JustPaste.it

দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল

 

> দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন ও কঠিন বিপদাপদ থেকে মুক্তির ৭ উপায়
https:// www.youtube.com/watch?v=kLG49PbpdmA
.
দুশ্চিন্তা, মানসিক অস্থিরতা আমাদের জীবনের এক অনাকাঙ্ক্ষিত অংশ। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব হতে পারে আবার রহমতও হতে পারে। শাইখুল ইসলাম তাকী উসমানী বলেন, যদি দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হওয়ার পর তোমার গুনাহ বেড়ে যায়, আমল কমে যায় তাহলে এটা একথার আলামত যে, পেরেশানিটা তোমার ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব। পক্ষান্তরে যদি তোমার আমল বেড়ে যায়, গুনাহ কমে যায় তাহলে পেরেশানিটা হবে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত। মূলত এর মধ্যমে তিনি তোমার মর্যাদা বাড়াবেন কিংবা গুনাহ মাফ করে দিবেন।
তাই এই পেরেশানি যেন আযাবের কারণ না হয়; বরং রহমতের উসিলা হয়; এ লক্ষে এটি দূর করার দশটি উপায় কোরআন-হাদীস থেকে বলে দিচ্ছি–
.
❒ এক:
● তাকদিরের উপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখুন। কেননা, যে ব্যক্তি বিশ্বাস করে যে, সকল বিষয় লিপিবদ্ধ হয়ে গিয়েছে, আল্লাহ না চাইলে কেউ কারো কোন ক্ষতি করতে পারে না; সে ব্যক্তিকে দুঃশ্চিন্তা কাবু করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ উম্মতকে এই শিক্ষাই দিয়েছেন। তিনি বলেন,
জেনে রাখ, সমস্ত মানুষ যদি তোমার কোন উপকার করতে চায় তবে আল্লাহ্ তোমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, তা ব্যতীত আর কোন উপকার করতে পারবে না। আর যদি সমস্ত মানুষ তোমার কোন অনিষ্ট করতে চায় তবে আল্লাহ্ তোমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তা ব্যতীত আর কোন অনিষ্ট করতে পারবে না। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং পৃষ্ঠা শুকিয়ে গেছে। (তিরমিযি ২৫১৬)
.
● অপর হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
মনে রেখো, যা তুমি পেলে না, তা তোমার পাবার ছিল না, আর যা তুমি পেলে তা তুমি না পেয়ে থাকতে না। আরো জেনে রাখো, ধৈর্য্য ধারণের ফলে (আল্লাহর) সাহায্য লাভ করা যায়। কষ্টের পর স্বাচ্ছন্দ আসে। কঠিন অবস্থার পর স্বচ্ছলতা আসে। (ইমাম নববই-কৃত আলআরবাঈন-১৯)
.
❒ দুই:
● চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দিন। দুনিয়ার মুসিবত নয়; বরং সবচে’ বড় মুসিবত তো হল আখেরাতের মুসিবত। সুতরাং চিন্তার ‘কেন্দ্রবিন্দু’ দুনিয়াকে না বানিয়ে আখেরাতকে বানান। এখন থেকে এভাবে চিন্তা করুন এবং এটাই যেন হয় মূল চিন্তা যে, আমি আখেরাতে আল্লাহর সামনে তাঁর সন্তুষ্টি নিয়ে দাঁড়াতে পারব তো! রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
যে ব্যাক্তি তার সমস্ত চিন্তাকে একই চিন্তায় অর্থাৎ আখিরাতের চিন্তায় কেন্দ্রীভূত করেছে, আল্লাহ তার দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট। অপর দিকে যে ব্যাক্তি যাবতীয় পার্থিব চিন্তায় নিমগ্ন থাকবে সে যে কোন উন্মুক্ত মাঠে ধ্বংস হোক, তাতে আল্লাহ্‌র কিছু আসে যায় না। (ইবনু মাজাহ ২৫৭)
.
❒ তিন:
● আপনার থেকেও যার অবস্থা আরো করুণ ও বেগতিক; তার দিকে তাকিয়ে উপদেশ গ্রহণ করুন। ভাবুন, আল্লাহ আপনাকে তার থেকেও ভাল রেখেছেন। বর্তমান মনোবিজ্ঞানীরাও ডিপ্রেশনের চিকিৎসা হিসেবে রোগীকে এভাবে চিন্তা করার উপদেশ দিয়ে থাকেন। কেউ যদি ঋণগ্রস্থ হয়, বলা হয়, ‘তোমার চাইতে অবস্থা যার আরও খারাপ তার দিকে তাকাও। তুমি অসুস্থ; তোমার চেয়েও অসুস্থ আছে। তুমি অসহায়; তোমার চেয়েও অসহায় আছে।’ এভাবে চিন্তা করুন, দেখবেন, অস্থিরতা লাঘব হবে।
 
আমাদের নবীজীও দেড় হাজার বছর আগেই চিকিৎসার এ পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলেন। হাদিসে এসেছে, খাব্বাব ইবনু আরাত্ত্ রাযি. বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল ﷺ-এর কাছে অভিযোগ করলাম এমতাবস্থায় যে, তিনি কা‘বা ঘরের ছায়ায় একটি চাদরে ঠেস দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম যে, ‘আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দো‘আ করবেন না?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘তোমাদের জানা উচিত যে, তোমাদের পূর্বেকার মু’মিন লোকেদের এই অবস্থা ছিল যে, একটি মানুষকে ধরে আনা হত, তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার মধ্যে পুঁতে রাখা হত। অতঃপর তার মাথার উপর করাত চালিয়ে তাকে দু’খণ্ড করে দেওয়া হত এবং দেহের গোশতের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনী চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হত। কিন্তু এই কঠোর পরীক্ষা তাকে তার দ্বীন থেকে ফেরাতে পারত না। (বুখারী ৩৬১৬)
.
❒ চার:
● আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন এবং তাঁর প্রতি এ সুধারণা রাখুন যে, তিনি আপনাকে আপনার দুরাবস্থা থেকে নাজাত দিবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ (তালাক ৩)
.
● রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেন,
"আমি সেইরূপই, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।" (বুখারী ৬৯০১)
.
❒ পাঁচ:
● ধৈর্য্যধারণ করুন। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
জেনে রাখো- ধৈর্য্য ধারণের ফলে (আল্লাহর) সাহায্য লাভ করা যায়। কষ্টের পর স্বাচ্ছন্দ আসে। কঠিন অবস্থার পর স্বচ্ছলতা আসে। (ইমাম নববই-কৃত আলআরবাঈন-১৯)
.
❒ ছয়:
নফল সালাত পড়ুন। হাদিসে এসেছে,
.
● রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন দুঃশ্চিন্তায় পড়তেন, নামাযে মগ্ন হতেন।
(জামিউল বায়ান ৭৭৯)
 
আল্লাহ তাআলা বলেন,
● তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। (সূরা বাকারা ৪৫)
.
❒ সাত:
অধিকহারে ইস্তেগফার করুন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
● যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুঃশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। (আবূদাউদ ১৫২০)
.
❒ আট:
● অধিকহারে দরূদ পড়ুন। হাদিসে এসেছে, উবাই ইবন কা’ব রাযি. বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি আপনার উপর অধিক হারে দরূদ পাঠ করে থাকি। আমার সময়ের কতটুকু আপনার প্রতি দরূদ পাঠে ব্যয় করব?
 
রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। আমি বললাম, এক চতুর্থাংশ সময়? তিনি বললেন, তোমার ইচ্ছা। কিন্তু যদি আরো বাড়াও তবে ভাল। আমি বললাম, অর্ধেক সময়? তিনি বললেন, তোমার যা ইচ্ছা; তবে আরো বৃদ্ধি করলে তা-ও ভাল। আমি বললাম, দুই তৃতীয়াংশ সময়? তিনি বললেন, তোমার ইচ্ছা; তবে আরো বাড়ালে তাও ভাল। আমি বললাম, আমার সবটুকু সময় আপনার উপর দরূদ পাঠে লাগাব? তিনি বললেন,
 
إِذًا تُكْفَى هَمَّكَ وَيُغْفَرُ لَكَ ذَنْبُكَ
 
তাহলে তো তোমার চিন্তামুক্তির জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে আর তোমার গুনাহ মাফ করা হবে। (তিরমিযি ২৪৫৭)
 
❒ নয়:
● যে বিষয় নিয়ে আপনার দুঃশ্চিন্তা; সে বিষয়ে কোন আমলধারী নির্ভরযোগ্য ভাল আলেমের সঙ্গে পরামর্শ করুন। যেমন উপরে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, খাব্বাব ইবনু আরাত্ত্ রাযি. বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল ﷺ-এর কাছে অভিযোগ করলাম…। তাবরানির (৬৬২৭)
.
● এক বর্ণনায় এসেছে,
যে ব্যক্তি পরামর্শ কামনা করে সে অকৃতকার্য হয় না।
 
❒ দশ:
দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক অস্থিরতা থেকে নাজাতের উদ্দেশ্যে হাদিসে বেশ কিছু দোয়া শিক্ষা দেয়া হয়েছে। ওই দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ুন। যেমন,
১। আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, নবী রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যদি কেউ কখনো দুঃশ্চিন্তা বা বেদনায় আক্রান্ত হয়ে এভাবে বলে,
 
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ عَبْدُكَ، ابْنُ عَبْدِكَ، ابْنُ أَمَتِكَ، نَاصِيَتِيْ بِيَدِكَ، مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ، عَدْلٌ فِيَّ قَضَاؤُكَ، أَسْأَلُكَ بِكُــــلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ، سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ، أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِيْ كِتَابِكَ، أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَداً مِنْ خَلْقِكَ، أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِيْ عِلْمِ الغَيْبِ عِنْدَكَ، أَنْ تَجْعَلَ القُرْآنَ رَبِيْعَ قَلْبِي، وَنُوْرَ صَدْرِي، وَجَلاَءَ حُزْنِي، وَذَهَابَ هَمِّيْ
 
হে আল্লাহ! আমি আপনার বান্দা, আপনারই এক বান্দার পুত্র এবং আপনার এক বাঁদীর পুত্র। আমার কপাল (নিয়ন্ত্রণ) আপনার হাতে; আমার উপর আপনার নির্দেশ কার্যকর; আমার ব্যাপারে আপনার ফয়সালা ন্যায়পূর্ণ। আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি আপনার প্রতিটি নামের উসীলায়; যে নাম আপনি নিজের জন্য নিজে রেখেছেন অথবা আপনি আপনার কিতাবে নাযিল করেছেন অথবা আপনার সৃষ্টজীবের কাউকেও শিখিয়েছেন অথবা নিজ গায়েবী জ্ঞানে নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন—আপনি কুরআনকে বানিয়ে দিন আমার হৃদয়ের প্রশান্তি, আমার বক্ষের জ্যোতি, আমার দুঃখের অপসারণকারী এবং দুশ্চিন্তা দূরকারী।
 
আল্লা-হুম্মা ইন্নী ‘আবদুকা ইবনু ‘আবদিকা ইবনু আমাতিকা, না-সিয়াতী বিয়াদিকা, মা-দ্বিন ফিয়্যা হুকমুকা, ‘আদলুন ফিয়্যা কাদ্বা-য়ুকা, আসআলুকা বিকুল্লি ইসমিন্ হুয়া লাকা সাম্মাইতা বিহি নাফসাকা, আও আনযালতাহু ফী কিতা-বিকা আও ‘আল্লামতাহু আহাদাম্-মিন খালক্বিকা আও ইস্তা’সারতা বিহী ফী ‘ইলমিল গাইবি ‘ইনদাকা, আন্ তাজ‘আলাল কুরআ-না রবী‘আ ক্বালবী, ওয়া নূরা সাদ্‌রী, ওয়া জালা’আ হুযনী ওয়া যাহা-বা হাম্মী
 
আহমাদ ১/৩৯১, নং ৩৭১২। আর শাইখ আলবানী তাঁর সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ গ্রন্থে ১/৩৩৭ একে সহীহ বলেছেন।
 
২। ইমাম আবু দাউদ ‘সুনান’ গ্রন্থে (৫০৯০) ও ইমাম আহমাদ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (২৭৮৯৮) আবু বাকরা রাযি. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, “বিপদগ্রস্তের দোয়া হচ্ছে,
 
اللّٰهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُو، فَلاَ تَكِلْنِيْ إِلَى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ، وَأَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ
 
হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমতেরই আশা করি। তাই আপনি এক নিমেষের জন্যও আমাকে আমার নিজের কাছে সোপর্দ করবেন না। আপনি আমার সার্বিক বিষয়াদি সংশোধন করে দিন। আপনি ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই।
 
আল্লা-হুম্মা রহ্‌মাতাকা আরজু ফালা তাকিলনী ইলা নাফসী ত্বারফাতা ‘আইন, ওয়া আসলিহ্ লী শা’নি কুল্লাহু, লা ইলা-হা ইল্লা আনতা
 
আবূ দাউদ, ৪/৩২৪, নং ৫০৯০; আহমাদ ৫/৪২, নং ২০৪৩০। আর শাইখ আলবানী সহীহ আবি দাউদ গ্রন্থে ৩/৯৫৯ এটাকে হাসান হাদীস বলেছেন।
 
৩। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি, কোন বিপদগ্রস্ত লোক তা পাঠ করলে আল্লাহ্ তা‘আলা তার সেই বিপদ দূর করে দিবেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস আ-এর এর দু’আ। দোয়াটি এই,
 
لا إِلَهَ إِلا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
 
(অর্থ-হে আল্লাহ! তুমি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালেমদের অন্তর্ভুক্ত।) (তিরমিযী ৩৫০৫)
 
৪। আবু সাঈদ খুদরী রাযি. হতে এক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ আবু উমামা রাযি. কে বলেছেন- আমি কি তোমাকে এমন একটি বাক্য শিক্ষা দিব না, তুমি যদি তা পাঠ কর, তাহলে আল্লাহ্ তা‘আলা তোমার দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন এবং তোমার ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করে দিবেন? বর্ণনাকারী বলেন- আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে তা শিক্ষা দিন। তিনি বললেন, সকাল ও বিকালে তুমি পাঠ করবে-
 
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
 
হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
 
আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা‘ইদ দ্বাইনে ওয়া গালাবাতির রিজা-লি
 
বুখারী, ৭/১৫৮, নং ২৮৯৩; আরও দেখুন, বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১৭৩; আরও দেখুন যা ৪১.২ নং দুআ এ বর্ণিত হবে।
 
আবু উমামা রাযি. বলেন, আমি এই দু’আটি পাঠ করলাম। এতে আল্লাহ্ তা‘আলা আমার যাবতীয় দুশ্চিন্তা দূর করে দিলেন এবং ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিলেন।
(সংগৃহীত)
-----------------------------------

 

১. ভালো-মন্দ তাকদিরের ওপর পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখুন। কেননা তাকদিরের ওপর পূর্ণ আস্থাবান ব্যক্তিকে দুশ্চিন্তা কাবু করতে পারে না। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ তোমাদের ক্লেশ দিলে তিনি ছাড়া তা মোচনকারী আর কেউ নেই। আর আল্লাহ যদি তোমার মঙ্গল চান, তাহলে তাঁর অনুগ্রহ রদ করার কেউ নেই।’ (সুরা : ইউনুস, আয়াত : ১০৭)

 

২. দুনিয়ার বিপদের তুলনায় পরকালের বিপদের কথা স্মরণ করুন। দুনিয়ার বিপদ-আপদ আপনার জন্য পরকালের বিপদ থেকে রেহাই পাওয়ার কারণ হতে পারে। আর পরকালের বিভীষিকাময় পরিস্থিতির তুলনায় দুনিয়ার বিপদ-আপদ খুবই নগণ্য। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘যেদিন তারা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন তাদের মনে হবে, যেন তারা পৃথিবীতে মাত্র এক সন্ধ্যা অথবা এক প্রভাত অবস্থান করেছে।’ (সুরা : নাজিআত, আয়াত : ৪৬)

 

