JustPaste.it

ইয়েমেনী জনতা এবং তাদের সহযোগিতা – শাইখ আবু মুহাম্মদ আল-মাকদিসি

 

প্রশ্নঃ  আব্দুল্লাহ আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে আল-মুনথার বিন নু‘আম আল-আফতাস থেকে আবি থানা আবদ আর্-রাজ্জাক বর্ণনা করেছেন যে তিনি বলেছেনঃ ‘‘আমি ওহাবকে বলতে শুনেছি যে ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেছেন, নবী মুহাম্মদ (সা) বলেছেনঃ ‘‘বারো হাজার সৈন্য সহ একদল সৈন্যবাহিনী আদন-আবইয়ান থেকে আর্বিভূত হবে। তারা আল্লাহ এবং তাঁর রসূলকে বিজয়ী করবে; আমার এবং তাদের মাঝে তারা হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম’।’’

আমাদের সম্মানিত শাইখ আবু মুহাম্মদ আল-মাকদিসি, আল্লাহ্ তাঁকে ও আত্-তাওহীদ ওয়াল জিহাদ ফোরামের ভাইদের রক্ষা করুন, আল্লাহ আপনাদের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। নিম্নে যা বর্ণিত হলোঃ

আপনার কাছে সাম্প্রতিক ইয়েমেনের বিভিন্ন এলাকা ও সম্প্রসারিত প্রদেশ আবইয়ান-এ তাওহীদের যোদ্ধা এবং শির্ক ও অন্ধকারের যোদ্ধাদের মধ্যে সংর্ঘষের খবর পৌঁছেছে । আমরা এ ঘটনার ফলাফল প্রত্যক্ষ করছি। আল্লাহর সাহায্য ও তাঁর রহমত তাওহীদের আহবানকারীদের প্রতি এবং সর্বদিক থেকে আর্বিভূত শাবাবদের (যুবকদের) সাহায্য ও সমর্থন কল্পনাতীত।

শাইখের প্রতি আমার প্রশ্ন হচ্ছে, সামাজিকভাবে, ভৌগলিকভাবে, ঐতিহাসিকভাবে এ অঞ্চলের পরিচিতির সাথে সাথে…অনেক হাদীস এ ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে যার সত্যতা ও বর্ণনার দায়িত্বের ব্যাপারে এই উম্মাহর মুজাহিদ কোন শাইখই গবেষণা করেননি। আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি ইন্টারনেট সহ বিভিন্নভাবে ও বিভিন্ন উপায়ে অনুসন্ধান চালানোর পর কিন্তু আমাদের সময় ও চেষ্টা কোন কাজে আসেনি।

সুতরাং আমাদের ইমাম ও শাইখ হিসাবে আপনি কি এ হাদীসগুলোর সত্যতা অনুসন্ধান করা, তা বর্ণনা করা, এবং এর উপকারিতা ও বর্তমানে আদিন-আবইয়ান এর মুসলিম এবং সমস্ত মুসলিম ভূমির সাথে এই হাদীসের যোগসূত্রতা তুলে ধরবেন? বিশেষভাবে ইয়েমেনের ভাইয়েরা ভালবাসে শাইখ আবু মুহাম্মদ আল-মাকদিসিকে এবং তাদের ইমাম হিসাবে তাকে সম্মান করে এবং তার বই ও ফত্ওয়ার জন্য ব্যাকুল থাকে, হয়ত শাইখ ইয়েমেন ও জাযিরাতুল আরবের মুজাহিদীনদের বেছে নিয়ে তাদের সম্মোধন করে কিছু নাসিহা ও নির্দেশনা দিবেন।

পরিশেষেঃ আমি আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি যে আমি আমাদের শাইখ, শাইখ আবু মুহাম্মদ আল-মাকদিসি আপনাকে শুধু আল্লাহর জন্য ভালবাসি। আল্লাহর কাছে আমি দোয়া করছি তিনি যেন আমাদের সবাইকে আল-ফিরদৌস আল-‘আলা-তে একত্র হওয়ার তৌফিক দান করেন।
প্রশ্নকারীঃ আবু আবদ আর-রহমান আল- ইয়েমেনী

উত্তরঃ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রসূলের প্রতি। নিম্নে যা বর্ণিত হলোঃ

আল্লাহ্ আপনাকে সেই জন্যই ভালবাসুন যে জন্য আপনি আমাকে ভালবাসেন। আমি সর্বোচ্চ প্রশংসিত আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন আমাদেরকে এবং আপনাকে ইস্তাকামাত (অটল) রাখেন। তিনি যেন আমাদের মাধ্যমে তাঁর দ্বীনের বিজয় দান করেন এবং আমাদেরকে (অন্য জাতি দ্বারা) পরিবর্তন না করেন।
এই হাদীস ইমাম আহমদ কর্তৃক সংগৃহীত এবং তাবারানী তার কিতাব ‘মু’জাম আল-কাবির’ এবং অন্যান্যদের থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, ইবনে আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) বলেছেনঃ নবী (সা) বলেছেনঃ ‘‘বারো হাজার সৈন্য সহ একদল সৈন্যবাহিনী আদন-আবইয়ান থেকে আর্বিভূত হবে। তারা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে বিজয়ী করবে; আমার এবং তাদের মাঝে তারা হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম।’’

এ হাদীসের ব্যাপারে সম্মানিত শাইখ সুলাইমান ইবনে নাসির আল-উলওয়ান, আল্লাহ্ তার মুক্তি ত্বরান্বিত করুন, বলেছেন যে, এ হাদীসের (বর্ণনার) সনদ উত্তম এবং এর বর্ণনাকারীগণ গ্রহণযোগ্য। ইমাম আহমদ তার সংকলনে এবং ইবন আবি হাতিম তার ‘আল-জারদ ওয়া তা’দিল’-এ এবং আত্-তাবারানী তার ‘আল-কাবির’ কিতাবে উলেস্নখ করেছেন।

