JustPaste.it

হারাম সম্পর্ক, অবৈধ প্রেম, যেনা-ব্যভিচার সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জবাব

 

 

এখনো যারা বিবাহপূর্ব হারাম প্রেম-ভালবাসায় মত্ত আছেন, তাদের উদ্দেশ্যে...
.
একটি হারাম রিলেশনে থাকা অবস্থায় দুজন মানুষ পরস্পরকে হারিয়ে ফেলার আশঙ্কায় থাকে; কেউ কেউ জানাজানি হওয়ার আতঙ্কে থাকে; পরস্পর পরস্পরের প্রতি সন্দেহ এবং কু-ধারণার অনলে জ্বলতে থাকে; বিবাহ হবে কী হবে না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটায়; বাবার কষ্টার্জিত টাকা এবং মহামূল্যবান সময়ের নিদারুণ অপচয়ে (একলা সময়ে) আফসোস করে। এগুলো হলো দুনিয়াবি শাস্তি।
.
এর বাইরে—তারা আল্লাহর ক্রোধের মধ্যে থাকে। চব্বিশ ঘণ্টা (মানসিকভাকে) একটি হারামে ডুবে থাকে, যা ভয়াবহ; কারণ সবসময় দেখা-সাক্ষাৎ, কথাবার্তা না বললেও পরস্পর পরস্পরকে ফিল করা, চিন্তা করা– এগুলো সবসময়ই হয়, ফলে সর্বদাই তারা গুনাহের মধ্যে ডুবে থাকে। নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকরসহ কোনো ইবাদতেই তাদের একাগ্রতা ও খুশু-খুজু থাকে না। তখন আল্লাহর আনুগত্য করা তাদের কাছে বোঝা মনে হয়। এসব কারণে সাময়িকভাবে তারা কখনো কখনো আনন্দ-ফূর্তিতে থাকলেও বেশিরভাগ সময় মানসিকভাবে থাকে অস্থির-অশান্ত; দুশ্চিন্তা ও হতাশাগ্রস্ত এবং সীমাহীন একাকীত্ব ও দুঃখবোধে জর্জরিত।
.
শুধু এই একটি হারামকে ত্যাগ করতে পারলে দ্বিনের উপর চলা অনেক সহজ হয়ে যায়। আর এই একটি হারামের পথ ধরেই অনেকগুলো হারামে মানুষ জড়িয়ে যায়। এটি কন্টিনিউ করতে গিয়ে শত মিথ্যার আশ্রয় নেয়। এই রোগ খুবই বিপজ্জনক।
.
সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, অনেক প্রেমিকযুগল একে অপরকে আল্লাহর চেয়েও বেশি ভালোবাসতে শুরু করে, যা তাদের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। এমনকি ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা আছে যে, হারাম প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে মানুষ ঘোষণা দিয়ে আল্লাহকে ত্যাগ করেছে, ইসলাম থেকে সরে গেছে। বর্তমানেও অনেকে প্রেম-ভালোবাসায় ডুবে আল্লাহকে ভুলে গেছে। তার জীবনের যাবতীয় কনসার্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে এই হারাম সম্পর্ক। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, “আর মানুষের মাঝে এমন লোক রয়েছে, যে অন্য কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালোবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা হয়ে থাকে।” [সুরা বাক্বারাহ, আয়াত: ১৬৫]
.
যেকোনো মূল্যে এটা থেকে বের হয়ে আসুন। সম্ভব হলে বিয়ে করে ফেলুন, আর না হয় আল্লাহর জন্যই ব্রেক-আপ করে ফেলুন। হতাশ হবেন না ভাই-বোনেরা! আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন। তিনি অনেককেই সেখান থেকে বের হওয়ার তাওফিক দিয়েছেন, আপনাকেও দেবেন। শুধু নিজের সাথে সৎ থাকুন, আল্লাহর সাথে সৎ থাকুন। লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সঠিক রাখুন। হাসবুনাল্লাহু নি’মাল ওয়াকিল।
.
--------------------------------

 

নারী-পুরুষের প্রেম-ভালোবাসা কি হারাম? যারা বিবাহবহির্ভূত হারাম সম্পর্কে জড়িত, তাদের ব্যাপারে কিছু সমাধানমূলক কথা:
.
সমস্যা নিয়ে কথা বলা তো খুব সহজ, কিন্তু সমাধান দেখিয়ে দেওয়ার কাজটা বেশ কঠিন।
.
(১) সাধারণভাবে মানুষ ঈমানি দুর্বলতার কারণে পাপে জড়ায়। বিবাহবহির্ভূত হারাম সম্পর্কও একটি পাপ। প্রেমে পড়লে নিচের হাদিসের এক বা একাধিক বিষয় ঘটে।
.
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘নিঃসন্দেহে দু’চোখের ব্যভিচার হলো তাকানো, দু’কানের ব্যভিচার হলো (কামনার সাথে) শোনা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (কামনামিশ্রিত) কথোপকথন করা, হাতের ব্যভিচার হলো স্পর্শ করা, পায়ের ব্যভিচার হলো (কামনা চরিতার্থে) হেঁটে যাওয়া, অন্তরের ব্যভিচার হলো কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান একে সত্য করে বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। (অর্থাৎ, ফাইনালি লজ্জাস্থানের মাধ্যমেই চূড়ান্ত ঘটনা ঘটে)।’’ [ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৬৬৪৭]
.
(২) যদি কেউ কোনোভাবে কারও প্রেমে পড়ে যায়, তাহলে তার কর্তব্য হলো, সে এ থেকে নিজেকে বিরত রাখবে। কোনোভাবেই তার দিকে তাকাবে না, তার সাথে প্রেমালাপ করবে না, নির্জনে দেখা-সাক্ষাৎ করবে না।
.
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘কোনো পুরুষ যখন কোনো নারীর সাথে নির্জনে একত্র হয়, তখন সেখানে তৃতীয়জন হয় শয়তান।’’ [ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ১৭৭; ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ১১৭১; হাদিসটি সহিহ]
.
আল্লাহ তা‘আলা রাসুলের স্ত্রীগণকে (সকল মুসলিম নারীর ব্যাপারেও হুকুম একই) উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘তোমরা (পর-পুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যার কারণে—যার অন্তরে রোগ আছে— সে প্ৰলুব্ধ (লালায়িত) হয়, বরং তোমরা ন্যায়সংগত (স্বাভাবিক) কথা বলবে।’’ [সুরা আহযাব, আয়াত: ৩২]
.
(৩) প্রেম হলো রোগ আর চিকিৎসা হলো বিয়ে!
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘একে অপরের প্রতি ভালোবাসা পোষণকারী দুজনের মাঝে বিবাহের মতো (উত্তম) আর কিছু নেই।’’ [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৮৪৭; হাদিসটি সহিহ]
.
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিবাহবহির্ভূত হারাম সম্পর্কের ব্যাপারে আমরা অনেকে লোকদের সতর্ক করলেও এই হাদিসটির আলোকে সমাধানের কথা তেমন বলি না। অথচ এটি একটি বিশুদ্ধ ও যথার্থ সমাধানমূলক হাদিস। এক বাক্যে ব্রেকআপ করাকেই একমাত্র সমাধান হিসেবে প্রচার করি। এটি দুঃখজনক।
.
(৪) যারা ইতোমধ্যে হারাম প্রেমে জড়িয়ে গেছেন, একে অপরকে প্রকৃত অর্থেই ভালোবাসেন এবং তাদের দ্বীনদারির ব্যাপারে ভালো আশা রাখেন, তাদের কর্তব্য হলো: বিয়ের মাধ্যমে নিজেদের সম্পর্কটাকে হালাল ও পূর্ণতা দেওয়া।
.
(ক) অনেকে বাসায় বিয়ের কথা বলতে লজ্জা পায় আর নিজের পক্ষে সাফাই দেয়, ‘এই মুহূর্তে আমাদের পরিবার আমাদের বিয়ে সমর্থন করবে না।’ এটা উচিত নয়। হারাম থেকে বাঁচতে প্রয়োজনে বেহায়ার মতো বারবার বিয়ের কথা বলবেন অথবা অন্যদের দিয়ে বলাবেন।
(খ) যদি অনেক চেষ্টার পরও অভিভাবককে রাজি করাতে না পারেন, তাহলে হানাফি মাযহাব মতে, তাদের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে করে নিলে সেটি বৈধ হবে। তবে, সামগ্রিক কল্যাণ বিবেচনায় আমরা এটিতে নিরুৎসাহিত করি। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই এটির ফলাফল ভালো হয় না।
.
(৫) হারাম সম্পর্কে জড়িত, কিন্তু অভিভাবক একদমই রাজি না, তাই বিয়ে করতে পারছেন না, এমন যারা আছেন, তাদেরকে অবশ্যই থামতে হবে। আল্লাহর দেওয়া সীমারেখা লঙ্ঘন করা যাবে না। বিয়ের আগ পর্যন্ত দেখা-সাক্ষাৎ, কথা-বার্তা, একান্তে মিলিত হওয়া ইত্যাদি কাজ থেকে বিরত থাকবেন। নিজেদের যৌনকামনা নিবারণের জন্য বেশি বেশি নফল রোজা রাখবেন, সবর করবেন এবং আল্লাহর সাহায্য চাইবেন। তাহলে আল্লাহ ধৈর্যধারণের জন্য নেকি দেবেন, যেমনটি বলেছেন ইবনুল কায়্যিম (রাহ.)।
.
যদি তাকেই বিয়ে করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন, তাহলে মাঝেমধ্যে পারিবারিকভাবে যোগাযোগ রাখবেন। আর পরিবার রাজি না থাকলে, মেয়ের কোনো মাহরামের উপস্থিতিতে কয়েক মাস পরপর সীমিত পরিসরে কিছু সময় কথা বলবেন। তবে, সেই কথা শুধু বিয়ের অগ্রগতি নিয়ে হবে, যথাযথ পর্দার মধ্যে, স্বল্প সময়ে। এখানে কোনো প্রেমালাপ হবে না। সম্ভব হলে এই কাজটি অনলাইনে করবেন (কোনো মাহরামের জ্ঞাতসারে)। সামনাসামনি দেখা-সাক্ষাৎ করবেন না। তবে, এক্ষেত্রে সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। এই পয়েন্টে যেসব কথা বলা হলো, এগুলো একদম মার্জিনের কথাবার্তা। এগুলো ক্রস করা মানে হারামে জড়ানো। সুতরাং সাবধানতা কাম্য।
.
(৬) প্রেম-ভালোবাসা অনেক সময় মানুষকে উন্মাদ বানিয়ে দেয়। প্রেমিক-প্রেমিকারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। যেমনটি আমরা দেখি নবিজির সাহাবি মুগিস (রা.)-এর বেলায়। তাঁর সাথে তাঁর স্ত্রী বারিরার বিচ্ছেদ ঘটলে তিনি পাগলের মতো হয়ে যান! সাহাবি ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, যেন আমি এখনও দেখতে পাচ্ছি সেই দৃশ্য যে, মুগিস কাঁদতে কাঁদতে বারিরার পেছনে মদিনার অলিতে-গলিতে ছোটাছুটি করছে আর তার দাড়ি বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে!
.
মুগিসের এই ভালোবাসার পাগলামি দেখে স্বয়ং নবিজি পর্যন্ত বারিরাকে বলেছিলেন, ‘‘তুমি যদি তার কাছে আবার ফিরে যেতে!’’ তখন বারিরাহ (রা.) বলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কি আমাকে এই বিষয়ে আদেশ দিচ্ছেন? (কারণ নবিজির আদেশ মানা ফরজ)’ তখন নবিজি বলেন, ‘‘না, আমি কেবল সুপারিশ করছি।’’ তখন বারিরাহ বলেন, ‘তাকে আমার দরকার নেই।’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ৫২৮৩]
.
[বারিরাহ এবং মুগিস দুজনই ছিলেন ক্রীতদাস-ক্রীতদাসী সাহাবি। বিধান হলো, কোনো ক্রীতদাসী নারী স্বাধীন হয়ে গেলে আর তার স্বামী তখনও ক্রীতদাস থেকে গেলে, সেই নারীর এই এখতিয়ার থাকতো যে, সে চাইলে ক্রীতদাস স্বামীর সংসার করতে পারে আবার বিচ্ছেদও ঘটাতে পারে। তবে, এই বিচ্ছেদ ঘটানোর পর অন্য পাত্রকে বিয়ে না করেও আগের বিয়ে নবায়ন করা যায়। মূলত বারিরাহ (রা.) স্বাধীন হওয়ার পরই তাঁর স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটান। তিনি স্বামীকে অপছন্দ করতেন আর স্বামী তাকে পাগলের মতো ভালোবাসতেন। (ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ৩৬৭২)]
.
এই ঘটনার উল্লেখযোগ্য দিক হলো, নবিজি মুগিসকে তার পাগলামি থামাতে বলেননি, অথচ মুগিস তখন বারিরার জন্য নন-মাহরাম। কারণ এটা এমন পর্যায়ের পাগলামি, যেটাতে ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এমন অবস্থায় যদি সরাসরি কোনো হারামে না জড়ায় (যেমন: স্পর্শ, নির্জনে সাক্ষাৎ, চুমুু খাওয়া ইত্যাদি) তাহলে আশা করা যায়, আল্লাহ এই লোকদের উযর (অপারগতা) ক্ষমা করবেন।
.
পরবর্তীতে খুলাফায়ে রাশেদিন এবং অন্যান্য রহমদিল ব্যক্তিগণও এই ধরনের লোকদের পক্ষে সুপারিশ করতেন এবং বিয়ের মাধ্যমে তাদের মিলিয়ে দিতেন। এদের পাগলামি তাঁদের মনকে নাড়া দিতো। একবার এক বেদুইন এক নারীর জন্য বেদনায় কাতরাচ্ছিলো আর মনের মাধুরী মিশিয়ে মেয়েটির জন্য কবিতা পড়ছিলো। তখন তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন চতুর্থ খলিফা আলি (রা.)। তিনি সব শুনে তার সাথে মেয়েটির বিয়ের ব্যবস্থা করে দেন। [ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম, আদ-দা ওয়াদ দাওয়া (রোগ এবং তার প্রতিকার), পৃষ্ঠা: ৫৫৯]
.
প্রাচীন আরবের আরেকটি ঘটনা লোকদের মুখে বেশ প্রসিদ্ধ ছিলো। চাচাতো বোন আফরার প্রতি উরওয়ার ভালোবাসা ছিলো সীমাহীন। আফরার বাবা উরওয়ার বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে অন্য ব্যক্তির সাথে আফরাকে বিয়ে দিয়ে দেন। এই শোকে উরওয়া কাঁদতে কাঁদতে শেষ পর্যন্ত মারা গেছে! উমর (রা.) একবার বলেছিলেন, ‘আমি আফরা ও উরওয়াকে পেলে তাদের দুজনকে (বিয়ের মাধ্যমে) মিলিয়ে দিতাম!’ [ইমাম ইবনুল জাওযি, যাম্মুল হাওয়া, পৃষ্ঠা: ৪২০]
.
শেষ কথা: এসব ঘটনা থেকে কেউ হারাম প্রেমের সমর্থন খুঁজবেন না। পর-নারীর সাথে নির্জনে দেখা-সাক্ষাৎ করা, কথা বলা, স্পর্শ করা, চুমু খাওয়া সবই হারাম কাজ। এমনকি অন্তরে তার ব্যাপারে কামনা-বাসনা রাখাও জায়েয নেই। তবে, সকল প্রচেষ্টার পরও যদি মন থেকে কোনোভাবে সরানো না যায়, তাহলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন বলে আশা করা যায়। ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহ.)-সহ আলিমগণের মত এটাই। আর, কোনো মুসলিম মেয়ে বা ছেলেকে জীবনসঙ্গী হিসেবে জাস্ট মনে মনে পছন্দ করা বা তার ভালোর জন্য দু‘আ করা কিংবা তাকে পাওয়ার জন্য দু‘আ করা জায়েয, যদি চিন্তা ও কল্পনায় কামনা-বাসনা না থাকে। তবে, নির্দিষ্ট কাউকে না চেয়ে আল্লাহর কাছে নিজের যেখানে কল্যাণ আছে, তাকে চাওয়াই উচিত এবং উত্তম। আগের পর্বে এ নিয়ে আলোচনা করেছি।
.
#বন্ধন (চতুর্দশ পর্ব)
আগের ১৩ টি পর্বের লিংক-

https://justpaste.it/5gz3q

.
---------------------------

 

>> জনৈক মেয়ে এক লোককে ভালবাসে এবং সে লোক তার সাথে বেড়াতে যাওয়ার অনুরোধ করছে; এখন সে কী করবে?

প্রশ্ন:

আমি আপনার সাহায্য চাচ্ছি। আমি এক যুবককে ভালবাসি। সে যুবক অনুরোধ করছে আমি যেন তার সাথে বেড়াতে বের হই। কিন্তু, আমি জানি না—আমি তাকে কী বলব? আমি পেরেশানিতে আছি। আমি সাহায্য চাই।

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

তুমি এ কাজটি করার আগে আমাদের সহযোগিতা চাওয়ায় আমরা খুব খুশি হয়েছি। আমরা আমাদের মেয়ে ও বোনের ব্যাপার হলে যা পছন্দ করতাম তোমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই-ই পছন্দ করব। তুমি সবচেয়ে মূল্যবান যা কিছুর মালিক সেটাকে সংরক্ষণ কর। ভালবাসার নামে বা মানসিক প্রশান্তির নামে শয়তান তোমাকে ধোকা দেওয়া থেকে সতর্ক হও।

প্রিয় বোন, আমরা খুবই খুশি হব— যদি তুমি নিয়মিত নামায আদায় কর, হিজাব পরিধান কর, সচ্চরিত্র ও লজ্জাশীলতায় ভূষিত হও, ইসলাম-ধর্ম মেনে চল; যে ধর্ম এসেছে মানুষের মর্যাদা সমুন্নত করতে ও মানবাত্মাকে পুত-পবিত্র করতে।

তুমি যদি এমন না হও সেটা আমাদের কাছে খুবই খারাপ লাগবে। আমাদের কাছে খারাপ লাগবে— যদি শয়তান তোমাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়; যদি তুমি হও জবাই-এর পশুর মত, যাকে মৃত্যুর দিকে টেনে নেওয়া হচ্ছে; অথচ সে বুঝতে পারছে না!!

এটা কোন ঠাট্টা-মশকরা নয়; সিরিয়াস কথা। তুমি ছাড়াও আরও অনেক মেয়ে এ পথে চলেছে; শেষ পরিণতি ছিল— বেদনাদায়ক এবং তারা অনুতপ্ত হয়েছে। কিন্তু, সময় পার হয়ে যাওয়ার পর। যখন অনুতপ্ত হয়ে কোন লাভ নেই। তুমি এ ওয়েবসাইটে এ ধরণের অনেক ঘটনা পাবে। সে সব ঘটনা তোমার জন্য শিক্ষণীয়। সাবধান! তুমি যেন অন্যদের শিক্ষার পাত্র না হন।

দুই:

কোন নারীর জন্য বেগানা কোন পুরুষের সাথে সম্পর্ক করা জায়েয নয়। এমনকি তাদের দু’জনের বিয়ের নিয়ত থাকলে তবুও। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বেগানা নারীর সাথে নিভৃতে অবস্থান করা, মুসাফাহা করা ও দৃষ্টিপাত করা হারাম করেছেন; কেবলমাত্র বিয়ের পাত্রী দেখা ও সাক্ষ্যদানের মত প্রয়োজন ছাড়া। সাজগোজ করে বেপর্দা হয়ে বের হওয়া নারীর উপর হারাম করেছেন। গাইরে মাহরাম পুরুষদের সামনে সতর খোলা, তাদের মাঝে সুগন্ধি মেখে বের হওয়া ও তাদের সাথে কোমল সুরে কথা বলা হারাম করেছেন। এসব কর্ম হারাম হওয়া কুরআন-সুন্নাহ্‌র দলিলের ভিত্তিতে সুবিদিত। এ বিধানগুলোর আওতা থেকে কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি। এমনকি কেউ বিয়ের সংকল্প করলে তাকেও নয়; বিয়ের প্রস্তাবকারী পাত্রকেও নয়। কেননা বিয়ের আকদ (চুক্তি) হওয়ার আগ পর্যন্ত বিয়ের প্রস্তাবকারী ছেলেও বেগানা পুরুষ।

১। কোন বেগানা নারীর সাথে কোন পুরুষের নিভৃতে অবস্থান করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে; এমনকি সে ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাবকারী হলেও; হাদিসে এসেছে যা ইমাম বুখারী (৩০০৬) ও ইমাম মুসলিম (১৩৪১) ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে, তিনি বলেন: “অবশ্যই কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নিভৃতে একত্রিত হবে না”।

তিনি আরও বলেন: “সাবধান! কোন পুরুষ কোন নারীর সাথে নিভৃতে একত্রিত হবে না; যদি হয় সেখানে শয়তানই থাকে তৃতীয় ব্যক্তি।”[সুনানে তিরমিযি (২১৬৫); শাইখ আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

২। কোন পুরুষ কোন নারীর দিকে তাকানো হারাম হওয়ার ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তাআলার বাণীতে উদ্ধৃত হয়েছে যে: “মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে, লজ্জাস্থানকে হেফাযতে রাখে। এটাই তাদের পবিত্র থাকার জন্য অধিকতর সহায়ক। তারা যা কিছু করে আল্লাহ্‌ সে সম্পর্কে অবহিত।”[সূরা নূর, আয়াত: ৩০] 

জারির বিন আব্দুল্লাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হঠাৎ নজর পড়ে যাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি আমাকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেন।[সহিহ মুসলিম (২১৫৯)]

হঠাৎ দৃষ্টি হচ্ছে— কোন নারীর ওপর অনিচ্ছাকৃতভাবে চোখ পড়ে যাওয়া। যেমন কেউ রাস্তার দিকে তাকাতে গিয়ে চোখে পড়ল।

পক্ষান্তরে, নারীর জন্য যৌন কামনা ব্যতীত পুরুষের দিকে তাকানো জায়েয আছে; যদি এতে ফিতনা সৃষ্টির আশংকা না থাকে। যৌন কামনা নিয়ে কিংবা ফিতনাগ্রস্ত হওয়ার ভয় থাকলে জায়েয নেই।

৩। বেগানা নারীর সাথে মুসাফাহা করা হারাম হওয়া সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে যে, “তোমাদের কারো মাথায় লোহার শলাকা দিয়ে আঘাত করা হালাল নয় এমন নারীকে স্পর্শ করার চেয়ে উত্তম।”[তাবারানী কর্তৃক বর্ণিত মা’কিল বিন ইয়াসার (রাঃ) এর হাদিস; আলবানী “সহিহুল জা’মে গ্রন্থে (৫০৪৫) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] এক্ষেত্রে নর-নারী উভয়ের গুনাহ সমান।  

৪। নারীদের বেপর্দা হওয়া ও বেগানা পুরুষদের সামনে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “দুই শ্রেণীর লোক জাহান্নামী; যাদেরকে আমি আমার যুগে দেখে যাইনি। এক শ্রেণীর লোক, তারা এমন এক সম্প্রদায়, তাদের সাথে থাকবে গরুর লেজের মত এক ধরনের চাবুক যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে। অপর শ্রেণী হল: কাপড় পরিহিতা সত্ত্বেও নগ্ন নারী; তারা পুরুষদেরকে আকৃষ্টকারী ও নিজেরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট। তাদের মাথা হবে বুখত শ্রেণীর উটের কুঁজের মত বাঁকা। তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এমনকি জান্নাতের সুঘ্রাণও তারা পাবে না। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ এত এত দূর থেকেও পাওয়া যাবে।”[মুসলিম (২১২৮)]

বুখত হচ্ছে— লম্বা গলা বিশিষ্ট এক ধরণের উট।

৫। নারীরা এমনভাবে সুগন্ধি মেখে বাহিরে বের হওয়া যাতে করে সে সুগন্ধি বেগানা পুরুষদের নাকে লাগে— এটা হারাম হওয়া সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, “যে নারী সুগন্ধি লাগিয়ে কোন সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে গমন করে যাতে করে তারা তার সুঘ্রাণ পায় সে নারী ব্যভিচারিনী।”[সুনানে নাসাঈ (৫১২৬), সুনানে আবু দাউদ (৪১৭৩), সুনানে তিরমিযি (২৭৮৬); আলবানী ‘সহিহুন নাসাঈ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে হাসান বলেছেন]

৬। কোমলভাবে কথা বলা হারাম হওয়া প্রসঙ্গে উদ্ধৃত হয়েছে আল্লাহ্‌র বাণী: “হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা তো অন্য কোন নারীর মত নও; যদি তোমরা তাকওয়ার উপর অবিচল থাক। অতএব (অন্য লোকের সাথে) কোমলভাবে কথা বলবে না; তাতে অন্তরে ব্যাধিগ্রস্ত কোন (পুরুষ) লোক প্রলুব্ধ হতে পারে। তোমরা স্বাভাবিকভাবে কথা বলবে।”[সূরা আহযাব, আয়াত: ৩২] যদি উম্মুল মুমিনীনদের ব্যাপারে এ বিধান হয় তাহলে অন্যদের জন্য এ বিধান প্রযোজ্য হওয়া আরও অধিক যুক্তিযুক্ত।

তিন:

পুরুষ ও বেগানা নারীর মাঝের যে সম্পর্কটাকে ভালবাসা বলা হয় সেটা উল্লেখিত এ হারাম কাজগুলো এবং এগুলোর চেয়েও জঘন্য হারাম থেকে মুক্ত নয়; যদি এর সবগুলো একত্রিত নাও হয়।

তোমার উপর ওয়াজিব হল— আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করা এবং তাঁর অসন্তুষ্টি ও প্রতিশোধ গ্রহণ থেকে সতর্ক হওয়া। অবিলম্বে এ যুবকের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা। তার সাথে সাক্ষাতের চিন্তাই বাদ দাও। তার সাথে বেড়াতে যাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান কর। বরঞ্চ তুমি চূড়ান্তভাবে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন কর। তার সাথে তোমার অন্তরের সম্পৃক্ত হওয়াটাই অঘটনের সূচনা। এটি শয়তানের ক্রমাগত প্ররোচনা। তুমি তাকে দেখেছ, তার সাথে কথা বলেছ। এভাবে তোমার অন্তরে তার প্রতি ভালবাসা জন্মেছে। কিন্তু, তার সাথে কথা বলা অব্যাহত রাখা বা বেড়াতে যাওয়ার মাধ্যমে এটাকে আর বাড়তে দিও না।

জেনে রাখ, অধিকাংশ অঘটন ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু হয়। এক পর্যায়ে এমন আকার ধারণ করে যা কল্পনায়ও ছিল না। কত মেয়ে নিজের ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত আস্থাবান ছিল এবং আস্থাবান ছিল যে, ছেলেটি তার কিছু করবে না। ফলাফলে সে মেয়ে তার সবকিছু হারিয়ে ফেলে! এরপর হায়েনা ছেলেটি মেয়েটিকে বিয়ে করার যে প্রতিশ্রুতি ও আশা দিয়েছিল সেটা থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নেয়। কারণ মেয়েটি এখন আর তার উপযুক্ত নয়। মেয়েটি যেহেতু একজন বেগানা যুবকের সাথে সম্পৃক্ত হওয়াতে সাড়া দিয়েছে সুতরাং এমন মেয়ের প্রতি আস্থা রাখা সুদূর পরাহত।

আমরা তোমরা কল্যাণ-কামনা ও ভাল চেয়ে এ কথাগুলো বলেছি। আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন তোমাকে যাবতীয় অনিষ্ট থেকে হেফাযত করেন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/84089/

----------------------------

 

>> যে প্রেমের শেষ পরিণতি হচ্ছে বিয়ে; সেটা কি হারাম?

প্রশ্ন:

যে প্রেমের শেষ পরিণতি হচ্ছে বিয়ে; সেটা কি হারাম?

