আল্লাহর পথে লড়াইরত মুজাহিদদের প্রতি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপদেশ
লিখেছেন: ভাই আবু হাসান আলী আল আ’রজানি আল কুয়েতি (মহান আল্লাহ তাকে রক্ষা করুন)
রবিউল আউয়াল ১৪৩৬, জানুয়ারি ২০১৫
জেনে রাখুন - আপনাদের উপর মহান আল্লাহ’তায়ালার রহমত বর্ষিত হোক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সব কাজ করতে আদেশ করেছেন, যে সব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, যে সব কাজ সুন্নাহ হিসেবে পালন করতে বলেছেন এবং আচার-আচরণ, নৈতিকতা, সুনীতি সম্পর্কিত যেসব কাজ করতে তিনি উৎসাহিত করেছেন, তার সবকিছু রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপদেশে উপস্থাপিত হয়েছে। যখন সাহাবা (রা:) গণদের নিকট রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপদেশ সম্পর্কে বলা হত, তারা বলতঃ “ আল্লাহর কিতাবের উপর পরিপূর্ণ আনুগত্য রাখতে তিনি আমাদের আদেশ দিতেন। ”
এই ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপদেশে এর অর্থ পরিপূর্ণভাবে বুঝার জন্য, আমরা সহিহ হাদিস বর্ণনা করব। যার মাধ্যমে মহান আল্লাহর পথে মুজাহিদগণ তাদের দৈনন্দিন জীবনে উপকৃত হতে পারবে এবং এগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে তারা শরিয়াহ অনুযায়ী কাজ করতে পারবে এবং যা করতে ইসলাম নিষেধ করেছে তা তারা বর্জন করতে পারবে। এবং ইসলামের নৈতিক বৈশিষ্ট্য সমূহ তার ব্যক্তিগত জীবনে প্রয়োগ এর মাধ্যমে সে একজন অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে উঠবে এবং তার উত্তম ব্যবহার ও আচার-আচরণ এর ব্যাপারে মুসলিম জনসাধারণ সাক্ষ্য দিবে। তিনি মুসলিম জনসাধারণকে শরিয়াহ অনুযায়ী পরিচালিত করবেন।
যেসব ব্যক্তিবর্গ, নেতাগণ ও মুজাহিদীন দল ইসলামের বার্তা এবং ইসলামের শরিয়াহ আইন বহন করে। তাদেরকে সাধারণ জনসাধারণ ও সাধারণ মানুষ জীবন্ত উদাহরণ হিসাবে দেখে থাকে। এই কারণে আমাদের একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে অবশ্যই পৌছাতে হবে এবং এই যুগে মহান আল্লাহ্ তায়ালা আমাদের যে স্তরের সম্মান দিয়ে ভূষিত করেছেন তা আমাদের অনুধাবন করতে হবে। এবং ল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য, একজন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার মাধ্যমে যে দায়িত্ব কাঁধে নেয় তার গুরুত্ব অপরিসীম।
নবীদের সর্দার এবং মানবজাতির জন্য দয়ালু মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনুসরণ, তার দেখানো উদাহরণ, তার উত্তম ব্যবহার ও আচার-আচরণ আমাদের ব্যক্তি জীবনে ও আমাদের পারিবারিক জীবনে অর্জন না করা পর্যন্ত আমরা জিহাদ এর মাধ্যমে আল্লাহর পথে লড়াই, দাওয়াহ(প্রচারণা/বিস্তার), নৈতিকতা, শিক্ষা দান করা এবং উত্তম ব্যবহার করে যাব।
অধ্যায়: ইসলামের কোন গুণটি সর্বোত্তম ?
আবি মুসা (রা:) বলেন: “ কিছু লোক রাসুলুল্লাহ (সা:) কে জিজ্ঞাসা করলেন: কাদের ইসলাম সর্বোত্তম ? (অর্থাৎ কে সবচেয়ে ভালো মুসলিম) ? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) জবাব দিলেন: ‘ যে ব্যক্তি তার জিহ্বা এবং হাত দ্বারা অপর মুসলমানের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকে ’। ”
আব্দুল্লাহ বিন আ’মর হতে বর্ণিতঃ এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলেন: ইসলামের কোন গুণটি সর্বোত্তম ? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ “ মানুষকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত ও অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়া। ”
শিক্ষা: ইসলামে ঐ ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে ব্যক্তি তার হাত/ জিহ্বা দ্বারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে কোন সীমালঙ্ঘন করেনি। আর এটাতো ঐ ব্যক্তির অবস্থা যে আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্যে ও মুসলিমদের রক্ষার জন্য বেরিয়ে পড়েছে- যাতে সে তার উদ্দেশ্যের ব্যাপারে সৎ হতে পারে এবং সম্ভবত তার আশেপাশের মানুষদেরকে উদ্বুদ্ধও করতে পারে।
