JustPaste.it

|| আরব্য রজনীর নতুন অধ্যায় || নির্বাসনের চিরকুট ||

লেখক পরিচিতি

সায়্যিদ সালীম শেহযাদ

সায়্যিদ সালীম শেহযাদে জন্ম করাচীতে, ১৯৭০ সালের ৩শরা নভেম্বর। করাচী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে “আন্তর্জাতিক সম্পর্ক”  বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তার পেশা ও নেশা ছিল সাংবাদিকতা। সফল ছিলেন। কাজ করেছিলেন এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থায়। তিনি এশিয়া টাইমস অনলাইনের (হংকং) পাকিস্তান ব্যুরো’র চীফ ছিলেন।

 
4bec37fe6a5e1c756dcfe7e1a7738e93.jpg

তার লেখার বিষয়বস্তু ছিল রাজনীতি ও যুদ্ধের রহস্যঘেরা এবং বিপদজনক জগত। বৈশ্বিক নিরাপত্তা, পাকিস্তান সেনাবাহিনী, ইসলামী আন্দোলন, ইরাক ও লেবাননের সশস্ত্র সংগঠনসহ লিখেছেন বিভিন্ন বিষয়ে। তার সবচেয়ে পছন্দের বিষয় ছিল সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। সশস্ত্র আন্দোলনের পথ বেছে নেয়া মুসলিম সংগঠনগুলো, বিশেষ করে আল-কায়েদা ও তালেবানকে নিয়ে তার আগ্রহ ছিল। সংবাদ সংগ্রহ ও গবেষণার জন্য ভ্রমণ করেছেন মধ্য এশিয়া, এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। এ ব্যাপারে তিনি কাজ করেছেন পুরোপুরি গবেষণামূলক, নির্মোহ, বিশ্লেষকের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। যা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যে অত্যন্ত বিরল

যে বইটির অনুবাদ ইনশাআল্লাহ ধারাবাহিকভাবে আমরা প্রকাশ করবো সেটি প্রকাশিত হয়েছিল তার মৃত্যুর ছয় মাস আগে। ২০১১ সালের মে মাসে ওসামা বিন লাদেনকে অ্যাবোটাবাদ অপারেশনে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর মুজাহিদগণ হামলা চালায় পাকিস্তানের বিখ্যাত মেহরান বিমান ঘাঁটিতে। ধ্বংস করে দেয় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিমান। সায়্যিদ সালিম শাহযাদ তাঁর এক নিবন্ধে এই হামলার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন এবং প্রকাশ করেন যে, এই হামলার জন্য দায়ী ছিল আল-কায়েদার মিলিটারি কমান্ডার ইলিয়াস কাশ্মীরির নেতৃত্বাধীন “৩১৩ বিগ্রেড”। দলটি পাকিস্তান নেভিরই কিছু সেনার সহযোগিতায় এই হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছিল।

এই নিবন্ধটি প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁকে ইসলামাবাদ থেকে পাকিস্তান গোয়েন্দা বাহিনী আইএসআই(ISI) তুলে নিয়ে যায়। দুই দিন পর ৩১ মে, মান্ডি বাহাউদ্দিন জেলার একটি ড্রেনে তাঁর বিধ্বস্ত লাশ পাওয়া যায়।

সায়্যিদ সালীম শাহযাদ মৃত্যুর আগে আইএসআই এর কাছ থেকে তিনটি হুমকি পেয়েছিলেন। ব্যাপারটি তিনি তাঁর ভগ্নিপতি ও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধুকে জানিয়েও ছিলেন। এছাড়া বেশ কয়েকবার তাকে আইএসআই এর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এর আগে ২০১০ সালের অক্টোবরে সাবেক তালেবান কমান্ডার মোল্লা গণী বারাদারকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক গ্রেফতারের পর তার ব্যাপারে সায়্যিদ সালিমের একটি কলাম লেখার কারণে আইএসআই এর হেড কোয়ার্টারে তাকে তলব করা হয়। এই ঘটনার পর তিনি হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে একটি চিঠি লিখেন। আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, আইএসআই তাকে গুপ্তহত্যা করতে পারে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর কর্মকর্তা আলী হাসান বলেন যে, সালিম শাহযাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, দ্রুতই তার সাথে কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।

তার মৃত্যুর পর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে পীড়াপীড়ির ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি তাঁর হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিশন গঠনের নির্দেশ দেন, যারা কোন সন্তোষজনক ফলাফল পেশ করতে পারেনি। সেলিম শাহযাদ ছিলেন একজন সত্যিকারে অনুসন্ধানী সাংবাদিক। হলুদ সাংবাদিকতায় অভ্যস্ত এই বাংলাদেশে এ ধরনের দৃষ্টান্ত নেই বললেই চলে। প্রচন্ড ঝুঁকি নিয়ে সেলিম শাহযাদ রহস্যের এক-একটি স্তর খুলে খুলে সত্যকে উন্মোচন করেছিলেন। তুলে ধরেছিলেন পাঠকের সামনে। আর সত্যের মূল্য তাকে পরিশোধ করতে হয়েছে নিজের জীবন দিয়ে। একজন সত্যসন্ধানী সাংবাদিকের পক্ষ থেকে সম্ভবত এটিই হতে পারে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ।

কিন্তু কী ছিল সালীম শাহযাদের সেই অনুসন্ধানে?

কোন বিস্ফোরক তথ্যের কারণে আইএসআই তাকে হত্যা করতে পাগল হয়ে উঠেছিল?

ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হবে অবিশ্বাস্য সেই কাহিনী যা হার মানায় বিখ্যাত আরব্য রজনীর গল্পকেও...

 

উল্লেখ্য যে এ বইয়ের বেশ কিছু তথ্যের ব্যাপারে আপত্তি ও সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। অনেকে ক্ষেত্রে লেখকের নিজস্ব মনোভাব ও মতের প্রতিফলন ঘটেছে যার সাথে আমরা একমত নই। তবে মোটা দাগে বলা যায় লেখক মুজাহিদিনের কর্মকান্ড এবং একবিংশ শতাব্দীর বরকতময় জিহাদ আন্দোলনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায়ের সঠিক চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। যে কারণে আমরা মনে করি যে, কিছু ভুলত্রুটি থাকলেও এ বইটির অধ্যায়ন মুজাহিদিন এবং মুজাহিদিনের সমর্থকদের জন্য উপকারী হবে। সর্বোপরি এ বইয়ের সকল তথ্যকে সঠিক হিসাবে গ্রহণ না করার অনুরোধ করবো। বরং যেসব তথ্য মুজাহিদিনের সূত্রে প্রকাশিত তথ্যের বিপরীত হবে সেগুলো বর্জন করাই কাম্য।