রিবাতের ভূমি থেকে চিঠি
সুসংবাদ তাদের জন্য
যারা ধৈর্য ধরে অটল থাকবে!
মূল
মাওলানা কারী আবু হাফছ আব্দুল হালিম রহিমাহুল্লাহ
অনুবাদ
মুহাম্মাদ সালাহুদ্দীন
[চিঠি মানুষের জীবনে, আদবে ইত্যাদিতে প্রচণ্ড প্রভাব ফেলে৷ এই চিঠিগুলো তার মধ্যে অনন্য৷ চিঠির লেখক আল-কায়েদা উপমহাদেশের অর্থ বিভাগের জিম্মাদার রোকন ভাই মাওলানা কারী আবু হাফছ আব্দুল হালিম৷ জিহাদের ময়দানে “কারী আব্দুল আযীয” নামে পরিচিত৷ বৃদ্ধ অবস্থায়ও তিনি জিহাদ করেছেন৷ ২০১৫ সালে আমেরিকান এক অভিযানে শহিদ হন৷ জিহাদের ময়দান থেকে মাঝে মাঝে শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখতেন, এবং সেগুলোকে গুছিয়ে রাখতেন৷ “নাওয়ায়ে আফগান জিহাদ” এর পক্ষ থেকে চিঠিগুলো প্রকাশ করার সুযোগ হয়েছে (আলহামদু লিল্লাহ)৷ আল্লাহ তা'আলা যেন এই চিঠির লেখক, পাঠক, প্রচারক সবাইকে আখেরাতে উত্তম প্রতিদান দেন (আমিন)৷ -নাওয়ায়ে আফগান জিহাদ ম্যাগাজিন কর্তৃপক্ষ]
[চিঠির লেখক সম্মানিত শাইখ একজন বাংলাদেশী আলিম, যিনি খোরাসানের পুণ্যভূমিতে হিজরত করেছেন। এই কথা যদিও মূল ম্যাগাজিনে উল্লেখ নেই, কিন্তু শাইখের এই নামে আন নাসরের পক্ষ থেকে আস সাহাবের টেলিগ্রাম চ্যানেলে কিছু বাংলা পুস্তিকা প্রকাশ করা, আমিরুল হিন্দ মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহর একটি চিঠিতে বাংলাদেশী মুজাহিদ শহীদদের আলোচনায় এই নামের উল্লেখ থাকা’কে আমরা শাইখের বাংলাদেশী হিসেবে প্রমাণ পেশ করছি। - বাংলা সম্পাদক]
بسم الله الرحمن الرحيم
نحمده و نصلى على رسوله الكريم
আমার প্রিয় মুসলিম ভাইগণ!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ৷
আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন৷ আমরাও আল্লাহর রহমতে, আপনাদের দুয়ায় ভালো আছি৷
চিঠির মাধ্যমে আপনাদের কাছে কথাগুলো পৌঁছাতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত৷ আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ, তিনি আমাদেরকে দ্বীনের মধ্যে শামিল করেছেন, এবং তিনি আমাদেরকে তাঁকে স্মরণের সুযোগ করে দিয়েছেন, এজন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি৷ আলহামদুলিল্লাহ্।
আমরা আলোচনা শুরুর পূর্বে আরো একবার আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করি যিনি আমাদেরকে হেদায়েতের নিয়ামত দিয়ে ধন্য করেছেন৷ এবং আমাদেরকে তাঁর পছন্দনীয় কাজের জন্য নির্বাচিত করেছেন৷ যেমন আল্লাহ বলেন:-
وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمينَ مِن قَبْلُ وَفِي هَذَا لِيَكُونَ الرَّسُولُ شَهِيدًا عَلَيْكُمْ وَتَكُونُوا شُهَدَاء عَلَى النَّاسِ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَاعْتَصِمُوا بِاللَّهِ هُوَ مَوْلَاكُمْ فَنِعْمَ الْمَوْلَى وَنِعْمَ النَّصِيرُ
তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। তিনিই তোমাদের নাম মুসলমান রেখেছেন পূর্বেও এবং এই কোরআনেও, যাতে রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষ্যদাতা এবং তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলির জন্যে। সুতরাং তোমরা নামায কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে শক্তভাবে ধারণ কর। তিনিই তোমাদের মালিক। অতএব তিনি কত উত্তম মালিক এবং কত উত্তম সাহায্যকারী। [ সূরা হাজ্জ্ব ২২:৭৮ ]
