সুতরাং, ওদেরকে ভয় করো না – শাইখ আবু মুহাম্মদ আসিম আল-মাকদিসী
পরিবেশনায়: বালাকোট মিডিয়া
إِنَّمَا ذَٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
নিশ্চয়ই এ হচ্ছে শুধুমাত্র শয়তান যা তোমাদের কাছে তার অনুসারী ও সমর্থকদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে; সুতরাং, ওদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকো।(১)
তোমরা কি একটা মাছি কে ভয় পাও?
– ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ)
সত্যের উপর অটল থাকার জন্য একটি উৎসাহমূলক বাণী; প্রকাশ্যে সত্য প্রচার করো এবং জালেমদের সাহায্যকারীদের ভয় করো না(২)
জেনে রাখুন যে, তাগুতের সাহায্যকারীদের মুখের উপর দৃঢ়ভাবে সত্য কথা বলে দেয়া, তাওহীদের যে বিষয়গুলো তাদের অপ্রিয় সেই বিষয়গুলো তাদেরকে শুনিয়ে দেয়া, তাদের ভ্রান্ত উপাস্যদের তিরস্কার করা, তাদের সকল মিথ্যা উপাস্য, এগুলোর সমর্থক ও এগুলোর প্রতি সাহায্যকে প্রত্যাখ্যান করা – এটাই সর্বোত্তম পন্থা সেই মুসলমানদের জন্যে যারা নিজেদেরকে আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যকারীদের মাঝে শামিল করতে চায় এবং সেই সাহায্যকারী দলের(৩) অন্তর্ভুক্ত হতে চায় যারা কেয়ামত পর্যন্ত তাদের দ্বীনকে সমুন্নত রাখবে এবং যারা তাদের বিরোধীদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
এটা হয়তো বলা হয়ে থাকে যে, কোনো মুসলমানকে যখন তাগুতের দোসররা বন্দী করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে সেই সময়টা সত্য প্রকাশের জন্য উপযুক্ত সময় নয়, কারণ জালেমরা তখন সত্য শুনতে চায় না, বরং তারা সেই মুসলমান ভাইয়ের মন-মানসিকতার ধরন ও বিশ্বাসের প্রকৃতি জানতে চায়, অর্থাৎ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে এর বিচার প্রক্রিয়া চালাতে সহায়ক হবে এমন কথাই শুনতে চায়।
এর জবাবে আমরা বলতে চাই যে, হ্যাঁ এটা সত্যি। তবে মন-মানসিকতার ভিতকে নাড়িয়ে দেয় এবং অন্তরে গেঁথে যায় এমন হৃদয়স্পর্শী পদ্ধতিতে তাদের কারোও কাছে সত্যের অনস্বীকার্য বাণী পৌঁছে না দেয়ার কোনোই কারণ নেই। আর এই সকল ক্ষেত্রেই পরিস্থিতি মানুষ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা ভেদে বিভিন্ন হয়ে থাকে।
কোনো বন্দী যদি দুর্বল হয় এবং অনুভব করে যে, প্রকাশ্যে সত্য ঘোষণার ফলাফল সে সহ্য করতে পারবে না, সেক্ষেত্রে তাকে সত্য প্রকাশ করতে হবে না। তবে এখানে শর্ত হলো, তাকে যদি সত্যিকারের জোর-জবরদস্তি ও বাধ্যবাধকতার দ্বারা কুফরী কথা বলতে বাধ্য করা না হয়, তবে সে এমন কথা বলবে না যা কুফরী বহন করে। অনেকে বন্দী অবস্থায় খুব অল্পতেই কুফরী কথা বলে ফেলে এই অজুহাতে যে, সে দুর্বল অবস্থায় ছিল; অথচ তাকে বলপ্রয়োগ বা মারধর বা বাধ্য করা হয় নি। আর এমনটা হয়ে থাকে যদিও এমন পরিস্থিতিতে মিথ্যা ফতোয়া প্রদান কিংবা আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান ছাড়া কথা বলার পরিণামকে ভয় করে সেগুলোর বদলে অস্পষ্ট কথা বলে কিংবা প্রশ্নের উত্তরস্বরূপ অপর প্রশ্ন করে কিংবা শুধুমাত্র “আমি এটা জানি না” বলে সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার সুযোগ থাকে। আমি বলি যে, এটা(৪) একজন মুসলমানকে জবরদস্তির শিকার না হওয়া সত্ত্বেও বাতিলপন্থী কিংবা কুফরী কথা বলা, বা সত্য-মিথ্যার মিশ্রণ ঘটানো, অথবা জালেমদের কুফরী ও তাদের বাতিল উপাস্যদেরকে অনুমোদন করার মতো কঠিন গুনাহের হাত থেকে বাঁচিয়ে দেয়।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“যে আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে, সে সত্য বলুক অথবা চুপ থাকুক।”(৫)
অনেক দেশে জিজ্ঞাসাবাদে আপনি তাদেরকে কি বলেন বা কি বিশ্বাস করেন তা নিয়ে তারা তেমন পরোয়া করে না যতটা না পরোয়া তারা করে যখন আপনি রাস্তাঘাট কিংবা মসজিদে অনেক মানুষের মাঝে অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে মানুষকে পরিচালিত করেন। অনেক দেশে জিজ্ঞাসাবাদে আপনি কি বললেন তা আপনার ক্ষতি করে না যতক্ষণ না আপনি ওদের লিখিত কাগজে সই করেন। এমন জায়গায় আপনি সত্য মুখে বলতে পারেন কাগজে সই না করে। আসলে কোনো নির্দিষ্ট তাগুতের নাম না বলে সাধারণভাবে সব তাগুতের বিরুদ্ধে কথা বলা সম্ভব। বিভিন্ন অবস্থায় একই সত্য প্রকাশের সঠিক উপায় বিভিন্ন হতে পারে, আর যারা তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন তারা সেই অবস্থা অনুসারে উপায় নির্ধারণ করতে পারেন।
তাওহীদের ওপর প্রতিষ্ঠিত ভাইদের জন্য – বিশেষ করে যারা অন্যদেরকে সত্যের দিকে আহবান করা ও সত্য প্রকাশ করাকে নিজেদের দায়িত্ব হিসেবে স্থির করে নিয়েছেন তাদের জন্য – উত্তম হলো সমস্ত অত্যাচার, নির্যাতন, জেল-জরিমানার মুখে সত্যের উপর অটল থাকা। মনে রাখবেন, আপনি এই পথে নতুন নন, আপনার আগে বহু নবী-রাসূল (আলাইহিমিস সালাম), সত্যবাদী ও শহীদ এই পথে হেঁটেছেন। অনেক নবীকে (আলাইহিমিস সালাম) হত্যা করা হয়েছে। সঠিক পথের মানুষকে করাত দিয়ে কাটা হয়েছে। কিন্তু এসব নির্যাতন শুধু তাদের ঈমানকেই আরও মজবুত করেছে।
আল্লাহর বান্দা ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“শহীদদের নেতা হচ্ছেন হামজা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এবং সেই লোক যে অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সৎ কাজের আদেশ করে ও অসৎ কাজের নিষেধ করে এবং এ কারণে সেই অত্যাচারীর হাতে সে নিহত হয়।”(৬)
সুতরাং আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে মানুষকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করবেন না। বরং আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে রাগান্বিত করুন। তখন আপনি তাদের অন্তর জয় করতে পারবেন, তাদের উপর প্রাধান্য পাবেন এবং আল্লাহ তাদের অন্তরে আপনার প্রতি সম্মান ও আতংক জন্ম দিবেন।
ইমাম আহমদ (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
“একজন মানুষের উচিত নয় লোকজনের ভয়ে সত্য বলা থেকে বিরত থাকা যখন সে এমন অবস্থা দেখে যেখানে সত্য প্রকাশ করা উচিত, কারণ সত্য বলা অথবা গুরুত্বপূর্ণ কিছু উল্লেখ করা তার আয়ু কমায় না বা জীবিকা বিলম্বিত করে না।”(৭)
আর এ ধরনের অবস্থা আল্লাহ দেখেন, তাঁর ফেরেশতারা দেখেন এবং তা লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়। সুতরাং, নিজের জন্য এমন একটি লিপি তৈরি হতে দিন, যে অবস্থায় আপনি আল্লাহর শত্রুদের থেকে দূরে ছিলেন এবং আল্লাহর নিকটবর্তী ছিলেন এবং ঘটনাটিকে আপনি ব্যবহার করতে পারবেন এমন এক দিনে যখন কোনো সম্পদ বা সন্তান কাজে আসবে না এবং শুধুমাত্র তারাই বাঁচতে পারবে যারা পরিশুদ্ধ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে।
