JustPaste.it

>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে
https://justpaste.it/48f6m

 

.

র‍্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট

 

 

র‍্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট– ইত্যাদি নিয়ে বিভিন্ন সময় কথাবার্তা ওঠে। পক্ষেবিপক্ষে অনেক তর্ক হয়। তবে আফসোসের ব্যাপারে হল অনেকেই বিষয়গুলো সম্পর্কে ভাসাভাসা ধারণা নিয়ে কিংবা একেবারে না জেনে কথা বলেন। যার ফলে নিতান্ত আবেগপ্রসূত, ডিফেন্সিভ, কিংবা প্যাসিভ অ্যাগ্রেসিভ কথাবার্তা দেখা যায়। আমি ঠিক করেছি, ইন শা আল্লাহ্‌ এই বিষয়টা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কিছু ম্যাটেরিয়াল তুলে ধরবো। যাতে করে যারা এ ব্যাপারগুলো নিয়ে জানতে আগ্রহী তারা জানার সুযোগ পান। তারপর নিরেট তথ্য আর কুরআন-সুন্নাহর নির্দেশনার ভিত্তিতে যে যার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
.
লেখাগুলো কিছুটা এলেমেলো হবে। আমি খুঁতখুঁতে মানুষ, মনমতো গুছিয়ে লিখতে গেলে দেখা যাবে কাজটা হয়তো আর করাই হয়ে উঠবে না। আশা করি লেখার এলেমেলোভাবে পাঠক ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। এই টপিকের লেখাগুলো #র‍্যান্ড_ইসলাম, এবং #মডারেট_ইসলাম হ্যাশট্যাগের আন্ডারে পাওয়া যাবে ইন শা আল্লাহ্‌।
.
তাহলে শুরু করা যাক। আমরা শুরুটা একটু পেছন থেকে করি। ইসলাম এবং মুসলিমদের চিন্তা বদলানো পশ্চিমা প্রজেক্ট কতো আগে থেকে চলছে তা একটু দেখে নেয়া যাক।
.
.
ব্রিটিশরা মিশরে ঢুকেছিল তৎকালীন শাসক ইসমাইল পাশাকে তার আর্থিক দুরবস্থা নিয়ে সাহায্য করার অজুহাতে। কিন্তু খুব দ্রুত এই ‘সাহায্য’ পরিণত হয়েছিল ঔপনিবেশিক দখলদারিত্বে। মিশরের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার সাথেসাথে ব্রিটিশরা এক সুদূরপ্রসারী ‘সংস্কার’ প্রক্রিয়া হাতে নেয়, যার প্রভাব আমরা আজও অনুভব করছি। সহজ ভাষায়, মিশরীয় সমাজ, শিক্ষা, চিন্তা এবং প্রশাসনকে নিজেদের আদলে গড়ে তোলার এক বিস্তৃত প্রজেক্ট চালু করে ব্রিটিশরা - মিশরকে ‘আধুনিক’ বানানোর প্রজেক্ট। ১৮৭৭-১৯০৭ পর্যন্ত মিশরের ব্রিটিশ দখলদারিত্বের নেতৃত্বে ছিল এভারলিন বেরিং ওরফে ‘লর্ড ক্রোমার’। ১৯১৬ সালে প্রকাশিত ‘মডার্ন ইজিপ্ট’ বইতে মিশরের পশ্চিমাকরণের এ প্রক্রিয়া নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করে ক্রোমার।
.
‘লর্ড’ ক্রোমার তার বইতে কী বলেছিল দেখা যাক। র‍্যান্ড প্রজেক্টের আলোচনায় কথাগুলো কেন গুরুত্বপূর্ণ তা সম্ভবত পাঠক নিজেই ধরতে পারবেন।
.
১. পশ্চিমারা কখনো ইসলামী শাসন ও সরকার মেনে নেবে না।

ক্রোমারের ভাষায় – ‘কেবল মোহাম্মাদান নীতিমালা আর প্রাচ্যীয় ধ্যানধারণার ভিত্তিতে গড়া সরকারকে ইউরোপ মেনে এমন ধারণা করাই হাস্যকর। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ এর সাথে জড়িয়ে আছে, (তাই এমন কিছু মেনে নেয়া সম্ভব না)’
.
২. মুসলিমদের অবশ্যই পশ্চিমা ধ্যানধারণা ও মূল্যবোধ গ্রহণ করতে হবে।

ক্রোমারের ভাষায় – ‘...নতুন প্রজন্মের মিশরীয়দেরকে বুঝিয়েসুঝিয়ে কিংবা প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে পশ্চিমা সভ্যতার মূল স্পিরিট ধারণ করাতে হবে।’
.
৩. মুসলিম সমাজে পশ্চিমাকরণ করতে হবে। আর এই প্রক্রিয়া শুরু করার অন্যতম মূল হাতিয়ার হল ‘নারী অধিকার’।

ক্রোমারের মতে - মুসলিম দেশগুলোতে ‘নারীর সামাজিক অবস্থান’ হল ইউরোপীয় ধ্যনধারণা আমদানির ক্ষেত্রে ‘মারাত্মক প্রতিবন্ধক’ হিসেবে কাজ করে।
.
৪. এক দল তরুণ সেক্যুলার মুসলিম তৈরি করতে হবে, যাদের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে

ক্রোমারের ভাষায় – ‘বাস্তবতা হল ইউরোপীয় শিক্ষা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাবার পর একজন তরুণ মিশরীয় মুসলিমের ‘ইসলামিসম’ হারিয়ে যায়’।
.
৫. পশ্চিমকে অবশ্যই ইসলামের সংস্কার করতে হবে। এই সংস্কারের ফলে যে ‘ইসলাম’ পাওয়া যায় তা আর ইসলাম থাকে না। নামে ইসলাম, বাস্তবে অন্য কিছু।

ক্রোমারের ভাষায় – ‘...এটা কখনও ভোলা যাবে না যে, ইসলামের সংস্কার সম্ভব না। অর্থাৎ সংস্কাকৃত ইসলাম সত্যিকার অর্থে আর ইসলাম থাকে না। অন্য কিছুতে পরিণত হয়’।
.
৬. সংস্কার, আধুনিকায়ন কিংবা পশ্চিমাকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারা তৈরি হয় তারা ‘ডি-মুসলিমাইযড’। তারা না মুসলিম হতে পারে, আর না পুরোপুরি ইউরোপিয়ান হিসেবে গণ্য হয়।

ক্রোমারের ভাষায় – ‘বর্তমানে মিশরীয় সমাজ নিরন্তর পরিবর্তনের যে প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে তার ফলে এমন এক দল মানুষ তৈরি হয়েছে যারা একই সাথে ডি-মুসলিমাইড মুসলিম এবং মেরুদন্ডহীন ইউরোপিয়ান’।
.
৭. ইসলামের ব্যাপারে মুসলিমদের চিন্তাকে প্রভাবিত করার ঐসব ব্যক্তিদের প্রমোট করতে হবে যারা ‘সংস্কারপন্থী’, যারা ‘আধুনিকায়ন’ চায়। মুসলিম বিশ্বে মডার্নিস্ট আন্দোলনের জনক মুহাম্মাদ আবদুহ ছিল ক্রোমারের পছন্দের ব্যক্তি। মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি পদে আব্দুহকে বসানো এবং টিকিয়ে রাখার পেছনে ক্রোমার এবং ব্রিটিশদের অবদান ছিল।
.
ক্রোমারের ভাষায় – ‘ওরা (আব্দুহ-র মতো লোকেরা) ইউরোপীয় সংস্কারকদের সহজাত মিত্র...’

