JustPaste.it

ইস্তিগফার_অপার_সম্ভাবনার_দ্বার

 

ইস্তিগফার এমন একটি আমল, যার মাধ্যমে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়। তাই, সঠিক নিয়মে, সঠিক বাক্যে ইস্তিগফার করতে অবহেলা করা উচিত নয়। আমরা মোট ৭ টি পর্বে ইস্তিগফারের প্রায় সকল আলোচনা সংক্ষেপে তুলে এনেছি। (লিংক কাজ না করলে সমস্যা নাই। এখানেই সব লেখা দেয়া আছে)
.
প্রথম পর্ব : ইস্তিগফার কী, এর নিয়ম-কানুনসহ ইস্তিগফার সংক্রান্ত ১০ টি বিষয়
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2465208690246098&id=1698393090260999

.
দ্বিতীয় পর্ব : ইস্তিগফারের সীমাহীন মর্যাদা ও লাভসমূহ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2466768450090122&id=1698393090260999

.
তৃতীয় পর্ব : ইস্তিগফারের সময়, স্থান ও পরিস্থিতি
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2469032559863711&id=1698393090260999

.
চতুর্থ পর্ব : হাদিস থেকে শ্রেষ্ঠ ১১ টি ইস্তিগফারের বাক্য, অর্থ ও উচ্চারণসহ।
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2471254572974843&id=1698393090260999

.
পঞ্চম পর্ব : কুরআন হতে শ্রেষ্ঠ ১০ টি ইস্তিগফারের বাক্য অর্থসহ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2473719756061658&id=1698393090260999

.
ষষ্ঠ পর্ব : বাবা মা, আত্মীয় ও জীবিত-মৃত মুসলিমদের জন্য ইস্তিগফার
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2487447014688932&id=1698393090260999

.
সপ্তম পর্ব : ফিনিশিং, কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2607848205982145&id=1698393090260999

.
শেয়ার বা সেইভ করে রাখতে পারেন। কপিও করতে পারেন। আমরা অত্যন্ত যত্নের সাথে পুরো কাজটি করেছি। ইনশাআল্লাহ সবাই উপকৃত হবেন।
.
#Tasbeeh

 

প্রথম পর্ব : ইস্তিগফার কী, এর নিয়ম-কানুনসহ ইস্তিগফার সংক্রান্ত ১০ টি বিষয়

 

ইসতিগফার-সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ দশটি বিষয় উপস্থাপন করা হচ্ছে—বিইযনিল্লাহ্
.
প্রথমে বলে রাখি—ইসতিগফার হলো, আল্লাহর নিকট গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
.
ইসতিগফার কীভাবে করতে হয়?
.
ইসতিগফারের জন্য নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অনেক দু‘আ শিখিয়ে গেছেন। এছাড়া আল কুরআনেও ইসতিগফারের অনেক দু‘আ বর্ণিত হয়েছে। সেগুলোর কোনোটি নবীদের, আবার কোনোটি নেককার বান্দাদের। সেসব বাক্য দিয়ে আল্লাহর কাছে ইসতিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়। যেমন: নবীজি এভাবে ইসতিগফার করেছেন—
.
أَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِيْ
.
[উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি]
অর্থ: হে আল্লাহ্ আমাকে ক্ষমা করুন
[সহিহ মুসলিম: ২৬৯৭]
.
ইসতিগফার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ দশটি বিষয় সবার জানা থাকা দরকার:
.
[১] ইসতিগফার হাত তুলে দু‘আ করার মাধ্যমেও করা যায় আবার হাত না তুলে ইসতিগফারের বাক্যগুলো পাঠ করেও করা যায়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হলো, অন্তরের অনুশোচনা ও অনুতাপ।
.
[২] ইসতিগফারের জন্য অযুর প্রয়োজন নেই। তবে, দু‘আর মাধ্যমে ইসতিগফার করলে অযু করে নিলে মনোযোগ, একাগ্রতা ও খুশু-খুযু পাওয়া যায়।
.
[৩] হেঁটে-হেঁটে, দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে, নিঃশব্দে বা সশব্দে (খুব জোরে সীমালঙ্ঘন না করে) সর্বাবস্থায় ইসতিগফার করা যায়। ইসতিগফারের ক্ষেত্রে কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি।
.
[৪] ইসতিগফার যেকোনো সময় করা যায়। (তবে ইসতিগফারের জন্য রয়েছে কিছু শ্রেষ্ঠ সময় ও মুহূর্ত। আমরা সেগুলো নিয়ে অন্য একটি পোস্টে আলোচনা করব—ইনশাআল্লাহ্)
.
[৫] ইসতিগফার শুধু নিজের জন্যই নয়, মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনসহ যেকোনো জীবিত বা মৃত মুসলিমের জন্যই করা যায়। [সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১]
.
[৬] কোনো কাফিরের জন্য ইসতিগফার করা হারাম। নবীজির চাচা আবু তালিব সারাজীবন নবীজির জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেছেন, কিন্তু ঈমান আনার সৌভাগ্য হয়নি। তার মৃত্যুর সময় নবীজি আল্লাহর নিকট ইসতিগফার করছিলেন। তখন আয়াত অবতীর্ণ হয়—‘‘নবী ও মুমিনদের উচিত নয় যে, তারা মুশরিকদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে—যদিও তারা নিকটাত্মীয় হয়—যখন তাদের কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, তারা জাহান্নামী।’’ [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ১১৩]