এবং যেটা ভাল তার অংশ হল, মানুষকে খাওয়ানো, সালাম জানানো-যাদেরকে যাদেরকে তুমি চিনো এবং যাদেরকে তুমি চিনো না, হতে পারে তারা তোমার দলের মুজাহিদ অথবা অন্য কোন দলের মুজাহিদ এবং হতে পারে তারা তোমার পছন্দনীয় ব্যক্তি অথবা তারা তোমার অপছন্দনীয় ব্যক্তি। এবং তুমি অবশ্যই সকল মুসলিমকে সালাম দিবে, এতে করে অণু পরিমাণ অহংকার বা উদ্ধতভাবও তোমার মধ্যে আর থাকবে না। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী ন্যায়পরায়ণ সে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্ তায়ালার নিকট সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি।
অধ্যায়ঃ নিশ্চয়ই দীন সহজ
নবী (সাঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর নিকট দীনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম কাজ হল সেটাই যে কাজ সংযম/পরিমিতিবোধের সাথে করা হয় এবং সঠিক পন্থায় করা হয়”।
এবং নবী (সাঃ) বলেছেনঃ “দীন ইসলাম সহজ, কেউ কখনো দীনের ক্ষেত্রে নিজের উপর যেন অতিরিক্ত বোঝা না চাপিয়ে দেয়, যদি না সে তা সম্পন্ন করতে পারে। সুতরাং তুমি সীমার অতিরিক্ত কোন কাজ করো না। তুমি যে কাজ করবে তা তুমি সাধ্যমত উত্তমভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করো এবং সুসংবাদ গ্রহণ করো যে এর জন্য তুমি পুরস্কৃত হবে। এবং সকাল, বিকাল ও রাতের কিছু অংশে তুমি প্রার্থনা করে শক্তি অর্জন কর। ”
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুল (সা:) ঘরে আসলেন। তখন একজন মহিলা ঘরে উপস্থিত ছিল। রাসুল (সা:) বললেন, “সে কে ?” আমি বললামঃ “তিনি হলেন অমুক। সে সারা রাত ঘুমায় না কারণ সে সারা রাত ইবাদত করে।” এ কথা শুনে রাসুল (সা:) কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হলেন এবং বললেনঃ “ তোমার সাধ্যমত উত্তম আমল/কাজ কর, আল্লাহ্ তায়ালা কখনো কাজের প্রতিদান দিতে কার্পণ্য বোধ করেন না। ক্লান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত তুমি উত্তম আমল করতে থাকলেও, আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হল সেটাই, যে আমল বান্দা নিয়মিত করে থাকে। ”
এবং নবী (সাঃ) বলেছেনঃ “ আমি যদি তোমাদের কোন কিছু করতে আদেশ দেই, তবে তোমরা সেই কাজ তোমাদের সাধ্যমত সম্পন্ন করো। ”
আয়েশা (রাঃ) বলেন, যখন রাসুল (সা:) আমার ঘরে সালাত পড়ছিলেন, তখন আমি শুনলাম তিনি বলছিলেনঃ“ হে আল্লাহ্ ! যারা আমার উম্মাহকে কঠোরভাবে শাসন করে, তাদের সাথে তুমি কঠোরতা প্রদর্শন করো এবং যারা আমার উম্মাহকে উত্তম রূপে শাসন করে, তাদেরকে তুমি তোমার দয়া প্রদর্শন করো। ”
অধ্যায়ঃ শুভ সংবাদ দাও এবং দীনের ক্ষেত্রে কোন বিরাগ সৃষ্টি করো না
আবু মুসা (রাঃ) বলেন যে, যখন নবী (সাঃ) কোন অভিযানের নেতৃত্ব তার কোন সাহাবী(রাঃ) এর উপর প্রদান করতেন, তখন তিনি বলতেনঃ “ মানুষকে শুভ সংবাদ দাও, তাদের মনে ধর্মের প্রতি অনীহা সৃষ্টি করে দিয়ো না ; তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করো এবং তাদের উপর কঠোর হয়ো না”।
শিক্ষাঃ আল্লাহ্ আয্যা ওয়া জাল এর দীন হল সহজ ও মার্জিত, “যদি তোমরা কোন কিছুর মধ্যে মার্জিতবোধ খুজে পাও তবে তাকে সৌন্দযমণ্ডিত কর এবং যখন মার্জিতবোধ কোন কিছুর মধ্যে থেকে বের করে ফেলা হয় তখন তা তার সন্মানহানী করে। আল্লাহ্ তায়ালা হলেন, রফিক (মার্জিত) এবং সব কিছুর মধ্যে মার্জিতবোধ তিনি ভালোবাসেন। ”
দীনের ক্ষেত্রে কোন কিছু নিজের উপর চাপিয়ে নিয়ে মানুষ কেবল হতাশই হয়েছে। আমাদের সেই কাজ করতে আদেশ করা হয়েছে যে কাজ আমরা করতে পারব এবং সবচেয়ে উত্তম কাজ হল সেটাই যে কাজ নিয়মিত করা হয়, যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়। একটি সুন্নাহ অনুসরণ করা অনেকগুলো সৃষ্টি করা কাজ (বিদআত) এর চেয়ে উত্তম। সৃষ্টি করা কাজ (বিদআত) ধংসের দিকে পরিচালিত করে।
আমাদের সাধ্য অনুযায়ী আমাদের কাজ করতে আদেশ দেয়া হয়েছে। আমরা কাজের ক্ষেত্রে সংযমী হব এবং আল্লাহ্র নিকট সাহায্য চাইব। আমরা শুভ সংবাদ দিব এবং গ্রহণ করব। মানুষকে দয়া দেখাবো এবং কঠোরতা প্রদর্শন করব না।
মুজাহিদ হল এমন একজন ব্যক্তি যাকে মুসলমানদের উপর কর্তৃত্ব দেয়া হয়েছে। তার উচিত সবসময় সতর্ক থাকা যেন সে তাদের মধ্যে না পড়ে যায় যাদের কঠোরতার কারণে রাসূল (সাঃ) তাদের বিরুদ্ধে দোয়া করেছেন। কেননা তাহলে আল্লাহ্ও তার সাথে কঠোর আচরণ করবেন। তার উচিত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর দু’আ থেকে কল্যাণ অর্জনের জন্য সংগ্রাম করা। যার ফলে আল্লাহ্ তা’আলা তার প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন- সে মুসলিমদের প্রতি কোমল হবার কারণে।
