JustPaste.it
User avatar
Safwan @Safwan313 · Mar 20, 2023 · edited: Mar 22, 2023

দারস-১


بسم الله الرحمن والرحيم،
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين

 

আমরা আজকে যে বিষয়টি আলোচনা করতে যাচ্ছি তা মুলত একটি দাওরার অংশ যা উস্তাদ আবু মুসআব আস সূরী (ফাক্কাল্লাহু আসরাহু)
 তিনি মুজাহিদ ভাইদের কে নিয়ে আলোচনা করেছিলেন । 
আর তা হচ্ছে একজন “(আমীরের আবশ্যকীয় গুণাবলী)” 

 

 

আমীরের জন্য আবশ্যকীয় কিছু গুণ:
গত মজলিসে আমরা প্রাথমিক কিছু আলোচনার পর বলেছি, শাইখ সাঈদ হাওয়ী

(1) এবং কুরতুয়া

(2) উভয়ের কিতাবের প্রথম পরিচ্ছেদের

 

শিরোনামটি সাদৃশ্যপূর্ণ। সাঈদ হাওয়ীর কিতাবে এই শিরোনামে এসেছে,


(في الأخلاق الذاتية للأمراء)  

অর্থাৎ আমীরের মৌলিক চরিত্রাবলী এবং কুরতুয়ার কিতাবে এসেছে এই শিরোনামে,
(لمحات في فن القيادة) অর্থাৎ নেতৃত্ব বিষয়ে সামান্য কিছু আলোকপাত।

 

শাইখ সাঈদ হাওয়ী আলোচনা করেছেন ২২ নাম্বার পৃষ্ঠায়। তিনি আমীরের জন্য ত্রিশটি আবশ্যকীয় গুণ উল্লেখ করেছেন। আর
(لمحات في فن القيادة) কিতাবে আমীরের জন্য ষোলটি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিছু গুণের কথা উভয় কিতাবেই উল্লেখ করা হয়েছে।
আমরা প্রথমে সবগুলো গুণ উল্লেখ করে নিব; যাতে আমীরের জন্য আবশ্যকীয় সবগুলো গুণ সংক্ষেপে জানা হয়ে যায়। এখানে এমন কিছু গুণও আছে যা সকল মুসলিমের জন্য আবশ্যক। এখানে তা উল্লেখ করা হয়েছে আমীরের পূর্ণাঙ্গ গুণ সমূহ বুঝানোর জন্য। আর কিছু গুণ আছে যা শুধু আমীরের জন্য  আবশ্যক। তাই, আমরা আমীরের জন্য আবশ্যকীয় গুণাবলীর ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত কিছু ব্যাখ্যা করবো। আর সাধারণ গুণাবলীর ক্ষেত্রে শুধু তার রেফারেন্স দিয়ে দেব। আপনারা সেখান থেকে পড়ে নিবেন।
শাইখ সাঈদ হাওয়ীর কিতাব (فصول في الإمرة والأمير) এ নেতৃত্বের যে গুণাবলী উল্লেখ করা হয়েছে:
শাইখ সাঈদ হাওয়ী সূচিপত্রে উল্লেখ করেছেন:
(الفصل السادس في الأخلاق الذاتية للأمراء) ষষ্ঠ পরিচ্ছে: আমীরদের মৌলিক চরিত্রাবলী
১। আকল বা বুদ্ধিমত্তা
২। ইলম। 
৩। বীরত্ব বা সাহসিকতা। 
৪। পবিত্রতা। 
৫। দয়া,মহত্ত্ব ও দানশীলতা। 
৬।  বিচক্ষণতা। 
৭।  ক্রোধ বা গোস্বা নিয়ন্ত্রণ করা। 
৮ । ক্ষমা করা। 
৯।  বন্ধুত্ব। 
১০।  নম্রতা।  
১১।  ধীর স্থিরতা ও অবিচলতা। 
১২।  প্রতিজ্ঞা পূর্র্ণ করা।
১৩। সততা। 
১৪।  তথ্য গোপন করা।
১৫।  সহনশীলতা। 
১৬।  ধূর্ততা। 
১৭।  তাওয়াজু’ বা বিনয়। 
১৮।  হৃদয়কে হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত রাখা।
১৯। ধৈর্য। 
২০।  শুকর বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।
২১।  প্রবৃত্তির বিরোধিতা করা।
২২। কোমল আচরণ করা।
২৩। চুগলখোরী এবং পরনিন্দা গ্রহণ না করা।
২৪।  কাফেরদের বন্ধুত্ব পরিত্যাগ করা।
২৫।  অনুসন্ধান এবং পর্যবেক্ষণ।
২৬।  উপদেশ দেওয়া এবং গ্রহণ করা।
২৭। দক্ষ পরিচালনা।

 

দক্ষ পরিচালনা বিষয় শাইখ সাঈদ হাওয়ী কিছু বিষয় পৃথকভাবে উল্লেখ করেছেন। আমরা দ্রুত সেগুলো পাঠ করে নেব।  তবে আমীরে খাসের (বিশেষ কোন প্রজেক্টের দায়িত্বশীল) তুলনায় আমীরে আমের  (ব্যাপক কোন প্রজেক্টের দায়িত্বশীল) গুণাবলী আরো বেশি হওয়া জরুরী। কিছু গুণ আমীরে খাসের উপর ভিত্তি করে গৃহীত হয়। সাঈদ হাওয়ী (إحسان التدبير) বা (উত্তম পরিচালনা) শিরোমের অধীনে বলেছেন:
শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করা।
জাতীয় বিষয়গুলো পরিচালনা করা; যা আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি।

 

-- যুদ্ধ ব্যবস্থাপনা করা।
-- মানুষের জীবন-যাপন সংক্রান্ত বিষয়গুলো পরিচালনা করা।
-- সুদৃঢ় নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
-- অমুসলিম নাগরিকদের বিষয়গুলো পরিচালনা করা।
-- বিরোধী, বিদ্বেষী ও সমালোচকদের নিয়ন্ত্রণ করা।
-- উপযুক্ত ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া বা মাফ করে দেওয়ার বিষয়টি সঠিকভাবে করা।
-- ব্যাপক কোন দুর্যোগের সময় দ্রুত  ত্রাণ ও উদ্ধার ব্যবস্থা করা।
-- যোগাযোগ মাধ্যমের  সুদৃঢ় ব্যবস্থাপনা করা।

 

২৮। সহযোগীদের প্রতি দৃষ্টি রাখা।
২৯।  অগ্রগামীদের পুরস্কৃত করা।
৩০।  সুশৃঙ্খল ও সুন্দর বিন্যাস। 
যেমন: --আমীরের পরিপাটি হওয়া।
--আমীরের মজলিস ও রীতিনীতি সুবিন্যস্ত হওয়া।
--প্রকাশ্য এবং গোপনীয় বিষয়গুলোও বিন্যস্ত হওয়া।

 

শাইখ সাঈদ হাওয়ী আমীরের জন্য যে গুণগুলো আবশ্যক মনে করেন এগুলো হলো তার সমষ্টি । যার কিছু সরাসরি নেতৃত্বের সাথে সম্পৃক্ত এবং কিছু উত্তম চরিত্রের সাথে সম্পৃক্ত; যা সকল মুসলিমের জন্য আবশ্যক। আর আমীরের মাঝে থাকা আরও বেশি আবশ্যক।
কুরতুয়ার  (لمحات في فن القيادة) - কিতাবে নেতৃত্ব বিষয়ক যে গুণাবলী উল্লেখ করা হয়েছে:
এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা কিতাবের শেষে আসবে। তবে সেখানে কোন সূচিপত্র থাকবে না। এখন আমরা শিরোনামের ন্যয় সংক্ষিপ্ত আকারে গুণগুলো উল্লেখ করছি:
আমীরের গুণাবলীর ব্যাপারে কুরতুয়া বলেন:
১.    শান্ত হওয়া এবং প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণে রাখা।
২.    মানুষ অবস্থা বুঝা।
৩.    কাজের প্রতি আস্থা থাকা।
৪.    ক্ষমতার ব্যাপারে অনুভূতি থাকা।
৫.    স্পষ্টতা, দ্রুততা এবং ডিসিশন নিতে পারা।
৬.    কার্যকরী হওয়া।
৭.    বিনয়ী হওয়া। এটা শাইখ সাঈদ হাওয়ীর কিতাবেও আছে।
৮.    বাস্তববাদী হওয়া
৯.    অমায়িক ও উদার হওয়া।
১০.    পরিশুদ্ধ হৃদয়
১১.    সহনশীলতা- এটা শাইখ সাঈদ হাওয়ীর কিতাবেও আছে।
১২.    ন্যায়পরায়নতা
১৩.    মানবতার সম্মান বজায় রাখা।
১৪.    উত্তম আদর্শের দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।
১৫.    সব বিষয়ে ব্যাপক জানা-শোনা থাকা।
১৬.    অনুমান করতে পারা। অর্থাৎ ভবিষ্যতের বিষয়ে অনুসন্ধান করা এবং যা হতে পারে তার আশঙ্কা করা। যাতে সে ভিত্তিতে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে।
‘লামহাত ফি ফন্নিল ক্বিয়াদাহ’  কিতাবে উল্লেখিত গুণাবলী এই পর্যন্ত শেষ।

 

নেতার জন্য আবশ্যক এমন কিছু গুণ, যা কোন কিতাবেই উল্লেখ করা হয়নি:


এখানে আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছু গুণ উল্লেখ করছি যা আমীরের জন্য আবশ্যক। আমি এগুলো বিভিন্ন কিতাবে পড়েছি যা এই মূহুর্তে উল্লেখ করছি না। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে, এগুলো একজন আমীরের জন্য আবশ্যক। কিন্তু কোন কিতাবেই তা উল্লেখ করা হয়নি। আরেকটি বিষয়, আমি এগুলো গুরুত্বের প্রতি লক্ষ্য রেখে সিরিয়াল অনুযায়ী উল্লেখ করছি। উনাদের কিতাবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিফাত উল্লেখ করা হয়েছে শেষে এবং কিছু দ্বিতীয় শ্রেণীর সিফাত প্রথম শ্রেণিতে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু আমি আমার বিশ্বাস অনুযায়ী অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে যেগুলো উত্তম সেগুলো আগে উল্লেখ করবো।
একজন আমীর যিনি অচিরেই কোন জিহাদী তানযীম পরিচালনা করবেন, তার জন্য আবশ্যকীয় চার বা পাঁচটি গুণ আমি উল্লেখ করছি। অথবা এমন আমীর যিনি ক্ষমতা অর্জনের আগ পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোন গ্রুপে সরাসরি আদেশ দাতা হিসাবে থাকবেন। আর এগুলো এমন সিফাত যা ক্ষমতা অর্জনের পরও জরুরী।

 

