JustPaste.it

দুআ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লেখাসমূহ, দুআ কবুলের সময় শর্তাবলী ও আদবসমূহ, দুআ কবুলের গল্পগুলো

 

 

দোয়া কবুলের আরও গল্প দেয়া হবে এখানে ইন শা আল্লাহ। শেয়ার করতে পারেন।

.

>> মহান আল্লাহর নাম ও তার অর্থ (আসমাউল হুসনা/ইসমে আজম)
https://www.hadithbd.com/99namesofallah/

.

দু'আ করতে কখনোই ভুলবেন না। যদিও যা নিয়ে দু'আ করছেন বিষয়টি খুব সহজ হয় এবং আপনি কোন অসুবিধা ছাড়াই এটি করতে সক্ষম হন- তাও দু'আ করুন। এমনকি বিপদে না পড়লেও দু'আ করুন।
যে ব্যক্তি স্বাচ্ছন্দ্যের সময় এবং সাধারণ বিষয়ে প্রচুর দু'আ করে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা তাকে কঠিন সময়ে দু'আ করার তাওফিক দান করেন।
নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—
"সহজ সময়ে আল্লাহকে স্মরণ করো, তিনি তোমাকে কঠিন সময়ে স্মরণ করবেন।"
:
-Dawah
---------------

 

>> আল্লাহ এর কাছে কি দোয়া করবেন.. [ চলুন জেনে নেই ]

☛, নিজের গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করবেন !
☛, গুনাহ থেকে বেঁছে থাকার জন্য দোয়া করবেন !
☛, আল্লাহর অনুগত বান্দা হওয়ার জন্য দোয়া করবেন !
☛, সুন্নাহ মেনে চলা সহজ হওয়ার জন্য দোয়া করবেন !
.
☛, অন্যের কাছে অপদস্থ না হওয়ার দোয়া করবেন !
☛, বদ নজর থাকে বাঁচার জন্য দোয়া করবেন !
☛, বিপদ বালা মছিবত থেকে বেচে থাকার জন্য দোয়া করবেন !
☛, নিজের হেদায়েতের জন্য দোয়া করবেন !
☛, ইসলামের উপর টিকে থাকার জন্য দোয়া করবেন !
☛, মুনাফিকি থেকে মুক্ত থাকার জন্য দোয়া করবেন !
.
☛, নিজের পরিবারবর্গের জন্য দোয়া করবেন !
☛, পিতামাতার জন্য দোয়া করবেন !
☛,সন্তান সন্ততির জন্য দোয়া করবেন !
☛, সন্তান সন্ততি স্বামী স্ত্রী-নিজের জন্য নয়ন তৃপ্তিকর হওয়ার জন্য দোয়া করবেন !
☛, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য দোয়া করবেন !
☛, সমস্ত মুসলিম উম্মার জন্য দোয়া করবেন !
☛, ছেলে মেয়েদের ইসলামী শিক্ষা দেওয়া সহজ হওয়ার জন্য দোয়া করবেন !
☛, ছেলে মেয়েরা যাতে ইসলামের উপর থাকে সেজন্য দোয়া করবেন !
.
☛, আত্মীয় স্বজনদের জন্য দোয়া করবেন !
☛, যারা আপনার কাছে দোয়া চেয়েছেন তাদের জন্য দোয়া করবেন !
☛, যে সমস্ত আত্মীয় স্বজন মারা গেছেন তাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করবেন !
☛, ইসলামের পথে থাকা সহজ হওয়ার জন্য দোয়া করবেন !
☛, ইসলাম সম্প্রসারণের জন্য দোয়া করবেন !
☛, ইসলামের জন্য বুককে সম্প্রসারণ করার জন্য দোয়া করবেন !
☛, আপনার প্রয়োজন পূরণের জন্য দোয়া করবেন !
.
☛, রোগ মুক্তির জন্য দোয়া করবেন !
☛,হালাল রিজিক সহজ হওয়ার জন্য দোয়া করবেন !
☛,হারাম কাজ থেকে বেচে থাকার জন্য দোয়া করবেন !
☛,সহজে ঋণ পরিশোধ হওয়ার জন্য দোয়া করবেন !
☛, কাফেরদের উতপীড়ন থেকে নিরাপদ থাকার দোয়া করবেন !
☛, অন্যের উপর বোঝা স্বরূপ না হওয়ার জন্য দোয়া করবেন !
☛, বিদাত থেকে বেচে থাকার জন্য দোয়া করবেন !
.
☛,শির্ক থেকে বেচে থাকার জন্য দোয়া করবেন !
☛, লোক দেখানো ইবাদত থেকে মুক্ত থাকার জন্য দোয়া করবেন !
☛, ঈমান বৃদ্ধির জন্য দোয়া করবেন !
☛,সকল অবস্থায় খাটি ঈমানদার হয়ে থাকার জন্য দোয়া করবেন !
☛, বদ অভ্যাস থেকে মুক্ত থাকার জন্য দোয়া করবেন !
.
☛, জান্নাতুল ফেরদৌস এর জন্য দোয়া করবেন !
☛,জাহান্নাম থেকে মুক্ত থাকার জন্য দোয়া করবেন !
☛,কবরের আযাব থেকে মুক্তির জন্য দোয়া করবেন !
☛,সকল বিকাল জিকির করা সহজ হওয়ার জন্য দোয়া করবেন !
☛,প্রতিদিন কুরআন তিলওয়াত করা সহজ হওয়ার জন্য দোয়া করবেন !
☛,নবীজির শাফায়াত নসীব হওয়ার জন্য দোয়া করবেন ।
☛, দাজ্জালের ফেতনা থেকে বেচে থাকার জন্য দোয়া করবেন !
.
☛, সকল রকম ফেতনা থেকে মুক্ত থাকার জন্য দোয়া করবেন !
☛, মনে যাতে মুমিনদের প্রতি হিংসা উৎপাদন না হয় সে জন্য দোয়া করবেন।

-------------------------

 

আপনি দু'আ করতে পেরেছেন তার মানে আল্লাহ্ আপনাকে দু'আ করার অনুপ্রেরণা দিয়েছে। যখন দু'আ করবেন মনে-প্রাণে দৃঢ় বিশ্বাস করবেন-আল্লাহ অবশ্যই আমার দু'আ কবুল করবেন। কারণ আল্লাহ অলস হৃদয়, বিক্ষিপ্ত মনের দু'আ কবুল করেন না।
আর আপনি যখন আপনার চিন্তাগুলোকে দু'আতে রূপান্তরিত করে ফেলবেন, আল্লাহ্ তা'আলা তখন আপনার সমস্যাগুলোকে তার রহমতে পরিণত করে দিবেন।
ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন," আল্লাহ যদি আপনার দু'আ কবুল নাই করতেন তাহলে তিনি আপনাকে দু'আ করার শক্তি দিতেন না, আপনি তাঁর থেকে দু'আ করার অনুমতিই পেতেন না। তাহলে তিনি আপনাকে প্রথমেই থামিয়ে দিতেন।"
#Dawah

--------------------------

 

দু‘আ করার ক্ষেত্রে আমরা একটি বিষয় খেয়াল রাখবো। সেটি হলো, এমন শব্দ ও বাক্য দিয়ে দু‘আ করবো, যেটি দিয়ে অনেক ধরনের কল্যাণ কামনা করা যায়। নবিজি এমনটি করতেন।
.
ইবনু সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার আব্বা আমাকে বলতে শুনলেন, (আমি এভাবে দু‘আ করছি) ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত, তাঁর সমস্ত নিয়ামত ও আনন্দদায়ক বস্তু চাই এবং আরও অন্যান্য বিষয়। আপনার কাছে আশ্রয় চাই—জাহান্নামের আগুন হতে, সেটির শক্ত শিকল ও হাতকড়া হতে, এবং অন্যান্য বিষয় হতে।’ তিনি তখন বললেন, হে আমার প্রিয় সন্তান! আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, ‘‘শীঘ্রই এমন জাতির আবির্ভাব হবে, যারা দু‘আর মধ্যে সীমালঙ্ঘন করবে।’’ সাবধান! তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বিরত থাকো। তোমাকে জান্নাত দেওয়া হলে সমগ্র জান্নাত ও তার যাবতীয় কল্যাণকর বিষয়ও দেওয়া হবে। আর যদি জাহান্নামের আগুন হতে রেহাই পাও, তাহলে সেটির যাবতীয় অকল্যাণ হতেই রেহাই পাবে।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৮০; হাদিসটি হাসান সহিহ]
.
আয়িশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন বাক্যে দু‘আ করা পছন্দ করতেন, যা দ্বারা অনেক বিষয় অন্তর্ভূক্ত থাকতো। [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৮২; হাদিসটি সহিহ]
.
নবিজির একান্ত সহচর আনাস (রা.) বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় এ দু‘আ পড়তেন—
.
اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِيْ الدُّنْيَا حَسَنَةً، وَفِيْ الآخِرَةِ حَسَنَةً، وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
.
(আল্লা-হুম্মা রব্বানা আ-তিনা ফিদ্দুন্ইয়া ‘হাসানাহ, ওয়া ফিল আ-খিরাতি ‘হাসানাহ, ওয়া ক্বিনা ‘আযা-বান না-র)
.
অর্থ: হে আল্লাহ—আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখিরাতেও কল্যাণ দিন এবং আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে থেকে রক্ষা করুন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৬৩৮৯]
.
উল্লেখ্য, শুরুতে ‘আল্লাহুম্মা’ ব্যতীত দু‘আটির বাকি অংশ হুবহু কুরআনে এসেছে। [সুরা বাকারাহ, আয়াত: ২০১]
.
হাদিসটির বর্ণনাকারী সাহাবি ও নবিজির খাদেম আনাস বিন মালিক (রা.) যখনই কোনো দু‘আ করতেন, তখন প্রথমে এই বাক্যটি দিয়ে দু‘আ করতেন। এরপর অন্য দু‘আ করতেন। তাঁরই ছাত্র কাতাদাহ (রাহিমাহুল্লাহ) এটি বর্ণনা করেছেন (সহিহ মুসলিমের বর্ণনা)। আর আবু দাউদের বর্ণনায় এসেছে, কেবল একটি দু‘আ করলে, তিনি এই দু‘আটিই করতেন। আর একাধিক দু‘আ করলে, প্রথমে এই দু‘আটি করতেন, এরপর অন্য দু‘আ করতেন। [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৭৩৩; ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৫১৯]
.
কারণ এই দু‘আটির অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। দুনিয়া এবং আখিরাতের সকল কল্যাণ এই দু‘আর মধ্যে শামিল আছে। নবিজির অধিকাংশ দু‘আই ছিলো এ ধরনের। কথা কম, কিন্তু অধিক ভাব ও মর্ম প্রকাশকারী।
.
অতএব, এখন থেকে আমরা দু‘আ করার ক্ষেত্রে এমনসব বাক্য দিয়ে দু‘আ করবো, যেগুলো ব্যাপক অর্থবোধক, যেগুলো দিয়ে সব কল্যাণ, নিরাপত্তা ইত্যাদি কামনা করা হয়। হাদিসে এ ধরনের দু‘আর অনেক উদাহরণ রয়েছে। সামনে ইনশাআল্লাহ, এ ধরনের কিছু দু‘আ আলোচনায় রাখবো।
.
-------------------------------

 

>> অনেক গুরুত্বপূর্ণ আমল! করতে পারলে

আমার একটা বেষ্ট ফ্রেন্ড আছে,ও কুয়ালালামপুরের স্থানীয়। একবার ওর বাসায় আমার দাওয়াত ছিল,ওর বাসায় যাওয়ার পর ওর রুমে আমি একটা আশ্চর্য জিনিস দেখেছি তাহলে ডিজিটাল নামাজের টাইম টেবিল। রুমের দেয়ালের সাথে বড় এক নামাজের জামাতের টাইম টেবিল সাজানো...
আমি কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম এই নামাজের টাইম টেবিল তো মসজিদে থাকে তোমার বাসায় কেন??
ও উত্তর দিলো এটা দেখে আমি আর আমার মা দোয়া করি!!কারন হাদিসে আছে আজান ইকামতের মাঝখানে দোয়া করলে তা ফেরত দেওয়া হয়না!! বাবা মসজিদ থেকে জামাতের টাইম দেখে এখানে চেইঞ্জ করে দেয়...আজান দিলেই আমি আর মা দোয়া করতে বসে যাই....
এতদিন যত দোয়া এই সময়ের মধ্যে করেছি তার অধিকাংশই কবুল হয়েছে....
আমি খুব ইন্সপায়ার হলাম, এরপর কুয়ালালামপুরের অনেক জায়গায় আমি নামাজের টাইম টেবিল খুঁজেছি কিন্তু পাইনি পরে কাগজে কম্পস করে নিয়েছিলাম
.
আমার ভার্সিটির ক্যাম্পাসের দক্ষিণ পাশে বড় এক মসজিদ আছে আর ওই মসজিদে মুয়াজ্জিনির সুমধুর কন্ঠর আজান যে কারো হৃদয়কে শান্ত করতে পারে। এখানে ছেলে মেয়ে সবার জন্য মসজিদ উন্মুক্ত আমি জেনে নিয়েছিলাম আযানের 15 মিনিট পরে এখানে জামাত হয় বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা এই 15 মিনিট আমার কাছে এখোনো মনে হয় কোটি টাকার চেয়েও দামি কারণ এই 15 মিনিট আমি যা দোয়া করতাম সবই কবুল হয়ে যেত।
.
একদিন আসরের আজান শেষ হওয়ার সাথে সাথে উদ্ভট এক দোয়া করে বসি!! 
ওইদিনই আমাদের একটা পরীক্ষা ছিল,পরীক্ষাটা আমার মোটেই ভালো হয়নি,আমি মনে মনে দোয়া করলাম হে আল্লাহ পরীক্ষাটা যদি বাতিল হত!!(উদ্ভট একারনে বললাম কারন এর আগে কখনো শুনিনি এখানের কোন পরীক্ষা বাতিল হয়েছে)
পরদিন সকালেই নোটিশ বোর্ডে লেখা দেখলাম গতকালের পরীক্ষা অনিবার্য কারনে বাতিল করা হয়েছে!!
আজান -ইকামতের মাঝখানে একাগ্রচিত্তে আপনিও দোয়া করে দেখতে পারেন ..ইনশাআল্লাহ দেখবেন কবুল হয়ে গেছে।
 
#ইকামাত_কি_এবং_এর_সময়ঃ
দু'আ কবুলের অন্যতম সময় হলো আযান
এবং ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়টুকু।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, "আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দু'আ ফিরিয়ে দেয়া হয়না।”
(আবু দাউদ ৫২১, তিরমিজি ২১২)
অনেক বোনের জিজ্ঞাসা "ইকামাত কী? 
আমরা কীভাবে বুঝব কখন ইকামাত হচ্ছে?"
মাসজিদে আযান হওয়ার ১৫/৩০ মিনিট পর জামাতে নামায শুরু হয়।
জামাতে নামায শুরুর পূর্ব মুহূর্তে আযানের বাক্যগুলো দিয়ে মাসজিদে আবার আযান দেয়া হয়, যাতে সবাই জামাতে এসে শামিল হয়।
এটাকেই ইকামাত বলে।
এটি আযানের মত এত দীর্ঘ ও উচ্চ আওয়াজে (মাইকে) বলা হয় না, বরং একটু দ্রুত বলা হয়।
ইকামাত শেষ হওয়া মাত্রই জামাতের সাথে নামায শুরু হয়ে যায়।
.
আযানের কতক্ষণ পর ইকামাত শুরু হয়?
১। সাধারণত ফজরের আযানের ৩০ মিনিট পর ইকামাতের মাধ্যমে জামাত শুরু হয়ে যায়।
যেমনঃ বর্তমানে ভোর ৪:৩০-এ ফজরের আযান হয় ও ৫:০০-টায় ইকামাতের মাধ্যমে জামাত শুরু হয়ে যায়।
২। দেশের অধিকাংশ মাসজিদে ১টায় আযান হয় এবং দেড়টায় ইকামাতের মাধ্যমে জামাত শুরু হয়।
অনেক স্থানে আবার সোয়া একটায়ও জামাত শুরু হয়।
৩। আসরের আযানের ১৫ মিনিট পর ইকামাতের মাধ্যমে জামাত শুরু হয়।
৪। মাগরিবের আযানের পরপরই জামাত শুরু হয়।
সাধারণত ২ থেকে ৫ মিনিট পরই জামাত শুরু হয়।
৫। ইশার আযানের ১৫ মিনিট পর জামাত শুরু হয়।
.
সাধারণভাবে আযান থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে দু'আ করতে পারেন নিঃসংকোচে। কারণ ১৫ মিনিট আগে কোথাও ইকামাত শুরু হয় না (মাগরিব বাদে)।
এ সময় বেশি বেশি দু'আ করুন। 
দুআর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করবেন। সেটা হতে পারে সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াত বা আয়াতুল কুরসির প্রথম লাইনটি (কিংবা পুরোটা)।
এরপর দুরুদে ইবরাহীম (যেটা নামাযের শেষ বৈঠকে পড়ি) পড়বেন।
এরপর নিজের মত করে দু'আ করবেন। 
দু'আর মাঝে একটু পর-পর "ইয়া হাইয়ু ইয়া ক্বাইয়ূমু" পড়তে থাকবেন।
দু'আ ইউনুসও পড়বেন (লা ইলাহা ইল্লা আনতা... যোয়ালিমিন)।
.
দু'আ শেষ করবেন আগের মতই-- আল্লাহর প্রশংসা, অতপর দুরূদ এরপর "আমীন" বা "ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম" বলে দু'আ শেষ করবেন।
অথবা আল্লাহর কোন গুণবাচক নাম দিয়ে ।
#সংগৃহীত

----------------------

 

>> কেন আমাদের দোয়া কবুল হচ্ছে না ?

একদিন ইবরাহীম ইবনে আদহাম (র) (মৃত্যুঃ১৬২
হিজরী) বসরা শহরের একটি বাজারের পাশ দিয়ে
যাচ্ছিলেন। লোকজন তাঁর পাশে সমবেত হয়ে
জিজ্ঞাসা করলঃ হে আবু ইসহাক! আল্লাহ সুবহানাহু
তাআলা কুরআনে বলেন, ‘আমাকে ডাকো, আমি
তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো’ কিন্তু আমরা
অনেক প্রার্থনা করার পরেও আমাদের দোয়া
কবুল হচ্ছে না।
তখন তিনি বললেন, ‘ওহে বসরার অধিবাসী, দশটি
ব্যাপারে তোমাদের অন্তর মরে গেছে-
(১) তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে অবগত কিন্তু তাঁর
প্রদত্ত কর্তব্যসমূহ পালন কর না।
(২) তোমরা কুরআন পড় কিন্তু সে অনুযায়ী
আমল কর না।
(৩) তোমরা দাবী কর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে
ভালোবাসো কিন্তু তাঁর সুন্নাহকে পরিত্যাগ কর।
(৪) তোমরা নিজেদেরকে শয়তানের শত্রু
হিসেবে দাবী কর কিন্তু তোমরা তার পদাংক
অনুসরণ কর।
(৫) তোমরা জান্নাতে যেতে উদগ্রীব কিন্তু
তার জন্য পরিশ্রম কর না।
(৬) তোমরা জাহান্নামের ভয়ে আতঙ্কিত কিন্তু
পাপের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তার নিকটবর্তী
হচ্ছো।
(৭) তোমরা স্বীকার কর মৃত্যু অনিবার্য কিন্তু তার
জন্য নিজেকে প্রস্তুত কর না।
(৮) তোমরা সর্বদা অন্যের দোষ বের করতে
সচেষ্ট কিন্তু নিজের দোষ-ত্রুটির ব্যাপারে
উদাসীন।
(৯) তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ উপভোগ কর কিন্তু
তার জন্য শুকরিয়া আদায় কর না।
(১০) তোমরা মৃতদেহের দাফন সম্পন্ন করার পর
তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর না।
(আবু নুয়াইম, হিলিইয়া আল-আউলিয়া ৮:১৫,১৬)
-------------------

 

>> কীভাবে দু'আ করলে আল্লাহ কবুল করবেন?
(দু'আ কবুলের শর্তাবলী ও আদবসমূহ)

.
(১) দৃঢ় বিশ্বাস রেখে দু'আ করা : 
রাসূল সা. বলেন, "হে মানুষেরা! তোমরা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে তখন কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে চাইবে; কারণ কোনো বান্দা অমনোযোগী অন্তরে দু'আ করলে আল্লাহ তার দু'আ কবুল করেন না।" (সহিহুত তারগিব ২/১৩৩, হাসান)
:
(২) প্রথমে নিজের জন্য দু'আ করা :
আবু আইয়ূব আনসারি রা. বলেন, "নবি সা. যখন দু'আ করতেন তখন নিজেকে দিয়ে শুরু করতেন।" (আহমাদ ৫/১২১, মাজমাউয যাওয়াইদ ১০/১৫২, হাসান) 
:
(৩) অনুপস্থিতের জন্য দু'আ করলে কবুল হয় :
রাসূল সা. বলেন, "কোনো মুসলিম যখন তার কোনো অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য দু'আ করে তখন আল্লাহ তার দু'আ কবুল করেন।" (মুসলিম ৪/২০৯৪) 
:
(৪) আল্লাহর ইসমে আযম (মহিমান্বিত নাম) দিয়ে দু'আ করা :
এক ব্যক্তি সালাতের বৈঠকে আল্লাহর ইসমে আযম দিয়ে দু'আ করছিলেন। তখন রাসূল সা. বলেন, "নিশ্চয়ই সে আল্লাহর কাছে তাঁর ইসমে আযম ধরে দু'আ করেছে, যে নামে ডাকলে তিনি সাড়া দেন এবং যে নামে চাইলে তিনি প্রদান করেন।" (সহিহু সুনানিন নাসাঈ ১/২৭৯, সহিহ)
:
(৫) দু'আ ইউনুস দিয়ে দু'আ করা :
রাসূল সা. বলেন, যুন্নুন (ইউনুস আ.) মাছের পেটে যে দু'আ করেছিলেন - লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যোয়ালিমীন - এ দু'আ দ্বারা যে কোন মুসলিম যে কোন বিষয়ে দু'আ করবে, আল্লাহ অবশ্যই তার দু'আ কবুল করবেন।" (তিরমিযি ৫/৪৯৫, মাজমাউয যাওয়াইদ ৭/৬৮, সহিহ) 
উল্লেখ্য, দু'আ ইউনুস এক প্রকার ইসমে আযম।
:
(৬) দু'আর প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করা এবং রাসূলের উপর দরুদ পাঠ :
একবার ইবনে মাস'ঊদ রা. সালাতের বৈঠকে বসে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও গুণ বর্ণনা করেন, অতপর রাসূলের উপর দরুদ পাঠ করেন, তারপর নিজের জন্য দু'আ করেন। তখন রাসূল সা. বলেন, "এখন চাও, তোমার প্রার্থিত বস্তু তোমাকে দেয়া হবে।" (তিরমিযি ২/৪৮৮)
রাসূল সা. বলেন, "সকল দু'আ পর্দার আড়ালে থাকবে, যতক্ষণ না নবির উপর সালাত পাঠ করবে।" (সহিহাহ ৫/৫৪-৫৮, সহিহুত তারগিব ২/১৩৮, হাসান)
:
(৭) রাতের শেষাংশে ও ফরয সালাতের পর :
রাসূল সা. কে প্রশ্ন করা হলো, 'কোন দু'আ সবচেয়ে বেশি শোনা হয় বা কবুল করা হয়?' তিনি উত্তরে বলেন, "রাতের শেষাংশে ও ফরয সালাতের পর।" (তিরমিযি ৫/৪৯২, হাসান)

(৮) জিহাদের ময়দানে, আযানের সময়ে ও আযানের পরে (আযানের জবাব দেয়ার পর) দু'আ কবুল হয় :
রাসূল সা. বলেন, "দুটি দু'আ কখনো ফেরত দেয়া হয় না বা খুব কমই ফেরত দেয়া হয় : আযানের সময় দু'আ (দ্বিতীয় বর্ণনায় ইকামাতের সময়) এবং আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের সময় দু'আ...।" (আবু দাঊদ ৩/২১, হাকিম, ইবনে খুযাইমা, ইবনে হিব্বান, সহিহুত তারগিব ১/১৮০, সহিহ) 
রাসূল সা. বলেন, "মুয়াযযিনগণ যা বলে তুমি তা বল (আযানের জবাব দাও)। যখন শেষ করবে, তখন আল্লাহর কাছে চাও; তুমি যা চাইবে তোমাকে তা দেয়া হবে।" (আবু দাঊদ ১/১৪২, সহিহুত তারগিব ১/১৭৭, ১৮১, হাসান)
:
(৯) জুমু'আর দিনে বিশেষ মুহূর্তে দু'আ কবুল হয় :
অধিকাংশ আলেমের মতে সেই সময়টি সূর্যাস্তের পূর্বের মুহূর্তটি। অনেকের মতে, ইমাম খুতবা শুরুর পর থেকে সালাম ফেরানো পর্যন্ত। (বুখারি ১/৩১৬ মুসলিম ২/৫৮৪, তুহফাতুয যাকিরিন, লি শাওকানি ৪০-৪১)
:
(১০) আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় :
রাসূল সা. বলেন, "আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে দু'আ ফেরত দেয়া হয় না। অতএব, এ সময়ে তোমরা দু'আ করবে।" (আবু দাঊদ ১/১৪১, মাজমাউয যাওয়াইদ ১/৩৩৪, সহিহুত তারগিব ১/১৮০, সহিহ)
:
(১১) এছাড়া দু'আ কবুলের বিশেষ কিছু সময়, স্থান ও মুহূর্ত হলো : 
সফর অবস্থায়, হজ্বরত অবস্থায়, রমাদান মাস, ফরয/নফল সিয়াম পালনরত অবস্থায়, ইফতারের সময়, যমযমের পানি পানের সময় ইত্যাদি।ন্যায়পরায়ণ প্রশাসক, মুসাফির, পিতা-মাতা, মাযলুম ব্যক্তি প্রমূখের দু'আ কবুল হয়।
:
(১২) খাবার, পানীয় ও বস্ত্র হালাল হওয়া :
রাসূল সা. বলেন, "হে লোকেরা! আল্লাহ হলেন পূত-পবিত্র। তিনি পবিত্র ছাড়া কোনোকিছু কবুল করেন না।... কোনো মুসাফির দীর্ঘ সফর শেষে মলিন বদনে আল্লাহর কাছে দু'আ করে বলে, "ইয়া রাব্ব! ইয়া রাব্ব!" অথচ তার আহার হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পরিধেয় পোষাক হারাম, অধিকন্তু সে হারাম দ্বারা পরিপুষ্ট হয়েছে। তাহলে কীভাবে তার দু'আ কবুল হতে পারে?" (মুসলিম, হাদিস নং ২৩৯৩)
.
সর্বশেষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদিস- যা আমাদের জানতেই হবে। নয়তো আমরা হয়রান হয়ে যাব। 
রাসূল সা. বলেন, "যখনি কোনো মুসলিম পাপ ও আত্মীয়তা নষ্ট করা ছাড়া অন্য যে কোন বিষয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে, তখনই আল্লাহ তার প্রার্থনা পূরণ করে তাকে তিনটি বিষয়ের একটি দান করেন : (১) হয় তার প্রার্থিত বস্তুই তাকে সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেন (২) অথবা তার দু'আকে (দু'আর নেকি) তার আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে রাখেন (৩) অথবা দু'আর পরিমাণে তার অন্য কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন। (তিরমিযি ৫/৫৬৬, আহমাদ ৩/১৮) 
অন্য এক হাদিসে এসেছে, বান্দা যখন দু'আর বিনিময়ে সঞ্চিত সওয়াবের পরিমাণ দেখবে তখন কামনা করবে, যদি তার কোনো দু'আই দুনিয়াতে কবুল না হতো! সবই যদি আখিরাতের জন্য জমা থাকতো! (তারগিব ২/৪৭৫-৪৭৬, দ্ব'ঈফ)
.
অতএব আমরা যেন কখনো হতাশ না হই! কারণ তিনটি পদ্ধতিতে আমাদের দু'আ কবুল হয়। আমাদের রবই জানেন কোনটি কখন আমাদের বেশি জরুরি। 
.
@Naseehah (দ্বীনি পরামর্শ)
-----------------------

 

আজকের দীনী আলোচনা -
ثل ذكر الله .
(অধিক পরিমাণে) যিকির করার দ্বারা হায়াতে বরকত হয়। যিকিরের মতো (এত সহজ) আর কোন আমল নেই, যা কোনো বান্দা সব জায়গায়, সব সময়, সব হালাতে করতে পারে।
-শাইখ আব্দুল আজিজ তারিফী হাফি.
 
