JustPaste.it

শীঘ্রই আমি তোমাকে শিখাবো, কিভাবে বাজপাখি শিকার করতে হয় – শাইখ আবু মুহাম্মদ আসিম আল-মাকদিসী

 

নিঃসন্দেহে এই সময়টা আমাদের জন্যে খুবই আবেগঘন সময়, আর এখানে আমারা সারা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি, আজ কারাগারে আমাদের বন্দীরত জীবনের চতুর্থ রমজানে এসে আমরা পৌঁছেছি।

এই সময়ে মানুষ আল্লাহর যিকিরে ব্যস্ত থাকে অথবা অন্যান্য উপকারী আমলে ব্যস্ত থাকে যেন সে তার আবেগ ও স্মৃতির পাতায় হারিয়ে না যায়, বিশেষ করে আজকের এই মুহূর্তগুলোতে যখন কিনা আমার মনে এমন একটি দৃশ্য রয়েছে যা প্রতি বছর রজান মাসের প্রথম দিনটি এলেই আমার চোখে ভেসে উঠে।

খাবারের টেবিলের চতুর্দিকে বাচ্চাদের দৌড়াদৌড়ি আর আজানের জন্য অপেক্ষা, আর তাদের ইফতার প্রস্তুত করার জন্য তাদের মায়ের ইতস্তত ছোটাছুটি, যেখানে বাচ্চাদের কেউই সেই বয়সে পৌঁছায়নি যে বয়সে মানুষের উপর রোজা ফরয হয়। তবুও সকলে রোজা রাখার ব্যাপারে অতি উৎসাহী, বিশেষ করে রমজানের প্রথম দিনটিতে তো অবশ্যই।

যা কিছু নতুন, তাঁর সবটাতেই বাচ্চারা এমন উচ্ছলতা দেখায়। তারা প্রবল উৎসাহ ও উদ্দীপনার সাথে সবটুকু খাবার খেয়ে নেয়! টিক আছে….তবে, সত্যের পথে অবিচল থাকার জন্য শুধু উৎসাহই যথেষ্ট নয়, তাই নয় কি?
আমরা কারাকক্ষে ছোট্ট জানালাটা দিয়ে আমি কাহালাহ মরুভূমিতে সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য তাকিয়ে দেখছি। সূর্য তাঁর রাশ্মিগুলোকে এক আশ্চর্য পদ্ধতিতে গুটিয়ে নিচ্ছে…এবং বেশ দ্রুত, আযানের ধ্বনি নিশ্চিত করে দিচ্ছে যে সূর্যি ডুবে গেছে।
আহ…জীবটা কত ছোট!…এক ঝাঁক পাখি লাল আকাশে অসীম দিগন্তের পানে উড়ে উড়ে তাদের নীড়ে ফেরত যাচ্ছে যেখানে তাদের কচি ছানাগুলো রয়েছে, অন্ধকার নেমে আসার আগেই পৌঁছাতে হবে। মুতামিদ বিন ইবাদ কারারুদ্ধ অবস্তায় যা বলেছিলেন সেই কথাগুলো আমার বার বার মনে পরেছিল,

আল্লাহ্* বিড়ালের শাবকগুলোকে রক্ষা করেছেন,
আর আমার ক্ষুদ্র ছানাগুলো পানি ও ছায়ার কাছে প্রতারিত হলো।

এইটাই মানব প্রকৃতি, আল্লাহ্* তাদের অন্তরে স্বীয় রহমতের যে বীজ বপন করে দিয়েছেন তা নিয়ে তারা বিনত। কখনও এই রহমত মানুষকে পুরোপুরি পরাভূত করে ফেলে সে যতই কঠিন, শক্ত ও সহিষ্ণু হোক না কেন।
আমি এই স্মৃতির জাল থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেই এবং মুখ ফিরিয়ে নেই, আমার ছোট্ট কারাকক্ষের দেয়ালগুলোতে কছু কবিতার পংক্তি লিখেছিলাম সেগুলো মনে পড়ে যায়,

হে আমার ভাই, আমরা তো খারাপ কিছু আশা করি নি
মহাপরাক্রমশালী প্রতিপালকের ওয়াদার ব্যাপারে,
এই বন্দীত্ব তো আমাদের দৃঢ়তাকেই বৃদ্ধি করেছে,
আর বৃদ্ধি পেয়েছে আমাদের নিশ্চিত বিশ্বাস এই কারাগারে।

