JustPaste.it

তাকফির সংক্রান্ত কিছু উপদেশ – শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ

 

আমি আমার ভাইদের বলি আহ্‌লুস সুন্নাহ এর রীতি হল যে, যদি  কোন ব্যক্তি ইসলামে নিশ্চিত ভাবে প্রবেশ করে, সে ইসলাম থেকে বেরিয়ে যায় না ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না সেটা (তার বেরিয়ে যাওয়া) নিশ্চিত হয়। মুসলমানদের মূল পরিচয় হচ্ছে  যে তারা মুসলিম, তাই একে অপরকে তাকফির করা তাদের জন্য জায়েয নয়, বরং এটা খাওয়ারিজদের আক্বিদা এবং আল্লাহ্‌র চেয়ে শক্তিশালী ও ক্ষমতাধর কেউ নেই।

একটি সহীহ হাদিসে এসেছে আমাদের নবী (সাঃ) বলেনঃ
“যদি কেউ তার ভাইকে যদি  ‘ও কাফের’ বলে সম্বোধন করে, তাহলে সে যেন নিজের উপর এই শব্দ আরোপ করল”।


যাকে কাফের বলা হল সে যদি আসলেই কাফের হয় তাহলে এটা তার উপর বর্তাবে, সে একজন কাফের। যদি সে কাফের না হয় তাহলে যে এটা বলল (তাকফিরকারী) তার উপর বর্তাবে। তাই এটা এসব বিষয়ে ভুল করার ব্যাপারে মারাত্বক, অনেক অনেক অনেক বড় সতর্ক সংকেত, বিশেষভাবে ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাকফির করার ক্ষেত্রে।
তাই আল্লাহকে ভয় করুন এবং জেনে রাখুন আমরা আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে যে বিজয়ের প্রত্যাশায় আছি তার জন্য আমাদেরকে আল্লাহ্‌র কাছে ধৈর্য ও তাক্বওয়া প্রদর্শন করতে হবে । কিন্তু যদি আপনি ধৈর্যশীল ও তাকওয়াবান হন তাহলে তারা আপনার নূন্যতম ক্ষতিও করতে পারবে না, যা তারা পরিকল্পনা করে রেখেছিল।
সুতরাং সতর্ক হোন এবং সতর্ক হোন কারণ মানুষের উপর তাকফির করা অনেক বড় বিপদজনক পাপ তাই আপনার জিহ্বার হেফাযত করুন।
এবং সহীহ হাদিসে এসেছে, আমাদের নবী সাঃ বলেছেনঃ
“আল্লাহ তোমাদের তিনটি জিনিসে খুশী হন, তা হল তাঁর ইবাদাত করা এবং ইবাদাতে কাউকে তাঁর সাথে শরীক না করা এবং তোমরা একে অপরকে আল্লাহ্‌র রজ্জুর দিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা”।
অর্থ্যাৎ, এই ভিত্তি ছাড়া প্রথম স্তম্ভ প্রতিষ্ঠা সম্ভব না। এবং এই ভিত্তি কি? এটা হল একসাথে দলবদ্ধভাবে থাকার ভিত্তি, “তোমরা একে অপরকে আল্লাহ্‌র রজ্জুর দিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা”।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহিঃ বলেন, এই হাদিস হল ইসলামের মূলনীতি গুলো বোঝার মূলসূত্রঃ
“তা হল তাঁর ইবাদাত করা এবং ইবাদাতে কাউকে তাঁর সাথে শরীক না করা এবং তোমরা একে অপরকে আল্লাহ্‌র রজ্জুর দিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবেনা এবং তাদের প্রতি উপদেশ দাও যাদেরকে আল্লাহ্‌ তোমাদের উপর কর্তৃত্ব প্রদান করেছেন”।
তাই আপনাকে নিজেদের মাঝে এবং আপনাদের আমীরদের প্রতি পরামর্শ দিতে হবে।

“এবং তিনি তিনটি জিনিস ঘৃণা করেন, ক্বিলা ওয়া ক্বালা (অমুক অমুক বলল) এবং বেশী প্রশ্ন করা ও সম্পদের অপচয় করা”
তাই এই তিনটি (ভাল) ও ঐ তিনটি (খারাপ) জিনিসগুলোর প্রতি ভালভাবে মনোনিবেশ করুন। কেননা প্রথম তিনটি জিনিস হল দ্বীনের অপরিহার্য অংশ এবং অন্য তিনটি জিনিস হল দ্বীন ধ্বংসের কারণ। তাই ‘অমুক অমুক বলল’, এবং বেশী জিজ্ঞেস করা ও সম্পদ অপচয় করা থেকে বেঁচে থাকবেন।
যখন আমরা কথা বলি এবং আলেমদের থেকে যিনি কথা বলেন, তিনি তাকফিরের মানদণ্ড সম্পর্কে জানেন, তখন তার ভাইদের প্রতি কথা ও ব্যাখ্যা প্রদানে ভুলের কিছু নেই।