সত্যিই বড় দূর্ভাগ্যের
 
إذا أحب الله عبدا وفقه لعمل صالح يسير بأجر عظيم، ولا يوجد عبادة أيسر عملا وأعظم أجرا من ذكر الله، ويظهر حرمان الإنسان بعدم التوفيق لها .
আল্লাহ যখন কোন বান্দাকে ভালোবাসেন তখন তাকে এমন নেক আমলের তাওফিক দেন যা করা সহজ, তবে পুরস্কার অনেক বেশি। আর আল্লাহর যিকির অপেক্ষা সহজ এবং অধিক সওয়াবের আর কোনো আমল নেই। এই আমলটি করার তাওফিক না পাওয়া বান্দার জন্য সত্যিই বড় দূর্ভাগ্যের বিষয়।
-শাইখ আব্দুল আজীজ তারিফী হাফি.
------------------------

 

>> একজন মুমিনের সম্মান তার দুআয়

একজন মুমিনের সম্মান তার দুআয়। দুআর মাধ্যমে মুমিন সরাসরি আল্লাহর সাথে কথা বলে। যিনি প্রতিপালক এই জগতের, যিনি প্রতিপালক ধনীদের, তেমনি গরীবদের। বান্দার ডাক তাঁর কাছে এতটাই প্রিয় যে, তিনি এটা দেখেন না, বান্দা তাঁর ইবাদত- গুজার না অবাধ্য পাপী। বান্দা যখন আন্তরিকভাবে, একনিষ্ঠ মনে তাঁকে ডাকে, তিনি সাড়া না দিয়ে পারেন না।
.
তথাপি আমরা দেখি অনেক সময় দুআ কবুলে বিলম্ব হয়। আমাদের মাঝে এমন কত দুআকারী-ই না আছে, যারা কোনো কিছু চেয়ে দুআ করেছে, কিন্তু এখনও কবুল হয়নি। দুআ কবুলের এই কাল-বিলম্বতা আমাদের পেরেশান করে তোলে। ধৈর্যের এই পরীক্ষায় অনেকে হার মেনে যায়। ফলে কাউকে কাউকে দূরে সরিয়ে দেয় ইসলাম থেকে। কেন আমাদের সব দুআ কবুল হয় না? এ ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?
.
(১) প্রথমত আমাদের বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহই আমাদের রব, আমাদের মালিক। আমরা তাঁর মুখাপেক্ষী, তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। তাই রবের অধিকার রয়েছে, তিনি চাইলে দিতে পারেন, না-ও দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বান্দার অধিকার নেই অভিযোগ করার। এটাই উবুদিয়্যাতের(দাসত্বের) পরিচয়। দুনিয়ার দাসত্ব এবং আল্লাহর দাসত্বের পার্থক্য এখানেই। দুনিয়ার দাসেরা অসন্তোষ মনে মনিবের নির্দেশ মানে, সর্বক্ষণ সুযোগের সন্ধানে থাকে কীভাবে দাসত্বের এই শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাবে। আর আল্লাহর দাসেরা স্বেচ্ছায়, সন্তুষ্ট মনে আল্লাহর দাসত্ব করে। সর্বক্ষণ সুযোগ খোঁজে কীভাবে আল্লাহর আরও প্রিয় হবে। তাই রব যাই নির্দেশ দিক, যে তাকদীরই নির্ধারণ করুক, বান্দারা সন্তুষ্ট মনে গ্রহণ করে, তারা চির কৃতজ্ঞ।
.
(২) দুনিয়ার ডাক্তাররা এমন অনেক কাজই করে, অনেক ঔষধই খেতে বলে, যার প্রকৃত স্বরূপ রোগী উদ্ধার করতে পারে না। শুধু এতটুকু বোঝে, এর পেছনে কল্যাণ আছে, প্রজ্ঞা আছে। আল্লাহ্‌ তাআলা প্রজ্ঞার আঁধার। সবচেয়ে বড় ডাক্তার। তিনি অদৃশ্য থেকে সৃষ্টি করেন, সৃষ্টিকে মৃত্যু দেন, আবার তিনিই জীবিত করবেন। তাঁর অসীম প্রজ্ঞার সামান্য সূতাও আমরা উন্মোচন করতে পারব না। কারও দুআ কবুলের পেছনে যেমন তাঁর প্রজ্ঞা আছে, তেমনি দুআকে বিলম্বিত করার পেছনেও রয়েছে গভীর প্রজ্ঞা। মনে রাখবেন, আল্লাহ্‌ তাআলা কখনও কখনও দুনিয়া দেন ব্যক্তিকে পরীক্ষায় ফেলার জন্য, আযাব দেবার জন্য। আবার কাউকে দেয়া থেকে বিরত থাকেন তার প্রতি দয়াপরবশ হয়ে, ভালোবেসে।
.
(৩) মাঝে মাঝে বিলম্বে সাড়া প্রদানই বান্দার জন্য কল্যাণকর। বরং ত্বরান্বিত হলে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। আল্লাহর রাসূল ﷺ বলেন, 'বান্দা ততক্ষণ পর্যন্ত কল্যাণের মধ্যে থাকবে, যতক্ষণ সে তাড়াহুড়ো না করবে।' সাহাবীগণ প্রশ্ন করলেন, 'কীরূপ তাড়াহুড়ো আল্লাহর রাসূল?' নবীজি শুধালেন, 'সে বলবে, "আমি আমার রবকে ডেকেছি, কিন্তু তিনি আমার ডাকে সাড়া দেননি।"' [মুসনাদে আহমাদ, ২৬/১২৫৩৮] কাজেই সবরেই কল্যাণ। দুআর জবাব এপারে না মিলুক, ওপারে তো মিলবেই।
.
(৪) দুআ কবুল না হবার পেছনে অনেক সময় ব্যক্তি নিজেই দায়ী থাকে। যেমন: খারাবে হারামের অনুপ্রবেশ ঘটা, দুআর সময় উদাসীন থাকা, কিংবা এমন কোনো গুনাহ থাকা যা থেকে সে এখনও তাওবাহ করেনি। ফলে শাস্তিস্বরূপ তাকে সাড়া দেয়া হচ্ছে না, প্রয়োজন মেটানো হচ্ছে না। তাই নিজের গুনাহকে চিহ্নিত করুন। অনতিবিলম্বে তাওবাহ করুন। দান সদকা করুন, যাতে আল্লাহর ক্রোধ নিভে যায়।
.
(৫) আমরা প্রায়ই এমন কিছুর জন্য মরিয়া হয়ে থাকি, যা আপাতদৃষ্টিতে আমাদের কাছে উপকারী মনে হলেও বস্তুত ক্ষতিকর। হতে পারে কাঙ্ক্ষিত বিষয়টি পেয়ে গেলে আমি গুনাহের সাগরে নিমজ্জিত হবো, আমাদের সম্মান ধূলিসাৎ হবে। তাই হতাশ না হয়ে চিন্তা করুন। ভাবুন, আপনার দুআর উদ্দেশ্য কী? এর বিকল্প খুঁজে বের করুন। হয়ত আপনি যা অপছন্দ করছেন, তাতেই আপনার কল্যাণ নিহিত আছে।
.
(৬) ইতিহাস বলে, আল্লাহ্‌ যাকে বেশি ভালোবাসেন, তাকে বেশি বেশি পরীক্ষায় ফেলেন। কিন্তু কেন? কখনও কি ভেবে দেখেছেন? কারণ, তিনি জানেন, বিপদ তাকে আল্লাহর দুয়ারে নিয়ে আসবে। আল্লাহর আরও কাছে নিয়ে যাবে। তিনি চান, বান্দা আশা আর ভরসার ডানায় ভর করে পাড়ি দিক এই দুনিয়া। তাঁকে ডেকে চলুক, যখন সবাই হতাশ হয়ে ফেরে। তাঁর প্রতি মরিয়া হয়ে থাকুক, যখন সবাই গাফেল থাকে। আল্লাহ্‌ তাআলা খুব ভাল করেই জানেন, কোন জিনিস বান্দাকে তাঁর থেকে ফিরিয়ে রাখে। আর যাকে তিনি ভালোবাসেন, তাকে তিনি এর থেকে দূরে রাখেন। তাকে ঢেকে রাখেন ভালোবাসার চাদরে, যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা তার মাওলার সাথে সাক্ষাৎ করছে।
.
'হৃদয়ের দিনলিপি—ইমাম ইবনুল জাওযী রহ.' অবলম্বনে
লেখা: ওয়াফি লাইফ এ্যাডমিন
-----------------------

 

>> জুমআর দিন বাদ আসর সালাফদের আমল

 
كان سعيد بن جبير رحمه الله إذا صلى العصر لم يكلم أحدا حتى تغرب الشمس - يعني كان منشغل بالدعاء . زاد المعاد : ١/٢٨٢
 
বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত সাঈদ বিন জুবায়ের রহ. (জুমআর দিন) আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত কারো সাথে কথা বলতেন না। (পুরো সময়টা দোয়াতে মশগুল থাকতেন)
ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ.; যাদুল মাআদ : 1/282
 
ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. বলেন,
 
يوم الجمعة يوم العبادة، وهو في الأيام كشهر رمضان في الشهور، وساعة الإجابة فيه كليلة القدر في رمضان .
 
জুমআর দিনটি হল ইবাদতের দিন। মাসের মধ্যে রমজান মাস যেমন, দিনের মধ্যে জুমআর দিনটি ঠিক তেমন। জুমআর দিনের দোয়া কবুল হওয়ার (বিশেষ) সময়টি রমজান মাসের লাইলাতুল কদরের মতো।- ইবনুল কাইয়িম রহ.; যাদুল মাআদ- 1/386
 
তিনি আরও বলেন,
 
هذه الساعة هي آخر ساعة بعد العصر، يعظمها جميع أهل الملل . زاد المعاد
 
জুমআর দিন যে সময়টিতে দোয়া কবুল হয় তা হল, আসরের পরের শেষ সময়টি। সব ধর্মাবলম্বীরাই এই সময়টির খুব কদর করে থাকে। যাদুল মাআদ : 1/284
 
ইমাম ইবনুল আসাকির রহ. তাঁর বিখ্যাত 'তারীখে দিমাশক' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন,
 
أصاب العمى الصلت بن بسطام رحمه الله فجلس إخوانه يدعون له عصر الجمعة، وقبل الغروب عطس عطسة، فرجع بصره .
 
একবার হযরত সালত বিন বোস্তাম রহ. দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তখন তার বন্ধুবান্ধবরা তাঁর জন্য জুম'আর দিন আসরের পর দোয়া করতে থাকে। মাগরিবের পূর্বে তার একটি হাঁচি আসে এবং তাঁর দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসে। ইবনে আসাকির; তারীখে দিমাশক
---------------------

 

>> কুরআন-হাদীসে বর্ণিত সব দুআর নির্যাস ৬টি জিকির ও দুআ

 

 
«اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ, اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ»
উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ছল্লি ‘আলা- মুহাম্মাদ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদ কামা ছল্লায়তা ‘আলা- ইবরা-হীম ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লা-হুম্মা বা-রিক ‘আলা- মুহাম্মাদ ওয়া ‘আলা- আ-লি মুহাম্মাদ কামা বা-রকতা ‘আলা- ইবরাহীম ওয়া ‘আলা- আ-লি ইবরাহীম ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।
 
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদের উপর এবং মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের উপর সালাত প্রেরণ (তাদেরকে ভালো হিসেবে স্মরণ) করুন, যেমনিভাবে আপনি ইবরাহীমের উপর এবং ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর সালাত প্রেরণ করেছিলেন। নিশ্চয়ই আপনি মহা প্রশংসিত, মহা সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন মুহাম্মাদের উপর এবং মুহাম্মাদের পরিবার-পরিজনের উপর, যেমনিভাবে আপনি বরকত নাযিল করেছিলেন ইবরাহীমের উপর এবং ইবরাহীমের পরিবার-পরিজনের উপর। নিশ্চয়ই আপনি মহা প্রশংসিত, মহা সম্মানিত।
 
 
«أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ القَيّوُمُ وَأَتُوبُ إِلَيهِ».
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হাল ‘আযীমল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুয়াল হাইয়্যুল কায়্যূমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।
 
অর্থঃ আমি মহামহিম আল্লাহ্‌র নিকট ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তিনি চিরস্থায়ী, সর্বসত্তার ধারক। আর আমি তাঁরই নিকট তওবা করছি।’ আল্লাহ তাকে মাফ করে দিবেন যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নকারী হয়।
 
 
يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ».
উচ্চারণঃ ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকরা-ম।
 
অর্থঃ , হে মহিমাময় ও সম্মানের অধিকারী, আপনি বরকতময়।
 
«لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ».
উচ্চারণঃ লা হাউলা ওয়ালা কূওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ।
অর্থঃ আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।
 
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।
 
অর্থঃ একমাত্র তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিশ্চয়ই আমি সীমালঙ্ঘনকারী
 
«سُبْحَانَ اللَّهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ».
উচ্চারণঃ সুবহানাল্লা-হি ওয়ালহাম্‌দু লিল্লা-হি ওয়ালা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াল্লা-হু আকবার।
 
অর্থঃ আল্লাহ পবিত্র-মহান। সকল হামদ-প্রশংসা আল্লাহর। আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আল্লাহ সবচেয়ে বড়।
-------------------

 

>> রেফারেন্স সহ দোয়া কবুলের ২৮ টি স্থান বা ক্ষেত্র বা পাত্র, বিভিন্ন হাদিস দ্বারা জানা যায় সেইগুলি হলোঃ--
=====================
১) অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য দুয়া (কোন মুসলিমের পিছনে বা অগোচরে অন্য মুসলিমের দুয়া)।(মুসলিম ৬৮২২)
২) জালিমের বিরুদ্ধে মাজলুম ব্যক্তির দুয়া।(জামে আত তিরমীযি ৩৪৪৮)
৩) বাবা তার সন্তানের জন্য দুয়া (নেক দুয়া বা বদ দুয়া)
((তিরমীযি ৩৪৪৮))
৪) নেককার সন্তানের দুয়া (তার বাবা মায়ের জন্য তাদের মৃত্যুর পর)( আবু দাউদ ২৮৮০)
৬) আরাফাতের ময়দানে দুয়া।(তিরমীযি ৩৫৮৫)
৬) বিপদগ্রস্ত অসহায় ব্যক্তির দুআ (সূরা নামাল ৬২,৫৭ ও সূরা ইসরার ৬৭ নাম্বারর আয়াত)
৭) সেজদায় দুয়া।(নাসায়ী ১০৪৫)
৮) হজ্জের স্থানসমূহে দুয়া (যেমন: আরাফা, মুজদালিফা, মিনা...)(ইবনে মাজাহ২৮৯২)
০৯) হাজ্জীর দুয়া (হজ্জ করা অবস্থায়)।(ইবনে মাজাহ২৮৯৩)
১০) উমরাহকারীর দুয়া (উমরাহ করার সময়)।(নাসায়ী ২৬২৫
১১) আযানের পর দুয়া।(তিরমীযি ২১০)
১২) যুদ্ধ চলাকালীন সময় দুয়া।(আবু দাউদ২৫৪০)
১৩) বৃষ্টি বর্ষণকালে দুয়া।(আবু দাউদ ২৫৪০)
১৪) শেষ রাতের দুয়া,তাহাজ্জুদ(বুখারী ১১৪৫)
১৫) জুম্মার দিনে দুয়া,,আছরের শেষ দিকে তালাশ করার জন্য নির্দেশ আছে।(নাসায়ী১৩৮৯)
১৬) লাইলাতুল কদর এর দুয়া।(বুখারী ও মুসলিম)
১৭) আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় দুয়া।(আহমাদ ১৪৬৮৯)মুসলিম ৬৬৮
১৮)ফরয স্বলাতের শেষ অংশে দুয়া( সালাম ফিরানোর আগে)।(রিয়াদুস স্বালেহিন ১৫০৮,তিরমিযি ৩৪৯৯)
১৯) মুসাফির ব্যক্তির দুয়া (সফর অবস্থায়)।(তিরমী
যি ৩৪৪৮)
২০) রোজাদার ব্যক্তির দুয়া (রোজা অবস্থায়)।(ইবনে মাজাহ ১৭৫২)
২১) ন্যায়পরায়ণ শাসকের দুয়া।(তিরমীযি ২৫২৬)
২৩) দুয়া ইউনুস পাঠ করে দুয়া করলে কবুল হয়।(তিরমিযি৩৫০৫)
২৪) ইসমে আযম পড়ে দুয়া করলে কবুল হয়।(ইবনে মাজাহ ৩৮৫৬)
২৫) বিপদে পতিত হলে যে দুয়া পড়া হয়(ইন্না লিল্লা-হি......রাজিউন)
এবং
(আল্লা-হুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া ওয়াখলিফলী খইরাম মিনহা...) তখন দুয়া কবুল হয়।(মিশকাতুল মাসীবাহ ১৬১৮,মুসলিম ৯১৮)
২৬) জমজমের পানি পান করার পর দুয়া।(ইবনে মাজাহ ৩০৬২,আহমদ ৩/৩৫৭)
২৭) নির্যাতিতের দুয়া (তিরমিযি৩৪৪৮)
২৮) দু হাত তুলে দোয়া করা,আল্লাহ বান্দার খালি হাত ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন(আবু দাউদ ১৪৮৮)
-Saheeh Amal page
-------------------------

 

>> দোয়া কবুল হওয়ার শর্তগুলো কি কি; যাতে দোয়াটি আল্লাহ্‌র কাছে কবুল হয়

প্রশ্ন:

দোয়া কবুল হওয়ার শর্তগুলো কি কি; যাতে দোয়াটি আল্লাহ্‌র কাছে কবুল হয়?

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

দোয়া কবুল হওয়ার বেশকিছু শর্ত রয়েছে। যেমন:

১. আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কাউকে না ডাকা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন: “যখন প্রার্থনা করবে তখন শুধু আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করবে এবং যখন সাহায্য চাইবে তখন শুধু আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চাইবে।”[সুনানে তিরমিযি (২৫১৬), আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

এটাই হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণীর মর্মার্থ “আর নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহ্‌রই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।”[সূরা জিন্‌, আয়াত: ১৮] দোয়ার শর্তগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এ শর্ত পূরণ না হলে কোন দোয়া কবুল হবে না, কোন আমল গৃহীত হবে না। অনেক মানুষ রয়েছে যারা নিজেদের মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে মৃতব্যক্তিদেরকে মাধ্যম বানিয়ে তাদেরকে ডাকে। তাদের ধারণা যেহেতু তারা পাপী ও গুনাহগার, আল্লাহ্‌র কাছে তাদের কোন মর্যাদা নেই; তাই এসব নেককার লোকেরা তাদেরকে আল্লাহ্‌র নৈকট্য হাছিল করিয়ে দিবে এবং তাদের মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে মধ্যস্থতা করবে। এ বিশ্বাসের কারণে তারা এদের মধ্যস্থতা ধরে এবং আল্লাহ্‌র পরিবর্তে এ মৃতব্যক্তিদেরকে ডাকে। অথচ আল্লাহ্‌ বলেছেন: “আর আমার বান্দারা যখন আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (তখন আপনি বলে দিন) নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী। দোয়াকারী যখন আমাকে ডাকে তখন আমি ডাকে সাড়া দিই।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬]

২. শরিয়ত অনুমোদিত কোন একটি মাধ্যম দিয়ে আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে ওসিলা দেয়া।

৩. দোয়ার ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করা। তাড়াহুড়া করা দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বড় বাধা। হাদিসে এসেছে, “তোমাদের কারো দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাড়াহুড়া করে বলে যে: ‘আমি দোয়া করেছি; কিন্তু, আমার দোয়া কবুল হয়নি”[সহিহ বুখারী (৬৩৪০) ও সহিহ মুসলিম (২৭৩৫)]

সহিহ মুসলিমে (২৭৩৬) আরও এসেছে- “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে। বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাড়াহুড়া বলতে কী বুঝাচ্ছেন? তিনি বললেন: বলে যে, আমি দোয়া করেছি, আমি দোয়া করেছি; কিন্তু আমার দোয়া কবুল হতে দেখিনি। তখন সে ব্যক্তি উদ্যম হারিয়ে ফেলে এবং দোয়া ছেড়ে দেয়।”

৪. দোয়ার মধ্যে পাপের কিছু না থাকা। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া না  হওয়া; যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদিসে এসেছে- “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে।”

৫. আল্লাহ্‌র প্রতি ভাল ধারণা নিয়ে দোয়া করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তেমন।”[সহিহ বুখারী (৭৪০৫) ও সহিহ মুসলিম (৪৬৭৫)] আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে, “তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস (একীন) নিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া কর।”[সুনানে তিরমিযি, আলাবানী সহিহুল জামে গ্রন্থে (২৪৫) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]

তাই যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করে আল্লাহ্‌ তার উপর প্রভুত কল্যাণ ঢেলে দেন, তাকে উত্তম অনুগ্রহে ভূষিত করেন, উত্তম অনুকম্পা ও দান তার উপর ছড়িয়ে দেন।

৬. দোয়াতে মনোযোগ থাকা। দোয়াকালে দোয়াকারীর মনোযোগ থাকবে এবং যাঁর কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে তাঁর মহত্ত্ব ও বড়ত্ব অন্তরে জাগ্রত রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ্‌ কোন উদাসীন অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।”[সুনানে তিরমিযি (৩৪৭৯), সহিহুল জামে (২৪৫) গ্রন্থে শাইখ আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]

৭. খাদ্য পবিত্র (হালাল) হওয়া। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আল্লাহ্‌ তো কেবল মুত্তাকীদের থেকেই কবুল করেন”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ২৭] এ কারণে যে ব্যক্তির পানাহার ও পরিধেয় হারাম সে ব্যক্তির দোয়া কবুল হওয়াকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদূরপরাহত বিবেচনা করেছেন। হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যিনি দীর্ঘ সফর করেছেন, মাথার চুল উস্কুখুস্ক হয়ে আছে; তিনি আসমানের দিকে হাত তুলে বলেন: ইয়া রব্ব, ইয়া রব্ব! কিন্তু, তার খাবার-খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পরিধেয় হারাম, সে হারাম খেয়ে পরিপুষ্ট হয়েছে তাহলে এমন ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হবে?[সহিহ মুসলিম, (১০১৫)]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন, হারাম ভক্ষণ করা দোয়ার শক্তিকে নষ্ট করে দেয় ও দুর্বল করে দেয়।

৮. দোয়ার ক্ষেত্রে কোন সীমালঙ্ঘন না করা। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা দোয়ার মধ্যে সীমালঙ্ঘন করাটা অপছন্দ করেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক; নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” [সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫] আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন 41017 নং প্রশ্নোত্তর।

৯. ফরয আমল বাদ দিয়ে দোয়াতে মশগুল না হওয়া। যেমন, ফরয নামাযের ওয়াক্তে ফরয নামায বাদ দিয়ে দোয়া করা কিংবা দোয়া করতে গিয়ে মাতাপিতার অধিকার ক্ষুণ্ণ করা। খুব সম্ভব বিশিষ্ট ইবাদতগুজার জুরাইজ (রহঃ) এর কাহিনী থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ জুরাইজ (রহঃ) তার মায়ের ডাকে সাড়া না দিয়ে ইবাদতে মশগুল থেকেছেন। ফলে মা তাকে বদদোয়া করেন; এতে করে জুরাইজ (রহঃ) আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, আলেমগণ বলেছেন: এতে প্রমাণ রয়েছে যে, জুরাইজের জন্য সঠিক ছিল মায়ের ডাকে সাড়া দেয়া। কেননা তিনি নফল নামায আদায় করছিলেন। নফল নামায চালিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে- নফল কাজ; ফরয নয়। আর মায়ের ডাকে সাড়া দেয়া ওয়াজিব এবং মায়ের অবাধ্য হওয়া হারাম....”[শারহু সহিহু মুসলিম (১৬/৮২)]

আরও অধিক জানতে মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম আল-হামাদ রচিত ‘আল-দুআ’ নামক বইটি দেখুন।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/13506/

----------------------

 

>> দোয়া করার কিছু আদব-কায়দা

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: দোয়া করার আদবসমূহ কি কি? এর পদ্ধতি কি? এর ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ কি কি? দোয়া কিভাবে শুরু করতে হয় ও কিভাবে শেষ করতে হয়? আখেরাতের বিষয়াবলির আগে দুনিয়াবী বিষয়ে দোয়া করা যায় কি? দোয়া করার সময় হাত তোলার শুদ্ধতা কি; শুদ্ধ হলে এর পদ্ধতি কি?

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর কাছে চাওয়াটা ও সবকিছু তাঁর থেকে প্রত্যাশা করাটা পছন্দ করেন। যে ব্যক্তি তাঁর কাছে চায় না তিনি তার ওপর রাগ করেন। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর কাছে চাওয়া বা প্রার্থনা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন: “আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”[সূরা গাফির, আয়াত: ৬০]

ইসলামে রয়েছে দোয়ার মহান মর্যাদা। এমনকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন কথাও বলেছেন: “দোয়া-ই ইবাদত”[সুনানে তিরমিযি (৩৩৭২), সুনানে আবু দাউদ (১৪৭৯), সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৮২৮), আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে (২৫৯০) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

আল্লাহই ভাল জানেন।

দুই:

দোয়ার আদবসমূহ:

১। দোয়াকারীকে আল্লাহর রুবুবিয়্যত, উলুহিয়্যত ও আসমা-সিফাতের প্রতি একত্ববাদী হতে হবে। আল্লাহ তাআলা কর্তৃক দোয়া কবুল করার শর্ত হচ্ছে- বান্দা কর্তৃক আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে নেক কাজ করা ও গুনাহ পরিত্যাগ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৬]

২। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: আর “তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহ্‌র ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে।”[সূরা বাইয়্যেনা, আয়াত: ০৫] দোয়া হচ্ছে- ইবাদত; যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। তাই ইখলাস দোয়া কবুলের শর্ত।

৩। আল্লাহ্‌র সুন্দর নাম ও গুণাবলী দিয়ে তাঁকে ডাকা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আর আল্লাহ্‌র জন্যই রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক; আর যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন কর।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ১৮০]

৪। দোয়া করার পূর্বে আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করা। সুনানে তিরমিযিতে (৩৪৭৬) ফাযালা বিন উবায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে নামায আদায় করল, এরপর দু’আ করল: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ করে দাও, তুমি আমাকে রহম কর’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে নামাযী! তুমি বেশ তাড়াহুড়া করে ফেললে। তুমি নামায আদায় করে যখন বসবে তখন আগে আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করবে, আমার ওপর দরুদ পড়বে। এরপর আল্লাহর কাছে দু’আ করবে।” অপর এক রেওয়ায়েতে এসেছে (৩৪৭৭) “যখন তোমাদের কেউ নামায শেষ করবে তখন আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি শুরু করবে। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়বে। অতঃপর যা ইচ্ছা দোয়া করবে” বর্ণনাকারী বলেন: এরপর অপর এক লোক নামায আদায় করল। সে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়ল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “ওহে নামাযী! দোয়া কর, আল্লাহ তোমার দোয়া কবুল করবেন”[আলবানী সহিহুত তিরমিযি গ্রন্থে (২৭৬৫), (২৭৬৭) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

৫। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ না পড়া পর্যন্ত যে কোন দোয়া আটকে থাকে”[আল-মুজাম আল-আওসাত (১/২২০), আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৪৩৯৯) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

৬। কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা। সহিহ মুসলিমে (১৭৬৩) উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: বদর যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুশরিকদের দিকে তাকালেন; তাদের সংখ্যা ছিল এক হাজার। আর তাঁর সাথীবর্গের সংখ্যা ছিল তিনশত উনিশ। তখন তিনি কিবলামুখী হয়ে হাত প্রসারিত করলেন, তারপর তাঁর রবকে ডাকতে শুরু করলেন: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছেন সেটা বাস্তবায়ন করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেটা দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি যদি মুসলমানদের এ দলটিকে ধ্বংস করে দেন তাহলে পৃথিবীতে আপনার ইবাদত হবে না’। এভাবে দুই হাত প্রসারিত করে কিবলামুখী হয়ে তাঁর রবকে ডাকতে থাকলেন; এমনকি এক পর্যায়ে তাঁর কাঁধ থেকে চাদরটি পড়ে গেল...।

ইমাম নববী (রহঃ) ‘শারহু মুসলিম’ গ্রন্থে বলেন: এ হাদিসে দোয়াকালে কিবলামুখী হওয়া ও দুই হাত তুলে দোয়া করা মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে প্রমাণ রয়েছে।

৭। দুই হাত তোলা। সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে (১৪৮৮) সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আপনাদের সুমহান রব হচ্ছেন লজ্জাশীল ও মহান দাতা। বান্দা যখন তাঁর কাছে দু’হাত তোলে তখন তিনি সে হাতদ্বয় শূন্য ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।”[সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (১৩২০) আলবানী হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

হাতের তালু থাকবে আকাশের দিকে; যেভাবে একজন নতজানু দরিদ্র সাহায্যপ্রার্থী কিছু পাওয়ার আশায় হাত পাতে। সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে (১৪৮৬) মালেক বিন ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যখন তোমরা আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইবে তখন হাতের তালু দিয়ে চাইবে; হাতের পিঠ দিয়ে নয়”[আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (১৩১৮) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

হাত তোলার সময় দুই হাত কি মিলিয়ে রাখবে; না কি দুই হাতের মাঝে ফাঁক রাখবে?

