মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব
.
(১) সূরা ফাতিহা
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2721822224584742&id=1698393090260999
.
(২) সূরা বাকারাহ্
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2742395739194057&id=1698393090260999
.
(৩) আয়াতুল কুরসি
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2745921882174776&id=1698393090260999
.
(৪) সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2749120395188258&id=1698393090260999
.
(৫) সূরা বাকারার বিশেষ দশ আয়াত
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2775421225891508&id=1698393090260999
.
(৬) সূরা আলে ইমরান
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2784581674975463&id=1698393090260999
.
(৭) সুরা হুদ, যুমার ও বনি ইসরাইল
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2990202247746737&id=1698393090260999
.
(৮) সুরা কাহাফ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3016531858447109&id=1698393090260999
.
(৯) সুরা ইয়াসিন
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3047620258671602&id=1698393090260999
.
(১০) সুরা ওয়াক্বি‘আহ্
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3098551780245116&id=1698393090260999
.
(১১) সুরা হাদিদ
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3103072813126346&id=1698393090260999
.
(১২) সুরা হাশর ও শেষ তিন আয়াত
.
.
.
(১৭) সুরা ইখলাস
.
(১৮) সুরা ফালাক ও সুরা নাস
.
সূরা ফাতিহা কোনো সাধারণ সূরা নয়; এর গুরুত্ব, মর্যাদা ও উপকারিতা অপরিসীম। আজ নতুনভাবে সূরা ফাতিহাকে জানুন।
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
(১) ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিবরিল (আ.) উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ জিবরিল (আ.) উপর দিকে একটি শব্দ শুনতে পেলেন এবং আকাশের দিকে মাথা তুলে বললেন, ‘এটি আসমানের একটি দরজা, যা পূর্বে কোনোদিন খোলা হয়নি; আজই খোলা হয়েছে। এই দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হলেন এবং রাসূলুল্লাহর কাছে এসে বললেন, এই হলেন একজন ফেরেশতা, যিনি আজ অবতরণ করেছেন। পূর্বে কখনো অবতরণ করেননি। অতঃপর তিনি সালাম দিলেন এবং বললেন, ‘আপনি দুটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে এবং তা আপনার পূর্বে কোন নবিকে প্রদান করা হয়নি। তা হলো, সূরা ফাতিহা এবং সূরা বাকারার শেষাংশ। এগুলোর মধ্যে হতে যে হরফটিই পাঠ করবেন, তাই আপনাকে দেওয়া হবে (শেষ কথাটির ব্যাখ্যা জেনে অন্য কোনো পোস্ট দেব ইনশাআল্লাহ)।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ৮০৬]
.
(২) বিভিন্ন সহিহ হাদিসে সূরা ফাতিহার অনেকগুলো তাৎপর্যপূর্ণ নাম এসেছে। তার কয়েকটি হলো:
• উম্মুল কুরআন (কুরআনের মূল);
• উম্মুল কিতাব (কিতাবের মূল);
• আস-সাব‘উল মাসানি (বারবার পঠিতব্য সাতটি আয়াত)
• আল-হামদু (যাবতীয় প্রশংসা)
• সূরাতুর রুকইয়াহ (ঝাড়-ফুঁকের সূরা)
• ফাতিহাতুল কিতাব (কিতাবের মুখবন্ধ)
.
(৩) হাদিসে এসেছে, বান্দা যখন নামাজে সূরা ফাতিহা পাঠ করে, তখন আল্লাহ্ তার প্রতিটি আয়াতের জবাব দেন। [মুসলিম, আস-সহিহ: ৯০৪] (এটি নামাজের খুশু-খুযু সিরিজের কোনো পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ্)
.
(৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যার হাতে আমার প্রাণ তার কসম করে বলছি! তাওরাত, যাবুর, ইনজিল এবং কুরআনে এই সূরার ন্যায় অন্য কোনো সূরা অবতীর্ণ হয়নি।’’ [আলবানি, সহিহু সুনানিত তিরমিযি: ২৮৭৫; হাদিসটি সহিহ]
.
(৫) সহিহ বুখারিতে এসেছে, এই সূরাটিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘সর্বশ্রেষ্ঠ সূরা’ আখ্যায়িত করেছেন। [বুখারি, আস-সহিহ: ৪৪৭৪]
.
(৬) হাদিসে এসেছে, ‘সূরা ফাতিহা আল-কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।’ [আলবানি, দ্ব‘ইফুল জামি‘ইস সগির: ৩৯৪৯; হাদিসটি দুর্বল]
.
(৭) আবু সা‘ঈদ খুদরি (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবিগণ একবার এক সফরে ছিলেন। তখন একটি গোত্রের প্রধানকে সাপে কামড় দেয়। তারা সাহাবিগণের কাছে ঝাড়-ফুঁকের সাহায্য কামনা করে। তখন একজন সাহাবি সূরা ফাতিহা পড়ে ফুঁ দিয়ে সাপের বিষ ঝাড়েন। এতে সেই গোত্রপতি সুস্থ হয়ে যান। [বুখারি, আস-সহিহ: ৫৪০৫]
.
এজন্য নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সূরাকে ‘সূরাতুর রুকইয়াহ্’ (ঝাড়-ফুঁকের সূরা) বলেছেন। এই সূরা পড়ে ঝাড়-ফুঁক করলে আল্লাহ্ চাহেতো অনেক রোগ ভালো হয়ে যায়।
.
(৮) একটি হাদিসে এসেছে, ‘সূরা ফাতিহা বিষের জন্য শেফা বা ঔষধ।’ [আলবানি, সিলসিলা দ্ব‘ইফাহ: ৩৯৯৭; হাদিসটি দুর্বল]
.
(৯) অন্য একটি হাদিসে এসেছে, ‘সূরা ফাতিহা সকল রোগের ঔষধ।’ [আলবানি, দ্ব‘ইফুল জামি‘ইস সগির: ৩৯৫১; হাদিসটি দুর্বল]
-----------------------------------
সূরা বাকারাহ : একের ভেতর অনেক! এই সূরার গুরুত্ব, মর্যাদা ও ফজিলত অনেক বেশি
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
◾সূরা বাকারাহ তিলাওয়াতে আসে বরকত; পরিত্যাগে অনুতাপ ও আফসোস:
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা সূরা বাকারাহ তিলাওয়াত কোরো। কারণ এটি আঁকড়ে থাকা বরকত লাভের উপায় এবং একে ছেড়ে দেওয়া আফসোস ও অনুতাপের কারণ।” [মুসলিম, আস-সহিহ: ৮০৪]
.
◾সূরা বাকারার মাধ্যমে শয়তান পালায়:
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিও না। যে ঘরে সূরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা হয়, সে ঘরে শয়তান প্রবেশ করে না।” [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৮০; তিরমিযি, আস-সুনান: ২৮৭৭]
.
ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) বলেন, ‘শয়তান যে ঘরে সূরা বাকারার তিলাওয়াত শুনতে পায়, সেই ঘর থেকে থেকে পালিয়ে যায়।’ [নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ: ১০৮০০; হাকিম, আল-মুসতাদরাক; আলবানি, সহিহুত তারগিব: ২/৮৬; বর্ণনাটির সনদ সহিহ]
.
◾কুরআনের শীর্ষচূড়া সূরা বাকারাহ:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘প্রতিটি জিনিসের একটি শীর্ষচূড়া থাকে। আর কুরআনের শীর্ষচূড়া হলো সূরা বাকারাহ।’’ [হাকিম, আল-মুসতাদরাক; আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ৫৮৮; হাদিসটি হাসান]
.
◾কুরআনের শ্রেষ্ঠ আয়াত (আয়াতুল কুরসি) সূরা বাকারায় রয়েছে (আয়াত নং ২৫৫)
.
