JustPaste.it

97c7859f7af0d5a4fa7199e7b7b3d764.jpg

সালমান। ১০ বছর । বিল্ডিং এ নীচের ফ্লোরে থাকে। হঠাত তার বাবা আমাকে ফোন করে জানায় প্রচন্ড জ্বর্ এ ভুগছে সালমান গত চার দিন। আমি ফোনে বললাম, ডেংগু কিন্তু ভয়াবহ বেড়ে গেছে। তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেখান।পরদিন রাতে আমাকে ফোনে জানায় ডেংগুর টেস্টে নেগেটিভ আসছে। জ্বর নাকি কমে আসছে। আমি আর কথা বাড়াই নাই। তারপরের দিন ই আমাকে জানাল, সালমান মাথা তুলতে পারতেসেনা, ওর নাকি খুব খারাপ লাগতেসে। আমার আর বুঝতে বাকি নাই, ডেঙ্গুই হইসে এবং এক্ষুনি সুমাইয়াকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে কেন ডেংগুর ল্যাব পরীক্ষায় আসলোনা আসলোনা? এরকম নানা প্রশ্ন অনেক ডাক্তারই জানেনা, সাধারন মানুষ জানবে কিভাবে।

আজকে আমি ডেংগু সমন্ধে কিছু জানাবো, অন্তত আমার পাচজন বন্ধুও যদি উপকৃত হয়। । ।

একটা সময় ডেংগু ধনী লোকদের রোগ বলে আমিই জানতাম। কিন্তু গত কয়েক মাসে যেই ভয়াবহ মহামারী আকার নিয়েছে তা ঢাকা শহরের হাসপাতালে যেই ডাক্তার রা কাজ করছেন,তারাই জানেন।এখন তীব্র জ্বরের রোগী আসলেই আসলেই ডেংগুর পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। অবস্থার ভয়াবহতা বিবেচনা করেই কিছু আপডেট তথ্য জানাচ্ছি।

কখন সন্দেহ করবেন ডেংগু হয়েছেঃ
-প্রথম দিন থেকেই অনেক জর, শরিরে ব্যাথা বিশেষত মাংসে, হাড়ে কিন্তু জয়েন্টে ব্যাথা অতটা না।
-বড়দের জ্বরের আগে বা জ্বরের সময় ঠান্ডা বা নাক দিয়ে পানি পড়া নাও থাকতে 
পারে, কিন্তু বাচ্চাদের এরকম লক্ষন দেখা যাচ্ছে
-বমি, পেটে ব্যাথা
-সারা শরীরে রেশ, লালচা ভাব।

কিন্তু সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে,. জ্বর চার পাচ দিন পর হঠাত কমে যায়, সবাই ভাবে অন্য জ্বরের মত ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু এই সময়ে যদি রোগ ধরতে ভুল হয় বা চিকিতসা ভুল হয়, মৃত্যুর কাছে যেতে দেরি লাগবেনা। এরমধ্যে বাংলাদেশে ১৭ জন মারা গিয়েছে। কিন্তু আসল হিসেবে হয়তো সংখ্যা আরো বেশি হবে। এই মৃত ব্যক্তির লিস্টে ডাক্তার, নার্স রাও বাদ পড়ে নাই। আগে একবার ডেংগু হয়েছে, ধরা পড়েছে বা পড়েনাই, তাদের আতংক আরো বেশি। কারন তাদের লক্ষন গুলো খারাপ হয় বেশি।

আমাদের দেশে পাড়ায় পাড়ায় মুর্খদের তৈরী ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর অভাব নাই। তারা না জেনে জ্বর চার পাচদিন চলে গেলে Dengue NS1 antigen পরীক্ষা করায়। আদতে তিনদিন পরে এই পরীক্ষাতে ডেংগু ধরা পড়েনা। যেই ঘটনা ঘটেছে উপরের সালমান র ক্ষেত্রে। পাচ থেকে সাত দিন পর anti dengue antibody .করতে হয়।

এবার আসি ডেংগুর মশা সমন্ধে। এই বড়লোক ধনীর দুলালি মশা কিন্তু হেব্বি স্মার্ট।
কেন বললাম, মেয়ে মশা কিন্তু কামড়িয়ে এই রোগ করে। দুলালি মশা কিন্তু ময়লা পানিতে জন্মায়না। পরিষ্কার পানিতে জন্মায়, বংশ বিস্তার করে। রংগিন প্লাস্টিকের বোতল বা পাত্র কে খুব পছন্দ করে। মশার ডিম একবছর পর্যন্ত বাচতে পারে। পানি পেলে আবার ফুটে ঊঠে। সুন্দরী মেয়েদের মত একটু একটু করে আপনাকে কামড়াবে, পেট ভড়বে। দিনের বেলায় কামড়াবে, বিশেষত ভোরের টাইমে বা সকাল বেলা কিংবা সন্ধ্যার দিকে ।

