বললেন, “হে বিলাল! আমাকে সর্বাধিক আশা-জাগানিয়া আমল সম্পর্কে বলো, যা তুমি ইসলাম গ্রহণের পর আমল করেছো। কেননা, আমি (মি’রাজের রাতে) জান্নাতের মধ্যে আমার সামনে তোমার জুতার আওয়াজ শুনেছি।” বিলাল (রা.) বললেন, ‘আমার দৃষ্টিতে এর চেয়ে অধিক আশা-জাগানিয়া এমন কোনো আমল করিনি যে, আমি রাত-দিনের মধ্যে যখনই পবিত্রতা অর্জন (অজু, গোসল অথবা তায়াম্মুম) করেছি, তখনই আমার রবের উদ্দেশ্যে নামাজ পড়েছি, যতটুকু নামাজ পড়া আমার জন্য লিখা ছিলো।’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১১৪৯; ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৭০৮৫]
.
--------------------------------------
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের বিস্তারিত রূপরেখা ও তাহাজ্জুদের মাধ্যমে উপকৃত হতে করণীয়
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
❂ ঘুমানোর সময় মাসনুন আমলগুলো করার পর তাহাজ্জুদের জন্য ওঠার আন্তরিক ইচ্ছা নিয়ে ঘুমাতে যান। তাহলে, ঘুমের কারণে ওঠতে না পারলেও তাহাজ্জুদের নেকি পেয়ে যাবেন। এই মর্মে বিশুদ্ধ হাদিস রয়েছে। [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩১৪; নাসায়ি, আস-সুনান: ১৭৮৩; হাদিসটি সহিহ]
.
❂ যথাসম্ভব তাহাজ্জুদের জন্য শেষ রাতে জাগ্রত হোন। মিসওয়াক করুন। কমপক্ষে টুথব্রাশ ব্যবহার করুন। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা যখন তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য উঠতেন, তখন মিস্ওয়াক দ্বারা তাঁর মুখ পরিষ্কার করে নিতেন। [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৭০]
.
❂ এরপর অজু করুন। প্রথমেই সংক্ষেপে দুই রাকাত দিয়ে নামাজ শুরু করুন। অর্থাৎ, প্রথম দুই রাকাত সংক্ষিপ্তভাবে আদায় করুন। এটি সুন্নাত। [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৬৮]
.
❂ এরপর যথাসম্ভব দীর্ঘ কিয়াম (দাঁড়িয়ে থাকা) ও লম্বা কিরাতের (তিলাওয়াত) মাধ্যমে নামাজ পড়তে থাকুন। কিরাত ও কিয়াম দীর্ঘ করতে একই রাকাতে একাধিক সুরা পড়তে পারেন। দীর্ঘ কিয়ামের নামাজকে হাদিসে উত্তম নামাজ বলা হয়েছে। [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৫৬]
.
❂ রুকু-সিজদার তাসবিহ ৫/৭ বার অথবা আরও বেশি করে পড়ে রুকু-সিজদাকে দীর্ঘ করুন। সিজদায় তাসবিহ (সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা) পাঠের পর আল্লাহর কাছে দু‘আও করতে পারেন।
.
❂ নামাজের স্থানটি নিরিবিলি হওয়া উচিত। মনোযোগ ঠিক থাকে। অন্ধকারে তাহাজ্জুদ পড়া জায়েয। তবে, সামান্য আলো রাখতে পারেন। বিশেষত সিজদার স্থানটিতে। তাহলে, কোনো পোকা-মাকড় বা অন্য কিছুর ভয় থাকে না। আবার অন্ধকারে অনেক সময় ঘুম ঘুম ভাব আসতে পারে।
.
❂ নামাজ দুই রাকাত করে পড়তে থাকুন। এটিই উত্তম। [বুখারি, আস-সহিহ: ৪৭২]
.
❂ সর্বনিম্ন ২ রাকাত থেকে শুরু করে ৪, ৬, ৮, ১০ রাকাতও পড়া যায়। এগুলো হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩৫৭ ও ১৩৬২; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৫১৫৯; হাদিসগুলো সহিহ]
.
