JustPaste.it

তোমার বাড়ী কাঁচের তৈরী, তাই অন্যের দিকে ঢিল নিক্ষেপ করো না – শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসি (আল্লাহ তাকে রক্ষা করুন)

 

ক্রসের বান্দার প্রতি – ভ্যাটিকানের পোপ, ষোড়শ বেনেডিক্ট
তোমার বাড়ী কাঁচের তৈরী, তাই অন্যের দিকে ঢিল নিক্ষেপ করো না
– আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসি (আল্লাহ তাকে রক্ষা করুন)


 

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য,
“তিনি সন্তান গ্রহণ করেননি, সার্বভৌমত্বে তাঁর কোন শরীক নেই। তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে” [আল-ফুরকান – ২]
এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক শেষ নবীর প্রতি যিনি বলেছেন,
“সেই সত্তার শপথ যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, বর্তমান মানবগোষ্ঠীর কোনো ইহুদী বা খ্রীষ্টান আমার আবির্ভাবের সংবাদ শোনার পর, যে ‘দ্বীন’ নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি, তার প্রতি ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করলে সে নিশ্চিতই জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হবে”। [সহীহ মুসলিম – ১৫৩]


অতঃপর,
সম্প্রতি আমাদের ভূমিতে ভ্যাটিকানের পোপের সফরের প্রেক্ষিতে আমরা চুপ থাকতে পারি না অথবা আমাদের চোখ বন্ধ করতে পারি না অথবা উপেক্ষা করতে পারি না যখন দেখি এ ব্যক্তি আমাদের দ্বীন ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অবমাননা করেছে ও তাঁদের সম্পর্কে মিথ্যাচার করেছে অথবা যে বানোয়াট গল্প নিঃসৃত হয়েছে তার অপবিত্র পাত্র (তার অন্তর) হতে, যে পাত্রকে পবিত্র করা সম্ভব নয় যদিও তাকে সাতবার ধুয়ে ফেলা হয়, একবার মাটি দ্বারা!
আমরা সেই জাতি যারা কখনই তাকে ভুলি না যে আমাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করেছে এবং আমরা এটাকে দায়িত্ব হিসেবে নেই যাতে কিছু দেরীতে হলেও তাকে তার প্রাপ্য প্রতিদান প্রদান করতে পারি। একইভাবে, আমরা তাকেও ভুলি না এবং কখনই ভুলবো না যে আমাদের দ্বীন ও আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অবমাননা করেছে এবং আমরা এটাকে দায়িত্ব হিসেবে নেই যাতে তাকে তার প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে পারি। এটা আমাদের প্রত্যেকের সাধ্যানুযায়ী কর্তব্য, এমনকি কিছুটা দেরীতে হলেও। যে এই মুহুর্তে এটা করতে সক্ষম নয় সে সামর্থ অর্জিত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এর কারন এই যে এটা উম্মাহ এর উপর আপতিত একটি শরয়ী দায়িত্ব এবং উম্মাহ এর জন্য উচিত নয় কোন ভাবেই এই দায়িত্বকে পরিত্যাগ করা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান রক্ষা করা উম্মতের উপর আপতিত একটি দায়িত্ব। এখানে দুটি হক রয়েছে; একটি আল্লাহ তায়ালার হক যা তিনি তওবার মাধ্যমে তাঁর দিকে ফিরে আসলে ক্ষমা করে দিতে পারেন। আর আরেকটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যক্তিগত হক যা তিনি হয়তো বেঁচে থাকলে ক্ষমা করে দিতেন যা ছিল তাঁর মহান চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু যেহেতু তিনি, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, মৃত্যুবরণ করেছেন, সুতরাং এটা কখনো সমগ্র উম্মতের জন্য বৈধ নয় তাঁর হককে পরিত্যাগ করা এবং তাঁর প্রতি অবমাননাকে ক্ষমা করে দেওয়া, আমার বাবা ও মা তাঁর প্রতি উৎসর্গ হোক, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
জার্মানীর রেজেন্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই লোকের প্রদত্ত বক্তব্যে বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছিল যেটি ভ্যাটিকানের অফিসিয়াল হোমপেইজে প্রকাশিত হয়েছিল। এই বক্তব্যটি সেই সময়ে বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের মাঝে উত্তেজনা ও ক্রোধ সৃষ্টি করেছিল এবং তারা এর ব্যাপক নিন্দা করেছিল। আমি সেই সময় কারাবন্দী থাকার কারণে এ ব্যাপারে শুনতে পারি নি। এ সংবাদ আমার সেলে এসে পৌঁছলে আমি ক্রোধে জ্বলেপুড়ে উঠেছিলাম কিন্তু সে সময় আমি এ ব্যাপারে কিছু লিখতে পারি নি। সেই সময় থেকে আমার দৃঢ়সংকল্প ছিল যে সুযোগ পেলেই আমি তাদের ‘পবিত্র বই’ ও তাদের বিকৃত ধর্মের মুখোশ উন্মোচন করবো। আল্লাহ ঐ সেলেই আমার জন্য সুযোগ করে দিয়েছিলেন এবং আমি এ ব্যাপারে একটি বিস্তারিত বই লিখেছিলাম।
আমি আন্তর্জাতিক রেড ক্রস অর্গানাইজেশনের একজন প্রতিনিধিকে জেলে আমার সাথে সাক্ষাতের সময় ভ্যাটিকানের পোপের বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের কথা উল্লেখ করেছিলাম। সে ছিল একজন ক্যাথলিক। সে এই বিদ্বেষমূলক বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং দুঃখ প্রকাশ করেছিল, “আমরা এর সাথে একমত নই এবং আমাদের এর সাথে কোন সম্পর্ক নেই।”