৩. চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দিন। নিজের চেয়ে নিচের মানুষদের অবস্থার দিকে তাকান। ভাবুন, আল্লাহ আপনাকে তার থেকে ভালো রেখেছেন। মনোবিজ্ঞানীরাও ডিপ্রেশনের চিকিৎসা হিসেবে রোগীকে এভাবে চিন্তা করার উপদেশ দিয়ে থাকেন। মহানবী (সা.) দেড় হাজার বছর আগেই চিকিৎসার এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছিলেন। হাদিসে এসেছে, খাব্বাব (রা.) বলেন, আমরা আল্লাহর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে অভিযোগ করলাম এ অবস্থায় যে তিনি কাবাঘরের ছায়ায় একটি চাদরে ঠেস দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আমরা বললাম, আপনি কি আমাদের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন না? আপনি কি আমাদের জন্য দোয়া করবেন না? জবাবে তিনি বলেন, ‘তোমাদের জানা উচিত, তোমাদের আগের মুমিন লোকেদের এই অবস্থা ছিল যে একজন মানুষকে ধরে আনা হতো, তার জন্য গর্ত খুঁড়ে তাকে তার মধ্যে পুঁতে রাখা হতো। অতঃপর তার মাথার ওপর করাত চালিয়ে তাকে দুই খণ্ড করে দেওয়া হতো এবং দেহের গোশতের নিচে হাড় পর্যন্ত লোহার চিরুনি চালিয়ে শাস্তি দেওয়া হতো। কিন্তু এই কঠোর পরীক্ষা তাকে তার দ্বিন থেকে ফেরাতে পারত না। (বুখারি, হাদিস : ৩৬১৬)

 

৪. আল্লাহর ব্যাপারে সুধারণা পোষণ করুন। তাঁর ওপর ভরসা রাখুন। আশা রাখুন যে তিনি আপনাকে আপনার দুরবস্থা থেকে নাজাত দেবেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৩)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন, ‘আমি সেরূপ, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৯০১)
৫. ধৈর্য ধারণ করুন। বিশ্বাস করুন যে কষ্টের পর স্বাচ্ছন্দ্য আসে। কঠিন অবস্থার পর সচ্ছলতা আসে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘...নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৩)

 

৬. সালাতুল হাজাত পড়ুন। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন দুশ্চিন্তায় পড়তেন, নামাজে মগ্ন হতেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৩)

 

৭. বেশি বেশি ইস্তেগফার করুন। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, তিনি তো মহাক্ষমাশীল। (ফলে) তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন, তোমাদের সমৃদ্ধ করবেন ধনসম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ৭১)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২০)

 

৮. অধিক হারে দরুদ পড়ুন। হাদিসে এসেছে, উবাই ইবন কাব (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, আমি আপনার ওপর অধিক হারে দরুদ পাঠ করে থাকি। আমার সময়ের কতটুকু আপনার প্রতি দরুদ পাঠে ব্যয় করব? রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার যতটুকু ইচ্ছা। আমি বললাম, এক-চতুর্থাংশ সময়? তিনি বলেন, তোমার ইচ্ছা। কিন্তু যদি আরো বাড়াও তবে ভালো। আমি বললাম, অর্ধেক সময়? তিনি বলেন, তোমার যা ইচ্ছা; তবে আরো বৃদ্ধি করলে তা-ও ভালো। আমি বললাম, দুই-তৃতীয়াংশ সময়? তিনি বলেন, তোমার ইচ্ছা; তবে আরো বাড়ালে তা-ও ভালো। আমি বললাম, আমার সবটুকু সময় আপনার ওপর দরুদ পাঠে লাগাব? তিনি বলেন, তাহলে তো তোমার চিন্তামুক্তির জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে আর তোমার গুনাহ মাফ করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৫৭)

 

৯. সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। নির্ভরযোগ্য আলেমের সঙ্গে অভিমত গ্রহণ করুন। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি পরামর্শ কামনা করে সে অকৃতকার্য হয় না।’ (ইবনে হিব্বান-৭৬৮)

 

১০. দুশ্চিন্তা ও মানসিক অস্থিরতা থেকে নাজাতের উদ্দেশ্যে হাদিসে বেশ কিছু দোয়া শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। ওই দোয়াগুলো বেশি বেশি পড়ুন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি, কোনো বিপদগ্রস্ত লোক তা পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা তার সেই বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ.)-এর দোয়া। দোয়াটি হলো—‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বলিমীন।’

 

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি জালিমদের অন্তর্ভুক্ত। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫০৫)
চিন্তা ও পেরেশানির সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন। দোয়াটি হলো—‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা‘য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) চিন্তাযুক্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন। (বুখারি, হাদিস : ২৮৯৩)
মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন-আমিন।

 

সংগৃহীত
------------------------

 

>> হতাশা ও দুশ্চিন্তা নিয়ে কোর’আনের যে সূরায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে

 

হতাশা ও দুশ্চিন্তা নিয়ে কোর’আনের যে সূরায় বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, তার নাম সূরা মা’আরিজ। ৭০ নং সূরা।
.
সূরাটির শুরুতেই হতাশা ও দুশ্চিন্তার কারণগুলো বর্ণিত হয়েছে। হতাশার মূল কারণ হলো অধৈর্য।
.
অনন্ত সময়ের বিবেচনায় আমরা পৃথিবীতে কেবল দুই’এক সেকেন্ড অবস্থান করি। মাঝে মাঝে পৃথিবীর এই দুই’এক সেকেন্ড সময়কে অতিবাহিত করতে গিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। কিন্তু, আখিরাতের অনন্ত সুখের কাছে আমাদের পৃথিবীর এই কষ্ট ক্ষণিকের এবং খুবই সামান্য।
.
যেমন ধরুন, শিশু বাচ্চা জন্ম নেয়ার পর তাদের হাতে-পায়ে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের টিকা দিতে হয়। ইনজেকশনের সাহায্যে এই টিকাগুলো দেয়ার সময়ে শিশুরা অনেক কষ্ট পায়। তাদের আব্বু-আম্মুরাও দুঃখ পায়। কিন্তু, শিশুর ভবিষ্যৎ জীবনের কথা চিন্তা করে, শিশুটি যাতে সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকতে পারে সে কথা ভেবে, বাবা-মা তাদের আদরের শিশুটিকে কষ্ট দিয়ে থাকে। তেমনি পৃথিবীর কষ্ট হলো ক্ষণিকের। আখিরাতের অনন্ত সুখ পাবার জন্যে পৃথিবীতে সবাইকে কিছু না কিছু কষ্ট করতে হয়। আমাদের পার্থিব কষ্টগুলো হলো ভবিষ্যৎ বা অনন্ত জীবনে সুখী হবার টিকা।
.
বিষয়টি সহজে বুঝানোর জন্যে সূরা মা’আরিজে আল্লাহ তায়ালা বলেন –
.
إِنَّ ٱلْإِنسَـٰنَ خُلِقَ هَلُوعًا
.
“নিশ্চয়ই মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে অস্থির-চিত্তরূপে।” [সূরাহ মা’আরিজ, আয়াত : ১৯]
.
এই অস্থিরচিত্ত মনকে স্থির করার জন্যে আল্লাহ তায়ালা বলেন –
.
تَعْرُجُ ٱلْمَلَـٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ إِلَيْهِ فِى يَوْمٍۢ كَانَ مِقْدَارُهُۥ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍۢ . فَٱصْبِرْ صَبْرًۭا جَمِيلًا
.
“ফেরেশতাগণ এবং রূহ আল্লাহ তা’আলার দিকে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর। সুতরাং, তুমি ধৈর্য ধারণ কর, পরম ধৈর্য।” [সূরা মা’আরিজ, আয়াত : ৪- ৫]
.
পৃথিবীতে কষ্ট পেয়ে যেভাবে আমরা হতাশ হই, তা অনন্ত সুখী জীবনের তুলনায় শিশুকে টিকা দেয়ার মতোই। পৃথিবীর এসব কষ্টকে কেউ ধৈর্যের সাথে সহ্য করতে পারলে, তার জীবনে হতাশা বলে আর কিছু থাকে না।
.
এরপর, সূরাটি সামনের দিকে চলতে থাকে। মানুষ কেন হতাশ হয়, কাদের কারণে মানুষ হতাশ হয়, এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যায় সূরা মা’আরিজ।
.
মানুষ সাধারণত ছয়টি জিনিস হারিয়ে ফেললে, অথবা হারিয়ে ফেলার ভয় থাকলে হতাশ হয়ে যায়।
.
● প্রিয়তম-প্রিয়তমা, বা অন্তরঙ্গ বন্ধু-বান্ধবী [৭০/১০]
● সন্তান-সন্ততি [৭০/১১]
● স্বামী-স্ত্রী [৭০/১২]
● ভাই, বোন, নিকট আত্মীয় [৭০/১৩]
● সুস্থতা [৭০/১৬]
● সম্পদ [৭০/১৮]
.
এই ছয়টি জিনিসের কোনো কিছু মানুষ যখন হারিয়ে ফেলে, বা হারিয়ে ফেলার ভয় করে, তখন সে চরম অধৈর্য হয়ে যায়। ফলে নানা ধরণের হতাশা ও দুশ্চিন্তা মানুষের অন্তরে চেপে বসে। শুধু তাই নয়, হতাশার কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বন্ধ হয়ে যায় তখন।
.
সূরাটির শেষ অংশে আল্লাহ তায়ালা মানুষদেরকে হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হওয়া উপায়গুলো শিখিয়ে দিলেন।
.
[১] হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাবার প্রথম ও প্রধান উপায় হলো আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা। আর, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করার অন্যতম উপায় হলো নামাজ পড়া। [৭০/২২] নামাজে সেজদায় গিয়ে আল্লাহর কাছে নিজের হতাশা ও দুঃখের কথাগুলো তুলে ধরতে পারলে, নামাজ শেষে মনের মাঝে এক অসাধারণ অনুভূতি জাগ্রত হয়।
.
আপনজন, সম্মান ও সম্পদ হারিয়ে যাবার ভয়ে আমরা হতাশ হই। কিন্তু নামাজে দাঁড়ালে মনে হয়, আল্লাহ আমাদের সবচেয়ে আপন, আর সম্মান ও সম্পদের মালিক তো কেবল আল্লাহ-ই। সুতরাং আমি কেনো হতাশ হব?
.
রাসূল ﷺ যখন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়তেন, তখন বলতেন, “হে বেলাল, আযান দাও, নামাজ পড়ে আমি আমার মনকে প্রশান্ত করি।”
.
[২। হতাশা ও দুশ্চিন্তা দূর করার দ্বিতীয় উপায় হলো, দুঃখীদের সাহায্য করা। যারা আপনার চেয়ে বেশি দুঃখী, এবং বেশি কষ্টে আছে, তাঁদেরকে আর্থিক সাহায্য করা। [৭০/২৪]
.
আমরা যখন নিজেদের চেয়ে আমাদের উপরের মানুষদের দেখি, তখন আমাদেরকে হতাশ হতে হয়। কিন্তু, আমরা যখন আমাদের চেয়েও নিচের এবং আমাদের চেয়েও কষ্টে জীবন-যাপন করা মানুষদের দেখি, তখন নিজেদের কষ্ট ও দুঃখ আর মনে থাকে না। নিজেকে তখন অনেক অনেক সুখী মনে হয়।
.
একজন দুঃখী মানুষের মুখে হাঁসি ফোটানোর চেয়ে বেশি আনন্দ পৃথিবীতে অন্য কিছুতে নেই।
 
