JustPaste.it

খারিজীরা কী পূর্বে কখনো খিলাফত ঘোষণা করেছিল ?

(আইএস সমর্থক #Md_Noor_Islam এর সংশয়ের জবাব)

.

আইএস সমর্থক #Md_Noor_Islam খারিজী আইএসের বাতিল ও নিশ্চিহ্ন হওয়া সাম্রাজ্যকে সঠিক খিলাফত দাবি করে অনেকগুলো পয়েন্ট উত্থাপন করে লিখেছিলো, সে নাকি জীবনেও শোনেনি যে, খারিজীরা কখনো খিলাফত ঘোষণা করেছে !! সে নাকি জীবনেও শোনেনি যে, খারিজীরা কখনো হুদুদ কায়েম করেছে !! সে নাকি জীবনেও শোনেনি যে, খারিজীরা কখনো কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে কিংবা কাফিরদের প্রতি কঠোর ছিলো !!!

সে তার পোস্টে লিখেছে, // প্রথমেই বলে রাখলাম এই পোস্টের জবাব স্বয়ং জাওয়াহিরি (হাফি)ও দিতে পারবেন না। আর যদি তিনি সত্যবাদী হোন তাইলে দাওলার পক্ষেই বলতে বাধ্য হবেন।//

আসলেই শাইখ যাওয়াহিরী হাফিঃ এর জবাব দিতে পারবেন না !! আমার ধারণা, শাইখ যাওয়াহিরী হাফিঃ এই ‘জীবনেও শুনিনি’র ফিরিস্তি শুনে অজ্ঞান হয়ে যাবেন !! সুবহানাল্লাহ !!

তার জীবনে না শোনা সেই পোস্ট…… https://justpaste.it/1fm62  অথবা এখানে......   https://justpaste.it/1imkg

 

*** খারিজীদের খিলাফত ঘোষণার ব্যাপারে প্রখ্যাত তাবে’য়ী ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ রাহঃ এর বক্তব্যঃ

 

খারিজীদের ব্যাপারে প্রখ্যাত তাবে’য়ী ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ রাহঃ এর স্বর্ণখচিত বক্তব্য। (ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ রাহঃ উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহঃ এর খিলাফতের সময় প্রথমে বিচার বিষয়ক দায়িত্বশীল ছিলেন, পরে ইয়েমেনে বাইতুল মালের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ইয়েমেনের একদল খারিজীদের ব্যাপারে সেসময়ে উনার বক্তব্য।)

قال وهبُ بن منبِّه رحمه الله: (ما اجتمعتِ الأمَّة على رجلٍ قطُّ من الخوارج، ولو أمكن اللهُ الخوارجَ من رأيهم، فسَدتِ الأرض….. وإذًا لقام أكثرُ من عَشرة أو عشرين رجلًا ليس منهم رجلٌ إلَّا وهو يدْعو إلى نفْسه بالخِلافة) [مختصر تاريخ دمشق] (26/390–391)

অর্থঃ “তাবে’য়ী ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ রাহঃ বলেনঃ এই উম্মত কখনোই খারিজীদের মধ্য থেকে কারো উপর একমত হয়নি। যদি আল্লাহ তা’আলা তাদের দৃষ্টিতে কখনো খারিজীদেরকে তামকীন বা কর্তৃত্ব প্রদান করেন, তাহলে পৃথিবীতে ফাসাদ তথা বিপর্যয় হবে।…. আর যখনই তাদের মধ্য থেকে ১০ জন কিংবা ২০ জনের বেশি হয়েছে, তখনই তাদের মধ্য থেকে একজন নিজেকে খিলাফতের দাবি করেছে।” (মুখতাছারু তারীখে দিমাশক-২৬/৩৯০-৩৯১)

এছাড়া অনুরুপ ইবারত ইমাম যাহাবী রাহঃ এর জগদ্বিখ্যাত কিতাব ‘সিয়ারু আ’লামিন-নুবালা’র ৪র্থ খণ্ডের ৫৫৫ পৃষ্ঠায়ও রয়েছে।

