JustPaste.it

শাইখ আওলাকির (রহ) মুক্তি পরবর্তী সাক্ষাৎকার

কেজপ্রিজনারস(Cageprisoners) উপস্থাপন করছে ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি(রাহিঃ) এর সাথে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার। ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি(রাহিঃ) হলেন নিউ মেক্সিকোতে জন্ম গ্রহণকারী একজন ইয়েমেনী বংশদ্ভুত মুসলিম আলেম। তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় ইমাম হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন এবং পরবর্তীতে ছিলেন ওয়াশিংটন ডি.সিতে, যেখানে তিনি দার আল-হিজরাহ ইসলামিক সেন্টারের প্রধান ছিলেন এবং জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি এর মুসলিম দাঈ ছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি তার দেশ ইয়েমেনে চলে আসেন এবং ঈমান ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন ২০০৬ এর মধ্যবর্তী সময় (অর্থাৎ এরেস্ট হওয়ার আগ) পর্যন্ত। ইমাম আনোয়ার এক বছর কারারুদ্ধ থাকার পর ২০০৭ সালের ১২ ডিসেম্বর জিম্মি অবস্থা হতে মুক্তি লাভ করেন। তার মুক্ত হওয়ার পর প্রথম এই সাক্ষাতকারটি পরিচালনা করেন প্রাক্তন গুয়ান্তানামো বন্দী এবং কেজপ্রিজনারস(Cageprisoners)- এর মুখপাত্র মোয়াজ্জেম বেগ, এতে তিনি (আওলাকি) তার বিনা বিচারে বন্দী থাকা অবস্থা সম্পর্কে কথা বলেন এবং কারাগারে কিভাবে সময় অতিবাহিত করেছিলেন তা ফুটিয়ে তুলেন।

মোয়াজ্জেম বেগঃ– আপনাকে কখন গ্রেফতার করা হয়? কিসের ভিত্তিতে আপনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল? আপনার বিরুদ্ধে কি কোনো চার্জ গঠন করা হয়েছিল?

আনোয়ার আল-আওলাকিঃ– বিসমিল্লাহির-রাহমানির-রাহিম। আমি ২০০৬ এর মাঝামাঝিতে গ্রেফতার হই। প্রাথমিক ভাবে আমার গ্রেফতার হওয়ার কারণ ছিল, আমি স্থানীয় বিচারকার্যের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে প্রবেশ করেছিলাম, সেটি একটি গোত্রীয় ব্যাপার ছিল। আমি ঐ ব্যাপারে একজন মধ্যস্থতাকারী ছিলাম এবং আমি গ্রেফতার হই ঐ ঘটনাটি থাকা পর্যন্ত…… কারন সরকার এটি স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে নিস্পত্তি না করে নিজেরাই এর সমাধান করতে চাইছিল।

মো_বেগ:- ঠিক আছে।

আওলাকিঃ– পরে তারা আমাকে এখানে আমার স্থানীয় ইসলামিক কার্যকলাপ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে শুরু করে , এবং পরবর্তীতে এটি পরিষ্কার হতে শুরু করে যে তারা আমাকে গ্রেফতার করেছে আমেরিকা সরকারের নির্দেশে। এটাই তা যা তারা আমাকে বলেছিল এবং তা এই যে, আমেরিকানরা আমার সাথে দেখা করতে চায়।

মো_বেগ:- সুবহান আল্লাহ্*। ভাল, এটা এমনকিছু যাতে আমাদের পরস্পরে মিল আছে। আমাকেও কিছু সময়ের জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল আমেরিকানদের নির্দেশে।

অপর প্রশ্ন হল যে, মিডিয়া এটি রিপোর্ট করেছে যে আপনি কারারুদ্ধ হয়েছিলেন কিছু তথ্য জানার কারণে অথবা কিছু লোক, যারা ৯/১১ এর হামলায় জড়িত ছিল তারা আপনার খুতবায় ছিলো। আপনি কি এই ব্যাপার গুলো খোলাসা করতে পারবেন?

