JustPaste.it

আল্লাহর বিধান পরিবর্তনকারী ও মানবরচিত বিধান দিয়ে রাষ্ট্রপরিচালনাকারী শাসকদের রিদ্দাহ/কুফর এর ক্ষেত্রে কী কোনো ওযর গ্রহণযোগ্য ? নাকি তারা সুস্পষ্ট মুরতাদ ?

 [এ ব্যাপারে উম্মতের স্ব-স্ব যুগের দু’জন যুগশ্রেষ্ঠ আলিম যারা তাদের যুগে ইলম এর ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের বক্তব্য]

 

 

    মানবরচিত বিধান দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনাকারী শাসকদের ওযরের ক্ষেত্রে শাইখুল মুহাদ্দিসিন আল্লামা আহমাদ শাকের রাহঃ

 

১। তাতারদের সংবিধান ‘ইয়াসিক’ এর সাথে তুলনা করে মানবরচিত আইন ও সংবিধানগুলোকে ‘যুগের ইয়াসিক’ ‘নব্য ইয়াসিক’ আখ্যা দিয়ে বিংশ শতাব্দীর জগৎশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফকীহ শাইখুল মুহাদ্দিসিন আল্লামা আহমাদ শাকের রাহঃ উনার তাফসীরে ইবনে কাসীর এর সংক্ষিপ্ত তাফসীর “উমদাতুত-তাফসীর” এ বলেন,

إن الأمر في هذه القوانين الوضعية واضح وضوح الشمس، هي كُفرٌ بواح، لا خفاء فيه ولا مداورة، ولا عُذر لأحد ممن ينتسب للإسلام -كائناً من كان- في العمل بها، أو الخضوع لها أو إقرارها، فليحذر امرؤٌ لنفسه، وكل امرئٍ حسيبُ نفسه).

 “নিশ্চয়ই মানবরচিত আইনের বিষয়টি সূর্যের আলোর ন্যায় স্পষ্ট, যা কুফরে বাওয়াহ বা সুস্পষ্ট কুফর। এতে কোনো অস্পষ্টতা ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের অবকাশ নেই। ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত এমন কোনো ব্যক্তির জন্য এসব বাস্তবায়ন করার ক্ষেত্রে কিংবা এসবের প্রতি নমনীয়তা কিংবা এসবের স্বীকৃতি প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ওযর গ্রহণযোগ্য নয়, সে যেই হোক না কেনো।  সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তি যেনো নিজের ব্যাপারে সতর্ক হয়। আর প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই নিজের হিসাবের জন্য দায়ী।”   (উমদাতুত-তাফসীর, ১ম খণ্ড-৬৯৭ পৃষ্ঠা)

 

২।   শরীয়ত পরিবর্তনকারী এসব মানবরচিত আইন প্রবর্তনকারীদের কুফুরীকে যারা রইসুল মুফাসসিরীন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এর বক্তব্য “কুফর দূনা কুফর” তথা ছোট কুফর বলতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে শাইখুল মুহাদ্দিসিন আল্লামা আহমাদ শাকের রাহঃ উনার তাফসীরে ইবনে কাসীর এর সংক্ষিপ্ত তাফসীর “উমদাতুত-তাফসীর” এ বলেন,

(وهذه الآثار - عن ابن عباس وغيره - ممَّا يَلعبُ به المُضِلُّون في عَصرنا هذا، من المنتسبين للعلم، ومن غيرهم من الجرآء على الدِّين: يجعلونها عُذرًا أو إباحيَّة للقوانين الوثنيَّة الموضوعة، التي ضربت على بلاد الإسلام

(“ইবনে আব্বাস রা. এবং অন্যদের থেকে যেসব আছার/হাদিস বর্ণিত হয়েছে সেসব নিয়ে আমাদের এই যুগে ইলমের সাথে যুক্ত থাকার দাবীদার এবং দ্বীনের উপরে স্পর্ধা দেখানো পথভ্রষ্টরা ব্যক্তিরা খেলায় মত্ত হয়েছে, তারা ইসলামী দেশগুলোতে চাপিয়ে দেওয়া মানবরচিত শিরকি আইনের বৈধতা দেওয়া অথবা ওযর দেওয়ার জন্য এসব (আছার/হাদিস) ব্যবহার করছে। ”)  [উমদাতুত-তাফসীর, ১ম খণ্ড-৬৮৪ পৃষ্ঠা]  