‘বহু বছর ধরে আমি (আব্দুহকে) আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সকলভাবে উৎসাহ দিয়েছি। তবে কাজটা সহজ ছিল না। একদিকে রক্ষণশীল মুসলিমদের দিক থেকে তার প্রতি ব্যাপক বিরোধিতা ছিল। অন্যদিকে, দুঃখজনকভাবে খেদিভের (শাসক) সাথে তার সম্পর্ক খুবই খারাপ ছিল। কেবল মাত্র শক্তিশালী ব্রিটিশ সমর্থনের কারণে আব্দুহ গ্র্যান্ড মুফতি হিসেবে তার অবস্থান টিকিয়ে রাখতে পেরেছিল’।
.
দেখতেই পাচ্ছেন আজ থেকে ১০০ বছর আগে ‘আধুনিকায়ন’ প্রজেক্টের ব্যাপারে বলা কথাগুলো আজকের ‘র‍্যান্ড ইসলাম’ প্রজেক্টের সাথে প্রায় হুবহু মিলে যায়। আজকের ‘সিভিল ডেমোক্রেটিক মডারেট ইসলাম’ তৈরি প্রজেক্টে যেন সেই ‘ঔপনিবেশিক সংস্কার’ প্রজেক্টের উত্তরসূরী।
.
যেকোন জনগোষ্ঠীকে সফলভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে তাদের মধ্য থেকে ঐ আদর্শ মুছে দিতে হয় যা তাদেরকে দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বিপ্লবে উদ্ভূত করবে। পশ্চিমারা তাদের দীর্ঘ ঔপনিবেশিক অভিজ্ঞতার আলোকে এটা জানতো। আর মুসলিমদের জন্য এই আদর্শ হল ইসলাম। ইসলামী শরীয়াহ এবং শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী সভ্যতা গড়ার আকাঙ্ক্ষা। ক্রোমারের ভাষায় ‘ইসলামিসম’। এই আদর্শকে নষ্ট করার উপায় হল ভেতর থেকে একে কলুষিত করা। কাজটা সহজ না। এর বিভিন্ন দিক আছে। পশ্চিমারা এমনভাবে শিক্ষাব্যবস্থা এবং প্রশাসনকে সাজাতে পারে যাতে করে এই ব্যবস্থাগুলোর মধ্য থেকে ‘ডি-মুসলিমাইযড’, মেরুদন্ডহীন, বাদামি চামড়ার সাহেব তৈরি হয়। এটা তারা করেছে। মধ্য প্রাচ্যে করেছে, উপমহাদেশেও করেছে।
.
কিন্তু এটুকু যথেষ্ট না। ইসলামের আদর্শকে নষ্ট করতে হলে যারা ইসলামী জ্ঞান এবং চিন্তাকে কলুষিত করতে হবে। পশ্চিমারা এটা সরাসরি করতে পারবে না। এটা এমন কিছু মানুষ করতে হবে যারা নামে মুসলিম, হয়তো বিশ্বাসেও মুসলিম, কিন্তু পশ্চিমা দর্শন ও সভ্যতা দ্বারা এতোটাই প্রভাবিত যে তারা পশ্চিমের আদলে ইসলামকে বদলে নিতে চায়। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় তারা ঐ ‘ইসলাম’টাই প্রচার করে যেটা পশ্চিমারা চায়। এরা হল সেই সংস্কারবাদী, মডার্নিস্ট কিংবা হাল আমলের ‘মডারেট’। আগ্রাসী পশ্চিমের ইসলাম সংস্কার প্রজেক্টের সহজাত মিত্র। পশ্চিমারা খুশিমনে এই সংস্কারবাদী কিংবা মডারেট ইসলাম প্রচারকদের সাহায্য করে। সমর্থন দিয়ে যায়। যেমন মুহাম্মাদ আব্দুহকে ক্রোমার সাহায্য করেছিল। গ্র্যান্ড মুফতির আসনে বসিয়েছিল।
.
এখানে আরো একটা প্রশ্ন এসে যায়, মুহাম্মাদ আব্দুহরা কি পশ্চিমের টাকা খায়?
.
উত্তর হল, টাকা খাওয়া না খাওয়ার বিষয়টা অপ্রাসঙ্গিক। কারণ তাদের বিরুদ্ধে আপত্তিটা টাকা খাওয়া নিয়ে না। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল তারা পশ্চিমের এজেন্ডা অনুযায়ী ইসলামকে পরিবর্তনের চেষ্টা করে। আর এই অভিযোগ যে সত্য, সেটা সাক্ষ্য খোদ পশ্চিমারাই দেয়। কখনো এই সাক্ষ্য ক্রোমারের বইয়ের মাধ্যমে আসে, কখনো র‍্যান্ডের রিপোর্টের মাধ্যমে আসে, কখনো হয়তো আসে উইকিলিক্সের মাধ্যমে। কাজেই তারা টাকা না খাওয়া না খাওয়াতে কিছু যায় আসে না। তারা যদি টাকা খাওয়ার পরও প্রকৃত ইসলাম প্রচার করে তাহলে আর অভিযোগের কিছু নেই। আর টাকা না খেয়েও যদি ‘পশ্চিমের ঠিক করে দেয়া ইসলাম’ প্রচার করে তাহলে টাকা না খেলেও তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন পরিবর্তন হয় না। কাজেই এই প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক, এবং যারা এই প্রশ্নে আটকে যান তারা হয়তো মূল আলোচনায় বিষয়বস্তুই এখনো ধরতে পারেননি।
.
ইসলামকে পরিবর্তন করার জন্য পশ্চিমারা যে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এটা ঐতিহাসিক সত্য। এটা কোন কন্সপিরেসি থিওরি না। বিদ্বেষপ্রসূত বানোয়াট অভিযোগ না। একথা পশ্চিমারা খোলাখুলি স্বীকার করেছে। আজও করছে। ‘লর্ড ক্রোমার’ পরিকল্পনার ফসল হিসেবে যুলমাই খালিলযাদের মতো লোকেরা জন্ম নিয়েছে, যারা ক্রোমারদের কাজ করে যাচ্ছে। ‘সংস্কার’, ‘আধুনিকায়ন’ আর ‘পশ্চিমাকরণ’ এর জায়গায় এসেছে ‘মডারেট ইসলাম’, ‘ইসলামী জ্ঞান নিয়ে পুনঃভাবনা’ কিংবা ‘ইসলামকে বোঝার জ্ঞানতাত্ত্বিক কাঠামো পরিবর্তন’ এর কথা। কিন্তু মৌলিকভাবে এজেন্ডা সেই একই। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা, মুসলিমরা – এই ব্যাপারে জানতে আগ্রহী না। আমরা নিজে থেকে এ ব্যাপারে জানার চেষ্টা তো করি না-ই, যখন কেউ এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে তখন আমরা ব্যক্তিমুগ্ধতা কিংবা দলবাজীর ওপরে উঠে কথাগুলো বিশ্লেষণও করি না।
.
ক্রোমারের বইয়ের লিংক - https://tinyurl.com/y7fgr3q2

 


২০০৩ সালে অ্যামেরিকান গ্লোবাল পলিসি থিংকট্যাঙ্ক RAND Corporation একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। এ রিপোর্টের বিষয় হল - কীভাবে এবং কাদের সহায়তায় অ্যামেরিকার বৈশ্বিক পলিসির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এক নতুন “ইসলাম” বানানো যায়। Civil Democratic Islam: Partners, Resources & Strategies নামের এই রিপোর্টে অ্যামেরিকাবান্ধব নতুন এই ‘ইসলামের’ নাম দেয়া হয় ‘মডারেট ইসলাম’ বা Civil Democratic Islam। ২০০৭ সালে “Building Moderate Muslim Networks নামে র‍্যান্ড একটি বিস্তারিত ফলোআপ রিপোর্ট প্রকাশ করে। ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয় Promoting Online Voices for Countering Violent Extremism শিরোনামে তৃতীয় একটি প্রতিবেদন। আজ আমরা ‘মডারেট ইসলাম’ নিয়ে র‍্যান্ডের প্রথম প্রতিবেদনের দিকে তাকাবো। এই প্রতিবেদনে মোটাদাগে নিচের বিষয়গুলো আলোচিত হয়েছে।

.

ক) কেন অ্যামেরিকাবান্ধব এই নতুন ‘ইসলাম’-এর প্রবর্তন ও প্রচার করা উচিৎ

খ) মুসলিমদের শ্রেণীবিভাগ

গ) অ্যামেরিকা কী ধরণের ইসলাম ও মুসলিম তৈরি করতে চায়। একজন মডারেট মুসলিমের বৈশিষ্ট্য কী কী হবে?

