JustPaste.it

সার্থক মুনাজাত (Nusus)

 

দু'আ করতে কখনোই ভুলবেন না। যদিও যা নিয়ে দু'আ করছেন বিষয়টি খুব সহজ হয় এবং আপনি কোন অসুবিধা ছাড়াই এটি করতে সক্ষম হন- তাও দু'আ করুন। এমনকি বিপদে না পড়লেও দু'আ করুন।
যে ব্যক্তি স্বাচ্ছন্দ্যের সময় এবং সাধারণ বিষয়ে প্রচুর দু'আ করে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাকে কঠিন সময়ে দু'আ করার তাওফিক দান করেন।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—
"সহজ সময়ে আল্লাহকে স্মরণ করো, তিনি তোমাকে কঠিন সময়ে স্মরণ করবেন।"
:
-Dawah

.
স্বার্থক মুনাজাত সিরিজের সকল পর্বের লিংক একত্রে দেওয়া হলো। সবাই কপি বা শেয়ার করে রাখতে পারেন। এখানে পাবেন দু‘আ করার নিয়ম, দু‘আ কবুলের উপায় ও সময়, কবুল না হওয়ার কারণ, ইসমে আযম, যাদের দু‘আ কবুল হয়, একটি হাদিসসম্মত দু‘আর নমুনা ইত্যাদি।
.

(লিংক কাজ না করলে সমস্যা নাই। এখানেই সব লেখা দেয়া আছে)

.

>> ‘‘সার্থক মুনাজাত’’ সিরিজের সব পর্ব

.

প্রথম পর্ব: দু‘আর পরিচিতি ও পদ্ধতি
.
দ্বিতীয় পর্ব: দু‘আর গুরুত্ব ও উপকার
.
তৃতীয় পর্ব: দু‘আ কবুল না হওয়ার কারণ এবং আবশ্যকীয় কিছু শর্ত
.
চতুর্থ পর্ব: দু‘আ কবুলে সহায়ক কাজ এবং দু‘আ করার নিয়ম ও আদব
.
পঞ্চম পর্ব: ইসমে আজম পরিচিতি, ইসমে আজম দিয়ে দু‘আ করার নিয়ম
.
ষষ্ঠ পর্ব: উসিলার পরিচয়, উসিলা দিয়ে দু‘আ করার পদ্ধতি ও বিধান
.
সপ্তম পর্ব: দু‘আ কবুলের সময়গুলো
.
অষ্টম পর্ব: যাদের দু‘আ কবুল হয়
.
নবম পর্ব: দু‘আয় কী চাওয়া উচিত?
.
দশম পর্ব: দু‘আর মধ্যে কান্নার উপায়

.

একাদশ (শেষ) পর্ব: একটি পূর্ণাঙ্গ দু‘আর নমুনা (শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত)

.

 

#সার্থক_মুনাজাত (প্রথম পর্ব) : দু‘আর পরিচিতি ও পদ্ধতি

৩ টি পদ্ধতিতে দু‘আ করা যায়। আজ আমরা সেগুলো দলিলসহ জানবো, ইনশাআল্লাহ। কোনো আল্লাহওয়ালা ব্যক্তির কাছে দু‘আ চাওয়া বৈধ কি না, সেটিও জানবো।
.
❖ দু‘আ বলতে আসলে কী বুঝায়?
আরবি দু‘আ শব্দটির অর্থ হলো ডাকা, আহ্বান করা, প্রার্থনা করা ইত্যাদি। পরিভাষায় কারও কাছে কোনো কিছু চাওয়া বা প্রার্থনা করাকে দু‘আ বলে।
.
❖ দু‘আ করার পদ্ধতি:
দু‘আ কয়েকভাবে করা যায়।
.
১) কেবল মনে মনে কোনোকিছু কামনা করা। যেমন: আমরা কুরআনে পাই, যখন বাইতুল মাকদিস মুসলিমদের কিবলা ছিলো, তখন নবিজি বারবার আকাশের দিকে তাকাতেন আর মনে মনে খুব চাইতেন, যেন কা’বাকে কিবলা নির্ধারণ করা হয়। আল্লাহ বলেন—
.
قَدۡ نَرٰی تَقَلُّبَ وَجۡهِکَ فِی السَّمَآءِ ۚ فَلَنُوَلِّیَنَّکَ قِبۡلَۃً تَرۡضٰهَا ۪ فَوَلِّ وَجۡهَکَ شَطۡرَ الۡمَسۡجِدِ الۡحَرَامِ ؕ وَ حَیۡثُ مَا کُنۡتُمۡ فَوَلُّوۡا وُجُوۡهَکُمۡ شَطۡرَهٗ ؕ
.
‘‘অবশ্যই আমরা আকাশের দিকে আপনার বারবার তাকানো লক্ষ্য করছি। সুতরাং অবশ্যই আমরা আপনাকে এমন কিবলার দিকে ফিরিয়ে দেবো, যা আপনি পছন্দ করেন। অতএব, আপনি মাসজিদুল হারামের দিকে চেহারা ফিরান। আর, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের চেহারাগুলোকে এর দিকে ফেরাও।’’ [সুরা বাকারাহ, আয়াত: ১৪৪]
(আল্লাহ নিজেই ‘‘আমরা’’ শব্দ ব্যবহার করেছেন, তাই কুরআনের অনুবাদকগণও ‘‘আমরা’’ শব্দেই অনুবাদ করেন। এখানে কোনো ভুল নেই। এই ‘‘আমরা’’ দিয়ে সম্মান প্রকাশ করা হয়। আল্লাহ তাই, নিজের ক্ষেত্রে কুরআনের অনেক স্থানে ‘‘আমরা’’ শব্দ ব্যবহার করেছেন)
.
২) সাধারণভাবে মুখ ফুটে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া। যেমন: কেউ আমাদের জন্য ভালো কিছু করলে আমরা বলি—জাযাকাল্লাহ খাইরান (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন)। [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ২০৩৫; হাদিসটি সহিহ]
.
এটাও কিন্তু দু‘আ, যা আমরা মুখ ফুটে বলি, কিন্তুু হাত উঠাই না। আমরা হাদিসে নবিজির মুখনিঃসৃত যেসব দু‘আ দেখি, এর অধিকাংশই এই ক্যাটাগরির দু‘আ। কারণ নবিজির প্রায় সকল কাজ ছিলো দু‘আ দিয়ে সুসজ্জিত।
.
৩) হাত উঠিয়ে বিশেষভাবে দু‘আ করা। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত উঠিয়েও দু‘আ করতেন। যেমন: বিশুদ্ধ হাদিসে আমরা দেখি, বদর যুদ্ধের দিন নবিজি হাত তুলে দু‘আ করেছেন। [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৪৪৮০]
.
সালমান ফারসি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের রব্ব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। বান্দা যখন তাঁর নিকট দুই হাত তুলে, তিনি তা শূন্য অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৮৮; হাদিসটি সহিহ]
.
সুতরাং, এই তিন পদ্ধতিতেই দু‘আ করা বৈধ। তবে, প্রথম পদ্ধতিটা সেই অর্থে দু‘আ নয়, বরং মনের বাসনা মাত্র। অবশ্য আল্লাহ তা‘আলা অনেক সময় মনের বাসনাকেই পূরণ করে দেন; মুখেও বলতে হয় না।
.
❖ আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে দু‘আ করা:
.
আল্লাহ ব্যতীত কোনো কিছুর নিকট দু‘আ করা হারাম। হোক সেটি কোনো মূ*র্তি কিংবা হোন তিনি কোনো পির-বুযুর্গ, নবি বা আউলিয়া।
.
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন—
.
وَلَا تَدْعُ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَنْفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَ فَإِنْ فَعَلْتَ فَإِنَّكَ إِذًا مِنَ الظَّالِمِينَ وَإِنْ يَمْسَسْكَ اللَّهُ بِضُرٍّ فَلَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا هُوَ وَإِنْ يُرِدْكَ بِخَيْرٍ فَلَا رَادَّ لِفَضْلِهِ يُصِيبُ بِهِ مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ وَهُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ
.
‘‘তুমি আল্লাহ ছাড়া এমন কাউকে ডেকো না, যে না তোমার উপকার করতে পারবে আর না তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে। তুমি যদি এমন করো, তাহলে নিশ্চয়ই তুমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর আল্লাহ যদি তোমাকে কোনো বিপদে ফেলেন, তাহলে তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা থেকে তোমাকে উদ্ধার করতে পারবে না। আর তিনি যদি তোমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চান, তাহলে কেউ তাঁর অনুগ্রহকে প্রতিহত করতে পারবে না। স্বীয় বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে চান, তাকেই তিনি স্বীয় অনুগ্রহ দান করেন; তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।’’ [সুরা ইউনুস, আয়াত: ১০৬-১০৭]
.
অন্যত্র এসেছে, আল্লাহ তা‘আলা বলেন—
.
فَادۡعُوا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ
.
‘‘অতএব, দ্বীনকে (ইসলামকে) আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ করে শুধু আল্লাহকেই ডাকো।’’ [সুরা গাফির/মুমিন, আয়াত: ১৪]
.
সুরা ফাতিরে আল্লাহ বলেন—
.
وَ الَّذِیۡنَ تَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِهٖ مَا یَمۡلِکُوۡنَ مِنۡ قِطۡمِیۡرٍ
.
‘‘তোমরা আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে ডাকো, তারা খেজুরের আঁটির আবরণের মালিকও নয়।’’ [সুরা ফাতির, আয়াত: ১৩]
.
❖ নেককার ব্যক্তির কাছে দু‘আ চাওয়া:
.
(১) যদি জীবিত কোনো নেককার ব্যক্তির কাছে এই নিয়তে দু‘আ চাওয়া হয় যে, ‘‘অমুক যেহেতু নেককার মানুষ, তাই উনার দু‘আ হয়তো আল্লাহ কবুল করবেন’’ তাহলে সমস্যা নেই। এভাবে দু‘আ চাওয়া বৈধ। কারণ মূলত আল্লাহর কাছেই দু‘আ করা হচ্ছে, ব্যক্তির কাছে দু‘আ করা হচ্ছে না, বরং দু‘আ চাওয়া হচ্ছে কেবল। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার মা বললেন, ‘‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আনাস আপনারই খাদেম। আপনি তার জন্য দু‘আ করুন।’’ তিনি দু‘আ করলেন, ‘‘ইয়া আল্লাহ! আপনি তার সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিন। আর তাকে আপনি যা কিছু দান করেছেন, তাতে বরকত দান করুন।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৫৯০৪]
এই দু‘আর বরকতে আনাস (রা.) বিপুল সন্তান-সন্ততি ও সম্পদের অধিকারী হন।
.
(২) আর যদি সেই নেককার ব্যক্তিটি মৃত হয়, তাহলে তার কাছে দু‘আ করা তো যাবেই না, এভাবে দু‘আ চাওয়াও যাবে না। কারণ মৃত ব্যক্তি জীবিত ব্যক্তির কথা শুনতে পারে না এবং তার ডাকে সাড়া দিতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন—
.
وَمَا أَنتَ بِمُسْمِعٍ مَّن فِي الْقُبُورِ
.
‘‘আপনি কবরে শায়িতদেরকে শুনাতে সক্ষম নন।’’ [সুরা ফাতির, আয়াত: ২২]
.