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

একজন পুরুষ ও বেগানা নারীর মাঝে যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যেটাকে মানুষ “প্রেম” নামে অভিহিত করে থাকে; সেটা কতগুলো হারাম কাজ এবং শরিয়ত ও চরিত্র পরিপন্থী বিষয়ের সমষ্টি।

এ ধরণের সম্পর্ক হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোন বিবেকবান ব্যক্তি সন্দেহ করতে পারে না। কারণ এতে রয়েছে— বেগানা নারীর সাথে নির্জনে অবস্থান, বেগানা নারীর দিকে তাকানো, প্রেম ও অনুরাগমূলক কথাবার্তা; যে সব কথা যৌন কামনা ও চাহিদাকে উত্তেজিত করে। এ ধরণের সম্পর্কের ফলে এগুলোর চেয়েও জঘন্য কিছু ঘটতে পারে; যেমনটি বাস্তবে দেখা যায়।

আমরা ইতিপূর্বে 84089 নং প্রশ্নোত্তরে এ ধরণের কিছু হারাম কাজের কথা উল্লেখ করেছি; সে প্রশ্নোত্তরটিও পড়া যেতে পারে।

দুই:

গবেষণায় সাব্যস্ত হয়েছে যে, যে বিয়েগুলো ছেলে-মেয়ের পূর্ব প্রেমের ভিত্তিতে সম্পন্ন হয় সে বিয়েগুলোর অধিকাংশই ব্যর্থ। পক্ষান্তরে, যে বিয়েগুলো এ ধরণের হারাম সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে না বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সে বিয়েগুলো সফল; যেগুলোকে মানুষ “গতানুগতিক বিয়ে” নামে অভিহিত করে থাকে।  

ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী সৌল-জুর-ডন এর মাঠ পর্যায়ের একটি গবেষণার ফলাফল হচ্ছে: “যে বিয়ের পাত্র-পাত্রী বিয়ের আগে প্রেমে পড়েনি এমন বিয়ে তুলনামূলকভাবে বড় সফলতা বাস্তবায়ন করছে।”

অপর এক সমাজবিজ্ঞানী ‘আব্দুল বারী’ কর্তৃক ১৫০০ টি পরিবারের ওপর পরিচালিত গবেষণার ফলাফল হচ্ছে: ৭৫% এর বেশি প্রেমঘটিত বিয়ে তালাকের মাধ্যমে পরিসমাপ্ত হয়েছে। পক্ষান্তরে, গতানুগতিক বিয়ের ক্ষেত্রে, তথা পূর্ব-প্রেমঘটিত নয় এমন বিয়েগুলোর ক্ষেত্রে এর শতাংশ ৫% এর নীচে।

এ ফলাফলের পেছনে প্রধান যে কারণগুলো থাকতে পারে সেগুলো হচ্ছে:

১। আবেগের তাড়নায় দোষ-ত্রুটি দেখা ও যাচাইবাছাই করার ক্ষেত্রে অন্ধ হয়ে থাকা। যেমনটি বলা হয়: وعين الرضا عن كل عيب كليلة (ভক্তির চোখ দোষ দেখার ক্ষেত্রে অন্ধ)। হতে পারে পাত্র-পাত্রী দুইজনের একজনের মাঝে কিংবা উভয় জনের মাঝে এমন কিছু দোষ রয়েছে যেগুলোর কারণে তিনি অপর পক্ষের উপযুক্ত নন। কিন্তু, এ দোষগুলো বিয়ের পরে ফুটে উঠে।

২। প্রেমিক ও প্রেমিকা উভয়ে ধারণা করেন যে, জীবন হচ্ছে— একটি ‘লাভ জার্নি’; যার কোন অন্ত নেই। এ কারণে আমরা দেখি যে, তারা ভালবাসা ও ভবিষ্যৎ-স্বপ্ন ইত্যাদি ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে কথা বলে না। পক্ষান্তরে, জীবন ঘনিষ্ঠ নানাবিধ সমস্যা ও সেগুলোকে মোকাবিলা করার পদ্ধতি তাদের আলোচনায় স্থান পায় না। কিন্তু, তাদের এ ধারণা বিয়ের পর চুরমার হয়ে যায়। যখন তারা জীবনের নানা সমস্যা ও দায়-দায়িত্বের মুখোমুখি হয়।

৩। প্রেমিক-প্রেমিকা সাধারণতঃ সংলাপ ও আলোচনায় অভ্যস্ত নয়। বরং তারা ত্যাগ ও অপর পক্ষকে সন্তুষ্ট করার জন্য স্ব-ইচ্ছা বিসর্জন দেয়ায় অভ্যস্ত। বরং তাদের দু’জনের মাঝে তেমন কোন মতভেদ হয় না। কারণ প্রত্যেক পক্ষ অপর পক্ষকে সন্তুষ্ট করবার জন্য ছাড় দিতে প্রস্তুত! কিন্তু, বিয়ের পরের অবস্থাটি এর সম্পূর্ণ বিপরীত। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের আলোচনা সমস্যার রূপ ধারণ করে। কেননা তাদের দু’জনের প্রত্যেকে কোন প্রকার আলোচনা-পর্যালোচনা ব্যতিরেকে স্বীয় মতের প্রতি অপর পক্ষের সম্মতি পেয়ে অভ্যস্ত।

৪। প্রেমিক-প্রেমিকা একে অপরের কাছে নিজের যে চরিত্র ফুটিয়ে তোলে সেটা তার আসল চরিত্র নয়। প্রেমকালীন সময়ে দুই পক্ষের প্রত্যেক পক্ষ অপর পক্ষকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য কোমলতা, নম্রতা ও আত্মত্যাগের চরিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু, তার পক্ষে এ চরিত্রের ওপর আজীবন অবিচল থাকা সম্ভবপর হয় না। তাই বিয়ের পর তার আসল চরিত্র ফুটে উঠে। আর সেই সাথে সমস্যাগুলো শুরু হয়।

৫। প্রেমকালীন সময়টা অধিকাংশ ক্ষেত্রে রঙিন সব স্বপ্ন ও অতিরঞ্জন ভিত্তিক হয়ে থাকে; যার সাথে বিয়ের পরের বাস্তবতার মিল থাকে না। প্রেমিক তাকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে, শীঘ্রই সে তার জন্য চাঁদের টুকরা হাযির করবে, তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী নারী না করে স্বস্তি পাবে না...ইত্যাদি। বিপরীত দিকে প্রেমিকা বলে— সে যদি তাকে পায় তাহলে তার সাথে একটা রুমেই থাকতে পারবে, ফ্লোরে ঘুমাতে পারবে, তার কোন চাওয়া-পাওয়া নাই, তাকে পেলেই চলবে!! যেমন জনৈক ব্যক্তি প্রেমিক-প্রেমিকাদের উক্তি উদ্ধৃত করতে গিয়ে বলেছেন:  "عش العصفورة يكفينا" ، و "لقمة صغيرة تكفينا" "أطعمني جبنة وزيتونة" (চড়ুই পাখির বাসা ও ছোট্ট এক লোকমা খাবার আমাদের জন্য যথেষ্ট। এক টুকরা চিজ ও একটি যাইতুন পেলেই আমি সন্তুষ্ট।) এসব আবেগ তাড়িত ও অতিরঞ্জিত কথা। সে জন্য উভয় পক্ষ অতিদ্রুত এ কথাগুলো ভুলে যায় কিংবা বিয়ের পর ভুলে যাওয়ার ভান ধরে। বিয়ের পর স্ত্রী স্বামীর কৃপণতা ও তার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ না করার অভিযোগ করে। আর স্বামী স্ত্রীর ব্যাপক চাহিদা ও প্রচুর খরচের অভিযোগ করে।

উল্লেখিত কারণগুলো ও আরও অন্যান্য কারণে বিয়ের পরে উভয় পক্ষ কোন রাখঢাক ছাড়াই বলে যে, সে প্রতারিত হয়েছে, সে খুব তাড়াহুড়া করে ফেলেছে। পুরুষ লোকটা এই ভেবে আফসোস করে যে, তার বাবা তার জন্য যে মেয়েটি ঠিক করেছিল সে ঐ মেয়েটিকে বিয়ে করল না কেন। আর মেয়ে লোকটি এই ভেবে আফসোস করে যে, তার পরিবার তার জন্য যে ছেলেটি ঠিক করেছিল সে ঐ ছেলেটিকে বিয়ে করল না কেন; অথচ পরিবার তো তাকে তার ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার উপর ছেড়ে দিয়েছিল!

ফলাফল হল: যে বিয়েগুলোর পক্ষদ্বয় ভাবত যে, অচিরেই তারা হবে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী দম্পতির উদাহরণ তাদের মাঝে তালাকের শতাংশ এত বেশি সংখ্যায়!!

তিন:

উল্লেখিত কারণগুলো— ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও দৃশ্যমান; যেগুলোর সত্যতার পক্ষে সাক্ষী দেয় বাস্তবতা। কিন্তু আমাদের উচিত হবে না, এ বিয়েগুলো ব্যর্থ হওয়ার প্রধান যে কারণ সেটাকে এড়িয়ে যাওয়া। সে কারণটি হচ্ছে— এ ধরণের বিয়েগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর আল্লাহ্‌র অবাধ্যতার উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলাম এ ধরণের পাপময় সম্পর্ককে স্বীকৃতি দিতে পারে না; এমনকি সেটা যদি বিয়ের উদ্দেশ্যে হয় তবুও। তাই এ ধরণের বিবাহে আবদ্ধ দম্পতিদের ওপর আসমানী শাস্তি আসেই আসে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “যে ব্যক্তি আমার যিকির থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তার জন্য রয়েছে কষ্টের জীবন”।[সূরা ত্বহা, আয়াত: ১২৪] কঠিন ও কষ্টদায়ক জীবন আল্লাহ্‌র অবাধ্যতা ও তাঁর ওহি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিফল।

আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “আর যদি গ্রামবাসীরা ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে অবশ্যই আমি তাদের জন্য আসমান ও জমিনের বরকতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ৯৬] আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে বরকত হচ্ছে ঈমান ও তাকওয়ার প্রতিদান। যদি ঈমান ও তাকওয়া না থাকে কিংবা কম থাকে তাহলে বরকত কমে যায় কিংবা একেবারে নাই হয়ে যায়।

আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “যে পুরুষ বা নারী ঈমানদার অবস্থায় সৎকাজ করবে তাকে আমি উত্তম জীবন দান করব এবং অবশ্যই তাদেরকে তাদের শ্রেষ্ঠ কাজের পুরস্কার দিব।”[সূরা নাহল, আয়াত: ৯৭] অতএব, উত্তম জীবন হচ্ছে— ঈমান ও নেক আমলের প্রতিফল।

আল্লাহ্‌ তাআলা সত্য বলেছেন যে: “অতএব যে লোক আল্লাহ্‌র ভয় ও সন্তুষ্টির উপর স্বীয় ভবনের ভিত্তি স্থাপন করে সে কি ভাল, না যে পড়পড় এক ভাঙ্গনের কিনারায় তার ভবনের ভিত্তি স্থাপন করে আর এই ভবন তাকে নিয়ে জাহান্নামের আগুনে ভেঙ্গে পড়ে সে ভাল? আল্লাহ্‌ জালিমদেরকে হেদায়েত করেন না।”[সূরা তাওবা, আয়াত: ১০৯]  

অতএব, যে ব্যক্তির বিবাহ এমন হারাম ভিত্তির ওপর গড়ে উঠেছে তার উচিত অবিলম্বে তওবা ও ইস্তিগফার করা। নতুনভাবে পুণ্যময় জীবন শুরু করা। যে জীবনের ভিত্তি হবে ঈমান ও নেক আমল।

আরও জানতে দেখুন: 23420 নং প্রশ্নোত্তর; সেখানে বাড়তি কিছু তথ্য আছে।

আল্লাহ্‌ই তাঁর পছন্দনীয় ও সন্তোষমূলক আমলের তাওফিকদাতা।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/84102/

----------------------------------

 

>> ভালোবাসা ও অবৈধ সম্পর্কের মধ্যে পার্থক্য

প্রশ্ন:

আমি ২৪ বছর বয়সী একজন অবিবাহিত মেয়ে। খোলাখুলি কথা হল, আমি একজন পবিত্র চরিত্রের দ্বীনদার মানুষকে কোন প্রকার দেখা-সাক্ষাৎ করা ছাড়া পবিত্র ও নিষ্কলুষভাবে ভালবাসি। যিনি আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং আমাকে অপেক্ষা করতে বলেছেন; যেহেতু তার বর্তমান পরিস্থিতি কঠিন। আমি অস্বীকার করব না যে, তিনি একাধিকবার আমাকে ফোন করেছেন। কিন্তু, আমি তাকে বলেছি তিনি যেন আমাকে ফোন না করেন। কারণ আমি এতে সন্তুষ্ট নই; যদিও আমি তাকে ভালবাসি। কারণ আমার মনে হচ্ছিল যে, এভাবে ভালোবাসাটা ভুল পথে অগ্রসর হতে যাচ্ছে। তিনিও আমার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত হয়েছেন এবং আমার মতামতকে সম্মান জানিয়েছেন। তিনি মাঝে মাঝে ইন্টারনেটে আমাকে কিছু কিছু মেসেজ পাঠান; যাতে করে আমি তার খবরাখবর জানতে পারি। এক বছর ধরে আমার সাথে তার সম্পর্ক। কিন্তু, তিনি খুব কঠিন পরিস্থিতিতে আছেন। এ ব্যক্তিকে আমি পারিবারিকভাবে চিনি। তার পরিবারের সাথে আমার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি তাকে আল্লাহ্‌র জন্য ভালবাসি এবং আমি নিশ্চিত যে, তিনিও একই অনুভূতি লালন করেন। কিন্তু, সমস্যা হল আমার পিতার কাছে বিয়ের প্রস্তাব আসা শুরু হয়েছে। বর্তমানে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে চাচ্ছেন এমন ছেলের সংখ্যা আটজন। কিন্তু, প্রত্যেকবার আমি প্রত্যাখ্যান করে আসছি; কারণ আমি তাকে অপেক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। বর্তমানে আমি এই পেরেশানিতে আছি যে, আমি যা করছি সেটা কি হালাল; নাকি হারাম? উল্লেখ্য, আলহামদু লিল্লাহ্‌; আমি ফরয, সুন্নত ও নফল নামায আদায় করি। তাহাজ্জুদের নামায পড়ি। আমার ভয় হচ্ছে, আমি যা করছি সে কারণে আমার নেক আমলগুলো নষ্ট হয়ে যায় কিনা? নিষ্কলুষ পবিত্র ভালোবাসা কি হারাম? আমার ভালোবাসা কি হালাল; না হারাম?

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

প্রথমেই আমরা আল্লাহ্‌র কাছে আপনার জন্য তাওফিক ও কল্যাণের প্রার্থনা করছি। আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আপনার মত মেয়েদের সংখ্যা বৃদ্ধি করেন যারা পুতঃ পবিত্র চরিত্রের ব্যাপারে সচেতন, যারা তাদের সকল কর্মকাণ্ডে আল্লাহ্‌র সীমারেখা মেনে চলেন। এর মধ্যে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- আবেগতাড়িত সম্পর্কগুলো; যে ক্ষেত্রে অনেক মানুষ শিথিলতা করে। যার ফলে তারা আল্লাহ্‌র সীমারেখাগুলো লঙ্ঘন করে এবং হারাম কাজে লিপ্ত হয়। ফলে আল্লাহ্‌ তাদেরকে এমন সব পরীক্ষার সম্মুখীন করেন যেসব মুসিবতের কথা আমরা পড়ে থাকি, শুনে থাকি; যেগুলোর মধ্যে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য বরং প্রত্যেক বিবেকবান মানুষের জন্য উপদেশ রয়েছে।

পর সমাচার, জেনে রাখুন বিপরীত লিঙ্গের দুইজন মানুষের মাঝে পত্র-যোগাযোগ একটি ফিতনার দরজা। এ পথ দিয়ে শয়তানের পাতানো ফাঁদে পা দেয়া থেকে সাবধানমূলক দলিল-প্রমাণ ইসলামী শরিয়তে ভরপুর। এমনকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এক যুবককে এক যুবতীর দিকে তাকাতে দেখলেন তখন তার গলা ঘুরিয়ে দিলেন যাতে করে যুবতীর উপর থেকে তার দৃষ্টি সরে যায়। এরপরতিনি বললেনঃ “আমি লক্ষ্য করলাম এরা দুইজন যুবক-যুবতী। সুতরাং তাদেরকে আমি শয়তান হতে নিরাপদ মনে করিনি।”।[সুনানে তিরমিযি (৮৮৫), আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।]

তাই এ যুবকের সাথে ফোনে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে আপনি সঠিক কাজটি করেছেন। আমরা আশা করব, তার সাথে আপনি ইমেইল আদান-প্রদানও বিচ্ছিন্ন করবেন। কেননা ইমেইল আদান-প্রদান বর্তমান যামানার লোকদের জন্য অনিষ্টের সবচেয়ে বড় রাস্তা উন্মুক্ত করে দিয়েছে। ইতিপূর্বে এ বিষয়ে একাধিক প্রশ্নোত্তরে সে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। আপনি 34841 নং ও 45668 নং প্রশ্নদ্বয় পড়তে পারেন। তবে এর অর্থ এই নয় যে, স্বামী বা স্ত্রী হিসেবে পাওয়ার জন্য বিশেষ কোন পুরুষ বা নারীর প্রতি কোন ব্যক্তি হৃদয়ে টান অনুভব করা, তার প্রতি ভালোবাসা অনুভব করা, সম্ভব হলে তার সাথে সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেয়া হারাম। কারণ ভালোবাসা আন্তরিক বিষয়। ভালোবাসাটা কিছু জ্ঞাত কারণে কিংবা কিছু অজ্ঞাত কারণে অন্তরে ঢেলে দেয়া হয়। কিন্তু এ ভালোবাসা যদি অবাধ মেলামেশা, হারাম দৃষ্টি কিংবা হারাম কথাবার্তার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটে থাকে তাহলে সেটা হারাম। আর যদি এ ভালোবাসা কোন পূর্ব পরিচিতির কারণে, কিংবা আত্মীয়তার কারণে, কিংবা ঐ লোকের ব্যাপারে ভাল কিছু শুনে নিজের মন থেকে সেটা প্রতিহত করতে না পারার কারণে হয় তাহলে এ ভালোবাসাতে কোন গুনাহ নেই। তবে, শর্ত হচ্ছে- আল্লাহ্‌র সীমারেখা লঙ্ঘিত হতে পারবে না।

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন:

“যদি কোন হারাম কারণ ছাড়া ভালোবাসা তৈরী হয় তাহলে এ ভালোবাসার কারণে ব্যক্তিকে নিন্দা করা হবে না। যেমন- যে ব্যক্তি তার স্ত্রীকে কিংবা তার দাসীকে ভালবাসত, এরপর তাদের মাঝে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে, কিন্তু ভালোবাসাটা মনের মধ্যে রয়ে গেছে– এমন ব্যক্তিকে নিন্দা করা হয় না। অনুরূপভাবে কারো যদি হঠাৎ চোখ পড়ে যায় এবং সে দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়, কিন্তু তার অনিচ্ছা সত্ত্বেও মনের মাঝে ভালোবাসা স্থান করে নেয়। যদিও তার কর্তব্য এটাকে প্রতিহত করা ও দূর করা।”[সমাপ্ত][রওযাতুল মুহিব্বীন (পৃষ্ঠা-১৪)]

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন:

হতে পারে কোন ব্যক্তি কোন এক নারী সম্পর্কে শুনল যে, তিনি সচ্চরিত্রবান ও ইলমদার। শুনে তাকে বিয়ে করার আগ্রহী হল। অনুরূপভাবে সে নারী এ পুরুষ সম্পর্কে শুনল যে, তিনি সচ্চরিত্রবান, ইলমদার ও আমলদার। শুনে তার ব্যাপারে আগ্রহী হল। কিন্তু, মুসিবত হল ভালোবাসায় আবদ্ধ দুইজনের মাঝে শরিয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ যোগাযোগ। এ যোগাযোগের পরিণতি হচ্ছে– বিপদজনক। তাই বিয়ের নাম করে নারীর সাথে পুরুষের যোগাযোগ কিংবা পুরুষের সাথে নারীর যোগাযোগ জায়েয নয়। বরং সে পুরুষ মেয়ের অভিভাবককে জানাতে পারে যে, সে মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। কিংবা মেয়েটি তার অভিভাবককে অবহিত করতে পারে যে, সে ছেলেটিকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। যেমনটি উমর (রাঃ) তাঁর মেয়ে হাফসাকে আবু বকর (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) এর কাছে পেশ করেছিলেন। পক্ষান্তরে, মেয়ে নিজে পুরুষের সাথে যোগাযোগ করা– এটাই তো ফিতনা।[সমাপ্ত][লিকাআতুল বাব আল-মাফতুহ (২৬/প্রশ্ন নং-১৩)]

আপনার প্রতি উপদেশ হচ্ছে– আপনি জরুরীভিত্তিতে এ যুবকের সাথে পত্র যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করবেন এবং তাকে জানিয়ে দিবেন যে, প্রকৃতই যদি সে আপনাকে বিয়ে করতে চায় তাহলে সে যেন আপনার অভিভাবকের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তার বৈষয়িক অবস্থা কিংবা অন্য কোন বিষয়কে প্রতিবন্ধক হিসেবে গ্রহণ না করে। ইনশাআল্লাহ্‌, বিষয়টি সহজ। যে ব্যক্তি অল্পতে সন্তুষ্ট আল্লাহ্‌ নিজ অনুগ্রহে তাকে সাবলম্বী করে দিবেন। কমপক্ষে সে যেন আপনার সাথে ‘বিয়ের আকদ’ করার জন্য অগ্রসর হয়। যদি বাসর করতে বিলম্বও হয় তাতে অসুবিধা নেই। পক্ষান্তরে, বিয়ের প্রতিশ্রুতির উপর বিষয়টিকে ঝুলিয়ে রাখা এবং এর ভিত্তিতে আপনার দুইজনের মাঝে পত্র যোগাযোগ চলতে থাকা শরয়ি দৃষ্টিতে, বাস্তবতার নিরিখে এবং শত শত অভিজ্ঞতার আলোকে এটি ভুল রাস্তা এবং পাপ ও অনৈতিক পন্থা। আপনি নিশ্চিতভাবে জেনে রাখুন, আল্লাহ্‌র আনুগত্য ও শরিয়তের গণ্ডির মধ্যে থাকা ছাড়া অন্য কিছুতে আপনি সুখ পাবেন না। হারাম পন্থার বদলে শরিয়ত কর্তৃক বৈধকৃত পন্থা পর্যাপ্ত ও যথেষ্ট। কিন্তু, আমরা নিজেরা নিজেদের জন্য সংকীর্ণ করে ফেলি এরপর শয়তান আমাদের জন্য সংকীর্ণ করে দেয়।

বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে বিলম্ব করা আপনার জন্য চরম ক্ষতিকর। হতে পারে আপনার বয়স বেড়ে যাবে, কিন্তু সে ছেলের অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে না। ফলে আপনি সে ছেলেকেও বিয়ে করতে পারবেন না, অন্য ছেলেদেরকেও বিয়ে করতে পারবেন না। অতএব, বিয়েতে দেরী করা থেকে সাবধান হোন। এতে ক্ষতি ছাড়া কিছু নেই। জেনে রাখুন, আপনাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে যারা এগিয়ে আসতে চায় হতে পারে তাদের মধ্যে এমন কেউও থাকতে পারে যারা দ্বীনদারি ও পরহেযগারির দিক দিয়ে এ যুবকের চেয়েও ভাল। হতে পারে এ যুবকের মাঝে ও আপনার মাঝে যে ভালোবাসা এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা আপনাদের দুইজনের মাঝে তৈরী হবে।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/82010/

-------------------------

 

>> অবৈধ সম্পর্কের ফলে দুঃশ্চিন্তা ও উৎকণ্ঠা

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: বর্তমানে আমি মানসিকভাবে খুব ভেঙ্গে পড়েছি। মৃত্যু ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করতে পারছি না। আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে অথবা মৃত্যু ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে ভাবতে পারছি না। তবে, তা সত্ত্বেও আমি এই মুহূর্তে মরতে চাই না। আল্লাহর কাছে আশা করছি, আমি যে পাপ করেছি তিনি তা ক্ষমা করে দেবেন।
আমার সমস্যাটা হল, বিগত কয়েক মাস ধরে আমি এক নারীর সাথে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি। তার সাথে কোন হারাম সম্পর্ক করার আমার কোনোরূপ ইচ্ছা ছিল না। তবে যে কারণে আমি তার কাছাকাছি এসেছি সেটা হল আমি তাকে বুঝাতে চেয়েছি যাতে সে আত্মহত্যার ইচ্ছা থেকে সরে আসে। সে আত্মহত্যা করবে বলে মনস্থির করেছিল। সে উচ্চমাত্রার ট্যাবলেট গ্রহণ করত। আমি তাকে আত্মহত্যার পাপ থেকে বাঁচানোর জন্য নানা উপদেশ ও চেষ্টা করতাম। আমার ইচ্ছা ছিল তাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো। তবে যা ঘটল তা হলো- ক্রমান্বয়ে আমাদের মাঝে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলো। তবে আমরা কখনো যৌনকর্মে লিপ্ত হই নি। এ ধরনের কাজে লিপ্ত হওয়ার কোনো ইচ্ছাও আমার ছিল না। মহিলাটি বিবাহিত। সমস্যা হলো- সে দাবি করছে, আমি একবার তার সাথে শারীরিকভাবে মিলিত হয়েছি। আমি তার কথা বিশ্বাস করি না। কেননা আমি কখনো আমার কাপড় খুলিনি। তবে সে ছিল অর্ধনগ্ন। আমার ভয় হচ্ছে, আমি গুনাহ করে ফেলেছি; যদিও আমি তার সাথে শারীরিকভাবে মিলিত হই নি। তবে যদি সত্যি তার দাবি অনুযায়ী এরূপ কর্ম করে থাকি, তবে তো আমার রক্ষা নেই। আমি তাকে বিশ্বাস করি না; কারণ আমি বুঝতে পেরেছি, সে আমার ভালো চায় না। আর তার আত্মহত্যার অভিনয়টি ছিল আমার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য নিছক একটি ছলনা।
বর্তমানে আমি খুবই উৎকণ্ঠিত। আমি ঘুমাতে পারি না, কোনো কিছু করতে পারি না। যা হয়েছে তার জন্য আমি লজ্জিত। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি তো শুধু তাকে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম; আর কিছু চাইনি। তবে এখন আমার ভয় হচ্ছে- আমি নিজেকে নিজে ধ্বংস করার কারণ হয়েছি।

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

আপনাকে ঐ নারীর সাথে বন্ধুত্ব করা থেকে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। আপনি যে গুনাহর মধ্যে লিপ্ত হয়েছেন এর কারণ হচ্ছে- নারীদের সাথে সম্পর্ক করা ও তাদের সাথে একাকী অবস্থান করার ব্যাপারে আপনি শিথিলতা করেছেন। এ ধরনের পাপ আল্লাহর আযাব ও শাস্তিকে অবধারিত করে দেয়। আরও জানতে 1114  9465 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।

দুই:

সে নারীর সাথে এবং অন্য কোন নারীর সাথে সম্পর্ক থাকলে স্থায়ীভাবে সে সম্পর্ক কর্তন করতে হবে। কেননা এ ধরনের অধিকাংশ সম্পর্কের শেষ পরিণতি হলো যিনা-ব্যভিচার অথবা অবৈধ ভোগ-উপভোগ। নাউজুবিল্লাহ। আপনার কথামতো যদিও শুরুতে সম্পর্কটা ছিল নিষ্কলুষ। তবে শয়তান মানুষের মাঝে রক্তের মতোই বিচরণ করে। আর জেনে রাখুন, বেগানা নারীর সাথে সম্পর্ককে কখনো নিষ্পাপ বলা যায় না।

এখন আপনার উচিত হলো- অনতিবিলম্বে আল্লাহর নিকট তওবা করা; উত্তম তওবা। তওবা করার পদ্ধতি হল- যা ঘটে গেছে সে ব্যাপারে লজ্জিত হওয়া। এই সম্পর্ক পরিপূর্ণভাবে ছিন্ন করা। অন্যকোনো হারাম সম্পর্ক কায়েম না করার ব্যাপারে অকপট প্রত্যয় গ্রহণ করা। এই খারাপ মহিলাটি আপনাকে ধাঁধায় ফেলে কনভিন্স করতে চাচ্ছে আপনি তার সাথে খারাপ কাজ করেছেন; যাতে করে ভবিষ্যতে তার সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার জন্য সে এটাকে ছুতা হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। যদি এ মহিলার দাবি অনুযায়ী তার সাথে খারাপ কাজ করেও থাকেন তাহলেও যেন শয়তান এটাকে সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে এবং আল্লাহর রহমত থেকে আপনাকে নিরাশ না করে দেয়। অন্যথায় শয়তান আপনাকে কুপথে টেনে নিয়ে যাবে এবং খারাপ কাজে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টিকে তুচ্ছ জ্ঞান করাবে। বারবার এ-কাজে লিপ্ত করাবে এবং একপর্যায়ে সে তওবা করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে বলে প্রবোধ দিবে। শয়তান এ ধরনের অনুভূতি আপনার মধ্যে বদ্ধপরিকর করতে চায়। তবে আল্লাহর রহমত সুপরিসর। তাই আপনি দ্রুত তওবা করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা আয-যুমার:৫৩] যে ব্যক্তি সত্য ও খালেস তওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে জীবনকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে ব্যক্তি এসব করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে। তবে যে ব্যক্তি তাওবা করে নেয়, ঈমান গ্রহণ করে এবং সৎকর্ম করে সে ছাড়া। আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা আল-ফুরকান: ৮৬-৭০]

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি একজন বেগানা নারীকে চুম্বন করে ফেলেছিল। এরপর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে ঘটনাটি তাঁর কাছে বর্ণনা করল। সে প্রেক্ষিতে কুরআনের এ আয়াতগুলো নাযিল হল: “আর তুমি সালাত কায়েম কর দিবসের দু’প্রান্তে এবং রাতের প্রথম অংশে, নিশ্চয় ভালোকাজ মন্দকাজকে মিটিয়ে দেয়। এটি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ।”[সূরা হুদ:১১৪] লোকটি বলন: ইয়া রাসূলুল্লাহ, এটা কি শুধু আমার জন্য? তিনি বললেন: আমার উম্মতের মধ্যে যে কেউ এ অনুযায়ী আমল করবে তাদের সবার জন্য। (অন্য এক বর্ণনায়) তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি বেগানা নারীর সাথে ফাহেশা ছাড়া অর্থাৎ যৌনাঙ্গে যিনা করা ছাড়া আর সব কিছু করল।”[সহিহ মুসলিম, আত-তাওবা (৪৯৬৪)]

আপনি বেশি বেশি নেক আমল করুন, নামাজ পড়ুন, ইস্তেগফার করুন। ভালো ও দ্বীনদার বন্ধুবান্ধবের সাথে উঠাবসা করুন; যাতে করে এ অবৈধ সম্পর্কের বিকল্প হতে পারে। আর জেনে রাখুন, পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত তওবার দরজা উন্মুক্ত এবং মৃত্যুর গড়গড়া শুরুর আগ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা বান্দার তওবা কবুল করেন।