[৭] কুরআন-হাদিসে ইসতিগফারের জন্য যেসব শব্দ এসেছে, সেগুলোর বাইরেও অন্য যেকোনো উপযুক্ত শব্দ বা বাক্য দিয়ে ইসতিগফার করা যায়। এমনকি যেকোনো ভাষায় ইসতিগফার করা যায়। তবে, কুরআন-সুন্নাহয় উল্লেখিত ইসতিগফারের বাক্যগুলোর মর্যাদা ও নেকি অনেক বেশি। এগুলো কবুল হওয়ার ক্ষেত্রেও বেশি সম্ভাবনা রাখে। [বিস্তারিত জানতে দেখুন: রাহে বেলায়াত, ড. আব্দুল্লাহ্ জাহাঙ্গীর; ৯৬-১০৪ পৃষ্ঠা]
.
[৮] যতবার ইচ্ছা ইসতিগফার করা যায়। নির্দিষ্ট সংখ্যক পড়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে, যেসকল হাদিসে স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট সংখ্যায় পড়ার কথা এসেছে, সেগুলো সেভাবেই পড়তে হবে। যেমন: প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে তিন বার ইসতিগফার পড়া। [সহিহ মুসলিম: ৫৯১]
.
[৯] পিরিয়ড অবস্থায় কুরআন পড়া নিষেধ থাকলেও ইসতিগফার, দরুদ, যিকর, দু‘আ ইত্যাদি পড়তে কোনো বাধা-নিষেধ নেই। এ ব্যাপারে আলিমগণ একমত।
.
[১০] সিজদায় ইসতিগফার পড়া যাবে। কারণ ইসতিগফার এক ধরনের দু‘আ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদার হালতেও ইসতিগফার পড়েছেন। [সহিহ বুখারি: ৭৯৪]
.
[আমরা ইসতিগফারের উপর ধারাবাহিকভাবে আরো কয়েকটি পোস্ট দিব ইনশাআল্লাহ্। সেগুলোর মধ্যে আসবে—ইসতিগফারের গুরুত্ব ও মর্যাদা, এর উপযুক্ত সময় ও মুহূর্ত, ইসতিগফারের মাসনূন (হাদিসসম্মত) বাক্যগুলো, ইসতিগফার সম্পর্কে সালাফদের বিভিন্ন বক্তব্য ইত্যাদি। মোট ৫/৬ পর্ব হতে পারে]
.


দ্বিতীয় পর্ব : ইস্তিগফারের সীমাহীন মর্যাদা ও লাভসমূহ

.

ইসতিগফারের সীমাহীন মর্যাদা ও লাভসমূহ [কুরআন-সুন্নাহর দলিলের আলোকে]
.
(১) আযাব-গযব থেকে সুরক্ষা:
.
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারিমে বলেন, ‘‘আল্লাহ কখনই তাদের উপর আযাব দিবেন না, যতক্ষণ আপনি (নবীজি) তাদের মাঝে অবস্থান করবেন এবং তারা ইসতিগফার করা অবস্থায়ও তাদের উপর আযাব অবতীর্ণ করবেন না।’’ [সূরা আনফাল, আয়াত: ৩৩]
.
আযাব আসার প্রতিবন্ধক ছিলেন নবীজি। তিনি চলে গেছেন। এখন বাকি আছে ইসতিগফার। সুতরাং এর গুরুত্ব কত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
.
(২) দুনিয়া ও আখিরাতে উপভোগ্য জীবনের নিশ্চয়তা:
.
আল্লাহ্ বলেন, ‘‘আর তোমরা নিজেদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, তাঁর দিকে ফিরে আসো। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (দুনিয়াতে) উৎকৃষ্ট জীবন উপভোগ করাবেন এবং অধিক আমলকারীকে (আখিরাতে) বেশী করে দেবেন। আর যদি তোমরা বিমুখ হয়ে থাকো, তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা-দিবসের আযাবের আশঙ্কা করছি।’’ [সূরা হুদ, আয়াত: ০৩] [তাফসিরে ইবনে কাসির: ২/৪৩৬]
.
(৩) ইসতিগফার করলে গুনাহ মাফ করা হয় এবং আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত হয়:
.
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ্ বলেন, ‘‘হে আমার বান্দারা! তোমরা দিনে-রাতে গুনাহ্ করছো; আমি আমি তোমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা করব; অতএব, তোমরা আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা (ইসতিগফার) করো।’’ [সহিহ মুসলিম]
.
‘‘যে গোনাহ করবে অথবা নিজের উপর জুলুম করবে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল, দয়াময় পাবে।’’ [সূরা নিসা, আয়াত: ১১০]
.
(৪) ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি বৃদ্ধি এবং উত্তম জীবনের নিয়ামত লাভ:
.
‘‘(নূহ আ. বলেন) অতঃপর আমি বললাম: তোমরা তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে বাগ-বাগিচা স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।’’ [সূরা নূহ, আয়াত: ১০–১২]
.
(৫) শয়তানকে পরাজিত করার শক্তিশালী এক হাতিয়ার হলো ইস্তিগফার:
.
হাদিসে কুদসিতে এসেছে, “ইবলিস তার রবকে বললো: আপনার ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম! আমি আদম-সন্তানকে পথভ্রষ্ট করতেই থাকব, যতক্ষণ তাদের মধ্যে রূহ থাকে। আল্লাহ বলেন: আমার ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম! আমিও তাদের ক্ষমা করতেই থাকব, যতক্ষণ তারা আমার নিকট ইসতিগফার করবে।” [মুসনাদ আহমাদ, হাদিসটি হাসান]
.
(৬) ইসতিগফার অন্তরের সংকীর্ণতা দূর করে এবং শক্তিমত্তা বৃদ্ধি করে:
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার অন্তর (আল্লাহর স্মরণ হতে) বাধাপ্রাপ্ত হয়, (তাই) আমি দিনে শতবার ইসতিগফার করি।’’ [সহিহ মুসলিম: ২৭০২]
.
[আরো দেখুন: সূরা হুদ, আয়াত: ৫২]
.
(৭) জান্নাতের নিশ্চয়তা: সাইয়িদুল ইসতিগফার (ইসতিগফারের শ্রেষ্ঠ দু‘আ) দু‘আটি মুখস্থ করে নিতে হবে।
.
হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় এ দু‘আটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে, অতঃপর সেদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এটি পড়বে, অতঃপর সকাল হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ [সহিহ বুখারি: ৬৩০৬]
.
(৮) শেষ রাতের ইসতিগফারকারীদের ব্যাপারে আল্লাহ প্রশংসা করেন:
.
আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআনুল কারিমে বলেন, ‘‘আর আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের প্রতি (সু)দৃষ্টি রাখেন, যারা বলে, ‘হে আমাদের রব! আমরা ঈমান এনেছি, কাজেই আমাদের মাফ করে দাও এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করো।’ ’’ [সূরা আ~ল ইমরান, আয়াত: ১৫-১৬]
.
তাঁদের প্রশংসায় আল্লাহ্ বলেন, ‘‘তারা সবরকারী, সত্যবাদী, অনুগত, (সৎপথে) ব্যায়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী।’’ [সূরা আ~ল ইমরান, আয়াত: ১৭]
.
(৯) দুনিয়ার সংকীর্ণতা, কষ্ট ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায় হলো ইসতিগফার:
.
হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।” [বায়হাকি: ৬৩৬, মুস্তাদরাক হাকিম: ৭৬৭৭; সহিহ]
.
(১০) নারীদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির অন্যতম দুই উপায় হলো: সাদাকাহ ও ইস্তিগফার:
.
একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মহিলাদেরকে সম্বোধন করে) বললেন, ‘‘হে নারীরা! তোমরা সাদকাহ করতে থাক এবং অধিক মাত্রায় ইসতিগফার করো। কারণ আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসীরূপে দেখলাম।...(হাদিসটি দীর্ঘ)’’ [সহিহ মুসলিম: ৭৯, ৮০]
.
এছাড়াও ইসতিগফার—
.
√ সুন্নাতুল আম্বিয়া (নবিদের সুন্নাহ);
√ মুত্তাকিদের সিফাত (গুণ);
√ গুনাহের ময়লা দূর করে;
√ অন্তরে প্রশান্তি আনে;
√ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে;
√ ঈমানের মিষ্টতা এনে দেয়;
√ যেকোনো বিপদ দূর করে;
√ ডিপ্রেশন থেকে রক্ষা করে;
√ আল্লাহর প্রিয় বানায়।
.
মহান রব আমাদের ইসতিগফারে লেগে থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন।
.


