তাহাজ্জুদ সিরিজ
.
প্রথম পর্ব:
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2729928393774125&id=1698393090260999
.
দ্বিতীয় পর্ব:
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2732611983505766&id=1698393090260999
.
তৃতীয় পর্ব:
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2746403985459899&id=1698393090260999
.
চতুর্থ পর্ব:
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2772402169526747&id=1698393090260999
.
পঞ্চম পর্ব:
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2793657534067877&id=1698393090260999
.
ষষ্ঠ পর্ব:
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2806191149481182&id=1698393090260999
.
সপ্তম পর্ব:
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2808820365884927&id=1698393090260999
.
.
.
>> বিশেষ নফল নামাজ সিরিজ (ইশরাক, দোহা, চাশত, আওয়াবিন, যাওয়াল, সালাতুল হাজত, সালাতুত তাসবিহ)
https://justpaste.it/9n0kf
>> তাহাজ্জুদ - ১ - তাহাজ্জুদের তাৎপর্য
https:// www.youtube.com/watch?v=GXz2ct_qMjQ
>> তাহাজ্জুদ - ২ - তাহাজ্জুদে ওঠার পদ্ধতি
https:// www.youtube.com/watch?v=bKWJ4DMNuwM
#তাহাজ্জুদ
#রবের_সান্নিধ্যে (প্রথম পর্ব)
তাহাজ্জুদ নামাজের পরিচয়, এর সঠিক সময়, আদায়ের পদ্ধতি ও রাকাতসংখ্যা:
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
❑ তাহাজ্জুদ নামাজের পরিচয়:
‘তাহাজ্জুদ’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো: রাত্রিজাগরণ, ঘুম থেকে ওঠা, রাত্রিকালীন ইবাদত ইত্যাদি।
.
পরিভাষায়, তাহাজ্জুদ মূলত ওই নামাজকে বলা হয়, যা রাতের বেলায় ঘুম থেকে ওঠে আদায় করা হয়৷ ফায়দ্বুল বারিতে এসেছে, ‘ঘুম থেকে জাগার পর যদি নামাজ পড়ে, তখন তাকে তাহাজ্জুদ নামে নামকরণ করা হয়৷’ [কাশমিরি, ফায়দ্বুল বারি: ২/৪০৭]
.
ইমাম কুরতুবি (রাহ.)-ও একথা বলেছেন। অধিকাংশ আলিমের বক্তব্য এটিই। তাছাড়া দলিলের আলোকে এই মতটিই অগ্রগণ্য।
.
এর বাইরে কোনো কোনো আলিম বলেছেন, মধ্য রাতের পর যে নামাজ পড়া হয়, সেটি তাহাজ্জুদ। আবার কারও মতে, ইশার পরই তাহাজ্জুদ আদায় করা যায়।
.
তবে, অধিকতর সঠিক মত সেটিই, যা আমরা প্রথমে উল্লেখ করেছি। তা হলো, রাতের বেলা ঘুম থেকে ওঠে নামাজ পড়া। (এই প্রসঙ্গে অন্য পর্বে আরও আলোচনা আসবে, ইনশাআল্লাহ)
.
❑ তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময়:
.
তাহাজ্জুদ নামাজের সর্বোত্তম সময় হলো, শেষ রাত। বিশেষত রাতের অবশিষ্ট এক তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন এবং বলেন ডাকার জন্য কেউ আছে কি, যার ডাক আমি শুনবো? চাওয়ার জন্য কেউ আছে কি, যাকে আমি দেব? গুনাহ থেকে মাফ চাওয়ার কেউ আছে কি, যার গুনাহ আমি মাফ করব?’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৯৪; মুসলিম, আস-সহিহ ১৮০৮]
.
❑ তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের পদ্ধতি:
.
তাহাজ্জুদের নামাজের বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। সাধারণ সুন্নাত বা নফল নামাজের মতই এই নামাজ পড়তে হয়। তবে, চাইলে এটি দুই রাকাত করেও আদায় করা যায় আবার চার রাকাত করেও আদায় করা যায়। চার রাকাত করে আদায় করলে, যোহরের ফরজের পূর্বের চার রাকাত সুন্নাতের মতো করে পড়তে হয়। বিশেষ কোনো সূরা দিয়ে এই নামাজ পড়তে হয় না। এটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ।
.
❑ তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাতসংখ্যা:
.
তাহাজ্জুদের নামাজ সর্বনিম্ন ২ রাকাত থেকে শুরু করে ৪, ৬, ৮, ১০ রাকাতও পড়া যায়। এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩৫৭ ও ১৩৬২; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৫১৫৯]
.
তবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাধারণ আমল ছিলো, তিনি অধিকাংশ সময় রাতে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন। [বুখারি, আস-সহিহ: ১১৪৭]
.