 

*** উমর বিন আব্দুল আযীয রাঃ এর খিলাফতের সময় খারিজীদের খিলাফত ঘোষণা ও হুদুদ কায়েমের দাবিঃ

প্রখ্যাত তাবেয়ী ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ রাহঃ যখন উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহঃ এর খিলাফতের অধীনে ইয়েমেনে বাইতুল মালের দায়িত্বে ছিলেন। তখন একদল খারিজী খলীফার বাইতুল মালে যাকাত না দেওয়ার জন্য মানুষকে আহবান করতে থাকে। তারা এসময় কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেখানে নিজেদের দাবিমতো আল্লাহর বিধান বা খিলাফত কায়েম করেছে বলে দাবি করেছিলো। খারিজীরা প্রচার করেছিলো, উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহঃ এর বাইতুল মালে যাকাত দিলে তাতে যাকাত আদায় হবে না বরং খারিজীদের ফান্ডে যাকাত দিতে হবে। এমতাবস্থায় উক্ত খারিজীদের দ্বারা প্রভাবিত এক ব্যক্তি প্রখ্যাত হাদীস বর্ণনাকারী তাবে’ তাবে’য়ী দাউদ ইবনে কায়েস রাহঃ এর সাথে দেখা করে। অতঃপর তিনি উক্ত ব্যক্তিকে তাবেয়ী ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ রাহঃ এর কাছে নিয়ে আসেন খারিজীদের ব্যাপারে সতর্ক করার জন্য। এসময় দাউদ ইবনে কায়েস রাহঃ বলেন,

فَقلت يَا أَبَا عبد الله إِن ذَا خولان من أهل الْقُرْآن واهل الصّلاح فِيمَا علمنَا وَأَخْبرنِي أنه عرض لَهُ نفر من أهل حروراء، فَقَالُوا لَهُ زكاتك الَّتِي تؤديها إِلَى الْأُمَرَاء لَا تجزي عَنْك فِيمَا بَيْنك وَبَين الله لأَنهم لَا يضعونها فِي موَاضعهَا فأدها إلينا فَإنَّا نضعها فِي موَاضعهَا نقسمها فِي فُقَرَاء الْمُسلمين وَنُقِيم الْحُدُود،

“ (দাউদ ইবনে কায়েস বলেন, আমি বললামঃ হে আবু আব্দুল্লাহ (ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ রাহঃ এর ডাকনাম) ! যতটুকু আমি জানি খাওলানের এই অধিবাসী একজন কুরআন বিশেষজ্ঞ এবং ধীরস্থির ব্যক্তি। সে আমাকে অবগত করেছে , একদল হারুরী ( আলী রাঃ হারুরা এলাকায় খারিজীদেরকে পরাজিত করেছিলেন,তাই খারিজীদেরকে হারুরী বলে ডাকা হয়।) তাকে প্রস্তাব পেশ করে বলেছে যে, তুমি যে যাকাত আমীরদের কাছে দাও, এর মাধ্যমে তোমার ও আল্লাহর মাঝে তোমার পক্ষ থেকে যে দায়িত্ব আছে তা আদায় হয় না। কেননা আমীরগণ এই যাকাতকে সঠিক স্থানে ব্যবহার করছে না। সুতরাং তুমি এই যাকাত আমাদেরকে প্রদান করো, আমরা তা সঠিক জায়গায় ব্যবহার করবো। আমরা তা মুসলিমদের গরীবদের মধ্যে বন্টন করি এবং আমরা হুদুদ কায়েম করি ।” (মুখতাছারু তারীখে দিমাশক-২৬/৩89)

অতঃপর তাবেয়ী ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ রাহঃ বলেন, ………………..