তৃতীয় পর্ব : ইস্তিগফারের সময়, স্থান ও পরিস্থিতি

 

ইসতিগফার করার সময়, পরিস্থিতি ও মুহূর্তগুলো [কুরআন ও সহিহ হাদিস থেকে]
.
(১) প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর—
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ফরজ) নামাজের পর তিনবার ইস্তিগফার পড়তেন। [সহিহ মুসলিম: ৫৯১]
.
(২) শেষ রাতে, ফজরের পূর্বে—
.
আল্লাহ্ সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের প্রশংসায় বলেন, ‘‘তারা রাতে সামান্য সময়ের জন্যই নিদ্রায় যেত এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতো।’’ [সূরা যারিয়াত, আয়াত: ১৭-১৮]

(৩) কোনো বৈঠক শেষে বা কুরআন তিলাওয়াতের পর—
.
দু‘আটি আমরা ইস্তিগফারের বাক্যাবলীর পর্বে দিব ইনশাআল্লাহ্। [আহমাদ: ২৪৪৮৬, আবু দাঊদ: ৪৮৫৮]
.
(৪) নামাজের সিজদায়—
.
এই দু‘আটিও দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ্। [সহিহ বুখারি: ৭৯৪]
.
(৫) দুই সিজদার মাঝখানে—
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সিজদার মাঝখানে পড়তেন: রাব্বিগফিরলি, রাব্বিগফিরলি। [সহিহ মুসলিম: ৭৭২]
.
(৬) নামাজে সালাম ফেরানোর পূর্বে—
.
এই দু‘আটিও দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ্। এটি দু‘আ মাসুর নামে পরিচিত। [সহিহ বুখারি: ৮৩৪]
.
(৭) হতাশা ও কষ্টের মুহূর্তে—
.
হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।” [বায়হাকি: ৬৩৬, মুস্তাদরাক হাকিম: ৭৬৭৭; সহিহ]
.
(৮) গুনাহ করে ফেললে—
.
হাদিসে কুদসিতে এসেছে, “ইবলিস তার রবকে বললো: আপনার ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম! আমি আদম-সন্তানকে পথভ্রষ্ট করতেই থাকব, যতক্ষণ তাদের মধ্যে রূহ থাকে। আল্লাহ বলেন: আমার ইজ্জত ও বড়ত্বের কসম! আমিও তাদের ক্ষমা করতেই থাকব, যতক্ষণ তারা আমার নিকট ইসতিগফার করবে।” [মুসনাদ আহমাদ, হাদিসটি হাসান]
.
(৯) সম্পদ অথবা সন্তান চাইতে—
.
‘‘(নূহ [আ.] বলেন) অতঃপর আমি বললাম: তোমরা তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি দিবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন, তোমাদের জন্যে বাগ-বাগিচা স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।’’ [সূরা নূহ, আয়াত: ১০–১২]
.
(১০) যেকোনো নেককাজ শেষে—
.
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেক কাজ ছিলো মক্কা বিজয় এবং আল্লাহর দ্বীনকে পূর্ণতা দেওয়া। এই কাজের পর তাঁকে ইস্তিগফার পড়তে বলা হয়েছে। [পড়ুন: সূরা আন নাসর, আয়াত: ১-৪]
.
(১১) অন্তর কঠিন হয়ে গেলে—
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার অন্তর (আল্লাহর স্মরণ হতে) বাধাপ্রাপ্ত হয়, (তাই) আমি দিনে শতবার ইসতিগফার করি।’’ [সহিহ মুসলিম: ২৭০২]
.
(১২) বিপদ ও আজাবের সময়—
.
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারিমে বলেন, ‘‘আল্লাহ কখনই তাদের উপর আযাব দিবেন না, যতক্ষণ আপনি (নবীজি) তাদের মাঝে অবস্থান করবেন এবং তারা ইসতিগফার করা অবস্থায়ও তাদের উপর আযাব অবতীর্ণ করবেন না।’’ [সূরা আনফাল, আয়াত: ৩৩]
.
(১৩) লাইলাতুল কদরে—
.
আমরা এই দু‘আটি আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ্। [ইবনে মুজাহ: ৩৮৫০, হাদিসটি সহিহ]
.
(১৪) শক্তিমত্তা বৃদ্ধিতে—
.
[দেখুন: সূরা হুদ, আয়াত: ৫২]
.
(১৫) পিতা-মাতা ও সকল মুমিনের জন্য—
.
দু‘আটি আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ্। [সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১]
.


