বীর সেনাপতি জালালুদ্দিন হাক্ক্বানী’র বাসা হতে
সোমবার বিকাল, ১২শ শাবান ১৪০৬ হিজরী, ২০শে এপ্রিল ১৯৮৬
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, আমরা তার কাছে আমাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং ক্ষতিকর ও খারাপ কাজ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আল্লাহ্ যাকে পথ প্রদর্শন করেন তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না আর যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে কেউ পথ প্রদর্শন করতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সা) তাঁর বান্দা এবং রাসুল।
হে প্রভূ! যদি আপনি সহজ না করে দেন, কোনকিছুই সহজ নয়, এবং আপনি যদি চান তাহলে যেকোন কঠিনকে সহজ করে দিতে পারেন। জিহাদের প্রতি ভালোবাসা আমার জীবন, আমার স্বত্ত্বা, আমার অনুভূতি, আমার হৃদয় এবং আমার বিবেক-বুদ্ধির উপর আধিপত্য বিস্তার করেই চলেছে।
সূরা আত-তাওবাহ’র যে আয়াতগুলোতে ক্বিয়ামাহ পর্যন্ত জিহাদের চূড়ান্ত বিধানগুলো প্রকাশ করা হয়েছে, আমার হৃদয়ে সেগুলো ব্যথা ও দুঃখের উদ্রেক করে যখন আমি আমার অক্ষমতা উপলব্ধি করি আর মুসলিমদেরকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা হতে বিমুখ দেখি।
তরবারীর আয়াত, পূর্বে নাজিলকৃত জিহাদের ১৪০ টির মতো আয়াত কে রহিত করে দিয়েছে, তা একটি যথাযথ জবাব তাদের জন্য যারা আল্লাহর পথে জিহাদের এই আয়াতগুলো নিয়ে তামাশা করে, অথবা এর পরিষ্কার অর্থকে পরিবর্তন করে অথবা এর যথাযথ সংজ্ঞাকে বিকৃত করে। তরবারীর সেই আয়াত:
“এবং মুশরিকদের বিরুদ্ধে তোমরা সমবেতভাবে লড়াই করো, যেভাবে তারা তোমাদের বিরুদ্ধে করে। আর জেনে রাখো আল্লাহ্ মুত্তাক্বীনদের সাথেই আছেন। -আত-তাওবাহঃ ৩৬
“অতঃপর হারাম মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদেরকে হত্যা করো যেখানে তাদের পাও, তাদেরকে বন্দী করো এবং অবরোধ করো। আর প্রত্যেকটি ঘাটিতে ওঁৎ পেতে বসে থাকো। কিন্তু যদি তারা তাওবাহ করে, স্বালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে তবে তাদের ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ্ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।“ – আত-তাওবাহঃ ০৫
”তাদেরকে পরিত্যাগ করুন, যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা হতে বিরত থাকার জন্য বাহানা পেশ করে নিজেদের ধর্মকে ক্রীড়া ও কৌতুকরূপে গ্রহণ করেছে এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে ধোঁকায় ফেলে রেখেছে।“ – আল-আন’আমঃ ৭০
সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ছাড়া উচ্চাভিলাষ পোষণ করা হলো সেইসব লোকদের বৈশিষ্ট্য যারা সফলতার শীর্ষস্থানে পৌঁছতে চায় না। পবিত্র মসজিদের দেখাশোনা ও পরিদর্শন করা জিহাদের সাথে তুলনীয় নয়, সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে সেই কারণ, যা সূরা তাওবাহ’র ১৯-২২ আয়াতে বলা হয়েছে,
