JustPaste.it
User avatar
Safwan @Safwan313 · Mar 22, 2023

দারস-২


الحمدُ للّه ربّ العالمين والعاقبة للمتقين والصلاة والسلام على المبعوث بالسّيف رحمة للعالمين وعلى أصحابه ومن اهتدى بهديه إلى يوم الدين .. وبعد

 

গত মজলিসের লিংক: (দারস ০১) https://justpaste.it/9gyd0

 

গত মজলিসে আমরা আমীরের আবশ্যকীয় গুণাবলী থেকে ৫ টি গুণাবলী নিয়ে আলোচনা করেছিলাম আজকে আমরা ৬ নাম্বার থেকে আলোচনা শুরু করবো ইংশাআল্লাহ্‌ ।     
৬.    ক্ষমা প্রদর্শন করা।
শাইখ সাঈদ হাওয়ী এরপর ৪০ তম পৃষ্ঠায় ক্ষমার গুণটি উল্লেখ করেছেন। এটা সহনশীলতারই একটি শাখা। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ
যারা নিজেদের  ক্রোধকে সংবরণ করে আর মানুষরে প্রতি ক্ষমা প্রর্দশন কর,বস্তুতঃ আল্লাহ সৎর্কমশীলদিগকেই  ভালবাসেন।
কারণ ক্রোধ সংবরণ এবং ক্ষমা প্রদর্শন ইহসানের অন্তর্ভুক্ত। তিনি ৪০ ও ৪২ পৃষ্ঠায় এব্যাপারে কিছু দলীল পেশ করেছেন।
৭.    কোমলতা।
অতঃপর শাইখ ৪২ নাম্বার পৃষ্ঠায় সহনশীলতার আরেকটি শাখা কোমলতার কথা আলোচনা করেছেন। প্রত্যেকেই তার সঙ্গী-সাথীদের প্রতি কোমল হবে এবং তাদেরকে পিষে ফেলতে চাইবে না। তাদের কষ্টের খেয়াল রাখবে এবং যখন সে ব্যায়াম করাবে এবং ৫০-৬০ কি.মি. সফরে বের হবে তখন তাকে এই খেয়াল রাখতে হবে যে, কিছু মানুষ আছে যারা নতুন এবং তারা এই সফর করতে সক্ষম নয়। এটা তাদের প্রতিভা প্রকাশ ও অন্যকে হারিয়ে দেওয়ার জায়গা নয়। তিনি তাদের প্রতি কোমল আচরণ করবেন।
একজন কমান্ডারের জন্য কোমলতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। যদি ইহা থেকে কেউ পিছিয়ে থাকে, আল্লাহ তাকে পাকড়াও করবেন। শাইখ এখানে একটি দলীল পেশ করেছেন।
رسول الله –صلى الله عليه وسلم- يقول: اللهم من ولي من أمر أمتي شيئًا فشقَّ عليهم فاشقُق عليه، ومن ولي من أمر أمتي شيئًا فرفق بهم فارفق به.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“হে আল্লাহ! যে আমার উম্মতের কোন বিষয়ে দায়িত্বশীল হয়। অতঃপর সে তাদের প্রতি কঠোরতা করে; তুমিও তার প্রতি কঠোরতা করো। আর যে আমার উম্মতের কোন বিষয়ে দায়িত্বশীল হয়। অতঃপর তাদের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করে; তুমিও তার প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করো।”
এখানে বলা হয়েছে ‘কোন কিছু’ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। আর নির্দিষ্ট করে হুকুম লাগানোর প্রয়োজনও নেই। কারণ কখনো দায়িত্বটা হয় কোন প্রশিক্ষণের অথবা খাদ্যের কোন বিষয়। আবার কাজির দায়িত্বও হতে পারে বা বিচার বিষয়ক কোন বিষয়। যাইহোক, আপনার হাতে মানুষের কতৃত্ব চলে এসেছে। অতঃপর আপনি তাদের উপর তাদের সাধ্যের বাহিরের জিনিস চাপিয়ে দিলেন।
শাইখ আরও একটি দলীল উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
من ولي منهم شيئًا فشقَّ عليهم فعليه بَهْلَة الله، قالوا: يا رسول الله وما بهلة الله؟ قال: لعنة الله
যে কোন বিষয়ে অভিভাবকত্ব পায়। অতঃপর মানুষের উপর কঠোরতা করে; তার উপর আল্লাহর ‘বাহলাহ’ বর্ষিত হয়। সাহাবাহগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! ‘বাহলাহ’ কী? তিনি বললেন,“আল্লাহ তায়ালার অভিশাপ।”
এটা একারণেই যে সে মানুষের প্রতি কোমলতা প্রদর্শন করেনি এবং কঠোরতা করেছে।
৮.    অবিচলতা এবং ধীর স্থিরতা।
শাইখ এখানে একটি স্বতন্ত্র গুণের কথা আলোচনা করেছেন। যা আমাদেরকে বাধ্য করেছে একটি স্বতন্ত্র পুস্তিকা রচনা করতে এবং একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তা আফগানের প্রতিটি লোকের মাঝে বিতরণ করে দিতে এবং প্রতিটি তানজীম এবং প্রত্যেক কমান্ডার ও তার সহযোগীদের কাছে তা পাঠিয়ে দিতে। গুণটি হলো অবিচলতা এবং ধীর স্থিরতা।
সাধারণ মানুষের মাঝে এই গুণটি না থাকায় আমরা এখন তার মূল্য পরিশোধ করছি। যখন বড় বড় কমান্ডারদের কাছ থেকে এই গুণটি হারিয়ে যাবে তখন অবস্থা কী হবে? কারণ কমান্ডার যখন ধীর স্থিরতা অবলম্বন না করবেন তখন তিনি বাকিদের নিয়ে ধ্বসে পড়বেন।
যখন কমান্ডার কাউকে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে অপবাদ দিবেন, মানুষ তখন তার একথা রটাতে শুরু করবে যে,“অমুকে বলেছেন যে, অমুকে মিথ্যুক।” সে এখানে ধীরস্থিরতা গ্রহণ করেনি। তাই, তার একথাটি তাকে দুনিয়াতে জ¦ালিয়ে-পুড়িয়ে দেবে।
শাইখ এখানে একটি দলীল উল্লেখ করেছেন:{ইবনুল মুক্বাফফা’ বলেছেন,“সুলতান যখন দান করেন বা বিরত থাকেন তখন ধীরস্থিরতা থেকে হাত গুটিয়ে নিবেন না। কারণ কোন কথা বলার পর তা থেকে ফিরে আসার চেয়ে চুপ থাকা থেকে ফিরে আসা উত্তম।” যখন সে চুপ থাকবে; অতঃপর নিজের মত পরিবর্তন করে কথা বলার ইচ্ছা করবে তখন কোন ক্ষতি হবে না। কিন্তু যদি সে তাড়াহুড়া করে কোন কথা বলে ভুল করে ফেলে, তাহলে এখন তা সংশোধন ও ওজরখাহী করতে বাধ্য হবে এবং এর মূল্য পরিশোধ করবে। আর এটি হবে শুধু তাড়াহুড়া প্রবণতা কারণে।