[৩। মানুষ নিজেকে যখন অন্যায় কোনো কাজের সাথে যুক্ত করে ফেলে, তখন নানা ধরণের হতাশা ও দুশ্চিন্তা তার মনের উপর জেঁকে বসে। এ কারণে, হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাবার তৃতীয় উপায় হলো, আল্লাহকে ভয় করা, এবং নিজেকে সর্ব অবস্থায় স্বচ্ছ রাখা। [৭০/২৭]
.
যারা সৎভাবে জীবনযাপন করেন, তাঁরা কখনো অন্যের দেয়া অপবাদ ও গীবত নিয়ে মাথা ঘামায় না। ফলে, হতাশা ও দুশ্চিন্তা তাদের আশেপাশেও আসতে পারে না।
.
[৪] মানুষ সবচেয়ে বেশি হতাশায় ভোগে দাম্পত্য জীবন বা স্বামী-স্ত্রী-সংসারের কারণে। সহজ ভাষায় বললে, পরকীয়ার কারণে মানুষ অনেক দুশ্চিন্তায় ভোগে। সূরা মা’আরিজ অনুযায়ী, হতাশা ও দুশ্চিন্তা মুক্তির চতুর্থ উপায় হলো, নিজের প্রিয়তম/ সঙ্গী/ স্বামী, অথবা, প্রিয়তমা/ সঙ্গিনী/ স্ত্রী ব্যতীত অন্য কারো সাথে কোনো ধরণের সম্পর্কে না জড়ানো। [৭০/ ২৯]
.
“নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস” – এ কবিতার মতোই আমরা নিজেদের ঘরে সুখ না খুঁজে, অধৈর্য হয়ে, বাহিরে সুখ খুঁজতে যাই। কিন্তু, অধিকাংশ সময়ে, আগের চেয়েও বেশি হতাশা ও দুশ্চিন্তা নিয়ে আমরা ঘরে ফিরে আসি।
.
সুতরাং, ধৈর্য সহকারে নিজের পরিবার পরিজনের কাছেই সুখ খোঁজা উচিত।
.
[৫] যখন আমরা মানুষকে কথা দিয়ে কথা রাখতে পারি না, তখন পার্থিব জীবনে নানা ধরণের ঝামেলা সৃষ্টি হয়। কিন্তু, মানুষকে ঠিক ততটুকুই প্রতিশ্রুতি দেয়া উচিত, যতটুকু প্রতিশ্রুতি পালন করার সমর্থ আমাদের আছে। হতাশার অন্যতম কারণ হলো মানুষকে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া।
.
সূরা মা’আরিজ অনুযায়ী, হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাবার পঞ্চম উপায় হলো, মানুষের আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা। [৭০/৩২]
.
কোনো মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেয়ার আগে অথবা মানুষের আমানত নিজের কাছে হেফাজত রাখার আগে অসংখ্যবার ভাবা উচিত, এই প্রতিশ্রুতি ও আমানত কি আমি রক্ষা করতে পারব? – কেবল এই প্রশ্নটি অসংখ্য বিপদাপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে। দিতে পারে হতাশা থেকে মুক্তি।
.
[৬] হতাশা থেকে মুক্ত হবার ষষ্ঠ উপায় হলো, মিথ্যা সাক্ষী না দেওয়া এবং সত্যের উপর অটল থাকা। [৭০/৩০]
.
প্রতিদিন কতশত ঝগড়া-ফ্যাসাদের সাক্ষী হতে হয় আমাদের। প্রিয়জনদের বিরুদ্ধে আমরা সত্য সাক্ষী দিতে পারি না। কিন্তু কিছুদিন পর দেখা যায়, যার জন্যে আমি মিথ্যা কথা বললাম, তিনি আমাকে ছেড়ে চলে গেলেন। তখন হতাশা ও দুশ্চিন্তার পাহাড় ভেঙ্গে পড়ে আমাদের মাথার উপর।
.
কেউ যতই আমাদের প্রিয় মানুষ হোক না কেনো, কারো জন্যে মিথ্যা কথা বলা বা মিথ্যা সাক্ষী দেয়া মানে হতাশাকে ডেকে আনা। তাই, সর্বদা সত্যের উপর অটল থাকাই হতাশা থেকে মুক্তির উপায়।
 
[৭] হতাশা, রাগ, ক্ষোভ ও দুশ্চিন্তার সপ্তম কারণ হলো অন্যের সাথে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া। এবং অন্যকে নিয়ে হাসি-তামাশা করা। [৭০/৪২]
.
বর্তমান সময়ে অন্যের সাথে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়ার একটি ভালো মাধ্যম হলো সোশ্যাল মিডিয়া। আগে দেখা যেতো, কোনো একটি বিষয়ে একজনের সাথে মাসে দু’একটি তর্ক-বিতর্ক হতো। কিন্তু এখন সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে আমরা দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই ফেইসবুকে তর্ক-বিতর্ক করতে থাকে। “যিনি সর্বশেষ কমেন্ট করবেন, তিনিই সেরা” – এই মানসিকতার কারণে আমাদের সকল ধৈর্য ও শেখার আগ্রহ হারিয়ে গিয়েছে। ফলে নানা ধরণের রাগ, ক্ষোভ, হিংসা ও হতাশা ২৪ ঘণ্টাই আমাদের ঘিরে রাখে।
.
নিজদের সত্য নিজেকে খুঁজে বের করতে হয়। অন্যের সাথে তর্ক-বিতর্ক করে কেউ কখনো সত্য পায় না। তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে যে সত্য পাওয়া যায়, তা কেউই গ্রহণ করতে চায় না। সুতরাং হতাশা ও দুশ্চিন্তা মুক্ত সুখী জীবনের জন্যে সহজ উপায় হলো, যাবতীয় তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করা।
.
সূরা মা’আরিজ অসাধারণ একটি সূরা। হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাবার জন্যে এ সূরায় আরও অনেকগুলো সুন্দর সুন্দর বর্ণনা রয়েছে। হতাশ হলে আসুন, সূরা মা’আরিজটা অন্তত একবার পড়ি ফেলি।
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂
.
লেখাঃ জোবায়ের আল মাহমুদ
---------------------------------