চতুর্থ পর্ব : হাদিস থেকে শ্রেষ্ঠ ১১ টি ইস্তিগফারের বাক্য, অর্থ ও উচ্চারণসহ।

 

ইস্তিগফারের সর্বশ্রেষ্ঠ দু‘আগুলো [সহিহ হাদিস থেকে—(মোট এগারোটি)]
▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬
.
❑ ইস্তিগফার: [০১]
আয়িশা (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর আগে এই ইস্তিগফারটি অধিক মাত্রায় পড়তেন—
.
سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحَمْدِهِ أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
.
[সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি]
.
অর্থ: আমি আল্লাহর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি। [সহিহ মুসলিম, রিয়াদুস সালেহীন: ১৮৮৬]
.
❑ ইস্তিগফার: [০২]
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে আর কাউকে এটি অধিক পরিমাণে পড়তে দেখিনি—
.
أَسْتَغْفِرُ اللّٰهَ وَأَتوبُ إِلَيْهِ
[আসতাগফিরুল্লাহা ওয়া আতূবু ইলাইহি]
.
অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি। [সহিহ ইবনু হিব্বান: ৯২৮, হাদিসটি বিশুদ্ধ]
.
❑ ইস্তিগফার: [০৩]
আয়িশা (রা.) বলেন, আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি যদি বুঝতে পারি, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তাহলে ওই রাতে কী বলব?’ নবীজি বলেন, তুমি বলো—
.
اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ
.
[আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউ-উন কারীম, তু‘হিব্বুল ‘আফওয়া ফা’অ্ফু ‘আন্নী]
.
অর্থ: হে আল্লাহ্! তুমি ক্ষমাশীল, মহানুভব! তুমি ক্ষমা করতে পছন্দ করো। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দাও। [তিরমিযি: ৩৫১৩, হাসান সহিহ]
.
রামাদানের শেষ দশটি রাতে এই দু‘আটি অধিক পরিমাণে পাঠ করতে হবে। পাশাপাশি অন্য যেকোনো সময়, যেকোনো মাসেও পড়া যাবে।
.
❑ ইস্তিগফার: [০৪]
ইবনু উমার (রা.) বলেন, আমরা গুণে দেখতাম যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই মজলিসে ১০০ বার পর্যন্ত পাঠ করছেন—
.
ﺭَﺏِّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃﻧْﺖَ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢُ
.
[রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব ‘আলাইয়া, ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রাহীম]
.
অর্থ: (হে আমার) রব! আমাকে মাফ করুন; আমার তাওবাহ্ কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবাহ্ কবুলকারী পরম দয়াময়। [তিরমিযি: ৩৪৩৪, আবু দাউদ: ১৫১৬, হাদিসটি বিশুদ্ধ]
.
শুধু বৈঠকেই নয়, যেকোনো সময় এই ইস্তিগফার পড়া যাবে।
.
❑ ইস্তিগফার: [০৫]
ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি এই দু‘আ (ইসতিগফার) পড়বে, তার গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে—যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলায়নকারী হয়।’’
.
ﺃَﺳْﺘَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﻠّٰﻪَ ﺍﻟَّﺬِﻱْ ﻻَ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻻَّ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﺤَﻰُّ ﺍﻟْﻘَﻴُّﻮﻡُ ﻭَﺃَﺗُﻮْﺏُ ﺇِﻟَﻴْﻪِ
.
[আসতাগফিরুল্লাহ আল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল ‘হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি]
.
অর্থ: আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ব্যতীত কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই—তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী—এবং আমি তাঁর নিকট তাওবাহ্ করছি। [আবু দাউদ: ১৫১৭, তিরমিযি: ৩৫৭৭, হাদিসটি বিশুদ্ধ]
.
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘‘আসতাগফিরুল্লাহাল ‘আযীম, আল্লাযি... (বাকি অংশে কোনো পরিবর্তন নেই)।’’ [তিরমিযি: ৩৫৭৭, হাসান]
.
❑ ইস্তিগফার: [০৬]
সাইয়িদুল ইসতিগফার অর্থাৎ এই ইস্তিগফারকে হাদিসে বলা হয়েছে ‘ইস্তিগফারের নেতা’।
.
ﺍَﻟﻠّٰﻬُﻢَّ ﺃَﻧْﺖَ ﺭَﺑِّﻲْ ﻟَﺎ ﺇِﻟٰﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ ﺧَﻠَﻘْﺘَﻨِﻲْ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﺒْﺪُﻙَ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻬْﺪِﻙَ ﻭَﻭَﻋْﺪِﻙَ ﻣَﺎ ﺍﺳْﺘَﻄَﻌْﺖُ ﺃَﻋُﻮْﺫُ ﺑِﻚَ ﻣِﻦْ ﺷَﺮِّ ﻣَﺎ ﺻَﻨَﻌْﺖُ ﺃَﺑُﻮْﺀُ ﻟَﻚَ ﺑِﻨِﻌْﻤَﺘِﻚَ ﻋَﻠَﻲَّ ﻭَﺃَﺑُﻮْﺀُ ﺑِﺬَﻧْﺒِﻲ ﻓَﺎﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲ ﻓَﺈِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻳَﻐْﻔِﺮُ ﺍﻟﺬُّﻧُﻮﺏَ ﺇِﻟَّﺎ ﺃَﻧْﺖَ
.
[আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী ওয়া আনা ‘আবদুকা, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহ্দিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতা ত’তু আ‘উযুবিকা মিন শাররি মা সনা’তু আবূ-উ লাকা বিনি’মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূ-উ বিযানবী, ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আনতা] [অবশ্যই আরবি দেখে শিখুন]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমিই আমার রব। তুমি ছাড়া কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছো আর আমি তোমারই গোলাম। তুমি আমার কাছ থেকে যে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি নিয়েছো, সাধ্যানুযায়ী আমি তার ওপর চলবো। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছো তা স্বীকার করছি এবং আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।’’
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় এ দু‘আটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে, অতঃপর সেদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এটি পড়বে, অতঃপর সকাল হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’’ [সহিহ বুখারি: ৬৩০৬]
.
❑ ইস্তিগফার: [০৭]
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোনো মজলিসে (বৈঠকে) বসলো, যেখানে সে অনর্থক অনেক কথা বলেছে, সে যদি ওই মজলিস থেকে ওঠার আগেই এই দু‘আটি বলে, তবে আল্লাহ্ তার ওই মজলিসের বিষয়াদির কাফফারা (প্রায়শ্চিত্য) করে দেবেন।’’
.
سُبْحَانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ
.
[সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বি‘হামদিকা আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লা আনতা আস্তাগফিরুকা ওয়া আতূবু ইলাইকা]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি পবিত্র; প্রশংসা কেবল তোমারই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি—তুমি ছাড়া কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। আমি তোমার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং তোমার নিকট তাওবাহ্ করছি। [তিরমিযি: ৩৪৩৩, হাসান সহিহ গারিব]
.
দু‘আটি যেকোনো সময় পড়তে পারবেন। এই দু‘আটিতে আল্লাহর প্রশংসা, পবিত্রতা, শাহাদাহ সব আছে। ফলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
.
নামাজের ভেতরের ইস্তিগফারসমূহ:
.
❑ ইস্তিগফার: [০৮]
আয়িশা (রা.) বলেন, কুরআনের নির্দেশ (সূরা আন-নাসরের অনুবাদ দেখুন) অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু ও সিজদায় গিয়ে এই ইস্তিগফারটি পড়তেন—
.
سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ
.
[সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়া বিহামদিকা, আল্লাহুম্মাগফিরলি]
.
অর্থ: হে আমাদের রব—আল্লাহ! আপনি মহান; প্রশংসা কেবল আপনারই। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন। [বুখারি: ৭৯৪]
.
যেকোনো সময় পড়তে পারেন।
.
❑ ইস্তিগফার: [০৯]
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সিজদার মাঝে বসা অবস্থায় পড়তেন—
.
رَبِّ اغْفِرْ لِيْ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ
.
[রাব্বিগফিরলি, রাব্বিগফিরলি]
.
অর্থ: হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করুন। [সহিহ মুসলিম: ৭৭২]
.
❑ ইস্তিগফার: [১০]
আবু বকর (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিলেন একটি দু‘আ শিখিয়ে দিতে, যা তিনি নামাজে পড়বেন। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি শিখিয়ে দেন, যা দু‘আ মাসূরা নামে পরিচিত। (এটি নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ ও দরুদের পর পড়বেন)
.
اَللّٰهمَّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كثِيرًا، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنوْبَ إِلاَّ أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِيْ، إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْم
.
অর্থ: হে আল্লাহ্! আমি (গুনাহ করার মাধ্যমে) নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি; তুমি ছাড়া অন্য কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। অতএব, তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পরিপূর্ণভাবে ক্ষমা করো এবং আমার উপর দয়া করো। তুমি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সহিহ বুখারি: ৮৩৪]
.
এটি কেবল নামাজের মধ্যেই নয়, যেকোনো সময় পড়বেন। অর্থটা হৃদয়গ্রাহী।
.
❑ ইস্তিগফার: [১১]
আরো একটি ইস্তিগফার, যা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে সালাম ফেরানোর আগে পড়তেন।
.
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّيْ
.
[আল্লাহুম্মাগফিরলি মা ক্বাদ্দামতু ওয়া-মা আখখারতু, ওয়া-মা আসরারতু ওয়া-মা আ’লানতু, ওয়া-মা আসরাফতু, ওয়া-মা আনতা আ’লামু বিহি মিন্নী]
.
অর্থ: হে আল্লাহ্, আমি আগে-পরে যত গুনাহ করেছি, তা মাফ করে দাও। যেসব গুনাহ গোপনে করেছি এবং যেগুলো প্রকাশ্যে করেছি (সব) মাফ করে দাও। যত বাড়াবাড়ি করেছি, সেগুলো ক্ষমা করে দাও এবং যেগুলো তুমি আমার চেয়ে ভালো জানো, সেগুলোও মাফ করে দাও। [সহিহ বুখারি: ৬৩৯৮]
.