{বিরত থাকার পর দান করা উত্তম দান করার পর বিরত থাকার চেয়ে। কোন কাজ শুরু করার আগেই তা থেকে বিরত থাকা উত্তম কাজ শুরু করার পর বিরত থাকার চেয়ে।}

শাইখ এখানে ধীরস্থিরতার অনেক ফায়দা উল্লেখ করেছেন। এবিষয়ে আরও কিছু দলীল:
শাইখ সাঈদ হাওয়ী বলেন,“ধীরস্থিরতা পরিত্যাগ কত মানুষকে ধ্বংস করে দিয়েছে! কত বিপদ ডেকে এনেছে! ভাইয়ের বিরুদ্ধে ভাই, আত্মীয়র বিরুদ্ধে আত্মীয়, এক নেতার বিরুদ্ধে আরে নেতাকে এবং এক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আরেক মন্ত্রীকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সুতরাং কোন জীবন, নেতৃত্ব এবং শাসন এই গুণ ব্যতীত সঠিক থাকতে পারেনা।”

ইহা দ্বীনের মৌলিক বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত। যদি কেউ ধীরস্থিরতা পরিত্যাগ করে বিপদে পড়ে, তাহলে শরীয়ত তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করে। শরীয়ত ধীরস্থিরতা পরিত্যাগ করে, রক্ত প্রবাহের কারণ বা কাউকে তালাক প্রদান এবং কোন দূর্ঘটনা টেনে আনতে বারণ করে।