#তাহাজ্জুদ
#রবের_সান্নিধ্যে (দ্বিতীয় পর্ব)
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব, মর্যাদা ও লাভ
(আল-কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে)
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
❖ তাহাজ্জুদ আদায়কারীর মর্যাদা তার চেয়ে বেশি, যে তাহাজ্জুদ আদায় করে না।
.
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রাতের বেলা সিজদারত থাকে বা (ইবাদতে) দাঁড়ানো থাকে, আখিরাতের ব্যাপারে শঙ্কিত থাকে এবং নিজ রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এমনটি করে না?’’ [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৯]
.
❖ তাহাজ্জুদ নামাজ নফসের প্ররোচনায় গুনাহ সংঘটিত হতে বাধা দানকারী:
.
আল্লাহ বলেন, ‘‘নিশ্চয়ই রাত্রিজাগরণ প্রবৃত্তি দমনে অত্যন্ত কার্যকর।’’ [সূরা মুযযাম্মিল, আয়াত: ৬]
.
❖ জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম উপায়:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে লোকসকল! তোমরা সালামের প্রচলন কোরো, খাদ্য খাওয়াও, আত্মীয়তা রক্ষা কোরো এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন নামাজ আদায় কোরো। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৪৮৫; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৩৩৪; হাদিসটি হাসান সহিহ]
.
❖ আল্লাহর বিশেষ নৈকট্য লাভের সুযোগ:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা রাতের শেষভাগে বান্দার সবচেয়ে কাছে চলে আসেন। কাজেই যদি পারো, তবে তুমি ওই সময়ে আল্লাহর স্মরণকারীদের মধ্যে শামিল হয়ে যেও। কেননা ওই সময়ের নামাজে ফেরেশতাগণ সূর্যোদয় পর্যন্ত উপস্থিত থাকেন।’’ [নাসাঈ, আস-সুনান: ৫৭২; তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৭৯]
.
❖ গুনাহের কাফফারা ও শারীরিক রোগমুক্তির উপায় তাহাজ্জুদের নামাজ:
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া উচিত। এটি তোমাদের পূর্ববর্তী নেককার লোকদের অভ্যাস। এই নামাজ তোমাদেরকে আল্লাহর নিকটে পৌঁছে দেবে, ভুল-ত্রুটিগুলো মিটিয়ে দেবে, গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে এবং শরীর থেকে রোগ দূর করবে।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৪৯; হাদিসটি সহিহ]
.
❖ ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ এটি:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো, রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১১৬৩, তিরমিযি: ৪৩৮]
.
❖ রাসূলের চিরাচরিত অভ্যাস:
.
আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ‘‘কিয়ামুল লাইল (রাতের নামাজ) ত্যাগ করবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা (কখনো) ত্যাগ করতেন না। যখন তিনি অসুস্থ থাকতেন বা ক্লান্তি অনুভব করতেন, তখন বসে আদায় করতেন। [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩০৯, আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৪৯১৯; হাদিসটি সহিহ]
.
#তাহাজ্জুদ
#রবের_সান্নিধ্যে (তৃতীয় পর্ব)
তাহাজ্জুদ নামাজ কি ইশার নামাজের পর বা ঘুমানোর পূর্বে পড়া যাবে? তাহাজ্জুদ নামাজ ও কিয়ামুল লাইল কি এক বিষয়?
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
প্রথমে আমাদের জেনে নিতে—তাহাজ্জুদ ও কিয়ামুল লাইলের অর্থ ও পরিচিতি। তাহলে বুঝতে সহজ হবে ইনশাআল্লাহ্।
.
✪ তাহাজ্জুদ:
তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া, রাত্রিজাগরণ করা ইত্যাদি।
.
তাহাজ্জুদ হলো, রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে নফল নামাজ আদায় করা। [কুরতুবি, আল জামি’ লি আহকামিল কুরআন: ১০/৩০৭]
.
হাজ্জাজ ইবনু আমর আল আনসারি (রা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তাহাজ্জুদ হলো ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে নামাজ আদায় করা। (প্রয়োজনে) আবার ঘুমিয়ে আবার জাগ্রত হয়ে নামাজ আদায় করা। এমনটিই করতেন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।’ [ইবনু হাজার, আত তালখিসুল হাবির: ২/৩৫; হাদিসের সনদ হাসান]
.
(বিশেষত) ইশার পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরুর পূর্ব পর্যন্ত রাতের যে কোনো সময়েই ঘুম থেকে ওঠে নফল পড়া হলে সেটি তাহাজ্জুদ হিসেবে গণ্য হবে। এমনকি কেউ যদি ইশার পর ঘুমিয়ে ১১/১২-টার দিকে জাগ্রত হয়ে নফল পড়ে, তবে সেটিও তাহাজ্জুদের নামাজ হবে। [আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর, রাহে বেলায়াত, পৃষ্ঠা: ৫২১]
.