ঘ) কীভাবে মুসলিমদের মধ্যে এই ‘মডারেট ইসলাম’ –এর প্রচার ও প্রচলন করা হবে।

.

অ্যামেরিকা বান্ধব মডারেট ইসলাম তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে র‍্যান্ডের বক্তখুব স্পষ্ট। অ্যামেরিকা এবং পশ্চিমা বিশ্ব এমন এক ‘ইসলাম’ চায় যা ‘গণতন্ত্র এবং আধুনিকতাকে গ্রহণ করে নেবে’। তারা এমন এক মুসলিম বিশ্ব চায় যা ‘গণতান্ত্রিক, সামাজিকভাবে প্রগতিশীল, স্থিতিশীল, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিয়ম মেনে চলে’। সেই সাথে অ্যামেরিকা সরাসরি ইসলামের সাথে ‘সভ্যতার সংঘাতে’ জড়াতে চায় না।

.

এটা পশ্চিমা ডাবলস্পিক। এমন কথা যা শব্দের মারপ্যাঁচে মূল বাস্তবতা আড়াল করে। তাই র‍্যান্ডের মূল কথাটা সহজ বাংলায় বলি। ওরা এমন ‘ইসলাম’ চায় যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে ওঠা বিশ্বব্যবস্থাকে মেনে নেবে। যে ‘ইসলাম’ ইস্রাইল রাষ্ট্র, উপসাগরীয় যুদ্ধের গণহত্যা, মুসলিম বিশ্বের স্বৈরাচারী তাগুত শাসকের পেছনে পশ্চিমা সমর্থন, মুসলিম ভূখন্ডগুলোতে চালানো পশ্চিমা নব্য-ঔপনিবেশিক লুটপাট মেনে নেবে বিনা বাক্য ব্যয়ে। যা পশ্চিমা সাংস্কৃতিক ও চিন্তার আগ্রাসনের সামনে নতি স্বীকার করে লিবারেল-সেক্যুলারিসমের সাথে খাপ খাইয়ে ইসলামকে নতুন করে ব্যাখ্যা করবে। এমন এক ‘ইসলাম’ যা পশ্চিমা বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে কোন সংঘাত জরুরী মনে করে না। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট – এমন ‘ইসলাম’ যা ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী শাসনের কথা বলে না। সহজ ভাষায় এই হল ‘মডারেট ইসলাম’ তৈরির কারণ।

.

কিন্তু ‘মডারেট ইসলাম’ তৈরির কাজটা কীভাবে হবে? কে করবে? কাজটা সহজ না। র‍্যান্ড বেইসিকালি মৌলিকভাবে ইসলাম ধর্মকে বদলে দেয়ার কথা বলছে। প্রতিবেদনের লেখিকার ভাষায় – ‘রাষ্ট্রগঠন যদি দুরূহ হয়ে থাকে তাহলে ধর্ম-গঠন আরো অনেক বেশি বিপদজনক এবং জটিল’।

.

‘বিপদজনক এবং জটিল’, কিন্তু র‍্যান্ডের মতে অসম্ভব না। তবে কাজটা করতে হলে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন আদর্শিক ও ধর্মীয় ধারাগুলোর মধ্য থেকে কিছু কিছু ধারাকে বেছে নিয়ে তাদের সাথে কাজ করতে হবে। তাদেরকে সমর্থন দিতে হবে। এই সমর্থন আর্থিক হতে পারে, কূটনৈতিক হতে পারে, কিংবা হতে পারে মিডিয়ার দিক থেকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কিছু কিছু ধারার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হতে যাতে তারা পশ্চিমে দেখানো ছকের মধ্যে চলে আসে। পশ্চিমের ঠিক করে দেয়া বাক্সের বাইরে না যায়। কোন কোন ধারাকে বাছাই করা হবে, কাদের সাথে মিলে কাজ করা হবে, তা ঠিক করতে হবে খুব সতর্কতার সাথে। র‍্যান্ডের প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য এই জটিল কাজটার ব্যাপারে অ্যামেরিকান সরকারকে কিছু দিকনির্দেশনা দেয়া।

.

সহজ ভাষায় বললে – আদি ও অকৃত্রিম ইসলাম অ্যামেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের জন্য হুমকি স্বরূপ। অ্যামেরিকান সাম্রাজ্যবাদের জন্য সমস্যা মুসলিমদের মধ্যে না, সমস্যা ইসলামেই। এটা অ্যামেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়। তাই ইসলামকে বদলে দিতে হবে। এমন এক ‘ইসলাম’ তৈরি ও প্রচার করতে হবে যা নিরীহ। যা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদ, আগ্রাসন আর লুটপাটের জন্য হুমকি না। যা লিবারেল-সেক্যলারিসমের জঘন্য কুফরকে মেনে নিতে রাজি। তবে এই কাজটা অ্যামেরিকা বা ইউরোপ সরাসরি করতে পারবে না। এটা করাতে হবে মুসলিমদের সামনে রেখে। এমন কিছু ‘মুসলিম’-কে বাছাই করতে হবে যারা ইসলাম ও মুসলিমের বিরুদ্ধে পশ্চিমা এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করবে। কোলাবোরেটর – দালাল – পশ্চিমা ‘রাজাকার’। আর যারা দালালী করবে না, তাদেরকে নানানভাবে চাপ দিয়ে করে কিংবা সুবিধা দিয়ে তুলনামূলক ‘পশ্চিমবান্ধব’ একটা ইসলাম প্রচার করাতে হবে।

.

র‍্যান্ডের ভাষ্যমতে ‘মডারেট ইসলাম’ এর বিপরীত হল র‍্যাডিকাল ফান্ডামেন্টালিসম (উগ্র মৌলবাদী ইসলাম)। উগ্র মৌলবাদী ইসলাম বলতে র‍্যান্ড আসলে কী বোঝায়? এই প্রশ্নের উত্তর জানাটা জরুরী। কারণ র‍্যান্ডের পুরো আলোচনার কাঠামো গড়ে উঠেছে উগ্র মৌলবাদের এই সংজ্ঞার ওপর। এই সংজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে র‍্যান্ড ‘মডারেট’ বা ‘মধ্যপন্থীর’ সংজ্ঞা দাড় করিয়েছে। উগ্রবাদী হিসেবে প্রতিবেদনের বিভিন্ন জায়গায় যেসব মুভমেন্টের নাম এসেছে তাদের মধ্যে আছে – হিযবে ইসলামী (আফগানিস্তান/গুলাবুদ্দিন হেকমতিয়ার), তালিবান, আল-[কা]য়েদা, হামাস, ইসলামিক স্যালভেইশান ফ্রন্ট, হিয[বু]ত তা[হ]রীর, ইরানীয়ান রেভ্যুলুশানারী গার্ডস, ইত্যাদি। এ থেকে মনে হতে পারে যে উগ্র মৌলবাদ বলতে তারা হয়তো বিভিন্ন ইসলামী মুভমেন্টকে বোঝাচ্ছে। কিন্তু তারা আসলে কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতি (যেমন সশস্ত্র পদ্ধতি) বা কর্মকান্ডকে উগ্রবাদ বলছে না। তাদের দেয়া উগ্রবাদের সংজ্ঞা আর ব্যাপক। আরো বিস্তৃত।

.

