আল্লাহর রাস্তায় সাদাকা করুন!
মূল
শাইখ আবু উমর আস-সাইফ রহ.
অনুবাদ
মাওলানা হামিদুর রহমান
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على نبينا محمد وعلى آله وصحبه وسلم أجمعين
সমস্ত প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার জন্য। দরদ ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গ এবং সাহাবী আজমাইনদের উপর।
ওই সমস্ত সৎকর্মপরায়ণ ভাইদের প্রতি যারা নিজেদের ধন-সম্পদ দ্বারা জিহাদ করছে এবং আল্লাহ্র দ্বীনকে সাহায্য করার জন্য তা ব্যয় করেছে...। আপনাদের এই কর্মের কারণে, আপনাদের এই প্রচেষ্টার কারণে এবং ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি আপনাদের এই সাহায্যের কারণে আল্লাহ তাআলা আপনাদেরকে উত্তম বদলা দান করুন। ক্রুসেডার ও তার দোসরদের হাতে আপনারা যেই দমন, নিপীড়ন ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন, তা হচ্ছে সেই পরীক্ষা যা দ্বারা আল্লাহ তাআলা সত্যবাদীদেরকে মিথ্যাবাদীদের থেকে পার্থক্য করেন। কেননা সত্যবাদী ব্যক্তিকে এই পরীক্ষা দ্বীনের প্রতি তাঁর অটলতা, আল্লাহ্র আদেশের প্রতি তার আত্মসর্পণ এবং “আল ওয়ালা ওয়াল বারা’র আকীদাকে তার সত্যে পরিণত করাকেই বৃদ্ধি করে। আর মিথ্যাবাদী ব্যক্তি এই পরীক্ষা দ্বারা দূর্বল হয়ে পড়ে, শত্রুদের সামনে নতি স্বীকার করে, তাদের আদেশ ও প্রবৃত্তির সামনে আত্মসমর্পণ করে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের ব্যতীত অন্যদেরকে আপন করে নেয়, তাদের পাশে দাঁড়ায় এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে।
অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন-
{أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تُتْرَكُوا وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَلَمْ يَتَّخِذُوا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَا رَسُولِهِ وَلَا الْمُؤْمِنِينَ وَلِيجَةً وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ}.
অর্থঃ তোমরা কি মনে কর যে, তোমাদের ছেড়ে দেয়া হবে এমনি, যতক্ষণ না আল্লাহ্ জেনে নেবেন তোমাদের কে যুদ্ধ করেছে এবং কে আল্লাহ্, তাঁর রসূল ও মুসলমানদের ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করা থেকে বিরত রয়েছে। আর তোমরা যা কর সে বিষয়ে আল্লাহ্ সবিশেষ অবহিত। (সূরা তাওবাহ-১৬)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন-
{أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آَمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ * وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ}.
অর্থঃ মানুষ কি মনে করে যে, তাঁরা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, ‘আমরা বিশ্বাস করি’ অথচ তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ্ অবশ্যই জেনে নিবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নিবেন মিথ্যুকদেরকে। (সূরা আনকাবুত-২-৩)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
{وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّى نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنْكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ}.