.
ফরজ নামাজ শেষে পড়ার দু‘আ ও যিকর (গুরুত্বপূর্ণ ১০ টি যিকর ও দু‘আ উপস্থাপন করা হলো, সহিহ হাদিস থেকে)
➖➖➖➖◄◖◉◗►➖➖➖➖
.
■ [১] তিনবার ইস্তিগফার এবং একটি বিশেষ যিকর একবার পাঠ করা। (সালাম ফেরানোর পর প্রথম আমল হবে এটি)
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফেরানোর পর তিনবার ইস্তিগফার করতেন।
.
(আস্তাগফিরুল্লাহ্, আস্তাগফিরুল্লাহ্, আস্তাগফিরুল্লাহ্)
.
অতপর বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারাকতা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম।’
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়, আপনার নিকট হতেই আসে শান্তি। হে মহত্ত্ব ও সম্মানের অধিকারী! আপনি বরকতময়। [সহিহ মুসলিম: ৫৯১]
.
■ [২] একবার নিচের দু‘আটি পড়া।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফেরানোর পর এই দু‘আটি পড়তেন—
.
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
.
اللّٰهُمَّ لاَ مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلاَ مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلاَ يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহদাহূ লা শারীকা লাহূ লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া 'আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আল্লাহুম্মা লা মা-নি‘আ লিমা আ‘অ্ত্বয়তা, ওয়া লা মু‘অ্ত্বিয়া লিমা মানা‘অ্তা, ওয়া লা ইয়ানফা‘উ যাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু]
.
অর্থ: আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। তিনি এক; তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও রাজত্ব; তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
.
হে আল্লাহ্! তুমি যা দাও, তা কেউ রুখতে পারে না আর তুমি যা রুখে দাও, তা কেউ দিতে পারে না। তোমার বিপরীতে কোনো সম্মানিত ব্যক্তির সম্মান কোনো উপকারে আসে না। [সহিহ বুখারি: ৮৪৪]
.
■ [৩] ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ্, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ও ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পাঠ করা।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ফরজ নামাজের পরপর পাঠ করার এমন কিছু বাক্য আছে, যেগুলোর পাঠকারী কখনো ব্যর্থ হবে না। সেগুলো হলো: সুবহানাল্লাহ্ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ্ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবার ৩৪ বার (পাঠ করা)। [সহিহ মুসলিম: ৫৯৬, তিরমিযি: ৩৪১২]
.
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ৩৩ বার করে সুবহানাল্লাহ্, আলহামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার। মোট ৯৯ বার। আর একবার পড়া—
.
لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
.
[উচ্চারণ ও অর্থ দেখুন উপরের হাদিসে]
.
অন্য বর্ণনায় এসেছে, প্রত্যেকটি ১০ বার করে পড়া। [সহিহুল কালিমিত ত্বইয়িব: ৯৩]
.
তবে, কষ্টকর না হলে ১০ বার করে না পড়ে পূর্বের হাদিস অনুসারে ৩৩, ৩৩, ৩৩ বা ৩৩, ৩৩, ৩৪ বার পড়া উচিত। একদম না পড়ার চেয়ে ১০ বার করে পড়া অবশ্যই অনেক অনেক উত্তম।
.
■ [৪] আয়াতুল কুরসি (১ বার) পাঠ করা। আয়াতুল কুরসি হলো, সূরা বাকারার ২৫৫ নং আয়াত।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক (ফরজ) নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করে, তার জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে একমাত্র প্রতিবন্ধকতা হলো তার মৃত্যু।’’ [নাসাঈ, সুনানুল কুবরা: ৬/৩০, মুনযিরি, আত তারগিব: ২/৪৪৮, হাদিসটি সহিহ]
.
■ [৫] সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস ১ বার করে পাঠ করা।
.
উকবাহ্ ইবনু আমির (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রত্যেক (ফরজ) নামাজের শেষে সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস পড়তে নির্দেশ দিয়েছেন। [আবু দাউদ: ১৫২৩, হাদিসটি হাসান]
.
অন্য বর্ণনায় সূরা ইখলাসের কথাও এসেছে। [সিলসিলা সহিহাহ]
.
■ [৬] একটি বিশেষ দু‘আ (১ বার)।
.
মু‘আয (রা.) বলেন, (একদিন) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার হাত ধরে বলেন, ‘‘মু'আয, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে ভালোবাসি।... মু'আয! আমি তোমাকে ওসিয়ত করছি—প্রত্যেক সালাতের পর এ দু'আটি বলা কখনো বাদ দিও না।’’ (দু'আটি হলো)—
.
اللّٰهُمَّ أَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ.
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ‘ইন্নি '
‘আলা যিকরিকা, ওয়া শুকরিকা, ওয়া ‘হুসনি ‘ইবাদাতিকা]
.
[অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে সাহায্য করুন—আপনার যিকর করতে, আপনার শুকরিয়া আদায় করতে এবং উত্তমরূপে আপনার ইবাদত করতে।’’
[আবু দাউদ: ১৫২২, হাকিম: ৬৭৭, সহিহ আত-তারগিব: ২/২১৯; হাদিসটি সহিহ]
.
■ [৭] এই দু‘আটি ১০০ বার পড়া।
.
একজন আনসার সাহাবি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নামাজের পর এই দু‘আটি ১০০ বার পড়তে শুনেছি।
.
اَللّٰهُمَّ ﺍﻏْﻔِﺮْ ﻟِﻲْ ﻭَﺗُﺐْ ﻋَﻠَﻲَّ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃﻧْﺖَ ﺍﻟﺘَّﻮَّﺍﺏُ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴْﻢُ
.
[আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়া তুব ‘আলাইয়া, ইন্নাকা আনতাত তাওয়াবুর রাহীম]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে মাফ করুন; আমার তাওবাহ্ কবুল করুন। নিশ্চয়ই আপনি তাওবাহ্ কবুলকারী পরম দয়াময়। [সিলসিলা সহিহাহ: ২৬০৩, হাদিসটি সহিহ]
.
■ [৮] এই দু‘আটি পাঠ করা।
.
বারা ইবনু ‘আযিব (রা.) বলেন, আমি শুনলাম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ শেষে আমাদের দিকে ফিরে এই দু‘আটি পড়েছেন।
.
رَبِّ قِنِيْ عَذَابَكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: রাব্বি ক্বিনী ‘আযা-বাকা, ইয়াউমা তাব‘আসু ‘ইবা-দাকা]
.
অর্থ: (হে আমার) রব! যেদিন তোমার বান্দাদের পুনরুত্থান ঘটাবে, সেদিন আমাকে আযাব থেকে রক্ষা করো। [সহিহ মুসলিম: ৭০৯]
.
■ [৯] নিচের দু‘আটি পড়া।
.
আবু বাকরা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের পর এই দু‘আটি পড়তেন।
.
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: ‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উ-যু বিকা মিনাল কুফরি, ওয়াল ফাকরি, ওয়া আ‘উ-যু বিকা মিন ‘আযা-বিল ক্বাবরি]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি কুফুরি, দারিদ্র্য ও কবরের আজাব থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [নাসাঈ: ২/৮৩, আহমাদ: ৫/৪৪, হাদিসটি সহিহ]
.
■ [১০] আরো একটি দু‘আ, যা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে সালাম ফেরানোর পূর্বে, অন্য বর্ণনা মতে, সালাম ফেরানোর পর পাঠ করতেন।
.
اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ وَمَا أَسْرَفْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّيْ أَنْتَ الْمُقَدِّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخِّرُ، لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ
.
[আল্লাহুম্মাগফিরলি মা ক্বাদ্দামতু ওয়া-মা আখখারতু, ওয়া-মা আসরারতু ওয়া-মা আ’লানতু, ওয়া-মা আসরাফতু, ওয়া-মা আনতা আ’লামু বিহি মিন্নী, আনতাল মুক্বাদ্দিমু ওয়া আনতাল মুআখখিরু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা]
.
অর্থ: হে আল্লাহ্, আমি আগে-পরে যত গুনাহ করেছি, তা মাফ করে দাও। যেসব গুনাহ গোপনে করেছি এবং যেগুলো প্রকাশ্যে করেছি (সব) মাফ করে দাও। যত বাড়াবাড়ি করেছি, সেগুলো ক্ষমা করে দাও এবং যেগুলো তুমি আমার চেয়ে ভালো জানো, সেগুলোও মাফ করে দাও। তুমি অগ্রবর্তী করো, তুমিই পিছিয়ে দাও। তুমি ব্যতীত কোনো সার্বভৌম সত্তা নেই। [সহিহ মুসলিম: ১/২৬৩, আবু দাউদ: ৭৬০]
.
এই দশটির মধ্যে যতগুলোর উপর আমল করা সম্ভব হয় করবেন। তবে, যেগুলো আমল করবেন, সেগুলোর উপর অটল-অবিচল থাকার চেষ্টা করবেন। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর কাছে সেই আমল বেশি প্রিয়, যা নিয়মিত করা হয়; যদিও তা পরিমাণে কম হয়।
.

#Nusus

-------------------------------------

#সার্থক_মুনাজাত (দ্বিতীয় পর্ব) : দু‘আর গুরুত্ব ও উপকার

দু‘আ জিনিসটা কত গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী, সেটা যদি আমরা জানতাম, তাহলে অবসর হলেই দু‘আয় মশগুল হয়ে যেতাম।
.
(১) নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যে (বিপদ-মুসিবত) এসেছে এবং যে (বিপদ-মুসিবত) এখনও আসেনি, উভয়টির জন্যই দু‘আ কল্যাণকর। সুতরাং, আল্লাহর বান্দারা! তোমরা দু‘আর ব্যাপারে গুরুত্ব দেবে।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৪৮; হাদিসটি হাসান]
.
(২) নু‘মান ইবনু বাশির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘দু‘আই হলো ইবাদত।’’ তারপর তিনি পাঠ করেন (কুরআনের এই আয়াত)—
.
وقالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكُمْ إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِي سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ
.
“এবং তোমাদের রব বলেছেন, আমাকে তোমরা ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদত করতে অহংকার করে (বিরত থাকে), শীঘ্রই তারা ল|ঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে (সুরা মুমিন, আয়াত: ৬০)।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৭২; ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৭৯; হাদিসটি সহিহ]
.
এই হাদিসে প্রথমে দু‘আকে ইবাদত বলা হয়েছে, এরপর কুরআনের আয়াত এসেছে, যেখানে দু‘আ করতে বলা হয়েছে। এরপরই হুঁশিয়ার করা হয়েছে, যারা ইবাদত অর্থাৎ দু‘আ থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে, তাদের অবস্থা হবে ভয়াবহ।
.
(৩) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় না, আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত হন।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৭৩; হাদিসটি হাসান]
.
কারণ দু‘আ না করা অহংকার এবং নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করার বহিঃপ্রকাশ, যেটি জায়েয নয়। [শায়খ মুবারকপুরি, তুহফাতুল আহওয়াযি: ৯/২২১]
.
(৪) সুনানে তিরমিযির একটি দুর্বল সনদের হাদিসে এসেছে, ‘‘তোমাদের মধ্যে যার জন্য দু‘আর দরজা খোলা, তার জন্য রহমতের দরজাও খোলা।’’
.
(৫) নবিজি আরও বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি কামনা করে যে, বিপদ-কাঠিন্যের সময়ে আল্লাহ তার (দু‘আয়) সাড়া দিন, সে যেন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়গুলোতে বেশি বেশি দু‘আ করে।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৮২; হাদিসটি হাসান]
.
(৬) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলার নিকট দু‘আর চেয়ে অধিক সম্মানিত আর কিছু নেই।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৭০; হাদিসটি হাসান]
.
(৭) সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘দু’আ ব্যতীত কোনো কিছু ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে না এবং সৎকাজ ব্যতীত কোনো কিছু হায়াত বাড়াতে পারে না।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ২১৩৯; হাদিসটি হাসান]
.
(৮) প্রখ্যাত সাহাবি ইবনু আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘‘দু‘আ হলো সর্বোত্তম ইবাদত।’’ [ইমাম হাকিম, আল-মুসতাদরাক: ১৮০৫; শায়খ আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ১৫৭৯; বর্ণনাটির সনদ হাসান]
.
(৯) সর্বশেষ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার এই আশাব্যঞ্জক কথাগুলো মাথায় রাখতে হবে—
.
وَ اِذَا سَاَلَکَ عِبَادِیۡ عَنِّیۡ فَاِنِّیۡ قَرِیۡبٌ ؕ اُجِیۡبُ دَعۡوَۃَ الدَّاعِ اِذَا دَعَانِ ۙ فَلۡیَسۡتَجِیۡبُوۡا لِیۡ وَ لۡیُؤۡمِنُوۡا بِیۡ لَعَلَّهُمۡ یَرۡشُدُوۡنَ
.
‘‘আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞাসা করে, (তখন তাদের বলে দিন) নিশ্চয়ই আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে ডাকে করে, আমি তার ডাকে সাড়া দিই। কাজেই তারাও যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।’’ [সুরা বাকারাহ, আয়াত: ১৮৬]
.

--------------------------------------

#সার্থক_মুনাজাত (তৃতীয় পর্ব) : দু‘আ কবুল না হওয়ার কারণ এবং আবশ্যকীয় কিছু শর্ত

৫ টি কারণে আমাদের দু‘আ কবুল হয় না। আসুন, জেনে নিই সেসব কারণ। দু‘আ কবুলের আবশ্যকীয় শর্তগুলোও জেনে রাখুন।
.
❑ যেসব কারণে দু‘আ কবুল হয় না:
.
[এক.] পানাহার ও পোশাক হালাল না হওয়া।
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ পবিত্র; তিনি কেবল পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন।’’... নবিজি আয়াত পাঠ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ, আমি তোমাদেরকে যে ‘‘পবিত্র’’ রিযিক দিয়েছি, তা থেকে খাও (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৭২)’ অতঃপর নবিজি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘দীর্ঘ সফরের ফলে তার চুল উশকোখুশকো, চেহারা ধুলোবালিমাখা। সে হাত দুটো আকাশের দিকে উঠিয়ে বলছে, ‘হে আমার রব! হে আমার রব!’, কিন্তু তার খাবার হারাম, পানীয় হারাম, পোশাক হারাম আর সে পরিপুষ্ট হয়েছে হারাম দিয়ে; (এমতাবস্থায়) কীভাবে তার দু‘আয় সাড়া দেওয়া হবে?’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২২৩৬]
.
সফরে দু‘আ কবুল হয়, হাত উঠিয়ে দু‘আ করলে কবুল হয় এবং নিজেকে হীনজ্ঞান করে আল্লাহকে কায়মনোবাক্যে ডাকলেও দু‘আ কবুল হয়। এতগুলো শর্ত লোকটি পূরণ করার পরও তার দু‘আ কবুল হচ্ছে না—কেবল হারাম খাবার, হারাম পানীয় ও হারাম পোশাকের জন্য। [ইমাম ইবনু রজব, জামি‘উল ‘উলুম ওয়াল হিকাম]
.
[দুই.] সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে নিষেধ করা বন্ধ করে দেওয়া।
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘শপথ সেই সত্তার, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা অবশ্যই ভালো কাজের আদেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে বাধা প্রদান করবে। নতুবা, অচিরেই এর ফলে আল্লাহ্ তোমাদের উপর শাস্তি পাঠাবেন। এরপর তোমরা তাঁর কাছে দু‘আ করবে, কিন্তু তোমাদের দু‘আয় সাড়া দেওয়া হবে না।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ২১৬৯, হাদিসটি সহিহ]
.
[তিন.] দ্রুত ফল না পেয়ে দু‘আ বন্ধ করে দেওয়া।
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ আল্লাহকে ডাকলে, তার ডাকে সাড়া দেওয়া হবে, যতক্ষণ না সে অধৈর্য হয়ে বলে ওঠে—‘আল্লাহকে তো ডাকলাম, কিন্তু কোনো সাড়া তো পাওয়া গেলো না।’ ’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৩৪০]
.
[চার.] গুনাহ বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দু‘আ করা।
[পাঁচ.] ভিন্নভাবে দু‘আ কবুল হওয়া: তিনি দু‘আ সাথে সাথে কবুল না করে প্রার্থিত বস্তুর চেয়েও অধিক দেওয়ার জন্য রেখে দেন।
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন কোনো মুসলিম পাপ ও আত্মীয়তা সম্পর্ক নষ্ট করা ছাড়া অন্য যে কোনো বিষয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তখন আল্লাহ তার প্রার্থনা পূরণ করে তাকে তিনটি বিষয়ের একটি দান করেন: হয় তার প্রার্থনা করা বিষয় তাকে দিয়ে দেন অথবা তার দু‘আকে (দু‘আর নেকি) তার আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন কিংবা দু‘আর পরিমাণ অনুসারে তার অন্য কোনো (অনাগত) বিপদ তিনি দূর করে দেন।’’ [ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১১১৩৩; ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৮১; হাদিসটি সহিহ]
.
❑ দু‘আ কবুলের আবশ্যকীয় কিছু শর্ত:
.
❖ শির্কমুক্ত দু‘আ: শর্তহীনভাবে শুধু আল্লাহর কাছেই বলা, মানুষকে দেখানো বা শোনানোর উদ্দেশ্য না থাকা। কোনো পীরের মাজারে গিয়ে কিছু না চাওয়া।
.
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন—
.
فَادۡعُوا اللّٰهَ مُخۡلِصِیۡنَ لَهُ الدِّیۡنَ
.
‘‘অতএব, দ্বীনকে (ইসলামকে) তাঁর (আল্লাহর) জন্য একনিষ্ঠ করে শুধু আল্লাহকেই ডাকো।’’ [সুরা গাফির/মুমিন, আয়াত: ১৪]
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন তুমি কোনো কিছু চাইবে, তখন আল্লাহর কাছেই চাইবে। আর যখন সাহায্য প্রার্থনা করবে, তখন আল্লাহর কাছেই করবে।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ২৫১৬; হাদিসটি সহিহ]
.
❖ দু‘আ কবুলের পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দু‘আ করা এবং অমনোযোগী না হওয়া।
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা দু‘আ কবুলের দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করো। কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দু‘আ করলে, আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করেন না।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৪৭৯; হাদিসটি হাসান]
.
❖ কাতর কণ্ঠে বিনীতভাবে দু‘আ করা।
.
আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেন—
.
اُدۡعُوۡا رَبَّکُمۡ تَضَرُّعًا وَّ خُفۡیَۃً ؕ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُعۡتَدِیۡنَ
.
‘‘তোমরা তোমাদের রবকে ডাকো বিনীতভাবে/কাতর কণ্ঠে এবং চুপিসারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন
না।’’ [সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৫৫]
.