ভাইদের উপর যে নির্যাতন ঘটেছে,
আর শত শত দায়ীকে যে হত্যা করা হয়েছে,
সে তো শুধুমাত্র আমাদের ঈমানের পতাকাকেই উত্তোলন করেছে,
আম আমাদের দ্বীন ও তাওহীদের সত্যতাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

এক রবের সন্তুষ্টি অর্জন এবং এক দ্বীনকে সমর্থন করতে
এই কারাগার তো সুগন্ধময় আর মৃত্যুও সুমিষ্টরূপ,
এক মহাপরাক্রমশালী ও পরম করুণাময় রবকে খুশি করতে
এই জীবন আর সন্তান-সন্ততি সবই শূন্যের স্বরূপ।

এই মুহূর্তগুলোতে আমার শিশু ছেলে উমার এর কিছু কথা মনে পড়েছে যা অতীতের একটি রমজানে সে তার মাকে বলছিল, ‘‘আমার বাবা একজন ভালো মানুষ, আমি তাকে ভালবাসি, তাকে নিয়ে আম গর্বিত। কিন্তু আমি তাকে আমাদের সাথে দেখতে চাই, কারাগারে না।’’

তার মা তার কথার উত্তর দিতে গিয়ে তাকে পূর্বেকার কিছু ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিলো, আর আমি যেন রাতের আঁধারে সেই কথাগুলোর প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছিলাম, ‘‘উমার? এসব তুমি কি বলছো? আমি কি তোমাকে ইবরাহীম(আলাইহিস সালাম) এর ঘটনাটি বলি নি যে, তিনি যে বিষয়ের দিকে আহবান করেছিলেন সে জন্য তাঁকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল? আর মূসা ও ঈসা(আলাইহিস সালাম), আসহাবে কাহফ আর আসহাবুল উখদুদের কথাও ভুলে গেলে?”

হে উমার! এর প্রয়োজন আছে। তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই যখন আমি ছুটির দিনগুলো তোমাদের সাথে কাটিয়েছিলাম। কোথায় তোমার সেই কথাগুলো যা তুমি আমার মানহাজের(কর্ম পদ্ধতির) সমালোচনাকারীদের ব্যাপারে তোমার মাকে বলেছিলে, ‘‘আমি আমার বাবার মতো হতে চাই, আর যখন আমি বড় হবো তখন আমি সেটাই করবো যা তিনি করেছিলেন,। আর আমি স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবো।’’

আর আজকে তুমি কি বলছো? দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য কি এতই বেড়ে গেছে? যাত্রা তো সবে শুরু হয়েছে, ব্যাটা আমার। তুমি কি তুমার ছোট দুই ভাইবোনের মতো হয়ে গেছো যারা আমার কারাবন্দীত্বে অতিমাত্রায় ব্যথিত হয়ে পড়েছে? তুমি কি বিজয়ের ব্যাপারে হতাশ হয়ে এই রাস্তা পরিত্যাগ করেছো?

আমার এখনো মনে পড়ে তোমার চোখের সেই ঝলকানির কথা, যখন মধ্যরাতে আল্লাহর শত্রুরা আমাদের বাসায় হানা দেয় আর তুমি তাদের প্রতি চিৎকার করছিলে, যখন শীতের সেই রাতে তুমি হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে গেলে, আর তাদের নোংরা গলার আওয়াজ শুনে বিছানা থেকে উঠে এসে দেখলে যে, পুরো বাড়িতে তারা ছড়িয়ে আছে, প্রতিটা জিনিস আর ঘরের প্রতিটা কোণা তারা খুঁজে খুঁজে দেখছে। তাদের মধ্যে একটা কাফের তোমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘‘ তোর বাবা কই?”