তবে, ফকিহগণের অনেকেই বলেছেন, রাতের বেলা যেকোনো নফল নামাজই তাহাজ্জুদ বলে গণ্য হবে। এর জন্য ঘুমানো শর্ত নয়, তবে উত্তম। যেমন: হাসান বাসরি (রাহিমাহুল্লাহ্) এমন মত দিয়েছেন। [মাওসু‘আহ ফিকহিয়্যাহ: ২/২৩২; ইবনু কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আযিম]
.
সর্বসম্মতমতে, তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট সময় হলো শেষ রাত।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব দুনিয়ার আসমানে অবতীর্ণ হন এবং বলেন—ডাকার জন্য কেউ আছে কি, যার ডাক আমি শুনবো? চাওয়ার জন্য কেউ আছে কি, যাকে আমি দেব? গুনাহ থেকে মাফ চাওয়ার কেউ আছে কি, যার গুনাহ আমি মাফ করব?’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৯৪; মুসলিম, আস-সহিহ ১৮০৮]
.
✪ কিয়ামুল লাইল:
কিয়ামুল লাইল শব্দ দুটোর অর্থ রাতের দাঁড়ানো। অর্থাৎ, রাতে ইবাদতের জন্য দাঁড়ানো।
.
ইশার নামাজের পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরুর পূর্ব পর্যন্ত রাতের বেলা ইবাদতের জন্য দাঁড়ানো বা জেগে থাকাকে কিয়ামুল লাইল বলে। সেই ইবাদত হতে পারে—নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকর, দু‘আ, ইলম চর্চা করা ইত্যাদি। এর জন্য ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া জরুরি নয়।
.
আরেকটু সহজ করে বলা যায়:
.
◈ কেউ যদি রাতে ঘুম থেকে জেগে নামাজ পড়েন, তবে সেটি তাহাজ্জুদও হবে, কিয়ামুল লাইল (রাত্রিকালীন ইবাদতে দাঁড়ানো)-ও হবে। কিন্তু কেউ যদি রাতে ঘুম থেকে না জেগে নামাজ বা অন্যান্য ইবাদত করেন, তবে সেটি কিয়ামুল লাইল (রাত্রিকালীন ইবাদতে দাঁড়ানো) হবে, কিন্তু তাহাজ্জুদ হবে না। কারণ তাহাজ্জুদের জন্য ঘুম থেকে জাগা শর্ত। যদিও কোনো কোনো আলিম ঘুম থেকে জাগা শর্তারোপ করেননি। তবে, আমরা হাদিসে দেখেছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবিগণের আমল ছিলো ঘুম থেকে জেগে নামাজ পড়া। তাই, এটিই প্রধান্যপ্রাপ্ত মত। তাই, উত্তম হবে—ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদরূপে কিয়ামুল লাইল আদায় করা।
◈ তাহাজ্জুদ কেবল নামাজ পড়াকেই বলে; পক্ষান্তরে কিয়ামুল লাইল দ্বারা শুধু নামাজই নয়, কুরআন তিলাওয়াত, যিকর, দু‘আ, ইলম চর্চা করা ইত্যাদিও বোঝায়।
.
❑ ঘুম থেকে জেগে তাহাজ্জুদ পড়তে না পারলেও হতাশার কিছু নেই। ইশার পর রাতের যেকোনো সময়ে কিয়ামুল লাইল পড়াও অনেক বড় ইবাদত। অনেক হাদিস আছে এ ব্যাপারে। তবে হ্যাঁ, ঘুম থেকে জেগে ইবাদতের সমতূল্য নয়। কিয়ামুল লাইলকে অর্থবহ করতে করণীয় নিয়ে অন্য কোনো পোস্ট আসতে পারে, ইনশাআল্লাহ্।
.
#তাহাজ্জুদ
#রবের_সান্নিধ্যে (চতুর্থ পর্ব)
যারা তাহাজ্জুদ পড়তে পারেন না, তারা অন্তত কিয়ামুল লাইল আদায় করুন। কিয়ামুল লাইল তুলনামূলক সহজ। তাহাজ্জুদের সমান না হলেও এর অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে।
.
❑ কিয়ামুল লাইলের পরিচয়:
.
‘কিয়ামুল লাইল’ শব্দ দুটোর অর্থ হলো, রাতের দাঁড়ানো। অর্থাৎ, রাতে ইবাদতের জন্য দণ্ডায়মান হওয়া, অবস্থান করা।
.
ইশার নামাজের পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরুর পূর্ব পর্যন্ত রাতের যেকোনো সময় ইবাদতের জন্য দাঁড়ানো বা জেগে থাকাকে কিয়ামুল লাইল বলে। সেই ইবাদত হতে পারে—নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকর, দু‘আ, ইলম চর্চা করা ইত্যাদি। তাহাজ্জুদের জন্য ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া শর্ত হলেও কিয়ামুল লাইলে এই শর্ত নেই। তাই, কিয়ামুল লাইল আদায় করা অনেক সহজ।
.