--------------------------------

#সার্থক_মুনাজাত (চতুর্থ পর্ব) : দু‘আ কবুলে সহায়ক কাজ এবং দু‘আ করার নিয়ম ও আদব

দু‘আ কবুলের জন্য পাঁচটি বিশেষ করণীয় এবং দু‘আ করার ১৫ টি আদব ও নিয়ম-কানুন, যেগুলো সবারই জেনে রাখা দরকার:
.
❖ দু‘আ কবুলে সহায়ক ৫ টি কাজ:
.
(১) আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করার মাধ্যমে দু‘আ শুরু করা, এরপর রাসুলের উপর দরুদ পাঠ করা এবং একইভাবে দু‘আ শেষ করা।
.
একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে নামাজে দু‘আ করতে শুনলেন। সে আল্লাহর প্রশংসাও করলো না, নবিজির উপর দরুদও পড়লো না। তখন নবিজি তাকে বললেন, ‘‘হে মুসল্লি! তুমি খুব তাড়াহুড়া করে ফেললে!’’ তারপর নবিজি তাদের শিক্ষা দিলেন (কীভাবে দু‘আ করতে হয়)। তখন তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে নামাজ আদায় করলো এবং আল্লাহর গুণ (মাহাত্ম্য) বর্ণনা করলো, তাঁর প্রশংসা করলো এবং রাসুলের উপর দরুদ পাঠ করলো। তখন নবিজি (তাকে) বললেন, ‘‘তুমি দু‘আ কর, কবুল করা হবে; (আল্লাহর কাছে) চাও, তোমাকে দেওয়া হবে।’’ [ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ১২৮৪; হাদিসটি সহিহ]
.
বিশেষ করে, রাসুলের উপর দরুদ পাঠ করা দু‘আ কবুলে অন্যতম সহায়ক।
.
আলি (রা.) বলেন, ‘‘সকল দু‘আ পর্দার আড়ালে থাকবে, যতক্ষণ না নবির উপর সালাত পাঠ করবে।’’ [ইমাম তাবারানি, মু‘জামুল আওসাত্ব: ৭২১; শায়খ আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ২০৩৫; বর্ণনাটি হাসান]
.
এজন্য আলিমগণ দু‘আ করার আগে দরুদ পাঠ করার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। তবে, এটি ‘মুস্তাহাব’ আমল, বাধ্যতামূলক নয়।
.
(২) উসিলা দিয়ে দু‘আ করা। বিশেষত নেক আমল ও ইসমে আযমের উসিলা দেওয়া। (উসিলা ও ইসমে আযম নিয়ে বিস্তারিত পোস্ট দেওয়া হবে, ইনশাআল্লাহ)
.
একবার তিন ব্যক্তি একটি গুহায় আটকা পড়েছিলো। একটি বিশাল পাথর গুহার মুখে এসে আটকে যায়। এমন কঠিন অবস্থায় তিনজনই তাদের বিশেষ একটি করে নেক আমলের উসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলো, আল্লাহ তাদের দু‘আ কবুল করে পাথরটি একটু একটু করে পুরোটাই সরিয়ে দিয়েছিলেন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ২২১৫]
.
এক ব্যক্তি ইসমে আযম দিয়ে দু‘আ করেছিলেন। তখন নবিজি বলেছিলেন, এই নামে দু‘আ করলে কবুল হয়। [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৯৫; হাদিসটি সহিহ]
.
(৩) স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রাচুর্যের সময় বেশি দু‘আ করা।
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি কামনা করে যে, বিপদ-কাঠিন্যের সময়ে আল্লাহ তার (দু‘আয়) সাড়া দিন, সে যেন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়গুলোতে বেশি বেশি দু‘আ করে।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৮২; হাদিসটি হাসান]
.
(৪) দু‘আ কবুলের পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দু‘আ করা এবং অমনোযোগী না হওয়া।
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা দু‘আ কবুলের দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর কাছে দু'আ করো। কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দু‘আ করলে, আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করেন না।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৪৭৯; হাদিসটি হাসান]
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যখন দু‘আ করে তখন সে যেন না বলে, ‘হে আল্লাহ! আপনি চাইলে আমাকে মাফ করুন।’ বরং সে যেন দৃঢ়তার সাথে, পরম আগ্রহভরে দু‘আ করে। কেননা, তাকে কোনো কিছু দেওয়া আল্লাহর নিকট বড় কোনো বিষয় নয়।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৭০৫]
.
(৫) হাত ওঠিয়ে দু‘আ করা।
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘নিশ্চয়ই তোমাদের রব্ব চিরঞ্জীব ও মহান দাতা। বান্দা যখন তাঁর নিকট দুই হাত তুলে, তিনি তা শূন্য অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৮৮; হাদিসটি সহিহ]
.
বি:দ্র: দু‘আর সময় হাত দুটোর মাঝে ফাঁকা না রাখাই ভালো। [শায়খ ইবনু উসাইমিন, শারহুল মুমতি’: ৪/২৫]
.
❖ দু‘আ করার পাঁচটি বিশেষ আদব:
.
(১) কুরআন বা হাদিসে বর্ণিত দু‘আ দিয়ে দু‘আ করা উত্তম। এগুলোতে বরকত বেশি থাকে। কারণ নবিজি নিজে যে দু‘আ উম্মতের জন্য রেখে গেছেন, সেগুলোর চেয়ে উত্তম দু‘আ আমরা কখনই করতে পারবো না।
.
একজন সাহাবিকে নবিজি ঘুমানোর সময় পড়ার জন্য একটি বড় দু‘আ শিক্ষা দেন। সেই সাহাবি নবিজিকে পুরো দু‘আটা আবার মুখস্থ শুনান। কেবল একটি জায়গায় সামান্য নিজের মতো করে বলেছিলেন। নবিজির শেখানো দু‘আতে ছিলো এই বাক্যটি ‘‘যে নবিকে আপনি প্রেরণ করেছেন, তাঁর উপর ঈমান আনলাম’’, সেই সাহাবি এই বাক্যটি না বলে বললেন, ‘‘যে রাসুলকে আপনি প্রেরণ করেছেন, তাঁর উপর ঈমান আনলাম।’’ তখন নবিজি এটিকে নাকচ করে দেন এবং তাঁর শেখানো পদ্ধতিতে দু‘আটি হুবহু পড়তে বলেন। [পুরো হাদিসসহ দু‘আটি বিস্তারিত পাবেন সহিহ বুখারির ২৪৭ ও ৬৩১১ নং হাদিসে]
.
এ থেকে হাদিসে বর্ণিত দু‘আর গুরুত্ব বুঝা যায় আবার পরিপূর্ণ ফায়দা অর্জন করতে হাদিসের দু‘আ হুবহু পড়া উচিত। তবে, অবশ্যই নিজের মনের মতো করে নিজের ভাষায় দু‘আ করা যায়। সাহাবিগণও করেছেন।
.
(২) আল্লাহর প্রভুত্ব, মহত্ত্ব, বড়ত্ব, অমুখাপেক্ষিতা, তাঁর সার্বভৌমত্ব ইত্যাদি বিষয়গুলো দু‘আর মধ্যে বারবার স্মরণ করা এবং বলতে থাকা। এটি দু‘আ কবুলের গুরুত্বপূর্ণ উপায়। [ইমাম ইবনু রজব, জামি‘উল উলুম ওয়াল হিকাম]
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমরা ‘ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’ [অর্থ: হে মর্যাদা ও মহানুভবতার অধিকারী] বাক্যটিকে আঁকড়ে ধরে থাকবে।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫২৫; হাদিসটি সহিহ]
.
(৩) খুবই বিনীত ও কাতর কণ্ঠে দু‘আ করা এবং নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করা।
.
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘তোমার রবকে ডাকো বিনীতভাবে/কাতর কণ্ঠে এবং চুপিসারে।’’ [সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৫৫]
.
যাকারিয়্যা (আ.) বলেছিলেন, ‘‘রব আমার, আমাকে একা ছেড়ে দিয়েন না।’’ [সুরা আম্বিয়া, আয়াত: ৮৯]
.
(৪) দু‘আর মধ্যে আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামত ও নিজ অপরাধের স্বীকৃতি দেওয়া।
.
সাইয়িদুল ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দু‘আ)-র মধ্যে আমরা এমনটি দেখি, সেখানে বলা হচ্ছে, ‘‘আমার উপর আপনি যে অনুগ্রহ করেছেন, তা স্বীকার করছি এবং আমার কৃত পাপের কথাও স্বীকার করছি।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৩০৬]
.
(৫) দু‘আয় কাকুতিমিনতি করতে থাকা এবং সাধ্যানুসারে কান্নাকাটি করা।
.
নবিজি তাঁর উম্মতের জন্য কাকুতিমিনতি করে দু‘আ করেছিলেন এবং কেঁদেছিলেন। [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৩৮৭]
.
ইবনু আব্বাস (রা.)-এর মতে, দু‘আর মধ্যে কাকুতিমিনতি করার সময় হাত দুটো চেহারার কাছাকাছি থাকা ভালো। [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৯০; বর্ণনাটি সহিহ]
.
❖ আরও কয়েকটি সাধারণ আদব, তবে এগুলো খুব জরুরি নয়, উত্তম বটে।
.
(১) প্রথমে নিজের জন্য দু‘আ করা।
.
উবাই ইবনু কা’ব (রা.) বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কারও জন্য দু‘আ করতেন, তখন নিজেকে দিয়ে শুরু করতেন। [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৮৫; হাদিসটি সহিহ]
.
(২) সম্ভব হলে প্রথমে অজু করে নেওয়া।
.
একবার নবিজিকে আবু আমির (রা.)-এর জন্য দু‘আ করতে অনুরোধ করা হলে, তিনি প্রথমে অজু করে নেন, এরপর দু‘আ করেন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৪৩২৩]
.
(৩) তিনবার করে বলা (বিশেষত গুরুত্বপূর্ণ কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে)।
.
ইবনু মাস‘উদ (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ করলে (কখনো) তিনবার করে দু‘আ করতেন, কোনো কিছু (আল্লাহর কাছে) চাইলে তিনবার চাইতেন। [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৪৫৪১]
.
(৪) কিবলামুখী হওয়া।
.
বদর যুদ্ধের দিন নবিজি কিবলামুখী হয়ে খুবই কাতর কণ্ঠে দু‘আ করেছিলেন। [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৪৪৮০]
.
(৫) বেশি বেশি করে চাওয়া।
.
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন (আল্লাহর কাছে) চাইবে, তখন সে যেন বেশি করে চায়। কারণ সে তো তার রবের কাছেই চাচ্ছে!’’ [ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৮৮৯; হাদিসটি সহিহ]
.
(৬) এমন শব্দ ও বাক্য দিয়ে দু‘আ করা, যেটি দিয়ে অনেক ধরনের কল্যাণ কামনা করা যায় (অর্থাৎ ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ ও বাক্য)।
.
নবিজি এমনটি করতেন। আয়িশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন বাক্যে দু‘আ করা পছন্দ করতেন, যা দ্বারা অনেক বিষয় অন্তর্ভূক্ত থাকতো। [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৮২; হাদিসটি সহিহ]
.
(৭) দু‘আর মধ্যে ছন্দময় কথা না বলা।
.
ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবিগণ দু‘আর মধ্যে ছন্দময় কথা এড়িয়ে চলতেন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৩৩৭]
.
(৮) দু‘আর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় শব্দ না বলা, চাইতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন না করা। [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৮০; হাদিসটি সহিহ]
যেমন: ‘‘হে আল্লাহ! আমাকে জান্নাতের অমুক ফলটা দিয়ো, তমুক জিনিসটা দিয়ো’’ এভাবে না বলে শুধু জান্নাত চাওয়া। কারণ জান্নাতে গেলে তো সবই পাওয়া যাবে।
.
(৯) দু‘আর মধ্যে নিজ পিতা-মাতা এবং সকল মুসলিমদের জন্য দু‘আ করা। [সুরা ইসরা, আয়াত: ২৪, সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ৪১, সুরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ১৯]
.
(১০) দু‘আর শেষদিকে আবারও প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করা, অতঃপর নবিজির উপর দরুদ পড়ার মাধ্যমে দু‘আ শেষ করা। [ইমাম ইবনুল কায়্যিম, জালাউল আফহাম, পৃষ্ঠা: ৩৭৫]
.
এটি দিয়েই শেষ করতে হবে, এমন নয়। মাঝেমধ্যে সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াত, কখনো ‘‘ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম’’ কিংবা কখনও ‘‘আমিন’’ বলেও দু‘আ সমাপ্ত করা যায়। তবে, সবসময় নির্দিষ্ট একটি বাক্য দিয়েই দু‘আ শেষ না করে, বৈচিত্র আনা ভালো।
.