 

>> হতাশা ও ডিপ্রেশনের চিকিৎসা:

.
হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট করে বলেন—
.
‘‘হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি (অন্যান্য কাজ হতে) অবসর হও এবং ইবাদতে মন দাও; তাহলে আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেবো এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেবো। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাতকে ব্যস্ততায় ভরে দেবো এবং তোমার অভাব কখনোই দূর করবো না।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৬৫৪; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৪১০৭; হাদিসটি সহিহ]
.
দুনিয়াতে এমন কোনো মানুষ পাওয়া যাবে না, যে এই জীবন নিয়ে পরিতৃপ্ত কিংবা যার মন সর্বদা প্রফুল্ল থাকে। প্রতিটি মানুষই জীবনের বিভিন্ন দিক থেকে ডিপ্রেশন ফেইস করছে, অনেকে নীরবে চোখের পানি ঝরাচ্ছে। সকল মানুষের মাঝে এমন একটি শ্রেণি আছে, যারা দুনিয়ার বিভিন্ন না-পাওয়ার বেদনার মাঝেও অন্তরে একপ্রকার প্রশান্তি নিয়ে জীবন কাটাচ্ছে। তারা কারা?
.
যারা আল্লাহর আনুগত্যে দিনাতিপাত করছে, সর্বাবস্থায় সবরের উপর অটল থাকছে এবং আখিরাতে উত্তম বিনিময়ের প্রত্যাশায় রয়েছে, তারাই সেসব সৌভাগ্যবান মানুষ।
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যার জীবনের চিন্তা (লক্ষ্য) হবে আখিরাত, আল্লাহ্ তার অন্তরে সচ্ছলতা দেবেন, তার কর্মকাণ্ড গুছিয়ে দেবেন এবং দুনিয়া (নিয়ামতরাজি) অনুগত ও বাধ্য হয়ে তার নিকট আসবে। আর যার চিন্তা (লক্ষ্য) হবে দুনিয়া, আল্লাহ্ তার দু’চোখের মাঝে দারিদ্র রেখে দেবেন, তার কর্মকাণ্ড বিক্ষিপ্ত করে দেবেন (ফলে সে অস্থিরতায় কাতরাবে) এবং দুনিয়া থেকে সে ততটুকুই অর্জন করতে পারবে, যা তার জন্য পূর্বনির্ধারিত।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৪৬৫; আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ৯৪৯-৯৫০; হাদিসটি সহিহ]
.
অনেকেই ডিপ্রেশনে আছেন। একটু সুখ দরকার তাদের। উপরের হাদিস দুটো চমৎকার মূলনীতি, যার আলোকে ডিপ্রেশনকে বিদায় জানানো সম্ভব, ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য অনেক সহজ সমাধান বাতলে দিয়েছেন। এখন আমাদের প্রয়োজন হলো, হাদিস দুটোকে আঁকড়ে থাকা।
.
সুখ-শান্তির মালিক আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা। সুতরাং শান্তির জন্য তাঁর কাছেই ফিরে আসতে হবে। এটিই চূড়ান্ত কথা। বাকি যত পথ ও পন্থাই অনুসরণ করা হোক না কেনো, সাময়িক ফূর্তি পেলেও দিনশেষে হতাশা এবং একাকীত্বকেই বরণ করতে হবে। তাই, আমাদের ফিরে আসতে হবে আল্লাহর দিকেই।
.
---------------------

 

>> দুঃখ ও দুশ্চিন্তার সময় পড়ার দো‘আ

 

اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
 
হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।
 
আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা‘ইদ দ্বাইনে ওয়া গালাবাতির রিজা-লি
 
বুখারী, ৭/১৫৮, নং ২৮৯৩; আরও দেখুন, বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১৭৩; আরও দেখুন যা ৪১.২ নং দুআ এ বর্ণিত হবে।
 
 
বহু বচনে যদি পরা হয় উচ্চারণ হবে নিম্ম রুপঃ
" আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা‘ইদ দ্বাইনী ওয়া গালাবাতির রিজা-লি। "
আর যদি এক বচনে যদি পরা হয় উচ্চারণ হবে নিম্ম রুপঃ
" আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযান, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসাল, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা‘ইদ দ্বাইনী ওয়া গালাবাতির রিজা-ল। "
আর এই খানে -> দ্বাইনে হবে না, হবে -> দ্বাইনী।

-----------------------

 

>> ইস্তিগফারে দুঃখ- দুঃশ্চিন্তা দূর হয়

 

"বান্দার প্রাণ ওষ্ঠাগত (বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম) না হওয়া পর্যন্ত অবশ্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তার তাওবাহ্ কবুল করেন।" [তিরমিযী ৩৫৩৭ ]।
চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী, সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী, মহাপবিত্র, সর্বজ্ঞানী ও সর্বশ্রোতা, সীমাহীন অনুগ্রহকারী মহান রব বলেছেন _
"আমার বান্দাদের জানিয়ে দাও, আমি বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু"। [সূরা হিজর : ৪৯ ]।
"নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাদেরকে ভালবাসেন যারা তাঁর কাছে তাওবা করে এবং তিঁনি তাদেরকে ভালবাসেন যারা নিজেদেরকে পবিত্র করে।" [সূরা বাক্বারা: ২২২]।
"তবে কি তাঁরা আল্লাহর কাছে তাওবা করবে না (ফিরে আসবে না), তাঁর কাছে ইস্তিগফার করবে না (ক্ষমাপ্রার্থনা করবে না)?! আল্লাহ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। " [ সূরা মায়িদা: ৭৪]।
~রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম~
"আমার অন্তরে কখনো কখনো অলসতা দেখা দেয়, তাই আমি দৈনিক ১০০ বার আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকি।" [সহীহ মুসলিম: ৬৭৫১]।
~হাসান আল- বসরি রাহিমাহুল্লাহ ~
“তোমার জীবনে ইস্তিগফারের পরিমান বৃদ্ধি করো, কারন তুমি জানো না, কোন দিকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লার রহমত তোমার উপর অবতীর্ণ হবে।”
আসুন দেখে নেই ইস্তিগফার আমাদের জীবনে কি কি পরিবর্তন আনতে পারেঃ
★ইস্তিগফারে দুঃখ- দুঃশ্চিন্তা দূর হয়।
★ইস্তিগফারে দুয়ার উত্তর আসে।
★ইস্তিগফার ক্ষমার দরজা খুলে দেয়।
★ইস্তিগফার রিযিকের দুয়ার খুলে দেয়।
★ইস্তিগফার বিয়ে সহজ করে দেয়।
★ইস্তিগফার সন্তান-সন্তানাদি আসতে সাহায্য করে।
★ইস্তিগফার সম্পদে বারাকাহ বৃদ্ধি করে।
★ ইস্তিগফার হৃদয়কে কোমল করে।
আপনার জীবনে যদি উপরের সমস্যা গুলোর অন্তত যেকোন একটি সমস্যা বিদ্যমান থাকে তাহলে ইস্তিগফারের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।আপনার লাইফের চেইঞ্জ আপনি নিজেই উপলব্ধি করতে পারবেন ইন-শা~আল্লাহ।
~রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ~
"যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন; সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিযিকের ব্যবস্থা করে দেবেন।" [আবূ দাউদ:১৫২০]।
"শয়তান (আল্লাহ তা‘আলার কাছে) বলল, হে মহান প্রতিপালক, তোমার ইজ্জতের কসম! আমি তোমার বান্দাদেরকে প্রতিনিয়ত গুমরাহ করতে থাকব, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের দেহে রূহ থাকবে। তখন আল্লাহ তা‘আলা বললেন, আমার ইজ্জত, আমার মর্যাদা ও আমার সুউচ্চ অবস্থানের কসম! আমার বান্দা আমার কাছে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে থাকবে, আমি সর্বদা তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকব।" [সহীহ আত্ তারগীব ১৬১৭ ]। সুবহানাল্লাহ!
নিজ আমলনামা দেখে কি হাসতে চান? তাহলে শুনুন _
‘‘যে ব্যক্তি নিজ আমলনামা দেখে খুশি হতে চায়, সে যেন বেশি করে ইস্তেগফার করে।’’ [সিলসিলা সহিহাহ: ২২৯৯]।
"সুসংবাদ তার জন্য, যে তার আমলনামায় অনেক বেশি ইস্তিগফার পেয়েছে। " [সহিহুল জামি': ৩৯৩০]।
বি:দ্রঃ নিজে আমল করার পাশাপাশি অপরকেও আমলের সুযোগ করে দিন, সাওয়াবের ভাগিধার হোন।
--------------------

