JustPaste.it

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

 

'আল ফিরদাউস' পরিবেশিত

 

'উস্তাদ খুবাইব আহমাদ হাফিজাহুল্লাহ' এর

 

'উপযুক্ত উপলব্ধি:/১১ ও অনুরূপ হামলা আত্মরক্ষামূলক জিহাদ'

 

****************************

 

আপত্তি উথাপনকারীদের বক্তব্যঃ

৯/১১ ও অনুরূপ হামলা হচ্ছে কাফিরদের ভূমিতে গিয়ে হামলা তাই এটি আক্রমণাত্মক জিহাদ তথা ইকদামি জিহাদ। আর ইকদামী জিহাদের জন্য রাস্ট্রপ্রধাণ জরুরী। তাই এধরণের হামলা জিহাদ নয় বরং সন্ত্রাস।

) সংজ্ঞা হতে আলোচনাঃ

শুরুতে আমরা ইনশা’আল্লাহ আক্রমণাত্মক জিহাদ ও আত্মরক্ষামূলক জিহাদের ব্যাপার জানার চেষ্টা করব।

আক্রমণাত্মক জিহাদঃ কাফিরদের রাষ্ট্রে ইসলামী শারিয়াহ প্রতিষ্ঠা কিংবা তাদের থেকে জিজিয়া কর আদায়ের জন্য যে জিহাদ পরিচালিত হয় তাকে বলা হয় জিহাদ তলব/ইকদামী জিহাদ/ জিহাদ আল ইহতিলাল/ আক্রমণাত্মক জিহাদ।

এই জিহাদের হুকুম হচ্ছে- এই জিহাদ ফরজে কিফায়া। মুসলিম রাস্ট্রপ্রধান বছরে অন্তত একবার এধরণের জিহাদ পরিচালনা করবেন। কিছু লোক আদায় করলে এই ফরজিয়াতের হক আদায় হয়ে যাবে।

অপর দিকে,

আত্মরক্ষামূলক জিহাদঃ মুসলিমদের ভূমিতে কাফিরেরা আক্রমণ করলে সে সকল কাফিরদের প্রতিহত করা এবং মুসলিম বন্দী/ভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য যে জিহাদ পরিচালিত হয় তাকে বলা হয় জিহাদ আদ দিফা/দিফায়ি জিহাদ/আত্মরক্ষামূলক জিহাদ।

এই জিহাদের হুকুম হচ্ছে- এই জিহাদ ফরজে আইন। যদি কিছু লোক এই ফরজিয়াত আদায় করতে পারে অর্থাৎ মুসলিম ভূমি ও বন্দীদের পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয় তাহলে আর ফরজে আইন থাকে না।

যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো মুসলিম কাফিরদের হাতে বন্দী থাকবে এবং কাফিরদের করায়ত্ত মুসলিম ভূমিসমূহ পুনরায় ইসলামের অধীনে নিয়ে আসা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই জিহাদের হুকুম ফরজে আইন।

সুতরাং,

জিহাদ আত-তলব বা আক্রমণাত্মক জিহাদের জন্য ইমাম থাকা প্রয়োজন, আবার কেউ কেউ বলেছেন এসময় ইমাম না থাকলেও জিহাদ জারি রাখতে হবে। যেমন-

فان عدم الامام لم يؤخر الجهاد لان مصلحته تفوت بتأخيره، وان حصلت غنيمة قسموها على موجب الشرع، قال القاضي وتؤخر قسمة الاماء حتى يقوم إمام احتياطا للفروج.اهـ

“যদি ইমাম না থাকে তাহলে এ কারণে জিহাদ পিছিয়ে দেয়া যাবে না। কেননা, পিছিয়ে দেয়ার দ্বারা জিহাদে নিহিত মাসলাহাত ও কল্যাণসমূহ হাতছাড়া হয়ে যাবে। গনীমত লাভ হলে হকদারদের মাঝে শরীয়তে বর্ণিত নিয়মানুযায়ী বণ্টন করে নেবে। 
তবে কাজী রহ. বলেন, ইমাম নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত সতর্কতাবশত দাসীদের বণ্টন স্থগিত রাখবে।”
 [আল-মুগনী: ১০/৩৭৪]

অপরদিকে-

জিহাদ আদ দিফা প্রত্যেক ব্যক্তির উপর ফরয। আর ফরযে আইন ইবাদাতের আদায়ের জন্য রাষ্ট্রীয় শক্তির জরুরত নেই। এটা যে কেউ আদায় করতে পারবে। ইমামের প্রয়োজন নেই। তবে সুসংবদ্ধভাবে জিহাদ আঞ্জাম দেয়ার জন্য একজন ইমাম নিয়োগ করে নেয়া জরুরী।

যদি কোনো ব্যক্তির পক্ষে জিহাদরত মুসলিম জামাতে যোগ দেয়া সম্ভবপর না হয় তবে সে একাই জিহাদ করবে এতে কোনো সন্দেহ নেই যেমনটা আমরা দেখে থাকি মুসলিমদের উপর আক্রমণকারী কাফির রাষ্ট্রে বিভিন্ন মুজাহিদ ভাইয়েরা করে থাকেন।

তাই নিঃসন্দেহে মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত দেশে গিয়ে হামলা করা অবশ্যই দিফায়ি (আত্মরক্ষামূলক) জিহাদ ইকদামি (আক্রমণাত্মক) জিহাদ নয়

অর্থাৎ, যুদ্ধরত পশ্চিমা দেশে পশ্চিমাদের উপর হামলা শুধু জায়েজই বরং তা ফরযে আইন

এবং এই জিহাদ পরিচালনা জন্য রাস্ট্র কিংবা রাস্ট্রপ্রধাণ থাকা জরুরী নয় এব্যাপারে উম্মতের ইজমা প্রতিষ্ঠিত রয়েছে।