”তোমরা কি হাজীদেরকে পানি সরবরাহ ও মাসজিদুল হারাম আবাদকরণকে সেই লোকের সমান মনে করো, যে ঈমান রাখে আল্লাহ্ ও শেষ দিনের প্রতি এবং লড়াই করে আল্লাহর রাহে, এরা আল্লাহর দৃষ্টিতে সমান নয়, আর আল্লাহ্ যালিমদেরকে হিদায়াত করেন না।
যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে এবং আল্লাহর রাহে নিজেদের জান ও মাল দিয়ে জিহাদ করেছে, তাদের বড় পুরস্কার রয়েছে আল্লাহর কাছে। আর তারাই সফলকাম।
তাদের সুসংবাদ দিচ্ছেন তাদের রব্ব স্বীয় দয়া ও সন্তোষের এবং জান্নাতের, সেখানে তাদের জন্য আছে স্থায়ী শান্তি।
সেখানে তারা থাকবে চিরকাল। নিঃসন্দেহে আল্লাহর কাছে আছে মহাপুরস্কার।“ –আত-তাওবাহঃ ১৯-২২
এই আয়াতগুলো নাযিলের কারণ হল, কয়েকজন সাহাবী নিজেদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দে ভুগছিলেন, ঈমান আনার পর কোন আমলটি আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম। কয়েকজন বলছিলেন মাসজিদুল হারামের পবিত্রতা বজায় রাখার কথা, কয়েকজন হাজীদের পানি পান করাতে চাচ্ছিলেন, আর অন্যরা বলছিলেন জিহাদের কথা।
এইসব আয়াত যথাযথ এবং পরিস্কার উত্তর যে জিহাদ করা মাসজিদুল হারামের পবিত্রতা বজায় রাখা এবং এর তদারকি করা থেকেও উত্তম, বিশেষতঃ যখন আমরা জানি যে, এই সকল আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ হলো সাহাবীদের মধ্যে এই নিয়ে বিরাজমান তর্ক। এইসব আয়াত নাযিল হওয়ার কারণকে ভুল ব্যাখ্যা করা অথবা অর্থ পরিবর্তন করার কোন সুযোগ নেই, কেননা এগুলোর অর্থ সুস্পষ্ট এবং যথার্থ।
আব্দুল্লাহ ইবন মুবারক (আল্লাহ্ তাঁর উপর রহম করুন) আল-ফুযাইল ইবন আইয়ায কে একটি চিঠি প্রেরণ করেন, যেখানে তিনি বলেন,
”ও! তোমরা যারা মাসজিদুল হারামের ‘আবেদ! যদি তোমরা আমাদেরকে জিহাদের ময়দানে দেখতে, তাহলে বুঝতে, আমাদের জিহাদের সাথে তুলনায় তোমাদের ইবাদত শিশুদের খেলামাত্র। যখন তোমরা চোখের পানি প্রবাহিত করো, তখন আমরা আমাদের বুকের রক্ত প্রবাহিত করি। তোমরা তোমাদের ইবাদত নিয়ে খেলা করছো, তোমরা যখন ইবাদত করছো, সেসময় মুজাহিদীনরা তাদের রক্ত ও জীবন উৎসর্গ করে দিচ্ছে।“
এখান থেকে সহজেই বুঝা যায় যে ইবন আল-মুবারক বিশ্বাস করতেন যে, মাসজিদুল হারামে ইবাদাত করা এবং এর আচার-অনুষ্ঠান পালন করা সত্ত্বেও এসব স্থানের পবিত্রতা লঙ্ঘিত হচ্ছে, মুসলিমদের রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, মুসলিম নারীদের সম্ভ্রম হানি হচ্ছে এবং ইসলামকে সমূলে উৎপাটন করা হচ্ছে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, এই অবস্থায় সন্মানিত মসজিদে প্রার্থনায় মগ্ন থাকা হলো সর্বশক্তিমান আল্লাহর দ্বীনের সাথে তামাশা করা, হ্যাঁ, যখন মুসলিমদেরকে জবাই হতে দিয়ে আমরা দূরে থেকে তাদের জন্য কেবলমাত্র মৌখিক প্রার্থনা করছি এবং তাদেরকে এই কঠিন অবস্থা থেকে মুক্ত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা ব্যতীত শুধু নিজেদের হাত কচলাচ্ছি। নিঃসন্দেহে এটা দ্বীনের সাথে তামাশা আর পরিহাস করা।
কীভাবে একজন মুসলিম শান্ত এবং নিশ্চল হয়ে বসে থাকে যখন মুসলিম নারীরা আগ্রাসী শত্রুদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে?