ইবনুল কাইয়্যুম (রহিমাহুল্লাহ) তার “ইগাসাত আল লাহফান”(৮) নামক গ্রন্থে লিখেছেন,
“শয়তানের ষড়যন্ত্রগুলোর একটা হলো, সে বিশ্বাসীদেরকে তার সেনাবাহিনী ও মিত্রদের ব্যাপারে ভীত করে তোলে। এজন্য তারা (বিশ্বাসীরা) শয়তানের বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায় না, ভালো কাজের আদেশ করে না এবং খারাপ কাজে নিষেধ করে না। এটা শয়তানের সবচেয়ে বড় চক্রান্তগুলোর মাঝে অন্যতম।”
আল্লাহ বলেছেন,
إِنَّمَا ذَٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
নিশ্চয়ই এ হচ্ছে শুধুমাত্র শয়তান যা তোমাদের কাছে তার অনুসারী ও সমর্থকদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে; সুতরাং, ওদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকো।(৯)
কাতাদাহ (রহিমাহুল্লাহ) আয়াতটির ব্যাখ্যায় বলেছেন, “শয়তান তার বাহিনীকে বড় ও শক্তিশালী হিসেবে বিশ্বাসীদের অন্তরে পেশ করে। এজন্য আল্লাহ বলেছেন, ‘……সুতরাং, ওদের ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকো।’ সুতরাং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস যত শক্তিশালী হবে, অন্তরে শয়তানের মিত্রদের ভয় তত কমে যাবে। আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস যত দুর্বল হবে, শয়তানের মিত্রদেরকে তত ভয়ংকর মনে হবে।”
হ্যাঁ, এটাই হলো সত্য, কারণ আল্লাহভীতি যার অন্তর পূর্ণ করে তার অন্তরে অন্যকে ভয় করার জায়গা অবশিষ্ট থাকে না। যখন কোনো লোক উপলব্ধি করে যে, আল্লাহ সর্বোচ্চ, সর্বশক্তিমান, সব কিছুই আল্লাহর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন, তখন তার কাছে অন্য যেকোনো কিছুই তুচ্ছ ও নগণ্য মনে হবে। সে যদি নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে, যেসব কিছুর মুখোমুখি সে হচ্ছে সেগুলো তার জন্যই ছিল এবং যেসব কিছুর সম্মুখীন সে হয়নি সেগুলো তার জন্য ছিল না, এবং যদি সকল জিন ও মানুষ একত্রিত হয়ে তার ক্ষতি চায় তারা তার ক্ষতি করতে পারবে না শুধুমাত্র আল্লাহ যদি কোনো ক্ষতি চান সেটুকু ছাড়া, যদি সে এটা উপলব্ধি করে, তবে আল্লাহ তাকে দৃঢ় রাখবেন এবং তার অন্তরকে শক্তিশালী করবেন। পৃথিবীর সকলে তার বিরুদ্ধে একত্রিত হলেও সে তার পথ থেকে সরবে না, বরং তার ঈমান ও আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ আরও বেড়ে যাবে।
الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَدًا إِلَّا اللَّهَ ۗ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ حَسِيبًا
যারা আল্লাহর রিসালাত (বার্তাসমূহ) প্রচার করতেন এবং তাঁকে ভয় করতেন, আর আল্লাহকে ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করতেন না। হিসাব গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট।(১০)
বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আল্লাহর দুশমনেরা যে পদ্ধতি ব্যবহার করে তা হলো, বিশ্বাসীদের অন্তরে আল্লাহর দুশমনদের ব্যাপারে ভয় ও অজানা আতংক তৈরি করা। আর এই পদ্ধতিটি তারা তাদের নেতা শয়তানের থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেছে। তাই ঠিক যেমন শয়তান – তার উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক – ঈমানদারদেরকে সত্য থেকে দূরে সরানোর জন্য তার সহচরদের ব্যাপারে ঈমানদারদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করতে চায়, তারাও ঠিক একই কাজ করে। তারা তাদের ক্ষমতা, তাদের সংখ্যা, সেনাবাহিনী, অস্ত্র, গোয়েন্দা সংস্থা, প্রচার মাধ্যম ইত্যাদির অহমিকা প্রদর্শনের মাধ্যমে মুসলমানদের অন্তরে ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করে। তারা মুসলমানদের এমন ধারণা দেয়ার চেষ্টা করে যে, পুরো পৃথিবী তাদের হাতের মুঠোয়; তারা ছোট, বড় সকল বিষয়ের খোঁজ-খবর রাখে। তারা তাদের বিভিন্ন সংস্থাগুলোর ক্ষমতা অতিরঞ্জন করে প্রচার করে। তাদের এরকম আচরণের কথা আল্লাহ পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন,
أَلَيْسَ اللَّهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ ۖ وَيُخَوِّفُونَكَ بِالَّذِينَ مِنْ دُونِهِ ۚ وَمَنْ يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ
আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্যে যথেষ্ট নন? অথচ তারা আপনাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যান্যদের ভয় দেখায়। আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার কোনো পথপ্রদর্শক নেই।(১১)
জালেমদের এসব প্রচার-প্রপাগানডা শুধুমাত্র দুর্বল ঈমানদারদেরই প্রভাবিত করে যাদের অন্তর আল্লাহর প্রতি গভীর ভক্তি ও ভীতির দ্বারা সম্পূর্ণরূপে আচ্ছাদিত থাকে না। এর ফলে তারা আল্লাহর চাইতে নিছক কিছু মানুষকেই অধিক ভয় করে। এসব দুর্বল লোকেরা বিশ্বাসীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ তারা আল্লাহর দুশমনদের দ্বারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের ঐক্যপূর্ণ মনোবলকে দুর্বল করে তোলার একটি অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাই এটা আবশ্যক যে, এই ধরনের মানুষদেরকে এমন জায়গাসমূহে রাখা যেখানে থেকে তাদের পক্ষে অন্য মুসলমানদেরকে প্রভাবিত করার সুযোগ না মিলে, ঠিক যেমন তাদের প্রতি মনযোগ প্রদান না করা কিংবা তাদের কথা বিবেচনা না করা কিংবা তাদের দ্বারা প্রতারিত না হওয়া আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَوْ خَرَجُوا فِيكُمْ مَا زَادُوكُمْ إِلَّا خَبَالًا وَلَأَوْضَعُوا خِلَالَكُمْ يَبْغُونَكُمُ الْفِتْنَةَ وَفِيكُمْ
سَمَّاعُونَ لَهُمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِالظَّالِمِينَ
যদি তারা তোমাদের সাথে বের হতো, তবে তারা তোমাদের অনিষ্ট ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করতো না, আর তারা ছুটে বেড়াতো তোমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে। আর তোমাদের মাঝে কতক রয়েছে যারা তাদের শ্রবণ করে। বস্তুতঃ আল্লাহ জালেমদের ভালোভাবেই জানেন।(১২)