অধ্যায়ঃ ইসলামিক ভ্রাতৃত্ব এবং এর দাবী
রাসুল (সা:) বলেছেনঃ “ এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই। সে না নিজে তার ক্ষতি করবে, না সে তাকে এমন কারো হাতে তুলে দিবে যে তার ক্ষতি করতে পারে। যদি কেউ তার ভাই এর প্রয়োজন পূরণ করে তবে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণ করবেন। যদি কেউ একজন মুসলিমের বিপদে সাহায্য করে। আল্লাহ তায়ালা তাকে পুনরুত্থান দিবসে বিপদ থেকে রক্ষা করবেন। এবং কেউ যদি কোন মুসলমানের দোষ-ক্রুটি গোপন রাখে তবে আল্লাহ তায়ালা বিচার দিবসে তার দোষ গোপন রাখবেন। ”
রাসূল(সা:) বলেছেনঃ “তোমার ভাইকে সাহায্য কর, হোক সে অত্যাচারী অথবা অত্যাচারিত।” মানুষ জিজ্ঞাসা করল: হে আল্লাহ্র রাসূল (সা:), আমরা তো একজন ব্যক্তিকে তখনই সাহায্য করতে পারি যখন সে অন্যের দ্বারা অত্যাচারের শিকার হয়, কিন্তু যখন কোন ব্যক্তি অত্যাচারী হয়, তখন সেই অত্যাচারী ব্যক্তিকে আমরা কীভাবে সাহায্য করব ? রাসূল(সা:) বললেন: “ তাকে অত্যাচার করা থেকে বিরত রেখে।”
রাসূল (সা:) বলেছেনঃ “বিশ্বাসীরা দয়া, সমবেদনা ও সহানুভূতি এর ক্ষেত্রে পরস্পর একটি দেহের মত। যখন দেহের একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয়, তখন সারা দেহে সেই কষ্ট যেন ছড়িয়ে পড়ে, জ্বর আসে।“
রাসূল (সা:) বলেছেনঃ বিশ্বাসীরা একটি মজবুত দেয়ালের ইটের ন্যায়, তারা পরস্পর পরস্পরকে শক্তিশালী করে।
রাসূল (সা:) বলেছেনঃ একজন মুসলিমের প্রতি আরেকজন মুসলিমের ৫টি অধিকার রয়েছেঃ সালামের উত্তর দেয়া, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, জানাজায় শরিক হওয়া, দাওয়াত কবুল করা, হাঁচির উত্তর দেয়া।
রাসূল (সা:) বলেছেনঃ যার অপকর্ম থেকে তার প্রতিবেশীরা নিরাপদ নয়, সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
অধ্যায়ঃ ঈমানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, একজন মুসলিম তার নিজের জন্য যা ভালোবাসবে, সে তা তার অন্য মুসলিম ভাই এর জন্যও ভালোবাসবে।
রাসূল(সা:) বলেছেনঃ “তোমাদের মধ্যে কেউ (সত্যিকার) ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার নিজের জন্য যা ভালোবাসে- তার ভাই এর জন্যেও তাই ভালোবাসে।“
অথবা তিনি বলেছিলেন, “...নিজের জন্যে যা ভালবাসে, প্রতিবেশীর জন্যেও তাই ভালবাসে”।
শিক্ষাঃ ইসলামিক ভাতৃত্ব এবং এর দাবী সকল মুসলমানদের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। যদিও মুসলমানদের মধ্যে বিভিন্ন দল, দেশ, জাতি ও গোত্র থাকে। মুসলমানরা একটি দেহ এবং একটি মজবুত দালানের ন্যায়। যদি মুজাহিদগণ এর উপর ‘আমল করে, তবে তারা বিজয় ও শক্তি অর্জনের সুসংবাদ গ্রহণ করতে পারে। সাধারণ মানুষ তখন আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) এর (মানহাজ) পদ্ধতির দিকে ফিরে আসবে।
অধ্যায়ঃ শ্রেণীবিভাজন ও হিযবিইয়াহ (বিভক্তি) এবং আসাবিইয়াহ (একটি দলের প্রতি আনুগত্য) হারাম
রাসূল (সা:) বলেছেনঃ আল্লাহ তোমাদের নিকট হতে তিনটি জিনিস পছন্দ করেন এবং তিনটি জিনিস অপছন্দ করেন। তিনি ভালোবাসেনঃ তোমরা কেবল তারই উপাসনা কর, তার সাথে কাউকে শরীক না করা এবং তোমরা আল্লাহ্র রজ্জু শক্ত করে ধরো এবং নিজেদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করো না।
আবু তালাবাহ আল কুহসানী (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ যখন মানুষ কোন অভিযানে যেত তখন তারা পাহাড়ের অলিতে গলিতে তাঁবু স্থাপন করত। যখন নবী (সাঃ) এটা লক্ষ্য করলেন, তিনি বললেনঃ “পাহাড়ের অলিতে গলিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা শয়তানের কাজ।” এরপর থেকে সাহাবী (রাঃ) গণ যখন তাঁবু স্থাপন করতেন তখন তারা পরস্পর কাছাকাছি থাকতেন।
রাসূল (সা:) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি যদি লড়াই করে অথচ লড়াই করার কারণ তার কাছে পরিষ্কার নয় (সে জানে না তার লড়াই করা ন্যায়সঙ্গত নাকি অন্যায়), আর এর মাধ্যমে সে আসাবিইয়া (একটি গোষ্ঠির আনুগত্য) সমর্থন করে, কোন গোষ্ঠির পক্ষে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে, তবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়্যাত এর মৃত্যু।