কিছু দলীল দেখুনঃ

ইমাম মুহাম্মদ রহ. ‘আসসিয়ারুল কাবীরএ বলেন:

وإن نهى الإمام الناس عن الغزو والخروج للقتال فليس ينبغي لهم أن يعصوه إلا أن يكون النفير عاما.اهـ
 

“ইমাম যদি লোকজনকে যুদ্ধ করতে এবং কিতালে বের হতে নিষেধ করে, তাহলে তাদের জন্য তার আদেশ অমান্য করা জায়েয হবে না। তবে যদি নফীরে আম এর হালত তৈরী হয়ে যায় তাহলে ভিন্ন কথা।”

ইমাম সারাখসী আল হানাফি রহ. এর ব্যাখ্যায় বলেন:

لأن طاعة الأمير فيما ليس فيه ارتكاب المعصية واجب كطاعة السيد على عبده فكما أن هناك بعد نهي المولى لا يخرج إلا إذا كان النفير عاما فكذلك ها هنا. اهـ
 

“যেখানে ইমামের আদেশ পালন করতে গেলে নাফরমানীতে লিপ্ত হতে হয় না, সেখানে ইমামের আনুগত্য ফরয। যেমন, গোলামের জন্য তার মনিবের আনুগত্য ফরয। নফীরে আম (অর্থাৎ জিহাদ যখন ফরযে আইন হয়) না হলে যেমন মনিব নিষেধ করলে জিহাদে যাবে না, ইমামের ক্ষেত্রেও তেমনি।”
 [শরহুস সিয়ারিল কাবীর: ২/৩৭৮]

মালিকী মাযহাবের কিতাব ফাতহুল আলিয়্যিল মালিকএ বলা হয়েছে:

قال ابن حبيب سمعت أهل العلم يقولون إن نهى الإمام عن القتال لمصلحة حرمت مخالفته إلا أن يزحمهم العدو وقال ابن رشد طاعة الإمام لازمة , وإن كان غير عدل ما لم يأمر بمعصية ومن المعصية النهي عن الجهاد المتعين.اهـ
 

“ইবনে হাবীব রহ. বলেন, আমি আহলে ইলমদেরকে বলতে শুনেছি, ইমাম কোন মাসলাহাতের প্রতি লক্ষ্য করে কিতাল করতে নিষেধ করলে তার বিরুদ্ধাচরণ করা হারাম।

তবে যদি শত্রু আক্রমণ করে বসে তাহলে ভিন্ন কথা। ইবনে রুশদ রহ.বলেন, ইমাম ন্যায় পরায়ণ না হলেও তার আনুগত্য আবশ্যক, যতক্ষণ না কোন গুনাহের আদেশ দেন। আর ফরযে আইন জিহাদে বাধা দেয়া গুনাহের কাজ।” [ফাতহুল আলিয়্যিল মালিক: ৩/৩]

উপরোল্লিখিত বক্তব্যের তথ্যসূত্র এবং এব্যাপারে আরও বিস্তারিতভাবে জানতে পড়ুনঃ

حكم الجهاد وأنواعه
http://www.ilmway.com/site/maqdis/MS_18862.html

الفرق بين جهاد الدفع وجهاد الطلب
http://www.ilmway.com/site/maqdis/MS_24232.html

Is the permission of the ruler necessary for jihad for the sake of Allaah?

شبهة؛ لا جهاد إلا بوجود إمام وراية
http://www.ilmway.com/site/maqdis/MS_5349.html

অতঃপর,

এই দাবী অর্থাৎ, মুজাহিদিনরা ইকদামি জিহাদ করছেন। এর সপক্ষে তারা বলে থাকে, মুজাহিদিনরা হারবি (মুসলিমদের সাথে যুদ্ধরত) কাফিরদের দেশের বিমানবন্দর, অর্থনৈতিক কেন্দ্রে হামলা করে থাকে। তাই এই জিহাদ ইকদামি জিহাদ।

বিশেষ করে ৯/১১ এর বরকতময় হামলা, ৭/৭ লন্ডন হামলা, শারলি এব্দো হামলা কিংবা অরল্যান্ডো হামলা (আই এস নিঃসন্দেহে খাওয়ারিজ কিন্তু তাদের সঠিক কাজগুলো অবশ্যই সমর্থনযোগ্য) — ইত্যাদি সম্মানজনক হামলাকে বলা হচ্ছে আক্রমণাত্মক জিহাদের অংশ আর যেহেতু ইমাম নেই তাই এধরণের হামলা নাজায়েজ (আ’উজুবিল্লাহ)…

উনারা আত্মরক্ষামূলক জিহাদ বলতে বুঝে থাকেন নিজে ঘরে মার খাওয়া ও সেখানেই বসে থাকা। যা সম্পূর্ণ গলদ চিন্তাধারা।

অতএব, জিহাদ আদ দিফা ও জিহাদ আত তলবের সংজ্ঞা থেকেই বোঝা যাচ্ছে মুজাহিদিনদের পশ্চিমা যুদ্ধরত কাফিরদের উপর হামলার বিষয়টি যে জিহাদ আত দিফার অন্তর্ভুক্ত!

কেননা মুজাহিদিনদের উদ্দেশ্য কুফফারদের পরিশ্রান্ত করার মাধ্যমে মুসলিমদের ভূমি থেকে অপসারণ করা। তাদের দেশে ইসলাম কায়েম বা জিজিয়া কর আদায় না। ওয়াল্লাহু আলাম।

) সাহাবী আবু বাসির রাদিঃ এর ঘটনা

কাফিরদের উপর নিজে থেকে হামলাও আত্মরক্ষামূলক জিহাদ হতে পারে

আল্লাহ’র রাসুল সাঃ এর সাহাবি আবু বাসির রাদিঃ এবং আবু জান্দাল রাদিঃ উভয়েই মদীনার বাইরে অর্থাৎ দারুল ইসলামের বাইরে গিয়ে কাফিরদের আক্রমণ করেছেন।
 কেউ কি একথা কস্মিনকালেও বলবে যে, এই জিহাদ ইকদামী জিহাদ ছিল?