আওলাকি:- আমেরিকানরা আমাকে যেসব বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিল এটি হল সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু আমি জানি না আমাকে এই কারনে গ্রেফতার করা হয়েছিল না অন্য কোন কারণে, যা তাঁরা উপস্থাপন করেছিল। তবে হ্যা, এটি হল সেগুলোর মাঝে অন্যতম একটি বিষয় যা সম্পর্কে তারা আমাকে প্রশ্ন করেছিল।

মো_বেগ:- আপনি কি একটু বর্ননা করবেন যে আপনার কারাবন্দী অবস্থা কেমন ছিল? আপনার নিজস্ব সেল কেমন ছিল?

আওলাকিঃ- প্রথম নয় মাস আমি ভূ-গর্ভস্থ একটি নির্জন কারাকক্ষে ছিলাম। ঐ কক্ষটি ছিল ৮/৪ ফুট। প্রায় ১২ ফুট উঁচু ছিল। সেটি পরিষ্কার ছিলো। এই নয় মাস অন্য কারারুদ্ধদের সাথে যেকোনো ধরনের যোগাযোগ নিষিদ্ধ ছিল। পরে তারা আমাকে উপরের তলায় নিয়ে যায়। ওটাও ছিল একটি নির্জন কারাকক্ষ, যদিও নিষেধাজ্ঞা আগের তুলনায় কম ছিল এবং কক্ষটি অনেক বড় ছিল, আগেরটির তুলনায় প্রায় ৩ গুন বড়। আমি আমার বাকী প্রায় দেড় বছর সময় এখানে ব্যয় করেছিলাম।

(মুক্তি পাওয়ার পূর্বের) শেষ দেড় মাস সময় আমার জন্য অনুমতি ছিল…তারা আরেকজন ব্যক্তিকে এই কক্ষে স্থানান্তরিত করে শেষ দেড় মাস এর জন্য। তাই দেড় বছর থেকে দেড় মাস সময় বাদ দিলে আমি নির্জন কারারুদ্ধ ছিলাম, শুধুমাত্র শেষ দেড় মাস ছাড়া।

মো_বেগ:- সুবহান আল্লাহ্*। আপনি ইতিমধ্যে যা বলেছেন তা ছাড়াও আপনি সেলে নিজের সাথে কি রাখতে পারবেন, কারবন্দীদের সাথে কিভাবে ব্যাবহার করবেন, অথবা অন্য কোনো বিষয়ের ব্যাপারে তারা কি আপনার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল?

আওলাকি:- আমি যখন ভূ-গর্ভস্থ কক্ষে ছিলাম তখন আমার পরিবারের সাক্ষাতের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল, নিষেধাজ্ঞা ছিল যেকোনো প্রকার খাবারের উপর যা আমার পরিবার আমাকে প্রেরণ করত, বই এর উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল । কাগজ এবং কলম রাখার অনুমতি ছিল না এবং কোনো প্রকার অনুশীলনের তা যাই হোক না কেন। আমি পুরো সময় ধরে সূর্য দেখতে পাই নি। এই আর কি…… জেলরক্ষী ছাড়া আর কারো সাথেই আমার যোগাযোগ ছিল না।

পরবর্তীতে যখন আমাকে উপরের তলায় নিয়ে যাওয়া হয় তখন নিষেধাজ্ঞা ছিল কম, যদিও আমি তখনো নির্জন কারাকক্ষে ছিলাম। পরিবারের ঘন ঘন সাক্ষাত হচ্ছিল। সপ্তাহে দুইবার তারা আমাকে বাড়ির খাবারের অনুমতি দিল, এবং তারা আরো অনেক বই এর অনুমতিও দিয়েছিল। এই কারণে কারারুদ্ধ অবস্থায় শেষের দিকের সময়গুলো ভালো ছিল……আমি (এটাকে) দন্ডাদেশ বলতে চাই না, কেননা এটা কোনো দন্ডাদেশ ছিল না।

মো_বেগ:- এটি হল আমার প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি যা আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করতে চাচ্ছিলাম, এটা কি সঠিক যে আপনার উপর কোনো অপরাধের চার্জ ছিল না এবং আপনাকে কোনো আইনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও যেতে দেওয়া হয় নি?

আওলাকি:- আমার উপর কোনো চার্জ ছিল না। আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। যখন জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়ে যায় তখন আমাকে মুক্ত করে দেওয়া হয়।

মো_বেগ:- কোনো বিদেশী কেউ কি আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল? আমেরিকান অথবা অন্য কোন দেশের?