এরা সবাই আল-মুনথার বিন নু‘আম আল-আফতাস এর বরাতে আবদ আর্-রাজ্জাক বর্ণনা করেছেন যে, তিনি (আল-মুনথার বিন নু‘আম আল-আফতাস) বলেনঃ আমি ওহাবকে বলতে শুনেছি যে, ইবনে আব্বাস (রঃ) বলেছেন…এবং হাদীসটা বর্ণনা করার পর তিনি বলেনঃ আবু ই’আলা তার সংকলনে এটা মু’থামার ইবনে সুলাইমান থেকে আব্দ আ’লা ইবনে হামাদ আন-নারসি বর্ণনা করেছেন।

ইবনে আদি তার কিতাব আল-কামিল এবং ইবনে আল-জাওঝি তার আল-‘আলাল আল-মুথানাহিইয়া তে মুহাম্মদ বিন আল-হাসান বিন আতাশ আস-সনা’ই এর বরাতে এটা বর্ণনা করেছেন।

মুহাম্মদ বিন আল-হাসান বিতর্কিত ছিলেন কিন্তু আবু জা’রা এবং অন্যান্যরা তাকে সত্যায়িত করেছেন। তবে আল-আক্বিলি, আদ-দারাক্বাতনি এবং অন্যান্যরা তাকে দূর্বল বলেছেন। তিনি একাই এটা বর্ণনা করেননি, যেহেতু এ সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো একাধিক ব্যাক্তির স্মৃতি হতে এসেছে।

আল-মুনথির বিন আন-নু’মান আল-আফতাস বলেন, আবু হাতিম বলেছেন, ‘‘মু’তামির বিন সুলাইমান এবং হাসিম বিন ইউসুফ এবং আব্দ আর-রাজ্জাক এবং মুহাম্মদ বিন আল-হাসান বিন আতিশ এবং মুথরিফ বিন মাঝিন (সানার বিচারক)) এবং বিন মা’ইন তার সম্পর্কে বলেন যে, সে একজন নির্ভরযোগ্য (বর্ণনাকারী)।’’ তদুপরি, আল-বুখারী তার আত-তারিখ আল-কাবির-এ উল্লেখ করেছেন কিন্তু তিনি এ সম্পর্কে জাহর অথবা তা’দিল -এর কোনটিই উল্লেখ করেন নাই; তথাপি ইবন হিববান তার নির্ভরযোগ্যদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন।

আল-হাইথিমি তার মাজমু’ আঝ-ঝাওয়াইদ -এ বলেছেন যে, ইবন ইয়া’লা এবং আত-তাবারানী এটা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন ‘‘তারা আদেন হতে এসেছেন,’’ এবং তাদের ব্যাক্তিরা (বর্ণনাকারী) নির্ভরযোগ্য। মুনথির আল-আফতাস বাদে অন্যান্যরা নির্ভরয়োগ্য (বর্ণনাকারী) – তার বক্তব্য এখানেই ইতি টেনেছেন, আল্লাহ্ তাকে ইস্তেকামাত (অটল) রাখুন।

তাঁর বক্তব্য (সা) ‘‘আমার এবং তাদের মাঝে তারা হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম।’’ এটা তাদের ন্যায়নিষ্ঠা, দ্বীন এবং সদ্বগুণের লক্ষণ যা নবী (সা) অনুমোদন করে বলেছেন, ‘‘আমার এবং তাদের মাঝে তারা হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম’’।

এছাড়া স্থানের ব্যাপারেও তার উল্লেখ হতে পারে, যেমন, তারা তাঁর (সা) স্থান অর্থাৎ মদিনা এবং আদেন-আবইয়ান এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম।

অথবা এটা সময়ের ব্যাপারেও উল্লেখ হতে পারে। এতে কোন সন্ধেহ নেই যে, এটাই সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ রাসূল (সা) এর সময় থেকে তাদের উত্থান পর্যন্ত তারাই সবচেয়ে উত্তম। কোনটা ঠিক আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন। এটা আল্লাহর রহমত, তিনি যাকে চান তা তাকে প্রদান করেন।

এ হাদীসের ব্যাপারে যারা ব্যাখ্যা করেন তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এই হাদীসে সুসংবাদের ইঙ্গিত আছে যে, আদন-আবইয়ান থেকে খিলাফার যাত্রা শুরু হতে পারে।
ইয়েমেন এই খিলাফার রাজধানী হতে পারে, কারণ খিলাফার সদর দফতর থেকে সাধারণত সেনাবাহিনীর আগ বাড়ানোর পদক্ষিপ নেওয়া হয়। এটাই তারা বলে থাকে, তবে এটা হতে হবে এমন কোন কথা নয়। এর অর্থ এটাও হতে পারে যে, ইয়েমেন খিলাফাকে সহায়তা করবে অথবা এর জনগণ এবং মুজাহিদগণ মুসলিমদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে অথবা এমন সেনাবাহিনী তৈরি করবে যা কিছু মুসলিম ভূমির জালেম শত্রুদের উৎখাত করবে অথবা এর মুরতাদ ও দখলদারদেরকে বিতারিত করবে।