প্রথম সিফাত: আল্লাহ তায়ালার সাথে উত্তম সম্পর্ক ।
আমি বলি, একজন আমীরের গুণাবলীর মধ্যে সবচেয়ে জরুরী হলো আল্লাহ তায়ালার সাথে উত্তম সম্পর্ক করা। এটা অন্যান্য সকল সিফাত বা গুণ থেকে শ্রেষ্ঠ। কারণ, এতে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দার দুর্বলতা দূর করে দিবেন। আমীরের হয়ত কিছু গুণ নেই। কিন্তু তা সত্তেও তার অনুসারীদের মাঝে তার প্রতি সন্তুষ্টি এবং তৃপ্তি থাকবে। এটা আল্লাহ তায়ালার দান।
এখানের প্রত্যেকটি সিফাতের পিছনেই অনেক দলীল এবং রেফারেন্স আছে। কিন্তু আমি এই কোর্সটি বিস্তারিত আলোচনার কোন কোর্স বানাচ্ছি না। উদাহরণ স্বরুপ, যদি আমরা সবরের কথা বলি তাহলে সবর সংক্রান্ত কিতাবগুলো মুতালায়াহ করতে পারি। আর এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করলে এক সপ্তাহ ব্যাপী আলোচনাও সম্ভব। কিন্তু এভাবে আলোচনা করলে আমাদের কোর্স অনেক লম্বা হয়ে যাবে এবং আমরা মূল বিষয় থেকে বের হয়ে যাবো। সুতরাং আমরা সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করবো। কারণ যেই ভাইরা এই দাওরার আয়োজন করেছেন, তাদের নিকট সময় হচ্ছে ৪-৫দিন। তাই আমরা মূল মূল বিষয়গুলো আলোচনা করবো। তবে বিষয়বস্তুটি আমাকে উদ্বুদ্ধ করছে, এই দরসগুলো শেষ হওয়ার পর আমি বিস্তারিত একটি আলোচনা তৈরী করি। কেননা বিষয়টি অনেক বড়, আকর্ষণীয়এবং উপকারী।
আল্লাহ তায়ালার সাথে উত্তম সম্পর্কে সাহায্য করবে এমন কিছু বিষয়ের শুধু শিরোনাম উল্লেখ করছি। আপনারা সেই বিষয়ের কিতাবে তা দেখে নিবেন।

 

আল্লাহ তায়ালার সাথে উত্তম সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় গ্রহণ করা আবশ্যক এবং কিছু বিষয় থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক।

যে বিষয়গুলো গ্রহণ আবশ্যক তা হলো:
-- বেশি বেশি ইবাদাত করা। এটা আল্লাহ তায়ালা ও তার বান্দার মাঝে সম্পর্কের মাধ্যম।
-- বেশি বেশি নফল আদায় করা।  যেমন হাদীসে কুদসীতে আছে:


(وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ، فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ: كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ، وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ، وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا، وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا) ، وهذا علاقته بالقيادة أنّ الله تعالى يصبح يوجِّه العبد ويُقنع الخلق به.
{নফলের মাধ্যমে বান্দা আমার নিকটবর্তী হতে থাকে। এমনকি আমি তাকে মহব্বত করতে থাকি। আর যখন আমি তাকে মহব্বত করি, তখন আমি তার কান হয়ে যাই; যা দিয়ে সে শ্রবণ করে, তার চোখ হয়ে যাই; যা দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যাই; যা দিয়ে সে পাকড়াও করে এবং তার পা হয়ে যাই; যা দিয়ে সে চলে।}  নেতৃত্বের সাথে এ হাদীস সম্পৃক্ত। কারণ এতে আল্লাহ তায়ালা বান্দার প্রতি লক্ষ্য রাখেন এবং সৃষ্টিকে তার প্রতি সন্তুষ্ট করে দেন।

-- নিজেকে পর্যবেক্ষণ করা এবং নিজের কর্ম ও আচরণের হিসাব করা। অর্থাৎ কিছু সময় নিজেই নিজেকে নিরীক্ষণ করবে, কখন জুলুম করেছে এবং কখন ইনসাফ করেছে? কখন ভুল কাজ করেছে এবং কখন সঠিক কাজ করেছে? কখন কথা বেশি বলেছে এবং কখন কম বলেছে? আর ইহা আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ককে উন্নত করবে।
-- বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা। এটা ইবাদাতের অন্তর্ভুক্ত হওয়া সত্তে¡ও  বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণে আমি  ইবাদাত থেকে পৃথকভাবে উল্লেখ করেছি। কুরআন তেলাওয়াত মানুষ অনেক বড় শক্তি দান করে। একটা আয়াত আপনি অনেকবার পড়েছেন। কোন একদিন বিশেষ কোন বিপদ আপনার উপর আপতিত হয়েছে এবং তখন কুরআনের সেই আয়াতটিই পাঠ করছেন। আপনি তখন অনুধাবন করতে পারবেন যে, আয়াতটি আপনার এধরণের বিপদের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে। তাই তা আপনাকে ধৈর্যের শিক্ষা দিবে এবং অবিচল থাকতে সাহায্য করবে।
-- বেশি বেশি যিকির করা।  
ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ: এর ব্যাপারে সুন্দর একটি কথা বর্ণিত রয়েছে। তিনি এমন একটি সময় পার করছিলেন, যখন বিপদ তাকে বেষ্টন করে রেখেছিল। তিনি তার পুরো জীবনটা বিপজ্জনকভাবে কাটাচ্ছিলেন; তার সঙ্গী-সাথী,আশ-পাশের লোকজন এবং উলামাদের সহ এবং তাতারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ক্ষেত্রেও কঠিন বিপদের সম্মুখীন ছিলেন। এক বাদশাহ তাকে জেলে ঢুকাচ্ছেন, তো আরেকজন তাকে বাদশাহীর মর্যাদা দিচ্ছেন। শাইখের দৈনিক অযীফা ছিল, ফজর নামাজের পর মসজিদে বসতেন এবং ইবাদাতে মগ্ন থাকতেন। একদিন তাঁর এক ছাত্র এই দীর্ঘ অযীফা পাঠের কারণ জানতে চাইলেন। তখন তিনি বলেন,“ ইহা হচ্ছে আমার খাদ্য। যদি আমি তা গ্রহণ ছেড়ে দেই তাহলে আমার শক্তি নি:শেষ হয়ে যাবে।”(আল ওয়াবিলুস সইয়িব) অর্থাৎ আমি এই বিপদে আমার অযীফা ব্যতীত যা আমার শক্তির যোগান দেয়, অনুগত থাকতে পারবো না।

 

এখানে আরো অনেক বিষয় আছে (যা আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করে)। তাৎক্ষণিক ভাবে আমার যা স্মরণ হয়েছে তা উল্লেখ করেছি। তবে, আপনি আপনার অভিজ্ঞতা এবং অধ্যায়নের মাধ্যমে আরও অনেক কিছু পাবেন যা আল্লাহ তায়ালার সাথে আপনার সম্পর্ককে সমুন্নত করবে। কারণ আল্লাহ তায়ালার সাথে উত্তম সম্পর্কের বিষয়টি একজন আমীর নিজের মাঝে জমা করবে নিজের নেতৃত্ব ও আখেরাতের জন্য।

 

যেসব বিষয় থেকে আমীরের বেঁচে থাকা আবশ্যক, 
তা উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলোর সম্পূর্ণ বিপরীত।
অধিক ইবাদাতের বিপরীত হচ্ছে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। পরাজয়ের সবচেয়ে বড় কারণ গুনাহে লিপ্ত হওয়া । আমীর যদি গুনাহে লিপ্ত হয় তাহলে তার পরাজয় এবং ধ্বসে পড়া আবশ্যক । আর যদি কোন বাহিনী গঠন করে তাহলে সে বাহিনীর পরাজয় আবশ্যক।
অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও হৃদয়ের ব্যধি থেকে বেঁচে থাকা: 
এ ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো না । বিস্তারিত জানতে ইমাম গাযালী রহ: এর ‘ইহয়াউল উলূমিদ্দীন’  অথবা ‘মুখতাসারু মিনহাজিল কাসিদীন’ পাঠ করে নিবেন। ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ: এর বাণীগুলোও পড়তে পারেন। 
আমি শুধু শিরোনামের প্রতি ইঙ্গিত করলাম। তবে, জিহ্বার ব্যধি থেকে বিশেষ ভাবে বেঁচে থাকবেন। জিহ্বার ব্যধিই একজন আমীরকে বিভিন্ন বিপদে ফেলে এবং তার প্রভাব-প্রতিপত্তি বিনষ্ট করে দেয়। সে এমন ওয়াদা দেয় যা সে পূর্ণ করতে সক্ষম নয়। ফলে তার সততা নষ্ট হয়। আর এই বিপদ শুরু হয়েছে তার জিহ্বার মাধ্যমে। সে কারও ব্যাপারে কোন কথা বলবে; তখন সে লোক মানুষকে আমীরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলবে। ফলে বিরোধ সৃষ্টি হবে। জিহ্বার ব্যধিগুলো হারাম হওয়া ছাড়াও তা একজন আমীরকে তার নেতৃত্বের ব্যাপারে কষ্টে ফেলে।

 

নেতা হওয়ার বিষয়টি সহজ কোন বিষয় নয়। এটি অনেক কঠিন একটি কাজ। যেমন কোন মানুষ কেরাতি খেলতে পছন্দ করে। ফলে সে ক্লাবে গেল এবং খুব সহজেই যুক্ত হয়ে গেল। কেরাতির যাবতীয় সামানও কিনে নিল। কিন্তু যখন সে মাঠে নামবে এবং খেলা শুরু করবে  তখন বুঝবে আসলে বিষয়টি যেমন ধারণা করেছে তেমন নয়। বরং খেলোয়াড় হতে হলে তাকে অনেক শ্রম ও শক্তি ব্যয় করতে হবে এবং ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তবেই সে একজন খেলোয়াড় হতে পারবে। সুতরাং আপনিও যখন একজন আমীর হতে চাচ্ছেন তখন ব্যাপারটিকে মোটেই সহজ ভাববেন না।

 

আমাদের প্রত্যেকেরই উচিৎ এই গুণগুলোর মাধ্যমে নিজেদের নেতৃত্ব ও জিম্মাদারীকে পর্যবেক্ষণ করা। যদি সবাই নিজেদের কর্মে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা রাখে তাহলে ধীরে ধীরে নিজেদের মাঝে এই গুণাগুলো চলে আসবে। আর এই ইলমগুলো তাকে সংশোধনে সাহায্য করবে।

 