৯.    অঙ্গীকার পূরণ করা।
একজন কমান্ডারের জন্য আবশ্যকীয় গুণগুলোর একটি হচ্ছে অঙ্গীকার পূর্ণ করা।  আমরা এখানে একটি দলীল উল্লেখ করছি।
ইবনুল আরযাক বলেন,“একজন বাদশাহর পদ কলুষিত করে এমন সকল পদ থেকে উর্ধ্বে হওয়ায় বাদশাহ অঙ্গীকার পূরণের সবচেয়ে বেশি হক্বদার। বিশেষ করে যখন অঙ্গীকারটা ঈমানী কোন বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত থাকে।”
যখন আপনি একজন কমান্ডার এবং আপনি কোন বিষয়ে ওয়াদা করেছেন; যেমন,“আমি তোমাদেরকে প্রশিক্ষণের জন্য দু’টার সময় আসব।” কিন্তু আপনি আসলেন না। আপনি বললেন,“অচিরেই এই কাজটি করবো।” কিন্তু করলেন না। “অচিরেই অমুক কাজটি করবো।” কিন্তু করলেন না। তাহলে ইহা আমীরের সততাকে নিঃশেষ করে দিবে। কখনো দেখা যাবে বাস্তবেই সে একটি কাজ করবে; কিন্তু মানুষের দৃষ্টিতে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হবে। কারণ তারা ধরে নিয়েছে যে, সে ওয়াদা রক্ষা করে না।
সুবহানাল্লাহ, মানুষের প্রকৃতিটা আপনি শিশুদের কাছে পূর্ণ রুপে পাবে। যখন আপনি তাকে সামান্য একটি জিনিসের ওয়াদা দিয়েছেন, কিন্তু তা দেননি। তখন সে বলবে,“তুমি প্রথমে বলেছিলে এই এই জিনিস দিবে;কিন্তু দাওনি।” অথচ আপনি বিষয়টি একেবারেই ভুলে গেছেন।
সেদিন আমি আমার ছোট মেয়ের ব্যাপারটি খেয়াল করলাম এবং খেয়াল করলাম যে, আমি একটি ভুল করে ফেলেছি। সে আমাকে বলল,‘আব্বু! আমাকে ঐ জিনিসটি দিতে হবে।’ তখন আমি বললাম,‘ইনশাআল্লাহ।’ তখন সে বলল,‘ইনশাআল্লাহ না, আমাকে দিতেই হবে।’ আমি লক্ষ্য করলাম যে, সে ‘ইনশাআল্লাহ’ কে ওয়াদা ভঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত করে নিয়েছে। কিন্তু আমি এমন কোন ইচ্ছা করেননি। কিন্তু শিশুরা বা আপনার আদর্শের অনুসারীরা এটার হিসাব করবে।
এমনকি একবার আমার কাছে একজন মেহমান আসলেন। তিনি আমার সন্তানদেরকে কিছু দেওয়ার অঙ্গীকার করলেন। তখন শুনি আমার মেয়েটি ছোট ছেলেকে বলছে,‘উনিও আব্বুর মতো।’ অর্থাৎ সে তার থেকে হাত গুটিয়ে নিয়েছে এবং বলছে উনি আমার বাবার মতো আমাকে বলছে, অচিরেই আনবে;কিন্তু আনবে না!
অনেক সময় খুব ব্যস্ততার কারণে এমন হয় যে, আপনি শিশুর আবেদনটি ভুলে গেছেন। কিন্তু সে ধরে নিবে যে, আপনি ওয়াদা দিয়ে ভঙ্গ করেছেন। এর থেকে আপনি শিক্ষা গ্রহণ করুন, যখন আপনি একজন কমান্ডার হবেন তখন আপনার অনুসারীরা আপনার থেকে মানবিক এই বিষয়গুলো কামনা করবে। বিশেষ করে যখন তাদের বিষয়গুলো অঙ্গীকারের সাথে সম্পৃক্ত হবে। সুতরাং আপনি ওয়াদার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পন্থা গ্রহণ করবেন এবং যা করতে সক্ষম তারই শুধু ওয়াদা দিবেন।
১০.    তথ্য গোপন করা।
শাইখ সাঈদ হাওয়ী বলেন,“ত্রিশতম বৈশিষ্ট্য: তথ্য গোপন রাখা।” শাইখ ৫০ নাম্বার পৃষ্ঠায় এর আলোচনা করেছেন। আমাদের জিহাদী এবং সামরিক তানযীমের পুরোটাই গোপন।  তাই এই বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভিন্ন পয়েন্টে দীর্ঘ অধিবেশন দরকার। কারণ, এটি একটি বিপজ্জনক বিষয়।
শাইখ ছোট একটি কিতাবে এই বিষয়ে ৬ পৃষ্ঠা আলোচনা করেছেন। কারণ, তিনি একটি দলের কর্মী হওয়ায় তথ্য গোপনের মূল্য বুঝতেন এবং গোপন না করার ক্ষতিও বুঝতেন।
আমরা কিছু দলীল উল্লেখ করছি। ইমাম তরতূশী রহ: বলেছেন,“এটি সমস্ত সৃষ্টির কাছেই প্রসংশিত গুণ। রাজাদের জন্য আবশ্যকীয় এবং মন্ত্রী পরিষদ ও সংসদ সদস্য ও তাদের অনুসারীদের  জন্য ফরজ বিধানের অন্তর্ভুক্ত।”
অর্থাৎ যখন আপনি কমান্ডার হবেন, তখন আপনার জন্য শ্রেষ্ঠ গুণ হচ্ছে তথ্য গোপন রাখা। কিন্তু যদি আপনি কমান্ডারের পরামর্শদাতা হন বা নেতৃত্ব পরিষদের একজন সদস্য হন অথবা সামরিক বাহিনীর একজন উপদেষ্টা হন তাহলে তথ্য গোপন রাখা না রাখার বিষয়টি আপনার হাতে নয়।
মানুষের আশ্চর্যজনক একটি স্বভাব যে, সে মানুষের আনন্দ ভালোবাসে এবং সে ভালোবাসে সংবাদ দিতে এবং ভীতি প্রদর্শন করতে। অন্যরা যার সংবাদ দেয়নি সে তার ব্যাপারে সংবাদ দিতে চায়। যেন সে এব্যাপারে প্রথম সংবাদ দাতা হতে পারে। প্রচার মিডিয়ায় ইহা একটি বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বিষয়টি যখন সামরিক তথ্য বা পরিকল্পনার সাথে সম্পৃক্ত হবে তখন তা ছড়িয়ে পড়বে এবং গোপন থাকবে না।
সুবহানাল্লাহ! আমি আশ্চর্যান্বিত হই যখন এমন কোন মজলিসে বসি যেখানে বলা হয়,“অমুক এবং অমুক শহীদী হামলায় বের হয়েছে।” অথচ আপনি গোয়েন্দাদের উপস্থিতি সম্পর্কে জানেন। আর ঐ ইস্তেশহাদী ভাই  প্রাণটা নিজের হাতে নিয়ে বের হয়েছেন। আপনি তার নাম বলে দিলেন; আর তা ছড়িয়ে পড়ল। ফলে তাগুতরা তার ব্যাপারে তদন্ত শুরু করল; তার ছবি প্রকাশ পেল। তারপর সে গ্রেফতার হয়ে নিহত হলো। তখন এই ভাই কিয়ামতের দিন তার রক্তের মূল্য আপনার কাছে চাইবে। তাই বিষয়টি খেলা মনে করবেন না।
আমাদের উপর আপতিত বিপদ সমূহ; যার কারণে শরীরের লোম পর্যন্ত দাঁড়িয়ে যায়, সেগুলোর ভিত্তি এরই উপর।
শাইখ বলেন,“ইমাম গাযালী রহ: বলেছেন,‘ গোপন তথ্যধারণকারী  তথ্য অস্বীকার করবে; যদিও এতে সে মিথ্যাবাদী হয়। সব জায়গায় সত্য বলা ওয়াজিব নয়। যেমনিভাবে একজন ব্যক্তির জন্য নিজের দোষ ও তথ্য গোপন রাখা আবশ্যক। তেমনিভাবে নিজের মুসলিম ভাইয়ের দোষ ও তথ্য গোপন রাখাও আবশ্যক। তিনি বলেন, যদি মিথ্যা বলার প্রয়োজন হয় তাহলে নিজ ভাইয়ের জন্য মিথ্যা বলবে। কারণ, এদের দু’জনের অবস্থান এক ব্যক্তির ন্যয় এবং শুধু দৈহিক পার্থক্য ছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই।”
আপনার তথ্য তার কাছে এবং তার তথ্য আপনার কাছে থাকার কারণে কেমন যেন আপনারা উভয়ই এক ব্যক্তি।
ইবনুল আরযাক বলেন,“বর্ণিত আছে যে, কিছু লোককে জিজ্ঞেস করা হলো যে, আপনারা কিভাবে তথ্য গোপন করেন? তারা বলল,“আমরা সংবাদদাতাকে অস্বীকার করি এবং তদন্তকারীর সামনে শপথ করি। এখানে শপথকে বৃদ্ধি করা হয়েছে প্রয়োজনের তাকীদে।”
মিথ্যার বিষয়টি মূলত উদ্দেশ্যের গুরুত্ব এবং কোন ডিপার্টমেন্টের কাজ তার উপর ভিত্তি করে। আব্বাসীয় শাসনামলে এব্যাপারে ফতওয়া দেওয়া হয়েছিল। যখন অনুসন্ধানকারীরা জিজ্ঞেস করত: অমুক কোথায়? তখন যদি বলা হত অমুক স্থানে, তাহলে সেখানে গিয়ে তাকে হত্যা করে ফেলা হত। আর যদি বলা হত, আমি জানিনা; তবে তাকে শপথ করতে বলা হত। তখন তারা শপথ করতঃ এক ব্যক্তির রক্তকে রক্ষা করত।
সুতরাং তথ্য গোপনের বিষয়টি ধারাবাহিক ভাবে উত্তম চরিত্র থেকে আবশ্য ও ফরজ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছে (অর্থাৎ কারও জন্য উত্তম, কারও জন্য ওয়াজি এবং কারও জন্য ফরজ)। এমনকি পরামর্শদাতা ও সহযোগীদের পর্যন্ত গিয়ে এর হুকুম বর্তায়। বিশেষ করে গোপন সংগঠনের সদস্যদের তথ্য।  কেননা, এই গুণটি না থাকলে অনেক বিপর্যয়ের কারণ হবে।
১১.     আল হাযম বা দৃঢ় প্রত্যয়ী হওয়া।

শাইখ ৫২ পৃষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণের কথা আলোচনা করেছেন এবং অনেক দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। গুণটি হচ্ছে আল হাযমু বা দৃঢ়প্রত্যয়। শাইখ এর অনেকগুলো পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন। হায্ম বলা হয় রাজনৈতিক বিষয়গুলোতে দৃঢ়প্রত্যয়ী হওয়া। দৃঢ়প্রত্যয়ী ব্যক্তি বলা হয় যে নিজের টার্গেটকে দৃঢ়ভাবে বাস্তবায়ন করে এবং যার চিন্তাগুলো স্বচ্ছ। আরবী ভাষায় বলা হয়:
حزم أمره، نوى، عزم، قرَّر
অর্থাৎ ইচ্ছা করেছে, দৃঢ় সঙ্কল্প গ্রহণ করেছে, স্থির করেছে।
সে দৃঢ়ভাবে কোন কাজ করার ইচ্ছা করেছে এবং আপন চিন্তা ও সিদ্ধান্তে কোন সন্দিহান নয়। এই গুণটি থেকে অনেক শাখাগত গুণ বের হয়। এটা একটা যোগ্যতা।