উবাই ইবনু কা’ব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘তুমি কি জানো, আল্লাহর কিতাবের কোন আয়াতটি সর্বশ্রেষ্ঠ?’’ আমি বললাম, আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়া... (আয়াতুল কুরসি) তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাত দ্বারা আমার বুকে (মৃদু) আঘাত করে বলেন, আবুল মুনযির (উবাইয়ের ডাক নাম)! এই জ্ঞানের কারণে তোমাকে মোবারকবাদ!’’ [সহিহ মুসলিম: ১৩৯৬]
.
(শুধু আয়াতুল কুরসি নিয়ে আলাদা একটি পোস্ট দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ্)
.
◾রাতে সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ:
.
রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি রাতের বেলা সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করবে, সেটি তার জন্য যথেষ্ঠ হবে।” [বুখারি, আস-সহিহ: ৫০১০, মুসলিম, আস-সহিহ: ৮০৭]
.
ইমাম নববি (রাহ.) বলেন, এর বিভিন্ন অর্থ বলা হয়েছে। কেউ বলেছেন, কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য যথেষ্ঠ হবে। কেউ বলেছেন, শয়তানের ক্ষতি অথবা বিপদ-মুসিবত থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। [নববি, শারহু মুসলিম ৬/৩৪০]
.
(সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ব্যাপারে অন্য পোস্টে আরও ডিটেইলস আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ্)
-----------------------------------
আয়াতুল কুরসির মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব এবং আয়াতুল কুরসি পাঠের বিশেষ সময়গুলো
▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
✿ আয়াতুল কুরসির সুমহান মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব:
.
উবাই ইবনু কা‘ব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘হে আবুল মুনযির (উবাইয়ের ডাকনাম)! তুমি কি বলতে পারো, তোমার জানামতে আল্লাহর কিতাবের কোন্ আয়াতটি সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ?’’ আমি বললাম, ‘আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলই ভাল জানেন।’ (এরপর) তিনি (আবারও) বললেন, ‘‘হে আবুল মুনযির! তুমি বলতে পারো কি, তোমার জানামতে আল্লাহর কিতাবের কোন্ আয়াতটি সর্বশ্রষ্ঠ?’’ এবার আমি বললাম, ‘আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ূম (আয়াতুল কুরসি—২৫৫ নং আয়াত)।’ উবাই বলেন, এরপর তিনি আমার বুকে (মৃদু) আঘাত করে বললেন, ‘‘হে আবুল মুনযির! ইলম তোমাকে উপকৃত করুক।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ৮১০]
.
অন্য বর্ণনায় হাদিসটির বাকি অংশে আরও বলা হয়েছে, ‘‘সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! এর (আয়াতুল কুরসির) জিহ্বা হবে, ঠোঁট হবে এবং এটি আরশের পাদদেশে মালিকের পবিত্রতা বর্ণনা করবে।’’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৫/১৪; আবু দাউদ ত্বয়ালিসি, আল-মুসনাদ: ১/২৪; আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ৩৪১০; হাদিসটি সহিহ]
.
✿ কেন আয়াতুল কুরসির এই শ্রেষ্ঠত্ব?
.
ইমাম নববি (রাহ.) বলেন, আলিমগণ বলেন, ‘আয়াতুল কুরসি শ্রেষ্ঠত্বের বৈশিষ্টে বৈশিষ্টমণ্ডিত হওয়ার কারণ হলো, এর মাঝে ইলাহিয়্যাত, একত্ববাদ, জীবন, জ্ঞান, রাজত্ব, কুদরত ও ইচ্ছা—আল্লাহর এই সাতটি গুণবাচক নাম ও গুণাগুণের নীতিমালার সমাবেশ ঘটেছে।’ [নববি, শারহু মুসলিম]
.
তাছাড়া আয়াতুল কুরসির প্রথম বাক্যটিতে আছে আল্লাহর ইসমে আযম।
.
✿ আয়াতুল কুরসি পাঠের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি সময়:
.
❑ প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর:
.
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক (ফরজ) নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, মৃত্যু ব্যতীত কোনো কিছু তার জান্নাতে প্রবেশে বাধা দিতে পারবে না।’’ [নাসাঈ, সুনানুল কুবরা: ৬/৩০; আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১৫৯৫; হাদিসটি সহিহ]
.
❑ প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায়:
.
উবাই ইবনু কা’ব (রা.)-এর সাদাকার মাল চুরি করতে এসে এক জিন ধরা পড়ে যায়। তখন উবাই (রা.) তাকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমাদের থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?’ সে বলে, ‘এই আয়াতটি—আয়াতুল কুরসি। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এটি পড়বে, সে সকাল পর্যন্ত আমাদের থেকে পরিত্রাণ পাবে। আর যে ব্যক্তি সকালে এটি পড়বে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের থেকে নিরাপদে থাকবে।’ সকাল হলে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসেন এবং ঘটনা বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ঘটনা শুনে) বলেন, ‘‘খবিসটি সত্য বলেছে।’’ [ইবনু হিব্বান, আস-সহিহ: ৭৯১; আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১৪৭০; হাদিসটি সহিহ]
.
❑ ঘুমানোর পূর্বে:
.
একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলমানদের যাকাতের মাল-সম্পদ দেখাশুনার দায়িত্ব দেন আবু হুরায়রা (রা.)-কে। কিন্তু রাতের বেলা যাকাতের মাল থেকে এক ব্যক্তি চুরি করতে এসে পরপর তিনদিন ধরা খেয়ে যায়। তবে, বিভিন্ন কৌশলে ও মিথ্যা বলে সে বেঁচে যায়। সর্বশেষ দিন আবু হুরায়রা (রা.) তাকে রাসূলের কাছে নেওয়ার কথা বললে সে বলে, ‘তুমি আমাকে ছেড়ে দাও। আমি তোমাকে এমন কতগুলো শব্দ শিখিয়ে দেবো, যার দ্বারা আল্লাহ তোমার উপকার করবেন।’ আমি বললাম, ‘সেগুলো কী?’ সে বললো, ‘যখন তুমি (ঘুমানোর জন্য) বিছানায় যাবে, তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ঘুমাবে। তাহলে তোমার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত হবেন। সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে শয়তান আসতে পারবে না।’ তখন আবু হুরায়রা (রা.) তাকে ছেড়ে দেন এবং এই ঘটনা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে জানান। তিনি এটি শুনে বললেন, ‘‘শোনো! সে নিজে ভীষণ মিথ্যাবাদী; কিন্তু তোমাকে সত্য কথা বলেছে। হে আবু হুরাইরা! তুমি কি জানো, তিন রাত ধরে তুমি কার সাথে কথা বলেছিলে?’’ আবু হুরায়রা (রা.) বললেন, ‘জি না।’ তিনি বললেন, ‘‘সে ছিলো শয়তান!’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ২৩১১]
-----------------------------------
সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের মর্যাদা ও গুরুত্বের ব্যাপারে অনেক হাদিস এসেছে। এখানে কয়েকটি আলোচনা করা হলো। সর্বশেষ দু‘আগুলোর ফজিলতও তুলে ধরা হলো
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা আসমান ও যমিন সৃষ্টির দুই হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখেছেন। সেই কিতাব হতে তিনি দু‘টি আয়াত নাযিল করছেন, যার মাধ্যমে সূরা বাকারা সমাপ্ত করেছেন। যে ঘরে তিন রাত এ দুটি আয়াত তিলাওয়াত করা হবে শয়তান সেই ঘরের নিকট আসতে পারে না।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৮৮২; আলবানি, সহিহুল জামে’: ১৭৯৯; হাদিসটি সহিহ]
.
অন্য একটি হাদিসে বলা হয়েছে, সূরা বাকারার শেষ দুটো আয়াতকে আল্লাহ ভালোবাসেন এবং এগুলো সুপারিশ করবে। [আলবানি, সিলসিলা দ্বঈফাহ: ১৫৬; হাদিসটি দুর্বল]
.
রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি রাতের বেলা সূরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত পাঠ করবে, সেটি তার জন্য যথেষ্ঠ হবে।” [বুখারি, আস-সহিহ: ৫০১০, মুসলিম, আস-সহিহ: ৮০৭]
.
ইমাম নববি (রাহ.) বলেন, এর বিভিন্ন অর্থ বলা হয়েছে। কেউ বলেছেন, কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য যথেষ্ঠ হবে। কেউ বলেছেন, শয়তানের ক্ষতি অথবা বিপদ-মুসিবত থেকে নিরাপত্তা পাওয়া যাবে। [নববি, শারহু মুসলিম: ৬/৩৪০]
.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত আমাকে আরশের নিচের ভাণ্ডার থেকে দেওয়া হয়েছে। আমার পূর্বে কোনো নবিকে তা দেওয়া হয়নি।’’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২১৩৪৪; আলবানি, সহিহুল জামি’: ১০৬০; হাদিসটি সহিহ]
.
অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘‘অতএব, নিজেরা তা শিখো এবং তোমাদের স্ত্রী-সন্তানদের শেখাও; কেননা এই আয়াতগুলো হলো সালাত, কুরআন ও দু‘আ।’’ [আলবানি, দ্বঈফুল জামি’: ১৬০১; হাদিসটি দুর্বল]
.
ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিবরিল (আ.) উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ জিবরিল (আ.) উপর দিকে একটি শব্দ শুনতে পেলেন এবং আকাশের দিকে মাথা তুললেন। তিনি বললেন, ‘এটি আসমানের একটি দরজা, যা পূর্বে কোনোদিন খোলা হয়নি; আজই খোলা হয়েছে।’ (রাসূল) বললেন, ‘এই দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হলেন।’ (জিবরিল) বললেন, ‘এই হলেন একজন ফেরেশতা, যিনি আজ অবতরণ করেছেন। পূর্বে কখনো অবতরণ করেননি।’ (রাসূল) বললেন, অতঃপর তিনি সালাম দিলেন এবং বললেন, ‘আপনি দুটি নূরের সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনাকে প্রদান করা হয়েছে এবং তা আপনার পূর্বে কোন নবিকে প্রদান করা হয়নি। তা হলো, সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষাংশ। এগুলোর মধ্যে হতে যে হরফটিই পাঠ করবেন, আপনাকে তাই দেওয়া হবে।’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ৮০৬, নাসাঈ, আস-সহিহ: ৯১২]
.
সর্বশেষ বাক্য ‘যে হরফটিই পাঠ করবেন, আপনাকে তাই দেওয়া হবে’ এর ব্যাখ্যায় আলিমগণ দুটো মত দিয়েছেন।
.
প্রথম অভিমত: সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষাংশের প্রতিটি বর্ণ পড়ার দ্বারাই নেকি দেওয়া হবে।
.
দ্বিতীয় অভিমত: সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষাংশের মধ্যে থাকা দু‘আগুলো দিয়ে দু‘আ করলে তা দেওয়া হবে বা কবুল করা হবে। এই মত দিয়েছেন প্রসিদ্ধ দুজন হাদিস ব্যাখ্যাকারী। তাঁরা হলেন, মিশকাতের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাত রচয়িতা আল্লামা মোল্লা আলি কারি (রাহিমাহুল্লাহ) ও সুনানুন নাসাঈর ব্যাখ্যাগ্রন্থ হাশিয়াতুস সিন্দির রচয়িতা আল্লামা সিন্দি (রাহিমাহুল্লাহ)। এই মতটিই অগ্রগণ্য।
-----------------------------------
রাতের বেলা সূরা বাকারার নির্বাচিত দশটি আয়াত পাঠ করা উত্তম। যদিও পূর্ণ সূরা পাঠ করা অধিক উত্তম, তবে সেটি কঠিন।
.
সাহাবিগণের মাঝে সবচেয়ে বড় ফকিহ (ইসলামি আইনশাস্ত্রবিদ) আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে সূরা বাকারার দশটি আয়াত পড়বে, সেই ঘরে শয়তান সেই রাতে প্রবেশ করবে না। (আয়াতগুলো হলো:) সূরা বাকারার প্রথম চার আয়াত, এরপর আয়াতুল কুরসি (২৫৫ নং আয়াত) ও পরের দুই আয়াত (২৫৬ ও ২৫৭ নং) এবং সূরা বাকারার সর্বশেষ তিন আয়াত।’ [দারিমি, আস-সুনান: ৩৩৮২; তাবারানি, মু‘জামুল কাবির: ৮৬৭৩; মুহাক্কিক হুসাইন সালিম বলেন, বর্ণনাকারী সকলেই নির্ভরযোগ্য, তবে, সনদে বিচ্ছিন্নতা আছে]
.
অন্য বর্ণনায় এসেছে, সেই রাতে শয়তান তার এবং তার পরিবারের নিকটবর্তী হতে পারবে না এবং কোনো অপছন্দনীয় বিষয়েরও মুখোমুখি হতে হবে না। [দারিমি, আস-সুনান: ৩৩৮৩; সনদের মান প্রাগুক্ত]
.
তবে, সম্ভব হলে পূর্ণ সূরা পাঠ করাই উত্তম—হোক সেটি দিনে বা রাতে।
.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানিও না। যে ঘরে সূরা বাকারাহ তিলাওয়াত করা হয়, সে ঘরে শয়তান প্রবেশ করে না।” [মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৮০; তিরমিযি, আস-সুনান: ২৮৭৭]
.
সূরা বাকারার প্রথম পর্বটিতে আমরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস উল্লেখ করিনি। সেটি এখানে উল্লেখ করছি।
.
উসাইদ ইবনু হুদাইর (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি একদিন রাতে সূরা বাকারাহ তিলাওয়াত করছিলেন। তখন তার বেঁধে রাখা ঘোড়াটি লাফাতে শুরু করে। এটা দেখে তিনি চুপ হয়ে যান। তখন ঘোড়াটিও চুপ হয়ে যায়। আবার তিনি পড়া শুরু করলে ঘোড়াটি আবার লাফাতে শুরু করে। এভাবে বেশ কয়েকবার চললো। এমনকি পাশেই ছিলো তাঁর ছেলে। তিনি ঘোড়ার লাফানো দেখে ছেলেটির ব্যাপারে ভীত হয়ে গেলেন; হয়ত ছেলেটিকে আঘাত করতে পারে। এমতাবস্থায় আকাশের দিকে তাকিয়ে ছায়ার মত কিছু একটা তিনি দেখতে পান; যেটিতে আলো জ্বলছিলো বলে মনে হলো। এরপর আস্তে আস্তে সেটি চলে যায়। অতঃপর তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যান এবং পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘তুমি কি জানো সেটা কী ছিল? মূলত তারা ছিলো ফেরেশতা; তোমার আওয়াজ শুনে নিকটবর্তী হয়ে গিয়েছিলো। যদি তুমি সকাল পর্যন্ত পড়তে থাকতে, তবে মানুষও তাদেরকে দেখতে পেতো।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৪৭৩০; তাবারানি, মু‘জামুল আওসাত্ব: ১৮০]
-----------------------------------
সূরা আলে ইমরানের বিশেষ গুরুত্ব ও মর্যাদা
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা কুরআন পাঠ কোরো; কেননা এটি কিয়ামতের দিন তার পাঠকারীর জন্য সুপারিশকারী হিসেবে আবির্ভূত হবে। তোমরা দুটি আলো দানকারী সূরা—আল বাকারাহ ও আলে ইমরান—পাঠ কোরো। কারণ এ দুটি সূরা কিয়ামতের দিন দুটি মেঘমালার মতো অথবা দুটি শামিয়ানার মতো কিংবা পাখির দুটি ঝাঁকের ন্যায় সারিবদ্ধভাবে উড়বে। এরা উভয়ে পাঠকারীর পক্ষে তর্ক করবে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ৮০৪, বাইহাকি, শু‘আবুল ঈমান: ১৮২৭]
.
