JustPaste.it

দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম

 

>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে
https://justpaste.it/48f6m

.

>> সাকানা মাওয়াদ্দাহ রহমাহ!

https://justpaste.it/5szoc

.

>> স্বামী স্ত্রীর মিল মুহাব্বত সৃষ্টির ৬ টি অব্যর্থ আমল

https:// www.youtube.com/watch?v=2Ne6BNf7IvI&t=408s

.

দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম

 

"যারা বিয়ে করেছেন বা বিয়ে করেন নি তাদের লেখাটা পড়া খুব জরুরী। একটিই লেখায় আপনার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।"
দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম
-মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ
===========================
(১৪৩৩ হি. শা‘বান মাসে এক খাছ মজলিসে এক বিশেষ উপলক্ষে আদীব হুজুরের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।)
কিছু দিন আগে আমার এক প্রিয় তালিবে ইলম দেখা করতে এসে বললো, হুযূর, আগামী পরশু আমার বিবাহ। চমকে উঠে তাকালাম। বড় ‘বে-চারা’ মনে হলো। কারণ আমিও একদিন বড় অপ্রস্ত্তত অবস্থায় জেনেছিলাম, আগামীকাল আমার বিবাহ! ভিতর থেকে হামদরদি উথলে উঠলো। ইচ্ছে হলো তাকে কিছু বলি, যিন্দেগির এই নতুন রাস্তায় চলার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পাথেয়, আল্লাহর তাওফীকে তাকে দান করি। আল্লাহর তাওফীক ছাড়া আমরা কেই বা কী করতে পারি!
তো তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, বিবাহের জন্য কী প্রস্ত্ততি নিয়েছো? বড় ভোলাভালা নও জোয়ান! সরলভাবে বললো, আমার কিছু করতে হয়নি, সব প্রস্ত্ততি আববা -আম্মাই নিয়েছেন। কেনা-কাটা প্রায় হয়ে গেছে, শুধু বিয়ের শাড়ীটা বাকি।
অবাক হলাম না, তবে দুঃখিত হলাম, আমার এই প্রিয় তালিবে ইলম এখন একজন যিম্মাদার আলিমে দ্বীন। দীর্ঘ কয়েক বছর আমাদের ছোহবতে ছিলো, তার কাছে বিবাহের প্রস্ত্ততি মানে হলো জিনিসপত্র এবং বিয়ের শাড়ী! তাহলে অন্যদের অবস্থা কী?!
বড় মায়া লাগলো; বললাম, দেখো, মানুষ যে কোন কাজ করতে চায়, প্রথমে সে ঐ বিষয়ে প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করে। কাজটির হাকীকত ও উদ্দেশ্য কী? কাজটি আঞ্জাম দেয়ার সঠিক পন্থা কী? শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী কী সমস্যা হতে পারে, সেগুলোর সমাধান কী? এগুলো জেনে নেয়। এজন্য দস্ত্তর মত আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার আয়োজন আছে, এমনকি বাস্তব প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা আছে।
অথচ জীবনের সবচে’ কাঠিন ও জটিল অধ্যায়ে মানুষ প্রবেশ করে, বরং বলতে পারো ঝাঁপ দেয়, কিছু না শিখে, না জেনে এবং না বুঝে একেবারে অপ্রস্ত্তত অবস্থায়। ফল কী হতে পারে?! কী হয়?! অন্যদের কথা থাক, চোখের সামনে আমার ক’জন ছাত্রের ঘর ভেঙ্গে গেলো! একজনের তো এমনকি দু’জন সন্তানসহ। কিংবা ঘর হয়ত টিকে আছে, কিন্তু শান্তি নেই। স্বাভাবিক শান্তি হয়ত বজায় আছে, কিন্তু বিবাহ যে দুনিয়ার বুকে মানবের জন্য আল্লাহর দেয়া এক জান্নাতি নেয়ামত, সুকূন ও সাকীনাহ, সে খবর তারা পায়নি, শুধু অজ্ঞতার কারণে, শুধু শিক্ষার অভাবে।
আশ্চর্য, মা-বাবা সন্তানকে কত বিষয়ে কত উপদেশ দান করেন; উস্তাদ কত কিছু শিক্ষা দেন, নছীহত করেন, কিন্তু জীবনের সবচে’ কঠিন ও জটিল বিষয়টি কেন যেন তারা সযত্নে এড়িয়ে যান!
তাকে বললাম, যদিও তুমি এ উদ্দেশ্যে আসোনি তবু তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই, যা ইনশাআল্লাহ আগামী জীবনে তোমার কাজে আসবে।
খুব জযবা ছিলো, অবেগের তোড় ছিলো, ‘দিল কো নিচোড় ক্যর’, বাংলায় যদি বলি তাহলে বলবো, হৃদয় নিংড়ে, কিন্তু দিল কো নিচোড়না-এর ভাব হৃদয় নিংড়ানোতে আসবে কোত্থেকে! যাক, বলছিলাম, হৃদয়টাকে নিংড়ে কিছু কথা তাকে বলেছিলাম। পরে আফসোস হলো যে, কথাগুলো তো সব হাওয়ায় উড়ে গেলো, যদি বাণীবদ্ধ করে রাখা যেতো কত ভালো হতো! হয়ত আল্লাহর বহু বান্দার উপকারে আসতো। শেষে বললাম, এককাজ করো, এ কথাগগুলোর খোলাছা কাগজে লিখে আমাকে দেখিও।
আগামী পরশুর বিয়ের খবর দিয়ে ছেলেটা সেই যে গেলো, তিন বছরে আর দেখা নেই! দাম্পত্য জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিভিন্ন সময় দরসেও আমি অনেক কথা বলেছি। ‘সবচে’ বেশী বলেছি আমার নূরিয়ার জীবনের প্রিয় ছাত্র (বর্তমানের হাতিয়ার হুযূর) মাওলানা আশরাফ হালীমীকে, আশা করি তিনি সাক্ষ্য দেবেন, অনেকবার বলেছেন, আমার কথাগুলো তার জীবনে বে-হদ উপকারে এসেছে। আরো অনেকে বলেছে, কিন্তু কথাগুলো কেউ ‘কলমবন্দ’ করেনি।
তো এখন এই উপলক্ষকে কেন্দ্র করে তোমাদের মজলিসে ঐ কথাগুলো আবার বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আফসোস, সেই আবেগ ও জযবা তো এখন নেই যা ঐ প্রিয় তালিবে ইলমকে বলার সময় ছিলো। আবেগভরা দিলের কথা তো রসভরা ইক্ষু, আর শুধু চিন্তা থেকে বলা কথা হলো রস নিংড়ে নেয়া ইক্ষুর ছোবা! তবু কিছু না কিছু ফায়দা তো ইনশাআল্লাহ হবে।
আমি আমার প্রিয় ছাত্রটিকে বলেছিলাম, এখন তোমার জীবনের এই যে নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে উর্দূতে এটাকে বলে ইযদিওয়াজী যিন্দেগী, বাংলায় বলে দাম্পত্য জীবন, অর্থাৎ এটা জীবন ও যিন্দেগির খুবই এবং খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ, শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। এটা তোমাকে ঘাবড়ে দেয়ার জন্য বলছি না; প্রয়োজনীয় প্রস্ত্ততি গ্রহণ ও পাথেয় সংগ্রহ করার জন্য বলছি, যাতে পূর্ণ আস্থা ও সাহসের সঙ্গে তুমি তোমার এই নতুন জীবন শুরু করতে পারো। আল্লাহ যদি সাহায্য করেন তাহলে সবই সহজ।
এটা যে শুধু তোমার ক্ষেত্রে হচ্ছে তা নয়! আমার জীবনেও হয়েছে, আমার মা-বাবার জীবনেও হয়েছে! তোমার মা-বাবাও একদিন এ জীবন শুরু করেছিলেন। যদি সহজ ও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকে তাহলে তোমার মাকে, বাবাকে জিজ্ঞাসা করতে পারো, কীভাবে তারা এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন? জীবনের শুরুতে তারা কী ভেবেছিলেন, কী চেয়েছিলেন, কী পেয়েছেন?
কখন কী সমস্যা হয়েছে, সেগুলো কীভাবে সমাধান করেছেন। এই জীবনের শুরুতে তোমার প্রতি তাদের কী উপদেশ? এধরনের সহজ আন্তরিক আলোচনায় সংসার জীবনের পথচলা অনেক সহজ হয়ে যায়। অবশ্য সব মা-বাবার সঙ্গে সব সন্তানের এমন সহজ সম্পর্ক থাকে না, তবে থাকা উচিত। জীবনের যে কোন সমস্যার সমাধানের জন্য সন্তান মা-বাবার কাছেই আসবে, মা-বাবাকেই নিরাপদ আশ্রয় মনে করবে, বন্ধুবান্ধবকে নয়। কঠিন সমস্যার মুখে একজন অপরিপক্ব বন্ধু কীভাবে সঠিক পথ দেখাতে পারে! কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটাই ঘটে। সন্তান মা-বাবাকে ভয় করে, হয়ত কোন জটিলতায় পড়েছে; তখন তাদের প্রথম চেষ্টা হয় যে, মা-বাবা যেন জানতে না পারে, কারণ তাদের কানে গেলে সর্বনাশ! ছেলে তার বন্ধুর শরণাপন্ন হয়, মেয়ে তার বান্ধবীর কাছে বলে, তারা তাদের মত করে পরামর্শ দেয়। ফলে অবস্থা আরো গুরুতর হয়।
অতীতে যাই ছিলো, এখন তো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, মা-বাবার জন্য সন্তানের বন্ধু হওয়া। বিপদে সমস্যায় সন্তানকে তিরস্কার পরে করা, আগে তার পাশে দাঁড়ানো। তাহলে সন্তান আরো বড় অন্যায় করা থেকে এবং আরো গুরুতর অবস্থায় পড়া থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু এখন অবস্থা হলো, সন্তান মা-বাবাকে ভয় করে, বন্ধুকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে। আমার ছেলেকে আমি এটা বোঝাতে চেয়েছি এবং আশা করি, কিছুটা বোঝাতে পেরেছি। অনেক সমস্যা থেকে সে রক্ষা পেয়েছে, কারণ সবার আগে সে আমার কাছে এসেছে, আর আমি বলেছি, ভয় নেই, আমি তোমার পাশে আছি। আগে তাকে সাহায্য করেছি, তারপর প্রয়োজনে দরদের সঙ্গে তিরস্কার করেছি, বা শিক্ষা দিয়েছি। বন্ধুর কাছে আগে পাওয়া যায় সাহায্য, মা-বাবার কাছ থেকে আগে আসে তিরস্কার। তাই সন্তান সমস্যায় পড়ে মা-বাবার কাছে আসে না, বন্ধুর কাছে আসে। এভাবে নিজের কারণেই সবচে’ কাছের হয়েও মা-বাবা হয়ে যায় দূরের, আর দূরের হয়েও বন্ধু হয়ে যায় কাছের। সন্তানের সমস্যা বন্ধু জানে সবার আগে। মা-বাবা জানে সবার পরে, পানি যখন মাথার উপর দিয়ে চলে যায় তখন।
তো আমি আশা করছি, জীবনের অন্যসকল ক্ষেত্রে যেমন তেমনি, আল্লাহ না করুন দাম্পত্যজীবনে যদি কোন রকম সমস্যার সম্মুখীন হয় তাহলে সন্তান সবার আগে আমার কাছে আসবে, তার মায়ের কাছে আসবে, আমাদের উপদেশ, পরামর্শ নেবে।
আলহামদু লিল্লাহ, সেই রকমের সহজ অন্তরঙ্গ সম্পর্কই সন্তানের সঙ্গে আমার, আমাদের।
আমার প্রিয় ছাত্রটিকে বললাম, কথা অন্য দিকে চলে গেছে, তো এই প্রসঙ্গে তোমাকে একটি আগাম নছীহত করি; আজ তোমরা স্বামী-স্ত্রী, দু’দিন পরেই হয়ে যাবে, মা এবং বাবা। সেটা তো জীবনের আরো কঠিন, আরো জটিল অধ্যায়। আমি প্রায় বলে থাকি, প্রাকৃতিক নিয়মে মা-বাবা হয়ে যাওয়া খুব সহজ। কিন্তু আদর্শ মা-বাবা হওয়ার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘ শিক্ষা ও দীক্ষা। তো তোমরা দু’জন জীবনের শুরু থেকেই শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করো যে, একটি মেয়ে কীভাবে একজন আদর্শ মা হতে পারে এবং একটি ছেলে কীভাবে একজন আদর্শ বাবা হতে পারে! আগে বলেছিলাম একটি নছীহত, এখন বলছি দু’টি নছীহত।
সন্তানের সামনে কখনো তার মাকে অসম্মান করো না। তোমাকে মনে রাখতে হবে, সে তোমার স্ত্রী, কিন্তু তোমার সন্তানের মা, তোমার চেয়েও অধিক শ্রদ্ধার পাত্রী। সন্তান যেন কখনো, কখনোই মা-বাবাকে ঝগড়া-বিবাদ করতে না দেখে। এ নছীহত আমি তোমাকে করছি, আল্লাহর শোকর নিজে আমল করে। আমার বড় সন্তানের বয়স ত্রিশ বছর, এর মধ্যে কখনো সে আমাদের বিবাদ করতে এমনকি তর্ক করতেও দেখেনি। দ্বিতীয়ত তোমরা উভয়ে সন্তানের বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করো, এমন বন্ধু যাকে নিজের মনের কথা, সব কথা নিঃসঙ্কোচে জানাতে পারে।