------------------------------

#সার্থক_মুনাজাত (পঞ্চম পর্ব) : ইসমে আজম পরিচিতি, ইসমে আজম দিয়ে দু‘আ করার নিয়ম

‘ইসমে আজম’ দিয়ে দু‘আ করলে নিশ্চিত কবুল হয়। আলোচনা করবো, ‘ইসমে আজম’ কী? এটি দিয়ে কীভাবে দু‘আ করতে হয়?
▬▬▬▬▬▬▬❖▬▬▬▬▬▬▬
❑ ইসমে আজমের পরিচয়:
.
ইসমে আজম দুটো আরবি শব্দ; এদের সম্মিলিত অর্থ: মহান নাম, শ্রেষ্ঠ নাম। অর্থাৎ, ইসমে আজম হলো, আল্লাহর মহান ও বিশিষ্ট নাম, যে নামের উসিলায় দু‘আ করা আল্লাহ্ ভীষণ পছন্দ করেন এবং সেই দু‘আ তিনি কবুল করেন।
.
❑ ইসমে আজম কোনগুলো?
.
এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য এসেছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো:
.
◉ আল্লাহ্ (الله) আল্লাহ
অসংখ্য আলিম এই মত দিয়েছেন। এর পক্ষে পরোক্ষ দলিলের পরিমাণ অসংখ্য।
.
◉ আর রব্ব (اَلرَّبُّ) [প্রতিপালক]
নবিগণ তাঁদের দু‘আর মধ্যে ‘‘রব্ব’’ শব্দটি খুব গুরুত্বের সাথে বলতেন।
.
◉ আল-হাইয়ু (اَلْحَيُّ) [চিরঞ্জীব], আল-ক্বাইয়ুম (اَلْقَيُّوْمُ) [চিরস্থায়ী], আল-মান্নান (اَلْمَنَّانُ) [সীমাহীন দাতা], যুল-জালালি ওয়াল-ইকরাম (ذُوْ الْجَلَالِ والْإِكْرَام) [মহত্ত্ব ও মহানুভবতার অধিকারী]
(এই নামগুলো ইসমে আজম হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট দলিল বিদ্যমান রয়েছে। নিচের হাদিসটিতে সবগুলো আছে)
.
একবার একজন ব্যক্তি এভাবে দু‘আ করছিলেন— (নিচের বাক্যগুলো দিয়ে)
.
اَللّٰهُمَّ إنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدُ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ الْمَنَّانُ بَدِيْعُ السَّمٰوَاتِ وَالْأَرْضِ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ يَا حَيُّ يَا قَيُّوْمُ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিআন্না লাকাল ‘হামদ, লা ইলা-হা ইল্লা আনতাল মান্না-ন, বাদী-‘উস সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্ব, ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম, ইয়া ‘হাইয়ু, ইয়া ক্বাইয়ূম]
.
অর্থ: হে আল্লাহ্! আমি আপনার কাছে চাই। নিশ্চয়ই আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আপনি ব্যতীত উপাসনার যোগ্য কেউ নেই। (আপনি) মহান দাতা; আসমানসমূহ এবং যমিনের সৃষ্টিকর্তা। হে মহত্ত্ব ও মহানুভবতার অধিকারী! হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী!
.
তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সে আল্লাহর ইসমে আজম (মহান নাম) দিয়ে দু‘আ করেছে, যে নাম দিয়ে ডাকলে সাড়া দেওয়া হয় এবং (কিছু) চাওয়া হলে তা প্রদান করা হয়।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৯৫; ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ১৩০০; হাদিসটি সহিহ] [এই দু‘আটি শব্দে শব্দে অর্থসহ শিখতে কমেন্টে চোখ রাখুন, লিংক পাবেন]
.
প্রায় একই ঘটনা ঘটেছিলো আরেকজন সাহাবির বেলায়। তিনি তাঁর দু‘আর মধ্যে সুরা ইখলাসকে নিয়ে এসেছিলেন। সেটিকেও নবিজি ‘ইসমে আজম’ বলেছেন। [ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ১৩০১; হাদিসটি সহিহ]
.
◉ একটি হাদিসে বলা হয়েছে, সুরা বাকারার ১৬৩ নং আয়াত এবং সুরা আলে ইমরানের প্রথম আয়াতে ইসমে আজম আছে। [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৯৬; ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৪৭৮; হাদিসটি হাসান, কারও মতে দুর্বল]
.
অন্য হাদিসে এসেছে, সুরা বাকারাহ, সুরা আলে ইমরান ও সুরা ত্ব-হার মধ্যে ইসমে আজম রয়েছে। [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৮৫৬, হাদিসটি হাসান]
.
কোনো কোনো আলিম এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, সুরা বাকারায় বর্ণিত ইসমে আজম আছে দুটো আয়াতে। একটি হলো: ১৬৩ নং আয়াত, যা হাদিসে এসেছে।
অপরটি হলো: ২৫৫ নং আয়াত (আয়াতুল কুরসি) একটি হাদিসে এসেছে, কুরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত হলো আয়াতুল কুরসি। [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ১৭৭০]
.
আর সুরা আলে ইমরানে বর্ণিত ইসমে আজম হলো প্রথম আয়াত, যা হাদিসে এসেছে। সুরা ত্ব-হায় বর্ণিত ইসমে আজম আছে ১১১ নং আয়াতে।
.
◉ আসমাউল হুসনা (সুন্দর নামসমূহ) তথা হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর সুন্দর গুণবাচক ৯৯+ টি নামকেও আলিমগণ ইসমে আজম বলেছেন।
.
কারণ আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “আর (সব) সুন্দর সুন্দর নাম তো আল্লাহ্‌ তা‘আলার জন্য, সুতরাং তাঁকে সেসব নামে ডাক।” [সুরা আ’রাফ, আয়াত: ১৮০]
.
◉ একটি হাদিসে ইউনুস (আ.)-এর দু‘আটিকে বলা হয়েছে, এটি দিয়ে দু‘আ করলে দু‘আ কবুল হয়। সেটি আমরা সবাই জানি: লা ইলা-হা ইল্লা আনতা সুব‘হা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায যোয়ালিমীন। [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫০৫; হাদিসটি সহিহ]
.
❑ ইসমে আজম দিয়ে দু‘আ করার নিয়ম:
.
প্রথমেই বলি: ইসমে আজম দিয়ে দু‘আ করার অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থান হলো নামাজে সালাম ফেরানোর পূর্ব মুহূর্ত। অর্থাৎ, নামাজের শেষ বৈঠকে আত্তাহিয়্যাতু, দরুদ, দু‘আ মাসুরা (দু‘আ মাসূরা পড়া ঐচ্ছিক; পড়া খুব ভালো, তবে জরুরি না) পাঠ শেষ করার পর ইসমে আজম পড়বেন, অতঃপর নিজের চাওয়াগুলো বলবেন।
.
প্রথমে আপনি অর্থের দিকে লক্ষ রেখে আগ্রহ ও আন্তরিকতা নিয়ে ইসমে আজম পড়বেন বা ইসমে আজমের দু‘আ পড়বেন। এরপর নিজের চাওয়াগুলো বলতে থাকবেন (আরবিতে)। সেক্ষেত্রে কুরআন-হাদিসে বর্ণিত দু‘আগুলোতে নিজের সব চাওয়াই পেয়ে যাবেন, ইনশাআল্লাহ। তাই, সেগুলো নিজের প্রয়োজনমত মুখস্থ করে নেবেন। নামাজে অনারব ভাষায় দু‘আ করার ব্যাপারে আলিমগণের বিরাট অংশ নিষেধ করেছেন। তাই, সতর্কতা কাম্য। আর, যদি নামাজের বাইরে সাধারণ দু‘আর মধ্যে ইসমে আজম পড়েন, তবে ইসমে আজমের পর যেকোনো ভাষায় দু‘আ করতে পারেন।
.

----------------------------------

#সার্থক_মুনাজাত (ষষ্ঠ পর্ব) : উসিলার পরিচয়, উসিলা দিয়ে দু‘আ করার পদ্ধতি ও বিধান

উসিলা দিয়ে দু‘আ করলে দু‘আ কবুল হয়। কী কী বিষয়ে উসিলা দেওয়া যায়? উসিলা কী? কীভাবে উসিলা দিয়ে দু‘আ করতে হয়?
.
❖ উসিলার পরিচয়:
.
উসিলা আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো: নৈকট্য, আগ্রহ, তালাশ, মাধ্যম ইত্যাদি। পরিভাষায়, বিশেষ উপায়ে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের প্রচেষ্টাকে ওয়াসিলা বলা হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তাঁর দিকে নৈকট্য (উসিলা) তালাশ করো এবং তাঁর পথে জিহ|দ করো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’’ [সুরা মায়িদা, আয়াত: ৩৫]
.
❖ উসিলার প্রকারভেদ:
.
(১) আল্লাহর পবিত্র ও গুণবাচক নামের উসিলা দিয়ে দু‘আ করা। এটি খুব ভালো।
.
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “আর সুন্দর সুন্দর নাম তো আল্লাহর জন্য, সুতরাং তাঁকে সেসব নামে ডাক।” [সুরা আ’রাফ, আয়াত: ১৮০]
.
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘‘বলুন, তোমরা আল্লাহ নামে ডাক অথবা রাহমান নামে ডাক, তোমরা যে নামেই ডাক, তাঁর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম।’’ [সুরা ইসরা, আয়াত: ১১০]
.
যেমন: আল্লাহর একটি গুণবাচক নাম হলো, সাত্তার (গোপনকারী)। এভাবে দু‘আ করা যায়, ‘‘হে আল্লাহ! আমার গুনাহগুলোকে দুনিয়াতে যেভাবে ঢেকে রাখছেন, সেভাবে আখিরাতেও ঢেকে রাখুন। আপনি তো সাত্তার!’’ এরকম উদাহরণ কুরআন-হাদিসেই অসংখ্য আছে। যেমন: লাইলাতুল কদরে পড়ার ব্যাপারে নবিজি থেকে বর্ণিত দু‘আ।
.
اَللّٰهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيْ
.
[আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউ-উন, তু‘হিব্বুল ‘আফওয়া ফা’ফু ‘আন্নী]
.
অর্থ: হে আল্লাহ্! আপনি (عَفُوٌّ) ক্ষমাশীল (গুণবাচক নাম), আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৮৫০; হাদিসটি সহিহ]
.
ইসমে আজম বা আল্লাহর মহান কিছু নামের উসিলা দিয়েও দু‘আ করতে পারেন। এ ব্যাপারে গত পর্বে আলোচনা করা হয়েছে। কমেন্টে পাবেন লিংক।
.
(২) নেক আমলের উসিলা দিয়ে দু‘আ করা। উসিলা দিয়ে দু‘আর মধ্যে সর্বোত্তম এটি।
.
একবার তিন ব্যক্তি একটি গুহায় আটকা পড়েছিলো। একটি বিশাল পাথর গুহার মুখে এসে আটকে যায়। এমন কঠিন অবস্থায় তাদের একজন বললো, ‘‘জীবনের সবচেয়ে ভালো যে কাজটি করেছো, সেটি দিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করো।’’ তখন তিনজনই তাদের বিশেষ একটি করে নেক আমলের উসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলো এবং আল্লাহ তাদের দু‘আ কবুল করে পাথরটি একটু একটু করে পুরোটাই সরিয়ে দিয়েছিলেন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ২২১৫]
.
সুতরাং এভাবে দু‘আ করা যায়, ‘‘হে আল্লাহ! অমুক আমলটি আপনার সন্তুষ্টির জন্য করেছিলাম। সেটির উসিলায় আমাকে মাফ করে দিন বা আমার প্রয়োজন পূরণ করে দিন।’’ এক্ষেত্রে যেকোনো নেক আমলকেই উসিলা দেওয়া যায়। (নেক আমলের উসিলার পয়েন্টটি ভালো করে মাথায় রাখুন)।
.
(৩) নেককার কোনো জীবিত ব্যক্তির কাছে দু‘আ চেয়ে, সেটির উসিলা দিয়ে দু‘আ করা বৈধ। এ ব্যাপারে কোনো আপত্তি নেই।
.
যদি জীবিত কোনো নেককার ব্যক্তির কাছে এভাবে বলা হয় যে, ‘‘আপনি আমার জন্য দু‘আ করুন আল্লাহর কাছে। আপনি যেহেতু নেককার মানুষ, তাই আপনার দু‘আ হয়তো আল্লাহ কবুল করবেন।’’ তাহলে সমস্যা নেই। এভাবে দু‘আ চাওয়া বৈধ। কারণ মূলত আল্লাহর কাছেই দু‘আ করা হচ্ছে, ব্যক্তির কাছে কেবল দু‘আ চাওয়া হচ্ছে।
.
অনাবৃষ্টির কারণে যখন সমস্যা হচ্ছিলো, তখন নবিজির চাচা আব্বাস (রা.)-এর মাধ্যমে খলিফা উমর (রা.) দু‘আ করেছিলেন। তখন আব্বাস (রা.) জীবিত ছিলেন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১০১০]
.
আর আব্বাস (রা.) নিজেও সেসময় বৃষ্টির জন্য আল্লাহর কাছে দু‘আ করেন। [ইমাম ইবনু হাজার, ফাতহুল বারি: ২/৪৯৭]
.
এক অন্ধ ব্যক্তি এসে নবিজির কাছে দু‘আ চেয়েছিলেন। নবিজি তখন তাঁকে দু‘আ শিখিয়ে দিয়েছিলেন। আর, তিনি শেখানো দু‘আটি পাঠ করেছিলেন। সেই দু‘আর মধ্যে নবিজির উসিলা দিয়ে দু‘আ করার ব্যাপার ছিলো। [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৭৮; হাদিসটি সহিহ]
.
(৪) নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উসিলা দিয়ে দু‘আ করার বিধান:
.
এ ব্যাপারে সাহাবিগণের মাঝে দুই রকম আমলই আছে। খলিফা থাকা অবস্থায় উমর (রা.) নবিজির উসিলায় দু‘আ না করে, সে সময় জীবিত থাকা নবিজির চাচা আব্বাস (রা.)-এর উসিলায় দু‘আ করেছেন। তিনি দু‘আর মধ্যে বলেছেন, ‘‘হে আল্লাহ! আপনার নবির উসিলায় আমরা দু‘আ করতাম (তিনি জীবিত থাকা অবস্থায়)। এখন (তাঁর অবর্তমানে) আমরা তাঁর চাচার উসিলায় দু‘আ করছি।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১০১০]
.
সেজন্য কোনো কোনো আলিম বলেছেন, যেহেতু নবিজি এখন আর জীবিত নেই, সেহেতু তাঁর উসিলা দিয়ে দু‘আ করা যাবে না। [ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, কাইদাহ জালিলাহ]
.
তবে, অধিকাংশ আলিম বলেছেন, এখনও নবিজির উসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করা যাবে। একজন অন্ধ ব্যক্তিকে নবিজি তাঁর উসিলা দিয়ে দু‘আ করতে শিখিয়েছিলেন। সেই একই দু‘আ সাহাবি উসমান বিন হানিফ (রা.) অন্য একজনকে পড়তে বলেন—তাঁর প্রয়োজন মেটাতে, অথচ নবিজি তখন দুনিয়াতে নেই। [ইমাম ইবনুস সুন্নি, আমালুল ইয়াউম ওয়াল লাইলাহ: ৬২৯; ইমাম বাইহাকি, দালাইলুন নুবুওওয়াহ: ৬/১৭৬; হাদিসটির বিশুদ্ধতা সম্পর্কে কিছু মতভেদ আছে; কারও কারও মতে, হাদিসটির সনদে দুর্বলতা আছে, তবে অনেক মুহাদ্দিস হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
.
তার মানে, নবিজির উসিলা দিয়ে দু‘আ করার জন্য নবিজি জীবিত থাকা শর্ত নয়। মালিকি, শাফিয়ি, হাম্বলি ও পরবর্তী যুগের হানাফিগণের অধিকাংশের মত এটিই। [ইমাম নববি, আল-মাজমু’: ৮/২৭৪; ইমাম ইবনু আবিদিন, রাদ্দুল মুহতার: ৫/২৫৪]
.
নবিজির উসিলায় এমনভাবে দু‘আ করা যায়, যেভাবে দু‘আ করা সকল আলিমের মতেই বৈধ। সেটি হলো, ‘‘হে আল্লাহ! আপনার প্রিয় নবিকে আমি ভালোবাসি (কিংবা আপনার নবির সুন্নাতকে ভালোবাসি), সেই উসিলায় আমার প্রয়োজন পূরণ করুন বা আমাকে মাফ করুন।’’ এটা কীভাবে সবার মতেই বৈধ হলো? কারণ এখানে সরাসরি নবিজির উসিলায় দু‘আ করা হচ্ছে না, বরং নবিজির প্রতি ভালোবাসার উসিলায় দু‘আ করা হচ্ছে। আর নবিজিকে ভালোবাসা একটি নেক আমল। আমরা জানি, নেক আমলের উসিলা দিয়ে দু‘আ করা সবার মতেই বৈধ। মোটকথা, যেকোনো নেক আমলের উসিলা দিয়েই দু‘আ করা জায়েয। আশা করি, বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন।
.
(৫) নবিজি বাদে অন্য কোনো মৃত নেককার ব্যক্তির উসিলা দিয়ে দু‘আ করার বিধান:
.
এ ব্যাপারে তেমন কোনো সহিহ দলিল পাওয়া যায় না। কোনো কোনো আলিম এটিকে বৈধ বললেও এটি না করাই উচিত এবং সতর্কতার দাবি। তাছাড়া ওহি তথা আল্লাহর পক্ষ থেকে সরাসরি না জেনে মৃত কাউকে নেককার হিসেবে সার্টিফিকেট দেওয়াও কঠিন। হ্যাঁ, আমরা কেবল ভালো ধারণা রাখতে পারি।
.
❖ উপসংহার:
.
আমরা আল্লাহর গুণবাচক নামের উসিলা এবং ইসমে আজম দিয়ে দু‘আ করবো। আমরা নিজেদের কোনো নেক আমলের উসিলা দিয়েও দু‘আ করবো। এই দুটো বিষয়ে কোনো অবহেলা করবো না। আমরা চাইলে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উসিলা দিয়েও দু‘আ করতে পারবো, যেহেতু অধিকাংশ আলিম এটি বৈধ বলেছেন। তবে, এটির চেয়ে আল্লাহর গুণবাচক নাম, ইসমে আজম এবং নিজের নেক আমল দিয়ে দু‘আ করার গুরুত্ব অনেক বেশি। আমরা অন্য কোনো মৃত নেককার ব্যক্তির উসিলায় দু‘আ করবো না, তবে জীবিত নেককার ব্যক্তির কাছে দু‘আ চাইতে পারি, যাতে তিনি আমাদের জন্য আল্লাহর দরবারে হাত ওঠান।
.