অবশেষে বলতে চাই, নিজেকে হেফাজতে রাখার জন্য আপনি অনতিবলম্বে শরিয়তসিদ্ধ পথ গ্রহণ করুন। সেটা হচ্ছে- বিবাহ। বিবাহের মাধ্যমে আপনি এ জাতীয় হারামে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবেন।

আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাকে তিনি যা পছন্দ করেন ও ভালোবাসেন তার উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/10532/

-----------------

 

>> যে ব্যক্তি কোন গায়রে মোহরেম নারীকে চুম্বন করেছে সে কি ব্যভিচারী হিসেবে গণ্য হবে

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: এক নারী আমাকে চুম্বন করেছে। তাতে সাড়া দিয়ে আমিও তাকে চুম্বন করেছি এবং আমরা একে অপরকে স্পর্শ ও চুম্বন করতে থাকলাম। অনতিবিলম্বে সে আমাকে চূড়ান্ত যৌন কর্মের আবেদন জানাল। কিন্তু আমি আল্লাহর কাছে ব্যভিচারের শাস্তির ভয়ে তা হতে বিরত থেকেছি। আমি যা করেছি সে কর্মের কারণে আমি কি যিনাকারী (ব্যভিচারী) গণ্য হব? আমি শুধু আঙ্গুল প্রবেশ করিয়েছিলাম।

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

এই নারীকে চুম্বন ও স্পর্শ করার মাধ্যমে আপনি নিকৃষ্টতম গুনাহর কাজে লিপ্ত হয়েছেন। আপনার অনুতপ্ত হয়ে এ গুনাহ থেকে তওবা করা এবং এর থেকে ফিরে আসার অটল সিদ্ধান্ত নেয়া অনিবার্য। এছাড়া এই ধরনের ফিতনাতে লিপ্ত হওয়ার যাবতীয় উপায় উপকরণ হতে দূরে থাকাও আপনার কর্তব্য। যেমন, বেগানা নারীর সাথে মেলামেশা, নির্জনবাস, হারাম দৃষ্টি ইত্যাদি। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আপনাকে ব্যভিচারের কবিরা গুনাহ হতে বাঁচিয়েছেন; যে গুনাহকারীর জন্য আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও আখিরাতে কঠিন শাস্তি ঘোষণা করেছেন। যদি এই গুনাহকারী বিবাহিত হয় তাহলে তাকে পাথর নিক্ষেপে হত্যা করা হবে। আর যদি অবিবাহিত হয় তাহলে তাকে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে জানিয়েছেন, যিনাকারীদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হয় এবং তিনি আমাদেরকে আরো জানিয়েছেন সে শাস্তি কতই না মর্মন্তুদ। দেখুন প্রশ্নোত্তর নং (8829)।

আল্লাহর সীমারেখাগুলো লঙ্ঘনে এ মহিলার কত বড় স্পর্ধা!! নিজেই হারামের প্রতি আহ্বান জানায়, অশ্লীলতায় লিপ্ত হয় এবং কোন ভয়ভীতি ছাড়া পাপকাজে মেতে উঠে। অপরদিকে আপনার উপর আল্লাহ তাআলার কত বড় অনুগ্রহ এই চরম মুহূর্তে এসে আপনি নিজেকে সংবরণ করতে পেরেছেন এবং ঈমানের শেষ জ্যোতিটুকু আপনার অন্তরে জ্বলে উঠেছে এবং আপনি এই মহা অন্যায় থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পেরেছেন।

দুই:

যে ব্যভিচারের শাস্তির কথা আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি সে ব্যভিচার হচ্ছে একটি যৌনাঙ্গ অপর একটি যৌনাঙ্গের ভিতরে প্রবেশ করানোর মাধ্যমে সংঘটিত ব্যভিচার। এই কর্মের পূর্বে যা কিছু ঘটে থাকে যেমন, স্পর্শকরণ, চুম্বনকরণ, যৌনাঙ্গে অঙ্গুলি প্রবেশ করানো ইত্যাদি অতি গর্হিত ও মারাত্মক গুনাহ। কিন্তু এগুলোর জন্য ব্যভিচারের শাস্তি দেয়া হবে না; বরং শিক্ষামূলক শাস্তি দেয়া হবে। তবে ইসলামি শরিয়তে এ ধরনের গুনাহগুলোকে ব্যভিচার হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যেমনটি এসেছে সহিহ বুখারি (৬২৪৩) ও সহিহ মুসলিম (২৬৫৭) এর হাদিসে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আল্লাহ বনি আদমের উপর যতটুকু যিনা লিখে রেখেছেন সে তা করবেই; এর থেকে কোন নিস্তার নেই। চোখের যিনা হচ্ছে- দেখা; জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, অন্তর কামনা করে ও উত্তেজিত হয় এবং যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা বাস্তবায়ন করে না।” সহিহ মুসলিমে আরো এসেছে- “দুই চক্ষুর যিনা হচ্ছে- দেখা, দুই কানের যিনা হচ্ছে- শুনা, জিহ্বার যিনা হচ্ছে- কথা, হাতের যিনা হচ্ছে- ধরা, পায়ের যিনা হচ্ছে- হাঁটা, অন্তর কামনা-বাসনা করে; আর যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।”

ইবনে বাত্তাল (রহঃ) বলেন: “দৃষ্টি ও কথাকে যিনা বলা হয়েছে যেহেতু এগুলো প্রকৃত যিনার আহ্বায়ক। এজন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যৌনাঙ্গ সেটাকে বাস্তবায়ন করে অথবা করে না।” ফাতহুল বারি হতে সংকলিত। সুতরাং আপনি অনতিবিলম্বে তওবা করুন। এই মহিলার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করুন। এই মহিলা আপনাকে ঈমান হারা করতে পারে, আপনার পুতঃপবিত্র চরিত্রে কালিমা লেপন করতে পারে এবং আপনাকে ফাসেক ও পাপাচারীদের কাতারে নিয়ে শামিল করতে পারে। আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। শয়তানের সকল ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে আপনি সাবধান হোন। বেগানা নারীর দিকে চোখ তুলে তাকানোর মাধ্যমে গুনাহর সূচনা হয় এবং ব্যভিচারের মাধ্যমে শেষ হয়। আল্লাহ আমাদেরকে ও আপনাকে পবিত্র রাখুন। আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/81995/

-------------------------

 

>> ব্যভিচার হতে তওবা

প্রশ্ন:

 আমি জানি না আমার ঠিক কি করা উচিত? আমি বড় একটা গুনাহ করে ফেলেছি। আমি জানি, আমাদের সুন্দর ধর্মে “ধর্মগুরুর কাছে স্বীকারোক্তি” এ রকম কিছু নেই। কিন্তু আমি যেনা করে ফেলেছি। আমি আল্লাহর কাছে তওবা করতে চাই এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে চাই। আমি সূরা নূরের মধ্যে পেয়েছি যে, আমার মত ব্যক্তি কোন পুতপবিত্রা নারীকে বিয়ে করতে পারবে না। এখন আমার কী করা উচিত? আমি আশা করব আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন যেন আল্লাহ তাআলা আমার জন্য জাহান্নামের শাস্তি লাঘব করেন।

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

আপনি আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হবেন না। আল্লাহ তাআলার এই বাণীটি অধ্যয়ন করুন “বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”।[সূরা যুমার, আয়াত: ৫৩]

দুই:

আপনি নিষ্কলুষভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করুন। হারামের সকল পথ বন্ধ করে দিন। এই পাপে পুনরায় পতিত হওয়ার সকল উপায় উপকরণ কর্তন করুন। এছাড়া বেশি বেশি নেক কাজ করুন। কারণ নেককাজ বদকাজকে দূরীভূত করে দেয়।

তিন:

আপনি যদি আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠ তওবা করে নেন তখন “ব্যভিচারী” বিশেষণ হতে আপনি রেহাই পাবেন। সেক্ষেত্রে পুতপবিত্র নারীকে বিয়ে করা আপনার জন্য জায়েয হবে।

চার:

আল্লাহর কাছে দোয়া করার ক্ষেত্রে মুমিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী হওয়া উচিত। ‘আমার জন্য জাহান্নামের শাস্তি লাঘব করুন’ মুমিন এই দোয়া না করে বরং দোয়া করবে ‘হে আল্লাহ, আমাকে জাহান্নামের শাস্তি হতে নাজাত দিন। হে আল্লাহ, আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন’। সাথে সাথে মুমিন নেক আমল করে যাবে এবং বদ আমল হতে তওবা করে নিবে।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/624/

------------------------

 

>> যে ব্যক্তি ধৈর্য হারিয়ে যেনা করতে চায়

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: আমি যেনা করতে চাই! আমি আর নিজেকে সামলাতে পারছি না। দশ বছর যাবৎ ধৈর্য ধরে আছি। আলহামদু লিল্লাহ আমি নামায পড়ি, রোজা রাখি। কিন্তু যখনই আমি কোন মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেই বিয়ে ভেঙ্গে যায়। আমি যেনা করতে চাই! আমি যেনা করতে চাই! আমি দোয়া করি; কিন্তু দুআ কবুল হয় না। আমি কি করব? আমি আর পারছি না।

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। এক:

আপনি আমাদের সাথে যেমন স্পষ্টবাদী হয়েছেন আমরাও আপনার সাথে স্পষ্টবাদী হব। আপনি কি আমাদের কাছে এজন্য মেইল করেছেন যে, আমরা আপনাকে যেনা করার অনুমতি দিব?! আল্লাহর অবাধ্য হওয়ার জন্য কাউকে অনুমতি দেয়ার অধিকার তো আমাদের নেই। নাকি আপনি চাচ্ছেন যে, আমরা আপনাকে ব্যভিচার বৈধ বলে ফতোয়া দিব?! কোন মুসলমানের পক্ষে এ ফতোয়া দেয়া সম্ভব নয়। যেনা কবিরা গুনাহ। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতেই যেনার শাস্তি বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপে হত্যা নির্ধারণ করেছেন এবং এ গুনাহর সাথে সংশ্লিষ্ট বেশ কিছু বিধান আরোপ করেছেন। যেমন- যেনাকারী তওবা না করা পর্যন্ত তাকে বিয়ে করতে দেয়া হবে না। এ গুনার কারণে আখেরাতে যন্ত্রণাদায়ক কঠিন শাস্তির হুমকি দিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে শাস্তির কিছু বর্ণনা উল্লেখ করেছেন: আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের একটি চুল্লিতে ব্যভিচারী নর-নারীকে উলঙ্গ অবস্থায় একত্রিত করবেন। সেখানে জাহান্নামের আগুন তাদেরকে পোড়ানো হবে। তাদের বিকট শব্দ শুনা যাবে। অতএব, যে ব্যক্তি যেনা করতে চায় আমাদের কাছে তার জন্য অনুমতি নেই। আমাদের কাছে যেনা বৈধ মর্মে কোন ফতোয়া নেই।

দুই:

আগেই বলেছি আমরা আপনার সাথে স্পষ্টবাদী হব, আপনি যেমন আমাদের সাথে স্পষ্টবাদী হয়েছেন। ধরুন, আপনি যে কঠিন ও কষ্টকর পরিস্থিতির মধ্যে আছেন –আল্লাহ না করুন- আপনার বোন বা মা যদি সে অবস্থার মধ্যে পড়ে এবং আপনি যা করতে চাচ্ছেন তারাও তা করতে চায় তখন তাদের এই চাওয়ার ব্যাপারে আপনার মতামত কি হবে?! আমরা আপনার উত্তর জানি; সুতরাং উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমরা শুধু এ ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি- আপনি যা করতে চাচ্ছেন সেটা কত বড় জঘন্য।

আচ্ছা এ প্রসঙ্গ বাদ দিন; অন্য প্রসঙ্গে আসুন। এ বিশ্বে এমন কত যুবক আছে যারা যেনা করতে চাচ্ছে। হতে পারে তাদের অনেকে – আপনার মত- সম্ভ্রান্ত। হতে পারে সেও এমন কঠিন ও কষ্টকর অবস্থা সইতে পারছে না। সেও যেনা করতে চাচ্ছে এবং সে যে মহিলার সাথে যেনা করতে চাচ্ছে – আল্লাহ না করুন- সে আপনার বোন অথবা আপনার মা। আপনি তখন কি বলবেন?! আমরা আপনার উত্তর জানি; সুতরাং উত্তর দেয়ার প্রয়োজন নেই। জেনে রাখুন, আমরা যদি আপনাকে যেনা করার অনুমতি দিই এর অর্থ হলো আমরা আপনার বোন ও মায়ের জন্যেও যেনা করার অনুমতি দিলাম। আমরা যদি আপনাকে যেনা করার অনুমতি দিই এর অর্থ হলো আমরা মানুষকে আপনার বোন ও মায়ের সাথে যেনা করার অনুমতি দিলাম। ইসলামের মত পবিত্র শরিয়তে যা হওয়া অসম্ভব। আপনার বোন ও মায়ের ইজ্জত ইসলামী শরিয়তের মাধ্যমে সুরক্ষিত। আল্লাহ প্রদত্ত বিধিবিধানের মাধ্যমে সংরক্ষিত। যে ব্যক্তি এ ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করবে সে দুনিয়া ও আখেরাতে এর সাজা পাবে। আপনি দেখলেন তো ইসলামী শরিয়া কিভাবে আপনার পরিবারের ইজ্জত-আব্রুর হেফাযত নিশ্চিত করেছে। সুতরাং আপনি কিভাবে প্রত্যাশা করেন যে, আমরা আপনাকে অন্য নারীদের ইজ্জত কলঙ্কিত করার অনুমতি দিব এবং বলব, ঠিক আছে যেনা করুন; অসুবিধা নেই!! আমরা আপনার সামনে যে উদাহরণটি তুলে ধরলাম সেটি সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, সর্বোত্তম ব্যক্তি, যিনি আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি জানেন, নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উল্লেখ করেছেন। যখন এক যুবক এসে তাঁর কাছে যেনা করার অনুমতি চাইল তখন তিনি তাকে বললেন, তুমি কি তোমরা মায়ের জন্য এটা পছন্দ করবে? তুমি সেটা তোমার বোনের জন্য পছন্দ করবে? আমরা আশা করব, আপনি সচেতনভাবে অনুধাবন করবেন যে, আমরা যে উদাহরণটি পেশ করেছি এর মাধ্যমে শুধু আপনি যা করতে চাচ্ছেন সে বিষয়টির কদর্যতা তুলে ধরা ছাড়া আর কোন উদ্দেশ্য ছিল না। কারণ ইচ্ছা হলেই মানুষের ইজ্জত হরণ করা বৈধ নয়। বরং তা পবিত্র শরিয়তের মাধ্যমে সংরক্ষিত। পূর্বোক্ত হাদিসটির পরিপূর্ণ ভাষ্য ও এ হাদিস বিষয়ক আরো কিছু সুন্দর কথা 52467 নং প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে। তিন:

প্রিয় ভাই, আপনি কি ভাবছেন যেনা করার মাধ্যমে যৌন উপভোগ করে আপনি প্রশান্তি পাবেন – আল্লাহ আপনাকে এ গুনাহ দূরে রাখুন ও পবিত্র রাখুন?! যদি আপনি এমনটি ভেবে থাকেন তাহলে মহা ভুলের মধ্যে আছেন। বরং যেনাতে লিপ্ত হওয়া মানে দেহ, মন ও দ্বীনদারির উপর অতি তিক্ত কিছু পরিণামের দুয়ার খোলা। যেনা হচ্ছে- দ্বীনদারির হ্রাস, তাকওয়ার বিলুপ্তি, ব্যক্তিত্বের বিচ্যুতি, আত্মসম্মানের স্খলন, খেয়ানত, লজ্জাশীলতার হ্রাস, আল্লাহর নজরদারির অনুভূতিহীনতা, হারামের ব্যাপারে বেপরোয়া ইত্যাদি মন্দের মূল। যেনা অবধারিত করে দেয়: আল্লাহর অসন্তুষ্টি, চেহারায় কালি পড়া ও নিষ্প্রভ হওয়া, অন্তর মরে যাওয়া ও নূর চলে যাওয়া, হৃদয় সংকীর্ণ হওয়া ইত্যাদি। আমরা 20983 নং প্রশ্নের জবাবে এ পরিণামগুলো পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরেছি। সে উত্তরটি পড়তে পারেন। ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) এর ‘রওদাতুল মুহিব্বীন’ কিতাব থেকে আমরা এ বিষয়গুলো উদ্ধৃত করেছি।

চার:

প্রিয় ভাই, আসুন আপনাকে জিজ্ঞেস করি- আপনি নামায রোজা কেন করেন? যদি তা এ কারণে করে থাকেন- এটাই আপনার প্রতি ধারণা- যে, আল্লাহ আপনার উপর নামায পড়া ও রোজা রাখা ফরজ করেছেন এবং এ দুটো বর্জন করা হারাম করেছেন। তাহলে আমরা আপনাকে বলব, অনুরূপভাবে আল্লাহ আপনার উপর আপনার যৌনাঙ্গ হেফাযত করাকে ফরজ করেছেন এবং যেনা করা হারাম করেছেন। আমরা এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ করি না যে, আপনি বিশ্বাস করেন- আল্লাহ আপনাকে নামায আদায়কালে দেখতে পাচ্ছেন। এ কারণে আপনি প্রশান্তচিত্তে বিনম্রভাবে নামায আদায় করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবে নামায পড়েন। ঠিক তেমনি আপনি যখন যেনা করবেন তখনও তো আল্লাহ আপনাকে দেখবেন! যেহেতু আপনার ঈমান আপনাকে দিয়ে সুন্দরভাবে নামায আদায় করায় তাই আমাদের ধারণা আপনার সে ঈমান আপনাকে যেনা থেকেও বিরত রাখবে। কারণ আমরা আপনার প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করি। আমরা মনে করি, আপনি জানেন যে, এটি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা নয়; অথচ আল্লাহ আপনাকে ইসলামের নেয়ামত দান করেছেন। আপনাকে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা দিয়েছেন। এ মহান নেয়ামতগুলোর শুকরিয়া এভাবে করতে হয় না।

পাঁচ:

আপনার হয়তো স্মরণে নেই যে, আপনি যে কঠিন ও কষ্টকর অবস্থার মধ্যে আছেন যদি এতে সবর করেন তাহলে আপনি সওয়াব পাবেন। মুমিনেরা তো মুসিবতের সময় ধৈর্য ধারণ করে থাকে এবং আনন্দের সময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে থাকে। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এটা করে না। মুসিবতে ধৈর্য রাখে, আনন্দকালে শুকরিয়া আদায় করে। যেদিন আপনি আপনার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবেন সেদিন আপনি আপনার আমলনামায় এর সর্বোত্তম পুরস্কার পাবেন, ইনশাআল্লাহ। আপনি 71236 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়তে পারেন। সেখানে বিপদ মুসিবতে মুমিনের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে।

ছয়:

আপনার হয়তো স্মরণে নেই যে, আপনার দুআ বিফলে যায়নি। আপনি যে তাগিদ দিয়ে বলছেন আপনার দুআ কবুল হয়নি এটা আপনার ভুল। দুআ কবুলের তিনটি অবস্থা হতে পারে। এক. আপনি যা চেয়েছেন সাথে সাথে আল্লাহ সেটা দিয়ে দেয়া। দুই. দুআ অনুপাতে আপনার বালা-মুসিবত দূর করে দেয়া। তিন. আপনাকে আখেরাতে সওয়াব দেয়া, আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দিন আপনি তা দেখবেন। কিন্তু আপনি ভেবেছেন দুআ কবুল হওয়া মানে- আপনি যা তলব করেছেন শুধু সেটা দিয়ে দেয়া। তাই আপনি বলেছেন, আল্লাহ আপনার দুআ কবুল করেননি। নিঃসন্দেহে এটি আপনার ভুল ধারণা। বান্দা কর্তৃক আল্লাহর কাছে দুআ করাটা একটি মহান ইবাদত। দুআর মাধ্যমে বান্দা স্রষ্টার কাছে তার দীনতা, হীনতা তুলে ধরে। শয়তান সর্বদা চেষ্টা করে বান্দাকে দুআ থেকে বিমুখ রাখতে। তাই সে বান্দার অন্তরে অবিলম্বে তার মাকছাদ পূর্ণ হওয়ার বাসনা ঢুকিয়ে দেয়। ফলে সে বিরক্ত হয়ে দুআ ছেড়ে দেয়।

ইবনে বাত্তাল (রহঃ) বলেন: জনৈক আলেম বলেন: বান্দা তখনি দুআর প্রতিদান অবিলম্বে পেতে চায় যখন দুআর উদ্দেশ্য হয়: প্রার্থনার মাকছাদ অর্জন। ফলে মাকছাদ অর্জিত না হলে দুআ চালিয়ে যাওয়াটা তার জন্য কঠিন হয়ে যায়। প্রকৃতপক্ষে বান্দার দুআ করার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত: আল্লাহকে ডাকা, তার কাছে চাওয়া, সর্বদা নিজের দৈন্যতা প্রকাশ করা, কখনো দাসত্বের বৈশিষ্ট্য ও আলামত পরিত্যাগ না করা, আদেশ ও নিষেধের অনুগত থাকা।[শারহ সহিহ মুসলিম (১০/১০০)]

দুআ কবুলের শর্তগুলো জানতে 13506 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।

দুআ কবুল হওয়ার প্রতিবন্ধকতাগুলো জানতে 5113 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।

দুআ করার আদব বা শিষ্টাচারগুলো জানতে 36902 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।

দুআ কবুল হওয়ার সময় ও স্থানগুলো জানতে 22438 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।

সাত:

এই বিস্তারিত আলোচনার পর আমরা যেন আপনাকে বলতে শুনছি, “আমি যেনা করতে চাই না”। আমরা আপনার ব্যাপারে এই ধারণাই পোষণ করি। প্রকৃতপক্ষে যেনা করার অনুমতির জন্য আপনি আমাদের কাছে ইমেইল করেননি। অথবা আমরা আপনাকে যেনা করা জায়েয ফতোয়া দিব সে উদ্দেশ্যে প্রশ্নটি পাঠাননি। যেহেতু আপনি জানেন যে, সেই অধিকার আমাদের নেই। যদি আপনি যেনা করতেই চাইতেন তাহলে আমাদেরকে ইমেইল না করেই যেনা করে ফেলতেন। কারণ আমরা তো আর আপনাকে পর্যবেক্ষণে রাখতে পারছি না বা আপনি আমাদের কর্তৃত্বাধীনও নন যে, আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিবেন। কিন্তু আমরা নিশ্চিত যে, আপনি যে মুসিবতের মধ্যে আছেন আপনি আপনার ভাইদের কাছে সে ব্যাপারে অভিযোগ করতে চেয়েছেন এবং আপনি চেয়েছেন আপনার ভাইয়েরা যেন আপনাকে এমন কিছু নসীহত, দিকনির্দেশনা ও উপদেশ দেয় যাতে আপনি যেনা না করেন। আমরা সে দায়িত্ব নিয়ে আপনার পাশে দাঁড়ালাম। দেরীতে বিয়ের যে পরীক্ষার মধ্যে আপনি আছেন এ অবস্থায় আমরা আপনাকে ধৈর্য রাখার উপদেশ দিচ্ছি। এ দীর্ঘ বছর ধরে দ্বীনদারি ও আত্মসম্মান হেফাযত করতে পারায় আমরা আপনাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমরা বিশ্বাস করি আপনি যদি আপনার রবের সাহায্য চান তাহলে আপনি এর চেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও আপনার দ্বীনদারি ও আত্মসম্মান রক্ষা করতে পারবেন।

আমরা আপনাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ না হওয়ার উপদেশ দিচ্ছি এবং সৎ পাত্রী খুঁজে পেতে আরো জোর প্রচেষ্টা চালাবার পরামর্শ দিচ্ছি। নেক আমলের মাধ্যমে আপনার রবের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন ঈমানকে আপনার কাছে প্রিয় করে দেন, সুশোভিত করে দেন। কুফর, পাপ, অবাধ্যতাকে আপনার কাছে নিন্দনীয় করে দেন। আপনাকে সুপথপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। আমরা আশা করব আপনি 20161 নং ও 11472 নং প্রশ্নোত্তরদ্বয়ও পড়বেন।

আল্লাহই উত্তম তাওফিকদাতা।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/175216/

-----------------------

 

>> যে ব্যক্তি নিভৃতে থাকলে গুনাতে লিপ্ত হয় এবং এর থেকে মুক্তি চায়

প্রশ্ন:

আমি আশা করছি, আপনারা আমাকে আল্লাহ্‌র শাস্তি ও গজব থেকে রক্ষা করবেন। আমি মুসলিম, ইসলামী পরিবেশে ও সচ্চরিত্রের উপর বড় হয়েছি। অন্যদের চোখে আমি এখনও তেমন। কিন্তু, হায়রে আমার মুসিবত! নিজেকে কন্ট্রোল করার ক্ষেত্রে আমি খুব দুর্বল। অন্যদের অগোচরে মোবাইলে পর্নোগ্রাফি, অশ্লীল ছবি ও ভিডিও দেখি। আমি জানি আল্লাহ্‌ আমাকে দেখছেন। কিন্তু প্রতিবারই আমি এ অশ্লীল কাজে লিপ্ত হই। শুধু দেখা নয়; বরং হস্তমৈথুনে লিপ্ত হই। আমি বিবাহিত এবং আমার সন্তান আছে। আমি জানি যে, আমি যা করছি সেটা পশুদের কাজ। আমি জানি যে, এ কাজ আমার নেক আমলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে; বরং সমূলে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমি নামায পড়ি ও তওবা করি। একদিন বা দুইদিন সবর করি। পুনরায় এতে লিপ্ত হই। এসব দৃশ্য ও ভিডিও দেখা এবং কুকামে লিপ্ত হওয়ার জন্য নিজের ভেতরে তীব্রভাবে অদ্ভুত তাড়না অনুভব করি। আমি জানি না— আমি কী করব? আমি জানি যে, আমার প্রভু যদি আমার মৃত্যু দেন তাহলে আমি জাহান্নামে প্রবেশ করব। কিন্তু আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। আপনারা আমাকে রক্ষা করুন। আল্লাহ্ আপনাদের প্রতি রহম করুন।

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

সম্মানিত ভাই, আপনি পাপে লিপ্ত হয়ে এবং বারবার এর পুনরাবৃত্তি করে যে মানসিক যন্ত্রণায় আছেন তা আমরা অনুধাবন করছি। এটি ইতিবাচক আলামত যে, আপনার অন্তরের একটি অংশ অসুস্থ হলেও অপর একটি সুস্থ ও নিরাপদ অংশ রয়েছে।

এ রোগের মূলোৎপাটন করতে হলে— যা কিছু আপনাকে আল্লাহ্‌র অবাধ্যতার দিকে ধাবিত করে সে সবের প্রবেশদ্বার রুদ্ধ করে দিতে হবে, যা কিছু আপনাকে আল্লাহ্‌র রহমত থেকে নিরাশ করে দেয় সেগুলোর ফটক বন্ধ করে দিতে হবে। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: "বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ— আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"[সূরা যুমার, আয়াত: ৫৩]

আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন:

"এবং তারা আল্লাহ্‌র সাথে কোন ইলাহ্‌কে ডাকে না। আর আল্লাহ্‌ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর তারা ব্যভিচার করে না; যে এগুলো করে, সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি বর্ধিতভাবে প্রদান করা হবে এবং সেখানে সে স্থায়ী হবে হীন অবস্থায়; তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, ফলে আল্লাহ্‌ তাদের গুনাহসমূহ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর যে তাওবা করে ও সৎকাজ করে, সে তো সম্পূর্ণরূপে আল্লাহ্‌র অভিমুখী।"[সূরা যুমার, আয়াত: ৬৮-৭১]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) "আল-জাওয়াব আল-কাফী" গ্রন্থে (পৃষ্ঠা-১৬৫) বলেন: ন্যায্যতা ও অনুগ্রহ নির্ভর আল্লাহ্‌ তাআলার হেকমত হচ্ছে যে, "গুনাহ থেকে তাওবাকারী যেন ঐ ব্যক্তির ন্যায় যার গুনাহ নেই"।

যে ব্যক্তি শির্ক, হত্যা ও ব্যভিচারের গুনাহ থেকে তওবা করবে আল্লাহ্‌ তাকে এ নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, তিনি তার গুনাহগুলোকে নেকীতে পরিণত করে দিবেন। এ বিধানটি সব ধরণের গুনাহ থেকে তওবাকারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: "বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ— আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়ো না; নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"[সূরা যুমার, আয়াত: ৫৩]

অতএব, এ আম বিধান থেকে কোন একটি গুনাহও বাদ পড়বে না। কিন্তু এটি তাওবাকারীদের জন্য খাস।[সমাপ্ত]

আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর কিতাবে মুত্তাকীদের গুণ বর্ণনা করেছেন যে, তারা যদি কোন কবিরা গুনাহ করে ফেলে কিংবা সগিরা গুনাহতে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে নিজেদের উপর অবিচার করে ফেলে তখনই তারা আল-আযিয (পরাক্রমশালী) আল-গাফ্‌ফার (ক্ষমাশীল) কে স্মরণ করে এবং কৃত গুনাহর জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে। সে গুনাহর উপর কায়েম থাকে না এবং অবাধ্যতায় অব্যাহত থাকে না।

তিনি আরও বলেন:

