আল হিকমাহ মিডিয়া পরিবেশিত
আল্লাহর পথে হিজরতকারী একজন মুজাহিদকে লেখা শাইখুল হাদিস মুফতি আবু ইমরান হাফিজাহুল্লাহর চিঠি
দ্বীনের নিভু নিভু প্রদীপ এখনো জ্বলে...
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আস-সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ
আখানাল মুহতারাম! কেমন আছেন? আল্লাহ তায়ালা সবাইকে আফিয়তের[1] সাথে তাঁর মর্জি মাফিক কাজে লেগে থেকে অগ্রসর হওয়ার তাওফীক দিন।
সম্মানিত ভাই!
ওয়াল্লাহি![2] আপনাদের ভাগ্যের উপর আমাদের ঈর্ষা হচ্ছে, যে আপনাদের জন্য এই নশ্বর দুনিয়ার প্রতারণার জাল কিছুটা হলেও বাস্তবে ছিন্ন হয়েছে, যা সত্যিকারের জীবনের সাথে সম্পর্কের ও সংযুক্তিরই প্রতিরূপ। এখানে যার যে পরিমান হিজরত হলো সে সেই পরিমান জান্নাতের পথে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হয়ে থাকলো। এটা আল্লাহ তায়ালার অশেষ মেহেরবানি ছাড়া আর কি?
পরিবার-পরিজনের বিষয়টি ভাবনায় ফেলবে এটা যেমন ঠিক তেমনিভাবে এই কষ্টের আধিক্যের উপর বিশাল পুরষ্কারেরও ওয়াদা রয়েছে। আবার যেহেতু এটি একটি নেক কাজও বটে, এই জন্য এই ক্ষেত্রে দুনিয়া ও দুনিয়ার স্বার্থ ও সুবিধা যে যে ক্ষেত্রে যে পরিমান নষ্ট বা হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেটি আল্লাহ তায়ালা নিজ দায়িত্বে সম্পাদ করে দিবেন। আর আমাদের হাত দিয়ে কোন কাজ করানোর চেয়ে আল্লাহ তায়ালা যদি নিজের দায়িত্বে সম্পাদন করিয়ে নেন, তাহলে এর চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা আর হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَهُوَ يَتَوَلَّى الصَّالِحِينَ
“তিনি নেককারদের বন্ধু হয়ে থাকেন”।[3]
বিশেষত শাহাদতের নেকি যখন কারো দ্বারা অর্জিত হয়, ফিরিশতাগণ তাঁর মৃত্যুর সময় বলে-
نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنْفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ
“ইহকালে ও পরকালে আমরা তোমাদের বন্ধু। সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্যে আছে তোমরা দাবী কর”।[4]
আর প্রকৃত বন্ধু তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর পরিবার-পরিজনকে অসহায় ছেড়ে দেয়না।
মুসা এবং খাজির আলাইহিমুস সালামের[5] সেই দেয়াল ঠিক করে দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেন সেই দেয়ালের তলদেশে দুই এতিম বালক তাঁদের সম্পদের ভান্ডার ছিল আর তাঁদের পিতা ছিলো নেককার, এই জন্য কোন পিতা নিজে নেক আমলের মধ্যে থেকে জীবন যাপন করে যাওয়া এটি ও সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার অন্তর্ভুক্ত।
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ইরাকের মসুল অঞ্চল ছেড়ে ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বংশধরদের বাইতুল্লাহর প্রতিবেশী এবং আবাদকারী বানিয়েছেন। একমাত্র সন্তান ইসমাইল আলাইহিস সালামকে আল্লাহর নির্দেশে জবেহ করার জন্য গলায় ছুরি চালিয়ে বাহ্যিকভাবে নির্বংশ হয়ে যেতে প্রস্তুত হয়েছেন, ফলে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বংশকে চিরস্থায়ী করে দিয়েছেন। তাঁর বংশের মধ্যেই খাতামুল আম্বিয়া মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামকে পাঠিয়েছেন।
মক্কার কিছু যোগ্য লোক দ্বীনের স্বার্থে বাধ্য হয়ে মদিনায় হিজরত করেছেন। সেই সব মুহাজিরীন এবং পরবর্তীতে ব্যাপকহারে সাহাবায়ে কিরাম জিহাদের জন্য হিজরত করেছেন, তাঁদের দ্বারা সারা পৃথিবীতে বহুদূর পর্যন্ত পরিপূর্ণ দ্বীন সুদীর্ঘ সময়ের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এর ধারা চালু রয়েছে। তাঁরাও আখেরাতের বাদশাহ-মুলুকুল আখেরার মনছব[6] অধিকারী হয়েছেন।
আজো পৃথিবীতে সেই ধারায় গুরাবা মুহাজেরদের ওয়াসিলায় দ্বীনের নিভু নিভু প্রদীপ এখনো জ্বলে আছে, ইনশা আল্লাহু তায়ালা এ ধারারই বাঁকে বাঁকে ও বিশেষভাবে শেষপ্রান্তে আবার এ ধরায় আল্লাহর দ্বীনের পতাকা সর্বত্র পত পত করবে। আর সেই সোনালী স্বপ্নের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে আপনাদের নাম উজ্জ্বল হয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ। পরবর্তী বংশধরেরা গৌরবের সাথে এই আদর্শ গ্রহণে অনুপ্রাণিত হবে, কারণ তাঁদের মুরব্বিগণ এর জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এই জন্য পরিবার-পরিজনের কী হবে তা নিয়ে বেশী টেনশনের মধ্যে পড়ার দরকার নেই। আমাদের সৌভাগ্য যে আপনাদের মত রায়িদ[7] আমরা পেয়েছি, বাস্তবেই এটা বড় ঈর্ষণীয় অবস্থা। দোয়া চাই আপনাদের এতটুকু অনুগ্রহ যিনি করলেন তিনি যেন আপনাদের পরে আমাদেরকে বঞ্চিত না করেন। আমি বিশেষভাবে আপনার নিকট এই কল্যাণের ব্যাপারে দোয়ার দাবি জানাই, আর রায়েদ তাঁর কাফেলার যাত্রীদের জন্য হিত কামনা করবেন ও উত্তম চারণভুমি তালাশ করবেন এটিই স্বাভাবিক।
আল্লাহ তায়ালা যেন আপনাদের পিছনে আমাদেরকেও এ পথের জন্য কবুল করেন। দোয়া চেয়ে আজ এ পর্যন্ত-ই লিখার কাজ ক্ষান্ত করছি। আল্লাহ ভরসা। ওয়াস-সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ।
[1] আফিয়ত আরবি শব্দ, এর অর্থ হচ্ছে সুস্থতা।
[2] ওয়াল্লাহি এটা আরবি শব্দ, এর অর্থ হচ্ছে “আল্লাহর কসম!”
[3] সুরা আ’রাফ-১৯৬
[4] সুরা ফুসসিলাত-৩০
[5] আমাদের ভুমিতে মানুষের কাছে খিজির আলাইহিইস সালাম নামে পরিচিত হলেও মূলত শব্দের আসল উচ্চারণ হচ্ছে খাজির আলাহিস সালাম।
[6] মনছব হচ্ছে উর্দু শব্দ, অর্থ হচ্ছে মর্যাদা।
[7] এটা আরবি শব্দ, অর্থ হচ্ছে নেতা, পথপ্রদর্শক ও অগ্রদূত।