অর্থঃ আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো, যে পর্যন্ত না আমি জানি তোমাদের জিহাদকারীদেরকে এবং সবরকারীদেরকে এবং যতক্ষণ না আমি তোমাদের অবস্থানসমূহ যাচাই করি। (সূরা মুহাম্মদ-৩১)
এই ক্রুসেড যুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ, মুরতাদ ও মুনাফিকদের অবস্থা স্পষ্ট হয়ে গেছে এবং ক্রুসেডারদের প্রতি তাদের বন্ধুত্ব ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি তাদের শত্রুতা প্রকাশ পেয়ে গেছে। সাম্প্রতিককালের এই ক্রুসেড যুদ্ধে তাদের এই অবস্থা এবং খৃষ্টানদের প্রতি তাদের এই সাহায্য পেছনের দশকগুলোতে শিয়াদের কর্তৃক কথিত সুপার পাওয়ার সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি সাহায্যের সাথে সাদৃশ্যতা রাখে, যারা কি না কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্র দখল করে রেখেছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুরতাদদের এমন একটি গুনে গুণান্বিত হবার কথা বলে গেছেন, যার বাস্তবতা আমরা আজ স্বচক্ষে দেখছি, আর তা হলো মুসলমানদের জামাআত থেকে বিছিন্ন থাকা। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
(لا يحل دم امرئ مسلم يشهد أن لا إله إلا الله، وأني رسول الله، إلا بإحدى ثلاث: الثيّب الزاني، والنفس بالنفس، والتارك لدينه المفارق للجماعة)
“যে ব্যক্তি এই কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং আমি আল্লাহ্র রাসূল, তাঁর রক্ত তিন জিনিসের মধ্যে কোন একটি পাওয়া যাওয়া ব্যতিরেকে হালাল হবে না – বিবাহের পর ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া, কারো প্রাণ নাশ করা, জামাআত থেকে বিছিন্ন হয়ে আপন দ্বীন পরিত্যাগ করা”। (বুখারী, মুসলিম)
বর্তমানে সকলে যা দেখছে যে, ধর্মনিরপেক্ষদের কর্তৃক যুক্তরাষ্ট্রের প্ল্যান-পরিকল্পনা পূরনে সাহায্য সহযোগীতা করা, ইরাক দখলে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা, মুজাহিদদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের পক্ষে অবস্থান করা এবং মুজাহিদদের চেহারাকে বিকৃত করে প্রকাশ করার জন্য মিডিয়ার অপব্যবহার করা ও তাঁদের বিপদ-আপদে আনন্দিত হওয়া ও তাঁদের বিজয়ে বিষন্ন হওয়া ইত্যাদি মূলত তাদের ব্যাপারে ও তাদের মত অন্যান্যদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা যা বলেছেন তারই বাস্তবরূপ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
{إِنْ تُصِبْكَ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِنْ تُصِبْكَ مُصِيبَةٌ يَقُولُوا قَدْ أَخَذْنَا أَمْرَنَا مِنْ قَبْلُ وَيَتَوَلَّوْا وَهُمْ فَرِحُونَ * قُلْ لَنْ يُصِيبَنَا إِلَّا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَنَا هُوَ مَوْلَانَا وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ * قُلْ هَلْ تَرَبَّصُونَ بِنَا إِلَّا إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ وَنَحْنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمْ أَنْ يُصِيبَكُمُ اللَّهُ بِعَذَابٍ مِنْ عِنْدِهِ أَوْ بِأَيْدِينَا فَتَرَبَّصُوا إِنَّا مَعَكُمْ مُتَرَبِّصُونَ}.
অর্থঃ আপনার কোন কল্যাণ হলে তারা মন্দবোধ করে এবং কোন বিপদ উপস্থিত হলে তারা বলে, আমরা পূর্ব থেকেই নিজেদের কাজ সামলে নিয়েছি এবং ফিরে যায় উল্লসিত মনে। আপনি বলুন, আমাদের কাছে কিছুই পৌঁছাবে না, কিন্তু যা আল্লাহ্ আমাদের জন্য রেখেছেন, তিনি আমাদের কার্যনির্বাহক। আল্লাহ্র উপরই মুমিনদের ভরসা করা উচিত। আপনি বলুন, তোমরা তো আমাদের জন্য দুটি কল্যাণের একটি প্রত্যাশা কর; আমরা প্রত্যাশায় আছি তোমাদের জন্য যে, আল্লাহ্ তোমাদের আযাব দান করুন নিজের পক্ষ থেকে অথবা আমাদের হাতে। সুতরাং তোমরা অপেক্ষা কর আমরাও তোমাদের সাথে অপেক্ষমান । (সূরা তাওবাহ-৫০-৫২)
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
{إِنْ تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِنْ تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ}.