 

>> দুঃখ_দুর্দশা_এবং_দুশ্চিন্তায়_ভেঙে_পড়বেন_না

 

#দুঃখ_দুর্দশা_এবং_দুশ্চিন্তায়_ভেঙে_পড়বেন_না.... এগুলো সবার জীবনেই আসে কম অথবা বেশি। তবে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা তাদের দুশ্চিন্তাকে সহজেই কাটিয়ে উঠে, আল্লাহর ইচ্ছায়।
.
আজ আমরা হাদিসসম্মত কয়েকটি সমাধান শেয়ার করব ইনশাআল্লাহ।
.
১. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একজন সাহাবিয়া (রা.)-কে বলেন, "আমি কি তোমাকে এমন কিছু বাক্য শেখাব না, যা তুমি দুশ্চিন্তার সময় পড়বে? তা হলো,
"আল্লাহু আল্লাহু রব্বি লা উশরিকু বিহি শাইআ"।
মূল আরবি:
ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺭﺑﻲ ،ﻻ ﺃﺷﺮﻙ ﺑﻪ ﺷﻴﺌﺎ
অর্থ: আল্লাহ! আল্লাহই আমার রব, আমি তার সাথে কোন কিছুকে শরিক করি না।
এক বর্ণনায় এসেছে, এগুলো সাত বার বলা হবে। (আবু দাউদ: ১৫২৫, সহিহ)
.
২. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, মাছের পেটের ভেতর থাকাবস্থায় ইউনুস (আ.) দু'আ করেছিলেন,
"লা~ ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহা'নাকা ইন্নি কুংতু মিনায যোয়ালিমিন"।
মূল আরবি:
ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺃﻧﺖ ﺳﺒﺤﺎﻧﻚ ﺇﻧﻲ ﻛﻨﺖ ﻣﻦ ﺍﻟﻈﺎﻟﻤﻴﻦ
অর্থ: তুমি ছাড়া কোন উপাস্য নেই, তুমি পবিত্র, আমি তো যালিমদের একজন!
কোন মুসলিম যে বিষয়েই এভাবে ডেকেছে, আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দিয়েছেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, বিপদগ্রস্ত কেউ এভাবে ডাকলে তার বিপদ আল্লাহ অবশ্যই দূর করে দেবেন। (ইবনুস সুন্নি: ৩৩৮, আল কালিমুত ত্বইয়িব লি-ইবনি তাইমিয়্যাহ)
.
৩. রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ব্যক্তির দু'আ হলো,
"আল্লাহুম্মা রহমাতিকা আরজু ফালা তা কিলনি ইলা নাফসি ত্বরফাতা আ'ইন, ওয়া আসলিহ' লি শা-নি কুল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আংতা"।
মূল আরবি:
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺭﺣﻤﺘﻚ ﺃﺭﺟﻮﺍ ،ﻓﻼ ﺗﻜﻠﻨﻲ ﺇﻟﻰ ﻧﻔﺴﻲ ﻃﺮﻓﺔ ﻋﻴﻦ، ﻭﺃﺻﻠﺢ ﻟﻲ ﺷﺄﻧﻲ ﻛﻠﻪ، ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺃﻧﺖ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার করুণা চাই, এক মুহূর্তের জন্যও আমাকে আমার নিজের উপর ছেড়ে দিয়ো না। আমার সবকিছু সংশোধন করে দাও। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। (আবু দাউদ: ৫০৯০, হাসান)
.
৪. রাসূল (সা.) বলেন, (কষ্টদায়ক) সবকিছুতেই তোমাদের বলা উচিত,
"ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিঊ'ন"।
এমনকি জুতার ফিতা (নষ্ট হয়ে যাওয়ার) ক্ষেত্রেও; কারণ এটিও বিপদ-মুসিবতের অংশ। (ইবনুস সুন্নি: ৩৫৪ হাসান)
.
এগুলোর পাশাপাশি আরো দুটো কাজ বেশি পরিমাণে করতে হবে।
এক. বেশি বেশি ইসতিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করতে হবে। যথাসম্ভব হাদিসে বর্ণিত বাক্য দিয়ে করাই উত্তম।
দুই. রাসূল (সা.)-এর উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করতে হবে। এক্ষেত্রে নামাযের শেষ বৈঠকে পঠিত দুরুদই সর্বশ্রেষ্ঠ।
---------------------

 

ইবরাহিম বিন আদহাম একজন দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মানুষের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি সে লোকটিকে বললেন, আমি তোমাকে তিনটি প্রশ্ন করব। তুমি উত্তর দিবে।
 
তিনি বললেন,
(১) এই জগতে আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কিছু হয় কি?
(২) তোমার জন্য আল্লাহ যে রিযক নির্ধারণ করেছেন, তা থেকে একটুও কমবে কি? 
(৩) তোমার জন্য আল্লাহ যতটুকু হায়াত রেখেছেন, তা থেকে এক মুহুর্তও হ্রাস পাবে কি?
 
সে লোকটি বলল, না। তখন ইবরাহিম বললেন, তাহলে দুশ্চিন্তা কিসের জন্য?!
নিশ্চই দুশ্চিন্তা আল্লাহর একটি বাহিনী, যার মাধ্যমে তিনি তার বান্দাদের পরীক্ষা করেন। যাতে তিনি দেখেন, তারা কি করে।
এটা (দুশ্চিন্তা) যদিও অনুভূতিজাত, বস্তুজাত নয়। তবুও তা বস্তুজাত কষ্টাদায়ক জিনিস থেকে বেশী প্রভাবশালী।
এই কথাকে জোরদার করে তা, যা আলী বিন আবী তালিব (রঃ) উল্লেখ করেছেন, যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, আল্লাহর সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী কোনটি?
 
তিনি বললেন, পাহাড়।
লোহা পাহাড়কে কেটে ফেলে। অতএব লোহা পাহাড়ের চেয়ে শক্তিশালী।
আগুন লোহাকে গলিয়ে ফেলে। অতএব আগুন লোহার চেয়ে শক্তিশালী।
পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয়। অতএব পানি আগুনের চেয়ে শক্তিশালী।
মেঘ পানিকে বহন করে। অতএব মেঘ পানির চেয়ে শক্তিশালী।
বাতাস মেঘকে চালিয়ে নিয়ে যায়। অতএব বাতাস মেঘের চেয়ে শক্তিশালী।
মানুষ হাত এবং কাপড় দ্বারা বাতাস আটকে দেয়। অতএব মানুষ বাতাসের চেয়ে শক্তিশালী।
ঘুম মানুষকে পরাভূত করে। অতএব ঘুম মানুষের চেয়ে শক্তিশালী।
 
আর দুশ্চিন্তা! দুশ্চিন্তা ঘুম দূর করে দেয়! অতএব আল্লাহর সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী হল দুশ্চিন্তা, তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার উপর ইচ্ছা তা চাপিয়ে দেন।
 