পঞ্চম পর্ব : কুরআন হতে শ্রেষ্ঠ ১০ টি ইস্তিগফারের বাক্য অর্থসহ

 

কুরআন হতে ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ ইস্তিগফার [সিজদায় এসব ইস্তিগফার পড়া যাবে; তবে তিলাওয়াত হিসেবে নয়, কেবল দু‘আ হিসেবে]
➖➖➖➖◄◖◉◗►➖➖➖➖
.
❑ ইস্তিগফার: [০১]
যখন মূসা (আ.) যখন অনিচ্ছাবশত কিবতি লোকটিকে হত্যা করে ফেলেন, তখন এই দু‘আটি (ইস্তিগফারটি) করেন এবং আল্লাহ্ তাঁকে ক্ষমা করে দেন। আমরাও যেকোনো সময় এই দু‘আটি করতে পারি।
.
رَبِّ إِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ فَاغْفِرْ لِيْ
.
অর্থ: (হে আমার) রব! নিশ্চয়ই আমি নিজের উপর জুলুম করে ফেলেছি, অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। [সূরা ক্বাসাস, আয়াত: ১৬]
.
(উচ্চারণ না দেওয়ার কারণ এবং বিকল্প সমাধান বলে দেওয়া হয়েছে পোস্টের শেষে)
.
❑ ইস্তিগফার: [০২]
.
رَبَّنَا إِنَّنَا آمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
.
অর্থ: হে আমাদের রব, নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি, কাজেই আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। [সূরা আ~লে ইমরান, আয়াত: ১৬]
.
❑ ইস্তিগফার: [০৩]
আদম (আ.) ও মা হাওয়া যখন ভুল করেন, তখন তাঁরা এই দু‘আ (ইসতিগফার) করেন এবং আল্লাহ্ তাঁদের দু‘আ কবুল করেন।
.
رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِنْ لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ
.
‘‘হে আমাদের রব! আমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি দয়া না করেন, তবে আমরা অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব।’’ [সূরা আল আ‘রাফ, আয়াত: ২৩]
.
ইস্তিগফারের জন্য শ্রেষ্ঠ দু‘আগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। অসাধারণ দু‘আ!
.
❑ ইস্তিগফার: [০৪]
মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর চমৎকার দু‘আ (ইসতিগফার)। এর মাধ্যমে একই সাথে নিজের জন্য, বাবা-মার জন্য এবং সকল জীবিত ও মৃত ঈমানদারের জন্য দু‘আ করা হয়। খুবই গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ।
.
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
.
‘‘হে আমাদের রর! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিয়ো।’’ [সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১]
.
❑ ইস্তিগফার: [০৫]
.
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِيْنَ
.
‘‘হে আমার রব! (আমাকে) মাফ করুন এবং (আমার উপর) রহম করুন; আপনিই তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’’ [সূরা আল মুমিনূন, আয়াত: ১১৮]
.
❑ ইস্তিগফার: [০৬]
.
سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيْرُ
.
‘‘আমরা (আপনার বিধান) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন। আপনার দিকেই তো (আমাদের) ফিরে যেতে হবে।’’ [সূরা আল বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫]
.
❑ ইস্তিগফার: [০৭]
এই দু‘আটি এবং ৪ নং দু‘আটির অপরিসীম গুরুত্ব নিয়ে আমরা #মহান_রবের_আশ্রয়ে সিরিজে একটি পোস্ট দেব ইনশাআল্লাহ্।
.
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ
.
‘‘হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের পূর্বে ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন।’’ [সূরা হাশর, আয়াত: ১০]
.
❑ ইস্তিগফার: [০৮]
.
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِيْ أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِيْنَ
.
‘‘হে আমাদের রব! আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমা করে দাও। আমাদের কাজের মধ্যে যেখানে তোমার সীমালঙ্ঘন হয়েছে, তা মাফ করে দাও। আমাদের পদযুগল অবিচল রাখো এবং কাফিরদের মোকাবেলায় আমাদের সাহায্য করো।’’ [সূরা আ~লে ইমরান, আয়াত: ১৪৭]
.
❑ ইস্তিগফার: [০৯]
.