আওলাকি:- হ্যাঁ, আমেরিকা আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। আমেরিকান সরকারী কর্মকর্তারা।

মো_বেগ:- আপনি কি জানেন তারা এফ.বি.আই ছিল কিনা? তারা কি নিজেদেরকে এফ.বি.আই., সি আই এ, এন এস এ অথবা অন্যকিছু হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল?

আওলাকি:- হ্যাঁ, তারা ছিল এফ.বি.আই.

মো_বেগ:- ঠিক আছে, আপনার প্রতি তাদের আচরণ কেমন ছিল…… একজন ব্যাক্তি হিসেবে তারা আপনার সাথে কেমন ব্যবহার করেছিল, তারা আপনাকে কেমন সম্মান করেছিল?

আওলাকি:- সামান্যকিছু চাপ ছিল, যা আমি গ্রহন করতে অসম্মতি জানাই এবং তা আমাকে এবং তাদেরকে বাদানুবাদের দিকে ধাবিত করে, কারণ আমি অনুভব করেছি সেটি তাদের পক্ষ হতে অন্যায় আচরন ছিল। এটা জিজ্ঞাসাবাদের সময় আমার এবং তাদের মধ্যে একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়। যেমনভাবেই হোক এর সমাধান হয়, এবং পরে তারা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে।

মো-বেগঃ– আল-হামদুলিল্লাহ। কারারুদ্ধ হবার পর কি আপনি আদৌ আপনার পরিবারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছিলেন? আমার মনে হয় আপনি ইতিমধ্যে অবশ্যই বলেছেন তারা প্রথম নয় মাস আপনাকে চিঠি, ফোন কল এবং অন্যান্য কাজ হতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু এরপরে কি তারা আপনাকে যোগাযোগ স্থাপন করতে দিয়েছিল?

আওলাকি:- হ্যা, কারারুদ্ধ থাকাবস্থায় শেষের দিকে, সপ্তাহে একদিন পরিবারের সাক্ষাতের ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছিল।
মো_বেগ:- স্থানীয় অথবা ভিনদেশী কর্মকর্তা দ্বারা আপনাকে কীরকম জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো? এটি কি নিয়মিতই ছিল নাকি মাঝে মাঝে?

আওলাকি:- জিজ্ঞাসাবাদ ছিল এক বছরে মাঝে মধ্যে।

মো_বেগ:- এই গুজবে কি কোনো সত্যতা আছে যে এর আগে আপনাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছিলো এবং জনসাধারনের সামনে কথা বলার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিলো?

আওলাকি:- না, না এটা সত্য নয়। না আমাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে না আমাকে জনসাধারনের সামনে কথা বলার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

মো_বেগ:- আরো বলা হয়ে থাকে যে আপনি অন্যান্য কারাবন্দীদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য কারাগারে শাস্তি ভোগ করেছেন। এটাও কি সত্য অথবা আপনি কি তা বিস্তারিত জানাবেন?

আওলাকিঃ– না, আমার লেকচার দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা ছিল না কারন আমি পুরোটা সময় ছিলাম নির্জন কারাগারে শুধু শেষ মাস ছাড়া, যেখানে ছিলাম আমি এবং অন্য একজন ব্যক্তি, তাই আমি অন্যান্য কারাবন্দীদের সংস্পর্শে ছিলাম না।

মো_বেগ:- আপনার কি ইয়েমেনের বাইরে ভ্রমনের অনুমতি রয়েছে? অবশ্যই ইউনাইটেড কিংডম এবং অন্যান্য স্থানের লোকেরা চায় আপনি আসেন লেকচার দেওয়ার জন্য যদিও আপনি মাত্রই মুক্ত হলেন! আমি মনে করি এটি আপনার অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীদেরই চাওয়া, সুবহান আল্লাহ্*। আপনার কি ইয়েমেনের বাইরে গিয়ে লেকচার দেওয়ার অনুমতি আছে?

আওলাকি:- হ্যা, আমি তো ভ্রমন করতে চাই। কিন্তু, ততক্ষন পর্যন্ত সম্ভব নয় যতক্ষন না ইউএস আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ গুলো তুলে নেয়।

মো_বেগ:- হ্যাঁ, যারা এই ধরনের অবস্থায় রয়েছেন তাঁদের প্রতি আমার উপদেশ হবে এই বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য।

আপনি কি আমাদেরকে এমন কোনো শিক্ষার কথা বলবেন যা আপনি কারারুদ্ধ অবস্থা হতে শিখেছেন?