❂ নবিজি অধিকাংশ সময় রাতে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন। [বুখারি, আস-সহিহ: ১১৪৭]
.
❂ যতক্ষণ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে পড়তে পারবেন, ততক্ষণ পড়ুন। ঘুম পেলে শুয়ে পড়ুন। শরীরের উপর প্রেসার না দিতে বলা হয়েছে বিভিন্ন হাদিসে। [বুখারি, আস-সহিহ: ২১২]
.
❂ তাহাজ্জুদের নামাজের বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। সাধারণ সুন্নাত বা নফল নামাজের মতই এই নামাজ পড়তে হয়। বিশেষ কোনো সুরা দিয়ে এই নামাজ পড়তে হয় না। যেকোনো সুরা দিয়ে তাহাজ্জুদ পড়তে পারেন। তবে, যথাসম্ভব বড় সুরা পড়ুন। না পারলে একাধিক সুরা পড়ুন। নামাজ শেষে দু‘আ করা জরুরি নয়। তবে, শেষ রাতে দু‘আ কবুল হয়। তাই, সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত নয়। যথাসম্ভব নিজের আমলকে গোপন রাখার চেষ্টা করুন।
.
তাহাজ্জুদের গুরুত্ব উপলব্ধির জন্য একটি আয়াত ও একটি হাদিস জেনে নিন।
.
❂ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রাতের বেলা সিজদারত থাকে বা (ইবাদতে) দাঁড়ানো থাকে, আখিরাতের ব্যাপারে শঙ্কিত থাকে এবং নিজ রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এমনটি করে না?’’ [সুরা আয-যুমার, আয়াত: ০৯]
.
❂ আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ‘কিয়ামুল লাইল (রাতের নামাজ) ত্যাগ করবে না। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কখনো) এটি ত্যাগ করতেন না। যখন তিনি অসুস্থ থাকতেন বা ক্লান্তি অনুভব করতেন, তখন বসে আদায় করতেন।’ [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩০৯; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৪৯১৯; হাদিসটি সহিহ]
.
------------------------------------
মাসজিদে প্রবেশ করার পরই না বসে দুই রাকাত ‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ বা ‘দুখুলুল মাসজিদ’ নামাজ পড়তে হয়। এ সম্পর্কে কিছু মাসয়ালাসহ আলোচনা করা হলো।
▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬
আবু কাতাদাহ (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের কেউ যখন মাসজিদে প্রবেশ করে, তখন সে যেন দুই রাকাত (তাহিয়্যাতুল মাসজিদের নামাজ) আদায় করা ব্যতীত না বসে।” [বুখারি, আস-সহিহ ১১১০; মুসলিম, আস-সহিহ: ১৬৮৭]
.
তাহিয়্যাতুল মাসজিদ সম্পর্কে জরুরি কিছু বিষয়:
.
(১) মাসজিদে প্রবেশের পরপর না বসে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়। এর নাম তাহিয়্যাতুল মাসজিদ। এটি মাসজিদের অধিকার এবং মাসজিদে আগন্তুকের পক্ষ থেকে মসজিদের প্রতি সৌজন্যবোধ।
.
(২) তাহিয়্যাতুল মাসজিদ নামাজ ফরজ বা ওয়াজিব নয়, বরং মুস্তাহাব ও নফল। তবে, এ ব্যাপারে হাদিসে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তাই, এই নামাজ পড়া উচিত। মাসজিদে এসে কোনো কারণ ছাড়া এই নামাজ না পড়ে বসে পড়াকে আলিমগণ মাকরুহ (অপছন্দনীয়) মনে করতেন। [নববি, শারহু মুসলিম: ৩/৩৪]
.
(৩) বিশেষ কোনো নিয়ম নেই, বরং সাধারণ নফল বা সুন্নাতের মতো দুই রাকাত নামাজ পড়বেন।
.