আগের কথায় ফিরে আসি; আগামীপরশু তোমার বিবাহ। তার মানে, আজ তুমি নিছক একটি যুবক ছেলে, অথচ আগামী পরশু হয়ে যাচ্ছো, একজন দায়িত্ববান স্বামী। কত বিরাট পার্থক্য তোমার আজকের এবং আগামী পরশুর জীবনের মধ্যে। বিষয়টি তোমাকে বুঝতে হবে। কেন তুমি বিবাহ করছো? বিবাহের উদ্দেশ্য কী? দেখো, আমাদের দেশে পারিবারিক পর্যায়ে একটা নিন্দনীয় মানসিকতা হলো, সংসারের প্রয়োজনে, আরো খোলামেলা যদি বলি, কাজের মানুষের প্রয়োজনে ছেলেকে বিয়ে করানো। সবাই যে এমন করে তা নয়, তবে এটা প্রবলভাবে ছিলো, এখনো কিছু আছে। আমি নিজে সাক্ষী, আমার একজন মুহতারাম তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিলেন, বিয়ে হওয়ামাত্র ছেলের বাবা স্বমূর্তি ধারণ করে বলতে লাগলেন, আর দেরী করা যাবে না, তাড়াতাড়ি মেয়ে বিদায় করেন। মেয়ের মা ও বাবা তো হতবাক!
মেয়ে বিদায় হলো। শশুরবাড়ীতে রাত পোহালো, আর পুত্রবধুর সামনে কাপড়ের স্ত্তপ নিক্ষেপ করে শাশুড়ী আদেশ করলেন, কাপড়ে সাবান লাগাও, দেখি, মায়ের বাড়ী থেকে কেমন কাজ শিখে এসেছো!
আমার এক ছাত্রের কথা, বিয়ের প্রয়োজন। কেন? কারণ মা-বাবার খেদমত করার কেউ নেই।
এটা কিন্তু বিবাহের উদ্দেশ্য বা মাকছাদ হতে পারে না। মা-বাবার খেদমত মূলত তোমার দায়িত্ব। এখন সে যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তোমার সাথে এতে শরীক হয়, তবে সেটা তোমাদের উভয়ের জন্য সৌভাগ্যের কারণ হতে পারে। দেখো, আল্লাহ চাহে তো অচিরেই আমাদেরও ঘরে পুত্রবধু আসবে। আমরা আমাদের না দেখা সেই ছোট্ট মেয়েটির প্রতীক্ষায় আছি। কিন্তু আমি আমার পুত্রকে অবশ্যই বলবো, বিবাহের উদ্দেশ্য মা-বাবার খেদমত করা হতে পারে না।
আমি দু’আ করি, তোমার মা-বাবা তোমার যেমন, তেমনি তোমার স্ত্রীরও যেন মেহেরবান মা-বাবা হতে পারেন। আমার দুই মেয়ের শশুর, দু’জনই এখন জান্নাতবাসী (ইনশাআল্লাহ)। আল্লাহর কাছে আমার সাক্ষ্য এই যে, সত্যি সত্যি তারা আমার মেয়েদু’টির ‘বাবা’ ছিলেন। আমার ছোট মেয়ের শশুর বড় আলিম ছিলেন, তাঁকে আমার একটি বই হাদিয়া দিয়েছিলাম এভাবে, ‘সাফফানার আববুর পক্ষ হতে সাফফানার আববাকে’। তিনি খুশী হয়ে অনেক দু’আ করেছিলেন, আর বলেছিলেন, ‘আপনি তো এই ছোট্ট একটি বাক্যে সম্পর্কের মহামূল্যবান এক দর্শন তুলে ধরেছেন!
আমার বড় মেয়ের অবস্থা হলো, মায়ের বাড়ী থেকে যাওয়ার সময় সে কাঁদে না, কাঁদে ‘আম্মার’ বাড়ী থেকে আসার সময়।
দুআ’ করি, আমার দেশের প্রতিটি মেয়ে যেন মা-বাবার ঘর থেকে এমন মা-বাবার ঘরে প্রবেশ করতে পারে। আর তুমি দু’আ করো, আমরা দু’জন যেন আমাদের অনাগত মেয়েটির জন্য তেমন মা-বাবাই হতে পারি।
তো বলছিলাম বিবাহের উদ্দেশ্যের কথা। বৈধ উপায়ে স্ত্রীপরিচয়ে কাউকে ভোগ করা, এটাও বিবাহের উদ্দেশ্য বা মাকছাদ হতে পারে না।
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে বলা হয় শরীকে হায়াত, জীবনসঙ্গী এবং জীবনসঙ্গিনী। বস্ত্তত এই শব্দটির মধ্যেই দাম্পত্য জীবনের সুমহান উদ্দেশ্যটি নিহিত রয়েছে। আর যদি কোরআনের ভাষায় বলি তাহলে বিবাহের উদ্দেশ্য হল,
هن لباس لكم وانتم لباس لهن
তুমি তো কোরআন বোঝো। ভেবে দেখো, দাম্পত্য-সম্পর্কের কী গভীর তাৎপর্য এখানে নিহিত! 
পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বিবাহ হচ্ছে আমার সুন্নত। আর বলেছেন, যে আমার সুন্নতের প্রতি বিমুখ হবে সে আমার উম্মতভুক্ত নয়।
বিবাহ নবীর সুন্নত! সুতরাং সহজেই বোঝা যায়, বিরাট ও মহান কোন মাকছাদ রয়েছে এর পিছনে।
বিবাহের আসল মাকছাদ বা উদ্দেশ্য হলো স্বামী ও স্ত্রী- এই পরিচয়ে একটি নতুন পরিবার গঠন করা এবং মা ও বাবা- এই পরিচয়ে সন্তান লাভ করা। তারপর উত্তম লালন-পালন এবং আদর্শ শিক্ষা-দীক্ষা ও তারবিয়াতের মাধ্যমে নেক সন্তানরূপে গড়ে তুলে দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করা, যাতে নস্লে ইনসানি বা মানববংশ কেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর পছন্দমত আগে বাড়তে থাকে। 
এটাই হলো বিবাহের আসল উদ্দেশ্য; অন্য যা কিছু আছে তা সব পার্শ্ব-উদ্দেশ্য। তো এখনই তুমি নিয়ত ঠিক করে নাও যে, কেন কী উদ্দেশ্যে বিবাহ করবে। উদ্দেশ্য যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে দেখতে পাবে, আল্লাহ চাহে তো এখনই তোমার ভিতরে কত সুন্দর পরিবর্তন আসছে! কী আশ্চর্য এক পরিপূর্ণতা নিজের মধ্যে অনুভূত হচ্ছে! আগামী জীবনের সকল দায়দায়িত্ব পালন করার জন্য গায়ব থেকে তুমি আত্মিক শক্তি লাভ করছো। আল্লাহ তাওফীক দান করেন।
এবার আসো জীবনের
বাস্তবতার কথা বলি, এতদিন তোমার জীবনে ছিলেন শুধু তোমার মা, যিনি তোমাকে গর্ভে ধারণ করেছেন, প্রসববেদনা ভোগ করেছেন। নিজেকে তিলে তিলে ক্ষয় করে তোমাকে প্রতিপালন করেছেন। এতদিন তোমার উপর ছিলো তাঁর অখন্ড অধিকার। হঠাৎ তিনি দেখছেন, তাঁর আদরের ধন, তাঁর অাঁচলের রত্ন পুত্রের জীবনে স্ত্রীপরিচয়ে অন্য এক নারীর প্রবেশ (অনুপ্রবেশ?) ঘটেছে! এভাবে পুত্রের উপর তার অখন্ড অধিকার খন্ডিত হতে চলেছে। যে পুত্র ছিলো এতদিন তাঁর একক অবলম্বন, এখন সে হতে চলেছে অন্য এক নারীর অবলম্বন। এ বাস্তবতা না তিনি অস্বীকার করতে পারছেন, না মেনে নিতে পারছেন। সংসারে প্রত্যেক মায়ের জীবনে এ কঠিন সময়টি আসে। এমন এক অর্ন্তজ্বালা শুরু হয় যা শুধু তিনি নিজেই ভোগ করেন, কাউকে বোঝাতে পারেন না, এমনকি এতদিনের আদরের ধন পুত্রকেও না। ফলে সামান্য সামান্য কারণে, এমনকি অকারণেও তিনি খুব সংবেদনশীল হয়ে পড়েন; তাঁর অনুভূতি আহত হয়। এমন সময় ছেলে (এবং তার স্ত্রী অজ্ঞতা, অনভিজ্ঞতা ও অপিরপক্বতার কারণে) যদি অসঙ্গত কিছু বলে বা করে বসে তাহলে তো মায়ের মনে কষ্টের শেষ থাকে না। প্রসববেদনা থেকে শুরু করে প্রতিপালনের সব কষ্ট একসঙ্গে মনে পড়ে যায়।
আম্মার কাছে শুনেছি, গ্রামের এক মা তার পুত্রবধুকে বলেছিলেন, ‘ততা ফানি আমি খাইছিলাম, না তুই খাইছিলি?’
তখনকার যুগে প্রসবপরবর্তী বেশ কিছু দিন মা ও শিশুর স্বাস্থ্যগত কল্যাণ চিন্তা করে মাকে গরম পানি খেতে দেয়া হতো, ঠান্ডা পানি দেয়া হতো না।
তো কথাটা কিন্তু নির্মম। আমার জন্য ‘তাতানো পানি’ আমার মা খেয়েছেন, আমার সব আবর্জনা আমার মা পরিস্কার করেছেন। নিজের জীবন তিলে তিলে ক্ষয় করে তিনি আমাকে বড় করেছেন, উপযুক্ত করেছেন। সেই সব কষ্টের সুফল হঠাৎ করে অন্য একটি মেয়ে এসে অধিকার করে বসেছে। তখন সব হারানোর একটা বেদনা তাকে কুরে কুরে খায়। তো তোমার মায়ের অন্তরেও এরকম অনুভূতি হওয়া স্বাভাবিক। মায়ের মনের এই কষ্টের উপশম, এই বেদনার সান্ত্বনা তোমাকেই চিন্তা করতে হবে।
মায়ের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে আসে বাবার কথা, তারপর ভাই-বোনদের কথা। (এসম্পর্কেও ছাত্রটিকে বিশদভাবে বলেছিলাম।)
তৃতীয়ত তোমার স্ত্রী। যদিও তৃতীয় বলছি, কিন্তু বাস্তবে এটাই হলো সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ এবং সবচে’ নাযুক। তবে এটা থাকবে তোমার দিলে, তোমার অন্তরে। মা-বাবার সামনে মুখের কথায় বা আচরণে এটা প্রকাশ করা প্রজ্ঞার পরিচায়ক হবে না।
কেন বলছি স্ত্রীর বিষয়টি সবচে’ নাযুক? তার আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দাও; কোন বিবাহে কোন ছেলেকে কাঁদতে দেখেছো?! কোন ছেলের মা-বাবাকে বিষণ্ণ দেখেছো?! দেখোনি; (হয়তো ব্যতিক্রম এক দুইটি ঘটনা থাকতে পারে। কিন্তু সাধারণ অবস্থা এটিই, এদের কেউ কাঁদে না।) কেন? কারণ বিবাহের মাধ্যমে ছেলে কিছু হারায় না, ছেলের মা-বাবা কিছু হারায় না, বরং অর্জন করে। তাই তাদের মুখে থাকে অর্জনের হাসি এবং প্রাপ্তির তৃপ্তি।
বিবাহের আসরে কাঁদে শুধু মেয়ে, আর মেয়ের মা-বাবা। কেন কাঁদে একটি মেয়ে? কারণ তাকে সবকিছু হারাতে হয়, সবকিছু ত্যাগ করতে হয়। মা-বাবাকে ছেড়ে আসতে হয়, শৈশবের সব স্মৃতি তাকে মুছে ফেলতে হয়। একটি ছোট্ট মেয়ের জীবনে এটি অনেক বড় আঘাত। এ যেন একটি ছোট্ট গাছের চারাকে শিকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলে বহু দূরে ভিন্ন পরিবেশে নতুন মাটিতে এনে রোপণ করা। বাকি জীবন তাকে এই মাটি থেকেই রস আহরণ করে বেঁচে থাকতে হবে।
হিন্দিতে বলে, ‘আওর‌্যত কী ডোলী যাহা উত্যরতী হ্যয়, উসকী আর্থী ওহীঁ সে উঠতি হ্যয়।’ অর্থাৎ মেয়েদের পালকি যেখানে গিয়ে নামে, সেখান থেকেই তার জানাযা ওঠে।
কত বড় নির্মম সত্য! তো তোমার স্ত্রীরূপে তোমার ঘরে আসা এই ছোট্ট মেয়েটির যখমি দিলে তাসাল্লির মরহম তোমাকেই রাখতে হবে। একমাটি থেকে উপড়ে এনে আরেক মাটিতে রোপণ করা একটি চারাগাছ থেকে দু’দিন পরেই ফল দাবী করা কতটা নিষ্ঠুরতা! ফল পেতে হলে তোমাকে ধৈর্য ধরতে হবে। চারা গাছটির পরিচর্যা করতে হবে, সকাল-সন্ধ্যা তার গোড়ায় পানি দিতে হবে। ধীরে ধীরে শিকড় যখন মাটিতে বসবে এবং মাটি থেকে রস সংগ্রহ করার উপযুক্ত হবে, তখন তোমাকে ফল চাইতে হবে না; সজীব বৃক্ষ নিজে থেকেই ফল দিতে শুরু করবে।
কত আফসোসের বিষয়, দাম্পত্য জীবনের শুরুতে যত আদেশ-উপদেশ সব ঐ ছোট্ট মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বর্ষিত হয়। প্রথম দিনেই তাকে শুনতে হয়, এখন থেকে তাকে স্বামীর মন জয় করতে হবে, শশুর-শাশুড়ি সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে, শশুর বাড়ীর সবার মন যুগিয়ে চলতে হবে। তার নিজের যেন কোন ‘মন’ নেই। সুতরাং সেটা জয় করারও কারো গরজ নেই।
তো মায়ের মন তোমাকেই রক্ষা করতে হবে, আবার স্ত্রীর মনোরঞ্জনও তোমাকেই করতে হবে। সবদিক তোমাকেই শামাল দিয়ে চলতে হবে। কত কঠিন দায়িত্ব! অথচ না শিক্ষাঙ্গনে, না গৃহপ্রাঙ্গণে, কোথাও এ সম্পর্কে শিক্ষার নূন্যতম কোন ব্যবস্থা নেই। সম্পূর্ণ অপ্রস্ত্তত অবস্থায় দু’টি অপরিপক্ব তরুণ-তরুণীকে যেন সংসার সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়া! মেয়েটিও জানে না, আজ থেকে সে আর ছোট্ট মেয়েটি নেই। সে এখন স্ত্রী হয়ে একটি অপরিচিত মানুষের জীবনে প্রবেশ করছে, যার মা আছে, বাবা আছে, ভাইবোন আছে এবং তাদের প্রতি তার স্বামীর অনেক দায়-দায়িত্ব আছে। সহানুভূতির সঙ্গে কোমলাতার সঙ্গে এই দায়িত্ববোধ কেউ তার মধ্যে জাগ্রত করে দেয়নি। এ দোষ কার!
তো আমার প্রিয় ছাত্রটিকে বলেছিলাম, কথা দ্বারা আচরণ দ্বারা তোমার মাকে তুমি বোঝাবে, মা, আমি আপনারই ছিলাম, আছি এবং থাকবো। স্ত্রী হলো আমার জীবনের নতুন প্রয়োজন; আপনি আমার প্রাণ, আপনার সঙ্গে আমার নাড়ির টান।
অন্যদিকে স্ত্রীকে বোঝাতে হবে, এই সংসার সমুদ্রে তুমি একা নও; আমি তোমার পাশে আছি। নতুন জীবনে চলার পথে আমারও অনেক কষ্ট হবে, তোমারও অনেক কষ্ট হবে। তবে সান্ত্বনা এই যে, তুমিও একা নও, আমিও একা নই। আমার পাশে তুমি আছো, তোমার পাশে আমি আছি। আমার কষ্টের সান্ত্বনা তুমি, তোমার কষ্টের সান্ত্বনা আমি। আমরা পরস্পরের কষ্ট হয়ত দূর করতে পারবো না, তবে অনুভব করতে পারবো এবং হয়ত কিছুটা লাঘব করতে পারবো।