উম্মাহ কখনই এই বিদ্বেষ ভুলে যেতে পারে না অথবা ক্ষমা করতে পারে না কারন কোন ব্যক্তির ক্ষমা করার অধিকার নেই; শুধু এই অধিকার তাঁরই আছে, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। সুতরাং যে ব্যক্তি এই মিথ্যাবাদীকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে, সম্মান ও মর্যাদা দিচ্ছে, রাসূল ও তাঁর দ্বীনের প্রতি এ ব্যক্তির বিদ্বেষকে উপেক্ষা করছে; সে কোনভাবেই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না।
ভ্যাটিকানের পোপ তার অবমাননাকর বক্তব্যে দাবী করেছে যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নতুন কিছু নিয়ে আসেন নি এবং তিনি তাঁর বাণী পৌঁছে দিয়েছেন সন্ত্রাস ও তরবারীর দ্বারা। পোপ তার পূর্ববর্তীদের বর্ণনা থেকে উদ্ধৃত করে দাবী করেন যে কুরআনের দ্বিতীয় সূরা, সূরা বাকারার ২৫৬ নং আয়াত
“দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর জবরদস্তি নেই” [সূরা বাকারা – ২৫৬]
(পোপের দাবী) বিশেষজ্ঞদের মতে, “মুহাম্মাদের প্রাথমিক পর্যায়ের অবতীর্ণ একটি সূরা যখন তিনি ছিলেন দুর্বল ও অসহায়।”
মূর্খ যাজক মনে করে যে এই আয়াত
“দ্বীনের ব্যাপারে কোন জোর জবরদস্তি নেই” [সূরা বাকারা – ২৫৬]
কুরআনের প্রথম দিকের একটি আয়াত যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুর্বল ও অসহায় ছিলেন কারন এই আয়াতটি কুরআনের দ্বিতীয় সূরায় রয়েছে। অর্থাৎ সে মনে করে কুরআনের সূরাগুলো তার অবতীর্ণ হওয়ার সময় অনুসারে সাজানো হয়েছে। সে এটা জানে না যে এই সূরাটি মাদানী অর্থাৎ সূরাটি মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছে, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় হিজরত করে ফেলেছেন এবং সেখানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, নিরাপত্তা বজায় রয়েছে এবং তিনি তাঁর দুর্বল অবস্থায় আর নেই।
তার এই বক্তব্য একটি চরম মূর্খতা মাত্র, যেটি তার মত একজন বড় ধর্মতত্ত্ব বিশেষজ্ঞের কাছেই মানায় যার কাজ হল লোকদের ভুল পথে পরিচালিত করা এবং যে আমাদের সময়ে অন্যতম বড় একটি বিকৃত ধর্মের প্রধান।
তারপর আপনি দেখবেন সে তার বক্তব্য এই প্রশ্ন দিয়ে শেষ করেছে, “আমাকে দেখাও মুহাম্মাদ নতুন কী নিয়ে এসেছে। তুমি কেবল নৃশংস ও অমানবিক বিষয়ই দেখতে পাবে যেমন তরবারীর দ্বারা ধর্মকে প্রচারের আহবান।”
ইসলাম সম্পর্কে, এমনকি খ্রিষ্টান ধর্ম সম্পর্কেও খ্রীষ্টানদের সবচেয়ে বড় ব্যক্তিত্ব এবং তাদের সর্বোচ্চ বিদ্বান এবং তাদের সবচেয়ে শ্রদ্ধাভাজন যাজকের অজ্ঞতা সুস্পষ্টভাবে প্রকাশিত হল।
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নতুন যে জিনিষ নিয়ে এসেছেন, তা ভ্যাটিক্যানের পোপ বা অন্য কেউ অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না। যেহেতু তা অনেক বেশী এবং এই প্রবন্ধে উল্লেখ করা সম্ভব না এবং যেহেতু আমি এই ব্যাপারে পূর্বেই লিখেছি এবং আমার বইয়ে মহান কুরআন ও পুরনো টেস্টামেন্টের মাঝে পার্থক্যের অনেক উদাহরণ দিয়েছি; আমি এখানে সেগুলো উল্লেখ করব না। বরং আমি ঐ মূর্খ যাজক এবং তার মত যারাই বাতিলের উপর অটল থেকে তর্ক করে, তাদেরকে ঐ বইটি পড়তে বলব।
তবে এতে আশ্চর্যান্বিত হওয়ার কিছু নেই যে সূর্যের আলো অন্ধের কাছে গোপনই থাকে।

সত্যের বাণী তাদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়
তাদের মাঝে যারা সত্য শুনতে পেলেও বধিরের ন্যায় আচরণ করে
যদি তারা চাইত তবে সত্য উদ্ভাসিত হত
তার জন্য এটা কতই না অসম্ভব যে অন্ধের ন্যায়

তার এই কথার ব্যাপারে যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মন্দ জিনিষ নিয়ে এসেছেন যেমন তাঁর বাণী তরবারীর দ্বারা প্রচার করা, এটি যে একটি মিথ্যা তা কেবলমাত্র যারা ইসলামের বিধিবিধান ও এর ইতিহাস সম্পর্কে পড়েছে তারাই জানে তা নয়, বরং সকলেই জানে যারা আজকে ইউরোপের রাস্তার দিকে তাকায় এবং তারা ক্রোধের সাথে দেখতে পায় সৌভাগ্যবান উজ্জ্বল চুল ও লাল দাড়ীবিশিষ্ট লোকদের (অর্থাৎ ইউরোপিয়ান নও মুসলিম) যারা ঐসব রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এবং একইসাথে তারা নিজেদের ভূমিতে নিজেদের কন্যাদেরই হিজাব এবং নিখুঁত খিমারের প্রদর্শন দেখতে পায়, অথচ যখন কিনা ইসলামের কোন রাষ্ট্র অথবা ক্ষমতা অথবা আধিপত্য নেই।
আমরা ভ্যাটিক্যানের পোপ এবং অন্য যারা ইসলামকে অবমাননা করে, তাদের ক্রোধের কারন বুঝতে পারি। কারন তারা তাদের দেশের রাস্তায় এবং যেকোন দিকে মুখ ফেরালে কেবল ঐ দৃশ্যই দেখতে পায় যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যন্ত্রনা যতই তীব্রতর হয়, চিৎকার ততই জোড়ালো হতে থাকে।