আওলাকি:- ইন শা’আল্লাহ্*, এ ব্যাপার নিয়ে আমি এক বা একাধিক লেকচারে আলোচনা করার ইচ্ছা পোষণ করি, সেটা নাহয় তখনকার জন্যই রেখে দিলাম।

মো_বেগ:- ইন শা’আল্লাহ…… এটি কি আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনার অন্তর্ভূক্ত? আপনার ভবিষ্যতের জন্য কি অন্য কোনো পরিকল্পনা রয়েছে যা আপনি বর্ননা করতে চান, না আপনি অপেক্ষা করতে চান এবং সময়ের সাথে তা প্রকাশ করতে চান?

আওলাকি:- আপনি কি লেকচার এর বিষয় জানতে চাচ্ছেন?

মো_বেগ:- লেকচার এবং সচরাচর জীবন নিয়ে। শুধুমাত্র লেকচারের ক্ষেত্রে নয়, ভবিষ্যতে – আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা?

আওলাকি:- এই মূহুর্তে আমার কিছু পথ খোলা রয়েছে এবং আমি এখনো সেগুলোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেই নি। আমি এখনো বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে চিন্তা করার সুযোগ পাইনি।

মো_বেগ:- আপনার প্রতি(সাধারণের) যে গভীর সমর্থন ও সচেতনতা প্রকাশ পেয়েছে এই ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কি, ক্যম্পেইন, পিটিশন, ফেসবুক গ্রুপস এবং মুক্ত হওয়ার পর আপনি যত মেসেজ পেয়েছেন এই ব্যাপারে আপনার প্রতিক্রিয়া কী? আপনি কেমন অনুভব করছেন?

আওলাকি:- আলহামদুলিল্লাহ, এটা জেনে আমি অনেক আলোড়িত হয়েছিলাম যে অনেকে ভাই এবং বোনেরা রয়েছে যারা আমার জন্য দোয়া করেছেন। আল হামদুলিল্লাহ রাব্বিল আলামীন। আমি বিশ্বাস করি যে, আমি মুক্ত হয়েছি কিছু সৎকর্মশীল ব্যাক্তির কারনে যারা আমার জন্য দোয়া করেছিলেন, কারন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন যখন একজন ব্যাক্তি তার সাথী ভাইয়ের জন্য দোয়া করে তখন ফেরেশতারা ঐ ব্যাক্তির জন্য দোয়া করেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন আপনার মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া হল একটি গ্রহনযোগ্য দোয়া। তাই আমি মনে করি এটি ঐসকল ব্যাক্তিদের কারনে হয়েছে যারা আমার জন্য দোয়া করেছিলেন, যেন আমি মুক্ত হয়ে যাই, এবং আমি তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এবং আমি দোয়া করি আল্লাহ্* যেন আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন।

মো_বেগ:- ইনশা’আল্লাহ্*, আমি দোয়া করি, তারা আপনার জন্য যে দোয়া করেছেন তা যেনো বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম বন্দীদের জন্যও করেন, ইনশা’আল্লাহ, যেন তারাও মুক্ত হন।

আপনি কি আপনার অভিজ্ঞতার সাপেক্ষে অন্যান্য কারাবন্দী এবং তাদের পরিবারের প্রতি কোনো পরামর্শ দিবেন? এবং কিভাবে তারা আপনার হতে উপকৃত হতে পারে?

আওলাকি:- তাদের প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে , আল্লাহ্* বলেছেন “হতে পারে তোমরা কোনো কিছু অপছন্দ কর কিন্তু এর মধ্যে তোমাদের জন্য অনেক কল্যান রয়েছে।” [সূরা নিসা; ১৯]

এবং রাসূল (সাঃ) এর হাদিস , “যে হুকুমই আল্লাহ্* মুমিনের জন্য নির্ধারন করে রেখেছেন , তাই তার জন্য উত্তম।”

যদি আল্লাহ্* কোনো ব্যাক্তির জন্য নির্ধারন করে রাখেন যে সে বন্দি হবে এবং কোনো পরিবারের জন্য নির্ধারন করে রাখেন যে তাদের কোনো একজন সদস্য বন্দি হবে, তাহলে মুমিন হিসেবে আমাদের এটার প্রতি বিশ্বাস রাখা উচিত যে এই ফয়সালা উত্তম এবং এর মাঝে হিকমাহ রয়েছে, প্রজ্ঞা রয়েছে। আর আমাদের সবার উচিত আল্লাহ্* আমাদের জন্য যা পূর্ব নির্ধারিত করে রেখেছেন তার উপর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করা।

