JustPaste.it

16 mujahider-jibon-songi

মহিলাঙ্গন •

কেমন হবেন

একজন মুজাহিদের জীবনসঙ্গী?

উনাইসা আহসান বুশরা

 

 

উম্মুল মুমিনীন খাদীজা রাযি. ও আবুলাহাবের স্ত্রী উম্মু জামিল- দু’জনই তো নারী ছিলেন। কিন্তু তাদের আপন কর্মের ব্যবধানে একজনের আবাস চিরস্থায়ী জান্নাত; আর অপরজন সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে রয়েছে মহা শাস্তির আবাসের ঘোষণা-

سَيَصْلٰى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ ، وَامْرَأَتُهُۥ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ

‘অচিরেই সে (আবু লাহাব) লেলিহান আগুনে প্রবেশ  করবে। এবং তার স্ত্রীও (উম্মু জামিল); কাষ্ঠ বহনরত অবস্থায়।’ -সূরা লাহাব: ৩,৪

কি অপরাধ ছিল আবুলাহাবের স্ত্রীর? সে রাসূল সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘোর শত্রুতায় লিপ্ত থাকত; আর ইসলামকে মিটিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে আপন স্বামীর সহযোগী ছিল।  আর উত্তম চরিত্রের অনুপমা নারী উম্মুল মুমিনীন খাদীজা রাযি. ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রথম সহধর্মিনী; যিনি ইসলামের ভীতকে মজবুত করার লক্ষ্যে সন্তুষ্টচিত্তে নিজের সম্পদ ব্যয় করতেন। যিনি ভালোবাসার পরশ বুলিয়ে আপন স্বামীকে সান্তনার বাণী শোনাতেন। পৃথিবীর আর কোন নারী এতটা সুন্দরভাবে আপন স্বামীকে সান্তনার বাণী শোনাতে পারে নি। এ সান্তনার বাণী সত্যিই দুঃখ-কষ্টকে লাঘব করে দেয়। হেরা গুহায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধ্যানমগ্ন  ছিলেন। আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাঈল আ. তাঁর কাছে এলেন; এবং বললেন, ‘পড়ো’! তিনি বললেন, ‘পড়ার অভ্যাস আমার নেই’। অতঃপর জিবরাঈল আ. তাঁকে খুব শক্তভাবে ধরে আলিঙ্গন করলেন। ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ো’! তিনি আবারও বললেন, ‘পড়ার অভ্যাস আমার নেই’। অতঃপর তৃতীয় বার জিবরাঈল আ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আলিঙ্গন করার পর ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ো’! 

،اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِى خَلَقَ ، خَلَقَ الْإِنسٰنَ مِنْ عَلَقٍ ، اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ ، الَّذِى عَلَّمَ بِالْقَلَمِ ، عَلَّمَ الْإِنسٰنَ مَا لَمْ يَعْلَمْ

‘পড়! তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন (সবকিছু)। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন জমাট রক্ত দ্বারা। পড়! এবং তোমার প্রতিপালক সর্বাপেক্ষা বেশি মহানুভব। যিনি কলম দ্বারা শিক্ষা দিয়েছেন। মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা সে জানত না।’ -সূরা আলাক: ১-৫

অহীর এ আয়াতগুলো অন্তরে ধারণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুটা অস্থির ও স্পন্দিত হৃদয়ে খাদীজা রাযি.-এর কাছে ফিরে এলেন। তিনি খাদীজা রাযি.  কে বললেন, ‘আমাকে কম্বল জড়িয়ে দাও! আমাকে কম্বল জড়িয়ে দাও!’ খাদীজা রাযি. তাঁকে শায়িত অবস্থায় কম্বল গায়ে দিয়ে দিলেন। এভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর তাঁর অস্থিরতা ও চিত্ত স্পন্দন প্রশমিত হলে তিনি তাঁর সহধর্মিনীকে হেরা গুহার ঘটনা সম্পর্কে জানালেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অস্থিরতা ও চিত্ত চাঞ্চল্যের ভাব দেখে খাদীজা রাযি. তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন, ‘কোন ভয় করবেন না, আপনি ধৈর্য ধরুন! আল্লাহ কখনোই আপনাকে অপমান করবেন না। কেননা, আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আপনি সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলেন। অভাবগ্রস্তদের অভাব মোচনের চেষ্টা করেন। অসহায়দের আশ্রয় দান করেন।  মেহমানদের আদর-যত্ম করেন। ঋণগ্রস্তদের ঋণের দায় মোচনে সাহায্য করেন। অবশ্যই আল্লাহ আপনাকে অপদস্থ করবেন না।’ -আর রাহীকুল মাখতুম