 

[আল্লাহর বিধান মেনে চলেন কিন্তু প্রবৃত্তি কিংবা ঘুষের কারণে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচার না করা এবং শরীয়তের বিধান পরিবর্তন করা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। কুফর দুনা কুফর তথা ছোট কুফর তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা ইসলামের বিধান মেনে চলেন কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে প্রবৃত্তির তাড়না, স্বজনপ্রীতি কিংবা ঘুষের কারণে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফায়সালা দেয় না। উপরে এবিষয়টিও আল্লামা আহমাদ শাকের রাহ. বর্ণনা করেছেন। আরো বিস্তারিত পড়তে উমদাতুত-তাফসীর এর উপরোক্ত পৃষ্ঠায় দেখুন। ]

 

“আত-ত্বয়িফাতুল মুমতানি’আহ”  তথা শরীয়তের কোনো আহকাম পরিত্যাগকারী দলের ক্ষেত্রে কোনো সংশয়,সন্দেহ গ্রহণযোগ্য না হওয়ার ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ.

 

১। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ. বলেন,  

وقد اتفق الصحابة والأئمة بعدهم على قتال مانعي الزكاة وإن كانوا يصلون الخمس ويصومون شهر رمضان . وهؤلاء لم يكن لهم شبهة سائغة فلهذا كانوا مرتدين وهم يقاتلون على منعها وإن أقروا بالوجوب كما أمر الله . وقد حكي عنهم أنهم قالوا : إن الله أمر نبيه بأخذ الزكاة بقوله : { خذ من أموالهم صدقة } وقد سقطت بموته .

وكذلك أمر النبي صلى الله عليه وسلم بقتال  الذين لا ينتهون عن شرب الخمر .

"সাহাবায়ে কিরাম ও তাদের পরবর্তী ইমামগণ যাকাত প্রদান থেকে বিরত থাকা লোকদের বিরুদ্ধে ক্বিতালের ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন, যদিও পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতো এবং রমযান মাসের সাওম প্রদান করতো। কিন্তু তাদের কোনো গ্রহণযোগ্য বা বৈধ সংশয় ছিল না। একারণে তারা মুরতাদ ছিল। আর তারা যাকাত প্রদান থেকে বিরত থাকার উপরে যুদ্ধ করে, যদিও আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে যাকাত ফরয হওয়াকে তারা স্বীকার করেছে। আর তাদের ব্যাপারে বর্ণিত আছে, তারা বলতোঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবি কে যাকাত গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। যেমনঃ আল্লাহর বাণীঃ (আপনি তাদের সম্পদ থেকে সাদাকাহ/যাকাত গ্রহণ করুন)। রাসূল সা. এর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই বিধান রহিত হয়ে গেছে। 

অনুরুপভাবে নবি সা.  তাদের বিরুদ্ধে ক্বিতালের নির্দেশ দিয়েছেন যারা মদ পান থেকে বিরত থাকতো না।" (মাজমু’আতুল ফাতাওয়া, ২৮ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫১৯)

 

[যাকাত পরিত্যাগকারী ব্যক্তিরা সালাত আদায় করা, সাওম পালন করা করার পরেও তারা যে মুরতাদ ছিল এব্যাপারে উম্মাহর সকল সাহাবী ও আলিমদের ইজমা’ রয়েছে। এমনকি তারা যাকাত ফরয হওয়াকেও স্বীকার করতো। কিন্তু রাসূল সাঃ এর ইন্তেকালে সেই বিধান রহিত হয়ে গেছে বলে মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়েছিল। শুধু এতোটুকুতেই তারা মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল এবং এ ব্যাপারে তাদের কোনো সংশয়-আপত্তি গ্রহণ করা হয়নি। তাহলে বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোতে যেসব সাসকেরা আল্লাহর প্রায় সকল বিধান বাতিল করে নিজেরা আইন তৈরি করে নিয়েছে, সুদ,যিনা,মদ ইত্যাদিকে প্রকাশ্যে বৈধ করেছে এবং আল্লাহর বিধান কায়েমের চেষ্টাকারীদেরকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিচ্ছে, তাদের হুকুম কী হতে পারে !! প্রত্যেক ‘আকলে সালীম’ তথা সুস্থজ্ঞানসম্পন্ন মানুষের বুঝতে কোনো ধরণের কষ্ট হওয়ার কথা নয়। ]