র‍্যান্ডের এই পুরো প্রতিবেদন পড়লে পরিষ্কার হয়ে যায় যে তাদের সংজ্ঞা অনুযায়ী, উগ্রবাদ হল এমন সবকিছু যা আধুনিক গণতন্ত্র, লিবারেল সেক্যুলার মূল্যবোধ, এবং অ্যামেরিকার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। যারা উম্মাহর কথা বলে, এথনিসিটি (বর্ণ পরিচয়) কিংবা পশ্চিমের ঠিক করে দেয়া জাতিরাষ্ট্রের সীমানার ভিত্তিতে চিন্তা করে না। এই বৈশিষ্ট্যগুলো যার মধ্যে থাকবে সে উগ্র মৌলবাদী মুসলিম। সে সশস্ত্র নাকি নিরস্ত্র, তা গুরুত্বপূর্ণ না ( যেমন হি[য]বুত তা[হ]রীর সশস্ত্র দল না)। সে নির্বাচনে কখনো অংশগ্রহণ করেছে কি না সেটা গুরুত্বপূর্ণ না (যেমন আলজেরিয়ার FIS নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল)। সে যদি সশস্ত্র হয় তাহলে তার অস্ত্র হাতে নেয় জাস্টিফাইড কি না, আত্মরক্ষার জন্য নেয়া কি না, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য নেয়া কি না, আগ্রাসী শত্রুর মোকাবেলায় নেয়া কি না - তাও গুরুত্বপূর্ণ না। এই বৈশিষ্ট্যগুলো থাকাই যথেষ্টা। আর র‍্যান্ডের মতে, ইসলামী উগ্র মৌলবাদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামের অবস্থান থেকে চিন্তা করা। ইসলামী শাসন চাওয়া এবং এর জন্য কোন না কোন ভাবে কাজ করে। সেটা হাত দিয়ে হোক, মুখ দিয়ে হোক বা কলম দিয়ে হোক।

.

কিছু উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা সহজে বোঝা যাবে।

.

প্রতিবেদনে আলজেরিয়ার ইসলামিক স্যালভেইশান ফ্রন্ট (FIS) এর মুখপাত্রক আলি বেনহাজকে উগ্র ইসলামী মৌলবাদী আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, ‘ইসলামী মৌলবাদ গণতন্ত্র এবং আধুনিক (মানে পশ্চিমা) সমাজের কেন্দ্রীয় মূল্যবোধগুলোর প্রতি মৌলিক এবং পূর্ণাংগ প্রত্যাখ্যানের প্রতিনিধিত্ব করে’। তাই বেনহাজ একজন মৌলবাদী, কারণ তিনি বলেছিলেন ‘...গণতন্ত্রের ঘাড় ভেঙ্গে দিতে হবে’। যদিও বেনহাজ এবং তার দল, ইসলামিক স্যালভেইশান ফ্রন্ট ১৯৯০ এ আলজেরিয়ার গণতান্ত্রিক নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। শুধু তাই না ৯০ এর ৯১ এর নির্বাচনে স্যালভেইশান ফ্রন্ট জিতেছিল। কিন্তু আলজেরিয়ার সামরিক জান্তা - সেক্যুলার এবং অ্যামেরিকার মিত্র – সেই নির্বাচনের ফলাফল মানেনি। হত্যা দমন, পীড়ন, নির্যাতনের মাধ্যমে আলজেরিয়াকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। কিন্তু র‍্যান্ডের জন্য গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে বলা উগ্রবাদী হিসেবে গণ্য হবার জন্য যথেষ্ট।

.

একইভাবে উগ্র মৌলবাদের উদাহরণ হিসেবে শায়খ আব্দুর রাহিম গ্রীন এর নিচের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে -

‘ইসলাম প্রতিশোধ নেয়ার লক্ষে পশ্চিমা বিশ্ব কিংবা অন্য কারো বিরোধিতা করে না। আত্মাভিমানে আঘাত লাগার কারণে কিংবা সম্পদ বা জমি দখলের জন্য ইসলাম যুদ্ধ করে না। যুদ্ধের উদ্দেশ্য একটাই - দ্বীন ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করা। জি[হা]দের তিনটি বৈশিষ্ট্য আছে। প্রথম পর্যায় হল সঠিক বিশ্বাস ও আকিদাহ অর্জন করা, নিজের ভেতরের সব সন্দেহ ও সংশয় দূর করা...দ্বিতীয় পর্যায়, শত্রুর হাত থেকে মুসলিম ভূখণ্ডগুলোকে মুক্ত করা। আর সর্বশেষ পর্যায় হল, কাফিরদের ভূমিতে আল্লাহ্‌র বিধান প্রতিষ্টার পথ উন্মোচনের জন্য যুদ্ধ করা’।

.

বলাবাহুল্য এই বক্তব্য মোটাদাগে ইসলামের আদি ও অকৃত্রিম অবস্থান। ইসলামের শুরু থেকে প্রথম তেরশো বছর এটি ছিল ইসলামের প্রতিষ্ঠিত অবস্থান। কিন্তু র‍্যান্ডের অবস্থানটা এখানে খেয়াল করুন। যারা ইসলামের সুপ্রতিষ্ঠিত অবস্থানের কথা বলছে, র‍্যান্ডের মতে তারা উগ্র মৌলবাদী। এই অবস্থান ইসলামি শরীয়াহ, কুরআন-সুন্নাহ এবং সালাফুস সালিহিনের অবস্থানের আলোকে সঠিক কি না, সেটা এখান বিবেচ্য বিষয় না। উগ্রতা আর সহনশীলতার মাপকাঠি হল পশ্চিমা এজেন্ডার সাথে সামঞ্জস্যতা, আর কিচ্ছু না।

.

তৃতীয় উদাহরণ। ইসলাম অনলাইন সাইটে প্রকাশিত একটি লেখাকে উগ্রবাদী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ইসলামঅনলাইন এর এই লেখায় বলা হয়েছে –

‘কুরআন এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কথা প্রচার করা (অর্থাৎ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের দোহাই দিয়ে কুরআনের আয়াত ও বিধান পুনঃব্যাখ্যা করার কথা বলা) লোকেদের অধিকাংশই পুরোপুরিভাবে পশ্চিমের দার্শনিক ও জ্ঞানতাত্ত্বিক ধারণাগুলো আত্মস্থ করেছে। আজকের যুগে সরাসরি সংঘাত আর সামরিক অভিযান হল সংস্কৃতি ও বাজার নিয়ন্ত্রনের সেকেন্ডারি (গৌন) উপাদান। পরিবর্তনের মূল হাতিয়ার হল মানুষের অভ্যাস এবং লাইফস্টাইল। (এগুলো পরিবর্তনের) মাধ্যমে মুক্ত চিন্তার স্বাধীন ভোক্তাদের নিয়ে গড়ে ওঠা মুক্ত বাজার নিশ্চিত করা যায়।’ [লেখক, আহমেদ কামাল সুলতান]

.

পশ্চিমা চিন্তার আগ্রাসন, অর্থনৈতিক আগ্রাসন এবং নব্য সাম্রাজ্যবাদের এমন তাত্ত্বিক সমালোচনাও র‍্যান্ডের চোখে প্রবলেম্যাটিক এবং উগ্রবাদের দুর্গন্ধযুক্ত। লেখক এখানে আধুনিক সময়, আপেক্ষিকতা আর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের দোহাই দিয়ে ইসলামের পুনঃব্যাখ্যা করার প্রবণতার বিরুদ্ধে বলেছেন, তাই র‍্যান্ডের মতে তার এই অবস্থান উগ্র। উল্লেখ্য, ইসলামঅনলাইন ইউসুফ আল-ক্বারদ্বাউয়ির অধীনে পরিচালিত সাইট। এবং র‍্যান্ডের মতে ক্বারদ্বাউয়ি মৌলবাদী না, বরং রিফর্মিস্ট বা সংস্কারপন্থী ট্র্যাডিশানালিস্ট। কিন্তু তবু ওপরের এই কথাগুলো র‍্যান্ডের কাছে উগ্র মৌলবাদী বক্তব্য।

.