এবং এই জিহাদ রাসুলুল্লাহ সাঃ কর্তৃক সমর্থিত ছিল। আসুন দেখা যাক-

হাদিসটি দেখুনঃ

قَالَ وَيَتَفَلَّتُ أَبُو جَنْدَلِ بْنُ سُهَيْلٍ فَلَحِقَ بِأَبِي بَصِيرٍ فَجَعَلَ لَا يَخْرُجُ مِنْ قُرَيْشٍ رَجُلٌ قَدْ أَسْلَمَ إِلَّا لَحِقَ بِأَبِي بَصِيرٍ حَتَّى اجْتَمَعَتْ مِنْهُمْ عِصَابَةٌ قَالَ فَوَاللَّهِ مَا يَسْمَعُونَ بِعِيرٍ خَرَجَتْ لِقُرَيْشٍ إِلَى الشَّامِ إِلَّا اعْتَرَضُوا لَهَا فَقَتَلُوهُمْ وَأَخَذُوا أَمْوَالَهُمْ فَأَرْسَلَتْ قُرَيْشٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُنَاشِدُهُ اللَّهَ وَالرَّحِمَ لَمَّا أَرْسَلَ إِلَيْهِمْ فَمَنْ أَتَاهُ فَهُوَ آمِنٌ فَأَرْسَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ

“বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আবু জান্দাল ইবনে সুহাইলও বের হয়ে আবু বাছিরের সাথে শরীক হন। এরপর কুরাইশের যে ব্যক্তিই ইসলাম গ্রহণ করে বেরিয়ে পড়ত, সেই আবু বাছিরের সাথে মিলিত হত। এমনকি তাদের একটি দল হয়ে যায়। বর্ণনাকারী বলেন, আল্লাহর শপথ! তারা যখনই কোন কুরাইশ কাফেলার শামের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সংবাদ শুনতেন, তখনই তাদের পথ আটকাতেন। তাদেরকে হত্যা করতেন এবং তাদের সম্পদ নিয়ে নিতেন।

ফলে কুরাইশরা অতিষ্ঠ হয়ে আল্লাহ ও আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে পত্র পাঠায়, যেন তিনি তাদেরকে মদীনায় ডেকে পাঠান। আর এরপর থেকে যে (মদীনায়) চলে আসবে, সে নিরাপদ। তাই রাসূল (সাঃ) তাদেরকে ডেকে পাঠালেন।”

যদি আবু বাছির (রাঃ) এর এই জিহাদ আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর অপছন্দনীয় হতো, তাহলে একদল সাহাবা (রাঃ) আজমাইন একত্রে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর অপছন্দীয় কাজ দীর্ঘদিন ধরে করতে থাকেন কিভাবে?

আর রাসুল (সাঃ) এই পুরো সময়কালে নিরব থাকারই বা অর্থ কি? নিরব থাকার অর্থ কি এটা নয় যে, আবু বাছির (রাঃ) এর জিহাদী কার্যক্রমের ব্যাপারে রাসুল (সাঃ) এর সমর্থন রয়েছে? তাহলে আমরা দেখলামঃ

- আবু বাছির (রাঃ) গেরিলা জিহাদকে রাসুল (সাঃ) গ্রহন করেন নি — এই কথার কোন ভিত্তি নেই। — আবু বাছির (রাঃ)-কে দুইবার মদীনা থেকে ফিরিয়ে দেয়ার কারণ ছিল হুদাইবিয়ার চুক্তি। এর সাথে আবু বাছির (রাঃ) এর গেরিলা জিহাদের কোন সম্পর্ক ছিল না।

  • মক্কা থেকে পরবর্তীতে যারাই ইসলাম গ্রহন করতেন, তারাই আবু বাছির (রাঃ) এর ইসাবাতে শরীক হয়ে যেতেন। রাসুল (সাঃ) নও-মুসলিম সাহাবা (রাঃ)-দের এই কর্মকান্ডকে, আবু বাছির (রাঃ) এর গেরিলা জিহাদকে, শাসকের অনুমতি ছাড়া, খলিফার ঘোষণা ছাড়া, স্বয়ং রাসুল (সাঃ) এর অনুমতি ছাড়া জিহাদকে নিষেধ করেন নি।
  • বরং মৌনতা অবলম্বন করেছেন। আর রাসুল (সাঃ) এর গোচরীভূত ব্যাপারে তাঁর মৌনতা অবলম্বন মানে সেটা অনুমোদিত।

এবং, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাষ্ট্রের সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন সাহাবীর জিহাদের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন তাঁর لَوْ كَانَ لَهُ أَحَدٌ কথার মাধ্যমে

() ইবনে হাজার (রঃ) ফাতহুল বারীতে এই কথার ব্যাখ্যায় লিখেছেনঃ

قوله لو كان له أحد أي ينصره ويعاضده ويناصره وفي رواية الأوزاعي لو كان له رجال فلقنها أبو بصير فانطلق وفيه إشارة إليه بالفرار لئلا يرده إلى المشركين ورمز إلى من بلغه ذلك من المسلمين أن يلحقوا به — فتح الباري — ابن حجر 