أَلا ترى يَا ذَا خولان إِنِّي قد أدْركْت صدر الْإِسْلَام فوَاللَّه مَا كَانَت للخوارج جمَاعَة قطّ الافرقها الله على شَرّ حالاتهم وَمَا اظهر أحد مِنْهُم قَوْله الا ضرب الله عُنُقه وَمَا اجْتمعت الْأمة على رجل قطّ من الْخَوَارِج!
 وَلَو أمكن الله الْخَوَارِج من رَأْيهمْ لفسدت الأَرْض

অর্থঃ “হে খাওলানের অধিবাসী ! আমি ইসলামের আসল সময় পেয়েছি। সুতরাং আল্লাহর কসম ! খারিজীরা যখনই একটি দলে পরিণত হয়েছে, তখনই আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে তাদের নিকৃষ্ট অবস্থায় ছিন্ন-ভিন্ন করে দিয়েছেন। আর যখনই খারিজীদের কেউ একজন তার মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে, আল্লাহ তা’আলা তার গর্দানে আঘাত করেছে অর্থাৎ হত্যা করেছেন। এই উম্মত কখনোই খারিজীদের মধ্য থেকে কারো উপর একমত হয়নি। যদি আল্লাহ তা’আলা তাদের দৃষ্টিতে কখনো খারিজীদেরকে তামকীন বা কর্তৃত্ব প্রদান করেন, তাহলে পৃথিবীতে ফাসাদ তথা বিপর্যয় হবে। ” (মুখতাছারু তারীখে দিমাশক-২৬/৩৯০)

আশা করি আইএসের আজকের পরিণতি দেখে প্রত্যেকেই তাবেয়ী ওহাব ইবনে মুনাব্বিহ রাহঃ এর উপরোক্ত স্বর্ণখচিত কথাটির সত্যতা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন।

চিন্তা করে দেখুন, খারিজীদের কাছে উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহঃ এর খিলাফত সঠিক ছিলো না !!

 

*** উমাইয়া আমলে খারিজীদের খিলাফত ঘোষণাঃ

(উমাইয়া খলীফাহ) আব্দুল মালিকের সময়কালে খারিজী শাবীব খিলাফতের দাবি করে। কিন্তু সে তার দাবি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়নি। (দেখুন….আল্লামা ইবনে খাল্লিকান রাহঃ রচিত وفيات الأعيان -২/৪৫)

 

*** খারিজী দল ইবাদিয়্যাহ কর্তৃক খিলাফত ঘোষণাঃ

১৪০ হিজরিতে ইবাদিয়্যাহ (একটি খারিজী সম্প্রদায়) দের প্রধান আব্দুল আ’লা ইবনে সামহ আল-মা’গাফিরীকে খলীফাহ বানিয়ে খিলাফত ঘোষণা করে। তা ৪ বছর বহাল থাকে। অতঃপর ১৪৪ হিজরিতে মানসুর তাকে হত্যা করে। ( দেখুন……তারীখে ইবনে খালদুন, ৪/২৪১).

 

*** উমাইয়া আমলে মরক্কোতে খারিজীদের খিলাফত ঘোষণাঃ

(মরক্কোতে অবস্থিত) তনজা এলাকায় খারিজীদের আমীরের জন্য খিলাফত ঘোষণা করে। খারিজীরা তাকে আমীরুল মুমিনীন বলে আখ্যা দিলো। অতঃপর খালিদ ইবনে হাবিব ফিহরী তাকে হত্যা করে। (দেখুন…..তারীখে ইবনে খালদুন, ৬/১৪৫)

 

