JustPaste.it

উসামা মিডিয়া পরিবেশিত

আমিরুল মুমিনিন মোল্লা আখতার মুহাম্মাদ মনসুর রহিমাহুল্লাহর শাহাদাত উপলক্ষে হারাকাতুল মুজাহিদিন আশ শাবাবের একটি বিবৃতির বাংলা অনুবাদ

শিরোনামঃ

খোরাসানঃ জিহাদ ও শাহাদাতের ঝর্ণাধারা !

 

 

সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার জন্য। সর্বোত্তম সালাত ও সবচে’ পরিপূর্ণ সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও সকল সাহাবায়ে কেরামের উপর।

فَلْيُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالْآخِرَةِ ۚ وَمَنْ يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيُقْتَلْ أَوْ يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا

কাজেই আল্লাহর কাছে যারা পার্থিব জীবনকে আখেরাতের পরিবর্তে বিক্রি করে দেয় তাদের জেহাদ করাই কর্তব্য। বস্তুতঃ যারা আল্লাহর রাহে লড়াই করে এবং অতঃপর মৃত্যুবরণ করে কিংবা বিজয় অর্জন করে, আমি তাদেরকে মহাপুণ্য দান করব। সুরা নিসা-৭৪

শহীদ সাইয়েদ কুতুব রহ. فَلْيُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন , ইসলাম একমাত্র এ পথেই জিহাদ করার কথা বলে এবং তার অনুসারীদের শুধু  এ পথেই জিহাদ করা শেখায়। না, গনীমত লাভের জন্য কিতাল শিখায় না , প্রভাব বিস্তারের জন্য কিতাল শিখায় না। ব্যক্তিগত মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, কোন গোত্র বিশেষের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা , কোন অঞ্চলের উপর ক্ষমতা বিস্তার , কিছু বাড়ী-ঘর দখল, কিছু কল-কারখানা দখল, বানিজ্য বাজার, অর্থনৈতিক খাত এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যবসায়ী প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি ইত্যাদি সহ  পার্থিব কোন উদ্দেশ্যেই ইসলাম জিহাদ ও কিতালের কথা বলেনা। কোন ব্যক্তি, কোন  পরিবার, কোন গোত্র, কোন জাতি বা কোন উম্মতের ‍প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা কখনোই ইসলামী জিহাদের উদ্দেশ্য নয়। ইসলামে জিহাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হল – আল্লাহর যমীনে আল্লাহর কালিমা বুলন্দ করা। মানবজীবনে আল্লাহর দেয়া শ্বাষত জীবন বিধান বাস্তবায়ন করা। ঐশী বিধানের কল্যাণভূমে মানব সমাজকে স্বাধীনভাবে বিচরণের সুযোগ করে দেয়া। মানব জাতির প্রতিটি স্তরের কাছে ইসলামী শাষনের অনাবিল সুশান্তি পৈাছেঁ দেয়া। কোন একজন মুসলমান যখন এই মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে জিহাদের ময়দানে বের হয়, এর পর সে কাফেরের হাতে বা অন্য কোনভাবে মৃত্যু বরণ করে, কোরআনের ভাষায়- হাদিসের ভাষায় তখনই সে লাভ করে ‘শহীদ’ নামের সেই মহান উপাধি। আল্লাহ তা’য়ালার কাছে সে শাহাদাতের পবিত্র মর্যাদা লাভ করে। কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী এই মহান আত্মাগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে অর্জন করে এক অপার্থিব অনিশে:ষ মর্যাদা; যার তুলনা আর কোন কিছুতেই হতে পারেনা। এ মর্যাদার সামনে মৃত্যুভীতি কখনো বাধা হতে পারেনা । জীবনের মায়া তখন তাকে কিছুতেই ফিরিয়ে রাখতে পারেনা। বেঁচে থাকলে গনীমত পাবে এই লালসা তার মনের ধারে কাছেও আসতে পারেনা। সে তো ছুটতে থাকে শাহাদাতের নেশায়, শহীদী মৃত্যুর পিপাসায়। খোজঁতে থাকে আপন মৃত্যুকে, যেখানেই সে মৃত্যুর ঘ্রাণ পায় ছুটে যায় তীব্র নেশায়। আমরা মনে করি, নিষ্ঠাবান প্রতিটি মুমিন তার হৃদয়ের গভীরে শাহাদাতের ব্যাপারে এই প্রেরণা এবং এমন চেতনাই লালন করে।

