JustPaste.it

মুজাহিদাহ: মুজাহিদের জীবন সঙ্গিনী...
মূল প্রবন্ধ- উম্মে ইয়াহইয়া।


হে মুজাহিদাহ! হে গারীবাহ! হে দুনিয়ার উপরআখিরাতকে প্রাধান্যদানকারিনী! হে আমার দ্বীনী বোন, সম্মানিত মুজাহিদের স্ত্রী ও তাঁর শ্রেষ্ঠ সঙ্গিনী, সমস্ত প্রশংসা এক আল্লাহর জন্য। মাশাআল্লাহ, আপনি আর সমস্ত নারীর চেয়ে ভিন্ন। আপনি একজন মুজাহিদাহ, ঠিক আপনার স্বামীর মত। আপনি আল্লাহর বাহিনীর একবীর সেনানী! নিশ্চয়ই আপনি মজবুত হৃদয়ের অধিকারিণী। আপনি নিজের জন্য যে জীবন পছন্দ করেছেন তাতে আপনার সুযোগ রয়েছে বিরাট এক ভূমিকা রাখার এবং জগদ্বাসীর কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দেয়ার। আপনি পশ্চিমাদের দূষিত দুনিয়া থেকে পৃথক হয়ে গিয়ে, আপনার জীবনসঙ্গীর সাথে এক মহান রাস্তায় চলছেন। হে আমার দ্বীনী বোন, এই রাস্তায় চলতে কী প্রয়োজন সেটা আপনার বোঝা উচিৎ। আপনার বোঝা উচিৎ এ রাস্তায় আপনাকে কী করতে হবে, আপনার জীবনে কেমন প্রতিক্রিয়া হবে এবং আপনাকে কিরকম বাধার সম্মুখীন হতে হবে। নিঃসন্দেহে মুজাহিদের জীবন সবচেয়ে প্রশান্তিময়, কিন্তু জিহাদের রাস্তা আরাম আয়েশের ফুলশয্যা নয়। জিহাদের রাস্তায় আপনার সম্পদহানী হবে, অনেক বন্ধুকে বিদায় জানাতে হবে এবং সর্বোপরি আপনাকে নিজের প্রিয় পরিবার ও ঘর ছেড়ে চলে আসতে হবে। আপনাকে প্রচণ্ড ধৈর্য্যের পরিচয় দিতে হবে, মনের বিভিন্ন খায়েশকে দমিয়ে রাখতে হবে। তাই, বোন আমার, সবসময় এই দোয়াটি পড়বেন- “ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলুবওয়াল আবসার, সাব্বিত ক্বুলুবানা ‘আলা দীনিক।” (হে হৃদয় ও বিবেকের পরিবর্তনকারী! আমাদের হৃদয়গুলোকে তোমার দ্বীনের উপর অটল করে দাও।)

দুঃখ-কষ্ট জিহাদকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। বিশ্বাস করুন, এই রাস্তায় কষ্ট ছাড়া আপনার জীবন একেবারেই পানসে লাগবে। আপনার সঙ্গীর সাথে বেছে নেয়া এই রাস্তায় আপনাকে অতি অবশ্যই যে বিষয়ের সম্মুখীন হতে হবে, তা হল- জিহাদ ও জিহাদের সন্তানদের ব্যাপারে মিডিয়ার মিথ্যাচার ও গুজব। দুঃখের কথা হল, আপনার আশপাশের বহু মুসলিমকে দেখবেন, মিডিয়ার এই অপপ্রচার বিশ্বাস করে বসে আছে। সুতরাং আপনার উচিৎ, হে আমার ভগিনী, মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের সেনানীর দায়িত্ব পালন করা। আপনাকে দৃঢ়পদ হতে হবে, এবং কাফেরদের প্রোপাগান্ডা বিন্দু পরিমাণ বিশ্বাস করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। আপনার মুজাহিদ স্বামী এবং তাঁর সাথীগণ প্রতিনিয়ত পশ্চিমা ক্রুসেডার এবং তাদের দালালদের হিংস্র হামলার স্বীকারে পরিণত হচ্ছেন। কী লজ্জার বিষয়! এইদালালগুলো আমাদের সমাজেরই লোক! ঈমান ও কুফরের এই যুদ্ধে তারা মিথ্যা ছড়িয়ে বেড়ানোকে নিজেদের দায়িত্ব বানিয়ে নিয়েছে যেন লোকরা জিহাদের বরকতপূর্ণ রাস্তায় আসা থেকে বিরত থাকে, তরুণরা মুজাহিদীনদের সমর্থন করা থেকে বিরত থাকে, এবং জিহাদের কাফেলা ছোট থেকে যায়। এভাবে দালালগুলো তাদের চেষ্ঠা চরিত্রের দ্বারা কাপুরুষদের সংখ্যা বাড়াচ্ছে, যারা নিজেদের দ্বীনের জন্য কোন রকম ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত না।