বিশ্বাসীদের কঠিন সময়ে উৎসাহহীন, নেতিবাচক মানসিকতাসম্পন্ন, ভীত দুর্বল লোকেরা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। কারণ এ ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্বাসীদের উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন, প্রয়োজন সত্যের উপর দৃঢ় থাকার, অন্তরকে শক্তিশালী রাখার। তাদেরকে মনে করিয়ে দেয়া দরকার পূর্ববর্তী বিশ্বাসীগণ ও উলামাগণ কিভাবে ভয়ংকর প্রতিকূলতার মধ্যে ঈমানের উপর দৃঢ় থেকেছেন। আল্লাহ এরকম সময়ে নিরুৎসাহ প্রদানের ও নেতিবাচক থাকার নিন্দা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي
الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنْبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ
الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا
আর যখন তাদের কছে পৌঁছে কোনো সংবাদ শান্তি-সংক্রান্ত কিংবা ভয়ের, তখন তারা সেগুলোকে রটিয়ে দেয়। আর যদি তারা সেগুলো পৌঁছে দিতো রাসূল পর্যন্ত কিংবা তাদের দায়িত্বশীলদের পর্যন্ত, তখন অনুসন্ধান করে দেখা যেতো সেসব বিষয়, যা তাতে রয়েছে অনুসন্ধান করার মতো। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ ও করুণা যদি তোমাদের উপর বিদ্যমান না থাকতো তবে তোমাদের অল্প কতিপয় লোক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করতে শুরু করতো!(১৩)
এগুলো হলো, কঠিন সময় ও অবস্থা যখন আল্লাহ বিশ্বাসীদেরকে পরীক্ষা করেন তাদেরকে পরিশুদ্ধ করার জন্য এবং ভালো মানুষদেরকে খারাপ মানুষদের থেকে আলাদা করার জন্য। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
إِنَّمَا ذَٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
নিশ্চয়ই এ হচ্ছে শুধুমাত্র শয়তান যা তোমাদের কাছে তার অনুসারী ও সমর্থকদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে; সুতরাং, ওদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকো।(১৪)
আর এর একটু পরেই তিনি সুবহানাহু তাআলা বলেন,
مَا كَانَ اللَّهُ لِيَذَرَ الْمُؤْمِنِينَ عَلَىٰ مَا أَنْتُمْ عَلَيْهِ حَتَّىٰ يَمِيزَ الْخَبِيثَ مِنَ الطَّيِّبِ ۗ وَمَا كَانَ
اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يَشَاءُ ۖ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ ۚ
وَإِنْ تُؤْمِنُوا وَتَتَّقُوا فَلَكُمْ أَجْرٌ عَظِيمٌ
আল্লাহ, ঈমানদারগণকে সে অবস্থাতে রাখবেন না যাতে বর্তমানে তোমরা রয়েছো যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি মন্দ থেকে ভালো কে আলাদা করেন, আর আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদিগকে গায়েবের সংবাদ দেবেন। কিন্তু আল্লাহ স্বীয় রাসূলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা বাছাই করে নিয়েছেন। সুতরাং, আল্লাহর ওপর এবং তাঁর রাসূলগণের ওপর তোমরা প্রত্যয় স্থাপন করো। বস্তুতঃ তোমরা যদি বিশ্বাস ও পরহেযগারীর ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকে থাকো, তবে তোমাদের জন্যে রয়েছে বিরাট প্রতিদান।(১৫)
এজন্য যে সকল ঈমানদারগণ আল্লাহর সাথে কৃত চুক্তির ব্যাপারে সত্যবাদী থেকেছে তারা শয়তানের ষড়যন্ত্রে প্রভাবিত হয় না, অত্যাচার ও জুলুমের ভয়ে ভেঙে পড়ে না। সত্যের প্রতি তাদের মানসিকতার কোনো পরিবর্তন আসে না। তারা যে পদক্ষেপ নেয় তা নড়বড়ে হয় না। বরং তাদের ঈমান ও আত্মসমর্পণ আরও বেড়ে যায়। আল্লাহ আরও বলেছেন,
الَّذِينَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا وَقَالُوا
حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ
فَانْقَلَبُوا بِنِعْمَةٍ مِنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ لَمْ يَمْسَسْهُمْ سُوءٌ وَاتَّبَعُوا رِضْوَانَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ ذُو فَضْلٍ
عَظِيمٍ
إِنَّمَا ذَٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ فَلَا تَخَافُوهُمْ وَخَافُونِ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ
যাদেরকে লোকেরা বলেছিল, “নিশ্চয়ই তোমাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ-সরঞ্জাম; সুতরাং, ওদেরকে ভয় করো।” তখন তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ়তর হয়ে যায় এবং তারা বলে, “আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; তিনি কতই না চমৎকার অভিভাভক।” অতঃপর ফিরে এলো মুসলমানেরা আল্লাহর অনুগ্রহ নিয়ে, তাদের কিছুই অনিষ্ট হলো না। তারপর তারা আল্লাহর ইচ্ছার অনুগত হলো। বস্তুতঃ আল্লাহর অনুগ্রহ অতি ব্যাপক। নিশ্চয়ই এ হচ্ছে শুধুমাত্র শয়তান যা তোমাদের কাছে তার অনুসারী ও সমর্থকদের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করে; সুতরাং, ওদেরকে ভয় করো না, বরং আমাকেই ভয় করো, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাকো।(১৬)
এই আয়াতগুলির পূর্বে বিশ্বাসীদেরকে নৈতিকভাবে দুর্বল করা এবং ভীতি প্রদর্শনের ব্যাপারে মুনাফিকদের হীন অবস্থানের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন এবং মুনাফিকদের প্রতিউত্তরও দিয়েছেন,
الَّذِينَ قَالُوا لِإِخْوَانِهِمْ وَقَعَدُوا لَوْ أَطَاعُونَا مَا قُتِلُوا ۗ قُلْ فَادْرَءُوا عَنْ أَنْفُسِكُمُ الْمَوْتَ إِنْ
كُنْتُمْ صَادِقِينَ
যারা ঘরে বসে থেকে নিজেদের ভাইদের সম্বন্ধে বলে, “যদি তারা আমাদের কথা শুনতো তবে তারা নিহত হতো না।” তাদেরকে বলে দিন, “এবার তোমাদের নিজেদের উপর থেকে মৃত্যুকে সরিয়ে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।”(১৭)
তারপর আল্লাহ শহীদদের মর্যাদা বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন যারা তাঁর সাথে কৃত চুক্তি পূরণ করেছে,
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ
فَرِحِينَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِالَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا بِهِمْ مِنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا
خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
يَسْتَبْشِرُونَ بِنِعْمَةٍ مِنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ وَأَنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُؤْمِنِينَ
الَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِلَّهِ وَالرَّسُولِ مِنْ بَعْدِ مَا أَصَابَهُمُ الْقَرْحُ ۚ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا مِنْهُمْ وَاتَّقَوْا أَجْرٌ
عَظِيمٌ
الَّذِينَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيمَانًا وَقَالُوا حَسْبُنَا
اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ
আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত। আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের সাথে সম্মিলিত হয় নি তাদের জন্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোনো ভয়-ভীতিও নেই এবং কোনো চিন্তা-ভাবনাও নেই। আল্লাহর নেয়ামত ও অনুগ্রহ লাভের জন্যে তারা আনন্দ প্রকাশ করে এবং এজন্য যে, আল্লাহ ঈমানদারদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না। যারা আহত হয়ে পড়ার পরেও আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের নির্দেশ মান্য করেছে, তাদের মধ্যে যারা সৎ ও পরহেযগার, তাদের জন্য রয়েছে মহান সওয়াব। যাদেরকে লোকেরা বলেছিল, “তোমাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য লোকেরা সমাবেশ করেছে বহু সাজ-সরঞ্জাম; সুতরাং, ওদেরকে ভয় করো।” তখন তাদের বিশ্বাস আরও দৃঢ়তর হয়ে যায় এবং তারা বলে, “আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; তিনি কতই না চমৎকার অভিভাবক।”(১৮)
একইভাবে আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
وَيُخَوِّفُونَكَ بِالَّذِينَ مِنْ دُونِهِ
…অথচ তারা আপনাকে আল্লাহর পরিবর্তে অন্যান্যদের ভয় দেখায়…(১৯)
অতঃপর তিনি তাঁর নবীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিক্ষা দেন,
قُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ ۖ عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْمُتَوَكِّلُونَ
…বলুন, “আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁর উপরেই নির্ভর করে।”(২০)
আল্লাহ ছাড়া আর যা কিছু আছে সবই আল্লাহর সৃষ্টি এবং সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। সুতরাং, যারা সত্যিকার অর্থে আল্লাহর উপর ভরসা করে তারা কিভাবে আল্লাহকে ভয় না করে শয়তানের অনুসারীদের অস্ত্র, সংখ্যা, কৌশল, প্রচার-প্রপাগানডাকে ভয় করে? নবী-রাসূলদের (আলাইহিমিস সালাম) ইতিহাস বিবেচনা করে দেখুন। উদ্ধত অহংকারী সম্প্রদায়ের কঠোর হুমকির মুখে নবী ও রাসূলদের (আলাইহিমিস সালাম) আদর্শগত অবস্থানের দৃঢ়তা দেখুন এবং নিজের অন্তরকে এর নিখাদ শক্তি দ্বারা শক্তিশালী করুন। উদাহরণস্বরূপ, নূহ (আলাইহিস সালাম) এর ঘটনাটিকে দেখুন, আর খেয়াল করে দেখুন যে, তিনি (আলাইহিস সালাম) তাঁর কওমের মানুষদেরকে উদ্দেশ্য করে কি দৃঢ়তার সাথে কথা বলেছেন, অথচ তিনি ছিলেন তাদের মাঝে একা। কিন্তু তিনি আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন এবং তাঁর প্রবল প্রতাপময় মহাশক্তির ব্যাপারে উপলব্ধি করেছিলেন, তাই কোনো প্রকারের ভয়-ভীতি ছাড়াই তিনি তাঁর (আলাইহিস সালাম) সময়কার অত্যাচারী শাসক কিংবা শাসনব্যবস্থাকে সম্বোধন করেছিলেন,
إِنْ كَانَ كَبُرَ عَلَيْكُمْ مَقَامِي وَتَذْكِيرِي بِآيَاتِ
اللَّهِ فَعَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْتُ فَأَجْمِعُوا أَمْرَكُمْ وَشُرَكَاءَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُنْ أَمْرُكُمْ عَلَيْكُمْ غُمَّةً ثُمَّ
اقْضُوا إِلَيَّ وَلَا تُنْظِرُونِ
…“যদি তোমাদের কাছে আমার অবস্থান এবং আল্লাহর আয়াতসমূহের মাধ্যমে নসীহত করা ভারী বলে মনে হয়ে থাকে, তবে আমি আল্লাহর উপর ভরসা করছি। সুতরাং, তোমরা তোমাদের শরীকদের সঙ্গে নিয়ে নিজেদের তদবীর মজবুত করে নাও, অতঃপর তোমাদের সেই তদবীর (গোপন ষড়যন্ত্র) যেন তোমাদের দুশ্চিন্তার কারণ না হয়, তারপর আমার সাথে (যা করতে চাও) করে ফেলো, আর আমাকে মোটেই অবকাশ দিও না।”(২১)
আর এই কথাগুলো নূহ (আলাইহিস সালাম) নিছক বেপরোয়া হয়ে কিংবা এমন অসার উদ্দীপনার বশবর্তী হয়ে বলে ফেলেন নি যা কিছুক্ষণের মাঝেই হারিয়ে যায়। বরং তিনি (আলাইহিস সালাম) জানতেন যে, তিনি এমন মহাশক্তির দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে আছেন যা কোনোদিনই হারিয়ে যাবে না, আর তিনি (আলাইহিস সালাম) জানতেন যে, আল্লাহ তাঁর সাথে আছেন, আর যতক্ষণ তিনি আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা করবেন এবং তাঁর দেয়া রজ্জু আঁকড়ে ধরে থাকবেন ততক্ষণ তারা তাঁর (আলাইহিস সালাম) কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না শুধুমাত্র তা ব্যতীত যা আল্লাহ ইচ্ছা করেছেন। আর আল্লাহ যদি এমন কিছু ইচ্ছা করেই থাকেন তবে তা তাঁর বান্দার প্রতি মোটেও প্রতারণা নয়, বরং তা হলো একটি পরীক্ষা, একটি মূল্যায়ণ, যা হলো বান্দাকে পরিশোধিত করা এবং সত্য-মিথ্যাকে পার্থক্যপূর্ণ করে দেয়ার একটি মাধ্যম।
হূদ (আলাইহিস সালাম) এর ঘটনাটি পর্যালোচনা করে দেখুন, তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন একা এবং তাঁর সম্প্রদায় ছিল তখনকার সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী, কুখ্যাত সম্প্রদায়। তারা তাদের মিথ্যা উপাস্যদের ব্যাপারে ভয় দেখিয়ে হূদ (আলাইহিস সালাম) কে থামানোর চেষ্টা করেছিল,
إِنْ نَقُولُ إِلَّا اعْتَرَاكَ بَعْضُ آلِهَتِنَا بِسُوءٍ
“আমাদের কথা তো এই যে, আমাদের উপাস্য দেবতাদের মধ্য হতে কেউ তোমাকে দুর্দশায় ফেলে দিয়েছে”…(২২)
হূদ (আলাইহিস সালাম) পর্বতসম দৃঢ়তা নিয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করে তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন,
قَالَ إِنِّي أُشْهِدُ اللَّهَ وَاشْهَدُوا أَنِّي بَرِيءٌ مِمَّا
تُشْرِكُونَ
مِنْ دُونِهِ ۖ فَكِيدُونِي جَمِيعًا ثُمَّ لَا تُنْظِرُونِ
إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ رَبِّي وَرَبِّكُمْ ۚ مَا مِنْ دَابَّةٍ إِلَّا هُوَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا ۚ إِنَّ رَبِّي عَلَىٰ
صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
…“আমি আল্লাহকে সাক্ষী করছি এবং তোমরাও সাক্ষী থাকো যে, আমার কোনো সম্পর্ক নেই তাদের সাথে যাদেরকে তোমরা শরীক করছো। তাঁকে (আল্লাহকে) ছেড়ে, অনন্তর তোমরা সবাই মিলে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাও, অতঃপর আমাকে সামান্য অবকাশও দিও না। আমি আল্লাহর উপরে ভরসা করেছি যিনি আমারও প্রতিপালক এবং তোমাদেরও প্রতিপালক, ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কিছুই নেই যা তাঁর র্পূণ আয়ত্তাধীন নয়। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক সরল পথে অবস্থিত।”(২৩)