ইয়েমেনী জনতার ব্যাপারে অন্যান্য হাদীসে যে বর্ণনা রয়েছে তা এই হাদীসটি সমর্থন করেছে, তারা মুসলিমদেরকে আরো জোরদার করবে, তারা হক্বের সমর্থক এবং ইয়েমেনের এই জনতা ধারাবাহিকভাবে তা করতে থাকবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি আফগানিস্তান, ইরাক এবং জিহাদের প্রত্যেকটি ভূমিতেই তাদের সহায়তা। মুসলিমদের সহায়তার জন্য তাদের জনতা প্রাণপণে লড়ছে। তাদের সম্মান বোধ, দৃঢ়তা এবং মুসলিমদের সাহয্যের পদক্ষিপ দেখেই তাদেরকে চেনা যায়। বর্তমানে তাদের ইসলামপ্রিয় জনতার সংখ্যা এবং (জিহাদের প্রতি) সহায়তা আশানুরূপভাবে বেড়েই চলছে। এর কারণ হচ্ছে ঈমানদারদের পথের সাথে তাদের অন্তর থেকেই সম্পৃক্ততা আছে এবং মুজরিমীনদের (অপরাধী) পথের ব্যাপারে তারা বেশ সতর্ক। এর আরেকটি কারণ হচ্ছে তারা তাওহীদের পতাকাবাহকদের সাথে আছে এবং কোন কিছু দ্বারা বিভ্রান্ত নয়।

অন্য একটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে, ‘‘তোমরা জাযিরাতুল আরবে যুদ্ধ করবে এবং আল্লাহ্ এটা তোমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিবেন। অতঃপর তোমরা পারস্যের সাথে যুদ্ধ করবে এবং আল্লাহ্ এটা তোমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিবেন। অতঃপর তোমরা রোমানদের (অর্থাৎ পশ্চিমা বিশ্ব) সাথে যুদ্ধ করবে এবং আল্লাহ্ এটা তোমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিবেন। অতঃপর তোমরা দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে এবং আল্লাহ্ এটা তোমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিবেন।’’ অন্য বর্ণনায় আছে, ‘‘তোমরা জাযিরাতুল আরব জয় করবে এবং আল্লাহ্ এটা তোমাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিবেন।’’

আমরা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে আমরা প্রথমে ছিলাম। বর্তমানে আরব উপদ্বীপে মুরতাদরা আধিপত্য বিস্তার ও শাসন করছে। সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, ক্রুসেডার, কাফের এবং নাস্তিকদের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। আর যারা তাওহীদে বিশ্বাসী তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হচ্ছে। সত্যনিষ্ঠ লোকদেরকে হত্যা এবং তাদের দ্বারা কারাগারগুলো পূর্ণ করা হচ্ছে। কারণ জিহাদের মাধ্যমে খ্রিষ্টান ও মুরতাদদের সাহায্যকারী এবং রক্ষাকারী এই দালাল শাসকদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হচ্ছে… বর্তমানে যা চলছে এজন্যে আরব উপদ্বীপকে মুক্ত করার আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে… বর্তমানে ইয়েমেনী ভাইদের হাতে হক্বের পতাকা দেখে আমরা পুলকিত। তারাই এখন তাওহীদের পতাকাবাহী হয়ে যুদ্ধ করছে এবং তা চলমান রাখছে। আমি জিজ্ঞস করতে চাই এই লোকগুলো যদি তা না হয়, তবে কারা এ কাজ করছে?

সুনান আবু দাউদ এবং ইমাম আহমদ এর সংকলনে ইবন হাওয়ালা বলেছেনঃ নবী (সা) বলেছেনঃ ‘‘বিষয় এটা হবে যে, তোমরা মুজাহিদ হবেঃ শাম-এর মুজাহিদ, ইয়েমেনের মুজাহিদ এবং ইরাকের মুজাহিদ।’’ ইবন হাওয়ালা বললেনঃ ‘‘আমি যদি সেই সময়ে উপস্থিত থাকি, তবে হে আল্লাহর রসূল আমার জন্য পছন্দ করে দিন।’’ কাজেই সে উত্তরে বললেনঃ ‘‘শামকে আকঁড়ে ধরে রাখ, সত্যিই আল্লাহর ভূমির মধ্যে এটা হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম। তিনি এটাকে তাঁর বান্দার মধ্য হতে তাকেই পছন্দ করেন যে তাকওয়াবান। এটা যদি না পাও, তবে ইয়েমেনকে আকরে ধর এবং পান কর ঐ জলাধার থেকে যেখানে বৃষ্টির পানি জমা হয়। সত্যিই আল্লাহ্ আমার জন্য শাম ও এর জনগণকে বিশ্বাসী করে দিয়েছেন।’’

এই হাদীসে এটা বর্ণিত আছে যে, মুসলিমদের উপর এমন এক সময় আসবে যখন প্রত্যেক ভূমিতে মুজাহিদরা (যুদ্ধের) প্রস্তুতি নিয়ে থাকবে। কাজেই সক্রিয় মুসলিম যারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে আছে তারা ছাড়া ঐ অঞ্চলের মুজাহিদদের দলে অন্য কেউ ভিড়তে পারবে না। এই হাদীসে ইয়েমেনের মুজাহিদদের কথার উল্লেখ আছে। আল্লাহ্ এই মুজাহিদদের ইস্তেকামত (অটল) রাখুন এবং তাদেরকে বিজয় দান করুন এবং তাদের মাধ্যমে এই দ্বীনকে সম্মানিত করুন।

বর্তমানে দ্বীনের শত্রুরা ইয়েমেনী মুজাহিদদের প্রতি ক্রুদ্ধ এবং ভীতসন্ত্রস্ত। এ পর্যন্ত ক্রুসেডারদের নেতাদের কাছ থেকে কয়েকদিন আগেও আমি যা শুনেছি, তাতে তাদের দুশ্চিন্তা ও আতঙ্ক প্রকাশ পায়। এটাকে তারা ঝুঁকি হিসাবে গণনা করছে যা সত্যিকার অর্থেই তাদের স্বার্থের ব্যাপারে হুমকি স্বরূপ। ভৌগলিকভাবে ইয়েমেনের অবস্থান স্পর্শকাতর স্থানে হওয়ার কারণে তারা এটাকে বিশেষ নজরে দেখছে।