"তোমরা তোমাদের প্রভুর ক্ষমা ও সেই জান্নাত লাভের চেষ্টা কর যার বিশালতা আসমান ও জমিনের মত। মোত্তাকীদের জন্য তা প্রস্তুত করা হয়েছে; যারা সুদিন ও দুর্দিনে (আল্লাহ্‌র পথে) ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী ও মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ্‌ মুহ্‌সিনদেরকে ভালবাসেন। এবং যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে ফেললে আল্লাহ্‌কে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা চায়। আল্লাহ্‌ ছাড়া পাপ ক্ষমা করবে কে? আর তারা যা করে ফেলে, জেনে-বুঝে তারা তা পুনঃপুনঃ করতে থাকে না। এমন লোকদের প্রতিদান হচ্ছে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে ক্ষমা আর এমনসব জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত হয়। সেখানে তারা চিরকাল বাস করবে। সৎকর্মশীলদের এই প্রতিদান কতই না উত্তম!"[সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৩-১৩৬]

পুনঃপুনঃ গুনাহকারী দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে: গুনাহতে লিপ্ত হওয়া এবং তওবা ও ক্ষমাপ্রার্থনা ব্যতিরেকে পুনঃপুনঃ গুনাহ করতে থাকা।

আর যে ব্যক্তি গুনাহ করল। এরপর অন্তর থেকে শুদ্ধভাবে তওবা করল। আবার দুর্বলতায় পড়ে পুনরায় গুনাহ করল। তারপর আবার শুদ্ধভাবে তওবা করল। যার অবস্থাটি এমন—গুনাহ ও অবাধ্যতা এবং তওবা, অনুশোচনা ও রহিম রাহমানের দিকে ফিরে আসার মাঝে; সে ইনশাআল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌র ক্ষমার আওতাধীন। আশা করা যায় আল্লাহ্‌ তার স্খলনকে মাফ করে দিবেন, তার গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন: "এক বান্দা গুনাহ্ করল। তারপর সে বলল: হে আমার রব্ব! আমি তো গুনাহ্ করে ফেলেছি; আমাকে ক্ষমা করে দিন। তখন তার রব্ব বলেন: আমার বান্দা কি একথা জেনেছে যে, তার একজন রব্ব রয়েছে; যিনি গুনাহ্ মাফ করেন ও গুনাহর কারণে শাস্তি দেন। আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম। এরপর আল্লাহর ইচ্ছায় কিছুকাল কেটে যায়। এরপর সে আবার আরেকটি গুনাহ করে। তিনি বলেন, তখন সে বলে: ও আমার প্রভু! আমি তো আরেকটি গুনাহ্ করে ফেলেছি; আমাকে মাফ করে দিন। তখন আল্লাহ্ বলেন: আমার বান্দা কি জেনেছে যে, তার একজন রব্ব আছেন; যিনি গুনাহ্ মাফ করেন ও গুনাহর কারণে শাস্তি দেন? আমি আমার বান্দাকে মাফ করে দিলাম (তিনবার); সে যা ইচ্ছা তা করুক।"[সহিহ বুখারী (৭৫০৭) ও সহিহ মুসলিম (২৭৫৮)]

ইমাম নববী 'শারহে সাহিহ মুসলিম" গ্রন্থে (১৭/৭৫) বলেন:

যদি কোন গুনাহ পুনঃপুনঃ শতবার করা হয় কিংবা হাজার বার করা হয় কিংবা এরচেয়েও বেশিবার করা হয় এবং প্রত্যেকবার গুনাহ থেকে তওবা করে তার তওবা কবুল করা হবে এবং তার গুনাহ মাফ হবে। আর যদি সকল গুনাহর পর একবার তওবা করে তাহলেও তার তওবা সহিহ হবে।

যে ব্যক্তি পুনঃপুনঃ গুনাতে লিপ্ত হয় তাকে লক্ষ্য করে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: "তুমি যা ইচ্ছা তা কর আমি তোমাকে মাফ করে দিলাম" এ কথার অর্থ হচ্ছে- যেহেতু তুমি গুনাহ করে তওবা করেছ অতএব আমি তোমাকে মাফ করে দিলাম।

সুতরাং প্রত্যেক গুনাহর শেষে আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করতে থাকুন। তওবার ক্ষেত্রে বিশ্বস্ত হোন, অনুতপ্ত হোন, কৃত গুনাহ্‌র জন্য মর্মজ্বালা অনুভব করুন। আর কখনও গুনাহ না করার সংকল্প করুন। এরপর তওবাকে পরিপূর্ণ করার জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুন:

যে রাস্তাগুলো আপনাকে গুনাহের দিকে ধাবিত করে সে রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেওয়া। তা এভাবে যে, একাকী না থাকা; বরং সবসময় অন্যদের মাঝে থাকা, আপনার স্ত্রী ও সন্তানদের মাঝে থাকা। যদি আপনি আপনার স্ত্রী থেকে দূরে থাকেন তাহলে আপনার স্ত্রীকে সাথে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন। আপনার স্ত্রী থেকে দূরে থাকবেন না। আপনার স্ত্রীর মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র রাখুন এবং আপনার মাধ্যমে আপনার স্ত্রীকেও পবিত্র রাখুন। আর যদি আপনি আপনার পরিবারের কাছেই থাকেন এবং তাদের সাথে বসবাস করেন তাহলে আপনি তাদের থেকে দূরে যাবেন না। আপনি আপনার স্ত্রীকে ভালবাসুন। তার মাধ্যমে আপনার প্রয়োজন পূরণ করুন। যখনই আপনার অন্তরে দেখার খায়েশ জাগবে কিংবা কোন কিছু আপনার নজরে পড়ে যাবে তখনই আপনি শয়তানকে হারামের দিকে আপনাকে নিয়ে যেতে দিবেন না। বরং আপনি দেরী না করে হালালকে গ্রহণ করুন।

সদা-সর্বদা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণকর কোন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। কারণ অবসর সময় মানুষের নষ্টের কারণ। এমন নষ্ট যার কোন সীমা নেই।

মোবাইল থেকে ইন্টারনেট সংযোগ চূড়ান্তভাবে বিচ্ছিন্ন করা; হতে পারে আপনার মোবাইল সেটটি পরিবর্তন করাই আপনার জন্য বেশি ভাল হবে। এমন মোবাইল সেট ব্যবহার করবেন সে সেটে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় না। অন্তরে ঈমান, আল্লাহ্‌র ভয়, আল্লাহ্‌র হিসাব গ্রহণের কাঠিন্য, আল্লাহ্‌ আপনাকে দেখছেন ও আপনাকে মনিটর করছেন এ অনুভূতিগুলো মযবুত করা। কুরআন তেলাওয়াত, নফল নামায ও তাহাজ্জুদ নামায পড়া বাড়ানো।

হেদায়েতের উপর অটল থাকার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। সবচেয়ে উপকারী দোয়া হচ্ছে  اهدنا الصراط المستقيم  অর্থ- "আমাদেরকে সরল পথ দেখান"।

পর্ন ভিডিও দেখা বর্জন করার উপকারী পন্থাগুলো জানতে 210259 নং প্রশ্নোত্তরটি পড়ুন।

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে আমাদের ও আপনার হেদায়েতের প্রার্থনা করছি।

আল্লাহ্‌ই তাঁর সন্তুষ্টি ও রেজামন্দির তাওফিকদাতা।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/283715/

---------------------------

 

>> তওবা কবুল হওয়া

প্রশ্ন:

আমি একটি জঘন্য পাপ করেছি। আমি আল্লাহ্‌র কাছে ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করেছি এবং দোয়া করেছি তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। সেই গুনাহ থেকে আমার তওবা কি কবুল হবে? বিশেষতঃ আমি অনুভব করছি যে, আমার তওবা কবুল হয়নি এবং তিনি আমার ওপর রাগান্বিত! তওবা কবুল হওয়ার কি বিশেষ কিছু ইঙ্গিত আছে?

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

নিঃসন্দেহে ভুল ও কসুর মানুষের প্রকৃতিজাত। কোন মুকাল্লাফ (শরয়ি দায়িত্বপ্রাপ্ত) ব্যক্তিই আনুগত্যের ক্ষেত্রে কসুর কিংবা ভুল ও গাফলতি, নতুবা ত্রুটি ও বিস্মৃতি, নচেৎ গুনাহ ও পাপ মুক্ত নয়। আমরা প্রত্যেকেই কসুরকারী ও গুনাহগার, ভুলকারী। কখনও কখনও আমরা আল্লাহ্‌র অভিমুখী হই; আবার কখনও কখনও পিছিয়ে আসি। কখনও কখনও আল্লাহ্‌র নজরদারিকে স্মরণে রাখি; আবার কখনও কখনও গাফলতি আমাদের উপর ভর করে বসে। আমরা গুনাহমুক্ত নই। আমাদের থেকে গুনাহ ঘটেই থাকে। যেহেতু আমরা মাসুম বা নিষ্পাপ নই। এ জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আমি ঐ সত্তার শপথ করে বলছি যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ— যদি তোমরা গুনাহ না করতে তবে আল্লাহ অবশ্যই তোমাদেরকে ধ্বংস করে এমন এক সম্প্রদায়কে সৃষ্টি করতেন, যারা গুনাহ করে আবার ক্ষমা প্রার্থনা করে।”[সহিহ মুসলিম (২৭৪৯)] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন: “প্রত্যেক বনী আদম গুনাহগার। আর গুনাহকারীদের মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে- তওবাকারীগণ।”[সুনানে তিরমিযি (২৪৯৯), আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

দুর্বল মানবের প্রতি আল্লাহ্‌র দয়া হচ্ছে— তিনি তার জন্য তওবার দ্বার উন্মুক্ত রেখেছেন এবং তাকে নির্দেশ দিয়েছেন তাঁর দিকে ফিরে আসার ও তাঁর অভিমুখী হওয়ার; যখনই পাপ তাকে পরাভুত করে কিংবা গুনাহ তাকে দুষিত করে। যদি এমনটি না হত তাহলে মানুষ কঠিন সংকটে পড়ে যেত, স্বীয় প্রতিপালকের নৈকট্য হাছিলে তার হিম্মত হ্রাস পেত এবং আপন প্রভুর ক্ষমা পাওয়ার আশা ছিন্ন হত। তাই তওবা হচ্ছে—মানুষের ঘাটতি ও কসুরের অনিবার্য দাবী।

আল্লাহ্‌ তাআলা এ উম্মতের সব শ্রেণীর মানুষের ওপর তওবা করা ওয়াজিব করে দিয়েছেন; যারা নেক কাজে অগ্রণী, যারা পরিমিত নেক আমলকারী এবং যারা পাপকাজের মাধ্যমে নিজেদের ওপর জুলুমকারী সবার ওপর।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা সবাই আল্লাহ্‌র কাছে তওবা কর, যাতে তোমরা সফল হও।”[সূরা নূর, ২৪:৩১]

আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে খাঁটি তওবা কর।”[সূরা আত্‌তাহরীম, ৬৬:৮]

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “ওহে লোকসকল! তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে তওবা ও ইস্তিগফার কর। নিশ্চয় আমি দিনে একশবার তওবা করি।”[সহিহ মুসলিম-এ (২৭০২) আল-আগার্‌র আল-মুযানি (রাঃ)-এর সূত্রে বর্ণিত]

আল্লাহ্‌ তাআলার রহমত অবারিত, বান্দার প্রতি তাঁর দয়া সর্বব্যাপী। তিনি সহিষ্ণু; তাৎক্ষণিকভাবে আমাদেরকে পাকড়াও করেন না, শাস্তি দেন না, কিংবা ধ্বংস করে দেন না। বরং আমাদেরকে সময় দেন। তিনি তাঁর নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন যাতে করে তিনি তাঁর মহানুভবতার ঘোষণা দেন: “বলে দিন, ‘হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের ওপর বাড়াবাড়ি করেছ! আল্লাহ্‌র রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। আল্লাহ্‌ তো সব গুনাহ মাফ করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম দয়ালু”।[সূরা যুমার, ৩৯:৫৩]

বান্দার প্রতি কোমল হয়ে তিনি বলেন: “তবে কি তারা আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করবে না (ফিরে আসবে না), তাঁর কাছে ইস্তিগফার করবে না (ক্ষমাপ্রার্থনা করবে না)?! আল্লাহ্‌ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা মায়িদা, ৫:৭৪]

তিনি আরও বলেন: “আর যে তওবা করে, ঈমান রাখে, সৎকাজ করে এবং সঠিক পথে অবিচল থাকে তার প্রতি আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল।”[সূরা ত্বহা, ২০:৮২]

তিনি আরও বলেন: “এবং আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে ফেললে আল্লাহ্‌কে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ইস্তিগফার করে (ক্ষমা চায়)। আল্লাহ্‌ ছাড়া পাপ ক্ষমা করবে কে? আর তারা জেনেশুনে নিজেদের কৃতকর্মের ওপর জিদ ধরে থাকে না।”[সূরা আলে ইমরান, ৩:১৩৫]

তিনি আরও বলেন: “যে লোক কোন খারাপ কাজ করে কিংবা নিজের প্রতি জুলুম করে, তারপর আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চায় সে আল্লাহ্‌কে ক্ষমাশীল ও দয়ালু পাবে।”[সূরা নিসা, ৪:১১০]

আল্লাহ্‌ তাআলা তাঁর সাথে জঘন্য অংশীদার স্থাপনকারী ও গুনাহকারীদেরকেও তওবা করার আহ্বান জানিয়েছেন। যারা বলেছিল: ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহ্‌র পুত্র। (অন্যায়কারীরা যা বলে আল্লাহ্‌ তাআলা তা থেকে বহু উর্ধ্বে।) আল্লাহ্‌ তাআলা তাদের প্রসঙ্গে বলেছেন: “তবে কি তারা আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করবে না (ফিরে আসবে না), তাঁর কাছে ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করবে না?! আল্লাহ্‌ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”[সূরা মায়িদা, ৫:৭৪]

তিনি মুনাফিকদের জন্যেও তওবার দরজা উন্মুক্ত রেখেছেন; যারা প্রকাশ্য কাফেরদের চেয়েও নিকৃষ্ট কাফের। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “মুনাফিকদের জায়গা হবে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে। আর আপনি তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবেন না; সেই সব লোক ব্যতীত যারা তওবা করে, নিজেদের অবস্থা সংশোধন করে, আল্লাহ্‌কে (আল্লাহ্‌র বিধানকে) আঁকড়ে ধরে এবং নিজেদের ধার্মিকতাকে কেবল আল্লাহ্‌র জন্য একনিষ্ঠ করে; এমন লোকেরা মুমিনদের সাথে থাকবে। অচিরেই আল্লাহ্‌ মুমিনদেরকে এক মহান প্রতিদান দেবেন।”[সূরা নিসা, ৪:১৪৫-১৪৬]

প্রতিপালকের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তিনি তওবা কবুল করেন এবং তাঁর মহানুভবতা ও অনুগ্রহের কারণে তিনি এতে খুশি হন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তিনিই তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন এবং তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করেন। আর তোমরা যা কিছু কর তিনি তা জানেন।”[সূরা শুরা, ৪২:২৫]

তিনি আরও বলেন: “তারা কি জানে না যে, আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের তওবা কবুল করেন ও (তাদের) দান-সদকা গ্রহণ করেন এবং কেবল আল্লাহ্‌ই ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।”[সূরা তওবা, ৯:১০৪]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খাদেম হামযার পিতা আনাস বিন মালেক আল-আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হয়, নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর বান্দার তওবাতে এর চেয়েও বেশি খুশি হন।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]

সহিহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় এসেছে: “নিশ্চয় বান্দার তওবাতে আল্লাহ তোমাদের ঐ ব্যক্তির চেয়ে অধিক আনন্দিত হন, যে ব্যক্তি বিজন মরুর প্রান্তরে উট হারিয়ে ফেলেছে। যে উটের পিঠে তার খাদ্যপানীয় ছিল। উট হারানোর কারণে হতাশ হয়ে গাছের ছায়ায় এসে শুয়ে পড়ল। এমন পরিস্থিতিতে সে হঠাৎ দেখতে পেল তার উট তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। তখন সে উটের লাগাম ধরে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে বলতে লাগল ‘হে আল্লাহ, তুমি আমার বান্দা আমি তোমার প্রভু!’ অতি আনন্দের কারনে সে এভাবে ভুল কথা বলে ফেলল।”[সহিহ মুসলিম (২৭৪৭)]

মুসার পিতা আব্দুল্লাহ্‌ বিন কায়েস আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাআলা রাতের বেলায় তাঁর হাত প্রসারিত করেন দিনের বেলায় পাপকারীর তওবা কবুল করার জন্য এবং তিনি দিনের বেলায় তাঁর হাত প্রসারিত করেন রাতের বেলায় পাপকারীর তওবা কবুল করার জন্য।”[সহিহ মুসলিম (২৭৫৯)]

আব্দুর রহমানের পিতা আব্দুল্লাহ্‌ বিন উমর বিন আল-খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দার তওবা কবুল করেন যতক্ষণ পর্যন্ত না গড়গড় শব্দ (মৃত্যুর যন্ত্রণা) শুরু হয়।”[সুনানে তিরমিযি (৩৫৩৭)]

দুই:

তওবার বরকত নগদ ও আসন্ন এবং দৃশ্যমান ও গোপন। তওবার সওয়াব হচ্ছে—অন্তরগুলোর পবিত্রতা, পাপসমূহের মোচন ও নেকীর বৃদ্ধি। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্‌র কাছে খাঁটি তওবা কর। (তাহলে) হয়তো তোমাদের প্রভু তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে স্থান দেবেন, যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত। আল্লাহ্‌ সেদিন নবী ও তার সঙ্গী মুমিনদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না। তাদের আলো তাদের সামনে ও ডানে ধাবিত হবে। তারা বলবে: ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের আলো পূর্ণ করুন এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি সবকিছু করতে সক্ষম।”[সূরা তাহরীম, ৬৬:৮]

তওবার সওয়াব হচ্ছে— ভাল জীবন; যে জীবন হবে ঈমান, অল্পেতুষ্টি, সন্তুষ্টি, আত্মপ্রশান্তি, নিশ্চিন্ততা ও নিষ্কলুষ হৃদয়ের ছায়ায় ধন্য। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আর তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ইস্তিগফার কর (ক্ষমা চাও) ও তওবা কর (তাঁর দিকে ফিরে এসো)। তাহলে তিনি তোমাদেরকে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুন্দরভাবে (জীবনের সুখ) ভোগ করতে দেবেন এবং প্রত্যেক মর্যাদাবানকে তার (যথার্থ) মর্যাদা দেবেন।”[সূরা হুদ, ১১:৩]

তওবার সওয়াব হচ্ছে— আসমান থেকে অবতীর্ণ বরকত, জমিনে দৃশ্যমান বরকত, সন্তান-সন্ততির বৃদ্ধি, উৎপাদনে বরকত, শরীরের রোগমুক্তি, বিপদাপদ থেকে সুরক্ষা ইত্যাদি। আল্লাহ্‌ তাআলা হুদ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেন: “আর হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের প্রভুর কাছে ইস্তিগফার কর (ক্ষমা চাও), তারপর তওবা কর (তাঁর দিকে ফিরে আস); তাহলে তিনি আসমান থেকে তোমাদের ওপর বারিধারা বর্ষণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির সাথে আরো শক্তি বাড়িয়ে দেবেন। অতএব তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না।”[সূরা হুদ, ১১:৫২]

তিন:

যে কেউ তওবা করলে আল্লাহ্‌ তার তওবা কবুল করেন। তওবাকারীদের কাফেলা চলমান থাকবে। পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় ঘটার পূর্ব পর্যন্ত এ কাফেলা থামবে না ।

কেউ তওবা করে ডাকাতি থেকে, কেউ তওবা করে যৌনাঙ্গের পাপ থেকে, কেউ তওবা করে মদ্যপান থেকে, কেউ তওবা করে মাদকদ্রব্য থেকে, কেউ তওবা করে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা থেকে, কেউ তওবা করে নামায না-পড়া থেকে কিংবা জামাতে হাজিরে অলসতা করা থেকে, কেউ তওবা করে পিতামাতার অবাধ্যতা থেকে, কেউ তওবা করে সুদ-ঘুষ থেকে, কেউ তওবা করে চুরি থেকে, কেউ তওবা করে মানুষ হত্যা করা থেকে, কেউ তওবা করে অন্যায়ভাবে মানুষের সম্পদ আত্মসাৎ করা থেকে, কেউ তওবা করে সিগারেট খাওয়া থেকে। প্রত্যেক পাপ থেকে আল্লাহ্‌র কাছে তওবাকারীকে স্বাগতম। খাঁটি তওবার মাধ্যমে সে যেন নবজাতক শিশুর মত হয়ে গেল।

সাঈদের পিতা সাদ বিন মালিক বিন সিনান আল-খুদরি (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের মাঝে এমন এক লোক ছিল যে নিরানব্বইজন মানুষকে হত্যা করেছে। সে ঐ সময়কার সবচেয়ে জ্ঞানবান ব্যক্তির অনুসন্ধান করল। তাকে একজন ধর্মযাজককে দেখিয়ে দেয়া হল। সে ধর্মযাজকের কাছে এসে বলল: আমি নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করেছি; আমার জন্য কি তওবার সুযোগ আছে? ধর্মযাজক বলল: না। তখন সে উক্ত ধর্মযাজককে হত্যা করে একশজন পূর্ণ করল। এরপর সে সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি কে আছে তার সন্ধান করল? তখন তাকে একজন ধর্মীয় পণ্ডিতকে দেখিয়ে দেয়া হল। সে (পণ্ডিতকে) বলল যে, সে একশজন মানুষকে হত্যা করেছে; তার জন্যে কি তওবা করার সুযোগ আছে? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তার তওবা কবুলের পথে কে প্রতিবন্ধক হতে পারে? তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে কিছু লোক আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত আছে। তুমিও তাদের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদতে লিপ্ত হও এবং কখনও তোমার নিজ দেশে ফিরে যাবে না। কেননা, সেটা খুব খারাপ জায়গা। লোকটি নির্দেশিত স্থানের দিকে রওয়ানা হয়ে গেল। অর্ধেক পথ অতিক্রম করার পর তার মৃত্যুর সময় হয়ে গেল। তখন তাকে নিয়ে রহমতের ফেরেশতা ও আযাবের ফেরেশতাদের মধ্যে বিতর্ক দেখা দিল। রহমতের ফেরেশতারা বলল: লোকটি তওবা করে অন্তর থেকে আল্লাহর দিকে ফিরে এসেছে। আর আযাবের ফেরেশতারা বলল: লোকটি কখনো কোন পুণ্যের কাজ করেনি। এ সময় একজন ফেরেশতা মানুষের বেশে হাজির হল। তারা এ ব্যক্তিকে তাদের মাঝে বিচারক হিসেবে মেনে নিল। তিনি বললেন: তোমরা উভয় দিকের জায়গা মেপে দেখ। যে দিকের ভূমি কম হবে এ লোক তার ভাগের হিসেবে গণ্য হবে। তখন তারা জায়গা মেপে দেখল যে, ঐ ব্যক্তি যে স্থানের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল সে স্থানের কাছাকাছি। ফলে রহমতের ফেরেশতারা লোকটির প্রাণ কেড়ে নিল।”[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]

সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় (২৭১৬) এসেছে যে, “ঐ ব্যক্তি নেককারদের গ্রামের দিকে এক বিগত এগিয়ে ছিল। ফলে তাকে নেককার গ্রামের অধিবাসী হিসেবে গণ্য করা হয়”।

সহিহ বুখারীর অপর এক বর্ণনায় (৩৪৭০) এসেছে যে: “আল্লাহ্‌ তাআলা এ ভাগের ভূমির কাছে প্রত্যাদেশ করলেন যে, তুমি নিকটবর্তী হয়ে যাও এবং ঐ ভাগের ভূমির কাছে প্রত্যাদেশ করলেন যে, তুমি দূরে যাও। লোকটি বলল: তোমরা এ দুই ভূমির মধ্যবর্তী জায়গা মেপে দেখ। মেপে পাওয়া গেল যে, নেককারদের গ্রামের দিকে এক বিগত কাছে। তখন তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল।

সহিহ মুসলিমের অপর এক বর্ণনায় (২৭৬৬) এসেছে যে, “ঐ ব্যক্তি তার বুক দিয়ে ঐ স্থানের দিকে আগাচ্ছিল”।

তওবা শব্দের অর্থ হচ্ছে—আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসা, গুনাহ ত্যাগ করা, গুনাহকে অপছন্দ করা, নেক কাজে কসুর হওয়ার জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ইমাম নববী (রহঃ) বলেন: “আলেমগণ বলেন, প্রত্যেক গুনাহ থেকে তওবা করা ওয়াজিব। যদি গুনাহটি বান্দার মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে হয়ে থাকে; কোন মানুষের হক্বের সাথে সম্পৃক্ত না হয় তাহলে সে তওবার জন্য শর্ত তিনটি: ১। গুনাহ ত্যাগ করা। ২। কৃত কর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। ৩। সে গুনাতে পুনরায় লিপ্ত না হওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া। যদি এ তিনটি শর্তের কোন একটি না পাওয়া যায় তাহলে সে তওবা শুদ্ধ হবে না।

আর যদি গুনাহটি মানুষের সাথে সম্পৃক্ত হয় তাহলে সে তওবার জন্য শর্ত চারটি: উল্লেখিত তিনটি এবং হক্বদারের হক্ব থেকে নিজেকে মুক্ত করা; যদি সম্পদ বা এ জাতীয় কিছু হয় তাহলে সেটা মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া। আর যদি অপবাদ এবং এ ধরণের কিছু হয় তাহলে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্য নিজেকে তার কাছে পেশ করা কিংবা ক্ষমা চেয়ে নেয়া। আর যদি গীবত হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেওয়া। সকল গুনাহ থেকে তওবা করা ওয়াজিব। যদি কেউ কিছু গুনাহ থেকে তওবা করে তাহলে মুহাক্কিক আলেমদের মতে সে যে গুনাহ থেকে তওবা করেছে সে গুনাহ থেকে তার তওবা শুদ্ধ হবে এবং অন্যান্য গুনাহ থেকে তওবা করা বাকী থাকবে।”[সমাপ্ত]

পূর্বোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যদি কোন তওবাকারীর ক্ষেত্রে এ শর্তগুলো পূর্ণ হয় তাহলে আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় তার তওবা কবুল হওয়ার উপযোগী। এরপরে তওবা কবুল হয়নি এমন ওয়াসওয়াসা বা খুতখুত রাখা উচিত হবে না। কেননা এটি শয়তানের পক্ষ থেকে এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূল যেভাবে উল্লেখ করেছেন যে, একনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত তওবাকারীর তওবা কবুল হয়— এ ধরণের খুতখুত এর বিপরীত।

গুরুত্বপূর্ণ বিধায় এ প্রশ্নোত্তরগুলোও পড়া যেতে পারে: 624 নং, 13630 নং, 13990 নং, 14289 নং ও 34905 নং।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/46683/

---------------------------

 

>> দোয়া কবুল হওয়ার শর্তগুলো কি কি; যাতে দোয়াটি আল্লাহ্‌র কাছে কবুল হয়

প্রশ্ন:

দোয়া কবুল হওয়ার শর্তগুলো কি কি; যাতে দোয়াটি আল্লাহ্‌র কাছে কবুল হয়?