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) তাঁর ‘আল-শারহুল মুমতি’ গ্রন্থে (৪/২৫) উল্লেখ করেছেন যে, হাত দুইটি মিলিয়ে রাখবে। তাঁর ভাষায়: “দুই হাতের মাঝখানে ফাঁক রাখা ও এক হাত থেকে অন্য হাত দূরে রাখা সম্পর্কে আমি কোন দলিল পাইনি; না হাদিসে; আর না আলেমগণের বাণীতে।” [সমাপ্ত]

৮। আল্লাহর প্রতি এ একীন রাখা যে, আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন এবং মনোযোগ দিয়ে দোয়া করা। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার একীন নিয়ে দোয়া কর। জেনে রাখ, আল্লাহ তাআলা অবহেলাকারী ও অমনোযোগী অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।”[সুনানে তিরমিযি (৩৪৭৯), শাইখ আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে (২৭৬৬) হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

৯। বারবার চাওয়া। বান্দা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর যা ইচ্ছা তা চাইবে, কাকুতি-মিনতি করবে, তবে দোয়ার ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া করবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে। বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাড়াহুড়া বলতে কী বুঝাচ্ছেন? তিনি বললেন: বলে যে, আমি দোয়া করেছি, আমি দোয়া করেছি; কিন্তু আমার দোয়া কবুল হতে দেখিনি। তখন সে ব্যক্তি উদ্যম হারিয়ে ফেলে এবং দোয়া ছেড়ে দেয়।[সহিহ বুখারী (৬৩৪০) ও সহহি মুসলিম (২৭৩৫)]

১০। দৃঢ়তার সাথে দোয়া করা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন অবশ্যই এভাবে না বলে যে, হে আল্লাহ! আপনি যদি চান আমাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি যদি চান আমাকে দয়া করুন। কেননা নিশ্চয় আল্লাহর ওপর জবরদস্তি করার কেউ নেই।[সহিহ বুখারী (৬৩৩৯) ও সহিহ মুসলিম(২৬৭৯)]

১১। অনুনয়-বিনয়, আশা ও ভয় প্রকাশ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক”[সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫] তিনি আরও বলেন: “তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত, আর তারা আমাদেরকে ডাকত আগ্রহ ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমাদের নিকট ভীত-অবনত।”[সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯০] তিনি আরও বলেন: “আর আপনি আপনার রবকে নিজ মনে স্মরণ করুন সবিনয়ে, ভীতচিত্তে ও অনুচ্চস্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায়।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ২০৫]

১২। তিনবার করে দোয়া করা। সহিহ বুখারী (২৪০) ও সহিহ মুসলিমে (১৭৯৪) আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেন: “একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বায়তুল্লাহ্‌র কাছে নামায আদায় করছিলেন। সেখানে আবূ জেহেল ও তার সঙ্গীরা বসা ছিল। গতদিন উট জবাই করা হয়েছিল। এমন সময় আবু জেহেল বলে উঠল, ‘তোমাদের মধ্যে কে অমুক গোত্রের উটনীর নাড়ীভুঁড়ি এনে মুহাম্মদ যখন সিজদা করবে তখন তার পিঠের উপর রাখতে পারবে?’ তখন কওমের সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকটি দ্রুত গিয়ে উটনীর নাড়ীভুঁড়ি নিয়ে এল এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদায় গেলেন তখন এগুলো তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দিল। বর্ণনাকারী বলেন: তারা নিজেরা হাসতে থাকল; হাসতে হাসতে একে অন্যের ওপর হেলে পড়ল। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। হায়! আমার যদি প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকত তাহলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিঠ থেকে এগুলো ফেলে দিতাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় পড়ে থাকলেন; মাথা উঠালেন না। এক পর্যায়ে এক লোক গিয়ে ফাতিমা (রাঃ) কে খবর দিল। খবর শুনে তিনি ছুটে এলেন। সে সময় ফাতেমা (রাঃ) ছিলেন ছোট বালিকা। তিনি এসে উটের নাড়ীভুঁড়ি তাঁর পিঠ থেকে ফেলে দিলেন। এরপর লোকদের দিকে মুখ করে তাদেরকে গালমন্দ করলেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর নামায শেষ করলেন তখন তিনি কণ্ঠস্বর উঁচু করলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করলেন। - তিনি যখন দোয়া করতেন তখন তিনবার করতেন এবং যখন প্রার্থনা করতেন তখন তিনবার করতেন- এরপর বললেন: ইয়া আল্লাহ্! আপনি কুরাইশকে ধ্বংস করুন। এভাবে তিনবার বললেন। তারা যখন তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে পেল তাদের হাসি মিলিয়ে গেল এবং তারা তাঁর বদ দোয়াকে ভয় পেল। এরপর তিনি বললেনঃ ইয়া আল্লাহ্! আবূ জেহেল ইবনে হিশাম, ‘উতবা ইবনে রাবী’আ, শায়বা ইবনে রবী’আ, ওয়ালীদ ইবনে ‘উকবা, উমাইয়্যা ইবনে খালাফ ও ‘উকবা ইবনে আবু মু’আইতকে ধ্বংস করুন। (রাবী বলেন, তিনি সপ্তম ব্যক্তির নামও বলেছিলেন কিন্তু আমি স্মরণ রাখতে পারিনি।) সেই সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের নাম উচ্চারণ করেছিলেন, আমি বদর যুদ্ধের দিন তাদেরকে নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। পরবর্তীতে তাদেরকে টেনেহিঁচড়ে বদরের কূপের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়।”

১৩। ভাল খাবার ও ভাল পোশাক গ্রহণ করা (ভাল হতে হলে হালাল হওয়া জরুরী)। সহিহ মুসলিমে (১০১৫) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ ভাল। তিনি ভাল নয় এমন কিছু গ্রহণ করেন না। তিনি রাসূলদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন একই নির্দেশ মুমিনদের প্রতিও জারী করেছেন। তিনি বলেন: “হে রাসূলগণ! আপনারা ভাল খাবার গ্রহণ করুন এবং নেক আমল করুন। নিশ্চয় আপনারা যা কিছু আমল করেন সে সম্পর্কে আমি সম্যক অবগত”[সূরা মুমিনূন, আয়াত: ৫১] তিনি আরও বলেন: “হে ঈমানদারেরা! তোমাদেরকে যেসব ভাল রিজিক দিয়েছি সেগুলো থেকে খাও।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৭২] এরপর তিনি উল্লেখ করেন যে, জনৈক ব্যক্তি লম্বা সফর করে উস্কখুস্ক চুল নিয়ে ধুলিমলিন অবস্থায় দুই হাত আকাশের দিকে তুলে দোয়া করে: ইয়া রব্ব, ইয়া রব্ব! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, সে পরিপুষ্ট হয়েছে হারাম খেয়ে তাহলে তার দোয়া কিভাবে কবুল হবে?” ইবনে রজব (রহঃ) বলেন: “হালাল খাওয়া, হালাল পান করা, হালাল পরিধান করা ও হালাল খেয়ে পরিপুষ্ট হওয়া দোয়া কবুল হওয়ার আবশ্যকীয় শর্ত।”[সমাপ্ত]

১৪। গোপনে দোয়া করা, শব্দ না করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক”[সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫] আল্লাহ তাআলা যাকারিয়া (আলাইহি সালাম) এর প্রশংসা করে বলেন: “যখন তিনি তার রবকে ডেকেছিলেন নিভৃতে”[সূরা মারিয়াম, আয়াত: ০৩]

ইতিপূর্বেও দোয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হয়েছে। দোয়াকারীর দোয়া কবুল হওয়ার কারণসমূহ, দোয়ার আদবসমূহ, যেসব সময় ও স্থান ফযিলতপূর্ণ ও দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনাপূর্ণ, দোয়াকারীর অবস্থা, দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাসমূহ ও দোয়া কবুলের প্রকারসমূহ ইত্যাদি 5113 নং প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/36902/

-------------------

 

১। দোয়া কবুলের গল্প♥

কন্যার দু‘আ!
এক মহিয়সী আরব মহিলার জীবন থেকে নেয়া ঘটনা। ঘটনা খুব বেশিদিন আগের নয়। এই তো বছর দুয়েক আগের। তিনি বলেছেন:
-আমার বিয়ে যখন হলো, আমার স্বামী ছিলেন একজন টগবগে তরুন। প্রাণোচ্ছল যুবাপুরুষ। সবকিছুতেই আনন্দ খুঁজে পান। মন খারাপ হওয়া বা বিষন্নতা বলতে কিছুই ছিল না তার জীবনে। তার সঙ্গ পেয়ে আমার মতো গম্ভীর মেয়েও কলকলে তরুনীতে পরিণত হলাম। দু’জনের সংসার সব সময় আনন্দে কলকল করতো।
আমরা থাকতাম শহরের ছোট্ট একটি বাসায়। দু’কামরার। ছিমছাম। নির্ঝঞ্ঝাট। নিরুপদ্রব। তার চাকরিক্ষেত্র থেকে আমাদের বাসার দূরত্ব খুব বেশি ছিল না। অফিসের গাড়ি এসে তুলে নিয়ে যেতো। সেজন্যই এখানে থাকা। তার বাবা মা থাকতেন উল্টো দিকের এক গ্রামে। প্রতি সপ্তাহে দু’তিনদিন বাবা-মায়ের কাছেও রাতে থাকতে যেতো। তার মতো বাবা-মা অন্তপ্রাণ ছেলে এ-যুগে বিরল। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা আর আন্তরিকতা দেখে অবাক হয়ে যেতাম।
.
বুড়ো-বুড়ির যাতে কোনও প্রকারের কষ্ট না হয় সেদিকে তার প্রখর দৃষ্টি। না পারতেই সে আমাদের নিয়ে আলাদা বাসায় থাকছে। যাতায়াত সুবিধের কারনে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে একটা কন্যা দান করলেন। এবার একটা বড় বাসা নিয়ে বাবা-মাকেও এখানে নিয়ে এল। এভাবে বিয়ের পর চার বছর কোন ফাঁকে কেটে গেলো, টেরটিও পেলাম না। বিয়ের পঞ্চম বছরের মাথায়, অফিসে যাওয়ার পথে, তাদের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লো।
অনেক হতাহত হলো। আমার স্বামীর অবস্থা ভীষন গুরুতরো! আমার বৃদ্ধ শ্বশুর দিশেহারা হয়ে ছোটাছুটি শুরু করে দিলেন। দৌড়ঝাঁপ করে যথাসম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন। অফিস থেকেও প্রয়োজনীয় সাহায্য দেয়া হলো। কিন্তু আঘাতটা মাথায় লাগাতে তার চেতনা ঠিকমতো ফিরে আসছিল না। সে প্রায় অর্ধমৃত। হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হলো। বাড়িতে নিয়ে এলাম।
শুরু হলো জীবনের কঠিনতম অধ্যায়। সংসারের খরচ জোগাড় করা, স্বামীর সেবা করা, বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ির দেখাশোনা করা। এদিকে মেয়েটাও বড় হয়েছে। ডাক্তাররা কোনও আশাই দিলো না। আমার বাড়ি থেকে চাপ দেয়া হলো, স্বামীর ঘর ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে। আমার বয়েস কম, আবার বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে। পাত্রও তৈরী আছে।
আমার বিবেকে বাধা দিল। এভাবেই দিন গিয়ে মাস হলো। মাস পার হয়ে বছর ঘুরল। স্বামীর কোনও উন্নতি নেই। সেই আগের মতোই আছে নির্জীব! নিস্পন্দ! নিথর! বাবা মা আর কতোদিন অপেক্ষা করবেন? তারা আমার অবস্থা বুঝতে পারছিলেন। এখানে যে কোনও ভবিষ্যত নেই সেটা একটা বালকও বুঝতে পারবে। এভাবে কেটে গেলো পাঁচটি বছর।
.
আব্বা একদিন মুফতির ফতোয়া নিয়ে এলেন। স্বামীকে ছেড়ে যেতে শরীয়তে কোনও বাধা নেই। বেশ জোরাজুরি করলেন। রাগারাগি করলেন। আমি কেন যেন সায় দিতে পারলাম না। মেয়ে হেফযখানায় পড়ে। হেফয প্রায় শেষ হয়ে এসেছে!
আমরা পালাক্রমে রুগীর সেবা করি। একদিন আমি রাত জাগি, আরেকদিন মেয়েটা। তার বয়েস অল্প হলেও সময়ের ফেরে অনেক কিছু শিখে ফেলেছে। বুঝতেও শিখেছে। আমরা মা মেয়ে দু’জনেই আল্লাহর কাছে হরওয়াক্ত দু‘আ করে যাচ্ছি। মানুষটাকে যেন আল্লাহ সুস্থ করে দেন। সাধ্যমতো সাদাকা করছি। শাশুড়ী তো জায়নামায থেকেই নড়েন না বলতে গেলে। শ্বশুর বুড়ো হলেও সংসারের টুকিটাকি কাজ করতে পারেন। তিনিও ছেলের জন্যে কিছু করতে মুখিয়ে থাকেন।
মেয়েটার হেফয শেষ হলো। ছোটখাট একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলো। আমরা-আমরাই। ঘরের মানুষেরা মিলে। বাইরের মানুষ বলতে মেয়ের হেফযখানার শিক্ষক। তিনি এসে দু‘আ করে গেলেন। আল্লাহর কাছে দু‘আ করতে বললেন। সাদাকা চালিয়ে যেতে বললেন। বাবা মাকে দু‘আ করতে বললেন। তাদের দু‘আ অনেক কাজে লাগবে!
.
সেদিন রাত জাগার পালা ছিল মেয়ের। বাবাকে ওষুধ খাইয়ে খাটের বাজুতে মাথা রেখে ঘুমুচ্ছিল। মধ্যরাতে আবার ওষুধ খাওয়াবে! কী মনে করে, মাধা ঝাড়া দিয়ে উঠলো। সূরা বাকারা তিলাওয়াত শুরু করে দিল। শেষ করতে করতে আবার চোখে ঘুম নেমে এল। ঘুমন্ত অবস্থাতেই তার মনে হলো, কে একজন তার নাম ধরে ডেকে বলছে:
-ওঠো ওঠো! ঘুমিও না! তোমার দয়ালু রব জেগে আছেন, তুমি কেন ঘুমিয়ে আছো? এখন দু‘আ কবুলের সময়! ওজু করে নামায পড়ো। আল্লাহর কাছে দু‘আ করো! তুমি যা চাইবে তিনি দিয়ে দেবেন!
মেয়ে ধড়মর করে উঠে বসলো। তাড়াতাড়ি ওজু সেরে নামাযে দাঁড়াল! আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে দু‘আ করলো। আকুল কান্নায় ভেসে বাবার সুস্থ্যতা কামনা করলো। আবার আগের মতো বাবার খাটের পাশটিতে এসে বসলো। এক সময় ঘুম এসে গেলো। ফজরের নামাযের সময় একটা আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো:
-এই মেয়ে তুমি কে? এখানে কেন ঘুমিয়ে আছো?
চোখ মেলে দেখে বাবা তার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। চোখে প্রশ্ন। আবার প্রশ্ন করলেন: তুমি কে?
উত্তর দিবে কী, মেয়েটা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলো। চেঁচিয়ে আমাকে ডাকল। দাদা-দাদুকে ডাকল! আব্বু আব্বু কথা বলছেন! আব্বু কথা বলছেন! সবাই ঘুম চোখে ছুটে এল। হাসি-কান্নায় একাকার! আল্লাহর আজীব কারিশমা! তার কুদরত বোঝা বান্দাহর সাধ্যে কুলোবে না! আমাদের সংসারটা আবার আগের মতো হয়ে গেলো। আনন্দ আর সুখ ফিরে এল! আল্লাহ কেন পরীক্ষা দিয়েছিলেন, কেন মাফ করে দিলেন, সেটা নিয়ে আমাদের কোনও মাথাব্যথা নেই! তিনি খুশি হলেই আমরা খুশি!
কৃতজ্ঞতাঃ শায়েখ আতীক উল্লাহ আতীক (হাফিজাহুল্লাহ্)
----------------------

 

২। দোয়া কবুলের গল্প♥

প্রথম ছেলেটা আমার নর্মালে হলেও অনেক ধকল গিয়েছে সাইট কাটার পরিবর্তে ছিরে তা মলদ্বার পর্যন্ত যায় সেটা সেলাই শুকাতে অনেক সময় নেয় কস্ট ত আছেই,শুধু তাই না
জরায়ুতে দায়িদের নখের আচর লেগে ইনফাকশন তার পর পেকে ঘা হয়, যা আমার জিবন কে একদম তচনচ করে দিছে,১৮ বছর বয়সেই বলতে গেলে সেক্সুয়াল ব্যাপারটাকে দাফন করে দিতে হইছে, 
দ্বিতীয় ছেলেটা নর্মালে চেস্টা করেও হয়নাই
সিজার করেছি,
কোন হেল্পিং হ্যান্ড নেই বাচ্চাদের জন্মের পর দুই মাস মায়ের কাছে থাকি পরে বাসায় একা আমি এক হাতে বাচ্চা সংসার সামলাই,
দ্বিতিয় ছেলে দুই মাস বয়সে ত নতুন বাসায় আসি
আমার হুজুর সব ফার্নিচার জিনিস বাসায় ঢুকে দিয়েই চলে যায় নিজের চাকরিস্থলে,দুই মাসের সিজারি আমি ছোট ভাই এর সাহায্যে খাট থেকে নিয়ে আলমারি ভারি ফার্নিচার সব রুমে সাজাই পেটে বেল্ট পরে সারাদিন কাজ করে ইফতারির সময় ভাই আমার পিঠে ওরনা দিয়ে বাবুকে বেধে দেয় তখন আমি ইফতার করি দারিয়ে থেকে, এক হাতে কোলে নিয়ে অন্য হাতে রান্না কত যে বাবুর পা পুরে গেছে তেলের ছিটায়, এভাবেই জিবন যুদ্ধে চলে আসছিলাম,
বাবুর ১২ মাস হতেই আমি ফেব্রুয়ারি তে নিজের অজানায় আবার কন্সিভ করি,এক মাস হবার আগেই টের পাই টেস্ট করি, অনেকে বলছিল নস্ট করে দিতে,এমন কি আমার সামনে কীট পর্যন্ত ও কিনে আনা হইছিল,একবার ভাবি উপায় নাই খেয়ে ফেলি একা কিভাবে সম্ভব একটারেই সামলে নিতে পারছিনা, আবার ভয় হয় না এটা করব না কিছু স্বপ্নের জন্য পিছ পা হইতাম এমন দো টানায় পরে শুধুই কাদছি সারাদিন,মার্চে   ব্লিডিং হয় স্বাভাবিক মিন্সের মত, ভাবছি হয়ত সেস হয়ে গেল টেস্ট করেও পজিটিভ পাই,ডাক্তার দেখালাম,
বল্ল বাচ্চা নাই থলে আছে, অনেক সময় বাচ্চা দেরিতে আসে আরো এক মাস অয়েট করে বাচ্চা না আসলে ব্যাবস্থা নেব, রমজান মাস শরীর একদম পরে যায় রুচি নাই বমিভাব, পেট ব্যাথা ত শুরু থেকেই,মে র ৯ তারিখ রাত থেকে লেবার পেইনের মত পেইন হয় অল্প ১০ তারিখ সকাল ৯ টা থেকে ব্যাথা বারে, এমন ব্যাথা প্রায় ই হয় তাই রাতে তত টা গুরত্ব দেইনি যেহেতু সহ্যক্ষমতায় ছিল, ওদিকে হুজুর সেহরি খেয়ে দুরের শহরে চলে গেছে ৯ টায় যখন বেশি হল ফোন দিলাম
বল্ল আসছি উনার আসতে ২ ঘন্টা লাগছে, এদিকে আমি বাবু নিয়ে বাসায় একা বড় ছেলে নানু বাড়ি
বাসায় আরো তিন পরিবার ছিল উপর তলায়,
আমি চিৎকার করে কানছি, যন্ত্রনায় সাথে প্রচুর ব্লিডিং তারাতারি সালোয়ার খুলে পেটিকোট পরে বাথরুমে দারাই
ওদিকে বাবু আমায় দেখে কানতে কানছে গলা ভেংগে ফেলছে,
আর আমি সকাল থেকে না খাওয়া ব্যাথায় আর এত ব্লিডিং যে দেখেই আমি সেস
বাবু খাটের উপর বসা ছিল আমি বাথরুমেই এক সময় অজ্ঞ্যান হয়ে যাই ওই রক্তের মধ্যেই,জানিনা কতক্ষন পর কানের কাছে বাবুর চিক্কার কান্না শুনে উঠে বসি দেখি আমার চুল পুরা গায়ে শুধু রক্ত আর বাবুর ও,
খাটের উপর থেকে কানতে কানতে নিচে পরে গেছে তখন আমার কাছে চলে আসছে
এর মধ্য হুজুর আসে দরজা টা খুলতে আমার ১০ মিনিট ই লাগছে,
উনি এসে বাবুকে ধুয়ে খাটে রেখে আমাকে ধুইয়ে নিচে বাবুর কাথা দিয়ে আমাকে শুইয়ে দিয়ে আম্মুকে ফোন দেয় আমাকে সরকারি হস্পিটালে ইমার্জেন্সিতে নেয়,,তারা আল্টা আর হিমোগ্লোবিন টেস্ট করে রিপোর্ট দিতে বলে টেস্ট করতে বাইরে এক ক্লিনিকে আনলে তারা ভ্যাকুয়াম দিয়ে আমার ব্যাথা সাথে সাথে অফ করে সাথে ব্লিডিং ও অফ হয়,আল্ট্রা রিপোর্ট আসে আনকমপ্লিট এবরশন,
ক্লিনিক ওয়ালারা চাপ দেয় যেনো তাদের এখানেই ডি এন সি করায়, এতে আমি রাজি নই
কারন এগুলা ছোট ক্লিনিক ডাক্তার নেই কাজ ভাল হবে না
তখন একজন বল্ল ব্যাথা ত কিছুক্ষনের জন্য থামানো আছে আবার শুরু হবে
এটা শুনে ভয় পেয়ে যাই কতটা যন্ত্রনার ভাষায় ব্যাক্ত করা সম্ভব নয়, ক্লিনিকের যে বুয়া রা থাকে তারা বার বার চাপ দিচ্ছিল বলছি ম্যাম চলে যাবে তারাতারি করেন,
আমি বললাম হস্পিটালে ডাক্তার রিপোর্ট চাইল আগে তাকে দেখাই তখন বলে আচ্ছা যান ওখানে ছেলে ডাক্তার সব করবে তখন হুজুর আর কথা বারায় না, আর তারাও যেহেতু বল্ল ম্যাম চলে যাবে,
তাহলে ত কাজ ম্যাম ই করবে তখন আমিও রাজি হই,
যখন শুনলাম মাত্র দুই হাজার টাকা,
তখন ই বুঝলাম এরা কেমন কাজ করবে, ডাক্তারের রুমে যে বেড থাকে সেটাতে কাজ করবে,
যখন বললাম ফুল অজ্ঞ্যান না করলে করব না তখন বলে ফুল অজ্ঞ্যান করলে তিন দিন ভর্তি থাকতে হবে, 
বল্ল সমস্যা নাই বুঝতে পারবেন না কোমর পর্যন্ত অবোশ করবে,
তার পর সেই দুই বুয়া রুম লক করে আমার পায়ে ইইঞ্জেকশন পুশ করে সব রেডি করছে কোন ডাক্তার নেই তখন জিজ্ঞেস করছি কাজ কি আপ্নারাই করবেন নাকি তখন চেইত্তা উঠছে বলে এত কথা কেন বলেন চুপ করে শুয়ে পরুন চাপা আছে খুব,
এমন বাজে ব্যাবহার দেখেই বুঝে ফেলি কি হতে যাচ্ছে আমাএ সাথে, কিছু বুঝে উঠার আগেই অস্ত্রপ্রয়োগ করল
আগে আমার প্রেশার দেখল না কোন মেডিসিন দিল না স্যালাইন না, 
অস্ত্র দিতেই ত আমার জিবন যেন বেরিয়ে গেল এই সেনসিটিভ জায়গায় ত কাজ করতে হবে আস্তে আস্তে তারা যেন একদম হুরমুরিয়ে সব ঢুকিয়ে কিছু দিয়ে ঘুটনি দিল যেভাবে ডাল ঘুটে আর আমার মনে হচ্ছিল এখনি বুঝি দম টা চলে যাবে কলিজাটা ছিরে যেন ক্ষতবিক্ষত করল আমার চিতকারে আকাশ পাতাল ভারি তখন আমাকে ওই খান্নাস মহিলা মারধর করে আরেকজন কে বলে ওর মুখের মধ্য তুলা ভর মুখে কস্টেপ দে,
আর নোংরা ভাষায় বলে মাগি বাচ্চা নেয়া মারাইছিলা ক্যা কস্ট যদি না ই সহ্য হয়,আরেকজন মাত্র ৩ মিনিটে কাজ সেস করল লাস্টে তুলা গুজে দিল রাগের ভরে এতো জোরে দিল, চিৎকার করে কানছি,আমার চিতকারে হুজুর আম্মু ভাই দরজায় নক করছে বার বার
আমি উঠে বসি তারা ভেতরে আসলে আমার মুখে যা আসছে তাই বলে হুজুরকে বকেছি কারন আমি করতে চাইনি এখানে হুজুর জোর করে করাইছে বার বার বলছি অজ্ঞ্যান না করলে করব না তবুও করছে আর ডাক্তার দিয়ে না করিয়ে তারাই কেন করল
ওদের ও ইচ্ছামত বকছি আর চিল্লাইছি সব মানুষ জরো হয়ে গেছিল আমার চিতকারে,আমি মান সম্মান দেখিনি বকছি সবাইরে
এতে নাকি আমার বোরকার অসম্মান হইছে ওই অসভ্য দুই মহিলা বলে তোরা বোরকা খুলে যা এত খারাপ ব্যাবহার
তখন রুমে ডাক্তার আসছে বলছি কথা ছিল আপনি কাজ করবেণ  ওরা কেন করল
তখন বলে কস্ট হইছে আপনাদের রুগির দোষেই শরির খিচ লেগে ছিল গা ছেরে দিলে এত কস্ট হত না,
পরে চলে
আসলাম,
চার দিন হয়ে গেল এখনো ব্লেডিং আর পেট ব্যাথা আছেই,
আমার এই অসুস্থ জরায়ুতে এভাবে ডি এন সি করল জানিনা কতটা ক্ষতি করল আমার,
আমি সন্তান কে হারালাম
আমি এত এত কস্ট পাইলাম তাতেও আফসোস হচ্ছেনা কিন্ত
আমার সাথে অন্যায় করা হইল ধোকা দিল আমাকে বোকা বানাল
মিথ্যা বলে কাজ করল কস্ট দিল খারাপ ব্যাবহার করল আমাকে মারল, এসব ভেবে ভেবে আমি মানুষিক ভাবে ভেংগে পরতেছি
থানায় যোগাযোগ করতে চেস্টা করছি অভিযোগ করব জানিনা তারা আমার অভিযোগ নেবে কিনা,অদের শাস্তি দিতে পারলে আমি শান্ত হইতাম
না হলে ওই দিনের দৃশ্য গুলা আমাকে ক্ষনে ক্ষনে পুরে মারতেছে আমি আর নিতে পারছিনা
কখনো মনে হচ্ছে পুরাই পাগল হয়ে যাব, মরে যাব আমি,
নিজের পরিবারের উপর জেদ আছে,সব মিলিয়ে আমি খাওয়া দাওয়া চলা ফেরা মন খুলে কথা বলা কিছুই করতে পারছিনা
কি করব আমি তোমরা বলো আমি কি সরাসরি থানায় যাব
কি করে অদের শিক্ষা দেব আমি😭😭

-------------------------------------

 

৩। দোয়া কবুলের গল্প♥

আল্লাহর ঘরে যাওয়ার স্বপ্ন কার না থাকে
তার হাবিবের রওজা মুবারক
জেয়ারতের আশা টা সবার মধ্যেজ থাকে, আর সেই স্বপ্ন আমার মধ্যেও ছিল ছোট বেলা থেকে,এমন কোন মুনাজাত নেই
এমন কোন তাহাজ্জুদ নেই আমি আল্লাহকে আমার স্বপ্ন পুরনের আকুতি জানাইনি,
আমার সামর্থ ছিল না, মাসিক আয় ছিল আমার ৬/৭ হাজার,কিন্ত তবুও আমি স্বপ্ন দেখতাম একদিন আল্লাহর ঘরে যাবই,
আল্লাহ চাইলে সব ই সম্ভব,
আমি যে এলাকায় ইমামতি করতাম, সেই এলাকার সন্তান রাজুকের চিপ্স ইঞ্জিনিয়ার হেলালী সাব,আমার দেখা সৎ একজন মানুষ,
সে গ্রামে আসত প্রতি সপ্তাহে,
কোন এক তাহাজ্জুদে আমি মুনাজাতে ছিলাম মসজিদে,
সেই মুহুর্তে উনি মসজিদে প্রবেশ করে আর আমার পেছনেই নামাযে দারিয়ে যায়, আমি ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি,আমি আমার মত আমার রবের খুব নিকটে থেকে আমার মনের সব কথা ব্যাক্ত করি,আর তার ঘরে যাওয়ার আকুতিও করি,কান্নাকাটি করে,
উনি পেছন থেকে সব শুনে নেয়!
তার এক মাস পরেই ইদুল ফিতরের নামায শেষে, উনি আমার সাথে মোলাকাত করলেন,আর আমাকে আমার বহুদিনের স্বপ্ন বহুদিনের লালিত করা আশাটার অন্ধকার ঘরে এক আলো দিলেন আমার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথাটা জানালেন, ( জানালেন, আমি আপ্নাকে সম্পুর্ন বড় হজ্জের যাতায়াত সব খরচে যে টাকালাগে তার সব টাকা আপনাকে দিলাম ও আপনাকে মালিক করে দিলাম এখন আপনি এই টাকায় কি করতে চান? অপকটে বলে ফেলি আমি আগে হজ্জ ই করব সেই টাকায়)
সেদিন যে আমি কত টা খুশি ছিলাম কত টা কৃতজ্ঞ ছিলাম রবের নিকট, সেটা কেবল আমার রব ই জানে,আর কেউ না,
আমি ঘরে গিয়ে আমার আহলিয়াকে বলতে গিয়ে অঝোরে কেদে ফেলছি
এটা যেন এক অজস্র সুখের কান্না চোখের প্রতিটা ফোটায় আমি আমার সাফল্য দেখতে পাই,আর সাথে সাথে দু রাকাত শুকরানা নামায পরে রবের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই শুকরিয়াহ করি,
এর পর থেকে সকল প্রস্ততি শুরু হয়
সামনের ইদুল আজহা হবে আল্লাহর ঘরে,
এই একটা বছরে আমার ভিসা পাসপোর্ট কাগজ পত্র সব গুছাতে থাকি উনি ফোন করলেই চলে যেতাম
খুব ব্যাস্ততার মধ্যেও আমাকে সময় দিত,
আর আমি অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকি কবে আসবে সেই ক্ষন,
আমি নিজের মত প্রস্ততি নিতে থাকি,
আল্লাহ চাইলে সেই দিন চলে আসে,
আমি আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল হওয়াতে অত টাকা জমাতে পারিনি, মাত্র ১৪ হাজার টাকা নিয়ে ২০১৮ সালে ইদুল আজহার ৮ দিন আগে রওনা হই রবের ঘরের দিকে
বনানী মসজিদের ইমাম সাব সহ হেলালী সাব আরো ৭/৮ জনেএ কাফেলা আমাদের,
আলহামদুলিল্লাহ যখন পৌছে গেলাম তখনকার মুহুর্ত গুলার কথা কথা আর বলে বুঝানো সম্ভব না,
প্রথমেই শুকরানা নামায আদায় করে রবের নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি,
মোট ৪৫ দিন আমরা থাকি মক্কা ও মদিনায়,
এই কয়েকদিনে আমি অনেক বিপদের সম্মুখিন হই,
আল্লাহ তায়ালা নিজ কুদরতে আমাকে উদ্ধার করেন, তার কয়েক টা ঘটনা বলি,
আমাদের কাফেলার সবাই অনেক বড়লোক,একমাত্র আমিই গরীব ছিলাম,
আমার সাথী ভাইরা ৫/৬ জন সর্বক্ষন ই বাসায় আড্ডা দিত
তাদের নামাযের সময় ছাড়া মসজিদে পাইতাম না,
কিন্ত আমি তাদের থেকে সম্পুর্ন বিপরীত ছিলাম
আমি আর সবার মত স্মার্ট না, আড্ডা আমার পছন্দ না,
বলতে গেলে আমি একজন গেয়ো ভুত, সবাই যা বলে আরকি, বর্তমান সমাজের সাথে তাল মিলে আমি চলিনা,
ত সেদিন কি মনে করে আমি তাদের রুমে আড্ডায় শামিল হই
কিন্তু বেশিক্ষন ছিলাম না
৫/১০ মিনিটের মত,আর সেখানে এক বই পেয়ে আমি তাতেই মনোনিবেশন করি আর কে কখন যার যার রুমে বা বাইরে চলে গেছে খেয়াল করিনি যখন দেখালাম রুমে একমাত্র আমিই একা, তখন বই রেখে উঠে রুমে যাই, কিছুক্ষন পরেই সেই রুমের ভাই তার টাচ দামি ফোন খুজে পাচ্ছিল না,
আর হ্যা বলে রাখা ভাল যে সবার ই টাচ ফোন ছিল শুধু আমার ই ছিল না, কারন এসব আমি বুঝিনা চালাতেও পারিনা, আর এটাকে আমার ফিতনা মনে হয় দাজ্জাল ভাবি এই ফোন কে আমি,ত সবাই সাক্ষ্য দিছে আমি রুমে একা ছিলাম ত আমিই নিছি,  সবাই সমালোচোনা শুরু করছে কি করে এখন আমার থেকে ফোন চাইবে বা নেবে, এই কথা যখন আমার কানে পৌছালো এক মুহুর্তের জন্য তব্দা খেয়ে যাই
৭/৫ না ভেবে মসজিদে নববীতে চলে যাই আর সিজদায় পরে যাই,
কতক্ষন ছিলাম জানিনা, যখন কানে আসল ইয়াসিন ভাই উঠেন, তখন দারাই
দেখি তারা সবাই আমার সামনে, আর ততক্ষনাত হাত ধরে মাফ চায় আর কেদে ফেলে আমি কিছু বুঝতে না পারায় জিজ্ঞেস করলাম,
তখন বল্ল তারা খুজে খুজে হয়্রান পরে যার মোবাইল সে বালিস নিয়ে শুতেই বালিসের কাভারের মধ্য ফোন টা পায়, তখন আর কেউ আমাকে খুজে পায়না, আর সবার ই এটা জানা যে আমি ২৪: টা ঘন্টাই পাগলের মত মসজিদে নববীতে পরে থাকি, তাই তারা সোজা চলে আসছে মাফ চাইতে,
আলহামদুলিল্লাহ অনেক শুকরিয়াহ করলাম,,
আস্তে আস্তে দিন সেস হয়ে আসতে লাগল আর আমার অন্তরের ব্যাথাটাও যেন বারতে থাকলো,
আগেই বলেছি আমি বেশি অর্থ আনতে পারিনি, তাই কেনাকাটার টেনশন আমার মাথায় ছিল না,
কিন্ত মনে বড় শখ ছিল আহলিয়ারে কিছু দেব,বাট সামর্থ নাই, তবুও দুদিন জুয়েলার্সে গিয়ে ঘুরে এসেছি, টাকায় হয়না,
তাই যা ছিল জায়নামাজ তসবিহ আতর আর খেজুর নেই
আহলিয়া বলেছিল আজওয়া নিতে তখন আমরা একটা বাচ্চাও চাই আল্লাহর কাছে তার খুব ইচ্ছা ছিল অন্তঃসত্ত্বা তে আজওয়া খাবে জমজমের পানি পান করবে,
তাই এগুলা কেনাকাটা করে আমি টাকা গুলা সেস করি,
ছেলে বা আহলিয়ার জন্য বিষেশ কিছু কিনতে পারিনি,
আসার মাত্র ৭ দিন আগে আমি কিছু রিয়েল হাদিয়া পাই,পরক্ষনেই এক মিসকিন এসে চায়,আমি যা হাদিয়া পাই তার থেকে অর্ধেক মিসকিন কে দিয়ে দেই,
তার পরের দিন, নাইজেরিয়ার এক জন মোলাকাত করে মুসাফার মধ্য হাতে টাকা গুজে দেয় যেটা গুনে আমি অবাক হয়ে যাই
হিসেব করে বাংলাদেশি ১০০০০ টাকা হয়,অত্যান্ত খুশি হয়ে আহলিয়ার জন্য কিছু কিনতে জুয়েলারিতে ছুটে যাই, আর একটা রিং নেই হাতের জন্য, ৮০০০ হাজার টাকায়,
বাকি টাকা দিয়ে ছেলের জন্য গেঞ্জি চকলেট নেই,,
আরেকদিন  জাবালে নূর এ উঠি আর উঠতে প্রায় সোয়া ঘন্টার মত লাগে, উঠার পরেই বুঝতে পারি আকাশের অবস্থা ভাল নয়
তারাতারি নেমে যেতে হবে, তাই আর এক মুহুর্ত দেরি না করে নামতে শুরু করি মাঝপথে শুরু হয় বাতাস, আর কালো মেঘ
আল্লাহকে ডাকতে ডাকতে নামতে থাকি সেস মুহুর্তে প্রবল বাতাস ঝড় বৃস্টি শুরু হয় সেদিন পাহার থেকে অনেক মানুষ এই চোখের সামনে গড়ে পরে মৃত্যবরন করতে দেখি তাদের জানাজায় শরীক হই, ভাগ্য ক্রমে সেদিন আমি আমার পরিচয় পত্র কোন কাফেলার তার কোন প্রমান ফিতা আমার গলায় ছিল না, 
যদি সেদিন আমি মারা যেতাম
বেওয়ারিশ লাশ হয়ে সেখানের কোন এক কবস্থানে জায়গা হত,
আমি নেমে পাশেই নাইজেরিয়াদের এক তাবুতে ঢুকে পরি
ঝড় থেমে গেলে নিজের কাফেলায় ফিরে যাই, আলহামদুলিল্লাহ,
যেদিন চলে আসি,শুনেছি চেকিংে শরীরে কোন জিনিস পেলে ফেলে দেয় কিছু নিতে দেয়না,
আমার আহলিয়া খুব শখ করেছিল কাচা খেজুরের,,
তাই আসার আগ মুহুর্তে মদিনা থেকে কিছু কাচা খেজুর নেই আর সেটা হাত ব্যাগে থাকে
দুটা এহরামের কাপড় ও,
আর পকেটে ছিল আমার আহলিয়ার সেই রিং টা, আর আমি সেই ভয় ই পাচ্ছিলাম যে রিংটা পেলে নিশ্চিত তারা ফেলে দেবে, হাতের পলি ব্যাগ টাও,
সিরিয়ালে দারিয়ে সমানে জিকির করছিলাম আর আগাচ্ছিলাম,
ঠিক যখন আমার পালা আসল
তখন চেকপোস্টএর লোক বদলি হচ্ছে অন্যজন চলে আসল ডিউটিতে ত তারা দুজন মোলাকাত করতেছে আমি কাছেই দারানো হঠাত আমার পায়ে তাদের পারা লাগে, আর সাথে সাথে আমাকে বুকে টেনে নেয় মাফ চায় ব্যাথা পেয়েছি কিনা সেটা জিজ্ঞেস করে কপালে একটা চুমু দিয়ে হাত ধরে আমাকে এগিয়ে দিল আর চেক করল না
আল্লাহর কি অপার মহিমা, 
আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ,  এরপর চলে আসি বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট এ, এখানে এসে আমার জমজমের পানি টা হারিয়ে যায়
৫ লিটারের এক গ্যালন, তাতে আমি আরবীতে আমার জেলার নাম আর নিজের নাম লিখি
আর ওউ গ্যালনেও সব আরবীতে লেখা ছিল
ত  ভাইয়া বুঝতে পারেনি যে আমার ঠিকানা এতে লিখা আছে, উনিও হাজিদের মধ্যেই একজন ছিলেন,যখন আমার চোখে পরল আমি গ্যালন টা আর লাগেজ তুলে নিলাম
তখন ওই ভাই এসে দাবি করল এই গ্যালন আমার বললাম প্রমান?
তিনি দেখালো বাংলায় তার নাম লিখা, এতে আমার সাথী ভাই রা অবাক হয়
কারন আমি তাদের সাথে রুমে তাদের সামনে নাম লিখেছিলাম এতে দেখে ওরাও লিখেছিল
কিন্ত ইনি এটার উপরে আবার নিজের নাম ও বসিয়েছে,
তখন আমি আর কিছু বললাম না
সাথী ভাই রাই বল্ল এইযে আরবীতে উনার ঠিকানা দেখতে  পাচ্ছেন না?
নাকি না দেখেই আপনার নাম টা বসিয়ে দিছেন,
পরে দিয়ে দেয়, আমাকে,
আর ৮/১০ জনের মত এয়ারপোর্ট এ আমার জন্য কেউ আসেনি রিসিভ করতে, আমি একাই ঢাকা থেকে বাসে উঠে ৬/৭ ঘন্টার পথ পেরিয়ে বাড়ি চলে আসি, রাত ৩ টায়,আলহামদুলিল্লাহ
এখন শুধু স্বপ্ন দেখি আহলিয়ারে নিয়ে কবে ওমরায় যেতে পারব,
কবে সেই ক্ষন আল্লাহ দেবেন কবুল করবেন
সেই আশায় দিন পার করা এই আমি,প্রতি মুনাজাতে রব কে বলি,
(কপি টু আমার হুজুর)