আল্লাহর কসম, এমন কোন নারিহৃদয় নেই যা এমন কোমল সান্ত্বনায় বিগলিত হবে না।
তোমার স্ত্রীকে তুমি এভাবে বলবে, আমাদের জীবন তো আলাদা ছিলো। আমরা তো একে অপরকে চিনতামও না। আল্লাহ আমাদের কেন একত্র করেছেন জানো?! একা একা জান্নাতে যাওয়া কঠিন। আল্লাহ আমাদের একত্র করেছেন একসঙ্গে জান্নাতের পথে চলার জন্য। আমি যদি পিছিয়ে পড়ি, তুমি আমাকে টেনে নিয়ে যাবে; তুমি যদি পিছিয়ে পড়ো, আমি তোমাকে টেনে নিয়ে যাবো। তুমি সতর্ক থাকবে, আমার দ্বারা যেন কারো হক নষ্ট না হয়; আমিও সতর্ক থাকবো, তোমার দ্বারা যেন কারো প্রতি যুলুম না হয়।
প্রিয় ছাত্রটিকে আমি আরো বললাম, স্ত্রীকে বোঝানোর জন্য তার সন্তানকে সামনে আনতে হবে। অর্থাৎ তুমি তাকে বলবে, দেখো, জীবন কত গতিশীল! সবকিছু কত দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে! দু’দিন আগে আমরা শুধু যুবক-যুবতী ছিলাম, আজ হয়ে গেছি স্বামী-স্ত্রী। দু’দিন পরেই হয়ে যাবো মা-বাবা। আমি বাবা, তুমি মা! আল্লাহর কাছে একজন মায়ের মর্যাদা কত! তোমার কদমের নীচে হবে তোমার সন্তানের জান্নাত! যেমন আমার মায়ের কদমের নীচে আমার জান্নাত। তো তোমার সন্তান কেমন হলে তুমি খুশী হবে? আমাকেও আমার মায়ের ঐরকম সন্তান হতে তুমি সাহায্য করো। আমি যদি ভুল করি, মায়ের কোন হক নষ্ট করি, মায়ের সামনে ‘উফ’ করি, তুমি আমাকে সাবধান করো, আমাকে সংশোধন করো। তাহলে ইনশাআল্লাহ তোমার সন্তানও তুমি যেমন চাও তেমন হবে।
প্রয়োজন হলে স্ত্রীকে মা-বাবার সামনে তিরস্কার করবে, তবে ঘরে এসে একটু আদর, একটু সোহাগ করে বোঝাতে হবে, কেন তুমি এটা করেছো?! বোঝানোর এই তরযগুলো শিখতে হবে, আর এটা দু’একদিনের বিষয় নয়, সারা জীবনের বিষয়। কিন্তু আমরা ক’জন এভাবে ভারসাম্যপূর্ণ জীবন যাপন করি?! হয় মাতৃভক্তিতে স্ত্রীর প্রতি অবিচার করি, না হয়, স্ত্রীর ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে মা-বাবার দিলে আঘাত দেই, আর দুনিয়া-আখেরাত বরবাদ হয়। আমার একটা কথা মনে রেখো, মায়ের পক্ষ নিয়ে স্ত্রীর প্রতি অবিচার করা মূলত মায়ের প্রতি যুলুম, তদ্রূপ স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে মায়ের হক নষ্ট করা আসলে স্ত্রীর প্রতি যুলুম। আমার একথার উৎস হলো,
أنصر أخاك ظالما أو مظلوما
অবশ্য সবকিছু হতে হবে হিকমত ও প্রজ্ঞার সঙ্গে।
একটি ঘটনা তোমাকে বলি, তোমার মত আলিমে দ্বীন নয়, সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন মানুষ আমাকে বলেছেন, একবার তার মা তাকে বললেন, তোর বউ আজ তোর এত আপন হয়ে গেলো কীভাবে!
আমি বললাম, দেখো মা, তোমাকে আমি মা বলি; এই ‘মা’ ডাকটুকু পাওয়ার জন্য তোমাকে কত কষ্ট করতে হয়েছে! অথচ ‘পরের বাড়ীর মেয়েটি’র মুখ থেকে তুমি বিনা কষ্টে ‘মা’ ডাক শুনতে পাও! তোমাকে যে মা বলে ডাকে সে আমার আপন হবে না কেন মা?
আরেকটা ঘটনা, এক মা তার মেয়ের শাশুড়ী সম্পর্কে বললেন, মানুষ না, মেয়েটাকে আনতে পাঠালাম, দু’টো পিঠে বানিয়ে খাওয়াবো, দিলো না, ফেরত পাঠিয়ে দিলো!
দু’দিন আগে তিনিও একই কাজ করেছিলেন, ছেলের বউকে নিতে এসেছিলো মায়ের বাড়ী থেকে। তিনি বললেন, দু’দিন পরে আমার মেয়েরা আসবে এখন তুমি গেলে কীভাবে চলবে!
ভদ্রমহিলাকে বললাম, আপনার কাজটা কি ঠিক হয়েছিলো? আপনাকে কষ্ট দেয়া আমার উদ্দেশ্য নয়, সতর্ক করা উদ্দেশ্য। আল্লাহর কাছে যদি আটকা পড়েন তখন তো আপনিই বলবেন, তুমি তো হাদীছ-কোরআন পড়েছো, আমাকে সতর্ক করোনি কেন?
মোটকথা, মেয়েদেরকে তারবিয়াত করতে হবে যাতে তারা আদর্শ স্ত্রী, আদর্শ মা এবং আদর্শ শাশুড়ীরূপে আদর্শ জীবন যাপন করতে পারে। পুরুষ হচ্ছে কাওয়াম ও পরিচালক। সুতরাং তারবিয়াত ও পরিচালনা করা পুরুষেরই দায়িত্ব। স্ত্রী, মা ও শাশুড়ী, জীবনের এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ও কঠিন ধাপের জন্য ঘরে ঘরে আমরা যদি আমাদের মেয়েদের গড়ে তুলতে পারি, আদেশ দ্বারা, উপদেশ, সর্বোপরি নিজেদের আচরণ দ্বারা তাহলেই সংসার হতে পারে সুখের, শান্তির।
প্রিয় ছাত্রটিকে আরেকটি কথা বললাম, তোমার স্ত্রীর কোন আচরণ তোমার অপছন্দ হতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রথমে তোমাকে ভাবতে হবে, তোমার সব আচরণ কি সুন্দর, তোমার স্ত্রীর পছন্দের? তাছাড়া তোমার স্ত্রীর ভালো দিক কি কিছু নেই। সেই ভালো দিকগুলোর জন্য শোকর করো, আর যা তোমার কাছে মন্দ লাগে তার উপর ছবর করো। আর যদি সংশোধন করতে চাও তাহলে ভালো দিকগুলোর প্রশংসা করো, তারপর কোমল ভাষায় বলো, তোমার এই বিষয়টা যদি না থাকতো তাহলে তুমি আরো অনেক ভালো হতে। তবে আল্লাহর পেয়ারা হাবীব ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেই প্রজ্ঞাপূর্ণ উপদেশ মনে রাখতে হবে, একটু বাঁকা থাকবেই, এই বক্রতা, সাহিত্যের ভাষায় যাকে বলে নায, আন্দায, মান, অভিমান, লাস্যতা, এই বক্রতা নারীর সৌন্দর্য, নারীর শক্তি। এটাকে সেভাবেই গ্রহণ করে তার সঙ্গে জীবন যাপন করতে হবে, পূর্ণ সোজা করতে চাইলে ভেঙ্গে যাবে, আর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে।
সত্যি সত্যি যদি তোমার স্ত্রীর গুরুতর কোন ত্রুটি থাকে তবে সেটা সংশোধনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অবশ্যই তোমার। তবে সেক্ষেত্রেও সংশোধনের জন্য অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে দিনের পর দিন চেষ্টা করে যেতে হবে। ধমক দিয়ে, জোর খাটিয়ে সংশোধন করা যায় না, ঘরে অশান্তি আনা যায়, ঘর ভাঙ্গা যায়, আর সন্তানদের জীবনে বিপর্যয় আনা যায়।
ইসলামপুরে আমার আববার দোকানের অপর দিকে এক ভদ্রলোকের দোকান ছিলো। অবস্থা ছিলো এই যে, দোকানে বসেই মদ খেতো। আববা তাকে দাওয়াত দিলেন, আর সে খুব দুর্ব্যবহার করলো, কিন্তু আববা ধৈর্যের সঙ্গে দাওয়াত চালিয়ে গেলেন। দু’বছর পর তিনি মসজিদমুখী হলেন এবং এমন মুবাল্লিগ হলেন যে, বউকে তালাক দেবেন। কারণ সে দ্বীনের উপর আসছে না।
আববা তাকে এভাবে বুঝালেন, ‘আমার সঙ্গে আপনার আচরণ কি মনে আছে? আমি যদি ধৈর্যহারা হয়ে আপনাকে ত্যাগ করতাম! এই পুরো কথাটা যেহেনে রেখে স্ত্রীকে তালিম করতে থাকেন। ছবর করেন, ছবর করলে আমার প্রতি আপনার যুলুম আল্লাহ মাফ করবেন। আল্লাহ যদি প্রশ্ন করেন আমার বান্দা তোমাকে আমার ঘরের দিকে ডেকেছে, তুমি তার প্রতি যুলুম করেছো কেন? তখন আপনি বলতে পারবেন, হে আল্লাহ, আমিও আপনার বান্দীর পিছনে ছবরের সঙ্গে মেহনত করেছি।’
সেই লোকের স্ত্রী কিন্তু পরবর্তী সময়ে পরদানশীন হয়েছিলো। অথচ জোশের তোড়ে লোকটা তো ঘরই ভেঙ্গে ফেলছিলো।
আসলে দোষ আমাদের। আমরা তারবিয়াত করার তরীকা শিখিনি। বোঝানোর তরয আয়ত্ত্ব করিনি।
প্রিয় ছাত্রটিকে আরো অনেক কথা বলেছিলাম, প্রায় দু’ঘণ্টা সময় তার জন্য ব্যয় করেছিলাম। সবকথা এখন মনেও নেই।
তবে একটা কথা তাকে বলা হয়নি, এখন তোমাদের মজলিসে বলি, স্ত্রীর সঙ্গে আচরণ কেমন হবে, এ সম্পর্কে একজনকে যা বলতে শুনেছিলাম, তা ছিল খুবই মর্মান্তিক। তিনি বলেছিলেন, ‘মেয়েলোক যেন তোমার মাথায় চড়ে না বসে, তাই প্রথম দিন থেকেই তাকে শাসনের মধ্যে রাখবা। পূর্ণ ইতা‘আত ও আনুগত্য আদায় করে নিবা, গোরবা কুশতান দর শবে আওয়াল।’
এ প্রবাদ এমনই বিশ্ববিশ্রুত যে, আমাদের নিরীহ বাংলাভাষায়ও বলে, ‘বাসর রাতেই বেড়াল মারতে হবে’। কিন্তু জীবনের সর্বক্ষেত্রের মত এক্ষেত্রেও আমাদের অনুসরণীয় হলো সুন্নাতে রাসুল, আর তিনি ইরশাদ করেছেন,
خيركم خيركم لأهله وأنا خيركم لأهلي
তো জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শরীয়তের সীমারেখায় থেকে স্ত্রীর সঙ্গে এমন আচরণই আমাকে করতে হবে, যাতে সে মনে করে, আমি সর্বোত্তম স্বামী, আমার মতো উত্তম স্বামী হয় না, হতে পারে না।
স্ত্রীগণের সঙ্গে নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ কী ছিলো তা জানতে হবে এবং অনুসরণ করতে হবে। স্বামীর খেদমত করার মাধ্যমে স্ত্রী অনেক আজর ও ছাওয়াবের অধিকারিণী হতে পারে, এটা আলাদা কথা। তবে আমাকে মনে রাখতে হবে যে, এটা স্ত্রীর মহত্ত্ব, স্বামীর অধিকার নয়। তারা যদি কখনো মায়ের বাড়ী যেতে চায়, আমরা প্রশ্ন করি, ‘আমার খাওয়া-দাওয়ার কী হবে?’ অথচ এটা তার বিবেচনার বিষয় হতে পারে, আমার প্রশ্ন করার বিষয় নয়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সামান্য কথা বলেই মজলিস শেষ করছি। সহবাস দাম্পত্য জীবনের একটি অপরিহার্য সত্য। এ বিষয়ে আলোচনাকে হায়া-শরমের খেলাফ মনে করা হয়। ফলে বিষয়টি অজ্ঞতার মধ্যে থেকে যায়। একারণে এমনকি অনেক সময় দাম্পত্য জীবন বিষাক্ত হয়ে পড়ে।
স্ত্রী তোমার সারা জীবনের সম্পদ এবং সেরা সম্পদ।
متاع মানে সম্পত্তি নয়, ভোগের বস্ত্ত নয় متاع মানে সম্পদ, ঐশ্বর্য। বিষয়টি বুঝতে না পেরে আধুনিক বুদ্ধিজীবীরা হাদীছের সমালোচনা করেন। আমরা হাদীছটির তরজমা ও ব্যাখ্যা এমন খন্ডিতভাবে করি যে, তারাও সুযোগ পেয়ে যায়।
তো স্ত্রী তোমার সম্পত্তি নয়, স্ত্রী হলো তোমার জীবনের সর্বোত্তম সম্পদ, যা যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে তোমাকে রাখতে হবে এবং ব্যবহার করতে হবে।
প্রথমেই বর্বর ও পাশবিকরূপে নিজেকে স্ত্রীর সামনে তুলে ধরা বিরাট মুর্খতা ছাড়া আর কিছু নয়। স্ত্রী স্বামীর ভোগের পাত্রী নয়, বরং স্বামী-স্ত্রী হলো পরস্পরকে উপভোগ করার জন্য। যত দিন লাগে, দীর্ঘ সাধনা করে প্রথমে হৃদয় জয় করো, মনের দুয়ার খোলো, অন্তরের গভীরে প্রবেশ করো।
যিন্দেগীর এই কঠিন মারহালা সম্পর্কে কত কিছু যে বলার আছে, কত কিছু যে শেখার আছে! দেখি, যদি আবার কখনো সুযোগ হয়।
[দাম্পত্যজীবন সুখময় হওয়ার জন্য শুধু পুরুষের প্রচেষ্টা ও সচেতনতাই যথেষ্ট নয়, নারীরও সদিচ্ছা ও সচেতনতা অতি প্রয়োজন।
এ বিষয়ে তারও আছে অনেক দায়িত্ব। কিন্তু নারীর তালীম-তরবিয়তের ভারও তো পুরুষেরই উপর। বিয়ের আগে পিতামাতা তার তরবিয়ত করবেন, বিয়ের পর স্বামী। দাম্পত্যজীবনে নারীর দায়িত্ব কী কী, সেই সকল দায়িত্ব সম্পর্কে তাকে সচেতন করার পদ্ধতি কী এবং তার তালীম-তরবিয়ত কীভাবে করতে হবে-এটি আলাদা একটি বিষয়।
আল্লাহ করুন, কোনো মজলিসে আমরা যেন হুজুরের কাছ থেকে এ বিষয়েও বিস্তারিত দিক-নির্দেশনা লাভ করি।-তত্ত্বাবধায়ক]