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

দোয়া কবুল হওয়ার বেশকিছু শর্ত রয়েছে। যেমন:

১. আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কাউকে না ডাকা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন: “যখন প্রার্থনা করবে তখন শুধু আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করবে এবং যখন সাহায্য চাইবে তখন শুধু আল্লাহ্‌র কাছে সাহায্য চাইবে।”[সুনানে তিরমিযি (২৫১৬), আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

এটাই হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণীর মর্মার্থ “আর নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহ্‌রই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহ্‌র সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।”[সূরা জিন্‌, আয়াত: ১৮] দোয়ার শর্তগুলোর মধ্যে এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এ শর্ত পূরণ না হলে কোন দোয়া কবুল হবে না, কোন আমল গৃহীত হবে না। অনেক মানুষ রয়েছে যারা নিজেদের মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে মৃতব্যক্তিদেরকে মাধ্যম বানিয়ে তাদেরকে ডাকে। তাদের ধারণা যেহেতু তারা পাপী ও গুনাহগার, আল্লাহ্‌র কাছে তাদের কোন মর্যাদা নেই; তাই এসব নেককার লোকেরা তাদেরকে আল্লাহ্‌র নৈকট্য হাছিল করিয়ে দিবে এবং তাদের মাঝে ও আল্লাহ্‌র মাঝে মধ্যস্থতা করবে। এ বিশ্বাসের কারণে তারা এদের মধ্যস্থতা ধরে এবং আল্লাহ্‌র পরিবর্তে এ মৃতব্যক্তিদেরকে ডাকে। অথচ আল্লাহ্‌ বলেছেন: “আর আমার বান্দারা যখন আপনাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে (তখন আপনি বলে দিন) নিশ্চয় আমি নিকটবর্তী। দোয়াকারী যখন আমাকে ডাকে তখন আমি ডাকে সাড়া দিই।”[সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬]

২. শরিয়ত অনুমোদিত কোন একটি মাধ্যম দিয়ে আল্লাহ্‌ তাআলার কাছে ওসিলা দেয়া।

৩. দোয়ার ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করা। তাড়াহুড়া করা দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে বড় বাধা। হাদিসে এসেছে, “তোমাদের কারো দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তাড়াহুড়া করে বলে যে: ‘আমি দোয়া করেছি; কিন্তু, আমার দোয়া কবুল হয়নি”[সহিহ বুখারী (৬৩৪০) ও সহিহ মুসলিম (২৭৩৫)]

সহিহ মুসলিমে (২৭৩৬) আরও এসেছে- “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে। বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাড়াহুড়া বলতে কী বুঝাচ্ছেন? তিনি বললেন: বলে যে, আমি দোয়া করেছি, আমি দোয়া করেছি; কিন্তু আমার দোয়া কবুল হতে দেখিনি। তখন সে ব্যক্তি উদ্যম হারিয়ে ফেলে এবং দোয়া ছেড়ে দেয়।”

৪. দোয়ার মধ্যে পাপের কিছু না থাকা। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া না  হওয়া; যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখিত হাদিসে এসেছে- “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে।”

৫. আল্লাহ্‌র প্রতি ভাল ধারণা নিয়ে দোয়া করা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার বান্দা আমার প্রতি যেমন ধারণা করে আমি তেমন।”[সহিহ বুখারী (৭৪০৫) ও সহিহ মুসলিম (৪৬৭৫)] আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিসে এসেছে, “তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস (একীন) নিয়ে আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া কর।”[সুনানে তিরমিযি, আলাবানী সহিহুল জামে গ্রন্থে (২৪৫) হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]

তাই যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র প্রতি ভাল ধারণা পোষণ করে আল্লাহ্‌ তার উপর প্রভুত কল্যাণ ঢেলে দেন, তাকে উত্তম অনুগ্রহে ভূষিত করেন, উত্তম অনুকম্পা ও দান তার উপর ছড়িয়ে দেন।

৬. দোয়াতে মনোযোগ থাকা। দোয়াকালে দোয়াকারীর মনোযোগ থাকবে এবং যাঁর কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে তাঁর মহত্ত্ব ও বড়ত্ব অন্তরে জাগ্রত রাখবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহ্‌ কোন উদাসীন অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।”[সুনানে তিরমিযি (৩৪৭৯), সহিহুল জামে (২৪৫) গ্রন্থে শাইখ আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ আখ্যায়িত করেছেন]

৭. খাদ্য পবিত্র (হালাল) হওয়া। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “আল্লাহ্‌ তো কেবল মুত্তাকীদের থেকেই কবুল করেন”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ২৭] এ কারণে যে ব্যক্তির পানাহার ও পরিধেয় হারাম সে ব্যক্তির দোয়া কবুল হওয়াকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদূরপরাহত বিবেচনা করেছেন। হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, যিনি দীর্ঘ সফর করেছেন, মাথার চুল উস্কুখুস্ক হয়ে আছে; তিনি আসমানের দিকে হাত তুলে বলেন: ইয়া রব্ব, ইয়া রব্ব! কিন্তু, তার খাবার-খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পরিধেয় হারাম, সে হারাম খেয়ে পরিপুষ্ট হয়েছে তাহলে এমন ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হবে?[সহিহ মুসলিম, (১০১৫)]

ইবনুল কাইয়্যেম (রহঃ) বলেন, হারাম ভক্ষণ করা দোয়ার শক্তিকে নষ্ট করে দেয় ও দুর্বল করে দেয়।

৮. দোয়ার ক্ষেত্রে কোন সীমালঙ্ঘন না করা। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা দোয়ার মধ্যে সীমালঙ্ঘন করাটা অপছন্দ করেন। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন, “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক; নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।” [সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫] আরও বিস্তারিত জানতে দেখুন 41017 নং প্রশ্নোত্তর।

৯. ফরয আমল বাদ দিয়ে দোয়াতে মশগুল না হওয়া। যেমন, ফরয নামাযের ওয়াক্তে ফরয নামায বাদ দিয়ে দোয়া করা কিংবা দোয়া করতে গিয়ে মাতাপিতার অধিকার ক্ষুণ্ণ করা। খুব সম্ভব বিশিষ্ট ইবাদতগুজার জুরাইজ (রহঃ) এর কাহিনী থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কারণ জুরাইজ (রহঃ) তার মায়ের ডাকে সাড়া না দিয়ে ইবাদতে মশগুল থেকেছেন। ফলে মা তাকে বদদোয়া করেন; এতে করে জুরাইজ (রহঃ) আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হন।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, আলেমগণ বলেছেন: এতে প্রমাণ রয়েছে যে, জুরাইজের জন্য সঠিক ছিল মায়ের ডাকে সাড়া দেয়া। কেননা তিনি নফল নামায আদায় করছিলেন। নফল নামায চালিয়ে যাওয়াটা হচ্ছে- নফল কাজ; ফরয নয়। আর মায়ের ডাকে সাড়া দেয়া ওয়াজিব এবং মায়ের অবাধ্য হওয়া হারাম....”[শারহু সহিহু মুসলিম (১৬/৮২)]

আরও অধিক জানতে মুহাম্মদ বিন ইব্রাহিম আল-হামাদ রচিত ‘আল-দুআ’ নামক বইটি দেখুন।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/13506/

----------------------

 

>> দোয়া করার কিছু আদব-কায়দা

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: দোয়া করার আদবসমূহ কি কি? এর পদ্ধতি কি? এর ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ কি কি? দোয়া কিভাবে শুরু করতে হয় ও কিভাবে শেষ করতে হয়? আখেরাতের বিষয়াবলির আগে দুনিয়াবী বিষয়ে দোয়া করা যায় কি? দোয়া করার সময় হাত তোলার শুদ্ধতা কি; শুদ্ধ হলে এর পদ্ধতি কি?

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক:

নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর কাছে চাওয়াটা ও সবকিছু তাঁর থেকে প্রত্যাশা করাটা পছন্দ করেন। যে ব্যক্তি তাঁর কাছে চায় না তিনি তার ওপর রাগ করেন। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর কাছে চাওয়া বা প্রার্থনা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন: “আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”[সূরা গাফির, আয়াত: ৬০]

ইসলামে রয়েছে দোয়ার মহান মর্যাদা। এমনকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন কথাও বলেছেন: “দোয়া-ই ইবাদত”[সুনানে তিরমিযি (৩৩৭২), সুনানে আবু দাউদ (১৪৭৯), সুনানে ইবনে মাজাহ (৩৮২৮), আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে (২৫৯০) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

আল্লাহই ভাল জানেন।

দুই:

দোয়ার আদবসমূহ:

১। দোয়াকারীকে আল্লাহর রুবুবিয়্যত, উলুহিয়্যত ও আসমা-সিফাতের প্রতি একত্ববাদী হতে হবে। আল্লাহ তাআলা কর্তৃক দোয়া কবুল করার শর্ত হচ্ছে- বান্দা কর্তৃক আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিয়ে নেক কাজ করা ও গুনাহ পরিত্যাগ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “আর আমার বান্দাগণ যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে, (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয় আমি অতি নিকটে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৮৬]

২। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে দোয়া করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: আর “তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই প্রদান করা হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহ্‌র ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে।”[সূরা বাইয়্যেনা, আয়াত: ০৫] দোয়া হচ্ছে- ইবাদত; যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। তাই ইখলাস দোয়া কবুলের শর্ত।

৩। আল্লাহ্‌র সুন্দর নাম ও গুণাবলী দিয়ে তাঁকে ডাকা। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “আর আল্লাহ্‌র জন্যই রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক; আর যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন কর।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ১৮০]

৪। দোয়া করার পূর্বে আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করা। সুনানে তিরমিযিতে (৩৪৭৬) ফাযালা বিন উবায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপবিষ্ট ছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে নামায আদায় করল, এরপর দু’আ করল: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ করে দাও, তুমি আমাকে রহম কর’। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে নামাযী! তুমি বেশ তাড়াহুড়া করে ফেললে। তুমি নামায আদায় করে যখন বসবে তখন আগে আল্লাহর যথোপযুক্ত প্রশংসা করবে, আমার ওপর দরুদ পড়বে। এরপর আল্লাহর কাছে দু’আ করবে।” অপর এক রেওয়ায়েতে এসেছে (৩৪৭৭) “যখন তোমাদের কেউ নামায শেষ করবে তখন আল্লাহর প্রশংসা ও স্তুতি শুরু করবে। এরপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়বে। অতঃপর যা ইচ্ছা দোয়া করবে” বর্ণনাকারী বলেন: এরপর অপর এক লোক নামায আদায় করল। সে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়ল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “ওহে নামাযী! দোয়া কর, আল্লাহ তোমার দোয়া কবুল করবেন”[আলবানী সহিহুত তিরমিযি গ্রন্থে (২৭৬৫), (২৭৬৭) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

৫। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পড়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ না পড়া পর্যন্ত যে কোন দোয়া আটকে থাকে”[আল-মুজাম আল-আওসাত (১/২২০), আলবানী ‘সহিহুল জামে’ গ্রন্থে (৪৩৯৯) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

৬। কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা। সহিহ মুসলিমে (১৭৬৩) উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: বদর যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুশরিকদের দিকে তাকালেন; তাদের সংখ্যা ছিল এক হাজার। আর তাঁর সাথীবর্গের সংখ্যা ছিল তিনশত উনিশ। তখন তিনি কিবলামুখী হয়ে হাত প্রসারিত করলেন, তারপর তাঁর রবকে ডাকতে শুরু করলেন: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যে ওয়াদা দিয়েছেন সেটা বাস্তবায়ন করে দিন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেটা দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি যদি মুসলমানদের এ দলটিকে ধ্বংস করে দেন তাহলে পৃথিবীতে আপনার ইবাদত হবে না’। এভাবে দুই হাত প্রসারিত করে কিবলামুখী হয়ে তাঁর রবকে ডাকতে থাকলেন; এমনকি এক পর্যায়ে তাঁর কাঁধ থেকে চাদরটি পড়ে গেল...।

ইমাম নববী (রহঃ) ‘শারহু মুসলিম’ গ্রন্থে বলেন: এ হাদিসে দোয়াকালে কিবলামুখী হওয়া ও দুই হাত তুলে দোয়া করা মুস্তাহাব হওয়ার পক্ষে প্রমাণ রয়েছে।

৭। দুই হাত তোলা। সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে (১৪৮৮) সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় আপনাদের সুমহান রব হচ্ছেন লজ্জাশীল ও মহান দাতা। বান্দা যখন তাঁর কাছে দু’হাত তোলে তখন তিনি সে হাতদ্বয় শূন্য ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন।”[সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (১৩২০) আলবানী হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

হাতের তালু থাকবে আকাশের দিকে; যেভাবে একজন নতজানু দরিদ্র সাহায্যপ্রার্থী কিছু পাওয়ার আশায় হাত পাতে। সুনানে আবু দাউদ গ্রন্থে (১৪৮৬) মালেক বিন ইয়াসার (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যখন তোমরা আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইবে তখন হাতের তালু দিয়ে চাইবে; হাতের পিঠ দিয়ে নয়”[আলবানী সহিহ আবু দাউদ গ্রন্থে (১৩১৮) হাদিসটিকে সহিহ আখ্যায়িত করেছেন]

হাত তোলার সময় দুই হাত কি মিলিয়ে রাখবে; না কি দুই হাতের মাঝে ফাঁক রাখবে?

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) তাঁর ‘আল-শারহুল মুমতি’ গ্রন্থে (৪/২৫) উল্লেখ করেছেন যে, হাত দুইটি মিলিয়ে রাখবে। তাঁর ভাষায়: “দুই হাতের মাঝখানে ফাঁক রাখা ও এক হাত থেকে অন্য হাত দূরে রাখা সম্পর্কে আমি কোন দলিল পাইনি; না হাদিসে; আর না আলেমগণের বাণীতে।” [সমাপ্ত]

৮। আল্লাহর প্রতি এ একীন রাখা যে, আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন এবং মনোযোগ দিয়ে দোয়া করা। দলিল হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী: “তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার একীন নিয়ে দোয়া কর। জেনে রাখ, আল্লাহ তাআলা অবহেলাকারী ও অমনোযোগী অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।”[সুনানে তিরমিযি (৩৪৭৯), শাইখ আলবানী ‘সহিহুত তিরমিযি’ গ্রন্থে (২৭৬৬) হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন]

৯। বারবার চাওয়া। বান্দা আল্লাহর কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণকর যা ইচ্ছা তা চাইবে, কাকুতি-মিনতি করবে, তবে দোয়ার ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া করবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা কোন পাপ নিয়ে কিংবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিয়ে দোয়া করে। বান্দার দোয়া ততক্ষণ পর্যন্ত কবুল করা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বান্দা ফলাফল প্রাপ্তিতে তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞেস করা হল: ইয়া রাসূলুল্লাহ! তাড়াহুড়া বলতে কী বুঝাচ্ছেন? তিনি বললেন: বলে যে, আমি দোয়া করেছি, আমি দোয়া করেছি; কিন্তু আমার দোয়া কবুল হতে দেখিনি। তখন সে ব্যক্তি উদ্যম হারিয়ে ফেলে এবং দোয়া ছেড়ে দেয়।[সহিহ বুখারী (৬৩৪০) ও সহহি মুসলিম (২৭৩৫)]

১০। দৃঢ়তার সাথে দোয়া করা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন অবশ্যই এভাবে না বলে যে, হে আল্লাহ! আপনি যদি চান আমাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি যদি চান আমাকে দয়া করুন। কেননা নিশ্চয় আল্লাহর ওপর জবরদস্তি করার কেউ নেই।[সহিহ বুখারী (৬৩৩৯) ও সহিহ মুসলিম(২৬৭৯)]

১১। অনুনয়-বিনয়, আশা ও ভয় প্রকাশ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক”[সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫] তিনি আরও বলেন: “তারা সৎকাজে প্রতিযোগিতা করত, আর তারা আমাদেরকে ডাকত আগ্রহ ও ভীতির সাথে এবং তারা ছিল আমাদের নিকট ভীত-অবনত।”[সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ৯০] তিনি আরও বলেন: “আর আপনি আপনার রবকে নিজ মনে স্মরণ করুন সবিনয়ে, ভীতচিত্তে ও অনুচ্চস্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায়।”[সূরা আরাফ, আয়াত: ২০৫]

১২। তিনবার করে দোয়া করা। সহিহ বুখারী (২৪০) ও সহিহ মুসলিমে (১৭৯৪) আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি বলেন: “একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বায়তুল্লাহ্‌র কাছে নামায আদায় করছিলেন। সেখানে আবূ জেহেল ও তার সঙ্গীরা বসা ছিল। গতদিন উট জবাই করা হয়েছিল। এমন সময় আবু জেহেল বলে উঠল, ‘তোমাদের মধ্যে কে অমুক গোত্রের উটনীর নাড়ীভুঁড়ি এনে মুহাম্মদ যখন সিজদা করবে তখন তার পিঠের উপর রাখতে পারবে?’ তখন কওমের সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোকটি দ্রুত গিয়ে উটনীর নাড়ীভুঁড়ি নিয়ে এল এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদায় গেলেন তখন এগুলো তাঁর দুই কাঁধের মাঝখানে রেখে দিল। বর্ণনাকারী বলেন: তারা নিজেরা হাসতে থাকল; হাসতে হাসতে একে অন্যের ওপর হেলে পড়ল। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম। হায়! আমার যদি প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকত তাহলে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিঠ থেকে এগুলো ফেলে দিতাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় পড়ে থাকলেন; মাথা উঠালেন না। এক পর্যায়ে এক লোক গিয়ে ফাতিমা (রাঃ) কে খবর দিল। খবর শুনে তিনি ছুটে এলেন। সে সময় ফাতেমা (রাঃ) ছিলেন ছোট বালিকা। তিনি এসে উটের নাড়ীভুঁড়ি তাঁর পিঠ থেকে ফেলে দিলেন। এরপর লোকদের দিকে মুখ করে তাদেরকে গালমন্দ করলেন। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাঁর নামায শেষ করলেন তখন তিনি কণ্ঠস্বর উঁচু করলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করলেন। - তিনি যখন দোয়া করতেন তখন তিনবার করতেন এবং যখন প্রার্থনা করতেন তখন তিনবার করতেন- এরপর বললেন: ইয়া আল্লাহ্! আপনি কুরাইশকে ধ্বংস করুন। এভাবে তিনবার বললেন। তারা যখন তাঁর কণ্ঠস্বর শুনতে পেল তাদের হাসি মিলিয়ে গেল এবং তারা তাঁর বদ দোয়াকে ভয় পেল। এরপর তিনি বললেনঃ ইয়া আল্লাহ্! আবূ জেহেল ইবনে হিশাম, ‘উতবা ইবনে রাবী’আ, শায়বা ইবনে রবী’আ, ওয়ালীদ ইবনে ‘উকবা, উমাইয়্যা ইবনে খালাফ ও ‘উকবা ইবনে আবু মু’আইতকে ধ্বংস করুন। (রাবী বলেন, তিনি সপ্তম ব্যক্তির নামও বলেছিলেন কিন্তু আমি স্মরণ রাখতে পারিনি।) সেই সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের নাম উচ্চারণ করেছিলেন, আমি বদর যুদ্ধের দিন তাদেরকে নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। পরবর্তীতে তাদেরকে টেনেহিঁচড়ে বদরের কূপের মধ্যে ফেলে দেয়া হয়।”

১৩। ভাল খাবার ও ভাল পোশাক গ্রহণ করা (ভাল হতে হলে হালাল হওয়া জরুরী)। সহিহ মুসলিমে (১০১৫) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “হে লোকসকল! নিশ্চয় আল্লাহ ভাল। তিনি ভাল নয় এমন কিছু গ্রহণ করেন না। তিনি রাসূলদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন একই নির্দেশ মুমিনদের প্রতিও জারী করেছেন। তিনি বলেন: “হে রাসূলগণ! আপনারা ভাল খাবার গ্রহণ করুন এবং নেক আমল করুন। নিশ্চয় আপনারা যা কিছু আমল করেন সে সম্পর্কে আমি সম্যক অবগত”[সূরা মুমিনূন, আয়াত: ৫১] তিনি আরও বলেন: “হে ঈমানদারেরা! তোমাদেরকে যেসব ভাল রিজিক দিয়েছি সেগুলো থেকে খাও।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ১৭২] এরপর তিনি উল্লেখ করেন যে, জনৈক ব্যক্তি লম্বা সফর করে উস্কখুস্ক চুল নিয়ে ধুলিমলিন অবস্থায় দুই হাত আকাশের দিকে তুলে দোয়া করে: ইয়া রব্ব, ইয়া রব্ব! অথচ তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, সে পরিপুষ্ট হয়েছে হারাম খেয়ে তাহলে তার দোয়া কিভাবে কবুল হবে?” ইবনে রজব (রহঃ) বলেন: “হালাল খাওয়া, হালাল পান করা, হালাল পরিধান করা ও হালাল খেয়ে পরিপুষ্ট হওয়া দোয়া কবুল হওয়ার আবশ্যকীয় শর্ত।”[সমাপ্ত]

১৪। গোপনে দোয়া করা, শব্দ না করা। আল্লাহ তাআলা বলেন: “তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাক”[সূরা আরাফ, আয়াত: ৫৫] আল্লাহ তাআলা যাকারিয়া (আলাইহি সালাম) এর প্রশংসা করে বলেন: “যখন তিনি তার রবকে ডেকেছিলেন নিভৃতে”[সূরা মারিয়াম, আয়াত: ০৩]

ইতিপূর্বেও দোয়া সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা হয়েছে। দোয়াকারীর দোয়া কবুল হওয়ার কারণসমূহ, দোয়ার আদবসমূহ, যেসব সময় ও স্থান ফযিলতপূর্ণ ও দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনাপূর্ণ, দোয়াকারীর অবস্থা, দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাসমূহ ও দোয়া কবুলের প্রকারসমূহ ইত্যাদি 5113 নং প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/36902/

-------------------

 

>> তিনি একজন ভাল মুসলিমা হতে চান

প্রশ্ন:

আমি প্রকৃত ইসলামের অনুসারী নারী হতে চাই। আমি কিভাবে শুরু করতে পারি। আমি এখনও সে রকম খারাপ নই। তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সবগুলো পড়া হয় না। এখনো পুরোপুরি ইসলামি পোশাক পরিধান করি না। আমি এখন কিভাবে শুরু করব।

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

প্রকৃত ইসলাম মানে ইসলামের সকল হুকুম-আহকাম মেনে চলা। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- নামায। যেহেতু নামায হচ্ছে- ইসলাম ধর্মের ভিত্তিমূল। কেয়ামতের দিন বান্দাকে সর্বপ্রথম নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নামায হচ্ছে- ঈমানদার ও কাফেরের মাঝে পার্থক্যকারী অঙ্গীকার। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ত্যাগ করে সে কাফের। তাই আপনার অপরিহার্য কর্তব্য হচ্ছে- যথাসময়ে নামায আদায় করা এবং এ ব্যাপারে কোনরূপ অবহেলা না-করা।

এরপর শরিয়তের অন্যসব বিধিবিধান পালন করাও আপনার কর্তব্য। যেমন- হিজাব। যেসব উপায় উপকরণ গ্রহণ করলে ইসলামি বিধিবিধান পালন করা সহজ হয় তার মধ্যে রয়েছে- কুরআন তেলাওয়াত করা, নবীর সিরাত পড়া, নেককারদের জীবনী ও তাদের বিভিন্ন ঘটনা পড়া এবং আমরা আপনাকে কিছু মুসলিম সৎ বান্ধবী নির্বাচন করার উপদেশ দিচ্ছি। সৎসর্গের মাধ্যমে আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি ইসলামের উপর অবিচল থাকতে পারবেন।

প্রিয় বোন, আপনার উচিত হবে- আত্মসমালোচনা করা। আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেক ব্যক্তির উচিত, আগামী কালের জন্যে সে কি প্রেরণ করে, তা চিন্তা করা। আল্লাহকে ভয় করতে থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে খবর রাখেন।”[সূরা হাশর, ৫৯:১৮] এই আয়াতে দুই দুই বার আল্লাহকে ভয় করার (তাকওয়ার) নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং এ দুই নির্দেশের মাঝে আত্মসমালোচনা করার আদেশ দেয়া হয়েছে। সুতরাং ভেবে দেখুন, আগামীকালের জন্য আপনি কি কি ভালকাজ করেছেন এবং কি কি মন্দকাজ পরিহার করেছেন। এই আত্মসমালোচনা নিজেকে পরিবর্তন করার সবচেয় বড় উপায়। কেয়ামতের দিন বড় কঠিন, অতি দীর্ঘ, চরম ভীতিপ্রদ, সেই দিন চেহারাগুলো ফ্যাকাশে হয়ে যাবে। সুতরাং ভেবে দেখুন আপনি সেই দিনের জন্য কী কী নেক আমল প্রস্তুত করতে পেরেছেন। বেশী বেশী নেক আমল করুন। নিয়্যতকে একনিষ্ঠ করুন। সব ধরনের পাপাকার্য ছেড়ে দিন। পাপ কামাই হচ্ছে- সেদিনের সবচেয়ে মন্দ প্রস্তুতি। আপনি আপনার সবচেয়ে ভাল আমল নিয়ে আখেরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার চেষ্টা করুন। আল্লাহর নিকট দোয়া করতে ভুলে যাবেন না। যেন আল্লাহ আপনাকে সরল পথের হেদায়েত দেন এবং এর উপর আপনাকে অবিচল রাখেন।

আমরা আল্লাহর নিকট আমাদের জন্য ও আপনার জন্য তাওফিক প্রার্থনা করছি, হেদায়েত ও ভাল মৃত্যুর দোয়া করছি। আমাদের নবী মুহাম্মদ এর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/8424

---------------------------

>> এক তালিবে ইল্‌ম নারীদেরকে ইল্‌ম শিক্ষা দিতে গিয়ে নিজে তাদের একজনের সাথে বিশেষ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন

প্রশ্ন:

আমাদের দেশে একজন তালিবে ইল্‌ম আছে। তাঁর ইল্‌ম ভাল। তিনি আমাদেরকে ইলম অর্জন, তাকওয়া, সুন্নাহর অনুসরণ ও আলেমদের সাথে আদব মেনে চলার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেন। আমরা তাঁকে হকপন্থী সালাফী হিসেবে জানি। তিনি আমাদেরকে দ্বীনের খুঁটিনাটি যা কিছু শিক্ষা দেন আমরা তাঁকে অনুসরণ করে চলি। কুরআনে কারীম ও রাসূল (সাঃ) এর হাদিস শিক্ষাদানের জন্য তিনি সনদপ্রাপ্ত। যদিওবা আমরা উনার তাকলীদ করি, কিন্তু তিনি আমাদেরকে তাকলীদ না-করার প্রতি উৎসাহিত করেন। তিনি ফতোয়ার ক্ষেত্রে অথবা নারী হিসেবে আমাদের সাথে আচার আচরণের ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌কে ভয় করেন বলে আমি মনে করি। আমি তার জ্ঞান প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা রেখে থাকি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো একজন মহিলা আমাকে অবহিত করেছেন (আমার কাছে তাকে সত্যবাদী মনে হয়) যে, এই নারীর সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক আছে। সেটা সম্পূর্ণ গোপনে। আমি আবারও বলছি সম্পূর্ণ গোপনে। মহিলাটি জানাচ্ছেন যে, তিনি এ সম্পর্ককে বিয়ের মাধ্যমে শরিয়তসম্মত রূপ দেয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু নিজস্ব কিছু পরিস্থিতির কারণে তিনি সেটা পারছেন না। পরিতাপের বিষয় হলো- তা সত্ত্বেও তিনি এ মহিলার সাথে কথাবার্তা বন্ধ করেননি। তিনি বলছেন যে, তিনি পরিবেশ তৈরী করার চেষ্টা করছেন। এমতাবস্থায়, আমরা কি তার কাছ থেকে ইলেম অর্জনে বিরত থাকব? তার দরসে বসা থেকে বিরত থাকব? শয়তান আমাকে ধাঁধায় ফেলে দিচ্ছে, আমাকে বলছে- এই আলেম যা বলে তিনি নিজে সে অনুযায়ী আমল করেন না। তার প্রতিটি কথার মধ্যে শয়তান আমাকে সন্দেহে ফেলে দিচ্ছে। নাকি আমরা বলব- মানুষ মাত্রই গুনাহগার। হতে পারে এই গুনার কাছে তিনি হেরে গেছেন। আমাদের সাথে আচার ব্যবহারে তিনি আল্লাহ্‌কে ভয় করেন এটাই তো আমরা জানি। আর এ বিষয়টি একেবারে একটা গোপন বিষয়। গুটিকতক মানুষ ছাড়া এ বিষয়টি কেউ জানে না। আমি যে, এ বিষয়টি জানি তিনি তা জানেন না। নবী ছাড়া তো নিষ্পাপ কেউ নেই।

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদুলিল্লাহ্‌ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।

এ কথা সত্য যে, সকল গুনাহ থেকে মুক্ত এমন একজন মানুষও পাওয়া যাবে না। প্রত্যেক মানুষের গুনাহ রয়েছে। যে গুণার বিষয়টা শুধু সে ব্যক্তি জানে এবং তার রবব জানে। এটাই বনী আদমের প্রকৃত অবস্থা। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যে সত্ত্বার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ যদি তোমরা গুনাহ না করতে তাহলে আল্লাহ তোমাদের বদলে এমন এক কওমকে নিয়ে আসতেন যারা গুনাহ করত, আবার আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত, তখন আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দিতেন। [সহীহ মুসলিম, ২৭৪৯]

কিন্তু এটাও সত্য যে, আল্লাহর বান্দাদের অবস্থা নারীদেরকে দ্বীন শিক্ষদানে নিয়োজিত এই তালেবে ইলমের মত নয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে বলেনঃ ‘‘আর যদি শয়তানের প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে তাহলে আল্লাহর শরণাপন্ন হও, তিনি শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী। যাদের মনে আল্লাহর ভয় রয়েছে তাদের উপর শয়তানের আগমন হওয়ার সাথে সাথে তারা সতর্ক হয়ে যায় এবং তখনই তাদের বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে। পক্ষান্তরে যারা শয়তানের ভাই তাদেরকে শয়তান ক্রমাগত ভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যায়। অতঃপর তাতে কোন কমতি করে না’’। [সূরা আরাফ, ২০০-২০২] শাইখ ইবনে সাদী (রহঃ) বলেন, আল্লাহর কোন বান্দা গাফলতির দশা থেকে মুক্ত নয়। আর শয়তান বান্দার গাফলতির সুযোগ নেয়ার জন্য সীমান্ত প্রহরীর মত ওৎ পেতে বসে আছে। যখনই সে সুযোগ পায় আল্লাহর বান্দার উপর চড়াও হয়। তাই এখানে আল্লাহ তাআলা পথচ্যুত মুত্তাকীদের আলামত উলে­খ করেছেন। যখন কোন মুত্তাকী বান্দার গুনাহর প্রতি দুর্বলতা প্রকাশ পায়, তিনি শয়তানের প্ররোচনায় কোন হারাম কাজ করে ফেলে অথবা কোন ওয়াজিব পরিত্যাগ করে ফেলেন সাথে সাথে তিনি পর্যালোচনা করে বের করেন কোন পথ দিয়ে শয়তান তাকে প্ররোচিত করেছে, তাঁর উপর আল্লাহ যা ফরজ করেছেন তা তিনি স্মরণ করেন এবং ঈমানের অপরিহার্য দাবী কি তা তিনি মনে করেন। তখনই তাঁর বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হয়ে উঠে এবং তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান। তওবায়ে নাসুহ এর মাধ্যমে গুনার ক্ষতি পুষিয়ে নেন। এবং অধিক পরিমাণে নেকের কাজ করেন। এভাবে চরমভাবে নিরাশ করে শয়তানকে প্রতিহত করেন। শয়তান যতটুকু ক্ষতি করতে পেরেছে তিনি এর চেয়ে বেশী পুষিয়ে নেন। পক্ষান্তরে শয়তানের ভাইয়েরা, শয়তানের বন্ধুরা যখন কোন গুনাতে লিপ্ত হয় তখন তারা একের পর এক গুনাতে লিপ্ত হতে থাকে, গুনাহ থেকে তারা নিরস্ত হয় না। শয়তান যখন দেখতে পায় তারা গুনার প্রতি আসক্ত, মন্দ কাজে তাদের উৎসাহের কমতি নেই তখন শয়তান তাদের পিছু ছাড়ে না। [তাফসীরে সাদী, পৃঃ ৩১৩]

