মুরতাদ সৈন্যের সন্তানের চিকিৎসার খরচের জন্য টাকা সংগ্রহ বৈধ হবে কি?
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ..।
শায়খ! আমার শ্বশুর আমার কাছে আবেদন করেছেন যেন নিচের প্রশ্নটি লিখে আপনাদের কাছে পাঠাই। প্রশ্নটি হলো:
একটি শিশু তার জন্ম থেকেই নাক নেই, একটি অপারেশনের মাধ্যমে হয়তো নাক সংযোজন করা যাবে, তাতে খরচ হবে প্রায় ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। আমার শ্বশুর চাচ্ছেন, এ শিশুটির জন্য লোকদের কাছ থেকে এ অর্থ যোগাড় করতে। কিন্তু ব্যাপার হলো, তার বাবা ইরাকের কুর্দি কাফের সরকারের একজন সামরিক সৈনিক।
প্রশ্ন হলো, এখন এ শিশুর জন্য অর্থ জমা করে খরচ করা কি বৈধ হবে ? যদি উত্তর বৈধ হওয়ার পক্ষে হয়, তাহলে তার বাবা কাফের সরকারের সামরিক সদস্য হওয়ার ব্যাপারটি কি এ ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে না ?
আল্লাহ আপনাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। ওয়াসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু।
-প্রশ্নকারী: আবূ সিদরাহ
উত্তর: الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله …
প্রশ্নকারী ভাই! আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ..।
প্রথমেই যেটা জানা দরকার শিশুটির পিতা ইসলাম বিরোধী যোদ্ধা হওয়ার কারণে এর অপরাধ শিশুটির উপর বর্তাবে না। পিতার অপরাধের কারণে পুত্র দন্ডিত হবে না। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন,
( أَمْ لَمْ يُنَبَّأْ بِمَا فِي صُحُفِ مُوسَى (36) وَإِبْرَاهِيمَ الَّذِي وَفَّى (37) أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى (38) وَأَنْ لَيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعَى )
না তাকে মূসা এবং ইবরাহীম -যে তার রবের সকল নির্দেশকে পুরোপুরিভাবে আদায় করেছিল- তাদের সহীফাসমূহের বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি?! (সেগুলোতে ছিল) একজন অপরাধী অপর অপরাধীর বোঝা বহন করবে না। আর মানুষ কেবল ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার ফলই পাবে।
কিন্তু যে অপারেশনের জন্য আপনার শ্বশুর অথ যোগাড় করতে চাচ্ছেন তা যেহেতু শুধু শারীরিক গঠনের সৌন্দর্য এবং পূণতা বিধানের লক্ষ্যে তাই এ ক্ষেত্রে (সতর্কতা অবলম্বন করা চাই,) আল্লাহকে ভয় করা চাই।
আপনার শ্বশুরের জন্য উচিত, শিশুটির বিষয় তার বাবার উপর ছেড়ে দেওয়া। সে যেসব মুরতাদ বাহিনীর অনুকম্পায় চলে, যাদের সাথে তার বন্ধুত্ব, যাদের জন্য তার জীবন–সময় সব ব্যয় করছে তাদের থেকেই তার সন্তানের জন্য অথ যোগাড় করবে। কেননা তারা তার ঘনিষ্ঠ এবং সেও তাদের ঘনিষ্ঠ।
সাধারণ মুসলমানদের দান–সদকা মুসলমান দরিদ্র, মিসকীন এবং মুজাহিদীনদের জন্য পরিত্যাগ করবে।
কেননা আল্লাহ তায়ালা এ মাল সম্পর্কে আপনার শ্বশুরকে জিজ্ঞাসা করবেন যে, এ মাল তিনি কোত্থেকে জমা করেছেন এবং কোথায় খরচ করেছেন। যেমনটা সহীহ হাদীসে এসেছে,
( لا تزولُ قَدَمَا عَبْدٍ يومَ القيامةِ حتى يُسألَ عنْ أربع ٍ عنْ عُمُرِهِ فيما أفناهُ وعنْ جسدِه فيما أبْلاهُ وعنْ مالهِ مِنْ أيْنَ أخذهُ وفيما أنْفَقَهُ وعنْ عِلمِهِ ماذا عَمِلَ بهِ).
কেয়ামতের দিন বান্দার দুই পা সামান্যতম আগে-পিছে হবে না যতক্ষন না চারটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। জীবনকে সে কি কাজে খাটিয়েছে ? তার দেহকে সে কোন কাজে নিঃশেষ করেছে? সম্পদ সে কিভাবে উপার্জন করেছে এবং কোথায় খরচ করেছে ? এবং ইলম মোতাবেক সে কতটুকু আমল করেছে ?
আর জেনে রাখুন! ক্ষুধার্ত মুসলমান, অভাবে পিষ্ট, হত দরিদ্র নিঃস্ব মুসলমানরা এ মালের অধিক হকদার এ শিশু থেকে, যখন এ শিশুটির অবস্থাও এমন নয় যে তার বাঁচা–মরার প্রশ্ন।
এটা যা আমি লিখলাম তা কেবল আপনার প্রতি কল্যানকামী হয়ে। পরিশেষে আল্লাহর কাছে দোয়া তিনি যেন আপনাকে সঠিক বিষয়টি বুঝার এবং আপনার শ্বশুরকে স্বীয় আনুগত্য ও মুসলমানদের কল্যান সাধনের পথে পরিচালিত করেন।
উত্তরদাতা: আবূ মুহাম্মদ আল–মাকদিসী।