উগ্রবাদী চিন্তার আরেকটি উদাহরণ হিসেবে এই প্রতিবেদনে ইসলামিক সেন্টার অফ ওয়াশিংটনের সাবেক ইমাম মুহাম্মাদ আল-আসির লেখা একটি গবেষণাপত্রের কথা বলা হয়েছে। আল-আসি এখানে বলেছেন -

‘রাজনীতির পশ্চিমা সংজ্ঞা কলঙ্কিত এবং কলুষিত। আর রাজনীতির ইসলামী সংজ্ঞা পরিষ্কার এবং সুস্থ। (মুসলিমদের উচিৎ) কুফরি ব্যবস্থার পতন ঘটানো, এবং কথিত ‘আধুনিক ও উন্নত বিশ্ব’এর অংশ হওয়া থেকে বিরত থাকা। (কারণ ‘আধুনিক’ আর ‘উন্নত’ বিশ্বে) পুঁজিবাদ আর মুক্তবাজার অর্থনীতির মতো গালভরা নাম দিয়ে অর্থনৈতিক শোষনকে জায়েজ করা হয়।’

.

এর কাছাকাছি বক্তব্য অনেক কমিউনিস্টের আছে। এর চেয়ে আরো অনেক বেশি ‘গরম’ কথাবার্তা অনেক মার্ক্সিস্ট অ্যাকাডেমিক অনেক সময় বলেছে। আজো বলে। তাদের কথা উগ্রবাদ না। কিন্তু মুহাম্মাদ আল-আসির কথা উগ্রবাদী। এই বক্তব্য কেন উগ্রবাদী? কারণ এর মাধ্যমে পশ্চিমা রাজনীতি, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতিকে চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। আর র‍্যান্ডের মতে এগুলো উগ্র মৌলবাদী ইসলামের সুস্পষ্ট নিদর্শন।

.

.

এরকম আরো উদাহরণ দেয়া সম্ভব। কিন্তু আশা করি মূল পয়েন্টটা পাঠক বুঝতে পেরেছেন। উগ্র মৌলবাদ বলতে র‍্যান্ড আসলে আদি ও অকৃত্রিম ইসলামকে বোঝাচ্ছে। যারা মনে করে ইসলাম শুধু কিছু বিশ্বাস, ইবাদত আর আচার-অনুষ্ঠানের নাম না, বরং ইসলাম হল একটি পলিটিকো-সোশিও-একোনমিক সিস্টেম। একটি সম্পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা, একটি শাসন ব্যবস্থা’ – তারাই মৌলবাদী। যারা মনে করে যে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, আল্লাহ্‌র যমিনে আল্লাহ্‌র আইন বাস্তবায়ন করতে হবে, তারা মৌলবাদী। যারা এনলাইটেনমেন্টের মূল্যবোধগুলোকে সর্বজনীন মনে করে না, যারা লিবারেলিসম এবং সেক্যুলার হিউম্যানিসমকে ইসলামের সাংঘর্ষিক মনে করে এবং এই দর্শনগুলোকে প্রত্যাখ্যান করে তারা মৌলবাদী। যারা অ্যামেরিকা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করে ইসলামী ব্যবস্থা আনতে চায় তারা উগ্রবাদী। যারা লিবারেল ক্রুসেইডের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তাঁরা উগ্রবাদী। আর যারা এর উল্টোটা তারা হল মডারেট। অ্যামেরিকা আর পশ্চিমের গৃহপালিত ‘মুসলিম’। ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমা এজেন্ডা বাস্তবায়নের এজেন্ট, দালাল, পশ্চিমা রাজাকার কিংবা ভীত, স্বন্ত্রস্ত, কাপুরুষ সহযোগী। এই হল বিভিন্ন গালভরা কথাবার্তার আড়ালে র‍্যান্ডের মূল বক্তব্য।

.

গত পর্বে আমরা ‘লর্ড ক্রোমার’রের কথা বলেছিলাম। ক্রোমারের মতে ‘ইসলামিসম’ (ইসলামপন্থা) হল - ইসলামী শরীয়াহ এবং শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইসলামী সভ্যতা গড়ার আকাঙ্ক্ষা। ক্রোমারের ভাষায় - কেবল মোহাম্মাদান নীতিমালা আর প্রাচ্যীয় ধ্যানধারণার ভিত্তিতে গড়া সরকারকে ইউরোপ মেনে নেবে এমন ধারণা করাই হাস্যকর। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ এর সাথে জড়িয়ে আছে, (তাই এমন কিছু মেনে নেয়া সম্ভব না)’। ক্রোমার ‘ইসলামিসম’ এর যে সংজ্ঞা দিয়েছিল তার সাথে র‍্যান্ডের দেয়া উগ্র মৌলবাদী ইসলাম এর তেমন কোন মৌলিক পার্থক্য নেই। মূল এজেন্ডা সেই একই। শত বছরের পার্থক্যে খুঁটিনাটি কিছু বিষয় বদলেছে কেবল।

.

Civil Democratic Islam

লিংক- http://ow.ly/f88Q30foshL

.

প্রথম পর্বের লিংক - https://tinyurl.com/ycwm5j8u

.

‍‍‍#RAND

#মডারেট_ইসলাম

 

 