আল্লাহ তায়ালার সাথে উত্তম সম্পর্কের বৃদ্ধির ব্যাপারে যে ধরণের কিতাব মুতালায়াহ করা যেতে পারে; 
হৃদয় বিগলিত করে এমন কিতাব, দুনিয়া বিমুখতা নিয়ে লিখিত কিতাব এবং ইবাদাত সম্পৃক্ত কিতাব। যেমন ‘ইহয়াউ উলূমিদ্দীন’ ও তার সার সংক্ষেপগুলো। ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বলের ‘কিতাবুয যুহদ’ । (نضرة النعيم أخلاق سيد المرسلين) ‘নাজরতুন নাঈম আখলাকু সায়্যেদুল মুরসালীন’ এই নামে একটি বিশ্বকোষ রয়েছে যা আমি মুতালায়াহ করেছি। আমি প্রতিটি জামায়াহ এবং মাকতাবাহকে এই বিশ্বকোষটি সংরক্ষণের আবেদন করবো। বিশ্বকোষটি ১২ খন্ডে। আমাদের নবী মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ২০০টি উত্তম চরিত্রের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং এর উপর অনুমান করে ১৬০টি মন্দ চরিত্রের কথা আলোচনা করা হয়েছে যা মানুষের উপর আপতিত হয়েছে। এটি হরফ অনুযায়ী পরিচ্ছেদ আকারে সাজানো হয়েছে। যেমন الكبر (অহংকার) পাওয়া যাবে   (ك ب ر) এর অধ্যায়ে। সেখানে এই বিষয়ে সব আয়াত উল্লেখ করা হয়েছে। তারপর হাদীস, অত:পর সাহাবাহ ও সালাফদের বর্ণিত বাণীগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। সর্ব শেষ আরবী কবিতা এবং আরবী ভাষার বিরল বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।


দ্বিতীয় গুণ: আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে সুধারণা রাখা:    
একজন আমীরের জন্য দ্বিতীয় আবশ্যকীয় গুণ হলো আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে সুধারণা রাখা। কারণ কখনো এমন হতে পারে যে, খলীফা থেকে সাহায্যের আশা শেষ হয়ে যাবে এবং উপায় উপকরণেরও কোন আশা থাকবে না। এমন পরিস্থিতিতে নিজের কাজটি কঠিন মনে হবে। সামান খুবই কম মনে হবে। সহযোগীদের মনে হবে অপারগ এবং নিজেকে মনে হবে দুর্বল। এই পরিস্থিতিতে আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে সুধারণা তাকে এমন ভাবে গড়ে তুলবে যে, সে উপকরণের দিকে তাকানোর প্রয়োজন মনে করবে না এবং উপকরণ না থাকা তাকে ব্যর্থ করে দিতে পারবেনা। আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে সুধারণা আখেরাতের মুক্তির কারণ হবে এবং একজন আমীরকে মানুষিক শক্তির যোগান দিবে।  সে বিজয়ের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস রাখবে এবং কঠিন কাজটি করতে সক্ষম হবে। কেননা সে আল্লাহ তায়ালার সাহায্য কামনা করেছে। তাই, আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে সুধারণা রাখা একজন আমীরের জন্য আবশ্যক।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সে অনুধাবন করতে পারবে যে, সে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে তাওফীকপ্রাপ্ত এবং সাহায্যপ্রাপ্ত এবং সে তার বিষয়ে সফল এবং কৃতকার্য হবে। আল্লাহ তায়ালা অচিরেই তাকে সাহায্য করবে।

 

তৃতীয় গুণ: তাওয়াক্কুল বা আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা:
একজন আমীর যখন আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসাকারী না হবে তখন অক্ষমতা তাকে গ্রাস করে নিবে। দ্বীনের দিক থেকে তো প্রত্যেকের জন্যই ইহা আবশ্যক। কিন্তু নেতৃত্বের ক্ষেত্রে একজন আমীরের জন্য আরও বেশি আবশ্যক। যদি একজন আমীরের তাওয়াক্কুল ( আল্লাহর উপর ভরসা ) না থাকে এবং সে ধোকা খায় এবং ধারণা করে যে, তার হিসাব-নিকাশ, সেনাবাহিনী এবং সাহায্যকারীরা তাকে ভালো ফলাফল এনে দিবে, তাহলে সে তাই পাবে যা পেয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ মাখলুক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইনের যুদ্ধে।
তাওয়াক্কুল বাধা ডিঙ্গানো এবং ধৈর্য ধারণের মাধ্যম। তাওয়াক্কুল ব্যতীত আপনি এমন একটি গুণ অর্জন করতে পারবেন না যা উভয় কিতাবেই উল্লেখ করা হয়েছে। আর তা হলো সবর বা ধৈর্য। আমাদের আলোচনায় কিছু গুণ আছে যা অন্য আরেকটি গুণের উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ আপনি একটি গুণ অর্জন করলে আরেকটি গুণও অর্জিত হয়ে যাবে। একটি গুণ আরেকটি গুণের উৎস হবে।

 

চতুর্থ গুণ: নিজ বিষয়ে ইলম ও সক্ষমতা থাকা।
এখানে তিনি  ইলমের কথা শর্তহীন ভাবে উল্লেখ করেছেন। মুমিনদের আমীরের জন্য যে গুণাবলী আবশ্যক তার একটি হচ্ছে ইলম। আর এটা শুরু হবে কুরআন এবং সুন্নাহ ইত্যাদি থেকে। কিন্তু যখন আপনি একজন বোডিং ম্যানেজার, তখন  আপনাকে খাদ্যের বিভিন্ন রুচি-অরুচি এবং সময় জানা থাকতে হবে। এমনিভাবে আপনি যখন একজন ইলেক্ট্রনিক হবেন, তখন আপনার এই বিষয়ের জ্ঞান থাকতে হবে। তাই, একজন আমীরের জন্য নিজের বিষয়ে ইলম এবং সক্ষমতা থাকতে হবে। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন:
إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الْأَمِينُ
নিশ্চই আপনার চাকর হিসাবে  সেই  উত্তম হবে যে শক্তশিালী ও বিশ্বস্ত।
এখানে যে আমানতের কথা বলা হয়েছে, তা দ্বীন ও আখলাকের সাথে সম্পৃক্ত। আর যে শক্তির কথা বলা হয়েছে, তা হলো প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের বিশেষ কাজের শক্তি। সুতরাং যখন কেউ সেনাপ্রধান  বা  গোয়েন্দা প্রধান হবে, তখন তার এই বিষয়ের নলেজ থাকা আবশ্যক।
যদি কারও নিজের কাজের বিষয়ে জ্ঞান না থাকে, তাহলে দ্বীন এবং দুনিয়াবী দিক থেকে তার জন্য আবশ্যক হলো কাজটি ছেড়ে দেওয়া।
 আমীরের জন্য এটা স্পষ্ট থাকতে হবে যে, কাজ ছেড়ে দেওয়া কোন তাওয়াজু’(নমনীয়তা) নয় এবং জিম্মাদারী থেকে পলায়ন করাও নয়। বরং মনে করতে হবে, আমি এই বিষয়টি বুঝতে পারছি না। কিন্তু এরপরেও  যদি দায়িত্ব নিয়ে নেয়, তাহলে অচিরেই দেখা যাবে যে, সে অকৃতকার্য হয়েছে।
সুতরাং শুরুতেই তার জন্য আবশ্যক হচ্ছে দায়িত্ব গ্রহণ না করা। এরপেরও যখন নেতৃত্ব ও পদের লোভে দায়িত্ব গ্রহণ করবে; অথচ সে এব্যাপারে পূর্ণ অবগত নয় এবং তার যোগ্যও নয়, তখন সে নিজে নিজেই ধ্বসে পড়বে এবং অন্যদের সামনে লজ্জিত হবে।
মনে করুন! কেউ বলল, আমি জুমার খুতবাহ দিতে পারি। অত:পর মিম্বারে উঠল এবং পড়তে লাগল, “আলহামদুলিল্লাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালমুু  আলা রাসূলিল্লাহ...।’’ অত:পর সামনের অংশ হারিয়ে ফেলল এবং আয়াতের ভুল উপস্থাপন শুরু করল। এখন যদি মানুষ তার প্রতি দয়াবান হয়ে তাকে মিম্বার থেকে নামিয়ে নাও দেয়; তথাপি সে গালমন্দ এবং সমালোচনার পাত্র হবে এবং অপমানিত হবে। আর এটার কারণ হলো, সে নিজেকে এমন স্থানে সমাসীন করেছে যা তার জন্য উপযোগী নয়।
প্রতিটি দায়িত্বই এরকম। দায়িত্বের ব্যাপারে যথেষ্ট ধারণা না থাকলে তা গ্রহণ করা উচিত নয়।  আর যখন পদ মর্যাদা এবং সম্মানের লোভে তা গ্রহণ করা হবে, তখন এর মূল্য আখেরাতে দিতে হবে এবং দুনিয়াতে হতে হবে লাঞ্ছিত।

 

পঞ্চম গুণ:  আমীরের পরামর্শদাতা এবং সাহায্যকারীগণ তার ঘাটতিপূরণকারী হবে:
এটি পূর্বের গুণগুলোর পূর্ণতা দানকারী এবং সেগুলো থেকেই গৃহীত।  অনেক সময় আমীরের মাঝে সব বিষয়ের  ইলম নাও থাকতে পারে। বিশেষ করে যদি দায়িত্ব বেশি হয়। যেমন একজন মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বশীল। সে লেখকও হতে পারে এবং সাংবাদিকও হতে পারে। কিন্তু একটা লাইব্রেরীর কিতাব সম্পাদনার জ্ঞান নাও থাকতে পারে। অনেক সময় এমনটা হয় যে, নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের আবশ্যকীয় জ্ঞান তার থাকে না। এই ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে যদি তার উপদেষ্টা ও সহচরগণ তার ঘাটতি পূরণ করার মতো লোক হয়।
যখন একজন আমীরের মাঝে মৌলিক যোগ্যতা বিদ্যমান থাকবে; কিন্তু কিছু সাইডে তার জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত না থাকবে, তখন এই বিষয়টি তার সে ঘাটতি পূরণ করে দিবে। সে তার উপদেষ্টা পরিষদ এবং সহচরদের থেকে ঘাটতি পূরণ করে নিতে পারবে।  এই বিষয়টি অনেক প্রসিদ্ধ। এমনকি খেলাফতের বিষয়েও।  খলীফা হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে ইজতিহাদের ( গবেষণা করে কিছু বের করার) যোগ্যতা থাকা। খলীফা হওয়ার জন্য মূলনীতি হচ্ছে তার মুজতাহিদের মর্তবা অর্জন করতে হবে। কিন্তু উলামাগণ খলীফার নিকট উপদেষ্টা পরিষদে এবং আহলে হল ও আক্বদের মাঝে এমন লোকজন থাকার শর্তে জায়েয মনে করেন; যে কোন বিপদে যারা রাজনীতি, শরয়ী এবং সেনাবাহিনীর ব্যাপারে ফতোয়ার ঘাটতি পুরা করে দিবে। এরকম একটি দল তার কাছে থাকাই তার ইলম।
যুগের পরিবর্তনে ইহা খুবই জরুরী হয়ে গেছে যে, আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে  কাজ করবো।  সুতরাং যখন আপনি মিডিয়ার দায়িত্বশীল হবেন তখন এমন একটি মিডিয়া বিভাগ গড়ে তুলেন যা আপনাকে সাহায্য করবে এবং আপনার ঘাটতি পূরণ করবে। আর যখন আপনি গোয়েন্দ বিভাগের দায়িত্ব পাবেন তখন আপনার নিকট এমন একটি সাহায্যকারী গ্রুপ থাকতে হবে যারা আপনার ঘাটতি পূরণ করবে। একজন আমীরের মৌলিক যোগ্যতা থাকার পর আপনি যে কোন ফ্রন্টের জিম্মাদার হবেন আপনার এমন কিছু সহযোগী থাকতে হবে যারা আপনার ঘাটতি পূরণ করতে পারবে।