“যদি তাকে সাহায্য-সহযোগিতা ও শক্তি যোগনোর জন্য কেউ থাকতো। ইমাম আওযায়ী (রঃ) এর রেওয়ায়াতে এসেছে, “যদি তার পক্ষে কিছু লোক থাকতো! আবু বাছির (রাঃ) কথাটি বুঝে নিলেন। তাই তিনি চলে গেলেন”।

এখানে আবু বাছির (রাঃ) এর জন্য ইশারা ছিল, যেন উনি পালিয়ে যান, যাতে উনাকে মুশরিকদের নিকট ফেরত দিতে না হয় এবং এই খবর যে সকল মুসলিমদের কাছে পৌঁছবে, তারা যেন তার সাথে গিয়ে মিলিত হন।”

() আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রঃ) এর উমদাতুল ক্বারীতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ

قوله لو كان له أحد جواب لو محذوف أي لو فرض له أحد ينصره ويعاضده — عمدة القاري شرح صحيح البخاري 

“‘তার জন্য যদি কেউ থাকত’ কথাটির বাকি অংশ উহ্য। পূর্ণ কথাটি হচ্ছে- তার জন্য যদি কেউ থাকত, যে তাকে সাহায্য করবে ও শক্তি যোগাবে।”

() ইবনে বাত্তাল (রঃ) সহীহ বুখারীর ব্যাখায় একই রকম কথা বলেছেন। তিনি বলেনঃ

قوله: « لو كان له أحد » يعنى: من ينصره ويمنعه، ففهمها أبو بصير، وخرج إلى سيف البحر، وجعل يطلب غرة أهل مكة، وآذاهم حتى لحق به أبو جندل وجماعة، شرح البخاري لابن بطال 

“অর্থাৎ, যে তাকে সাহায্য করবে ও রক্ষা করবে। আবু বাছির (রাঃ) কথাগুলো বুঝলেন এবং সিফাল বাহারে চলে গেলেন। আর মক্কাবাসীকে অতর্কিত আক্রমণ করে শাস্তি দিতে থাকেন। পরবর্তীতে আবু জান্দাল (রাঃ) সহ এক দল (মুসলিম) তার সাথে যুক্ত হন”।

() মোল্লা আলি কারি রহ. বলেন -

(لَوْ كَانَ لَهُ) أَيْ: لِأَبِي بَصِيرٍ (أَحَدٌ) . أَيْ: صَاحِبٌ يَنْصُرُهُ وَيُعِينُهُ، وَقِيلَ مَعْنَاهُ لَوْ كَانَ لَهُ أَحَدٌ يَعْرِفُهُ أَنَّهُ لَا يَرْجِعُ إِلَيَّ حَتَّى لَا أَرُدَّهُ إِلَيْهِمْ وَهَذَا أَنْسَبُ بِسِيَاقِ الْحَدِيثِ


যদি তার এমন কেউ থাকতো, যে তাকে সাহায্য এবং সহযোগিতা করতো। বলা হয়েছে, এর অর্থ হলো, যদি তার এমন কেউ থাকতো, যে তাকে জানিয়ে দিতো যে, সে যেনো আমার কাছে আর ফিরে না আসে যাতে তাকে মক্কাবাসীর কাছে ফিরিয়ে দিতে না হয়। এই ব্যাখ্যাটিই হাদিসের পূর্বাপরের সঙ্গে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ।

() ইবনুল মুলাক্কিনের বক্তব্যে আরো কতো স্পষ্টভাবে এসেছে -

(قد أوفى الله ذمتك) أنك رددتني إليهم كما شرطت لهم، ولا تردني الثانية فلم يرض رسول الله - صلى الله عليه وسلم - إلا بما لا شك فيه من الوفاء، فسكت عنه، ونبهه على ما ينجو به من كفار قريش بتعريض عرض له به. وذلك قوله: "لَوْ كَانَ لَهُ أَحَدٌ" يعني: من ينصره ويمنعه، فعلمها أبو بصير

অর্থাৎ, রাসুলুল্লাহ চুক্তি ভঙ্গ করেননি তবে কীভাবে আবু বাসির ওদের থেকে বাঁচতে পারে ইঙ্গিতে তাকে তা অবহিত করেছেন। আর তা এভাবে যে, তিনি বলেছেন, তার যদি এমন কেউ থাকতো, যে তাকে সাহায্য অরতো এবং সুরক্ষা করতো।

() আওনুল মাবুদ গ্রন্থে হাফিজ ইবনু হাজারের উদ্ধৃতিতে বলছেন -

وَفِيهِ إِشَارَةٌ إِلَيْهِ بِالْفِرَارِ لِئَلَّا يَرُدُّهُ إِلَى الْمُشْرِكِينَ وَرَمْزَ إِلَى مَنْ بَلَغَهُ ذَلِكَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ أَنْ يَلْحَقُوا بِهِ

এতে আবু বাসিরের প্রতি পলায়নের ইঙ্গিত রয়েছে, যাতে রাসুল তাকে ওদের হাতে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য না হন এবং এতে অন্যান্য মুসলমানদের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে, যাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছবে, তারা যেনো তার সঙ্গে যুক্ত হয়। (দেখুন- আওনুল মা'বুদ শরহু সুনানি আবি দাউদ মা'আ হাশিয়াতি ইবনিল কায়্যিম)

আহলে হাদিস শায়খ ডক্টর সাইফুল্লাহ নিজেও সাহাবি আবু বাসির রাদিঃ দের জিহাদকে দিফায়ি জিহাদ সাব্যস্ত করার পর দিফায়ি জিহাদের জন্যও রাষ্ট্রের শর্ত আরোপ করে একটি লেকচারে দিয়েছেন এবং আবু বাসির রাদিঃ এর জিহাদকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন!! (

Video thumb
)