(৪) যদি মাসজিদে ঢুকে দেখেন, জামাত শুরু হয়ে গেছে, তাহলে জামাতে শামিল হবেন। আর যদি দেখেন, পর্যাপ্ত সময় আছে, তাহলে না বসে প্রথমে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করবেন। এরপর যদি সুন্নাত থাকে, তবে সুন্নাত আদায় করবেন। সুন্নাত পড়ার সময় আছে, কিন্তু সুন্নাত+তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়ার সময় নেই, তখন শুধু সুন্নাত পড়বেন। তাহলে তাহিয়্যাতুল মাসজিদও আদায় হয়ে যাবে।
.
(৫) আজান চলা অবস্থায় মাসজিদে প্রবেশ করলে দাঁড়ানো অবস্থায় প্রথমে আজানের জবাব দেবেন, এরপর তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করবেন। [ইবনু রজব, ফাতহুল বারি: ৪/২১০]
.
(৬) সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও ঠিক দুপুরে যেহেতু নামাজ আদায় করা জায়েয নেই, তাই এই সময়গুলোতে মাসজিদে প্রবেশ করলে কোনো নামাজই পড়বেন না; এমনকি তাহিয়্যাতুল মাসজিদও না। তবে, কোনো কোনো আলিম বলেছেন, মাসজিদে ঢুকে দুই রাকাত না পড়ে না বসার জন্য বলা হয়েছে হাদিসে (সহিহ মুসলিম: ৭১৪) তাই, যেকোনো সময়ে মাসজিদে প্রবেশ করলেই এই নামাজ পড়া যাবে। অর্থাৎ, তাঁদের মতে, তাহিয়্যাতুল মাসজিদের হুকুম ভিন্ন। আমরা বলবো, এই সময়গুলোতে যেহেতু আমভাবে ‘নামাজ’ না পড়ার জন্য হাদিসে নিষেধ করা হয়েছে (সহিহ মুসলিম: ১৯৬৬), তাই কোনো নামাজই এ সময়ে না পড়া উত্তম।
.
(৭) জুমু‘আর দিনে খুতবা চলাকালে মাসজিদে প্রবেশ করলে কী করণীয়, তা নিয়ে মতানৈক্য আছে। অধিকাংশ আলিমের মত হলো, এমতাবস্থায় বসে যাবে এবং খুতবা শুনবে; কারণ খুতবা শুনা ওয়াজিব। তবে, আলিমগণের একাংশের মতে, প্রথমে দ্রুত দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করে নেবে, এরপর খুতবা শুনবে। দুই পক্ষেই হাদিসের বিভিন্ন দলিল রয়েছে।
.
(৮) ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয়ে যাওয়ার পরও যদি কেউ মাসজিদে ঢুকে, তাহলে প্রথমে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ আদায় করবে, এমনটি বলেছেন আলিমগণের একাংশ। তবে, অধিকাংশ আলিমের মত হলো, ফজর শুরু হয়ে গেলে ফজরের নামাজ ব্যতীত অন্য কোনো নামাজ নেই। তাই এ সময় মাসজিদে গেলে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ পড়বেন না। হাফসা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত ছাড়া অন্য কোন নামাজ পড়তেন না (এরপর দুই রাকাত ফরজ পড়তেন)। [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৭১১]
.
--------------------------------------
তাওবাহর পরিচয়, এর সঠিক পদ্ধতি এবং তাওবাহর নামাজ সম্পর্কে আলোচনা
▬▬▬▬▬▬▬❂▬▬▬▬▬▬▬
❖ তাওবাহর পরিচয়:
.
তাওবাহ আরবি শব্দ, এর অর্থ ফিরে আসা। অর্থাৎ বান্দা গুনাহ করার মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে যায়। পরে সে অনুতপ্ত হয়ে আবার তাঁর কাছে ফিরে আসে, ক্ষমা চায়। এটাই তাওবাহ্।
.
❖ তাওবাহর পদ্ধতি:
.
তাওবাহ করার জন্য অজু, গোসল, নামাজ কোনোটিই জরুরি নয়। বরং তাওবাহর শর্তগুলো মেনে আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করলেই যথেষ্ট হয়ে যায়। তাওবাহর শর্ত তিনটি: নিজ গুনাহের স্বীকারোক্তি দেওয়ার সাথে সাথে গুনাহটি ওই মুহূর্তে ছেড়ে দেওয়া, গুনাহটি করার জন্য আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হওয়া এবং সেই গুনাহটি ভবিষ্যতে আর না করার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প করা। [নববি, রিয়াদুস সালিহিন]
.