এই তালেবে ইলেম কোন শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত!! মুত্তাকীদের দ্বারা কোন গুনাহ ঘটলে তারা যা করে সেকি তা করেছে!! তার উচিত ছিল নিজেকে শুধরে নেয়া, তার বিবেচনাশক্তি জাগ্রত হওয়া, নিজের অপরাধের ব্যাপারে সাবধান হয়ে যাওয়া। সে তো মানুষকে কল্যাণকর জ্ঞান শিক্ষাদানে নিয়োজিত। মানুষ নিরাপদ ভেবে তাদের মেয়েদেরকে তার কাছে জ্ঞান শিখতে দিয়েছে এবং নারীরাও তার নিকট থেকে জ্ঞান শিখাকে নিরাপদ মনে করেছে। এরপর সে এ ধরনের জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়েছে। রাখালের দায়িত্ব নেকড়ের হাত থেকে পশুপালকে রক্ষা করা। কিন্তু রাখাল নিজেই যদি নেকড়ের চরিত্রে আবির্ভূত হয় তাহলে কি ঘটবে!! তার উচিত ছিল নিজের দুর্বলতার রাস্তা চিহ্নিত করে ফিতনার গলিপথ চিহ্নিত করে সেটা বন্ধ করে দেয়া। শয়তানের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া। তার উচিত ছিল পুরুষদের মাঝে দাওয়াতী কাজ করা। পুরুষদেরকে দ্বীন শিক্ষাদানে রত হওয়া এবং নারীদেরকে শিক্ষাদানের দায়িত্ব অন্যদের জন্য ছেড়ে দেয়া। কিন্তু সে তা না করে ফিতনার পথে এগিয়ে গেছে। অবৈধ সম্পর্ক ও অবৈধ যোগাযোগ অটুট রেখেছে- এগুলো সব গুনার কাজ। তার উচিত ছিল এগুলো পরিহার করা এবং এর মূল ফটক বন্ধ করে দেয়া। অর্থাৎ নারীদেরকে শিক্ষাদান ও নারীদের সাথে যোগাযোগের রাস্তাটাই বন্ধ করে দেয়া- যেহেতু সে নারীর প্রতি দুর্বল। উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি নবী (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, ‘‘আমার পরবর্তীতে পুরুষের জন্য নারীর ফিতনার চেয়ে কঠিন কোন ফিতনা আমি রেখে যায়নি’’।[সহীহ বোখারী (৪৮০৮) ও সহীহ মুসলিম (৬৮৮১)]

এই তালেবে ইলমের উচিত ছিল ফিতনার ব্যাপারে সাবধান হয়ে যাওয়া। কোন রাস্তা দিয়ে সে ফিতনাগ্রস্ত হচ্ছে তা চিহ্নিত করে সেটা বন্ধ করে দেয়া। কিন্তু এই পথে চলতে থাকাটা তাকে আত্মপ্রবঞ্চিত করেছে। তার দ্বীনদারিকে হুমকির সম্মুখীন করেছে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেছেন: যখন মুহাজিরগণ মদিনাতে আগমন করলেন তখন অবিবাহিত সাহাবীগণের জন্য আলাদা গৃহের ব্যবস্থা ছিল। বিবাহিত সাহাবীগণের বাসায় তারা থাকতেন না। এটি এজন্য অবিবাহিত সাহাবীগণ বিবাহিত সাহাবীগণের সাথে একত্রে বসবাস করলে এতে ফিতনার আশংকা রয়েছে। আগুন ও কাঠকে একত্রে রাখা যেমন পুরুষ ও নারীর একত্রিত হওয়াও তেমন।[ইস্তিকামা, পৃঃ ১/৩৬১]

তার এ অবৈধ সম্পর্ক সম্পূর্ণ গোপনে বলে আপনি উলে­খ করেছেন। অবৈধ সম্পর্ক তো গোপনে রাখা ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। নাকি আপনি চান যে, সে তার প্রেমিকাকে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরাফিরা করবে। আপনি এই হাদিসটি শুনুন, আমাদের আশংকা হচ্ছে- না জানি সে এ হাদীসের হুমকির অন্তর্ভুক্ত হয়ে আছে। সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে তিনি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: আমি জানি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের মধ্যে একদল তিহামা পাহাড়ের মত শুভ্র নেক আমল নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু আল্লাহ তাদের সেসব নেক আমলকে লাপাত্তা করে দিবেন। সাওবান বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আপনি আমাদেরকে তাদের পরিচয় জানিয়ে দিন; যেন অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বললেনঃ তারা তোমাদেরই ভাই, তোমাদেরই বংশধর। তারা তোমাদের মত তাহাজ্জুদগুজার। কিন্তু তারা নির্জনে নিভৃতে আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হয়।[ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪২৪৫, আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন]

আমরা সন্দেহাতীতভাবে বলতে চাই- আপনার জন্য উপদেশ হলো যেহেতু আপনি এই অঘটনের কথা জেনেছেন সুতরাং তার শিক্ষাগ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। আপনি তার ক্লাসের বদলে নির্ভরযোগ্য আলেমদের নিকট থেকে ইলম অর্জন করতে পারেন। এমনকি সেটা ওয়েব সাইটের মাধ্যমেও হতে পারে, ক্যাসেটের মাধ্যমেও হতে পারে, বইয়ের মাধ্যমেও হতে পারে। আলহামদুলিল্লাহ; ইলম অর্জনের মাধ্যম প্রচুর। বরঞ্চ আপনার উচিত হবে আপনার বান্ধবীকে নসীহত করা সে যেন এই শিক্ষকের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করে। পরবর্তীতে সে শিক্ষক যদি তাকে শরিয়ত মোতাবেক বিয়ে করতে চায় তাহলে প্রকাশ্যে সে যেন প্রস্তাব দেয়। যেভাবে দ্বীনদার ও সম্ভ্রান্ত লোকেরা প্রস্তাব দিয়ে থাকে। সে যেন বেদ্বীন লোকদের মত ডুবে ডুবে পানি না খায়। যদি আপনার পক্ষে সম্ভব হয় নারীদেরকে শিক্ষাদান থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সে শিক্ষককে কোন বার্তা পৌঁছানো যেমন এমন কোন ইঙ্গিত প্রদানের মাধ্যমে যে, তার বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেছে যাতে সে এমন কাজ থেকে বিরত হয় এবং তার পাপের ভয়াবহতার ব্যাপারে সাবধান হয় তাহলে সেটা করাটা ভাল। কিন্তু এতে যেন খবরের ছড়াছড়ি না ঘটে এবং মানুষের কানাঘুষার ব্যাপার না ঘটে। কেননা কোন মুমিনের দোষ গোপন রাখা শরয়ী দায়িত্ব। বিশেষতঃ এ ধরনের খবর প্রচারের কুফল অনেক বেশী এবং দ্বীনদার লোকদের দুর্নামের কারণ।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/140945/

---------------------

 

>> কোন পুরুষের চরিত্র ও দ্বীনদারিতে আকৃষ্ট হয়ে কোন নারী কি বিয়ের জন্য নিজেকে সে পুরুষের কাছে পেশ করতে পারে?

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: আমি দ্বীনধর্ম মেনে চলি এমন একজন মেয়ে। আমার বয়স ২৭ বছর। হাফেজে কুরআন। হিফযখানাতে পড়াই। ইলমে দ্বীন অর্জন করি। আমার এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যে কারণে অনেক যুবক আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তবে যারা প্রস্তাব দেয় তাদের দ্বীনদারির দুর্বলতার কারণে আমি সেসব প্রস্তাব ফিরিয়ে দেই। উপর্যুপরি সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কারণে আমি পারিবারিক চাপের মধ্যে আছি। তাছাড়া নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার কারণে আমি আমার সরকারী চাকুরীটিও ছেড়ে দিয়েছি। এতে আমার উপর আরও চাপ বেড়েছে। এখন আমার পরিবার চায় আমি যেন যে কোন ছেলের সাথে বিয়েতে রাজী হয়ে যাই। বিয়ে হওয়াটাই মুখ্য। প্রথাগতভাবে গোত্রের বাইরে বিয়ে নিষিদ্ধ। আমি সম্পদ চাই না, কিংবা সম্পদশালী, বড় পদে চাকুরীজীবী বা সুদর্শন যুবক চাই না। আমি চাই একজন নেককার ছেলে; যে আমাকে আল্লাহর আনুগত্যের পথে সাহায্য করবে, আমার চরিত্রের হেফাযত করবে। যাতে করে আমি আমার পরিবারের সাথে এসব সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারি। তাই চিন্তা করেছি আমার পরিচিতদের মধ্যে এক যুবককে প্রস্তাব পাঠাব। তার সাথে আমাদের বৈবাহিকসূত্রের আত্মীয়তা আছে। সে একজন চরিত্রবান ও দ্বীনদার যুবক। কুরআনে হাফেয ও তালেবে ইলম। আমি চাই আদব রক্ষা করে আকর্ষণীয় ভাষায় তাকে একটি মোবাইল মেসেজ পাঠাব। এই যুবকের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। আমি ভুলক্রমে তার মোবাইল নম্বর জেনেছি। এ ইস্যুতে আমি তৃতীয় কোন পক্ষ কিংবা অপর কাউকে জড়াতে চাচ্ছি না। এতে করে এ ইস্যুটি উভয় পক্ষের জন্য সংকটপূর্ণ হয়ে যেতে পারে এবং বিষয়টি জানাজানি হয়ে যেতে পারে। এমন কাউকে পাচ্ছি না যার উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি যে, সে বিষয়টি গোপন রাখবে। সুতরাং এক্ষেত্রে শরিয়তের হুকুম কি? দ্বিতীয়ত যে মেয়ে এমন একটি কাজ করতে যাচ্ছে তার ব্যাপারে আপনাদের মতামত কি? যে ছেলেকে এই মেয়ে সরাসরি প্রস্তাব দিবে সে মেয়ের ব্যাপারে এ পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হতে পারে? আপনারা আমাকে কি পরামর্শ দিবেন?

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আপনার উপর তার নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দেন। আপনার ইলম, আদব ও লজ্জাশীলতা আরও বাড়িয়ে দেন। আমরা আরও দুআ করছি, আল্লাহ যেন আপনার জন্য একজন সৎ পাত্র সহজে মিলিয়ে দেন। যাতে করে আপনি তার সাথে নেক সংসার গড়ে তুলতে পারেন।

নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার কারণে চাকুরীটি ছেড়ে দিয়ে আপনি ভাল কাজ করেছেন। বিয়ের প্রস্তাবক যুবকেরা চরিত্রবান ও দ্বীনদার না হওয়ায় তাদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেও আপনি ভাল কাজ করেছেন। আর এ যুবককে মেসেজ পাঠানোর আগে প্রশ্ন করেও আপনি উত্তম কাজটি করেছেন।

দুই:

বিয়ের জন্য কোন চরিত্রবান ও দ্বীনদার লোকের কাছে নিজেকে পেশ করা নারীর জন্যে হারাম নয় এবং বুদ্ধিমান লোকদের কাছে এটা দোষের কিছু নয়। কেউ যদি এটাকে খারাপ চোখে দেখে তাহলে তার সে দেখাটা শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে নয়; বরং সামাজিক রীতিনীতি, প্রথা ও অভ্যাসের দৃষ্টিকোণ থেকে। আবার অনেক সময় মহিলারা হিংসাবশত এটাকে খারাপ চোখে দেখে। সাবেত আল-বুনানী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি আনাস (রাঃ) এর কাছে ছিলাম। তাঁর কাছে তাঁর মেয়ে ছিলেন। এক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে নিজেকে (বিয়ের জন্য) পেশ করে বললেন: ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে কি আপনার প্রয়োজন আছে? আনাস (রাঃ) এর মেয়ে বললেন: ছি! ছি! তাঁর লজ্জাবোধ কতই কম! তখন আনাস (রাঃ) বললেন: সে মহিলা তোমার চেয়ে উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আগ্রহবশত তিনি তাঁর কাছে নিজেকে পেশ করেছেন।”[সহিহ বুখারী (৪৮২৮)] ইমাম বুখারী এ হাদিসের শিরোনাম দিয়েছেন “সৎ লোকের কাছে কোন নারীর নিজেই প্রস্তাব দেয়া শীর্ষক পরিচ্ছেদ”।

জনৈক সৎ নারী নিজে থেকে মুসা (আঃ) এর সাথে বিয়ের প্রতি ইঙ্গিত দিতে গিয়ে বলেন: যেমনটি আল্লাহ তাআলা উদ্ধৃত করেছেন, “নারীদ্বয়ের একজন বলল, আব্বু, আপনি তাকে মজুর নিয়োগ করুন। কারণ আপনার মজুর হিসেবে উত্তম হবে সে ব্যক্তি যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত।[সূরা কাসাস, আয়াত: ২৬] তবে আয়াত থেকে প্রতীয়মান হচ্ছে- মেয়েটির পিতা তাকে মূসা (আঃ) এর নিকট উপস্থাপন করেছেন। যেমনটি বুঝা যায় এ কথা থেকে “তিনি মূসাকে বললেন: আমি আমার এ কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই, এ শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার মজুরি খাটবে।”[সূরা কাসাস, আয়াত: ২৭]

এটি আপনার অভিভাবকদের প্রতি একটা মেসেজ; যাতে করে তারা আল্লাহকে ভয় করে, গোত্রীয় গোঁড়ামি পরিত্যাগ করে এবং একজন সৎ পাত্রের কাছে আপনাকে বিয়ে দেয়। অন্ততঃ কোন চরিত্রবান ও দ্বীনদার পাত্রকে যেন তারা প্রত্যাখ্যান না করে। এই সৎ লোকের মেয়েটি ইঙ্গিত দেয়ার পর লোকটি নিজের মেয়েকে মূসা (আঃ) এর কাছে পেশ করলেন। অনুরূপভাবে জনৈক সৎ মহিলা ইঙ্গিতে নয়; বরং সরাসরি নিজেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লামের কাছে পেশ করেছেন। এ ঘটনাগুলো লজ্জাশীলতার সাথে সাংঘর্ষিক নয়। বরং এ ঘটনাগুলো মজবুত দ্বীনদারি, সংশ্লিষ্ট মহিলা ও তার অভিভাবকের বুদ্ধির প্রখরতার প্রমাণ বহন করে।

আল-মাওসূআ আল-ফিকহিয়্যা (৩০/৫০) গ্রন্থে এসেছে-

কোন পুরুষের দ্বীনদারি, মর্যাদা, ইলম, কিংবা বিশেষ কোন দ্বীনি বৈশিষ্ট্যে বিমোহিত হয়ে কোন নারীর জন্য নিজেকে সে পুরুষের কাছে উপস্থাপন করা ও পরিচয় তুলে ধরা জায়েয আছে; এতে দোষের কিছু নেই। বরং এটি সে নারীর মর্যাদারই প্রমাণ বহন করে। এ বিষয়ে সহিহ বুখারীতে সাবেত আল-বুনানী থেকে বর্ণনা এসেছে যে, তিনি বলেন: আমি আনাস (রাঃ) এর কাছে ছিলাম... এরপর পূর্ণাঙ্গ হাদিসটি উল্লেখ করা হয়েছে। সমাপ্ত

তিন:

উপরোক্ত আলোচনার পর আমরা আপনাকে নিম্নলিখিত উপদেশগুলো দিচ্ছি; যে উপদেশগুলো আপনার কাজে আসবে ইনশাআল্লাহ।

১. আপনি সে ছেলেকে সরাসরি মেসেজ না পাঠিয়ে অপরিচিত অন্য কোন মোবাইল নম্বর থেকে মেসেজ করুন। যে নম্বরটি কেউ ব্যবহার করে না। এতে করে তাকে পাওয়া আপনার জন্য সহজ হবে। আপনি তার কাছে এভাবে একটি মেসেজ পাঠান যেন কেউ একজন আপনার ব্যাপারে তাকে সন্ধান দিচ্ছে; যদি তার বিয়ের আগ্রহ থাকে। মনে হবে মেসেজটি এমন এক পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে যে ব্যক্তি আপনাদের উভয়কে চিনে, এ মেয়েটির ব্যাপারে সে যেন অবহেলা না করে সে বিষয়ে তাকে উপদেশ দেয়া। আমাদের মতে, সরাসরি প্রস্তাব দেয়ার চেয়ে এটি উত্তম। কারণ হতে পারে বিষয়গুলো আপনার ইচ্ছামত না আগাতে পারে; এতে করে আপনার জন্য ও ছেলেটির জন্য এ বিষয়টি সংকটের কারণ হবে। অনুরূপভাবে মানুষ এ গ্যারান্টিও দিতে পারে না যে, সে ব্যক্তি তার বর্তমান এ দ্বীনদারির উপর সবসময় অটল, অবিচল থাকবে। তখন সে ব্যক্তি এ বিষয়টি তুলে আপনাকে তিরস্কার করতে পারেন। এ কারণে আলেমগণ “সৎ হওয়া” শর্ত করেছেন; শুধু ইলম থাকা ও কুরআন শরিফ মুখস্থ থাকাটা সৎ হওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। বরং সৎ হওয়ার অর্থ হচ্ছে- ইলম ও কুরআন অনুযায়ী আমল করা, এ দুটির নির্দেশিত চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া।

২. আপনি যদি তাকে মেসেজ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন সেক্ষেত্রে আপনি উপর্যুপরি মেসেজ পাঠানো অব্যাহত রাখবেন না। বরং আমরা আপনাকে নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের জন্য মেসেজ পাঠানোর বৈধতা দিচ্ছি। কারণ এ মেসেজগুলো সে ছেলের কিংবা আপনার কিংবা আপনাদের দুইজনের ফিতনাগ্রস্ত হওয়ার কারণ হতে পারে।

৩. মেসেজের বিষয়টি অন্য কাউকে অবহিত করবেন না, অন্য কারো সহযোগিতা নিবেন না। আমরা লক্ষ্য করেছি এদিকে আপনি সতর্ক আছেন।

৪. হতে পারে সে ছেলের পরিবেশ পরিস্থিতি বিয়ে করার জন্য উপযুক্ত নয়। কিংবা হতে পারে সে অন্য মেয়েকে প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে; একাধিক বিয়ে করার ইচ্ছা নাই। আপনি যদি তার পক্ষ থেকে এমন কিছু জেনে থাকেন তাহলে বারবার মেসেজ পাঠাবেন না। কারণ এ ক্ষেত্রে বারবার মেসেজ পাঠানোর কোন কারণ নেই। যেহেতু একবার মেসেজ পাঠানোর মাধ্যমেই তার কাছে আপনার বিয়ের প্রস্তাবটি উপস্থাপিত হয়েছে।

৫. যদি আল্লাহ তাআলা তার সাথে আপনার বিয়ে নির্ধারণ করে না রাখেন; তাহলে তার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকা ঠিক হবে না। কারণ এ ধরণের উন্মুখতার ভয়াবহতা আপনার অজানা নয়। এটি আপনাকে আল্লাহর আনুগত্য থেকে দূরে সরিয়ে আনবে। কুরআন মুখস্ত করা ও পুনঃপাঠ থেকে বিরত রাখবে। ইলম অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করবে। অন্তরে নানা রোগ সৃষ্টি করবে। গুনাহর দিকে ধাবিত করবে।

৬. মেসেজ পাঠানোর পূর্বে আমরা আপনাকে ইস্তিখারা করে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। মেসেজ পাঠানোর পর ও প্রস্তাবটি ছেলেকে জানানোর পরও আমরা আপনাকে ইস্তিখারা করার পরামর্শ দিচ্ছি। কারণ কোন মুসলমান জানে না তার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কোথায় রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে মুসলমান অজ্ঞ ও অক্ষম। তাই সর্ববিষয়ে জ্ঞানবান ও ক্ষমতাবান প্রতিপালকের কাছে সে দুআ করবে; যেন তিনি তার জন্য নির্বাচন করেন এবং যেখানে কল্যাণ আছে সেটা তার জন্য সহজ করে দেন, যেখানে অকল্যাণ আছে সেটা থেকে তাকে দূরে রাখেন।

৭. জেনে রাখুন, হতে পারে অন্য কোন ছেলে তার চেয়েও উত্তম। তাই আপনি যেহেতু শরয়িতসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করে তাকে সংবাদ দিয়েছেন, নিজেকে উপস্থাপন করেছেন, আল্লাহর কাছে ইস্তিখারা করেছেন; এরপর আল্লাহ আপনাদের দুইজনের মাঝে বিয়ে নির্ধারণ করে রাখেননি; সেক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবেন না। আল্লাহর কাছে দুআ করা ছেড়ে দিবেন না। অন্য প্রস্তাবকারী ছেলেদের মধ্যে চরিত্র ও দ্বীনদারির শর্ত পূরণে কোন ছাড় দিবেন না। ধৈর্যের সাথে আপনার পরিবারের চাপ সয়ে যান। “সুতরাং কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে, নিশ্চয় কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে।[সূরা ইনশিরাহ, আয়াত: ৫-৬]

যদি আপনার মোহরেমদের মধ্যে এমন কেউ থাকে আপনার ভাই বা চাচা... যার সাথে আপনার ঘনিষ্ঠতা আছে, তার সাথে আপনার এ প্রসঙ্গে কথা বলার সুযোগ আছে এবং কথা বললে তিনি দায়িত্ব নিবেন; যেমন অন্য সকল পুরুষ তাদের আত্মীয়াদের বিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রকার অবজ্ঞা ও অস্বীকৃতি ব্যতিরেকে দায়িত্ব পালন করে থাকে; আপনার ক্ষেত্রে এমন কাউকে পাওয়া গেলে বিষয়টি অনেক সহজ হবে। এতে করে আর কোন শংকা থাকে না এবং ইনশাআল্লাহ এটি আপনার জন্যেও প্রশান্তিদায়ক হবে।

আমরা আল্লাহর কাছে দুআ করি তিনি যেন আপনার জন্য এমন কাউকে পাওয়া সহজ করে দেন।

আরও জানতে 20916 নং, 89709 নং ও 69964 নং প্রশ্নোত্তর দেখুন।

আল্লাহই ভাল জানেন।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/99737/

--------------------

 

>> যে নারী দেরীতে বিয়ে হওয়ার ভয় করছে এবং যখনই তার কোন বান্ধবীর বিয়ে হয় তখনই সে বিষণ্ণ হয়ে পড়ে

প্রশ্ন:

আমি সবসময় দেখি যে, আমার বান্ধবীদের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। কারো কারো এনগেজমেন্ট হচ্ছে। এতে আমি বিষণ্ণ হই এবং অনুভব করি যে, আমার বিয়ে হতে দেরী হবে। যেহেতু আমাকে কেউ দেখে না। আমি থাকি ঘরের ভেতরে। তাই আমার মনে হয় যে, কখনও আমার বিয়ে হবে না। কিভাবে আমার জন্য ছেলে আসবে; আমি তো ঘরের ভেতরে। ঘর থেকে বের হই না। আমাকে কেউ দেখে না এবং আমি চাকুরীও করি না। আমি যদি ছেলেদের সাথে সম্পর্ক না রাখি তাহলে ভবিষ্যতে যে ছেলে আমাকে বিয়ে করবে সে কোথা থেকে আসবে? এ বিষয়ে আপনারা আমাকে কী উপদেশ দিবেন? এ ক্ষেত্রে কি কি সঠিক পদক্ষেপ অনুসরণ করা উচিত? সর্বদা আমার চিন্তা হচ্ছে: বিয়ের আগে ছেলেটিকে ভালভাবে জানা উচিত এবং তাকে জানার জন্য কিছুদিন তার সাথে কথাবার্তা বলা উচিত; যাতে করে পরবর্তীতে সে খারাপ বা এ ধরণের কিছু না পড়ে। এ দৃষ্টিভঙ্গি কি সঠিক? নাকি সরাসরি বিয়ে করতে হবে?

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদু লিল্লাহ্‌।

এক:

যদি একজন মুসলিম এ আয়াতে কারীমাটি একটু ভেবে দেখে: "দুনিয়ার জীবনে আমিই তো তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি এবং মর্যাদায় তাদের কাউকে কাউকে অন্যদের ওপরে উঠাই।"[সূরা যুখরুফ, আয়াত: ৩২] তাহলে জানতে পারবে যে, মানুষ ধনী হওয়া ও গরীব হওয়া, শক্তিশালী হওয়া ও দুর্বল হওয়া, সুস্থ হওয়া ও অসুস্থ হওয়া, বিবাহিত হওয়া ও অবিবাহিত থাকা, সন্তানধারী হওয়া ও নিঃসন্তান হওয়া... এ বণ্টন আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে; মানুষের পক্ষ থেকে নয়— তখন তার অন্তর প্রশান্ত হবে। কাউকে আল্লাহ্‌ বিশেষ কোন নেয়ামত দিলে সে ব্যক্তির প্রতি তার অন্তরে হিংসা হবে না। তার মনে দুশ্চিন্তা ও বিষণ্ণতা আসবে না; এই ভেবে যে, অমুকে এ নেয়ামত পেল সে পেল না কেন। কারণ সে জানে যে, সবকিছু আল্লাহ্‌র নির্দেশে ও তাঁর ইচ্ছায় ঘটে। আল্লাহ্‌ যা চান তা ঘটে; তিনি যা চান না তা ঘটে না।

একজন মুসলিম যখন এ বিষয়টি জানবে তখন ভবিষ্যৎ নিয়ে তার দুশ্চিন্তা আসবে না। বরং সে জানবে যে, তার দায়িত্ব হচ্ছে— আল্লাহ্‌র নির্দেশের ওপর অবিচল থাকা এবং তার গোটা জীবন আল্লাহ্‌র জন্য ও আল্লাহ্‌র আনুগত্যের সাথে যাপন করা। এরপর আল্লাহ্‌ যা খুশি তাকে রিযিক (জীবিকা) দান করবেন। অচিরেই আল্লাহ্‌ তার জন্য যে জীবিকা বণ্টন করেছেন সেটার ওপর তাকে সন্তুষ্টি ও পরিতুষ্টি দান করবেন।

মানুষের রিযিক নির্ধারিত। আল্লাহ্‌ তার জন্য যে রিযিক নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটা কোন বৃদ্ধি বা ঘাটতি ছাড়া আসবেই আসবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: "কোন আত্মা তার চূড়ান্ত রিযিক ও আয়ু ভোগ করা ছাড়া কখনও মৃত্যুবরণ করবে না। সুতরাং আল্লাহ্‌কে ভয় করুন এবং রিযিক সন্ধানকে সুন্দর করুন।"[আলবানী 'সিলসিলাতুল আহাদিসিস সাহিহা' গ্রন্থে (৬/৮৬৫) হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন] অর্থাৎ মানুষের রিযিক আসবেই আসবে। মানুষের কর্তব্য হচ্ছে—আল্লাহ্‌কে ভয় করা এবং তাঁর নির্দেশের গণ্ডিতে অবিচল থাকা। আর সুন্দরভাবে রিযিক সন্ধান করা। অর্থাৎ সীমানার ভেতরে থেকে রিযিক সন্ধান করা। সুতরাং হারাম উপায়ে রিযিক তালাশ না করা। কারণ সে যত যা করুক না কেন আল্লাহ্‌ তার জন্য যতটুকু রিযিক লিখে রেখেছেন এর বেশি সে পাবে না।

সুতরাং আপনার বাসা থেকে বের হওয়া, ছেলেদের সাথে সম্পর্ক রাখা, ইত্যাদি ইত্যাদি... এগুলো কিছুই না। এগুলোও সব করলে আপনার বিয়ের রিযিক আসবে— তা নয়। "সুতরাং আল্লাহ্‌কে ভয় করুন এবং রিযিক সন্ধানকে সুন্দর করুন"। আপনি ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করবেন না। শয়তান আপনার অন্তরে দুশ্চিন্তা নিক্ষেপ করছে; যাতে করে আপনাকে আল্লাহ্‌র পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে। বর্তমানে আল্লাহ্‌ আপনার কাছে কী চাচ্ছেন সেটা নিয়ে মশগুল থাকুন এবং আল্লাহ্‌র নির্দেশের ওপর অবিচল থাকুন। অচিরেই আল্লাহ্‌ আপনার জন্য যে রিযিক নির্ধারণ করে রেখেছেন সেটা আসবেই আসবে; এর ব্যতিক্রম হবে না।

দুই:

জানাশুনার উদ্দেশ্যে বিয়ের কিছুদিন আগে থেকে পাত্রের সাথে পরিচিত হওয়া ও তার সাথে কথাবার্তা বলা:

বাস্তবতা হচ্ছে—বিয়ের আগে পরিচিত হওয়ার মধ্যে কোন লাভ নেই। এ পরিচিতি সফল দাম্পত্য জীবনের কোন গ্যারান্টি দেয় না। আরও বেশি জানতে 84102 নং প্রশ্নোত্তরটি দেখুন। সে প্রশ্নোত্তরে রয়েছে যে, পূর্ব পরিচিতি ও প্রেম-ভালবাসার কাহিনীর পর সংঘটিত অধিকাংশ বিবাহ ব্যর্থ হয় এবং সেগুলোর শেষ পরিণতি হয়— তালাক।

বরং এ পরিচিতি একজন মেয়ের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ছেলেটি মিথ্যাবাদী প্রতারক হতে পারে। তখন সে মেয়েটি থেকে তার মনের ইচ্ছা পূর্ণ করে নিবে। মেয়েটি সবকিছু হারাবে; কিছুই পাবে না। প্রত্যেক মেয়ে এ কথাই বলে: 'আমি অন্যদের মত নই। আর যে ছেলেটিকে আমি ভালবাসি ও যার সাথে আমি ঘুরতে বের হই, সেও অন্য ছেলেদের মত নয়'। এই প্রতারণা দিয়ে শয়তান তাকে প্রতারিত করে। এক পর্যায়ে সে শয়তানের জালে পড়ে সবকিছু হারায়। পরিশেষে, মেয়েটির কাছে এটাই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তার অবস্থাও অন্য মেয়েদের মত। আরও জানতে দেখুন: 84089 নং প্রশ্নোত্তর।

কোন ছেলেকে জানাশুনার জন্য এইটুকু যথেষ্ট যে— তার  দ্বীনদারি, তার আখলাক এবং যে পরিবারে সে বড় হয়েছে ও থেকেছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা। কোন কোন সমাজে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও সামাজিক অবস্থান জানাও খুব গুরুত্বপূর্ণ; যেটাকে উপেক্ষা করা চলে না। এরপর কিছুদিন 'খিতবা' (প্রস্তাবনা)-র সময় অতিবাহিত হবে। এরপর বিয়ের আকদ হবে। জেনে রাখুন, স্বামী-স্ত্রীর প্রকৃত জানাশুনা তারা উভয়ে ঘর সংসার শুরু করে একই ছাদের নীচে বাস করার আগে সম্ভবপর নয়। এর আগে প্রস্তাবনা-কালীন সময় কিংবা আকদ-কালীন সময়ে প্রত্যেকে প্রত্যেকের ভাল দিকটা প্রকাশ করে; খারাপ দিকটা করে না। প্রত্যেক পক্ষ বিপরীত পক্ষকে তুষ্ট করার জন্য কৃত্রিমতা অবলম্বন করে। সংসার শুরু হওয়ার পর আসল রূপ প্রকাশ হয়। তখন মানুষ কৃত্রিমতা বাদ দিয়ে তার স্বরূপ প্রকৃতিতে ফিরে আসে।

এ কারণে বিয়ের আগের সময়টা যত দীর্ঘই হোক না কেন এটি দাম্পত্য জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতা সম্পর্কে জানার জন্য যথেষ্ট নয় এবং এ সময়ের চরিত্র আসল চরিত্র নয়।

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন আপনাকে সঠিক বুঝ দান করেন, আপনাকে তার পছন্দনীয় ও সন্তুষ্টির পথ ধরার তাওফীক দেন।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/218146/

-------------------------

 

>> ডাক্তারি পড়া ও হাসপাতালে চাকুরী করার হুকুম কি; যে পরিবেশে মেয়েদের সাথে মিশতে হয়?