উনার এই বক্তব্যের রদ্দ পূর্বে একজন ভাই ইতিমধ্যে বিস্তারিত করেছেন এবং উপরের হাদিসের ব্যখ্যায় ইমামদের বক্তব্য থেকেও বিষয়টি পরিস্কার।

তবুও সংক্ষেপে নজদি ইমামদের মধ্যে একজনের ক্কওল উল্লেখ করা হচ্ছে ডক্টর সাইফুল্লাহ’র বক্তব্যের অসারতা প্রমাণের জন্য,

ইমাম আব্দুর রহমান বিন হাসান বিন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রহঃ জিহাদের জন্য রাষ্ট্রের উপস্থিতির শর্ত আরোপ করাকে দ্বীনের ব্যাপারে মিথ্যাচার ও বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন,

وقد قال العلامة عبدالرحمن بن حسن بن محمد بن عبدالوهاب في بيان بطلان هذا الشرط: (بأي كتاب أم بأي حجة أن الجهاد لا يجب إلا مع إمام متبع؟! هذا من الفرية في الدين والعدول عن سبيل المؤمنين والأدلة على بطلان هذا القول أشهر من أن تذكر من ذلك عموم الأمر بالجهاد والترغيب فيه والوعيد في تركه) [الدرر السنية: 7/97]

 

“কোন কিতাব, কোন দলীল এটা বলে যে ইমাম ব্যাতীত জিহাদ ওয়াজিব নয়?
 এটা দ্বীনের ব্যাপারে মিথ্যাচার এবং মুমিনদের পথ হতে বিচ্যুতি। 
 এবং এই বাতিল কথার বিপরীতে এত সুপরিচিত প্রমাণাদি মজুদ আছে যে সেগুলো উল্লেখ করারও প্রয়োজন নেই।”

- আদ দুরারুস সানিয়্যাহ (৭/৯৭)

অর্থাৎ, আবু বাসির রাদিঃ রা যে দিফায়ি জিহাদে লিপ্ত ছিলেন এতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই তা এবং উম্মতের ইজমা অনুযায়ী তা নিঃসন্দেহে বৈধ জিহাদ ছিল

তাই কাফিরদের দেশে গিয়ে হামলা করার মানেই যে সেটা ইকদামি জিহাদ বিষয়টা এমন নয় এছাড়াও- মুতার যুদ্ধকে সংশয় সৃষ্টিকারী ভাইয়েরা সামনে রাখতে পারেন

এছাড়াও, ডক্টর সাইফুল্লাহ স্বয়ং উহুদের যুদ্ধকেও দিফায়ি জিহাদ বলেছেন (উনার আলোচনার ৫০মিনিট ২০সেকেন্ডে দেখুন)

অথচ উহুদ কি মদীনার ভেতরের অংশ? দারুল ইসলামের ভেতরের অংশ?

দিফায়ি জিহাদ মানে এই নয় যে, আমি আক্রান্ত হলেই কেবল প্রতিহত করব

বরং সকল আগ্রাসী কাফিরদের নিজে থেকে গিয়ে আক্রমণ করাও দিফায়ি জিহাদ যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত কিংবা তাদের হাতে কোনো মুসলিম বন্দী রয়েছে

আর যদি তারা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত থাকে তাহলে তো বলাই বাহুল্য এর স্বপক্ষে আল্লাহ রাসুল সাঃ এর সুন্নাহ ফুকাহাদের আরও অনেক সুস্পষ্ট বক্তব্য অত্যন্ত সহজেই আপত্তি আরোপকারী ভাইয়েরা খুজে পাবেন ইনশাআল্লাহ

বর্তমান পশ্চিমা দেশগুলো সব টিতেই লিপ্ত

) আল্লামা আহমাদ শাকির রহঃ ভাষ্য

পশ্চিমা দেশে মুজাহিদিনদের হামলা আক্রমণাত্মক জিহাদ (জিহাদ আত তলব) নয়; নিঃসন্দেহে তা আত্মরক্ষামূলক জিহাদ (জিহাদ আদ-দিফা)।

এর স্বপক্ষে আমরা বিংশ শতাব্দীর প্রথিতযশা মুহাদ্দিস আল্লামা আহমাদ শাকির রহ’র বক্তব্য থেকে আলোচনা করব ইনশা’আল্লাহ।

১৯৫৬ তে ইজরায়েলের সাথে মিলে ব্রিটিশ ও ফ্রেঞ্চরা সুয়েজ খালকে কেন্দ্র করে মিশর ও সুদান হামলা করার পর বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ইমাম আল আল্লামা আহমাদ শাকের রহঃ ফতোয়া দেন,

বিশ্বের যে কোনো দেশের প্রত্যেক মুসলিমের উপর এটি ফরজ যে, তারা ওদের (ব্রিটিশদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে এবং ওদের হত্যা করবে- যেখানেই ওরা থাকুক না কেন- বেসামরিক কিংবা সামরিক যাই হোক

এই বাক্যের নিহিতার্থের প্রত্যেকটি অক্ষরের অর্থ আমরা বলে থাকি। তাই একজন মুসলিম যেখানেই থাকুক, যে কোনো সংস্কৃতি ও জাতীয়তার ধারক হয়ে থাকুক, সুতরাং তার উপর এটি (ব্রিটিশদের আক্রমণ), ফরয যেমন আমাদের উপর মিশর সুদানে ফরয (অর্থাৎ ব্রিটিশদের সাথে যুদ্ধ করা)এমনকি ব্রিটিশ মুসলিম- যদি তারা সত্যিকার মুসলিম হয়ে থাকে তাদের ভূমিতে এটি তাদের উপরও ফরয- যেমন অন্যান্য মুসলিমের উপর ফরয যতদূর তারা সক্ষম