رَبَّنَا وَلاَ تُحَمِّلْنَا مَا لاَ طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا.
.
‘‘হে আমাদের রব! যে বোঝা বহন করার সাধ্য আমাদের নেই, সে বোঝা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের প্রতি কোমল হও, আমাদের ক্ষমা করো এবং আমাদের উপর দয়া করো।’’ [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৮৬]
.
❑ ইস্তিগফার: [১০]
.
رَبَّنَا إِنَّنَا سَمِعْنَا مُنَادِيًا يُّنَادِيْ لِلْإِيْمَانِ أَنْ آمِنُوْا بِرَبِّكُمْ فَآمَنَّا
.
‘‘হে আমাদের রব! আমরা একজন আহবানকারীকে ঈমানের প্রতি (এই) আহবান করতে শুনেছি যে, তোমাদের রবের প্রতি ঈমান আন; তাই আমরা ঈমান এনেছি।
.
رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَارِ
.
হে আমাদের রব! অতএব, আমাদের গুনাহগুলো মাফ করুন, আমাদের দোষ-ত্রুটিগুলো দূর করে দিন এবং সৎকর্মশীল লোকদের সাথে আমাদের শেষ পরিণতি দান করুন।’’ [সূরা আ~লে ইমরান, আয়াত: ১৯৩]
.
[কুরআনুল কারিমের উচ্চারণ অন্য ভাষায় লিখা জায়েয নেই। অনেক আলেম স্পষ্টভাবে হারাম বলেছেন। কারণ উচ্চারণ লেখা যায় না, ফলে ভুল উচ্চারণের মাধ্যমে অর্থ বিকৃত হয়ে যায়। অনেক সময় কুফরি কথাও বলা হয়ে যায়। তাই, আমরা উচ্চারণ দেইনি। যারা কুরআন পড়তে পারেন, তাদেরকে দু‘আগুলো দেখান এবং শিখে নিন। তাও কঠিন হলে ইউটিউবে সূরা এবং আয়াত উল্লেখ করে সার্চ দিয়ে তিলাওয়াত শুনে নিন। যেমন: Surah al Baqarah 286, তখন বিভিন্ন ক্বারির তিলাওয়াত পাবেন। আরো সহজে পেতে Al Quran (Tafsir & by word) অ্যাপটা নামিয়ে নিন। সেখানে অডিও শুনতে পারবেন।]
.
[সহিহ হাদিস থেকে মোট ১১ টি ইস্তিগফার উচ্চারণসহ গতকাল পোস্ট দেওয়া হয়েছে। কমেন্টে লিংক পাবেন।]
.


ষষ্ঠ পর্ব : বাবা মা, আত্মীয় ও জীবিত-মৃত মুসলিমদের জন্য ইস্তিগফার

 