❑ কিয়ামুল লাইলের মর্যাদা ও গুরুত্ব:
.
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রাতের বেলা সিজদারত থাকে বা (ইবাদতে) দাঁড়ানো থাকে, আখিরাতের ব্যাপারে শঙ্কিত থাকে এবং নিজ রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এমনটি করে না?’’ [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৯]
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের নিয়মিত কিয়ামুল লাইল আদায় করা উচিত। এটি তোমাদের পূর্ববর্তী নেককার লোকদের অভ্যাস। এই নামাজ তোমাদেরকে আল্লাহর নিকটে পৌঁছে দেবে, ভুল-ত্রুটিগুলো মিটিয়ে দেবে, গুনাহ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে এবং শরীর থেকে রোগ দূর করবে।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৪৯; হাদিসটি সহিহ]
.
খুব ভালোভাবে জেনে রাখতে হবে—ঘুম থেকে জেগে নামাজের মাধ্যমে তাহাজ্জুদও আদায় হয় আবার কিয়ামুল লাইলও আদায় হয়। কিন্তু ঘুম থেকে না জেগে ইবাদত করলে শুধু কিয়ামুল লাইল হয়; তাহাজ্জুদ হয় না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবিগণ রাতে ঘুম থেকে জেগে ইবাদত করতেন। তাই এটিই সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি। কিন্তু কেউ রাত জাগতে না পারলে ইশার পর বা ঘুমানোর আগে ২/৪/৬/৮/১০ রাকাত নফল পড়ে ঘুমাতে পারেন। তাহাজ্জুদের সমান না হলেও কিয়ামুল লাইল হিসেবে এর অনেক প্রতিদান পাওয়া যাবে। পাশাপাশি ইশার পর বা ঘুমানোর আগে তিলাওয়াত, যিকর, দরুদ, দু‘আ, ইস্তিগফার, ইলম অর্জন ইত্যাদি নেক আমলও কিয়ামুল লাইল হিসেবে গণ্য হবে।
.
❑ একটি রূপরেখা:
.
যারা শেষ রাতে ওঠতে পারেন না, তাই রাতের প্রথমাংশে বা ঘুমানোর আগে উত্তমরূপে কিয়ামুল লাইল আদায় করতে চান, তারা ইশার নামাজের পর কয়েক রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিন। এরপর অথবা ঘুমের আগে কুরআনের কিছু অংশ তিলাওয়াত করুন। বিশেষত সূরা মুলক ও সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত গুরুত্বের সাথে পড়ুন। কুরআন থেকে ১০০ আয়াত পড়তে পারলে সর্বোত্তম কাজ হবে। এর বিশাল ফজিলতের কথা হাদিসে এসেছে। এরপর কিছু সময় দরুদ-ইস্তিগফার ও দু‘আ করুন। সর্বশেষ, ঘুমানোর পূর্বের আমলগুলো করতে করতে অজু অবস্থায় ঘুমিয়ে যান। ঘুমের সময় তাহাজ্জুদের জন্য উঠার পাক্কা নিয়ত করে ঘুমাবেন। তাহলে, উঠতে না পারলেও শুধু সৎ নিয়তের কারণে তাহাজ্জুদের সওয়াব পেয়ে যাবেন।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি রাতে (তাহাজ্জুদের) নামাজ আদায়ের ইচ্ছা করা সত্ত্বেও ঘুম তাকে পরাজিত করে দিলো, তার আমলনামায় রাতে নামাজ আদায়ের সওয়াবই লিখা হবে। তার জন্য ঘুম (আল্লাহর পক্ষ থেকে) সাদাকাহ হিসেবে গণ্য হবে।’’ [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩১৪; নাসায়ি, আস-সুনান: ১৭৮৩; হাদিসটি সহিহ]
.
#তাহাজ্জুদ
#রবের_সান্নিধ্যে (পঞ্চম পর্ব)
আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নিকট তাহাজ্জুদের বিশেষ গুরুত্ব, প্রশংসা ও ফজিলতসমূহ
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
◈ রাত জেগে ইবাদতকারীদের ব্যাপারে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও মর্যাদা বর্ণনা:
.
◉ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রাতের বেলা সিজদারত থাকে বা (ইবাদতে) দাঁড়ানো থাকে, আখিরাতের ব্যাপারে শঙ্কিত থাকে এবং নিজ রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এমনটি করে না?’’ [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৯]
.
◉ আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা বলেন, ‘‘তারা রাতের সামান্য অংশই ঘুমিয়ে কাটাতো। আর রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা চাওয়ায় রত থাকতো।” [সূরা যারিয়াত, আয়াত: ১৭-১৮]
.
◉ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা বলেন, “তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা থাকে। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিযিক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যায় করে। অতঃপর, কোনো ব্যক্তি জানে না, তাদের জন্য চোখ জুড়ানো কী জিনিস লুকিয়ে রাখা হয়েছে—তারা যা করতো, তার বিনিময়স্বরূপ।” [সূরা সাজদাহ, আয়াত: ১৬-১৭]
.