আরবরা হায্ম বা দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে যে কবিতা বলে তার একাংশ এরুপ:
"خُلِقَ الحزمُ أَبْكَمَا"
হাযম সৃষ্টি হয়েছে বোবারুপে। দৃঢ়প্রত্যয়ী ব্যক্তির বিশেষ বৈশিষ্ট হলো অধিক চুপ থাকা। কারণ, যখন তার থেকে কোন কিছু ছুটে যাবে তখন একটির পর আরেকটি জোড়া দিতে হবে। ফলে সে আর দৃঢ়প্রত্যয়ী থাকবেনা।
১২.    বিচক্ষণতা
শাইখ বিচক্ষণতার আলোচনা করেছেন ৫৫-৫৬ পৃষ্ঠায়। বিচক্ষণতা কমান্ডারের একটি আবশ্যকীয় গুণ। কারণ তিনি মানুষের মানবিক প্রবৃত্তির চিকিৎসা করবেন এবং শত্রুদেরও চিকিৎসা করবেন। ক্ষমতার প্রতি লোভী এবং নেতৃত্বের প্রতি প্রতিযোগিতাকারীরও চিকিৎসা করবেন। তবে বিচক্ষণতার মুবাহ ও হালালের একটি সীমা-রেখা আছে। আর যদি তা সীমা লঙ্ঘন করে তবে তা ধোঁকা ও প্রতারণা হবে।
আরবরা চারজন ব্যক্তিকে বিচক্ষণ মনে করত। এরা সবাই মুয়াবিয়াহ ইবনে আবি সুফিয়ানের কাতারে ছিলেন। মুয়াবিয়াহ বিন আবি সুফিয়ান, আমর ইবনুল আস, মুগিরাহ ইবনে শু’বাহ, যিয়াদ। আর একারণেই এদের অবস্থান ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী।

বিচক্ষণতা হচ্ছে আপনি নিজেকে যে কোন বিপদ থেকে বের করে আনবেন। অথবা বলা যায়, বিচক্ষণতা হচ্ছে বৈধ চক্রান্ত।

আমর ইবনুল আস রা: থেকে বর্ণিত যে, যখন তিনি শাম বিজয়ে ব্যস্ত ছিলেন তখন অনেক  শক্তিশালী একটি দূর্গের কথা শুনতে পেলেন। তিনি এই দূর্গের গোপন রহস্য জানতে চাইলেন। তিনি চাইলেন সেখানে গিয়ে পরিদর্শন করবেন। এই দূর্গের অধিপতি ছিলেন রুমের একজন প্রসিদ্ধ শাসক আরতাবুন।  আমর ইবনুল আস তার কাছে গেলেন এবং তাকে বললেন,“আমি আমর ইবনুল আসের প্রতিনিধি। আমি তোমার সাথে মধ্যস্থতা করতে চাই।” সুতরাং তারা উভয়ে একটি বিষয়ে মধ্যস্থতা করলেন। অতঃপর উভয়ে দূর্গের সীমান্তের পাশ দিয়ে হাঁটতে লাগলেন। ফলে আমর ইবনুল আস রা: এর কাছে দূর্গের কিছু রহস্য উন্মোচিত হয়ে গেল। অতঃপর তিনি উপলব্ধি করলেন যে, আরতাবুন তাকে মেধাবী এবং বিচক্ষণ মনে করছে এবং সে তাকে হত্যা করতে চাচ্ছে, যাতে এই মেধাবী ব্যক্তি মুসলিমদের নিকট ফিরে যেতে না পারে। আমর রা: এই বিষয়টি উপলব্ধি করে নিলেন। আর এসব কাজই ছিল শুধু অনুভতিতে। সবই হচ্ছিল কথা বলা ছাড়া চোখে চোখে। আরতাবুন একটি কাজ করতে চাচ্ছিল আর তা অপরজনের নিকট প্রকাশ হয়ে যাচ্ছিল। তিনি বুঝে যাচ্ছিলেন, সে কি চিন্তা করছে। তারপর তিনি নিজেও কী করবেন স্থির করে ফেলেন। ইনিই বিচক্ষণ; যিনি অন্যান্য লোকদের মতো নয়।
আমর রা: বললেন,“যাই হোক, আমরা একটি বিষয়ে পৌঁছেছি। কিন্তু আমর বিন আস রা : এর কাছে দশ জন উপদেষ্টা রয়েছে । আমি হলাম তাদের সবচেয়ে ছোট। আমি তাদেরকে নিয়ে আসব যাতে সবাই মিলে একটি বিষয়ে মধ্যস্থতায় পৌঁছতে পারি। তাহলে আমরা এরচেয়েও উত্তম কোন মশওয়ারায় পৌঁছতে পারব। ” তখন আরতাবুন দশজনকে হত্যার লোভে পড়ে গেল। আর আমর রা; তার হাত ছাড়া হয়ে গেলেন। কিন্তু যখন তিনি বের হয়ে গেলেন তখন আরতাবুন বুঝতে পারল যে, এরকম কাজ আমর রা: ছাড়া আর কেউ করতে পারেনা। তখন সে তার বাহিনীকে বলল,“এ তো আমর! তাকে পাকড়াও করো! কিন্তু তারা বের হয়ে আমর রা; কে পেল না।  যখন এই খবরটি উমর রা: এর নিকট পৌঁছল তখন তিনি বললেন,“আমরা রুমের আরতাবুনে ক আরবের আরতাবুনকে দিয়ে আঘাত করেছি।”

এই হচ্ছে বিচক্ষণতা। বেধার সর্বোচ্চ চূড়া হচ্ছে বিচক্ষণতা। যখন তা হারাম কাজে ব্যবহার করা হয় তখন বিভিন্ন বিপর্যয় ডেকে আনে। কারণ তখন বিচক্ষণ ব্যক্তি তার বিচক্ষণতা দ্বারা মানুষের ঘর-বাড়ি ধ্বংস করে এবং স্বামী-স্ত্রীদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটায়। মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে থাকে। বড় বড় কমান্ডারদের গুপ্তভাবে হত্যা করতে থাকে। বিভিন্ন সংগঠনের মাঝে ফাটল সৃষ্টি হয়। আর এসবই হচ্ছে বিচক্ষণতা। আর যখন এর সাথে সামান্য দ্বীন যুক্ত হবে তখন আরও মসিবত হয়ে দাঁড়াবে। সংক্ষেপে বলতে গেলে বিচক্ষণতা হলো: তীক্ষ্ণমেধা, সূ কৌশল, বিভিন্ন পরিকল্পনার সম্মিলন, যে কোন দি¦ধা থেকে বের হয়ে আসা এবং সূ চিন্তা ও নিখুঁত ফাঁদ।

১৩.    তাওয়াজু’ বা নম্রতাএবং অহংকার মুক্তি।

শাইখ ৫৭-৬২ পৃষ্ঠায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গুণের আলোচনা করেছেন। কুরতুয়ার কিতাবেও এই গুণটির আলোচনা এসেছে।
এই ব্যাপারে অনেক প্রমাণাদি রয়েছে। ইমাম গাযালী রহ: তাওয়াজু’র ব্যাপারে বলেন,“অন্যান্য গুণের ন্যায় এরও দু’টি দিক রয়েছে এবং একটি কেন্দ্র রয়েছে। একটি দিক হলো ছাড়াছাড়ি । আর এটাই হচ্ছে তাকাব্বুর বা অহংকার। আরেকটি দিক হলো বাড়াবাড়ি। আর এটি হলো নীচতা এবং হীনতা। আর মাঝেরটা হলো প্রসংশিত গুণ তাওয়াজু’।”