*** বিংশ শতাব্দীতে আলজেরিয়ার খারিজী দল GIA কর্তৃক খিলাফত ঘোষণাঃ

আলজেরিয়ার GIA দলটি যে খারিজী বাতিল আকীদার ছিলো, এটি আইএসের নেতারাও অস্বীকার করবে না। এই খারিজীদের ব্যাপারে আল-কায়েদার সাবেক প্রধান মুফতী শাইখ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবী রাহঃ “আত-তাজরিবাতুল জাযায়িরিয়্যাহ” শিরোনামে একটি বিস্তারিত অডিও বার্তা দিয়েছিলেন সেটি টেক্সট হিসেবেও প্রকাশ করা হয়েছে। উক্ত অডিও বার্তায় শাইখ রাহিঃ GIA এর খারিজী চিন্তাধারা ও আলজেরিয়ার জিহাদ ধ্বংসের বেদনাদায়ক ঘটনার বিবরণ দেন। শাইখ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবী রাহঃ হচ্ছেন আল-কায়েদার সেসব নেতাদের একজন যাদেরকে আবু বকর বাগদাদী এই যুগে জিহাদের প্রতিনিধি মনে করে।

এই খারিজী দল GIA ১৯৯৪ সালের ২৬ আগস্ট খিলাফত ঘোষণা করে। উইকিপিডিয়া থেকে তার প্রমাণ দেখুন…..

On 26 August, the group declared a “Caliphate”, or Islamic government for Algeria, with Gousmi as Commander of the Faithful

অর্থঃ “২৬ আগস্ট (১৯৯৪) দলটি ‘গুসমি’কে আমীরুল মুমিনীন বানিয়ে আলজেরিয়ায় খিলাফত বা ইসলামী সরকার ঘোষণা করে।”

…………………………. খারিজীরা কী কাফিরদের উপর কঠোর হয় ?????

 

*** খারিজী GIA কর্তৃক ফ্রান্সে হামলাঃ

উইকিপিডিয়া থেকে……

Cherif Gousmi was eventually succeeded by Djamel Zitouni who became GIA head on October 27, 1994. Zitouni, 30-year-old son of a poultry merchant had very limited religious education but was adept at killing French citizens.[26] Zitouni extended the GIA’s attacks on civilians to French soil, beginning with the hijacking of Air France Flight 8969 at the end of December 1994[27] and continuing with several bombings and attempted bombings throughout 1995.

অর্থঃ (শরীফ গুসমির মৃত্যুর পর ) ঘটনার ধারাবাহিকতায় জামাল যাইতুনি ১৯৯৪ সালের ২৭ অক্টোবর GIA এর প্রধান হিসেবে শরীফ গুসমির স্থলাভিষিক্ত হয়। এক পোলট্রি ব্যবসায়ীর ছেলে ৩০ বছর বয়সী যাইতুনি খুবই সীমিত ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী ছিলো কিন্তু ফ্রান্সের নাগরিকদেরকে হত্যায় সিদ্ধহস্ত ছিলো। যাইতুনি GIA কর্তৃক ফ্রান্সের মাটিতে বেসামরিক নাগরিকদের উপর হামলা প্রসারিত করে, যার শুরু হয় ১৯৯৪ এর ডিসেম্বরের শেষদিকে ‘এয়ার ফ্রান্স ফ্লাইট ৮৯৬৯’ হাইজ্যাক করার মাধ্যমে এবং তা ১৯৯৫ জুড়ে বিভিন্ন হামলা ও হামলার চেষ্টার মধ্য দিয়ে অব্যাহত থাকে।”

উইকিপিডিয়া থেকে GIA এর ব্যাপারে উপরোক্ত প্রমাণগুলো দেখে নিন….. http://bit.ly/2CTWfo3

ফ্রান্সে খারিজী দল GIA কর্তৃক বেশ কয়েকটি হামলার বিবরণ উইকিপিডিয়া থেকে দেখে নিন…..

http://bit.ly/1fOqdgx

এই লিংকে GIA কর্তৃক ফ্রান্সে অনেকগুলো হামলার বিবরণ রয়েছে….. http://bit.ly/2mnC0YZ

 

শাইখ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবী রাহঃ এর “আত-তাজরিবাতুল জাযায়িরিয়্যাহ” অডিওর টেক্সটের লিংক… http://bit.ly/2D8gQcw