অন্যথায় আমরা স্বীয় প্রচেষ্টায় এই পথে চলার উপযুক্ত নই৷
অতপরঃ হাজার দুরূদ এবং সালাম বর্ষিত হোক, রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর যার মাধ্যমে আমরা দ্বীনের সঠিক রাস্তা পেয়েছি৷
আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর দুরূদ প্রেরণের পরে ভূমিকা হিসাবে কিছু কথা বলা দরকার, যাতে আমরা আমাদের করণীয় কাজগুলো বুঝতে পারি৷
কোনো ব্যক্তি যদি কোনো যুদ্ধে জয়ী হতে চায় - তাহলে অবশ্যই তার পায়ে ধুলো লাগবে৷ এটা প্রসিদ্ধ কথা, বসে থাকা ব্যক্তির পায়ে অতীতে কখনো ধুলো লাগে নাই ভবিষ্যতেও লাগবে না৷ ঠিক তেমনি ভাবে যখন কোনো মুমিন আল্লাহর পছন্দণীয় রাস্তায় বের হয় তখন তার পায়ে ধুলো লাগবে এবং তাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হবে৷ কষ্ট কখনো তার জন্য পেরেশানির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আবার কখনও কখনও শান্তি বা আরামের কারণ হয়৷
এই রাস্তার পথিকের কাজের উপর তার ফলাফল নির্ধারিত হয়৷ হয়ত এই কষ্টের কথায় বিপদ কেটে যাবার পর মানুষের সামনে হাসিমুখে বলতে পারে৷ যারা রাস্তায় চলাচলের সময় হঠাৎ চলে আসা কষ্টগুলোকে, কষ্ট মনে না নিয়ে, হাসি মুখে বরণ করে নেয়, তারাই যুদ্ধে কামিয়াব হয়৷ এই ধরণের লোকদেরকে আল্লাহ তা'আলা সুসংবাদ দিয়ে বলেন:-
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। [সূরা বাকারা ২:১৫৫]
মোটকথা, এই রাস্তায় ধৈর্য এবং আন্তরিকতার উপর প্রতিদান নির্ভর করে৷ এবং প্রতিদানের মধ্যে কোনো প্রকার কমতি করা হয় না৷
আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা মুমিনের জন্য রহমত স্বরূপ৷ আমাদের উচিত সময় নষ্ট না করে তাঁর অনুকম্পা এবং জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর অর্জনের জন্য চেষ্টা করা। মুমিন বান্দার জন্য জান্নাতের রাস্তা দিয়ে চলা সহজ ব্যাপার নয়৷ কারণ জান্নাতকে কষ্ট এবং পরীক্ষা দ্বারা ঘিরে রাখা হয়েছে৷ জান্নাতের বিনিময়ে আল্লাহ তা'আলা মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন৷ এই পথে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ কিন্তু কিছু ব্যক্তির উপর আল্লাহ তা'আলা রহমতের ডানাকে প্রশস্ত করে দেন এবং কষ্ট ছাড়া জান্নাতে পৌঁছে দেন৷ অতীতে আল্লাহ তা'আলা কতক মানুষকে কষ্ট ছাড়াই নাজাত দিয়েছেন৷ এবং ভবিষ্যতেও তিনি এমন করতে সক্ষম৷
আল্লাহ তা'আলা যাদের দ্বারা পুরো পৃথিবীর নেতৃত্বের কাজ নিবেন তাদের পরীক্ষা অন্যদের তুলনায় ব্যতিক্রম৷ আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে কঠিন পরীক্ষা ফেলে কষ্ট-ক্লেশের মাধ্যমে নির্মল বানান৷ যেমনটা মর্যাদাবান নবীগণ, আল্লাহর ওলিগণ এবং অনেক ঈমানদারের ক্ষেত্রে হয়েছে৷
হযরত ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) আল্লাহ তা'আলার পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন৷ প্রথমত আল্লাহ তা'আলা নমরূদের আগুনে ফেলেছেন৷ দ্বিতীয়ত বাদশার বিরোধী বানিয়ে হিজরত করিয়েছেন৷ সবশেষ তাঁর কলিজার টুকরা সন্তানকে জবাই করার আদেশের মাধ্যমে পরীক্ষা করেছেন৷ অতপরঃ ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন, আল্লাহ তাঁর উপর রহমত বর্ষণ করেন৷ আল্লাহ তা'আলা বলেন:-
وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِن ذُرِّيَّتِي قَالَ لاَ يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ
যখন ইব্রাহীমকে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন, তখন পালনকর্তা বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করব। তিনি বললেন, আমার বংশধর থেকেও! তিনি বললেন আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌঁছাবে না। [সূরা বাকারা ২:১২৪]
একথা বলে আল্লাহ তা'আলা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) কে সবথেকে বড় মর্যাদা দুনিয়ার সর্দারী দিলেন৷
আল্লাহ তা'আলা হযরত ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)কে দুনিয়ার নষ্টামি থেকে রক্ষা করতে জেল-হাজতের কষ্ট দিয়েছেন৷ বিনিময়ে ইউসূফ (আলাইহিস সালাম)কে মিশরের নেতা বানিয়েছেন৷ আল্লাহ তা'আলা এক দিকে তাঁর ভাইদের এবং জালিমদের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা করেছেন৷ পাশাপাশি চিন্তা এবং মুসিবতে ফেলে ইয়াকুব আলাইহিস সালামের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন৷ আল্লাহ তা'আলা বলেন:-
لَقَدْ كَانَ فِى يُوْسُفَ وَ اِخْوَتِه اٰيٰتٌ لِلسَائِلِيْنَ
অর্থ:- ইউসুফ (আলাইহিস সালাম) ও তার ভাইদের ঘটনাতে জিজ্ঞাসাকারীদের জন্য আপনার নবুওয়াতের প্রমাণাদি আছে৷ [সূরা ইউসুফ ১২:৭]
এসব ঘটনা থেকে আমাদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে৷
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা'আলা হযরত আইয়ূব আলাইহিস সালামের কাছ থেকে মাল এবং সন্তানাদি ছিনিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন৷ যখন তিনি পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করলেন, তখন হারানো জিনিসসমূহকে আরো উন্নত ও বৃদ্ধি করে ফিরিয়ে দিলেন৷
আল্লাহ তা'আলা ঈমানদারদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন:-
وَ لَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَىءٍ مِنَ الخَوْفِ وَ الجُوْعِ وَ نَقْصٍ مِنَ الاَمْوَالِ وَ الاَنْفُسِ وَ الثَّمَرَاتِ وَ بَشِّرِ الصَّابِرِيْنَ
অর্থ:-আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো কিঞ্চিৎ ভয় দ্বারা, আর উপবাস দ্বারা এবং সম্পদ, প্রাণ ও ফসলের স্বল্পতা দ্বারা, আর সুসংবাদ শুনিয়ে দিন ধৈর্যশীলদেরকে৷ [সূরা বাকারা-১৫৫]
যেহেতু এটি নবীগণের রাস্তা৷ বিধায় এখানে অত্যন্ত জটিলতা রয়েছে৷ কিন্তু জটিলতা চিরদিনের জন্য থাকে না, সাময়িকের জন্য আসে৷ আল্লাহ তা'আলা শুধুমাত্র দেখেন, কে সত্য পথে অটল থাকে, আর কে সত্য পথ থেকে সরে যায়৷
আল্লাহ তা'আলা আরও বলেন:-
اَحَسِبَ النّاسُ اَنْ يُتْرَكُوْا اَنْ يَّقُوْلُوْآ اٰمَنَّا وَ هُمْ لَايُفْتَنُوْنَ-وَ لَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللّٰهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَ لَيَعْلَمَنَّ الْكٰذِبِيْنَ
অর্থ:- মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে। [সূরা আনকাবুত ২৯:২-৩]
আল্লাহ তা'আলা পরীক্ষার মাধ্যমে শুধুমাত্র ভালো-মন্দ নির্বাচন করে ক্ষান্ত হন না৷ বরং প্রিয় বান্দাদেরকে পরীক্ষার মাধ্যমে দুনিয়ার খারাপ জিনিস থেকে সংযমে রেখে, বান্দার মর্যাদা বাড়িয়ে নিজের নিকটবর্তী করে নেন৷
আমার প্রিয় ভাই সকল!