এপি রির্পোট করেছেঃ ‘‘ভৌগলিকভাবেই ইয়েমেনের অবস্থান স্পর্শকাতর স্থানে হওয়ার কারণে কোল্ড ওয়ার (শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই/শীতল যুদ্ধ) – এর সময় আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ইয়েমেনকে দখল করার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত ছিল।’’ ইয়েমেনের কিছু জায়গায় আমেরিকার বিমান হামলার ব্যাপারে গণ-মাধ্যমে যা এসেছেঃ ‘‘রেড সি এবং আদনের গাল্ফ -এর নৌ-চালনার ক্ষেত্রে ইয়েমেন একটি কৌশলগত অবস্থানে অবস্থিত। এর যাত্রা পথে সুয়েজ খাল এবং এক দিকে সোমালিয়া অবস্থানের কারণে এটি দুর্বোধ্য একটি স্থান।’’

কাজেই এটা কোন আশ্চর্যের বিষয় নয় যে বিভিন্ন সময়ে আমেরিকার বিমান হামলা, গুপ্তচর বিমানের গুপ্তচরবৃত্তি, বিভিন্ন স্থানে ক্রুস মিসাইল দিয়ে হামলার সংবাদ আমরা শুনতে পাই। এ কারণেই এই সব কিছু এক দিক থেকে প্রমাণ করে যে ইয়েমেনী মুজাহিদরা ক্রুসেডার ও তাদের মিত্রদের মধ্যে চরম শঙ্কা আনয়ন করছে। অন্য দিক থেকে এটাও প্রমাণ করে যে, এই অঞ্চলের শাসক অন্যান্য শাসকদের মতোঃ তারা আমেরিকানদের দালাল ছাড়া আর কিছুই নয়, তাদের নিজেদের ভূমি, সমুদ্র অথবা আকাশ পথের উপর তাদের কোন নিয়ম বা ক্ষমতা নেই, তারা শুধু তাদের প্রভূদের নির্দেশ এবং প্রশিক্ষণ মোতবেক চলে। এটা এখন আর কোন গোপন বিষয় নয় যে, আমেরিকা ইয়েমেনী সমুদ্রের উপর নজরদারি করছে, খুব সূক্ষ্মভাবে তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে, ইয়েমেনী সেনাদের প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ বাহিনী পাঠাচ্ছে, মুরতাদরা (ধর্মত্যাগী) তাদের এলাকাগুলোতে মদদ দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে যাদেরকে তারা জঙ্গী বলে থাকে। কাফেরদের মধ্যে এই মিত্রতা ও সহোযোগিতা আদান-প্রদানের ব্যাপারে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা‘য়ালা বলেনঃ ﴾আর যারা কাফির তারা পারস্পারিক সহযোগী, বন্ধু। তোমরা যদি এমন ব্যবস্থা না কর, তবে পৃথিবীতে ফিতনা ও মহাবিপর্যয় দেখা দিবে। [৮: ৭৩]

এটা জানা কথা যে ইয়েমেন, এর মুজাহিদ এবং এর জনগণের ব্যাপারে বিশেষ শ্রেষ্ঠত্ব আছে যা হৃদয়কে আন্দোলিত করে, তাদের মিত্র হওয়া, তাদের সহায়তা করা এবং তাদের অনুগ্রহভাজন হওয়ার ক্ষিত্রে আকাঙ্ক্ষা করা এবং তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। এছাড়া ইমাম মুসলিম তার সহীহ অধ্যায়ে বিভক্ত করে একটি অধ্যায় রেখেছেনঃ ‘‘মানুষের মাঝে ঈমানের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা এবং এ ক্ষেত্রে ইয়েমেনবাসীর আধিক্য’’। এর মধ্যে আছেঃ

তাদের শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে হাদীসটি জুবাইর বিন মুতা’ম তার পিতা থেকে বর্ণনা করেনঃ আমরা যখন মক্কার রাস্তায় আল্লাহর রসূল (সা) এর সাথে হাঁটছিলাম, তখন তিনি আমাদের বললেনঃ ‘‘তোমাদের কাছে ইয়েমেনবাসীদের আগমন ঘটবে। তারা মেঘের মতো; তারা দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম।’’

তাদের শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে আবু হুরাইরাহ্ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস আছে। তিনি বলেনঃ আল্লাহর রসূল (সা) বলেছেনঃ ‘‘তোমাদের কাছে ইয়েমেনবাসীদের থেকে আগমন ঘটবে। তারা হচ্ছে সবচেয়ে সমবেদনাশীল ও কোমল হৃদয়ের। ইয়েমেনে ঈমান আছে, ইয়েমেনে বিজ্ঞতা আছে, ইয়েমেনে ফিকহ আছে। কুফরের মাথা পূর্ব অভিমুখী রয়েছে।’’

আল-বাগাউয়ী তার শারহ্ আস-সুন্নাহ্ কিতাবে বলেনঃ ‘‘এটা ইয়েমেনীবাসীর জন্য প্রশংসা, কারণ তারা ঈমান ও ভাল কাজের ক্ষিত্রে ত্বরান্বিত করে।’’
উপোরক্ত হাদীসেরই কিছু সংযোজন ইমাম আহমদ তার সংকলনে বর্ণনা করেছেন যে, এক বেদুইন আবু হুরাইরার নিকট বললেনঃ হে আবু হুরায়রা, নবী (সা) এর কাছ থেকে কিছু আমাদের বলেন, তাই সে বললেনঃ ‘‘ ইয়েমেনে ঈমান আছে, ইয়েমেনে বিজ্ঞতা আছে এবং তোমার রব-এর নেয়ামত আমি ইয়েমেনের দিকে খুঁজে পাচ্ছি।’’