শিক্ষা: মুসলিমদের মধ্যে অনৈক্য ও দলাদলি শয়তানের পক্ষ থেকে আসে। আর একটি জাতি যদি তাদের শত্রুর দেখানো পথে হাঁটে এবং নিজেদের মধ্যে মারামারিতে লিপ্ত হয়, তারা সফল হতে পারে না। যারা এমন অবস্থার মাঝে অবস্থান করছে- সফলতা আর বিজয় তো দূরের ব্যাপার, বরং তারা পরাজিত হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবার অপেক্ষায় আছে।
অধ্যায়ঃ মুসলিমকে তাচ্ছ্বিল্য করা বা তাকে ত্যাগ করা হারাম
রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেনঃ “এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে না তার উপর অত্যাচার করে, না তাকে ত্যাগ করে আর না সে তাকে তুচ্ছ্ব-তাচ্ছ্বিল্য করতে পারে। আল্লাহ্র ভয় এখানে (বলে তিনি তাঁর বুকের দিকে তিনবার ইশারা করলেন)। একজন মুসলমানের জন্যে এটাই যথেষ্ট খারাপ কাজ যে সে তার ভাইকে অবজ্ঞা করে। ... ”
শিক্ষাঃ মুসলমান ভাইকে অবজ্ঞা করার কারণে একজন ব্যক্তিকে খারাপ মনে করার পিছনে যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এটা হয় আল্-ওয়ালা (বন্ধুত্ব) ও তা প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে দুর্বলতা থাকার কারণে। অথচ শরি’আহ্ একে ফর্য করেছে যা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ। যে মুজাহিদ আল্লাহ্কে ভয় করে চলে তার জন্যে তো এটা সঙ্গত নয় যে তার চরিত্র এরকম হবে- যদিও তার মুসলমান ভাই ঈমান ও তাক্ওয়ায় তার চেয়ে কমজোর হয়।
অধ্যায়ঃ একে অন্যকে ঘৃণা ও হিংসা করা হারাম।
রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেনঃ “(তোমরা) একে অন্যকে ঘৃণা কোর না, পরস্পর হিংসা কোর না এবং একজন আরেকজনকে ত্যাগ কোর না। আর হে আল্লাহ্র বান্দারা! তোমরা (পরস্পর) ভাই ভাই হয়ে থাকো। কোন মুসলমানের জন্যে এটা জায়েয নয় যে, সে তার (মুসলমান) ভাইকে তিন দিনের বেশি সময়ের জন্য ত্যাগ করবে (অর্থাৎ তার সাথে কথা না বলে থাকবে)।”
অধ্যায়ঃ সন্দেহ পোষণ করা, গুপ্তচর-বৃত্তি, পরস্পর প্রতিদ্বন্দিতা, অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বিদ্বেষপোষণ করা হারাম
রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেনঃ “সন্দেহ পোষণ করা থেকে বিরত থাকো, কারণ সন্দেহ-সংশয় হচ্ছে কথার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর মিথ্যা। আর একে অপরের বিষয়ে কৌতুহলী হয়ো না আর পরস্পর গুপ্তচরবৃত্তি কোর না। পরস্পর হিংসা কোর না। কারো ক্ষতি কামনা কোর না। বিতৃষ্ণা ও শত্রুতা পোষণ কোর না। পরস্পর ভাই ভাই হয়ে থাকো এবং আল্লাহ্র (উত্তম) বান্দা হও।”
শিক্ষাঃ আমাদের কে ইসলামী ভ্রাতৃত্বে আবদ্ধ থাকার আদেশ দেয়া হয়েছে। আর আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে গুপ্তচরবৃত্তি ও মুসলিমদের দুর্বলতা অনুসন্ধান করতে। সেই সাথে একে অন্যকে হিংসা করা, অন্যের ক্ষতি কামনা করা এবং পরস্পর শত্রুতা পোষণ করতেও আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ এর দ্বারাই কামনা-বাসনা ও মিথ্যা-সংশয়পূর্ণ এই পৃথিবীতে মানুষের সৌভাগ্য পরিণত হয় সংঘাতে। আর এর ফলেই মুসলিমরা ক্ষমতা হারিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। শত্রুরা তাদেরকে শাসন করতে সমর্থ হয়।
অধ্যায়ঃ গীবত করা এবং গুজব ছড়ানো হারাম ।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ গুজব ছড়ানো ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ পুনরুত্থান দিবসে আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তিটি হবে, দু-মুখো ব্যক্তি। যে ব্যক্তি কিছু লোকের নিকট এক রকমভাবে হাজির হয় এবং অন্য লোকের নিকট আরেক রকমভাবে হাজির হয়।
আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, ” তোমরা অন্যের গীবত করো না। তোমরা কি তোমাদের মরা ভাই এর গোশত খেতে চাও। তোমরা তা করতে ঘৃণা বোধ করো। এবং তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ দয়াময় ও তওবা কবুলকারী।”
শিক্ষাঃ গীবত এবং গুজব ছড়ানো একটি জাতির জন্য ব্যাধি এবং এটি তাদের ব্যর্থতার কারণ। এর ফলে ভাই ও ভাই এর মধ্যে, বাবা ও ছেলের মধ্যে এবং মা ও মেয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়- এটা জানা সত্ত্বেও যে, তারা পরস্পর রক্ত ও গর্ভের মাধ্যমে একত্রে মিলে রয়েছে।
তাহলে অন্যদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা কি রকম (খারাপ) হতে পারে !