আমরা এই চেতনার আলোকে আমাদের মুসলিম উম্মাহ এবং উম্মাহর সংরক্ষক তাওহীদ ও জিহাদের সন্তানদের প্রতি আজ একটি বার্তা নিয়ে উপস্থিত হয়েছি। আমরা আজ আপনাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছি একটি শোকবার্তা ও কিছু শোকগাথা নিয়ে। আমাদের প্রাণ প্রিয় আমীরুল মুমিনীন মোল্লা আখতার মানসুর রহ. এর শাহাদাতের বার্তা নিয়ে। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি আল্লাহ তায়ালা শহীদ আমিরুল মুমিনীনের পরিবার-পরিজনদের সবরে জামিল এখতিয়ার করার তাওফীক দান করুন। আমরা আমীরুল মুমিনীনকে হারিয়ে মর্মাহত ও শোকার্ত। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন ।

কবিতা  

আমিরুল মুমিনীন মোল্লা আখতার মানসুর রহ. মিলিত হয়ে গেছেন মোবারক সেই শহীদী কাফেলার সাথে, যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করে একের পর এক নিজেদের জীবন শপে দিয়েছেন মহান আল্লাহর হাতে খোরাসানের পর্বত সারীর মধ্য হতে যুগে যুগে এই পর্বতসারী কত মহান ব্যক্তিদের প্রত্যক্ষ করেছে যারা ইতিহাসের বাকে বাকে দ্বীনের সাহায্যে অবিস্মরনীয় অবদান রেখে গেছেন

সর্বপ্রথম এই মোবারক ভূমিতে আগমন করেন উম্মাহর  সোনালী জামাত। সাহাবায়ে রাসুলের জিহাদী জামাত। এই পর্বতসারীর মাঝ থেকেই জন্ম নেন শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদদের  এক মহান জামাত। মুজাহিদ আলেমদের এক বিশাল জামাত। যেমন ইমাম বুখারী, ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক সহ যুগশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের এক মহান কাফেলা। ইসলামের পুনরুত্থানের এ যুগেও বিজয়কাঠি যারা সর্বাগ্রে হাতে নিতে পেরেছে তারা এই খোরাসান জাতিই। সারা পৃথিবীব্যাপী ইসলাম ও মুসলমানদের দুর্দশায় সর্বপ্রথম তারাই  হাতে তুলে নিয়েছে জিহাদের পতাকা। তারাই রচনা করেছে উম্মাহর মুক্তির পথ। পূণর্বার তারাই জীবিত করেছে জিহাদ ও শাহাদাতের ফরীজা। এই ভূমিতেই গড়ে উঠেছে জিহাদ ও শাহাদাতের মহান কাফেলাসমুহ। শানিত হয়েছে রিসালাতের আনিত তরবারী। উড্ডীন হয়েছে কিতাল ফি সাবিলিল্লাহর বিজয়ী ঝান্ডা। শাহাদাতের এই পর্বতউদ্যান থেকেই পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছে জিহাদী কাফেলা। পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে যারা আজ ইসলাম ও মুসলমানদের মুক্তির জন্য জিহাদের ফরীজা আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছে তারা এই খোরাসানের পর্বতমালারই জীবন্ত সন্তান। হ্যাঁ হ্যাঁ আজ পৃথিবীর দিকে দিকে পবিত্র জিহাদের যে সুবাতাস বইছে, শুহাদায়ে উম্মতের যে আলোর মিছিল চলছে- তার সুচনা হয়েছিল এই পর্বত সারীর মধ্য হতেই। এই ভূমিতেই তৈরী হয়েছিল সমকালীন আলমী জিহাদের মহান নেতাগন। শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম রহ. আল ইমামুল মুজাদ্দিদ শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা বিন লাদেন রাহ. বীর মুজাহিদ খাত্তাব শিশানী রহ. প্রখ্যাত ফকীহ মুজাহিদ আতিয়্যাতুল্লাহ ও আবু ইয়াহয়া আল লিবী রহ., শায়খ আবু মুসআব আয যারকাভী রহ. শায়খ আবু হামযা আলমুহাজির রহ. শায়খ নাসের আলওহাইশী রহ. কায়েদ আদম ঈরু রহ. শায়খ আবুয যুবাইর মুখতার আস সুমালী রহ. সহ জিহাদী ভূখন্ডের সব ক্ষণজন্মা ব্যক্তিবর্গ এই ভূমিতেই গড়ে উঠে ছিলেন।  