এটাও সম্ভব যে, নমনীয়তা গ্রহণ করে অপদস্থতার শিকার হবে এবং হীনতার কাতারে পৌঁছে যাবে। আমি কিছু সূফীদের কিতাবে পড়েছি যে, একজন নিজেকে পরিচিত করতে চাচ্ছে। আর তাই, ২/৩ লাইন শুধু প্রসংশাই লিখে রেখেছে। এমনকি লিখেছে,“ফক্বীর,তুচ্ছ ও নিকৃষ্ট......” এটাও লিখেছে,“সৃষ্টির সবচেয়ে বেশি ফকির এবং আপনার চোখে যাদের দেখছেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট অমুকের ছেলে অমুক।” এটা হচ্ছে তাওয়াজু’ এর ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি যা তাকে অপদস্থতা, হীনতা ও লাঞ্ছনার কাতারে প্রবেশ করিয়েছে।

আমীরের অধিক তাওয়াজু’ মামুরদেরকে দুঃসাহসী করে তুলে। ফলে তারা তার আদেশ বাস্তবায়ন করে না। তখন আমীর লাঞ্ছনার শিকার হন। আর আমীরের অহংকার মামুরদের হৃদয়ে ঘৃণা সৃষ্টি করে দেয়। ফলে তারা তার সাথে বসতে পছন্দ করে না। সুতরাং এরও একটি মধ্যমপন্থা আছে এবং বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির মতো দু’টি দিক আছে। যেমনটা ইমাম গাযালী উল্লেখ করেছেন। ইমাম তরতূশী আত্মতুষ্টিকে এবং তার শাখা অহঙ্কারকে ঐসকল গুণাবলীর অন্তর্ভুক্ত করেছেন যেগুলোর সাথে কোন রাষ্ট্র ক্ষমতা স্থায়ী থাকেনা।
যে ব্যক্তি আত্মতুষ্টি,অহংকার ও দম্ভের শিকার হয়েছে তার ক্ষমতা, বাদশাহী এবং নেতৃত্ব কিছুই স্থায়ী হবে না।
এব্যাপারে অনেক প্রমাণাদি রয়েছে এবং আলোচনা করতে অনেক পৃষ্ঠা দরকার। আত্মতুষ্টি ও অহঙ্কারের অনেকগুলো পয়েন্ট রয়েছে। বিস্তারিত জানতে ইমাম গাযালী রহ: এর ইহয়াউ উলূমিদ্দীন পাঠ করতে পারেন।

১৪.    সৌজন্যতা বোধ থাকা।

শাইখ ৭৩ পৃষ্ঠায় এই গুণটির আলোচনা করেছেন এবং শেষের দিকে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমি এখানে তা উল্লেখ করছি। গুণটি হলো সৌজন্য মূলক আচরণ। আপনাকে এটা জানতে হবে যে, অবস্থা অনুযায়ী কি রকম আচরণ করতে হবে। সব সময় নীতিমালা এবং ইজ্জত-সম্মানের দাবীর দিকে খেয়াল করবে না। কারণ, সে এখন বিশেষ একটি অবস্থায় সৌজন্যতা দেখাচ্ছে।
শাইখ এখানে দু’টি দলীল উল্লেখ করেছেন। প্রথমটি হলো বুখারীতে উল্লেখিত আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত হাদীস। আয়েশা রা: বলেন,“এক লোক নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অনুমতি চাইলেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে অনুমতি দাও! কত মন্দ প্রতিবেশী সে। অতঃপর যখন সে প্রবেশ করল তখন ন¤্র ভাষায় কথা বললেন। আয়েশা রা: বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি তার ব্যাপারে যা বলার বললেন। তারপর আবার ন¤্র ভাষায় কথা বললেন? তখন তিনি বললেন,“হে আয়েশা! নিকৃষ্ট মানুষ হচ্ছে যাকে মানুষ তার মন্দের ভয়ে সম্মান করে।”
আল্লাহর নবী তার সাথে কোমল আচরণ করেছেন যাতে তাঁর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে মন্দ কিছু না ছড়ায়।

দ্বিতীয় দলীল: আবু দারদা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,“কিছু লোকের সামনে আমরা মুচকি হাসি। কিন্তু আমাদের হৃদয় তাদেরকে অভিশাপ করতে থাকে।”(সহীহুল বুখারী)

শাইখ এখানে ইবনুল কায়্যিম এবং অন্যান্যদের আরও কিছু দলীল উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমি আপনাদেরকে সৌজন্যতার ব্যাপারে বাস্তব কিছু দলীল পেশ করতে চাচ্ছি। আপনি মনে করুন, আফগানের সাধারণ একটি বিষয় আমাদেরকে অনেক বিপদে ফেলে রেখেছে এবং হয়রান করে দিয়েছে। জিহাদের প্রাথমিক পর্যায়ে এবং আব্দুল্লাহ আযযামের সময় থেকে যা হচ্ছে তা আমাদেরকে অস্থির করে দিয়েছে। যদিও শাইখ এব্যাপারে প্রায় একশত পৃষ্ঠা আলোচনা করেছেন। আর সাম্প্রতিক সময়ে এই বিষয়টি এদেশে আমাদের ধ্বংস ও বিভিন্ন বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি হলো আফগানীদের হানাফী মাযহাবের ব্যাপারে আমাদের সৌজন্যতা।  নামাজে মুসল্লিদের পদ্ধতির ব্যাপারে আমাদের সৌজন্যতা। কারণ এই গুণটি অনেক ভাইয়ের কাছেই নেই। আপনি দেখবেন যে, তার মাঝে কোন দায়িত্ববোধ নেই। অথচ সে মনে করে যে এসব বিষয়গুলো জায়েয।

আমি নিজেই একবার শাইখ উসামা থেকে সরাসরি শুনেছি যে, শাইখ ভাইদের থেকে নামাজে হাত না উঠানো কামনা  করতেন এবং তিনি বলেছেন,“আমি তোমাদের উপর নামাজে হাত না উঠানোকে আবশ্যক করতে চাই।” তিনি মালেকী মাযহাবের  ( যে মাযহাবের কিছু আলেমের মতে নামাজে হাত ছেড়ে রাখতে হবে) আলেম ইবনু আব্দিল বার থেকে একটি বর্ণনা উল্লেখ করে যে, তিনি বলেন,“আমি যখন এমন লোকদের মসজিদে প্রবেশ করি যারা নামাজে হাত ছেড়ে দেয়; তখন আমিও হাত ছেড়ে দেই। আর যখন এমন মসজিদে প্রবেশ করি যারা হাত বেঁধে রাখে; তখন আমিও হাত বেঁধে রাখি। কারণ এর বিপরীত করা পুরাই অকল্যাণ।” মসজিদে মতানৈক্য ছড়ানো ছাড়াও আরও অনেক সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় মুসল্লিদের নামাজের খুশু-খুজু নষ্ট হয়ে যায়। কারণ তারা অস্বাভাবিক একটি বিষয় দেখছে।