◉ আল্লাহ্ আযযা ওয়া জাল্লা বলেন, ‘‘রহমানের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে, মূর্খ ব্যক্তিরা যখন তাদেরকে সম্বোধন করে কথা বলে, তখন তারা বলে, ‘সালাম’ এবং তারা রাত্রিযাপন করে তাদের রবের উদ্দেশ্যে—সিজদাবনত ও দণ্ডায়মান হয়ে।’’ [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৩-৬৪]
.
◉ মহান আল্লাহ্ বলেন, “আর রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ আদায় কোরো— তোমার অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে। আশা করা যায়, তোমার রব তোমাকে প্রশংসিত অবস্থানে প্রতিষ্ঠিত করবেন।” [সূরা ইসরা, আয়াত: ৭৯]
.
◉ আল্লাহ্ তা‘আলা আরও বলেন, “তারা রাতের বেলায় আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে এবং তারা সিজদা করে।” [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১১৩]
.
◈ তাহাজ্জুদের ব্যাপারে নবিজির সিরিয়াসনেস:
.
আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলায় (নামাজে) এমনভাবে কিয়াম করতেন যে, তাঁর পা ফুলে ফাটার উপক্রম হয়ে পড়তো!’ একবার আমি তাঁকে বললাম, ‘হে আল্লাহ রাসূল! আপনার তো পূর্ব ও পরের গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে তবুও কেন এভাবে কষ্ট করছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘আমি কি (আল্লাহর) কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৪৮৩৭; মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৩১]
.
আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ‘কিয়ামুল লাইল (রাতের নামাজ) ত্যাগ করবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (কখনো) এটি ত্যাগ করতেন না। যখন তিনি অসুস্থ থাকতেন বা ক্লান্তি অনুভব করতেন, তখন বসে আদায় করতেন।’ [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩০৯, আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৪৯১৯; হাদিসটি সহিহ]
.
◈ নিকটাত্মীয়দের তাহাজ্জুদ পড়ার ব্যাপারে নবিজি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।
.
আলি (রা.) হতে বর্ণিত; একবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ও ফাতিমার নিকট রাতের বেলায় আগমন করলেন এবং (তাঁদেরকে বিছানায় দেখে) বললেন, ‘‘তোমরা (স্বামী-স্ত্রী) কি (তাহাজ্জুদের) নামাজ পড়ো না?’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১১২৭; মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৭৫]
.
◈ সাহাবিদেরকে তিনি উদ্বুদ্ধ করতেন।
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রা.)-কে বললেন, ‘‘আবদুল্লাহ (ইবনু উমার) কতই-না ভালো মানুষ! যদি সে রাতে ওঠে নামাজ পড়তো (তবে তো আরও ভালো হতো)!’’ আবদুল্লাহ্ ইবনু উমারের ছেলে সালিম বলেন, ‘তারপর থেকে (আমার আব্বা) আব্দুল্লাহ রাতে অল্পই ঘুমাতেন।’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৪৪০; মুসলিম, আস-সহিহ: ২৪৭৮]
.
#তাহাজ্জুদ
#রবের_সান্নিধ্যে (ষষ্ঠ পর্ব)
তাহাজ্জুদ নামাজের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ কিছু হাদিস, যেগুলোর আলোচনা কম হয়
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
◈ তাহাজ্জুদ রেগুলার পড়া উত্তম; তবে, বাধ্যতামূলক নয়। যারা বলে, তাহাজ্জুদ পড়লে প্রতিনিয়ত পড়তে হয়, তাদের কথা সঠিক নয়।
.
আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রা.) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘‘আব্দুল্লাহ! তুমি তার মতো হয়ে যেও না, যে রাত জেগে ইবাদত করতো, তারপর তা ছেড়ে দিলো।’’ ’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১১৩১; মুসলিম: ১১৫৯]
.
রাসূলের এই আদেশ বাধ্যতামূলক নয়; রাতের ইবাদতের জন্য উৎসাহমূলক।
.
◈ দাউদি নামাজ আল্লাহর কাছে প্রিয়।
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট প্রিয়তম নামাজ হলো দাউদ (আ.)-এর নামাজ। তিনি অর্ধরাত পর্যন্ত ঘুমোতেন। এরপর রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত নামাজে কাটাতেন। অতঃপর, আবার রাতের এক ষষ্ঠাংশ ঘুমোতেন।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৭৯]
.