কিন্তু যারা তাকফিরকে অগ্রাহ্য করে, উদাহরণস্বরূপ এমন শাসক যে দিনে ৪০ টি কুফরী করে, তারা তাদের (এসব শাসকদের) উপর তাকফীর করা থেকে বিরত থাকে এবং বলে, কেউ এদের তাকফির করতে পারবে না, এটা হচ্ছে অন্য ধরণের (বাড়াবাড়ি), তাগুতিয় চিন্তাধারার পদ্ধতি – তারা এটা অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করে যেন শাসক যদি প্রকাশ্যে পরিষ্কার কুফরও করে কেউ যেন তাদের তাকফির না করতে পারে।

সুতরাং যাদেরকে কুর’আন ও সুন্নাহ কর্তৃক তাকফির করা হয়েছে, আমরাও তাদেরকে তাকফির করি যদি তাদের উপর সেসব হুকুম প্রযোজ্য হয়। কিন্তু তারা (কুরআন ও সুন্নাহ) যাদের নাম উল্লেখপূর্বক তাকফির করেছে, যেমন ফিরআউন এবং আবু জাহ্‌ল, তাদেরে উপর যারা তাকফির করে না তারা মু’মিন হিসেবে গণ্য হবে না।

কিন্তু অন্য লোকদের ক্ষেত্রে, তারা যদি ইসলাম বিনষ্টকারী কাজ করে থাকে, তাহলে এটি একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। কোন ব্যক্তি কোন সময় কুফরি করতে ফেলতে পারে কিন্তু অজ্ঞতার কারণে বা বলপ্রয়োগের কারণে সে কাফের হবে না। এসব অনেক নিখুঁত বিষয় যা সকল ভাই শিখতে এবং বিশেষজ্ঞ হতে পারে না।

কিন্তু আমরা এখন সাধারণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি, যেসব সরকার ইসলাম ধ্বংসকারী আমলসমূহ করছে এবং তারা এর জন্য দায়ী, দিনের পর দিন তা এদের কাছে পরিষ্কার করে তুলে ধরা সত্ত্বেও তারা জিদ করে বসে আছে এবং আল্লাহ্‌ ও তাঁর নবী সাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।

তাই আমরা ঐসব সরকারকে বলি যে তারা আল্লাহ্‌র প্রেরিত ধর্ম থেকে মুরতাদ হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু ভাই আরও বেশী এগিয়ে বলে “ হেন-তেন… তাদের প্রশংসা করে”। কিছু মানুষ অজ্ঞ, তাই আপনি হঠাৎ তাদের উপর এসব হুকুম বাস্তবায়ন করতে পারবেন না।

মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহ্‌হাবের সময় তিনি কিছু এলাকার শাসকবর্গের উপর তাকফির করেছিলেন কেননা তারা আল্লাহ্‌র নাযিলকৃত বিধানের বাইরে অন্য উপায়ে শাসন করত এবং এমন কিছু ব্যক্তিও ছিল যাদেরকে ইলমধারী বলা হতো যারা এদের (শাসকদের) সমর্থন করতো। এদের (যারা ঐসব শাসকদের অনুকূলে ও তাদের রক্ষা করত) প্রতি তাঁর দেয়া সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জবাব ছিলো যে  ‘যে আল্লাহ্‌র প্রেরিত আইন দ্বারা শাসন করে না তারা ফাসিক্ব (অবাধ্য)’।

এবং আল্লাহ্‌র অবাধ্যতা ও কুফরির মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। তাই আল্লাহ্‌কে ভয় করুন এবং এর থেকে দূরে থাকুন। প্রচুর পরিমাণে আল্লাহ্‌র যিকির ও দোআর মাধ্যমে সময় কাটান যেন আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ বুঝতে পারেন। এবং আল্লাহ্‌র শুকর গুজার করুন যেন আল্লাহ্‌র সাথে স্বাক্ষাত করতে পারি এবং তিনি আমাদের প্রতি রাজি-খুশী হয়ে যান।
কথা বলার আগেই চিন্তা করে নিন আপনার কথা দ্বারা কোন কাজ হাসিল হবে। আল্লাহ্‌র অনুগত থেকে সংগ্রাম করে যেতে হবে এবং আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ চালিয়ে যেতে হবে। এবং যেসব বিষয়ে আপনার জ্ঞান নেই সেসব বিষয়ের ব্যাপারে আল্লাহ্‌কে ভয় করুন। যাচ্ছেতাই ভাবে ফাতওয়া দেয়া তাক্বওয়ার লক্ষণ নয়, এবং আল্লাহ্‌র সমকক্ষ কোন শক্তি ও ক্ষমতা নেই।


সূত্রঃ almuwahideenmedia