মডারেট মুসলিমের বৈশিষ্ট্য
.
আলোচনা করছিলাম, ‘মডারেট ইসলাম’ নিয়ে র‍্যান্ডের প্রথম প্রতিবেদন নিয়ে। গত পর্বে কথা বলেছিলাম, ‘মডারেট ইসলাম’ কিংবা ‘সিভিল ডেমোক্রেটিক ইসলাম’ তৈরির কারণ নিয়ে। সেই সাথে আমরা আলোচনা করেছিলাম র‍্যান্ড কর্পোরেইশানের দেয়া ‘উগ্র মৌলবাদ’-এর সংজ্ঞায়ন নিয়ে।
গত পর্বের লিংক – https://tinyurl.com/yc3v29x7
.
আজ আলোচনা করবো অ্যামেরিকা কোন ধরণের ইসলাম ও মুসলিম তৈরি করতে চায়, তা নিয়ে। একজন মডারেট মুসলিমের বৈশিষ্ট্য কী কী হবে, সেটা র‍্যান্ডের প্রতিবেদনে রীতিমতো ছক টেনে দেখানো হয়েছে। আজ আমরা সেই অংশের দিকে মনোযোগ দেবো। র‍্যান্ডের এই প্রতিবেদনে ১১ টি ইস্যু চিহ্নিত করা হয়েছে। র‍্যান্ডের ভাষ্যমতে এই ইস্যুগুলোতে কে কোন অবস্থান গ্রহণ করছে তা থেকে তার আদর্শিক কাঠামো এবং ঝোঁকটা বোঝা যায়। আর একবার এই দুটো ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে গেলে, তাদের কাজে লাগানো যাবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেয়া অ্যামেরিকার জন্য সহজ হয়ে যাবে। তাই এ ১১টা ইস্যু হল র‍্যান্ডের মতে মার্কার ইস্যু।
.
এমন ইস্যু ১১টার মধ্যে সীমাবদ্ধ না। সংখ্যাটা ১১ এর চেয়ে কমবেশি হতে পারতো। তবে র‍্যান্ড মনে করে, ইস্যুগুলোর দিকে তাকানো মুসলিমদের মূল্যায়নের জন্য পর্যাপ্ত হবে।
.
এই ১১টা মার্কার ইস্যু হল –
১) গণতন্ত্র,
***২) মানবাধিকার ও ব্যাক্তিস্বাধীনতা, ***
***৩) বহুবিবাহ, ***
***৪) হুদুদ, ***
***৫) হিজাব, ***
৬) প্রয়োজনে স্ত্রী-কে আঘাত করার বিধান,
***৭) কাফিরদের অবস্থান, ***
***৮) ইসলামী রাষ্ট্র, ***
***৯) পাবলিক অঙ্গনে নারীদের অংশগ্রহণ, ***
***১০) [জি]হাদ, ***
১১) চিন্তাধারার উৎস
.
পুরো মুসলিম বিশ্বকে র‍্যান্ডের এই রিপোর্টে মোটা দাগে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে – উগ্র মৌলবাদী, ট্র্যাডিশানালিস্টস বা রক্ষণশীল, মডার্নিস্ট, এবং সেক্যুলার। প্রত্যেক ইস্যুতে কোন মুসলিমদের কেমন অবস্থান সেটা র‍্যান্ডের প্রতিবেদনে টেবিল আকারে দেখানো হয়েছে। আগেই বলা হয়েছে, র‍্যান্ডের পুরো আলোচনার কাঠামো গড়ে উঠেছে ‘উগ্র মৌলবাদ’ দমন ও এর সংজ্ঞার ওপর। অ্যামেরিকার কাছে সবচেয়ে অগ্রহণযোগ্য মুসলিম হল ‘উগ্র মৌলবাদীরা’। অন্যদিকে অ্যামেরিকার কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য হল মডার্নিস্ট এবং সেক্যুলারিস্টরা। র‍্যান্ডের ভাষ্যমতে –
‘মডার্নিস্ট এবং সেক্যুলারিস্টরা মূল্যবোধ এবং পলিসির দিক থেকে পশ্চিমের সবচেয়ে কাছাকাছি।’
.
অর্থাৎ অ্যামেরিকার কাছে ‘খারাপ ইসলাম’ হল উগ্র মৌলবাদীদেরটা। আর ‘ভালো ইসলাম’ হল মডার্নিস্টদেরটা।
আমরা এখানে প্রতিটি ইস্যুর ক্ষেত্রে এই দুই অবস্থান তুলে ধরবো। আমরা দেখবো এই ১২টি ইস্যুর ক্ষেত্রে কোন অবস্থান অ্যামেরিকার কাছে ‘উগ্র মৌলবাদী’ অবস্থান হিসেবে বিবেচিত আর কোন অবস্থান ‘গ্রহণযোগ্য’।
.
১। গণতন্ত্র :
‘উগ্র মৌলবাদী’ অবস্থান - গণতন্ত্র ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক, আল্লাহ্‌র আইন দিয়ে শাসন করা আবশ্যিক, আল্লাহ্‌র আইনকে বাতিল করে তার বিপরীতে মানুষ আইন প্রণয়ন করতে পারবে না, বিধান প্রণয়নের অধিকার এক আল্লাহ্‌র।
.
অ্যামেরিকা কাছে গ্রহণযোগ্য অবস্থান - গণতন্ত্রকে মেনে নিতে হবে। বরং ইসলামের ভেতরেই গণতান্ত্রিক ধ্যানধারণা আছে। সেগুলোকে সামনে নিয়ে আসতে হবে।
.
তবে, ‘গণতন্ত্র মানে শূরা’, ‘ইসলামী গণতন্ত্র’, ইত্যাদি দুই কূল রাখা অবস্থান গ্রহণযোগ্য না। র‍্যান্ড পুরো প্রতিবেদনে পরিষ্কার করে দিয়েছে যে গণতন্ত্রকে হতে হবে পশ্চিমের দেয়া সংজ্ঞা অনুযায়ী আদি ও অকৃত্রিম গণতন্ত্র। অর্থাৎ ইখওয়ানুল মুসলিমীন কিংবা অর্থোডক্স জামাআতে ইসলামী-র মতো হলে হবে না। কমসেকম আন-নাহদা, জনআকাঙ্ক্ষা এবং/অথবা সংস্কারপন্থী জামাআত, কিংবা একেপার্টির মতো হতে হবে, এবং সেটাও হয়তো সবসময় যথেষ্ট হবে না।।
.
২। হুদুদ (ইসলামী দন্ডবিধি) :
‘উগ্র মৌলবাদী’ অবস্থান - শরীয়াহর অপরিবর্তনীয়, আবশ্যকীয় এবং অলঙ্ঘনীয় অংশ। ন্যায়বিচার, ইনসাফ এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য মহান আল্লাহ্ যে শরীয়াহ নাযিল করেছেন তার অবিচ্ছেদ্য অংশ।
.
অ্যামেরিকার কাছে গ্রহণযোগ্য অবস্থান –এই শাস্তিগুলো সেকেলে, অথবা ১৪০০ বছর আগের সমাজ আর প্রেক্ষাপটের জন্য উপযুক্ত, অথবা এগুলোকে শুরু থেকেই ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আজকের পৃথিবীতে হুদুদ বাস্তবায়ন করা উচিৎ না।
.
**৩। মানবাধিকার এবং ব্যাক্তিস্বাধীনতা: **
‘উগ্র মৌলবাদী’ অবস্থান - এই ধারণাগুলো ভুল এবং ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। বস্তুবাদী এবং অনেকে ক্ষেত্রে নাস্তিক্যবাদী কিংবা সংশয়বাদী দর্শনের জায়গা থেকে তৈরি করা, তাই পরিত্যাজ্য। ব্যক্তি এবং সমাজের কল্যাণের জন্য, সঠিক এবং পরিপূর্ণভাবে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠিত হওয়া যথেষ্ট।
.
অ্যামেরিকা কাছে গ্রহণযোগ্য অবস্থান - পশ্চিমা বিশ্ব যে মানবাধিকার এবং ব্যাক্তি স্বাধীনতার কথা বলে, সেগুলোর প্রাথমিক কনসেপ্ট ইসলামের আছে। তাই পশ্চিমা অর্থে মানবাধিকার এবং ব্যক্তি স্বাধীনতা মেনে নিতে কোন সমস্যা নেই। বরং এটাই ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইসলাম ব্যাক্তিকে গুনাহ করার স্বাধীনতাও দেয়।
.
৪। ইসলামী রাষ্ট্র:
‘উগ্র মৌলবাদী’ অবস্থান - আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্র হবে বৈশ্বিক এবং গত শতাব্দীতে তৈরি করা জাতীয়তাবাদী সীমান্তের সীমানা থেকে মুক্ত। ইসলামী রাষ্ট্র রাষ্ট্র ও সমাজে শরীয়াহর বিধান প্রতিষ্ঠা করবে। যেসব বিষয়ে ব্যাপারে শরীয়াহর স্পষ্ট বক্তব্য নেই, সেগুলোর ব্যাপারে আলিমগণের পরামর্শের সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
.
অ্যামেরিকার কাছে গ্রহণযোগ্য অবস্থান – ইসলাম রাষ্ট্র হিসেবে আসেনি। ইসলামী রাষ্ট্রের কোন কনসেপ্ট নেই। ইসলাম হল জীবনযাপনের কিছু মূলনীতি এবং দর্শন। ব্যক্তি তার ইচ্ছে মতো সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রাখে। আর এর তার সিদ্ধান্ত আর কাজের দায়ভারও তার।
.
**৫। বহুবিবাহ : **
‘উগ্র মৌলবাদী’ অবস্থান – জায়েজ। এই বিধানে কোন সমস্যা নেই, আল্লাহর নাযিলকৃত শরীয়াহর অন্য সব অংশের মতো এই বিধানও নিখুত। একই সাথে এই বিধান পশ্চিমা অনৈতিকতা, বহুগামীতা এবং সিরিয়াল ডিভোর্সের সমাধান।
.
অ্যামেরিকা কাছে গ্রহণযোগ্য অবস্থান – বহুবিবাহ জায়েজ না। সেকেলে, পশ্চাৎপদ প্রথা, যেমনটা অন্যান্য ধর্মে দেখা যায়। এমনকি নববী যুগেও বহুবিবাহকে আদর্শ অবস্থান মনে করা হতো না। প্রয়োজনের খাতিরে মেনে নেয়া হয়েছিল। এমনকি রাসূলুল্লাহ ﷺ এই প্রথা রহিত করার চেষ্টা করছিলেন, এমন প্রমাণও আছে।
.
**৬। পাবলিক অঙ্গনে নারীর অংশগ্রহণ: **
‘উগ্র মৌলবাদী’ অবস্থান – ঘরের বাইরে নারী ও পুরুষের মেলামেশার ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মাত্রায় পৃথকীকরণ বজায় রাখতে হবে। নারীর মূল অবস্থান ও ভূমিকা তার ঘরে। তাকে পাবলিক ডোমেইন থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে। নারী নেতৃত্ব জায়েজ না।
.
অ্যামেরিকার কাছে গ্রহণযোগ্য অবস্থান – সব পেশায়, সব ভূমি এবং সব ধরণের অবস্থানে নারী অংশগ্রহণ করতে পারবে। 'নববী যুগে এমনই হয়েছিল'।
.
**৭। হিজাব: **
‘উগ্র মৌলবাদী’ অবস্থান – মেয়েদের জন্য পর্দা করা ফরয। নারীরা যেন এই বিধান মেনে চলে সেই চেতনা তাদের মধ্যে তৈরি করা এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষা দেয়া সমাজের দায়িত্ব। এই বিধান পাবলিক প্লেইসে পালিত হচ্ছে কি না, সেটা নিশ্চিত করা ইসলামী রাষ্ট্রের দায়িত্ব।
.
অ্যামেরিকার কাছে গ্রহণযোগ্য অবস্থান – ইসলাম নারীদের জন্য কোন ধরণের পর্দা করার বা মাথা ঢেকে রাখার বিধান দেয় না। এই জাতীয় বিধানের পক্ষে কোন দালীলিক প্রমাণ নেই। কে কী পড়বে না পড়বে, সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। তার ব্যক্তি স্বাধীনতার ব্যাপার। পুরুষরা যদি নারীদের দিকে ঐভাবে তাকায় তাহলে সেটা নারীর দোষ না। বরং কুরআনে পুরুষকে ‘দৃষ্টি অবনত রাখতে’ বলা হয়েছে।
.