আর যদি তারা অক্ষম হয় তবে শত্রভূমি অথবা অন্য যে কোনো ভূমি যেখানে তারা শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম নয়- সেই সব স্থান থেকে হিজরত করা তাদের উপর ফরয হয়ে যাবে, যেহেতু মহা আল্লাহ তাদের আদেশ করেছেন।

আরও কিছু দলীল উল্লেখ করার পর আল্লামা রহঃ বলেন,

আমি মনে করি, ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও তাদের সাথে যে কোনো ধরণের সাহায্য বা সহযোগিতার ব্যাপারে শারিয়াহ’র রায় কী তা পরিস্কারভাবে তুলে ধরতে সমর্থ হয়েছে।

তাই প্রত্যেক মুসলিম- সে যে কোনো শ্রেণী বা অবস্থান থেকে আসুক এবং বিশ্বের যে কোনো স্থানে বসবাসকারী লোক হোক না কেন- যদি সে আরবী পড়তে পারে তবে তা বুঝবে।
 
আমি মনে করি, কোনো রকম প্রমাণ বা ব্যখ্যার অমুখাপেক্ষী এমন সোজা-স্পস্ট বিষয়ে পাঠকের এখন কোনো সন্দেহ নেই যে, এই ভূপৃষ্ঠে ফ্রেঞ্চদের ব্যাপারে শারিয়াহ হুকুম ব্রিটিশদের মতোই

সুত্রঃ
 قال الشيخ أحمد شاكر في كتابه كلمة الحق ص 126- 137ـ تحت عنوان 
 (بيان إلى الأمة المصرية خاصة وإلى الأمة العربية والإسلامية عامة) 

(পূর্ণ ফতোয়ার মূল আরবী ও বাংলা অনুবাদ)
 পূর্ণ ফতোয়াঃ http://alnoha.com/read5/futwa.htm
 বাংলা অনুবাদঃ https://www.pdf-archive.com/2015/01/18/declaration/declaration.pdf
 ====

ফ্রেঞ্চ ও ব্রিটিশরা মাত্র ২/৩টি দেশে কিছু সময়ের জন্য আগ্রাসন চালানোতেই আল্লামা আহমাদ শাকের রহঃ ফতোয়া দিয়েছেন বিশ্বের যে কোনো মুসলিমদের জন্য ফ্রেঞ্চ ও ব্রিটিশদের যে কোনো স্থানে হামলা করা ফরয।

এমনকি ফ্রান্স ও ব্রিটেনে অবস্থানকারী মুসলিমদের জন্যও যদি সম্ভব হয়, নতুবা সেখানের মুসলিমদের জন্য যেখানে যুদ্ধ করা সম্ভব সেখানে হিজরত ফরয।
 
তাহলে বর্তমানে আমেরিকা, ফ্রান্স, ব্রিটেনের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোট বিগত প্রায় ৩০ বছর থেকে প্রায় ১০টি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ক্রমাগত আক্রমণ চালিয়ে ৪০ লক্ষাধিক মুসলিম হত্যা করেছে, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে ফতোয়া কী হতো যদি আজ এই মহান আলেম জীবিত থাকতেন??!
 
কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে, উনি রেখে গেছেন কিছু অযোগ্য উত্তরসূরি যারা কেবল হাদিসের ক্ষেত্রে এই মহান আলেমের তাহকিক গ্রহণ করে অথচ উনার ফিকহকে দেয়ালে ছুড়ে মারে। উপরন্তু উনার ফিকহি ফয়সালা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করে।

) মুজাহিদিনদের বক্তব্য

মুজাহিদিনরা দিফায়ি জিহাদেই লিপ্ত। তাদের ভাষ্য থেকেই জেনে নেয়া যাক-

জনৈক মুজাহিদিন বিরোধী নিজ কিতাবে পশ্চিমা দেশে মুজাহিদিনদের আক্রমণকে ইকদামি জিহাদ উল্লেখ করে লিখেনঃ

“জিহাদ আত তলব/ ইকদামি জিহাদ বর্তমান সময়ে স্থগিত রাখা মুসলিমদের জন্য গুনাহের কারণ না। তাই পশ্চিমা দেশে হামলা করে (অর্থাৎ পশ্চিমা শত্রুদেশে আক্রমণ জিহাদ আত-তলব) মুসলিমদের উপর বিপদ ডেকে আনা বোকামী।”

এই সংশয়ের জবাবে শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ স্বীয় কিতাব আত-তাবরিয়ার দ্বাদশ অধ্যায়ে লিখেন,

“এটা অত্যন্ত আশ্চর্যজনক যে, লেখক শত্রুদেশে জিহাদি হামলাগুলোকে জিহাদ আত তলব (আক্রমণাত্মক জিহাদ অর্থাৎ কাফির রাস্ট্রকে ইসলামের অধীনে আনার জন্য অথবা জিজিয়া কর দিতে বাধ্য করার জন্য যে জিহাদ করা হয়) আখ্যায়িত করেছেন এবং এমনটি না করা মুসলিমদের জন্য ক্ষতিকর নয় বলে আখ্যায়িত করেছেন! এমন চিন্তাধারা একেবারেই নিম্নমানের, বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী এবং আল্লাহ’র দুশমনদের সাথে আমাদের যুদ্ধের প্রকৃতি সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞতার পরিচায়ক।

যে সকল মুসলিম ভুমি আজ কুফফার কর্তৃক আক্রান্ত সেখানে কাফিরদের প্রতিহত করা কি আত্মরক্ষামূলক জিহাদ নয়?