বাড়তি অংশ হচ্ছেঃ ‘‘তোমার রব-এর নেয়ামত আমি ইয়েমেনের দিকে খুঁজে পাচ্ছি’’। এই অংশের ব্যাপারে মতানৈক্য আছে। কারণ এখানে একচেটিয়াভাবে সাবিব আবু রুহ্ আছেন যাকে ইবন হিববান ছাড়া কোন মুহাদ্দিস যারা হাদীসকে সহীহ্ এবং দূর্বল হিসাবে যাচাই করেন তারা কেউই তাকে নির্ভরযোগ্য বলেননি। তবে নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে শাইখ আল-ইসলাম ইবন তাইমিয়া এর ব্যাখ্যায় বলেছেনঃ ‘‘…‘ ইয়েমেন হতে’ কথাটির অর্থ পরিস্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে যে- অন্য কোন ধারণার বশবর্তী না হলে – সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে ইয়েমেনের কোন বিশেষ মর্যাদা নাই। কিন্তু (ইয়েমেন) থেকে যারাই এসেছে, তাদের সম্বন্ধে আল্লাহ্ বলেন, তারা আল্লাহকে ভালবাসে এবং আল্লাহ্ও তাদের ভালবাসেন। এ সর্ম্পকে আল্লাহ্ বলেনঃ ﴾হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ্ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে﴿ [৫: ৫৪]।

যখন এই আয়াত নাজিল হয় তখন জিজ্ঞেস করা হয় এ আয়াতে কাদের কথা বলা হয়েছে। তখন তিনি (সা) আবু মুসা আল-আশ’আরির মতো লোকদের কথা উলেস্নখ করেন। সহীহ্ হাদীসে তিনি (সা) এভাবেই বলেছেনঃ ‘‘তোমাদের কাছে ইয়েমেনী জনতার আগমন ঘটবে। তারা হচ্ছে সবচেয়ে সমবেদনাশীল ও কোমল হৃদয়ের। ইয়েমেনে ঈমান আছে, ইয়েমেনে বিজ্ঞতা আছে।’’ আর তারা মুরতাদ্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং ভূমি উন্মুক্ত করবে। তাদের মাধ্যমে পরম করুণাময় ঈমানদারদের যন্ত্রনা লাঘব করবে…’’

আল-কুরতুবী তার তাফসিরে বলেনঃ ‘‘এটা বর্ণিত আছে যে নবী (সা) বলেছেনঃ ‘‘তোমার রব-এর নেয়ামত আমি ইয়েমেনের দিকে খুঁজে পাচ্ছি’’। এর মধ্যে দু’ধরনের ব্যাখ্যা আছেঃ প্রথমত, তা একটি নেয়ামত কারণ এর জনতা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং দ্বিতীয়ত, সর্ব শক্তিমান আল্লাহ্ ইয়েমেনী জনতার মাধ্যমে তাঁর (নবী) (সা) এর কষ্ট লাঘব করেছেন, এজন্যই তারা হচ্ছেন আল-আনছার (দ্বীনের সাহায্যকারী)।’’ ইবন আল-আথির বলেনঃ ‘‘তিনি (সা) এর দ্বারা আল-আনসার (দ্বীনের সাহায্যকারী) বুঝিয়েছেন, কারণ তারা ঈমানদারদের কষ্ট লাঘব করেছেন এবং তারা হচ্ছেন ইয়েমেনী, কারণ তারা হচ্ছেন আল-আযাদ (স্বাধীন)।

এছাড়া, আবু হুরায়রা থেকে হাদীস এসেছে, তিনি বলেনঃ ‘‘আমি আল্লাহর রসূল (সা) কে বলতে শুনেছিঃ ‘‘অহঙ্কার ও ঔদ্বত্য আল-ফাদাদিন-এ থাকবে উটের পাল (লোকেরা গবাদি ও চাষকর্ম থেকে উচ্চ আওয়াজে আসতে থাকবে) আর প্রশান্তি পাওয়া যাবে মেষপালকের মধ্যে এবং ইয়েমেনে ঈমান আছে, ইয়েমেনে বিজ্ঞতা আছে।’’ আবু আব্দুল্লাহ বলেছেনঃ ‘‘একে ইয়েমেন বলা হয়েছে কারণ মক্কার ডানদিকে ইয়েমেন অবস্থিত।’’

ইবনে মাসউদ হাদীসটি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ রাসূল (সা) ইয়েমেনের দিকে হাত ইশারা করে বলেনঃ ‘‘ওখানে ঈমান আছে।‘‘ সত্যিই, কর্কশতা ও হৃদয়ের কাঠিন্য আল-ফাদাদিন -এ আছে (উটের চালক) যার উৎসস্থল গরুর লেজ অভিমুখী যেখানে রাবি’য়াহ্ ও মুদর মাঝখান থেকে শয়তানের শিং উঠে।’’