রাসুল (সাঃ) এর নিকটে যখন তার সাহাবীদের সম্পর্কে কিছু বলা হত, তখন তিনি তা শুনতে অপছন্দ করতেন এবং তিনি বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করতেন, “ যখন আমার হৃদয় শান্ত থাকে তখন (কথা শোনার জন্য) আমি তাদের কাছে যাওয়াই পছন্দ করি। ”
হাদিসে এটা বলা হয়েছে যে, নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করা দীনকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। সুতরাং আমার মুজাহিদ ভাইয়েরা আপনারা এই ধরনের ক্ষতির কারণ এবং জিহাদের অধঃপতন হতে সতর্ক হন।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন,” জিহাদের অর্থ হল মানুষকে ইসলামের দিকে একীভূত করা। আমাদের জিহাদের মাধ্যমে আমরা মুসলমানদেরকে আমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে একীভূত করি। ”
অধ্যায়ঃ মন্দ এবং গর্হিত কথা বলা হারাম
আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর (রাঃ) বলেন, যারা অশ্লীল ও যারা অশ্লীল কথা বলত তাদের মধ্যে রাসূল (সাঃ) অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না এবং তিনি বলতেনঃ “তোমাদের মধ্যে উত্তম হল সেই ব্যক্তি যার ব্যবহার ভাল এবং চরিত্র সর্বোত্তম।”
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ একজন প্রকৃত ইমানদার ব্যক্তি মানহানীকর কাজ, অনবরত কাউকে অভিশাপ দেয়া, অশোভন অশ্লীল কথার বলার মধ্যে জড়িত হবে না।
অধ্যায়ঃ একজন মুসলিমকে কটূক্তি করা হারাম
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ একজন মুসলিমকে কটু কথা বলা গুনাহ্ এবং মুসলিমকে হত্যা করা হল কুফর।
শিক্ষাঃ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি হল মুজাহিদ যে আল্লাহ্র পথে লড়াই করে, তা নাস (কোরান ও হাদিস) দ্বারা প্রমাণিত। এটা সমীচীন নয় যে উত্তম ব্যক্তিগণ অশ্লীল হবে অথবা তারা কাউকে গালি দিবে বা তারা কাউকে অভিশাপ দেবে। একজন মুজাহিদ যদি এই সব গর্হিত কাজগুলো করে, তবে সে মানুষের প্রশংসা ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। এবং তার দাওয়াহ বিফলে যাবে।
অধ্যায়ঃ আলাদুল খিসাম (ঝগড়া পছন্দকারী ব্যক্তি) এর প্রতি ধমক
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ সবচেয়ে বেশি ঝগড়াকারী ব্যক্তি ( আলাদুল খিসাম) আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি।
আলাদ - যে ব্যক্তি নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে যুক্তি প্রদর্শন করে।
খিসাম- অতিরঞ্জিত কলহ/যুক্তি
শিক্ষাঃ একজন মুজাহিদের জন্য এটি উপযুক্ত নয় যে, সে সামান্য ব্যাপারে অতিরঞ্জিত যুক্তি পেশ করবে। না সে তার ভাই এর সাথে নির্মমভাবে ঝগড়া করবে।
এটা জেনে রাখুন যে, মুনাফিকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, সে যখন ঝগড়া করবে সে তখন নির্মম ভাবে হীন ও অপমানজনক পন্থায় ঝগড়া করবে। আমাদের যুগে আমরা দেখতে পাই এই ধরনের ব্যক্তিরা তাদের অতিরঞ্জিত বিতর্কের পরিধি বৃদ্ধি করতে করতে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায়, যার মাধ্যমে একটি নতুন কিছু সৃষ্টি হয়ে যায়, অথবা তারা জিহাদ পরিত্যাগ করে অথবা তারা আল্লাহ্র পথে লড়াইরত মুজাহিদ সম্পর্কে কটু বাক্য বলে। এই সব কাজে পতিত হওয়ায় ফলে তারা আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি হয়ে উঠে।
অধ্যায়: অসৎ কাজ/ধোঁকা দেয়া হারাম
রসুল (সা:) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিলো সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং যে আমাদের ধোঁকা দিল সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”
রসুল (সা:) বলেছেনঃ যদি আল্লাহ্ তায়ালা জনগণকে শাসন করার জন্য কাউকে নিযুক্ত করেন এবং সে মারা যাওয়ার সময় পর্যন্ত জনগণ তাকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে জানত, তবে আল্লাহ্ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না।