আল্লাহ তা'আলা সত্য বলেছেন, "অতঃপর আল্লাহ যাকে পথপ্রদর্শন করতে চান, তার বক্ষকে ইসলামের জন্য উন্মুক্ত করে দেন এবং যাকে বিপথগামী করতে চান, তার বক্ষকে সংকীর্ণ, অত্যধিক সংকীর্ণ করে দেন, যেন সে সবেগে আকাশে আরোহন করছে। এমনিভাবেই যারা ঈমান আনে না, তাদেরকে আল্লাহ কলুষময় করে থাকেন।" [৬:১২৫]
------------------------

 

গুনাহ মাফ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি লাভের উপায়গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হল, (অধিক পরিমাণে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দুরুদ পড়া। জুমআর দিন দুরুদ পড়ার প্রভাব তো আরও বেশি! 
(অধিক পরিমাণে) দুরুদ পড়তেন এমন এক সাহাবীকে লক্ষ্য করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমার দুশ্চিন্তা দূর হবে এবং গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।'
#আত_তারিফী
------------------

 

হারামের পিছু ছুঁটে সময় নষ্ট করলাম, গার্লফ্রেন্ড-জাস্টফ্রেন্ডে ডুবে গেলাম। নাটক-সিনেমা, মিউজিকে মজে গেলাম। কিন্তু কি লাভ এতে? — ‘হয়তো সাময়িক একটু তৃপ্তি পেলাম কিন্তু আল্টিমেটলি গুনাহের দর্পিত প্রতিবিম্ব রয়ে গেলো আমার জীবনের পাতায়। যা কুঁড়েকুঁড়ে খাবে আমায়!’
এসব করে কি নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে হচ্ছে?— ‘না, আপনি আসলে একজন বড়সড় বোকা।’ কেননা ইমাম ইবনু কায়্যিম জাউযিয়্যাহ (রহ.) বলেন — “ঐ ব্যক্তি কীভাবে বুদ্ধিমান হতে পারে যে কিছু সময়ের স্বাদ উপভোগের জন্য জান্নাতকে বিক্রি করে ফেলে?”
অল্প কিছু সময়ের জন্য উপভোগ্যতার নদীতে ডুব দিয়ে জান্নাতের মতো মহামূল্যবান জিনিস বিক্রি করে দেয়া কতটুকু বুদ্ধিমানের কাজ!

 

আপনি হতাশ, বিপর্যস্ত, আপনার রিজিক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। আপনার পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছে, ব্যবসায় একের পর এক লস হচ্ছে, চাকরি হচ্ছে না, জব ইন্টারভিউ থেকে ফিরে আসছেন, সংসারে ঝামেলা, অন্তরে শান্তি নেই, বিয়ে হচ্ছে না!
এর সমাধান কী?
যথাযথ দুনিয়াবি ব্যবস্থা নেয়ার সাথে সাথে আপনি দুটো কাজ করুন।
১. খুব বেশি ইস্তিগফার করুন এবং
২. রাসুলুল্লাহ সল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর দরূদ পড়ুন।
ইনশাআল্লাহ, দ্রুতই পজিটিভ ফলাফল দেখতে পাবেন।

 

মাঝে মাঝে অনেক কিছুর সাথেই আমাদের টাইমিং মিলে না। আমরা যেমনটা চাই সেটা কখনো পূরণ হয়, কখনোবা হয় না। সেটাতে সফল হলে খুশির ফোয়ারা বয়ে যায় হৃদয় কুটিরে আর ব্যর্থ হলে আফসোস আর অশ্রুর নদী প্রবাহিত হয়।
কিন্তু আমাদের সর্বদা সন্তুষ্ট থাকা চাই! ‘যা পাই নি তা কখনো আমার ছিল না, আর যা কিছু আমার জন্য রয়েছে তা কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না’ এই থিওরিটা যদি হৃদয়মননে গেঁথে নিতে পারি তাহলে জীবনে কখনো আফসোসের করুন বীনা বাজবে না, পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠলেও আপনি হতাশ না হয়ে রবের প্রতি ভালোবাসাটা বাড়িয়ে দিবেন আরও কয়েক কদম।
যে কথা ভেবে আমার অন্তর প্রশান্ত হয়,তা হলো- আমার জন্য যা নির্ধারিত আছে, তা আমাকে কখনো ছেড়ে যাবেনা এবং যা কিছু আমার পাওয়া হয় না,তা কখনো আমার জন্য নির্ধারিত ছিল না ~ইমাম শাফিঈ(রাহি.)

 

জীবনের উপকূলে দাঁড়িয়ে একটু ভাবুন আমি কি করছি, আমার জীবন কোন পথে চলছে, কোন পথে কাটছে আমার সময়, কাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি। যাদের সাথে চলছি, যে পথে হেঁটে বেড়াচ্ছি, যে পথে জীবন চলছে সেই পথ কি আল্লাহর পথ, নাকি শয়তানের পথ।
যদি তা ‘আল্লাহর পথ’ হয়ে থাকে তাহলে নির্ভয়ে এগিয়ে যান, বাহুডোরে তার ভালবাসা নিয়ে মেঘলা পথ পাড়ি দিন, কেননা মেঘরাজ্যের পরেই যে আপনার চিরস্হায়ী সুখের নীড়। আর যদি তা ‘শয়তানের পথ’ হয়, তাহলে এখনি দাঁড়িয়ে যান, আর এক পাও এগুবেন না। ফিরে আসুন সেই পথ থেকে যা সুখের রাজ্যের পরেই চিরস্থায়ী আযাবের নীড়।

 

যখনই আপনার একটা স্বপ্ন নিভে যায় তখনই আল্লাহ আপনার জন্য আরেকটা স্বপ্ন সৃষ্টি করে দেন; যেনো আপনি হতাশায় না পড়ে যান! যখনই আপনার হৃদয় থেকে একটা স্মৃতি মুছে যায় তখনই আল্লাহ আরেকটা অসাধারণ স্মৃতি আপনার মনে উদিত করেন; যেনো আপনি স্বপ্ন বুনতে পারেন!
আপনার রব আপনাকে নিয়ে ভাবে আপনি তাঁকে নিয়ে ভাবেন ত?

 

আল্লাহ্ ﷻ বলেনঃ
قُل هُوَ اُلرَّحمن
অর্থঃ বল, তিনিই পরম করুণাময়। (সূরা মূলকঃ২৯)
আপনি আল্লাহর চাইতে বেশি দয়ালু(Merciful),ক্ষমাশীল,মহানুভব কাউকেই পাবেন না। তাঁর নাম الرحمن, পরম করুণাময়, দয়ালু।
যখনই প্রতিরাতে সূরা মূলক তিলাওয়াত করবেন তখন এই অর্থের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল করবেন।
তাঁর মহানুভবতা, ক্ষমাশীলতা,দয়ার্দ্রতা কেমন—আসুন আল্লাহর রাসূলের মণিমুক্তা থেকে জানিঃ
আল্লাহর রাসূলﷺ বলেন,“বারাকাতময় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে আদম সন্তান! যতক্ষণ আমাকে তুমি ডাকতে থাকবে এবং আমার হতে (ক্ষমা পাওয়ার) আশায় থাকবে, তোমার গুনাহ যত অধিক হোক, তোমাকে আমি ক্ষমা করব, এত কোন পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ্‌র পরিমাণ যদি আসমানের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও পৌছে যায়, তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি পরওয়া করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিমান গুনাহ নিয়েও আমার নিকট আস এবং আমার সঙ্গে কাউকে অংশীদার না করে থাক, তাহলে তোমার কাছে আমিও পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা নিয়ে হাযির হব।”
[জামে' আত-তিরমিজিঃ৩৫৪০]

 

যখন আপনি বিপদগ্রস্ত হন তখন আল্লাহ যদি মুক্তির ফায়সালা না করেন ততক্ষণ পর্যন্ত সেই বিপদ থেকে আপনি মুক্তি পাবেন না। বিপদের ঘনকালো মেঘ দূর হবে না। দুনিয়ার সকল মানুষ ও যদি একত্রিত হয়ে আপনাকে সাহায্য করে। তা-ই ধৈর্য্য ধরুন আর রবের তাসবীহ পড়ুন তাঁকে স্মরণ করুন। যিনি মাছের পেট থেকে ইউনুস (আ) কে জীবিত বের করেছিলেন। তিনি কি আপনাকে উদ্ধার করতে যথেষ্ট নয়? যিনি মূসা (আ) কে সমুদ্রের মাঝ দিয়ে রাস্তা দেখিয়েছেন তিনি কি আপনাকে পথ দেখাবার জন্য যথেষ্ট নয়?