◈ স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে জাগিয়ে রাতের বেলায় ইবাদতের বিরাট ফজিলত:
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি দয়া করুন, যে রাতে উঠে ইবাদত করে এবং নিজ স্ত্রীকেও জাগায়। অতঃপর যদি সে (জাগতে) অস্বীকার করে, তাহলে তার মুখে পানির ছিটা দেয়। একইভাবে, আল্লাহ সেই নারীর প্রতি দয়া করুন, যে রাতে উঠে ইবাদত করে এবং নিজ স্বামীকেও জাগায়। অতঃপর যদি সে (জাগতে) অস্বীকার করে, তাহলে সে তার মুখে পানির ছিটা দেয়।” [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩০৮; নাসায়ি, আস-সুনান: ১৬১০; হাদিসটির সনদ সহিহ]
.
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘তাদের (নাম) যিকিরকারী ও যিকিরকারিনীর মধ্যে লিপিবদ্ধ করা হয়।” [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩০৯, ইবনু মাজাহ, আস-সুনান:১৩৩৫; হাদিসটির সনদ সহিহ]
.
◈ রাতে দু‘আ কবুলের বিশেষ সময়টি শেষ রাতে হওয়ার সম্ভবানা বেশি:
.
জাবির (রা.) হতে বর্ণিত; তিনি বললেন, ‘আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ কথা বলতে শুনেছি যে, “রাতের বেলা এমন একটি সময় আছে, কোনো মুসলিম ব্যক্তি তা পেয়ে দুনিয়া ও আখিরাতবিষয়ক যে কোনো উত্তম জিনিস প্রার্থনা করলে, আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাকে তা দিয়ে থাকেন। ওই সময়টি প্রত্যেক রাতেই থাকে।” [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৫৭]
.
◈ যতক্ষণ স্বাভাবিকভাবে স্বাচ্ছন্দের সাথে তাহাজ্জুদ পড়তে পারবে, ততক্ষণ পড়বে; চোখে ঘুম পেলে শুয়ে পড়বে।
.
আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত; নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ নামাজের মধ্যে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে, তখন সে যেন ঘুমিয়ে পড়ে—যতক্ষণ না তার ঘুমের চাপ দূর হয়। কারণ, যখন কেউ তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে নামাজ পড়বে, তখন সে হয়ত ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে নিজেকে গালি দিয়ে বসবে।” [বুখারি, আস-সহিহ: ২১২; মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৮৬]
.
◈ রেগুলার তাহাজ্জুদ আদায়কারী কখনো তাহাজ্জুদ মিস করে ফেললে করণীয়:
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি স্বীয় হিযব (দৈনিক রুটিন অনুসারে রাত জেগে ইবাদত) সম্পন্ন না করে অথবা তার কিছু অংশ না পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে, অতঃপর যদি সে ফজর ও যোহরের মধ্যবর্তী সময়ে তা পড়ে নেয়, তাহলে তার জন্য তা এমনভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়, যেন সে তা রাতেই পড়েছে।” [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৪৭; মালিক, আল-মুওয়াত্তা: ৪৭০]
.
#তাহাজ্জুদ
#রবের_সান্নিধ্যে (সপ্তম পর্ব)
তাহাজ্জুদের ব্যাপারে পূর্বসূরি নেককার ব্যক্তিদের চমৎকার কিছু অভিজ্ঞতা ও মন্তব্য:
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
◈ তাহাজ্জুদ নামাজে চেহারা সুন্দর হয়।
.
ইবনুল কায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন, ‘কিছু সংখ্যক নারী অধিক পরিমাণে রাতের নামাজ আদায় করতো। তাদেরকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলে, ‘‘রাতের নামাজ চেহারা সৌন্দর্যময় করে; আমি আমার চেহারাকে লাবণ্যময় করতে পছন্দ করি।’’ ’ [ইবনুল কায়্যিম, রাওদ্বতুল মুহিব্বিন: ২২১]
.
তবে, কেউ যদি কেবল চেহারা সুন্দর হওয়ার জন্য তাহাজ্জুদ আদায় করেন, তার কোনো নেকি তো হবেই না, চেহারা সুন্দর হওয়ারও সম্ভাবনা থাকবে না। উপরে যে নারীদের কথা বলা হয়েছে, তারা মূলত ইবাদতের নিয়তেই তাহাজ্জুদ আদায় করতেন। চেহারা সুন্দর হওয়ার বিষয়টি ছিলো বোনাস হিসেবে।
.
ইমাম হাসান আল বাসরি (রাহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়কারীরা কেনো জ্যোতির্ময় চেহারার অধিকারী হয়?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘তাঁরা আল্লাহর সাথে নিভৃতে অবস্থান করেন, ফলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বিশেষ জ্যোতির্ময় পোষাক পরিধান করান।’ [ইবনুল জাওযি, আল-মাওয়া‘ইয: ১২১]
.
◈ মানুষের ভালোবাসা অর্জিত হয়।
.