-----------------------------------------

 

৪। দোয়া কবুলের গল্প♥

♥♥দোয়া কবুলের গল্প♥♥
বান্দার সব কিছুর দেখভাল করার দায়িত্ব টা কার বেশি? রিজিকের মালিক আল্লাহ,তিনিই আমাদের রিজিক দেন আর তিনিই সব সময় আমাদের নিয়ে চিন্তা করেন, আমরা অযথাই টেনশন করে নিজের উপর যুলুম করি,চাওয়ার মত চাইলে আল্লাহ অবশ্যই দেন, হয়ত আমরা চাইতেই পারিনা,কিন্ত সেই চাওয়াটা তার ই কোন বান্দার কাছে চাইলে অপমানিত হতে হয় লাঞ্চিত হতে হয়, আর মালিকের কাছে চাইলে কত সস্মানে দিয়ে দেন,আহ কতই না ভালবাসেন আমাদের,
আর যখন মালিকের কাছে না চাইতেই সেটা পেয়ে যাই সে আনন্দ টা কেমন হয় ভাবা যায়?
হ্যা আজ শোনাবো সেই গল্প!
এইযে পিকে দেখতেছেন? এটা হয়ত আপনাদের নজরে সামান্য সেলাই মেশিন বলতে পারেন, কিন্ত না এটা আমার কাছে সামান্য নয়,দৈনন্দিন জিবনে এটা ছাড়া আমি অচল,
বলতে পারেন এটা আমার সংসারের প্রান,হৃৎপিন্ড, বা আমার সংসারের আয়ের উৎস,
আমার বিয়ের ৭ বছর রানিং,বিয়ের পর যখন আমার হুজুরের সাথে তার চাকরীস্থলে যাই,তখন সেখানে গিয়ে পাই একটা ছোট চৌকি দুজন বেশ কস্টেই থেকেছি চৌকিতে, আর একটা জগ একটা প্লেট আর কিচ্ছুনা বাহির থেকে উনার জন্য খানা আসত বাটিতে সেটাই দুজন ভাগ করে খেতাম,ত নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিসের ই অভাব ফিল করতে থাকি তখন একটস মেশিনের খুব দরকার ছিল আমার, কিন্ত কেনার মত সামর্থ তখন ছিলনা, আমার জায়ের একটামেশিন ঘরে পরে ছিল
সে সেলাই কাজ জানত না, তাই ভাবলাম কিছুদিনের জন্য আনি পরে দিয়ে আসব
কিন্ত সে মুখের উপর না করে দিল,অগত্যা হুজুর বহুকালের এক পুরানো মেশিন ঋন করে কিনে এনে দিল, আর আমি শুরু করে দিলাম অর্ডার নেয়া আর মহিলাদের কাজ সিখানো, বলতে গেলে তখন আমি ছোট দেখতে ছোট মানুষের মত কেউ বিশ্বাস করত না ভাল কাজ জানি বা করতে পারব তাই কেউ বেশি অর্ডার দিত না
কিন্ত যারা একবার বানাতো তাদের দ্বারাই পুরা এলাকায় অনেক সুনাম ছরায় আর আমি অনেক ইনকাম করি, মেশিনের ঋন শোধ করে সংসারের সর্ব প্রথম জিনিস আমার খাবারের র‍্যাক, এভাবে আস্তে আস্তে আমার স্বপ্নের সংসার সাজাতে থাকি,এভাবেই চলে আমাদের সংসার, আর এতদিনে এসে ত আমাদের জীবনে খুব একটা দু:খের সময় যাচ্ছিল,একদিকে উনার চাকরি নেই, অন্য দিকে লক ডাউন আমার বাবু হবে সব মিলিয়ে অনেক দু:স্বময় যাচ্ছিল আলহামদুলিল্লাহ এখন উনার একটা ব্যাবস্থা হইলেও আগের মত স্বাভাবিক হয়ে উঠতে এখনো পারিনি,আর এই সময় হঠাত আমার সেই পুরোনো মেশিন টা অকেজো হতে থাকে ফ্রেমটা ভেংগে যায় মেশিন টাও নস্ট হয়, খুব টেনশনে পরে যাই, আর ভাবতে থাকি এই মুহুর্তে মেশিন টা গেল এখন উপায় হবে কি আমি ত একদিন ও মেশিন ছাড়া থাকতে পারবনা আর এখন কিনবই বা কিভাবে, এসব ভাবতে ভাবতেই, হঠাত এক দিন আমার লিস্টের এক আপু মেসেজ করে তার একটা নতুন মেশিন আছে সেলাই কাজ তার কাছে কঠিন লাগে তাই মেশিন টা কাউকে হাদিয়া দিতে চাচ্ছেন তার বাসা থেকে আনতে হবে,শুনে কিছুক্ষনের জন্য ভাবনায় পরে গেলাম
আমি ত আল্লাহর কাছে এখনো চাইনি তাকে আমার এই সমস্যাটা এখনো জানানো হয়নি কিন্ত তিনি ঠিক ব্যাবস্থা করে দিলেন তাও এভাবে আমি আর কিছু না ভেবে দু রাকাত শুকরানা নামায পড়ে রব্বে কারিমের নিকট শুকরিয়া প্রকাশ করলাম,আনন্দে দু চোখের পানি আটকাতে পারিনি, যে আমার মত অকৃতজ্ঞ নাশুকরিয়া পাপি বান্দাকে আল্লাহ এভাবে সাহায্য করবে কখনই ভাবিনি
আপু কস্ট করে সেই দূর থেকে (ঢাকা থেকে বগুড়া) কুরিয়া করে আমার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন,
আল্লাহ তায়ালা উনাকে জান্নাতে উচ্চ মাকামে রাখুন,
আমিন
আর কোন বান্দার কাছে চাওয়ার কি পরিনাম হয়,তাও বলছি,
নিজের পরিস্থিতি কাউকে জানানো বা কারো কাছে হেল্প চাওয়া আমার আদতে যায়না,
আর এই ব্যাপারে আমার হুজুরের ও আছে কঠিন শাষন,
বাবু হবার পর বাপের বাড়ি টানা ৪/৫ মাস পর চলে আসি ভারা বাসায়, আর তখন রমজানের শুরু,হুজুরের তখন পাচ হাজার টাকা বেতনের এক খেদমত ছিল দূরে,অনেক টা কপাল স্বিকার করে আর প্রভুর উপরে বিশ্বাস রেখে আমি তিন হাজার টাকা ভারা এক বাসায় উঠে পরলাম,
কি খাব কি রানব তার কোন চিন্তা না করেই,সামনে ঈদ অনেক সময় অনেক চিন্তাও এসে ঘুরপাক খেতো রোজার ১০/১৫ টা কিভাবে গেছে সেটা আর না ই বা বলি,সেদিন আর ইফতারি করার মত কিচ্ছুই খুজে পেলাম না ভাত ছাড়া কাচা কোন তরকারিও না আলুটাও না যাই হোক কারো কাছে ঋন চাইলেও দিতে চায়না আর এটাও আমার কাছে ভয়ের একটা ব্যাপার ঋন আমি অনেক ভয় পাই যে পরে কো থেকে টাকা দেব, অনেক দিক চিন্তা ভাবনা করে ফেসবুক ফ্রেন্ড থেকে আমি হেল্প চাই অনেক টা আশা নিয়ে যে আমি নিশ্চয় হেল্প পাবো, কিন্ত আমার আল্লাহ হয়ত নারাজ হয়েছিল আমার সেদিনের ভুলের জন্য
অনেক অপমানিত হয়েছি লাঞ্চিত হয়েছি, সে মুখে আমার জন্য শুভাকাঙ্ক্ষী প্রকাশ করলেও অনেক আচরনে আমি যে কতটা কস্ট পেয়েছি বলার মত না, কত যে কেদেছি, হুজুরের বুকে মাথা গুজে অনেক কেদেছি বলেছি আমি আর কোন দিন কোন মানুষের থেকে হেল্প চাইব না আর্থিক বিষয়ে, এত কস্ট পাওয়ার কারন, আমি কেমন?
এই প্রশ্ন টা! ২৪ টা ঘন্টা মন কুরে কুরে খাচ্ছিল আর ভাবছি সে হয়ত কত কি ভাবল আমায় নিয়ে ছি:
সে আমার সত্যতা যাচাইএর জন্য যখন আমার ই কোন ফ্রেন্ডকে জিজ্ঞেস করে কেমন লাগে তখন ভাবা যায় না, আমার এই ব্যাপারটা নিয়ে স্বাভাবিক হতে অনেক দিন লেগেছে, তার সাথে কথা বলতেও নিজেকে ছোট লাগে নিচু মনে হয়
আর মনে হয় সে আমাকে কত কিছু যে ভেবেঁে আল্লাহ মালুম,।যাই হোক আমার জিবনে এটা অনেক বড় একটা শিক্ষা, 
আর মালিকের কাছে চাইলে দেখো কত সুন্দর করে ব্যাবস্থা করে দেন আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ,  সেরকম আজ ও এক অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে সেটা আর শেয়ার নাই করি,সব ই আল্লাহর ইচ্ছা
আমি শুধুই অবাক হয়ে যাই আর ভাবনায় পরি 
সবাই দোয়া করবেন আর যেই প্রভু এত নিখুঁতভাবে আমাদের সাহায্য করে যান তার অনুগত্য যেন করতে পারি সারাজিবন তার পথে যেনো টিকে থাকতে পারি।

--------------------------------

 

দোয়া কবুলের গল্প♥

এক মায়ের আত্মকাহিনি,,
(১)          রাত গভীর!
চারিদিকি শুনশান নিরবতা,প্রাকৃতিক যেনো কালো চাদরে ঢেকে দিয়েছে পুরা পৃথিবি টা,
কোথাও নেই কোলাহল, আছে শুধু ঝি ঝি পোকার ডাক,বাচ্চারা অতল গভীর ঘুমে নিমগ্ন! মায়াবি তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে কত কিছুই না ভাবছি, কখন যে চোখ ভরে জল আসছে বুঝতেই পারিনি, আছি আমি কল্পনার জগতে, উনার ধাক্কায় আমার ফিরে এলাম বাস্তবে,
এই জানালাটা খুলে দাও বাতাস আসবে সুন্দর
প্রচন্ড গরম পরেছে"!
হুম দিচ্ছি! জানাটা খুলতেই আবারো হারিয়ে গেলাম প্রকৃতির মাঝে
কি সুন্দর দক্ষিনা বাতাসে পরান টা জুরায় গেল,
চারিদিকে অন্ধকারের মধ্য তারা ভরা আকাশ আর অর্ধভরাটে চাঁদ মামা, সেই সাথে অসংখ্য জোনাকিরা এক অপুর্ব দৃশ্য বাইরে,
দুজনেই নিরব কত শত চিন্তা দুজনের মাথায়,
এই শুনছেন?
:হুম বলো
: ছোট বাজান ত আজ শুধু পায়খানা করতেছে 
ওর দুধ যে সেস হয়ে গেছে এহন কি করমু,?
:দীর্ঘ এক শ্বাষ নিয়ে, আমি কি করব বলো না এভাবে আর কত দিন চলবে আমার ত মাথায় কিছু ধরেনা
মাদ্রাসা টা কবে খুলবে আর মাস সেসে কয়ডা টাকা পামু, এম্নে বসে থেকে কিভাবে চলমু বলো কিছু ত করতে হইব কি করমু?
: হ আল্লাহয় আর কত পরীক্ষা নিব আমগো, নিক শুকরিয়া করি কিন্ত পোলাপাইন গুলার কস্ট ক্যাম্নে সহহ্য করি,
: তুমি বাবাই রে আর খালি সুজি দিও না দেখি আমি সকালে বের হব কিছু করতে পারি কিনা
তুমি কস্ট করে ওরে না কাল সারাদিন মিশ্রি পানি জাল করে খাওয়াও
মাওলা ঠিক এক ব্যাবস্থা করে দিব আমার আমি কাল দুধের ব্যাবস্থা করুম নি,
: আইচ্ছা
নিজেরা না খাইয়া থাকা যায় বাচ্চা মানুষ কি তাই পারে? 
কি করমু উপায় নাই ত
অল্প কিছু টাকা ছিল বাজার করে সেস
কিন্ত সে বাজারে ত দুই মাস খাইলাম
আর কত খামু,  সব ত সেসের দিকে সেস হইলে তখন কি হইবে? 
ফ্রিজে তিন পুটলা না মাছ আছে প্রতিদিন দুপুরে রানবার যাইয়া দুই বার হাতে নিয়া আবার রাইখা দেই, এহন রানলেই ত সেস হই যাইবনি, পরে আবার কি খামুনি,  এই ভেবে  যে কতদিন কাটাচ্ছি তবুও মাছ গুলা রান্না হচ্ছেনা  যেয়ে দুটা আলু ভাতে দেই,
বড় পোলাডা কোন দিন ডিম ছাড়া ভাত খাইত না মাসে দুই খাচি ডিম লাগত,
আর এহন ফ্রীজে দুটা ডিম আছে পোলায় আমার খালি সারাক্ষন ফ্রিজ খুলে আর ডিম নেরে চেরে আবার রেখে দেয়
কয় আম্মু পরে খাম নি
এখন খাইলে আবার পরে কি খামুনি?
বাবুর হাগু মুতু কাথা ধুব কি দিয়ে কাল সকালে? গুড়া সাবান যে নাই, টুকটাক ব্যাবসায় যা টাকা পাবে বাসা ভারা টাও শর্ট পরে যাবে,,
:আহ! এক দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে
আচ্ছা বলো তো কে বলবে আমরা এখন এত টা কঠিন মুহুর্তে আছি
কেউ আসলে দেখে বলে ইশ কি সুখি পরিবার, দুটা বাচ্চা পরিপাটি সংসার
কি মুহাব্বত, ঘরে কোন কিছুর যে অভাব নাই, বড়লোক না বল্লেও ত উচ্চ মধ্যবিত্ত এর সুখি পরিবার,
কিন্তু এই সুখি অভাবনিয় পরিবারে এত অভাব হুট করে কো থেকে আসল?
কারো কি বদ নজর লেগে গেল না ত?
আজ একটা বছর যাবত কোন খেদমত নেই
আল্লাহ কবে আমার একটা হালাল রিজিকের ব্যাবস্থা করবেন?
 : থাক এত চিন্তা কইরেন না
রাত মেলা হইছে ঘুম এহন,
ফজর পড়ে রান্না ঘরে ঢুকে চাল নিতে যেয়ে যেনো কলিজায় এক হোচট লাগল
মাত্র এই কয়াডা চাল আছে? সেস হইলে কি হবে,
রান্না সেসে নিজে একটু কম কম খাই আর রাখি পোলায় খাইবনি আরেক সময়,
সিজনি একটা সময় আম কাঠালের, একটা কিনে পোলাডারে খাওয়াতে পাচ্ছিনা
এইত ওইদিন বাড়ি ওয়ালা ভাবির বাসায় খেলছিল তার বাচ্চার সাথে
সে তখন আম কেটে দিচ্ছিল বাচ্চারা খাচ্ছিল
ভাবি বলছিল তুমি ত মাশাল্লাহ অনেক আম খাও,
তখন পোলাডায় এতিমের মত বলেছিল আমার আব্বু ত আম ই কিনে না কখনো,
ভাবি যখন এভাবে বলছিল আমার
এক দিকে আমি লজ্জায় সেস হয়ে যাচ্ছিলাম
অন্য দিকে এক জলন্ত আগুনের লেলিহান শিখায় দগ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম
ভেতরটায় এক রকম ঝড় বইয়ে যাচ্ছিল,
আজ সকালেও বলছে আম্মু প্রতিদিন এই চাল ডাল এক সাথে করে রাধো খাইতে ইচ্ছা করে না একটু ঝোল করো মাছের,
তাই দুপুরে দুটা আলু বেশি করে ঝোল করেছি
মাছ বের করে দেখলাম চার পিছ
ভাবলাম আমরা না খাই পোলাডারে ত দিতেই হইব এক পিছ রানলাম অন্য গুলা রাখলে অন্য দিন খাওয়াতে পারব,
বিল্ডিংের সব বাচ্চারা প্রাইভেট পড়ে
পোলার বায়না আমিও পড়ব
ভাবিরা বলে কেন পড়াই না
কিন্ত মাস সেসে ৫০০ টাকা বেতন হুজুরকে দেব কোথেকে?
সাত পাচ না ভেবে প্রাইভেট দিলাম
আর ভাব্লাম অনলাইনে যদি কিছু ব্যাবসা করি হয়ত পোলার মাস সেসের৫০০ পেয়ে যাব,
কিন্ত না আমার ভাবনা টা ভুল ছিল,
সকাল সকাল খানা খেয়ে উনি বের হলেন আর বললেন তুমি যেনো চিন্তা করোনা গো, বাজানের দিকে খেয়াল রাইখো
মিশ্রি পানি ছাড়া অন্য কিছু দিওনা পায়খানা বেশি করলে হাসপাতালে নিও,
আর আমি, একজন দুই ডা অসুধ দিছে এগুলা বিক্রি করতে পারলে তারে অর্ধেক দিয়ে যা থাকব সেটা আমার, দেখি বিক্রি করতে পাই নাকি, বিক্রি হইলে আমি বাবুর দুধের কৌটা আনুম নি, যাই দরজা লাগাও,
দুপুর গরিয়ে সুর্য পশ্চিমাকাশে ঢুলে পরেছে, আনমনে জানালায় দারিয়ে ভাবছি  কি হবে কি হবে?
কখন যেনো বিকেল গয়িরে গেছে
পেটের ক্ষুদা ডাক না দিলে বুঝতাম ই না এতটা সময় চলে গেছে
একা একা আর কি খাব ইচ্ছে নেই খাওয়ার,
বাজান ডা পায়খানা করে করে শরীর ডা বড্ড ক্লান্ত যে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন,
কখন আসবে উনি, তার পথ পানে চেয়ে আমি বসে,
আজ কি উনি পারবে কয়ডা টাকা রোজগার করতে? 
নাকি রোজকারের মত খালি হাতে মলিন মুখে মাথা নিচু করে ঘরে ফিরবে,
পাখিরা সব নীড়ে চলে গেছে রক্তিম আভায় সুর্যটা নিভু নিভু করছে সন্ধ্যা নেমে এল অচিরেই
আবার কি উঠবে এই সুর্য?
আবার কি পাবো আমি সেই আলো সেই সুখ কর দিন গুলা
পাব আমি আমার হারানো দিন গুলা?
কত হাজার প্রশ্ন মনে
আমার জিবন টায় সন্ধ্যা নেমে অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে রেখেছে আশায় আছি কবে উঠবে আমার সুর্য
কবে হাসবে আমার বাচ্চারা
(২)          কোন এক হুজুরের অলৌকিক সাহায্য,
এই শোনো!    
কি কি বাজার লাগবে আমাদের লিস্ট কইরো ত,
কেন লিস্ট দিয়ে কি করবেন, টাকা কই পাবেন, নাকি লিস্ট দেইখাই পরান জুরাইবেন,
আরে তুমি এত কথা বইল না আমিও জানি টাকা নাই
কিন্ত জরুরি কি কি লাগবে একটু দেখতাম, ব্যাবস্থা করার মালিক আল্লাহ যখন ব্যাবস্থা করে তখন করব,
আইচ্ছা এই নেন এগুলা লাগবে,
হুজুরের খেদমত বন্ধ লক ডাউনে,অন্য কোন ব্যাবস্থা হচ্ছে না
কোন পুজি নেই যে ব্যাবসা করবে
প্রতিদিন সকালে বের হয় রাতে ঘরে ফিরে, খালি হাতে, বাড়ি ওয়ালার দোকানে সারাদিন বসে থাকে,সেখানে আরো অনেকেই থাকে একজন এস আই পুলিশ ভাই প্রায় ই দোকানে থাকে তার সাথে এই কয়দিনে ভালই সখ্যতা তৈরি হয়েছে হুজুরের,
দোকানের গোমস্তাদের বলছে এই তোরা না কাল হুজুর কে আম এনে দিস বিক্রি করা শুরু করুক
লজ্জা করলে পেটে ভাত যাবে না ব্যাবসা করা সুন্নাত
বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে হুজুর মনে হয় একটু বিপদেই আছে,মাস সেসে ত বাড়ি ভারাও জমে যাচ্ছে, এভাবে বসে থাকলে হবে না,
হুজুর ঘরে এসে বউ কে বল্ল আমের ব্যাবসা করলে কেমন হয়?বউ কিছু বলার আগেই
ছেলেটা লাফ দিয়ে উঠে নেচে উঠে বলে বাবা
ভালই ত হবে সবাই আম কিনবে
আমার বাবা আম কিনবে না, আমি শুধু খাব,
আচ্ছা দেখেন কি করা যায় এটাও কিন্ত মন্দ না,,
কয়দিন হলো ত বাবুরে ভাতের মার খাওয়াচ্ছো আবার ক্ষতি হয়ে যাবে না ত?
আচ্ছা বাচানোর মালিক আল্লাহ রিজিকের মালিক ও আল্লাহ
ওর রিজিকে আল্লাহ যা রাখছে ও তাই খাচ্ছে ক্ষতি হবে কেন
,কিচ্ছু হবেনা ইনশাআল্লাহ,
আল্লাহ কবে যে একটা ব্যাবস্থা করব,
সকাল সকাল বের হবে
বউ বল্ল কিছু খাইলেন না,
 কি খাব কিছুই ত নাই
একটু দারান
খুদের ভাত রানব আজ,
আচ্ছা!
খেয়ে বের হলো,
বল্ল দুপুরে আসব
আজ দুপুরে কি রান্না হবে তার কোন উপায় নাই একটা পিয়াজ ও যে আজ নাই,
সব কাজ সেরে ১২ টায় গোসল করে বউ নামাযে দারাইল,
নামায সেসে ১৫/২০ মিনিট পরেই তার হুজুর ঘরে ফিরল
কিন্ত দরজা খুলেই বউ অবাক দুই হাত ভরে বাজার
কই পেলেন?
কথা বলেনা
রেস্ট নিয়ে গোসল করে এসে দু রাকাত নামায পড়ে মসজিদে গেল,
এসে বল্ল বাজারের ঘটনা,
ওইযে তুমি ওইদিন লিস্ট দিলানা?
সেগুলাই আনলাম
কিন্ত আমি ত লিস্টে এত বাড়িয়ে লিখিনি
তুমি বাড়িয়ে না লিখলে আল্লাহ যদি বাড়িয়ে রিজিক রাখে কি করবা!
যাক আলহামদুলিল্লাহ
এবার বলেন
ত শুনো!
সকালে দোকানে বসে ছিলাম কিছুক্ষন পর এস আই পুলিশ ভাই আসল অনেক গল্প আলাপ হলো,ত আমি ফোন বের করতেই সেই লিস্ট পকেটেই ছিল সেটা পরে যায়য় আমি খেয়াল করিনি
পুলিশ ভাই তুলে নেয়
আর পড়েও
তখন হুজুরকে জিজ্ঞেস করে হুজুর মাস ত সেস বাজার ঘাটের কি অবস্থা,
ত আমিও বললাম আল্লাহ নিজ কুদরতে ব্যাবস্থা করলেই কেবল সম্ভব,ত ভাই উঠে চলে গেল আর বল্ল হুজুর আমি একটু আসি
আপনি যাইয়েন না,
আধা ঘন্টা পর সে লিস্ট দেখে সব কিনেছে সাথে বারিয়েও কিনেছে যেখানে ময়দা লিখা আছে ১ কেজি সে কিনেছে তিন কেজি, 
এনে বলতেছে বাসায় যান,
আমি ত অবাক কি বলে ইনি,
চোখের কোনে জল চলে আসছে এসব বলতে বলতে, হুজুরের, 
পরে একটা ভ্যান নিয়ে চলে আসলাম,,,
দেখো তুমি না বললে লিস্ট দেখে পরান জুরাইব?
আল্লাহ রিজিকের মালিক
বাবুটারে আর ভাতের মার খাওয়াইও না
সুজি কিনে দিছে খাওয়াও আচ্ছা!
ধোর্জের ফল মিস্টি হয়,!
দোয়ার ফল অবশ্যই আসে,

----------------------------------

 