তাদের জন্য আব্দুল্লাহ্ ইবনে ওমর থেকে একটি হাদীস এসেছে যেখানে নবী (সা) বলেছেনঃ ‘‘হে আল্লাহ্! আমাদের শাম ও ইয়েমেনের প্রতি আপনার রহমত বর্ষণ করুণ।’’ তারা বললেনঃ ‘‘আমাদের নাজদ -এর প্রতিও’’। তখন তিনি (সা) বললেনঃ ‘‘হে আল্লাহ্! আমাদের শাম এবং ইয়েমেনের প্রতি আপনার রহমত বর্ষণ করুণ।’’ তারা আবার বললেনঃ ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের নাজদ -এর প্রতিও’’। আমার মনে হয় তৃতীয়বারে তিনি (সা) বলেছেনঃ ‘‘দুর্ভোগ ও ভূমিকম্প সেখানে (নাজদ) দৃশ্যমান হবে এবং শয়তানের শিং সেখান থেকে আবির্ভূত হবে।’’

তাদের জন্য থাওবান থেকে একটি হাদীস এসেছে যেখানে রাসূল (সা) বলেছেনঃ ‘‘বস্তুত, আমি আমার মিম্বারের মাঝে দাঁড়িয়ে ইয়েমেনবাসীদের জন্য (অন্যান্য) জনগণকে তাড়িয়ে দিচ্ছি। আমার লাঠি দিয়ে আঘাত করছি, যতক্ষণ না এটা তাদের উপর পড়ছে।’’ আন-নববী, আল্লাহ্ তার উপর রহম করুণ, বলেছেনঃ ‘‘(কাওসারের) পানি পানের ব্যাপারে এটা ইয়েমেনী জনতার প্রতি কিরামাহ্ (সুখ্যাতি): তাদের আমলে সালিহা্র (ভাল কাজের) প্রতিদান, তারা ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে অগ্রগামী এবং ইয়েমেন থেকে সাহায্যকারী। সুতরাং তিনি (সা) অন্যান্যদের তাড়িয়ে দিচ্ছেন যতক্ষণ না তারা (ইয়েমেনীরা) পানি পান করে, কারণ তারা দুনিয়াতে শত্রুদের বিতাড়িত করত, যাতে নবী (সা)-এর কোন ক্ষতি না হয়।’’

ইমরান ইবনে হুসাইন হাদীসটি বর্ণনা করেনঃ বানু তামিম আল্লাহর রসূল (সা) এর কাছে হাজির হলে তিনি (সা) বলেনঃ ‘‘সুসংবাদ’’। তারা বললোঃ ‘‘আপনি আমাদের সুসংবাদ দিচ্ছেন, বরং আমাদের কিছু দিন।’’ অতঃপর তার চেহারার (রং) পরিবর্তন হয়ে যায়। অতঃপর ইয়েমেনবাসী আসলে তিনি (সা) বলেনঃ ‘‘হে ইয়েমেনবাসী, সুসংবাদ গ্রহণ করুন যেহেতু বানু তামিম এটা গ্রহন করেনি।’’ তারা বললোঃ ‘‘দ্বীনের জ্ঞান আহরণের জন্য আমরা এসেছি এবং এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতে এসেছি।’’

আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ ‘‘আল্লাহ্ আশ-শামের দিকে আমার সম্মুখভাগ এবং ইয়েমেনের দিকে আমার পিছনভাগ রেখে বলেনঃ ‘হে মুহাম্মদ! আপনার সম্মুখভাগে আমি আপনার জন্য গনীমাহ্ (যুদ্ধলব্দ মাল) ও জীবন ধারণের উপায় রেখেছি এবং আপনার পিছনভাগে সাহায্যকারী রেখেছি। এখন পর্যন্ত ইসলাম উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং শির্ক ও মুশরিক লোক হ্রাস পাচ্ছে, যতক্ষণ না যুলুম ছাড়া অন্য কোন ভয়ে ভীত না হয়ে দু’জন মহিলা ভ্রমণ করবে। তাঁর কসম যার হাতে আমার প্রাণ, দিন-রাত অতিক্রান্ত হবে না, যতক্ষণ না এই দ্বীন তারার মতো প্রতিষ্ঠিত হয়।’’

আনাস বিন মালিক থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা) বলেনঃ ‘‘ইয়েমেনী জনতার আগমন ঘটেছে এবং তারা তোমার চেয়ে বেশি কোমল হৃদয়ের।’’ আনাস বলেনঃ ‘‘তারাই প্রথম করমর্দন করতে এগিয়ে আসে।’’

এই আয়াতের তাফসীর হচ্ছেঃ ﴾যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহ্র দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন।﴿ [১১০: ১-২]
যখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়, তখন রাসূল (সা) বলেনঃ ‘‘তোমাদের কাছে ইয়েমেনবাসীর আগমন ঘটবে। তারা হচ্ছে সবচেয়ে সমবেদনাশীল ও কোমল হৃদয়ের। ইয়েমেনে ঈমান আছে, ইয়েমেনে ফিকহ আছে, ইয়েমেনে বিজ্ঞতা আছে।’’

কোরআনে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেনঃ ﴾হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে যে স্বীয় ধর্ম থেকে ফিরে যাবে, অচিরে আল্লাহ্ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুসলমানদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে এবং কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।﴿  [৫: ৫৪]

এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাখ্যায় আইয়াদ আল-আশআ’রি বলেনঃ ‘‘এ আয়াতটি যখন নাজিল হয়, তখন আল্লাহর রসূল (সা) এর হাতে যা ছিল তা দিয়ে আবু মুসা আল-আশ’আরি দিকে ইঙ্গিত করে বলেনঃ ‘এ হচ্ছে তার সম্প্রদায়।’

শাইখ আল-ইসলাম ইবনে তাইমিয়া তার কিতাবে বলেনঃ ‘‘ ইয়েমেনীদের সহায়তার ব্যাপারে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ বলেনঃ ﴾আল্লাহ্ এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে﴿  আবু বক্কর ও ওমর এর সময় আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য ইয়েমেনী থেকে মানুষের ঢল নেমে আসছিল।