দুনিয়ার বুকে আমাদের দুর্বলতা এবং আমাদের রাষ্ট্র ও আধিপত্যের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও ঐসব দেশে আমাদের দ্বীনের প্রসার এবং জাগরণ এই দ্বীনের সত্যতা ঘোষণা করে এবং তা ঐ অপবাদ দানকারী এবং তার মত আর যারা আছে তাদের দাবীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে যা তারা বারবার পুনরাবৃত্তি করে আসছে।
সারা বিশ্ব প্রকৃত ইসলামী শাসন ব্যতীত কখনই ধর্মীয় সহিষ্ণুতা দেখেনি এবং সিভিল ডায়লগ অথবা প্রকৃত ন্যায়বিচারের স্বাদ পায়নি। তারা তা পেয়েছে কেবল সেইসময় যখন ইসলামের শক্তিশালী রাষ্ট্র ও আধিপত্য ছিল এবং যখন খিলাফতের পতাকা উর্ধ্বে উন্নীত ছিল – তা মদীনাতে হোক অথবা দামাস্কাস অথবা বাগদাদ অথবা কর্ডোভা অথবা গ্রানাডা অথবা ইস্তাম্বুল অথবা অন্য কোথাও।
কিন্তু বর্তমান যুগের ক্ষমতাসীনরা যারা নিজেদের সহিষ্ণুতার কথা দাবী করে এবং যাদের মুখে শোনা যায় আন্তঃধর্মীয় সংলাপের কথা; অনুসন্ধান থেকে আমরা যা পাই তা কারও দ্বারা প্রত্যাখ্যান অথবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করা সম্ভব নয় এবং একইভাবে পোপ ও যাজকদের নির্দেশিত ক্রুসেড যা তারা ক্রস হাতে নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে সম্মুখ সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল।
বর্তমান গ্লোবালাইজেশন ও একতরফা শাসনের যুগে ইরাক ও আফগানিস্তান আক্রমণের ট্রাজেডী আমরা এখনও ভুলিনি। আমেরিকান সৈন্য কর্তৃক কুরআনের কপির উপর ক্রস অঙ্কন এবং মসজিদে বয়স্ক ও আহতদের হত্যা এবং আবু গারিব ও গুয়ান্তানামোতে কয়েদীদের গোপন অঙ্গ নিয়ে খেলা করা; এসব দৃশ্য বুশের ঘৃণ্য পরিকল্পনা এবং নতুন ক্রুসেডে নব্য রক্ষণশীলদের উপলব্ধিকে চিত্রায়িত করে।
এই যাজকের অজ্ঞতা কেবলমাত্র তার নিজ ধর্ম ও ইসলাম সম্পর্কেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং সে বর্তমান বাস্তবতা, ইতিহাস এবং ভূগোল সম্পর্কেও অজ্ঞ। সে এমনকি তার নিজ চার্চ সম্পর্কেও অজ্ঞ অথবা অজ্ঞ হবার ভান করছে।
এই লোক কি ভুলে গেছে তার নিজ দেশে ক্যাথলিকদের দ্বারা হাজার হাজার প্রটেস্ট্যান্টদের হত্যার ঘটনা? এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয় তাই প্রটেস্ট্যান্টরা তাকে এ ব্যাপারে মনে করিয়ে দিতে পারে। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল যখন সে বুদ্ধিবৃত্তি ও মানবতা নিয়ে কথা বলে, যেখানে সে সহিংসতা ও তরবারীর দ্বারা ধর্ম প্রচারের নিন্দা করে অথচ এসব কথা ভুলে যায় অথবা ভুলে যাওয়ার ভান করে।
আন্দালুসের পতনের পর আন্দালুসের মুসলিমদের জন্য ধর্ম বিচারসভা বসেছিল যাতে তাদেরকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তোমার ক্যাথলিক পূর্বপুরুষেরা তাদেরকে পুড়িয়ে হত্যা করত যাদের কাছে কুরআন পেত। তারা এমনকি তাকে হত্যা করত যে শুক্রবার অথবা ঈদের দিন গোসল করত। তোমার পূর্বপুরুষেরা তাদের নোংরামির কারনে মুসলিমদের গোসল করতে দিত না এবং এই মর্মে আইন জারী করেছিল যে যাকে গোসল করতে দেখা যাবে তাকে হত্যা করা হবে যাতে তারা মুসলিমদের সালাত আদায় করা থেকে বিরত রাখতে পারে।
তারা পুরুষ, বৃদ্ধ, মহিলা এমনকি শিশুদেরকেও আগুনে পুড়িয়ে দিত, নির্যাতনের পর হত্যা করত এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ফেলত যাতে তাদেরকে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে খ্রীষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করতে পারে।
তুমি কি এই ইতিহাস শোননি অথবা খ্রীষ্টান ঐতিহাসিকদের কাছ থেকে পড়নি, হে ঘৃণ্য যাজক? কিভাবে তুমি এই ব্যাপারে অজ্ঞ থাকতে পার অথবা একে অবহেলা করতে পার যখন তোমার ঐতিহাসিকরা একে স্বীকার করেছে এবং তোমার চার্চের কেউ কেউ লজ্জিত হয়ে ক্ষমা চেয়েছে?
তুমি কি এটা বলনি, হে মূর্খ যাজক, যে আমাদের মহান নবীর জীবন যেকোন প্রকারের মনুষ্যত্ব ও বুদ্ধিমত্তা বিবর্জিত এবং সেখানে ঘৃণ্য, অমানবিক বিষয় ছাড়া আর কিছুই নেই?
অথচ তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি মক্কা বিজয়ের পর এর অধিবাসীদের বলেছিলেন, “যাও, তোমরা আজ মুক্ত” – অথচ এই লোকেরাই তাঁকে অপমান করেছিল এবং তাঁকে ও তাঁর সাথীদেরকে নির্যাতন করেছিল এবং তাঁদের প্রিয় ভূমি থেকে বের করে দিয়েছিল।
খ্রীষ্টধর্মের পূর্ব ও বর্তমানের কালো ইতিহাসে যারা ধর্ম নিয়ে মতভেদ করেছিল, তাদের সাথে এরূপ কোন দৃষ্টান্ত কি আছে? এমনকি যদি তারা নিজেরাও খ্রীষ্টান হয়ে থাকে?
সুতরাং কোন ধর্ম প্রচার হয়েছিল সহিংসতা ও তরবারীর দ্বারা; না, বরং অন্যকে পুড়িয়ে দেবার মাধ্যমে?