একটি হাদিসে এসেছে, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ঘুম থেকে জেগে ঘুমের ঘোর কাটানোর পর সূরা আ-লে ইমরানের শেষ দশ আয়াত পাঠ করেন। এরপর অজু করেন এবং নামাজ পড়েন। [বুখারি, আস-সহিহ: ১৮৩; মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৮৩]
.
এই হাদিসের আলোকে ইমাম নববি (রাহ.) বলেন, ঘুম থেকে জেগে সূরা আলে ইমরানের শেষ দশ আয়াত পড়া উত্তম। (বিশেষত কিয়ামুল লাইলের জন্য জাগলে)।
.
একটি হাদিসে সূরা আলে ইমরানের ৩৬ ও ৩৭ নং আয়াতের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, এগুলোতে আছে মহান আল্লাহর ইসমে আযম (মহিমান্বিত নাম), যার মাধ্যমে দু‘আ করা হলে কবুল হয়। [তাবারানি, মু’জামুল কাবির: ১২/১৮২; আলবানি, সিলসিলা দ্বঈফাহ: ২৭৭২; হাদিসটি দুর্বল]
.
উসমান ইবনু ‘আফফান (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে সূরা আলে ইমরানের শেষাংশ পাঠ করবে, তার জন্য সেই রাতের কিয়ামুল লাইল আদায়ের নেকি লিখা হবে।’ [দারিমি, আস-সুনান: ৩৩৯৬; বর্ণনাটি দুর্বল]
.
তাবি‘ঈ মাকহুল (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে সূরা আ-লে ইমরান পাঠ করে, তার জন্য রাত পর্যন্ত ফেরেশতাগণ দু‘আ করেন।’ [দারিমি, আস-সুনান: ৩৪৪০]
-----------------------------------
আলহামদুলিল্লাহ্, ‘মহিমান্বিত কুরআন’ সিরিজটি আমরা আবার শুরু করছি।
.
নতুন পর্ব: সুরা হুদ, সুরা যুমার ও সুরা বনি ইসরাইলের বিশেষ মর্যাদা, গুরুত্ব ও আমল
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
আবু জুহাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সাহাবিগণ বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমরা আপনার বৃদ্ধ হওয়ার স্পষ্ট নিদর্শন লক্ষ্য করছি!’ তিনি বললেন, ‘‘(সুরা) হুদ ও অনুরূপ সুরাগুলো আমাকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে।’’ [শামায়েলে তিরমিযি: ৩৫; তাবারানি, মুজামুল কাবির: ১৭৭৭৪; আবু ই'আলা, আল-মুসনাদ: ৮৮০; হাদিসটি সহিহ]
.
এর দ্বারা ঐসব সূরা উদ্দেশ্য, যাতে কিয়ামত, আখিরাত, জাহান্নাম ইত্যাদি ভীতিকর বিষয়ের আলোচনা করা হয়েছে।
.
যারা নামাজে অর্থ বুঝে কুরআন পাঠ করার মাধ্যমে নিজেদেরকে বিগলিত করতে চান, কাঁদতে চান, তারা সুরা হুদ বা হুদের বিশেষ কিছু আয়াত মুখস্থ করে নিতে পারেন।
.
রাতের বেলা ঘুমানোর পূর্বে নবিজি বেশ কয়েকটি সুরা তিলাওয়াত করতেন। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো: সুরা যুমার ও বনি ইসরাইল। বাকিগুলো অন্য পর্বে আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ্।
.
আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুরা যুমার ও সুরা বনি ইসরাইল পাঠ না করে বিছানায় ঘুমাতেন না।’ [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৬/১৮৯; তিরমিযি, আস-সুনান: ২৯২০; হাদিসটি সহিহ]
.
এছাড়া, সুরা বনি ইসরাইলের ১১১ নং আয়াতটিকে হাদিসে ‘আয়াতুল ইয’ তথা ‘সম্মানের আয়াত’ বলা হয়েছে। [মুসনাদ আহমাদ; দুর্বল সনদে]
-----------------------------------
সুরা কাহাফের সুমহান মর্যাদা ও গুরুত্ব এবং ঘুম থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ওঠার আমল
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
❖ সাধারণভাবে সুরা কাহাফের মর্যাদা:
.
(১) নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সূরা কাহাফ পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন তার জন্য এমন একটি নূর হবে, যা তার অবস্থানের জায়গা থেকে মক্কা পর্যন্ত আলোকিত করে দিবে।” [আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ২৬৫১]
.
(২) বারা ইবনু আযিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এক ব্যক্তি সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করছিলো। তার ঘরে ছিল একটি পশু (ঘোড়া); সেটি লাফাচ্ছিলো। এমনকি, সে তাকিয়ে দেখলো যে, মেঘের মত কিছু একটা তার (তিলাওয়াতকারীর) মাথার উপর ছেয়ে আছে। সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে এই ঘটনা বৰ্ণনা করলো। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘এটা ‘সাকিনাহ’ বা প্রশান্তি, যা কুরআন পাঠের সাথে বা কুরআনের উপর অবতীর্ণ হয়েছে৷’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৩৬১৪; মুসলিম, আস-সহিহ: ৭৯৫; তিরমিযি, আস-সুনান: ২৮৮৫]
.
সম্ভব হলে সুরা কাহাফ অর্থ ও তাফসিরসহ একবার পড়ে নেবেন। এটি একটি অসাধারণ সুরা। চমৎকার চারটি শিক্ষণীয় ঘটনায় সুরাটি সমৃদ্ধ। সেগুলো হলো: আসহাবে কাহাফের কাহিনি, দুই বাগিচার মালিকের কাহিনি, মুসা (আ.) ও খিযিরের কাহিনি এবং বাদশাহ যুলকারনাইন ও ইয়াজুয-মাজুযের কাহিনি। এগুলো থেকে জীবনে অনেক কিছু শেখার আছে।
.
❖ জুমু‘আর দিনে পূর্ণ সুরা কাহাফ পাঠ:
.
(৩) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে, সে ব্যক্তির জন্য দুই জুমু‘আর মধ্যবর্তী সময়টুকু জ্যোতির্ময় হয়ে ওঠবে।” [আলবানি, সহিহুল জামি’: ৬৪৭০]
.
(৪) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি জুমু‘আর দিনে সুরা কাহফ পাঠ করবে, তার পা থেকে আকাশের উচ্চতা পর্যন্ত নুর বা জ্যোতি হয়ে যাবে, যা কিয়ামতের দিন আলো দিবে এবং গত জুমু‘আ থেকে এই জুমু‘আ পর্যন্ত তার সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।” [মুনযিরি, আত তারগিব ওয়াত তারহিব: ১/২৯৮; সনদ হাসান]
.
বি: দ্র: বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে শুক্রবার সন্ধ্যার পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময় পড়লেই যথেষ্ট। কষ্টকর হলে কয়েকবারে পড়েও শেষ করা যাবে।
.
❖ সুরা কাহাফের প্রথম অথবা শেষ দশটি আয়াত মুখস্থ করার মহান ফজিলত:
.
(৫) নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি সুরা কাহাফের প্রথম দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ১৭৬৮]
.
(৬) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের শেষ দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ৮০৯]
.
খুব কঠিন না। একটু চেষ্টা করলেই সম্ভব, ইনশাআল্লাহ্। শিখে নিন। নামাজে কিরাতটা লম্বা করতে পারবেন।
.
❖ নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠার আমল:
.
(৭) যির্ ইবনু হুবাইশ (রাহ.) হতে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের যেকোনো সময় ওঠার জন্য সুরা কাহাফের শেষাংশ পাঠ করবে, সে সেই সময়ই ওঠতে পারবে।’ বর্ণনাকারী আবদাহ্ বলেন, ‘আমরা এটি পরীক্ষা করে দেখেছি এবং অনুরূপ ফলই পেয়েছি।’ [দারিমি, আস-সুনান: ৩৪৪৫; বর্ণনাটি দুর্বল]
.