------------------------------

#স্বার্থক_মুনাজাত (৭ম পর্ব) : দু‘আ কবুলের সময়গুলো

দু‘আ কবুলের ২০ টি গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং যেভাবে দু‘আ করলে আল্লাহ্ কবুল করেন
▬▬▬▬▬▬◄◖❂◗►▬▬▬▬▬▬
✪ আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় দু‘আ করলে তা কবুল করা হয়।
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দু‘আ প্রত্যাখ্যান করা হয় না। অতএব, তোমরা (এ সময়ে) দু‘আ করো।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ৫২১; ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১২১৭৪; হাদিসটি সহিহ]
.
✪ মুয়াজ্জিনের সাথে আজানের জবাব দেওয়ার পর যে দু‘আ করা হয়, তা কবুল হয়।
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মুয়াজ্জিনগণ যা বলে, তুমি তা বলো (আজানের জবাব দাও)। যখন শেষ করবে, তখন আল্লাহর কাছে চাও; তোমাকে দেওয়া হবে।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ৫২৪; হাদিসটি হাসান সহিহ]
.
✪ রাতের শেষভাগে এবং ফরজ নামাজের পর দু‘আ কবুল হয়।
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হলো, ‘‘কোন (সময়) দু‘আ সবচেয়ে বেশি শোনা হয় বা কবুল করা হয়?’’ তিনি উত্তরে বলেন, ‘‘রাতের শেষাংশের মধ্যে এবং ফরজ নামাজসমূহের পর।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৪৯৯; হাদিসটি হাসান]
.
✪ আযানের সময় এবং জিহা|দের উত্তপ্ত ময়দানে দু‘আ কবুল হয়।
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দুটি (সময়ের দু‘আ) ফিরিয়ে দেওয়া হয় না অথবা খুব কমই ফিরিয়ে দেওয়া হয়: আজানের সময়ের দু‘আ এবং (মুসলিম বনাম ক|ফিরের) একে অপরের লড়াই যখন তীব্র রূপ ধারণ করে (তখনকার দু‘আ)।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ২৫৪০, হাদিসটি সহিহ]
.
✪ জমজমের পানি পানের সময় দু‘আ।
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জমজমের পানি ওই উদ্দেশ্য হাসিলে সহায়ক, যে উদ্দেশ্য নিয়ে তা পান করা হয়।’’ [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩০৬২; হাদিসটি সহিহ]
.
✪ নামাজের সিজদায় দু‘আ কবুল হয়।
.
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘বান্দা যখন সিজদায় রত হয়, তখন সে তার রবের সবচেয়ে নিকটবর্তী থাকে। কাজেই তোমরা (এ সময়ে) বেশি বেশি দু‘আ করবে।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৯৭০]
.
✪ দু‘আ ইউনুস দিয়ে দু‘আ করলে।
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যুন্নুন (ইউনুস আ.) মাছের পেটে দু‘আ করেছিলেন—
لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحٰنَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظّالِمِيْنَ
—কোনো মুসলিম যে বিষয়েই এভাবে (আল্লাহকে) ডেকেছে, তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫০৫; হাদিসটি সহিহ]
.
✪ স্বাচ্ছন্দ্য ও প্রাচুর্যের সময় বেশি বেশি দু‘আ করলে কঠিন সময়ে দু‘আ কবুল হয়।
.
রাসুুুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি কামনা করে যে, বিপদ-কাঠিন্যের সময়ে আল্লাহ তার (দু‘আয়) সাড়া দিন, সে যেন সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের সময়গুলোতে বেশি বেশি দু‘আ করে।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৮২; হাদিসটি হাসান]
.
✪ বৃষ্টির সময় দু‘আ কবুল হয়।
.
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “দুটি দু‘আ প্রত্যাখ্যান করা হয় না। আযানের সময়ের দু‘আ ও বৃষ্টির নীচের দু‘আ।” [ইমাম তাবারানি, মু’জামুল কাবির: ৫৭৫৬; শায়খ আলবানি, সহিহুল জামি’: ৩০৭৮, হাদিসটি সহিহ]
.
✪ আল্লাহর ইসমে আজম (মহিমান্বিত নাম) দিয়ে দু‘আ করলে দু‘আ কবুল হয়।
.
এক ব্যক্তি নামাজের বৈঠকে সালাম ফেরানোর আগে আল্লাহর ইসমে আজম দিয়ে দু‘আ করছিলেন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সে আল্লাহর ইসমে আজম (মহান নাম) দিয়ে দু‘আ করেছে, যে নাম দিয়ে ডাকলে সাড়া দেওয়া হয় এবং (কিছু) চাওয়া হলে তা প্রদান করা হয়।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৯৫; ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ১৩০০; হাদিসটি সহিহ]
.
✪ দু‘আর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করা এবং এরপর রাসুলের উপর দরুদ পাঠ করা। একইভাবে দু‘আ শেষ করা।
.
একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তিকে নামাজে দু‘আ করতে শুনলেন। সে আল্লাহর প্রশংসাও করলো না, নবিজির উপর দরুদও পড়লো না। তখন নবিজি তাকে বললেন, ‘‘হে মুসল্লি! তুমি খুব তাড়াহুড়া করে ফেললে!’’ তারপর নবিজি তাদের শিক্ষা দিলেন (কীভাবে দু‘আ করতে হয়)। তখন তিনি এক ব্যক্তিকে দেখলেন, সে নামাজ আদায় করলো এবং আল্লাহর গুণ (মাহাত্ম্য) বর্ণনা করলো, তাঁর প্রশংসা করলো এবং রাসুলের উপর দরুদ পাঠ করলো। তখন নবিজি (তাকে) বললেন, ‘‘তুমি দু‘আ কর, কবুল করা হবে; (আল্লাহর কাছে) চাও, তোমাকে দেওয়া হবে।’’ [ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ১২৮৪; হাদিসটি সহিহ]
.
দু‘আর শেষদিকে আবারও প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করা অতঃপর নবিজির উপর দরুদ পড়ার মাধ্যমে দু‘আ শেষ করা। [ইমাম ইবনুল কায়্যিম, জালাউল আফহাম, পৃষ্ঠা: ৩৭৫]
.
✪ নেক আমলের উসিলা দিয়ে দু‘আ করলে আল্লাহ্ কবুল করেন।
.
একবার তিন ব্যক্তি একটি গুহায় আটকা পড়েছিলো। একটি বিশাল পাথর গুহার মুখে এসে আটকে যায়। এমন কঠিন অবস্থায় তাদের একজন বললো, ‘‘জীবনের সবচেয়ে ভালো যে কাজটি করেছো, সেটি দিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করো।’’ তখন তিনজনই তাদের বিশেষ একটি করে নেক আমলের উসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করেছিলো এবং আল্লাহ তাদের দু‘আ কবুল করে পাথরটি একটু একটু করে পুরোটাই সরিয়ে দিয়েছিলেন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ২২১৫]
.
✪ রাতে ঘুম থেকে ওঠার পর বিশেষ একটি দু‘আ পড়া এবং এরপর যা দু‘আ করা হয়, তা কবুল হয়।
.
আমরা অন্য কোনো পোস্টে এটি নিয়ে আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ্। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১১৫৪]
.
✪ জুমু‘আর দিনে আসরের পর, মাগরিবের পূর্বে দু‘আ কবুল হয়।
.
এ ব্যাপারে হাদিসটি দেখে নিন। [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৪৯১; হাদিসটি সহিহ]
.
✪ বুধবার জোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে দু‘আ কবুলের আশা করা যায়।
.
একবার নবিজি সোম, মঙ্গল ও বুধবার মাসজিদুল ফাতহে দু‘আ করেন। তবে, বুধবারে দু‘আ কবুল হয়। এরপর থেকে জাবির (রা.) যখনই কোনো প্রয়োজনবোধ করতেন, বুধবার জোহর ও আসরের মাঝের সময়টাতে দু‘আ করতেন। তাঁর দু‘আ কবুল হতো বলে তিনি জানিয়েছেন। [ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৪৫৬৩; শায়খ আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১১৮৫; শায়খ আলবানি হাদিসটির সনদ হাসান বললেও শায়খ শু‘আইব দুর্বল বলেছেন]
.
ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহ.) বলেছেন, ওই মসজিদে গিয়ে দু‘আ করা শর্ত নয়, বরং নির্দিষ্ট সময়ে দু‘আ করাই মূল। [ইক্বতিদা: ১/৪৩৩]
.
✪ যিকরের মজলিসে দু‘আ কবুল হওয়ার অধিক সম্ভাবনা রাখে। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৪০৮]
.
✪ আরাফার দিনে দু‘আ কবুল হওয়ার অত্যন্ত সম্ভাবনা থাকে। [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৮৫, হাদিসটি হাসান]
.
✪ কারো মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির জন্য মানুষের দু‘আ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রাখে।
.
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যখন তোমরা অসুস্থ ব্যক্তি অথবা মৃত ব্যক্তির নিকট হাজির হও, তখন তার সম্পর্কে ভালো মন্তব্য কোরো। কেননা, তোমরা যা বলো, তার উপর ফেরেশতারা ‘‘আমিন’’ বলেন। [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২০১৪]
.