যদি বলি আমি আপনি সবাই রিস্কে আছি, একটুও মিথ্যা বলা হবেনা। কারন নিচে বললাম,
-আমাদের আশে পাশের কেউ না কেঊ আক্রান্ত হয়েছে, আর তাদের মশা কামড়িয়ে আমাদের কে কামড়াতেই পারে।
-বাসার ভারী পর্দাগুলোকে কি আমরা স্প্র‌ে করেছি গত কয়েক দিনে
-ফ্রিজের পানি , এসির পানি, ফ্লাওয়ার ভাস এর পানি তিনদিনের বেশি জমা কি আছে
-বাসার কমোড তিন দিন ব্যবহার হচ্ছেনা, কমোডের সেই পরিষ্কার টলটলে পানি কিন্তু হতে পারে মশার ভয়াবহ আবাসস্থল।
আর গ্যারেজের পানি, টায়ার, ডাবের খোসার পানি তো আছেই। মোট কথা তিনদিনের বেশী জমানো পরিষ্কার পানি হতে পারে আবাসস্থল।

বেশি ভয় পেয়ে গেলেন নাকি, এত ভয় পাবেন না। শুধু সতর্ক থাকুন, জ্বর আসলেই লক্ষ করুন
-উপরে বর্নিত লক্ষন আছে কিনা, থাকলে প্রথম তিন দিনের মধ্যে অবশ্যই অন্তত NS1 antigen করাবেন। ঢাকাতে সরকারি হাসপাতালে অনেক কম খরচে করা যায়।

হাসপাতালে যাবেন কখন-
-জ্বর শুরুর -চার পাচদিন পরে জ্বর চলে যাবার পর যদি দেখেন খুব দুর্বল লাগছে, মাথা তুলে দ্বাড়াতে পারছেন না এমন;
-পেটে ব্যাথা, অনেক বমি হওয়া
-অস্থির লাগা, শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, ঘাম দিয়ে দুর্বল হয়ে যাওয়া, যেটাকে অনেকে চিকন ঘাম বলে।
-বাসায় যদি প্রেসার মেপে দেখেন আপনার প্রেশারের সিস্টোল ডায়াস্টোলের পার্থক্য ২০ এর কম, মানে যদি আপনার পেশার ১০০/৮৫ হয়, পার্থক্য (১০০-৮৫)=১৫, এখানে ১৫ কিন্তু ২০ এর কম.
-শ্বাস কষ্ট বোধ করেন।
-ছোট শিশু, প্রেগন্যান্ট মহিলা, বৃদ্ধ, ডায়াবেটিস, কিডণি, হার্টের রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াই ভালো।

উপরোক্ত অবস্থা ছাড়া হাসপাতালে না নিয়ে বাসায় চিকিতসা সম্ভব।
বাসায় কি চিকিতসা নিবো-
- পর্যাপ্ত বিস্রাম,
- পর্যাপ্ত পানি জাতীয় খাবার খাবেন, যেমন দুধ, ফলের রস, ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, চালের পানি বেশি করে খাবেন। নরমাল পানি বেশি খেলে আবার সমস্যা হতে পারে।
- জ্বর কমানোর জন্য ট্যাবলেট প্যারাসিটামল, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১৫-২০ মিগ্রা/কেজি প্রতিবার দিনে চার বার পর্যন্ত, বড়রা ৫০০ মি।গ্রা এর বড়জোর আটটা খাবেন, চারবেলা দুইটা করে। জ্বর না থাকলে খাবার দরকার নাই।
- যতক্ষন জ্বর না নামে হাল্কা কুসুম গরম পানিতে কাপর ভিজিয়ে শরীর মুছে দিবেন।
- এস্পিরিন জাতীয় ঔষধ এ সময় না খাওয়া ভালো. এমন কি হার্টের্ রোগীদের ক্ষেত্রেও।

প্রতিরোধ করবো কিভাবেঃ
-পানি জমতে পারে এমন জায়গা শু্কনা পরিস্কার রাখুন।
-যেখানে মশা বংশ বিস্তার করতে পারে সেখানে স্প্র‌ে করুন মশা মারার ঔষোধ দিয়ে
-ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করুন এমন কি দিনের বেলায়।
-আমি যেহেতু বাচ্চাদের ডাক্তার রিকোয়েস্ট করবো বাচ্চারা স্কুল যাবার যাবার সময় অবশ্যই তাদের শরীরের যেই অংশ খোলা থাকে সেখানে ওডোমাস ক্রীম ব্যাবহার করুন। এখন বাচ্চাদের আক্রান্ত হবার সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ওদের কষ্টটাও অনেক বেশি।

মোবাইল টিপতে টীপতে হাত ব্যাথা হয়ে গেছে। তবুও যদি উপকৃত হন। সবাইকে জানিয়ে দিন আপনি যা জানলেন।