 

২। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ. আরো বলেন,  

والتتار وأشباههم أعظم خروجا عن شريعة الإسلام من مانعي الزكاة والخوارج من أهل الطائف الذين امتنعوا عن ترك الربا . فمن شك في قتالهم فهو أجهل الناس بدين الإسلام وحيث وجب قتالهم قوتلوا وإن كان فيهم المكره باتفاق المسلمين . كما قال العباس لما أسر يوم بدر : يا رسول الله إني خرجت مكرها . فقال النبي صلى الله عليه وسلم { أما ظاهرك فكان علينا وأما سريرتك فإلى الله } .

"তাতার এবং তাদের অনুরুপ যারা আছে তারা ‘মানিউ’য-যাকাত’ বা যাকাত প্রদান থেকে বিরত থাকা এবং তায়েফের অধিবাসী যারা সূদ পরিহার করা থেকে বিরত থেকেছে তাদের চেয়েও অধিক ইসলামী শরীয়ত থেকে বের হয়ে গেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি তাতারদের সাথে যুদ্ধ করার ব্যাপারে কোনো সংশয় পোষণ করবে সে দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে জাহেল ব্যক্তি।   তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ওয়াজিব। মুসলিমদের ঐক্যমতে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে, যদিও তাদের মধ্যে বাধ্য হয়ে যোগ দেওয়া লোকেরা রয়েছে।"   (মাজমু’আতুল ফাতাওয়া, ২৮ খণ্ড, পৃষ্ঠা-৫১৯)

 

 [তাতারীরা ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করতো। কিন্তু তারপরও তারা তাদের বাপদাদাদের তৈরি ‘ইয়াসিক’ সংবিধান দিয়ে রাষ্ট্র চালাতো বিধায় ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ. এবং সেযুগের সকল হক্ব উলামায়ে কিরাম তাদেরকে সুস্পষ্ট মুরতাদ আখ্যা দিয়েছেন এবং তাদেরকে মুরতাদ আখ্যা দেওয়া ও তাদের বিরুদ্ধে কিতালের ক্ষেত্রে কোনো ওযর-সংশয় প্রকাশকারীকে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে জাহেল বলে আখ্যা দিয়েছেন। ]

 

উল্লেখ্য যাদের ক্ষেত্রে কোনো ওযর গ্রহণযোগ্য নয়,তাদের উপরে হুজ্জাহ কায়েম করার প্রশ্নই আসে না। হুজ্জাহ তাদের ক্ষেত্রেই কায়েম করতে হবে যাদের কুফর/রিদ্দাহ এর ক্ষেত্রে অজ্ঞতা কিংবা অন্য কারণে কোনো ওযর গ্রহণযোগ্য।

আশা করি, স্ব-স্ব যুগের দু’জন যুগশ্রেষ্ঠ মহান আলিমের বক্তব্যের মাধ্যমে গ্লোবাল জিহাদের সমর্থনকারী আলিমগণ ‘তাকফীরী/কিংবা তাকফীরের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির অপবাদ থেকে মুক্ত হয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ্‌, জিহাদের আলিমগণ সবধরণের ইফরাত ও তাফরীত থেকে মুক্ত, ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ্‌। ত্বগুতের শত নির্যাতন নিপীড়ন সত্ত্বেও এই যুগে হক্বকে প্রতিনিধিত্ব করা গুরাবা আলিমদেরকে সবধরনের বাড়াবাড়ি থেকে আল্লাহ তা’আলা হিফাযতে রাখুন।  

আর আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে শরীয়তের আহকাম নিয়ে প্রবৃত্তির খেলায় মত্ত হওয়া থেকেও হিফাযত করুন।

লেখকঃ Zamil_Hasan

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

তাওহীদ ও জিহাদের বিশুদ্ধ মানহাজের উপর গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখা সম্বলিত মূল পেইজ

লিংক...https://justpaste.it/tawhid_jihad