শায়খ উসামা রহ. প্রায়ই বলতেন – “সমকালীন জিহাদে মুসলিমরা আফগান জাতির কাছে ঋণি আর আরবরা শায়খ আব্দুল্লাহ আযযামের কাছে ঋণি। আল্লাহ শায়খ আব্দুল্লাহ আযযামকে উম্মাহর পক্ষ হতে সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন। আর আফগান জাতির জাযা আল্লাহ নিজ হাতেই দান করুন”।

মোল্লা আখতার মানসুর রহ. এর জীবনটা ছিল ইসলামী ইতিহাসের একটি সোনালী অংশ। উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য তার জীবনে ছিল একটি অনুপম আদর্শ। আমীরুল মুমিনীন রহ. সর্ব প্রথম রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জিহাদে যোগদান করেন। এই মোবারক জিহাদে তিনি দশবারের অধিক আহত হন। রাশিয়ার পতনের পর যখন মুজাহিদ গ্রুপগুলোর মাঝে পারস্পরিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে তখন তিনি এই ফিতনা থেকে সম্পূর্ণ দূরত্বে অবস্থান করেন। এক্ষেত্রে তিনি অন্যায় রক্তপাত ঘটানো থেকে বাচাঁর জন্য রাসূলের সা এই হাদীসটির উপর আমল করেন- রাসুল সা ফিতনার সময়ের ব্যাপারে বলেন – যে এখান থেকে বাচাঁর সামান্যও কোন মাধ্যম পাবে সে যেন তাই অবলম্বন করে।

আর তালেবান আন্দোলন গড়ে উঠার পর মোল্লা আখতার মানসুর রহ. জিহাদী কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ্ অবদান রাখেন। তখন তার উপর ময়দানের গুরুত্বপূর্ণ্ কয়েকটি দায়িত্ব অর্পন করা হয়। এরপর এক পর্যায়ে তাকে আমীরুল মুমিনীন মোল্লা ওমরের নায়েব হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এই পদে তিনি দীর্ঘ্ দিন দায়িত্ব পালন করেন।  এর পর মোল্লা ওমর রহ. এর ওফাতের পর তিনি মজলিসে শুরার ফায়সালা মোতাবেক ‘আমীরুল মুমিনীন’ ঘোষিত হন। তিনি ইমারাতে অধিষ্ঠিত হবার পর হতে ক্রুসেডার বাহিনী ও মুরতাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর আক্রমণ শুরু করেন। তিনি ইমারাতে ইসলামিয়ার হামলার ধারাবাহিকতার মাঝে বিদ্যুত গতি সঞ্চার করেন। মুজাহিদদের মাঝে ব্যাপকতর প্রতিশোধ স্পৃহা জাগিয়ে তোলেন। সারা আফগান জুড়ে জিহাদের এক নতুন উদ্যম ও নব আয়োজন শুরু হয় । মুরতাদদের শক্তি খসে খসে পড়তে থাকে। ক্রুসেডারদের মাঝে ভয়াবহ ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ এক যুগের আফগান জিহাদে তারা মুজাহিদদের হামলার যে ভয়াবহতা দেখেছে তিনি মাত্র অল্প  ক’দিনে তাদেরকে তারচে কয়েকগুন বেশি ভয়াবহতা দেখিয়ে দেন। আল্লাহ তায়ালা আমীরুল মুমিনীনকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে সমাসীন করুন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ

যুদ্ধে অনুমতি দেয়া হল তাদেরকে যাদের সাথে কাফেররা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। নিশ্চই আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে সুরক্ষা দান করেন। সুরা হাজ-৩৯