মুসলিমদের ঘরে ঘরে আজ কুফফারদের মিথ্যাচার প্রবেশ করেছে এবং বহু লোক তাদের কথা বিশ্বাস করেছে- আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত দাণ করুন। সুতরাং আপনাকে এই বাস্তবতা বুঝতে হবে এবং মিডিয়া যুদ্ধের ব্যাপারে আপনাকে সচেতন হতে হবে। আমাদের শত্রুরা যাকে পাচ্ছে তাকেই ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করছে। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখের কথা হল, উম্মাহ সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের তথাকথিত ‘আলেম’দের জিহাদ বিরোধী বক্তব্যের দ্বারা, যারা দুই পয়সার বিনিময়ে শত্রুর গোলামে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ! উম্মাহ জেগে উঠছে। জিহাদের মিডিয়া উপকরণ গুলো এখন নেটের সবজায়গায় ছড়িয়ে আছে। সুতরাং আপনি নিজেও এখানে অবদান রাখুন, সত্যপ্রচারে ব্রতী হউন। আমার সম্মানিত ও প্রিয় মুসলিমা বোন, সম্মানিত মুজাহিদের স্ত্রী। ...আপনার চারপাশে যারা জিহাদের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদের ব্যাপারে সোচ্চার হউন। তাদেরকে সত্যবাদিতা ও বিজ্ঞতার পরিচয় দিতে উপদেশ দিন। তাদের আরও উপদেশ দিন যেন তারা কেবল একপক্ষের (মুজাহিদদের শত্রু) কথা না শুনে, অপরপক্ষের কী বলার আছে সেটাও যেন তারা শোনে। তাদেরকে বোঝান প্রচলিত মিডিয়ায় মুজাহিদদের ব্যাপারে কোন কিছু শুনলে যেন তারা মুজাহিদদের মিডিয়া থেকে এর সত্যতা যাচাই করে নেয়।

হে মুজাহিদের স্ত্রী! আপনি হয়ত ইতিমধ্যে বুঝে গিয়েছেন, শুধু আবেগ তাড়িত হয়ে থাকা এই পথে চলার জন্য যথেষ্ট নয় কিংবা কেবল প্রতিশোধস্পৃহা কিংবা কেবল হারানো সম্মান পুনরুদ্ধার করতে চাওয়ার ইচ্ছা জিহাদের রাস্তায় টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট নয়। আপনাকে ইলম এবং জ্ঞান দ্বারা নিজেকে প্রস্তুত ও অস্ত্র-সজ্জিত থাকতে হবে। ময়দানের ব্যাপারে নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করুন, নবী ও মুজাহিদগণের পথকে উপলব্ধি করুন। তাওহীদের ফারয ও দ্বীনের অত্যাবশকীয় বিষয়গুলোর ইলম গোগ্রাসে আহরণ করুন। রোজানা কুরআন অধ্যয়ন করুন এবং দ্রুত নিজের দ্বীনকে ভালমত শিক্ষা করুন। নবীদের জীবনী পড়তে নিজেকে অভ্যস্ত করুন, তারা কীরূপ কষ্ট সহ্য করেছেন, কীরূপ ধৈর্য ও সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন- তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। সাহাবায়ে কেরামের জীবনী পড়ুন ও বোঝার চেষ্ঠা করুন এবং তাদেরকে নিজের ‘রোলমডেল’ হিসেবে দেখুন। মুজাহিদগন (আল্লাহ তাঁদের সুরক্ষিত রাখুন) হলেন তাওহীদের শক্তিশালী পতাকা উত্তোলনকারী, ইসলামী শরীয়াহর অনুসারী, আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী ﷺ এর অনুসারী, যারা মুসলিম উম্মাহকে একতাবদ্ধ করছেন।

হে আগামীদিনের মুজাহিদের মা! আপনার সন্তানদেরকে দ্বীনের শিক্ষায় শিক্ষিত ও আলোকিত করার দায়িত্ব ও কর্তব্য আপনারই দুই ঘাড়ে। তারা আপনার জীবনের মহা মূল্যবান মণিমুক্তা। তারা আপনার আমানত। আপনি তাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দিন, ইসলামের ইতিহাস থেকে শিক্ষা দিন যেন তারা দ্বীনকে ভালবাসতে শুরু করে এবং এর জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত হয়ে যায়। সবচেয়ে বড় হল, তাদেরকে প্রকৃত ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও ভ্রান্তি থেকে সুরক্ষিত রাখুন। তাদেরকে এমনজ্ঞানে জ্ঞানী বানান, যা মুসলিম উম্মাহর জন্য উপকারী হবে।