ষষ্ঠ গুণ: সাধারণ সংস্কৃতির ব্যাপকতা। অর্থাৎ মানুষের আচার-আচরণ এবং অবস্থা বুঝতে পারা।
বর্তমান যুগে সব বিষয়ই অনেক ব্যাপক। একজন আমীর যদি গুপ্ত হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং তার সাধারণ সংস্কৃতি জানা থাকে তাহলে সে বুঝবে; স্থানান্তর পদ্ধতি কেমন হবে এবং চলা-ফেরার ক্ষেত্রে ইঙ্গিতগুলো কেমন হবে! কিন্তু যদি সে জীবনে কোন দিন শহরে প্রবেশ না করে থাকে এবং সাধারণ সংস্কৃতি জানা না থাকে, তাহলে তিনি পরিকল্পনা করতে সক্ষম হবেন না। যদিও কাজটি সামরিক কাজ হয়; তথাপি তার সাধারণ সংস্কৃতি জানা না থাকায় কর্ম বিন্যাসে সে ভুলে পতিত হবে।
সাধারণ সংস্কৃতি শেখা যায় বিভিন্ন শাস্ত্রের কিতাবাদি অধ্যয়ন করার দ্বারা। এজন্যই সংস্কৃতিবীদদের মতে সাধারণ সংস্কৃতি হচ্ছে তুমি  প্রতিটি জিনিসের ব্যাপারে তোমার কাছে নলেজ থাকবে। অর্থাৎ প্রতিটি বিষয়ের সামান্য জ্ঞান হলেও তোমার থাকবে; ভেড়া যবাই, চামড়া খসানো, ইলেক্ট্রনিক ও বৈদ্যতিক জ্ঞানও থাকা চাই।
আপনি এ বিষয়ে সুন্দর সুন্দর অনেক কিতাব পাবেন। যেমন: অপরাধ বিদ্যা এবং তার প্রমাণ। আমি একবার লাইব্রেরীতে বিভিন্ন বই নাড়াচাড়া করছিলাম। তখন আমার মনে হলো এই বিদ্যাগুলো আমাদের জন্য আবশ্যক। কারণ ইহা অপরাধ সনাক্ত করার বিষয়ে আলোচনা করে এবং অপরাধ উন্মোচন করে। আমাদের জিহাদী কার্যক্রম তাদের দৃষ্টিতে অপরাধ। তাই তারা তাও উন্মোচন করার চেষ্টা করে। আর আমরা যখন জানতে পারবো যে, কিভাবে অপরাধ উন্মোচন করা হয় তখন আমার এমন কোন নিদর্শন রেখে যাব না যার মাধ্যমে সনাক্ত করা যাবে। আর এটাই হচ্ছে সাধারণ সংস্কৃতি।
যদি আপনি অপরাধ সনাক্ত করণের বিষয়ে কোন কিতাব পাঠ করেন এবং জানতে পারেন যে, পুলিশ কিভাবে প্রমাণ খুঁজে বের করে তখন আপনি আপনার পরিকল্পনার মাঝেই এর প্রতিফলন দেখতে পারবেন। যদি কাজটি হয় ব্যাংকের গনীমত সংক্রান্ত কোন বিষয় তাহলে কমান্ডারের নিকট যত বেশি সাধারণ সংস্কৃতি থাকবে ততবেশি সে তার পরিকল্পনা সাজাতে সক্ষম হবে।


সপ্তম গুণ: অভিজ্ঞতা অর্জন এবং মানুষের সাথে মেশা:
একজন নীরব বিচ্ছিন্ন মানুষ নিজের দ্বীন,অঙ্গ-প্রতঙ্গ এবং তার পরিবার ও সম্পদ আত্মিক প্রশান্তির কারণ হবে। কিন্তু এমন ব্যক্তি কোন সাধারণ দায়িত্ব গ্রহণেরও উপযুক্ত নয়।  যে ব্যক্তি পাবলিকের কোন দায়িত্ব নেবে; যেমন, জিহাদ অথবা বিচার বা ফতওয়া প্রদান, তার জন্য মানুষের সাথে উঠা-বসা করা আবশ্যক । এমনকি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ: ইহাকে ফতওয়া প্রদানের পূর্ব শর্ত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন,“কারও জন্য নিজেকে ফতওয়া প্রদানের আসনে বসানো উচিৎ নয়, যতক্ষণ না তার মাঝে পাঁচটি গুণ থাকে।”  ইবনে কুদামাহ রহ: বলেন, তার প্রথমটি হচ্ছে নিয়্যাত, দ্বিতীয়টি হচ্ছে শরয়ী ইলম, আর পঞ্চমটি হচ্ছে মানুষের সাথে মেলামেশা করা। যদি মুফতি মানুষের সাথে মেলামেশা না করে, তবে তার নিকট বিষয়টি অস্পষ্ট হবে এবং সৎ সুরতে অসৎ লোকের আগমন ঘটবে।
যখন বিচার ব্যবস্থার ক্ষেত্রেই মানুষের সাথে মেলামেশা শর্ত তখন খেলাফতের ক্ষেত্রে অবস্থা কেমন হবে? আপনার কাছে কেউ এসে বলবে, “শায়খ! আমাদের এরকম একটি পরিকল্পনা আছে এবং এ বিষয়ে আমাদের এই এই তথ্য আছে।”  এখন যদি আপনি মানুষের সাথে উঠা-বসা করে থাকেন, তাহলে তার চোখ এবং পোশাক দেখেই অস্বাভাবিক কিছু নির্ণয় করতে পারবেন।  কিন্তু আপনি যদি কোন ঘরকোণো দরবেশ হন তাহলে বলবেন,“ মাশা আল্লাহ, আজ আমাদের কাছে একটা তথ্য এসেছে, যার ভিত্তিতে সফল হওয়া সম্ভব।” কিন্তু তখনই যদি আপনার সাথে থাকা কেউ বলেন,“শাইখ! এই ব্যক্তি ধোকাবাজ, প্রতারক।” এই লোক তদন্ত কিভাবে  চিনল যে, সে প্রতারক? হ্যাঁ, চিনতে পেরেছে তার সাংঘর্ষিক কথা-বার্তা এবং তার দৃষ্টির প্রতি লক্ষ্য করে। আর এটাই হচ্ছে বিচক্ষণতা। এটাও এক ধরণের যোগ্যতা। কিন্তু এটাকে শক্তিশালী করে মানুষের সাথে মেলা-মেশা।  মানুষের উপর ঘটে যাওয়া বিভিন্ন অবস্থা এবং প্রতারণার অবস্থা দেখে দেখে এই যোগ্যতা অর্জিত হয়। সুতরাং এটাও আমীরের জন্য আবশ্যকীয় একটি গুণ।
শাইখ সাঈদ হাওয়ীর কিতাবে উল্লেখিত কমান্ডারের গুণাবলী:
আমরা এখন শাইখ সাঈদ হাওয়ী এর কিতাবে উল্লেখিত গুণাবলী উল্লেখ করছি । রেফারেন্স উল্লেখ করে সামান্য কিছু দলীলও পেশ করবো। তবে, বেশি দলীল উল্লেখ করবো না। কারণ তাতে আলোচ্য বিষয় অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে।

 

১. দানশীলতা ও সাহসিকতা।
শাইখ দানশীলতা এবং বীরত্ব দুইটিকে পৃথক পৃথক ভাবে উল্লেখ করেছেন। আর আমি উভয়টি এক সাথেই উল্লেখ করেছি। কখনো কখনো মনে হয় দানশীলতা এবং বীরত্ব দু’টি গুণের মাঝে বৈপরীত্ব রয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো বীরত্ব দানশীলতার একটি শাখা। কেননা কোন কৃপণ কখনোই বীর হতে পারে না। যদি কেউ তার মালের ব্যাপারেই কৃপণতা করে, তবে জানের ব্যাপারে কৃপণতা করবে আরও আগে! কারণ মালের চেয়ে জান আরও বেশি মূল্যবান। সে তার সময়ের ব্যাপারেও কৃপণতা করবে এবং সব বিষয়েই কৃপণতা শুরু করবে। সুতরাং বীরত্ব হচ্ছে দানশীলতারই একটি অঙ্গ; যা কৃপণরা অর্জন করতে পারেনা।

দানশীলতা আমীরের মৌলিক চরিত্রগুলোর প্রথম সারির অন্তর্ভুক্ত এবং এর উপর ভিত্তি করে অনেক শাখাগত বিষয় বের হয়। আপনি যদি চরিত্র সম্পর্কীয় কিতাবগুলো অধ্যয়ন করেন; বিশেষ করে ইমাম গাযালী রহ: এর কিতাবাদী তাহলে এই দু’টির মাঝে সম্পর্ক পেয়ে যাবেন।  দানশীলতা এবং বীরত্ব নিয়ে কবি বলেন:


الجودُ بالمال جُودٌ فيه مَكْرَمةٌ
والجُودُ بالنَّفْسِ أَسْمَى غايةُ الجودِ

 

( সম্পদ দান করা এমন দান যাতে দয়া রয়েছে। আর জীবন দান করা হচ্ছে দানশিলতার সর্বোচ্চ চূড়া।) 

 