দোয়া কবুলের গল্প♥

মা হয়েছি অল্প বয়সেই,
বিয়েটা হয় ১৭ বছর বয়সেই, আর বিয়ের ৭/৮ মাস পরেই কন্সিভ করি।
আমার হুজুর কে পুরো প্রেগন্যান্সিতে সেভাবে কাছে পাইনি
পর্দার প্রবলেমের জন্য শশুরবাড়ি থাকা হত না
চাকরিস্থলে ফ্যামিলির ব্যাবস্থা না থাকায় বাবার বাড়িই থাকতাম বিয়ের পর থেকে,
প্রথম প্রেগন্যান্ট অনুভুতিগুলাও ছিল অন্যরকম
দুই মাসেই শরীর প্রচুর খারাপ হতে লাগল কিছুই খাইতে পারতাম না
কিন্তু এক্সট্রা কিছু খাইতে ইচ্ছা করত প্রচুর,  যেমন মনে হত ভাত ত খেতে পাচ্ছিনা দুধ বা দই হলে মনে হয় একটু খেতে পারতাম
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কিছুই খেতে ইচ্ছা হত
কিন্তু খাওয়া হত না কিছুই
সে সময় আমার হুজুরের চাকরি চলে যায় অনেক ভোগান্তিতে থাকেন,
আমাকে হাত খরচের জন্য পুরা প্রেগনেন্সিতে টাকা দিতে পারেনি
আর মা বাবার কাছেই অনেক দিন হলো ছিলাম লজ্জার কারনেও তাদের কাছে কখন ও কিছু খেতে চাইনি, আমি টুকটাক হাতের কাজ করতাম
সুতার টুপি সেলাই করতাম ২০/৩০/৫০ এরকম দামে বিক্রি করতাম একটা টুপিই বানাতে আমার ২/৩ দিন লেগে যেত
সেই টাকা দিয়ে নিজের কিছু চাহিদা মেটাতাম
হুজুর দুই এক মাস পর আসলে যা খেতে ইচ্ছা করত বলতাম খাওয়াত,
এভাবেই নয়টা মাস কেটে যায়
কোন প্রবলেম না থাকায়
আমি কোন ডাক্তার দেখাইনি
একদিন রাতে ব্যথা
পেট একটু মোচর দিয়ে থেমে যায়, মনে করি গ্যাস্টিক প্রব রাত ১০ টায় উঠে অসুধ ও খাই
আবার শুয়ে পরি
কিন্তু আবারো ব্যাথা ক্রমে ক্রমে বারতে থাকে দুবার টয়লেটেও গেলাম
১১ টার দিকে অসহ্য পর্যায়ে গেল হালকা শীতের রাত
ব্যাথা বেরে গেলে কান্নার আওয়াজ বের হত আম্মু ও শুনে ফেল্ল
উঠে এসে জিজ্ঞেস করল কাদছি কেন
বললাম আমার কোমর চিবাচ্ছে পেট মোচরে ব্যাথা কোমর থেকে ব্যাথা পিঠের উপর দিকে উঠে আসছে একটু পর পর
তখন ও ভাবিনি একটু পরেই আমার কোল আলোকিত হবে,
আম্মু বল্ল হাটা হাটি কর শুয়ে থাকিস না
ভাবলাম
হাটলে কমে যাবে ব্যাথা উঠে হাটা শুরু করলাম
কিন্তু কই এই ব্যাথা ত আর কমার না বেরেই চলছে
আর এটা কিরম ব্যাথা গো
এত অসহ্য আর যন্ত্রনাদায়ক কেন, কি হল আমার
তখন দেখলাম আম্মু পুরাতন কাপড় বাবুর কাথা সব বের করতেছে তখন বুঝলাম আমার এটা প্রসব ব্যাথা
যন্ত্রনার মধ্যেই পুরা শরীরে এক অন্য রকম আনন্দের ঢেউ খেলে যায়, চাচি আসে পেটে তেল মালিস করে নিচের দিকে আর বুকের নিচে কাপড় দিয়ে বেধে দেয়,
যখন ১ টা বাজল আমি আর দারায়ে থাকতে পারলাম না বিছানা করে দেয়া হল ফ্লোরে শুয়ে পরলাম
কিন্তু আমি ত নিজেকে কন্ট্রল করতে পাচ্ছিনা চিল্লানি আসতেছে
হায় তখন যদি বৃস্টি হত আমি বুক ফাটিয়ে চিল্লাতাম কেউ শুনত না
কিন্তু লোকে আমার চিল্লানি শুনবে ছি ছি করবে লোক লজ্জার ভয়ে যতটা সম্ভব নিজেকে কন্ট্রল করতেছি চাচিরা কালিমা পরছে আমাকে পড়াচ্ছে একবার বসছি ত আবার শুচ্ছি আবার দারিয়ে যাচ্ছি,
চিল্লানি না দিতে পেরে মুখ থেকে এক প্রকার গোংরানির আওয়াজ বের হচ্ছে দুনিয়াবি খেয়াল নেই, সবার কথা গুলা কাছে মাছের বাজারের মত লাগছে
রাত ৪ টা বেজে যায়,  তবুও কোন আলামত নেই
সব ক্লিয়ার ব্যাথাও প্রচুর তবুও কেন এত কস্ট পাচ্ছি
আর ভাবছি আল্লাহ গো মরন দাও আমি জান্নাতি হব
এই কস্টের চেয়ে বুঝি মরন কস্ট কম হবে আমি মরতে চাই
আবার কখনো কখনো মুখ দিয়ে বের হচ্ছে জোরে জোরে বলছি আল্লাহ গো বাচাও,
পরে আমাদের গ্রামেরএক ডাক্তার কে ফোন করা হলো
আমাকে বসায়ে পুরা চাদরে ঢেকে দেয়া হলো তিনি এসে আমার হাতে ইঞ্জেকশন পুশ করে বাহিরে গেল সকাল ৭ বাজবে বাজবে, ইঞ্জেকশন দেয়ার পর আমার দুনিয়াবি কোনই সেন্স ছিল না প্রচুর ব্যাথায় আমি শোয়া না বসা জানিনা
মুখ দিয়ে গোংরানি এ যেন এক মৃত্যুর ই কস্ট 
জানিনা মৃত্যু যন্ত্রনা টা আরো কত গুন বেশি হবে,
৭ টায় আবার ছেলেটা দুনিয়ায় চলে আসল
আমি এক নজর দেখেই চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলাম,
শরীর টা এত ব্যাথা হয়ে গেল যেন কত ঝড় তুফান এই শরীরে বয়ে গেছে
একটু পর বসে সোনাটাকে কোলে নিলাম,  আর আমার আর হুজুরের আগেরই সিলেক্ট করা নামটা তখনি সবাইকে বলে দিলাম আব্দুল্লাহ,,,,,
আমার কস্ট গুলা ৭ টার মধ্যেই সেস হয়নি,
শুরু হলো আরেক কস্ট
প্রচুর ব্যথা বস্তে পাচ্ছিনা হাটতে পাচ্ছিনা
লজ্জায় কাউকে কিছুই বলছিওনা
আর মনে মনে ভাবছি নর্মাল ডেলিভারি হয়ত এমন পেইন হয় স্বাভাবিক,
এক সময় আম্মুকে বলেই ফেললাম আমাকে একটু ব্যাথার অসুধ আনিয়ে দেন,
আমার হুজুর তখন নতুন এক চাকরিতে জয়েন্ট করছিল তাই আমার থেকে ছিল অনেক দূরে,
আমার চলাফেরা দেখে আম্মু বুজতে পারল সব কিছু ঠিক নাই হয়ত
তাই চাচিকে খবর দিল এসে আমার অবস্থা দেখল
আর যেন তিনি আকাশ থেকে পরল দেখেই ত কান্নাকাটি বল্ল সেলাই লাগবে
অবস্থা খুবই খারাপ, আর হ্যা আমার সোনাটা হয়েছিল সারে চার কেজির মত, অনেক বড়সড় কোল ভরা,
হবার পর দিন এত এত ঝড় হলো রাতে যে পুরা বাংলাদেশে নেট প্রব্লেম
বগুড়া থেকে ঢাকায় ফোন করা যাচ্ছিল নআআ
আব্বু ও ঢাকায় চাকরি করত আমার হুজুর ও টাংগাইল ছিল,
তাই আমার অবস্থাটা কাউকেই জানানো যাচ্ছিল না
মাহরাম কেউ নেই ঘরে
আম্মু যেন দিশেহারা
আমার চাচাকে নিয়ে চাচি আমাকে হস্পিটালে নিল
বাবুকে আম্মুর কাছে রেখে গেলাম,
আব্বু আর জামাই কেউ জানল না আমার অবস্থা
পরে আমাকে দেখে ডাক্তার ও খুব করে বকাবকি
রুগির অবস্থাটাই ত খারাপ করে দিছেন
মলদ্বারের সাথে এক হয়ে গিয়েছিল ছিরে,
যাই হোক
সেলাই করে সে রাত হস্পিটালে থেকে পরদিন বাড়ি আসি আস্তে আস্তে সুস্থ হই,সব ঠিক থাকলেও
আমার ভেতরটা যেন অন্য রকম হয়ে গেল রোগা হইই কিছুই ভাল লাগেনা
খাওয়ার রুচি নেই
স্বামিকে দেখলে বিরক্ত লাগত কাছে ঘেসতে দিতাম না
সহবাস ত ছিল আমার কাছে খুবই কস্টকর আর বিরক্তের, কেন এমন হত আমি জানতাম না
তখন ছেলের দের বছর ও হয়ে গেল হঠাত আমার জরায়ু থেকে মর রক্ত আর পুজ আসে হাটতে পারিনা পেট ব্যাথা
দ্রুত ডাক্তার দেখাই
তখন ধরা পরল আমার ডেলিভারির সময় হাতে গ্লভস না পরার কারনে
আর দায়িরা হাত ভেতরে দিয়েছিল নখের আচর আর নরম জরায়ুতে লেগে যায় আর সেটাই আস্তে আস্তে ইনফেকশন তার পর ঘা আর তার পর পেকেও যায়
তখন ও ক্যান্সার হয়নি সবই আল্লাহর ইচ্ছা, 
ট্রিট নেয়া শুরু হলো আর আমিও আল্লাহর রহমতে সুস্থ হয়ে যাই,,,হুজুরের চাকরিস্থলেই থাকতাম তিন জনের সংসার, ছেলেটা আমার এত শান্ত ছিল যে আমার মনেই হত না আমি মা হয়েছি আমারো এককটাছেলে আছে,
যত টুক কাজ খাওয়ান ঘুম পারান সব হুজুরের সাথেই করত সারাক্ষন হুজুরের সাথেই থাকত
তাই মন হত এখন যদি আরো একটা বাবু হয় ত অনেক ভাল হত 
অনেক সুখের পরিবার আমাদের হেসে খেলে তিন জনে দিন পার করতাম আর হুজুরকে বলতাম প্রথম প্রেগনেন্সিতে আমি আপনার থেকে দূরে ছিলাম আমার খাওয়ার কস্ট ছিল অনেক আপনাকে কাছে না পাওয়ার বেদনাও ছিল অনেক একা লাগত কান্না করতাম সারাক্ষন আর এখন আল্লাহ আমাদের এক করে দিছে এক জায়গায় থাকি তাই এবার কন্সিভ করলে আমার আর কোন কস্ট থাকবেনা অসুস্থ থাকলে  শুয়ে তথাকলে কেউ কথা শুনাবেনা
যা খেতে ইচ্ছা করবে আপনি খাওয়াতে পারবেন আমার দেখভাল করতে পারবেন এবারো আরেক রকম অনুভুতি থাকবে তাই
আল্লাহর কাছে আরো একজন বান্দা বান্দি চাইতাম
কিন্ত হচ্ছিল না
তাই আবারো ডাক্তারের কাছে দৌড়াদৌড়ি যে কোন প্রবলেম থেকেই গেল কিনা,
কিন্ত না সব ত ঠিকই ছিল,
ছেলেটার বয়স সারে চার হয়ে গেল, 
আর আল্লাহর ইচ্ছায় দ্বিতিয়বারের জন্য আবারো কন্সিভ করলাম,
ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, 
যে মাসে কন্সিভ করলাম সে মাসেই হুজুরের চাকরিটা চলে যায়
আর আমি সেই আগের মতই  আবারো শুরু থেকেই বাবার বাড়িতেই রয়ে গেলাম
হুজুরের থেকে অনেক দূরে,,
সব ই আল্লাহ তায়ালার ঈমানি পরীক্ষা,ছেলেটাকে নিয়ে এখন আমি মার সাথেই থাকি, ৬ মাস চলছে আমার
হুজুর চতুর্দিকে ছুটাছুটি করছে একটা খেদমতের জন্য আল্লাহ কোথায় রিজিক রেখেছে জানিনা
তাই কোন ফয়সালা এখন ও হয়নাই
সবাই আমার অনাগত সন্তান টার জন্য দোয়া করবে
আল্লাহ আমার সন্তান সন্ততিকে তার দ্বিনের দায়ি হিসেবে কবুল করুক
নেক সন্তান দিক
আমিও তাদের আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিয়েছি ও দেব,
দুনিয়াটা ত মুমিনের জন্য কস্ট কর ই হবে তাই হতাশা নিরাশা হইনা
সব কিছুর বদলা এক সময় যেন পাই সেই আশাতেই থাকি।

----------------------------------

 

দোয়া কবুলের গল্প♥

দোয়া কবুলের গল্প পড়ে একটু কাঁদি!
.
লায়লা আলী হেল্যূ। মরোক্কোর এক বোন। তার ব্রেষ্ট ক্যান্সার হয়েছিল। বিজ্ঞ ডাক্তারগণ তার বেঁচে থাকার আশা একদম ছেড়েই দিয়েছিলেন। ইউরোপের সেরা সেরা ট্রিটমেন্ট দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ফলাফল শূন্য। তার আর কোন সম্ভাবনাই ছিল না বেঁচে থাকার। এমনকি লায়লা নিজেও সব আশা হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন। বোন লায়লার সে অলৌকিক ঘটনা তার মুখ থেকেই শোনা যাক ইন শ আল্লাহ –
.
"নয় বছর আগের ঘটনা। আমার ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পরে। সবাই জানে “ক্যান্সার” শব্দটা কতটুকু ভীতিকর। আল্লাহর উপর ঈমান খুবই দুর্বল ছিল আমার। আমি আল্লাহর স্মরণ থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে সরে গিয়েছিলাম। আমি ভাবতাম আমার এই সৌন্দর্য ও সুস্বাস্থ্য সারা জীবন অটুট থাকবে। আমি কখনই ভাবিনি ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধি আমার শরীরে বাসা বাঁধবে। আমি যখন আমার রোগের ব্যাপারে জানতে পারি তখন খুব করে এটা থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছিলাম। পালাবার পথ খুঁজতাম। বাঁচতে চাইতাম। কিন্তু সে পথ কোথায়? পৃথিবীর কোন প্রান্তে যাব আমি, এই মরণব্যাধি থেকে কীভাবে মুক্তি পাব?
একবার আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলাম। কিন্তু আমি আমার স্বামী আর সন্তানদের খবুই ভালবাসতাম। তাছাড়া ইসলামিক শারিয়াহ অনুযায়ী আত্নহত্যার মত মহাপাপের শাস্তি কি হবে সেটাও ভাবনায় আসেনি তখন। কারণ আমি আগেই বলেছি, আমি আল্লাহর স্মরণ থেকে একদম দূরে ছিলাম। আল’হামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহর ইচ্ছায় এই মরণব্যাধি আমার হিদায়েতের কারণ হয়েছে। আর আমি মনে করি অনেক গাফেল মানুষের জন্য আমার এই ঘটনা হিদায়েতের কারণ হবে ইন শা আল্লাহ্।
.
আমি বেলজিয়ামে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছিলাম। তারা আমার স্বামীকে বলেছিল, প্রথমে আমার স্তন অপসারণ করতে হবে। তারপর কিছু নির্দিষ্ট ঔষধ দিবে। আমি জানতাম, এই ধরনের পাওয়ারফুল ঔষধ খেলে আমার চুল পড়ে যাবে, চোখ ঝলসে যাবে আর আমি অন্ধও হয়ে যাব। এমনকি এই ঔষধ সেবন করলে মুখের উপর দাড়ি গজায়, নখ ও দাঁত ভেঙে যায়। আমি কোনোভাবেই সেই ওষুধ খেতে রাজী হলাম না। আমি ডাক্তারকে তুলনামূলকভাবে কম কার্যকর অন্য কোন ওষুধের কোর্স দিতে বললাম।
মরোক্কো চলে এলাম। সেখানে যাওয়ার পর আমার শরীরে খারাপ কোনোকিছুর প্রভাব অনুভব করতাম না। আমি এতটাই সুস্থতা অনুভব করছিলাম যে, ভাবতাম ডাক্তার হয়তো ভুল রিপোর্ট দিয়েছে, আসলে আমার ক্যান্সারই হয়নি। কিন্তু প্রায় ছয় মাস পরে দ্রুত আমার ওজন কমতে শুরু করে। আমার শরীরের রঙ পরিবর্তন হয়ে যায়, শরীর জুড়ে ক্রমাগত ব্যথা শুরু হয়। এই হাল দেখে আমার মরোক্কান ডাক্তার আমাকে ইউরোপে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন । আমরা তার কথামত রওয়ানা দেই।
.
সেখানকার ডাক্তারগণ আমার স্বামীকে বলেছিল, আমার ফুসফুসে ক্যান্সার সম্পূর্ণভাবে সংক্রমিত হয়ে গেছে। এখন আর আমার জন্য কোনো চিকিৎসার পথ খোলা নেই। তারা আমার স্বামীকে বলেছিল, “আপনার স্ত্রীকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান, সে আর বেশী দিন বাঁচবে না।” আমার স্বামী মরোক্কোতে ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে আমাকে নিয়ে ফ্রান্সে গেলেন উন্নত চিকিৎসার জন্য। মনে হল আমরা ফ্রান্সে গিয়ে বেলজিয়ামের চেয়েও ভালো চিকিৎসা পেলাম।
অবশেষে, আমরা অপারেশান করে আমার স্তন অপসারণের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। পাশাপাশি ডাক্তারদের নির্দেশিত ঔষধ সেবন করতেও ইচ্ছা পোষণ করলাম। ঠিক এই সময় আমার স্বামী এমন কিছু নিয়ে ভাবেন যা আমার চিন্তাতেও আসেনি কখনো। তিনি আমাকে নিয়ে মক্কায় আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার ইচ্ছা পোষণ করলেন। এটা শুনে আল্লাহর প্রতি প্রবল একটা ভালোবাসা অনুভব করলাম আমি। পবিত্র ঘর, আল্লাহর ঘরে যাওয়ার জন্য বুকটা যেন ফেটে যাচ্ছিল। মন চাচ্ছিল, তখনই আল্লাহ্‌র ঘরে গিয়ে আল্লাহ্‌র সামনে দাঁড়াই, আমার এই সমস্যাটির সমাধান চাই। প্রথমবারের মত পবিত্র কা’বা ঘর তাওয়াফ করার সুযোগ পেয়ে আমার খুব খুশি লাগছিল আর প্রথমবারের মত আমি প্যারিস থেকে ক্বুরআনের একটি কপিও কিনে ফেললাম।
.
আমরা সোজা মক্কায় গেলাম। যখন পবিত্র মাসজিদে প্রবেশ করলাম আর প্রথমে কা’বাকে দেখলাম, তখন চিৎকার করে কেঁদে ফেললাম। বলতে লাগলাম, “সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর ইবাদতের জায়গা, পবিত্র মাসজিদ, মুসলিমদের বিশাল জনগোষ্ঠী, তাদের মহানুভবতা, দানশীলতা আর আমার রবের কি নিখুঁত মহিমা”। আমি চিৎকার করে কাঁদতেই থাকলাম। আমি জানি, আমি কোনদিনই এখানে আসতে পারতাম না যদি না আমার রব চাইতেন। আমি দুনিয়াবী কাজে এতটাই ডুবে গিয়েছিলাম যে, এখানে আসার সুযোগের সন্ধানও করিনি কোনদিন।
আমি দু’আ করতে লাগলাম "হে আমার রব! ডাক্তাররা আমাকে নিরাময় করতে অক্ষম কিন্তু তুমি অক্ষম নও, বরং তুমি তো প্রত্যেক রোগের নিরাময় করে থাকো, এই মুহুর্তে তোমার দয়ার দরজা ছাড়া আমার কাছে আর কোন দরজাই অবশিষ্ট নেই, দয়া করো ওহ আল্লাহ্! রহম করো”।
.
আমি দু’আ করছিলাম আর কা’বা তাওয়াফ করছিলাম। আল্লাহ্ আমাকে হতাশ করেননি। খালি হাতেও ফিরিয়ে দেননি, আল’হামদুলিল্লাহ! আগেই বলেছি যে, আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে আমি সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলাম। তাই সেখানকার বিজ্ঞ আলেমদের কাছে গেলাম। অনুরোধ করলাম যেন আমাকে মৌলিক ইলম অর্জনের জন্য যে কোন কিতাবের নির্দেশনা দেন, যেটা পড়ে সহজেই তাওবার নিয়ম শেখা যায় যায়। তারা আমাকে বেশী বেশী ক্বুর’আন তিলাওয়াত করার নাসীহা দেন। তারা আমাকে জমজমের পানি দিয়ে প্রচুর পরিমাণে ‘তাদ্বাল্লুঊ” করার পরামর্শ দেন।
(তাদ্বাল্লুঊ: জমজমের পানি ততক্ষণ পান করা যতক্ষণ না তা পাঁজর পর্যন্ত পৌঁছায়)।
আর উঠতে বসতে আল্লাহর যিকির করার উপদেশ দেন। নাবী (ﷺ) - এর উপর বেশী বেশী দরুদ ও সালাম পেশ করতেও বলেন।
.
বিশ্বাস করুন! আল্লাহ’র এই পবিত্র ঘরে আমি খুব নিরাপদ বোধ করছিলাম । আমি আমার স্বামীকে অনুরোধ করেছিলাম তিনি যেন আমাকে হোটেলে না নিয়ে যান। কা’বা প্রাঙ্গণেই প্রতিটি মুহুর্ত কাটাতে চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন সেখানে থাকার জন্য। পবিত্র কা’বা প্রাঙ্গণে আমার পাশেই কিছু মিশরীয় ও তুর্কীস্থানের বোন ছিল। তারা আমাকে এত কান্নাকাটি করার কারণ জিজ্ঞেস করেছিল। আমি তাদের বলেছিলাম, ‘আমি এই প্রথম আল্লাহর ঘরে এসেছে, কখনো ভাবিনি যে আমি এতটা ভালোবেসে ফেলব এই পবিত্র প্রাঙ্গণকে’। আমি তাদেরকে আমার ক্যান্সারের কথাও বলেছিলাম। তারা সবসময় আমার পাশেই থাকত। এক মুহুর্তের জন্য আমাকে ছাড়ত না। তারাও তাদের স্বামীদের কাছ থেকে আমার সাথে মাসজিদে থাকার অনুমতি নিয়েছিল।
সেই রাতগুলিতে আমাদেরকে তেমন ঘুমে পেত না, খাওয়া দাওয়া তো নেই বললেই চলে; যা-ও খেতাম, তাও খুবই সামান্য পরিমাণে। তবে জমজমের পানি খেতাম প্রচুর পরিমাণে। এ ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘নিশ্চয়ই তা সুখাদ্য এবং রোগের শিফা।’(১) অপর হাদিসে তিনি (ﷺ) বলেন, ‘জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যেই পান করা হয় তা পূরণ হবে।(২)’ ।
.
কা’বা প্রাঙ্গণে থাকাকালীন আমরা কোন ক্ষুধা অনুভব করতাম না। আমরা আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করেই যাচ্ছিলাম তো যাচ্ছিলাম। আমাদের মুখে লেগে থাকত ক্বুর’আনের সুমিষ্ট আয়াতসমূহ। আমাদের রাতদিন, প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহুর্ত এভাবেই পার হতে লাগল।
যখন আমি রোগাক্রান্ত ও পাতলা শরীর নিয়ে আল্লাহর ঘরে এসেছিলাম আমার শরীরের ঊর্ধ্ব অংশ এবং আমার বুক স্ফীত হয়ে এসেছিল। বুক থেকে রক্ত-পুঁজ আসত বিধায় বুকের উপরের চারপাশটাতে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়েছিল । পরিচিত সেই দ্বীনি বোনেরা আমার শরীরের উপরের অংশে জমজমের পানি দিয়ে ধুয়েমুছে দিত প্রতিনিয়ত। কিন্তু আমি ওই অংশটা স্পর্শ করতে ভয় পেতাম। আমার অসুস্থতা আমার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিল। ভয়টা আমাকে এতটাই পেয়ে বসেছিল যে, আমার কাছে মনে হত এই অসুস্থতার কথা মনে রাখতে গিয়েই আমি আমার রবের ইবাদত ঠিকঠাক করতে পারব না। তাই, আমি শুধু জমজমের পানি দিয়ে শরীর ধুয়ে ফেলতাম আর ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া অংশের দিকে কোন ভ্রূক্ষেপই করতাম না। মাথায় শুধু একটাই চিন্তা, আর তা হলো কিভাবে আমার রবের সন্তুষ্টি অর্জন করব ।
.
পঞ্চম দিন। আমার বোনেরা একপ্রকার জোর করেই বসল। আমি যেন আমার পুরো শরীর জমজমের পানি দিয়ে ধুয়েমুছে ফেলি। শুরুতে আমি রাজী হইনি। কিন্তু মনে হল কিছু একটা আমাকে বাধ্য করেছিল তাদের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার জন্য। ধীরে ধীরে উপরের অংশটুকু পরিষ্কার করতে যাচ্ছিলাম, যে অংশ থেকে নিজেকে এড়িয়ে রেখেছিলাম এতদিন। খুব ভয় লাগছিল। আবারও আমার মনে হল, আমাকে বাধ্য করা হচ্ছে যে, এটা করো, এক্ষুণি করো। একপ্রকার জোর করেই বুকের উপর চলে এলাম।
সুবহানাল্লাহ! অবিশ্বাস্য ! আমার বুকে কোন পচন নেই, রক্ত নেই আর কোন পুঁজও নেই। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ভালো করে এদিক সেদিক দেখলাম। কিন্তু নেই সেরকম কিছুই নেই, একদম নেই। আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা চাইলে কী না করতে পারেন? যাবতীয় ক্ষমতা ও শক্তি তো তারই এখতিয়ারে।
 
এক বোনকে হাত দিয়ে ভাল করে দেখতে বললাম। সে দেখল, সব ঠিক হয়ে গেছে। উপস্থিত বোনদের সবাই চিৎকার দিয়ে তাকবীর ধ্বনি দিল, আল্লাহু আকবর! আল্লাহু আকবর! আল্লাহু আকবর!
দৌড়ে চলে গেলাম হোটেলে, আমার স্বামীর কাছে। তাকে দেখামাত্রই বললাম, ”আল্লাহ’র দয়া দেখ”, সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না। আমার মতো সেও চিৎকার করে কেঁদে দিলো। বলল, “তুমি কি আমার সেই প্রিয়তমা যাকে ডাক্তাররা ঘোষণা করেছে সে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই মারা যাবে? আমি বললাম, “হ্যাঁ গো হ্যাঁ ! আমি সেই!, তাক্বদীর একমাত্র আল্লাহ’র হাতে”। যাবতীয় প্রশংসা একমাত্র তার। কাল কী হবে একমাত্র তিনিই তা জানেন। তিনি সবকিছু জানেন।
.
আমরা সপ্তাহখানেকের মত পবিত্র নগরী মক্কায় ছিলাম। আল্লাহর অগণিত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেছিলাম। এরপর সেখান থেকে মদিনায় নবী (ﷺ) - এর মাসজিদ মাসজিদে নববীতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে সোজা ফ্রান্স। সেখানকার ডাক্তাররা আমার বর্তমান অবস্থা দেখে দ্বিধায় পড়ে গেলেন। খুব অবাকও হলেন বটে। পুরো ব্যাপারটা তাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিল। তারা বলল “আপনি কি সেই আপনি”? আমি গর্বের সাথেই বললাম, “হ্যাঁ ! আমি সেই আমি, আর এই হলো আমার স্বামী”। আমরা আল্লাহর রুজ্জুকে আঁকড়ে ধরেছি। তার উপরেই ভরসা করেছি। তারা শুধু এটুকুই বলল, “আপনার ব্যাপারটা রহস্যে ঘেরা”। তারা আবার আমাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাইল। পরীক্ষা করালাম, কিন্তু তারা আমার শরীরের কিছুই খুঁজে পেল না , ক্যান্সার গায়েব। আল্লাহু আকবর!
 