নিজের প্রিয়তমা স্ত্রী যদি আপন স্বামীকে এমন সান্তনার বাণী শোনায়; দুঃখ-বেদনায় কি অন্তর ভারাক্রান্ত হতে পারে? এতো নিমিষেই অন্তরকে প্রশান্ত করে দেয়। যাদেরকে মহান রব দ্বীন বিজয়ের সৈনিক মুজাহিদদের স্ত্রী হওয়ার তাওফীক দিয়েছেন; আমাদের সে সব মুমিনা বোনদের জন্য এ ঘটনা থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা রয়েছে। দ্বীন বিজয়ের লক্ষ্যে কিতালের পথে ইসলামের বীর সৈনিকদের অবর্ণনীয় কষ্ট-ক্লেশ সইতে হয়; বহু বাধা-বিপত্তির পথ পাড়ি দিতে হয়। যে পথের পথিকদের পদে পদেই পরীক্ষা; তাঁদের জীবন সঙ্গিনীদের কেমন সহনশীলা হওয়া উচিত!? আর আপন স্বামীদের কেমন সান্তনার বাণী শুনিয়ে দ্বীন বিজয়ের পথে অটল-অবিচল রাখার ভূমিকা পালন করা উচিত!? হ্যাঁ! একজন মুজাহিদের স্ত্রীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল- পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য করে আপন স্বামীকে সান্তনার মাধ্যমে কিতালের ওপর উজ্জীবিত রাখা। কত সহজেই তো স্বামীর মাথায় কোমল হাত বুলিয়ে বলা যায়- ‘দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যেই মহান আল্লাহ আপনাদের মুজাহিদ হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। এটা সত্য, এ পথে পরীক্ষা আসবে; কিন্তু আল্লাহ আপনাদের পরাজিত করবেন না; ধ্বংস করে দিবেন না। তিনি আপনাদের ভালোবাসার সুসংবাদ দিয়েছেন; দিয়েছেন বিজয়ের প্রতিশ্রুতি। আপনাদের হাতের দ্বারাই মহান রব ইসলামের শত্রুদের শাস্তি দিবেন; ধ্বংস করবেন জালিমদেরকে। আপনারাই তো মাজলুম উম্মাহর আর্তনাদ মুছে দিতে ছাহাবাদের প্রদর্শিত পথে হাঁটছেন। আপনারাই তো রক্তাক্ত উম্মাহর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে রণ সাজে সজ্জিত হয়েছেন। হীনবল হবেন না। আরও সামনে অগ্রসর হোন! আমাদের ব্যাপারে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। আপনাদের রবই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আমরা তো সেই মহান প্রতিপালকেরই ইবাদাত করি; যেই মহান সত্তার ওপর ভরসা করে ইবরাহীম আ. আপন স্ত্রী-সন্তানকে খাবার-পানীয় বিহীন মরুভূমিতে রেখে মহান রবের আদেশে বের হয়ে পড়েছেন। হে প্রিয় স্বামী! হে আমার চক্ষু শীতলকারী সন্তানের বাবা, আবু আবদুল্লাহ! আমি আপনার সন্তানদের মুজাহিদ হিসেবেই গড়ে তুলব, ইন শা আল্লাহ! আর অচিরেই তো আমাদের সাক্ষাত হবে; এ দুনিয়া থেকে উত্তম ভূমিতে। ইসলামের শত্রুদের নাপাক রক্ত প্রবাহিত করে আমাদের অন্তরকে প্রশান্ত করুন! ইসলামের শত্রুদের নাপাক রক্ত প্রবাহিত করে আমাদের অন্তরকে প্রশান্ত করুন! ইসলামের শত্রুদের নাপাক রক্ত প্রবাহিত করে আমাদের অন্তরকে প্রশান্ত করুন!  হে বোন! আমরা কি পারি না? আপন স্বামীদের একটু  সান্তনার বাণী শোনাতে! আমরা কি এ ইচ্ছে পূর্ণ করার পথে হাঁটতে পারি না? আপন শহীদ স্বামীর সাথে চিরস্থায়ী মনোরম উদ্যানে আবাস গড়তে!

المرأة الصالحة إذا نظر إليها سرته وإذا أمرها أطاعته وإذا غاب عنها حفظته

সতী নারীর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে–তাকে দেখলে স্বামীর মন প্রফুল্ল হয়, আদেশ করলে মান্য করে, স্বামীর অনুপস্থিতিতে সবকিছু সংরক্ষণ করে রাখে।

المرأة الصالحة أبو داود

 আল বালাগ

ম্যাগাজিন ইস্যু-২