সুতরাং সম্পদ দান করা ভালো। তবে জীবন দান করতে পারা তার চেয়েও মহান। আর জীবন দানই বীরত্বের জন্ম দেয়।
শাইখ সাঈদ হাওয়ীর কথায় আসা যাক।  তিনি ৩১ পৃষ্ঠায় দয়া ও দানশীলতার আলোচনা করেছেন। তিনি সেখানে উত্তর আফ্রিকা এবং স্পেনের আলেমদের একজন ইমাম  আত তারতূশী রহ: এর কথা নকল করেছেন; যিনি রাজা-বাদশাহদের জন্য এমন সব গুণের কথা লিখে পাঠাতেন যার মাধ্যমে তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত থাকবে। তিনি দয়া ও দানশীলতার  ব্যাপারে বলেন,“এই গুণের মর্যাদা অনেক উঁচু এবং তার ক্ষতিও অনেক বিপজ্জনক।  ইহা রাষ্ট্রের একটি খুঁটি ও ভিত্তি এবং রাষ্ট্রের মুকুট ও সৌন্দর্য। এর কারণে গর্দান নত হয়ে যায় এবং প্রতাপশালী বিনয়ী হয়ে যায়, স্বাধীনরা গোলামে পরিণত হয় এবং শত্রুরা  আকৃষ্ট হয়ে পড়ে, প্রসংশা বেড়ে যায়, কাছে বা দূর সকলেই অধীনতায় এসে যায়।  ইহা অন্যান্য দৃঢ়পদ আবশ্যকীয় বিষয়গুলোর সাথে সম্পৃক্ত এবং সুন্দর ও প্রিয় বিষয়ের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ।”
এখানকার প্রতিটি কথাই ব্যাখ্যা করা সম্ভব। তাহলে মূল রহস্য বুঝে আসবে।
শাইখ এই ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর একটি হাদীস উল্লেখ করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেছেন,
(السخي قريب من الله قريب من الجنة قريب من الناس بعيد من النار، والبخيل بعيد من الله بعيد من الجنة بعيد من الناس قريب من النار..) ثم يقول وهذا من عجائب ولطائف هذا الحديث: (والجاهل السخي أحب إلى الله عز وجل من عابد بخيل) .
“দানশীল ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা, জান্নাত এবং মানুষের নিকটবর্তী; জাহান্নাম থেকে দূরবর্তী। আর কৃপণ ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালা, জান্নাত এবং মানুষ থেকে দূরবর্তী; জাহান্নামের নিকটবর্তী।”অত:পর তিনি বলেন, এটা এই হাদীসের সারাংশ{দানশীল জাহেল আল্লাহ তায়ালার কাছে ইবাদাতকারী কৃপণ থেকে উত্তম।}
وقال رسول الله -صلى الله عليه وسلم-: (إذا أراد اللهُ بقَومٍ خيرًا، وَلَّى أمرَهُمُ الحُكماءَ، وجعل المالَ عندَ السُّمَحَاءِ، وإذا أراد اللهُ بقومٍ شرًّا، ولَّى أمرَهُمُ السُّفَهاءَ، وجعلَ المالَ عِندَ البخَلاءِ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,“ যখন আল্লাহ তায়ালা কোন জাতীর কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন জ্ঞানীদেরকে তাদের অভিভাবক বানিয়ে দেন এবং দানশীলদেরকে সম্পদ দেন। আর যখন কোন জাতীর অল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন মূর্খদেরকে তাদের অভিভাবক বানিয়ে দেন এবং কৃপণদেরকে সম্পদ দান করেন।”
দয়া-দাক্ষিণ্যের ব্যাপারে এই দু’টি দলীল পেশ করাই যথেষ্ট মনে করছি।
আর বীরত্বের ব্যাপারে শাইখ সাঈদ হাওয়ী নাম্বার পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন। সেখানে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বীরত্বের আলোচনা করেছেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সবচেয়ে বেশি বীর। শাইখ সাঈদ হাওয়ী বলেন,“(বাদায়েউস সুলুক নামক কিতাবের লেখক) ইবনুল আরযাক বলেন,“শিথিলতার দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণে ভীরুতা সৃষ্টি হয়। যা বীরত্বের বিপরীত। বীরত্ব হচ্ছে ভীরুতা এবং অদূরদর্শিতার মাঝামাঝি অবস্থান। ভীরুতা বীরত্বের বিপরীত হওয়ার কারণেই নিন্দনীয়। আমি অতিরিক্ত আরও দু’টি বিষয়ের মাধ্যমে ক্লিয়ার করছি। তার প্রথমটি হচ্ছে; ইহা মানুষের সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বভাব। আবু হুরায়রাহ রা: থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
شرّ ما في الرجال شُحُّ هالع وجُبنٌ خالع
এই হাদীস বীরত্ব দানশিলতার সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ।
আনাস ইবনে মালিক রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
كنتُ أخدمُ النبيَّ -صلَّى اللهُ عليهِ وسلَّمَ- فكنتُ أسمعُه كثيرًا يقول: اللهمَّ أعوذُ بك من الهمِّ والحَزَنِ والعَجْزِ والكَسَلِ والبُخْلِ والجُبْن، وضلع الدَّين وغَلَبَة الرجال
আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সেবা করতাম। আমি তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) অধিকাংশ সময় বলতে শুনতাম, “হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে দু:খ ও পেরেশানি, অলসতা ও অক্ষমতা, কৃপণতা ও ভীরুতা এবং ঋণের বোঝা ও মানুষে চাপ থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।”
ইমাম তরতূশী রহ: বলেন,“পালায়নকারীদের মধ্য থেকে যুদ্ধকারী গাফেলদের মধ্যে তওবাকারীর ন্যায়।”

 

২. সবর  (ধৈর্য) ও ইয়াক্বিন (দৃঢ় বিশ্বাস)।
শাইখ এই দু’টিকে পৃথকভাবে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমি সবরকে ইয়াক্বিনের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছি। শাইখ সাঈদ হাওয়ী রহ: আমীরের যে গুণটি সবার আগে থাকা দরকার সেটি উল্লেখ করেছেন অনেক পর । কেমন যেন ধারাবাহিকতা প্রতি লক্ষ্য করেননি। সবর এবং ইয়াক্বিনের মাঝে সম্পর্ক থাকার কারণে আমি সবরকে ইয়াক্বিনের সাথে উল্লেখ করেছি। বীরত্ব ছিল দানশিলতার শাখা। কিন্তু সবর ও ইয়াক্বিনের মাঝে কোনটি কার শাখা ?

এখানে সবর হচ্ছে ইয়াক্বিনের শাখা। আর ইয়াক্বিন হলো সবরের উৎস। কারণ মানুষ ধৈর্য ধরতে ধরতে এক সময় ধৈর্যহীন হয়ে যায় এবং ধৈর্য ধারণ করতে সক্ষম হয় না। আর এটার কারণ হলো ফলাফলের ব্যাপারে তার দৃঢ় বিশ^াস না থাকা। বিষয়টি ক্লিয়ার করতে আমি একটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। আপনি কাউকে একটি প্রশিক্ষণে নিয়ে যাচ্ছেন। বের হয়ে তাকে বললেন; আমাদের পথ অনেক দূর। সে আপনার সাথে বের হল এবং পথিমধ্যে পিপাসার্ত হয়ে পড়ল। তখন আপনি তাকে বললেন,“আমিও পিপাসার্ত। কিন্তু তুমি তা বুঝতে পারনি। এখানে ৫০০ কি.মি. এর মাঝে কোন পানি নেই।”  একথা শুণে তার ধৈর্য একেবারেই শেষ হয়ে যাবে। সে ১০ কি.মি. ও পার হতে পারবে না। কিন্তু আপনি যদি তাকে বলেন,“ইনশা আল্লাহ, এখানে কাছেই পানি পেয়ে যাব। কিছু ভাই এখান দিয়ে গিয়েছিল এবং এখানে পানি পেয়েছিল।” তখন কিছু দূর গিয়ে সে আবার বলবে,“হে শাইখ! পানি কোথায়?  তখন আপনি তাকে বলবেন,“আর কিছুক্ষণ পরেই পেয়ে যাব।” এভাবে তার ধৈর্য শক্তি  এবং নফসের কন্ট্রোল শক্তি অনেক গুণে বাড়তে থাকবে। কিন্তু শুরুতেই যদি পানি পাওয়ার বিশ্বাস হারিয়ে যেত তাহলে সে ধৈর্য ধারণ করতে পারতো না।

যখন আপনি সৈনিকদের বলবেন,“আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা সফল হবে। আর সফলতার এই এই কারণ রয়েছে। সুতরাং ধৈর্য ধারণ করো এবং যুদ্ধ করো! ইনশা আল্লাহ, তোমরা লক্ষ্যে পৌঁছবে।” তাহলে তারা সবর করবে। কিন্তু আপনি যদি তাদেরকে বলেন,“এই এই উপকরণগুলো তোমাদের মাঝেও আছে এবং তোমাদের শত্রæদের মাঝেও আছে। সুতরাং বিজয় কখনো আসবে না। তাই, ধৈর্য ধারণ করো জান্নাত এবং শাহাদাতের আশায়।” তখন তারা ধৈর্য ধারণ করবে শুধু আল্লাহ তায়ালার সাথে সম্পর্কের কারণে। কিন্তু কেউ যদি ফলাফল এবং বিজয় আশা করে, তবে সে ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না।

সুতরাং সবর হচ্ছে ইয়াক্বিনের একটি শাখা।  আর সবরের জন্য আবশ্যক হচ্ছে ফলাফলের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস  থাকা। আর একারণেই জান্নাতের প্রতি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস ইবাদাতের উপর সবরের কারণ।

শাইখ সাঈদ হাওয়ী সবরের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন ৬৬ নাম্বার পৃষ্ঠায়। তিনি সেখানে অনেক দলীল পেশ করেছেন। আমরা অল্প কিছু দলীল উল্লেখ করছি।  তিনি আল্লাহ তায়ালার কালাম দিয়ে দলীল পেশ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ أَئِمَّةً يَهْدُونَ بِأَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوا ۖ وَكَانُوا بِآيَاتِنَا يُوقِنُونَ 

তারা সবর করত বধিায় আমি তাদরে মধ্য থেকে  মনোনীত  করছেলিাম, যারা আমার আদেশে পথ প্রর্দশন করত। তারা আমার আয়াত সমূহে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল ।

এই আয়াতে সবর ও ইয়াক্বীনের মাঝের সম্পর্কটা লক্ষ্যনীয়।  ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ: থেকে একটি কথা প্রসিদ্ধ রয়েছে, যেখানে তিনি সবর এবং ইয়াক্বিনকে নেতৃত্বের মৌলিক বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি তা এই আয়াত থেকেই গ্রহণ করেছেন।   وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ আমি তাদের থেকে তথা বনী ইসরাঈলদের থেকে ইমাম বানাবো। যারা জমীনের অধিকারী হবেন এবং তাকে শাসন করবেন। আর এটা কখন হবে? যখন তারা সবর করবে এবং আমার আয়াত সমূহের প্রতি ইয়াক্বিন আনবে। ইবনে তাইমিয়াহ রহ: বলেন:
"الصَّبْرُ وَالْيَقِينُ بِهِمَا تُنَالُ الْإِمَامَةُ فِي الدِّينِ"ا
সবর এবং ইয়াক্বিনের মাধ্যমেই দ্বীনের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব পাওয়া যায়। (মাজমূউল ফাতাওয়া-৩/৩৫৮)

 

শাইখ সাইদ হাওয়ী বলেন,“ইবনুল আরযাক বলেন: এই মহৎ গুণটি ধারণ করে রাজ্য শাসন নিশ্চিত করা যায় (কারণ সবরের তিনটি ফায়দা আছে):