অর্থঃ তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়, তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে তারা আনন্দিত হয়। আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহ্র আয়ত্তে রয়েছে। (সূরা আল-ইমরান-১২০)
তাদের এই চক্রান্ত ও ষড়যন্ত যা ইসলাম এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে এক মুহূর্তের জন্যও থেমে নেই এবং যার ব্যাপারে আল্লাহ্র বলছেন-
{بَلْ مَكْرُ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ}
অর্থঃ দিবা রাত্রি মিলে চক্রান্ত করা’ (সূরা সাবা-৩৩)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
{وَقَدْ مَكَرُوا مَكْرَهُمْ وَعِنْدَ اللَّهِ مَكْرُهُمْ وَإِنْ كَانَ مَكْرُهُمْ لِتَزُولَ مِنْهُ الْجِبَالُ}
অর্থঃ তারা নিজেদের মধ্যে ভীষন চক্রান্ত করে নিয়েছে এবং আল্লাহ্র সামনে রক্ষিত আছে তাদের কু-চক্রান্ত। যদিও তাদের ষড়যন্ত এমন ছিল যা দ্বারা পাহাড় অপসারিত হয়ে যায়। (সূরা ইবরাহীম-৪৬)
তাদের এতসব ষড়যন্ত সত্ত্বে আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্র অনুগ্রহে মুজাহিদদের অবস্থা সর্বদা ভালই থাকে এবং ফিলিস্তিন, শীশান, ইরাক ও আফগানস্থানসহ সর্বত্র বিজয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে।
শীশানে আল্লাহ্র শত্রুদের বিরুদ্ধে রণাঙ্গন ক্রমশ প্রশস্ত হতে চলেছে। সেখানকার দল ও সংগঠনকেন্দ্রিক যুদ্ধ এখন শীশানের নিকটস্থ ও আশপাশের জনসাধারনের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে। এ যুদ্ধ প্রশস্ত হবার দ্বারা এবং শীশানের আশপাশের জনসাধারণ ও রাশিয়ার মাঝে ছড়িয়ে যাওয়ার দ্বারা একদিকে আল্লাহ্র ইচ্ছায় শত্রুদের শক্তি বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে তাদের অর্থনৈতিক জটিলতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন মুজাহিদগণ তাদের গ্যাস ও পেট্রোলের পাইপসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক উৎসগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে শুরু করেছে। ফলে তাদের অর্থনীতিতে এমন ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে যার দ্বারা রাশিয়া সরকার কষ্ট পাচ্ছে। আর তাদের অর্থনীতিকে লক্ষ্য করে যেকোন হামলা-ই ইনশাআল্লাহ এ ধ্বংসযজ্ঞ দেশের জন্য বিশাল আলোড়ন ও শুভ দিনের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
আর শীশানের অভ্যন্তরে রাশিয়ার শক্তির তীক্ষ্ণতা (যা শীশানকে গ্রাস করার পঞ্চম বৎসরেই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে) নিঃশেষ হয়ে গেছে, তার বাহিনী দূর্বল হয়ে পড়েছে এবং লক্ষ্য পূরণে তাদের নৈরাশ্যতা চলে এসেছে। ফলে তারা তাদের সামরিক ডিপার্টমেন্টের অনেককে রাষ্ট্রীয় বিভাগগুলোতে সরিয়ে নিচ্ছে। এই আশায় যে, রাশিয়ার শক্তি যা করতে ব্যর্থ হয়েছে মুরতাদ গোষ্ঠী তা বাস্তবায়ন করে দেখাবে। কিন্তু আল্লাহ্র দয়ায় এই আক্রমণকারী দলও ব্যর্থতার স্বীকার হচ্ছে। তারা এমন দল যে, সর্বদা-ই নৈরাজ্য, অরাজকতা ও অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত। তাদের মাঝে মাদকাসক্ত ও বিভিন্ন অপরাধী দ্বারা ভরপুর। তারা আজ তাদের ব্যর্থতার কারণে এবং উদ্দিষ্ঠ বস্তু বাস্তবায়নে অক্ষমতার কারণে নিজেদের অপরাধ ও অসহায় শিশু ও নারীদের প্রতি বাড়াবাড়ির মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় যখন শীশানী পরিবারের কোন ছেলে বা মেয়ে প্রাণৎসর্গকারী (ফিদায়ী) হামলায় বের হয় তখন তারা পরিবারের বাকিদের হত্যা করে ফেলে।