আমার ইসলামী বোন! আপনি যদি আপনার দায়িত্ব পালন করে থাকেন, তবে সত্যের পথে কয়জন আছে সেই সংখ্যা নিয়ে আপনার বিচলিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ সত্য হচ্ছে আল্লাহপ্রদত্ত, মহিমান্বিত; যদিও এর অনুসারীরা সংখ্যায় অনেক কম। আল্লাহ বলেন, “আর অধিকাংশ লোক আল্লাহকে বিশ্বাস করে কিন্তু তার সাথে অংশীদারও সাব্যস্ত করে। (অর্থাৎ খুব কম মানুষই শিরক মুক্ত হয়ে আল্লাহকে বিশ্বাস করে)” [১২: ১০৬] চিন্তা করুন, ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তো একা ছিলেন, কিন্তু আল্লাহ তাকে একাই এক উম্মাহ বা জাতি আখ্যায়িত করেছেন।

আমার প্রিয় উখতি! যদি কখনও আপনার জীবনে পরাজয়ের বাতাস বয়ে আসে কিংবা মিসাইল অথবা বোমার বিস্ফোরণে আপনার চোখ বুজে যায় কিংবা কাফেরদের হাতে পরিচিত মুজাহিদদের বন্দিত্ব আপনার স্বামীকে বিষণ্ণ করে দেয়, আপনি এক পলকের জন্যও তাকে এই কঠিনসময়ে একা ফেলে যাবেন না, তাকে সাহস ও হিম্মত দিতে থাকুন এবং তাকে আশ্বস্ত করুন, আপনি সবসময় তার পাশে আছেন।

হেরার গুহায় জিব্রাইল আলাইহিস সালামের সাথে আল্লাহর রাসুলের ﷺ যখন প্রথম সাক্ষাৎ হয়, তিনি অত্যন্ত ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। ভয়ে তিনি থরথর করে কাঁপছিলেন। এমন কঠিন সময়ে তিনি যখন স্ত্রী খাদীজার কাছে এসে বললেন, “আমাকে আবৃত কর, আমাকে আবৃতকর।” খাদীজা রা. তখন আল্লাহর রাসুলকে ঢেকে দিয়েছিলেন এবং তাঁর মনে সাহস যোগাতে চেষ্টা করছিলেন, এমনকি তিনি তাঁকে সম্পূর্ণ নির্ভয় করে ফেলতেও সক্ষম হয়েছিলেন। খাদীজা রা. কি নির্বিকার বসে ছিলেন কিংবা স্বামীর অস্বাভাবিক আচরনে বিরক্ত কিংবা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন? অবশ্যই না! একজন স্ত্রী হিসেবে তিনি তাঁকে সান্তনা দিয়েছিলেন, সাহস যুগিয়েছিলেন এই বলে, “আল্লাহ কখনোই আপনাকে লজ্জিত করবেন না। আপনি আত্মীয়তার সম্পর্ক মজবুত করেন, দূর্বলদের সাহায্য করেন, দরিদ্র ও অসহায়দের পাশে থাকেন, অতিথিদের সম্মান করেন এবং সত্যের পথে কষ্ট স্বীকার করেন।”

প্রাণপ্রিয় বোন আমার! আপনার স্বামীর নাম হয়ত “মোস্ট ওয়ান্টেড” লিস্টের শীর্ষে আছেন, হয়তবা তিনি বন্দী হয়ে আছেন, তাঁর জীবনে হয়ত অনেক কষ্ট ও হতাশার ঝড়-ঝাপটা আসতে পারে। এমনসময়ে, আপনি যেন তার দুখে দুখী হন, তার ব্যাথায় ব্যাথিত হন, আপনি যেন তার পাশে থাকেন, তাঁকে সাপোর্ট দেন এবং তাকে সাহস ও শক্তি যুগিয়ে দেন; আপনি যেনতার কাধে মাথা রেখে বলেন-

“প্রিয়তম, চিন্তা করো না... ঠিক আছে, কোন সমস্যা নেই,

...তোমার আগে আম্মার রা. কেও এই একই কষ্ট বরদাশত করতে হয়েছে, ... তোমার আগে বিলাল রা. কেও ধৈর্য্যধরতে হয়েছে, ...

আর তোমার আগে সালাহুদ্দীন আইয়ুবী জয়ী হয়েছিলেন। ...ইনশাআল্লাহ তুমিও জয়ী হবে; হয়ত শত্রুকে পরাজিত করে নয়ত শাহাদাত বরন করে।”

(সমাপ্ত)
১২/১০/২০১৪ ইং

[Inspire ম্যাগাজিনের দ্বাদশ ইস্যুর Sisters' Corner: Mujahidah wife of a Mujahid প্রবন্ধ থেকে অনূদিত]