জীবনেও শোনেনি বলে সে যেসব বিষয় উল্লেখ করেছে……

১। //জীবনেও শুনিনি যে খারেজিরা সাহাবি (রা) দের ভালো চোখে দেখেছে। কিন্তু আজকের দাওলার খারেজিরা সাহাবি (রা) কত উচ্চ সম্মান দেন, সুবহানআল্লাহ। 
 কারন, আসল খারেজিরা সাহাবিদের তাকফির করবে এটা খারেজিদের প্রধান লক্ষণাদির ভিতরে একটা।//

জবাবঃ সাহাবায়ে কিরামের যুগের পরের কোনো খারিজীরা সাহাবীদের তাকফীর করেনি। বরং সাহাবীদের যুগের পরবর্তী খারিজীরা সাহাবীদের নাম দিয়েই মুসলিমদেরকে তাকফীর করেছে। সাহাবীদের পরবর্তী যুগের কোনো খারিজী দল সাহাবীদেরকে তাকফীর করেছে, এমন প্রমাণ সে পুরো জীবনেও দেখাতে পারবে না।

২। //জীবনেও শুনিনি যে, খারেজিরা খিলাফাহ কায়েম করেছিল বা করেছে। খারেজিরাই তো এক নাম্বারের খিলাফাহ বিরোধী হয়। কিন্তু ঘটনা উলটো।//

জবাবঃ প্রায় সক খারিজীরাই খিলাফত ঘোষণা করেছে। উপরে বেশ কয়েকটি প্রমাণ দিলাম। উপরের অংশ পড়ার পর আশা করি জীবনের জন্য দেখা হয়ে গেছে !

৩। //জীবনেও শুনিনি যে, খারেজিদের থাকার জন্য অনেক ভূমি থাকে। বর্তমানে কুফর ও তার সহযোগী মিত্রদের আক্রমণে খিলাফাহ কিছু ভূমি হারালেও বিশ্বময় খিলাফাহর লোকেরা লড়াই করে ভূমি দখল করছে।//

জবাবঃ প্রায় সকল খারিজী দলই কিছু না কিছু ভূমির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই দাবি করেছে। উপরে বর্ণিত সবগুলো খারিজী দলের অধীনে ভূমির নিয়ন্ত্রণ ছিলো। এখন আইএসের সেই ভূমি কোথায় ??? সব হারিয়ে মরুভূমিতে !!!

৪। //জীবনেও শুনিনি যে, খারেজিদের দলে বয়স্ক মুজাহিদীনরাও যোগ দেয় সারা বিশ্ব থেকে। আমি জেনেছি যে খারেজিরা অল্পবয়স্ক হয়। কিন্তু এই খারেজি টিমে সব বয়সেরই আছে।//

জবাবঃ খারিজীদের দলে সব বয়সের মানুষই থাকে। আলজেরিয়ার GIA খারিজীদের ইতিহাস জানলে চোখ খুলবে আশা করি।

৫। //জীবনেও শুনিনি যে, খারেজিরা জাতীয়তাদের বর্ডার ভেঙে দেয়..? ওরাই তো সবচেয়ে বেশি গোত্রবাদীত্বের রোগে আক্রান্ত।//

জবাবঃ কোনো খারিজীরাই গোত্রবাদীত্বে বিশ্বাসী ছিলো এমন প্রমাণ নেই। কীসের ভিত্তিতে সে এই হাওয়াই কথা বললো !! বরং সব খারিজীরাই দুনিয়াজুড়ে খিলাফত কায়েমের স্বপ্ন দেখতো। GIA খারিজীদের ফ্রান্সে হামলা এই দাবি মিথ্যা প্রমাণ করে।

৬। //জীবনেও শুনিনি যে, খারেজিরা কাফের জবাই দেয়। ওরে, এই খারেজিরা (লোকে বলে) কাফেরদের যেভাবে গলা কেটেছে সেটা ৫০০ বছরের ইতিহাসেও প্রমাণ নেই।//