যদি তোমার মন চায় গুস্তাভো লি বন এর আরব সভ্যতা বইটি পড়তে পার। সে উল্লেখ করেছে, “তৎকালীন ধর্ম বিচার সভা এত পরিমাণে মুসলিমদের পুড়িয়ে হত্যা করেছিল যা গণনা করা সম্ভব নয়। আর যাজক ব্লেডা প্রস্তাব দিয়েছিল, যেসকল আরবেরা কোন আপত্তি ছাড়া খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহণ করবে না, তাদের মাথা কেটে ফেলা হোক; হোক তারা নারী এবং শিশু। আর এভাবে তারা তিন মিলিয়ন আরবদের হত্যা করেছিল অথবা বহিষ্কার করেছিল।”
৮৯৭ হিজরী/১৪৯২ ঈসায়ী সালে গ্রানাডার পতনের সময় উভয়ের মাঝে চুক্তি হওয়া সত্ত্বেও এগুলো ঘটেছিল। চুক্তিটি হয়েছিল আবু আবদুল্লাহ আস-সগীর এবং পোপসহ ক্যাথলিক রাজাদের মধ্যে, যারা এতে সাক্ষর করেছিল এবং চুক্তি অক্ষুন্ন রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল। এতে বলা হয়েছিল, “শিশু ও বৃদ্ধদের জীবন, পরিবার ও সম্পদ সুরক্ষিত থাকবে; যারা মুসলিম হয়েছে তাদেরকে খৃষ্টান ধর্ম এবং কম্যুনিটিতে অংশ নিতে বাধ্য করা হবে না; কোন ব্যক্তিকে আজান দিতে অথবা সালাত অথবা সিয়াম পালন করতে অথবা অন্য যেকোন ধর্মীয় বিষয়াবলী থেকে বিরত রাখা হবে না………।” তারা এরূপ আরো অনেক বিষয়ে একমত হয়েছিল এবং দৃঢ় শপথ নিয়েছিল…………কিন্তু এরপর কী ঘটেছিল?
এই শপথকে সম্পূর্ণরূপে ভঙ্গ করা হয়েছিল যেটি ইতিহাসের সকল বই থেকে জানা যায়, অথচ এ ব্যাপারে ভ্যাটিকানের পোপ অজ্ঞ ছিল যখন সে বলেছিল, “এই ধর্ম সহিংসতা ও তরবারীর দ্বারা প্রচার হয়েছিল।” আরবী ভাষা নিষিদ্ধ হয়েছিল এবং তার সাথে আজান, সালাত এবং আরো অনেক কিছু। আর যেসকল শিশু, নারী ও পুরূষ তাওহীদ পরিত্যাগ করে তিন ঈশ্বরের মতবাদ গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল, তাদেরকে হত্যা করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কার্ডিনাল জিমেনেজ লোকদের পাশাপাশি শত সহস্র বই পুড়িয়ে দিয়েছিল। গুস্তাভো লি বন লিখেছে, “আর্চবিশপ জিমেনেজ তার শত্রু আরবদের যেসকল বই জমা করতে সমর্থ হয়েছিল – তা সংখ্যায় ৮০,০০০ – সে ভেবেছিল এগুলোকে পুড়িয়ে দিয়ে সে চিরতরে আন্দালুস থেকে তাদের নাম মুছে দিতে সক্ষম হবে। কিন্তু সে জানত না যে মুসলিমরা পুরো স্পেন জুড়ে যে প্রভাব রেখে গিয়েছিল, তা তাদের নাম চিরকাল অক্ষুন্ন রাখতে যথেষ্ট ছিল।”
এবং সে লিখেছে, “অতঃপর যেসব মুসলিমরা বাধ্য হয়ে খ্রীষ্টান হয়েছিল, তাদের উপর খ্রীষ্টানরা জোরজবরদস্তি করত কারন তাদের অধিকাংশের জন্য ধর্মবিশ্বাস ছিল নামমাত্র, কারন তারা বাধ্য হয়ে খ্রিষ্টানদের আচার অনুষ্ঠান পালন করলেও গোপনে ঠিকই ইসলাম ধর্ম পালন করত। আর তাদের উপর অনেক নিষেধাজ্ঞা ছিল; খৎনা করার নিষেধাজ্ঞা, কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়ানোর নিষেধাজ্ঞা, গোসল করার নিষেধাজ্ঞা এবং আরব পোশাক পরিধান করার নিষেধাজ্ঞা। সুতরাং যদি জানা যেত কেউ জুমুয়ার দিনে গোসল করেছে, তারা তাকে হত্যা করার আদেশ দিত। এবং একই ব্যাপার ঘটত যদি তারা কারও বাড়ীতে মুসহাফ (কুরআন) পেত, অথবা কেউ রমাদানে খাদ্যগ্রহণ থেকে বিরত থাকত, অথবা শুকর ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকত। তারা সন্দেহভাজন মুসলিমদের কাপড় খুলে তল্লাশী চালাত এবং যদি তারা তাকে খৎনা অবস্থায় পেত অথবা তার পরিবারের কাউকে খৎনা অবস্থায় পেত, তাহলে তার ও তার পরিবারের পরিণতি ছিল মৃত্যু” – উদ্ধৃতির সমাপ্তি।
এ ব্যাপারে তোমার মন্তব্য কী, হে যাজক, যে ইতিহাসের ব্যাপারে অজ্ঞ? কেন তুমি এবং অন্য যারা সন্ত্রাসবাদ এবং আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সহিংসতা নিয়ে কথা বল অথচ এইসব গণহত্যা ও সন্ত্রাসবাদের কথা ভুলে যাও? এবং বিশেষত যখন কিছু মুসলিম তাদের রবের শরীয়াহ বাস্তবায়নের চেষ্টা করে?
যদি তুমি এসব ভুলে গিয়ে থাক অথবা ভুলে যাওয়ার ভান কর, জেনে রাখ আমরা কখনই তা ভুলব না।
অথবা এটাই কি তাই যাকে তুমি ধর্মীয় স্বাধীনতা ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপ বলে থাক?
কিন্তু ইতিহাসের গভীরে যাওয়া প্রয়োজন কেন?