কারণ রাসূল (সাঃ) দোয়ার মধ্যে বলতেন, “আপনি আমার জন্য যা নির্ধারিত করে রেখেছেন তার উপর আমাকে সন্তুষ্ট ও খুশি রাখুন।” এটাই হচ্ছে আমার প্রথম পরামর্শ।

আর দ্বিতীয় পরামর্শ হচ্ছে, এটা হল আপনার ধৈর্য্যের একটি পরীক্ষা এবং ধৈর্য্য ধারন করা হচ্ছে এমন আমল যার ব্যাপারে আল্লাহ্* আমাদেরকে উন্মুক্ত প্রতিদানের প্রতিশ্রুতি দান করেছেন। আল্লাহ্* বলেন, “ধৈর্য্যশীলরা তাদের প্রতিদান পুরোপুরি পাবে, এতে তাদের কোনো কম হবে না।” [সূরা যুমার; ১০]

আল্লাহ্* তা’আলা সাবিরিন বা ধৈর্য্যশীলদের যে প্রতিদান দিবেন তাতে কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।

সবশেষে, সকলের এটা বিশ্বাস রাখা উচিত যে, তাদের নিকট সবচেয়ে বড় যে অস্ত্র আছে তা হল দোয়া। দোয়ার এই ক্ষমতাকে ছোট করে দেখা তাদের কখনোই উচিত নয়। উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) বলতেন, আল্লাহ্* আমার দোয়া কবুল করবেন কি না এই ব্যাপারে আমি চিন্তিত নই বরং আমি আল্লাহর নিকট কিভাবে দোয়া করছি তা নিয়ে চিন্তিত। আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন, তিনি দোয়ায় সাড়া দিবেন, আমাদের যা করতে হবে তা হল সঠিকভাবে এবং ইখলাসের(আন্তরিকতার) সাথে দোয়া করা।

মো_বেগ:- সুবহান আল্লাহ্*। আল্লাহ্* আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। আমরা গুয়ান্তানামোতে থাকাবস্থায় একটা জিনিস করতাম, একটা বিষয় যা আমি শিখেছি তা হল সূরা ইউসুফ। প্রায় সময়ই, হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সূরাটি আমি পড়তাম এবং এটা নিয়ে স্বভাবত চিন্তা করতাম, কারন ইউসুফ (আঃ) এমন কিছুর জন্য বন্দি হয়েছিলেন যা তিনি করেন নি। আর আমি যখন জেলে এটা পড়তাম, এটা আমার কাছে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল, আমার মনোযোগ এটার দিকে নিবদ্ধ থাকত এবং আমি এমনভাবে কান্না শুরু করতাম যা আমি এর পূর্বে চিন্তাও করতে পারতাম না। আপনি কি জেলে থাকাবস্থায় কোরআনের কোনো বিশেষ আয়াত অথবা সাহাবীদের (রাঃ) কোনো ঘটনা এরকম প্রাসঙ্গিক কোনো বিষয়ে কোনো কিছু উপলব্ধি করেছিলেন যা আপনার মাঝে ঘটেছিল।

আওলাকি:- হ্যাঁ, আমার এরকম অনুভূতি হয়েছিল যখন আমি কোরআন পড়তাম। আমি যখন জেলে ছিলাম, প্রতিটি সূরা, আয়াত সম্পূর্ণই ভিন্ন ছিল যদি আমি তুলনা করি বাইরে থাকা অবস্থায় পড়ার সাথে।

মো_বেগ:- হ্যাঁ , একদম ঠিক। মা শা আল্লাহ্*।

আওলাকি:- সূরা ইউসুফ এর ক্ষেত্রে এটা খুব সত্য, কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি এই বিষয়টা কোরআনের প্রত্যেকটা আয়াত ও সূরার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী এক আলোকবর্তীকা ছিল যখন আমি জেলে পড়তাম।