---------------------------------

#সার্থক_মুনাজাত (অষ্টম পর্ব) : যাদের দু‘আ কবুল হয়

যাদের দু‘আ কবুল হয়, তাদের বৈশিষ্ট্য ও পরিচয় (প্রায় ১৮/২০ শ্রেণির মানুষ তাঁরা)
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
■ অসহায়-নিরুপায় ব্যক্তির দু‘আ।
.
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘কে তিনি, যিনি নিরুপায় ব্যক্তির ডাক শুনেন, যখন সে তাঁকে কাতরভাবে ডাকে আর কে তার দুঃখ দূর করেন?’’ [সুরা নামল, আয়াত: ৬২]
.
■ মজলুম (জুলুমের শিকার) ব্যক্তির দু‘আ।
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘মজলুমের ফরিয়াদ থেকে সাবধান থেকো! কারণ মজলুমের ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না (সরাসরি কবুল হয়)।’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১৪৯৬]
.
■ কারও অনুপস্থিতিতে তার জন্য দু‘আ।
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো মুসলিম যদি তার অনুপস্থিত (মুসলিম) ভাইয়ের জন্য দু‘আ করে অথবা ক্ষমা চায়, তবে তা কবুল করা হয় এবং তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিযুক্ত থাকে। যখনই কোনো ব্যক্তি তার ভাইয়ের কল্যাণার্থে দু’আ করে, তখন সেই নিযুক্ত ফেরেশতা বলে, ‘আমিন’। (অর্থাৎ, হে আল্লাহ! কবুল করুন) এবং তোমার জন্যও অনুরূপ হোক (অর্থাৎ তোমার ভাইয়ের জন্য যা চাইলে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকেও তা-ই দান করুন)।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৮২২]
.
■ বাবা-মার জন্য সন্তানের দু‘আ।
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘জান্নাতে কোনো কোনো ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। তখন সে বলবে, ‘আমার মর্যাদা বাড়লো কেমন করে?’ তখন তাকে বলা হবে, তোমার সন্তান তোমার জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেছে, (তাই)।’’ [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৬৬০; শায়খ আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ১০৯৮; হাদিসটি সহিহ]
.
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়; কেবল তিনটি ব্যতীত—এক. সদাকাহ্ জারিয়াহ (এমন দান, যা চলমান থাকে); দুই. এমন জ্ঞান, যা মানুষকে উপকৃত করে এবং তিন. নেককার সন্তান, যে তার জন্য দু'আ করে।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৪১১৫]
.
■ মুসাফির ব্যক্তির দু‘আ।
■ সন্তানের জন্য পিতা-মাতার দু‘আ।
■ সন্তানের বিরুদ্ধে পিতা-মাতার বদ-দু‘আ।
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তিনটি দু‘আ কবুল হয়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই: মজলুমের দু‘আ, মুসাফিরের দু‘আ এবং সন্তানের বিপক্ষে পিতার বদ-দু‘আ।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ১৯০৫; হাদিসটি হাসান]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘‘সন্তানের জন্য পিতার (ভালো) দু‘আ।’’ [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৮৬২; হাদিসটি হাসান]
.
■ অজু করে যিকর করতে করতে ঘুমিয়ে পড়া ব্যক্তি জাগ্রত হওয়ার পর দু‘আ।
.
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো মুসলিম যদি অজু করে আল্লাহর যিকর করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে, তারপর রাতে ওঠে আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখিরাতের কোনো কল্যাণ চায়, আল্লাহ তাকে অবশ্যই তা দেবেন।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ৫০৪২; হাদিসটি সহিহ]
.
■ ইসমে আজম দিয়ে দু‘আকারী ব্যক্তির দু‘আ।
.
বুরাইদাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ব্যক্তিকে বলতে শুনেন—
.
اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ أَنِّيْ أَشْهَدُ أَنَّكَ أَنْتَ اللّٰهُ لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَدٌ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা, আন্নি আশহাদু আন্নাকা আনতাল্লাহ্, লা ইলা-হা ইল্লা আনতাল আহাদুস সমাদ, আল্লাযি লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ, ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুওয়ান আ‘হাদ (মূল আরবি টেক্সটের সাথে মিলিয়ে পড়ুন; না হলে উচ্চারণ ভুল হবে)]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার নিকট চাচ্ছি। নিশ্চয়ই আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনিই আল্লাহ। আপনি ছাড়া কোনো (প্রকৃত) উপাস্য নেই; যিনি একক, অমুখাপেক্ষী। যিনি কাউকে জন্ম দেননি, তার থেকে কেউ জন্ম নেয়নি এবং তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।
.
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তুমি আল্লাহর ওই নাম নিয়ে দু‘আ করেছো, যার মাধ্যমে কিছু চাওয়া হলে তিনি তা দান করেন এবং দু‘আ করা হলে কবুল করেন।’’ [ইমাম আবু দাউদ: ১৪৯৩; ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৪৭৫; হাদিসটি সহিহ]
.
প্রথমে এটি পড়বেন, এরপর আপনার প্রয়োজন বলবেন আল্লাহর কাছে। নামাজের মধ্যে ইসমে আজম পড়ে দু‘আ করলে আরবিতে বলবেন। নামাজ ছাড়া হলে ইসমে আজম পড়ার পর যেকোনো ভাষায় বলবেন।
.
■ দু‘আ ইউনুস দিয়ে দু‘আকারীর দু‘আ।
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যুন্নুন (ইউনুস আ.) মাছের পেটে দু‘আ করেছিলেন—
لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحٰنَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظّالِمِيْنَ
—কোনো মুসলিম যে বিষয়েই এভাবে (আল্লাহকে) ডেকেছে, তিনি তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫০৫; হাদিসটি সহিহ]
.
■ হজ আদায়কারীর দু‘আ।
■ উমরাহ্ আদায়কারীর দু‘আ।
■ আল্লাহর রাস্তায় জিহ|দকারীর দু‘আ
.
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহর রাস্তায় জিহ|দকারী, হজ আদায়কারী ও উমরাহ্ পালনকারী—তারা হলেন আল্লাহর প্রতিনিধি; তিনি তাদের ডেকেছেন আর তারা সাড়া দিয়েছে (এসেছে)। (সুতরাং) তারা আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে, তিনি তাদের দেবেন।’’ [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ২৮৯৩; হাদিসটি হাসান]
.
■ আল্লাহকে অধিক স্মরণকারীর দু‘আ।
■ ন্যায়পরায়ণ শাসকের দু‘আ।
.
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তিন ব্যক্তির দু‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না: আল্লাহকে অধিক স্মরণকারীদের দু‘আ, মজলুমের দু‘আ এবং ন্যায়পরায়ণ শাসকের দু‘আ।’’ [ইমাম বাযযার, আল-মুসনাদ: ৮৭৫১; শায়খ আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ১২১১; হাদিসটি হাসান]
.
■ রোজাদার ব্যক্তির দু‘আ।
.
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তিন ব্যক্তির দু‘আ ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।... রোজাদারের দু‘আ...।’’ [ইমাম বাইহাকি, শু‘আবুল ঈমান: ৬৬১৯; শায়খ আলবানি, সহিহুল জামি’: ৩০৩২; হাদিসটি হাসান]
.
■ আল্লাহর ওলির দু‘আ কবুল হয়।
[ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৫০২]
.
■ আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ যারা।
.
আবু বকর (রা.) বলেন, ‘‘আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ ভাইয়ের দু‘আ কবুল হয়।’’ [ইমাম বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৬২৮; হাদিসটি সহিহ]
.
------------------------------------

#সার্থক_মুনাজাত (নবম পর্ব) : দু‘আয় কী চাওয়া উচিত?

দু‘আ করার সময় কী কী বিষয় চাওয়া উচিত?
(আমরা অনেকেই দু‘আ করার সময় অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চাইতে ভুলে যাই)
▬▬▬▬▬▬▬▬❖▬▬▬▬▬▬▬▬
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ যখন (আল্লাহর কাছে) চাইবে, তখন সে যেন বেশি করে চায়। কারণ সে তো তার রবের কাছেই চাচ্ছে!’’ [ইমাম ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৮৮৯; হাদিসটি সহিহ]
.
আল্লাহর ভাণ্ডার অফুরন্ত। সুতরাং, আমাদের সব চাওয়াই আল্লাহর কাছে বলতে হবে। আল্লাহর ভাণ্ডারে কোনো কিছুর কমতি নেই। তবে, মানুষের জীবনে চাহিদার শেষ নেই, প্রয়োজনেরও সীমা নেই। এতসব কিছুর মধ্যে কয়েকটি বিষয়কে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি। না হয়, আল্লাহর কাছে দু‘আর সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ চাওয়া বাকি থেকে যাবে। এমনটিই হয় অনেকের। তাই, যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বেশি বেশি চাওয়া দরকার, সেগুলো উল্লেখ করা হলো।
.
❑ হিদায়াত তথা সঠিক পথনির্দেশনা:
.
একজন মুমিনের জীবনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সঠিকভাবে হিদায়াতের উপর চলা। সাধারণভাবে প্রত্যেক মুসলিমই মৌলিকভাবে হিদায়াতপ্রাপ্ত। তবে, পূর্ণাঙ্গ হিদায়াত অনেক ব্যাপক। সেজন্য আল্লাহর কাছে এটি বেশি করে চাইতে হবে। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘যাকে আল্লাহ্ সঠিক পথ দেখান, সে-ই সঠিক পথ পায়; আর যাকে আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য তুমি কোনো অভিভাবক এবং পথনির্দেশক পাবে না।’’ [সুরা কাহফ, আয়াত: ১৭]
.
মানুষ নিজেই যখন হিদায়াতের পথ চায় না এবং তা থেকে দূরে সরে যায়, তখন তাকে আল্লাহ্ পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ্ বলেন, ‘‘কিন্তু তারা যখন বাঁকা পথ ধরলো, তখন আল্লাহ্‌ও তাদের অন্তরকে বাঁকা করে দিলেন। আর, আল্লাহ প্রকাশ্য পাপাচারী সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।’’ [সুরা আস-সফ, আয়াত: ০৫]
.
এজন্য আমরা সুরা ফাতিহাতে (আয়াত: ০৫) প্রতিবার হিদায়াত তথা সরল পথ কামনা করি।
.
❑ গুনাহ থেকে ক্ষমা চাওয়া:
.
নিঃসন্দেহে এটি আমাদের জীবনের প্রধান ইস্যু হওয়া উচিত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘আর, তোমরা নিজেদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো, তাঁর দিকে ফিরে আসো। তাহলে তিনি তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (দুনিয়াতে) উৎকৃষ্ট জীবন উপভোগ করাবেন এবং অধিক আমলকারীকে (আখিরাতে) বেশি করে দেবেন। আর যদি তোমরা বিমুখ হয়ে থাকো, তবে আমি তোমাদের উপর এক মহা-দিবসের শাস্তির আশঙ্কা করছি।’’ [সুরা হুদ, আয়াত: ০৩; ব্রাকেটে উল্লেখিত ব্যাখ্যা তাফসিরে ইবনে কাসির: ২/৪৩৬ হতে]
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘আমার অন্তর (আল্লাহর স্মরণ হতে) বাধাপ্রাপ্ত হয়, (তাই) আমি দিনে শতবার ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করি।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৭৫১]
.
❑ জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাত কামনা:
.
আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে-ই তো সফল হবে। আর দুনিয়ার জীবন তো ধোঁকার সামগ্রী ছাড়া কিছুই নয়।’’ [সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫]
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বেশি যে দু‘আ করতেন, তাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করতেন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৩৮৯]
.
❑ দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা:
.
আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ সময় এই দু‘আ করতেন—
.
اَللّٰهُمَّ آتِنَا فِيْ الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِيْ الآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আ-তিনা ফিদ্দুন্‌ইয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আ-খিরাতি হাসানাতাও ওয়াক্বিনা আযা-বান্ নার]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন, আখিরাতে কল্যাণ দান করুন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের বাঁচান। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৩৮৯]
.
এই একটি দু‘আ এতই ব্যাপক যে, এতে দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কল্যাণ শামিল হয়ে যায়।
.
❑ দ্বীনের উপর অটল-অবিচল থাকা:
.
উম্মে সালামা (রা.) বলেন—তাঁর নিকট অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দু‘আটি সবচেয়ে বেশি পড়তেন, তা হলো–
.
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلٰي دِيْنِكَ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলু-ব! সাব্বিত ক্বালবি ‘আলা দি-নিকা]
.
অর্থ: হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের (ইসলামের) উপর অটল রাখুন। [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫২২; হাদিসটি সহিহ]
.
❑ ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করার দু‘আ:
.
এই দু‘আটি মুখস্থ করে নিন। খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দু‘আ। কঠিন না, সহজই।
.
اللَٰهُمَّ تَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ، وَأَحْيِنَا مُسْلِمِينَ، وَأَلْحِقْنَا بِالصَّالِحِينَ، غَيرَ خَزَايَا وَلَا مَفْتُونِينَ
.
[মোটিমুটি উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা তাওয়াফফানা মুসলিমি-ন, ওয়া আ‘হয়িনা মুসলিমি-ন, ওয়া আল‘হিক্বনা বিস স-লিহি-ন, গায়রা খাযা-য়া ওয়ালা মাফতু-নি-ন (বাংলা উচ্চারণ দেখে শিখবেন না)]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! মুসলিম অবস্থায় আমাদের মৃত্যু দিন; মুসলিম অবস্থায় বাঁচিয়ে রাখুন; (মৃত্যুর পর) ভালো মানুষদের সাথে আমাদের জুড়ে দিন; আমাদের অপদস্থ করবেন না এবং পরীক্ষায় ফেলবেন না। [ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৫৪৯২; ইমাম বুখারি, আল-আদাবুল মুফরাদ: ৬৯৯; হাদিসটি সহিহ]
.
❑ নিয়ামতের স্থায়িত্ব এবং আল্লাহর প্রতিটি সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকতে পারা:
.
اللّٰهُمَّ أَسْأَلُكَ نَعِيْماً لَا يَنْفَدُ وَأَسْأَلُكَ الرِّضٰى بَعْدَ الْقَضَاءِ وَأَسْأَلُكَ بَرْدَ الْعَيْشِ بَعْدَ الْمَوْتِ
.
[মোটামুটি উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আসআলুকা না‘ঈ-মান লা ইয়ানফাদ, ওয়া আসআলুকার রিদ্বা বা‘অদাল ক্বাদ্বা, ওয়া আসআলুকা বারদাল ‘আইশি বা‘অদাল মাওত (আরবি দেখে না শিখলে এই দু‘আয় অনেকগুলো ভুল করবেন, নিশ্চিতভাবে!)]
.
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার কাছে এমন নিয়ামত (অনুগ্রহ) চাই, যা কখনো শেষ হবে না; আপনার কাছে চাই—যেন আপনার সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকতে পারি এবং আপনার কাছে মৃত্যুর পর আরামদায়ক জীবন চাই। [ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ১৩০৫; হাদিসটি সহিহ]
.
❑ এছাড়াও শির্ক থেকে আশ্রয় চাওয়া জরুরি। কারো উপর জুলুম করা এবং জুলুমের শিকার হওয়া থেকে বাঁচার জন্য দু‘আ করতে হবে। তাছাড়া সুস্থতা কামনায়, ইবাদতের তাওফিক লাভে, বিপদ-মুসিবত ও মন্দ পরিণতি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য গুরুত্ব দিয়ে দু‘আ করা উচিত।
.
------------------------------------