 

.........................

 

 

সে দ্বীনদার,আরব, নীল চোখ ওয়ালা সুন্দর যুবক চায় আল্লাহর কাছে

.

❤❤❤
আমি তখন আল-খানসা হিফজোখানায় পড়ি, বয়স ১৫/১৬ হবে,আমাদের হালাকায় এক মাঝ বয়সী মহিলা ছিলেন,আফ্রিকান মহিলা,একদিন দুয়া কবুলের তালীম চলছিল,তখন সেই মহিলা কান্না করতে করতে বলেন- “ আমার মেয়ে অনেক জিদ্দি,সে এমন কিছুর আবদার করছিল যা আমরা সবাই বুঝতাম যে বিষয়টা অসম্ভব। তার বয়স হচ্ছিল,তার জন্য আমাদের গোত্রীয় ছেলেদের কত প্রস্তাব আসে কিন্তু সে রাজি হয়না, সে কালো চামড়ার,সে অনেক লম্বা আর অনেক স্বাস্থ্যবতী,আমাদের গোত্রে এমন মেয়ে মানে অনেক সুন্দরী, কিন্তু এই আরবে তো কালো স্বাস্থ্যবতী মেয়েরা সুন্দরী না,আরবরা সাদা চামড়ার পাতলা ফিনফিনা মেয়ে পছন্দ করে। তো আমার মেয়ের ইচ্ছে সে আরবের সুন্দর ফর্সা চামড়ার ছেলের বউ হবে।আমরা তাকে অনেক বকা দিতাম,বুঝাতাম, যে এমন আশা করলে জীবনেও বিয়ে হবে না,মেয়ে বলতো আমার বিয়ে তোমরা দিবা নাকি আমার আল্লাহ দিবেন? কদিন পর আমার বড় ছেলে এক আরবের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আনলো,আমরা সবাই খুশি হয়েছি অনেক, কিন্তু আমার মেয়ে না করে দিলো,কারণ সেই আরব লোকটা বৃদ্ধ ছিল আর তার আগের ৩ বউ ছিল। আমার মেয়ে খুব রাগ হলো আর আমাদেরকে সাফ জানিয়ে দিলো সে দ্বীনদার,আরব, নীল চোখ ওয়ালা সুন্দর যুবক চায় আল্লাহর কাছে। তার জন্য যেন আমরা কেউ পেরেশান না হই। আল্লাহই এনে দিবে তার এই স্বপ্নের রাজপুত্র।

আমরা বুঝেছিলাম ওর আর বিয়েই হবেনা,একে তো ও কালো চামড়া, চেয়ে বসছে সুন্দর সাদা চামড়ার আরব,আমরা নিচু বংশীয় গরিব মানুষ, আর আরবরা সেই ধনী আর উঁচু বংশীয়, সব নাহয় মানলাম,কিন্তু নীল চোখ? এ আবার কোন পাগলামি? আরবদের বেশি থেকে বেশি খয়েরি চোখ হয়,কালো আর খয়েরি,নীল তো ইংলিশদের হয়!আমাদের তখন মনে হচ্ছিল ও আসলে বিয়েই করতে চায়না তাই এমন সব আবদার করে। একদিন ওকে অনেক বকা দিয়েছি,গায়েও হাত তুলেছি। আমার মেয়ে কান্না করতে করতে বলছে এক সপ্তাহের ভিতরেই সে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে তার নীল চোখা আরব জামাইর সাথে।

আমরা খুব রাগ হলাম, মেয়ে পাগল হয়ে গেছে,মেয়ে বেয়াদব হয়ে গেছে এসব বলে বলে ওকে বকা দিচ্ছিলাম।

সেই এক সপ্তাহ আমার মেয়ে অনেক কান্না করেছে জায়নামাজ বিছিয়ে,সারাক্ষণ সারা রাত সে কান্না করে করে তার রবের নিকট দুয়া করেছে। ঠিক ৭ দিনের দিন তার জন্য এক নীল চোখ ওয়ালা সুদর্শন আরব যুবকের পক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব এসেছে। আমরা সবাই এতো বেশি খুশি হয়েছিলাম ভাষায় প্রকাশ করার মত না। ওয়াল্লাহি যদি মানুষকে সিজদা করা জায়িজ থাকতো,শিরক না হতো সেদিন আমরা সবাই আমার সেই আল্লাহওয়ালা মেয়েকে সিজদা করতাম। আমি অবাক হয়েছি আমার মেয়ের ইয়াকিন দেখে,ওর তাওয়াক্কুল দেখে আর ওর দুয়ার ক্ষমতা দেখে।

আমি বিয়ের দিন আমার মেয়েকে বলছিলাম কী বলে সে আল্লাহর কাছে দুয়া করতো? মেয়ে বললো আমি সারাদিন ইস্তেগফার করতাম আর সারারাত আমার পছন্দ ব্যক্ত করে দুয়া করতাম।আর আমার ইয়াকিন ছিল আল্লাহর কাছে সবই সম্ভব।

আজ ৮/১০ বছর আমার মেয়ে অনেক সুখেই সংসার করছে। ওদের বাচ্চা গুলাও অনেক সুন্দর সুন্দর। কেউ সাদা কেউ কালো কেউ মাঝামাঝি। কিন্তু মজার বিষয় ওদের সবার চোখের রঙ নীল।”

আমরা সবাই একটা ঘোরের মাঝে চলে গিয়েছিলাম এই গল্প শুনে। মহিলা প্রচুর কান্না করতে করতে বলছিলেন,আর আমরা মারাত্মক রকমের ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলাম।

এই গল্প সেইদিন ঐ মজলিশের সবাইকেই এমন নাছোড়বান্দা বানিয়ে ছাড়ছিল। রাতের তাহাজ্জুদ আর ইসতেগফারের কি ক্ষমতা তা এই দুইটা না করে বোঝা যাবেনা !

#Zain

 

.....................................................

 

দীর্ঘ ত্রিশ বছরের বৈবাহিক জীবনে আমাদের মধ্যে একবারও ঝগড়া-বিবাদ হয়নি

.

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. যখন বিয়ে করতে
মনস্থির করেন তখন তার চাচিকে বলেন,
ওই শায়েখের বাড়িতে দু'জন বিবাহযোগ্য মেয়ে আছে, আপনি তাদের দেখে আসুন এবং তাদের সম্পর্কে আমাকে জানান।

চাচি মেয়ে দুটিকে দেখে আসার পর ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের কাছে তাদের বর্ণনা দিতে শুরু করলেন।

তিনি বাড়ির ছোট মেয়ের ব্যপারে অনেক প্রশংসা করলেন।
ফর্সা চেহারা, তার চোখ ও চুলের সৌন্দর্য,
দীর্ঘতা বর্ণনায় পঞ্চমুখ হলেন।

ইমাম আহমদ তখন তাকে বড় মেয়েটির ব্যাপারে বলতে বললেন।

বড় মেয়েটির ব্যাপারে তিনি অনেকটা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে কথা বললেন। অবিন্যস্ত চুল, খর্বকায় উচ্চতা, শ্যাম বর্ণ এবং একটি চোখে ক্রটি থাকার কথা উল্লেখ করলেন।

এরপর ইমাম আহমদ তাকে দুজনের দ্বীনদারির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। জবাবে চাচি বললেন, বড় মেয়েটি দীনদারির দিক থেকে ছোট মেয়ের তুলনার বেশ এগিয়ে।

একথা শুনে ইমাম আহমদ বললেন,
তাহলে আমি বড় মেয়েটিকেই বিয়ে করব।

বিয়ের ত্রিশ বছর কেটে যাওয়ার পর
ইমাম আহমদের স্ত্রী মৃত্যুবরণ করলেন।

দাফনের সময় ইমাম আহমদ বললেন, ইয়া উম্মে আবদুল্লাহ! তোমার কবর শান্তিময় হোক। দীর্ঘ ত্রিশ বছরের বৈবাহিক জীবনে আমাদের মধ্যে একবারও ঝগড়া-বিবাদ হয়নি।

একথা শুনে তাঁর এক ছাত্র অবাক হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া শায়েখ! এটা কিভাবে সম্ভব?

জবাবে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল বললেন, যখনই আমি তার প্রতি রেগে যেতাম তখন তিনি চুপ থাকতেন, আর যখন তিনি আমার প্রতি রেগে যেতেন তখন আমি চুপ থাকতাম। তাই আমাদের মধ্যে কখনোই ঝগড়া-বিবাদ হয়নি।

[ আল ইলমু ওয়াল উলামা : ৩৩৬ ]

 

........................................

 

