প্রকৃত মুমিন হতে হলে
অন্তর নেফাকমুক্ত হতে হবে
মুফতি হাসান আব্দুল বারী
وَلَوْ أَرَادُوا الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُۥ عُدَّةً وَلٰكِن كَرِهَ اللَّهُ انۢبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُوا مَعَ الْقٰعِدِينَ
‘আর যদি তারা বের হওয়ার সংকল্প নিত তবে অবশ্যই কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো; কিন্তু তাদের উত্থান আল্লাহর পছন্দ হয়নি, তাই তাদের নিবৃত রাখলেন এবং আদেশ হল- বসা লোকদের সাথে তোমরা বসে থাকো।’ -সুরা তাওবা ৪৬
ব্যাখ্যা: মোনাফেকরা প্রকৃত পক্ষে জিহাদে বের হতে চায় না। বের হওয়ার কোন মুরোদ তাদের নেই। সুতরাং তাদের এ দাবি অবান্তর যে, আমরা তো বের হতে চাই, কিন্তু অযাচিতভাবে নানা ঝামেলা এসে উপস্থিত হয়। তারা যদি বের হওয়ার সংকল্প নিত তবে অবশ্যই প্রস্তুতি নিত। জিহাদের সরঞ্জাম সংগ্রহ করতো। জিহাদের কামনা-বাসনা লালন করতো; কিন্তু এর কিছুই তারা করেনি। এ থেকে প্রতীয়মাণ হয়ে-এরা মূলত জিহাদে বের হতে চায় না; বরং বলা ভালো, এদের নেফাকের কারণে আল্লাহই চান না তারা বের হোক! আল্লাহ তাদেরকে জিহাদের মতো মহান সম্মানে ভূষিত করতে চান না বিধায় তাদের অলস-অকর্মণ্য বানিয়ে দিয়েছেন ওজরগ্রস্ত, নারী-শিশুদের মতো ঘরে বসিয়ে রেখে। উপমহ দেশের প্রখ্যাত মুফাসির আহমদ আলী লাহোরী রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, 'বোধগম্য কোন কারণে এরা জিহাদ থেকে দূরে থাকে না; বরং জিহাদের ইচ্ছায় কখনো প্রস্তুতি নেওয়ার কথা এদের মনেই উদয় হয় নি। তাই এমন বেইমানদের আল্লাহ জিহাদের মতো পবিত্র সফরে শরীক রাখতে চান না।
ইমাম আবু জাফর তাবারী রহ. فَثَبَّطَهُمْ এর ব্যাখ্যায় লিখেন,
فثقل عليهم الخروج حتى استخفوا القعود في منازلهم خلافك ، واستثقلوا السفر والخروج معك ، فتركوا
‘(তাদের নেফাকির কারণে) আল্লাহ জিহাদে বের হওয়াকে তাদের কাছে বড় কঠিন কাজ বানিয়ে দিয়েছেন। আর তাই তারা আপনার অবাধ্য হয়ে ঘরে বসে থাকাকে সহজ কাজ মনে করে আপনার সাথে বের হওয়ার চেয়ে। তাই তাদের পরিত্যাগ করা হয়েছে।–তাফসীরে তাবারি
জিহাদের প্রস্তুতি নেওয়া ফরজ যদি সামান্য সময়ের জন্য ধরে নেওয়া হয় যে, যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা তাদের ছিল; তবে ওজরগ্রস্ত হওয়ায় বের হতে পারেনি। তাহলে প্রশ্ন হবে-কেন প্রস্তুতি নেয়নি- এটাতো ফরজ ছিল। সমস্যাগ্রস্ত হলে ইমামই তাদের ছাড়পত্র দিবেন! আসল কথা হল আল্লাহ চান না এদের মতো দুমুখোদের জিহাদের মতো পবিত্র ইবাদতে শরীক রাখতে। কারণ, জিহাদে বেরুবার পূর্বেই যখন গাঁইগুই করছে, বাহান খুঁজছে, তাহলে তো জিহাদে গিয়ে আরা বড় ঝামেলার সৃষ্টি করবে। তাই মহান আল্লাহ তাদের দুরাচার থেকে মুজাহিদদের মুক্ত রাখার জন্য এদেরকে নিবৃত্ত করেছেন।
যেমনটি আল্লাহ অন্য আয়াতে বিবৃত করেছেন এভাবে
رضوا بأن يكونوا مع الخوالف وطبع على قلوبهم فهم لا يفقهون
“বস্তুত অসহায় নারী-শিশু-অসুস্থদের সাথে তাদের তুলনা করে; তিরস্কার করা হয়েছে।”–মাদারেক
শিক্ষা:
* জিহাদের জন্য না আছে সংকল্প, না আছে প্রস্তুতি, না তামান্না। অথচ লম্বা লম্বা ভাষণ দিতে পটু। এটা কি কোন মুসলিমের কাজ হতে পারে? ভেবে দেখা প্রয়োজন।
* কিছু মানুষ আছেন যারা নিজেদের জিহাদ ও মুজাহিদীনের চেয়ে সম্মানী মনে করেন। কোন অবস্থাতেই তারা জিহাদে বের হতে আগ্রহী নন। এ আয়াত তাদেরকে ডাক দিয়ে যায় আদর্শ পুনর্মূল্যায়নের।
* আয়াতের প্রেক্ষাপট ছিল তাবুক যুদ্ধ। রাসূল ﷺ স্বয়ং মদীনার পবিত্র ভূমি ছেড়ে; দীনের তালীম, তরবিয়ত বন্ধ রেখে, এসলাহী তৎপরতা বন্ধ রেখে কোথায় রওয়ানা হলেন? জিহাদে নয় কি? অথচ আমরা জানি বাস্তবে এ যাত্রায় কোন যুদ্ধ হয়নি । তারপরও কোরআনে এ যুদ্ধের এত ফজিলত বর্ণিত হল কেন? যারা বের হননি তাদের সাথে এত কঠোরতা করা হল কেন ? এ ঘটনা থেকে অবশ্যই আমাদের শেখার অনেক কিছু আছে, কথিত মাসলাহাতের গোলক ধাঁধায় আটকে আজ আমরা কোথায় যাচ্ছি অবশ্যই তা ভেবে দেখতে হবে। আল্লাহ আমাদের হৃদয়ের যাবতীয় সংশয় দূর করে দিন। নেফাকমুক্ত ঈমান দান করুন। আমরা যেন নবীওয়ালা সে দীন হৃদয়ে ধারণ করতে পারি। আমীন।
আল বালাগ
ম্যাগাজিন ইস্যু-১