বাবা-মা, মৃত ব্যক্তি ও যে কোনো মুসলিমের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার সঠিক পদ্ধতি (সহিহ কয়েকটি ইস্তিগফারসহ) [শেষ পর্যন্ত বুঝে বুঝে পড়ুন]
.
বাবা-মা’র জন্য দু‘আর অপরিসীম গুরুত্ব বোঝার জন্য দুটো হাদিসই যথেষ্ট।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জান্নাতে কোনো কোনো ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। তখন সে বলবে, ‘কীভাবে আমার মর্যাদা বৃদ্ধি পেলো?’ তখন তাকে বলা হবে, ‘তোমার সন্তান তোমার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছে, (তাই)।’ ’’ [ইবনু মাজাহ: ২/১২০৭, সিলসিলা সহিহাহ: ৪/১৭২; হাদিসটি সহিহ]
.
অন্য একটি হাদিসে এসেছে, ‘‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়; কেবল তিনটি ব্যতীত—এক. সদাকাহ্ জারিয়াহ (এমন দান, যা চলমান থাকে); দুই. এমন জ্ঞান, যা মানুষকে উপকৃত করে এবং তিন. নেককার সন্তান, যে তার জন্য দু'আ করে।’’ [সহিহ মুসলিম: ৩/১২৫৫]
.
সুতরাং মৃত বাবা-মা’র জন্য আন্তরিকভাবে দু‘আ করতে হবে। বিশেষত যারা ইতোমধ্যে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন, তাদের জন্য।
.
সরাসরি কুরআনের দু‘আ দিয়ে দু‘আ করুন
.
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
.
‘‘হে আমাদের রর! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিয়ো।’’ [সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১]
.
ﺭَﺏِّ ﺍﺭْﺣَــﻤْــﻬُـمَا ﻛَـﻤَﺎ ﺭَﺑَّـﻴَـﺎﻧِـﻲْ ﺻَـﻐِـﻴـﺮًﺍ
.
‘‘(হে আমার) রব! তুমি তাদের (বাবা-মা) প্রতি রহম করো, যেভাবে তারা ছেলেবেলায় আমার উপর রহম করেছে।’’ [সূরা বানী ইসরাঈল, আয়াত: ২৪]
.
[কুরআনের উচ্চারণ লেখা বৈধ নয়, তাই আমরা লিখিনি। তবে, শুরুতে একটু পরিবর্তনে দু‘আগুলো নিচে উল্লেখ করেছি উচ্চারণসহ। তাহলে আর কুরআনের উচ্চারণ লেখার/শেখার দায়ভার আসবে না। তবে, কুরআনি দু‘আর সেই মর্যাদাও পাওয়া যাবে না। যেহেতু আপনারা আরবি পারেন না, তাই সহজতার জন্য এমনটি করা হলো। যাদের পক্ষে সম্ভব, তারা হুবহু কুরআনের দু‘আ দুটোই মুখস্থ করবেন। যারা পারবেন না, তাদের জন্য ↓ ]
.
[১ নং দু‘আর বাক্য]
.
اَللّٰهُمَّ ﺍﺭْﺣَــﻤْــﻬُـمَا ﻛَـﻤَﺎ ﺭَﺑَّـﻴَـﺎﻧِـﻲْ ﺻَـﻐِـﻴـﺮًﺍ
.
(আল্লাহুম্মার‘হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সগীরা)
.
[হে আল্লাহ! তুমি তাদের (বাবা-মা) প্রতি রহম করো, যেভাবে তারা ছেলেবেলায় আমার উপর রহম করেছে]
.
[২ নং দু‘আর বাক্য]
.
ﺭَﺏِّ اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
.
(রাব্বিগফিরলি ওয়ালি-ওয়ালিদাইয়া ওয়ালিল মুঅ্মিনীনা ইয়াউমা ইয়াক্বূমুল ‘হিসাব)
.
(হে আমার) রর! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিয়ো।
.
(হুবহু কুরআনের আয়াতের উচ্চারণ লেখা বৈধ নয়, তাই আমরা সামান্য পরিবর্তনে সাজিয়েছি। এগুলো কুরআনের আয়াত নয়। এভাবে দু‘আ করতে পারেন। এগুলো কুরআনকে অবমাননা বা নকল করা নয়। যেমন: কুরআনের ربنا آتنا দু‘আটি হাদিসে আল্লাহুম্মা আতিনা দিয়েও এসেছে। বাকি অংশে হুবহু মিল রয়েছে।)
.
যারা আরো সহজ শব্দে দু‘আ করতে চান, তারা এভাবে করতে পারেন—
.
[৩ নং দু‘আর বাক্য]
.
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لَهُمَا আল্লাহুম্মাগফির লাহুমা
[হে আল্লাহ! আপনি তাদের ক্ষমা করুন]
.
[৪ নং দু‘আর বাক্য]
.
اَللّٰهُمَّ ارْحَمْهُمَا আল্লাহুম্মার হামহুমা
[হে আল্লাহ! তাদের উপর রহম করুন]
.
[৫ নং দু‘আর বাক্য]
.
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُمَا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّة
আল্লাহুম্মাজ‘আলহুমা মিন আহলিল জান্নাহ
[হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে জান্নাতের অধিবাসী করুন]
.
এই পাঁচটা বাক্য দিয়ে নামাজের সিজদায় বা সালাম ফেরানোর আগে দু‘আ করতে পারেন। এই পাঁচটি কোনো কুরআন-হাদিসের দু‘আ নয়, তবে কুরআন-হাদিসে মোটামুটি এই শব্দগুলো দিয়েই দু‘আ এসেছে। সুতরাং, এগুলোকে মাসনূন দু‘আর মর্যাদা দেওয়া যাবে না। কেবল নামাজে আরবিতে যাতে দু‘আ করা যায়, তার জন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা।
.
যে কোনো মৃত ব্যক্তির জন্যর কুরআনের দু‘আ
.
رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِيْنَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ
.
‘‘হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন এবং যারা আমাদের পূর্বে ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে, তাদেরকেও ক্ষমা করুন।’’ [সূরা হাশর, আয়াত: ১০]
.
رَبَّنَا اغْفِرْ لِيْ وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِيْنَ يَوْمَ يَقُوْمُ الْحِسَابُ
.
‘‘হে আমাদের রর! যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন তুমি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিয়ো।’’ [সূরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১]
.
এই দুটো দু‘আ সরাসরি কুরআন থেকে।
যারা আরবি পড়তে পারছেন না, তারা উপরে উল্লেখিত ২ নং দু‘আর উচ্চারণটি শিখে নিন। সেটি দিয়েই করতে পারেন দু‘আ। যদিও সেটি মাসনূন নয়, তবুও পড়তে অসুবিধা নেই।
.
সকল মুসলিমের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার ফজিলত অপরিসীম।
.
হাদিসে এসেছে, ‘‘কোনো মুসলিম যদি তার অনুপস্থিত (মুসলিম) ভাইয়ের জন্য দু’আ করে অথবা ক্ষমা চায়, তবে তা কবুল করা হয় এবং তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকে। যখনই কোন ব্যক্তি তার ভাইয়ের কল্যাণার্থে দু’আ করে তখন সে নিযুক্ত ফেরেশতা বলে, আমীন। অর্থাৎ- হে আল্লাহ! কবুল করুন এবং তোমার জন্য অনরূপ (অর্থাৎ তোমার ভাইয়ের জন্য যা চাইলে আল্লাহ তা’আলা তোমাকেও তা-ই দান করুন)।’’ [সহিহ মুসলিম: ২৭৩৩]
.
এই পোস্টটি বোঝতে কষ্টকর মনে হলে সহজে জেনে রাখুন:এই পোস্টে উল্লেখিত মোট তিনটি দু‘আ সরাসরি কুরআন থেকে উদ্ধৃত হয়েছে এবং এগুলোর সূরা ও আয়াত নম্বর উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। বাকি যেগুলোর নীচে কুরআন বা হাদিসের রেফারেন্স নেই, সেগুলো আমরা দিয়েছি, (বাংলা উচ্চারণসহ)। যেহেতু অনেকেই আরবি দেখে পড়তে পারেন না, তাদের জন্য উচ্চারণ দিতে হয়, আবার কুরআনের উচ্চারণ লেখা বৈধ নয়। এই দুটো সমস্যা এড়াতে কুরআনের দু‘আকে একটি শব্দ দ্বারা পরিবর্তন করে সাধারণ বাক্যে পরিণত করা হয়েছে। ফলে, এগুলো আর কুরআনের দু‘আ থাকছে না। (সম্ভব হলে কুরআনিক দু‘আ মুখস্থ করুন আরবি দেখে।)
.