নিঃসন্দেহে যুদ্ধরত কাফিরদের ভূমিতে গিয়ে আক্রমণ করাও আত্মরক্ষামূলক জিহাদের অংশ। কেননা এই হামলাগুলোর মূল উদ্দেশ্য যাতে এসকল আগ্রাসী কাফিরেরা আমাদের ভূমি থেকে পশ্চাদপসরণ করে। কোন আলেমের পক্ষ থেকে আমাদের এই জিহাদকে জিহাদ আত-তলব (আক্রমণাত্মক জিহাদ) বলা হয়েছে!!? একজন আলেমের সংজ্ঞার সাথেও আজ পর্যন্ত লেখকের সংজ্ঞায়িত ‘জিহাদ আত-তলবের’ সংজ্ঞার সামঞ্জস্য ঘটেনি।

জিহাদ আত-তলবের ব্যাপারে আলেমরা এটাই বলেছেন যে,

“মুসলিমদের নিজস্ব একটি ভূমি থাকবে এবং সেখান থেকে পাঠানো সেনাদল ইসলামের প্রচার, কুফফারদের ভূমি বিজয় এবং সেই ভূমিতে ইসলামকে প্রভাবশালী করবে যাতে করে কাফিরেরা ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে।”
 আর এমনটা আমাদের বাস্তবতার সাথে একেবারেই সাংঘর্ষিক!

কেননা, মুজাহিদিনরা যে সকল হামলা শত্রুদেশে করেছে সেগুলো আগাগোড়াই আত্মরক্ষামূলক জিহাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিচালনা করেছে এবং এবিষয়টি শত্রুদের কাছে আগেই স্পস্ট করা হয়েছে যে,

যদি তোমরা আমাদের ভূমি ত্যাগ না করো, তবে এমন হামলা তোমাদের উপর চলতেই থাকবে
 এসকল বিষয়ে লেখকের চেয়ে মুজাহিদিনরা আরও উত্তমভাবে ওয়াকিবহাল আছেন। এমনকি এই লেখকই তো বলছেন যে,

 “খিলাফত পতিত হয়েছে, মুসলিম ভূমিগুলো কাফিরদের করায়ত্ত হয়েছে এবং তাদের রীতিনীতি ও সংস্কৃতি প্রভাবিত হয়ে আছে।”

কাফিররা ইজরায়েল রাস্ট্রগঠন করেছে মুসলিমদের অপমান করার মাধ্যমে এবং ইজরায়েলের মিত্ররা মুসলিমদের উপর তাদের ম্যন্ডেটগুলো চাপিয়ে দিচ্ছে এবং আরও অনেক কিছু করছে।

তাহলে এই লেখক এখন আবার বলছে কাফিরদের ছেড়ে দিতে। তাহলে সেই সময় কবে আসবে যেদিন মুসলিমরা পরে পরে মার না খেয়ে কাফিরদের মুকাবিলা করতে এগিয়ে যাবে??”

এখনো যারা সংশয়গ্রস্ত তারা চার মাজহাবের আলোকে জিহাদ আত-তলবের সংজ্ঞা ও আহকাম জানতে পড়ুন-


 حكم جهاد الاحتلال في المذاهب الأربع
 http://www.almeshkat.net/vb/showthread.php?t=55864
 
সুতরাং এটি জাজ্বল্যমান সূর্যালোকের ন্যায় স্পস্ট যে,
মুজাহিদিনরা জিহাদ আত -তলবে লিপ্ত এমন কথা বলা হবে নিজের ফিকহি জ্ঞান ও বাস্তবতা সম্পর্কে অজ্ঞতা জাহির করার নামান্তর।

আল্লাহ এমন আচরণ থেকে আমাদের হেফাজত করুন। আমিন।

) শায়খ নাসির আল ফাহদের ভাষ্য

এখন ইনশা’আল্লাহ আমরা মক্কার উম্মুল ক্কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আকিদা বিভাগের সাবেক ডিন শায়খ নাসির বিন হামদ আল ফাহদ (আল্লাহ তাঁকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করুন) এর একটি প্রশ্নোত্তর দেখব।

শায়খের কাছে প্রশ্নকর্তা আমেরিকান ও মুসলিমদের উপর আগ্রাসন চালানো রাষ্ট্রের সদস্যদের পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে আক্রমণের বৈধতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছেন।

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু শাইখ, আমি আপনার কিতাব আত-তিবইয়ান ফি কুফরি মান আ’ন আল-আমরিকানের “ক্রুসেডারদের আক্রমণ অভিযানের দ্বিতীয় পর্বেরঃ ইরাক যুদ্ধ ” অধ্যায়টি পড়েছি। আমি আপনার ঐ কিতাব এবং ঐখানে বর্নিত ক্রুসেডারদের আক্রমণ অভিযানের ব্যাপারে বিধান থেকে অনেক উপকৃত হয়েছি।

যেমন আমেরিকানদের সাহায্য করার ব্যাপারে বিধান, ইরাকি তাগুত সরকারকে সাহায্য করার ব্যাপারে বিধান এবং ইরাকের মুসলিমদের সাহায্য করার ব্যাপারে বিধান। শধুমাত্র সেখানে একটি অতীব গুরুত্বপূর্ন বিষয় বর্নীত ছিল না তা হলো আমেরিকার সাথে জিহাদ করার ব্যাপারে বিধান কি এবং আমেরিকানদের সাথে ইরাকের বাইরে ক্বিতালের ব্যাপারে বিধান কি?

যেমন তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট জায়গা ও তাদের গুরুত্বপূর্ন স্থাপনায় আক্রমণ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় আমেরিকানদেরকে আঘাত এইটা কি জিহাদ হিসেবে গন্য হবে?