.
আমি সীরাহ (নবী ﷺ - এর জীবনী) পড়েছি। সাহাবা রদ্বিয়াল্লাহু ‘য়ানহু ওয়া আজমাঈনদের জীবনী পড়েছি। প্রচুর কেঁদেছি,কাঁদতে বাধ্য হয়েছি। জাহিলিয়াতে ডুবে থেকে জীবনের অনেক বড় একটা অংশ নষ্ট করার জন্য বারবার অনুতপ্তও হয়েছি । আজ আমি আল্লাহ্ ও তার রসূল (ﷺ) - এর অফুরন্ত ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছি। এখন আমি মহান আল্লাহর অনুতপ্ত এক বান্দী। যে তার রবকে মনেপ্রাণে ভালোবাসে। এখনকার প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি মুহুর্ত তাকে ভালবাসার চেষ্টাতেই কাটে আমার।
.
আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যার জন্য দু'আর দ্বার খোলা হয়েছে (অর্থাৎ যার দু'আ করার তাওফিক হয়েছে), তার জন্য রহমতের দ্বার খোলা হয়েছে।
আল্লাহর কাছে যেসব কিছু চাওয়া হয়, তন্মধ্যে তাঁর কাছে সর্বাধিক পছন্দীয় হলো আফিয়াত; অর্থাৎ নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যের জন্য দোয়া করা’।(৩)
_____
গল্প: মরক্কো থেকে মক্কা
দু'আ কবুলের গল্পগুলো - বই থেকে নেওয়া একটি গল্প।
----------------------

 

৮। দোয়া কবুলের গল্প♥

#দোয়া_কবুলের_গল্প
আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বরাকাতুহু ওয়া মাগফিরাতুহু।
اَلسَلامُ عَلَيْكُم وَرَحْمَةُ اَللهِ وَبَرَكاتُهُ‎

 

দোআ কবুলের ক্ষেত্রে আমি খুব বিশ্বাস করি নিজের আল্লাহ র উপরে বিশ্বাস। আমার দোআ যদি উত্তম কাজের জন্য হই তা কবুল হবেই সেই বিশ্বাস সব সময় রাখি। আলহামদুলিল্লাহ।
.
আমার খুব ছোট বয়স থেকেই বাবা কে অসুস্থ দেখে আসছি। এক মাত্র সন্তান হওয়া তে ভাই বোন না থাকায় দায়িত্ব টা ও একান্ত ই আমার,যেমন আদর সোহাগ টুকু। এত বছর এত টা প্রয়োজন লাগে নি,করোনা আসার পর বাবার অবস্থা আরো খারাপ,সব মিলিয়ে টাকা পয়সার খুব প্রয়োজন দেখা দিল। কিভাবে কি করবো বুঝতেসি না এমন অবস্থা। এমন অবস্থায় একটা নেক নিয়ত করেছিলাম,সেটার জন্য টাকা লাগছে কিন্তু আমার কাছে কোনো টাকা নেই,একটা কড়ি ও নেই। বাধ্য হইয়ে এক জায়গা হতে ধার নিলাম। ধার নেওয়ার আগে জানিয়ে রাখি সেই ব্যক্তি কে যেই আমার টাকা দিতে একটু সময় লাগবে। কিছু টা দিন একটু সময় দিবেন। আমি আমার নিয়ত এর কাজ খুশি মনে শেষ করলাম।
এর পর টেনশন শুরু হলো কিভাবে টাকা দিবো।
আল্লাহ থেকে চাইলাম কান্না করে করে কি অবাক কাণ্ড কুরবান এর পরের দিন আপুর বাসায় দাওয়াত। এমন টা কখনো হই না,প্রথম বার হলো। সেইখানে আবার সেলামি পেলাম ৫০০ টাকা খুশি তে মন টা ভরে গেলো,কিন্তু সেটা লোন এর পরিমাণ থেকে অনেক কম। এর পর ও পেলাম বলে শোকরিয়া আদায় করলাম। এর মধ্যে যার থেকে ধার নিয়েছিলাম তিনি কথা শুনালেন অনেক। টাকা দিতে বললেন। আমার এত কষ্ট লাগছিল। আল্লাহ র থেকে চাইলাম,নামায পড়ি আর চাই। একদিন খুব কষ্ট থেকে প্রচন্ড কান্না করলাম,সালাতুল হাজত এর নামায পরে চোখের পানি ঝরছিল আমার। এত কষ্ট লাগছিল। কারো মুখাপেক্ষী হতে কখনো চাই নি আর আজকে হতে হলো আর কথা ও শুনতে হলো। আল্লাহ র থেকে চাইলাম,আল্লাহ এ ঋণ এর বুঝা থেকে মুক্ত করুন। রাতে কি মনে করে আমার একজন আপনজন কে চাকরির কথা বললাম, কথায় কথায় টাকার লোন এর কথা টা ও বলে দিলাম। এর পর তিনি জোর করে টাকা পাঠিয়ে দিলেন এর পরের দিন সকালে। এবং এর পর যা বললেন তা শুনে আমি অবাক। তিনি যেই টাকা পাঠিয়েছেন সেই টাকা তার কাছে ছিল না। তিনি পাওয়ার ও কথা ছিল না। একজন ব্যক্তি ওনাকে টাকা টা দিতে চাইছিলেন, তিনি অনেক বছর ধরে সেই টাকা নেন নি। সেইদিন সন্ধ্যায় রাগ করে নিয়েছিলেন আর রাতে আমাকে দিলেন। তিনি আমাকে বললেন, "দেখুন,আল্লাহ আমার মাধ্যমে এইটা আপনার রিজিক এ রেখেছিলেন।"
.
আমিও নিয়ত এ রেখেছি টাকা টা ওনাকে ফেরত দিবো। কিন্তু যখন ই দেই সেটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু আল্লাহ যে বান্দা কে কিভাবে সাহায্য করতে পারেন, বান্দার কথা শুনেন তার আরেকটা প্রমাণ।
এর পরের ঘটনা টা আরো অবাক কর,যেইটা আজ হইছে আমার সাথে। আলহামদুলিল্লাহ।।
আমি টাকা গুলি পাওয়ার পর কিছুদিন পর দেখতেসি আরো বেশি টাকা লাগতেসে একটা কাজের জন্য। কিন্তু এইবার টাকার পরিমাণ লাগতেসে আগের চেয়ে ও বেশি। আমার কাছে একটা টাকা ও নাই। আল্লাহ র থেকে চাইলাম। আমার এক আপু কে বললাম,ধার দিতে। তিনি বললেন,ঠিক আছে তিনি জানাবেন। কিন্তু আমার টেনশন বেরে গেল কারণ ২০ তারিক এর মধ্যে টাকা লাগবে আপু এখনও পাই নি। অন্য জায়গায় ট্রাই করলাম কোথাও পেলাম না। আপু কে আবার কল করলাম আপু ও পেলো না। আমি গতকাল রাতে ও ভাবছিলাম,কি করবো। চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। আল্লাহ থেকে চাইলাম খুব করে। আবার মনে আসলো,যদি না পাই। তখন মন থেকেই উত্তর আসলো,না পেলেও তার মধ্যে ওর আমার জন্য উত্তম রেখেছেন আল্লাহ। আজকে হঠাৎ সকালে আপু ফোন দিল, বললো টাকা মেনেজ হইছে। আল্লাহ র কাছে শোকরিয়া কিভাবে করবো বুঝছিলাম না। আপু টাকা পাঠালেন আমি বললাম আপু কে আমি কিছু মাসের মধ্যে টাকা দিয়ে দিবো। কিন্তু আমি ভাবছিলাম কিভাবে টাকা দিবো। আমার কাছেই তো নেই। এর কিছুক্ষণ পর আপু ফোন করে জানালেন তিনি এইটা আমাকে হাদিয়া দিয়েছেন। আমি না করতে গেলাম,বললেন,হাদীয়া নিতে হই, আল্লাহ বলেছেন। চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো। আল্লাহ এত মহান। তিনি টাকার ব্যবস্থা ও করে দিলেন। আমাকে অন্যের কাছে ঋণী ও রাখলেন না। চিন্তা থেকে ও মুক্তি দিলেন।
শোকরিয়া করে কি শেষ করা যাই কখনো!! কখনো সম্ভব না শোকরিয়া করে শেষ করা।
.
আমার এ দোআ কবুলের ক্ষেত্রে আমি মনে করি,এইটা পুরোপুরি আল্লাহ র রহমত আর কুদরত। আমার মত গুনাহগার বান্দা কে তিনি রহমত করেছেন। কিন্তু এ দোআ করার মধ্যে কখনোই আশাহত হই নি। বলা হই যে আমরা অতি কষ্ট ভেঙে পড়ি, আল্লাহ র রহমতে আমি কখনোই ভেঙে পড়ি না। এইটা আল্লাহ র পক্ষ থেকে আমার জন্য অনেক বড় রহমত। যখন ই কষ্ট হই,হইয়েছে নামায এ দাড়িয়ে গেছি আর আল্লাহ র থেকে শান্তি চেয়েছি। লোন এর টেনশন এ অনেক সময় খুব অশান্তি লাগতো, তখন একটা কথা খুব মনে আসতো, "দুশ্চিন্তার কারণে,মানসিক টেনশন এর দেওয়ার মাধ্যমেই গুনাহ মাফ হই"। (পড়েছিলাম বিভিন্ন জায়গায়, রেফান্স রাখিনি)।
আমি সব সময় বিশ্বাস করেছি,করি,আল্লাহ ব্যবস্থা করবেন ই। সঠিক সময়ে সঠিক জিনিষ এবং সবর করি সেই ব্যাপারে। খুব বিশ্বাস করি সবর কারী দের সাথে আল্লাহ আছেন।
.
সব সময় আমল করেছি, ৫ সূরা, ৬ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত,সূরা ফুরকান এর ৭৪ নং আয়াত (যদিও এটি বিবাহ,স্বামী র জন্য করা হই,তবুও আমি সব সময় এমনিতেই পড়ি), ইসমে আজম। সালাতুল হাজত এর নামায এবং সকল সময় তওবা এবং শোকরিয়া র নামায পড়ি,পড়েছি।
যদিও আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে,খুব ছোট তুচ্ছ ঘটনা এইটা দোআ কবুলের জন্য,কিন্তু আমার কাছে অতি প্রিয় এটি কারণ আল্লাহ যেইভাবে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং যেমন অবস্থায় ছিলাম আমি তা বলার অবস্থা ও রাখে না, "আলহামদুলিল্লাহ, একমাত্র আল্লাহ ই পারেন এত সুন্দর উত্তম ব্যবস্থা করতে।"
.
আমি হতাশ হই নি,আলহামদুলিল্লাহ। কখনো হতাশ হবেন না,দোআ করতে গিয়ে। একটু সবর করুন,সময় বলে,আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন। মনে রাখুন,আপনার চেয়ে আপনার মালিক আপনার জন্য কখন কোনটা কিভাবে কেনো উত্তম তা ভালো জানেন।
আল্লাহ আমাদের সকল এর দোআ কবুল করুন।
------------------

 

>> প্রকৃত লাভজনক ব্যবসা

মদীনার বাগানগুলোর মধ্যে এক ইয়াতীম ছেলের একটি বাগান ছিল। তার বাগানের সাথে লাগোয়া বাগানের মালিক ছিলেন আবু লুবাবা নামের এক লোক। সেই ইয়াতীম ছেলেটি নিজের বাগান বরাবর একটি প্রাচীর দিতে গিয়ে দেখল, প্রতিবেশীর একটি খেজুর গাছ সীমানার মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। ছেলেটি তার প্রতিবেশীর কাছে গিয়ে সমস্যার কথা বলে সীমানার খেজুর গাছটি কিনতে চাইলো যাতে প্রাচীরটি সোজা হয়। কিন্তু প্রতিবেশী আবু লুবাবা কোনভাবেই রাজী হচ্ছিল না।
 
কোন উপায় না পেয়ে সেই ইয়াতীম রাসুলুল্লাহ্ ﷺ এর কাছে গিয়ে পুরো ঘটনা বুঝিয়ে বললো। আল্লাহর রাসুল ﷺ ডেকে পাঠালেন আবু লুবাবাকে। সে মসজিদে নববীতে আসলে নবী করীম ﷺ সেই খেজুর গাছটি অর্থের বিনিময়ে হলেও ইয়াতীম ছেলেটিকে দিয়ে দিতে অনুরোধ করলেন।
 
আবু লুবাবা যথারীতি রাজী হলো না। রাসুলুল্লাহ্ ﷺ এক পর্যায়ে তাকে বললেন, "তোমার ভাইকে ওই খেজুর গাছটি দিয়ে দাও। আমি তোমার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছের জিম্মাদার হব।"
বিস্ময়কর হলেও আবু লুবাবা তারপরেও সেই খেজুর গাছ দিতে রাজী হলো না। রাসুলুল্লাহ্ ﷺ এই পর্যায়ে চুপ হয়ে গেলেন। এর চেয়ে বেশী তিনি ﷺ তাকে আর কী বলতে পারেন!
 
উপস্থিত সাহাবীদের মধ্যে সাবিত (রাঃ)ও ছিলেন। তিনি আবু দাহদাহ নামে পরিচিত ছিলেন। মদীনায় তাঁর খুব সুন্দর একটি বাগান ছিল। প্রায় ৬০০ খেজুর গাছ ছাড়াও একটি মনোরম বাড়ি ও একটি পানির কুয়া ছিল সেখানে। মদীনার সব বড় ব্যবসায়ীদের কাছে আবু দাহদাহ (রাঃ) এর বাগানটি সুপরিচিত ছিল। তিনি স্বপরিবারে সেখানে বসবাসও করতেন।
আবু দাহদাহ (রাঃ) হঠাৎ রাসুলুল্লাহ্ ﷺ -এর কাছে গিয়ে বললেন, 'হে আল্লাহ্'র রাসুল ﷺ ! আমি যদি আবু লুবাবার কাছ থেকে ঐ খেজুর গাছটি কিনে এই ইয়াতীমকে দিয়ে দেই, তাহলে আমিও কি জান্নাতে একটি খেজুর গাছের মালিক হবো?' রাসুলুল্লাহ্ ﷺ বললেন, "হ্যাঁ, তোমার জন্যও জান্নাতে খেজুর গাছ থাকবে।" আবু দাহদাহ (রাঃ) সাথে সাথে আবু লুবাবাকে বললেন, 'আপনি আমার সেই সম্পূর্ণ বাগানটি গ্রহণ করে সেই খেজুর গাছটি আমাকে দিয়ে দিন।'
 
আবু লুবাবা 'দুনিয়াবী' এই বিনিময় বিশ্বাস করতে পারছিল না! হুঁশ ফিরলেই সে বলল, 'হ্যাঁ আমি আপনার খেজুর গাছের বাগানটি গ্রহণ করলাম। বিনিময়ে আমার সেই খেজুর গাছটি আপনাকে দিয়ে দিলাম।'
হযরত আবু দাহদাহ (রাঃ) সেই মূহুর্তেই খেজুর গাছটি ইয়াতীম ছেলেটিকে উপহার হিসাবে দিয়ে দিলেন। তারপর রাসুলুল্লাহ্ ﷺ এর দিকে তাকিয়ে বললেন, 'হে রাসুলুল্লাহ্ ﷺ ! এখন আমি কি জান্নাতে একটি খেজুর গাছের মালিক হলাম'? রাসুলুল্লাহ্ ﷺ বললেন, "আবু দাহদাহ'র জন্য জান্নাতে এখন কত বিশাল বিশাল খেজুরের বাগান অপেক্ষা করছে।"
 
বর্ণনাকারী হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, এ কথাটি রাসুলুল্লাহ্ ﷺ এক, দুই বা তিনবার বলেননি; বরং খুশী হয়ে বারবার বলেছেন।
শেষে আবু দাহদাহ (রাঃ) সেখান থেকে বের হয়ে সদ্য বিক্রি করে দেয়া সেই বাগানে ফিরে গেলেন। বাড়ির দরজায় এসে স্ত্রীকে ডাক দিলেন তিনি, 'হে উম্মে দাহদাহ! বাচ্চাদেরকে নিয়ে এ বাগান থেকে বের হয়ে আসো। আমি দুনিয়ার এই বাগান বিক্রি করে দিয়েছি'। তাঁর স্ত্রী বললেন, 'আপনি কার কাছে এটি বিক্রি করেছেন? কে কত দাম দিয়ে এটি কিনে নিয়েছে?'
 
আবু দাহদাহ (রাঃ) বললেন, 'আমি জান্নাতে একটি খেজুর বাগানের বিনিময়ে তা বিক্রি করে দিয়েছি'। তাঁর স্ত্রী বললেন, 'আল্লাহু আকবার! হে আবু দাহদাহ! আপনি অবশ্যই অত্যন্ত লাভজনক একটি ব্যবসা করেছেন'।
[মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১২৫০৪; ইবনে হীব্বান, হাদীস ৭১৫৯; আস-সিলসিলা সাহীহাহ, হাদীস ২৯৬৪; মুস্তাদরাকে হাকীম, হাদীস ২১৯৪]
 
সুবহা'নআল্লাহ্! প্রকৃত লাভজনক ব্যবসা তো একেই বলে!
--------------------

 

>> দু'আ কবুল হওয়ার ২৯টি স্থান, ক্ষেত্র ও সময়ঃ

 
১)সুরা ফাতিহা পাঠ করার পর, সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করে দু'আ করলে দু'আ কবুল হয়।
(মুসলিম-৮০৬)
২) অনুপস্থিত ব্যক্তির জন্য দু'আ, কোন মুসলিমের অগোচরে অন্য মুসলিমের জন্য দু'আ করলে দু'আ কবুল হয়। (মুসলিম -৬৮২২)
৩) জালিমের বিরুদ্ধে মাজলুম ব্যক্তির দু'আ কবুল হয়। (তিরমীযি-৩৪৪৮)
৪) মা-বাবা তার সন্তানের জন্য দু'আ করলে দোয়া কবুল হয় ৷ (তিরমীযি-৩৪৪৮)
৫) নেককার সন্তানের দু'আ কবুল হয়। (বাবা-মায়ের জন্য তাদের মৃত্যুর পর)। (আবু দাউদ-২৮৮০)
৬) আরাফাতের ময়দানে দু'আ করলে দু'আ কবুল হয়। (তিরমীযি-৩৫৮৫)
৭) বিপদগ্রস্ত অসহায় ব্যক্তির দু'আ তাড়াতাড়ি কবুল হয়। (সূরা নমল ৬২,৫৭ ও সূরা ইসরার ৬৭ নাম্বার আয়াত)
৮) সেজদায় দু'আ করলে দু'আ কবুল হয়। (নাসায়ী১০৪৫)
৯) হজ্জের স্থানসমূহের দু'আ তাড়াতাড়ি কবুল হয়। যেমন: আরাফাহ, মুজদালিফা, মিনা...। (ইবনে মাজাহ-২৮৯২)
১০) হজ্জ করা অবস্থায় হাজ্জীর দু'আ কবুল হয়। (ইবনে মাজাহ-২৮৯৩)
১১) উমরাহ করার সময় উমরাহকারীর দু'আ কবুল হয়। (নাসায়ী-২৬২৫)
১২) আযানের পর দু'আ কবুল হয়। (তিরমীযি-২১০)
১৩) ক্বিতাল চলাকালীন সময় দু'আ করলে দু'আ কবুল হয়। (আবু দাউদ-২৫৪০)
১৪) বৃষ্টি বর্ষণকালে দু'আ করলে দু'আ কবুল হয়। (আবু দাউদ-২৫৪০)
১৫) শেষ রাতের দু'আ, তাহাজ্জুদের সময়কার দু'আ কবুল হয়। বুখারী-১১৪৫)
১৬) জুম্মার দিনে দু'আ কবুল হয়, আসরের শেষ দিকে তালাশ করার জন্য নির্দেশ আছে। (নাসায়ী-১৩৮৯)
১৭) লাইলাতুল ক্বদরের রাত্রির দু'আ কবুল হয়। (বুখারী ও মুসলিম)
১৮) আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়কার দু'আ কবুল হয়। (আহমাদ-১৪৬৮৯, মুসলিম -৬৬৮)
১৯) ফরয সালাতের শেষ অংশে দু'আ করলে কবুল হয়। (সালাম ফিরানোর আগে)। (রিয়াদুস স্বালেহীন ১৫০৮, তিরমীযি-৩৪৯৯)
২০),মুসাফিরের দু'আ কবুল হয়। (সফর অবস্থায়)। (তিরমীযি-৩৪৪৮)
২১) রোজাদার ব্যক্তির দু'আ কবুল হয়। (রোজা অবস্থায়) । (ইবনে মাজাহ-১৭৫২)
২২) ন্যায়পরায়ণ শাসকের দু'আ কবুল হয়। (তিরমীযি-২৫২৬)
২৩) দু'আ ইউনুস পাঠ করে দু'আ করলে দু'আ কবুল হয়। (তিরমীযি-৩৫০৫) দোয়া ইউনুস: লা ইলাহা ইল্লা-আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতুম মিনাজ জোয়ালিমীন।
২৪) ইসমে আযম পড়ে দু'আ করলে দু'আ কবুল হয়। (ইবনে মাজাহ-৩৮৫৬)
ইসমে আযম: আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলুকা বি-আন্না লাকাল হামদু লা-ইলাহা ইল্লা-আন্তা ওয়াহ'দাকা লা-শারীকা লাকাল মান্না-ন। ইয়া বাদীআস সামা-ওয়াতি ওয়াল -আরদ্বি ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম। ইয়া হা'ইয়্যু ইয়া কাইয়্যুম। (নাসাঈ-১৩০০)
[হাদিস শরীফে মোট তিনটি ইসমে আযম এসেছে, যে কোন একটি পড়লেই হবে, তবে এটিই বেশি প্রচলিত]
২৫) বিপদে পতিত হলে যে দু'আ পড়া হয় (ইন্না লিল্লা-হি... রাজিউন) এবং ( আল্লা-হুম্মা আজিরনি ফি মুসিবাতি ওয়া ওয়াখলিফলী খইরাম মিনহা...) তখন দু'আ কবুল হয়।
(মিশকাতুল মাসীবাহ-১৬১৮, মুসলিম -৯১৮)
২৬) জমজমের পানি পান করার পর দু'আ করলে কবুল হয়। ( ইবনে মাজাহ-৩০৬২, আহমদ৩/৩৫৭)
২৭) নির্যাতীত ব্যাক্তি দু'আ করলে দু'আ কবুল হয়। (তিরমীযি-৩৪৪৮)
২৮) যখন তোমরা মোরগের ডাক শুনবে, তখন তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ চাইবে (দোয়া করবে), কেননা সে একটি ফেরেশতা দেখেছে। (বুখারী (ফাতহুল বারীসহ), ৬/৩৫০, নং ৩৩০৩; মুসলিম, ৪/,২০৯২, নং ২৭২৯)
২৯) দু'হাত তুলে দোয়া করা, কারণ আল্লাহ বান্দার খালি হাত ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। (আবু দাউদ-১৪৮৮)
 
হে আল্লাহ! আমাদের সবাইকে বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দিন, এবং আমাদের সবার দোয়া কবুল করে নিন-আমীন ইয়া রব💙
--------------------

 

অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ২৫টি দোয়া যা আপনার দুনিয়া আখিরাতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ

___________________________
১- দুনিয়া আখিরাতের কল্যানের জন্য দোয়া-
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
উচ্চারনঃ “রব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল আখিরতি হাসানাহ ওয়া কিনা আজাবান্নার”
অর্থ-‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ইহকালে কল্যাণ দান কর এবং পরকালেও কল্যাণ দান কর। আর আমাদেরকে আগুনের-যন্ত্রণা থেকে রক্ষা কর।’(সুরা বাকারা- আয়াত ২০১)
কাতাদা (রাঃ) আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন কোন দোয়া রাসুল (সাঃ) বেশি পড়তেন তখন আনাস (রাঃ) উপরে দোয়াটির কথা বলেছিলেন (মুসলিম)
 
২- নিজে এবং নিজের পরিবারের সবার জন্য বিনা হিসাবে বিনা আজাবে জান্নাতুল ফিরদাউস চাওয়ার দোয়া-
اللهم أدخلنا وأهلنا الجنة الفردوس بغير حساب ولا عذاب
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আদখিলনা ওয়া আহলানা আল জান্নাতাল ফিরদাউস বিগইরি হিসাবিও ওয়া লা আ'যাব।
অর্থঃ ইয়া আল্লাহ তুমি আমাকে আর আমার পরিবারের সবাইকে বিনা হিসাবে, বিনা আজাবে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করো।
 
৩- হেদায়াতের পর অন্তরের বক্রতা হতে মুক্তি চাওয়া-
رَبَّنَا لاَ تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنتَ الْوَهَّابُ
উচ্চারনঃ রব্বানা-লা-তুযিগ্ কুলূবানা- বা’দা ইয্ হাদাইতানা-অহাবলানা-মিল্ লাদুন্কা রহমাহ , ইন্নাকা আন্তাল্ অহ্হা-ব্
অর্থঃ হে আমাদের রব, আপনি হিদায়াত দেয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। (সুরা আল ইমরান – আয়াত ৮)
 
৪- দ্বীনের উপর অটল থাকার দুয়া:
اللَّهُمَّ يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلَى دِيْنِكَ
উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুব, ছাব্বিত ক্বলবী আ'লা দ্বীনিক
অর্থ:- হে আল্লাহ! হে হৃদয়ের পরিবর্তন কারী! আপনি আমার হৃদয়-কে আপনার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন।
আনাস (রাদিয়াল্লাহু আ'নহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম) বেশি বেশি বলতেন,
"হে হৃদয়সমূহকে বিবর্তনকারী! তুমি আমার হৃদয়কে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রেখো।"
আমি বললাম, 'হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার প্রতি এবং আপনি যা আনয়ন করেছেন তার প্রতি ঈমান এনেছি, আপনি কি আমাদের ব্যাপারে ভয় করেন?'
তিনি বললেন, "হ্যাঁ, হৃদয়সমূহ আল্লাহর আঙ্গুলসমূহের মধ্যে দু'টি আঙ্গুলের মাঝে আছে। তিনি তা ইচ্ছামত বিবর্তন করে থাকেন।"(তিরমিযী ২১৪০, ইবনে মাজাহ ৩৮৩৪, মিশকাত ১০২)
 
৫- আল্লাহর কাছে হেদায়েত ও তাকওয়া চাওয়ার দোয়া-
‏ "‏اللهم إني أسألك الهدى، والتقى، والعفاف، والغنى‏"‏
উচ্চারনঃ "আল্লাহুম্মা ইন্নি আস-আলুকাল হুদা ওয়াত-তুকা ওয়াল আ'ফাফা ওয়াল গিনা।"
অর্থ: হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, সুস্থতা ও সম্পদ প্রার্থনা করছি।
(সুনানে আত-তিরমিযী: ৩৪৮৯)
 
৬- দুনিয়া আখিরাতের নিরাপত্তার যেই দুয়াটি রাসুল (সাঃ) কোন দিন সকাল সন্ধ্যায় পড়তে ছারতেন না-
আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)কখনোই সকাল হলে ও সন্ধ্যা হলে নিচের এই কথাগুলি বলতে ছাড়তেন না (সর্বদা তিনি সকালে ও সন্ধ্যায় এগুলি বলতেন)
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي، اللَّهُمَّ استُرْ عَوْرَاتي، وآمِنْ رَوْعَاتي، اللَّهمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَينِ يَدَيَّ، ومِنْ خَلْفي، وَعن يَميني، وعن شِمالي، ومِن فَوْقِي، وأعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحتي
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আস্আলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল ‘আ-ফিয়্যাতা ফিদ্ দুন্ইয়া- ওয়াল আ-খিরাহ। আল্লাহুম্মা, ইন্নী আস্আলুকাল ‘আফ্ওয়া ওয়াল ‘আ-ফিয়্যাতা ফী দীনী ওয়া দুন্ইয়াই-য়া, ওয়া আহলী ওয়া মালী। আল্লা-হুম্মাস- তুর ‘আউরা-তী ওয়া আ-মিন রাউ‘আ-তী। আল্লা-হুম্মাহ্ ফাযনী মিম বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী, ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া ‘আন শিমালী, ওয়া মিন ফাউক্বী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহতী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট ইহকালে ও পরকালে নিরাপত্তা চাচ্ছি। হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার নিকট আমার ধর্ম ও পার্থিব জীবনে এবং পরিবার ও সম্পদে ক্ষমা ও নিরাপত্তা ভিক্ষা করছি। হে আল্লাহ! তুমি আমার লজ্জাকর বিষয়সমূহ গোপন করে নাও এবং আমার ভীতিতে নিরাপত্তা দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার সম্মুখ ও পশ্চাৎ, ডান ও বাম এবং উপর থেকে রক্ষণাবেক্ষণ কর। আর আমি তোমার মাহাত্মের অসীলায় আমার নিচে ভূমি ধসা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (মুসনাদ আহমাদ ২/২৫, সুনানু ইবনি মাজাহ ২/১২৭৩, মুসতাদরাক হাকিম ১/৬৯৮, মাওয়ারিদুয যামআন ৭/৩৮১-৩৮৩, সহীহুত তারগীব ১/৩৪৩)
 
৭- আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত কখনো যেন হারিয়ে না যায়-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ وَجَمِيعِ سَخَطِكَ ‏"‏ ‏.‏
উচ্চারণঃ “আল্ল-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযুবিকা মিন যাওয়া-লি নি‘মাতিক, ওয়া তাহাও্‌উলি ‘আ-ফিয়াতিক, ওয়া ফুজা-য়াতি নিক্‌মাতিক, ওয়া জামী’ই সাখ-তিক”
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই নি‘আমাত দূর হয়ে যাওয়া হতে, তোমার দেয়া সুস্থতা পরিবর্তন হয়ে যাওয়া থেকে, তোমার অকস্মাৎ শাস্তি আসা হতে এবং তোমার সকল প্রকার অসন্তুষ্টি থেকে।”(মুসলিম- ৬৮৩৭)
 
৮- মারাত্মক রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তির দোয়াঃ
«اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَالْبَرَصِ، وَسَيِّئِ الْأَسْقَامِ»
উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল জুনুন, ওয়াল জুযাম, ওয়াল বারস, ওয়া সাইয়িল আসকম।
অর্থঃ হে আল্লাহ্‌! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি পাগলামী, কুষ্ঠ রোগ, শ্বেতরোগ এবং অতি মন্দ রোগ ব্যাধি হতে।
(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৫৪৯৩
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস)
 
৯- যে কোন অসুস্থ বা বিপদ্গ্রস্থ ব্যক্তিকে দেখে এই দোয়া পড়লে আপনি জীবনে কখনো ঐ অসুখে বা ঐ বিপদে পরবেন না-
উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক কোন বিপদগ্রস্থ লোককে প্রত্যক্ষ করে বলে
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي عَافَانِي مِمَّا ابْتَلاَكَ بِهِ وَفَضَّلَنِي عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيلاً
উচ্চারনঃ আলহামদুলিল্লা হিল্লাযি আ-ফা-নী মিম্মাব তালা-কা বিহ, ওয়া ফাদদলানীয় আলা কাছিইরিম মিম্মান খলাকো তাফদিইলা
অর্থঃ “সকল প্রশংসা আল্লাহ তা আলার জন্য, তিনি যে বিপদে তোমাকে জড়িত করেছেন তা হতে আমাকে হিফাযাতে রেখেছেন এবং তাঁর অসংখ্য সৃষ্টির উপর আমাকে সম্মান দান করেছেন”।
সে তার মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত উক্ত অনিষ্ট হতে হিফাযাতে থাকবে । তা যে কোন বিপদেই হোক না কেন ।
(ইবনু মাজাহ, হাঃ ৩৮৯২
হাদিসের মানঃ হাসান হাদিস
তিরমিজি ৩৪৩১- তাওহিদ পাবলিকেশন)
 
১০- সকাল সন্ধায় ৩বার করে যেই দোয়া পড়লে আসমান জমিনের কোন কিছুই আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সকালে তিনবার ও সন্ধ্যায় তিন বার এই দুআ পড়বে, কোনো কিছুই ঐ ব্যক্তির ক্ষতি করতে পারবেনা।”
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلاَ فِي السّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
উচ্চারণঃ বিস্‌মিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াদুররু মা‘আ ইস্‌মিহী শাইউন ফিল্ আরদ্বি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই, ওয়াহুয়াস্ সামী‘উল ‘আলীম (৩ বার)
অর্থঃ আমি সেই আল্লাহর নামে শুরু করছি, যার নামে শুরু করলে আসমান ও যমীনের কোনো কিছুই কোনো ক্ষতি করতে পারেনা, তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।
(আবূ দাউদ, ৪/৩২৩, নং ৫০৮৮; তিরমিযী, ৫/৪৬৫, নং ৩৩৮৮; ইবন মাজাহ, নং ৩৮৬৯; আহমাদ, নং ৪৪৬। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ২/৩৩২। আর আল্লামা ইবন বায রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘তুহফাতুল আখইয়ার’ গ্রন্থের ৩৯ পৃষ্ঠায় এটার সনদকে হাসান বলেছেন- হিসনুল মুসলিম থেকে)
 
১১- সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার সর্বশ্রেষ্ঠ দোয়া-
আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে কেউ যদি প্রতিদিন সকাল (ফযরের পরে) ও সন্ধ্যায় (আসর বা মাগরিবের পরে) পড়ে আর সে ঐদিন মারা যায় ইন শা’ আল্লাহ সে জান্নাতে যাবে। এই গ্যারান্টি দিয়ে গেছেন স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সাঃ)। (বুখারী, তিরমিযী ৫/৪৬৬)
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَّا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِر لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা, খালাক্বতানি ওয়া আনা আ’বদুক, ওয়া আনা-আ’লা আহ’দিকা ওয়া-ওয়াদিকা মাস্তা-তোয়া’ত, আ’উযুবিকা মিন শাররি মা-ছানাআ’ত আবু-উ-লাকা বিনি’মাতিকা আলায়্যা ওয়া-আবু-উ-বি-যামবি, ফাগফিরলী, ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুযযুনুবা ইল্লা-আনতা।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো আর আমি তোমার বান্দা। আমি আমার সাধ্যানুযায়ী তোমার সাথে যে ওয়াদা করেছি তা পূরণ করার চেষ্টায় রত আছি, আমি আমার কর্মের অনিষ্ট থেকে পানাহ্ চাই, আমি স্বীকার করছি আমার প্রতি তোমার প্রদত্ত নিয়ামতের কথা এবং আমি আরো স্বীকার করছি আমার পাপে আমি অপরাধী, অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো, তুমি ছাড়া ক্ষমা করার আর কেউ নাই।
 
১২- দুই সিজদার মাঝে বৈঠকের দোয়াতে আপনার সব চাওয়া রয়েছে-
اَللّهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِيْ (وَاجْبُرْنِيْ وَارْفَعْنِيْ) وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ।
উচ্চারণ:- আল্লা-হুম্মাগফিরলী অরহামনী অজবুরনী অরফা’নী অহ্‌দিনী ওয়া আ-ফিনী অরযুক্বনী।
অর্থ- হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর, দয়া কর, আমার প্রয়োজন মিটাও, আমাকে উঁচু কর, পথ দেখাও, নিরাপত্তা দাও এবং জীবিকা দান কর। (আবূদাঊদ-৮৫০, তিরমিযী-২৮৪, ইবনে মাজাহ্‌-৮৯৮,হাকেম, মুস্তাদরাক)
ক্ষমা, দয়া, সমস্ত প্রয়োজন মিটানো, নিচুতা দূর করে উচু করা, সঠিক পথে পরিচালনা করা, নিরাপত্তা দেওয়া, জীবিকা দেওয়া এই সমস্ত কিছু প্রতি রাকাত সলাতের ১ সিজদা থেকে উঠে বসে আপনি আল্লাহর কাছে চেয়ে নিতে পারছেন আর সলাতটাই তো মুলত মুনাজাত, অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে সলাতের মধ্যে আল্লাহর কাছে দোয়া কবুলের আশা সবচেয়ে বেশি থাকে, আপনি একবার চিন্তা করুন প্রতিদিন এত রাকাত সলাতে আমরা এত বার যদি আল্লাহর কাছে এই দুয়াটা করি আর কোন ১বারও যদি দয়াময় আল্লাহ সুবহানাহু তা'লা কবুল করে নেন তাহলে দুনিয়া আখিরাতে আমাদের আর কোন অপ্রাপ্তি থাকবে কি?
 