ইবনে কাসীর রহ. এই আয়াতের তাফসীরে বলেন- আল্লাহ তায়ালা সংবাদ দিচ্ছেন যে, যেসব বান্দারা আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা করবে আল্লাহ তায়ালার প্রতি মনোনিবেশ করবে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে সব ধরণের অনিষ্টতা ও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র থেকে হিফাযত করবেন। আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে হেফাযত করবেন, তাদেরকে সাহায্য করবেন।

আল্লাহ তায়ালা  আরো বলেন- আল্লাহ  কি তার বান্দার জন্য (সাহায্যকারী হিসেবে) যথেষ্ট নন। যুমার ৩৬ .

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-

وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ ۚ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا

যে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য যথেষ্ট। নিশ্চই আল্লাহ তায়ালা তার কার্য্ পুর্ণ্ করবেন। আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি বস্তুর জন্য একটি পরিমাণ বা একটি সময় নির্ধারণ করে রেখেছেন। সুরা তালাক , আয়াত: ৩

ইমাম আহমদ রহ. বলেন- তোমরা বেদআতিদেরকে বলে দাও- আমাদের মাঝে আর তোমাদের মাঝে পার্থক্যকারী হলো জানাযার ‍দিবস। কারণ দুনিয়াতে পার্থিব উপকরণের ক্ষেত্রে সবাই একটি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে। অধিকন্তু পাপাচারীদের বাহ্যিক অবস্থা অনেক সময় ভালো হয়ে থাকে। তবে মৃত্যুর সময়টিই হল সঠিক ও প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ পাওয়ার সময়। আল্লাহ তায়ালা মোল্লা আখতার মানসুর রহ. রহম করুন তার শাহাদাত ও ছিল আল্লাহ তায়ালার একটি নিদর্শন।

আমরা ইমারাতে ইসলামিয়ায় আমাদের মুজাহিদ ভাইদের প্রতি এবং তালেবান সেনাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে বলছি – আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করছি তিনি আপনাদের অন্তরের ক্ষতগুলো সুস্থ করুন। আপনাদের জিহাদ কবুল করুন । আপনাদের মেহনতে বরকত দান করুন। আপনাদের বিজয় তরান্বিত করুন। আপনাদের শত্রুদের পরাজিত করুন। মুসলিম উম্মাহ আপনাদের মাঝে সর্বদা দেখে আসছে – শরীয়ত বাস্তবায়নের আকাঙ্খা, দ্বীনকে মজবুত ভাবে আকঁড়ে ধরা, শত্রুদের বিরুদ্ধে সদা ময়দানে অটল থাকা, মাজলুম মুসলমানদের সাহায্য করা, দ্বীনের জন্য হিজরতকারীদের আশ্রয় দেয়া এবং আল্লাহর দ্বীনের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ ও দুনিয়া বিমুখ জীবন অবলম্বন করা। আল্লাহ তায়ালা ইসলাম এবং সমগ্র মুসলমানদের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।

জিহাদের পথে আপনাদের অটলতা ও অবিচলতা শরীয়ত প্রতিষ্ঠার অদম্য স্পৃহা, বিচ্ছিন্নতা ও বিবেধ পরিহার করে নিজেদের মাঝে ঐক্য টিকিয়ে রাখার কারণে আমরা আপনাদেরকে মোবারকবাদ জানাই। কারণ এগুলোই হল বিজয়ের চাবিকাঠি আর এর বিপরীত হল পরাজয়ের মূল কারণ।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖ وَاصْبِرُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ

হে ঈমানদারগণ, তোমরা যখন কোন বাহিনীর সাথে সংঘাতে লিপ্ত হও, তখন সুদৃঢ় থাক এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর যাতে তোমরা উদ্দেশ্যে কৃতকার্য হতে পার। আর আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা`আলা রয়েছেন ধৈর্য্যশীলদের সাথে। সুরা আনফাল-৪৫-৪৬

ইবনুল কাইয়ুম রহ. এ আয়াতের তাফসীরে বলেন- আল্লাহ তায়ালা এই আয়াতে মুজাহিদদেরকে পাঁচটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। এই পাঁচটি বিষয় যে জামাতের মাঝে পাওয়া যাবে তারা অবশ্যই বিজয়ী হবে। তাদের সংখ্যা যতই স্বল্প হোক আর তাদের  শত্রু সংখ্যা যতই বেশী হোক।