মানুষের প্রতি লক্ষ্য রেখে চলাটাই সৌজন্যতা। বিশেষ করে যখন ঐ মানুষটি কষ্ট দিতে সক্ষম। অথবা জাহেল হয় বা কোন দুরাচারী হয়। অথবা কোন ক্ষমতাশীল ব্যক্তি হয় যে শাস্তি দিতে সক্ষম।
শাইখ উসামা রহ: এই বিষয়টি আলোচনার পর আমি কিছু যুবকের ফিসফিস আওয়াজ শুনলাম। তারা বলছে,“আমরা শাইখের কথা শুনব না। ¯্রষ্টার অবাধ্যতায় সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেই।”তাদের থেকে সৌজন্যতাবোধ হারিয়ে গেছে। আরবদের প্রসিদ্ধ কথা: دارِهِم ما دُمْتَ في دَارِهم
তাদের সাথে সৌজন্য মূলক আচরণ করো যতদিন তাদের ভূমিতে থাকো।
আপনি মানুষের সাথে সৌজন্যতা রক্ষা করবেন তাদের আকলের দুর্বলতার কারণে। হাদীসে আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“তুমি এমন সম্প্রদায়ের সামনে কথা বলবে না তোমার কথা যাদের বোধগম্য হবে না। অন্যথায় তোমার কথা তাদের কতকের জন্য ফেতনা হবে।”
এজন্য তোমার জন্য আবশ্যক জাহেলের সাথে সৌজন্যতা রক্ষা করে চলবে। কারণ, যখন তুমি তার বোধ শক্তির উপর কোন কিছু চাপিয়ে দিবে তখন সে রেগে যাবে।
নেতৃত্বের ব্যাপারে আমি নিজের বাস্তব জীবনের একটি অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করছি। শামের জিহাদে আমরা একবার হামা উদ্ধার করার ইচ্ছা করি। আমরা আমাদের সম্ভাব্য সকল শক্তি একত্রিত করি। তখন আমাদেরকে সামরিক বাহিনীর সাধারণ প্রশিক্ষক থেকে কমান্ডার পর্যায়ে উন্নিত করা হয়। যখন সাধারণ সাথীরা চলে আসল, তখন তাদের মাঝে কোন কমান্ডার ছিল না। আমাদেরকে বণ্টন করে দেওয়া হয়। আমার অধিনে ৫০০ ব্যক্তির দায়িত্ব পড়ে। তখন আমার বয়স মাত্র বিশ। আর আমার কোন অভিজ্ঞতাও ছিল না এবং আমি প্রশিক্ষণ মাঠেও সব সময় ছিলাম না। আমার সামনে পাঁচশত লোক ছিল। যাদের একেবারে ছোট জন এখনো বালেগ হয়নি এবং সবচেয়ে বড় জন বার্ধক্যের বয়সে। আমি প্রায় তিন বছর সামরিক বাহিনীর প্রশিক্ষণে ছিলাম। তখন আমি তাদের নিকট পদ্ধতি অনুযায়ী গমন করলাম। তখন আমাকে বলা হচ্ছিল যে, তুমি এই দলে প্রবেশ করো! তুমি এদিকে আস......। আমরা তখন বাগদাদের বিমানবন্দর এলাকায় ছিলাম।
তখন একজন বৃদ্ধ লোক বের হয়ে আসলে আমি তাকে বললাম, আপনি এই দলে প্রবেশ করুন! তখন তিনি দল থেকে বের হয়ে আমাকে উচ্চ আওয়াজে তিরস্কার করতে লাগলেন। তখন বিমানবন্দর এলাকায় আমার পাশে প্রায় পনের শত মানুষ ছিল। এটা কেন হয়েছে? কারণ আমি জানতাম না যে, কিভাবে তাদের সাথে সৌজন্য রক্ষা করে চলতে হয় এবং কিভাবে তাদের মূল্যায়ন করতে হয়? আমি নেতৃত্বের ব্যাপারে অনেক বড় এক শিক্ষা পেলাম। আমি চিন্তা করছিলাম উনার সাথে কিরুপ আচরণ করবো? অথচ তিনি ষাট বছর বয়সী বৃদ্ধ। জিহাদের ব্যাপারে কোন দীক্ষা পায়নি, কিন্তু জিহাদের উদ্দেশ্যে হিজরতকারী। আল্লাহ তায়ালা উনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। অতঃপর আমার খেয়াল হলো যে, উনি আমার পরিচিত শহরের কিছু মুজাহিদের মামা। উনি মনে করেন যে, আপনি তাকে সম্মান করবেন এবং মর্যাদা দিবেন। আর এই বিষয়টি আমি লক্ষ্য করিনি । আর তাই তার মূল্য দিতে হয়েছে পনের শত মানুষের সামনে।
যখন আমি বিছানায় ফিরলাম তখন এই বিষয়টি নিয়ে অনেক চিন্তা করছিলাম। আমি সাথীদেরকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, এরকম বৃদ্ধ কত জন আছে? তারা বলল, প্রত্যেক গ্রুপে  ছয়জন বা সাতজন। আমি তাদেরকে একত্রিত করলাম এবং প্রত্যেককে একটি করে বন্দুক দিলাম। অথচ বন্দুক শুধু সেক্টর কমান্ডারদেরকেই বণ্টন করে দিতাম। বাকিদেরকে শুধু ক্লাশিনকোভ দিতাম। আমি তাদের সবাইকে এশার পর আমার কাছে বসতে ডাকলাম। যাতে তাদের সাথে কিছু কথা-বার্তা বলতে পারি। আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম যে,‘হে অমুক! আপনি কেমন আছেন? হে অমুকের পিতা! আপনি কেমন আছেন? এই কথা-বার্তার পর তারা সবাই বাকিদের মাঝে আমার সম্মান ছড়িয়ে দিল।
এই ছিল কিছু আলোচনা যা আমি আপনাদেরকে নিজের ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুনালাম। যখন আপনি কোন জাহেল, দুরাচারী বা ক্ষমতাবান ব্যক্তির প্রতি সৌজন্যতা রক্ষা করবেন না তখন অবশ্যই তার মূল্য পরিশোধ করবেন। কখনো এই মূল্য হবে রক্ত আবার কখনো হবে ধ্বংস। কখনো বা দেশ ত্যাগ বা এমন সুযোগ বন্ধের  কারণ হবে যার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ জানেনা।
যখন আপনি একজন কমান্ডার এবং আপনার সামনে কেউ একটি মন্দ কাজ করেছে; তখন আপনার জন্য আবশ্যক হলো তা উপেক্ষা করে চলা এবং না দেখার ভাণ করা। কারণ, যদি আপনি প্রকাশ করেন যে, দেখেছেন এবং তাকে শাস্তি না দেন তাহলে এটা হলো আপনার দুর্বলতা। আর একারণে তারা দ্বিতীয় বার আবার একই কাজ করবে।
এই বিষয়গুলোর কিছু ইলম শিখার দ্বারা অর্জিত হয় এবং কিছু হলো মৌলিক যোগ্যতা। আর এর বেশির ভাগই আসে মানুষের জীবনের বিপদ-আপদের অভিজ্ঞতা থেকে। সুতরাং আপনি অন্যদের থেকে সৌজন্যতার শিক্ষা গ্রহণ করুন। এটি একজন কমান্ডারের আবশ্যকীয় গুণ।
দুর্বলতার কারণে সৌজন্যতা দেখানোর বিষয়টি আশ্চর্যজনক।  যখন আপনি দেখবেন কেউ কুফফার রাষ্ট্রে গিয়েছে এবং তাদের রীতি-নীতি এবং খাওয়া ও পান করার বিষয়গুলোতেও সৌজন্যতা শুরু করে দিয়েছে। কারণ কুফফাররা তার উপর ক্ষমতাবান।  এটাকে সৌজন্যতা বলে না। বরং এটা হলো দুর্বলতা, হীনতা ও নীচতা। সে সৌজন্যতা দেখাচ্ছে কারণ ঐ ব্যক্তি তার উপর ক্ষমতাবান। আপনি নিজ ভূমিতে অবাধ্যতা, অশ্লীলতা এবং কুফুরী দেখেও সৌজন্যতা বজায় রেখেছেন। কিন্তু ইজ্জত এবং সম্মানের ভূমিতে এসে তা ভুলে গেছেন।
সেদিন জাযিরাতুল আরবের এক ভাই আমাকে বললেন,“আমরা যদি এখানকার খৃষ্টানদের প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে দেই। এবং আমরবিল মা’রুফ এবং নাহি আনিল মুনকার করি তাহলে অসুবিধা কি?”
আমি বললাম, তুমি কোন দেশের? সে বলল, জেদ্দা। আমি তাকে বললাম,“আপনি যখন দেশে যাবেন এবং বিমানবন্দরে নামবেন তখন সর্ব প্রথমই বড় বড় চারটি মূর্তির চারটি প্রতিকৃতি দেখতে পাবেন। আব্দুল আযীয, আব্দুল্লাহ, সুলতান এবং সালমানের প্রতিকৃতি। আপনি সেখানে কেন আমর বিল মা’রুফ নাহি আনিল মুনকার করছেন না এবং একটি লাঠি নিয়ে তা ভেঙ্গে নামিয়ে দিচ্ছেন না? অথচ সালাফী, ওয়াহাবী এবং হাম্বলী সকলের নিকটেই এটা ফরজ দায়িত্ব। আপনি সেখানে কেন এই কাজটি করছেন না এবং সৌজন্যতা প্রদর্শন করছেন।
আপনি এখানে নিজের বীরত্ব প্রদর্শন করতে চাচ্ছেন। দুর্বলের সৌজন্যতা সৌজন্যতা নয়। সৌজন্যতা হচ্ছে শাসকের সৌজন্যতা; যিনি করতে সক্ষম কিন্তু করছেন না এবং সৌজন্যতা দেখাচ্ছেন।
১৫.    গীবত এবং অপবাদ গ্রহণ না করা।