স্বামী এবং স্ত্রী পরস্পর তিনটি চাহিদাকে কেন্দ্র করে একে অপরের সাথে জড়িয়ে থাকে।


.
– শারীরীক চাহিদা,
– মানসিক চাহিদা এবং
– আধ্যাত্মিক চাহিদা।
.
এর কোন একটির ঘাটতি বয়ে আনতে পারে
অসন্তুষ্টি। আর তাই  সুন্নাহ
মোতাবেক পারিবারিক জীবন অতিবাহিত
করার একটা রাফ প্ল্যান করে নিতে পারেন।
কিছু বিষয় হাইলাইট করে যদি সুন্নাহ
মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা যায় তবে
প্রতিটি ঘর হয়ে উঠবে প্রশান্তিময়।
.
বিয়ে পরবর্তী রোমান্স যেনো আমৃত্যু টিকে
থাকে এজন্য নিম্নের সুন্নাতি বিষয়গুলোতে
আসুন সকল পুরুষরা একটু চোখ বুলিয়ে নেই,
.
❒ সহধর্মিণীর হৃদয়ের ভাষা বুঝুনঃ
.
রাসূলুল্লাহ ﷺ একবার আ'ইশাকে (রা.) বললেন,
হে আ'ইশা! আমি অবশ্যই জানি কখন তুমি আমার
প্রতি সন্তুষ্ট থাক আর কখন অসন্তুষ্ট হও। আ'ইশা
জিজ্ঞেস করলাম, তা আপনি কিভাবে
জানেন? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, যখন তুমি
আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাক, তখন তুমি এরূপ
বল,‘মুহাম্মাদের রবের কসম, আর যখন তুমি
অসন্তুষ্ট হও তখন বল, ‘ইবরাহীমের রবের কসম’!
আ'ইশা (রা.) বললেন, জী হ্যাঁ, ইয়া
রাসূলাল্লাহ। আল্লাহর শপথ! (রাগের সময়)
আমি কেবল আপনার নামটাই বাদ দেই।
.
স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, আল্লাহর রাসুল ﷺ তাঁর
সহধর্মিণীর হৃদয়ের অনুভূতি কতোটা গভীরভাবে
বুঝতেন। আসলে স্বামী এবং স্ত্রীর সম্পর্ক
তো এমনই হওয়া উচিত। একে অপরের সুখ-দুঃখ
যতো বেশী বুঝতে পারবে ততো তাদের মাঝে
প্রশান্তি বিরাজ করবে।
.
❒ স্ত্রী দুঃখ পেলে সান্ত্বনা দেয়াঃ
.
আল্লাহর রাসুল ﷺ এর প্রিয় সহধর্মিণী
সাফিয়াহ (রা.) ইসলাম গ্রহনের পুর্বে ইহূদী
ছিলেন। তো রাসুলুল্লাহ ﷺ একবার হযরত
সাফিয়াহর (রা.) গৃহে গিয়ে দেখলেন, তিনি
কাঁদছেন । কারণ জিজ্ঞেস করলে, তিনি
বললেন – আ'ইশা এবং যায়নাব বলেন, আমরা
রাসুলুল্লাহর স্ত্রী এবং গৌরবের দিক হতে
একই রক্তধারার অধিকারিণী। সুতরাং আমরাই
শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার।
.
একথা শুনে রাসুলুল্লাহ ﷺ বললেন, তুমি কেন
বললে না যে, 'আমি আল্লাহর নবী হযরত
হারুণের বংশধর ও হযরত মুসার ভ্রাতুষ্পুত্রী এবং
রাসুলুল্লাহ ﷺ আমার স্বামী । অতএব তোমরা
কোন দিক হতে আমার চাইতে শ্রেষ্ঠত্বের
অধিকারী হতে পার?' অতঃপর আল্লাহর রাসুল
ﷺ তাঁর নিজ হাত দিয়ে সাফিয়াহর (রা.) চোখ
মুছে দিলেন।
.
বিয়ের পর একটি দম্পতির মাঝে অবশ্যই এই
গুনটি বিরাজ করতে হবে। আপনার বেটার হাফ
সবসময় হাস্যজ্জ্বল থাকবে এমন ভাবাটা
বোকামী। এসময় একে অপরকে সান্ত্বনা দিয়ে
তাদের কাছে টানতে হবে।
.
❒ স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে শোয়াঃ
.
আল্লাহর রাসুল ﷺ প্রায়সময় উম্মুল মু'মিনীন
খাদিজা (রা.) এর কোলে মাথা রাখতেন, এবং
তাঁর মৃত্যুর পর আ'ইশা (রা.) এর উরুর উপর মাথা
রেখে শুতেন। যখন আ'ইশা (রা.) ঋতুবর্তী
অবস্থায় উপনীত হতেন, তখন তিনি ﷺ তাঁর উরুর
উপর শুয়ে কোর'আন তিলাওয়াত করতেন।
.
একজন পুরুষ তার বৈবাহিক জীবনে কতোবার
এভাবে স্ত্রীর উরুতে মাথা রেখে শুয়েছেন??
একটাবার ভাবুন, মহিলাদের এই সেন্সেটিভ
সময়ে আপনার একটু সুক্ষ্ম আহ্লাদ তার মনের
দুঃখ নিমিষেই ভুলিয়ে দিতে পারে। একবার
মাথা রেখে দেখুনই না স্ত্রী সব উজাড় করে
দিয়ে দিবে, প্রমিজ।
.
এক্ষেত্রে একজন স্ত্রীরও উচিত স্বামীর
কাঁধে মাথা রেখে নিজের কথাগুলো শেয়ার
করা। নিশ্চিত স্বামী বেচারা পরদিন আস্ত
গোলাপ বাগান নিয়ে আসতেও কুন্ঠাবোধ
করবেন না।
.
❒ একে অপরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিনঃ
.
উম্মুল মু'মিনীন আ'ইশা (রা.) প্রায় সময়
রাসুলুল্লাহর ﷺ মাথার চুল আচড়ে দিতেন।
এমনকি তিনি রাসুলুল্লাহ ﷺ এর মাথা ধৌত
করে দিতেন।
.
আমি তো মনে করি, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের
কাছাকাছি আসার এটাই সবচেয়ে বড় সুযোগ।
আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না, একে
অপরের মাথায় সিম্পলি হাত বুলিয়ে দেয়া বা
একে অপরের চুল আচড়ে দেয়ার মাধ্যমে যে
ভালোবাসার আদান-প্রদান হবে তা
অবিশ্বাস্য।
.
❒ একই পাত্র হতে খাওয়ার অভ্যেস শুরু করুনঃ
.
যখন উম্মুল মু'মিনীন আ'ইশা (রা.) গ্লাসে করে
পানি খেতেন, আল্লাহর রাসুল ﷺ ঠিক প্রিয়
সহধর্মিণীর ঠোট লাগা অংশে ঠোট লাগিয়ে
পানি পান করতেন। যখন আ'ইশা (রা.) গোশত
খেতেন, তখন আল্লাহর রাসুল ﷺ আ'ইশা হতে
গোশতটা টান দিয়ে নিয়ে নিতেন, এবং ঠিক
আ'ইশা (রা.) যেদিকটায় ঠোট লাগিয়ে
খেয়েছেন, একই স্থান থেকে তিনি ﷺ ও
খাওয়া শুরু করতেন।
.
অফিস থেকে আসতে দেরী হোক আর যাই
হোক, স্ত্রীর সাথে আজ হতে মাঝে মাঝে
একই প্লেটে, একই গ্লাসে খাওয়া শুরু করুন।
(প্রতিদিন করতে বলবো না, নাহয় নেকামি
ভেবে বৌ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব জেগে উঠতে
পারে)। এতে হৃদতা, ভালোবাসা বাড়বে।
খেতে খেতে দু'জনার হৃদয় হতে এমন ফ্রেগ্রেন্স
বের হবে, আহ! শুধু সুকুন আর সুকুন।
.
❒ লজ্জা ফেলে মুসাহাফা করুনঃ
.
আল্লাহর রাসুল ﷺ প্রায় সময় স্ত্রীদের চুমু
খেতেন। তাঁদের সাথে আদর আহ্লাদ করতেন।
যখন রাসুলুল্লাহ ﷺ সিয়াম রাখতেন, ঠিক তখন
তিনি স্ত্রীদের চুমু দিয়েছেন এমন কথাও
হাদিসে পাওয়া যায়।
.
স্ত্রীর চোখে চোখ রাখা, তার কাজের
মধ্যখান দিয়ে হুট করে চুমু দিয়ে আসা, আপনার
ভালোবাসার গভীরতাকে আপনার স্ত্রীর
অন্তরে পৌছুতে সাহায্য করবে। ভালোবাসা
লুকোনোর বিষয় নয়, তা প্রকাশ করার মাধ্যম
ইসলাম শিখিয়েছে আমাদের। লজ্জা ভুলে
একে অপরের সম্মুখে ভালোবাসা প্রকাশ করা
শুরু করুন। একে অপরের সাথে মিলিত হন। কাছে
টানুন। নিশ্চই স্বামী স্ত্রীর পবিত্র মিলন
সাদাকাহ হিসেবে আল্লাহ তা'য়লা কবুল
করেন।
.
❒ একে অপরের মুখে হাত তুলে খাইয়ে দিনঃ
.
ভালোবাসা প্রদর্শনের উত্তম মাধ্যম হলো এই
ক্ষুদ্র কাজটি। নিজ হাতের উপার্জন স্ত্রীর
মুখে তুলে দেয়াও সওয়াবের কাজ।
ভালোবাসার অস্তমিত সুর্যকে নতুন করে
জাগিয়ে তুলতে এর তুলনা নেই।
.
আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন – "...তুমি আল্লাহর
সন্তুষ্টির উদ্যেশ্যে যা ব্যয় করবে তার উত্তম
প্রতিদান পাবে। এমনকি স্বীয় স্ত্রীর মুখে
তুলে দেওয়া লোকমার বিনিময়েও।"
.
❒ স্ত্রীর হাতের কাজে সাহায্য করুনঃ
.
আসওয়াদ (রহ.) বলেন – আমি আ'ইশা (রা.)-কে
জিজ্ঞেস করলাম, রাসুলুল্লাহ ﷺ ঘরে কী
কাজ করতেন? তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ
ঘরের কাজে ব্যস্ত থাকতেন অর্থাৎ গৃহস্থালির
কাজে পরিবার-পরিজনের সহযোগিতায়
থাকতেন। যখন নামাজের সময় হতো নামাজে
চলে যেতেন।
.
স্ত্রীর ঘরের কাজে সাহায্য করা আল্লাহর
রাসুল ﷺ এর সুন্নাহ। নিশ্চই এই সুন্নাহর
ব্যাপারে পুরুষদের সজাগ দৃষ্টি দেয়া
প্রয়োজন। সারাদিন গৃহস্থালি কাজ করতে
করতে স্ত্রী যখন হাপিয়ে উঠে, বন্ধের দিন
গুলোতে পুরুষদের উচিত তাদের কাজে সাহায্য
করা। এতে ভালোবাসা বাড়বে বৈ কমবে না।
.
❒ স্ত্রীর সাথে গল্প করতে ভুলবেন নাঃ
.
বাসায় স্ত্রীর সাথে যে মুহূর্তগুলো কাটাবেন,
ঠিক এসময়গুলো চেষ্টা করবেন প্রিয় মানুষের
সাথে গল্প-গুজব করে কাটাতে। মাঝে মাঝে
হাস্যরস এবং দুষ্টুমি করবেন। এতে আপনাদের
মাঝে ভালোবাসা বাড়বে। আল্লাহর রাসুল ﷺ
প্রায় সময় তাঁর স্ত্রীদের গল্প শোনাতেন।
আ'ইশা (রা.) কে তিনি উম্মে যারাহ এর
বিখ্যাত গল্প শুনিয়ে বলেছিলেন যে, 'হে
আ'ইশা আমি তোমাকে আবু যারাহ এর মতো
ভালোবাসি, যেভাবে সে উম্মে যারাহ কে
ভালোবাসতো'।
.
প্রতিদিন বাইরে যে কর্মব্যস্ত সময়ে কাটে তা
প্রিয় সহধর্মিণীকে শেয়ার করতে পারেন,
এতে আপনার উপর তার বিশ্বাস দৃঢ় হয়ে
জন্মাবে।
.
❒ স্ত্রীকে নিয়ে তার প্রিয় জায়গায় ঘুরতে যানঃ
.
একবার ইথিওপিয়া থেকে কিছু লোক এসে
মাসজিদ আন নববীতে তরবারি খেলা
দেখাচ্ছিল। আ'ইশা (রা.) রাসূল ﷺ কে বললেন
তিনি খেলা দেখতে চান। এমন অবস্থায় আমরা
হলে কী বলতাম? “হ্যাঁ!! উম্মাহর এই অবস্থা আর
তুমি চাও খেলা দেখতে!! ছি! যাও যাও কুরআন
পড়…তাফসীর পড়…”
.
অথচ রাসূল ﷺ আ'ইশাকে নিয়ে গেলেন এবং
তাঁকে আড়াল করে সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন। আ'ইশা
(রা.) রাসূলুল্লাহর পিছনে দাঁড়িয়ে খেলা
দেখতে লাগলেন। এত দীর্ঘ সময় তিনি খেলা
দেখলেন যে,রাসূলুল্লাহ ﷺ বারবার এক পা
থেকে আরেক পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াচ্ছিলেন।
তিনি আ'ইশা (রা.) কে জিজ্ঞেস করলেন যে
তাঁর দেখা শেষ হয়েছে কিনা। আ'ইশা বললেন
তিনি আরো দেখতে চান। কোন আপত্তি না
করে রাসূল ﷺ সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকলেন।
দীর্ঘক্ষণ পর আ'ইশা (রা.) নিজেই ক্লান্ত হয়ে
বললেন যথেষ্ট হয়েছে। এরপর রাসূল ﷺ তাঁকে
বাসায় নিয়ে আসলেন।
.
কি শ্রেষ্ঠ ভালোবাসাই না ছিলো আল্লাহর
রাসুল ﷺ এবং তাঁর সহধর্মিণীদের মাঝে!
আপনিও একই সুন্নাহ অনুসরন করুন, ভালোবাসায়
টইটম্বুর অবস্থা হবে।
.
❒ স্ত্রীর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করুনঃ
.
আ'ইশা (রা.) তখন হালকা গড়নের ছিলেন।
রাসূল ﷺ কোন এক সফর থেকে ফিরছিলেন।
সাথে ছিলেন আ'ইশা। তিনি সাহাবীদেরকে
বললেন সামনে এগিয়ে যেতে...
.
তাঁরা চোখের আড়াল হলে রাসূল ﷺ আ'ইশাকে
দৌড় প্রতিযোগীতায় আহ্বান করলেন। আয়েশা
জিতে গেলেন সেইবার। এর কয়েকবছর পর একই
সিনারিও। আবার রাসূল ﷺ আ'ইশাকে (রা.)
দৌড় প্রতিযোগীতায় আহ্বান করলেন। এবার
রাসূল ﷺ জিতে গিয়ে মজা করে বললেন, “এটা
আগেরটার শোধ।”
.
আমাদের দেশের পুরুষরা কি স্ত্রীর সাথে এমন
প্রতিযোগিতা করেছে কখনো? আপনি শুরু করুন।
রাসুল ﷺ কে ভালোবেসে আপনি যদি একই
ভাবে আপনার স্ত্রীকেও ভালোবাসতে
থাকেন, এর চেয়ে উত্তম আর কিছু হতে পারে
না।
.
❒ সহধর্মিণীকে প্রিয় নামে ডাকুনঃ
.
আ'ইশাকে (রা.) নবী ﷺ আদর করে ডাকতেন
হুমায়রা বলে। হুমায়রা অর্থ 'লাল বর্ণের রমনী'।
রাসুলুল্লাহ ﷺ এর আদর মাখা ডাক শুনে আ'ইশা
(রা.) কাছে আসতেন তাকে জড়িয়ে ধরতেন,
এরপর কবিতা পাঠ করে আল্লাহর রাসুলকে ﷺ
শোনাতেন।
.
এমনও হয়েছে আল্লাহর রাসুল ﷺ একবার
আ'ইশার (রা.) দিকে তাকিয়ে মন্ত্রমুগ্ধের
মতো বলেন – "তোমার চক্ষুদ্বয় কত্ত সাদা.."
.
প্রিয় সহধর্মিণীকে এমন ভালো অর্থবোধক
নামে ডাকতে পারেন, এতে একে অপরের
প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। একে অপরকে
যতো বেশী কম্পলিমেন্ট দেয়া যায়, ঠিক ততো
একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ধরে রাখতে সুবিধে
হবে।
.
❒ প্রিয় মানুষের জন্য নিজেকে সাজানঃ
.
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন – "আমি যেমন আমার
জন্য স্ত্রীর সাজগোজ কামনা করি, অনুরূপ তার
জন্য আমার নিজের সাজগোজও পছন্দ করি।"
.
অর্থাৎ যাবতিয় সাজসজ্জা যেনো কেবল প্রিয়
মানুষকে খুশি করার জন্যই করা হয়, এতে
পস্পরের প্রতি আগ্রহ জন্মাবে এবং একে
অপরকে আরো অধিকভাবে কাছে টানতে
পারবে।
.
আমাদের দেশের নারীরা তো এক্ষেত্রে বলা
চলে স্বামীর সামনে ছেঁড়া পুরোনো কাপড়ই
পরিধান করে। অথচ এক্ষেত্রে উচিত সবচেয়ে
বেস্ট পোশাক একে অপরের জন্য পরিধান করা।
.
❒ সুগন্ধী ব্যবহার করাঃ
.
আ'ইশা (রা.) এর কাছে যেসব সুগন্ধি থাকত,
সেগুলো থেকে উত্তম সুগন্ধি হজরত আ'ইশা
(রা.) রাসুলুল্লাহ ﷺ কে লাগিয়ে দিতেন।
সুগন্ধী আল্লাহর রাসুল ﷺ এর প্রিয় ছিলো।
তাই স্বামীদের উচিত তাদের স্ত্রীদের সম্মুখে
সুগন্ধী ব্যবহার করা, এবং স্ত্রীদের উচিত
তাদের স্বামীদের সম্মুখে নিজেকে রঙ দিয়ে
সাজানো যা তাকে আকৃষ্ট করে।
.
❒ বৈবাহিক সম্পর্কের গোপনীয়তা রক্ষা করাঃ
.
সাংসারিক সমস্যা নিয়ে অন্যদের সাথে
আলোচনা না করাই শ্রেয়। স্বামী-স্ত্রীর
মাঝে উপভোগ্য বিষয়গুলো গোপন করা।
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, 'কিয়ামতের দিন
আল্লাহর দরবারে সর্ব-নিকৃষ্ট ব্যক্তি সে, যে
নিজের স্ত্রীর সাথে মিলিত হয় এবং যার
সাথে তার স্ত্রী মিলিত হয়, অতঃপর সে এর
গোপনীয়তা প্রকাশ করে বেড়ায়'।
.
তাই এব্যাপারে খুব সতর্কতার সাথে ডিল
করতে হবে। ভুলেও যেনো একে অপরের
গোপনীয় কথা অন্যকে না বলা হয়। আমাদের
সমাজে অধিকাংশ বিয়ে ভেঙ্গে যায় কেবল
এই বিষয়ে অবহেলার কারনে।
.
❒ স্ত্রীর পরিবার এবং আত্মীয়ের খবর নেয়াঃ
.
নবীজি ﷺ মাঝে মাঝে একটা ভেড়া জবাই
করে বলতেন – "এই ভেড়ার মাংস খাদিজার
বান্ধবীদের জন্য পাঠিয়ে দাও।" লক্ষ করুন,
নবীজি যে কেবল খাদিজার জীবিত অবস্থায়
এমন করেছেন তা নয় বরং তিনি তো খাদিজা
(রা.) মারা যাবার পরেও তাঁর বান্ধবীদের
সাথে সৌহার্দ্য বজায় রেখেছেন। এটা তিনি
করতেন খাদিজার প্রতি ভালোবাসা থেকে।
.
আবু বকর (রা.) একবার বলছিলেন, আমি তিনটি
বিষয় খুব পছন্দ করি, এর মাঝে একটি হল-'আমি
মুহাম্মদের শ্বশুর...' উক্ত কথা দ্বারা এটাই
প্রমান করে আল্লাহর রাসুল ﷺ শ্বশুর বাড়ির
লোকেদের কেমন মহব্বত করতেন, এবং কতোটা
আপন করে নিয়েছিলেন।
.
তাই স্বামীদের উচিত স্ত্রী পক্ষের আত্মীয়ের
এবং পরিবারের দেখাশোনা করা, এবং স্ত্রীর
উচিত স্বামীর পরিবারের এবং আত্মীয়ের
দেখভাল করা। তবেই একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা
বৃদ্ধি পাবে এবং ভালোবাসা অটুট থাকবে।
.
উক্ত সুন্নাতি কাজগুলো যদি বিয়ের পুর্বে
একজন পুরুষ এবং নারী চোখ বুলিয়ে নিতে
পারেন, তবে বিয়ের পরবর্তী মুহূর্তগুলো কাটবে
চমকপ্রদ। আমৃত্যু শান্তির সাথে বসবাস করে
যেতে পারবেন, যার শেষ গন্তব্য হবে আল-
জান্নাত।
.
আল্লাহ আমাদের আমলগুলোকে আরো সুন্দর
করে দিক, এবং আমাদের মাঝে যারা
অবিবাহিত তাদের দ্রুত বিবাহ সম্পাদিত
হওয়ার তৌফিক দিক। (আমীন)
▂▂▂▂▂▂▂▂▂ ▂▂▂▂