আল্লাহ তা'আলার নিকটবর্তী হওয়ার জন্য দুটি সহজ রাস্তা রয়েছে৷ যে দুই রাস্তায় মুমিন বান্দা সহজেই আল্লাহর নিকটবর্তী হতে পারে৷ প্রথম রাস্তাটি হলো, জেলখানায় বন্ধি হওয়া৷ এ সময় মুমিন বান্দার জন্য সকল দরজা বন্ধ হয়ে যায়৷ কিন্তু আল্লাহর দরজা সর্বদার জন্য খোলা থাকে৷ একমাত্র মুমিন বান্দা নিজে ছাড়া এই দরজা কোনো লোক বন্ধ করতে পারবে না৷ মুমিন বান্দা বন্দি অবস্থায় আল্লাহর স্বরণ থেকে বিমুখ হলে আল্লাহ দরজাটি বন্ধ করে দেন৷ জেলখানা মুমিন বান্দার জন্য জেলখানা নয় এটা মূলত আল্লাহর মারিফাত হাসিলের শিক্ষালয়৷
আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার দ্বিতীয় রাস্তা হল যুদ্ধের ময়দান৷ যুদ্ধের ময়দান আল্লাহর নিকবর্তী হওয়ার ভালো শিক্ষাঙ্গন৷ কিন্তু আমার মনে হয় আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়ার জন্য যুদ্ধের ময়দানের থেকে ভালো স্থান কোথাও নেই৷ এখন মুমিনদের করণীয় এই দুই রাস্তা থেকে নিজেদের সাধ্যমত মতি কুড়ানো৷
আমার প্রিয় ভাইগণ!
আপনারা এই ময়দান থেকে ফায়দা নিতে কারো পরোয়া করবেন না৷ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়া-চড়া করে না৷ এবং আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কারো একটি চুলও বাঁকা করা যায় না৷ অনুরূপভাবে আল্লাহ না চাইলে আমাদের চাওয়ার দ্বারা কিছুই হবে না৷ আল্লাহ তা'আলা বলেন:-
مَا تَشَاءُوْنَ اِلَّا اَنْ يَّشَاءَ اللّٰهُ رَبُّ الْعٰلَمِيْنَ وَمَا تَشَاؤُونَ إِلَّا أَن يَشَاء اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ
অর্থ:- তোমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অভিপ্রায়ের বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না। [সূরা তাকভীর ৮১:২৯]
তবে আমাদের চাওয়া, আল্লাহ যেন খুব দ্রুত তাঁর সাক্ষাৎ লাভ করান (আমিন)৷
দুয়া এবং আত্মীয়তা রক্ষা করা, এগুলো তাকদিরকেও পরিবর্তন করে দিতে পারে৷ এজন্য আপনাদেরকে অনুরোধ করবো আপনারা প্রতিটা মূহুর্তকে যথাযথ মূল্যায়ন করবেন৷ সময় নষ্ট না করে আল্লাহকে স্বরণ করবেন৷ ধৈর্যের সাথে কাজ করবেন৷ আখেরাতে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করবেন৷ আপনাদের মধ্যে যাদের কুরআন মুখস্থ আছে এবং যারা দেখে দেখে পড়তে পারেন, আপনারা সবাই মানুষদেরকে কুরআনের শিখাবেন৷ কুরআন মুখস্থ করা এবং বুঝার চেষ্টা করবেন৷ ভালো অথবা মন্দ উভয় অবস্থায় তাক্বদীরের উপর রাজি-খুশি থাকবেন৷ আল্লাহর উপর ভরসা রাখবেন৷ সকাল-সন্ধ্যার আজকারগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিবেন৷ যখন সুযোগ হয়, বিনয়ী হয়ে আস্তে আস্তে নিরবে আল্লাহর কাছে চাইবেন৷ তাঁর দরজা মুমিনের জন্য সর্বদা খোলা থাকে৷ আল্লাহর রহমত নিজের জন্য বরাদ্দ করতে চাইলে নিচে উল্লেখিত দুয়ার প্রতি গুরুত্ব দিবেন৷ এবং দৈনন্দিনের কাজ বানিয়ে নিবেন৷
اَلّٰهُمَّ رَحْمَتَكَ اَرْجُوْ فَلَاتَكِلْنِى اِلَى نَفْسِى طَرْفَةَ عَيْنٍ وَاَصْلِحْ لِى شَأنِى كُلَّه لَا اِلٰه اَنْتَ
أبو داود، كتاب الأدب، باب ما يقول إذا أصبح، برقم 5090، وأحمد، 34/ 75، برقم 20430،.