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যা আমি এই বইয়ে লিখেছি (বইঃ মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষা – ঈমান আনার পর প্রথম ফরজ) এবং শেইখ আল-ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ যেরকম বলেছেন, ঈমান আনার পরই ইসলামের এবং মুসলিমদের উপর আক্রমণকারী শত্রুদেরকে বাধা প্রদান করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অত্যাবশ্যকীয় প্রধান কাজ।
আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি (আল্লাহই ভালো জানেন), যে আল্লাহর পথে জিহাদ করে না আর যে স্বালাত আদায় করে না, সিয়াম রাখে না, যাকাত আদায় করে না তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
আমার বিশ্বাস হলো, সমগ্র মুসলিম উম্মাহ আল্লাহ্ এবং তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক বিরাট দায়-দায়িত্ব মাথায় নিয়ে আছে।
আমি বিশ্বাস করি কোন মুসলিম জিহাদ পরিত্যাগ করার জন্য কোন অজুহাতই পেশ করতে পারে না, সেটা হতে পারেঃ দাওয়াহ, বই প্রকাশ অথবা তারবিয়্যাহ’ বা যেকোনো কিছু।
আমার বিশ্বাস এই পৃথিবীতে প্রতিটি মুসলিমই জিহাদ ছেড়ে দেয়ার কুফল এবং অস্ত্র পরিত্যাগ করার গুনাহর জন্যে জন্যে দায়ী। প্রত্যেক মুসলিম যারা নিরস্ত্র হাতে জীবন পার করে দিচ্ছে তারা জিহাদ পরিত্যাগ করার পাপ মাথায় নিয়ে আল্লাহর মুখোমুখি হবে। বর্তমানে পৃথিবীর বুকে প্রতিটি মুসলিমের জন্য জিহাদে অংশগ্রহণ করা আবশ্যক, তারা ব্যতীত যাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আর এটা যথাযথভাবেই একটি আবশ্যকীয় কর্তব্য যা পুরস্কার অথবা শাস্তির কারণ।
আমি বিশ্বাস করি (আল্লাহই ভালো জানেন), যারা জিহাদ থেকে অব্যাহতি পাবে তারা হলঃ অন্ধ, পক্ষাঘাতগ্রস্থ, মজলুম পুরুষ, মহিলা এবং শিশু যাদের জিহাদের ময়দানে অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।
ফিলিস্তিনে, আফগানিস্তানে অথবা পৃথিবীর যেকোন স্থানে যেখানে মুসলিমদের ভূমি কুফফার দ্বারা আক্রমণের স্বীকার হচ্ছে, সমগ্র মুসলিম জাতি সেখানে জিহাদ পরিত্যাগ করার পাপ বহন করছে।
আমার বিশ্বাস, আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য কোন অনুমতির প্রয়োজন নেই, পিতা-মাতার অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই, স্বামী, উস্তাধ কিংবা আমীরের। আর এটাই সর্বকালের সকল উলামার মত। যখন জিহাদ ফরজ, তখন পুত্র অবশ্যই লড়াই করবে তার পিতা-মাতার অনুমতি গ্রহণ ছাড়াই, একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছ থেকে অনুমতি গ্রহণ ছাড়াই। আর যে ব্যক্তি এই স্বচ্ছ, পরিষ্কার বিধানকে অস্বীকার করতে চেষ্টা করবে সে অবশ্যই সীমা লঙ্ঘনকারী এবং তার প্রবৃত্তির অনুসারী এবং আল্লাহর নির্দেশ অমান্যকারী।
এটা একটা চূড়ান্ত এবং সুস্পষ্ট বিধান যেটার ভুল ব্যাখ্যা করার কোন সুযোগ নেই।
তিনটি ক্ষেত্রে খলিফার অনুমতি গ্রহণ আবশ্যক নয়ঃ
১। যখন জিহাদ করা প্রয়োজন অথচ খলিফা নিজে থেকে জিহাদের জন্য আহ্বান করে না।