প্রশ্ন:

প্রশ্ন: আমরা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। আমরা জানতে চাচ্ছি, যেসব হাসপাতালে নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে কাজ করে, পুরুষ ডাক্তার নারী-পুরুষ সকলকে সমানভাবে চিকিৎসা সেবা দেয়; তবে নিষিদ্ধ নির্জনবাস এড়িয়ে চলা সম্ভব। আপনাদের দৃষ্টিতে সেখানে চাকুরী করার শরয়ি হুকুম কি? আমাদের দেশের সকল হাসপাতালে একই নিয়ম। তাই কোন মুসলিম ডাক্তারের পক্ষে শুধু পুরুষদের জন্য খাস এমন কোন হাসপাতালে চাকুরী করার সুযোগ নেই; কারণ এমন কোন হাসপাতাল আমাদের দেশে নেই। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, উল্লেখিত সিস্টেমের কারণে একজন মুসলিম ডাক্তার ডাক্তারি পেশা ছেড়ে দিলে এতে মানবসেবা বিঘ্নিত হবে এবং এসব হাসপাতালে চাকুরী করার চেয়ে অধিক অকল্যাণ সাধিত হবে। এ ইস্যু নিয়ে আমরা খুব চিন্তার মধ্যে আছি। এ প্রশ্নের কোন সন্তোষজনক উত্তর পাইনি। আশা করি আল্লাহ আপনাদের মাধ্যমে আমাদেরকে সঠিক পথ দেখাবেন।

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদুলিল্লাহ।

এক:

আমরা আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এমন একটি মাসয়ালার শরয়ি হুকুম জিজ্ঞেস করার জন্য, বর্তমানে যে সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। আমরা আমাদের জন্য ও আপনাদের জন্য কথা ও কাজে তাওফিক প্রার্থনা করছি।

দুই:

কোন পুরুষ ডাক্তারের জন্য মহিলাদের চিকিৎসা করা জায়েয নয়। তবে যদি মুসলিম কিংবা অমুসলিম মহিলা ডাক্তার না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে জায়েয হবে। এ বিষয়ে ‘ইসলামী ফিকাহ একাডেমি’ থেকে একটি সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে রয়েছে: “শরিয়তের মূল বিধান হচ্ছে- বিশেষজ্ঞ মহিলা ডাক্তার মহিলা রোগীর চেক-আপ করবেন। যদি মুসলিম মহিলা ডাক্তার না পাওয়া যায় তাহলে বিশ্বস্ত অমুসলিম মহিলা ডাক্তার মহিলা রোগীর চেক-আপ করবেন। যদি অমুসলিম মহিলা ডাক্তারও না পাওয়া যায় তাহলে মুসলিম পুরুষ ডাক্তার মহিলা রোগীর চেক-আপ করবেন। যদি মুসলিম ডাক্তারও না পাওয়া যায় তাহলে অমুসলিম পুরুষ ডাক্তার সে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে শর্ত হল, পুরুষ ডাক্তার রোগিনীর শরীরের ততটুকু দেখবেন যতটুকু দেখা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার স্বার্থে প্রয়োজন; এর বেশি দেখবে না এবং সাধ্যমত দৃষ্টি অবনত রাখবে। পুরুষ ডাক্তারকে রোগিনীর চিকিৎসা করতে হবে রোগিনীর মোহরেম কিংবা স্বামী কিংবা কোন বিশ্বস্ত নারীর উপস্থিতিতে; যাতে করে নিষিদ্ধ নির্জনবাস না ঘটে।”

এছাড়া একাডেমির পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত পরামর্শ দেয়া হয়:

“মেয়েদেরকে মেডিকেল সাইন্সে ভর্তি হতে এবং চিকিৎসার সকল শাখায় বিশেষজ্ঞ জ্ঞান অর্জন করতে স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্তৃপক্ষকে তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা নিয়োজিত করতে হবে। বিশেষতঃ মেয়েলি রোগ ও প্রসূতিবিদ্যার ক্ষেত্রে। যেহেতু চিকিৎসার এ বিভাগগুলোতে মহিলা ডাক্তারের সংখ্যা খুবই নগণ্য। যাতে করে, (মহিলা ডাক্তারের অভাবে) এ ক্ষেত্রগুলোকে আমরা মূল বিধানের ব্যতিক্রম অবস্থা ঘোষণা করতে বাধ্য না হই।[একাডেমীর জার্নাল থেকে সংকলিত (৮/১/৪৯)]

এ সংক্রান্ত প্রশ্নোত্তরগুলোর জবাব দানে আমরা ফিকাহ একাডেমীর এ সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করেছি। যেমন দেখুন: 2152 নং ও 20460 নং প্রশ্নোত্তর।

তিন:

যদি কোন মুসলিম দেশের সবগুলো হাসপাতালতে নারী-পুরুষের মিশ্রিত অবস্থা বিরাজ করে; তাহলে এটি একটি দুঃখজনক বিশেষ বাস্তবতা। সেক্ষেত্রে পূর্বোক্ত নীতিমালা বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর নয়। কারণ মহিলা রোগীদেরকে কিংবা একটা বড় সংখ্যক মহিলা রোগীকে এ হাসপাতালগুলোতে যেতে হবে এবং পুরুষ ডাক্তারদের কাছে নিজেদেরকে পেশ করতে হবে। এতে কোন সন্দেহ নেই, যদি দ্বীনদার ডাক্তারদেরকে এ সকল হাসপাতালে চাকুরী করতে নিষেধ করা হয় তাহলে গোটা ময়দান বেদ্বীন ডাক্তারদের জন্য উন্মুক্ত হয়ে পড়বে; যারা তাদের চাকুরীর ক্ষেত্রে, দৃষ্টির ক্ষেত্রে কিংবা নির্জনবাসের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে না। অনুরূপভাবে দ্বীনদার ডাক্তারগণ চাকুরীর সুযোগ হারাবেন। কিংবা মেডিকেল কলেজগুলো দ্বীনদার ও সৎ মানুষ থেকে খালি হয়ে যাবে। কোন সন্দেহ নেই এতে রয়েছে মহা ক্ষতিকর অনেক বিষয়। যে ক্ষতিগুলো কোন পুরুষ কর্তৃক মহিলার সতর দেখার চেয়ে অনেক মারাত্মক হতে পারে; প্রয়োজন ও জরুরী মুহূর্তে শরিয়তে যা দেখার বৈধতা রয়েছে।

আমাদের নিকট যা অগ্রগণ্য প্রতীয়মান হচ্ছে তা হল –আল্লাহই ভাল জানেন- এ ধরণের হাসপাতালগুলোতে আপনারা চাকুরী করতে কোন আপত্তি নেই। তবে, এ বাস্তবতাকে পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। এমন কিছু প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে যেগুলোতে নারী-পুরুষের মিশ্রণ থাকবে না। এবং কিছু মহিলা হাসপাতাল চালু করার জন্য কর্তৃপক্ষকে রাজি করানো ও প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাতে হবে, যে হাসপাতালগুলোতে শরয়ি নীতিমালা মেনে চলা হবে, যেমন- নির্জনবাস এড়ানো, শুধু প্রয়োজনের স্থানটুকুতে দৃষ্টিকে সীমাবদ্ধ রাখা ইত্যাদি যে বিষয়ে 5693 নং প্রশ্নোত্তরে উল্লেখ করা হয়েছে।

আমাদের এ জবাবটি দুটো মৌলিক বিষয়ের উপর নির্ভরশীল:

১. আলেমগণের নিকট স্বতঃসিদ্ধ নীতি হচ্ছে- ইসলামী শরিয়ত কল্যাণ সাধন কিংবা কল্যাণকে পরিপূর্ণতা দিতে এসেছে এবং অকল্যাণকে প্রতিহত করা কিংবা হ্রাস করার জন্য এসেছে। তাই বড় অকল্যাণকে দূর করার জন্য ছোট অকল্যাণে লিপ্ত হওয়া জায়েয।

২. এটি প্রথম নীতির শাখাতুল্য। যেসব পেশায় চাকুরী করা নিষিদ্ধ কোন কোন আলেম সাধ্যানুযায়ী মন্দকে হ্রাস করার জন্য সেসব পেশায় চাকুরী করা জায়েয ফতোয়া দিয়ে থাকেন। যেমন শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) ফতোয়া দিয়েছেন: যে ব্যক্তিকে সরকারী কোন পদে নিয়োগ দিয়ে জনগণ থেকে মুকুস (হারাম ট্যাক্স) আদায়ে তাকে বাধ্য করা হয়, কিন্তু সে ব্যক্তি ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা ও যুলমকে প্রতিহত করার ও যতদূর সম্ভব মুকুস (হারাম ট্যাক্স) কমানোর সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করে। যদি তিনি এ পদ ছেড়ে দেন তাহলে এমন ব্যক্তি পদটি দখল করবে যে মানুষের উপর আরও বেশি যুলুম করবে। সে ব্যক্তির ক্ষেত্রে তিনি ফতোয়া দেন যে, এমন ব্যক্তির জন্য এ পদে বহাল থাকা জায়েয। বরঞ্চ তার চেয়ে উত্তম কোন ব্যক্তি যদি পদটি গ্রহণ না করে তাহলে তার জন্য এ পদে বহাল থাকা পদ ছেড়ে দেয়ার চেয়ে উত্তম। তিনি বলেন: “কখনো কখনো এ পদে বহাল থাকা তার উপর ফরজও হতে পারে; যদি অন্য কেউ দায়িত্ব গ্রহণে সক্ষম না হয়। কারণ সাধ্যানুযায়ী ন্যায় প্রতিষ্ঠা করা ও যুলুমকে প্রতিহত করা ফরজে কিফায়া। প্রত্যেক ব্যক্তি তার সক্ষমতা অনুযায়ী এ ফরজিয়ত আদায়ের চেষ্টা করবে; যদি তার পক্ষ থেকে অন্য কেউ সে দায়িত্ব পালন না করে।[মাজমুউল ফাতাওয়া (৩০/৩৫৬-৩৬০) থেকে সংকলিত]

জ্ঞাতব্য হচ্ছে- মুকুস (হারাম ট্যাক্স) আদায় করা মারাত্মক হারাম। এটি কবিরা গুনাহ। কিন্তু একজন নেককার মুসলিমের এ পদের দায়িত্ব গ্রহণের মধ্যে যেহেতু সাধ্যমত অকল্যাণকে হ্রাস করা ও সীমিত করার সুযোগ রয়েছে তাই তার জন্য এটি জায়েয হবে।

শাইখ উছাইমীন (রহঃ) শাইখুল ইসলাম (রহঃ) এর একটি বাণীর উপর সংযোজন করতে গিয়ে বলেন: “সাধারণ কল্যাণকে রক্ষা করতে হবে। উদাহরণতঃ আমরা যদি ডাক্তারিবিদ্যা ছেড়ে দিতে বলি এবং ভাল লোকেরা ডাক্তারিবিদ্যা অর্জন না করে; বলে যে, আমরা কিভাবে চিকিৎসাবিদ্যা অর্জন করব; আমাদের পাশে থাকে মহিলা নার্স, শিক্ষার্থী, ইন্টার্নী ডাক্তার? আমরা বলব: আপনি যদি এ ডাক্তারিবিদ্যা অর্জন করা থেকে বিরত থাকেন তাহলে এ বিদ্যার ময়দান কি খালি থাকবে? অচিরেই খারাপ লোকগুলো এ ময়দান দখল করে নিবে এবং জমিনে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দিবে। বরং আপনারা একজন, দুইজন, তিনজন, চারজন যদি একত্রিত হন আশা করি এমন একদিন আসবে যেদিন আল্লাহ তাআলা রাষ্ট্রপ্রধানকে হেদায়েত দিবেন এবং তিনি মহিলাদের জন্য আলাদা ও পুরুষদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করবেন।” [শারহ কিতাবুস-সিয়াসা আল-শারইয়্যা, পৃষ্ঠা-১৪৯]

শাইখ উছাইমীনকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, “আমরা একদল ডাক্তার রিয়াদে চাকুরী করি। আমাদের ডিউটিকালে পুরুষ ও মহিলা রোগী আসে। কখনো কখনো কোন মহিলা রোগী মাথা ব্যথা বা পেটে ব্যথার কথা বলেন। পরিপূর্ণ চিকিৎসার দাবী হচ্ছে- রোগিনীকে পরীক্ষা করে দেখা। পরীক্ষার মাধ্যমে মাথা ব্যথার কারণ নির্ণয় করা। রোগের কারণ নির্ণয় করতে গেলে রোগীর পেট কিংবা মাথা কিংবা অন্য কোন অঙ্গ পরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়; যাতে করে ডাক্তারের উপর কোন দায় না আসে। আর যদি রোগিনীকে পরীক্ষা করা না হয় হতে পারে এতে করে রোগিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। অর্থাৎ এক্ষেত্রে পরীক্ষা না করারও সুযোগ আছে। তবে যথাযথ কনসালটেন্সির করতে গেলে পরীক্ষা করা প্রয়োজন...।

শাইখ জবাবে বলেন:

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কর্তব্য হচ্ছে- পুরুষ ডাক্তার ও মহিলা ডাক্তারের মাঝে এমনভাবে ডিউটি ভাগ করে দেয়া যাতে করে মহিলা রোগী আসলে তাদের চেক-আপ করা ও পরীক্ষা করার জন্য মহিলা ডাক্তারের কাছে পাঠানো যায়। যদি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ কর্তব্য পালন না করে, এ বিষয়ে ভ্রূক্ষেপ না করে তাহলে মহিলাদের চিকিৎসা করায় আপনারা গুনাহগার হবেন না। তবে শর্ত হচ্ছে- চিকিৎসাকালে কোন মহিলা রোগীর সাথে নির্জনবাস না ঘটা এবং যৌন উত্তেজনা না আসা এবং প্রকৃতপক্ষে রোগীকে পরীক্ষা করার প্রয়োজন থাকা। যদি পরীক্ষা করার প্রয়োজন না থাকে, কিংবা সূক্ষ্ম পরীক্ষা পরবর্তীতে মহিলা ডাক্তার আসার পর করলেও চলে তাহলে সে পরীক্ষা পরবর্তীতেই করতে হবে। আর যদি দেরী করার সুযোগ না থাকে; তাহলে এটি প্রয়োজন। এমতাবস্থায় পুরুষ ডাক্তার মহিলা রোগীর চিকিৎসা করলে গুনাহ হবে না।[লিকাআতুল বাব আল-মাফতুহ (১/২০৬)]

আমরা আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদের পরিবেশ-পরিস্থিতি ও মুসলমানদের পরিবেশ-পরিস্থিতি শোধরে দেন। আমাদেরকে প্রকাশ্য ও গোপন সকল ফেতনা থেকে বাঁচিয়ে রাখেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, নিকটবর্তী ও দোয়াতে সাড়াদানকারী।

আল্লাহই ভাল জানেন।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/69859/

------------------------

 

>> পর্ণ ওয়েবসাইটগুলো দেখায় আসক্ত স্বামীর পরিত্রাণের উপায়

প্রশ্ন:

আমার বিয়ে হয়েছে দেড়মাস। আমি আবিষ্কার করেছি যে, আমার স্বামী পর্ণ ছবি ও ভিডিও ক্লিপ দেখে। আমি আমার ভেতরে আফসোস ও যন্ত্রণা অনুভব করছি। আমার জীবন সুখ থেকে দুঃখে পরিবর্তিত হয়েছে। আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি। কিন্তু আমি কিছুতেই এটা মানতে পারিনি। আমি তার সাথে বিদেশে অবস্থান করছি। আমি আশা করেছিলাম সে আমার জন্য আদর্শ স্বামী হবে। আমি আমার সাথে তার ভাল আচরণকে অস্বীকার করি না। কিন্তু এই বিষয়টি উদঘাটনের পর আমার মন ভেঙ্গে গেছে। আমি সারাক্ষণ কাঁদছি। সারাদিন চুপ করে থাকি; যা আমার আসল চরিত্রের বিপরীত। কিন্তু যেহেতু আমি বিদেশে অবস্থান করছি এবং আমার পরিচিত কেউ নেই। আমার স্বামীকে না জানিয়ে কোথাও যাওয়া আমার জন্য কঠিন। কারণ আমি চাই না যে, সে জানুক যে আমি কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাহায্য চাচ্ছি। সে আমাকে স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, সে ধুমপায়ী। আমি বিয়ের আগে এটি জানতাম না এবং বিয়ের পরও কিছুদিন পর্যন্ত জানতাম না। আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেছি যে, সে আমাকে নিয়ে সুখী হবে না কিংবা আমার সাথে তার জীবন সুখী হবে না। আমার স্বামীর সাথে আমার আচরণের পদ্ধতি সম্পর্কে আমি আপনাদের সাহায্য চাই। সে তৃতীয় লিঙ্গের ছবি ও ভিডিও দেখা, পুরুষের অঙ্গবিশিষ্ট নারীদের চিত্র দেখার অর্থ কি সে সমকামী?

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

প্রিয় বোন,

আমাদের এ যামানায় অনেক যুবক অশ্লীল পর্ণ দেখায় আসক্ত হয়ে পড়েছে; ইন্টারনেটে এসব পর্ণ ওয়েবসাইটগুলো দেখা সহজলভ্য হওয়ার কারণে। এই আসক্তি আসক্ত ব্যক্তিকে বাস্তবিক হালাল স্ত্রী নিয়ে তৃপ্ত হতে দিচ্ছে না। এর কারণ হচ্ছে কাল্পনিক হারামের প্রতি তার আসক্তি এবং নিজের কামনা-বাসনার অনুসরণ!

বিষয়টি শুধু এতে সীমাবদ্ধ নয় যে, আপনাকে নিয়ে তার সুখী হওয়া ও আনন্দিত হওয়া; বরং বিষয় হচ্ছে অন্য নারীর প্রতি হারাম দর্শনে তার আসক্তি। বিশেষতঃ আপনার সাথে বিয়ের প্রথম মাসেই সে এটি করছে।

এই আসক্তি একটি ব্যাধি; যার চিকিৎসা প্রয়োজন।

এই আসক্তির সর্বাধিক কার্যকরী ঔষধ হচ্ছে আসক্তির উৎসকে স্বেচ্ছায় বা জোরপূর্বক বিচ্ছিন্ন করা এবং সময়কে দুনিয়া ও আখিরাতের উপকারী কাজে লাগানো। এর সাথে মানসিক ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া; যাতে করে প্রয়োজন হলে ডাক্তার ঔষধ দিয়ে ও কথার মাধ্যমে তাকে চিকিৎসা দিতে পারে।

এই আসক্তি থেকে তাকে মুক্ত করার জন্য জন্য আপনাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। তা করতে হবে এভাবে: এই ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসগুলো থেকে তাকে দূরে রাখার চেষ্টা করা; যেগুলো তার জন্য এই হারামের দরজা খুলে দিচ্ছে। যে সব গবেষণা এসব ডিভাইসের ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবধান করছে সেগুলো নিয়ে তার সাথে কথা বলা। অনুরূপভাবে দুনিয়া ও দ্বীনের উপকারী বিষয়াবলী নিয়ে তার সাথে কথা বলা এবং আল্লাহ্‌র আনুগত্যশীল আমলগুলো পালন করার ক্ষেত্রে তাকে সহযোগিতা করা।

যদি এ ক্ষেত্রে সে সাড়া না দেয় কিংবা মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আপনি তাকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে বসার পরামর্শ দেন; এই ডিভাইসগুলোর আসক্তি থেকে কিংবা এগুলো ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট উদ্বিগ্নতার উপসর্গগুলো থেকে মুক্তির জন্য।

অনুরূপভাবে আমরা আপনাকে একজন দ্বীনদার ও আমানতদার মনোরোগ কনসালটেন্টের শরণাপন্ন হওয়ার উপদেশ দিচ্ছি। এমনকি সেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে হলেও। যাতে করে তিনি আপনাকে জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে তার সাথে আপনার আচরণের বিষয়ে সাধারণ পরামর্শ দিতে পারেন এবং দাম্পত্য সম্পর্কের বিষয়ে বিশেষ পরামর্শ দিতে পারেন।

তবে জেনে রাখুন, দাম্পত্য সম্পর্কের খুঁটিনাটি বিষয়ে আপনার পিতা ছাড়া অন্য কোন পুরুষের সাথে আলোচনা করা জায়েয নয়; চাই তিনি মনোরোগ ডাক্তার হন কিংবা অন্য কেউ। যেহেতু এর ফলে ফিতনার দরজা খুলে যাওয়া কিংবা হারাম সম্পর্ক গড়ে উঠা ঘটে থাকে।

সংক্ষেপে মূলকথা হচ্ছে: এক্ষেত্রে আপনার দায়িত্ব হলো আপনি তাকে অন্য কেউ থেকে বিমুখ করে আপনার মুখী করে রাখবেন। তাকে হালাল দিয়ে হারাম থেকে দূরে রাখবেন। এক্ষেত্রে আপনি আপনার সর্বোচ্চ শ্রম ব্যয় করবেন এবং এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে আপনি রাব্বুল আলামীনের কাছে সওয়াব পাওয়ার নিয়ত করবেন।  

তার তৃতীয় লিঙ্গের ক্লিপ দেখার প্রসঙ্গে বলব (আল্লাহ্‌ আমাদেরকে ও তাকে হেদায়েত করুন) এটি একটি বিকৃত আচরণ; যার মধ্যে বিকৃত বিষয় দিয়ে মজা পাওয়া অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এর মানে এমনটি হওয়া আবশ্যক নয় যে, ব্যক্তি নিজেও বিকৃত (সমকামী)। কারণ সমকামী ব্যক্তি সাধারণত মেয়েদের চিত্র দেখে মজা পায় না। বরং এর উল্টোটাই হয়।

আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করছি তিনি যেন আমাদেরকে ও তাকে হেদায়েত করেন।

নিশ্চয় তিনি এর অধিকারী ও এতে সক্ষম।

আল্লাহ্‌ই সর্বজ্ঞ।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/258604/

------------------------

>> হস্তমৈথুনের হুকুম এবং এটা থেকে বাঁচার উপায়

প্রশ্ন:

আমার একটি প্রশ্ন আছে, আমি সে প্রশ্নটি পেশ করতে লজ্জাবোধ করছি। এক বোন নতুন ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি প্রশ্নটির জবাব জানতে চান। কুরআন-হাদিসের দলিল ভিত্তিক এ প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই। আমি আশা করব, আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন। আমি আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি, যদি আমার প্রশ্নটি অশালীন হয় তাহলে তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু, মুসলিম হিসেবে জ্ঞানার্জনে আমাদের লজ্জাবোধ করা উচিত নয়।

সে বোনের প্রশ্ন হচ্ছে– হস্তমৈথুন করা কি ইসলামে জায়েয?