তুমি কি ভুলে গেছ, হে ঘৃণ্য যাজক, আমাদের যুগে খৃষ্টানদের দ্বারা ইন্দোনেশিয়ার মালাকু দ্বীপে কী সংঘটিত হয়েছিল – হাজারো মুসলিমদের হত্যা, জবাই এবং পুড়িয়ে ফেলা? হাজারো মুসলিমদের জবাই ও আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। তারা মুসলিমদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও মাথা কেটে ফেলত, তাদের দেহের বিকৃতি সাধন করত এবং তাদের পেট চিরে ফেলত। আর এর বহু দলীল ও ছবি সংরক্ষিত রয়েছে।
আর বসনিয়ায় উগ্রপন্থী খ্রীষ্টান সার্বদের হাতে কি হয়েছিল তা আমাদের অজানা নয়। শুধুমাত্র স্রেব্রেনিকা শহরের কথাই ধর। উদাহরণস্বরূপ যখন ১৯৯৫ সালের ১১ ই জুলাই সার্বরা এতে প্রবেশ করল – যদিও এটি সে সময় জাতিসংঘের ঘোষিত নিরাপত্তার আড়ালে নিরাপদ শহর হিসেবে বিবেচিত ছিল – তারা তোমার জাতিসংঘের চোখের সামনেই ভয়াবহ গণহত্যার পর সকল লোককে শহর থেকে বের করে দিয়েছিল। তোমার ধর্মের উগ্র লোকদের হাতে নিহত মুসলিমদের সংখ্যা ২০,০০০ এ পৌঁছেছিল! এটা কেবলমাত্র স্রেব্রেনিকা এর পরিসংখ্যান! অন্ধ সেজে থাকা জাতিসংঘেরই হিসাবে বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় মুসলিম গণহত্যায় নিহতদের সংখ্যা ৩০০,০০০।
এটাই কি সভ্যতার মধ্যে মতবিনিময় যার দিকে তুমি আহবান করে থাক ……… এটাই কি ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ব যার দ্বারা তুমি আমাদের ভূমির অসচেতনদের বোকা বানিয়ে রাখ।
তুমি কি জাননা এই সময়েই মিশরের কপটিক চার্চের ভূগর্ভস্থ কক্ষে কী হয়, নারী মুসলিম কপ্টদের হত্যা করা হয় যাতে তাদেরকে ইসলাম থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে।
তুমি কি তাদের সাহায্যের আবেদন শুনতে পাওনি যা তাদের কন্ঠ ও ছবির মাধ্যমে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে গিয়েছিল? সবাই তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু তুমি, হে ঘৃণ্য যাজক, এইসব আর্তনাদে তোমার কান বন্ধ করে রাখ। আর তুমি তা খুলে ফেল আমাদের ভূমির সেইসকল পতিতা নারীদের জন্য যারা বই অথবা টেলিভিশন প্রোগ্রাম অথবা অন্যভাবে দ্বীন ইসলামের অবমাননা করে অথবা ইসলামের নবীর চরিত্রে আক্রমণ করে। আর যদি সেই প্রোগ্রাম অথবা সেই বই নিষিদ্ধ করা হয় অথবা কোন রক্ষণশীল ধর্মীয় গোষ্ঠী থেকে হুমকি প্রদান করা হয়, তাহলে সেই মুহূর্তেই যেন আর্মাগেডন (খ্রীষ্টান মতবাদ অনুযায়ী শেষ যামানায় যে যুদ্ধ সংঘটিত হবে) শুরু হয়ে যায় এবং চিন্তা ও ব্যক্তিস্বাধীনতা – একইসাথে অবিশ্বাস ও দুর্ণীতি নিয়ে তোমার কুধারণা, তিরষ্কার, বক্তব্য ও লেখনীর বন্যা বয়ে যায়। এবং এই ধরণের অপদার্থ নারী – যেমন বাঙ্গালী নারী তসলিমা নাসরীন, সোমালীয় আয়ান হিরসী আলী এবং এদের অনুরূপদের জন্য ক্ষমা, উদ্ধার, সুরক্ষা ও সাহায্যের প্রস্তাব দেখা যায়।
অথচ ওয়াফা কনস্টাইন, যে কিনা একজন কপটিক যাজকের স্ত্রী, যাকে খ্রীষ্টধর্ম পরিত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় মিশরের এক মনস্টারীতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে – এরূপ নারীদের জন্য তোমার বক্তব্য ও বিশ্বাসের স্বাধীনতার বুলি দেখতে পাওয়া যায় না। অথচ ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ে পোপ তৃতীয় শেনোউডা ও তার চার্চ তোমার বক্তব্যের লক্ষ্যবস্তু হয় না।
এবং একইরকম উদাহরণস্বরূপ ওয়াফা কনস্টাইন, মালার কণ্যা, কিশোরী কণ্যা ‘আবির’ যে তার জীবনের ১৭ টি বছর অতিবাহিত করেনি। অনুরূপ ক্রিস্টিন মাসরী আলী, যে তার ছবি ও কন্ঠের মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিল যে সে তার পিতার ঘর থেকে পালিয়ে এসেছিল কারন সে তার ইসলাম গ্রহণ আবিষ্কার করেছিল এবং সে আশংকা করেছিল যে তার পিতা তাকে হত্যা করতে পারে! এবং কায়রোয় পাদ্রী আয-যাওয়াইয়া আল-হামরা এর স্ত্রী মেরী আবদুল্লাহ জাকি এবং ডাক্তার মেরী অ্যান মাকরাম যাকে দুমাইত এ ডেমিআলা চার্চে বন্দী করা হয়েছিল ……… এবং এদের মত কপটিক থেকে ইসলামে আসা আমাদের মুসলিম বোনেরা, যাদেরকে তাদের ইসলামের কারণে অত্যাচার করা হয়েছিল এবং কপটিক চার্চের ভূগর্ভস্থ কক্ষে সন্ত্রাসী সেনোডিয়া এর তত্ত্বাবধানে এবং মিশর সরকার ও প্রতিষ্ঠানসমূহের চোখের সামনে হত্যা করা হয়েছিল।
আর তুমি এইসব নারীদের সাহায্যের আবেদনে তোমার কান বন্ধ করে রাখ। আর তুমি তাদের উপর নির্যাতনে কোন ভ্রুক্ষেপ কর না – যে নির্যাতন হয় যাতে তাদেরকে তাওহীদ থেকে ফিরিয়ে তিন ঈশ্বরের মতবাদ ও ক্রসের উপাসনার দিকে নিয়ে আসতে পারে। আর এর কোন কিছুই তোমার কাছে বিশ্বাসের স্বাধীনতার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হয় না। আর না এর কোন সম্পর্ক আছে মানবাধিকার অথবা ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রভৃতির সাথে।
আর আমাদের ভূমির নির্বোধদের মুখে উচ্চারিত হয় সংলাপ এবং ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বাণী।
জবাব হিসেবে কোন সংলাপ এবং কোন বাণী দেওয়া যেতে পারে এবং তরবারীর বাণী অপেক্ষা উত্তম বাণী আর কী হতে পারে?