২। যদি খলিফার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করা মানে হয় জিহাদে যোগদানের সুযোগ হারানো।
৩। যদি আমরা অগ্রিম জেনে থাকি যে, অনুমতি প্রদান করা হবে না।
আমি বিশ্বাস করি (আল্লাহ্ ভালো জানেন), আফগানিস্তানে প্রতিটি মুসলিম নারীর সম্মান ক্ষুণ্ন হওয়া এবং মুসলিমদের দেহ হতে অন্যায়ভাবে প্রবাহিত রক্তের প্রতিটি ফোঁটার দায়ভার সমগ্র মুসলিম উম্মাহর উপর বর্তায়। সুতরাং সবাই এই অপারধে অপরাধী। আর এটা এজন্য যে তারা যদি নিজেদের সাথে অস্ত্র-শস্ত্র সংগ্রহ করে রাখতো তাহলে তাদেরকে প্রতিরক্ষা করতে পারতো, এবং এজন্য যে তারা তাদেরকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিয়ে অথবা খাদ্য সামগ্রী কেনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দিয়ে অথবা নিরাপদ আশ্রয়স্থল নির্মাণের জন্য পরিখা খননের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে তাদেরকে সাহায্য করতে পারতো।
তারা চাইলেই এগুলো সম্পন্ন করতে পারতো কিন্তু তারা করেনি।
হাশিয়াত আল দাসক্বী, ভলিউম-২, পৃষ্ঠাঃ ১১১-১১২ তে বর্ণিত আছে, যদি কারো কাছে প্রচুর খাদ্যদ্রব্য মজুদ থাকে এবং সে কাউকে ক্ষুধার তাড়নায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেয় এই চিন্তা করে যে, সেই মানুষটি হয়তো ক্ষুধার তাড়নায় মৃত্যু বরণ করছে না, তাহলে তাকে নিজের পরিবারের পক্ষ হতে দিয়্যাত (রক্ত মূল্য) পরিশোধ করতে হবে। আর যদি সে নিশ্চিতই জেনে থাকে যে, লোকটির ক্ষুধার তাড়নায় মৃত্যু হবে তাহলে তাকে তার নিজের সম্পদ থেকে রক্তমূল্য পরিশোধ করতে হবে অথবা তাকে ক্বিসাস অনুযায়ী হত্যা করা হবে।
আমরা দেখতে পাই সেই সব ধনবান লোকদেরকে, যারা তাদের ব্যক্তিগত মনোবাসনা পূর্ণ করতে এবং বিলাসী পণ্য কিনে তাদের সম্পদকে অপচয় করে, তাদের জন্যও একই শাস্তি প্রতীক্ষা করছে।
হে! মুসলিমগণ! জিহাদ তোমাদের জীবন, তোমাদের সম্মান এবং তোমাদের অস্তিত্ব এর উপরই নির্ভর করে।
ওহে! ইসলামের দা’য়ীগণ! এই দুনিয়ার বুকে আপনাদের কোন মূল্য নেই, যতক্ষণ না আপনারা অস্ত্র তুলে নিচ্ছেন এবং যালিম শাসক, কুফফার এবং অত্যাচারীকে সমূলে উৎপাটন করছেন।
যারা বিশ্বাস করে যে কোন জিহাদ, লড়াই এবং রক্তপাত ছাড়াই ইসলাম বিজয়ী হবে তারা মোহগ্রস্থ এবং এই দ্বীনের বাস্তবতা এখনো বুঝে নি। দায়ীদের গুরুত্ব, ইসলামের প্রভাব আর মুসলিমদের আভিজাত্য কখনই জিহাদ ছাড়া বুঝা সম্ভব নয়।
হাদীসে বর্ণিত আছে,
”আর আল্লাহ্ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের প্রতি তাদের ভীতিকে তুলে দিবেন এবং তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহান’ স্থাপন করে দিবেন। জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সা), ‘ওয়াহান’ কি জিনিস? তিনি বললেন, দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা এবং আখিরাতকে অপছন্দ করা।“
এবং এটাও বলা বর্ণিত আছে যে, দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং ক্বিতালের প্রতি বিদ্বেষ।