জবাবঃ উপরে GIA খারিজীদের নেতা জামাল যাইতুনির কথা বলা হয়েছে…….. “এক পোলট্রি ব্যবসায়ীর ছেলে ৩০ বছর বয়সী যাইতুনি খুবই সীমিত ধর্মীয় জ্ঞানের অধিকারী ছিলো কিন্তু ফ্রান্সের নাগরিকদেরকে হত্যায় সিদ্ধহস্ত ছিলো।” গলা কাটাও হক্ব হওয়ার প্রমাণ, আইএসের জন্ম না হলে হয়তো, এটি জানা হতো না ! সুবহানাল্লাহ !!

৭। //জীবনেও শুনিনি যে, খারেজিরা মরলে মুখ হাসিভরা থাকে। আহ, এটা কিভাবে অস্বীকৃতি দেই..? জাহান্নামের কুকুর রা (লোকে বলে) এইভাবে হাসবে এটা আল্লাহর কুদরতের বিপক্ষে।//

জবাবঃ খারিজীরা কাফির নয় এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামীও নয়, তাই তাদের কেউ হাসি মুখ থাকতেই পারে। কিন্তু আইএস যাদেরকে মুরতাদ আখ্যা দিয়েছে, তাদের অনেকের মৃত্যুর সময়ও হাসিমুখ থাকে !! তাহলে সেটি ! ডাবল স্ট্যান্ডার্ড !!!!

৮। //জীবনেও শুনিনি যে খারেজিরা তাদের এলাকায় সোনা’র টাকা চালু করেছে।//

জবাবঃ পূর্ববর্তী সকল খারিজীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় স্বর্ণ-রুপার মুদ্রাই প্রচলিত ছিলো। আর আইএসের স্বর্ণ-মুদ্রার ঝলকানি যে বলতে গেলে ভিডিও পর্যন্তই ছিলো, তা যারা তাদের খবর রাখে তারা জানে আশা করি। আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণের শেষদিন পর্যন্ত আসাদের এলাকায় প্রচলিত মুদ্রাই বহাল ছিলো। এখন সেই কথিত স্বর্ণমুদ্রা অতীত ইতিহাসে পরিণত হয়েছে।

৯। //জীবনেও শুনিনি যে খারেজিরা হুদুদ চালু করে চোরের হাত কাটে, চাবুক মারে, যাকাত আদায় করে, সলাত কায়েম করে, পুরুষ রা টাখনুর নিচে কাপড় পড়লে সেটা কাঁচি দিয়ে কেটে দেয়, অনাথ দের বাড়িতে বাড়িতে খাদ্য পৌঁছায়, মহিলাদের সম্মান রক্ষায় জীবন বিসর্জন দেয়।//

জবাবঃ উপরে অকাট্য প্রমাণসহ পেশ করেছি যে, খারিজী হুদুদ কায়েম করতো কি না। আর বাকী সব কাজই খারিজীরা করতো। সাথে মুসলিমদেরকে মুরতাদ আখ্যা দিয়ে জবাই করতো, এইটুকু বেশি আর কী !!!

১০। //জীবনেও শুনিনি যে পৃথিবীর সমস্ত কুফফার এই খারেজিদের ভয় পায়, আশ্চর্যকথা। অথচ কুফফারদের খুশি হওয়া উচিৎ ছিল।//

জবাবঃ আইএসের ধুমাধারাক্কা কিছু অপারেশনের জন্য কুফফাররা তাদেরকে নিয়ে একটু মাতামাতি করে। এখানে কুফফারদের আরো উদ্দেশ্য ছিলো। আর সেটি হচ্ছে, কুফফারদের দীর্ঘস্থায়ী শত্রু তালিবান, আল-কায়েদাকে মানুষের কাছ থেকে অস্পষ্ট করে ফেলা। এখনতো কুফফাররা আইএসকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে এবং কুফফাররা খুব আনন্দের মধ্যে আছে !