তারা কোন ধর্মীয় সংলাপের কথা বলে? তারা প্রত্যেক মুক্ত কন্ঠকে রূদ্ধ করে যা তাদের ধর্মের অসঙ্গতির বিরোধিতা করে এবং ইসলামের ছায়াতলে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এমনকি কপটিক থেকে ধর্মান্তরিত হওয়া আমাদের মুসলিম বোনদের দীর্ঘসময় তাদের ইসলাম গোপন করতে হয় যেখানে তারা তাদের ওজু অথবা সালাত অথবা সিয়াম এর কথা প্রকাশ করতে পারে না এবং ইন শা আল্লাহ এইসব ব্যাপারে তারা অব্যাহতি পাবে। তাদের দুর্বল অবস্থা এবং কোন ইসলামিক রাষ্ট্র না থাকা এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও সহায়তার অনুপস্থিতি – এসবের প্রেক্ষিতে তাদের অবস্থা ঐসকল দুর্বলদের ন্যায় যারা তাদের বিশ্বাস গোপন করেছে এবং এ থেকে উত্তরণের কোন রাস্তা নেই। তাদের অবস্থা অনেকটা তাদের মত যখন খ্রীষ্টানদের হাতে আন্দালুসের পতন হয়েছিল।
আমরা এখানে তাদের জন্য তৎকালীন আন্দালুসের আলেমদের কিছু ফতোয়া উল্লেখ করতে চাই। উদাহরণস্বরূপ শাইখ আহমদ ইবন বু জুমুয়াহ আল মাগরাউয়ী, আল-ওয়াহারানী এবং তিনি সে সময় আন্দালুসে খ্রীষ্টানদের ধর্মান্তকরণ অভিযানের সময় বাধ্য হয়ে খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করেছে ও ঈমান গোপন করেছে- এরূপ মুসলিমদের জন্য ফতোয়া প্রদান করেন। আমি আমাদের নির্যাতিত মুসলিম বোনদের জন্য সে ফতোয়ার কিছু অংশ উল্লেখ করতে চাই যাতে আমি ঐ ঘৃণ্য যাজককে তার লোকদের কর্মকান্ড সম্পর্কে অবহিত করতে পারি।
শাইখ, আল্লাহ তার উপর রহম করুন, বলেন,  “সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার ও সাহাবীবৃন্দের উপর।”
“আমার ভাইয়েরা, যাদের জন্য দ্বীনকে ধরে রাখা উত্তপ্ত কয়লা ধরে রাখার ন্যায়; যাদেরকে আল্লাহ তাঁর অপরিসীম পুরস্কার দান করেন তাঁর খাতিরে তারা যা সহ্য করেছে তার জন্য; যারা তাদের জীবন ও তাদের সন্তানদের ধৈর্যশীল রেখেছে কেবলমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির অন্বেষণে……”
“আগন্তকেরা হবে, ইন শা আল্লাহ, তাঁর বাগানে জান্নাতুল ফিরদাউস আল-আ’লা তে তাঁর নবীর সাথী ……”
“সত্যনিষ্ঠ সালাফদের পথের উত্তরাধিকারী যারা দুঃখ-দুর্দশা সহ্য করে যদিও তাদের আত্মা কন্ঠনালী পর্যন্ত পৌঁছে যায় ……”
“আমরা দুআ করি যাতে আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করেন এবং আমাদের ও আপনাদের সাহায্য করেন যাতে পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও সত্যনিষ্ঠা নিয়ে তাঁর হক আদায় করতে পারি, এবং যাতে আমাদের ও আপনাদের জন্য এই বিষয়গুলো থেকে পরিত্রাণ দান করেন এবং সকল দুর্দশা থেকে উত্তরণের ব্যবস্থা করেন।”
“আল্লাহর তুচ্ছ বান্দা, তাঁর বান্দাদের মধ্যে সবচেয়ে তুচ্ছ এবং তাঁর দয়া ও রহমতের সবচেয়ে বড় ভিখারী, আহমদ ইবন বু জুমুয়াহ আল মাগরাউয়ী, আল-ওয়াহারানী, আপনাদের প্রতি গুরূত্বারোপ করছেন দ্বীন ইসলামকে আঁকড়ে ধরে রাখার এবং আপনাদের সন্তানদের আদেশ প্রদানের যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে……”
“সুসংবাদ আগন্তুকদের জন্য, যারা ন্যায়নিষ্ঠ থাকে যখন লোকেরা অসৎ হয়ে যায়; এবং অবশ্যই যে ব্যক্তি অমনোযোগীদের মাঝে আল্লাহকে স্মরণ করে, সে যেন মৃতদের মাঝে জীবিত এর ন্যায়……”
“জেনে রাখুন, কাঠ ও পাথরের তৈরী মুর্তিগুলো কোন উপকার অথবা অপকার করার ক্ষমতা রাখে না এবং কর্তৃত্ব কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য। আল্লাহর কোন পুত্র নেই এবং তাঁকেও কেউ সৃষ্টি করেনি। সুতরাং তাঁর ইবাদত করুন এবং তাঁর ইবাদতে ধৈর্যধারণ করুন।”
“সুতরাং সালাত আদায় করুন তা ইশারা-ইঙ্গিতেই হোক না কেন, যাকাত প্রদান করুন যদিও বাহ্যিকভাবে প্রকাশ পায় যে গরীবকে দান করছেন, কারন আল্লাহ আপনার বাইরের চিত্র দেখেন না বরং তিনি আপনাদের অন্তর দেখেন। এবং যৌনমিলনের নাপাকীর জন্য গোসল করুন, এমনকি সাগরে গোসল করার ছুতোয় হোক না কেন।”
