আপনাদের প্রতি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি , ক্ষমা ও দয়া বর্ষিত হক। সকল প্রশংসা বিশ্ব জাহানের প্রভূ মহান আল্লাহ্*র জন্য। সালাত এবং সালাম বর্ষিত হোক নবী মুহাম্মদ (ﷺ) ,তার পরিবার এবং তার সকল সাহাবিদের প্রতি ।

যখন দ্বন্দ্ব ও সংঘাত সৃষ্টি হয় তখন কুরআন ও সুন্নাহ থেকেই আমাদের দিক নির্দেশনা নিতে হবে। একমাত্র জ্ঞানী ব্যক্তিরাই এই সকল দিক নির্দেশনা ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানাতে পারে। জ্ঞানী ব্যক্তি (আল উলামা) বলতে আমরা সেই সকল লোককে বুঝিয়ে থাকি যারা বিশ্বস্ত এবং অকপট চরিত্রের অধিকারী। এছাড়াও সংঘাতের সময় আমাদের কিছু সুনির্দিষ্ট আচার ব্যবহার অনুসরন করা উচিত।

মুনাফিকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সমূহের মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যখন সে কারো সাথে বিবাদে লিপ্ত হয় তখন সে অশ্লীল ভাষী হয়ে উঠে। আমরা এই নিফাকী থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থন করি । মুমিনদের বেলায় এই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া উচিত নয়। মুমিন তো হল সেই ব্যক্তি যে কিনা সর্বদা সত্য কথা বলে, হোক তা অন্যদের সাথে সহমত বা ভিন্ন মত পোষণের ক্ষেত্রে। সুতরাং যখন সংঘাত সৃষ্টি হয় তখন আমাদের কঠোরভাবে কিছু নিয়ম বা আচরন অনুসরন করা উচিত।

প্রথম আচরণটি হচ্ছে, আল্লাহ্*র জন্য নিরপেক্ষতা অবলম্বন করা এবং নিজেদের ব্যক্তিগত মতামতকে আঁকড়ে না ধরা। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আল্লাহ্*র হুকুম অনুধাবন করা এবং তার আনুগত্য করা। আল্লাহ্*র (সুবঃ) সন্তুষ্টি অর্জনের প্রতি আমাদের মনোযোগী হওয়া উচিত, চূড়ান্ত রায় আমাদের ব্যক্তিগত ভাবে সন্তুষ্ট করুক বা না করুক। অনেক সময় শরই রায় আমাদের আকাঙ্ক্ষার বিপরীত হতে পারে। একারণে সকল বিষয়ে এধরনের রায় সাদরে গ্রহন করার জন্য আমাদের নিজেদের অবশ্যই তৈরী হতে হবে।

দ্বিতীয় আচরণটি হচ্ছে মতভেদের সময় ভাষা ব্যবহারের উদারতা । আল্লাহ্* তায়ালা বলেন ; লোকদের উত্তম কথা বল (আল কুরআন , সূরা বাকারা ; ৮৩)। এই আয়াত সম্পর্কে ইমাম কুরতুবি (রহ) বলেনঃ অতএব একজন লোকের কারো সাথে কথা বলার সময় কথা হতে হবে কোমল এবং তার চেহারা থাকতে হবে উজ্জ্বল, হোক সে লোকটি ভাল অথবা মন্দ ,সুন্নি অথবা মুবতাদি। কোনও প্রকার আপোষ বা অনুরাগ ছাড়াই প্রতিপক্ষের ভুল বিশ্বাস গুলো উপেক্ষা করতে হবে। আল্লাহ (সুব) মুসা এবং হারুনকে (আ) বলেছিলেনঃ ফেরাউনের সাথে কোমলভাবে কথা বল (আল কুরআন ,সুরা তাহাঃ৪৪) । সুতরাং আমরা বলি, যে লোকটি উপদেশ দান করে সে মুসা এবং হরুনের চেয়ে উত্তম নয় এবং অপরপক্ষে যে লোকটি উপদেশ গ্রহন করে সে লোকটিও ফেরাউনের চেয়ে অধিক মন্দ নয়। তালহা বিন উমর আতা বিন রাবাহকে বলেনঃ তোমার বাড়ীতে জড়ো হওয়া লোকদের জ্ঞানগত যোগ্যতা ভিন্ন ভিন্ন এবং আমি হলাম একজন উগ্র মেজাজ সম্পন্ন লোক । আমি হয়তবা তাদেরকে কর্কশ ভাষায় উত্তর প্রদান করতে পারি । তাই তালহা কে প্রতিউত্তরে বলা হল এমনটি করবেন না। আল্লাহ্* তায়ালা বলেনঃ “লোকদের সাথে কোমল ভাষায় কথা বল।”