”অতঃপর আল্লাহর রাহে লড়াই করতে থাকুন, আপনি নিজের সত্ত্বা ছাড়া আর কোন বিষয়ের জিম্মাদার নন! আর আপনি মুসলিমদেরকে উৎসাহিত করতে থাকুন।“ –আন-নিসাঃ ৮৪
জিহাদ ব্যতিরেকে শিরক ছড়িয়ে পড়বে এবং কর্ত্বৃত্ব লাভ করবে, যেমন আল্লাহ্ বলেছেন,
”আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই করো, যে পর্যন্ত না ফিত্নার অবসান হয় “ – আল-বাক্বারাঃ ১৯৩
এখানের ফিতনা বলতে ‘শিরক’ বুঝানো হয়েছে, যা হলো আল্লাহর সাথে শরীক করা। প্রকৃতপক্ষে কেবলমাত্র জিহাদের মাধ্যমেই পৃথিবীর বুকে মানবতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। যেরকম আল্লাহ্ বলেছেন,
”আর আল্লাহ্ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেত। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ্ একান্তই দয়ালু, করুণাময়।“ – আল-বাক্বারাঃ ২৫১
আল্লাহর বন্দেগী যথাযথভাবে করার এবং ইবাদতের স্থানসমূহের সংরক্ষণ করার একমাত্র নিশ্চয়তা হচ্ছে জিহাদ, যেমন আল্লাহ বলেছেন,
”আল্লাহ্ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে সন্ন্যাসাশ্রম, গীর্জা, সিনাগগ এবং মসজিদসমূহ বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলোতে আল্লাহর নাম অধিকহারে স্মরণ করা হয় “ -আল-হাজ্জঃ ৪০
ও! ইসলামের দা’ঈগণ! মৃত্যুর সন্ধান করো তাহলে তুমি জীবন খুঁজে পাবে, শয়তানের ধোঁকায় পড়ো না, তোমার আ’মল এবং অতিরিক্ত ইবাদত দ্বারা প্রতারিত হয়ো না। আরাম-আয়েশে নিজেকে ব্যস্ত রেখো না, বরং সত্যের সন্মুখীন হও। আল্লাহ্ বলেছেনঃ
”আর তোমরা কামনা করেছিলে তা যাতে কোনরকম কষ্ট নেই……” -আল-আনফালঃ ৭
তাদেরকে অনুসরণ করো না, যারা জিহাদকে পরিত্যাগ করেছে, কোন অনুমতি গ্রহণের প্রয়োজন নেই যখন জিহাদ ফরজ হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জিহাদ হলো তোমার দাওয়াহ’র প্রধান বুনিয়াদ, অস্তিত্ব এবং তোমার দ্বীনকে সুরক্ষাদানকারী।
ও! মুসলিম আলিমগণ! এগিয়ে আসুন এবং প্রভূর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী এই প্রজন্মকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যান, এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বেন না, এবং সতর্ক হও যালিম শাসকের ব্যাপারে, যে এই তরুণ প্রজন্মের অন্তরকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয় এবং অন্তরের মৃত্যু ঘটায় এবং আপনাদের ও এই প্রজন্মের মধ্যে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায়।
ও! মুসলিম জাতি! তোমরা অনেক দীর্ঘ সময় ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছো, যালিম শাসককে তোমাদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে দিয়েছো, তোমরা দাসত্বের জীবনকে গ্রহণ করেছো এবং যালিমের কাছে নিজেদেরকে সমর্পণ করেছো। এখন সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর, বিদ্রোহ করার এবং দাসত্বের শিকলকে ভেঙ্গে ফেলার।