❖ তাওবাহর নামাজ:
.
উপরে আমরা জানলাম, তাওবাহর জন্য শুধু তিনটি শর্ত মানতে হয়। তবে, উত্তম হলো, প্রথমে ভালোভাবে অজু করে তাওবাহর উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। এরপর তাওবাহর শর্তগুলো অনুসরণ করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া।
.
আবু বকর (রা.) বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যখন কোনো বান্দা গুনাহ করার পর সুন্দরভাবে অজু করে দাঁড়িয়ে যায় এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে, তখন আল্লাহ তাকে অবশ্যই ক্ষমা করে দেন।” অতঃপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করেন, ‘‘আর, যখন তারা কোনো অন্যায় কাজ করে কিংবা (গুনাহ করার মাধ্যমে) নিজেদের উপর জুলুম করে, আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায় (তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন)। আর, আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না।’’ (সুরা আলে ‘ইমরান, আয়াত: ১৩৫) [তিরমিযি, আস-সুনান: ৪০৮; হাদিসটি সহিহ]
.
তাওবার নামাজ প্রসঙ্গে কিছু কথা:
.
(১) উত্তমরূপে অজু করে সাধারণ নফল নামাজের মতো দুই রাকাত নামাজ পড়বেন তাওবাহর উদ্দেশ্যে। বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। মনের মধ্যে এই নিয়ত রাখবেন যে, তাওবাহর উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ছেন।
.
(২) নামাজের সিজদায় (সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা ৩ বার পড়ার পর) হাদিসে বর্ণিত বাক্যগুলো দিয়ে ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করতে পারেন। তবে, এটি জরুরি নয়। শেষ বৈঠকে সালাম ফেরানোর আগেও ইস্তিগফার করতে পারেন। যাদের দু‘আ মাসুরা (আল্লাহুম্মা ইন্নি যলামতু নাফসি...শেষ পর্যন্ত) মুখস্থ, তারা অর্থের দিকে লক্ষ রেখে এটি পড়তে পারেন এবং অন্যান্য ইস্তিগফারও করতে পারেন। এরপর সালাম ফেরাবেন। সালাম ফিরিয়ে কান্নাকাটি করে আন্তরিকতার সাথে দু‘আ করবেন।
.
(৩) তবে, এগুলো কোনোটিই না করে, তাওবাহর উদ্দেশ্যে স্রেফ দুই রাকাত নামাজ শেষ করে তাওবাহর শর্তগুলো মেনে দু‘আ করলেই যথেষ্ট হবে। তাওবাহর ৩ টি শর্তের কথা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
.
(৪) যদি এমন মনোভাব থাকে যে, ‘‘এখন তাওবাহ করে নিই; পরেরটা পরে দেখা যাবে কিংবা আপাতত এই গুনাহে জড়াবো না, কিছুদিন ভালো থাকবো অথবা আমি তো গুনাহটি ছাড়তে পারবো না, কিছুদিন পরেই করে ফেলবো’’ তাহলে সে তাওবাহর দাবিতে সত্যবাদী নয়। বরং তাওবাহ করার সময়ে সে সত্যিকারার্থেই আন্তরিকভাবে তাওবাহ করবে এবং মনোভাব থাকবে, আসলেই সে এই গুনাহটি বাকি জীবনে করতে চায় না এবং পূর্বে যা হয়েছে তার জন্য সে খুবই দুঃখিত, লজ্জিত ও অনুতপ্ত। এভাবে মনের দিক থেকে শতভাগ সৎ থেকে তাওবাহ করলে তার তাওবাহ কবুল হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ। পরবর্তিতে যদি কিছুদিন পর শয়তান আবার গুনাহে প্ররোচিত করে এবং প্রবৃত্তির প্ররোচনায় আবার সে গুনাহ করে বসে, তবে সে আবারও আন্তরিকভাবে তাওবাহ করবে। কখনই হাল ছাড়বে না এবং মনের সাথে অসততা দেখাবে না। এভাবে আন্তরিকতার সাথে তাওবাহ চালিয়ে গেলে আশা করা যায়, সে মুক্তি পেয়ে যাবে। কুরআন-সুন্নাহ এমনটিই বলে।
.