#সার্থক_মুনাজাত (দশম পর্ব) : দু‘আর মধ্যে কান্নার উপায়

দু‘আর মধ্যে কীভাবে কান্না করা যায়?
▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
অনেকেই দু‘আর মধ্যে কাঁদতে চান, কিন্তু পারেন না। কিছু বিষয় খেয়াল রাখলে—ইনশাআল্লাহ—চোখে পানি আসবে। মুমিন বান্দার চোখের পানি অনেক দামি জিনিস। কারণ চোখের পানি দিয়ে করা দু‘আগুলো আল্লাহ সাধারণত ফিরিয়ে দেন না, যদি দু‘আর যাবতীয় বিষয় ঠিকঠাক থাকে।
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘দুটি চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না: সেই চোখ, যা আল্লাহর ভয়ে অশ্রুপাত করে এবং সেই চোখ, যা আল্লাহর রাস্তায় জিহ|দে পাহারারত থাকে।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ১৬৩৯; হাদিসটি সহিহ]
.
দু‘আর মধ্যে কান্না করতে কিছু বিষয় খেয়াল রাখুন। ইনশাআল্লাহ, অন্তরকে নরম করে চোখে পানি আনতে এগুলো বেশ সহায়ক হবে।
.
(১) দু‘আর জন্য অত্যন্ত নিরিবিলি কোনো পরিবেশ বেছে নিন। তাহাজ্জুদের সময়টা দু‘আর জন্য সবচেয়ে উপযোগী। সবাই ঘুমে আর আপনি আল্লাহর সান্নিধ্যে—এই অনুভূতিটা সত্যিই অসাধারণ! তবে, তাহাজ্জুদে সম্ভব না হলে অন্য কোনো নিরিবিলি সময়ে হলেও কোনো অসুবিধা নেই।
.
(২) দু‘আর মধ্যে কিছু সময় পরপর বিভিন্ন প্রসঙ্গে আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো দিয়ে খুব আবেগের সাথে ডাকতে থাকুন। যেমন : ইয়া গাফফার! (হে ক্ষমাশীল), ইয়া রাহমান! (হে করুণাময়), ইয়া সাত্তার (হে গোপনকারী)।
.
(৩) ইচ্ছাকৃত কবিরা গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ বেঁচে থাকতে হবে। ভুলক্রমে হয়ে গেলে, সময় না নিয়ে আন্তরিকভাবে দ্রুত তাওবাহ করুন। গুনাহ আমাদের চোখ দুটোকে শুষ্ক করে দেয় আর অন্তরকে পাথরের চেয়েও কঠিন করে ফেলে। তাই, যথাসম্ভব গুনাহমুক্ত জীবনযাপনের চেষ্টা করতে হবে। যাদের অন্তর শক্ত হয়ে গেছে, তাদের জন্য কী করণীয়, সে ব্যাপারে কিছুদিন আগে লিখেছিলাম। কমেন্টে লেখাটির লিংক পাবেন।
.
(৪) দীর্ঘ সময় নিয়ে দু‘আ করুন। আনুমানিক ২০-৩০ মিনিট (এর কম-বেশিও হতে পারে)। ধরে নিন, আল্লাহ আপনার সামনে আর আপনি তাঁর কাছে রোনাজারি করছেন। আপনি নিজেকে সেই ফাঁসির আসামী মনে করুন, একটু পরই যার ফাঁসি কার্যকর হবে। এমতাবস্থায় তাকে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনার অফার করা হলো। ভালোভাবে ক্ষমা চাইতে পারলে তার ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফ করা হবে। (কেমন হবে তখন তার কান্না আর ফরিয়াদ!?)
.
(৫) আবেগঘন কথা দিয়ে দু‘আ করুন। যেমন: ইবনুল কাইয়িম (রাহ.) বলেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমি ছাড়াও আপনার অনেক বান্দা আছে, কিন্তু আপনি ছাড়া তো আমার আর কোনো রব নেই! আপনি যদি আমাকে তাড়িয়ে দেন, তাহলে আমি কোথায় যাব? কার কাছে আশ্রয় চাইবো?’
.
কিংবা এভাবে বলুন, ‘আল্লাহ! আপনার রহমতের মহাসমুদ্রের সামনে আমার গুনাহগুলো অতি সামান্য। আমি তো শুধু আপনার রহমতেরই ভিখারী। আপনি তো ক্ষমা করতেই ভালোবাসেন! হে আমার মালিক! আমাকে শাস্তি দিলে তো আপনার কোনো লাভ নেই। আমার মতো পাপিষ্ঠকে ক্ষমা করে দিলেও আপনার কোনো কৈফিয়ত দিতে হবে না। আপনি তো সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান! পরোয়াহীন!’
.
অথবা, এভাবে বলতে পারেন, ‘হে আমার রব! সবাই যখন ঘুমে/নিজ কাজে ব্যস্ত, তখন আমি—আপনার এক গুনাহগার দুর্বল বান্দা—কেবলই আপনার ভয়ে, আপনার প্রতি ভালোবাসায় আরামের শয্যা ত্যাগ করে, সকল ব্যস্ততা ফেলে আপনার কাছে চলে এসেছি। আমাকে আপনি শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিয়েন না। আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিলে আমি কোথায় যাব? কার কাছে যাব?’
.
(৬) কয়েকটি পরিচিত আবেগঘন দু‘আ অর্থসহ শিখে নিন। আমরা #মহান_রবের_আশ্রয়ে দু‘আ সিরিজে সরাসরি কুরআন ও সহিহ হাদিস থেকে গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি দু‘আ শব্দে শব্দে অর্থসহ উপস্থাপন করেছি (আমাদের তাসবিহ পেইজে)। সেগুলো থেকে আপনার চাহিদামত কিছু দু‘আ শিখে নিতে পারেন। কমেন্টে সিরিজটির লিংক পাবেন।
.
(৭) দু‘আর মধ্যে বিশেষভাবে মৃত্যুর সময়ের কঠিন মুহূর্তটি স্মরণ করুন (যদি তখন কালিমা নসিব না হয়, তখন কী অবস্থা হবে! কিংবা যদি মৃত্যুকালীন ফিতনায় পড়তে হয়, তবে তো ধ্বংস অনিবার্য!) এজন্য কেঁদেকেটে দু‘আ করবেন; ঈমানি মৃত্যু নসিবের জন্য ফরিয়াদ জানাবেন। এছাড়া কবরের প্রশ্নোত্তর-পর্ব, কবরের একাকী জীবন, কবরে দুই পাশ থেকে আসা ভয়ংকর চাপ, হাশরের মাঠে মাত্র কয়েক মাইল দূরে মাথার উপর সূর্যের প্রচণ্ড তাপ, জাহান্নামের ভয়াবহ গর্জন—এই দৃশ্যগুলো কল্পনা করে করে দু‘আ করুন।
.
একটি দুর্বল হাদিসে এসেছে, ‘কান্না না আসলে কান্নার ভান করো।’ এটা বেশ ভালো ব্যাপার। যেভাবে সম্ভব কান্না করতে চেষ্টা করুন। অভ্যস্ত হয়ে গেলে মাঝেমধ্যে দেখবেন—দু‘আয় কখনো আবেগী হয়ে যাচ্ছেন! শিশুর মতো ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছেন! বুক ফেটে যাচ্ছে! ঐ সময়ের মানসিক প্রশান্তির অনুভূতিটা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। তখন আল্লাহকে খুব বেশি অনুভব (feel) করা যায়। যারা দু‘আয় কাঁদতে পারেন না, তারা আল্লাহর কাছে কাঁদার তাওফিক চেয়ে দু‘আ করুন। তবে, মূল বিষয় হলো হৃদয়কে বিগলিত করে দেওয়া। এদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। কারও যদি শত চেষ্টার পরও কান্না না আসে, কিন্তু হৃদয় বিগলিত হয়, আল্লাহর ভয়ে প্রকম্পিত হয়, তবে ইনশাআল্লাহ্ এটাই যথেষ্ট। চোখ দিয়ে পানি পড়া জরুরি নয়।
.
হয়তো আগামী পর্বে সিরিজটি সমাপ্ত হবে। আল্লাহ তা‘আলাই সবকিছুর তাওফিকদাতা।
.

---------------------------------

 

#সার্থক_মুনাজাত (একাদশ তথা শেষ পর্ব) : একটি পূর্ণাঙ্গ দু‘আর নমুনা (শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত)