প্রথম ফায়দা: শক্তির সব ধরণের ফলাফল অর্জন করা যায়, যাকে ব্যাখ্যা করা হয় সবর দিয়ে। ইবনে জুফার বলেন,“ আর তা- অর্থাৎ সবর হচ্ছে তিনটি শক্তির সমষ্টি। প্রথমটি হচ্ছে সহনশীলতার শক্তি, আর এর ফলাফল হচ্ছে ক্ষমা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার শক্তি, আর এর ফলাফল হচ্ছে রাষ্ট্র্র গঠন। আর তৃতীয়টি হচ্ছে বীরত্বের শক্তি এবং রাষ্ট্রে এর ফলাফল হলো দৃঢ়তা।
দ্বিতীয় ফায়দা:  কাঙ্খিত জিনিস না পেলে নিজেকে স্থির ভাবে ধরে রাখা। আর এতে তার শত্রুরা  লাঞ্ছিত হয়। এরেস্টু  তার ছাত্র ইস্কান্দার আল মাকদূনীকে বলেছিল,“যা ছুটে গেছে তা নিয়ে অস্থির হইয়ো না। কারণ এটা মহিলা এবং দুর্বলদের গুণ। ভদ্রতা এবং মহত্ত্ব প্রকাশ করো। কারণ এটা তোমার সম্পদ বাড়িয়ে দিবে এবং তোমার শত্রুদের লাঞ্ছিত করবে।”
তৃতীয় ফায়দা: (রাষ্ট্র ) পরিচালনার ক্লান্তি সহ্য করা যায়। রাজনীতিবীদরা বলেন,“খেলাফত পরিচালনার চেয়ে কঠিন কোন কাজ পৃথিবীতে নেই।” তারা আরও বলেন,“জাতীর নেতা সবচেয়ে বেশি  হতভাগা।” রাজাগণ শান্তি খোঁজে ক্লান্তি অর্জন করেন।
ইমাম তরতূশী বলেন,“এই বিষয়গুলো মুমিন বা পাপাচারী প্রত্যেক জাতির নিকটই প্রসংশনীয়।”

লক্ষ্য করুন, নীতিশাস্ত্রবীদগণ এমন বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন যা আমরা অনেক হালকা মনে করি। উনারা আখলাক এবং উপায়-উপকরণগুলো আলোচনা করে তার মাঝে সম্পর্ক তৈরী করে দিয়েছেন।

সবরের ব্যাপারটি আমরা এখানেই শেষ করছি এবং ইয়াক্বিনের কথা আলোচনা করছি। শাইখ সাঈদ হাওয়ী এটিকে নির্দিষ্ট গুণগুলোর অন্তর্ভুক্ত করে উল্লেখ করেননি। বরং কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে মৌন ভাবে উল্লেখ করেছেন। ‘ইয়াক্বিনের সংজ্ঞায় আমি আলী ইবনে আবি তালেব রা: এর কথাটি উল্লেখ করছি। তিনি বলেন,“যদি আমার সামন থেকে পর্দা সরিয়ে ফেলা হয়, তাহলে আমার ইয়াক্বিনে কোন ধরণের প্রবৃদ্ধি ঘটবে না।” অর্থাৎ যদি আমার সামনে জান্নাত,জাহান্নাম, শাস্তি এবং হিসাব-নিকাশ দেখি তুলে ধরা হয়, তাহলে আমার ঈমান বাড়বে না। তিনি ইয়াক্বিনের সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে গেছেন। তিনি অদৃশ্যকে এমন ভাবে বিশ্বাস করে নিয়েছেন যেন তা দৃশ্যমান বিষয়।

সুতরাং ইয়াক্বিনের সংজ্ঞায় আমি বলবো, আখেরাতকে সত্যায়ন করা এবং অদৃশ্য বিষয়কে দৃশ্যমান বিষয়ের নিকটবর্তী করা। সুতরাং জয় এবং পরাজয় অদৃশ্যমান। আল্লাহ তায়ালাই জানেন যে বিজয় আসবে কি আসবে না? কিন্তু যখন তোমার দৃঢ় বিশ্বাস বিজয়কে কাছে নিয়ে আসবে। কেমন যেন ইহা দৃশ্যমান একটি বিষয়।
এখান থেকে আমরা একটি বিষয় গ্রহণ করতে পারি। কেউ যখন জিহাদের ইচ্ছা করবেন তখন তিনি আল্লাহ তায়ালার প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী হবেন এবং বিজয়ের ব্যাপারেও তার দৃঢ় বিশ্বাস রাখবেন। তিনি জেনে রাখবেন যে, তিনিই বিজয়ী। এজন্যই ইবনে তাইমিয়াহ রহ: যখন তাতারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বের হচ্ছিলেন তখন মানুষের মাঝে ভয় ও কাপুরুষতা দেখতে পাচ্ছিলেন। কারণ তাতাররা  পৃথিবীকে উল্টিয়ে দিচ্ছিল এবং জমীনকে ধ্বংস করে দিচ্ছিল। পিকিং  থেকে কাবুল হয়ে বাগদাদ পর্যন্ত দখল করে নিয়েছিল এবং দামেস্ক পর্যন্ত পৌঁছেছে। তখন তিনি মানুষের কাপুরুষতার আশঙ্কা করছিলেন এবং মানুষকে ধৈর্যের আদেশ করছিলেন। তিনি তাদেরকে বলছিলেন,“আল্লাহর শপথ তোমরাই বিজয়ী।” লোকজন বলল,“আপনি ইনশা আল্লাহ বলেন!” তিনি বলেন,“নিশ্চিত ইনশা আল্লাহ, ঝুলন্ত নয়।”

সুতরাং বিজয়ের ব্যাপারে তোমার ইয়াক্বিন তোমাকে দৃঢ়তার সাথে লড়তে সাহায্য করবে। যখন তোমার বিজয়ের কোন উপকরণ ছুটে যাবে, তখন তুমি খুঁজে বের করবে যে, কেন ছুটে গেল? এবং তুমি তা পূর্ণ করে নিবে। এই বিষয়টি একজন কমান্ডারের জন্য আবশ্যক। তবে আপনারা আসল বিষয়টি ভুলে যাবেন না যার জন্য আমাদের এই মজলিস। এই বিষয়টি একজন কমান্ডারের আবশ্যকী বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। কারণ যখন একজন কমান্ডারের আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে সুধারণা থাকবে না এবং সবর ও ইয়াক্বিনও থাকবে না তাহলে পরের বিষয়গুলো দিয়ে আর কি হবে?

আমি একবার আল্লাহ তায়ালার এই বাণী থেকে সুন্দর একটি বিষয় পড়েছিলাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন:                                   وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا
যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফলে করে দিয়েছি,নিজের প্রবৃত্তরি অনুসরণ করে এবং যার র্কাযকলাপ হচ্ছে সীমা অতক্রিম করা,আপনি তার অনুগত্য করবনে না।

এই আয়াত প্রমাণ যে, এমন কোন আমীর বা কমান্ডারের অনুসরণ করা যাবে না, যার হৃদয় আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফেল। সুতরাং যার হৃদয় আল্লাহ তায়ালার স্মরণ থেকে গাফেল এবং ইবাদাত ও দ্বীনের ক্ষেত্রে যার মন্দত্ব প্রকাশ্য, তার মূলনীতি হলো তাকে অনুসরণ করা যাবে না। উলামাগণ, এই আয়াত পাঠ করে এমন সূ² অনেক বিষয় বের করতে পারবেন যা স্বাভাবিক অবস্থায় কল্পনা করা যায় না।
এগুলো হলো একজন কমান্ডারের গুণ। যদি কোন কমান্ডার বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী না হন তাহরে তিনি মাঠ পরিচালনা করতে পারবেন না। সিরিয়ায় আমি একটি অগ্রবাহিনীতে থাকালীন নিজেই এই বিষয়টি প্রত্যক্ষ্য করেছি। কমান্ডারগণ উপায়-উপকরণকে সীমাহীনভাবে তুচ্ছ জ্ঞান করছিলেন এবং কোন কাজকেই তারা আসবাবের সাথে সম্পৃক্ত করছিলেন না। তাদের এক কমান্ডার এমন কথাও বলতে লাগলেন যা বাস্তব প্রয়োগ ক্ষেত্রে ভুল। তবে, তা ইয়াক্বিনের পরিচায়ক। সে বলছিল,“আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে নুসাইরিদের বিরুদ্ধে জিহাদের আদেশ করেছেন। আমার বন্দুকে মাত্র সাতটি বুলেট আছে এবং আমি এখন তা নিক্ষেপ করছি। কিন্তু এরপর বুলেট আসবে কোত্থেকে আমি তা জানিনা এবং আমার পক্ষে তা জানা সম্ভবও নয়। আর এরচেয়ে বেশি আমি জানতেও চাই না। কারণ আমি আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করছি এবং চলছি।” যখন কথাটা বাস্তবে প্রয়োগ করা হবে তখন তা বাড়াবাড়িই হবে। তাইতো, তারা এই বাড়াবাড়ির মূল্যও পরিশোধ করেছে। কিন্তু অপর দিক দিয়ে তা শক্তিশালী ইয়াক্বিনের প্রমাণ দেয়।
একদা আমরা ইখওয়ানুল মুসলিমীনের  এক নেতার সাথে বসেছিলাম। সে বলছিল,“কোন লাভ নেই। আমরা শুধু কাজ করবো। কারণ আমরা কাজ করার জন্য বাধ্য। কিন্তু আমরা কিভাবে বিজয়ী হবো যখন আমাদের শত্রæদের নিকট ট্যাংক এবং জেট বিমান রয়েছে?” সে তার বাহিনীকে যুদ্ধ থেকে বারণ করে এবং তাদের ঈমান ও ইয়াক্বিনকে মিটিয়ে দেয়। তাকে ভেতর থেকেই কপর্দকহীন এবং পরাজিত করে ফেলে। আর একারণেই তাদের সন্তানরা পড়ে ভার্সিটিতে আর আমরা পড়ি জিহাদের ময়দানে। কারণ তাদের নিকট ইয়াক্বিন নেই।

একবার সুন্দর একটি ঘটনা ঘটেছিল। একজন মুজাহিদ ভাই তাদের উচ্চ পর্যায়ের এক নেতার মেয়ের ব্যাপারে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাল। নেতা যে কোন অজুহাতই পেশ করতে পারতেন। কিন্তু তিনি নির্বোধের মতো একটা কথা বললেন। তিনি বললেন,“হে বৎস! মেয়ের মা বলেছে ভবিষ্যতে তোমার জীবিকার কী গ্যারান্টি আছে?” সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে যার কোন ভার্সিটি নেই এবং কোন সার্টিফিকেট নেই তার জীবিকার কোন গ্যারান্টিও নেই। যুবকটি তখন  একটি কথা বলল। সে বলল,“আমার ভবিষ্যত আপনার সাথে জুড়ে আছে। আর সিরিয়া বিজয়ের পর আমি একজন সম্মানিত ব্যক্তি এবং শহরের একজন নেতা হবো।” অর্থাৎ তোমার কথা প্রমাণ যে, তুমি ইয়াক্বিনের বিষয়টা থেকে একেবারেই হাত ধুয়ে নিয়েছো। যদি তুমি জানতে যে, আমরা অচিরেই বিজয়ী হবো এবং অচিরেই তুমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হবে এবং আমি হবো তোমার সহকারী তাহলে বুঝতে পারতে আমার জীবন ও জীবিকার কী গ্যারান্টি আছে! কিন্তু তুমি নিজেকে পরাজিত দেখছ। আর তাই তোমার মেয়েরও আমার সাথে কোন ভবিষ্যত দেখছ না।
বাস্তবতা হলো, একজন কমান্ডার যখন বিজয়ের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবেন তখন তিনি অবিচল থাকতে পারবেন না। এই বিষয়ে অনেক প্রমাণাদি রয়েছে;যার একেকটি নিয়ে একটি দরস করা যাবে।