শীশানের অভ্যন্তরে মুজাহিদদের কাজ বৃদ্ধি পাওয়া ও শীশানের পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহ ও রাশিয়ায় যুদ্ধ ছড়িয়ে যাওয়ার দ্বারা এবং যে বিশেষ দল তেল ও গ্যাসের পাইপসমূহসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে, তাঁরা ছাড়াও অন্যান্য সামরিক দলসমূহের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের যোগান দিতে গিয়ে দিন দিন ব্যয়ভার বেড়েই চলছিল এবং মুজাহিদদের প্রয়োজনে দেয়া মুসলমানদের আর্থিক সাহায্য, অস্ত্র, গোলাবারুদ, রসদ ও জিহাদের অন্যান্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহের জন্য যথেষ্ট হয়ে আসছিল।
কিন্তু ইদানিং এই শেষের দিকে ইসলাম ও মুসলমান এবং ক্রুসেডার ও তার দোসরদের মাঝে চলমান এই লড়াইয়ে সাহায্য করার কারণে মুজাহিদদের প্রতি আর্থিক সাহায্য বিরাট আকারে হ্রাস পেয়েছে। ক্রুসেডার ও তার দোসররা সাধারণ মুসলমানদের মাঝে ত্রাস সৃষ্টি করা ও তাঁদেরকে জান ও অর্থ দিয়ে আল্লাহ্র রাহে জিহাদ করতে বাধা প্রদান করার কারণে। কেননা এই অর্থই তাদের অপরাধমূলক প্ল্যান-পরিকল্পনা পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেমনটি আল্লাহ তাআলা এভাবে বলেছেন-
{هُمُ الَّذِينَ يَقُولُونَ لَا تُنْفِقُوا عَلَى مَنْ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ حَتَّى يَنْفَضُّوا وَلِلَّهِ خَزَائِنُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَفْقَهُونَ}.
অর্থঃ তারাই বলে আল্লাহ্র রাসূলের সাহচর্যে যারা আছে তাদের জন্য তোমরা ব্যয় করো না পরিণামে তারা আপনা-আপনি সরে যাবে। ভূ ও নভোমন্ডলের ধন-ভান্ডার আল্লাহ্রই কিন্তু মুনাফিকরা তা বোঝে না। (সূরা মুনাফিকূন-৭)
মুসলমানদের জন্য কর্তব্য হল- নিজেদের জান ও অর্থ দিয়ে আল্লাহর রাহে জিহাদ করা এবং মুজাহিদদের সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং আল্লাহ্র ওয়াস্তে নিন্দুকের নিন্দাকে পরওয়া না করা এবং তাদের যেন শত্রুদের হুমকি ধমকি আল্লাহ্র দ্বীনের সাহায্য থেকে ফিরিয়ে রাখতে না পারে। কেননা আল্লাহ তাআলা তাদের সকল কৌশলকে অকেজো করে দিবেন এবং তাদের চক্রান্ত ও বাড়াবাড়িকে তাদেরই লাঞ্ছনা, নিঃশেষ হওয়া ও পরাজয়ের কারণ বানাবেন। বেশী দূরে নয়, এখনই তো তাদের শক্তি দূর্বল হয়ে পড়েছে তাদের মতামত ভিন্ন হয়ে গেছে এবং তাদের বাস্তবায়িত হয়ে যাওয়া বিষয়গুলোও পতন হতে চলেছে এবং ইরাক, শীশান ও আফগানিস্থানে আল্লাহ্র শত্রু ক্রুসেডার ও তাদের দোসরদের পরাজয় ও অধঃপতনের ধাপ শুরু হয়ে গিয়েছে।
সুতরাং মুসলমানদের জন্য আবশ্যক হল- তাঁরা হক ও জিহাদের পথে ধৈর্যধারণ করবেন ও অটল-অবিচল থাকবেন। কেননা এই পথ-ই হচ্ছে ইজ্জত ও কর্তৃত্বের পথ। মুসলমানদের দ্বীন, জান ও ধন-সম্পদ প্রতিরক্ষার পথ।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
{وَلَا تَهِنُوا فِي ابْتِغَاءِ الْقَوْمِ إِنْ تَكُونُوا تَأْلَمُونَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُونَ كَمَا تَأْلَمُونَ وَتَرْجُونَ مِنَ اللَّهِ مَا لَا يَرْجُونَ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا}.