১৩- উত্তম স্বামী/স্ত্রী সন্তান পাওয়ার দোয়া-
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا
উচ্চারণঃ রব্বানা-হাব্লানা-মিন্ আয্ওয়া-জ্বিনা-অ যুররিয়্যা-তিনা-কুররতা আ’ইয়ুনিঁও অজ্ব্‘আল্না-লিলমুত্তাকিনা ইমা-মা
অর্থঃ হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী/স্বামী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন। (সূরা আল-ফুরকান- আয়াত ৭৪)
 
১৪- নিজে এবং নিজের বংশধরদের সালাত কায়েমকারী হওয়ার জন্য দোয়া-
ﺭَﺏِّ ﺍﺟْﻌَﻠْﻨِﻲ ﻣُﻘِﻴﻢَ ﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﻭَﻣِﻦ ﺫُﺭِّﻳَّﺘِﻲ ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻭَﺗَﻘَﺒَّﻞْ ﺩُﻋَﺎﺀ
উচ্চারণঃ “রব্বিজ আ’লনি মুকিমাছছলাতি ওয়ামিং যুররিইয়াতি রব্বানা-ওয়া তাকব্বাল দোয়া-
অর্থঃ “হে আমার রব! আমাকে তাদের একজন কর, যারা নিয়মিত সালাত কায়েম করে এবং আমার বংশধরদের মধ্যে থেকেও। হে আমার প্রভু তুমি আমার প্রার্থনা গ্রহণ কর।"(সুরা ইব্রাহিম- আয়াত ৪০)
 
১৫- জিবীত বা মৃত পিতামাতার জন্য দোয়া-
رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
উচ্চারণঃ রব্বীর হাম্হুমা-কামা-রব্বাইয়া-নী সগীইর-
অর্থ :হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন (সূরা আল-ইসরা- আয়াত ২৪)
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
উচ্চারণঃ রব্বানাগফিরলি অলিওয়া লিদাইয়্যা অ- লিলমুমিনীনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসা-ব্।
অর্থ: হে আমাদের রব, যেদিন হিসাব কায়েম হবে, সেদিন আপনি আমাকে, আমার পিতামাতাকে ও মুমিনদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। (সূরা ইবরাহিম- আয়াত ৪১)
এখানে পিতামাতার পাশাপাশি অন্য মুমিনদের জন্যও ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়েছে আর রাসুল (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারীদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, তাহলে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য একটি করে সওয়াব আল্লাহ তার আমল নামায় লিখে দেবেন (ত্বাবরানী, শাইখ আলবানী হাদীছটিকে হাসান সহিহ বলেছেন, সহীহুল জামে হা/৬০২৬)
#হাদিসটা নিয়ে একটু চিন্তা করে দেখুন, বর্তমান পৃথিবীতেই ২০০ কোটির উপরে মুসলিম রয়েছে আর আদম (আঃ) থেকে শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিমের সংখ্যা কত হবে সেটা ১মাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তা’লা ছাড়া আর কারো পক্ষেই জানা সম্ভব নয় অথচ তাদের জন্য ১ বার ক্ষমা চাইলেই আপনি সেই সংখ্যক নেকী পেয়ে যাবেন যার পরিমাণ কোন মানুষের কল্পনায়ও আসবে না। ইসলামের সৌন্দর্য দেখুন, ইসলাম শুধু নিজের কথা চিন্তা করতে বলে না বরং অন্যদের কল্লান কামনা, তাদের প্রতি বিদ্বেষ না রাখা, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এটাও শরীয়তে বিরাট ইবাদত হিসাবে বিবেচিত আর সেই কারনেই দেখা যাচ্ছে মুসলিম ভাই বোনদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়াতে তিনি এমন পরিমাণ সওয়াব নির্ধারণ করেছেন যেটা আর কোথাও পাওয়া যায় না।
 
১৬- যে দোয়া ১ বার পাঠ করলে রাত দিন অনবরত জিকিরের চেয়েও বেশি সওয়াব পাবেন-
আবূ উমামাহ আল-বাহিলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি বসা অবস্থায় আমার ঠোঁট নাড়াচ্ছিলাম, এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আসলেন। তিনি (সাঃ) আমাকে বললেন: তোমার ঠোঁট নাড়াচ্ছো কেন? আমি বললাম, আল্লাহর যিকির করছি; হে আল্লাহর রাসূ্ল! তিনি (সাঃ) বললেন : আমি কি তোমাকে এমন কিছু জানাবো না, যখন তুমি তা বলবে তোমার রাত-দিনের অনবরত যিকির পাঠও এর সওয়াব পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে না? আমি বললাম, হাঁ, বলুন। রাসুল (সাঃ) তখন এই দোয়া শিখিয়ে দিলেন
اَلْحَمْدُ لِلَّه عَدَدَ مَا أحْصَى كِتَابُهُ، وَالْحَمْدُ لِلَّه عَدَدَ مَا فِي كِتَابِهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّه عَدَدَ مَا أحْصَى خَلْقُهُ، وَالْحَمْدُ لِلَّه عَلَي ماَ فِي خَلْقِهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّه مِلْءَ سَمَاوَاتِهِ وَأرْضِهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّه عَدَدَ كُلِّ شَيْءٍ وَالْحَمْدُ لِلَّه مِلْءَ كُلِّ شَيْءٍ
 
سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا أحْصَى كِتَابُهُ، وَ سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا فِي كِتَابِهِ، وَ سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ مَا أحْصَى خَلْقُهُ، وَ سُبْحَانَ اللَّهِ عَلَي ماَ فِي خَلْقِهِ، وَ سُبْحَانَ اللَّهِ مِلْءَ سَمَاوَاتِهِ وَأرْضِهِ، وَ سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ كُلِّ شَيْءٍ وَ سُبْحَانَ اللَّهِ مِلْءَ كُلِّ شَيْءٍ
 
اَللهَ أَكْبَرعَدَدَ مَا أحْصَى كِتَابُهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ عَدَدَ مَا فِي كِتَابِهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ عَدَدَ مَا أحْصَى خَلْقُهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ عَلَي ماَ فِي خَلْقِهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ مِلْءَ سَمَاوَاتِهِ وَأرْضِهِ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ عَدَدَ كُلِّ شَيْءٍ وَاللَّهُ أَكْبَرُ مِلْءَ كُلِّ شَيْءٍ
 
উচ্চারনঃ “আলহামদুলিল্লাহি আদাদা মা আহস্ কিতাবুহ্, ওয়াল হামদুলিল্লাহি আদাদা মা ফী কিতাবিহ্, ওয়াল হামদুলিল্লাহি আদাদা মা আহস্ খলকুহ্, ওয়াল হামদুলিল্লাহি আ’লা মা ফী খলক্বিহ্, ওয়াল হামদুলিল্লাহি মিলআ সামাওয়াতিহি ওয়া আরদিহ্, ওয়াল হামদুলিল্লাহি আদাদা কুল্লি শাই-ই, ওয়াল হামদুলিল্লাহি মিলআ কুল্লি শাই-ই
 
“সুবহানাল্লহী আদাদা মা আহস্ কিতাবুহ্, ওয়া সুবহানাল্লহী আদাদা মা ফী কিতাবিহ্, ওয়া সুবহানাল্লহী আদাদা মা আহস্ খলকুহ্, ওয়া সুবহানাল্লহী আলা মা ফী খলক্বিহ্, ওয়া সুবহানাল্লহী মিলআ সামাওয়াতিহি ওয়া আরদিহ্, ওয়া সুবহানাল্লহী আদাদা কুল্লি শাই-ই, ওয়া সুবহানাল্লহী মিলআ কুল্লি শাই-ই,
 
“আল্ল-হু আকবার আদাদা মা আহস্ কিতাবুহ্, অল্ল-হু আকবার আদাদা মা ফী কিতাবিহ্, অল্ল-হু আকবার আদাদা মা আহস্ খলকুহ্, অল্ল-হু আকবার আলা মা ফী খলক্বিহ্, অল্ল-হু আকবার মিলআ সামাওয়াতিহি ওয়া আরদিহ্, অল্ল-হু আকবার আদাদা কুল্লি শাই-ই, অল্ল-হু আকবার মিলআ কুল্লি শাই-ই
 
অর্থঃ “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য তার কিতাব যা গণনা করেছে সেই পরিমাণ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য তার কিতাব যা গণনা করেছে তা পূর্ণ করে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য তার সৃষ্টি যা গণনা করেছে সেই পরিমাণ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য তার সৃষ্টির মধ্যে যা কিছু আছে তা পূর্ণ করে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য তার আসমান ও জমিন পূর্ণ করে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য সকল কিছুর সংখ্যার সমপরিমাণ, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য সব কিছুর উপর।
 
“আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার কিতাব যা গণনা করেছে সেই পরিমাণ, আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার কিতাব যা গণনা করেছে তা পূর্ণ করে, আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার সৃষ্টি যা গণনা করেছে সেই পরিমাণ, আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার সৃষ্টির মধ্যে যা কিছু আছে তা পূর্ণ করে, আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি তার আসমান ও জমিন পূর্ণ করে, আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি সকল কিছুর সংখ্যার সমপরিমাণ, আমি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি সব কিছুর উপর।
 
“আমি আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করছি তার কিতাব যা গণনা করেছে সেই পরিমাণ, আমি আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করছি তার কিতাব যা গণনা করেছে তা পূর্ণ করে, আমি আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করছি তার সৃষ্টি যা গণনা করেছে সেই পরিমাণ, আমি আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করছি তার সৃষ্টির মধ্যে যা কিছু আছে তা পূর্ণ করে, আমি আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করছি তার আসমান ও জমিন পূর্ণ করে, আমি আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করছি সকল কিছুর সংখ্যার সমপরিমাণ, আমি আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা করছি সব কিছুর উপর।
 
(ত্ববারানী কাবীর হা/৭৫৮৭, ৮০৪৭, দুটি সানাদে হাদিসের শব্দাবলী তার। আলবানি হাদিসটিকে সহিহ লিগাইরিহি বলেছেন সহীহ্ আত তারগিব হা/১৫৭৫। আবু উমামাহ হতে হাদিসটা কিছুটা ভিন্ন শব্দে বর্ণীত হয়েছে আহমাদ, ইবনু আবুদ দুনিয়া, নাসায়ি, ইবনু খুজাইমা, ইবনু হিব্বান এবং হাকিমে। ইমাম হাকিম বলেনঃ বুখারি ও মুসলিমের শর্তে সহিহ। আলবানি বলেছেন সহিহ, সহিহ আত তারগিব হা/১৫৭৫- আহসানউল্লাহ বিন সানাউল্লাহ রচিত- কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে ফাজায়েলে আমাল বইয়ের ৭৮২ নাম্বার হাদিস)
 
প্রতিদিন যে কোন সময় পড়তে পারেন, ১বার ই পড়তে হবে এমন নয়, যতবার খুশী পড়তে পারেন তবে দিনে কমপক্ষে ১ বারও যদি এটা পড়েন তবে সারাদিন অনবরত জিকিরের সওয়াব পেয়ে যাবেন ইন শা আল্লাহ তবে দিনে রাতে অন্য যেগুলো সুন্নাতি জিকির আজকার রয়েছে সেগুলো আবার ছেড়ে দিবেন না যেন, জান্নাত পাওয়ার জন্য যতবেশি পাথেয় যোগাড় করতে পারব ততই আমাদের জন্য ভালো সুতরাং প্রতিদিন ১বার অন্তত পড়ার চেষ্টা করুন। প্রথমে একটু কঠিন মনে হতে পারে সেখেত্রে দেখে দেখে পড়তে পারেন কয়েক দিনের মধ্যেই মুখস্ত হয়ে যাবে ইন শা আল্লাহ।
 
১৭- শিরক থেকে বাঁচার দো'য়াঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ».
উচ্চারনঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘ঊযু বিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া ‘আনা আ‘লামু ওয়া আস্তাগফিরুকা লিমা লা আ‘লাম
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি জ্ঞাতসারে আপনার সাথে শির্ক করা থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই এবং অজ্ঞতাসারে (শির্ক) হয়ে গেলে তার জন্য ক্ষমা চাই।”
(আহমাদ ৪/৪০৩, নং ১৯৬০৬; ইমাম বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৭১৬। আরও দেখুন, সহীহ আল জামে ৩/২৩৩; সহীহুত তারগীব ওয়াত তারহীব লিল আলবানী, ১/১৯। হিসনুল মুসলিম)
 
১৮- শিরক বাদে বাকি সব পাপ থেকে মুক্তির দোয়াঃ
হযরত আব্দুর রহমান বিন গানম (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি মাগরিব ও ফজরের নামায থেকে ফিরে বসা ও পা মুড়ার পূর্বে (অর্থাৎ যেভাবে বসে সলাত শেষ করেছে ওভাবে বসেই) নিম্নোক্ত দোয়াটি ১০ বার পাঠ করবে,
«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ»
উচ্চারনঃ লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্‌দাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মূলকু ওয়ালাহুল হাম্‌দু ইয়ুহ্‌য়ী ওয়াইয়ূমীতু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বদীর।
অর্থ: “একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবিত করেন এবং মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান”।
আল্লাহ্‌ তার আমলনামায় প্রত্যেকবারের বিনিময়ে ১০টি নেকি লিপিবদ্ধ করেন, ১০টি গোনাহ মোচন করে দেন, তাকে ১০টি মর্যাদায় উন্নীত করেন, প্রত্যেক অপ্রীতিকর বিষয় এবং বিতাড়িত শয়তান থেকে (ঐ যিকির) রক্ষামন্ত্র হয়, নিশ্চিতভাবে শির্ক ব্যতীত তার অন্যান্য পাপ ক্ষমার্হ হয়। আর সে হয় আমল করার দিক থেকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, তবে সেই ব্যক্তি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে যে তার থেকেও উত্তম যিকির পাঠ করবে”(আহমাদ,সহীহ তারগীব-হাদিস ৪৭২)
 
১৯- সকল প্রকার অনিষ্ঠ থেকে বাচ্চাদের হেফাজতের জন্য সকাল সন্ধায় ঝাড়ফুঁকের দোয়া-
ইবনু ‘আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান এবং হুসাইন (রাঃ)-এর জন্য নিম্নোক্ত দু‘আ
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
উচ্চারনঃ আঊযু বিকালিমা তিল্লাহিত তাম্মাহ, মিন কুললি শয়ত্বানিও ওয়া হাম্মাহ, ওয়া মিন কুল্লি আইনিল লাম্মাহ।
অর্থ: আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার দ্বারা প্রত্যেক শয়তান, বিষাক্ত প্রাণী এবং প্রত্যেক কুদৃষ্টির অনিষ্ট হতে পানাহ চাচ্ছি।
পড়ে পানাহ চাইতেন আর বলতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আঃ)- ইসমাঈল ও ইসহাক (আঃ)-এর জন্য দু‘আ পড়ে পানাহ চাইতেন। (বুখারিঃ ৩৩৭১,আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১২১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১২৯)
 
২০- রোগ মুক্তির অত্যান্ত কার্যকরী দোয়া-
أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي لاَ شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لاَ يُغَادِرُ سَقَمًا ‏"‏‏
উচ্চারনঃ ‘‘আযহিবিল বা’স, রববান্না-স, ইশফি আন্তাশ শা-ফী, লা শিফা-আ ইল্লা শিফা-উক, শিফা-আল লা য়ুগা-দিরু সাক্বামা।’’
অর্থঃ কষ্ট দূর করে দাও। হে মানুষের রব, আরোগ্য দান কর, তুমিই একমাত্র আরোগ্যদানকারী। তোমার আরোগ্য ছাড়া অন্য কোন আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দান কর যা সামান্যতম রোগকেও অবশিষ্ট না রাখে। (বুখারি- ৫৬৭৫)
যে কোন রোগে এই দুয়া পড়ুন, নিজের জন্য বা অন্যের জন্য, এমনকি এটা পড়ে শরিরে ফু নিতে পারেন বা অসুস্থ ব্যক্তিকে দিতে পারেন কিংবা এটা পরে পানিতে ফু দিয়ে খেতেও পারেন বা শরিরে ছিটাতেও পারেন, যে কোন রোগের চিকিতসায় এটা অত্যান্ত কার্যকর দোয়া
 
২১- যে কোন দোয়া কবুল হওয়ার জন্য ইসমে আ‘যম’ সহ দো‘আ করলে সেই দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়-
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ بِأَنَّكَ أَنْتَ اللهُ الْأَحَدُ الصَّمَدُ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
উচ্চারনঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকা বিআন্নাকা আনতাল্লা-হুল আহাদুছ ছামাদুল্লাযী লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ ওয়া লাম ইয়াকুল লাহূ কুফুওয়ান আহাদ’
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকটে প্রার্থনা করছি; কেননা তুমি আল্লাহ। তুমি একক ও মুখাপেক্ষীহীন। যিনি কাউকে জন্ম দেননি ও যিনি কারো থেকে জন্মিত নন এবং যাঁর সমতুল্য কেউ নেই)।
জনৈক ব্যক্তিকে এটা পড়তে শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তি আল্লাহর নিকটে তাঁর ‘ইসমে আযম’ (মহান নাম) সহ দো‘আ করেছে। যে ব্যক্তি উক্ত নাম সহকারে প্রার্থনা করবে, তাকে তা দেওয়া হবে। আর যখন এর মাধ্যমে দো‘আ করা হবে, তা কবুল করা হবে’।
(ইবনু মাজাহ হা/৩৮৫৭ ‘দো‘আ’ অধ্যায়-৩৪, ‘আল্লাহর ইসমে আযম’ অনুচ্ছেদ-৯; আবুদাঊদ হা/১৪৯৩; ‘আওনুল মা‘বূদ হা/১৪৮২-এর ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য)
অর্থাৎ এই দোয়া পড়ার পর নিজের চাহিদা আল্লাহর কাছে জানাবে এতে আল্লাহ সুবহানাহু তা'লা তার দোয়া কবুল করে নিবেন ইন শা আল্লাহ
 
২২- মৃত্যুর আগে তাওবা নসীব হওয়ার জন্য দুয়া:
اللَّهُمَّ أَرْزُقْنِيْ تَوْبَةً نَصُوحَةً قَبْلَ الْمَوتِ
উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মারযুক্বনি তওবাতান্নাসু-হাহ, ক্ববলাল মাউত
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মৃত্যুর পূর্বে খাটি দিলে তওবা করার সুযোগ করে দিবেন।
 
২৩- ভাল মৃত্যু লাভের দুয়া:
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ حُسْنَ الْخَاتِمَةِ
উচ্চারনঃ আল্লহুম্মা ইন্নি আসআলুকা হুসনাল খ-তিমাহ
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উত্তম মৃত্যু চাই।
 
২৪- আল্লাহর কাছে ধৈর্য ও মুসলিম হিসাবে মৃত্যু চাওয়ার দোয়া-
رَبَّنَآ أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
উচ্চারনঃ রব্বানা-আফরিগ ‘আলাইনা-সবরওঁ ওয়া তাওয়াফফানা-মুছলিমীন
অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ধৈর্য দান করুন এবং মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে মৃত্যু দান করুন।’ (সুরা আল-আরাফ- আয়াত ১২৬)
 
২৫- মৃত্যুর পর আল্লাহ যেন আমাদের নেক্কার বান্দাদের সাথে মিলিয়ে দেন সেই মর্মে দোয়া-
فَاطِرَ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ أَنتَ وَلِىِّۦ فِى الدُّنْيَا وَالْءَاخِرَةِ ۖ تَوَفَّنِى مُسْلِمًا وَأَلْحِقْنِى بِالصّٰلِحِينَ
উচ্চারনঃ ফাতিরিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ, আনতা ওয়ালিই ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরহ, তাওয়াফফানী মুসলিমাওঁ ওয়া আলহিক্বনী বিসসলিহীন.
অর্থ: হে আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা, দুনিয়া ও আখিরাতে আপনিই আমার অভিভাবক, আমাকে মুসলিম অবস্থায় মৃত্যু দিন এবং নেককারদের সাথে আমাকে যুক্ত করুন’। (সুরা ইউসুফ- আয়াত ১০১)
---------------------

 

৯। দোয়া কবুলের গল্প♥

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা আমার দোয়া কবুল করেছেন আলহামদুলিল্লাহ্‌
আমার মত পাপী বান্দির দোয়া আল্লাহ তায়ালা ফিরিয়ে দেন নি।
আল্লাহকে ডেকে কখনোই নিরাশ হইনি আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাকে কখনোই নিরাশ করেন নি। অনেক অনেক দোয়াই আল্লাহ্‌ তায়ালা কবুল করেছেন। আজকের দোয়া কবুলের কথা বলছি । গত কয়েকদিন ধরেই রিযিক নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম।যখনই দুশ্চিন্তা বেড়ে যেতো ইস্তেগফার করতাম আর আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতাম। কিভাবে যেনো দুশ্চিন্তা উধাও হয়ে যেতো আমার অবাক লাগতো।আবার ও দুশ্চিন্তা করতাম রিযিক নিয়ে আর দোয়া চাইতাম আল্লাহর দরবারে।আলহামদুলিল্লাহ্‌ আল্লাহ কল্পনাতীত উৎস হতে রিযিকের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আমি কল্পনাও করতে পারিনি আল্লাহতালা এভাবে রিযিকের ব্যবস্থা করে দিবেন, আলহামদুলিল্লাহ্‌ আলহামদুলিল্লাহ্‌ আলহামদুলিল্লাহ্‌। যখনই রিযিকের ব্যবস্থা হল আল্লাহ্‌র শুকরিয়ায় ২ চোখ ভিজে গেলো। আলহামদুলিল্লাহ্‌ আলহামদুলিল্লাহ্‌ আলহামদুলিল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌ কাউকে নিরাশ করেন না, আগে বা পরে ঠিক আল্লাহ দেন। সবর করুন আর আল্লাহ কে ডাকুন । নিশ্চই আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে। আলহামদুলিল্লাহ্‌ আলহামদুলিল্লাহ্‌ আলহামদুলিল্লাহ্
--------------------

 

১০। দোয়া কবুলের গল্প♥

ভয়ংকর রাত
----
আমার স্বামী বাইরে থাকে। পাঁচ বছর পর দেশে এসেছে। আমার তিন বাচ্চা। বড়টার বয়স আট বছর পাঁচ মাস, মেঝো সাত, ছোট পাঁচ। পাঁচ রুমের একটা বিল্ডিংয়ের একপাশে আমার জা থাকে দুই রুম নিয়ে। আমার বাচ্চারা মাঝখানের রুমে থাকে। বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে আমরা পাশের রুমে থাকি। আমরা সেদিন আমার বাবার বাড়ি থেকে আসার সময় বড় মেয়ে আসতে চায়নি বলে তাকে রেখে আসি।
ছোট দু' জন ভয় পাবে বলে রাতে আমরা মাঝের রুমে মানে বাচ্চাদের সাথে ঘুমাই । রাত একটা বাজে তখন আমি শুনতে পাই কেউ দরজায় নক করছে একটু পরপর।
 
স্বামীকে ডেকে তুলে বলি সে বিশ্বাস করেনা, বলে তুমি ঘুমের ঘোরে কি শুনতে কি শুনেছো, ঘুমাও।
আমি আবারও শুনি, এবার আরো জোরে জোরে আওয়াজ হচ্ছে। এখন আমার স্বামী শুনতে পেয়ে উঠে বসে, আর বলে কে এলো এতো রাতে?
উনি দরজা খুলতে যাচ্ছেন একটা দরজা খুললেন, তখন আমি বাইরের দরজা খুলতে নিষেধ করি।
আমি ঃ তুমি উনাদেরকে গেইটের সামনে আসতে বলো। প্লিজ তুমি দরজা খুলবেনা।
আমার কথা শুনে উনি ভেতরের দরজাটা বন্ধ করে সামনের দরজা খুলে গেইটের সামনে এসে দেখে গুটগুটে অন্ধকার। সুইচ দিচ্ছে কিন্ত কোন জ্বলছেনা, শেষের লাইট জ্বেলে লোকগুলোকে সামনে আসতে বলে ও ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসে।
আপনারা কারা এতো রাতে কেন এসেছেন? বলতেই একজন বলল গেইট খুলেন ভেতরে এসে বলি।
তখন পাশের বাড়ির দু' জন লোক হাত উঁচু করে বলে আমাদেরকে নিয়ে এসেছে তোমাকে ডেকে দেওয়ার জন্য। আমরা অনেকক্ষন ধরে ডাকছি।
তখন আমি বলি আপনারা দিনের বেলায় আসুন। তখন একটা লোক বন্দুক উঁচিয়ে বলে, গেইট খুলে দে নয়তো গুলি করে দিব। তখন দেখি দশ বারোজন লোক।
 
সাহেব দরজা বন্ধ করে দিয়ে চিৎকার করতে থাকে ডাকাত, ডাকাত বলে। আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা। পাশের দরজাটা খুলে আমার জা'কে ভেতরে আসতে বলে।
উনি বড় লাইট দিয়ে জানালায় আঘাত করতে থাকে আর চিৎকার করতে থাকে ডাকাত, ডাকাত বলে।
আমি হতবাক হয়ে যাই। এরপর আমিও চিৎকার করে পাশের বাড়ির লোকদের ডাকতে থাকি।
এদিকে ডাকাতদল গাছ দিয়ে আঘাত করে দরজা ভাঙতে চাইছে। সারা বিল্ডিং আঘাতে কাঁপতেছে।
হঠাৎ আমার মনে হলো আমার চিৎকার কে শুনবে? ঘরের পিছনে পুকুর। আমার কথা এমনিতে পাশের রুম থেকেই কেউ শুনেনা।আমার হাত-পা কাঁপছে।
 
হঠাৎ মনে হলো আমি আল্লাহকে কেন ডাকছি না ?লোকজনকে ডাকছি কেন? একমাত্র তিনিই পারেন এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে।
 
তখন আমি মরিয়া হয়ে আল্লাহ ডাকতে থাকি। দুইহাত উপরে তুলে চিৎকার করে ডাকতে থাকি " আল্লাহ তুমি বাঁচাও"। আমি সিজদায় পরে কাঁদতে থাকি আর মনে মনে বলি " আল্লাহ তুমি যার সম্মান রক্ষা করো তাকে কউ অসম্মান করতে পারে না। আর তুমি যাকে অসম্মান করো তাকে কেউ সম্মান দিতে পারেনা। তুমি রক্ষা করো মাবুদ।
 
এক সময় দরজা ভাঙার আওয়াজ থেমে যায়। অনেক লোকজনের চিৎকার শুনা যায়। লোকেরা বলতে থাকে ডাকাত চলে গেছে গেইট খুলে দাও। আমি সিজদা থেকে উঠে বসি।
দেড় ঘন্টা ডাকাতদল বাড়িতে ত্রাস সৃষ্টি করেছে। পাশের বাড়িতে সারাগ্রামের লোকজন জড়ো হয়ে চিৎকার করতে থাকলে ডাকাতরা ভয় পেয়ে চলে যায়। যাওয়ায় সময় বাড়ির সামনে একটা ককটেল ফেলে যায়, ভাগ্যক্রমে সেটা গড়িয়ে খালের পরে নষ্ট হয়ে যায়।
দরজার লক ভেঙে গেছে আর একটা ছিটকিনি ভাঙলেই এরা ভেতরে ঢুকে যেতো।
আমি শুধু বুঝতে পেরেছি আল্লাহ আমার ডাক কবুল করেছে। আলহামদুলিল্লাহ। কোটি কোটি শুকরিয়া তাঁর দরবারে।তখন গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিও পরছিল।
আমার পাশের বাড়ির এক জা আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে বলছে, আমি শুধু তোমার চিন্তা করছিলাম " বিকেলে তোমাকে দেখে গেছি, এই শাড়িটাতে অনেক সুন্দর লাগছিলো। "
 
তখন গ্রামে ডাকাতি হলেই শুনা যেতো বাড়ির মেয়েদেরকে নির্যাতন করে গেছে। সবাই এসে মেয়েদের দেখতো আর রসিয়ে রসিয়ে মুখে মুখে এই গল্প চলত থাকতো।
আকুল হয়ে আল্লাহ ডেকেছি আর মনে বিশ্বাস রেখেছি তিনি অবশ্যই বাঁচাবেন। একমাত্র তিনি ই সেদিন বাঁচিয়েছেন। আমি খুব পরহেজগার বান্দা তা নই।তবুও আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের হেফাজত করেছেন।
 
গল্পটি একজন মহিলার বাস্তব জীবনের গঠনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।
--------------------------

 