তাবিয়ি সায়িদ ইবনুল মুসায়্যিব (রাহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে নামাজ আদায় করে, আল্লাহ্ তার চেহারায় নূর (জ্যোতি) উদ্ভাসিত করে দেন। প্রত্যেক মুসলিম তাকে ভালোবাসে; যদিও পূর্বে কখনও তাকে না দেখে থাকে। তারা বলে, ‘‘এই লোকটিকে আমার ভালো লাগে।’’ ’ [আবদুল হক, কিতাবুত তাহাজ্জুদ]
.
◈ আনন্দের সাথে দিন শুরু হয় তাদের।
.
ইমাম আত্বা আল খুরাসানি (রাহ.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন রাতে ইবাদত করে, পরের দিন সে এমন আনন্দ নিয়ে জাগ্রত হয়, যা সে অন্তর থেকে অনুভব করতে পারে।’ [ইবনু আবিদ দুনিয়া, আত তাহাজ্জুদ ওয়া কিয়ামুল লাইল: ১৭]
.
এই ব্যাপারে সহিহ হাদিসও আছে। সে প্রফুল্লহৃদয়ে দিন শুরু করে।
.
◈ গুনাহের কারণে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় থেকে মানুষ বঞ্চিত হয়।
.
ইমাম সুফিয়ান সাওরি (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন, ‘আমি একটি মাত্র গুনাহের কারণে পাঁচ মাস কিয়ামুল লাইল থেকে বঞ্চিত হয়েছি।’ তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘সেটি কী গোনাহ ছিলো?’ তিনি বলেন, ‘এক ব্যক্তি কাঁদছিলো, আমি তাকে ‘লোকদেখানো কান্নাকারী’ বলেছিলাম।’ [আবু নু‘আইম, হিলয়াতুল আউলিয়া: ৭/১৮]
.
ফুদ্বাইল ইবনু ইয়াদ্ব (রাহ.) বলেন, ‘যখন তুমি রাত্রিজাগরণে সক্ষম হবে না, দিনেও সিয়াম পালন করতে পারবে না, তখন বুঝে নেবে, তুমি আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত। তোমার পাপ তোমার হাতে-পায়ে বেড়ি পরিয়ে দিয়েছে।’ [ইবনুল জাওযি, সিফাতুস সাফওয়া: ২/২৩৮]
.
◈ বিশেষত হারাম ইনকাম এবং কুদৃষ্টির ফলে তাহাজ্জুদ নসিব হয় না অনেকের।
.
আবু সুলায়মান আদ-দারানি (রাহ.) বলেন, ‘এমন কত (হারাম) লোকমা আছে, যা কিয়ামুল লাইলে বাধা দিয়েছে! এমন কত (হারাম) দৃষ্টি আছে, যা সূরা তিলাওয়াত থেকে বঞ্চিত করেছে।’ [আবু নু‘আইম, হিলয়াতুল আউলিয়া: ২/৩০৭]
.
◈ একজন সালাফ একদিন কোনো কারণবশত কিয়ামুল লাইল মিস করে ফেলেন। এই শোকে তিনি কান্না শুরু করে দেন। কোনো কোনো সালাফ বলতেন, রাতের নামাজ না থাকলে তাদের জীবনে আনন্দ বলতে কিছু থাকতো না।
.
◈ শাদ্দাদ বিন আউস (রাহ.) রাতে বিছানায় গেলে জলন্ত কড়াইয়ের শস্যদানার ন্যায় ছটফট করতেন আর বলতেন, ‘হে আল্লাহ! তোমার জাহান্নামের ভয় আমার ঘুম কেড়ে নিয়েছে।’ এরপর সকাল পর্যন্ত নামাজ আদায় করতেন। [ইবনুল জাওযি, সিফাতুস সাফওয়া: ১/৭০৯]
.
#তাহাজ্জুদ
#রবের_সান্নিধ্যে (অষ্টম পর্ব)
তাহাজ্জুদ নামাজকে সুন্দর ও যথার্থ করতে কিছু সুন্নাহ্ ও আদব মেনে চলা উচিত।
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
◈ ঘুম থেকে জাগার পর নির্দিষ্ট দু‘আ পড়া।
.
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে এই দু‘আ পাঠ করবে—
.
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ وَسُبْحَانَ اللّٰهِ وَلَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَاللّٰهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللّٰهِ
.
[লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া‘হদাহু লা শারী-কা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল ‘হামদু, ওয়া হুওয়া ‘আলা কুল্লি শাই-ইন ক্বাদী-র, আল‘হামদুলিল্লাহ, ওয়া সুব‘হানাল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা ‘হাওলা ওয়া লা ক্বুও-ওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ]
.
(অর্থ: আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। তিনি এক; তাঁর কোনো অংশীদার নেই। তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা ও তাঁর জন্যই রাজত্ব; তিনি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান। আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা। আল্লাহ পুতঃপবিত্র। আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, আল্লাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ্ ব্যতীত কোনো অবলম্বন নেই; কোনো সামর্থ্য নেই)
.