অর্থঃ তাদের পশ্চাদ্ধাবনে শৈথিল্য করো না। যদি তোমরা আঘাত প্রাপ্ত, তবে তারাও তো তোমাদের মতই হয়েছে আঘাতপ্রাপ্ত এবং তোমরা আল্লাহর কাছে আশা কর, যা তারা আশা করে না। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়। সুরা নিসা-১০৪
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
{إِنَّ الَّذِينَ يُحَادُّونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ كُبِتُوا كَمَا كُبِتَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَقَدْ أَنْزَلْنَا آَيَاتٍ بَيِّنَاتٍ وَلِلْكَافِرِينَ عَذَابٌ مُهِينٌ}.
অর্থঃ যারা আল্লাহর তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা অপদস্থ হয়েছে, যেমন অপদস্থ হয়েছে তাদের পূর্ববর্তীরা। আমি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ নাযিল করেছি। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সুরা মুজাদালাহ-০৫)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন-
{لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآَخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آَبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُولَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ أُولَئِكَ حِزْبُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ}.
অর্থঃ যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে। (সুরা আল মুজদালাহ – ২২)
সুতরাং আপনাদের সম্মেধন করছি হে সৎ কর্মশীলগণ! হে ঐ সমস্ত লোক যারা কাতারের পিছনে আত্মগোপন করেছেন! যারা নিজেদের অঞ্চলে আত্মগোপন করেছেন! আপনারা প্রকৃতপক্ষে মুজাহিদদের সাথে অগ্নিঅঞ্চলে বসবাস করছেন। আমাদের আশেপাশের সব কিছু এই কথার সাক্ষ্য দেয়। বন্দুকের মুখ দিয়ে যে বুলেট ছুটে যায় তাতে আমরা আপনাদের সাহায্যের নিদর্শন খুঁজে পাই। প্রতিটি যন্ত্র প্রতিটি অস্ত্রই মুজাহিদদের সাথে আপনাদের অংশীদারীত্বের সাক্ষ্য প্রদান করে। মুজাহিদগণ আপনাদের না চিনলেও আল্লাহ তাআলা ভালভাবে আপনাদের জানেন। আপনারা যদি RPG ক্ষেপণাস্ত্র বা (এন্টি ট্যাঙ্ক) মিলান মিসাইল দেখেন, আর তা মূলত মুসলমানদের প্রতি ব্যাবহৃত ট্যাঙ্ক ও রকেট লাঞ্চারকে প্রতিহত করার জন্য ও শত্রুদের যন্ত্রপাতিকে বিকল করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে এবং তাদের হৃদয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। আপনারা যদি দেখেন যে, মেশিনগান সুমধুর আওয়াজ ছড়াচ্ছে বা আপনারা যদি প্রক্রিয়াজাত গাড়ি দেখেন, যা মুজাহিদদের বরফাবৃত পাহাড়ের চূড়ায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে এবং তাঁরা সেখানে আল্লাহ্র দ্বীনের জন্য ও মুসলমানদের ইজ্জত-সম্মান প্রতিরক্ষার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করে দিচ্ছে, তাহলে বুঝবেন যে, তাঁদের জিহাদ চালিয়ে যেতে কতটা সহায়তা করেছে। কিছু অর্থ দিয়ে তারা অস্ত্র ধারণ করেছে, কিছু অর্থ দিয়ে তাঁরা হাড় কাপানো শীতের প্রচণ্ডতা থেকে নিজেদের শরীর গরম করেছে। কিছু অর্থ দিয়ে তাঁরা আহার করেছে। কিছু অর্থ দিয়ে তাঁদের ক্ষত ও জখমের চিকিৎসা করা হচ্ছে। বিভিন্ন ফ্রন্টে বিদ্যমান আপনাদের ভাইয়েরা আপনাদের জন্য দোয়া করে এবং তারা জানে যে, আল্লাহ্র দ্বীনের সাহায্যের ক্ষেত্রে, আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার ক্ষেত্রে, এবং মজলুমদের জুলুম অপসারণের ক্ষেত্রে আপনাদের অবস্থান তাঁদের অবস্থানের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আমরা আল্লাহর নিকট দোয়া করি; তিনি যেন আপনাদের ধন-সম্পদে বরকত দান করেন।
{وَمَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ}.