শিক্ষা: ধোঁকা দেয়া স্বাভাবিক ভাবেই নিষিদ্ধ। এটি কোন মুসলমানের স্বভাব হতে পারে না। না এটি তাদের কোন পদ্ধতি হতে পারে। যে ব্যক্তি মুসলমানদের ধোঁকা দিল। সে মুসলমানদের শত্রুদের একটি বৈশিষ্ট্য তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নিলো।
অধ্যায়: বিশ্বাসঘাতকতা করা হারাম
রাসুল (সা:) বলেছেনঃ বিচার দিবসের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকদের সাথে একটি করে পতাকা থাকবে।
এই হাদিসের দুই জন উপ-বর্ণনাকারীর মধ্যে একজন বলেছেন, এই পতাকাটি স্থায়ী থাকবে এবং আরেকজন বর্ণনাকারী বলেছেন, এই পতাকাটি বিচার দিবসের সময় দেখা যাবে। যার মাধ্যমে বিশ্বাসঘাতককে চেনা যাবে।
বুরায়দা বিন আল হাসিব (রাঃ) বলেনঃ যখন রাসুল (সাঃ) কোন কাউকে কোন সৈন্যদল/বহরের দলনেতা হিসেবে প্রেরণ করতেন তখন রাসুল (সাঃ) সেই দলনেতাকে তার নিকটে ডাকতেন এবং তাকে বিশেষভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে কিছু উপদেশ দিতেনঃ সে যেন তাকওয়া (আল্লাহ্র ভয়) অবলম্বন করে ; সে যেন মুসলমানদের সাথে উত্তম আচরণ করে।
তিনি (সা) বলতেনঃ যারা আল্লাহ্কে অবিশ্বাস করে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ্র পথে আল্লাহ্র নামে যুদ্ধ কর। গনিমতের মাল থেকে কিছু চুরি করো না, বিশ্বাসঘাতকতা করো না। কারো অঙ্গহানী করবে না, কোন শিশুকে হত্যা করবে না।
ইবনে উমার (রাঃ), রাসুল (সাঃ) এর নিকট হতে বর্ণনা করেনঃ যখন আল্লাহ্ বিচার দিবসে পূর্বের ও পরের সকল যুগের মানুষকে একত্রিত করবেন তখন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতক এর সাথে (চিহ্ন হিসেবে) একটি পতাকা উত্তোলন করা হবে। এবং এভাবে ঘোষণা দেয়া হবে যে, এটা হলো অমুক বিষয়ে বিশ্বাস ঘাতকতা করার কারণে, অমুক এর পুত্র অমুক এটা করেছে। (এর মাধ্যমে ঐ ব্যক্তির দোষের প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে)।
শিক্ষাঃ প্রকৃতিগতভাবে বিশ্বাসঘাতকতা নিষিদ্ধ, এটা কোন রুপেই বৈধ নয়। পুনরুত্থান দিবসে বিশ্বাসঘাতক ব্যক্তিকে আল্লাহ্র নিকটে নেয়া হবে, আল্লাহ্ তাকে সবার সামনে অপমান করবেন। তার জন্য বিশ্বাসঘাতকতার একটি পতাকা উত্তোলন করা হবে।
বিশ্বাসঘাতকতার কোন অংশ প্রশংসার যোগ্য নয় এবং এটি বিজয় অর্জনের কোন পথ নয়, না এটা যুদ্ধ-কৌশলের কোন অংশ।
অধ্যায়: অঙ্গীকার পূর্ণ করা।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ মুসলমানদের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ এমন কোন ব্যক্তিকে যদি কেউ হত্যা করে তবে সে (হত্যাকারী ব্যক্তি) জান্নাতের গন্ধও পাবে না। অথচ জান্নাতের সুগন্ধ চল্লিশ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।
আনাস (রাঃ) বলেন যে, নবী (সাঃ) যখন তাদের ডাকতেন, এ কথা তিনি অবশ্যই বলতেনঃ যার কোন আমানাহ্ (বিশ্বস্ততা/আমানতদারী) নেই তার কোন ইমান নেই। যে অঙ্গীকার পূর্ণ করে না তার কোন দীন নেই।
শিক্ষাঃ শরিয়তের আদেশ হল অঙ্গীকার পূর্ণ করা। একবার অঙ্গীকার দেয়ার পর তা ভঙ্গ করা দীনের ক্ষেত্রে গ্রহণ যোগ্য নয়। “যে অঙ্গীকার পূর্ণ করে না তার কোন দীন নেই।” রাসুল (সাঃ) এর এই কথা দ্বারা এটা ধরে নেয়া যাবে না যে সে ব্যক্তি দীন ইসলাম ত্যাগ করেছে। কিন্তু সে অঙ্গীকার পূর্ণ না করার মাধ্যমে সে তার দীন পালনের ক্ষেত্রে ক্রুটি করেছে।
এই কথাটির দ্বারা রাসুল (সাঃ) এর এই কথাটির সাদৃশ্য রয়েছে, “ যার কোন আমানতদারীতা(বিশ্বাস) নেই তার কোন ইমান নেই।” রাসুল (সাঃ) এর এই কথার দ্বারা যে ব্যক্তি অঙ্গীকার ভঙ্গ করে সে ব্যক্তিকে তীব্রভাবে তিরস্কার করা হয়েছে।
অধ্যায়ঃ উত্তম শিষ্টাচার এবং সৎসঙ্গ