এক = অবিচলতা

দুই = অধিক পরিমানে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করা।

তিন = আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসূলের আনুগত্য।

চার = নিজেদের মাঝে ঐক্য ধরে রাখা। এবং বিভেদ সৃষ্টির সকল পথ পরিহার করা। শত্রু পক্ষ সর্বদা চায়  এই একটি পথ ধরে তার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে। কিন্তু তারা যদি তাদের মাঝে সর্বদা ঐক্য টিকিয়ে রাখে তাহলে তারা যেন এনেকগুলো  তীরের সমষ্টি। যাকে একত্রে রাখা অবস্থায় কখনই ভাঙ্গা সম্ভব নয়। কিন্তু যখন তা খুলে একটা একটা তীর পৃথক করা হয় তখন যে কারো জন্য সবগুলো তীর ভাঙ্গা সম্ভব।

পাঁচ = এই সবগুলোর মাঝে প্রধান যে গুনটি তা হলো সবর ও  ধৈর্য। এই পাঁচটি স্তম্ভের  উপরই সাহায্য মিনারের ভিত্তি। যদি কোন জামাত হতে এই সবগুলো গুন বিদায় নেয় তাহলে তারা পুরোপুরি আল্লাহর সাহায্য হতে বঞ্চিত হয়। আর যদি কিয়দাংশ ছুটে যায় তাহলে যতটুকু ছুটে যাবে তারা ততটুকুই সাহায্য থেকে বঞ্চিত হবে। আর  যে জামাতের মাঝে এই সবগুলো গুন পাওয়া যাবে তারা আল্লাহর সাহায্য পাপ্তির ক্ষেত্রে অন্যদের জন্য  উজ্জল  দৃষ্টান্ত হবে। সাহাবাদের মাঝে যখন এই ‍গুনগুলো একত্রিত হয়েছিল তখন পৃথিবীর কোন শক্তিই তাদের মোকাবেলা করতে পারেনি। সারা পৃথিবীকে তারা পদানত করে ছেড়েছে। সকল জাতি ও সকল শক্তি তাদের সামনে নতি শিকার করেছে। আর তাদের পরবর্তিদের মাঝে যখনই এই গুনগুলো বিদায় নিতে শুরু করেছে তখন ধীরে ধীরে তারা আল্লাহর সাহায্য হারাতে বসেছিল। এক পর্যায়ে তারা যে অবস্থানে পৈাঁছেছে তা তো  আমাদের সকলের জানা।

আমার প্রিয় ভাইয়েরা ! আপনাদের জানা থাকার কথা যে আল্লাহর পথে শাহাদাত এটা একটি সুসংবাদ এবং খোদাপ্রদত্ত মর্যাদা। যার জন্য আল্লাহ তায়ালা তার বিশেষ বান্দাদেরকে নির্বাচিত করেন। না, এটা কখনোই পরাজয় কিংবা ব্যার্থতা নয়। কারণ পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ মানব আল্লাহর প্রিয় হাবীব বার বার এই শাহাদাতের তামান্না পোষণ করেছেন। নিজের জন্য  এবং উম্মতের জন্য।

আল্লাহর রাসুল সা. বলেন- হে আল্লাহ! আমার ‍উম্মতের মৃত্যু দান করুন আপনার পথে শাহাদাতের মাধ্যমে। হয়তো শত্রুর আঘাতে অথবা আপনার পথে মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে। --মুসনাদে আহমাদ

রাসূল সা আরো বলেন- ঐ সত্তার শপথ যার হাতে আমার জান আমার আশা আমি আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণ করবো এরপর আমাকে জীবিত করা হবে এরপর আবার শহীদ হবো। এরপর আবার জীবিত করা হবে এর পর আবার শহীদ হবো এরপর আবার জীবিত করা হবে এরপর আবার শহীদ হবো। ---সহীহ বুখারী