 

.

দাম্পত্য জীবনকে সুখনীয় করে তুলতে স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকেরই করণীয় রয়েছে

 

নাহমাদুহু ওয়ানুসল্লি আলা রসূলিহিল কারিম। আম্মাবাদ-

একটি সুখি ও সমৃদ্ধ দাম্পত্য জীবনের স্বপ্ন সবাই দেখেন। কিন্তু সবার জীবন কি সুখি হয়!

অনেক সময় দাম্পত্যজীবনে নেমে আসে হাজারো দুঃখ, অশান্তি ও হতাশা। এর অন্যতম কারণ দাম্পত্যজীবন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান, প্রস্তুতি ও আয়োজনের অভাব।

দাম্পত্য জীবনকে সুখনীয় করে তুলতে স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেকেরই করণীয় রয়েছে।

আজ আমরা বোনদের সাথে আলোচনা করবো, দাম্পত্য জীবনকে সুন্দরভাবে সাজানোর প্রাথমিক একটি মূলনীতি নিয়ে। যা আপনার দাম্পত্য জীবনকে অনেকাংশে নির্মল ও পরিচ্ছন্ন করে তুলবে ইন শা আল্লাহ।

প্রিয় বোন! দাম্পত্যজীবনকে সুন্দর পরিচ্ছন্ন ও সুখময় করে তুলতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মূলনীতি হলো, স্বামীর আনুগত্য।

আমরা সাধারণত মনে করি স্বামীর আনুগত্য মানে স্বামীর আদেশ পালন করা। আসলে এখানে স্বামীর আনুগত্য কথাটির পরিধি আরো ব্যাপক।

স্ত্রী তার কথাবার্তা, কাজকর্ম, বেশভূষা আচার-ব্যবহার সবকিছু আপন স্বামীর চাহিদা মতো সাজিয়ে নিবে। এটি হচ্ছে স্বামীর আনুগত্যের প্রকৃত মর্ম।

একজন বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমতী স্ত্রী দাম্পত্য জীবনের শুরুর দিকেই স্বামীর স্বভাব-চরিত্র, প্রিয়-অপ্রিয়, পছন্দ-অপছন্দ সবকিছু জেনে নেয়। কিছু সরাসরি জিজ্ঞেস করে শিখে নেয় আর কিছু তার দৈনন্দিন জীবনকে পর্যবেক্ষণ করে জেনে নেয় ; তারপর সে নিজেকে সেই ভাবে সাজিয়ে তোলে।

এ প্রসঙ্গে প্রিয় বোনদের আমার একটি ঘটনা শোনাতে চাই যেখান থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

ইমাম শা'বী রাহিমাহুল্লাহ, একবার কাজী শুরাইম রাহিমাহুল্লাহ এর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। তিনি শুরাইম রাহিমাহুল্লাহ এর কাছে তাঁর পরিবারের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চান। শুরাইম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আজ ২০ বছর হয়ে গেল আমার পরিবারে কোনো অশান্তি; কোনো অসঙ্গতি আমি দেখি নি। এমনকি কোনদিন আমাকে রাগান্বিত হতে হয়নি।

শা'বি রাহিমাহুল্লাহ জানতে চাইলেন, এটি কিভাবে সম্ভব হলো! তিনি বলেন, বাসর রাতে যখন আমি আমার স্ত্রীর ঘরে প্রবেশ ঢুকলাম তাঁর অপূর্ব সুন্দর চেহারা দেখে আমি মুগ্ধ হলাম, মনে মনে ভাবলাম আমার উচিত পবিত্র হয়ে দুই রাকাত সালাতুশ শোকর আদায় করা। সালাত যখন শেষ হলো বুঝতে পারলাম আমার স্ত্রীও আমার সঙ্গে সালাত আদায় করেছেন। আমার সাথেই সালাম ফিরিয়েছেন।

ওই দিন বাসর রাতেই আমার বুদ্ধিমতী স্ত্রী আমাকে বলল, আমি আপনার কাছে একজন অপরিচিত নারী! আপনার রুচি ও স্বভাব এর ব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। আপনার পছন্দনীয় বিষয়গুলো বলুন যাতে সেগুলো আমি নিয়মিত করতে পারি। আর আপনার অপছন্দনীয় বিষয় গুলো আমাকে জানিয়ে দিন যাতে আমি সেগুলো ত্যাগ করতে পারি।

স্ত্রীর এমন সুন্দর কথার জবাবে আমি বললাম, তুমি এমন কিছু কথা বলেছো-যার উপর অটল থাকতে পারলে তুমি পরিপূর্ণ কল্যাণ লাভ করবে। আর এর বিপরীত কিছু করলে তোমার কথাই তোমার বিপক্ষে দলিল হবে। তারপর আমি তাকে আমার পছন্দ - অপছন্দ গুলো একে এক খুলে বললাম।

সে জানতে চাইলো, আপনার প্রতিবেশীদের মধ্য থেকে কারা ঘরে আসলে আপনি খুশি হন এবং কাদের আসা আপনি অপছন্দ করেন?

আমি বললাম, অমুক অমুক আমার বাড়িতে আসুক তা আমি চাইনা আর অমুক অমুক বাড়িতে এলে আমার কোন সমস্যা নেই।

আমি আরো বললাম অমুক অমুক পরিবারের লোকেরা ভালো সুতরাং তুমি চাইলে তাদেরকে ঘরে আনতে পারো। আর অমুক অমুক পরিবারের লোকগুলো খারাপ তাদের ঘরে আসার অনুমতি দেয়া ঠিক হবেনা।

আমার সব কথা আমার স্ত্রী মনে গেঁথে নিল।

আল্লাহর কসম! সে রাত ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে সুখময় রাত।

তারপর! একে একে পুরো বিশটি বছর যেনো খুশি ও আনন্দের হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো ; এই দীর্ঘ সময়ে তার মাঝে কেবল কল্যাণ ও সন্তুষ্টি খুঁজে পেয়েছি।

একটি বারের জন্যও এমন কিছু করেনি যা আমি অপছন্দ করি। হ্যাঁ, শুধু একবার তার একটি কাজ আমি অপছন্দ করেছিলাম তবে, পরে আমি বুঝতে পারি ভুলটি মূলত আমারই ছিল। এই অবস্থাতেই সে আমাকে ছেড়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দেয়। আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন।

প্রিয় বোন! এই ঘটনা থেকে নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পেরেছেন স্বামীর আনুগত্য কিভাবে একটি মধুর ও সুখময় দাম্পত্য জীবন গঠনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে! নেককার মুমিন নারীরা অনেক বুদ্ধিমতী ও বিচক্ষণ হয়ে থাকে। পরিবারের স্বামীর কর্তৃত্বের ব্যাপারটি তারা সহজেই বুঝতে পারে।

কেননা পবিত্র কুরআনে এসেছে:-
ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ
‘‘পুরুষরা নারীর ওপর কর্তৃত্বশীল’’
[আন নিসা ৪:৩৪]

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন পুরুষরা স্ত্রীদের অভিভাবক তারা স্বামীর আদেশ মান্য করবে, তার পরিবারের সাথে সদাচার করবে এবং তাঁর সম্পদের হেফাজত করবে।

প্রিয় বোন! পরিবার একটি জাহাজের মতো জীবনের স্রোত ঢেলে যেটি সামনের দিকে এগিয়ে যায়, জাহাজের জন্য যেমন একজন কাপ্তান চাই; তেমনি ভাবে পরিবারের জন্য চাই একজন অভিভাবক। অন্যথায় তার অগ্রগতি ব্যাহত হবে, এমনকি সমুদ্রের অবস্থা নাজুক হলে ডুবেও যেতে পারে। আর সে অভিভাবক হলেন আপনার স্বামী।

প্রিয় বোন! আপনি হয়তো ভাবছেন তাহলে সব সময় স্বামীর পছন্দের কথা ভাবতে হবে! তার সব কথা মানতে হবে! আমারও তো একটা মন আছে; আমারও তো কিছু পছন্দ-অপছন্দ আছে! আমার কি কোনো অধিকার নেই?