উল্লেখ্য এটা র‍্যান্ডের ২০০৩ সালে প্রকাশিত প্রথম প্রতিবেদনের অবস্থান। পরের ১৭ বছরে এই অবস্থানে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। এখন মনে করা হয়, যদি কোন নারী তার ‘মুসলিম পরিচয়’ বা আইন্ডেন্টিটিকে আকড়ে ধরার জন্য, কিংবা (শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদীদের বিরুদ্ধে) কোন রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণের জন্য, কিংবা নারীর ক্ষমতায়নের প্রতীক হিসেবে স্বেচ্ছায় মাথায় স্কার্ফ (‘হিজাব’) পড়ে, তাহলে সেটা ঠিক আছে। অর্থাৎ সে ব্যক্তি স্বাধীনতার অনুশীলন হিসেবে মাথায় স্কার্ফ পড়তে পারে। তবে তাকে জোর করার অধিকার কারো নেই (বাবা, ভাই, স্বামী, সমাজ, রাষ্ট্র)। হিজাব ‘চয়েস’ হিসেবে গ্রহণ করলে ঠিক আছে। আল্লাহ্‌র হুকুম হিসেবে পালন করা যাবে না।
.
**৮। [জি]হাদ : **
‘উগ্র মৌলবাদী’ অবস্থান – [জি]হাদের বিভিন্ন স্তর আছে। কিন্তু আগ্রাসী শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা এবং শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বব্যাপী চলা লড়াইয়ে সাধ্যমত অংশগ্রহণ করা আবশ্যক। এই লড়াইয়ের পদ্ধতি হতে পারে ক্লাসিকাল ওয়ারফেয়ার (প্রচলিত যুদ্ধ), ইনসার্জেন্সি (গেরিলা যুদ্ধ) কিংবা টেরোরিসম (ট্যাকটিকাল বা রণকৌশলগত অর্থে/অ্যাসিমেট্রিক ওয়ারফেয়ার)।
.
অ্যামেরিকার কাছে গ্রহণযোগ্য অবস্থান – [জি]হাদ একটি রূপক শব্দ। এর দ্বারা আধ্যাত্মিক সাধনা ও উন্নয়নের জন্য প্রচেষ্টাকে বোঝানো হয়।
.
৯। প্রয়োজনে স্ত্রীকে আঘাত করা :
‘উগ্র মৌলবাদী’ অবস্থান – জায়েজ। পরিবারের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ যে বিধানগুলো দিয়েছেন তার অন্তর্ভুক্ত।
.
অ্যামেরিকার কাছে গ্রহণযোগ্য অবস্থান – জায়েজ না। এটা স্পটতই ইসলামের স্পিরিটের সাথে সাংঘর্ষিক। এবং যারা এটাকে জায়েজ বলেছে তারা আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করেছে।
.
**১০। কাফিরদের অবস্থান : **
‘উগ্র মৌলবাদী’ অবস্থান – ইসলামী রাষ্ট্রে তাদের অবস্থান মেনে নেয়া হবে। তবে তারা প্রকাশ্যে তাদের ধর্ম প্রচার করতে পারবে না। ঈমান ও কুফর সমান না। তাই মুসলিম ও কাফিরদের ব্যাপারে আইন, শরীয়াহর বক্তব্য অনুযায়ী, বিভিন্ন ক্ষেত্রে আলাদা হবে।
.
অ্যামেরিকার কাছে গ্রহণযোগ্য অবস্থান – মুসলিমদের সমান হিসেবে গণ্য করতে হবে।
.
**১১। চিন্তাধারার উৎস : **
‘উগ্র মৌলবাদী’ অবস্থান - কুরআন, সুন্নাহ, 'উগ্রবাদী লেখক ও ক্যারিশম্যাটিক নেতাদের 'অবস্থান। খুঁটিনাটি সব বিষয় ইসলামী শরীয়াহর অধীনে পরিচালিত সমাজ গঠনের যে চিন্তা তার সাথে মিলিয়ে সমাধান করা।
.
অ্যামেরিকার কাছে গ্রহণযোগ্য অবস্থান – কুরআন, সুন্নাহ, ঐতিহাসিক এবং বর্তমান সময়ের দর্শন। আধুনিক আইন, নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ।
.
.
এই হল অ্যামেরিকার মতে ‘উগ্র মৌলবাদী' মুসলিম আর অ্যামেরিকার কাছে গ্রহণযোগ্য ‘মডারেট মুসলিম’ এর বৈশিষ্ট্য। প্রতিটি ইস্যুতে ঐ অবস্থানকে ‘উগ্র মৌলবাদী’ বলা হচ্ছে যার ভিত্তি হল কুরআন সুন্নাহ, প্রথম তিন প্রজন্মের দৃষ্টান্ত এবং প্রথম ১৩০০ বছরের উলামায়ে কেরাম এর অবস্থান। যাদেরকে ‘উগ্র মৌলবাদী’ বলা হচ্ছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করার জন্য র‍্যান্ড এও বলেছে যে তাদের চিন্তার ভিত্তি হল বিভিন্ন ‘উগ্রবাদী লেখক ও ক্যারিশম্যাটিক নেতাদের অবস্থান’। কিন্তু ওপরের অন্যান্য পয়েন্টগুলো থেকে যে কেউ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন যে বহুবিবাহ, হিজাব, হুদুদ, ইসলামী রাষ্ট্র, [জি]হাদ, আল্লাহর আইন ব্যাতীত অন্য আইন দ্বারা শাসন, কোন ক্ষেত্রেই ‘উগ্র মৌলবাদী’দের অবস্থানের সাথে ক্লাসিকাল অবস্থানের কোন পার্থক্য নেই।
.
উল্লেখ্য, র‍্যান্ডের দেয়া এই মাপকাঠিকে চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করা সঠিক হবে না। আলোচনাটা দুয়েক লাইনে নামিয়ে আনার চেষ্টা সবসময়ই কাউন্টার প্রোডাক্টিভ। কারো মধ্যে কোন একটি বিষয়ে এক বা দুটি মডার্নিস্ট অবস্থান পেলে তাকে মডারেট বলে দেয়া ভুল। একইভাবে এক দুটো পয়েন্ট কেউ র‍্যান্ডের ভাষ্য অনুযায়ী 'উগ্রবাদী' অবস্থান গ্রহণ করলে সে 'মডারেট ইসলাম' অনুসরণ বা প্রচার করে না, এমন উপসংহার টানাও ভুল। এর ভালো দুটো উদাহরণ হল বহুবিবাহ এবং হিজাব। বর্তমান পৃথিবীতে যারা মডারেট ইসলাম প্রচারের রথী-মহারথী তাদের বেশির ভাগ এই দুটো অবস্থানে 'উগ্র মৌলবাদী'। ‍আমরা এখানে আপাতত শুধু র‍্যান্ডের দেয়া শ্রেনীবিভাগ আর মাপকাঠি তুলে ধরলাম। মুসলিম হিসেবে আমরা কিভাবে যাচাইবাছাই করবো সেই আলোচনা ইন শা আল্লাহ্‌ পরের পর্বগুলোতে আসবে।
.
মজার ব্যাপারটা হল এই ১১টা ইসুর সবগুলো কিন্তু র‍্যান্ডের ভাষায় ‘রাজনৈতিক কিংবা আদর্শিক’ ইস্যু না। বরং এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক ইস্যু হল ব্যক্তিগত জীবনাচার, বিশ্বাস কিংবা বিধানের সাথে যুক্ত। [জি]হাদ, গণতন্ত্র, ইসলামী রাষ্ট্র – এগুলো নিয়ে অ্যামেরিকা এবং পশ্চিমা লিবারেল ক্রুসেইডারদের যে সমস্যা আছে তা তো জানা কথা। কিন্তু, বহুবিবাহ, হিজাব, ইসলামের উৎস, মানবাধিকার, ব্যাক্তিস্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে অ্যামেরিকার কী সমস্যা? এগুলোকে মার্কার ইস্যু হিসেবে আনার কারণ কী?
.
এই প্রশ্নের দুটো উত্তর আছে। একটা উত্তর র‍্যান্ডের প্রতিবেদনে সরাসরি বলে দেয়া আছে, অন্য উত্তরটা সরাসরি বলা হয়নি। আমরা আগে র‍্যান্ডের দেয়া উত্তরটা দেখি।
.
র‍্যান্ডের মতে, অনেক সময় বিশ্বরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কিংবা আঞ্চলিক চাপের কারণে অনেক মুসলিম শক্তির ব্যাবহার বা সশস্ত্র পন্থার ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান গোপন করে। অথবা এসব ব্যাপারে অস্পষ্ট, দ্ব্যর্থক কথাবার্তা বলে। কিন্তু এখানে যেসব ‘লাইফস্টাইল’ কিংবা ‘বিশ্বাসগত’ (ডকট্রিনাল) ইস্যু আনা হয়েছে (বহুবিবাহ, হিজাব, চিন্তাধারার উৎস, মানবাধিকার ইত্যাদি) সেগুলোর ক্ষেত্রে নিজেদের প্রকৃত অবস্থান গোপন করা তাদের পক্ষে সম্ভব না। কারণ এবিষয়গুলো তাদের পরিচয়, আদর্শের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তাই এই ধরণের বিষয়গুলোকে মার্কার হিসেবে নিয়ে আসা দরকার। এগুলো ফিল্টার হিসেবে কার্যকরী।
.
এবার অন্য কারণটা বলি, যেটা র‍্যান্ড সরাসরি বলেনি। ইসলামকে পশ্চিমা বিশ্ব শুধু একটা রাজনৈতিক হুমকি হিসেবে দেখে না। ইসলামকে তারা এক আদর্শিক এবং সভ্যতাগত শত্রু মনে করে। তারা মনে করে ইসলাম তাদের গড়া লিবারেল-সেক্যুলার বিশ্বব্যবস্থার জন্য হুমকি। ইসলাম শুধু তাদের রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক আগ্রাসনকে প্রত্যাখ্যান করে না, বরং ইসলাম তাদের সভ্যতার মৌলিক দর্শনকে অস্বীকার করে। ইসলাম তাদের এনলাইটেনমেন্ট এবং মডার্নিটির দর্শনের বিরুদ্ধে।
.
‘উগ্রবাদ’ হল এমন সবকিছু যা আধুনিক গণতন্ত্র, লিবারেল সেক্যুলার মূল্যবোধ, এবং অ্যামেরিকার প্রতি শত্রুভাবাপন্ন। তাই তারা ইসলামের এমন কিছু বিষয় এই লিস্টে নিয়ে এসেছে যেগুলো লিবারেল অবস্থানের সাংঘর্ষিক। যতোক্ষণ কোন মুসলিম এসব বিষয়ে ইসলামের অবস্থান আকড়ে থাকবে ততক্ষণ সে পাশমার্ক পাবে না। [জি]হাদ, ইসলামী রাষ্ট্র, গণতন্ত্রের মতো ইস্যুগুলোতে অ্যামেরিকার পছন্দের অবস্থান গ্রহণ করলে, কিংবা চুপ থাকলে হয়তো তাদেরকে সীমিত সময়ের জন্য সহ্য করা হবে। কিন্ত ইসলামের সাথে পশ্চিমা সভ্যতার যেখানে যেখানে সংঘর্ষ, সেখানে ইসলামের মূলনীতি ছেড়ে না দিলে হবে না। ইসলামকে লিবারেল-সেক্যুলার ফ্রেইমওয়ার্ক অনুযায়ী নতুন করে ব্যাখ্যা না করলে তারা অ্যামেরিকা এবং পশ্চিমের কাছে কখনো পুরোপুরিভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।
.
দিনশেষে আদি ও অকৃত্রিম ইসলামী হল অ্যামেরিকা ও পশ্চিমের কাছে ‘উগ্র মৌলবাদ’। আর যে চিন্তাধারা, যে সব ফতোয়া, যেসব পদ্ধতি লিবারেল-সেক্যুলার কাঠামোর সাথে খাপ খাইয়ে নেয়, এবং এই কাঠামোর অনেক প্রস্তাব ও অবস্থানকে মেনে নিয়ে সেগুলোর আলোকে ইসলামকে নতুন করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে, সেটাই অ্যামেরিকার কাছে গ্রহণযোগ্য।
.
**আগের দুটো পর্ব **(এবং আমার অন্য কিছু লেখা) পড়তে পারেন নিচের সাইট থেকে - https://bibijaan.com/author/asif-adnan/
.
ফেইসবুকে সবগুলো লেখা একসাথে পেতে ক্লিক করুন নিচের হ্যাশট্যাগে
#মডারেট_ইসলাম
#RAND