ইবনে উমার রাঃ বর্ণনা করেনঃ আমি রাসুল (সাঃ) এর সাথে ছিলাম, তখন আনসারদের মধ্যে একজন রাসুল (সাঃ) এর নিকট আসল এবং তাকে সালাম দিল এবং রাসুল (সাঃ) কে বলল, হে রাসুল (সাঃ) বিশ্বাসীদের মধ্যে কে সবচেয়ে উত্তম? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ তাদের মধ্যে যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম। আনসার সাহাবী আবার বললঃ তাদের মধ্যে কে সবচেয়ে জ্ঞানী? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ তাদের মধ্যে সবচেয়ে জ্ঞানী হল ঐ ব্যক্তি যে মৃত্যুকে বেশী বেশী স্মরণ করে এবং উত্তম ভাবে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয়।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ বিশ্বাসীদের মধ্যে তাদের ইমান সবচেয়ে নিখুঁত যাদের ব্যবহার উত্তম।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ পুনরুত্থান দিবসে মিজানের পাল্লায় বিশ্বাসীদের উত্তম আচরণের চেয়ে ভারী কিছুই হবে না। অবশ্যই আল্লাহ তাদের উপর সবচেয়ে রাগান্বিত থাকবেন যারা নির্লজ্জ ও অশ্লীল।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তায়ালার উত্তম বন্ধু হল তারাই যারা তাদের সাথীদের নিকট উত্তম এবং আল্লাহ্ তায়ালার নিকট উত্তম প্রতিবেশী হল সেই ব্যক্তি যে তার প্রতিবেশীর নিকটে উত্তম।
অধ্যায়ঃ কারো সাথে সাক্ষাতের সময় হাসি মুখে থাকা
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ কোন উত্তম কাজকে ছোট মনে কর না, এমনকি তোমার কোন (মুসলিম) ভাই এর সাথে মিলিত হওয়ার সময় হাসি মুখে থাকাকেও।
শিক্ষাঃ রাসুল (সাঃ) কে সবচেয়ে উত্তম চরিত্র দিয়ে পাঠানো হয়েছে এবং তার চরিত্র ছিল পবিত্র কোরআন শরিফ। আমাদের ইহসান করতে আদেশ করা হয়েছে, সকল প্রকার ভাল কাজের ব্যাপারে। যে মুমিনের উত্তম চরিত্র রয়েছে সেই মুমিনের ঈমান সবচেয়ে উত্তম। উত্তম চরিত্র কাজের মধ্যে এমন একটি কাজ যা মিজানের পাল্লায় ওজনে সবচেয়ে ভারী। এটা কিভাবে হতে পারে যে একজন ব্যক্তি, যে তার গৃহকে ত্যাগ করেছে, আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অনুসন্ধান এর জন্য এবং আখিরাতের জন্য, সে ব্যক্তি উত্তম ব্যবহারকে অবহেলা করবে। কিভাবে একজন ব্যক্তি দাওয়াহ, প্রচার ও মানুষের নিকট গ্রহণযোগ্য হওয়ার চেষ্টা করবে যখন তার চরিত্র ও কথা নিন্দনীয়ও। মানুষের হৃদয় এর একটি স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হল, যে ব্যক্তি তাদের সাথে দয়াশীল ব্যবহার করবে, মানুষের হৃদয় তার দিকে ধাবিত হবে।
অধ্যায়ঃ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি হল সে, যার হৃদয় পবিত্র এবং যে তার কথার ব্যাপারে সরল
রাসুল (সাঃ) কে বলা হলঃ কারা উত্তম ব্যক্তি ? রাসুল (সাঃ) উত্তরে বললেনঃ “প্রত্যেক ব্যক্তি যার হৃদয় পবিত্র এবং যার কথা সরল।” তারা বললঃ কথার সরলতা কী তা আমরা জানি, কিন্তু পবিত্র হৃদয় (এর অর্থ) কী ? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ এটা হল (হৃদয়), যেটা ধার্মিক ও পবিত্র, যার মধ্যে কোন গুনাহ, অন্যায়, অশুভ কামনা বা হিংসা নেই।
শিক্ষাঃ মুজাহিদ না কোন অন্যায় করবে, না তার মধ্যে থাকবে কোন হিংসা এবং অশুভ কামনা। রাসুল (সাঃ) কে বলা হয়েছিল সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি কারা এবং তিনি উত্তর দিয়েছিলেন মুজাহিদগণ যারা আল্লাহ্র পথে লড়াই করে।
অবশ্যই আমাদের শরীরে আমন একটি গোশতের টুকরা আছে- যদি তা ঠিক থাকে, তবে সারা দেহ ঠিক থাকে। যদি তার অবনতি হয় তাহলে সারা দেহ দূষিত হয়। অবশ্যই তা হল হৃদয়।
অধ্যায়ঃ ক্ষমা এবং নম্রতা
রাসুল (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য কাউকে ক্ষমা করে দিবে, নম্রতা প্রদর্শন করবে, আল্লাহ সুবহানা তায়ালা তার সম্মান বাড়িয়ে দিবেন।”