(৫) একসাথে একাধিক গুনাহর ব্যাপারেও তাওবাহ করা যায় আবার নির্দিষ্ট একটি গুনাহের ব্যাপারেও তাওবাহ করা যায়।
.
(ভবিষ্যতে তাওবাহর উপর একটি সিরিজ লেখার ইচ্ছা আছে। আল্লাহই তাওফিকদাতা)
.
------------------------------------
সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের সময় করণীয়; এ সময়ের নামাজের বিবরণ ও কিছু কুসংস্কার
▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
সাহাবি মুগিরা ইবনু শু’বা (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুত্র ইবরাহিমের মৃত্যুর দিনটিতে সূর্যগ্রহণ হলে সকলেই বলাবলি করছিলো যে, নবিপুত্রের মৃত্যুর কারণেই এমনটি ঘটেছে। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সূর্য এবং চন্দ্র আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে দুটি নিদর্শন। কারো মৃত্যু কিংবা জন্মগ্রহণের ফলে চন্দ্র বা সূর্যগ্রহণ হয় না।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৪৩; মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯৬৩]
.
❑ সূর্যগ্রহণের আমল:
.
➤ সূর্যগ্রহণের সময় ৮ টি আমলের কথা সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমের কতিপয় হাদিসে পাওয়া যায়। সেগুলো হলো: (১) নামাজ আদায় করা; (২) দু‘আ করা; (৩) তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলা; (৪) সাদাকাহ করা; (৫) যিকর করা; (৬) ইস্তিগফার পাঠ করা; (৭) গোলাম আজাদ করা ও (৮) কবরের আজাব থেকে পানাহ চাওয়া।
.
◉ আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (সূর্যগ্রহণের নামাজ আদায়ের পর) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বক্তব্যে বলেন, ‘‘যখন তোমরা তা (সূর্যগ্রহণ) দেখবে, তখন আল্লাহর নিকট দু‘আ করবে। তাঁর বড়ত্ব ঘোষণা করবে, নামাজ আদায় করবে এবং সাদাকা প্রদান করবে।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৪৪]
.
◉ সহিহ বুখারির অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘‘তোমরা যখন এমন কিছু দেখতে পাও, তখন ভীত হয়ে আল্লাহর যিকর, দু‘আ ও ইস্তিগফারে মশগুল হও।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৫৯; মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯৮৯]
.
◉ আসমা (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহনের সময় গোলাম আজাদ (মুক্ত) করার নির্দেশ দিয়েছেন। [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৫৪]
.
◉ অন্য একটি বর্ণনায় কবরের আযাব থেকে মুক্তি চাওয়ার জন্য বলেছেন। [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৫০]
.
➤ সূর্যগ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নামাজ ও দু‘আর মধ্যে লেগে থাকা উচিত।
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে, তখন পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত নামাজ আদায় করবে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯৭২]
.
➤ সূর্যগ্রহণের নামাজের সবকিছু দীর্ঘ সময় নিয়ে করাই নিয়ম।
.
আবু মুসা (রা.) হতে বর্ণিত, নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময়ে একবার সূর্যগ্রহণ হলো। তিনি ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দাঁড়ালেন। তিনি কিয়ামত হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। অবশেষে তিনি মাসজিদে এসে নামাজে দাঁড়ালেন এবং অনেক লম্বা কিয়াম, লম্বা রুকূ, লম্বা সিজদা-সহকারে নামাজ আদায় করতে লাগলেন। আমি কখনও কোনো নামাজ তাঁকে এত লম্বা করতে দেখিনি।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯৮৬]
.
❑ নামাজের পদ্ধতি:
.