গীবত এবং অপবাদ গ্রহণ না করা। এটা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য আবশ্যক। যে গীবত এবং অপবাদ গ্রহণ করে সে নিজেও তাতে শরীক। আর অপবাদ গীবতের মতো নয়; বরং তা আরও নিকৃষ্ট। গীবত হচ্ছে আপনি আপনার ভাই যা পছন্দ করে না তা উল্লেখ করা। আর অপবাদ হচ্ছে বিরোধীদের মাঝে মন্দ কথার প্রচার করা। এগুলো বেশি হয় সাধারণ সৈন্যদের পক্ষ থেকে কমান্ডারের কাছে। যাতে করে কমান্ডারের নিকট বিশ^স্ত হতে পারে। সে এসে কমান্ডারদেরকে বলে,“অমুক আপনার অনুসরণ করছে না। অমুকে আপনার মানহাজে বিশ্বাসী নয়। অমুক আপনার কথা মতো এই কাজটি করছে না।”

তাই, একজন কমান্ডারের গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ হলো,  তিনি কারও অপবাদ গ্রহণ করবেন না এবং অপবাদকারীকেই তিরস্কার করবেন এবং তার থেকে সতর্ক থাকবেন। কমান্ডার মনে রাখবেন যে, ঐ লোক জমীনে ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের একজন এবং সে হারাম পদ্ধতিতে কমান্ডারের মন জয় করতে চায়। এটা রাজা-বাদশাহদের দরবারে বেশি হয়। যখনই বাদশাহর কাছে মানুষের ডিপার্টমেন্ট বৃদ্ধি হতে থাকে তখনই পরনিন্দাকারী বাড়তে থাকে। বাদশাহ যখন দায়িত্ব,নেতৃত্ব এবং সম্পদ দিতে শুরু করেন তখন পরনিন্দাকারীরা তার পাশে ভিড় জমাতে থাকে।

এটি একটি বিপদ ইসলামী শাসনামলে যার দৃষ্টান্ত গত হয়েছে। ইসলামী রেনেসাঁ তার মাধ্যমে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে।  পরিতাপ যে, আমি যুদ্ধ করেছি এবং জিহাদী কাফেলাগুলোতেও কমান্ডারের নৈকট্যশীল এমন কিছু ব্যক্তি পেয়েছি যারা চাপাবাজ। এরা এমন ব্যক্তি যারা মানুষের মাঝে ফাসাদ ছড়ায় এবং মানুষের ব্যাপারে উল্টা-পাল্টা তথ্য বাদশাহকে দেয়।
তাই, আমীরের চরিত্রের পূর্ণতা হচ্ছে এধরণে গীবত এবং পরনিন্দা গ্রহণ করবেন না এবং এমন ব্যক্তিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে রাখবেন।

১৬.    অনুসন্ধান করা এবং পর্যবেক্ষণ করা।

আমীরের জন্য আবশ্যক হলো, তিনি নিজের কাজের ব্যাপারে তদারকি এবং পর্যবেক্ষণ করবেন।
‘আহকামুস সুলতানিয়ার’ লেখক, শরয়ী রাজনীতিতে সুপরিচিত আলেম ইমাম আল মাওরিদী রহ: আমীরের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,“আমীর কারও উপর দায়িত্ব ন্যস্ত করে কোন ভোগ-বিলাস বা ইবাদাতে লিপ্ত হয়ে তার উপর ভরসা করে বসে থাকবেন না। কখনো কখনো বিশ^স্ত ব্যক্তিও খেয়ানত করে এবং কল্যাণকামীও প্রতারণা করে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:
يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُم بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَىٰ فَيُضِلَّكَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ ۚ
হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথবিীতে প্রতিনিধি  করেছি  অতএব, তুমি মানুষরে মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করোনা ।  তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দিবে । 