খলিলুল্লাহ্* ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) এর নেয়া পদক্ষেপের কথা চিন্তা করুন, তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে বিতর্ক করেছিলেন, তাদের মোকাবেলা করেছিলেন এবং তাদের এই শিক্ষা দিয়েছিলেন যে, তিনি তাদেরকে কিংবা তাদের সেই সকল মিথ্যা উপাস্যদেরকে মোটেও পরোয়া করেন না যেগুলোর দ্বারা তারা তাঁকে ভয় দেখিয়েছিল। নিরাপত্তা, প্রশান্তি ও প্রতিষ্ঠা শুধুমাত্র তাদেরই প্রাপ্য যারা সত্যিকার অর্থে আল্লাহর তাওহীদে (একত্ববাদ) বিশ্বাস করে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক হিসেবে স্থির না করে জীবন অতিবাহিত করে। আর যারা আল্লাহর সাথে শিরক করে, তাদের প্রতি কিভাবে প্রশান্তি ও নিরাপত্তা প্রেরিত হতে পারে? বরং, এই ধরনের মানুষেরা শুধুমাত্র ভয়, আতংক ও প্রতারণাই অর্জন করে,
وَحَاجَّهُ قَوْمُهُ ۚ قَالَ أَتُحَاجُّونِّي فِي اللَّهِ وَقَدْ هَدَانِ ۚ وَلَا أَخَافُ مَا تُشْرِكُونَ بِهِ إِلَّا أَنْ
يَشَاءَ رَبِّي شَيْئًا ۗ وَسِعَ رَبِّي كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا ۗ أَفَلَا تَتَذَكَّرُونَ
وَكَيْفَ أَخَافُ مَا أَشْرَكْتُمْ وَلَا تَخَافُونَ أَنَّكُمْ أَشْرَكْتُمْ بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ عَلَيْكُمْ
سُلْطَانًا ۚ فَأَيُّ الْفَرِيقَيْنِ أَحَقُّ بِالْأَمْنِ ۖ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ
…“তোমরা কি আল্লাহর ব্যাপারে আমার সাথে বিতর্ক করছো, অথচ তিনি আমাকে পথ প্রদর্শন করেছেন? তোমরা যাদেরকে শরীক করো, আমি তাদেরকে ভয় করি না, আমার কোনো ক্ষতিই হতে পারে না তা ব্যতীত যা আমার পালনকর্তা ইচ্ছা করেন। আমার পালনকর্তাই প্রত্যেক বস্তুকে স্বীয় জ্ঞানের দ্বারা বেষ্টন করে আছেন। এরপরেও কি তোমরা চিন্তা করো না? যাদেরকে তোমরা আল্লাহর সাথে শরীক করে রেখেছো, তাদেরকে আমি কিভাবে ভয় করতে পারি, অথচ তোমরা ভয় করো না যে, তোমরা আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে শরীক করছো, যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তোমাদের প্রতি কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি? সুতরাং, এই দু’টি দলের মধ্যে কোন দলটি প্রশান্তি ও নিরাপত্তা লাভের অধিক যোগ্য, যদি তোমাদের জানা থাকে?”(২৪)
الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ أُولَٰئِكَ لَهُمُ الْأَمْنُ وَهُمْ مُهْتَدُونَ
যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শিরকের সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি ও নিরাপত্তা এবং তারাই সুপথগামী।(২৫)
সুতরাং, সত্যিকারের নিরাপত্তা, প্রশান্তি এবং দৃঢ়তা তাদের জন্য যারা শুধুমাত্র আল্লাহর উপাসনা করে এবং তাঁর সাথে কাউকে কোনোভাবেই শরীক করে না।
চিন্তা করুন সেই মূসা (আলাইহিস সালাম) এর কথা যিনি আল্লাহর সাথে কথা বলার সম্মান লাভ করেছিলেন। যখন ফেরাউন তার দলবল নিয়ে সাগর তীরে মূসা (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর অনুসারী বনী ইসরাঈলদের ধরে ফেলার অবস্থায় চলে গিয়েছিল। মূসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর অনুসারীদের নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন ফেরাউনদের থেকে তাঁদের দ্বীন রক্ষার জন্য এবং পালাবার পথে সাগর তীরে হঠাৎ করে ফেরাউনের বিশাল বাহিনী পেছন থেকে তাঁদের দিকে ধেয়ে আসছিল। এ সময় মূসা (আলাইহিস সালাম) এর অনুসারীদের অবস্থা ছিল,
إِنَّا لَمُدْرَكُونَ
…“আমরা যে ধরা পড়ে গেলাম।”(২৬)
কিন্তু এমন চরম বিপদজনক, কঠিন এবং ভীতিকর অবস্থাতেও মূসা (আলাইহিস সালাম) এমন পরম আস্থা ও বিশ্বাস, নিশ্চিন্ততা ও দৃঢ়তার সাথে জবাব দিলেন যার সাথে পৃথিবীর সবচাইতে দৃঢ়তম পর্বতগুলোরও তুলনা করা যায় না,
قَالَ كَلَّا ۖ إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ
…“কখনোই নয়, আমার সাথে আছেন আমার পালনকর্তা। সত্ত্বর তিনি আমাকে পথ-নির্দেশ করবেন।”(২৭)
তারপর দেখুন মূসা (আলাইহিস সালাম) এর আল্লাহর উপর দৃঢ় থাকা ও ভরসা করার প্রতিদান,
فَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنِ اضْرِبْ بِعَصَاكَ الْبَحْرَ ۖ فَانْفَلَقَ فَكَانَ كُلُّ فِرْقٍ كَالطَّوْدِ الْعَظِيمِ
وَأَزْلَفْنَا ثَمَّ الْآخَرِينَ
وَأَنْجَيْنَا مُوسَىٰ وَمَنْ مَعَهُ أَجْمَعِينَ
ثُمَّ أَغْرَقْنَا الْآخَرِينَ
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً ۖ وَمَا كَانَ أَكْثَرُهُمْ مُؤْمِنِينَ
وَإِنَّ رَبَّكَ لَهُوَ الْعَزِيزُ الرَّحِيمُ
অতঃপর আমি মূসা এর প্রতি ওহী করলাম, “তোমার লাঠি দ্বারা সমুদ্রকে আঘাত করো।” ফলে, তা বিভক্ত হয়ে গেলো এবং প্রত্যেক ভাগ বিশাল পর্বতসদৃশ হয়ে গেলো। আমি সেথায় তাদের দলটিকে পৌঁছিয়ে দিলাম। এবং মূসা ও তাঁর সঙ্গীদের সবাইকে বাঁচিয়ে দিলাম। অতঃপর অপর দলটিকে নিমজ্জিত করলাম। নিশ্চয়ই এতে একটি নিদর্শন আছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুমিন নয়। আর নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তা অবশ্যই পরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।(২৮)
ফেরাউনের জাদুকরদের অবস্থা চিন্তা করুন যখন তারা মূসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রতি ঈমান এনেছিল এবং অতঃপর তারা সেই অত্যাচারী শাসকের দেয়া কঠোর হুমকি ও কঠোর নির্যাতনের ভীতি প্রদর্শনের প্রতি মোটেও দৃষ্টিপাত করে নি,
قَالَ آمَنْتُمْ لَهُ قَبْلَ أَنْ آذَنَ لَكُمْ ۖ إِنَّهُ لَكَبِيرُكُمُ الَّذِي عَلَّمَكُمُ السِّحْرَ ۖ فَلَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ
وَأَرْجُلَكُمْ مِنْ خِلَافٍ وَلَأُصَلِّبَنَّكُمْ فِي جُذُوعِ النَّخْلِ وَلَتَعْلَمُنَّ أَيُّنَا أَشَدُّ عَذَابًا وَأَبْقَىٰ
ফেরাউন বললো, “আমার অনুমতি দানের পূর্বেই কি তোমরা তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে? দেখছি সেই তোমাদের প্রধান, সেই তোমাদেরকে জাদু শিক্ষা দিয়েছে। সুতরাং, অবশ্যই আমি তোমাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কর্তন করবো এবং আমি তোমাদেরকে খেজুর বৃক্ষের কান্ডে শূলবিদ্ধ করবোই এবং তোমরা নিশ্চিত রূপেই জানতে পারবে আমাদের মধ্যে কার আযাব (শাস্তি) কঠোরতর এবং অধিক স্থায়ী।”(২৯)
আর লক্ষ্য করুন, যখন ফেরাউনের জাদুকরেরা তাদের ঈমানকে তাদের অন্তরের উপর সম্পূর্ণরূপে কর্তৃত্বশীল হতে দিলো, তখন কোনো ধরনের ভয় ও দ্বিধা ছাড়াই তারা বলেছিল,
قَالُوا لَنْ نُؤْثِرَكَ عَلَىٰ مَا جَاءَنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالَّذِي فَطَرَنَا ۖ فَاقْضِ مَا أَنْتَ قَاضٍ ۖ إِنَّمَا
تَقْضِي هَٰذِهِ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
إِنَّا آمَنَّا بِرَبِّنَا لِيَغْفِرَ لَنَا خَطَايَانَا وَمَا أَكْرَهْتَنَا عَلَيْهِ مِنَ السِّحْرِ ۗ وَاللَّهُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ
…“আমাদের কাছে যে সুস্পষ্ট প্রমাণ এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর উপর আমরা কিছুতেই তোমাকে প্রাধান্য দিবো না। সুতরাং, তুমি যা ইচ্ছা করতে পারো। তুমি তো শুধু এই পার্থিব জীবনেই যা করার করবে। আমরা আমাদের পালনকর্তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি যাতে তিনি আমাদের পাপসমূহ এবং তুমি আমাদেরকে যে জাদু করতে বাধ্য করেছ, তা ক্ষমা করেন। আল্লাহ শ্রেষ্ঠ ও চিরস্থায়ী।”(৩০)
লক্ষ্য করুন, তাদেরকে যে সকল হুমকি ও নির্যাতনের ভয় দেখানো হচ্ছিল সেগুলোর দ্বারা তারা বিন্দুমাত্রও প্রভাবিত হয় নি। এর কারণ হলো, আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ঈমান আনার পর অন্তরে এই সত্য চিরস্থায়ী হয়ে যায় যে, আল্লাহই একমাত্র সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, তাঁর শাস্তিই সবচাইতে কঠিনতম শাস্তি, আর একমাত্র তিনিই চিরস্থায়ী শাসন-কর্তৃত্বের অধিকারী। সুতরাং, এর পর আল্লাহর সাথে কোনো সৃষ্টির ক্ষমতার কি করে তুলনা করা যেতে পারে? এর পর সর্বময় মালিকানার অধিকারী ও চিরস্থায়ী কর্তৃত্বের অধিকারীর শাস্তির সাথে কি করে তুচ্ছ সৃষ্টির শাস্তির তুলনা করা যেতে পারে? মহাশক্তিশালী ও পরম ক্ষমতাশীলের কর্তৃত্বের সাথে কিভাবে দুর্বল ও গুরুত্বহীনের কর্তৃত্বের তুলনা করা যায়? ঈমান আনার পূর্বে এই একই জাদুকরেরা এই অত্যাচারী শাসকের হুকুম ও আদেশের সামনে প্রকম্পিত হয়ে থাকতো এবং ত্বরিৎ আদেশ পালনের চেষ্টা করতো, অথচ তাদের ঈমান তাদের মাঝে এমন অলৌকিক বৈশিষ্ট্যের সঞ্চার করলো যে, তারা সেই একই শাসকের সামনে দাঁড়িয়ে কোনো প্রকারের ভয়-ভীতি ও দ্বিধাবোধ ছাড়া তাকে স্পষ্ট ভাষায় প্রত্যাখ্যান করলো।
আর এরূপ অসংখ্য উদাহরণ আছে…
আল্লাহর সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। চিন্তা করুন সেই হাদীসটি যেটি আমর ইবনে আস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে ইমাম আহমদ (রহিমাহুল্লাহ) ও আরও কয়েকজন আলেম বর্ণনা করেছেন। সেই সময়টাতে মুসলমানেরা ছিল দুর্বল। মক্কার কাফেররা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে চারদিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল এবং তাদের একজন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর পোশাকের কলার ধরে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল,
“তুমি কি সেই লোক যে এমন-এমন বলে?” তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তর দিয়েছিলেন, স্পষ্ট ও সোজাসুজি, কোনো ধরনের ভয় ও দ্বিধা ছাড়া, “হ্যাঁ, আমিই সে যে এমন কথা বলে।” এবং এর পূর্বে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন, “শোনো, হে কুরাইশরা! শপথ আল্লাহর যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ, আমি তোমাদের কাছে এসেছি এবং সাথে এনেছি জবাই!”(৩১)
উপস্থিত সকলে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এ কথায় চমকে যায় এবং তারা সবাই চুপ করে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল এবং পূর্বে যারা তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ছিল তারা সবচাইতে নম্রভাবে কথা বলা শুরু করেছিল।
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর উপর অবতীর্ণ কোরআনের মাধ্যমে সাহাবাদের (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) অব্যাহতভাবে কোরআনের উপর দৃঢ় থাকতে বলতেন। তিনি সাহাবাদের মনে করিয়ে দিতেন পূর্বের সেসব লোকদের কথা যারা কঠিনতম অবস্থাতেও দৃঢ় ও শক্ত থেকেছে,
“তোমাদের পূর্বে একজন ব্যক্তিকে ধরা হয়েছিল এবং তার জন্য মাটিতে গর্ত খুঁড়া হয়েছিল এবং গর্তে তাকে স্থাপন করা হয়েছিল। একটি করাত এনে তার মাথার উপর স্থাপন করা হয়েছিল এবং তাকে কেটে দ্বিখন্ডিত করা হয়েছিল এবং তার হাড় থেকে তার গোশত আঁচড়ে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এসব কিছু তাকে তার দ্বীন থেকে এক চুলও দূরে নেয় নি। আল্লাহর শপথ, আল্লাহ এই দ্বীনকে সম্পূর্ণ করবেন যতক্ষণ না সানা থেকে হাদরা মাউত পর্যন্ত একজন ভ্রমণ করবে এবং সে কোনো লোকের ভয় করবে না আল্লাহ ছাড়া এবং তার ভেড়ার জন্য নেকড়ে ছাড়া। যাই হোক, তোমরা খুব তাড়াহুড়ো করছো।”(৩২)
বাস্তবতা হচ্ছে, মিথ্যা অতি ক্ষুদ্র, তুচ্ছ ও দুর্বল; কাফেররা যতই বুঝানোর চেষ্টা করুক না কেন যে, তারা ব্যাপক ক্ষমতাবান, অপরাজেয়, অভেদ্য। আল্লাহর শপথ, আল্লাহর কাছে কাফেরদের সব শক্তি ও হাতিয়ার মাছির মতো গুরুত্বও বহন করে না।
আল্লাহ রহম করুন ইবনুল কাইয়্যিম এর প্রতি, যিনি তাঁর “নূনিয়াহ” তে বলেছেন,
“তাদের অধিক সংখ্যাকে ভয় করো না, যেহেতু তারা গুরুত্বহীন এবং মাছির মতো। তোমরা কি একটা মাছি কে ভয় পাও?”
হ্যাঁ, সত্যিই তারা মাছির মতো, বরং মাছির চেয়েও দুর্বল,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ ۚ إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ لَنْ يَخْلُقُوا
ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ ۖ وَإِنْ يَسْلُبْهُمُ الذُّبَابُ شَيْئًا لَا يَسْتَنْقِذُوهُ مِنْهُ ۚ ضَعُفَ الطَّالِبُ
وَالْمَطْلُوبُ
হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করো; তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের উপাসনা করো, তারা তো কখনোও একটি মাছিও সৃষ্টি করতে পারবে না, যদিও তারা এই উদ্দেশ্যে সকলে একত্রিত হয়। আর একটি মাছি যদি তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু ছিনিয়ে নেয়, তবে তারা তার কাছ থেকে তা উদ্ধারও করতে পারবে না, প্রার্থনাকারী ও যার কাছে প্রার্থনা করা হয়, উভয়েই শক্তিহীন।(৩৩)
এবং এমনকি যদিও মিথ্যার অনুসারীরা সমৃদ্ধির কিছু সময় পার করে থাকে, কিন্তু সত্যের অনুসারীরা সমৃদ্ধির আরও বেশী বেশী সময় পার করে। কাফের অবিশ্বাসীদের প্রকৃত চরিত্র এবং তাদের ক্ষমতার অসারতা পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠেছে কালের পরিক্রমায়। আর কাফের-মুশরিকদের এই অসারতা ও গুরুত্বহীনতাকে আল্লাহ প্রকাশ করে দেন তাদের মাধ্যমে যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ করে, তাদের কেউ কেউ তাদের কৃত চুক্তি ইতিমধ্যে পূর্ণ করেছে, আর কেউ কেউ তা পূর্ণ করার অপেক্ষায় আছে। বর্তমান অবস্থায় এমন বিশ্বাসীদের খুবই প্রয়োজন।
সবশেষে:
কোরআন শরীফ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় ঐ সব ক্ষণিকের জন্য অস্তিত্বশীল জাতিগুলোর কথা যারা জমিনে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করতো এবং ফাসাদ সৃষ্টি করতো। ঐ সব জাতিদের কথাও আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যারা উপরে উল্লিখিত জাতিগুলোর চেয়েও শক্তিশালী ছিল,
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِعَادٍ
إِرَمَ ذَاتِ الْعِمَادِ
الَّتِي لَمْ يُخْلَقْ مِثْلُهَا فِي الْبِلَادِ
وَثَمُودَ الَّذِينَ جَابُوا الصَّخْرَ بِالْوَادِ
وَفِرْعَوْنَ ذِي الْأَوْتَادِ
الَّذِينَ طَغَوْا فِي الْبِلَادِ
فَأَكْثَرُوا فِيهَا الْفَسَادَ
فَصَبَّ عَلَيْهِمْ رَبُّكَ سَوْطَ عَذَابٍ
আপনি কি লক্ষ্য করেননি, আপনার পালনকর্তা আদ বংশের ইরাম গোত্রের সাথে কি আচরণ করেছিলেন, যাদের দৈহিক গঠন স্তম্ভ ও খুঁটির ন্যায় দীর্ঘ ছিল এবং যাদের সমান শক্তি ও বলবীর্যে সারা বিশ্বের শহরসমূহে কোনো লোক সৃজিত হয়নি? এবং সামুদ গোত্রের সাথে, যারা উপত্যকায় পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিল? এবং বহু কীলকের অধিপতি ফেরাউনের সাথে, যারা দেশে সীমালঙ্ঘন করেছিল? অতঃপর সেখানে বিস্তর অশান্তি সৃষ্টি করেছিল। অতঃপর আপনার পালনকর্তা তাদেরকে শাস্তির কশাঘাত করলেন।(৩৪)
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصْحَابِ الْفِيلِ
أَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِي تَضْلِيلٍ
وَأَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا أَبَابِيلَ
تَرْمِيهِمْ بِحِجَارَةٍ مِنْ سِجِّيلٍ
فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَأْكُولٍ
আপনি কি দেখেন নি আপনার পালনকর্তা হস্তীবাহিনীর সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন? তিনি কি তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেন নি? তিনি তাদের উপর প্রেরণ করেছেন ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি, যারা তাদের উপর পাথরের কংকর নিক্ষেপ করছিল। অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণসদৃশ করে দেন।(৩৫)
কোরআন শরীফ এই জাতিগুলোর শেষ পরিণতি আমাদের সামনে তুলে ধরে এবং পৃথিবীতে তাদেরকে ও তাদের বাসস্থানসমূহ আমরা মূলোৎপাটিত অবস্থায় দেখতে পাই, আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করেছিলেন এবং বিশ্বাসীদের বিজয় দান করেছিলেন। তাদের ক্ষমতার বড়াই, সংখ্যাধিক্যের অহংকার, তাদের একদম কোনো কাজেই আসে নাই। আল্লাহর বিরুদ্ধে তাদের সাহায্য করার কে ছিল? বিশ্বাসীদের সাহায্যকারী হচ্ছেন আল্লাহ, আর অবিশ্বাসীদের কোনো সাহায্যকারী নাই।
أَفَلَمْ يَسِيرُوا فِي الْأَرْضِ فَيَنْظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ ۚ كَانُوا أَكْثَرَ مِنْهُمْ
وَأَشَدَّ قُوَّةً وَآثَارًا فِي الْأَرْضِ فَمَا أَغْنَىٰ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
فَلَمَّا جَاءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ فَرِحُوا بِمَا عِنْدَهُمْ مِنَ الْعِلْمِ وَحَاقَ بِهِمْ مَا كَانُوا بِهِ
يَسْتَهْزِئُونَ
فَلَمَّا رَأَوْا بَأْسَنَا قَالُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَحْدَهُ وَكَفَرْنَا بِمَا كُنَّا بِهِ مُشْرِكِينَ
فَلَمْ يَكُ يَنْفَعُهُمْ إِيمَانُهُمْ لَمَّا رَأَوْا بَأْسَنَا ۖ سُنَّتَ اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ فِي عِبَادِهِ ۖ وَخَسِرَ
هُنَالِكَ الْكَافِرُونَ
তারা কি পৃথিবীতে ভ্রমণ করে নি ও দেখে নি, তাদের পূর্ববর্তীদের কি পরিণাম হয়েছিল? তারা তাদের চেয়ে সংখ্যায় বেশী এবং শক্তি ও কীর্তিতে অধিক প্রবল ছিল, অতঃপর তাদের কর্ম তাদের কোনো উপকারে আসে নি। তাদের কাছে যখন তাদের রাসূলগণ স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ আগমন করেছিলেন, তখন তারা নিজেদের জ্ঞান-গরিমার দম্ভ প্রকাশ করেছিল। তারা যে বিষয় নিয়ে ঠাট্টাবিদ্রুপ করেছিল, তাই তাদেরকে গ্রাস করে নিয়েছিল। তারা যখন আমার শাস্তি প্রত্যক্ষ করলো, তখন বললো, “আমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করলাম এবং যাদেরকে শরীক করতাম তাদেরকে পরিহার করলাম।” অতঃপর তাদের এ ঈমান তাদের কোনো উপকারে আসলো না যখন তারা শাস্তি প্রত্যক্ষ করলো। আল্লাহর এ নিয়মই পূর্ব থেকে তাঁর বান্দাদের মধ্যে প্রচলিত আছে। সেক্ষেত্রে কাফেররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।(৩৬)
সুতরাং, এগুলো হচ্ছে বাস্তবতা যাতে আছে চিন্তার উপাদান আমাদের নিজেদের জন্য এবং আমাদের বিরোধীদের জন্যও, যাতে তারা তাদের জীবনধারা নতুন করে চিন্তা করে,
وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا سَبَقُوا ۚ إِنَّهُمْ لَا يُعْجِزُونَ
আর কাফেররা যেন মনে না করে যে, তারা ছাড়া পেয়ে যাবে, কখনোও এরা (আল্লাহকে) ব্যর্থ করতে পারবে না।(৩৭)
ইবনুল কাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর “নূনিয়াহ” তে বলেন,
আল্লাহ যা আদেশ করেছেন তা প্রকাশ্যে ঘোষণা করো,
আর আল্লাহর পরিবর্তে গুরুত্বহীনদের ভয় পরিহার করো,
আর শুধুমাত্র আল্লাহকেই ভয় করো,
তবেই নিরাপত্তা ও প্রশান্তি পেতে পারো।
আর বিজয়ী করো আল্লাহর কিতাব ও ঐতিহ্যকে,
কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে যার (সাঃ) প্রতি,
এই ঐতিহ্য এসেছে তাঁরই (সাঃ) থেকে।
আঘাত করো প্রত্যেক প্রত্যাখ্যানকারীকে
ঐশী বাণীর তরবারি দ্বারা,
ঠিক যেমন মুজাহিদ আঘাত করে শত্রুকে
অঙ্গুলির উপর অস্ত্রের দ্বারা।
আর চলতে থাকো সত্যের দ্বারা চালিত উদ্দীপনা নিয়ে,
আল্লাহর নির্ভেজাল ও সাহসী বান্দারা
ঠিক যে পথে চলেন নির্ভয়ে।
হেদায়েতের ছায়াতলে প্রতিষ্ঠিত থাকো,
সর্বদা ধৈর্য্যের উপরেই,
আর যদি এ পথে আঘাতগ্রস্ত হয়ে থাকো,
সে তো অতি করুণাময়ের সন্তুষ্টির স্বার্থেই।
আল্লাহর কিতাব ও হাদীসসমূহকে
নিজের অস্ত্র বানিয়ে নাও,
আর মজবুত করে নাও নিজের অন্তরকে।
যে লড়বে ও নিজেকে উপস্থাপন করবে
আপন রবের দরবারে,
আর ময়দানে সৎকাজের প্রতিযোগিতা করবে
দৃঢ় বিশ্বাস সহকারে।
রাসূলের (সাঃ) আনীত বাণী প্রচার করো,
আর তা করো সম্পূর্ণ প্রকাশ্যে,
আর সাহায্যকারীর স্বল্পতা নিয়ে ভয় পরিহার করো।
কারণ আল্লাহ তাঁর দ্বীন ও কিতাবকে দিবেন
এমন বিজয় যা সর্বোৎকৃষ্ট,
আর নিজ বান্দাকে রক্ষা করার জন্য
শুধুমাত্র তিনিই হলেন যথেষ্ট।
আর শত্রুর ষড়যন্ত্রকে ভয় করো না,
কারণ মিথ্যার আশ্রয় না নিয়ে
তারা মোটেও চলতে পারে না।
রাসূলের (সাঃ) অনুসারীগণ!
তাদের তো সাহায্য করে ফেরেশতাগণ!
আর শয়তানের অনুসারীগণ!