সুতরাং সেই মানুষদেরকে সম্ভাষণ জানাই যারা সহায়তা করেছিল, সম্ভাষণ জানাই তাদেরকে যারা তাদেরকে সাহায্য করেছিল এবং সম্ভাষণ জানাই তাদের বংশধরদেরকে যাদের দাওয়াহ, জিহাদ এবং তাওহীদের পতাকার পুনরুভ্যুদয়ের কারণে আজ আমরা সন্তুষ্ট।

ইয়েমেনী মুজাহিদদের খবর আমাকে পরিতুষ্ট করে। এই হক্বের পতাকা উড্ডয়নের ফলে আজকাল এ সর্ম্পকিত খবর প্রকাশিত হচ্ছে। তাদেরকে সহায়তা করার জন্য অন্যদের উদ্বুদ্ধ করা, তাদেরকে সাহায্য করার জন্য মানুষকে এ পথে ডাকা এবং লোকবল বৃদ্ধি করার চেষ্টা করার মাধ্যমে আমি পরিতুষ্ট হই।

(ইয়েমেনবাসীর) আরো বৈশিষ্ট্যে বর্ণনার ক্ষিত্রে ইয়েমেনের শাইখ আশ-শাওকানি বলেনঃ ‘‘হাদীসে বর্ণিত এ আয়াতের ব্যখ্যায় যদি আপনি বুঝতে পারেন যে, এই আয়াতটি তাদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে, তবে জেনে রাখবেন যে এতে ইয়েমেনবাসীর বৈশিষ্ট্যের পরিচয় আছেঃ

প্রথমটি হচ্ছেঃ ইয়েমেনবাসীর এই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ গুণাবলী যা আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এমন এক সময়ে তাদেরকে দিয়েছেন যখন আররিয়ান পেনিনসূলাতেই বসাবসকারী আরবের অন্যান্য গোত্র মুরতাদ অবস্থায় থাকবে। এটা দ্বীনের ক্ষিত্রে তাদের উঁচু মর্যাদার পরিচয় বহন করে যেখানে তারা হচ্ছে হিযবুল্লাহ্ (আল্লাহর দল) অথচ অন্যান্যরা দ্বীন থেকে ফারেগ (ত্যাগ) হয়ে যাচ্ছে।

দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যঃ আল্লাহ্ বলেনঃ ﴾যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে﴿। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার পক্ষ থেকে এর চেয়ে বেশি উচ্চ মর্যাদা ও ইজ্জত আর হতে পারে না, কারণ যাদেরকে আল্লাহ্ ভালবাসেন তারা এমন সাকিনা (প্রশান্তি) অর্জন করে যার সদৃশ আর কিছু হতে পারে না। তারা এমনভাবে সম্মানিত হয় যা কোন কিছু দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। তারা এমন জিনিস অর্জন করে যার সমতুল্য অন্যান্যরা অর্জন করতে পারে না। তাদেরকে এমন সুখ্যাতি দান করা হয় যার সমকক্ষ কিছু নেই।

তৃতীয় বৈশিষ্ট্যঃ আল্লাহ্ বলেনঃ ﴾এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে﴿। এটা একটি উল্লেখযোগ্য মর্যাদা এবং চমৎকার বৈশিষ্ট্য। যখন একজন তুচ্ছ বান্দা তার রব-কে ভালবাসে তখন সেটাই হচ্ছে ঈমানের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য যে কারণে সে চিরন্তন সুখ (অর্থাৎ জান্নাত) অর্জন এবং (জাহান্নামের) কঠিন আযাব থেকে মুক্তি পেতে পারে। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালাকে ভালবাসার এই গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য অর্জন করা যাবে আল্লাহর রাসূল ﷺ এর কথা, কাজ, তার অনুসরণ এবং তার মাধ্যমে আনীত হেদায়াত গ্রহণের মাধ্যমে।

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা বলেনঃ ﴾বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহ্ ও তোমাদিগকে ভালবাসেন এব্ং তোমাদিগকে তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ্ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।﴿ [৩: ৩১]। সুতরাং, যে আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূল (সা) -কে ভালবাসে সে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালার ভালবাসা অর্জন করতে পারে। তাদের গুনাহ্গুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং ঈমানদার বান্দাদের মধ্যে তাদের মর্যাদা উন্নীত করা হবে।

চতুর্থ বৈশিষ্ট্যঃ আল্লাহ্ বলেনঃ ﴾তারা মু‘মিনদের প্রতি বিনয়-নম্র হবে﴿। ঈমানদারদের প্রতি এই বিনয়-নম্রতা হচ্ছে সবচেয়ে সম্মানিত বৈশিষ্ট্য। মু’মিনদের জন্য এটি হচ্ছে সবচেয়ে মর্যাদাসম্পন্ন গুণাবলী। এটা সেই বিনয়-নম্রতা যে ব্যাপারে আল্লাহ্ প্রশংসা করেছেন। এটা সম্পাদনকারীর মর্যাদা বৃদ্ধি করে। এটা খারাপ বৈশিষ্ট্য যেমন তাকাববুর (অহঙ্কার) এবং গুরুর (স্বার্থপরতা) -এর মূলোৎপাটন করে।

পঞ্চম বৈশিষ্ট্যঃ আল্লাহ বলেনঃ ﴾কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে) এটা দ্বীনের উপর দৃঢ় থাকা, কড়াভাবে তা মেনে চলা, শত্রুদের প্রতি ঘৃণা পোষণ করা এবং যারা দালালায় (পথভ্রষ্টতা) আছে তাদের প্রতি কঠোর হওয়ার মাধ্যমে এই বৈশিষ্ট্য অর্জন করা সম্ভব।