তাই তুমি নিঃশঙ্ক চিত্তে চোখ ডলতে ডলতে বললে, ‘‘আমি জানি না।” অথচ তুমি খুব ভালোভাবেই জানতে যে, সে রাতে তুমার বাবা কোথায় ছিলে।
আবু হাফস, আমার এখনো মনে পড়ে, আর আমি তা কখনো ভুলবো না যে, সেই রাতে তুমি তাদের দিকে কিভাবে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলে যখন শেষবারের মতো আমি তোমাদের ছেড়ে যাই; রাতটা ছিল আমার গ্রেফতার হবার রাত। আজকের থেকে চার বছর আগে। আমার হাতে তারা হাতকড়া পরিয়ে দেয় আর চতুর্দিক থেকে আমাকে ঘিরে ফেলে, আর লাঠি আর রাইফেলের বাট দিয়ে আমাকে ধাক্কাতে ধাক্কাতে সামনে নিয়ে যায়। আমি তোমাকে বলেছিলাম, ‘‘এদেরকে ভয় পেয়ো না, এদের দ্বারা শঙ্কিত হয়ো না! এরা পোকামাকড় ছাড়া কিছুই না! এরা সব মাছি!” আমার খুব ভালোভাবেই মনে আছে যে, তোমার মনে এই কথাগুলো কিভাবে গেঁথে গেছে আর তোমার স্মৃতিতে মুদ্রিত হয়েছে, কারণ ছ’মাস পর যখন তারা আমাকে তাদের থানা থেকে কারাগারে নিয়ে গেলো আর তুমি আমাকে দখতে গেলে, তখন আমার সেই রাতের কথা মনে করিয়ে দেবার সাথে সাথেই তুমি বলে উঠেছিলে, ‘‘ হ্যা বাবা, আমার খুব ভালোমতোই মনে আছে। তুমি আমাদেরকে বলেছিলে যে, তাদের কে ভয় না পেতে, আর বলেছিলে যে, তারা তো কীটপতঙ্গ আর মাছি।’’

আমার অবাক লাগছে যে, তোমার কচি মন সেই অন্ধকারময় রাতের এত ঘটনার মাঝে কিভাবে শুধু ঐ কথাগুলোই মনে রেখেছে। আমি তোমাকে সেইদিন ইবনুল কাইয়্যুমের (রাহিমাহুল্লাহ) কবিতা থেকে একটি পংক্তি শুনিয়েছিলাম, যা আমি তোমার জন্য আমার কারাকক্ষের দেয়ালে লিখেও রখেছি,

তাদের অধিক সংখ্যাকে ভয় করো না,
যেহেতু তারা গুরুত্বহীন এবং মাছির মতো।
তোমরা কি একটা মাছি কে ভয় পাও?

মনে পড়ছে কি? ও উমর! আল্লাহর দুশমনেরা এই লেখাটি দেখে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে পড়ে। তাদের এত ক্রুোধান্বিত দশা সত্বেও তোমাকে এই কথাটি জানাতে আমার আনন্দ লাগছে।
তাহলে আজকে কেন তুমি আমাকে পাওয়ার জন্য এত ব্যাকুল হয়ে পড়ছো?

আচ্ছা টিক আছে, তুমি এখনো ছোট্ট, আর এই রাস্তাটি অনেক দীর্ঘ এবং প্রতিকূলতায় ভরা। এমনকি সেরারাও এই রাস্তার ধরে পড়ে থাকে, কত মানুষ এই চলার পথে থেমে যায়!
আমি কি তোমাকে এবং অন্যান্যদেরকে বার বার বলি নি যে, অন্যান্য দেশে আমাদের ভাইদের উপর চালানো অত্যাচারের তুলনায় আমাদের প্রতি চালানো এই অত্যাচার খুবই কম? এটা তো শুধু সুচনা মাত্র, ছোট্ট ছেলে আমার। আর এই মুল্যবান দাওয়াত এবং মহামূল্য পুরষ্কার লাভের পথে এগুলো তো প্রথম ধাপ মাত্র, যার মূল্য দিতে শুধুমাত্র সত্যিকার পুরুষেরাই উঠে দাঁড়ায়,

[مِّنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ ۖ فَمِنْهُم مَّن قَضَىٰ نَحْبَهُ وَمِنْهُم مَّن يَنتَظِرُ ۖ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا]
‘‘মুমিনদের মধ্যে কতক পুরুষ আছে যারা আল্লাহর সাথে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে; তাদের মধ্যে কেউ কেউ শাহাদাত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতিক্ষায় রয়েছে। তারা স্বীয় সংকল্প একটুও পরিবর্তন করে নি।’’ [সূরা আহযাবঃ২৩]