আর তৃতীয় যে আচরণটি আছে তা হচ্ছে প্রতিপক্ষকে সে যা বলে ও করে সে ব্যপারে সন্দেহাবসর (benefit of doubt) সুযোগ দিতে ও ইতিবাচক চিন্তার সুযোগ প্রদান করতে হবে। হক (সত্য) এবং মিথ্যা উভয়টি সুস্পষ্ট কিন্তু কারো ভুল কিছু করার পিছনে অজুহাত থাকতে পারে। সুতরাং সেই ব্যক্তিকে মূল্যায়নের পূর্বে অবশ্যই আমাদের তাকে সন্দেহ পোষণ ও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে।

চতুর্থ আচরণটি ‘ বিবাদের সময় তোমার কণ্ঠস্বর উঁচু কর না’ এর সাথে সম্পর্কিত । এই আচরণটির জন্য প্রয়োজন মনোযোগ ও সঠিক অভ্যাসের । আল্লাহ্* তায়ালা বলেনঃ এবং দম্ভভরে পথ চলো না আর তমার কণ্ঠকে নিচু কর ( আল কুরআন ,সুরা লুকমান-১৯)। অতপর তিনি একই আয়াতে যারা উচ্চস্বরে কথা বলে তাদের সম্পর্কে একটি মন্দ উদাহরন পেশ করেনঃ ‘নিশ্চয় সকল আওয়াজের মধ্যে গাধার চিৎকারই সবচেয়ে কর্কশ’ । কণ্ঠস্বর উচু করা কোন ভাল স্বভাব নয় । সত্য তার নিজের প্রমান ও শক্তিবলেই সুস্পষ্ট হয়ে থাকে, সুতরাং সেটিকে উচ্চস্বরে বা আবেগতারিত হয়ে বলার কোন প্রয়োজন নেই। এই আচরনটি আলোচনার দাবি রাখে , কেননা যেহেতু একজন লোক প্রথমদিকে একাধিক উপলক্ষতে এটা করতে সমর্থ নাও হতে পারে। একারনে, এই আচরণটি অনুশীলনের জন্য কোন ব্যক্তির তার নিজেকে পর্যবেক্ষন করা উচিত।

পঞ্চম আচরণটি হচ্ছে কোন বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যকে স্বীকৃতি প্রদান করা। আপনার উচিত হবে আপনার প্রতিপক্ষের দৃষ্টিকোণটিকে মূল্যায়ন করা যদিও আপনি তার সাথে ভিন্নমত পোষণ করছেন। এটিকে আপনার মূল্যবান মতামত হিসেবে বিবেচনা করা উচিত, তবে এটাও বলবেন যে আপনার মতটি অধিকতর ভাল হতে পারে। ইউসেফ আল সাদাফি বলেন যেঃ আমি ইমাম শাফেয়ীর চেয়ে অধিক বুদ্ধিমান কোন লোক দেখিনি । আমি একটি বিষয়ে তার সাথে আলোচনা করলাম অতঃপর আমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হলাম। আমি কিছুদিন পর আবার তাকে দেখলাম , তিনি আমার হাত ধরে বললেনঃ আবু মুসা আমরা কি ভাই ভাই হয়ে যেতে পারি না যদিও আমরা একটি বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করি ? এই আচরণটি ইমামের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে, আর তার শিক্ষা কত মহৎ ছিল! অনন্তর একই ধরনের মানুষের পরস্পরের মাঝে মতভেদ আছেই।

পরিশেষে , আমাদের উচিত এই পাঁচটি আচরন দৃঢ়ভাবে অনুসরণের চেষ্টা করা এবং আমাদের এই ধরনের আচরন বাজায় রাখার জন্য প্রতিজ্ঞা করা। আল্লাহ্* (সুবঃ) আমাদের সীমালঙ্ঘনগুলো ক্ষমা করুন । সকলের প্রতি শান্তি ও আল্লাহ্*র আশীর্বাদ বর্ষিত হোক।