অর্থ:- হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমতের আশা করছি৷ আপনি এক মুহুর্তের জন্যেও আমাকে ছেড়ে দিবেন না৷ আপনি আমার সার্বিক অবস্থাকে পরিবর্তন করে দেন৷ কেননা আপনি ছাড়া অন্য কোনো প্রভু নাই৷ (আবু দাউদ, আহমাদ)
যে আপনার সাথে সম্পর্ক করতে চায় আপনি তার সাথে সম্পর্ক করুন৷ যে আপনাকে দয়া করতে চায় আপনিও তাকে দয়া করার ওয়াদা করুন৷ আল্লাহ যখন বন্দীদশা থেকে মুক্ত করবেন ওই সময় তার দয়ার বদলা দয়ার মাধ্যমে করার নিয়ত করুন৷ এর দ্বারা আল্লাহ তা'আলা অতিশীঘ্রই মুক্তির ব্যবস্থা করবেন৷ কারণ দয়ার প্রতিদান দয়া দিয়েই হয়৷ অথবা বন্দি হওয়ার পূর্বের কোনো নেক কাজের উছিলায় দুয়া করবেন৷ আশা করা যায় অচিরেই আল্লাহ আপনাদের দুয়া কবুল করবেন৷
সারকথা হলো, বন্দিত্বের কষ্ট আল্লাহর ইচ্ছায় হয়ে থাকে৷ আল্লাহ তা'আলা অল্প কষ্টের মাধ্যমে মুমিনদেরকে দুনিয়ার খারাপ এবং অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করেন৷ পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা মর্যাদা বাড়িয়ে তার দ্বারা নেতৃত্বের কাজ নেন৷ এবং তাকে নিজের নিকটবর্তী করে নিয়ে জান্নাতের হকদার বানান৷ আমরা যদি একটু খেয়াল করে দেখি, তাহলে দেখতে পাবো, এরকম ভালো জিনিস সাধারণ স্থানে পাওয়া যায় না৷
সবশেষ, সবার কাছে আমার সালাম এবং দুয়ার দরখাস্ত রইলো৷ যখন এখানে ভ্রমণে আসবেন তখন আমাকে স্বরণ করবেন৷ জান্নাত ঈমানদারদের সাক্ষাতের স্থান৷ আর দুনিয়াতে দেখা না হলে জান্নাতে দেখা হবে ইনশা আল্লাহ৷
আল্লাহর কাছে দুয়া করি, তিনি যেন আমাদের সকল বিষয়কে সহজ করে দেন৷
হে আল্লাহ! আমরা আপনার রহমতের আশায় আছি৷
اَلَّهُمَّ ارْحَمْنَا فَاِنَّكَ خَيْرُ الْرٰحِمِيْنَ
হে আল্লাহ! আপনি আমার উপর দয়া করুন, কেননা আপনি সবচেয়ে বড় দয়াবান!
الَّهُمَّ انْصُرْنَا فَاِنَّكَ خَيْرُ النَّاصِرِيْنَ
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সাহায্য করুন, কারণ আপনি বড় সাহায্যকারী৷
وَ صَلَّى اللّٰه عَلَى خَيْرِ خَلْقِه مُحَمَّدٍ وَ عَلَى اٰلِه وَصَحْبِه اَجْمَعِيْنَ بِرَحْمَتِكَ يَا اَرْحَمَ الرٰحِمِيْنَ
*********************