আল্লাহ তায়ালা পর্যবেক্ষণ না করে শুধু অর্পণ করেই ক্ষ্যান্ত হননি। যদি কাউকে দায়িত্ব ন্যস্ত করে এবং পর্যবেক্ষণ না করে; ফলে সে ভুল করে বসে, তাহলে এক্ষেত্রে আমীরের ব্যস্ততার ওজর গ্রহণ যোগ্য হবে না।”
তাই আমীরের জন্য তার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো পর্যবেক্ষণ করা জরুরী।

ইবনে রেজওয়ান বলেন,“বাদশাহর জন্য আবশ্যক হলো তার মন্ত্রী পরিষদ, সহযোগী  ও সেবকদের প্রতি লক্ষ্য রাখার জন্য কিছু সময় বের করা। তারা যেখানেই থাকুক না কেন। বাদশাহ  দেশের দূর-নিকট সব কিছুর প্রতি লক্ষ্য রাখবেন এবং যে সব সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে তা সম্পর্কে জানবেন। তার মন্ত্রীগণ যে সব অভিযোগ করছেন তা মনোযোগ দিয়ে শুনবেন। যে মন্ত্রী ইন্তিকাল করেছেন বা সরে গেছেন তার স্থানে অন্য কাউকে সিলেক্ট করবেন। সেনাদল ও ব্রিগ্রেড তৈরীর জন্য কিছু সময় বের করবেন। তার সম্পর্কে বিভিন্ন দেশে যে সকল লেখা ছাপানো হচ্ছে সেগুলো পাঠ করবেন; যেগুলোর প্রতি অন্যরা ভ্রুক্ষেপ করে না। তিনি লক্ষ্য রাখবেন সীমান্তে অস্ত্র বৃদ্ধি, কোন গভর্নরে মৃত্যু কিংবা কোন গভর্ণরকে সরিয়ে ফেলতে হবে ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি। যে শহরবাসী ক্ষুধা বা কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। অথবা বন্যা বা শত্রু  অথবা অন্য কোন দুর্যোগে আক্রান্ত হয়েছে তাদের বিষয়গুলোও খেয়াল রাখবে।”

এসবগুলোই এমন কাজ যেগুলোতে আমীরকে অনুসন্ধান করতে হবে। এটা অবশ্য ঠিক যে, তিনি প্রত্যেক ঘাটে প্রবেশ করবেন না। আর প্রবেশ করাটা নেতৃত্ব শাস্ত্র অনুযায়ী প্রশ্নবিদ্ধ। কিন্তু এখানে একটি মধ্যম পন্থা রয়েছে ; যা দাবী করে আমীর সরাসরি কাজগুলো নিয়ন্ত্রণ করবেন এবং সরাসরি নিজেই তত্ত্বাবধায়ন অতঃপর যখন তিনি বিশেষ বিশেষ প্রজেক্ট ভাগ করবেন বা কাউকে ওকীল নিযুক্ত করবেন তখন সেটি আরেকটি বিষয়ে গণ্য হবে। তখন তিনি সেখানে প্রবেশ করবেন না। কারণ তিনি একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা  ওকীল কে দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এর অর্থ এটা নয় যে, তিনি সে বিষয়ে কোন পর্যবেক্ষণ করবেন না।

উমর রা: বলেন,“তোমরা কি মনে করো যে, আমি আমার জানা মতে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে তোমাদের কর্তৃত্ব দিলাম এবং তাকে ন্যায়ের আদেশ করলাম। তখন কি আমার দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে? তারা বলল,‘জী’। তখন তিনি বললেন,“না, যতক্ষণ না আমি তাকে পর্যবেক্ষণ করি যে, সে আমার কথা অনুযায়ী কাজ করছে কিনা?”

এটাই হচ্ছে অনুসন্ধান! এমনকি এই অনুসন্ধান করেছেন খালেদ বিন ওয়ালীদ রা: কে।  তিনি শুনতে পেলেন, খালেদ যুদ্ধে বুটিদার বস্ত্র পরিধান করেছেন এবং মাথার উপর তীর রেখে দিয়েছেন। তখন তিনি এসে দেখেন তার মাথার উপর যুদ্ধের উপর গর্ব করে তীর রেখে দিয়েছেন। উমর রা: তখন এক এক করে সব ভেঙ্গে ফেলেন। উমর রা: একবার শুনতে পেলেন মুয়াবিয়াহ রা: নিজের মাঝে এবং জনগণের মাঝে একটি দরজা বানিয়ে নিয়েছেন। তখন উমরা রা: একজন দূত পাঠিয়ে বললেন,“তুমি গিয়ে দরজাটা জ্বালিয়ে দিয়ে আসবে; আর তার সাথে কোন কথা বলবে না।”  দূত গিয়ে দরজা জ্বালিয়ে  দিয়ে মদীনায় চলে আসলেন।
উমর রা: এর একজন নিকটাত্মীয় (উমর রা: নিজের দূরবর্তী আত্মীয়দের থেকে এই একজনকেই গভর্ণর নিযুক্ত করেছিলেন, যিনি বাহরাইনের গভর্ণর ছিলেন) এর ব্যাপারে তিনি শুনতে পেলেন যে, তিনি আরবদের কিছু কবিতা পাঠ করছেন যাতে মদ এবং মদের পেয়ালার প্রসংশা করা হয়েছে।
إذا كُنْتَ نَدْمَاني فَبِالأَكْبَرِ اسْقِنِي
ولا تَسْقِنِي بالأَصْغَرِ الـمُتَثَلِّمِ
যখন তুমি আমাকে কষ্ট দিতে চাও। তখন বড়টি দিয়ে পান করাও।    
এবং ভাঙ্গা পাত্র দিয়ে পান করাইয়ো না।
لَعَلَّ أَمِيرَ المؤمنينَ يَسُوُؤهُ
تَنَادُمُنا في الجَوْسَقِ الـمُتَهَدِّمِ
আমীরুল মু’মিনীনকে তা কষ্ট দিবে।


অর্থাৎ আমাদের জন্য ভাঙ্গা পাত্রে মদ পান করা উচিৎ নয়। এটি কবিতার একটি কথা। উমর রা: তাকে তৎক্ষণাৎ ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, আল্লাহর শপথ এটি আমাকে কষ্ট দিয়েছে। সে বলল, হে আমীরুল মু’মিনীন! আল্লাহর শপথ আমি মদ পান করিনি এবং তার স্বাদও নেয়নি। তিনি বলেন, আমিও জানি তুমি সত্য বলছ। কিন্তু আল্লাহর শপথ তুমি আমার গভর্ণর হতে পারবেনা।  এবং এরপর তিনি নিজের আত্মীয়দের থেকে আর কাউকে গভর্ণর বানাননি।
এই ছিল অনুসন্ধানের বাস্তবতা।

 

সমাপ্ত