১১। //জীবনেও শুনিনি যে খারেজিদের লীডার অনেক স্পষ্টবাদী বক্তা এবং ইসলামী স্কলার হয়। একেবারে ক্লিয়ার ভয়েস।//

জবাবঃ এটিও হক্ব হওয়ার প্রমাণ !!! ইয়া আল্লাহ ! এটি কোন শরীয়তে ??? অনেক দরবারী আলিমরাও ইসলামী স্কলার এবং ভয়েস অল-ক্লিয়ার !!

১২। //জীবনেও শুনিনি যে খারেজিরা মূর্তি ভাঙে। ওরেসসস সব্বনাস এই খারেজিরা মুগুর মেরে মূর্তি ফূর্তি, পাকা কবর সব চুরিয়ে দিয়েছে। অথচ ঘটনা উলটো হওয়ার কথা ছিলো।//

জবাবঃ একই কাজ অর্থাৎ মূর্তি, মাযার, পাকা কবর আল-কায়েদাও ভাঙ্গে, অথচ খারিজী আইএসের কাছে আল-কায়েদা মুরতাদ !!!

১৩। //জীবনেও শুনিনি যে কুফফার খারেজিদের উপরে আক্রমণ করেছিল বা করেছে। আজকের বড় কুফফার এবং তাদের পুতুল মিত্র গুলি খারেজিদের উপরে হত্যালীলা চালু রেখেই চলেছে।//

জবাবঃ GIA খারিজীদেরকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য ক্রুসেডার ফ্রান্স আলজেরিয়ার মুরতাদ সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিলো। কাফিররা আইএসের বিরুদ্ধে তাই তারা খারিজী হতে পারবে না !!! কিন্তু তালিবান ও আল-কায়েদা পুরো দুনিয়ার কুফফার-মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পরেও খারিজী আইএসের কাছে তারা মুরতাদ !!!!

১৪। //জীবনেও শুনিনি যে খারেজিদের মূল ইনকাম ও রসদ গনিমত থেকেই বেশি আসে। কিন্তু ঘটনা উলটো হওয়ার কথা ছিলো।//

জবাবঃ এটি মূর্খতাপূর্ণ একটি ধাপ্পাবাজি ছাড়া আর কিছু নয়। আইএসের আয়ের প্রধান উৎস ছিলো তেল। আমেরিকা যখন সিরিয়ার তেলক্ষেত্রগুলোতে হামলা চালিয়ে সেগুলো অকেজো করে দেয় এবং আর তেল বিক্রি করা সম্ভব হয় না, তখন আইএস তার অধীনস্ত কর্মচারীদের বেতন অর্ধেক কমিয়ে দেয়। এ নিয়ে আইএসের অফিসিয়াল নির্দেশনামা রয়েছে।

১৫। //জীবনেও শুনিনি যে খারেজিরা কাফের ও কাফেরদের দোসর দের প্রতি খুব কঠিন হয়ে থাকে। ইতিহাস সাক্ষী খারেজিরা কোনোদিন কাফেরদের বিপক্ষে যাইনি।//

জবাবঃ জীবনের মতো শোনানোর জন্যইতো এই জবাব লিখেছি। GIA খারিজীদের প্রমাণতো উপরে দিলাম যে, তারা ক্রুসেডার ফ্রান্সের বিরুদ্ধে কতটা কঠোর ছিলো তা জানার জন্য।

১৬। //জীবনেও শুনিনি যে খারেজিদের পতাকা একেবারে অথেনটিক নবুওতি পতাকার মতো হয়। আজ বিশ্বে একটাই অথেনটিক ব্লাক ফ্লাগ, আর সেই পতাকা খারেজিরাই ধরে আছে এবং চিল্লিয়ে বলছে আল্লাহু আকবার, ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ।//