ষষ্ঠ বৈশিষ্ট্যঃ আল্লাহ্ বলেনঃ ﴾তারা আল্লাহ্র পথে জিহাদ করবে।﴿ বস্তুত শরী’য়তের দায়িত্বগুলোর মধ্যে জিহাদ হচ্ছে চূঁড়া। এর মাধ্যমে দ্বীনের খুঁটিগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়, দ্বীনের মর্যাদা উন্নীত হয়, এবং ইসলামের গন্ডি বৃদ্ধি পায়। কুফর ও এর ভিতগুলো ধ্বংস হয়।

সপ্তম বৈশিষ্ট্যঃ আল্লাহ্ বলেনঃ ﴾এবং কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারে ভীত হবে না।( এটি বিশুদ্ধতার একটি বিষয়। শুধু আল্লাহর জন্য অটল থাকা। যারা সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে ও দ্বীনের ব্যাপারে মতভেদ করে, সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করা। (আরবি ভাষাতে) এটা না-বোধকের ক্ষেত্রে ইনডিফিনিট নাউন (indefinite noun) হিসাবে এসেছে। সুতরাং এতে সকল তিরস্কারের তিরস্কার রয়েছে, হোক সেটা অগ্রগন্য অথবা নগন্য, কাছের অথবা দূরের। এই বৈশিষ্ট্য থেকে তাদের আমর বিল মা’য়রুফ ওইয়ান হা নিল মুনকার (ভাল কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ) -এর বাস্তবে আমল এতটাই সুউচ্চ বুঝায় যা কোন পাহাড়ও অতিক্রম করতে পারে না। এবং এটা কোন ভীতির মাধ্যমে ভীত-সন্ত্রস্ত হয় না।

যখন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এই আয়াতে [৫: ৫৪] তাদের জন্য এইসব সম্মানিত বৈশিষ্ট্যগুলো একত্রে করলেন, তখন তিনি তাঁর এই দয়া ও অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেনঃ ﴾এটি আল্লাহর অনুগ্রহ -তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ্ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।﴿ তিনি তাঁর এই সকল নেয়ামত একত্র করেছেন যা তাঁর অন্যান্য বান্দাদেরকে প্রদান করেননি , কারণ এর মধ্যে উপলক্ষ রয়েছে। এই উপলক্ষ হচ্ছে যারা তাদের মতো এই মহৎ গুণাবলী অর্জন করতে চায় অথবা তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করতে চায় অথবা (ভাল উদ্দেশ্যে) তাদের প্রতি ঈর্ষা পোষণ করে, এটা যেন তাদের প্রত্যাশারই জবাব।’’

সুতরাং এই বৈশিষ্ট্যের পর মানুষ আর কিসের জন্য প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে? হে আল্লাহর রাসূলের (সা) সাহায্যকারীর উত্তসূরীরা! দ্বীনের সাহায্যের ক্ষিত্রে তোমাদের পূর্বসূরীদের অনুসরণ কর। এমন এক সময়ে তাওহীদের পতাকাকে উঁচু কর, যখন মানুষেরা বিশ্বাসঘাতকতাপূর্বক তাওহীদ ও দ্বীনের ব্যাপার পরিত্যাগ করছে। যদিও সবাই তোমার বিরুদ্ধে ফন্দি আঁটে ও চক্রান্ত করে তথাপি এই অশেষ নেয়ামত ও উল্লেখযোগ্য খ্যাতি অর্জনের পর তোমার আর কি ক্ষতি হতে পারে?

সুতরাং, দ্রুত নিজেকে প্রস্তুত করো। হয়তো আল্লাহ্ তোমার মাধ্যমে উম্মাহর বর্তমান এই কষ্ট লাঘব করবেন যেমনটি পূর্ববর্তীদের দিয়ে তিনি নবী (সা) এর কষ্ট লাঘব করেছিলেন। সম্ভবত সর্বশক্তিমান তোমার মাধ্যমে এই দ্বীনের বিজয় দান করবেন। আল্লাহর পথে আনসার হয়ে যাও যেমনিভাবে তোমার পূর্বসূরীরা তাঁর রসূল (সা) কে সাহায্য করেছিল এবং আল্লাহর পথে আনসার হয়েছিল। হয়তো তিনি তোমার মাধ্যমে সমকালীন মুরতাদদের (স্বধর্মত্যাগী) উৎক্ষাত করাবেন এবং তোমার জন্য জমিনকে উন্মুক্ত করে দিবেন, যেমনটি তোমার পূর্বপুরুষেরা প্রথম মুরতাদদের বিরুদ্ধে করেছিল এবং তাদের জন্য জমিনকে উন্মুক্ত করা হয়েছিল।
হে আল্লাহ্, ইসলাম ও মুসলিমদের রক্ষাকারী! আপনার একত্ববাদে বিশ্বাসী বান্দাদেরকে বিজয় দান করুন আপনার শাম ও ইয়েমেনে, পূর্ব এবং পশ্চিমে। হে আল্লাহ্, তাদের পথকে একত্রিত করুন এবং আপনার পথে লড়াইয়ের ক্ষিত্রে ও আপনার কালিমাকে উঁচু করার ক্ষেত্রে তাদের হৃদয়গুলোকে এক করে দিন। তাদেরকে শক্তিশালী করুণ এবং (দ্বীনের উপর) তাদের ইসতেকামত (দৃঢ়) রাখুন। তাদের সাথে আমাদেরকে মিলিত করুন। আমাদেরকে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন যাদেরকে আপনি ভালবাসেন এবং যারা আপনাকে ভালবাসে।