হে প্রিয় উম্মাহ! আপনাদের জেনে রাখা উচিৎ - কোন আমিরের শাহাদাত কোন নেতার বিয়োগের কারণে কখনো জিহাদ বন্ধ যায়নি। আল্লাহ তায়ালার সাহায্যের ধারা থেমে থাকেনি। না কখনো এমন হয়নি। বরং আমাদের এই মোবারক জিহাদের ধারা তো সদা চলমান। যা অব্যাহত গতিতে কিয়ামত অবধি চলবে। যতক্ষণ না কুফুর নিশে:ষ  হয়ে সারা পৃথিবীব্যাপী আল্লাহর দ্বীন কায়েম হয়।

রাসূল সা. বলেন- আমার উম্মতের একটি জামাত সর্বদা হকের ‍উপর থেকে জিহাদ পরিচালনা করে যাবে। তারা তাদের শত্রুদের উপর বিজয়ী থাকবে । তাদের বিরোধিতাকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। এই অবস্থা কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। সহীহ মুসলিম।

ইতিহাস সাক্ষী যে, রাসুল সা. এর পর আজ পর্যন্ত কোন একটি যুগ ও এই মোবারক জামাত থেকে শুন্য ছিলনা। প্রতিটি যুগেই আল্লাহর এমন কিছু সিংহ ছিল যারা তাদের সব কোরবান করে দ্বীনের পতাকাকে সমুন্নত রেখেছে। মানুষ তাদের প্রতিজনের ব্যাপারেই এমন ধারণা করতো যে তিনিই একমাত্র প্রথম ব্যক্তি যিনি এমন মহান অবদান রাখছেন। তার পূর্বে তার মত কেউ অতিবাহিত হয়নি। এমন ব্যক্তিদের আবির্ভাব প্রতি যুগেই ছিল। সুতরাং কোন আমীরের শাহাদাতের ফলে আমাদের ঘাবড়ানোর  কোন কারণ নেই। কারণ এটা কখনোই জিহাদের অগ্রগতি ও বিজয় ধারার পথে  সামান্যও বাধা হয়ে দাড়াঁবেনা। হ্যাঁ যেই বস্তুটি বিজয় ও সফলতার পথে বাধা হতে পারে তা হল – মানহাজ থেকে বিচ্যুতি, সুন্নাহ থেকে পদস্খলন, আল্লাহর মনোনিত পথ থেকে সরে যাওয়া। দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি।

রাসূল সা বলেন- তোমরা দ্বীনের মাঝে গুলু ( বাড়াবাড়ি ) করা থেকে বিরত থাক। কারণ তোমাদের পূর্ববর্তীরা এই গুলুর কারণেই হালাক হয়ে গিয়েছে।

অবশেষে আমরা আল্লাহ তায়ালার কাছে পার্থনা করছি, হে আল্লাহ! আমাদের কায়েদীনদের কে তুমি হেফাযত কর। আমাদের সকলের আমীর ও মুরুব্বী হাকিমুল উম্মাহ আইমান আয যাওয়াহিরী সহ আমাদের সকল মুজাহিদ ভাইদেরকে তোমার খাস নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে নাও।

হে আল্লাহ ! হে কিতাব অবতীর্ণকারী, মেঘমালা পরিচালনাকারী, সকল দলকে পরাজিতকারী, আপনি কাফের ও মুরতাদদেরকে পরাজিত করুন!

হে আল্লাহ ! এই উম্মতের জন্য হেদায়াতের ফায়সালা করুন। যাতে তাদের মাঝে আপনার অনুগত দের সম্মান করা হয় আর আপনার অবাধ্যদের অপমান করা হয়। যাতে তাদের মাঝে জীবন্ত থাকে আমর বিল মারুফ আর নাহি আনিল মুনকারের মহান আমল ।

رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ

হে আমাদের পালনকর্তা! মোচন করে দাও আমাদের পাপ এবং যা কিছু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে আমাদের কাজে। আর আমাদিগকে দৃঢ় রাখ এবং কাফেরদের উপর আমাদিগকে সাহায্য কর।

সুরা আল ইমরান-১৪৭

নির্বাহী কমান্ড

হারাকাতুশ শাবাব আল মুজাহিদিন

সোমালিয়া

 

Your Brothers at



আপনাদের নেক দুয়ায় আমাদের ভুলবেননা!