(১) সূর্যগ্রহণের নামাজের কিরাত জোরে পড়া হবে নাকি আস্তে পড়া হবে, তা নিয়ে আলিমগণ মতভেদ করেছেন। তবে, জোরে পড়ার পক্ষের হাদিস তুলনামূলক অধিক সহিহ ও স্পষ্ট। আস্তে বা জোরে উভয় অবস্থায় নামাজ সহিহ হয়ে যাবে। [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৪০; ১০৬৫; মুসলিম, আস-সহিহ: ৯০১; তিরমিযি, আস-সুনান: ৫৬২; মাওসু‘আতুল ফিকহিয়্যাহ: ২৭/২৫৭]
.
(২) সূর্যগ্রহণের নামাজে প্রতি রাকাতে রুকু কয়টি করে করতে হবে, তা নিয়ে আলিমগণের মাঝে মতভেদ আছে। কারণ এ ব্যাপারে বিভিন্ন বর্ণনার হাদিস পরিলক্ষিত হয়। বিভিন্ন হাদিসের মাঝে সমন্বয় করে এদেশের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস মুফতি আমিমুল ইহসান (রাহ.) সাধারণ নামাজের মতো প্রতি রাকাতে একটি রুকু করার ব্যাপারে মত ব্যক্ত করেছেন। হানাফি মাযহাবে এটিকেই উত্তম বলা হয়েছে। [ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার, অনুবাদ: ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহ.): ১/৩৬৫]
.
(৩) জামাতবদ্ধ হয়ে মাসজিদে এই নামাজ পড়া উত্তম। তবে, ব্যক্তিগতভাবেও নিজ নিজ ঘরে এই নামাজ পড়া যাবে। জামাতে আদায় করলে নারীরাও এই নামাজে অংশ নিতে পারবেন। আবার, বাসায় একাকিও পড়া যাবে। আয়িশা (রা.), আসমা (রা.) ও অন্যান্য নারীগণ নবিজির সাথে সূর্যগ্রহণের নামাজ আদায় করেছিলেন। [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৫৩; মুসলিম, আস-সহিহ: ১৯৮০]
.
(৪) এই নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জনে অজু করাই যথেষ্ট। তবে গোসল করতে পারলে, সেটিকে উত্তম (মুস্তাহাব) বলেছেন আলিমগণ।
.
(৫) সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণের নামাজে কিরাত ও রুকু-সিজদা দীর্ঘ করা সুন্নাত (তবে, বাধ্যতামূলক নয়)।
.
(৬) এই নামাজের জন্য আজান ও ইকামতের প্রয়োজন নেই।
.
(৭) উত্তম হলো, সূর্যগ্রহণ শুরু হওয়ার পর থেকে নিয়ে সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত নামাজে থাকা। সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ শেষ হওয়ার আগেও নামাজ শেষ করা বৈধ। বাকি সময় যিকর, দু‘আ ও ইস্তিগফারে কাটানো উচিত।
.
(৮) সূর্যগ্রহণ ও চচন্দ্রগ্রহণের সময়ে যত বিধিনিষেধের কথা বলা হয়—যেমন: গর্ভবতী মায়েরা এই কাজ সেই কাজ করতে পারবে না, এই সময়ে কেউ খেতে পারবে না, এই সময়ে সন্তান জন্ম নিলে এই হবে সেই হবে, এই সময়ে বৈধ যৌন-সঙ্গমও করা যাবে না—এগুলো সবই কুসংস্কার; এসবে বিশ্বাস রাখা যাবে না।
.
সংক্ষেপে: সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের নামাজ নফল। বাসায় বা মাসজিদে একাও পড়া যায় আবার জামাতেও পড়া যায়। নারী বা পুরুষ সবার ক্ষেত্রেই। জামাতে হলে নারীরাও অংশ নিতে পারবেন। সাধারণ নফল নামাজের মতো দুই রাকাত নামাজ পড়বেন। তবে, কিরাত ও রুকু-সিজদা দীর্ঘ করা সুন্নাত। এ ব্যাপারে চেষ্টা করবেন।
.
-----------------------------------------
.