প্রিয় বোন! আপনি নিঃসন্দেহে ঠিক বলেছেন। নিঃসন্দেহে আপনারও নিজস্ব পছন্দ অপছন্দ আছে। আপনারও আছে স্বতন্ত্র অধিকার, কিন্তু উভয়ের অধিকার একই পদ্ধতিতে আদায় করা যাবে না।

এখানে স্বামীর আনুগত্য মানে নিজের সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া নয়। আনুগত্য মানে স্বামীর সঙ্গে মানিয়ে চলা। স্বামী তাঁর পুরুষসুলভ কর্তৃত্ব ব্যবহার করে পরিবার পরিচালনা করবে। আর আপনি আপনার নারীসুলভ আবেগ ও ভালোবাসা দিয়ে আপনার স্বামী কে পরিচালনা করবেন।

পুরুষ যত বাহাদুর, যত ক্ষমতাসীন কিংবা যত বদমেজাজিই হোক না কেন সে কখনও তার প্রেমময়ী স্ত্রীর পছন্দের বাইরে পা রাখতে পারে না।

আবেগ ও ভালবাসার শক্তির কাছে পৃথিবীর সব শক্তি হার মানে। সুতরাং উভয়ই আপন আপন পদ্ধতিতে তার ব্যক্তিগত সুখ, স্বাতন্ত্র্য ও অধিকার বজায় রাখবে।

কিন্তু বোন! আপনি যদি আবেগ ও ভালোবাসার পরিবর্তে, কর্তৃত্বের সূরে কথা বলতে শুরু করেন তাহলে মনে রাখবেন, আপনার দাম্পত্য জীবনে আপনিই আগুন লাগিয়ে দিয়েছেন। আপনি কখনো এই জীবনে সুখ শান্তির আশা করতে পারেন না।

চলুন এই ব্যাপারে প্রিয় নবী সাল্লিল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদিস শোনা যাক।

ইমাম তাবরানী রহিমাহুল্লাহ্ সংকলিত ‘আল মু'জামুল আওসাত’ গ্রন্থে বর্ণিত একটি সহীহ হাদিসে এসেছে, একবার রাসূলুল্লাহ্ সল্লিল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবাদের এক মজলিসে বলেন,
ألا أخبركم بنسائكم في الجنة﴾
"আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতি স্ত্রীদের সংবাদ দেবনা?"
সাহাবারা বললেন, "অবশ্যই দেবেন হে আল্লাহর রাসূল!
তিনি বললেন,
﴿ولؤد ودود، إذا غضبت، أو أسيء إليها أو غضب زوجها، قالت: هذه يدي في يدك لا أكتحل بغمض حتى ترضى﴾

"অধিক সন্তান জন্মদানকারী প্রেমময় স্ত্রী - যে রাগান্বিত হলে বা তার প্রতি কোন খারাপ আচরণ করা হলে কিংবা স্বামী তার সঙ্গে রাগ করলে সে বলে: এই যে আমার হাত আপনার হাতে রাখলাম—আপনি আমার উপর সন্তুষ্ট হওয়া পর্যন্ত আমি ঘুমাব না।”

প্রিয় বোন! আশা করি বুঝতে পেরেছেন হাদিসে
কি বলা হয়েছে! আবেগ ও ভালোবাসা এমন এক চাবি যা দিয়ে স্বামীর অন্তরের শেষ দরজাটি পর্যন্ত আপনি অনায়াসে খুলে ফেলতে পারবেন। প্রিয়তম স্বামীর কাছ থেকে আপনার সব দাবী মানিয়ে নিতে পারবেন।

আরো একটি হাদীস বলে আজকের এই আলোচনা শেষ করছি:
﴿أيما امرأة ماتت وزوجها عنها راض ، دخلت الجنة﴾

"যে স্ত্রী স্বামীকে সন্তুষ্ট রেখে মৃত্যুবরণ করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। "
[সুনানুত তিরমিজি : ১১৬১]

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সকল বোনকে আমল করার তৌফিক দিন, সবাইকে সুখি ও সমৃদ্ধ দাম্পত্যজীবন দান করুন। আমিন ইয়া রব্বাল আ'লামিন।

- শাইখ তামিম আল আদনানি হাফিজাহুল্লাহ্

 

.

সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য নাসীহাহ্

.

আমাদের দাম্পত্য জীবন কোনরূপ অসহনশীল পরিস্থিতির মোকাবেলা কিংবা তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই তেরোটি বছর পেরিয়ে গিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ্!

দাম্পত্য জীবনের সুখ নির্ভর করে মূলতঃ দু’জন মানুষের পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধাবোধ, ভালোবাসা, আন্তরিকতার ও সহনশীলতার উপর। এজন্য আমরা স্বামী-স্ত্রী উভয়েই দাম্পত্য জীবনের সুকুনের জন্য কিছু বাস্তবভিত্তিক নাসীহাহ্ মেনে চলি। সেগুলো শেয়ার করলে আশা করছি বিবাহিতদের দাম্পত্য জীবনে কল্যাণ ও শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে সহায়ক হতে পারে। আমাদের অনুসরণীয় নাসীহাহ গুলো:

-
যত বিরক্তই লাগুক একই সময়ে স্বামী-স্ত্রী দু'জন একসাথে রেগে যাবেন না।
-
দোষে গুণেই মানুষ। সুতরাং সমালোচনা যদি করতেই হয় মুহব্বত আর আন্তরিকতা দিয়ে বলতে চেষ্টা করুন।
-
চব্বিশ ঘন্টার যে কোন সময় অন্তত একবার একসাথে সালাত আদায় করার চেষ্টা করুন। এরপর রব্বে করীমের দরবারে একসাথে হাত তুলে অন্তরের আকুলতা ব্যকুলতা পেশ করুন।
-
সবসময় আপনার যে কোন সফলতার জন্য স্ত্রীর শ্রান্ত পরিশ্রান্ত ঘর্মাক্ত সময়গুলোর অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে প্রকাশ করুন।
-
নিজেদের মতানৈক্য নিজেরাই মিমাংসা করার চেষ্টা করি। প্রয়োজনে চূড়ান্ত ছাড় দিয়ে হলেও তৃতীয় পক্ষের আগমন ঠেকিয়ে দিবেন। কারণ তৃতীয় পক্ষের আগমন মানেই অন্যের সামনে নিজেদের কোন একজনকে ছোট হওয়া।
-
মনোমালিন্য নিয়ে কখনোই ঘুমোতে যাবেন না, যে কোন একজন ছাড় দিয়ে সমাধান করে তবেই ঘুমোতে যান।
-
তৃতীয় কোন পক্ষ একজনের সম্পর্কে আরেকজনকে কোন নেগেটিভ কথা বললে তা আমলে নিবেন না এবং এজন্য একে অপরকে চার্জ করবেন না।
-
কোনভাবেই দু’জনের বাইরে নিজেদের ব্যক্তিগত ত্রুটির কথা প্রকাশ না করবেন না।
-
নতুন কোন মানুষের সাথে পরিচয় হলে একে অন্যের কাছে তার সম্পর্কে অবহিত করা উচিত।
-
একজন আরেকজনকে সাধ্যমত গিফট বা সারপ্রাইজ দিতে চেস্টা করা। এবং সেটা ততটা পছন্দ না হলেও আন্তরিকতার সাথে তা গ্রহণ করা।
-
স্বামী বা স্ত্রী অসুস্থ্য হলে তার সুস্থ্যতার জন্য নফল সিয়াম পালন করা।
-
মাঝে মধ্যে রান্না করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে খাওয়া।
-
স্ত্রী যতোই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার দিক থেকে দুর্বল হোক, তাকে তার মতো করে বুঝিয়ে স্বামীর সাফল্যে আনন্দ পেতে সহায়তা করা।
-
কখনোই একে অপরকে এক চোঁখে দেখবেন না। এতে আপনি তার প্রতি ইনসাফ করতে পারবেন না। তাই যদি আপনার এক চোঁখে তার কোন দোষ ধরা পড়ে তবে আরেক চোঁখে তার কোন গুণের প্রতিচ্ছবি দেখে তাকে ক্ষমা করে দিয়ে সংশোধন হওয়ার সুযোগ দিন।
-
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে মান-অভিমান থাকবেই। এটাই দাম্পত্যের অন্যতম সৌন্দর্য। কাটা আছে বলে গোলাপের সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায়নি বরং কাটার আঘাত সয়ে গোলাপের সৌন্দর্য উপভোগ করাটাই এর সৌন্দর্য পিপাসুদের কাছে স্বাভাবিক।
-
কারো কোন অতীত থাকলে তা খুঁচিয়ে বর্তমানে আনার বোকামি ভুলেও করবেন না। এতে নিজেদের ভালোবাসার সম্পর্কটা আরও বিশ্বস্ততা ও নির্ভরতা পাবে, আর জীবন পাবে গতিময়তা।

পরিশেষে বলতে চাই, আল্লাহ্ পাক আমার বিয়ের মাধ্যমে আমার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করে দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ্! বাকী অর্ধেক তাক্বওয়া অর্জনের মাধ্যমে পূরণ করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা সাধনা করে যাচ্ছি। তাই যারাই পরিকল্পিত ও সংরক্ষিত জীবন যাপন করবেন তারাই বিয়ে পরবর্তী দাম্পত্য মূহূর্তগুলো চমকপ্রদভাবে কাটাতে পারবেন আর আমৃত্যু সুকুনের সাথে বসবাস করে যেতে পারবেন ইনশাআল্লাহ্! যার চূড়ান্ত গন্তব্য হবে জান্নাত।

আল্লাহ্ আমাদের ভাইদের বিবাহিত দাম্পত্য জীবনকে আরো সুন্দর বরকতময় করে দিন এবং আমাদের মাঝে যারা অবিবাহিত আছেন তাদের দ্রুত বিবাহ সম্পাদনের মাধ্যমে দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করার তাওফিক দিন।

#Akik_Russel

 

সূখী দাম্পত্যের জন্য ২০টি প্রয়োজনীয় #টিপস জেনে নিন-

.

১) একে অপরকে জানিয়ে দিন যে আপনারা পরস্পরকে ভালোবাসেন।

২) একই সময়ে দু'জন একসাথে রেগে যাবেন না।

৩) সমালোচনা যদি করতেই হয়, ভালোবাসা দিয়ে বলুন।
সূখী দাম্পত্যের জন্য ২০টি প্রয়োজনীয় #টিপস জেনে নিন-

১) একে অপরকে জানিয়ে দিন যে আপনারা পরস্পরকে ভালোবাসেন।

২) একই সময়ে দু'জন একসাথে রেগে যাবেন না।

৩) সমালোচনা যদি করতেই হয়, ভালোবাসা দিয়ে বলুন।

৪) পুরোনো ভুলগুলোকে তুলে আনবেন না।

৫) কোন তর্ক জিইয়ে রেখে ঘুমাতে যাবেন না, সমাধান করে নিন আগেই।

৬) একে অপরকে উপেক্ষা করার পরিবর্তে বরং গোটা দুনিয়াকে আগে উপেক্ষা করুন।

৭) দিনে কমপক্ষে একবার একসাথে সালাত আদায় করুন।

৮) মনে রাখবেন, সকল সফল স্বামী বা স্ত্রীর পেছনে একজন শ্রান্ত পরিশ্রমী জীবনসঙ্গী থাকে যে সবকিছু ভুলে একটানা কাজ করে যায় অপরজনকে সচল ও সতেজ রাখতে।

৯) মনে রাখবেন, ঝগড়া করতে দুই জনের প্রয়োজন হয়।

১০) আপনি যখন কোন ভুল করে ফেলবেন, তা স্বীকার করে নিন।

১১) দিনে অন্তত একবার আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীর প্রশংসা করুন কিংবা তাকে ভালোবেসে দয়ামাখা গলায় কথা বলুন।

১২) আপনার স্বামী/স্ত্রী বিছানায় যাওয়ার পর আপনি বিছানায় যেতে ১০ মিনিটের বেশি বিলম্ব করবেন না।

১৩) আপনার জীবনসঙ্গী যখন কিছু বলে, তা মন দিয়ে শুনুন।

১৪) মনে রাখবেন, আপনার স্বামী/স্ত্রী কিন্তু একটা ক্রিকেট বা ফুটবল ম্যাচ, মুভি, সিরিয়াল, ইউটিউব ভিডিওর চেয়ে বেশি মূল্যবান।

১৫) আপনার সঙ্গিনী/সঙ্গী যখন নতুন কোন পোশাক পরে তথবা তার চুল ভিন্নভাবে আঁচড়ায় তখন খেয়াল করুন।

১৬) আপনাদের বিবাহবার্ষিকী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোকে স্মরণ রাখতে চেষ্টা করুন। [ উদযাপনের জন্য নয়, শুধু স্মরণ রাখা। অবশ্যই বার্ষিকী উদযাপন বৈধ নয় তাই উদযাপনে রূপ দেবেন না। এটা সম্পূর্ণ আপনার সঙ্গীর আবেগের সাথে সম্পর্কিত রাখুন। ]

১৭) আপনাদের পক্ষ থেকে আপনার সঙ্গী কাউকে কোন উপহার দিলে বা কোন কাজ করে দিলে আপনার পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ দিন।

১৮) যিনি দেরিতে ঘুম থেকে উঠবেন, বিছানা গুছিয়ে রাখুন।

১৯) আপনার স্বামী/স্ত্রীকে যদি ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত দেখায় তবে তা লক্ষ্য করুন এবং তার জন্য কিছু করুন।

২০) আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীকে কখনো সমালোচনা করে আহত করবেন না এবং জনসমক্ষে কখনো তাকে অপমান করবেন না।
.
[রুকাইয়া ওয়ারিস মাকসুদের 'The Muslim Marriage Guide' বইটির ৬৫-৬৬ পৃষ্ঠার আলোচনার আলোকে রচিত]

courtesy: dampotto.blogspot

প্রচারে: AnNur Islamic Marriage Media
৪) পুরোনো ভুলগুলোকে তুলে আনবেন না।

৫) কোন তর্ক জিইয়ে রেখে ঘুমাতে যাবেন না, সমাধান করে নিন আগেই।

৬) একে অপরকে উপেক্ষা করার পরিবর্তে বরং গোটা দুনিয়াকে আগে উপেক্ষা করুন।

৭) দিনে কমপক্ষে একবার একসাথে সালাত আদায় করুন।

৮) মনে রাখবেন, সকল সফল স্বামী বা স্ত্রীর পেছনে একজন শ্রান্ত পরিশ্রমী জীবনসঙ্গী থাকে যে সবকিছু ভুলে একটানা কাজ করে যায় অপরজনকে সচল ও সতেজ রাখতে।

৯) মনে রাখবেন, ঝগড়া করতে দুই জনের প্রয়োজন হয়।

১০) আপনি যখন কোন ভুল করে ফেলবেন, তা স্বীকার করে নিন।

১১) দিনে অন্তত একবার আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীর প্রশংসা করুন কিংবা তাকে ভালোবেসে দয়ামাখা গলায় কথা বলুন।

১২) আপনার স্বামী/স্ত্রী বিছানায় যাওয়ার পর আপনি বিছানায় যেতে ১০ মিনিটের বেশি বিলম্ব করবেন না।

১৩) আপনার জীবনসঙ্গী যখন কিছু বলে, তা মন দিয়ে শুনুন।

১৪) মনে রাখবেন, আপনার স্বামী/স্ত্রী কিন্তু একটা ক্রিকেট বা ফুটবল ম্যাচ, মুভি, সিরিয়াল, ইউটিউব ভিডিওর চেয়ে বেশি মূল্যবান।

১৫) আপনার সঙ্গিনী/সঙ্গী যখন নতুন কোন পোশাক পরে তথবা তার চুল ভিন্নভাবে আঁচড়ায় তখন খেয়াল করুন।

১৬) আপনাদের বিবাহবার্ষিকী এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোকে স্মরণ রাখতে চেষ্টা করুন। [ উদযাপনের জন্য নয়, শুধু স্মরণ রাখা। অবশ্যই বার্ষিকী উদযাপন বৈধ নয় তাই উদযাপনে রূপ দেবেন না। এটা সম্পূর্ণ আপনার সঙ্গীর আবেগের সাথে সম্পর্কিত রাখুন। ]

১৭) আপনাদের পক্ষ থেকে আপনার সঙ্গী কাউকে কোন উপহার দিলে বা কোন কাজ করে দিলে আপনার পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ দিন।

১৮) যিনি দেরিতে ঘুম থেকে উঠবেন, বিছানা গুছিয়ে রাখুন।

১৯) আপনার স্বামী/স্ত্রীকে যদি ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত দেখায় তবে তা লক্ষ্য করুন এবং তার জন্য কিছু করুন।

২০) আপনার জীবনসঙ্গী/জীবনসঙ্গিনীকে কখনো সমালোচনা করে আহত করবেন না এবং জনসমক্ষে কখনো তাকে অপমান করবেন না।
.
[রুকাইয়া ওয়ারিস মাকসুদের 'The Muslim Marriage Guide' বইটির ৬৫-৬৬ পৃষ্ঠার আলোচনার আলোকে রচিত]

courtesy: dampotto.blogspot

প্রচারে: AnNur Islamic Marriage Media

 

একজন অনুগতা স্ত্রী যিনি তাঁর স্বামীর আনুগত্যকে ঈমানের অংশ মনে করেন

.