মো_বেগ:- এটা সম্পূর্ণরূপেই বিস্ময়কর কারন, গুয়ান্তানামোতে তারা সবকিছু আমাদের থেকে নিয়ে গিয়েছিলো, আমাদের কাপড় চোপড়, আমাদের পরিবার, খাবার, আমাদের জীবন সবকিছু আর একমাত্র যে জিনিস যার সাথে আমাদের পরিচিতি ছিল সেটা হল কোরআন। যদিও এটা একটা ভিন্ন সংস্করণের বা ভিন্ন প্রিন্টের ছিল কিন্তু এটাই একমাত্র জিনিস যা আমাদের পরিচিত ছিল। নতুবা সবকিছুই- ভূমি, এলাকা, জেল এমনকি মানুষের কথা-বার্তা সম্পূর্ণরূপেই অপরিচিত ছিল শুধুমাত্র আল্লাহর বাণী ছাড়া।

আওলাকি:- সুবহান আল্লাহ্*। যেহেতু কোরআন ব্যতিত সবকিছুই তারা আমাদের থেকে নিয়ে গিয়েছিলো, তাই কোরআনে এই ভিন্ন স্বাদ পাওয়া গেছে। উসমান বিন আফফান (রাঃ) বলতেন, যদি আমাদের অন্তর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও বিশুদ্ধ হতো তাহলে আমরা কখনোই কোরআনের পিপাসায় তৃপ্তি পেতাম না। আর আমাদের চারপাশে মনযোগ ছিন্নের উপকরণের কারণে আমরা কোরআন থেকে সে কল্যাণ নিতে পারি না। কিন্তু যখন একজন ব্যক্তি নিঃসংগ পরিবেশে থাকে এবং সকল ধরণের বিক্ষিপ্ততা তার থেকে চলে যায় এবং তার অন্তর সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর বাণীর প্রতি ঝুঁকে পড়ে তখন কোরআনের আয়াতসমূহ সম্পূর্ণ ভিন্নরূপে নিজেকে প্রকাশ করে এবং আয়াতসমূহ একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে।

মো_বেগ:- সত্যিই। আপনার এমন কারো সাথে সম্পর্ক আছে কি বা ছিল যে গুয়ান্তামোতে জেলে ছিল অথবা তার মুক্তির পর তার সাথে দেখা হয়েছিল? আপনি কি তাঁদের কারো সাথে কথা বলেছেন অথবা তাঁরা কীভাবে চলছে তা দেখেছেন?

আওলাকি:- এমন কিছু ভাই ছিল যাদের গুয়ান্তানামো থেকে আনা হয়েছিল এবং তাদের ইয়েমেনি সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আর তারা পি এস এল জেলে ছিল, যেখানে আমিও ছিলাম। কিন্তু আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করার কোনো সুযোগ পাই নি। আমি শুনেছিলাম আমি সেখানে থাকা অবস্থায় তারা সেখান থেকে চলে গিয়েছে। যাইহোক আমি এখনও তাদের কারো সাথে দেখা করার বা সম্পর্ক করার কোনো সুযোগ পাই নি।

মো_বেগ:- ইনশা আল্লাহ্*, আপনি তাদের সাথে জান্নাতে দেখা করবেন ইনশা আল্লাহ্*।

আওলাকি:- ইনশা আল্লাহ্*….সত্যিই আমি জানতে আগ্রহী সেখানে তারা কেমন ছিল।

মো_বেগ:- সবশেষে আমি কেজপ্রিজনারস(Cageprisoners) এর পক্ষ থেকে একটা প্রশ্ন, আপনি কী কেজপ্রিজনারস(Cageprisoners) বা এইরকম সংস্থাগুলোর উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন? আমাদের কাজের ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন , খারাপ না ভালো?

আওলাকি:- কেজপ্রিজনারস(Cageprisoners) এর ভাই ও বোনেরা, তারা তো রাসূল (সাঃ) এর আদেশ পূরণ করছে, যা বুখারীতে রয়েছে, “কারাবন্দিদের মুক্তি কামনা করো।” এবং রাসূল (সাঃ) এর এই আদেশ তারা খুব নিষ্টার সাথেই পূরণ করছে। তাই আমি আল্লাহর কাছে এই প্রার্থনা করি তিনি যেনো তাদের পুরস্কৃত করেন এবং তাদের চেষ্টা সাধনায় সাহায্য করেন।

মো_বেগ:- বারাক আল্লাহু ফিক। আল্লাহ্* যেনো আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করেন, ইয়া শেইখ।

আওলাকি:- আপনার প্রতিও অনুরূপ।