তাদের তো প্রতারণা করে শয়তান!!
দুইটি দলের মাঝে কতই না ব্যবধান বিদ্যমান!
এর পরেও যারা দল দু’টি নিয়ে বিভ্রান্ত,
তুলনা করতে গেলেই পেয়ে যাবে প্রমাণ।
দৃঢ় থাকো এবং যুদ্ধ করো
হেদায়েতের পতাকাতলে অকপটে,
আর দৃঢ়তার সাথে ধৈর্য ধরো,
কারণ আল্লাহর সাহায্য অতি সন্নিকটে।
কারণ আল্লাহ তাঁর দ্বীন ও কিতাবকে বিজয় দিবেন,
বিশ্বাসীদেরকে জ্ঞান ও কর্তৃত্ব প্রদান করে
তাঁর রাসূলকে (সাঃ) বিজয়ী করবেন।
সত্য হলো এমনই এক স্তম্ভ,
যা কেউই ধ্বংস করতে পারে না।
এমনকি যদি সবাই মিলেও চেষ্টা করে,
এরপরেও তা ধ্বংস করা যায় না।
আর যদি দেখো তোমার শত্রুর সংখ্যার প্রসার,
তবে দৃঢ়তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো।
কারণ তাদের শক্তি ধোঁয়ার ন্যায় অসার।
তারা বাড়তে থাকে,
আর এরপর?
তারা মিলিয়ে যায়,
যেন চোখ তাদের দেখতেই ব্যর্থ হয়।
তাদের অধিক সংখ্যাকে ভয় করা ছেড়ে দাও,
যেহেতু তারা গুরুত্বহীন এবং মাছির মতো।
তোমরা কি একটা মাছি কে ভয় পাও?
আর গরুদের নেতা হয়ে
কখনো সন্তুষ্ট থেকো না,
ষাঁড়ের পালই হয় তাদের নেতা
যাদের নির্বোধ প্রকৃতি সবারই জানা।
আর তারা তোমার বিরুদ্ধে এগিয়ে আসবে যদি তারা চায়,
সুতরাং, সেক্ষেত্রে তোমার থেকে কাপুরুষতা বর্জিত
সুপুরুষের আচরণই শোভা পায়।
দৃঢ় থাকো এবং দ্বীনকে সমর্থন করো,
আর এসব ভুলে বসে থেকো না,
কারণ সুপুরুষদের সাহসিকতার যে বৈশিষ্ট্য,
তার সাথে এটা সামঞ্জস্যপূর্ণ না।
যদিও আল্লাহর মুজাহিদেরা থাকে যুদ্ধে নিয়োজিত
ন্যায়পরায়ণতা ও সৎকর্মের শক্তির দ্বারা,
পার্থিব শক্তির অহংকারের ফাঁদে জড়ানো ব্যতীত।
তারা তাদের সংখ্যাধিক্যের দ্বারা
কখনোই কোনো ভূখন্ড অর্জন করে নি,
বরং নিতান্তই নগণ্য সংখ্যার দ্বারা
সৃষ্টি করেছিল বিজয়ের বজ্রধ্বনি।
সুতরাং, যদি ইসলামের জিহাদের কাফেলা দেখতে পাও,
যার সাথে রয়েছে ন্যায়পরায়ণ দায়িত্বশীলগণ,
তবে তাতে যোগদান করো,
আর অস্থিরতা ও আলসেমী করো সম্পূর্ণ বর্জন।
হক্* অবশ্যই সাহায্যপ্রাপ্ত হবে, তবে আরও হবে পরীক্ষিত,
কারণ এটাই পরম করুণাময়ের স্বরূপ।
সুতরাং, হয়ো না তুমি বিস্মিত।
এভাবেই আল্লাহর দল পৃথক হবে তাঁর শত্রুদের দল থেকে,
আর এ কারণেই সকল মানুষেরা থাকবে দুই দলে বিভক্ত।
এ কারণেই রাসূল (সাঃ) যুদ্ধ করেছিলেন কাফেরদের বিরুদ্ধে,
যখন থেকেই এই দলের সূচনা হয়েছিল ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত।
যাই হোক, সত্যের অনুসারীদের জন্য সবশেষে কল্যাণই লাভ হবে,
আর যদি তা এই দুনিয়ায় না হয়,
তবে অবশ্যই তারা পরবর্তীতে মহা পুরস্কার প্রদানকারীর থেকে তা পাবে।
আবু মুহাম্মদ আসিম আল-মাকদিসী
১২ শাবান, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হিজরতের ১৪১৪ বছর পর
(১) সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৫
(২) এই অংশটি লেখক রচিত “লা তাহযান ইন্নাল্লাহ মা’আনা” (দুঃখ করো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন) নামক কিতাবের থেকে নেয়া হয়েছে।
(৩) এখানে লেখক সেই বিজয়ী দলের (আত্* তাইফাহ আল মানসূরাহ) কথা বলছেন যার কথা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাদীস থেকে পাওয়া যায়, “আমার উম্মতের মাঝে সর্বদা একটি দল থাকবে যারা আল্লাহর বিষয়াদি (তাওহীদের হক্*) তুলে ধরবে, যারা তাদের বিরোধিতা করে তারা তাদের কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না, আর বিষয়টা এরূপই থাকবে যে পর্যন্ত না আল্লাহর হুকুম চলে আসে এবং তারা মানুষদের মাঝে সবচেয়ে উচ্চতম অবস্থানে থাকে।”
(৪) এমন পরিস্থিতিতে মিথ্যা ফতোয়া প্রদান কিংবা আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীনের ব্যাপারে জ্ঞান ছাড়া কথা বলার পরিণামকে ভয় করে সেগুলোর বদলে অস্পষ্ট কথা বলা কিংবা প্রশ্নের উত্তরস্বরূপ অপর প্রশ্ন করা কিংবা শুধুমাত্র “আমি এটা জানি না” বলে পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করা।
(৫) বুখারী (৬০১৮, ৬১৩৬, ৬৪৭৫), মুসলিম (৪৭), আহমদ (২/২৬৭, ৪৩৩, ৪৬৩), আবু দাঊদ (৫১৫৪), তিরমিজি (২৫০০), ইবনে হিব্বান (৫০৬, ৫১৬)
(৬) আস সিলসিলাহ আস সাহীহাহ (৩৭৪)
(৭) আস সিলসিলাহ আস সাহীহাহ (১৬৮)
(৮) ১/৯৪
(৯) সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৫
(১০) সূরা আহযাব, আয়াত: ৩৯
(১১) সূরা যুমার, আয়াত: ৩৬
(১২) সূরা তাওবা, আয়াত: ৪৭
(১৩) সূরা নিসা, আয়াত: ৮৩
(১৪) সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৫
(১৫) সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৯
(১৬) সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৩-১৭৫
(১৭) সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৮
(১৮) সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৬৯-১৭৩
(১৯) সূরা যুমার, আয়াত: ৩৬
(২০) সূরা যুমার, আয়াত: ৩৮
(২১) সূরা ইউনুস, আয়াত: ৭১
(২২) সূরা হূদ, আয়াত: ৫৪
(২৩) সূরা হূদ, আয়াত: ৫৪-৫৬
(২৪) সূরা আনআম, আয়াত: ৮০-৮১
(২৫) সূরা আনআম, আয়াত: ৮২
(২৬) সূরা শুআরা, আয়াত: ৬১
(২৭) সূরা শুআরা, আয়াত: ৬২
(২৮) সূরা শুআরা, আয়াত: ৬৩-৬৮
(২৯) সূরা ত্বাহা, আয়াত: ৭১
(৩০) সূরা ত্বাহা, আয়াত: ৭২-৭৩
(৩১) মুসনাদে আহমদ (৭০৩৬)
(৩২) বুখারী (৩৬১২, ৬৯৪৩)
(৩৩) সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৭৩
(৩৪) সূরা ফাজর, আয়াত: ৬-১৩
(৩৫) সূরা ফীল, আয়াত: ১-৫
(৩৬) সূরা গাফির, আয়াত: ৮২-৮৫
(৩৭) সূরা আনফাল, আয়াত: ৫৯