হে আল্লাহর পুরুস্কার, নাও তুমি কম দামি
বরং আলসদের জন্য তুমি তাদের সাধ্যতীত দামি।
হে আল্লাহর পুরস্কার, যদি এমন না হতো যে তুমি,
কষ্ট দ্বারা আবৃত, যেই তোমাকে অর্জনে অগ্রগামী,
তবে কেউই আজ বসে থাকতো না অলসের মতো,
আর দ্বিতীয় শ্রেণীর পুরুস্কারের ক্ষেত্রও দূরীভূত হতো।
যাই হোক, এটি প্রতিটি অপ্রিয় কষ্টের দ্বারা আবৃত,
যেন সেই সকল অলস লোকেরা হয় দ্রুত বিতাড়িত,
আর যেন তাদেরকে সেই তীব্র ব্যাকুলতা ও উচ্ছাকাঙ্ক্ষা দেয়া যায়,
যারা মাহামহিম রবের দরবারে পৌঁছে, যা তাঁর ইচ্ছাতেই সম্ভব হয়।

ইবনুল কাইয়্যুমের (রাহিমাহুল্লাহ) কথাগুলো কতই না সুন্দর। তাঁর কবিতার পংক্তিগুলোতে কি সুন্দর করে বর্ণনা করলেন, ‘‘ আল্লাহর কসম, এটি তো সস্তা নয় যে, একজন দেউলিয়া লোক তা কিনে নিয়ে যাবে। এটি তো এমনও নয় যে, বিক্রয় না করে অভাবগ্রস্ত মানুষের প্রয়োজন পূরণে তা সম্পূর্ণরূপে দান করা হয়। বরং বাজারে এটিকে খুবই উঁচু দামে উপস্থিত করা হয়, আর এটির একমাত্র মূল্য নির্ধারিত হয় যে, নিজের সত্তাকে সম্পূর্ণরূপে দিয়ে দিতে হবে। তাই অস্বীকারকারীরা পিচু হটে যায়, আর যারা এটিকে ভালোবাসে তারা তা দেখার জন্য দাঁড়িয়ে যায় যে, কে এটি ক্রয় করার সম্মানের অধিকতর যোগ্য। পুরষ্কারটা তাদের হাতে ঘুরতে থাকে, আর শেষ পর্যন্ত তার হাতে গিয়ে পড়ে যে,

[أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ]
…মুসলমানদের প্রতি হবে দয়ালু ও মেহেরবান এবং কাফেরদের প্রতি হবে অত্যন্ত কঠোর…
[সূরা মায়িদাঃ৫৪]

যখন ক্রমান্বয়ে আরো বেশী মানুষ এসে এই পুরুস্কারের দাবি করছিল তখন তাদেরকে নিজ দাবির সত্যতা প্রমাণ করতে বলা হয়। কারণ যদি শুধু এই দাবির ভিত্তিতেই তাদেরকে এটা দিয়ে দেয়া হতো, তাহলে যারা এই পুরুস্কারের ব্যাপারে পরোয়া করে না সেই সব লোকেরাও এসে দাবি তুলতো যে, তারা সেটিকে প্রবলভাবে কামনা করে। সুতরাং, এভাবে বিভিন্ন ধরনের মানুষেরা যখন তাদের দাবি তুলতে লাগলো, তখন বলা হলো, ‘ এই প্রমাণ ছাড়া তাদের দাবি গৃহীত হবে না,

[قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ]
যদি তোমরা আল্লাহ্*কে ভালোবাসো , তবে আমার অনুসরণ করো, এবং আল্লাহ্* তোমাদেরকে ভালোবাসবেন…
[সূরা আলে ইমরানঃ৩১]

ফলে, অধিকাংশ লোক পিছু হটে গেলো, আর শুধুমাত্র তারাই রয়ে গেলো যারা প্রিয়নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে তাদের আমল (কর্ম), কথা চারিত্রিক ক্ষেত্রে অনুসরণ করে। তাই তারা যেন নিজেদের দাবি প্রমাণ করতে পারে সে জন্য সেই শর্তে তারা কিছু স্পষ্ট বিষয় যোগ করতে অনুরোধ করলো যা করার মাধ্যমে তারা সেই দাবি প্রমান করতে পারবে, ফলে বলা হলো,

[يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ]
…তারা আল্লাহর রাহে জিহাদ করবে, আর তারা কোন নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে না…
[সূরা মায়েদাঃ৫৪]

এর ফলে ভালোবাসার দাবিদার বেশীরভাগ লোকই সরে পড়লো, আর শুধুমাত্র মুজাহিদীনগণ থেকে গেলেন। তাদেরকে বলা হলো, ‘যারা এই ভালোবাসার দাবিদার তারা তো নিজেদের জীবন ও ধন-সম্পদের মালিক নয়, সুতরাং এগিয়ে গিয়ে আল্লাহ্*র সাথে চুক্তি পূর্ণ করো,’

[إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ]
নিশ্চয় আল্লাহ্* মুমিনদের নিকট থেকে তাদের প্রান ও তাদের ধন-সম্পদ সমূহকে এর বিনিময়ে খরিদ করে নিয়েছে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত…
[সূরা তওবাঃ১১১]

তাই যখন তারা এই খরিদকারীর মহত্ত্ব ও মহানুভবতা সম্পর্কে জানলো, তাঁর পুরস্কারের গুণকে বুঝলো, আর যাদের হাত এই চুক্তিতে আবদ্ধ তাদের মর্যাদাকে উপলব্ধি করলো; তখন তারা এই পুরস্কারের মূল্য বুঝলো, বুঝলো যে এটা সত্যিকার অর্থেই মহাগুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা দেখলো যে, সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে অল্প দামে এই পুরস্কারকে বিক্রি করে দেয়। তাই তারা সন্তুষ্টচিত্তে অন্য কোন বিকল্পের কথা না ভেবেই এই চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে গেলো, আর তারা বললো ‘আমারা এই রাস্তা থেকে হাটবো না’। ফলে যখন এই চুক্তিটি সম্পূর্ণ হলো এবং বেচাকেনা শেষ হলো, তখন তোমাদের বলা হলো, ‘আমার জন্য তোমাদের জীবন ও সম্পদ যখনই নিঃশেষ হয়ে যাবে, তখন এগুলোকে আমি বহুগুনে বর্ধিত করে ফেরত দিবো!’

[وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ]
[فَرِحِينَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ]
যারা আল্লাহ্*র রাস্তায় নিহত হয় তাদের কে তোমরা মৃত ধারনা করো না; বরং তারা জীবিত, তারা তাদের প্রতিপালক হতে জীবিকা প্রাপ্ত হয়। আল্লাহ্* তাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহ হতে যা দান করেছেন তা নিয়ে তারা উৎফুল্ল…
[সূরা আলে-ইমরানঃ১৬৯-১৭০]

সুতরাং যখন তারা তাদের মহান প্রতিপালকের অনুগ্রহ লাভ করলো তখন তারা তাঁর প্রশংসা করলো, আর মহান অভিভাবকের থেকে যে পুরস্কার তারা পেয়েছে সে জন্য তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করলো, এবং পরদি সকালেও তারা আবারও তাঁর প্রশংসা করতে লাগলো।’’

আমার ব্যটা, তোমাকে এটা খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে। এটা মুখস্ত করে ফেলো যাতে এই পথের বাস্তবতা ও এর চাহিদা সম্পর্কে জানতে পারো। তাই আজকের পর আর কখনোও অধৈর্য হয়ো না, আর যতদিন জীবন ধারন করছো কখনোও ক্লান্ত বা নিরাশ হয়ো না।

আমার সাথে তোমার শেষবারের সাক্ষাতের কথা মনে করো, আমি দর্শনার্থীর জানালা দিয়ে তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সে চোখ দু’টো যেন আমাকে দেখার খুশিতে আনন্দে বড় হয়ে গিয়েছিল। তুমি বলছিলে, ‘বাবা! গতকাল আমি আমার উস্তাযের সাথে শিকারে গিয়েছিলাম, আর জীবনে প্রথমবারের মতো আমি রাইফেল দিয়ে একটি কবুতর শিকার করেছি! হ্যা বাবা! রাইফেল দিয়ে! আমি জীবনে প্রথমবার রাইফেল দিয়ে কবুতর শিকার করেছি!’’

‘‘চমৎকার, উমার! চমৎকার, এখন হলো বাজপাখি শিকারের সময়। যদি আল্লাহ্* চান, শীঘ্রই আমি তোমাকে শেখাবো কিভাবে বাজপাখি শিকার করতে হয়।’’

আযান শেষ হয়েছে, স্মৃতির জানালাও বন্ধ হয়েচে। এক ফোঁটা মূল্যবান অশ্রু জমা হয়েছে চোখে। খুব দ্রুত আমি তা মুছে ফেললাম আর মৃদুস্বরে বললাম,
‘‘হে আল্লাহ্* তোমার ইচ্ছায় রাত শুরু হলো আর দিন শেষ হলো। তোমার কাছেই সব দোয়া, সুতরাং, আমাকে ক্ষমা করো।’’

আবু মুহাম্মাদ আসিম আল-মাকদিসী
রমজানের প্রথম রাত্রি,
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হিজরতের ১৪১৭ বছর পর