সপ্তম পর্ব : ফিনিশিং, কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা

 

হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি নিজ আমলনামা দেখে খুশি হতে চায়, সে যেন বেশি করে ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করে।’’ [সহিহুল জামি’: ৫৯৫৫, সিলসিলা সহিহাহ: ২২৯৯]
.
অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সুসংবাদ তার জন্য, যে তার আমলনামায় অনেক বেশি ইস্তিগফার পেয়েছে।’’ [সহিহুল জামি’: ৩৯৩০]
.
ইস্তিগফার করা যায় তিন ভাবে:
.
(১) জিহ্বার মাধ্যমে ইস্তিগফার:
শুধু জিহ্বার মাধ্যমে যে ইস্তিগফার করা হয়, সেটির মর্যাদা কম। তবে, তা ইস্তিগফার হিসেবে গণ্য হবে।
.
(২) অন্তরের মাধ্যমে ইস্তিগফার:
এটি আল্লাহর নিকট উঁচু মর্যাদার ইস্তিগফার। অন্তরে গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং আল্লাহর নিকট মনে মনে ক্ষমা চাওয়া।
.
(৩) অন্তর ও জিহ্বার সমন্বয়ে ইস্তিগফার:
এভাবে ইস্তিগফার করা সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট। এতে অন্তরে গুনাহের জন্য অনুশোচনা করা হয় ও মুখ দিয়ে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।
.
ইস্তিগফারের সময় তিনটি বিষয় মনে রাখুন: (রামি হানাফি মাহমূদের আরবি প্রবন্ধ থেকে ভাবানুবাদ)
.
(১) আপনি মহাশক্তিশালী সত্তা আল্লাহ্ তা‘আলার অবাধ্যতা করেছেন, অথচ আপনি অতি ক্ষুদ্র এক সৃষ্টি।
.
(২) আপনি আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত (যেমন: চোখ, কান, হাত, পা, সম্পদ ইত্যাদি) ব্যবহার করে আল্লাহরই অবাধ্যতা করেছেন। এটি অনেক বড় অকৃতজ্ঞতা।
.
(৩) আপনি জানতেন, গুনাহ করে আল্লাহর অবাধ্যতা করছেন। তিনি আপনাকে দেখছেন, এটা জানার পরও আপনি তার অবাধ্যতা করেছেন, কোনো পরোয়া করেননি। মানুষের সামনে আপনি গুনাহ করতে লজ্জাবোধ করেন অথচ আল্লাহকে লজ্জা করেননি।
.
এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে যখন ইস্তিগফার করা হবে, তখন সেই ইস্তিগফারে ব্যাকুলতা থাকবে এবং আল্লাহর কাছে কবুলের সম্ভাবনা বাড়বে ইনশাআল্লাহ্। আর, অবশ্যই নিজের খাবার ও পোষাক হালাল হতে হবে এবং কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস রেখে ইস্তিগফার করতে হবে।
.
#ইস্তিগফার_অপার_সম্ভাবনার_দ্বার (পর্ব: ৭) [সমাপ্ত, আলহামদুলিল্লাহ]
.
আমরা মোট ৭ টি পর্বে ইস্তিগফার সিরিজ সমাপ্ত করতে পেরেছি, এর তাওফিক আল্লাহই দিয়েছেন। আগের পর্বগুলোতে খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষত: ইস্তিগফারের পরিচয়, পদ্ধতি, ইস্তিগফারের সময়, ইস্তিগফারের বাক্যসমূহ, ইস্তিগফারের ফজিলত ও ইস্তিগফারকেন্দ্রিক কিছু প্রশ্নের উত্তর। পড়ে নিতে পারেন। কমেন্টে সবগুলোর লিংক একত্রে পাবেন।
.
#Tasbeeh

.

©Tasbeeh
Page link- https://www.facebook.com/TasbeehZikr/

.

©Nusus
Page link- https://www.facebook.com/FromNusus

.

#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প

https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo

.

>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"

https://justpaste.it/5gol5

.

>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক

https://justpaste.it/facebook_page_grp_link

.

>> র‍্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট

https://justpaste.it/76iwz

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের pdf লিংক (৪০০+ বই)

https://justpaste.it/4ne9o

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.

https://justpaste.it/islamicappvideo

.

>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?

https://justpaste.it/6q4c3

.

>> কুরআন এবং আপনি

https://justpaste.it/5dds8

.

>> কখনও ঝরে যেও না …

https://justpaste.it/3bt22

.

>> ফজরে আমি উঠতে পারি না

https://justpaste.it/6kjl6

.

>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1

.

>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr

.

>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম

https://justpaste.it/7u5es

.

>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়

https://justpaste.it/8dccj

.

>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/6ttuf

.

>> স্বার্থক মুনাজাত

https://justpaste.it/1xf0t

.

>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ

https://justpaste.it/4hhtd

.

>> তাহাজ্জুদ সিরিজ

https://justpaste.it/4ja0n

.

>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/3dxi7

.

>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)

https://justpaste.it/7056k

.

>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ

https://justpaste.it/7fh32

.

>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ

https://justpaste.it/9icuq

.

>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল

https://justpaste.it/8gmtk

.

>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf

.

>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

https://justpaste.it/8vnly

.

>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir

.

>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh

.
>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5

.
>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1

.

>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j

.

>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে। সবগুলো বিষয়ের লিংক এক জায়গায় রাখা হয়েছে। এই লিংকটা শেয়ার করতে পারেন। 
https://justpaste.it/48f6m