যেভাবে দু‘আ করলে কবুল হবে, ইনশাআল্লাহ
(দু‘আর একটি নমুনা: শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত)
▬▬▬▬▬▬▬❖▬▬▬▬▬▬▬
এক. দু‘আর জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন। সব রকমের ব্যস্ততা, কোলাহল ও চিন্তা ঝেড়ে একটু নিভৃত স্থান ও সময় বেছে নিন।
.
দুই. প্রথমেই ভালোভাবে অজু করুন। এরপর কিছু সময় বসে বিশ্রাম নিন। মনকে স্থির করার জন্য কিছু সময় যিকর বা তিলাওয়াত করতে পারেন। আপনার প্রতি আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামত, বিপরীতে আপনার সীমাহীন অবাধ্যতা, আল্লাহর মহান শক্তিমত্তা এবং তাঁর সৃষ্টি নিয়ে ভাবতে পারেন।
.
তিন. এবার আপনার দু‘আ করার সময়। প্রথমেই কিবলার দিকে মুখ করে নামাজের বৈঠকের মত করে বসুন। এরপর বুক বারবর হাত তুলুন। মনোযোগ ঠিক রাখতে দৃষ্টি রাখুন হাতের দিকেই। তবে, সামনে তাকাতে সমস্যা নেই, যদি মনোযোগ ঠিক থাকে।
.
চার. প্রথমেই আল্লাহর গুণ ও প্রশংসাসূচক কোনো বাক্য এবং নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরুদ পড়ুন। এরপর নিজের যত যা বলার বলুন। দু‘আ শেষও করবেন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসাসূচক যেকোনো বাক্য দিয়ে, এরপর নবিজির উপর দরুদ পড়ে।
.
❑ আল্লাহর প্রশংসাসূচক কিছু বাক্য:
(বাক্যগুলো কুরআন-হাদিস থেকে নেওয়া)
.
★ سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ
সুব‘হা-নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বি‘হামদিক (হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র; প্রশংসা আপনারই)।
.
★ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا
আল্লা-হুম্মা রব্বানা লাকাল ‘হামদ, ‘হামদান কাসি-রা (হে আল্লাহ—আমাদের রব! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা; অধিক প্রশংসা)।
.
★ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
আল‘হামদুলিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামি-ন (সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহর জন্য, যিনি জগৎসমূহের রব—প্রতিপালক)।
.
❑ সহিহ হাদিসে বর্ণিত কিছু দরুদের বাক্য:
সর্বোত্তম দরুদ হলো, দরুদে ইবারাহিম, যা আমরা নামাজে পড়ি। আরও কিছু দরুদ:
.
★ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ
আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া ‘আলা আ-লি মু‘হাম্মাদ (হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ এবং মুহাম্মাদের পরিবারের উপর রহমত বর্ষণ করুন)।
.
★ صَلَّى اللّٰهُ عَلَى النَّبِيِّ مُحَمَّدٍ
সল্লাল্লা-হু ‘আলান নাবিয়্যি মু‘হাম্মাদ (নবি মুহাম্মাদের উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করুন)।
.
★ اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ، وَعَلٰى آلِ مُحَمَّدٍ
আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিয়্যিল উম্মিয়্যি ওয়া ‘আলা আ-লি মু‘হাম্মাদ (হে আল্লাহ! আপনি উম্মি নবি মুহাম্মাদ ও মুহাম্মাদের পরিবারের উপর রহমত বর্ষণ করুন)।
.
এবার হুবহু দু‘আর নমুনা উপস্থাপন করা হচ্ছে, ইনশাআল্লাহ্। হাত উঠাচ্ছি দু‘আর জন্য—
.
আল‘হামদুলিল্লা-হি রব্বিল ‘আ-লামি-ন। আল্লা-হুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদ, ওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ। (খুবই সংক্ষেপে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ে দু‘আ শুরু করা হলো)
.
প্রথমে নিজের পাপ থেকে মুক্তির দু‘আগুলো পড়তে থাকবো। বিশেষত কুরআন ও সহিহ হাদিসে বর্ণিত দু‘আর বাক্যগুলো পাঠ করবো।
.
সাইয়িদুল ইস্তিগফার, সুরা আলে ইমরানের ১৬ নং আয়াতের দু‘আ ও সুরা আরাফের ২৩ নং আয়াতের দু‘আ—এগুলো দিয়ে নিজের গুনাহের জন্য ক্ষমা চাওয়া যেতে পারে। অর্থের দিক থেকে এগুলো খুবই হৃদয়গ্রাহী। নিজের ভাষাতেও গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইতে কোনো অসুবিধা নেই। পাশাপাশি, নিজের অক্ষমতা ও দুর্বলতা তুলে ধরবো; আল্লাহর মহানত্ব, মহানুভবত্ব বলতে থাকবো।
.
[এরপর অন্যান্য দু‘আ করতে থাকবো। অবশ্য এভাবে সিরিয়াল মেন্টেইন করা জরুরি নয়]
.
❑ বিশেষভাবে যেসব বিষয়ে দু‘আ করবো:
.
◉ কঠিন রোগ-ব্যাধি, মানুষের মুখাপেক্ষী হওয়া ও ঋণ থেকে মুক্তির জন্য দু‘আ করবো;
◉ হালাল রুজি, উত্তম কর্মসংস্থান ও অল্পেতুষ্টির তাওফিক লাভের জন্য দু‘আ করবো;
◉ আমার দ্বারা যেন বান্দার হক নষ্ট না হয় এবং মানুষের সাথে সম্পর্ক খারাপ না হয়, সেজন্য আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবো।
◉ নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহর জন্য সাহায্য ও কল্যাণ কামনা করবো এবং মুসলিমদের পক্ষে কাজ করা সেসব ভাইদের জন্য দু‘আ করবো।
◉ নিজের সকল কাজে সফলতা ও দ্বীনের উপর অটল থাকার জন্য দু‘আ করবো;
◉ হাশরে হিসাব সহজ হওয়ার জন্য দু‘আ করবো, যাতে আল্লাহ্ বিনা হিসাবে জান্নাত দেন এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা করেন।
◉ সঠিকভাবে আল্লাহর ইবাদত করা এবং সকল ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য দু‘আ করবো।
◉ সব রকমের ফিতনা থেকে আশ্রয় চাইবো।
◉ সুন্দর ও ঈমানি মৃত্যুর জন্য দু‘আ করবো;
◉ মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন ও মৃত সকল মুসলিমের জন্য মাগফিরাত কামনা করবো;
◉ জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে আল্লাহর পক্ষ থেকে বরকত ও সাহায্য কামনা করবো; দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা প্রার্থানা করবো।
◉ আল্লাহর প্রতিটি সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা এবং সর্বাবস্থায় সবর করার তাওফিক চাইবো। সর্বাবস্থায় মনের প্রশান্তি অটূট থাকার জন্য আল্লাহর সাহায্য কামনা করবো।
◉ কোনো নিয়ামত যেন জীবন থেকে চলে না যায়, সেজন্য দু‘আ করবো।
◉ নেক আমলের তাওফিক লাভ, নেক আমলের প্রতি ভালোবাসা তৈরি, গুনাহর প্রতি মনের ঘৃণা সৃষ্টি এবং গুনাহ থেকে যাতে বেঁচে থাকতে পারি, তার জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবো; বিশেষ করে নিজের অজান্তেও যেন শির্কের গুনাহ না হয়, সেজন্য আল্লাহর আশ্রয় চাইবো।
◉ নিজে জালিম হওয়া এবং জুলুমের শিকার হওয়া থেকে বাঁচার জন্য দু‘আ করবো; দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছিত হওয়া থেকে হেফাজতের জন্য দু‘আ করবো।
◉ এছাড়াও নিজের যা যা প্রয়োজন সব বলবো। একদম মনের মতো করে বলবো।
.
[দৃষ্টি আকর্ষণ: আপনারাই বলুন, উপরের এই টপিকগুলো দিয়ে দু‘আ করলে আর কিছু চাওয়া বাকি থাকে? এই প্রত্যেকটি টপিকে কুরআন এবং সহিহ হাদিসে চমৎকার দু‘আর বাক্য আছে। সেগুলো কষ্ট করে শিখে নিন। কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত দু‘আর মধ্যে বরকত বেশি থাকে। কমেন্টে লিংক দেবো—এমন গুরুত্বপূর্ণ ৩০ টি দু‘আর; শব্দে শব্দে অর্থ ও উচ্চারণসহ শিখতে পারবেন]
.....
পুরো দু‘আর সময়টাতে একটু পরপর এই বাক্যগুলো অর্থের দিকে লক্ষ রেখে বলবো—
.
★ يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ
ইয়া ‘হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ু-ম বিরা‘হমাতিকা আস্তাগি-স (হে চিরঞ্জীব! হে চিরস্থায়ী! আপনার রহমতের উসিলায় সাহায্য প্রার্থনা করি)
.
★ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
লা ইলা-হা ইল্লা আনতা সুব‘হা-নাকা ইন্নি কুনতু মিনায যোয়া-লিমি-ন (হে আল্লাহ! আপনি ছাড়া কোনো প্রকৃত উপাস্য নেই; আপনি পবিত্র; নিশ্চয়ই আমি জালিমদের অন্তর্ভূক্ত)
.
★ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ
লা ‘হাউলা ওয়ালা ক্বুওওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ (আল্লাহ ছাড়া কোনো সামর্থ্য ও শক্তি নেই)
.
★ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَام
ইয়া যাল জালা-লি ওয়াল ইকরা-ম (হে মহত্ত্ব ও মহানুভবতার অধিকারী)
.
এগুলোর পাশাপাশি আল্লাহর গুণবাচক নামগুলো ধরেও ডাকতে থাকবো অনবরত।যেমন: ইয়া গাফফার يَا غَفَّار (হে পরম ক্ষমাশীল), ইয়া রহমান يَا رَحْمٰن (হে দয়াময়), ইয়া সালাম يَا سَلَام (হে শান্তিময়) ইত্যাদি। নিজেদের চাওয়ার বাক্যগুলোতে আরও যোগ করতে পারি: ইয়া মুজি-বাদ দা‘ওয়া-ত يَا مُجِيْبَ الدَّعْوَات (হে আহ্বানে সাড়াদানকারী), ইয়া শা-ফিয়াল আমরা-দ্ব يَا شَافِيَ الْأَمْرَاض (হে অসুস্থতার আরোগ্যদাতা), ইয়া ক্বা-দ্বিয়াল ‘হা-জা-ত يَا قَاضِيَ الْحَاجَات (হে প্রয়োজন পূরণকারী) ইত্যাদি। অবশ্যই অর্থের দিকে খেয়াল রেখে কাকুতিমিনতি করে বলবো। এতে দু‘আ কবুলের সম্ভাবনা বাড়বে।
.
পাঁচ.
দু‘আয় সব বলা শেষ। এবার শেষ করতে হবে। আবারো আল্লাহর প্রশংসাসূচক যেকোনো বাক্য বলবো। এরপর নবিজির উপর যেকোনো একটি দরুদ পড়বো। ব্যস, আমার দু‘আ করা শেষ হলো।
.
দু‘আ শেষে মুখমণ্ডলে হাত মোছার ব্যাপারে যেসব হাদিস এসেছে, সেগুলো সহিহ হওয়ার ব্যাপারে সকল মুহাদ্দিস একমত নন। তবে অধিকাংশ আলিম এটি বৈধ বলেছেন। আমার পরামর্শ হলো, মাঝেমধ্যে মুছতে পারেন, আবার মাঝেমধ্যে মুছবেন না।
.
[আমরা দু‘আর মাসনুন (হাদিসসম্মত) পদ্ধতি এবং দু‘আর আদবগুলো লক্ষ রেখে পুরো দু‘আর চিত্রটি তুলে ধরেছি। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে, তবুও চেষ্টা করেছি এমনভাবে দু‘আটি সাজানোর, যেটি কুরআন ও সুন্নাহর বর্ণনার কাছাকাছি, ইনশাআল্লাহ]
.
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা ১১ টি পর্বে মুনাজাত সিরিজটি শেষ করতে পেরেছি।
.

.

©Tasbeeh
Page link- https://www.facebook.com/TasbeehZikr/

.

©Nusus
Page link- https://www.facebook.com/FromNusus

.

>> রেফারেন্স সহ দোয়া কবুলের ২৮ টি স্থান বা ক্ষেত্র বা পাত্র, বিভিন্ন হাদিস দ্বারা জানা যায় সেইগুলি হলোঃ--
=====================
১) অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য দুয়া (কোন মুসলিমের পিছনে বা অগোচরে অন্য মুসলিমের দুয়া)।(মুসলিম ৬৮২২)
২) জালিমের বিরুদ্ধে মাজলুম ব্যক্তির দুয়া।(জামে আত তিরমীযি ৩৪৪৮)
৩) বাবা তার সন্তানের জন্য দুয়া (নেক দুয়া বা বদ দুয়া)
((তিরমীযি ৩৪৪৮))
৪) নেককার সন্তানের দুয়া (তার বাবা মায়ের জন্য তাদের মৃত্যুর পর)( আবু দাউদ ২৮৮০)
৬) আরাফাতের ময়দানে দুয়া।(তিরমীযি ৩৫৮৫)
৬) বিপদগ্রস্ত অসহায় ব্যক্তির দুআ (সূরা নামাল ৬২,৫৭ ও সূরা ইসরার ৬৭ নাম্বারর আয়াত)
৭) সেজদায় দুয়া।(নাসায়ী ১০৪৫)
৮) হজ্জের স্থানসমূহে দুয়া (যেমন: আরাফা, মুজদালিফা, মিনা...)(ইবনে মাজাহ২৮৯২)
০৯) হাজ্জীর দুয়া (হজ্জ করা অবস্থায়)।(ইবনে মাজাহ২৮৯৩)
১০) উমরাহকারীর দুয়া (উমরাহ করার সময়)।(নাসায়ী ২৬২৫
১১) আযানের পর দুয়া।(তিরমীযি ২১০)
১২) যুদ্ধ চলাকালীন সময় দুয়া।(আবু দাউদ২৫৪০)
১৩) বৃষ্টি বর্ষণকালে দুয়া।(আবু দাউদ ২৫৪০)
১৪) শেষ রাতের দুয়া,তাহাজ্জুদ(বুখারী ১১৪৫)
১৫) জুম্মার দিনে দুয়া,,আছরের শেষ দিকে তালাশ করার জন্য নির্দেশ আছে।(নাসায়ী১৩৮৯)
১৬) লাইলাতুল কদর এর দুয়া।(বুখারী ও মুসলিম)
১৭) আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় দুয়া।(আহমাদ ১৪৬৮৯)মুসলিম ৬৬৮
১৮)ফরয স্বলাতের শেষ অংশে দুয়া( সালাম ফিরানোর আগে)।(রিয়াদুস স্বালেহিন ১৫০৮,তিরমিযি ৩৪৯৯)
১৯) মুসাফির ব্যক্তির দুয়া (সফর অবস্থায়)।(তিরমী
যি ৩৪৪৮)
২০) রোজাদার ব্যক্তির দুয়া (রোজা অবস্থায়)।(ইবনে মাজাহ ১৭৫২)
২১) ন্যায়পরায়ণ শাসকের দুয়া।(তিরমীযি ২৫২৬)
২৩) দুয়া ইউনুস পাঠ করে দুয়া করলে কবুল হয়।(তিরমিযি৩৫০৫)
২৪) ইসমে আযম পড়ে দুয়া করলে কবুল হয়।(ইবনে মাজাহ ৩৮৫৬)
২৫) বিপদে পতিত হলে যে দুয়া পড়া হয়(ইন্না লিল্লা-হি......রাজিউন)
এবং
(আল্লা-হুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া ওয়াখলিফলী খইরাম মিনহা...) তখন দুয়া কবুল হয়।(মিশকাতুল মাসীবাহ ১৬১৮,মুসলিম ৯১৮)
২৬) জমজমের পানি পান করার পর দুয়া।(ইবনে মাজাহ ৩০৬২,আহমদ ৩/৩৫৭)
২৭) নির্যাতিতের দুয়া (তিরমিযি৩৪৪৮)
২৮) দু হাত তুলে দোয়া করা,আল্লাহ বান্দার খালি হাত ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন(আবু দাউদ ১৪৮৮)

-Saheeh Amal page

-------------------------------------------

 

#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প

https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo

.

>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"

https://justpaste.it/5gol5

.

>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক

https://justpaste.it/facebook_page_grp_link

.

>> র‍্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট

https://justpaste.it/76iwz

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের pdf লিংক (৪০০+ বই)

https://justpaste.it/4ne9o

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.

https://justpaste.it/islamicappvideo

.

>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?

https://justpaste.it/6q4c3

.

>> কুরআন এবং আপনি

https://justpaste.it/5dds8

.

>> কখনও ঝরে যেও না …

https://justpaste.it/3bt22

.

>> ফজরে আমি উঠতে পারি না

https://justpaste.it/6kjl6

.

>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1

.

>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr

.

>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম

https://justpaste.it/7u5es

.

>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়

https://justpaste.it/8dccj

.

>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/6ttuf

.

>> স্বার্থক মুনাজাত

https://justpaste.it/1xf0t

.

>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ

https://justpaste.it/4hhtd

.

>> তাহাজ্জুদ সিরিজ

https://justpaste.it/4ja0n

.

>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/3dxi7

.

>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)

https://justpaste.it/7056k

.

>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ

https://justpaste.it/7fh32

.

>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ

https://justpaste.it/9icuq

.

>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল

https://justpaste.it/8gmtk

.

>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf

.

>> দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প

https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo

.

>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

https://justpaste.it/8vnly

.

>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir

.

>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh

.
>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5

.
>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1

.

>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j

.

>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে। সবগুলো বিষয়ের লিংক এক জায়গায় রাখা হয়েছে। এই লিংকটা শেয়ার করতে পারেন। 
https://justpaste.it/48f6m