অর্থঃ তোমরা যা কিছু ব্যায় কর, তিনি তার বিনিময় দেন। তিনি উত্তম রিজিকদতা। (সুরা সাবা– ৩৯)
আল্লাহ আপনাদের হেফাজত করুন – আপনারা জানেন যে, অর্থ-সম্পদ দিয়ে জিহাদ করার ফজিলত কি এবং আপনারা এও জানেন যে, কুরআনে কারীমে যেখানেই জান দিয়ে জিহাদ করার কথা এসেছে, সেখানেই অর্থ দিয়ে জিহাদ করার কথা এসেছে; বরং কুরআন কারীমের বহু স্থানে অর্থ দিয়ে জিহাদ করার কথাকে জান দিয়ে জিহাদ করার আগে এভাবে বলা হয়েছে-
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنْجِيكُمْ مِنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ * تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ}.
অর্থঃ হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করবে নিজেদের ধন সম্পদ ও জীবন পণ করে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝ। (সুরা সাফা – ১০-১১)
ক্লান্ত অন্তর – পরিশ্রান্ত হৃদয়গুলো প্রভুর সানিধ্যের মৃদমন্দ বাতাসে উদ্ভাসিত হয়ে উঠে এবং বিজয়ের সুসংবাদগুলো (হৃদয়ের) আকাশে চকচক করতে দেখার দ্বারা তারা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
অতঃপর হে ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহ্র পথে ব্যয় করা ও দান করা থেকে বিরত থাকেন, আপনার জন্য একটি বার্তা-
আর তা হল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হাদিস-
(من لم يغز أو يجهز غازيًا أو يخلف غازيًا في أهله بخير أصابه الله سبحانه بقارعة قبل يوم القيامة)
“যে ব্যক্তি নিজে জিহাদ করবে না এবং কোন মুজাহিদকেও সামানা গুছিয়ে দিবে না বা কোন মুজাহিদের পরিবারের খোঁজ খবর নিবে না আল্লাহ্ তাআলা কেয়ামত দিবসের পূর্বেই তাকে কোন দূর্যোগের মধ্যে নিপাতিত করবেন”।
পরিশেষে আমি আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি সেই ফেরেশতার কথা, যে প্রতিদিন সকালে এই আওয়াজ দেয় যে,
(اللهم أعط منفقا خلفًا)
“হে আল্লাহ্! আপনি ব্যয়কুণ্ঠ ব্যক্তির সম্পদ ধ্বংস করে দিন”।
তাই হে ভাই আপনি আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের তালিকায় চলে আসুন।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেছেন-
"ومن عجز عن الجهاد ببدنه وقدر على الجهاد بماله وجب عليه الجهاد بماله".
“যে ব্যক্তি সশরীরে জিহাদ করতে অক্ষম কিন্তু অর্থ দিয়ে জিহাদ করতে সক্ষম, তার জন্য অর্থ দিয়ে জিহাদ করা ফরজ”।
আল্লহর নিকট দোয়া করি, তিনি যেন ইহসানকারীদের উত্তম বিনিময় দান করেন এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবীদের প্রতি আসংখ্য দুরুদ ও সালাম বর্ষন করেন।
-শীশানের ভূমি থেকে আপনাদের ভাই
আবু উমর আস-সাইফ