 

তিনটি বস্তু অন্তরকে আল্লাহর দিকে ধাবিত করে _
(১) আল্লাহর ভালোবাসা
(২) আল্লাহর ভয়
(৩) আল্লাহর কাছে ক্ষমার আশাবাদী হওয়া।
~ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা (রাহিমাহুল্লাহ)

 

আর কারো কাছে আপনার দাম না থাকলেও কেউ আপনাকে গুরুত্ব না দিলেও আপনি কি জানেন, আপনার রবের কাছে আপনি স্পেশাল। আপনি স্পেশাল বলেই তিঁনি আপনাকে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ বানিয়েছেন, কুকুর কিংবা শুকর বানাননি । আপনি স্পেশাল বলেই তিঁনি আপনাকে মুসলিম বানিয়েছেন, ঈমানের নিয়ামত দান করেছেন। আপনি স্পেশাল বলেই আপনি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবী হিশেবে পেয়েছেন। তাঁর উম্মত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছেন।
সবাই আপনাকে ছেড়ে চলে গেলেও আপনার রব কখনো আপনাকে পরিত্যাগ করেন না। আর কেউ আপনাকে ভালো না বাসলেও তিঁনি আপনাকে ভালোবাসেন। এতটা ভালোবাসেন যতটা আর কেউ আপনাকে কখনও ভালোবাসতে সক্ষম নন। আলহামদুলিল্লাহ।
তাহলে কেনো এতো দুঃখ কষ্ট, আর না পাওয়ার বেদনা!

 

আমি : কখন সফল হবো?
আল্লাহ বলেন : সে-ই সফলকাম হয়েছে, যে নিজেকে পবিত্র করেছে। [সূরা আশ শামস : ৯]
আমি : কখন ব্যর্থ হবো?
আল্লাহ বলেন : আর সে-ই ব্যর্থ হয়েছে, যে নিজেকে কলুষিত করেছে। [সূরা আশ শামস : ১০]
সফলতা আর ব্যর্থতার মানদণ্ড দেয়া আছে। হিশেবের খাতা খুলে দেখুন আপনি কোনটায় এগিয়ে আছেন? — সফলতায়, নাকি ব্যর্থতায়?

 

যখন মূসা (আ.) আল্লাহর আদেশে তার হাতের লাঠি দ্বারা সমুদ্রে আঘাত করেছিলেন তার বিশাল সমস্যার নিমিষেই সমাধান হয়ে গেলো। সমুদ্রের
মধ্যখান দিয়ে রাস্তা নির্মাণ হয়ে গিয়েছিল। তিনি আর তাঁর কওম বনী ইসরাইল ফির'আউন আর তার সৈন্যবাহিনীর কবল থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।
এই ঘটনা থেকে আমরা কি শিখলাম?
আমরা শিখলাম লাইফে যত বড় প্রবলেমই হোক না কেন আল্লাহর আনুগত্যের দিকে দ্রুত ধাবিত হতে হবে। সিচুয়েশান যাই হোক আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়ার দিকে শান্তি,আরাম, নিরাপত্তা আর নিশ্চয়তা।

 

"সৌভাগ্যবান ঐ ব্যক্তি, যে নিজের ও আল্লাহর মাঝের সকল বিষয়কে ঠিকঠাক ও সুষ্ঠু রাখে। কারণ, এর ফলে তার ও মাখলুকের মাঝের সকল বিষয়কে আল্লাহ সুষ্ঠু ও যথার্থ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়ার আশা করে, আল্লাহর তার প্রতি অসন্তুষ্ট হোন। ফলে তার প্রশংসাকারী ব্যক্তিও তার নিন্দা করতে শুরু করে।"
~ইবনে রজব হাম্বলি (রাহিমাহুল্লাহ)

 

‘যখন কেউ তার রবের প্রতি আনুগত্যের চূড়ায় পৌঁছে যায় এবং সেখানেই অটল থাকে, তখন মানুষের প্রশংসা কিংবা সমালোচনা নিয়ে তার কোনো মাথা-ব্যথা থাকে না। মানুষ প্রশংসা করলে সে খুশি হয় না, আবার সমালোচনা করলে সে হতাশও হয়ে যায় না।’
—হাফিয ইবনুল কায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ্)
(মাদারিজুস সালিকিন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৮)

 

একজন নেককার জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছিলেন, ‘যদি দুনিয়ার বিপদগুলো না থাকতো, তাহলে কিয়ামতের দিন আমরা শূন্য হাতে আগমন করতাম।’ (যাদুল মা‘আদ: ৪/১৭৬)
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “হে আবু বকর, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করুন; তুমি কি অসুস্থ হও না? তুমি কি কষ্ট পাও না? তুমি কি দুঃখ-দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হও না? মুসিবত তোমাকে কি পিষ্ট করে না?’’ আবু বকর বলেন, ‘অবশ্যই।’ তখন নবিজি বললেন, ‘‘এগুলো তোমাদের (গুনাহের) প্রায়শ্চিত্ত।” (মুসনাদ আহমাদ: ৭০; হাদিসটি সহিহ)

 

বান্দা আল্লাহর কাছে যে সর্বোত্তম যে জিনিস গুলো চাইতে পারেঃ
১. আল্লাহর সন্তুষ্টি
২.তাঁর পবিত্র চেহারা দেখার সৌভাগ্য
৩.আল ফিরদাউস, সর্বোচ্চ মর্যাদার জান্নাত।
—শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ(ফা.আ)

 

দুনিয়া দুঃখ-যাতনার ময়দান। যে এই ময়দানে দুঃখ-যাতনাগুলো রবের দরবারে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে আকুতিভরা কন্ঠে বলে যাবে, সেই-ত সফল। আর যে এই ময়দানে দুঃখ-যাতনাগুলো দুনিয়ার মানুষের কাছে বলে বেড়াবে সেগুলো কমবে না বরং কয়েকগুন বেড়ে যাবে। ধীরে ধীরে হতাশার কালো থাবায় নিমজ্জিত হয়ে ব্যর্থতার পথে হাঁটবে।
--------------------

 

 

>> হতাশা থেকে মুক্তির জন্য এই বইটি পড়ুন।

হতাশ হবেন না -আয়িদ আল করনী (38 MB)
https://drive.google.com/file/d/1QK9WmV0U5zH3rrIbQPEQUGAkGXjPA2mm/view?usp=sharing

https://mega.nz/file/JixC3YTI#Ip-jEFEW84hJPJzrlOYjfxYNaHUCAQwvVPd4UYiWESA
.

>> Don't Be Sad হতাশ হবেন না

https:// www.youtube.com/watch?v=Ar6nJ56XvW4

 

 

 

>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"

https://justpaste.it/5gol5

.

>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক

https://justpaste.it/facebook_page_grp_link

.

>> র‍্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট

https://justpaste.it/76iwz

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের pdf লিংক (৪০০+ বই)

https://justpaste.it/4ne9o

.

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.

https://justpaste.it/islamicappvideo

.

>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?

https://justpaste.it/6q4c3

.

>> কুরআন এবং আপনি

https://justpaste.it/5dds8

.

>> কখনও ঝরে যেও না …

https://justpaste.it/3bt22

.

>> ফজরে আমি উঠতে পারি না

https://justpaste.it/6kjl6

.

>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1

.

>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr

.

>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম

https://justpaste.it/7u5es

.

>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়

https://justpaste.it/8dccj

.

>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/6ttuf

.

>> স্বার্থক মুনাজাত

https://justpaste.it/1xf0t

.

>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ

https://justpaste.it/4hhtd

.

>> তাহাজ্জুদ সিরিজ

https://justpaste.it/4ja0n

.

>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব

https://justpaste.it/3dxi7

.

>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)

https://justpaste.it/7056k

.

>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ

https://justpaste.it/7fh32

.

>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ

https://justpaste.it/9icuq

.

>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল

https://justpaste.it/8gmtk

.

>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf

.

>> দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প

https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo

.

>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)

https://justpaste.it/8vnly

.

>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir

.

>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh

.
>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5

.
>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1

.

>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j

.

>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে। সবগুলো বিষয়ের লিংক এক জায়গায় রাখা হয়েছে। এই লিংকটা শেয়ার করতে পারেন। 
https://justpaste.it/48f6m