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

এক. কুরআনে কারীম:

ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন: ইমাম শাফেয়ি এবং যারা তাঁর সাথে একমত পোষণ করেছেন তারা সবাই এ আয়াত দিয়ে হস্তমৈথুন হারাম হওয়ার পক্ষে দলিল দিয়েছেন। আয়াতটির ভাবানুবাদ হচ্ছে-

“আর যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে হেফাযত করে। নিজেদের স্ত্রী বা মালিকানাভুক্ত দাসীগণ ছাড়া; এক্ষেত্রে (স্ত্রী ও দাসীর ক্ষেত্রে) অবশ্যই তারা নিন্দিত নয়। যারা এর বাইরে কিছু কামনা করবে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।”[সূরা মুমিনুন, আয়াত: ৫-৬]

ইমাম শাফেয়ি ‘নিকাহ অধ্যায়ে’ বলেন: ‘স্ত্রী বা দাসী ছাড়া অন্য সবার থেকে লজ্জাস্থান হেফাযত করা’ উল্লেখ করার মাধ্যমে স্ত্রী ও দাসী ছাড়া অন্য কেউ হারাম হওয়ার ব্যাপারে আয়াতটি সুস্পষ্ট। এরপরও আয়াতটিকে তাগিদ করতে গিয়ে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন (ভাবানুবাদ): “যারা এর বাইরে কিছু কামনা করবে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।” সুতরাং স্ত্রী বা দাসী ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে পুরুষাঙ্গ ব্যবহার করা বৈধ হবে না, হস্তমৈথুনও বৈধ হবে না। আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।[ইমাম শাফেয়ি রচিত ‘কিতাবুল উম্ম’]

কোন কোন আলেম এ আয়াত দিয়ে দলিল দেন: “যারা বিবাহে সক্ষম নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন।”[সূরা নূর, আয়াত: ৩৩] এ আয়াতে সংযমের নির্দেশ দেয়ার দাবী হচ্ছে– অন্য সবকিছু থেকে ধৈর্য ধারণ করা।

দুই. সুন্নাহ্‌:

আলেমগণ এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ্‌ বিন মাসউদ (রাঃ) এর হাদিস দিয়ে দলিল দেন যে, তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আমরা এমন কিছু যুবকে ছিলাম যাদের কিছু ছিল না। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: হে যুবকেরা! তোমাদের মধ্যকার যার باءة (বিয়ের খরচ বহন ও শারীরিক সামর্থ্য) রয়েছে সে যেন বিয়ে করে ফেলে। কেননা, তা তার দৃষ্টি নিম্নগামী রাখতে ও লজ্জাস্থানকে হেফাজত করায় সহায়ক হয়। আর যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে না, সে যেন রোজা রাখে। কারণ তা যৌন উত্তেজনা প্রশমনকারী।”[সহীহ বুখারী (৫০৬৬)]

শরিয়ত প্রণেতা, বিয়ে করতে অক্ষম হলে কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও রোযা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। হস্তমৈথুন করার পরামর্শ দেননি। যদিও হস্তমৈথুনের প্রতি আগ্রহ বেশি থাকে, হস্তমৈথুন করা রোযা রাখার চেয়ে সহজ। কিন্তু তদুপরি তিনি সে অনুমতি দেননি।

এ মাসয়ালায় আরও অনেক দলিল আছে। আমরা এ দলিলগুলো উল্লেখ করাই যথেষ্ট মনে করছি।

হস্তমৈথুনে লিপ্ত ব্যক্তি কিভাবে এর থেকে মুক্তি পেতে পারেন এ সম্পর্ক নিম্নে আমরা কিছু উপদেশ ও পদক্ষেপ উল্লেখ করব:

১। এই অভ্যাস থেকে বাঁচার প্রেরণা যেন হয় আল্লাহ্‌র নির্দেশ পালন ও তাঁর অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা।

২। স্থায়ী সমাধান তথা বিয়ের মাধ্যমে এ অভ্যাসকে প্রতিরোধ করা। কারণ এটাই ছিল যুবকদের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপদেশ।

৩। নানা রকম কু-চিন্তা ও খারাপ ভাবনা থেকে দূরে থাকা। দুনিয়া বা আখেরাতের কল্যাণকর চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ত রাখা। কারণ কু-চিন্তাকে বাড়তে দিলে সেটা এক পর্যায়ে কর্মের দিকে নিয়ে যায়। চূড়ান্ত পর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রয়ের বাইরে গিয়ে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। তখন তা থেকে মুক্ত হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

৪। দৃষ্টিকে নত রাখা। কারণ কোন ব্যক্তি বা অশ্লীল ছবির দিকে দৃষ্টিপাত করা, সেটা জীবিত মানুষের হোক কিংবা আঁকা হোক, বাঁধহীন দৃষ্টি ব্যক্তিকে হারামের দিকে নিয়ে যায়। এ কারণে আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন: “মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে”[সূরা নূর, আয়াত: ৩০] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “তুমি দৃষ্টির পর দৃষ্টি দিবে না”[সুনানে তিরমিযি (২৭৭৭), আলবানী হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলেছেন] তাই প্রথম দৃষ্টি, যে দৃষ্টি হঠাৎ করে পড়ে যায় সেটাতে গুনাহ না থাকলেও দ্বিতীয় দৃষ্টি হারাম। এছাড়া যে সব স্থানে যৌন উত্তেজনা জাগিয়ে তোলার উপকরণ বিদ্যমান থাকে সেসব স্থান থেকে দূরে থাকা বাঞ্ছনীয়।

৫। নানাবিধ ইবাদতে মশগুল থাকা। পাপকাজ সংঘটিত হওয়ার মত কোন অবসর সময় না রাখা।

৬। এ ধরণের কু-অভ্যাসের ফলে যেসব শারীরিক ক্ষতি ঘটে থাকে সেগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। যেমন- দৃষ্টিশক্তি ও স্নায়ুর দুর্বলতা, প্রজনন অঙ্গের দুর্বলতা, মেরুদণ্ডের ব্যথা ইত্যাদি যেসব ক্ষতির কথা চিকিৎসকরা উল্লেখ করে থাকেন। অনুরূপভাবে বিভিন্ন মানসিক ক্ষতি; যেমন- উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, মানসিক পীড়া অনুভব করা। এর চেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে- নামায নষ্ট করা। যেহেতু বারবার গোসল করা লাগে, যা করা কঠিন। বিশেষতঃ শীতের রাত্রিতে। অনুরূপভাবে রোযা নষ্ট করা।

৭। ভুল দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি পরিতুষ্টি দূর করা। কারণ কিছু কিছু যুবক ব্যভিচার ও সমকামিতা থেকে নিজেকে রক্ষা করার ধুয়া তুলে এই কু-অভ্যাসকে জায়েয মনে করে। অথচ হতে পারে সে যুবক ব্যভিচার ও সমকামিতার নিকটবর্তী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।

৮। কঠিন ইচ্ছা ও শক্ত সিদ্ধান্ত দিয়ে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা। শয়তানের কাছে হার না মানা। একাকী না থাকা; যেমন একাকী রাত কাটানো। হাদিসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন পুরুষকে একাকী রাত কাটাতে নিষেধ করেছেন।[মুসনাদে আহমাদ, হাদিসটি ‘সহিহুল জামে’ তে রয়েছে]

৯। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত প্রতিকার পদ্ধতি গ্রহণ করা; সেটা হচ্ছে– রোযা রাখা। কেননা রোযা যৌন উত্তেজনাকে প্রশমিত করে এবং যৌন চাহিদাকে পরিশীলিত করে। এর সাথে উদ্ভট আচরণ থেকে সাবধান থাকা; যেমন- হস্তমৈথুন পুনরায় না করার ব্যাপারে শপথ করা কিংবা মানত করা। কারণ যদি কেউ পুনরায় করে ফেলে তাহলে সে ব্যক্তি পাকাপোক্ত-শপথ ভঙ্গকারী হিসেবে গণ্য হবে। অনুরূপভাবে যৌন উত্তেজনা নিরোধক ঔষধ সেবন না করা। কেননা এসব ঔষধ সেবনে শারীরিক ঝুঁকি আছে। তাছাড়া যৌন উত্তেজনা একেবারে নিঃশেষ করে ফেলে এমন কিছু সেবন করা থেকে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা সাব্যস্ত হয়েছে।

১০। ঘুমানোর সময় ইসলামী আদবগুলো মেনে চলা। যেমন- ঘুমানোর দোয়াগুলো পড়া, ডান পার্শ্বে কাত হয়ে শোয়া, পেটের উপর ভর দিয়ে না-ঘুমানো; যেহেতু এ সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিষেধ আছে।

১১। ধৈর্য ও সংযমের গুণে নিজেকে ভূষিত করা। কারণ হারাম কাজ থেকে ধৈর্য রাখা আমাদের উপর ফরয; যদিও আমাদের মাঝে সেগুলো করার চাহিদা থাকে। আমাদের জানা উচিত, যদি আমরা নিজেকে সংযমী রাখার চেষ্টা করি তাহলে পরিশেষে সেটা ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য আখলাকে পরিণত হবে। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি সংযম অবলম্বন করে আল্লাহ্‌ তাকে সংযমী বানিয়ে দিবেন, যে ব্যক্তি অমুখাপেক্ষী থাকার চেষ্টা করবেন আল্লাহ্‌ তাকে অমুখাপেক্ষী বানিয়ে দিবেন, যে ব্যক্তি ধৈর্য রাখার চেষ্টা করবেন আল্লাহ্‌ তাকে ধৈর্যশীল বানিয়ে দিবেন। কোন মানুষকে ধৈর্যের চেয়ে প্রশস্ত ও কল্যাণকর আর কোন দান দেয়া হয়নি।”[সহিহ বুখারী (১৪৬৯)]

১২। কেউ যদি এই গুনাহটি করে ফেলে তাহলে তার উচিত অনতিবিলম্বে তওবা করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, নেকীর কাজ করা এবং ক্ষমাপ্রাপ্তির ব্যাপারে হতাশ না হওয়া। কেননা এ পাপটি একটি কবিরা গুনাহ।

১৩। সর্বশেষ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ্‌র কাছে ধর্ণা দেয়া, দোয়ার মাধ্যমে তাঁর কাছে মিনতি করা, তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা এই কু-অভ্যাস থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় উপায়। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা দোয়াকারীর ডাকে সাড়া দেন। আল্লাহ্‌ই ভাল জানেন।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/329/

-----------------------

 

>> সমকামিতা থেকে মুক্তির উপায়

প্রশ্ন:

আমি মুসলিম। আমার বয়স ষোল। আমি নিয়মিত নামাজ পড়ি ও রোজা রাখি। ব্যক্তিগত জীবনে আমি দ্বীনদার। তবে সমস্যা হল আমি সমকামী। শুরুতে আমি আমার পিতাকে নিয়ে ভাবতাম। আমার মনে হয় জেনিটিক কারণে আমি সমকামী হয়েছি। আমি খারাপ চিত্র দেখি। তবে আমি এ থেকে নিষ্কৃতি পেতে চাই। আমি জীবনে কখনো যৌনকর্মে লিপ্ত হই নি। আমি সত্যি সত্যিই আল্লাহকে ভয় করি। আমি তাঁকে সবসময়ই ডাকি যাতে তিনি আমাকে সাহায্য করেন।

আপনার কাছে আমার আকুল আবেদন আপনি আমাকে বাস্তব কিছু পরামর্শ দেবেন যাতে আমি এই দুর্যোগ থেকে রেহাই পেতে পারি।

উত্তর:

আলহামদু লিল্লাহ।.

আলহামদুলিল্লাহ।

দুয়া করি আল্লাহ তোমাকে এই মারাত্মক ব্যাধি থেকে অতি দ্রুত আরোগ্য দান করুন। তোমার হৃদয়কে সকল পঙ্কিলতা থেকে পবিত্র করে দিন। নিশ্চয় আল্লাহ এ-বিষয়ে ক্ষমতাবান।

এ ধরনের মহাপাপে জড়িত হওয়ার শাস্তি যে শুধু পরকালেই হবে তা নয়, বরং দুনিয়ার জীবনেও এ শাস্তির অংশ বিশেষ ভোগ করতে হয়। সার্বক্ষণিক আফসোস ও যন্ত্রণা হৃদয়কে ভারাক্রান্ত করে রাখা এটাই তো শাস্তি হিসেবে যথেষ্ট। এর সাথে যদি মারাত্মক রোগ-ব্যাধির বিষয়টি যুক্ত হয়; যেগুলোর  ব্যাপারে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা একমত যে সমকামীদের এসব রোগ হয়ে থাকে, তাহলে তো আর কথাই নেই। প্রশ্ন নং 10050 থেকে এ ব্যাপারে আরো দিকনির্দেশনা নেবে বলে আশা রাখি।

তোমার রোগের চিকিৎসা নিম্নবর্ণিতভাবে হতে পারে:

এক:

তোমাকে হৃদয় থেকে সত্যিকার অর্থে তওবা করতে হবে। আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। অতীতে যা করেছ তার জন্য লজ্জিত হতে হবে। বেশি-বেশি দুয়া করতে হবে এবং কায়মনোবাক্যে আকুতি করতে হবে আল্লাহ যেন তোমাকে ক্ষমা করে দেন। তিনি যেন তোমাকে এই বিষয় থেকে নিষ্কৃতি পেতে সাহায্য করেন। নিশ্চয় আল্লাহ আরাধ্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেহেরবান এবং দুয়া কবুলে অধিক নিকটবর্তী। আল্লাহ তাআলা বলেন, "বলুন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছে, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করে দেন। নিশ্চয় তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু।”[সূরা আল-যুমার, আয়াত: ৫৩]

তাই তুমি আল্লাহর সামনে পড়ে যাও। কাঁদো, নিজের মনকে বিগলিত করে অশ্রু ঝরাও, তোমার প্রয়োজন ও দীনতা প্রকাশ করো। গুনাহ মাফ চাও। আল্লাহর প্রতি ক্ষমাপ্রাপ্তি ও বিপদমুক্তির ব্যাপারে আশাবাদী হও।

দুই:

নিজের হৃদয়ে ঈমানের বীজকে যত্ন করো। যখন এ-বীজ অঙ্কুরিত হয়ে বেড়ে ওঠে, তখন তা দুনিয়া-আখেরাত উভয় জাহানের কামিয়াবি নিয়ে আসে। আল্লাহর প্রতি ঈমানই (আল্লাহর তাওফিকের পর) বান্দাকে হারাম কাজ থেকে বাঁচায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বলেননি, “ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে মুমিন অবস্থায় থাকে না।”[সহিহ বুখারি (২৪৭৫) ও সহিহ মুসলিম (৫৭)]

তাই ঈমান যখন তোমার হৃদয়কে কর্ষিত করবে, তোমার অন্তরাত্মা ও অনুভূতি ঈমান দিয়ে ভরে যাবে, তখন আর তুমি হারাম কাজ করতে সাহস পাবে না। আর মুমিন যদি একবার হোঁচট খায় সাথে সাথেই সে চৈতন্যে ফিরে আসে। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, “নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, যখন শয়তানের পক্ষ থেকে কোনো কুমন্ত্রণা তাদেরকে স্পর্শ করে তখন তারা আল্লাহকে স্মরণ করে। তখনই তাদের দৃষ্টি খুলে যায়।”[সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ২০১]

তিন:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুবসমাজকে যে উপদেশ দিয়েছেন তা পালন করার চেষ্টা করো। সেটা হলো বিবাহের উপদেশ; যদি তুমি এ ব্যাপারে সক্ষম হও। তোমার বয়স কম বলে অজুহাত দাঁড় করিও না। কেননা অল্প বয়স বিবাহের পথে প্রতিবন্ধক নয়; কখনো না। যেহেতু তোমার বিয়ে করা জরুরি, তাই তোমার বেলায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত হাদিসটি বর্তাবে। তিনি বলেছেন: “হে যুবসম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ে করার ক্ষমতাসম্পন্ন সে যেন বিয়ে করে ফেলে। কেননা দৃষ্টিকে অধিক অবদমনকারী, যৌনাঙ্গকে অধিক হেফাজতকারী। আর যে তা পারবে না, সে যেন রোজা রাখে, এটা তার জন্য যৌন-উত্তেজনা দমনকারী।"[সহিহ বুখারি (৫০৬৫) ও সহিহ মুসলিম (১৪০০)] তুমি নবীর এই উপদেশকে আঁকড়ে ধরো। এতে আল্লাহ চাহে তো মুক্তির উপায় পাবে।

তোমার মাতা-পিতাকে এ ব্যাপারে খোলাখুলি বলে বিবাহের আগ্রহ ব্যক্ত করতেও কোনো সমস্যা নেই। লজ্জা যেন তোমাকে মাতা-পিতার কাছে খোলামেলা বলা থেকে বিরত না রাখে সে ব্যাপারে সতর্ক হও।

বিবাহের ব্যাপারে সিরিয়াসলি চিন্তা করো। দারিদ্র্যকে ভয় পেয়ো না; আল্লাহ তোমাকে নিজ করুণায় অভাবমুক্ত করে দেবেন। ইরশাদ হয়েছে, “আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সৎকর্মশীল দাস-দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যবান ও মহাজ্ঞানী।”[সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়েছেন যে, সৎ উদ্দেশে যে ব্যক্তি বিয়ে করল আল্লাহ তাকে সাহায্য করবেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তিন ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা অবশ্যই সাহায্য করেন, আল্লাহর পথে জিহাদকারী, মূল্য পরিশোধ করার সদিচ্ছা আছে এমন মুকাতেব দাস, ইজ্জতের পবিত্রতা রক্ষার ইচ্ছায় বিবাহকারী ব্যক্তি।”[সুনানে তিরিমিযি (১৬৫৫), সুনানে নাসায়ি (৩১২০) সুনানে ইবনে মাজাহ (২৫১৮), আলবানি ‘সহিহুত তারগিব ওয়াত তারহিব’ গ্রন্থে (১৯১৭) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।

চার:

যদি বিবাহ করা সম্ভবপর না হয় তাহলে আরেকটি সমাধান হল রোজা রাখা। তাহলে তুমি মাসে তিনদিন রোজা রাখার চিন্তা করছ না কেন? অথবা প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবারে?

রোজায় তো অনেক সওয়াব রয়েছে। হাদিসে কুদসিতে এসেছে: “আদম সন্তানের প্রতিটি আমল তার নিজের; তবে রোজা ব্যতীত। নিশ্চয় রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব।”[সহিহ বুখারি (১৯০৪) ও সহিহ মুসলিম (১১৫১)]

তাকওয়া সৃষ্টির উদ্দেশে আল্লাহ তাআলা রোজার বিধান দিয়েছেন মর্মে পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে। ইরশাদ হয়েছে, “হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। আশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী হবে।”[সূরা আল বাকারা, আয়াত:১৮৩]

রোজার মধ্যে যেমনি রয়েছে যৌনতার টানে ছুটে যাওয়া থেকে সুরক্ষা, রয়েছে আল্লাহর কাছে মহা প্রতিদান প্রাপ্তি; তেমনি রয়েছে মানুষের ইচ্ছাশক্তি দৃঢ় করা, ধৈর্য, সহনশীলতা, কুপ্রবৃত্তি ও ভোগের লিপ্সার উপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার প্রশিক্ষণ। ভাইটি আমার, তাই অবিলম্বে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নাও। আশা করা যায় আল্লাহ তোমার জন্য সহজ করে দিবেন।

পাঁচ:

হারাম জিনিস থেকে দৃষ্টিকে সংযত করতে কখনও অবহেলা করবে না। যেমন- অশ্লীল ম্যাগাজিন, নগ্ন ছবি ইত্যাদি; যা অবৈধ যৌনাচার ও মহাপাপে জড়িয়ে পড়তে মানুষকে প্ররোচিত করে এবং মনের মধ্যে খারাপ প্রভাব গভীরভাবে জিইয়ে রাখে। এসব থেকে আমরা আল্লাহর আশ্রয় চাই। আল্লাহ তাআলা বলে: “মুমিন পুরুষদের বলে দিন, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত।”[সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০] 

জেনে রাখ, তুমি যদি হারাম দৃষ্টি থেকে বিরত থাকার ক্ষেত্রে অবহেলা কর, তাহলে তুমি শয়তানকে সুযোগ করে দিলে যাতে সে এর পরবর্তী পদক্ষেপকে তোমার সামনে সুশোভিত করে পেশ করতে পারে। যেহেতু তুমি একবারের জন্য হলেও শয়তানের ইচ্ছার সামনে নতজানু হয়েছে তাই পরেরটার ব্যাপারে সে খুব তৎপর থাকে।

ছয়:

যখন গুনাহ করার মনস্কামনা সৃষ্টি হবে কিংবা এই পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য শয়তানের ওয়াসওয়াসা অনুভূত হবে, তখন স্মরণ করবে যে তোমার এইসব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাল কিয়ামতের মাঠে তোমার বিরুদ্ধে সাক্ষী হয়ে দাঁড়াবে। তুমি কি জান না যে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, এই যৌবন ও উদ্যম তোমার প্রতি আল্লাহ তাআলার নেয়ামত? এই নেয়ামতকে আল্লাহ্‌র অবাধ্যতার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা কিংবা আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার ক্ষেত্রে নিয়োজিত করা কি আদৌ তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া?

আরেকটি বিষয়ে তোমার সতর্ক হওয়া উচিত। আস আমার সাথে আল্লাহ তাআলার বাণীটি পড়: “অবশেষে তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে, তখন তাদের কান, তাদের চোখ ও তাদের চামড়া তাদের বিরুদ্ধে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষী দেবে, আর তারা তাদের চামড়াগুলোকে বলবে, কেন তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে? তারা বলবে, আল্লাহ আমাদের বাক্শক্তি দিয়েছেন যিনি সবকিছুকে বাক্শক্তি দিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁরই প্রতি তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।”[সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ২০-২১]

হাদিসে এসেছে- আনাস (রাঃ) বলেন: একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে উঠলেন। এরপর বললেন: “তোমরা কি জান, কি নিয়ে হাসছি? আমরা বললাম: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। বান্দা তার রবকে সম্বোধন করে যা বলবে তা নিয়েই হাসছি। বলবে: হে আমার রব! আপনি কি জুলুম থেকে আমাকে আশ্রয় দেননি? তিনি বলবেন: হ্যাঁ। অতঃপর বান্দা বলবে, তাহলে আমি নিজের উপর নিজেকে সাক্ষী মানা ব্যতীত অন্য কারও সাক্ষীকে বৈধতা দেব না। আল্লাহ বলবেন: আজ তুমি নিজেই তোমার উপর সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট, আর রেকর্ডসংরক্ষণকারী ফেরেশতারাও সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট। অতঃপর তার মুখ বন্ধ করে দেয়া হবে। তার অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বলা হবে: কথা বলো। তখন তারা তার আমল সম্পর্কে বলবে। অতঃপর তাকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হবে। তখন সে বলবে, “তোমরা ধ্বংস হও, তোমরা নিপাত যাও। তোমাদের জন্যই আমি শ্রম-মেহনত করতাম?”[সহিহ মুসলিম (২৯৫৯)]

সাত:

কখনো একাকী নিভৃতে থেকো না। কেননা একাকীত্ব যৌনবিষয়ে চিন্তাকে ডেকে আনে। সময়কে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হও। যেমন- নেক আমল করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, যিকির করা, নামায পড়া ইত্যাদি।

আট:

ফাসেক ও অসৎপ্রবণ ব্যক্তিদের সঙ্গ ত্যাগ করো; যারা এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়, যৌনউত্তেজক কথাবার্তা বলতে অভ্যস্ত, যারা গুনাহকে তুচ্ছভাবে পেশ করে এবং সেটাকে কর্মে পরিণত করতে নির্ভয়। ওদেরকে ছেড়ে তুমি সৎলোকদের সঙ্গ ধরো; যারা তোমাকে আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দেবে, তাঁর আনুগত্যের ব্যাপারে তোমাকে সহায়তা করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “মানুষ তার বন্ধুর স্বভাব ও আদর্শের হয়ে থাকে। সুতরাং কার সাথে বন্ধুত্ব করছ তা ভেবেচিন্তে করো।”[সুনানে তিরমিযি (২৩৭৮), আলবানি হাদিসটিকে সহিহুত তিরমিযি (১৯৩৭) গ্রন্থে ‘হাসান’ বলেছেন।

নয়:

যদি ধরে নিই যে দুর্বলতার কোন এক মুহূর্তে তুমি পাপে লিপ্ত হয়েছ তবে তুমি আর ওদিকে যেও না। বরং অবিলম্বে তওবা করে আল্লাহ্‌র দিকে ফির। আশা করি, তুমি ঐ লোকদের দলভুক্ত হবে যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন: “আর যারা কোন কু-কাম করলে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আল্লাহ ছাড়া আর কে গুনাহ ক্ষমা করবে? এবং তারা যা করে ফেলে, জেনে-বুঝে তারা তা বার বার করতে থাকে না।”[সূরা আল-ইমরান, আয়াত: ১৩৫]

প্রিয় ভাই! তুমি আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। হুঁশিয়ার, সাবধান! শয়তান যেন তোমার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে না পারে। তোমাকে যেন কুমন্ত্রণা না দেয় যে, আল্লাহ তোমার গুনাহ কখনো ক্ষমা করবেন না। কেননা আল্লাহ তওবাকারীর সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন।

আমি আল্লাহ্‌ তাআলার প্রতি আশাবাদী তিনি তোমার কুপ্রবৃত্তির বিপক্ষে তোমাকে সাহায্য করবেন এবং এই মহারোগ থেকে তোমাকে মুক্তি দিবেন।

এ বিষয়ে আরও জানার জন্য আমরা তোমাকে “কাইফা তুওয়াজিহুস শাহওয়া হাদিস ইলাশ শাবাব ওয়াল ফাতাইয়াত” (কিভাবে যৌন কামনাকে মোকাবিলা করবে, তরুণ-তরুণীদের প্রতি কিছু কথা) নামক পুস্তিকাটি পড়ার পরামর্শ দিচ্ছি।

Link- https://islamqa.info/bn/answers/20068/

----------------------

 

 

 

ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে

 

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক বইয়ের (৫০০+) pdf লিংক
https://justpaste.it/4ne9o

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.
https://justpaste.it/islamicappvideo

>> রবের_কাছে_ফেরার_গল্পগুলো
https://justpaste.it/deen_a_ferar_golpo

>> "বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"
https://justpaste.it/5gol5

>> র‍্যান্ড, মডারেট ইসলাম, মডার্নিস্ট মুভমেন্ট
https://justpaste.it/76iwz

>> কিছু গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক Apps, YouTube Video, Quran Recitation, YouTube channel.
https://justpaste.it/islamicappvideo

>> ফেসবুক ও ইউটিউবের উপকারী সব পেইজ, গ্রুপ, আইডি এবং চ্যানেলের লিংক
https://justpaste.it/facebook_page_grp_link

>> তাকদির আগে থেকে নির্ধারিত হলে মানুষের বিচার হবে কেন? যাদের কাছে ইসলামের দাওয়াহ পৌঁছেনি তাদের কী হবে?
https://justpaste.it/6q4c3

>> কুরআন এবং আপনি
https://justpaste.it/5dds8

>> কখনও ঝরে যেও না …
https://justpaste.it/3bt22

>> ফজরে আমি উঠতে পারি না
https://justpaste.it/6kjl6

>> এই ১০টি ফজিলতপূর্ণ আমল যা আপনার সারাবছরের_ই দৈনন্দিন রুটিনে থাকা উচিত
https://justpaste.it/9hhk1

>> ইস্তিগফার অপার সম্ভাবনার দ্বার
https://justpaste.it/6ddvr

>> দাম্পত্যজীবন, অজ্ঞতা ও পরিণাম
https://justpaste.it/7u5es

>> বিপদাপদে ধৈর্যধারণ : ফজিলত, অর্জনের উপায় ও করণীয়
https://justpaste.it/8dccj

>> মহান রবের আশ্রয়ে সিরিজের সকল পর্ব
https://justpaste.it/6ttuf

>> স্বার্থক মুনাজাত
https://justpaste.it/1xf0t

>> রাসূলের উপর দরুদ ও সালাম পাঠ-সংক্রান্ত ৭ পর্বের একটি সিরিজ
https://justpaste.it/4hhtd

>> তাহাজ্জুদ সিরিজ
https://justpaste.it/4ja0n

>> মহিমান্বিত কুরআন সিরিজের সকল পর্ব
https://justpaste.it/3dxi7

>> ধ্বংসাত্মক দৃষ্টি (বদ নজর সিরিজের সকল পর্ব)
https://justpaste.it/7056k

>> বিশুদ্ধ ঈমান সিরিজ
https://justpaste.it/7fh32

>> ইমান ভঙ্গের ১০ কারণ
https://justpaste.it/9icuq

>> দুশ্চিন্তা ও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ১০ আমল
https://justpaste.it/8gmtk

>> পর্দায় প্রত্যাবতন: পর্দায় ফেরার গল্প
https://justpaste.it/3lqzf

>> নফসের জিহাদ -শায়খ আহমাদ মুসা জিবরীল (হাফিজাহুল্লাহ)
https://justpaste.it/8vnly

>> রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সকাল-সন্ধ্যার দু'আ ও যিকর
https://justpaste.it/sokalsondharjikir

>> সালাফদের আত্মশুদ্ধিমূলক বাণী
https://justpaste.it/9e6qh

>> সন্তান লাভের ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ আমল
https://justpaste.it/9hth5

>> Rain Drops, Baseera, Hunafa, Mubashshireen Media ও Ummah Network থেকে প্রকাশিত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোর (তাওহীদ সিরিজ, আকিদা সিরিজ, তাহাজ্জুদ, সালাত, আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহ নিয়ে আলোচনা, ধূলিমলিন উপহার রামাদান, আলোর পথে যাত্রা, পরকালের পথে যাত্রা, শ্রেষ্ঠ মানুষেরা(নবীদের জীবনী), জীবন-মৃত্যু-জীবন, সীরাহ(রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জীবনী), কুরআনের কথা, কোরআনের বিভিন্ন সূরার তাফসীর, আমি তাওবা করতে চাই কিন্তু, সাহাবীদের ঈমানদীপ্ত জীবনী, বোনদের প্রতি উপদেশ) অডিও ডাউনলোড লিংক
https://justpaste.it/4kes1

>> পাপ থেকে বাঁচার ১০ উপায়: যা সকল মুসলিমের জানা আবশ্যক
https://justpaste.it/3ob7j

>> রমজানের প্রস্তুতি : মুমিনের পথ ও পাথেয়
https://justpaste.it/5tziy

>> কাফির ও ইসলামের শত্রুদের মৃত্যু বা বিপদে আনন্দ প্রকাশ
https://justpaste.it/6ksvm

>> মহিমান্বিত রজনী (লাইলাতুল কদর) সিরিজ, লাইলাতুল কদরের জন্য ১২ টি সহজ আমল এবং ইতিকাফের গুরুত্ব, ফজিলত, উদ্দেশ্য, আমল।
https://justpaste.it/1q3bs

>> বিশেষ নফল নামাজ সিরিজ (ইশরাক, দোহা, চাশত, আওয়াবিন, যাওয়াল, সালাতুল হাজত, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুল ইস্তিখারা, তাহিয়্যাতুল অজু, সালাতুত তাহাজ্জুদ, তাহিয়্যাতুল মাসজিদ, সালাতুত তাওবাহ, সালাতুল কুসুফ)
https://justpaste.it/9n0kf

>> হাদিসের শিক্ষা সিরিজ
https://justpaste.it/4fywd

>> ইস্তিখারা সিরিজ
https://justpaste.it/2i736

>> আমাদের নবীজি (সাঃ) সিরিজ
https://justpaste.it/4c1tt

>> Words With Nusus সিরিজ
https://justpaste.it/6h968

>> বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিন (জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন)
https://justpaste.it/1s2vv

>> আশুরা দিবস : বাস্তবতা, পালনীয় ও বর্জনীয়
https://justpaste.it/3kn8w

>> ইসলামিক বই, অডিও-ভিডিও লেকচার সিরিজ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের লিংকগুলো পাবেন এখানে। সবগুলো বিষয়ের লিংক এক জায়গায় রাখা হয়েছে। এই লিংকটা শেয়ার করতে পারেন।
https://justpaste.it/48f6m

>> বিবাহের কিছু আমল ও দু‘আ এবং সুখী দাম্পত্যজীবনের জন্য ১০টি করণীয়, স্বামী ও স্ত্রীকে বশ করে রাখার টোটকা
https://justpaste.it/58k7y

>> দুআ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ লেখাসমূহ, দুআ কবুলের সময় শর্তাবলী ও আদবসমূহ, দুআ কবুলের গল্পগুলো
https://justpaste.it/7ttq6

>> কুরআন কারীম নিয়ে আতীক উল্লাহ হুজুরের অসাধারন কিছু কথা ও উপদেশ
https://justpaste.it/8abde

>> সন্দেহ সংশয় নিরসন সিরিজ
https://justpaste.it/751n9