১১। দোয়া কবুলের গল্প♥

বিয়ে হওয়ার কয়েকমাস পর থেকে বাবু নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু কোনো ফলাফল পাই নাই কিন্তু কখনো আল্লাহর কাছে চাই নাই সবসময় উড়া উরা ভাবে চলতাম এফবি তে অনেক রকমের ছবি পোস্ট করতাম এইভাবেই দিন যেতে থাকলো আসতে আসতে সবাই আমার সামনে মা হইতে থাকলো কিন্তু আমি মা হতে পারছি না সংসারে সবাই কেমন জানি অবহেলার চোখে দেখে আমকে আমার বাবু নাই বলে সংসারে সব কাজ আমি করতাম সবার কাছে অবহেলার পাত্রী হতে থাকলাম আমি আত্মীয় স্বজনদের সামনে গেলে বলতো কি হইসে তোমার বাবু হয় না কেনো কি সম্মসা এমন হাজার কথা 😥 জামাই ও একসময় অনেক কড়া কথা বলত দিন দিন চুপ হয়ে গেলাম কেমন জানি নিজেকে নিজে অচেনা লাগতো 😥 শেষ এ এক ভালো ডক্টর কে দেখাই ডক্টর সব রিপোর্ট চেক করে বললো আমার টিউব এ রক্ত জমাট বেঁধে আছে এই রক্ত না সরলে বাবু কনসিভ হবে না 6 মাস এর ওষুধ খেলাম কাজ হলো না শেষ এ ডক্টর বললো অপ্রশন করতে হবে তাহলে কনসিভ হবে 30 হাজার টাকা লাগবে অপ্রেশন করতে সেই রিপোর্ট আরো অন্য ডক্টর কে দেখাইলাম সেই একই কথা একদম ভেঙে পরছিলাম কেউ আমকে একটু সাহস দেয় নাই 😭 কিন্তু এত টাকার অপরেশন করা সম্ভব না তাই করবে না কিন্তু আমার মা বলসে আমি তোর চিকিৎসা করবো তুই আয় কিন্তু আমার বাবা মা ও আমার চিকিৎসা করতে গেলে তারা একদম খালি হোয়ে যাবে তাই আর যাই নাই এইভাবে দেখতে দেখতে 5 বছর হলো বিয়ের😥 অবশেষে ডিসিশন নিলাম এইবার একটু আল্লাহ কে ডাকি ফেসবুক থেকে সব ডিলিট করলাম নামাজ শুরু করলাম অবশেষে 5 ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম রোজ এস্তেগফার করতাম কেনো জানি এইসব করে অনেক শান্তি লাগতো প্রতিদিন ১টাকা হলেও দান করতাম 2 মাস এইভাবে গেলো পরে তাহাজ্জুদ পরলাম অনেক কান্নাকাটি করতাম যে আল্লাহ বাবু যদি না দেও কি নিয়া থাকুম আমি কে আমার জন্য দুআ করবো আমি মারা যাবার পর আমকে এই নেয়ামত থেকে দূরে রেখেও না এইভাবে অনেক কান্না করতাম 2 বছর কান্না করতে করতে আল্লাহ আমার ডাক কবুল করছে আমি কোনো অপরেশন ছাড়া কোনো মেডিসিন ছাড়াই মা হইসে আমকে আল্লাহ একটা জান্নাত দান করসে একটা মেয়ে বাবু দিসে 🌿
কেউ হতাশ হবেন না বোন আল্লাহ সব পারে সব
--------------------

 

১২। দোয়া কবুলের গল্প♥

**যুবকের আল্লাহ উপলব্ধি**
.
তারুণ্যে উদ্দীপ্ত এক যুবক।
বুধবার রাতে তার কুরআনের ক্লাসে উপস্থিত হল।
পুরো ক্লাস জুড়ে তার উস্তায “আমাদের নিজেদের উপলব্ধি জ্ঞান দ্বারা আল্লাহকে শুনতে পারা” সেই সাথে “আল্লাহ’র আনুগত্য করা” এই দুই বিষয়ে বর্ণনা করলেন।
.
যুবক ছেলেটি খুবই আশ্চর্য হল। আসলেই কি আল্লাহ আমাদের সাথে কথা বলেন আর আমাদের বিবেক দ্বারা আমরা তা বুঝতে পারি?
ক্লাস শেষে সেও তার সহপাঠীরা মিলে কফিশপে ঢুকলো।
কফির আড্ডায় শুরু হলো ক্লাসের বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা।
আড্ডায় একেকজন তাদের জীবনের গল্পগুলো বলতে শুরু করলো।
কীভাবে আল্লাহ্ তা’আলা তাদের জীবনকে বিভিন্ন দিকে পরিচালিত করেছেন সেসব নিয়ে।
সেই গল্পগুলোতে হতাশা ছিল, আনন্দ ছিল, হাসি ছিল, ছিল কান্না।
তবে জীবনের একটা লম্বা সময় পাড়ি দেওয়ার পর তারা বুঝতে পেরেছে আশা-হতাশার এই দোলাচল আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নির্দেশেই হয়েছে।
তিনি সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।
একসময় গল্পের আসর শেষ হল।
.
রাত তখন দশটা বাজে।
যুবক ছেলেটি গাড়ি চালিয়ে বাড়িতে ফিরছিল।
গাড়ির সীটে বসে বসে সে দু’আ করছিল “হে আল্লাহ! তুমি যদি এখনও মানুষের সাথে কথা বলো, তাহলে আমার সাথেও কথা বল, আমি শুনবো তোমার কথা। আমার সবটুকু সামর্থ্য দিয়ে আমি তোমার ইবাদত করবো।”
.
সে যখন তার শহরের মূল রাস্তার দিকে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল তখন তার মনে অদ্ভুত এক চিন্তা খেলে গেল।
হুট করে তার ইচ্ছা করল, গাড়ি থামিয়ে এক গ্যালন দুধ কিনবে।
কিন্তু এই অদ্ভুত চিন্তা এল কোথা থেকে?
আকাশের দিকে তাকিয়ে সে চিৎকার করে বলল, “ও আল্লাহ! এটা কি তোমার নির্দেশ ছিল?"
কিন্তু তার প্রশ্নের কোন জবাব এল না। চারপাশ একদম চুপচাপ, শুনশান।
জবাব না আসুক, ধরে নিতে সমস্যা কী এটা আল্লাহর নির্দেশ?
সে মনে মনে বলল, ‘হে আমার রব!
এই নির্দেশ যদি তোমার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে, আমি এই দুধ কিনবই কিনব।”
.
সে আরো ভাবল, ‘আর দুধ কেনা তো তেমন কঠিন কিছু না।
টাকাও জলে যাচ্ছে না, আবার প্রয়োজন পড়লে এই দুধ ব্যবহারও করা যাবে। নাহ! কিনেই ফেলি।’
এবার সে গাড়ি থামিয়ে গ্যালন খানিক দুধ কিনল এবং পুনরায় বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করল।
.
গাড়ি যখন ৭ নাম্বার রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ করে তার মনে হল গাড়িটা ৭ নাম্বার রাস্তা দিয়ে নিতে।
ভাবনাটা মাথায় আসামাত্র সে প্রচণ্ড বিরক্ত হল।
বিড়বিড় করে বলতে লাগল, ‘আরেহ! পাগল হয়ে যাচ্ছি নাকি!
কী সব উদ্ভট চিন্তা-ভাবনা মাথায় আসছে!
কি হচ্ছে আমার সাথে?’
সে আগের রাস্তা ধরেই আগাচ্ছিল।
রাস্তা পরিবর্তন করল না।
কিন্তু মাথার ভেতর কেন যেন ৭ নাম্বার রাস্তার কথাই বারবার চলে আসছে।
কোন এক অদৃশ্য শক্তি যেন তাকে টেনে ৭ নাম্বার রাস্তায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। হঠাৎ কেন যেন সে পুরো ব্যাপারটা উপভোগ করতে শুরু করল।
মৃদু হেসে মনে মনে বলল, “আল্লাহ! তুমি যা বলবে, তাই হবে।
তুমি যেদিকে নিয়ে যাবে, আমি আজ সেদিকেই যাব।’
.
এভাবে এবড়ো-থেবড়ো রাস্তা দিয়ে কিছুক্ষণ চলার পর আবার হুট করে তার মনে হল, এখন গাড়িটা থামানো উচিত। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আজ তার মনে যা আসবে, সে তাই করবে।
গাড়ি যেখানে থামাতে ইচ্ছা হল, সেখানেই থামিয়ে দিল।
চারপাশে তাকিয়ে দেখল, সে এতক্ষণে শহরের একদম একপাশে চলে এসেছে। এটা ছোটখাট একটা বাণিজ্যিক এলাকা। খুব বেশি উন্নত না।
আবার একেবারে খারাপও না।
আশপাশের সব দোকানপাট বন্ধ। বাড়িঘরগুলোতেও তেমন কোন আলো দেখা গেল না।
অন্ধকার অন্ধকার।
সবমিলিয়ে কেমন যেন একটা গা ছমছমে ভাব।
সবাই হয়ত ঘুমিয়ে পড়েছে এতক্ষণে।
.
আবার মাথায় আঘাত হানলো সেই কণ্ঠস্বর,
- “রাস্তার পাশের বাড়িটির দিকে যাও আর লোকদের মাঝে দুধ বিলিয়ে দাও।”
যুবক ছেলেটা বাড়িটির দিকে তাকাল। আলোহীন সে বাড়িটা দেখে মনে হল, ভেতরে কেউ নেই।
আর থাকলেও সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।
সে দরজায় কড়া নাড়বে কি নাড়বে না এরকম সাতপাঁচ ভেবে গাড়ীতে ফিরে এল, গাড়ির সীটে বসে সে বলে উঠল, “ওহ আল্লাহ! মানুষগুলি ঘুমাচ্ছে, যদি আমি তাদেরকে জাগিয়ে তুলি, এরা প্রচণ্ড রেগে যাবে, আমাকে নির্বোধ ভাববে।
এটা তো একটা কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ মনে হচ্ছে আমার কাছে।”
আবার কেন জানি তার কাছে মনে হল তার এখনই যাওয়া উচিৎ আর তাদেরকে দুধও দেওয়া উচিৎ।
যা হবার হবে।
.
আবার সে মনে মনে বললো, "ঠিক আছে আল্লাহ!
এটা যদি তোমারই নির্দেশ হয়, তাহলে আমি সেখানে যাব আর তাদেরকে দুধও দিব; আজ তুমি যদি আমাকে পাগল প্রমাণ করতে চাও, না হয় একদিনের জন্য পাগলই হলাম।
তারপরেও আজ তোমার নির্দেশ আমি পালন করবই করব।
আমার মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
আর যদি কিছুই না ঘটে, তাহলে আমি সোজা বাসায় চলে যাবো।”
.
রাস্তার একপাশ দিয়ে হেঁটে সে বাসাটার দিকে এগিয়ে গেল।
দরজায় কড়া নাড়তেই ভেতর থেকে শোরগোলের শব্দ কানে এল।
গম্ভীর একটি পুরুষ কণ্ঠ জিজ্ঞেস করল, “কে? কে এসেছেন? কী চাই?”
হঠাৎ করে দরজা খুলে গেল।
বাড়ির কর্তা একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ। চেহারায় বিষণ্ণতার ছাপ।
দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভদ্রলোক ভীষণরকম দুঃশ্চিন্তায় আছেন।
এরই মাঝে অচেনা আগন্তুকের মতো উটকো ঝামেলা দেখে তিনি ব্যাপক হতাশ।
মনে হচ্ছে অদ্ভুত এই আগন্তুক তার দুঃখবোধের মাত্রাটা যেন আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিল।
ভদ্রলোক বেশ নিরাশ গলায় বললেন, ‘কে আপনি?’
.
‘ইয়ে মানে! আমি হলাম’...
.
হঠাৎ যুবকের হাতে থাকা দুধের প্যাকেটটির দিকে ভদ্রলোকের নজর গেল।
তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
‘এটা কী আপনার হাতে?’
.
যুবক ছেলেটা বেশ আমতা আমতা করে বলল,
“ইয়ে মানে! কিছু দুধ.....”
.
ছেলেটা কথা শেষ করতে পারল না। লোকটা দুধের প্যাকেটটা এক প্রকার ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে ঘরের ভেতরে চলে গেল।
একজন মহিলাকে দেখা গেল।
ভদ্রলোক দুধের প্যাকেট মহিলার হাতে দিতেই মহিলা সেটা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে ছুটে গেল।
সবকিছু এতো দ্রুতই হচ্ছিল যে, ছেলেটা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না।
হঠাৎ সে খেয়াল করল, ঘরের কোণার অংশটায় একটা মাদুর পাতা আছে।
সেই মাদুরে একটি ফুটফুটে বাচ্চা হাত-পা ছুড়ে কান্না করছে।
.
ভদ্রলোক দৌঁড়ে গিয়ে সেই বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিয়ে যুবক ছেলেটার কাছে আসল।
বাচ্চাটার কান্নার সাথে সাথে মধ্যবয়স্ক লোকটাও কাঁদছিল।
তবে সে কান্না আনন্দের।
লোকটি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “আমরা মাত্রই দু’আ করছিলাম।”
.
ছেলেটি বলল, ‘দু’আ? কি জন্য?’
.
লোকটা শার্টের হাতায় চোখ মুছতে মুছতে বললো, ‘আমাদের এ মাসে অনেক বড় বড় বিল দিতে হয়েছে।
হাতে যা অবশিষ্ট টাকা ছিলো তাও শেষ হয়ে গেছে।
আমাদের সন্তানের খাবারের কোন দুধ নেই বাড়িতে।
ধার-দেনায় এতো পরিমাণ ডূবে আছি যে, কারো কাছে কোন সাহায্যও পাচ্ছিনা। আমার মাসুম বাচ্চাটা দুধের জন্য কান্না করতে করতে প্রাণ ওষ্ঠাগত।
ওর কান্না আর সহ্য করতে পারছিলাম না আমরা।
আমি মাত্রই আল্লাহ’র কাছে দু’আ করছিলাম তিনি যেন আমাকে একটা উপায় বাতলিয়ে দেন।
যেন আমরা দুধের ব্যবস্থা করতে পারি।’
.
এবার লোকটার স্ত্রী কথা বলে উঠল। বলল,
-‘আমি আল্লাহ’র কাছে চেয়েছিলাম, তিনি যেন কোন ফেরেশতাকে পাঠিয়ে দেন দুধসহ।
ভাই! আপনি কি ফিরিশতা?’
.
ঘটনার আকস্মিকতায় যুবকটি স্তম্ভিত হয়ে গেল।
তার মুখ দিয়ে যেন কোন কথাই বের হচ্ছেনা।
কি থেকে কিভাবে কি হয়ে গেল ভাবতেই যেন সে শিউরে উঠছে।
এভাবেও আল্লাহ বান্দার ফরিয়াদ শুনেন? এতোটা কাছে তিনি? এতোটা?
.
মানিব্যাগে যা টাকা ছিল সবটাই লোকটির হাতে দিয়ে বলল, ‘আশা করি আপনার ধার-দেনার কিছুটা হলেও এতে শোধ হবে।’
লোকটা কৃতজ্ঞ নয়নে তার দিকে তাকিয়ে থাকল।।
.
যখন সে বিদায় নিচ্ছিল, তখন তার মানিব্যাগ খালি।
কিন্তু বুক ভরে সে নিয়ে যাচ্ছে আল্লাহর প্রতি অগাধ বিশ্বাস আর সাক্ষী হয়ে যাচ্ছে রহমানুর রাহিমের ভালোবাসার অনুপম দৃষ্টান্তের।
.
প্রিয় রাজিব হাসান ভাইয়ের লেখা প্রথম বই '‘দু'আ কবুলের গল্পগুলো’’
-বইটি থেকে নেওয়া একটি গল্প...
-----------------------

 

১৩। দোয়া কবুলের গল্প♥

আসসালামু আলাইকুম। 
আমি আবদুল্লাহ লুকমান। আমি ২০১৪ সালে মালেশিয়া তে আসি। উদ্দেশ্য ছিলো ভালো একটা চাকরি করার,হালাল রুজির ব্যবস্থা গড়ার।যখন দেশে ছিলাম তখন লোক মুখে শুনতাম মালেশিয়া তে নাকি অনেক কাজ এর সুযোগ! কিন্তু বাস্তবতা একদম ভিন্ন,একদম উল্টো। যখন মালেশিয়া তে আসলাম তখন বুঝলাম কঠোর এক সংগ্রাম এর মধ্যে দিতে যেতে হবে আমাকে। একটা না একটা কাজের ব্যবস্থা করতেই হবে। বাড়ি থেকে শুধু আমি নিজেই মালেশিয়াতে আসিনি,সাথে নিয়ে এসেছি আব্বা-আম্মার একগাদা স্বপ্ন, ছোট ভাই-বোনদের আশা। টানা একমাস এদিক সেদিক পাগলের মতো ঘোরাঘুরি করলাম। প্রতি ওয়াক্তের সালাতের শেষ দু'চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে লাগলাম। আল্লাহ তা'আলা আমার আকুতি শুনলেন। একটা কাজের ব্যবস্থা ও করে দিলেন। ফালিল্লাহিল হামদ।
 
ঝামেলা হলো অন্য জায়গায়। আমার বস যদিও মুসলিম ছিলেন কিন্তু সালাতের জন্য সেভাবে আলাদা সময় দিতে চাইলেন না। বহু কষ্টে লুকিয়ে আড়ালে-আবডালে সালাত আদায় করতাম। সালাত আদায় করতে গেলে সে মাঝে মাঝে খুব রাগারাগি করতো। শুরু হলো আরেক সংগ্রামী জীবন।
 
আল্লাহর কাছে আবারও দু'আ করতে থাকলাম, মিন উজার করে চাইতে থাকলাম। মালেশিয়ায় আল্লাহ ছাড়া আমার আপন বলতে আর কেউ ছিলো না। 
আমি দু'আ করলাম "ইয়া আল্লাহ"! আপনি আমাকে এমন একটা কাজের ব্যবস্থা করে দিন যেখানে আমি সঠিক সময়ে সালাত আদায় করতে পারব। কেউ কোনো বাধা দিবে না"। দু'আ করতে করতে চোখ দিয়ে অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ত। সে বাধ আটকিয়ে রাখতে পারতাম না। বহু কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে আবার কাজে লেগে পড়তাম।
 
এভাবেই চলছিলো আমার দিনকাল। অকারণে আমার উপর রেগে যেতো বস। লোকাল ভাষায় উঁচু গলায় কী কী যেন বলতো। আমি সব বুঝতে ও পারতাম না। ইংরেজি আর বাংলা ছাড়া আমার ঝুলিতে আর তেমন কোনো ভাষাও ছিলো না। ধীরে ধীরে আমাদের মাঝে গ্যাপ তৈরি হলো সব মিলিয়ে কমিউনিকেশন গ্যাপ। একদিন আমাকে তার রুমে ডেকে সোজাসাপ্টা জানিয়ে দিলেন অন্য জায়গায় চাকরি খুঁজতে। এখানে আর হবে না। 
আকস্মিক আকাশ ভেঙে পড়লো আমার মাথায়চ।চোখে সরষের ফুল দেখছিলাম। হঠাৎ আল্লাহর তরফ থেকে এরকম একটা ফয়সালা এসে গেল যে,কী করতে হবে বুঝে উঠতে পারছিলাম না। যা একটা সম্বল ছিলো সেটাও গেল, আমি হার মানলাম না। রবের কাছে আমার যাবতীয় অভাব অভিযোগ পেশ করলাম। আর নতুন একটা চাকরি তালাশ করতে লাগলাম। যেখানে আমার দ্বীন পালনে কোন বাধা থাকবে না। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি একমাত্র আল্লাহই আমার রিজিকদাতা।
 
এই ফাঁকে আরেকটা জিনিস বলে রাখি। আমি যখন প্রথম মালেশিয়াতে আসি,তখন এখানকার এ্যারাবিয়ান একটা শপিং মলেও চাকরির চেষ্টা করেছিলাম। বুকভরা আশা নিয়ে তার কাছে ফোন করেছিলাম একটা চাকরির জন্য।কিন্তু সেই মুহুর্তে তিনি কোন কিছু বলতে পারছিলেন না। ব্যাপারটা ঝুলে ছিলো। এতদিন হয়ে গেল,কিছুই জানালো না তারা।
 
দিনের পর দিন, রাতের পর রাত, দু'আ আর জিকির জারি রাখলাম। প্রায় ২০ থেকে ২২ দিন অতিবাহিত হলো। হঠাৎ একদিন এক ভাই জিজ্ঞেস করলেন,আমি রেস্টুরেন্ট এ জব করবো কি না? আমি শর্ত জুড়ে দিয়ে বললাম, "করব!কিন্তু আমাকে সালাত আদায়ের সুযোগ দিতে হবে "। সে বলল," ঠিক আছে সমস্যা নেই সুযোগ দেয়া হবে"। তিনি আমাকে ইন্টারভিউ এর জন্য প্রস্তুত হতে বললেন।
 
দিনক্ষণ অঅনুযায়ী আমার ইন্টারভিউ হলো। ম্যানেজার বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেন। আর শেষে জিজ্ঞেস করল আমার কিছু জানার আছে কিনা? 
আমি সুযোগ পেয়ে বললাম,"আমাকে নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করার সুযোগ দিতে হবে"।
ম্যানেজার বলল,"ঠিক আছে,সে সময় তুমি পাবে। তুমি কাজে লেগে যাও"।
আলহামদুলিল্লাহ! ৮ ঘন্টা ডিউটি। ১৩০০ রিংগিত মাসিক বেতন। সপ্তাহে ৪ দিন কাজ আর খাবার একদম ফ্রি। মনে মনে শুকরিয়া করতে লাগলাম।
 
পরের দিন থেকেই কাজে লেগে পড়লাম। নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা আর রবের প্রতি অগাধ ভালোবাসা কাজ করছিলো। কাজ শরু করার এক পর্যায়ে দেখলাম রেস্টুরেন্ট এর ফ্রিজের মধ্যে মদ আর বিয়ারের বোতল সাজিয়ে রাখা। আমি রাগে আর ক্ষোভে আমার সহকর্মী দের কে জিজ্ঞেস করলাম "এখানে কি মদ বিক্রি করা হয়"? তারা " হ্যাঁ " সূচক জবাব দিয়ে মাথা নাড়ালো। আমার আরো রাগ হলো,বললাম, "আমাকে আগে বলা জানানো হয় নি কেন"? আমি ভিতরে ভিতরে জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছিলাম। আমি সালাতের সময় বের করে নিলাম যাদের কাছ থেকে, তারাই আবার আমাকে দিয়ে মদ পরিবেশন করাবে? মহান আল্লাহ আমাকে আবারও পরীক্ষায় ফেললেন।
 
রাজ্যের হতাশা নিয়ে সারাদিন কাজ করলাম। সময়মত সালাত আদায় করলাম আর রবের কাছে সাহায্য চাইলাম। ডিউটি শেষে দেখলাম আমার সহকর্মীরা সবাই বিয়ার খাচ্ছে, একজন বাদে সবাই মুসলিম।নাউযুবিল্লাহ! আমি কাছে গেলাম আর বললাম, ভাই আপনারা না মুসলিম, তাহলে বিয়ার খাচ্ছেন কেনো? তারা বলল," আমাদের বসের তরফ থেকে সান্ধ্যকালীন গিফট, তাই একটু আধটু খাই"। আমি বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেললাম, কথা বাড়াতেও ইচ্ছা করলো না।
 
ইশার সালায় আদায় করার আগ মুহুর্তে এক শায়েখ কে ফোন দিলাম। ব্যাপার‍টা খুলে বললাম৷ সব শুনে উনি চাকরি ছেড়ে দিতে বললেন। পবিত্র কুর'আন এর এই আয়াতটি শুনিয়ে দিলেন আমাকে,
#মন্দকর্মে_ও_সীমালঙ্ঘন_পরস্পরের_সহযোগিতা_করো_না_আর_আল্লাহ_কে_ভয়_করো_নিশ্চয়ই_আল্লাহ_আযাব_প্রদানে_কঠোর 
আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আলহামদুলিল্লাহ চাকরি ছেড়ে দিবো। এখানে আর এক মুহুর্ত তো না! আগামীকাল থেকে আর আসবো না। মনকে প্রবোধ দিলাম এই চাকরি আমার জন্য না। মনে মনে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে আসলাম। বাসার কাছাকাছি চলে এসেছি এমন সময় অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এলো। রিসিভ করলাম, সেই এ্যারাবিয়ান শপিং মল থেকে কল করেছে, যার কথা একটু আগে বলছিলাম। সেখানকার মালিক ফোন করেছেন। এখনি তার সাথে দেখা করতে বললেন, জানালেন জরুরি ভিত্তিতে তাদের একজন কর্মী প্রয়োজন। 
আমি আর বাসায় ঢুকলাম না। সরাসরি তাদের শপিং মলে চলে গেলাম। মোটামুটি ছোটখাটো ইইন্টারভিউ হলো। আলহামদুলিল্লাহ! তখনই আমাকে নিয়োগ দিয়ে দিলো ডিউটি ১২ ঘন্টা,১ ঘন্টা লাঞ্চ ব্রেক৷ সপ্তাহে ২ দিন বন্ধ, ১৩০০ রিংগিত বেতন।
 
আমি বললাম, আমাকে সালাতের সময় দেয়া হবে কী না? সে বলল,হ্যাঁ কোন সমস্যা নেই"। আমি আবারও জিজ্ঞেস করলাম, "এ্যালকোহল জাতীয় কোন কিছু আমাকে বিক্রি করতে হবে কী না? তারা রেগে গিয়ে আমাকে বলল," তুমি বোধ হয় ভুলে গেছো যে আমি একজন মুসলিম"।আমি আলহামদুলিল্লাহ! বলে উঠলাম আর মনে মনে চিন্তা করলাম, এ-ও মুসলিম আর ওরা -ও মুসলিম।
 
পরের দিন কাজ শুরু করলাম। আজ অবধি বহাল তবীয়ত তেই কাজ করে যাচ্ছি মালেশিয়ার এই শপিং মল টা তে।
 
আলহামদুলিল্লাহ! আমার ত্যাগের প্রতিদান মহান আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ সাধ্যের বাইরে অতিরিক্ত বোঝা কাউকেই চাপিয়ে দেন না। তিনি আমাদের কে ভালো বাসেন আর মাঝেমধ্যে আমরা তাকে ভালোবাসি কিনা তার সাময়িক পরীক্ষা নেন। পরীক্ষায় উর্ত্তীণ হতে পারলে প্রতিদান দিতে দেরি করেন না। আজ আমার মাসিক বেতন ১৩০০ রিংগিত থেকে ১৯০০ রিংগিত। ডিউটি ১২ ঘন্টা থেকে কমিয়ে ৯ ঘন্টা। আগে প্রো-ডাক্ট ডিসপ্লে করতাম এখন ক্যাশিয়ার। তাছাড়া আমার কর্মদক্ষতা, একনিষ্টতা আর আচার-আচরণ এ সন্তুষ্ট হয়ে বকশিসও পেয়ে থাকি। সেখানে আল্লাহ আমার সম্মান এতটাই বৃদ্ধি করেছেন যে,আমার অন্যান্য সহকর্মী যারা আছেন,তারা কোন কারণে অগ্রীম বেতন চাইলে মালিকপক্ষ বলেন,"আগে ক্যাশিয়ার সাহেবের সাথে কথা বলো,সে যদি দেয় তাহলে পাবে, নাহলে পাবে না"! এমনকি আমার ব্যাক্তিগত প্রয়োজন এ একবার ১ লক্ষ বাংলাদেশি টাকা আমাকে অগ্রীম বেতন হিসেবে।
দিয়েছিলো।
 
আমার দু'আ কবুল এর জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জানাই। আমার সালাত,আমার সম্মান, আমার সম্পদ সবকিছু তারই জন্য।
 
-আবু আবদুল্লাহ লোকমান, কুয়ালালামপুর, মালেশিয়া।

---------------------------

 

 

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের (৪০০+) pdf লিংক
https://justpaste.it/4ne9o

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.
https://justpaste.it/islamicappvideo

>> রবের_কাছে_ফেরার_গল্পগুলো
https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo

>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"
https://justpaste.it/5gol5

>> র‍্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট
https://justpaste.it/76iwz

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.
https://justpaste.it/islamicappvideo

>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক
https://justpaste.it/facebook_page_grp_link

>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?
https://justpaste.it/6q4c3

>> কুরআন এবং আপনি
https://justpaste.it/5dds8

>> কখনও ঝরে যেও না …
https://justpaste.it/3bt22

>> ফজরে আমি উঠতে পারি না
https://justpaste.it/6kjl6

>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1

>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr

>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম
https://justpaste.it/7u5es

>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়
https://justpaste.it/8dccj

>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব
https://justpaste.it/6ttuf

>> স্বার্থক মুনাজাত
https://justpaste.it/1xf0t

>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ
https://justpaste.it/4hhtd

>> তাহাজ্জুদ সিরিজ
https://justpaste.it/4ja0n

>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব
https://justpaste.it/3dxi7

>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)
https://justpaste.it/7056k

>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ
https://justpaste.it/7fh32

>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ
https://justpaste.it/9icuq

>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল
https://justpaste.it/8gmtk

>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf

>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)
https://justpaste.it/8vnly

>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir

>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh

>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5

>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর (তাওহীদ সিরিজ, আকিদা সিরিজ, তাহাজ্জুদ, সালাত, আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ নিয়ে আলোচনা, ধূলিমলিন উপহার রামাদান, আলোর পথে যাত্রা, পরকালের পথে যাত্রা, শ্রেষ্ঠ মানুষেরা(নবীদের জীবনী), জীবন-মৃত্যু-জীবন, সীরাহ(রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনী), কুরআনের কথা, কোরআনের বিভিন্ন সূরার তাফসীর, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু, সাহাবীদের ঈমানদীপ্ত জীবনী, বোনদের প্রতি উপদেশ) অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1

>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j

>> রমজানের প্রস্তুতি : মুমিনের পথ ও পাথেয়
https://justpaste.it/5tziy

>> কাফির ও ইসলামের শত্রুদের মৃত্যু বা বিপদে আনন্দ প্রকাশ
https://justpaste.it/6ksvm

>> মহিমান্বিত রজনী (লাইলাতুল কদর) সিরিজ, লাইলাতুল কদরের জন্য ১২ টি সহজ আমল এবং ইতিকাফের গুরুত্ব, ফজিলত, উদ্দেশ্য, আমল।
https://justpaste.it/1q3bs

>> বিশেষ নফল নামাজ সিরিজ (ইশরাক, দোহা, চাশত, আওয়াবিন, যাওয়াল, সালাতুল হাজত, সালাতুত তাসবিহ)
https://justpaste.it/9n0kf

>> হাদিসের শিক্ষা সিরিজ
https://justpaste.it/4fywd

>> ইস্তিখারা সিরিজ
https://justpaste.it/2i736

>> আমাদের নবীজি (সাঃ) সিরিজ
https://justpaste.it/4c1tt

>> Words With Nusus সিরিজ
https://justpaste.it/6h968

>> বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিন (জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন)
https://justpaste.it/1s2vv

>> আশুরা দিবস : বাস্তবতা, পালনীয় ও বর্জনীয়
https://justpaste.it/3kn8w

>> বিবাহের কিছু আমল ও দু‘আ এবং সুখী দাম্পত্যজীবনের জন্য ১০টি করণীয়, স্ত্রীকে বশ করে রাখার টোটকা
https://justpaste.it/58k7y

>> দুআ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লেখাসমূহ, দুআ কবুলের সময় শর্তাবলী ও আদবসমূহ, দুআ কবুলের গল্পগুলো
https://justpaste.it/7ttq6

>> কুরআন কারীম নিয়ে আতিক উল্লাহ হুজুরের অসাধারন কিছু কথা ও উপদেশ
https://justpaste.it/8abde

.

>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে। সবগুলো বিষয়ের লিংক এক জায়গায় রাখা হয়েছে। এই লিংকটা শেয়ার করতে পারেন। 
https://justpaste.it/48f6m