জবাবঃ এই ব্ল্যাক ফ্ল্যাগ বা কালো পতাকাটি মূলত আল-কায়েদার। কারণ আইএস আগে আল-কায়েদার শাখাই ছিলো। আল-কায়েদার বাই’আত ভঙ্গ করলেও উম্মাহকে ধোকা দেওয়ার জন্য আইএস আল-কায়েদার ডিজাইনকৃত পতাকা পরিত্যাগ করেনি। আল-কায়েদার সকল শাখা এখনো কালো পতাকাই ব্যবহার করছে। সুতরাং একমাত্র খারিজীরাই কালো পতাকা ধারণ করে, এটি সর্বশেষ মিথ্যা ও অজ্ঞতাপূর্ণ কথা।

পরিশেষে বলতে চাই, আমি খুব আশ্চর্য হলাম আইএস সমর্থকদের কাছে হক্ব-বাতিলের মানদণ্ড দেখে ! ‘আমি জীবনেও শুনিনি’ তাদের দ্বীনের মানদণ্ড !! সে শোনেনি, তাই সত্য মিথ্যা হয়ে যাবে ? আর মিথ্যা সত্য হয়ে যাবে ? আর আইএস এসব কাজ করে এজন্যতো কেউ আইএসকে খারিজী বলেনি। এসব কাজতো উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহঃ এর খিলাফতের সময়ের খারিজীরাও করতো। এরপরও কেনো সাহাবায়ে কিরামের পর উম্মতের শ্রেষ্ঠ মানুষ তাবেয়ীগণ তাদেরকে স্পষ্টভাষায় তাদেরকে খারিজী বলে আখ্যা দিলেন ???

কারণ, তারা এসব কাজের পাশাপাশি মুসলিমদেরকে তাকফীর করতো অর্থাৎ মুরতাদ আখ্যা দিতো।

খেয়াল করুন, আলী রাঃ এর সময়ের খারিজীরা সেসময়ের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি তথা সাহাবীদেরকে তাকফীর করতো। উমর ইবনে আব্দুল আযীয রাহঃ এর খিলাফতের সময়ের খারিজীরাও সেসময়ের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি তথা তাবেয়ীদেরকে তাকফীর করতো। প্রত্যেক যুগের খারিজী বিভিন্ন ভালো কাজের পাশাপাশি সেযুগের শ্রেষ্ঠ মুসলিমদেরকে তাকফীর করতো।

আর এ যুগেও যুগের খারিজী আইএস এই যুগের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি তথা তালিবান, আল-কায়েদা ও অন্যান্য মুজাহিদদেরকে সুস্পষ্ট ভাষায় মুরতাদ আখ্যা দিয়েছে।

আশা করি, এই লেখাটি তার কাছে পৌছবে এবং সে তার জীবনে না শোনা বিষয়গুলো প্রমাণসহ দেখে খারিজী বাতিল দল আইএসকে পরিত্যাগ করবে। আর সে যদি কবরপূজারী-মাজারপূজারীদের মতো দলীল-প্রমাণ দেখার পরও বাতিল মতবাদ আঁকড়ে ধরে থাকে, তাহলে সেটি তার ব্যাপার। আমার দায়িত্ব ছিলো, তার জাহালাতের অন্ধকারের পর্দার হাকীকত দলীল-প্রমাণ সহ ধরিয়ে দেওয়া। দলীল-প্রমাণ নিয়ে দূর করার চেষ্টা করা। আমার দায়িত্ব আমি পালন করেছি,আলহামদুলিল্লাহ।

;;

আইএসের খিলাফতের দাবি শরীয়তের মানদণ্ডে জানতে নিচের লিংকের আর্টিকেলটি পড়ুন……

https://justpaste.it/is_khilafah  

;;

;;

বিঃদ্রঃ  জিহাদ ও আইএস সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখা পড়তে মূল পেইজে যেতে পারেন। 

লিংক....   https://justpaste.it/Abdullah_Hasan