বর্ণনাটি দুর্বল হলেও আমল করতে পারেন। এটি নাজায়েয হবে না, ইনশাআল্লাহ্।
-----------------------------------------
সুরা ইয়াসিনের মর্যাদা ও ফজিলত
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
ইবনু আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে, সন্ধ্যা পর্যন্ত তার দিনটিকে সহজ করে দেওয়া হবে এবং যে ব্যক্তি রাতের শুরুতে (সন্ধ্যায়) সুরা ইয়াসিন পাঠ করবে, সকাল পর্যন্ত তার রাতটিকে সহজ করে দেওয়া হবে।’ [দারিমি, আস-সুনান: ৩৪৫৮; সনদ হাসান]
.
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘প্রতিটি বিষয়ের একটি হৃদয় থাকে; আর কুরআনের হৃদয় হলো (সুরা) ‘ইয়াসিন’। যে ব্যক্তি (সুরা) ইয়াসিন পাঠ করবে, তার জন্য দশবার (সম্পূর্ণ) কুরআন পড়ার সওয়াব লিখে দেওয়া হবে।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৮৮৭; সনদ দুর্বল; কারও মতে, বানোয়াট]
.
মা’কাল ইবনু ইয়াসার (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমরা তোমাদের মৃতদের (মৃত্যুপথযাত্রীদের) নিকট সুরা ইয়াসিন পাঠ করো।’’ [আবু দাউদ, আস-সুনান: ৩১২১; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৪৪৮; হাদিসটির বিশুদ্ধতা নিয়ে মতভেদ আছে; তবে, এটি আমলযোগ্য]
.
সুরা ইয়াসিনের ফজিলত ও মর্যাদা সংক্রান্ত প্রায় সকল হাদিসই দুর্বল অথবা বানোয়াট। অল্প কিছু বাদে, যেগুলো আমরা উপরে উল্লেখ করলাম। তবে, সাধারণভাবে আল কুরআনের প্রতিটি সুরাই মর্যাদাপূর্ণ।
----------------------------------------
সুরা ওয়াক্বি‘আহর গুরুত্ব ও ফজিলত
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
একদিন আবু বকর (রা.) নবিজিকে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আপনি তো বৃদ্ধ হয়ে গেলেন!’ তিনি বললেন, ‘‘আমাকে (সুরা) হুদ, আল-ওয়াকি‘আহ্, আল-মুরসালাত, ‘আম্মা ইয়াতাসাআলুন এবং ইযাশ শামসু কুওওিরাত (Kuwwirat) বৃদ্ধ করে দিয়েছে।” [তিরমিযি, আস-সুনান: ৩২৯৭; হাদিসটি সহিহ]
.
বস্তুত, এই সুরাগুলোর মাঝে আছে জান্নাত-জাহান্নাম, কিয়ামত, হাশরের ময়দান ইত্যাদি বিষয়ের হৃদয়স্পর্শী বিবরণ। এগুলো মনোযোগের সাথে পড়লে আল্লাহর ভয়ে অন্তর ভীত-সন্ত্রস্ত হয়, হাশরের ভয়াবহ চিত্রগুলো চোখে ভাসে। এই সুরাগুলোর প্রভাবে নবিজি এতটা প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, বার্ধক্যের চিহ্ন তাঁর দেহ মুবারকে পরিস্ফুট হয়ে গিয়েছিলো।
.
সুরা ওয়াক্বি‘আহ্ পড়ার মাধ্যমে দরিদ্রতা দূর হয়। এজন্য অনেকে একে ‘সুরাতুল গিনা’ বা ধনাঢ্যতার সুরা বলে থাকেন।
.
সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সুরা ওয়াক্বি‘আহ্ তিলাওয়াত করবে, তাকে কখনো দরিদ্রতা স্পর্শ করবে না।’’ ইবনু মাস‘উদ (রা.) প্রত্যেক রাতে তাঁর মেয়েদের এই সুরা তিলাওয়াত করার আদেশ করতেন। [বাইহাকি, শু‘আবুল ঈমান: ২৪৯৮; হাদিসটির সনদ দুর্বল]
.
বিশেষত ফজিলত ও আমলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিসের উপর আমল করা বৈধ; যদি সেটি মারাত্মক দুর্বল পর্যায়ের না হয় বা অন্য কোনো সহিহ হাদিসের বিরোধী না হয়। অতএব, কেউ চাইলে এই হাদিসের উপর আমল করতে পারেন। সুরা ওয়াক্বি‘আহর এই আমলটি করে অনেকে সাফল্য পেয়েছেন। বস্তুত, আল্লাহই মানুষকে প্রাচুর্য দেন এবং আল্লাহই দারিদ্রের পরীক্ষায় নিপতিত করেন। মুমিন সর্বাবস্থায় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, সবর ইখতিয়ার করে এবং আল্লাহর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানায়।
.
আরেকটি বিষয় হলো, দারিদ্র ও ঋণ থেকে মুক্তির জন্য সুরা ওয়াক্বি‘আহর পাশাপাশি অন্যান্য সহিহ বর্ণনায় উল্লেখিত আমলগুলোও করা উচিত। আল্লাহ্ তাওফিক দিলে সেসব সহিহ বর্ণনার আমলগুলো নিয়ে কোনোদিন লিখবো, ইনশাআল্লাহ্।
-----------------------------------------------
সুরা হাদিদের বিশেষ দুটো গুরুত্বপূর্ণ আমল:
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
ইরবাদ্ব ইবনু সারিয়াহ্ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসাব্বিহাত সুরাগুলো পাঠ না করে ঘুমাতেন না। আর তিনি (নবিজি) বলেন, ‘‘এগুলোতে (মুসাব্বিহাত সুরাগুলোতে) এমন একটি আয়াত রয়েছে, যা ১ হাজার আয়াতের চেয়েও উত্তম।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৭১২; হাদিসটি সহিহ]
.
উল্লেখ্য, মুসাব্বিহাত মানে যেসব সুরার সূচনা হয়েছে ‘তাসবিহ’ তথা আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনার মধ্য দিয়ে। আলিমগণের মতে, মুসাব্বিহাত সূরাগুলো হলো: সূরা ইসরা (বনি ইসরাঈল), সূরা হাদিদ, সূরা হাশর, সূরা সফ, সূরা জুমু‘আহ, সূরা তাগাবুন ও সূরা আ’লা। (অনেকে সুরা ইসরাকে, আবার অনেকে সুরা ইসরা ও সুরা আ’লাকে মুসাব্বিহাত গণ্য করেননি)
.
আর, যে আয়াতটি ১ হাজার আয়াতের সমান, সেটির ব্যাপারে ইমাম ইবনু কাসির (রাহ.) বলেন, সেটি হলো: সূরা হাদিদের ৩ নং আয়াত। [ইবনু কাসির, তাফসিরুল কুরআনিল আযিম]
.
এই আয়াতটিতে মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার বিশেষ কিছু গুণ ও বৈশিষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং, সাধারণভাবেই আয়াতটির গুরুত্ব ও মর্যাদা অপরিসীম।
.
তবে, এই আয়াতই যে সেই আয়াত, সে ব্যাপারে আলিমগণের ঐক্যমত্য নেই। ইমাম ত্বিবি (রাহ.) বলেন, এই মর্যাদাপূর্ণ আয়াতটিকে গোপন রাখা হয়েছে, যেভাবে (রমাদানের) রাতগুলোর মাঝে লাইলাতুল কদরকে গোপন রাখা হয়েছে।
.
একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল:
.
সাহাবি আবদুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যখন তুমি তোমার অন্তরে বিশেষ কিছু তথা ওয়াসওয়াসা (শয়তানের কুমন্ত্রণা, ইমানের মাঝে সংশয়) দেখতে পাবে, তখন বলবে—
.
هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخِرُ وَالظَّاهِرُ وَالْبَاطِنُ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْئٍ عَلِيْمٌ
.
(অর্থ: তিনিই প্রথম ও শেষ; প্রকাশ্য ও গোপন; আর তিনি সকল বিষয়ে সম্যক অবগত)
.
অর্থাৎ, সুরা হাদিদের ৩ নং আয়াত। [আবু দাউদ, আস-সুনান: ৫১১০; বর্ণনাটির সনদ হাসান]
.
সুতরাং, ইমানের ব্যাপারে সংশয়গ্রস্ত ব্যক্তিরা এবং সাধারণ ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা এই আয়াতটি বেশি বেশি পড়বেন। অবশ্যই অর্থের দিকে খেয়াল রেখে মনোযোগের সাথে পড়বেন।
-----------------------------------------
সুরা হাশর ও এর শেষ তিন আয়াতের বিশেষত্ব:
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
(১) মাকাল ইবনু ইয়াসার (রা.) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি সকালে তিন বার ‘আ‘উযুবিল্লাহিস সামী‘য়িল ‘আলীমি মিনাশ শাইতানির রাজীম’ পড়বে, তারপর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য ৭০ হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করবেন, যারা সন্ধ্যা পর্যন্ত তার জন্য রহমতের দু‘আ করতে থাকবে। আর এ সময়ের মাঝে যদি সে মারা যায়, তবে শহিদের মৃত্যু লাভ করবে। আর, যে ব্যক্তি এটি সন্ধ্যা সময় পড়বে, তার একই মর্যাদা রয়েছে (সকাল হওয়া পর্যন্ত)। [তিরমিযি, আস-সুনান: ৩০৯০; প্রায় সকল মুহাদ্দিস হাদিসটিকে দুর্বল বলেছেন। তবে, অনেক মুহাদ্দিসের উসুল (মূলনীতি) হিসেবে, এই ধরনের হাদিস আমলযোগ্য]
.
(২) ইরবাদ্ব ইবনু সারিয়াহ্ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসাব্বিহাত সুরাগুলো পাঠ না করে ঘুমাতেন না। [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৭১২; হাদিসটি সহিহ]
.
উল্লেখ্য, আলিমগণের মতে, মুসাব্বিহাত সুরাগুলোর অন্যতম একটি হলো, সুরা হাশর।
.
(৩) হাসান আল বাসরি (রাহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি সকালে সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পাঠ করবে, সে যদি সেদিন মৃত্যুবরণ করে, তবে তাকে শাহাদাতের (শহিদি মর্যাদার) সিল প্রদান করা হবে এবং সন্ধ্যায় তা পাঠ করলে, সে যদি সেই রাতে মৃত্যুবরণ করে, তবে তাকে শাহাদাতের সিল প্রদান করা হবে। [দারিমি, আস-সুনান: ৩৪৬২; এটি হাসান আল বাসরি (রাহ.)-এর বক্তব্য হিসেবে সহিহ; রাসুলের হাদিস হিসেবে নয়]
.
(৪) একটি বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহর ইসমে আযম রয়েছে সুরা হাশরের শেষ ৬ টি আয়াতে। [আলবানি, দ্ব‘ঈফুল জামি’: ৮৫৩; বর্ণনাটি দুর্বল]
-----------------------------------------
সুরা মুলকের সুমহান মর্যাদা, ফজিলত এবং নিয়মিত পাঠকারীর বিশেষ উপকারিতা
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
❖ সুরা মুলক কবরের আজাব থেকে বাঁচায়।
.
আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক সাহাবি একটি কবরের উপর তার তাঁবু টানান। তিনি জানতেন না যে, সেটি একটি কবর; হঠাৎ বুঝতে পারেন যে, কবরে এক ব্যক্তি সুরা মুলক পাঠ করছে। সে তা পাঠ করে সমাপ্ত করে। তারপর তিনি নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকটে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি একটি কবরের উপর তাঁবু টানাই। আমি জানতাম না যে, সেটি একটি কবর। হঠাৎ বুঝতে পারি যে, এক ব্যক্তি সেখানে সুরা মুলক পাঠ করছে এবং তা সমাপ্ত করেছে।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘এই সুরাটি প্রতিরোধকারী, মুক্তিদানকারী। এটি কবরের আজাব হতে তিলাওয়াতকারীকে মুক্তি দেয়।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৮৯০; আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ১১৪০; উপরিউক্ত ঘটনাটির বর্ণনাসূত্র দুর্বল; তবে, নবিজির বক্তব্য ‘‘এই সুরাটি (কবরের আজাব থেকে) প্রতিরোধকারী’’ অংশটুকু সহিহ]
.
যেমন অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘তাবারাকাল্লাযি বিয়াদিহিল মুলক’ (সূরা মুলক) কবরের আজাব হতে মুক্তিদানকারী। [ইবনুল কায়্যিম, আল-মানারুল মুনিফ: ৯১; সনদ সহিহ]
.
❖ সুরা মুলক তার তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে এবং সেই সুপারিশে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে।
.
আবু হুরায়রাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘কুরআনে ত্রিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা রয়েছে, যা তার তিলাওয়াতকারীর জন্য (এমনভাবে) শাফা‘আত (সুপারিশ) করবে (যে,); শেষ পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। সেটি হলো: তাবারাকাল্লাযি বিয়াদিহিল মুলক (সুরা মুলক)।’’ [ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ৩৭৮৬; হাদিসটি হাসান]
.
অন্যান্য বর্ণনায় আরও এসেছে, তার জন্য এই সুরা বিতর্ক করবে, তাকে জাহান্নাম থেকে বের করে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। [আলবানি, সহিহুল জামি’: ২০৯২ ও ৩৬৪৪; হাদিসটি হাসান]
.
এই ফজিলত অর্জনের জন্য রাতে পড়া জরুরি নয়। যেকোনো সময় পড়া যাবে।
.
❖ প্রতি রাতে সুরা মুলক পাঠ করা সুন্নাত।
.
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে তাবারাকাল্লাযি বিয়াদিহিল মুলক (অর্থাৎ সুরা মুলক) তিলাওয়াত করবে, আল্লাহ তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন।’ [আলবানি, সহিহুত তারগিব: ১৫৮৯; হাদিসটি হাসান]
.
জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুরা ‘আলিফ লাম মীম তানযিল’ (সুরা সাজদাহ) ও সুরা ‘তাবারকাল্লাযি বিয়াদিহিল মুলক’ (সুরা মুলক) না পড়ে ঘুমাতেন না।’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৮৯২; আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ৫৮৫; হাদিসটি সহিহ]
.
মাগরিবের পর থেকে নিয়ে ঘুমানোর পূর্ব পর্যন্ত যেকোনো সময় পাঠ করাই যথেষ্ট।
----------------------------------------
বিশেষ কয়েকটি সুরার গুরুত্ব ও উপকারিতা
▬▬▬▬▬▬▬◖◉◗▬▬▬▬▬▬▬
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কিয়ামতের দিনটি নিজের চোখে দেখতে চায়, সে যেন সুরা তাকউয়ির, সুরা ইনফিত্বার ও সুরা ইনশিক্বাক্ব পড়ে নেয়।” [আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৫৭৫৫; তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৩৩৩; হাদিসটি সহিহ]
.
এই সুরাগুলো অন্তত একবার অর্থসহ পড়লে হাদিসটির যথার্থতা স্পষ্ট হয়ে যাবে। খুব বেশি বড় নয়, প্রতিটি সুরাই আকারে ছোটো। এগুলো যথাক্রমে ৮১, ৮২ ও ৮৪ নং সুরা।
.
আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি তো বৃদ্ধ হয়ে গেছেন!’ তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম বললেন, ‘‘সুরা হুদ, ওয়াক্বি‘আহ্, মুরসালাত, আম্মা ইয়াতাসাআলুন (নাবা) ও ইযাস-শামসু কুউয়িরাত (তাকউয়ির) আমাকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ৩২৯৭; হাদিসটি সহিহ]
.
হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম মুনাউয়ি (রাহ.) বলেন, কিয়ামতের ভয় ও আজাবের কথা বর্ণিত হয়েছে এসব সুরায়। তাই, এসবের ব্যাপারে চিন্তা-ফিকিরই নবিজিকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে। [মুনাউয়ি, ফায়দ্বুল ক্বাদির: ৪/২২১]
.
সুরাগুলোর ক্রম জেনে নিন, সহজে পেতে পারেন: হুদ (১১ নং), ওয়াক্বি‘আহ্ (৫৬ নং), মুরসালাত (৭৭ নং), নাবা (৭৮ নং) এবং তাকউয়ির (৮১ নং)।
.
যারা নামাজে তিলাওয়াত করে মজা পেতে চান, তারা এই পোস্টে উল্লেখিত সুরাগুলো অর্থসহ মুখস্থ করে নিতে পারেন। আকারে খুব বেশি বড় নয়। আল্লাহর উপর ভরসা করে চেষ্টা করুন। অর্থ বুঝে এসব সুরা পাঠ করে নামাজ আদায় করার অনুভূতিটা নিশ্চয়ই অন্যরকম হবে, ইনশাআল্লাহ্।
----------------------------------
সুরা যিলযাল, সুরা তাকাসুর ও সুরা আসরের সুমহান মর্যাদা, ফজিলত ও আমল
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
❑ সুরা যিলযাল: (৯৯ নং সুরা)
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা যিলযালের শেষ দুটি আয়াতকে একত্রে ‘‘অনন্য ও সারগর্ভ আয়াত’’ বলে অভিহিত করেছেন। [বুখারি, আস-সহিহ: ২৩৭১]
.
এই সুরাটি অবতীর্ণ হওয়ার পর এর প্রভাবে আবু বকর (রা.) কাঁদতে থাকেন। কারণ, এর আয়াতগুলো খুবই টাচি। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, ‘‘যদি তোমরা গুনাহ না করতে, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ আরেকটি সম্প্রদায় সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ্ করতো (এরপর তাঁর কাছে আন্তরিকভাবে তাওবাহ্ করতো) এবং তিনি তাদের ক্ষমা করে দিতেন।’’ [ত্বাবারানি, মাজমাউয যাওয়াইদ: ১১৫১২; তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৩৯; হাদিসটি গ্রহণযোগ্য]
.
❑ সুরা তাকাসুর: (১০২ নং সুরা)
.
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কারও এই সক্ষমতা নেই যে, প্রতিদিন এক হাজার আয়াত পাঠ করবে?’’ সাহাবিগণ বললেন, ‘এমনটি করতে কে সক্ষম হবে (হে আল্লাহর রাসুল)?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের কেউ কি সুরা তাকাসুর পাঠ করতে পারবে না? (এই সুরা পাঠ করা এক হাজার আয়াত পাঠের সমান)” [আলবানি, দ্বঈফুত তারগিব: ৮৯১; হাদিসটি দুর্বল, তবে আমলযোগ্য]
.
একটি হাদিসে এসেছে, সূরা তাকাসুর পাঠকারীকে ফেরেশতাদের মধ্যে ‘শুকরিয়া আদায়কারী’ হিসেবে ডাকা হয়। [আলবানি, দ্বঈফুল জামি’: ৪০৩৮; হাদিসটি দুর্বল]
.
❑ সুরা আসর: (১০৩ নং সুরা)
.
আবু মাদিনাহ আদ দারিমি (রাহ.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবিগণের মধ্যে দুজন ব্যক্তি এমন ছিলেন, যাঁরা একজন অন্যজনকে সুরা আসর পাঠ করে না শুনানো পর্যন্ত পরস্পর বিচ্ছিন্ন হতেন না।’ [তাবরানি, মু‘জামুল আওসাত্ব: ৫/২১৫; আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ২৬৪৮; হাদিসটি সহিহ]
.
এ থেকে বোঝা যায়, এই ছোট্ট সুরাটিকে তাঁরা কত গুরুত্বপূর্ণ মনে করতেন! প্রকৃতপক্ষে, এই সুরাটির তাৎপর্য কেউ অনুধাবন করতে পারলে, সে কামিয়াব হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ্।
-------------------------------
সুরা কাফিরুনের মহান মর্যাদা ও ফজিলত
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
❑ ফজর ও মাগরিবের সুন্নাত নামাজে নবিজির সুরা কাফিরুন পাঠ:
.
ইবনু উমার (রা.) বলেন, ‘আমি (কমপক্ষে) ২০ বার (দিন) লক্ষ করেছি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজরের পূর্বের দুই রাকাত (সুন্নাত) এবং মাগরিবের পরের দুই রাকাত (সুন্নাত)-এ সুরা কাফিরুন ও সুরা ইখলাস পড়েছেন।’ [নাসায়ি, আস-সুনান: ৯৯৫; হাদিসটি হাসান]
.
সুনান তিরমিযিতে হাসান সনদে সাহাবি ইবনু মাস‘উদ (রা.) থেকে এসেছে, তিনি বলেছেন, তিনি নবিজিকে এত পরিমাণে এই দুই সুরা এই দুই নামাজে পড়তে শুনেছেন যে, তিনি সেটির হিসাব রাখতে পারেননি।
.
অতএব, এই দুই নামাজে এই দুটো সুরা পাঠ করা মুস্তাহাব। তবে, বাধ্যতামূলক নয়।
.
❑ বিতরের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কাফিরুন পাঠ:
.
উবাই ইবনু কা’ব (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের সালাত তিন রাকাত আদায় করতেন। প্রথম রাকাতে ‘‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা” দ্বিতীয় রাকাতে “ক্বুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন” এবং তৃতীয় রাকআতে “কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ” পাঠ করতেন। [নাসায়ি, আস-সুনান: ১৭০২; হাদিসটি সহিহ]
.
বিতরের নামাজ এই তিনটি সুরা দিয়ে পড়া উত্তম, তবে এটি জরুরি নয়।
.
❑ হজ্বের তাওয়াফের সালাতে সুরা কাফিরুন পাঠ করতেন নবিজি।
.
জাবির ইবনু আবদিল্লাহ্ (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওয়াফের দুই রাকাত সালাতে ‘ক্বুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন’ ও ‘ক্বুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন।’ [বায়হাকি, আস-সুনান]
.
❑ এই সুরাটির অন্যতম গুরুত্ব হলো, এতে কাফিরদের সাথে মুমিনদের পার্থক্য বলে দেওয়া হয়েছে। তাই, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই সুরাটিকে এতো বেশি গুরুত্ব দিতেন।
.
সাহাবি নাওফাল (রা.) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন, যা আমি বিছানায় এসে (ঘুমের পূর্বে) পাঠ করবো।’ তখন তিনি বললেন, ‘তুমি ‘‘ক্বুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন’’ পাঠ করো এবং এটাকে শেষে পাঠ করে ঘুমাতে যাও; কেননা এটা শির্ক থেকে মুক্তির ঘোষণা।’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৭০৯; আবু দাউদ, আস-সুনান: ৫০৫৫; হাদিসটি সহিহ]
.
অন্যান্য অনেক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুরা কাফিরুন পাঠ না করে ঘুমাতে যেতেন না।
.