যেসব দেশে তারা আমাদের সাথে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত নয় সেখানে আমেরিকান এবং অন্যান্যদের সাথে আমাদের কি শান্তি চুক্তি আছে? রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস “কেউ যদি কোনও চুক্তিবদ্ধ ব্যাক্তিকে হত্যা করে তবে সে জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না”।

আমরা যদি বলিও তারা কোনও চুক্তিতে নেই আমাদের পক্ষ থেকে তারপরও তাদের উপর আক্রমণ মুসলিমদের উপর বড় ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াবে তাহলে কি তাদের সাথে যুদ্ধ করা হালাল হবে? যাজাকুমুল্লাহ খায়রান শাইখ।

উত্তরঃ

ওয়ালাইকুমুসসআলাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু,

সন্দেহাতীতভাবে এই যুগে ইসলাম এবং মুসলিমদের সবথেকে বড় শত্রু হলো এই আমেরিকানরা এবং আমরা যদি ইসলাম ও মুসলিমদের উপর তাদের জুলুম ও অপরাধ বর্ননা করতে চাই তাহলে অনেক সময় লেগে যাবে। তারা মুসলিম জাতিকে হত্যা করছে।

তারা ইরাক ও আফগানিস্তানে ২০ লক্ষের উপর মুসলিম হত্যা করেছে এবং আমাদের আছে অবরোধপ্রাপ্ত উম্মাহ, আমাদের বহিষ্কারের শিকার উম্মাহ এবং মগজ ধোলাইকৃত উম্মাহ। আমেরিকানরা ধনী মুসলিমদের সম্পত্তি লুট করে, মুসলিমদের বেশিরভাগ জায়গা তারা দখল করে আছে এবং মুসলিমদের উপর তাওয়াগীত মুরতাদ শাসক চাপিয়ে দিয়েছে।

তারা এই উম্মাহর উপর যা করেছে তা অতীত এবং নিকট ইতিহাসে কেউ করেনি এই উম্মাহর উপর।

আজ আমরা দেখি হাজার হাজার রকেট আর টন কে টন বোমা তারা পৃথিবীর সবজায়গায় মুসলিমদের উপর নিক্ষেপ করছে। তারা শিশু,নারী এবং বৃদ্ধদের মাঝে কোনও পার্থক্য করে না! কেনই বা তারা পার্থক্য করবে? কারন তাদের চোখে মুসলিমরা কীটপতঙ্গ ছাড়া আর কিছুই না, যেই কীট পৃথিবী থেকে উচ্ছেদ করা দরকার!

তাই এই অভিশপ্তদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা এবং তাদের জন্য ওৎপেতে থাকা,তাদের সাথে যুদ্ধ করা তারা যেখানেই থাকুকএইটি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ন ওয়াজিব কাজ।

আমেরিকানদের অন্যায় কাজগুলো আপনাদেরকে আল্লাহ্ সুবহানুহু ওয়াতাআলার শর্তের নিকটে নিয়ে যেতে পারে কারন আমেরিকানরা জমিনে ফিৎনা ফাসাদ সৃষ্টি করছে, অনেক আল্লাহ’র বান্দাকে তারা হত্যা করছে এবং সারা পৃথিবী জুড়ে তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। তাই এই ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই তারা এই যুগে “কুফফারদের নেতা”।

আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেনঃ

 

وَإِن نَّكَثُوا أَيْمَانَهُم مِّن بَعْدِ عَهْدِهِمْ وَطَعَنُوا فِي دِينِكُمْ فَقَاتِلُوا أَئِمَّةَ الْكُفْرِ ۙ إِنَّهُمْ لَا أَيْمَانَ لَهُمْ لَعَلَّهُمْ يَنتَهُونَ ﴿١٢

 

“কুফর প্রধানদের সাথে যুদ্ধ কর। কারণ, এদের কোন শপথ নেই যাতে তারা ফিরে আসে।” (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত ১২)

 

“আমার যদি শুধুমাত্র ১০টি অস্ত্র থাকত তাহলে আমি আমার সকল অস্ত্র তলোয়ার তাদের দিকে নিক্ষেপ করতাম!

তাদের ব্যাতিত আর কেউ না এবং আমি আল্লাহ্*র শপথ করে বলছি আল্লাহ্*র ইচ্ছায় যদি তাদের বিরুদ্ধে শহিদী (ফিদায়ী) হামলা করার আমার কোনও সহজ সুযোগ হয় আমি এইটি করবো সামান্যতম ইতস্ততা ছাড়া”

যদি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা এই কোটি কোটি উম্মাহ থেকে শুধুমাত্র হাজারখানেক শহিদী (ফিদায়ী) হামলাকারী তৈরি করে যারা আমেরিকানদের স্থাপনা এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট জায়গাগুলোতে হামলা করে ধ্বংস করবে তাহলে তারা আমেরিকানদের পরাজিত করতো এবং তাদেরকে লজ্জাজনকভাবে ফিরিয়ে দিতো।

এইটি অত্যন্ত লজ্জার বিষয়ঃ

এই ফেরাউনরা কি মুসলিমদের কি বন্দি করছে না? এবং মুসলিমদের সর্বাপেক্ষা শাস্তি দিচ্ছে না পৃথিবী ঘুরে?

এবং এরপরও তেমন কোনও বাধার সম্মুখীন হয়নি (কোটি কোটি মুসলিম থেকে) বরং তারা তাওয়াগীত এবং তাদের সাহা্য্যকারীদের থেকে নিরাপত্তা লাভ করেছে?

শায়খের চুক্তি সংক্রান্ত আলোচনা আমাদের আলোচ্য বিষয়ের সাথে আপাতত প্রাসঙ্গিক না হওয়ায় উল্লেখ করা হলো না। ইনশা’আল্লাহ দ্বিতীয় পর্বে তা আলোচনা করা হবে।

আলহামদুলিল্লাহ বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য পর্যাপ্ত আলোচনা করা হলো। আল্লাহ তা’আলা তাওফিক দেয়ার মালিক।

***************

Al Firdaus Logo.n.png