ও! মুসলিম নারীগণ! অপচয় সম্পর্কে সচেতন হও এটা জিহাদের পথে অন্তরায় এবং মানব আত্নার মৃত্যুর কারণ। ভোগ-বিলাসীতার বস্তু সম্পর্কে সচেতন হও এবং মৌলিক চাহিদাগুলোর ব্যাপারে স্থির থাকো। তোমাদের সন্তানদেরকে সাহসী ও অকুতোভয় করে বড় করে তুলো। তোমাদের বাড়িগুলোকে সিংহের আবাসস্থল বানাও, মুরগীর খামার বানিয়ো না, যেখানে তোমাদের সন্তানদেরকে খেয়ে-দেয়ে বড় হতে দেওয়া হবে তারপর যালিম শাসকের হাতে ভেড়ার মত জবাইয়ের স্বীকার হতে হবে।
তোমাদের সন্তানদের অন্তরে বিন্দু বিন্দু করে জিহাদ এবং ময়দানের প্রতি ভালোবাসা ঢেলে দাও। মুসলিম উম্মাহর সমস্যাগুলো তাদের সাথে শেয়ার করো। সপ্তাহে একদিন তাদেরকে শরণার্থী ও মুজাহিদীনদের জীবনের মত করে সময় কাটাতে দাও। তাদেরকে শুকনো রুটি আর চা দিয়ে দিন কাটাতে শেখাও।
ও! মুসলিম সন্তানেরা! বোমা, মর্টার শেলের বিস্ফোরিত শব্দের সাথে এবং জেট বিমান ও ট্যাংকের শব্দের সাথে অভ্যস্ত হতে শিখো এবং ভোগ-বিলাসী জীবন ত্যাগ করো।
হে! আমার স্ত্রী! আমি তোমাকে অনেকবার বলেছি, আল্লাহ্ তোমাকে আমার এবং মুসলিমদের তরফ থেকে পুরস্কৃত করুন। তুমি আমার জন্য অনেক ধৈর্য ধারণ করেছো এবং সহজ-কঠিন সব সময়ে ধৈর্য ও সাহসীকতার সাথে আমার পাশে দাঁড়িয়েছো। এই জিহাদ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যে সহযোগীতা-সমর্থন প্রয়োজন তা আমি তোমার কাছ থেকে পেয়েছি। আমি তোমাকে ১৯৬৯ সালের সেই বাড়ির দায়িত্ব অর্পণ করলাম, যেখানে আমরা আমাদের তিন সন্তানদের নিয়ে একটি ছোট্ট রূমে বসবাস করতাম যেখানে কোন রান্নাঘর বা অন্যান্য সুবিধা ছিল না।
যখন পরিবার বড় হতে লাগলো, বাচ্চারা বয়োঃপ্রাপ্ত হয়ে গেল এবং আমাদের সদস্য সংখ্যা বাড়তে শুরু করলো, এর সবই তুমি অনেক সহ্য করেছো আল্লাহ্ এবং আমার জন্য। আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি তোমাকে আমার পক্ষ হতে পুরস্কৃত করুন। তোমার সহিষ্ণুতা ছাড়া আমি কখনোই একা এই দায়িত্বের ভার বহন করতে পারতাম না। তুমি একজন সন্তুষ্ট স্ত্রী যে পার্থিব জীবনোপকরণ নিয়ে ব্যস্ত নয় এবং অতি সামান্য জীবনোপকরণ নিয়েও তোমার কোন অভিযোগ নেই। তুমি কখনোই অপচয়কারী ছিলে না যখন আমাদের কিছু সম্পদ ছিল।
জিহাদের জীবন সবচেয়ে আনন্দের জীবন, ভোগ-বিলাসীতার জীবনের চেয়ে কঠিন পরিস্থিতি সহিষ্ণু জীবন উত্তম। সন্তুষ্ট থাকো আল্লাহ্ তোমাকে ভালবাসবেন, বাকী সব মানুষের মত কামনা-বাসনাকে ত্যাগ করো, তবে মানুষ তোমাকে ভালোবাসবে। ক্বুরআন হলো জীবনের আনন্দ, তাহাজ্জুদ, নফল সিয়াম এবং ইস্তিগফার। এর সবগুলো হৃদয়কে স্বচ্ছ, নির্মল করে এবং ইবাদতের মিষ্টতা আস্বাদন করায়।
মৌলিক চাহিদা নিয়েই সচেষ্ট থাকো, চাকচিক্য এবং অপচয় থেকে দূরে থাকো, হৃদয়ে প্রশান্তি ও নির্মলতা আসবে।
আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি আমাদেরকে জান্নাতে একসাথে রাখুন, যেভাবে তিনি এই জীবনে রেখেছেন।