❑ সুরা কাফিরুন কুরআনের এক-চতুর্থাংশের সমান:
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ক্বুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরুন’ কুরআনের এক-চতুর্থাংশের সমান। [আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ৫৮৬; হাদিসটি হাসান]
--------------------------------
সুরা ইখলাস কোনো সাধারণ সুরা নয়; এই সুরার প্রতি ভালোবাসা জান্নাতে যাওয়ার মাধ্যম। সুরা ইখলাসের সুমহান মর্যাদা ও ফজিলতগুলো আলোচনা করা হলো।
▬▬▬▬▬▬▬◄❖►▬▬▬▬▬▬▬
একবার এক ব্যক্তি এসে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললো, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি এই ‘‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’’ সুরা (ইখলাস) ভালোবাসি।’ তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এর প্রতি ভালোবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৯০১; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১২০২৪; হাদিসটি সহিহ। সহিহ বুখারির টীকাতে হাদিসটি সনদহীনভাবে এসেছে]
.
একবার নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন সাহাবির নেতৃত্বে একদল সৈনিককে যুদ্ধে প্রেরণ করেন। তিনি নামাজ পড়ানোর সময় যেকোনো তিলাওয়াতের পরে সুরা ইখলাস পাঠ করতেন। সৈন্যরা যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে নবিজিকে তা অবহিত করেন। তখন তিনি তাদের বলেন, ‘‘তোমরা তাকে জিজ্ঞেস করো, কেনো সে এরূপ করেছে।’’ তাঁরা তাকে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি (সেনাপতি) বললেন, ‘এ সুরায় রহমানের (আল্লাহর) গুণাবলি বর্ণিত হয়েছে, তাই আমি এ সুরাকে ভালোবাসি।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের বলেন, ‘‘তোমরা তাকে গিয়ে খবর দাও যে, আল্লাহও তাকে ভালোবাসেন।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৬৮২৭]
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার সাহাবিদের বলেন, ‘‘তোমাদের কেউ কি এক রাতে কুরআনের এক-তৃতীয়াংশ পড়তে পারবে?’’ সাহাবিগণের নিকট বিষয়টি খুবই কঠিন মনে হলো। ফলে তারা বললেন, ‘আমাদের মধ্যে এ কাজ কে করতে পারবে?’ তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! নিঃসন্দেহে এই সুরা (ইখলাস) কুরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৪৬২৮]
.
(নোট: হাদিসে ‘‘এক-তৃতীয়াংশের সমান’’ বলা হয়েছে। একথা বলা হয়নি যে, একবার বললে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পড়া হয়ে যাবে)
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ‘‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’’ দশবার পাঠ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন। [আলবানি, সহিহুল জামি’: ৬৪৭২; হাদিসটি সহিহ]
.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার আমি নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হাঁটছিলাম। তখন তিনি এক লোককে ‘‘কুল হুওয়াল্লাহু আহাদ’’ পড়তে শুনলেন। অতঃপর তিনি বলেন, ‘‘আবশ্যক হয়ে গেছে।’’ আমি প্রশ্ন করলাম, ‘কী আবশ্যক হয়ে গেছে?’ তিনি বললেন, ‘‘জান্নাত।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৩২০; আহমাদ, আল-মুসনাদ: ৭৬৬৯; হাদিসটি সহিহ]
--------------------------------------
আমাদের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য দুটো সুরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সে দুটো হলো, সুরা ফালাক ও সুরা নাস। এই সুরা দুটো সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনাগুলো জেনে নিই।
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
❖ সুরা ফালাকে আছে গুরুত্বপূর্ণ দু‘আ:
.
উকবাহ ইবনু আমির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হাঁটছিলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, “হে উকবাহ, বলো।’’ আমি বললাম, ‘আমি কী বলব, ইয়া রাসুলাল্লাহ?’ এরপর তিনি কয়েকবার একই প্রশ্ন করে বললেন, “বলো, ক্বুল আউযু বি রাব্বিল ফালাক্ব” (সুরা ফালাক্ব)। এরপর আমি এই সুরার শেষ পর্যন্ত পাঠ করলাম। সে সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “এই সুরার অনুরূপ কোনো প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা এবং কোন আশ্রয় প্রার্থনাকারীর আশ্রয় প্রার্থনা নেই।” [দারিমি, আস-সুনান: ৩৪৭৯; বাইহাকি, শু‘আবুল ঈমান: ২৫৬৪; হাদিসটি সহিহ]
.
❖ প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে:
.
উকবাহ ইবনু ‘আমির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে প্রত্যেক (ফরজ) নামাজের পর সুরা নাস ও সুরা ফালাক্ব পাঠের আদেশ করেছেন। [তিরমিযি, আস-সুনান: ২৯০৩; আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ১৫১৪; আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৫২৩; হাদিসটি সহিহ]
.
❖ প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায়:
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস তিনবার পাঠ করো; তা হলে সবকিছুর মোকাবেলায় এগুলোই তোমার জন্য যথেষ্ট হবে।’’ [তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৭৫; হাদিসটি হাসান]
.
❖ ঘুমানোর পূর্বে:
.
আয়িশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি রাতে ঘুমানোর সময় তাঁর দু’হাতের তালু জড়ো করে তাতে ফুঁ দিতেন এবং তাতে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস পাঠ করতেন। এরপর দুই হাতের তালু দিয়ে দেহের যেখানে সম্ভব, সেখানে মুছে দিতেন। শুরু করতেন মাথার উপরিভাগ দিয়ে; এরপর চেহারা ও দেহের সামনের অংশ। এই কাজ তিনি তিনবার করতেন।’’ [বুখারি, আস-সহিহ: ৫০১৭]
.
❖ এই দুটো সুরার অন্যরকম গুরুত্ব:
.
উকবাহ ইবনু ‘আমির (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘তুমি কি দেখোনি, আজ রাতে (এমন) কিছু আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, যার নজির পূর্বে কখনো দৃষ্টিগোচর হয়নি? সেগুলো হলো, ক্বুল আ‘উযু বি রাব্বিন নাস (সুরা নাস) এবং ক্বুল আ‘উযু বি রাব্বিল ফালাক্ব (সুরা নাস)।’’ [মুসলিম, আস-সহিহ: ৮১৪]
.
অন্য বর্ণনায় এসেছে, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাসের মতো কোনো সুরা তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল, এমনকি কুরআনেও আর নেই। [আলবানি, সিলসিলা সহিহাহ: ২৮৬১; হাদিসটি সহিহ]
--------------------------------------
.
.
#দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo
.
>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"
https://justpaste.it/5gol5
.
>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক
https://justpaste.it/facebook_page_grp_link
.
>> র্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট
https://justpaste.it/76iwz
.
>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের pdf লিংক (৪০০+ বই)
https://justpaste.it/4ne9o
.
>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.
https://justpaste.it/islamicappvideo
.
>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?
https://justpaste.it/6q4c3
.
>> কুরআন এবং আপনি
https://justpaste.it/5dds8
.
>> কখনও ঝরে যেও না …
https://justpaste.it/3bt22
.
>> ফজরে আমি উঠতে পারি না
https://justpaste.it/6kjl6
.
>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1
.
>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr
.
>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম
https://justpaste.it/7u5es
.
>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়
https://justpaste.it/8dccj
.
>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব
https://justpaste.it/6ttuf
.
>> স্বার্থক মুনাজাত
https://justpaste.it/1xf0t
.
>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ
https://justpaste.it/4hhtd
.
>> তাহাজ্জুদ সিরিজ
https://justpaste.it/4ja0n
.
>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব
https://justpaste.it/3dxi7
.
>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)
https://justpaste.it/7056k
.
>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ
https://justpaste.it/7fh32
.
>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ
https://justpaste.it/9icuq
.
>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল
https://justpaste.it/8gmtk
.
>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf
.
>> দ্বীনে_ফেরার_গল্প_আমার_রবের_কাছে_ফেরার_গল্প
https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo
.
>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)
https://justpaste.it/8vnly
.
>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir
.
>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh
.
>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5
.
>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1
.
>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j
.
>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে। সবগুলো বিষয়ের লিংক এক জায়গায় রাখা হয়েছে। এই লিংকটা শেয়ার করতে পারেন।
https://justpaste.it/48f6m