- এক ভাইয়ের টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত।

লিখেছেন একজন স্বামীর একজন অনুগতা স্ত্রী যিনি তাঁর স্বামীর আনুগত্যকে ঈমানের অংশ মনে করেন, আলহামদুলিল্লাহ।

"উম্মে সুলাইম ওরফে রুমাইছা বিনতে মিলহান নামের একজন সাহাবিয়াত ছিলেন যার বিয়ের মোহর ছিল ইসলাম। মদিনাবাসী উনার ব্যাপারে বলত আমরা কখনো কোন নারীর কথা শুনিনি যার মোহর উম্ম সুলাইমের চেয়ে অধিক মর্যাদাপূর্ণ। কেননা তার মোহর ছিল ইসলাম।
উম্ম সুলাইম এবং আবু তালহা (রাঃ) এর এই মর্যাদাপূর্ণ বিয়ের মাধ্যমে তাদের ঘরে এসেছিলেন এক চোখ জুড়ানো সন্তান।

একবার আবু তালহা (রাঃ) সফরে বের হলেন। সফরের সামান্য অনুপস্থিতিতেই শিশুটি মারা গেল।
উম্ম সুলাইম সবাইকে সাবধান করে দিয়ে বললেন তোমরা কেউ পুত্রের মৃত্যুর সংবাদ আবু তালহাকে শোনাবে না। যা বলার আমিই তাকে বলব।
আবু তালহা (রাঃ) যখন সফর শেষে ফিরে আসলেন মুখের মিষ্টি হাসি ও প্রসন্নতা দিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানালেন উম্ম সুলাইম (রাঃ)।

ছেলের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন আপনি যেমনটি দেখে গিয়েছেন তেমনটি নয়। এখন সে অনেক আরামে আছে...
এরপর আবু তালহা( রাঃ) কে রাতের খাবার খাওয়ালেন। উষ্ণ অন্তরঙ্গতা দিয়ে তাকে সুখ ও তৃপ্তি দান করলেন। যখন তিনি বুঝতে পারলেন স্বামী পরিতৃপ্ত এবং প্রশান্ত তখন বললেন
হে আবু তালহা একটু চিন্তা করে বলুন যদি কোন ঋণদাতা ঋণ ফেরত চায় তাহলে গ্রহীতার কি উচিত ফেরত দিতে অস্বীকার করা?
"মোটেও উচিত নয়" স্বামী নিশ্চিন্তে জবাব দিলেন।

আল্লাহ যে সন্তান আপনাকে দান করেছেন, তা তিনি ফেরত নিয়েছেন, আপত্তি না করে সবর করলে এই সন্তানের জন্য তিনি আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করবেন।

আবু তালহা(রাঃ) তখন সন্তোষ ও সমর্পণের সাথে আল্লাহর ফায়সালা মেনে নিয়েছিলেন।
সব শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দুইজনের জন্য দুয়া করেছেন যেন আল্লাহ তাদের হারানো সন্তানের চেয়ে উত্তম সন্তান দান করেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কবুল করেছিলেন এই দুয়া।
জন্মের পর নিজের মুখের খেজুর খাইয়ে দিয়ে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) সেই সন্তানের নাম রেখেছিলেন আব্দুল্লাহ।
পরবর্তীতে এই আব্দুল্লাহর ওয়ারীশে জন্ম হয় ইসলামের শ্রেষ্ঠ দশজন আলিম সন্তান।

এই সেই উম্মে সুলাইম যার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) বলছিলেন আমি জান্নাতে প্রবেশ করে পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম, আমি জিজ্ঞাসা করলাম কে? কার পায়ের আওয়াজ?
ফেরেশতারা বললেন আনাস ইবনে মালিকের মা রুমাইছা বিনতে মিলহান।

ইনি সেই উম্মে সুলাইম যিনি এত খারাপ পরিস্থিতিতেও স্বামীর সুখকে প্রাধান্য দিয়েছেন!! রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা...

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা পুরুষদের কর্তৃত্ব দিয়েছেন নারীদের উপর।

"পুরুষেরা নারীদের উপর কর্তৃত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং এ জন্য যে, তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।"(সূরা আন-নিসা:৩৪)

আব্দুর রহমান ইবন আউফ (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুল (সঃ) বলেছেন, “মুসলিম নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে, রামাদানের সাওম পালন করে, নিজের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে, এবং স্বামীর আনুগত্য করে তবে তাকে বলা হবে জান্নাতের যে কোন দরোজা দিয়ে ইচ্ছে তুমি ভিতরে প্রবেশ কর”। [মুসনাদে আহমদ, ইবন হিব্বান]

জ্বি জান্নাতে যেতে হলে স্বামীর আনুগত্য করতেই হবে যতক্ষণ না তিনি হারাম কাজের নির্দেশ দিচ্ছেন।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন আল্লাহ ছাড়া কাউকে সেজদা দেয়ার বিধান থাকতো তবে নারীদের আদেশ দেয়া হতো স্বামীকে সিজদা দেয়ার।

আসুন আরেকটি ঘটনা শোনাই-
উম্ম সালামা (রাঃ) এর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)।

তখন উম্মে সালামা (রাঃ) বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার তিনটি দোষ আছে।
আমার আত্মসম্মানবোধ খুব তীব্র। আমার আশঙ্কা হয় যে আমার এই দোষ আপনার সামনে প্রকাশ পাবে। এতে আপনি কষ্ট পাবেন আর আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিবেন।
আমি বয়স্কা নারী, বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে।
আমার সন্তান রয়েছে।

প্রথমবার যখন পড়েছিলাম চোখ বড়বড় করে দেখলাম শব্দটা 'আত্মসম্মানবোধ'ই তো!? তীব্র আত্মসম্মানবোধটা দোষ? দেখলাম, হ্যাঁ শব্দটা 'আত্মসম্মান'ই!
উম্মে সালামা(রাঃ) এর এই তীব্র আত্মসম্মানবোধের ব্যাপারে রাসূলূল্লাহ(সাঃ) কী বলেছিলেন?
বলেছিলেন- তুমি যে আত্মসম্মানবোধের কথা বলেছ, এই বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে দুয়া করব, তিনি এই দোষ মুক্ত করে দিবেন তোমাকে।

আজ এই উম্মুল মুমিনীন, সাহাবিয়াত রদিয়াল্লাহু আনহুমাদের ফেমিনিস্টরুপে উপস্থাপন করা হচ্ছে!!! লা হাওলা ওয়া কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!!
জান্নাতের শ্রেষ্ট চার নারীদের প্রত্যেকের পরিচয় হল তারা শ্রেষ্ঠ মা ছিলেন, ছিলেন শ্রেষ্ঠ স্ত্রী। এই পরিচয়ের জোরেই তারা জান্নাতের শ্রেষ্ঠ রমণী। রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা ...

পশ্চিমা ফিরিঙ্গীদের সামনে দ্বীন নিয়ে মাজা ভেঙ্গে পরা কথিত স্কলারদের ব্যাপারে আগে থেকেই বলে আসছি, এখন এদেশীয় মস্তিষ্ক বন্ধক দেয়া দ্বীন নিয়ে জুয়া খেলোয়ারদের কিছু নমুনা আজকাল ফেইসবুকে দেখতে পাই। এইসব অপ্রকৃতস্থ আদর্শিক জুয়ারিদের কিছু বলার নেই আমার, আমার বলার আছে সেই বোনদের প্রতি যারা এই দ্বীনকে আকঁড়ে ধরে রাখতে চান মৃত্যু পর্যন্ত। যারা একমাত্র আল্লাহকে রব্ব হিসেবে মেনে নিয়েছে। নিজের নফসের অনুসরণে যারা"আমিই ইসলাম" মানসিকতা নিয়ে দ্বীনকে বিকৃত করা দুঃসাহস দেখান না।

তাদের একটাই কথা বলব তাওহীদ নিয়ে পড়ুন, এটি চির সবুজ এক অধ্যায়। আপনার ঈমানের বাগানে তাওহীদের শিক্ষা হচ্ছে ঈমানের অন্ন। আপনার দ্বীনের জন্য ঘীরাহ, "শুনলাম আর মানলাম" এ কথার উপর টিকে থাকার জেদ আসে তাওহীদ থেকে, যাদের কাছে এর মূল্যবোধ হারিয়ে গেছে, এর শিক্ষাকে ছুঁড়ে ফেলেছে, তারা আজকে ইসলামে থেকেও নেই, যত বাতিল দল আসছে সব তাওহীদ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণে, ফিমিনিযমও একটা বিকৃত আক্বীদা। যখন আপনি জানতে পারবেন রাসূল (সাঃ) এর আনীত বিধানের চেয়ে মানবরচিত, নফসপ্রসূত কোন বিধানকে অধিক শ্রেয় মনে করলে তার ঈমান ভেঙ্গে যায় তখন কুরআনের আয়াত আর হাদীস ছুঁড়ে ফেলা ব্যক্তির কাছ থেকে দ্বীনের ব্যাপারে একটা শব্দ নেওয়ারও দুঃসাহস আপনি দেখাবেন না। যখন আপনি জানতে পারবেন আল্লাহর হারামকৃত জিনিসকে হালাল করাটা কুফরী তখন আপনি নিজের ইচ্ছানুযায়ী দ্বীনকে কাস্টমাইজ করতে উঠে পড়ে লাগবেন না। যখন আপনি জানতে পারবেন দ্বীনের মূলভিত্তি আল ওয়ালা ওয়ালা বার'আ তখন আপনি বুঝতে পারবেন আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আর উম্মুল মুমিনীন, আর আল্লাহর দ্বীনের সম্মান রক্ষার্থে কতটা কঠোর হতে হবে, এসব ক্ষেত্রে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকা যায় না...

এই দ্বীন আত্মসমর্পণের দ্বীন আর ত্যাগের দ্বীন। সাহাবী রদ্বিয়াল্লাহু আনহুম থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত অসংখ্য সালফে সালেহীনদের রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই দ্বীন পেয়েছি। যখন আপনার চোখের সামনে দ্বীনকে বিকৃত করা হবে কঠোর হোন। আল ওয়ালা ওয়াল বার'আকে জাগ্রত করুন, এটাই তাওহীদের দাবি। আজ যাদের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন কিয়ামতের দিন তাদের সাথে থাকতে প্রস্তুত কিনা জিজ্ঞেস করুন নিজেকে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এসব শেকড়কাটাদের চক্রান্ত থেকে মুসলিম উম্মাহকে হিফাযত করুক।

*একটি নাসীহাহ সেসব বোনদের প্রতি যারা ফেমিনিস্ট, মোডারেট ইসলামের ফিতনা সম্পর্কে সচেতন হয়েছেন ইতোমধ্যেই। যখন এইসব মোডারেট স্কলার আর এদের মিসকীন অনুসারীরা অতিরিক্ত লাফালাফি করে তখন দয়া করে তাদেরকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করবেন না। ভেবে দেখুন আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করা হচ্ছে আমার সামনে!! আমি কীভাবে সেটা নিয়ে হাসতে পারি! হুম প্রয়োজনে কঠোর হোন, হাসি-ঠাট্টা করে সিরিয়াস বিষয়ের ভার কমাবেন না।"

 

 

#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প

https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo

.

>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"

https://justpaste.it/5gol5

.

>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক

https://justpaste.it/facebook_page_grp_link

.

>> র‍্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট

https://justpaste.it/76iwz

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের pdf লিংক (৪০০+ বই)

https://justpaste.it/4ne9o

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.

https://justpaste.it/islamicappvideo

.

>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?

https://justpaste.it/6q4c3

.

>> কুরআন এবং আপনি

https://justpaste.it/5dds8

.

>> কখনও ঝরে যেও না …

https://justpaste.it/3bt22

.

>> ফজরে আমি উঠতে পারি না

https://justpaste.it/6kjl6

.

>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1

.

>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr

.

>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম

https://justpaste.it/7u5es

.

>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়

https://justpaste.it/8dccj

.

>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/6ttuf

.

>> স্বার্থক মুনাজাত

https://justpaste.it/1xf0t

.

>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ

https://justpaste.it/4hhtd

.

>> তাহাজ্জুদ সিরিজ

https://justpaste.it/4ja0n

.

>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/3dxi7

.

>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)

https://justpaste.it/7056k

.

>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ

https://justpaste.it/7fh32

.

>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ

https://justpaste.it/9icuq

.

>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল

https://justpaste.it/8gmtk

.

>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf

,

>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

https://justpaste.it/8vnly

.

>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir

.

>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh

.
>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5

.
>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1

.

>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j

.

>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে। সবগুলো বিষয়ের লিংক এক জায়গায় রাখা হয়েছে। এই লিংকটা শেয়ার করতে পারেন। 
https://justpaste.it/48f6m