ওহে! আমার সন্তানেরা! তোমরা আমার সাথে খুব বেশি সময় কাটাতে পারোনি এবং আমি তোমাদেরকে উপদেশ দেওয়ার খুব সুযোগ পাইনি। আমি এত বেশি ব্যস্ত ছিলাম যে তোমাদেরকে সঙ্গ দেওয়ার সুযোগ পাইনি। যখন আমি মুসলিম উম্মাহর উপর চরম দূর্গতি ও বিপর্যয় আঘাত হানতে দেখলাম, আমি তোমাদের সাথে সেই জীবন যাপন করতে পারি নি যেই জীবনে পাখি তার বাচ্চাদেরকে নিয়ে নিরাপদে কাটিয়ে দেয়। আমি শান্তিতে থাকতে পারি নি যখন কোন একটি দুর্যোগের আগুন কোন মুসলিমের অন্তরকে জ্বালিয়ে দিয়েছে, এর প্রভাব আমার অন্তরকে আন্দোলিত করেছে। আমি তোমাদের মাঝে অবস্থান করতে পারি নি যখন মুসলিম উম্মাহর অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে ক্ষরণ হয়েছে। পুরুষত্ব আমাকে তোমাদের সাথে আরামের জীবন যাপন করতে অনুমোদন দেয় নি। আমি অপচয় এবং জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে বিলাসীতাকে ঘৃণা করি, হোক না সেটা খাদ্য, বস্ত্র কিংবা বাসস্থানের। আমি তোমাদেরকে সেভাবেই বড় করে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছি যে জীবনকে আমি যাপন করেছি এবং তোমাদেরকে অতি সাদাসিধা জীবনে সন্তুষ্ট রাখতে চেষ্টা করেছি।
ইসলামকে মানতে হবে প্রথম যুগের মুসলিমদের মত করে; জ্ঞান চর্চা, ক্বুরআন তিলাওয়াহ ও হিফয করণে। তুমি যা বলছো সেই সম্পর্কে সচেতন থাকো। রাতে ক্বিয়ামুল লাইল করো, নফল সিয়াম রাখো, উত্তম বন্ধুর অন্বেষণ করো এবং ইসলামিক আন্দোলনে যোগ দাও, কিন্তু……………
………জেনে রাখো, আমীরের কোন ক্ষমতা নেই তোমাকে জিহাদ থেকে বিরত রাখে, অথবা দাওয়াহ’র প্রসারের কথা বলে জিহাদকে পরিত্যাগ করতে বলে, আর তোমাকে জিহাদের ময়দান থেকে দূরে রাখে যেটা কিনা তোমাকে পুরুষ হিসেবে গড়ে তুলে। জিহাদে অংশ গ্রহণের জন্য কারো অনুমতি চেয়ো না।
ওহে! ছেলেরা! আমি তোমাদেরকে তোমাদের মা এবং বোনদের (উম্ম আল হাসান এবং উম্ম ইয়াহিয়া) কে মেনে চলতে ও সন্মান করতে আদেশ করছি। আমি তোমাদেরকে দ্বীনের জ্ঞানগর্ভ বই পড়তে অনুপ্রাণিত করছি। আমি তোমাদেরকে তোমাদের বড় ভাই মুহাম্মাদকে মেনে চলতে, শ্রদ্ধা করতে এবং ভালোবাসতে আদেশ করছি।
তোমাদের দাদা-দাদী’র প্রতি সদয় হও এবং তাদেরকে শ্রদ্ধা করো, তোমার ফুফুদের (উম্ম ফায়েজ এবং উম্ম মুহাম্মাদ) প্রতি সদয় হও, তারা আমাকে অনেক অনুগ্রহ করেছে। তোমার পরিবার-পরিজনদের ও পরিচিতদের কাছে যাও।
ও! জিহাদী সংগঠন! সাইয়্যাফ, হিকমাতাইয়্যার, রাব্বানী এবং খালিস’ র দিকে খেয়াল রেখো, আমরা আশা করি তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে অবিচল থাকবে এবং এর মূল লক্ষ্য হতে বিচ্যূত হওয়া থেকে রক্ষা করবে। বিশেষ করে ভুলে যেও না আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে ফিল্ড কমান্ডার জালালুদ্দিনের কথা।
আহমেদ শাহ মাসূদ, ইঞ্জিনিয়ার বাশির, সাইফুল্লাহ আফযালি, মৌলভী আরসলান, ফারিদ এবং মুহাম্মাদ আলম, শির আলম (পাঘমান) এবং সায়িদ মুহাম্মাদ হানিফ (লোগার)।
সমস্ত প্রশংসা এবং মহিমা আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলার জন্য, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং তাঁর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আব্দুল্লাহ ইউসূফ আযযাম, ১২শ শাবান, ১৪০৬/ ২০শে এপ্রিল ১৯৮৬