অথবা সে বলে, ‘আল্লাহুম্মাগফিরলি’
(হে আল্লাহ, আপনি আমাকে মাফ করে দিন) কিংবা সে যেকোনো দু‘আ করে, তাহলে তার দু‘আ কবুল করা হয়। আর, যদি সে অজু করে এবং নামাজ আদায় করে, তাহলে তার নামাজ কবুল করা হয়। [বুখারি, আস-সহিহ: ১১৫৪]
.
◈ ঘুম থেকে জেগে সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করা উত্তম।
.
একটি হাদিসে এসেছে, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ঘুম থেকে জেগে ঘুমের ঘোর কাটানোর পর সূরা আ-লে ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করেন। এরপর অজু করেন এবং নামাজ পড়েন। [বুখারি, আস-সহিহ: ১৮৩; মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৮৩]
.
এই হাদিসের আলোকে ইমাম নববি (রাহ.) বলেন, ঘুম থেকে জেগে সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত পড়া উত্তম। (বিশেষত কিয়ামুল লাইলের জন্য জাগলে)।
.
◈ তাহাজ্জুদের জন্য উঠে অজুর পূর্বে মিসওয়াক করা মুস্তাহাব।
.
হুযাইফা (রা.) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের বেলা যখন তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য উঠতেন, তখন মিস্ওয়াক দ্বারা তাঁর মুখ পরিষ্কার করে নিতেন।’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৭০]
.
◈ তাহাজ্জুদের নামাজ প্রথমে স্বল্প-পরিসরে দুই রাকাত দিয়ে শুরু করা উত্তম।
.
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ রাতে নামাজ পড়ার জন্য উঠবে, সে যেন হাল্কাভাবে দুই রাকাত পড়ার মাধ্যমে নামাজ শুরু করে।” [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৬৮, আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩২৩]
.
◈ তাহাজ্জুদে দীর্ঘ কিয়াম করে অধিক পরিমাণে কুরআন পড়া উত্তম:
.
জাবির (রা.) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘কোন নামাজ সর্বোত্তম?’ তিনি বলেন, ‘‘যে নামাজে দীর্ঘ কিয়াম (দাঁড়িয়ে থাকা) হয়।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৫৬]
.
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘রাতে আমি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামাজ আদায় করলাম। তিনি এত দীর্ঘ সময় (নামাজে) দাঁড়িয়ে থাকলেন যে, আমি একটি মন্দ কাজের ইচ্ছা করে ফেলেছিলাম।’ (আবু ওয়াইল বলেন) আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি কী ইচ্ছা করেছিলেন?’ তিনি বললেন, ‘ইচ্ছা করেছিলাম, বসে পড়ি এবং নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইকতিদা ছেড়ে দিই।’ [বুখারি, আস-সহিহ: ১০৬৯]
.
যাদের বড় সূরা মুখস্থ নেই, তারা অনেকগুলো ছোট সূরা প্রতি রাকাতে পড়তে পারেন। তাহলে কিয়াম দীর্ঘ হবে।
.
◈ তাহাজ্জুদের নামাজ ২ রাকাত করে আদায় করা উত্তম; তবে, একত্রে চার রাকাত পড়াও বৈধ।
.
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘রাতের নামাজ দুই দুই রাকাত করে।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৪৭২; মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৪৯]
.
◈ তাহাজ্জুদ নামাজের রাকাতসংখ্যা:
.
তাহাজ্জুদের নামাজ সর্বনিম্ন ২ রাকাত থেকে শুরু করে ৪, ৬, ৮, ১০ রাকাতও পড়া যায়। এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। [আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩৫৭ ও ১৩৬২; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৫১৫৯]
.
তবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাধারণ আমল ছিলো, তিনি অধিকাংশ সময় রাতে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন। [বুখারি, আস-সহিহ: ১১৪৭]
.
#তাহাজ্জুদ
#রবের_সান্নিধ্যে (নবম পর্ব)
#তাহাজ্জুদ
#রবের_সান্নিধ্যে (দশম পর্ব)
©Tasbeeh
Page link- https://www.facebook.com/TasbeehZikr/
©Nusus
Page link- https://www.facebook.com/FromNusus
.
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo
.
>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"
.
>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক
https://justpaste.it/facebook_page_grp_link
.
>> র্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট
.
>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের pdf লিংক (৪০০+ বই)
.
>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.
https://justpaste.it/islamicappvideo
.
>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?
.
>> কুরআন এবং আপনি
.
>> কখনও ঝরে যেও না …
.
>> ফজরে আমি উঠতে পারি না
.
>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1
.
>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr
.
>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম
.
>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়
.
>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব
.
>> স্বার্থক মুনাজাত
.
>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ
.
>> তাহাজ্জুদ সিরিজ
.
>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব
.
>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)
.
>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ
.
>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ
.
>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল
.
>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf
.
>> দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo
.
>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)
.
>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir
.
>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh
.
>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5
.
>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1
.
>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j
.