 

৩. আকল বা বুদ্ধিমত্তা।
আমরা এখন শাইখ সাঈদ আল হাওয়ী রহ: এর কিতাবের ২২ নাম্বার পৃষ্ঠায় উল্লেখিত গুণটি নিয়ে আলোচনা করবো। তিনি এটিকে আমীরের জন্য আবশ্যকীয় গুণগুলোর প্রথমেই উল্লেখ করেছেন। গুণটি হলো আক্বল বা বুদ্ধিমত্তা। তিনি কুরআন থেকে এই আয়াত দিয়ে প্রমাণ পেশ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ 
তারা আরও বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম অথবা বুদ্ধি খাটাতাম,তবে আমরা জাহান্নামবাসীদরে মধ্যে থাকতাম না।

সুতরাং আক্বল জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ। আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের ব্যাপারে ইরশাদ করেন:
صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُونَ
বধির, মুক এবং অন্ধ। সুতরাং তারা কছিুই বুঝেনা । 
শাইখ সাঈদ হাওয়ী রহ: বলেন,“রাজনীতি পুরোটাই বুদ্ধিমত্তার কাজ। আর জিহাদ এবং জিহাদী কার্যক্রম সবই সিয়াসাহ বা রাজনীতির অংশ। যিনিই এই মাঠে আসবেন তার জন্য সম্ভাব্য সব পজিশন সম্পর্কে জানতে হবে।”
এটা প্রত্যেক রাজনীতিবীদ এবং প্রত্যেক কমান্ডারের জন্য জানতে হবে। অর্থাৎ তার কাছে দাবা খেলার বুদ্ধি থাকতে হবে। দাবা খেলোয়াড় যখন একটি দাবা সামনে বাড়িয়ে দেয় তখন সে চিন্তা করে তার প্রতিপক্ষ কী কী সুযোগ পেতে পারে। যদি সে প্রথম সম্ভাবনাটি গ্রহণ করে, তবে তা থেকে এই এই উপায় সৃষ্টি হবে। আর যদি দ্বিতীয় সম্ভাবনাটি গ্রহণ করে, তবে এই এই উপায় সৃষ্টি হবে। আর যখন তৃতীয় সম্ভাবনাটি গ্রহণ করবে তখন এই এই উপায় বের হবে। প্রথম অবস্থায় সাতটি সম্ভাবনা এবং দ্বিতীয় সুরতে দুইটি সম্ভাবনা। আর তৃতীয় সুরতে নয়টি সম্ভাবনা। এখন তার নিকট মোট ১৮ টি সম্ভাবনা রয়েছে যা সে তার আক্বলে সংগ্রহ করে রেখেছে। এখন সে এই সম্ভাবনাগুলোর কোনটার মাঝে ক্ষতির সম্ভাবনা কম আর বেশি নির্ণয় করবে এবং সবচেয়ে কম ক্ষতিকর এবং বেশি লাভজনক সম্ভাবনাটি গ্রহণ করবে।
আন্তর্জাতিক দাবাখেলায় খেলোয়াড়রা একে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে এই সম্ভাবনাগুলো দ্রæত বুঝা এবং ব্রেণে সংরক্ষণ রাখার ভিত্তিতে। সোভিয়েত ইউনিয়নে যে দাবা খেলায় শ্রেষ্ঠ, সে কম্পিউটারে ওইগ খেলা খেলে শুধু কম্পিউটারের সম্ভাবনাময় সক্ষমতাগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার জন্য।
আমি একবার টেলিভিশনে দেখলাম যে, মস্কোতে একজন খেলোয়াড় আসল এবং সে তার অন্যান্য কূটনৈতিক সদস্যদের সাথে খেলা শুরু করল। সে ২৭ জন কূটনৈতিকের সাথে ২৭ টি টেবিলে খেলেছিল। সে প্রথম জনের কাছে যেত এবং তার সবগুলো সম্ভাবনা মনে রাখত। অতঃপর বাকি ২৬ জনের নিকট যেত। প্রথম খেলোয়াড়ের জন্য আরামে চিন্তা করার জন্য সামান্য সুযোগ থাকতো। যাতে বাকিদের সাথে পুনঃরায় খেলতে পারে।
এরকম সম্ভাবনার হিসাব ধারণকারী আক্বল সামরিক কাজে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এমন ব্যক্তি বুঝতে পারবে যে, যদি আমরা এদিক দিয়ে আসি, তাহলে শ্ত্রুরা ঐদিক দিয়ে আসতে পারে। অথবা ঐদিক দিয়ে এই ফন্দি আঁটতে পারে বা এই এই কাজ করতে পারে। এরুপে যদি আমরা নির্দিষ্ট একটি কাজ করতে যাই, তাহলে তার সম্ভাবনাগুলো কী কী? যদি আমরা এরুপ করি তাহলে তলাবাদের মুরতাদ হওয়ার সম্ভাবনা কেমন এবং পাকিস্তানের উপর তার প্রভাব কি রকম হবে এবং অমুকের উপর তার প্রভাব কেমন হবে? এই সম্ভাবনাগুলোর অধ্যায়ন শুরু করা দরকার। এটা অত্যন্ত জটিল একটা কাজ। এটার জন্য জ্ঞান এবং সাধারণ সংস্কৃতি লাগবে। কিন্তু যদি তোমার এমন বুদ্ধিমত্তা না থাকে যার মাধ্যমে এই বিষয়গুলোর সমাধান বের করবে। তাহলে আর এই সম্ভাবনাতে কি ফায়দা?
সাঈদ হাওয়ী রহ:,“সব সম্ভাবনার সামনে সর্বোত্তম সম্ভাবনাটি গ্রহণ করতে হবে।”
এই বিষয়টি আমর ইবনুল আস রা: ব্যাখ্যা করে দিয়ে গেছেন। তিনি ছিলেন আরবের বিচক্ষণ লোকদের একজন । একবার হযরত মুয়াবিয়াহ রা: উনার সামনে একটু গর্ব করে বলছিলেন,“আমি যে কোন সঙ্কটেই পড়েছি, তা থেকে বের হয়ে এসেছি।” এটি ছিল বিচক্ষণতা। তখন আমর ইবনুল আস রা: বললেন,“আমি কখনোই নিজেকে কোন সঙ্কটে নিক্ষেপ করিনি যে, আমি তা থেকে বের হয়ে আসব।” এটি ছিল সর্বোচ্চ বিচক্ষণতা । যদিও এটি বিচক্ষণতার একটি উচ্চ স্তর যে, তুমি বিপদে পড়ে তার থেকে বের হয়ে আসতে পার। কিন্তু এর চেয়েও উচ্চ স্তরের বিচক্ষণতা হচ্ছে তুমি বিপদেই পড়বে না।
শাইখ সাঈদ হাওয়ী আকলের সংজ্ঞায় বলেছেন,“দ্রুত বুঝা এবং সঠিক ধারণা করা। বিচক্ষণতার কোন শেষ নেই এবং ভালো বুঝেরও কোন সীমা নেই।”
বুদ্ধিমত্তার কোন শেষ নেই এবং নির্বুদ্ধিতারও কোন সীমা নেই। কখনো আপনি দেখবেন কেউ নির্বোধের মতো একটা বিপজ্জনক কাজ করেছে। আপনি তাকে বললেন,“এর চেয়ে নির্বোধ আর নেই।” অতঃপর আরেকজন লোক এসে অন্য একটি বিপজ্জনক কাজ করল এবং তাতে আপনাকেও শামিল করে নিল। তখন আপনি প্রথম জনের উপর দয়া করবেন। তাইতো, নির্বুদ্ধিতার কোন সীমা নেই এবং বুদ্ধিমত্তারও কোন অন্ত নেই।
উপরের আলোচনা ছিল আকল নিয়ে। আর আকলের পূর্ণতা হচ্ছে সে মানুষকে হিকমাহ পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দিবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَمَن يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا
এবং যাকে বশিষে জ্ঞান দান করা হয়,সে প্রভুত কল্যাণকর বস্তু প্রাপ্ত হয়। (সূরাহ আল বাক্বারাহ-২৬৯)


এখানে সুন্দর একটি বিষয় আছে। এটি আমি কোন কিতাবে পড়েছি তা স্মরণে আসছে না। কোন কাফেরকে আকেল বলা যাবেনা এবং একথাও বলা যাবে না যে, ওহ! কী বুদ্ধিমান! এই ভুলটি আমরা অনেক সময়ই করে থাকি।


কিছু কিছু বর্ণনায় এসেছে যে, একদা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে এক কিতাবীর আলোচনা করে বলা হয়েছিল,“কতই না বিচক্ষণ ব্যক্তি!” তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“বাহ! সে বিচক্ষণ হত যদি আল্লাহ তায়ালার উপর ঈমান আনত।” সুতরাং আকলের পূর্ণতা মানুষকে ঈমান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। তবে আমরা তাকে মেধাবী, দক্ষ বা চালাক বলতে পারি। আবার পরোক্ষ অর্থে আকেল বা বুদ্ধিমানও বলতে পারি। তবে তার এই আকল সে আকল নয় যা হেদায়াত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। কারণ, আল্লাহ তায়ালা কুফফারদের ব্যাপারে বলেছেন:
صُمٌّ بُكْمٌ عُمْيٌ فَهُمْ لَا يَعْقِلُونَ
বধির, মুক এবং অন্ধ। সুতরাং তারা কছিুই বুঝেনা । (সূরাহ আল বাকারাহ-১৭১)
আল্লাহ তায়ালা চতুষ্পদ জন্তুকে তাদের চেয়ে বেশি আকলমান্দ বলেছেন।

 