“আর যদি তারা আপনাকে সালাতের সময় বাধ্য করে মুর্তিকে সিজদা করতে অথবা তাদের প্রার্থনায় যোগ দিতে, তাহলে শরয়ী সালাতের নিয়ত করে ইহরামের তাকবীর বলুন। আপনি তো আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নিয়ত স্থির করছেন যদিও তা কিবলার বিপরীতেই হোক না কেন। আপনার অবস্থা যুদ্ধকালীন সময়ে সালাতুল খওফের অনুরূপ।”
“আর যদি তারা আপনাদের উপর জোরজবরদস্তি করে ও হারাম কিছু করতে বাধ্য করে যেমন মদপান অথবা শুকরের মাংস ভক্ষণ, তবে আপনার কোন গুনাহ হবে না যতক্ষণ না আপনারা হৃদয় থেকে একে প্রত্যাখ্যান করছেন এবং বিশ্বাস করছেন এটা হারাম। আর যদি তারা আপনাকে বাধ্য করে কুফরী বাক্য উচ্চারণ করতে আর আপনারা কৌশলে রূপক কিছু বলতে সমর্থ হোন, তবে তাই বলুন। আর যদি তা না পারেন, তবে মুখে কুফরী বাক্য উচ্চারণ করলেও অন্তর দিয়ে একে প্রত্যাখ্যান করুন।”
“আর আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি যাতে তিনি ইসলামের আধিপত্য ফিরিয়ে আনেন, যাতে আপনারা প্রকাশ্যে কোন ভীতি ছাড়াই একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে পারেন।”
“আনুমানিক তারিখ রজব, ৯১০ হিজরী। এটা যেন আগন্তুকদের কাছে পৌঁছে যায়, ইন শা আল্লাহ” – সংক্ষেপিত উদ্ধৃতির সমাপ্তি।
সুতরাং তুমি কে দেখতে পেয়েছ, হে ঘরকুনো যাজক?! আর তুমি কিনা অন্যের ব্যাপারে সমালোচনা করো যে তারা সহিংসতা ও তরবারীর মাধ্যমে দ্বীনের প্রচার করেছে।
তুমি কি এখন বুঝতে পেরেছ কার দিকে তোমার সমালোচনার তীর নিক্ষেপ করা উচিত? এবং তোমার উপদেশ ও সমালোচনা কার বেশী দরকার? তুমি কি বুঝতে পেরেছ সেই সময়ে আমাদের ভাইদের দুর্ভোগ ও দুর্দশার মাত্রা? এবং তুমি কি অনুধাবন করতে পার কপটিক চার্চের ভূগর্ভস্থ কক্ষে আমাদের মুসলিম বোনদের দুর্ভোগ কোন পর্যায়ে পৌঁছেছিল?
এটা এমন মাত্রায় পৌঁছেছিল যে তাদের জন্য আমাদের বহু পূর্ব শতাব্দীতে প্রদত্ত ফতোয়ার অনুরূপ প্রদান করতে হয়েছে!! এবং আমরা তাদের অনুরোধ করেছি যাতে তারা তাদের ইসলাম প্রদর্শন না করে অথবা ঘোষণা না করে যাতে তাদেরকে হত্যা না করা হয় অথবা তাদেরকে তাদের দ্বীন থেকে ফিরিয়ে আনতে বাধ্য না করা হয়!
সুতরাং আজকের পর থেকে বিশ্বাসের স্বাধীনতা, ধর্মীয় সহিংসতা ও মানবাধিকার নিয়ে তোমার হাস্যকর বক্তব্য মুসলিমদের প্রতি প্রদান করা উচিত নয়। কারন তোমার দল, তোমার জনগণ ও তোমার বিশ্বাসের অনুসারীরা এইসব বক্তব্য ও উপদেশের অধিক উপযুক্ত।
তোমার অজ্ঞতার ব্যাপারে বলতে গেলে, হে মূর্খদের কাছে প্রশংসিত যাজক এবং হে খ্রীষ্টানদের নেতা; খ্রীষ্টধর্ম ও তোমাদের পবিত্র বই সম্পর্কে তোমার অজ্ঞতার ব্যাপারে আমার কিছু বলার আছে …… না, বরং এর জন্য অনেক সময় দরকার। আমি আমার সামনের বইতে এটি ব্যাখ্যা করবো এবং তোমাকে ও তোমার অনুসারীদের শিক্ষা দিব, যে বইটি আমি আমাদের ভূমিতে তোমার অপবিত্র ভ্রমণের কারনে তোমার ও তাদের প্রতি উৎসর্গ করেছি।
আমি তোমাকে এই বইয়ে দেখাব যে আমাদের নবী, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তোমার অবমাননাকর বাক্য এবং তাঁর দ্বীন সম্পর্কে তোমার জালিয়াতি – এগুলো তোমার মত কুৎসা আরোপকারী লোকদের বৈশিষ্ট্য। আর আমি সেই লোকদের কাছ থেকে এরূপ কুৎসা দেখে বিস্মিত নই যারা তাদের সবচেয়ে ঐশ্বরিক ও পবিত্র বইকে পূর্ণ করেছে তাদের শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূলদের ব্যাপারে মিথ্যা ও বানোয়াট কাহিনী দ্বারা। তারা তাঁদেরকে অপমানিত করেছে আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করা দ্বারা এবং নিজ মেয়ে, নারী আত্মীয় ও অন্যদের সাথে ব্যভিচারের দ্বারা এবং তাঁদেরকে অভিযুক্ত করেছে মাদকাসক্ত হওয়া, নগ্নতা, প্রতারণা, কপটতা, মিথ্যা কথা বলা, বেইমানী এবং অন্য আরো নিচু চরিত্রের ব্যাপারে।
এরপরে কি আমরা সেই লোকদের ব্যাপারে বিস্মিত হব যে তারা এগুলো করেতে পারে এবং এ ব্যাপারে তাদের সবচেয়ে পবিত্র বইয়ে তাদের সবচেয়ে পবিত্র নবীদের অভিযুক্ত করতে পারে? এরপরে কি কেউ বিস্মিত হবে, হে ক্রসের পূজারী, যে তারা আমাদের নবী, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তোমার ভাষার ন্যায় বর্ণনা করেছে?? অথবা এ ব্যাপারে যে তারা তাঁর অসম্মানজনক ছবি এবং উদ্ভট প্রতিকৃতি অঙ্কন করেছে??