 

-Asif Adnan

 

মডারেট মুসলিম┇RAND CORPORATION কি┇Shaikh Tamim Al Adnani┇Ummah Network┇By Last Ummah┇Part-1

 (

Video thumb
)

মডারেট মুসলিম┇RAND CORPORATION কি┇Shaikh Tamim Al Adnani┇Ummah Network┇By Last Ummah┇Part-2

(

Video thumb
)

আমেরিকা কর্তৃক মুসলিমদের চার শ্রেণীকরণ। ড. ইসরার আহমেদ (রহঃ)। Dr. Israr Ahmed Bangla.

(

Video thumb
)

 

.

#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প

https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo

.

>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"

https://justpaste.it/5gol5

.

>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক

https://justpaste.it/facebook_page_grp_link

.

>> র‍্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট

https://justpaste.it/76iwz

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের pdf লিংক (৪০০+ বই)

https://justpaste.it/4ne9o

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.

https://justpaste.it/islamicappvideo

.

>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?

https://justpaste.it/6q4c3

.

>> কুরআন এবং আপনি

https://justpaste.it/5dds8

.

>> কখনও ঝরে যেও না …

https://justpaste.it/3bt22

.

>> ফজরে আমি উঠতে পারি না

https://justpaste.it/6kjl6

.

>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1

.

>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr

.

>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম

https://justpaste.it/7u5es

.

>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়

https://justpaste.it/8dccj

.

>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/6ttuf

.

>> স্বার্থক মুনাজাত

https://justpaste.it/1xf0t

.

>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ

https://justpaste.it/4hhtd

.

>> তাহাজ্জুদ সিরিজ

https://justpaste.it/4ja0n

.

>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/3dxi7

.

>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)

https://justpaste.it/7056k

.

>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ

https://justpaste.it/7fh32

.

>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ

https://justpaste.it/9icuq

.

>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল

https://justpaste.it/8gmtk

.

>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf

.

>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

https://justpaste.it/8vnly

.

>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir

.

>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh

.
>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5

.
>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1

.

>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j

.

>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে। সবগুলো বিষয়ের লিংক এক জায়গায় রাখা হয়েছে। এই লিংকটা শেয়ার করতে পারেন। 
https://justpaste.it/48f6m