--------------------------------------------------
>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের (৪০০+) pdf লিংক
https://justpaste.it/4ne9o
>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.
https://justpaste.it/islamicappvideo
>> রবের_কাছে_ফেরার_গল্পগুলো
https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo
>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"
https://justpaste.it/5gol5
>> র্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট
https://justpaste.it/76iwz
>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.
https://justpaste.it/islamicappvideo
>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক
https://justpaste.it/facebook_page_grp_link
>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?
https://justpaste.it/6q4c3
>> কুরআন এবং আপনি
https://justpaste.it/5dds8
>> কখনও ঝরে যেও না …
https://justpaste.it/3bt22
>> ফজরে আমি উঠতে পারি না
https://justpaste.it/6kjl6
>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1
>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr
>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম
https://justpaste.it/7u5es
>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়
https://justpaste.it/8dccj
>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব
https://justpaste.it/6ttuf
>> স্বার্থক মুনাজাত
https://justpaste.it/1xf0t
>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ
https://justpaste.it/4hhtd
>> তাহাজ্জুদ সিরিজ
https://justpaste.it/4ja0n
>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব
https://justpaste.it/3dxi7
>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)
https://justpaste.it/7056k
>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ
https://justpaste.it/7fh32
>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ
https://justpaste.it/9icuq
>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল
https://justpaste.it/8gmtk
>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf
>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)
https://justpaste.it/8vnly
>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir
>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh
>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5
>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর (তাওহীদ সিরিজ, আকিদা সিরিজ, তাহাজ্জুদ, সালাত, আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ নিয়ে আলোচনা, ধূলিমলিন উপহার রামাদান, আলোর পথে যাত্রা, পরকালের পথে যাত্রা, শ্রেষ্ঠ মানুষেরা(নবীদের জীবনী), জীবন-মৃত্যু-জীবন, সীরাহ(রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনী), কুরআনের কথা, কোরআনের বিভিন্ন সূরার তাফসীর, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু, সাহাবীদের ঈমানদীপ্ত জীবনী, বোনদের প্রতি উপদেশ) অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1
>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j
>> রমজানের প্রস্তুতি : মুমিনের পথ ও পাথেয়
https://justpaste.it/5tziy
>> কাফির ও ইসলামের শত্রুদের মৃত্যু বা বিপদে আনন্দ প্রকাশ
https://justpaste.it/6ksvm
>> মহিমান্বিত রজনী (লাইলাতুল কদর) সিরিজ, লাইলাতুল কদরের জন্য ১২ টি সহজ আমল এবং ইতিকাফের গুরুত্ব, ফজিলত, উদ্দেশ্য, আমল।
https://justpaste.it/1q3bs
>> বিশেষ নফল নামাজ সিরিজ (ইশরাক, দোহা, চাশত, আওয়াবিন, যাওয়াল, সালাতুল হাজত, সালাতুত তাসবিহ)
https://justpaste.it/9n0kf
>> হাদিসের শিক্ষা সিরিজ
https://justpaste.it/4fywd
>> ইস্তিখারা সিরিজ
https://justpaste.it/2i736
>> আমাদের নবীজি (সাঃ) সিরিজ
https://justpaste.it/4c1tt
>> Words With Nusus সিরিজ
https://justpaste.it/6h968
>> বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিন (জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন)
https://justpaste.it/1s2vv
>> আশুরা দিবস : বাস্তবতা, পালনীয় ও বর্জনীয়
https://justpaste.it/3kn8w
>> বিবাহের কিছু আমল ও দু‘আ এবং সুখী দাম্পত্যজীবনের জন্য ১০টি করণীয়, স্ত্রীকে বশ করে রাখার টোটকা
https://justpaste.it/58k7y
>> দুআ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লেখাসমূহ, দুআ কবুলের সময় শর্তাবলী ও আদবসমূহ, দুআ কবুলের গল্পগুলো
https://justpaste.it/7ttq6
>> কুরআন কারীম নিয়ে আতিক উল্লাহ হুজুরের অসাধারন কিছু কথা ও উপদেশ
https://justpaste.it/8abde
.
>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে। সবগুলো বিষয়ের লিংক এক জায়গায় রাখা হয়েছে। এই লিংকটা শেয়ার করতে পারেন।
https://justpaste.it/48f6m