কিভাবে একজন বিস্মিত হতে পারে যে এটা তোমার কাছে থেকে আসতে পারে? তোমরা তো তোমাদের পালনকর্তা ও প্রভূকে এরচেয়ে অনেক জঘণ্য এবং নিকৃষ্টভাবে উপস্থাপন করেছ।
আর তোমরা তো জানো এর মধ্যে যুদ্ধের যে নীতি বর্ণিত হয়েছে এবং তোমরা তোমাদের নবীদের উপর এর যে প্রয়োগ আরোপ করেছ – হত্যা, শিশু ও মহিলাদের এমনকি গরু, গাধা, ভেড়া এবং অন্যান্য প্রাণীদের নিশ্চিহ্ন করা। তোমারা খুঁজে পাবে কারা তাদের ধর্মকে বলপ্রয়োগ ও তরবারীর তীক্ষ্ণতা দ্বারা প্রচার করেছে!! এবং তোমরা বুঝতে পারবে কোন ধর্ম সন্ত্রাসবাদী হিসেবে এবং কোন বই ফ্যাসিবাদী হিসেবে ভূষিত হওয়ার অধিক দাবীদার।
আর তোমরা এটি বিস্তারিতভাবে দেখবে তোমার ও তোমার বিশ্বাসের লোকদের প্রতি আমার উপহারের মাধ্যমে।
এবং এটা আমাকে আনন্দিত করে যে, আমি তোমার অনাকাঙ্ক্ষিত আগমণের অভ্যর্থনা সমাপ্ত করছি এই কথা দিয়ে যা আমাদের মহান আলেম ইবনুল কায়্যিম তার “ইহুদী ও খ্রীষ্টানদের প্রতি উত্তরের দ্বারা বিভ্রান্তদের জন্য পথনির্দেশিকা” বইতে উল্লেখ করেছেন।
“এবং কিভাবে একজন ব্যক্তি যার সামান্য পরিমাণ মস্তিস্ক বিদ্যমান এই পার্থক্য করতে পারে না যে কোন ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরম করুনাময়ের ইবাদতের জন্য এবং তাঁর সন্তুষ্টির কার্য সম্পাদনের জন্য এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে আন্তরিকতার সাথে তাঁকে ভালোবাসার জন্য এবং তাঁর সৃষ্টির সাথে তাঁর নির্দেশিত ন্যায়বিচার ও দয়ার সাথে আচরণ করার জন্য, এবং এর সাথে শয়তানের অনুগত্য না করে তাঁর আনুগত্যকে প্রাধাণ্য দেবার জন্য ……… এবং কিভাবে একজন পার্থক্য করতে পারে না যে কোন ধর্মের ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে ভঙ্গুর পর্বতের প্রান্তে যা যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে এবং চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে এর অনুসারীদের নিয়ে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে ………”
“সে তার ভিত্তি (দ্বীনের ভিত্তি) স্থাপন করেছে ক্রস এবং সিলিং ও দেয়ালে অঙ্কিত চিত্রের উপাসনার উপর এবং এই বিশ্বাসের উপর যে আল্লাহ তাঁর আরশ থেকে দুনিয়ায় অবতরণ করেছিলেন এবং নিজেকে নারীর পেটে আবদ্ধ করেছিলেন এবং সেখানে ঋতুকালীন রক্ত ও পেটের অন্ধকারে একটি সময় পর্যন্ত অবস্থান করেছিলেন; অতঃপর তিনি দুগ্ধপোষ্য শিশু হিসেবে জন্ম নেন এবং ধীরে ধীরে বেড়ে উঠেন; এমন শিশু যে কাঁদে, খায়, পান করে, পেশাব করে, ঘুমায় এবং বাচ্চাদের সাথে খেলা করে। তারপর তাঁকে ইহুদী বালকদের স্কুলে পাঠানো হয় যেখানে তিনি তাই শিখেন যা সাধারণ মানুষের জানা প্রয়োজন …… তারপর খৎনা করে তাঁর লিঙ্গের অগ্রভাগ কাটা হয়।”
“তারপর ইহুদীরা তাঁকে ধাওয়া করেছিল এবং একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় বের করে দিয়েছিল, অবশেষে তারা তাঁকে বন্দী করেছিল এবং তাদের জন্য তাঁকে অপমানিত ও লাঞ্চিত করাকে বৈধ করে নিয়েছিল। তাই তারা তাঁর মাথায় কাঁটাপূর্ণ মুকুট পড়িয়ে দিয়েছিল; সবচেয়ে জঘন্য মুকুটসমূহের মধ্যে একটি মুকুট।”
“তারপর তারা তাঁকে একখন্ড কাঠের সাথে বেঁধেছিল যেটিতে কোন বলগা অথবা লাগাম ছিল না, তারপর তারা তাঁকে সামনে, পিছনে এবং ডান, বামে পরিবেষ্টন করে চড় মারতে মারতে এবং মুখে থুথু ছিটাতে ছিটাতে ক্রুশবিদ্ধ করার জন্য নিয়ে গিয়েছিল। তারপর তারা তাঁকে এমন একটি যন্ত্রের সাথে বেঁধেছিল যেটি শরীর ও অন্তরে প্রকম্পন তৈরি করে।”
“তারপর তাঁর হাত ও পা রশি দিয়ে বেঁধেছিল এবং সেখানে পেরেক মেরেছিল যা তাঁর হাড় ভেঙ্গে দিয়েছিল এবং মাংস ছিঁড়ে ফেলেছিল, এ সময় তিনি চিৎকার করছিলেন, ‘হে আমার জাতি, আমার প্রতি দয়া দেখাও’ এবং কেউ তাঁর প্রতি দয়া দেখায়নি।”
“তিনি হলেন সেই সত্ত্বা যিনি আসমান ও যমীনের সকল কাজ সম্পাদন করেন! এবং তিনি সেই সত্ত্বা যিনি, ”

“আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা আছে সবাই তাঁর নিকট প্রতিদিন প্রার্থনা করে, তিনি সর্বদা মহান কার্যে রত।” [সূরা আর রহমান – ২৯]

“তারপর তিনি মারা যান এবং তাঁকে কঠিন শিলা ও গ্রানাইটের নিচে কবর দেওয়া হয়। তারপর তিনি কবর থেকে পুনরুজ্জীবিত হন এবং তাঁর রাজত্বে তাঁর আরশে ফিরে যান; এর মাঝে এ সকল ঘটনা সম্পাদিত হয়েছে।”
“সুতরাং তোমরা তার শাখা-প্রশাখা সম্পর্কে কী ধারণা কর, যার ভিত্তি এভাবে স্থাপিত হয়েছে??”

আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসি
জুমাদুল আ’লা
মুস্তফা, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের ১৪৩০ বছর পর