৪. সহনশীলতা।
শাইখ সাঈদ হাওয়ী রহ: সহশীলতা গুণটিকে শেষের দিকে উল্লেখ করেছেন। আমরা এখানেই তার আলোচনা করবো। আমার মতে তা আরও আগেই উল্লেখ করা দরকার ছিল। কারণ, এটি সরাসরি আকলের সাথে সম্পৃক্ত। সহশীলতা হচ্ছে Í হৃদয়ের প্রশস্ততা এবং উদারতা। শাইখের কিতাবের ৩৫ তম পৃষ্ঠায় আছে যে, ইমাম হাফেজ আবু হাতেম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান আল বাস্তী তার ‘রওজাতুল উকালা’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন,“আমীর যেন ক্রোধ থেকে বেঁচে থাকেন। (ক্রোধ হচ্ছে সহনশীলতার বিপরীত) আমীর যেন সহনশিলতাকে সর্বদা আঁকড়ে ধরে থাকেন, যখন সাথীদের থেকে ক্রোধের কোন কারণ দেখা দেয়। আব্দুল্লাহ ইবনে কহতুবাহ সূত্রে বর্ণিত যে,“জাহিলী যুগে দানশীলতা এবং বীরত্বের কারণে কাউকে শ্রেষ্ঠ মনে করা হত না। কিন্তু তারা শ্রেষ্ঠ মনে করতো তাকে যখন তাকে গালি দেওয়া হত তখন সহ্য করে নিত এবং যখন কিছু চাওয়া হত তখন প্রয়োজন পূরণ করে দিত অথবা তাদের সাথে অবস্থান করতো।” আবু হাতিম রা: বলেন,“কাউকে রাজনীতিবীদ নাম দেওয়া যায় না যতক্ষণ না তার মাঝে তিনটি জিনিস পাওয়া যায়।  তা হলো আকল, ইলম এবং যুক্তি।”
একজন আমীরের জন্য যুক্তিবাদী হওয়া আবশ্যক। কখনো কখনো আপনি এমন কাউকে পাবেন যে, অযৌক্তিক কাজ করছে। আপনি দেখবেন এধরণের কেউ বিস্ফোরক গুদামের দায়িত্ব নিয়েছে। অতঃপর আপনি গুদামে গিয়ে দেখবেন সেখানে পেট্রল ভরে রেখেছে। যদি জিজ্ঞেস করেন, এখানে পেট্রল ঢুকল কি করে? তখন বলবে,“আল্লাহর কসম, শাইখ!  পেট্রল চলে এসেছে। কিন্তু রাখার মতো কোন জায়গা না পেয়ে এখানে রেখে দিয়েছি।” তখন আপনি তাকে প্রথমই প্রশ্ন করবেন,“তোমার আকল কোথায় ছিল? তোমার মনে কি একথা একবারও জাগেনি যে, এর মাধ্যমে কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে?” এধরণের ভুলের কারণেই অনেক মানুষকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় এবং অনেক বিপদের কারণ হয়। আর এর মূল কারণ আকল।
কিন্তু যখন এই ব্যক্তি থেকে পুনরায় এরকম ভুল না হওয়া কামনা করা হবে তখন কমান্ডারের কাজ হলো তিনি অন্যান্য সৈন্যদের সামনে তার মানুষিক শক্তিকে বিনষ্ট করবেন না। এখানে কমান্ডার থেকে সহনশীলতা কাম্য। তিনি ধৈর্যশীল এবং বিবেকবান হবেন। সৈনিককে একাকী অবস্থায় ধরবেন এবং শাস্তি দিবেন বা মাফ করে দিবেন অথবা তাকে পৃথক করে দিবেন। কিন্তু মানুষের সামনে তার মানুষিকতা নষ্ট করবেন না। আর এটাই হলো সহনশিলতা।

শাইখ বলেন,“কমান্ডার ছয়টি জিনিস থেকে মুক্ত থাকবে; ক্রোধ ( সহনশীলতার বিপরীত), তাড়াহুড়া, হিংসা, প্রবৃত্তি, মিথ্যা এবং পরামর্শ পরিত্যাগ করা।
অতঃপর একজন কমান্ডার যেন তার রাজনীতির মাঠে সর্বদা তিনটি জিনিসকে আঁকড়ে ধরেন: কোমলতা, ধৈর্য এবং গাম্ভীর্যতা।
সুতরাং ক্ষমতাবান যে ব্যক্তি এগুলো থেকে মুক্ত তার অন্তর অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাবে এবং কার্যক্রম সব বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে। আর কারও মাঝে এগুলোর যে পরিমাণ অনুপস্থিত থাকবে, সে ঐ পরিমাণ হৃদয়ের আলো থেকে বঞ্চিত হবে এবং তার বিভিন্ন বিষয়গুলো সে পরিমাণ ত্রæটিযুক্ত হবে। রাজা এবং প্রজার উদাহরণ হচ্ছে এমন জামাতের ন্যায় যেখানে একজন মাত্র আমীর আছেন। এখন যদি ঐ আমীর সবচেয়ে বেশি সূ²দর্শী ও তী² দৃষ্টির অধিকারী না হন তাহলে সে নিজে সাথীদের সহ এমন কোন গিরিখাতে নিপতিত হবে যা তাদের মস্তক চূর্ণ করে দিবে।”

সুবহানাল্লাহ, যখন কেউ এই প্রজ্ঞাপূর্ণ  বিষয়গুলো জানতে পারবে, তখন যে সময়গুলো অনর্থক সমালোচনা, কথা-বার্তা, ঘুম ও অন্যান্য অনুপকারী জিনিসের পিছনে ব্যয় করছে তা নিয়ে আফসোস করবে। কারণ, যখন আপনি এই বিষয়গুলো পড়বেন তখন নিজের সামনে একটি আয়না ধরে নিবেন এবং নিজেই নিজেকে প্রত্যক্ষ্য ও পর্যবেক্ষণ করবেন। অতঃপর যাদের মাঝে এই গুণাবলী রয়েছে তাদের সাথে অধিক পরিমাণে উঠা-বসা করবেন এবং চরিত্র নিয়ে রচিত কিতাবাদি অধ্যায়নের মাধ্যমে ধীরে ধীরে নিজের মাঝে এসব গুণগুলো অর্জন করে নিবেন।

এমন কিছু জিনিস আছে, যা আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। যেমন, আপনার চোখের রঙ এবং আপনার উচ্চতা ইত্যাদি। এগুলো আপনি পরিবর্তন করতে সক্ষম নন। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং আমল নামা শুকিয়ে গেছে। কিন্তু এমন কিছু গুণ আছে যা আমরা অর্জন করতে সক্ষম।  যেমন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّمَا الْعِلْمُ بِالتَّعَلُّمِ، وَإِنَّمَا الْحِلْمُ بِالتَّحَلُّمِ
“ইলম আসবে শিক্ষার মাধ্যমে এবং হেলম আসবে সহনশীলতার মাধ্যমে।”
ومن يَتَصَبَّر يُصَبِّره الله
“আর যে ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ধৈর্যশীল বানান।”
এগুলো সবই অর্জিত গুণ।
শাইখ উল্লেখ করেছেন যে,“নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আশাজ¦ নামক এক ব্যক্তিকে বলেছিলেন,“তোমার মাঝে এমন দু’টি গুণ আছে যা আল্লাহ ও তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভালোবাসেন। তা হলো, সহনশীলতা ও ধীর স্থিরতা।”
এই বিষয়টি এখানেই শেষ করছি।

 

৫. ক্রোধ ও গোস্বা নিয়ন্ত্রণ করা।
আমরা এখানে ক্রোধ ও গোস্বা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনা করছি। এগুলো ‘হেলম’ এরই একটি শাখা। এই গুণগুলো যদি একটিকে আরেকটির সাথে মিলানো হয়, তবে সবগুলোর ফলাফল এক রকমই মনে হবে। ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ হেলম-এর প্রতীক এবং তার অনুগামী হলো সবর ও আকল। আর তার সাহায্যকারী ঈমান। সুতরাং যখন কারও কাছে ঈমান থাকবে এবং উপায়-উপকরণ এবং ফলাফল সম্পর্কে জানবে তখন তার কাছে স্রষ্টার  ব্যাপারে অজ্ঞ থাকবে না।

আপনি লক্ষ্য করুন, যখন আপনি ঘর থেকে আনন্দ মনে বের হন তখন মানুষের সাথে আপনার আচরণ কেমন হয়। আর যখন রাগান্বিত অবস্থায় বের হন তখন মানুষের সাথে আপনার আচরণ কেমন। ইউরোপে যখন আমি গাড়ি চালাতাম, খেয়াল করতাম, যেদিন আমি খুশি মনে বাড়ি থেকে বের হতাম সেদিন রাস্তায় কেউ  আমাকে কষ্ট দিলে আমি তাকে এড়িয়ে চলতাম। কিন্তু যেদিন রাগ করে বাড়ি থেকে বের হতাম সেদিন কেউ কোন কষ্ট দিলে আমিও তাকে কষ্ট দিতাম। সে যদি আমাকে কোন দিকের ইশারা দিত আমিও তাকে ইশারা দিতাম এবং তার পিছনে পিছনে ছুটে যেতাম। কিন্তু আমি যে উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়েছি তা ছেড়ে দিতাম। হঠাৎ দেখতাম আমার কাজের সময় আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি আছে। অথচ আমি এমন একটি বিষয়ের পিছনে ছুটছি যা আমার বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়।

এর কারণ হলো, আমি ক্রোধান্বিত হয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। কিন্তু যদি স্বাভাবিক অবস্থায় এরকম ঘটনা ঘটতো তাহলে আমি তা এড়িয়ে যেতাম। দুনিয়াটাই আহমকীতে ভরপুর। তাই, ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করা ঈমান,ইয়াক্বিন এবং আকলের প্রতীক। যখন আপনার ঈমানের উন্নতি ঘটবে তখন এই ছোট ছোট বিষয়গুলোও উন্নত হতে থাকবে।

আর সাধারণত অধিক অভিজ্ঞতা, বয়স বৃদ্ধি হওয়া এবং যৌবন অতিবাহিত হওয়া; এর প্রত্যেকটিই আপনাকে সহনশীলতা এবং হৃদয়ের প্রশস্ততায় সহযোগিতা করবে। সুবহানাল্লাহ, চল্লিশ বছর আল্লাহ তায়ালার নিদর্শন সমূহের একটি। এই বয়সে আপনি প্রতিটি বিষয়ে কোমলতা উপলব্ধি করতে পারবেন। অনেক আলেমই নিজের জন্য একটি নীতি নির্ধারণ করে রেখেছেন যে, তারা চল্লিশ বছর পূর্ণ না হলে কাজি বা মুফতির পদ গ্রহণ করবেন না। এই বয়সটা ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়াত লাভের বয়স এবং অনেক নবী-রাসূলদের নবুওয়াত লাভের বয়স।


নেতৃত্বের জন্য যৌবনের উদ্যমতা জরুরী। একজন দায়িত্বশীল কমান্ডারের বয়স বার্ধক্য এবং দুর্বলতায় পৌঁছার আগ পর্যন্ত যতই অতিক্রান্ত হতে থাকবে ততই তার শ্রেষ্ঠত্ব বাড়তে থাকবে। শ্রেষ্ঠ কমান্ডার হচ্ছেন যিনি নিজের যৌবন কে কাজে লাগিয়েছেন এবং আর এভাবেই সে পরিণত ও সাহসিকতার বয়স চল্লিশ বছরে পৌঁছেছে।
সুতরাং যৌবন ও জীবনী শক্তিকে সংরক্ষিত রাখুন এবং বার্ধক্যে পৌঁছা ছাড়াই আকলকে কাজে লাগান। আর এটাই অভিজ্ঞতা।

 

বাকি অংশ দেখুন দ্বিতীয় দারসে লিংকঃ https://justpaste.it/5hqxv