শিক্ষাঃ যে ব্যক্তি মর্যাদা ও মহানুভবতা লাভ করতে চায়, সে যেন আল্লাহ্ তায়ালার আদেশ অনুসরণ করে। নির্দিষ্ট কোন দলের অধীনে থেকে অথবা ক্ষমতা প্রদর্শন করে, নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে তা অর্জন করা যায় না। কেউ যদি মর্যাদা ও মহানুভবতা লাভ করতে চায়, সে যেন আল্লাহর আনুগত্য করে এবং তার রাসুলের(সাঃ) এর সুন্নাহ অনুসরণ করে তা অর্জন করে।
নিশ্চয়ই সকল সন্মান আল্লাহ্ তায়ালার জন্য।
অধ্যায়ঃ জ্ঞানী ও গুরুজনদের সম্মান করা
রসুল (সা:) বলেছেনঃ আল্লাহ্কে সম্মান করার একটি অংশ হল বয়স্ক মুসলিমকে সম্মান করা।
রাসুল (সা:) বলেছেনঃ জিবরাইল আমাকে নির্দেশ দিয়েছে আমি যেন বড়দের গুরুত্ব বিবেচনা করি।
রাসুল (সা:) বলেছেনঃ যারা বড়দের সম্মান করে না এবং ছোটোদের স্নেহ প্রদর্শন করে না এবং জ্ঞানীদের অধিকার বিবেচনা করে না, তারা আমার উম্মাহের অংশ নয়।
যায়েদ বিন তাবিত (রাঃ) কারো জানাযা পড়লেন, এরপর আমি তাকে বহনকারী খচ্চর নিয়ে এলাম। তারপর আমি (আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ) খচ্চরের লাগাম ধরে জায়েদ রাঃ নিকটে দিলাম। এজন্য যায়েদ বিন তাবিত (রাঃ) বলেনঃ হে রাসুল (সাঃ) এর চাচাতো ভাই! তোমার এটা করার দরকার নেই। তখন ইবনে আব্বাস রাঃ বললেনঃ জ্ঞানী এবং গুরুজনদের এভাবে সম্মান করতে আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে।
শিক্ষাঃ এটা গুরুত্বপূর্ণ যে মুজাহিদগণ তাদের উলামা (জ্ঞানীজন) ও গুরুজনদের সম্মানের ক্ষেত্রে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সুন্নাহর অনুসরণ করবে। মুজাহিদগণ তাদের গুরুজনদের পদমর্যাদা অনুযায়ী তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করবে। উলামাদের সাথে কথাবার্তা ও চলাফেরার ক্ষেত্রে সাহাবীদের অনুসরণ করবে।
অধ্যায়ঃ লোক দেখানো কাজ করা এবং স্বীকৃতি ও মর্যাদা কামনা করা নিষিদ্ধ
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মনে মনে এটা চায় যে মানুষ তার ভাল কাজ গুলো জানুক; এর মাধ্যমে সে মানুষের প্রশংসা অর্জন করতে চায়; বিচার দিবসের দিন আল্লাহ্ মানুষকে তার আসল উদ্দেশ্য জানিয়ে দিবেন। এবং যে ব্যক্তি জনসম্মুখে লোক দেখনো ও প্রশংসা অর্জনের জন্য কোন কাজ করবে, আল্লাহ্ তার আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিবেন এবং তাকে অপমানিত করবেন।
এবং রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ “আমি তোমাদের ব্যাপারে যা সবচেয়ে বেশী ভয় করি তা হলো- তোমরা ছোট শিরক করবে। ” জিজ্ঞেস করা হলো, “হে আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ), ছোট শিরক কোনটি ? তিনি উত্তর দিয়েছিলেনঃ “লোক দেখানো ভালো কাজ।”
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ যার অন্তরে সরিষা পরিমাণ অহংকার রয়েছে সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ আমি কি তোমাদের জান্নাতের মানুষ সম্পর্কে বলবো না ? তারা হল প্রত্যেক বিনয়ী ও দুর্বল প্রকৃতির ব্যক্তি। যে ব্যক্তি আল্লাহর নামে কোন শপথ করে, সে যেন তা পূর্ণ করে। আমি কি তোমাদের জাহান্নামবাসীদের সম্পর্কে বলবো না ? তারা হল প্রত্যেক নিষ্ঠুর, দাম্ভিক এবং অতিমাত্রায় আত্মগর্বিত ব্যক্তি।
শিক্ষাঃ মুজাহিদগণ কাজের ক্ষেত্রে রিয়া (লোক-দেখানো কাজ) থেকে সতর্ক থাকবে। বিশেষ করে মুজাহিদগণ, কারণ একজন মুজাহিদ এমন একটি পর্যায়ে রয়েছে, যে পর্যায়ে সবাই তার সম্পর্কে উচ্চধারণা পোষণ করে এবং তার প্রতি মনোযোগ রাখে। সে তার অন্তরে অহংকার প্রবেশের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবে। কারণ সে কোন মুজাহিদ দলের নেতা অথবা সে কোন নির্দিষ্ট দলের অধীনে রয়েছে। যেহেতু রিয়া ছোট শিরক উৎপন্ন করে। রিয়া যদি তার কাজে প্রবেশ করে তবে এটা তার কাজকে বিনষ্ট করবে এবং অহংকার তাকে জান্নাত হতে বঞ্চিত করবে। জাহান্নামঈদের বর্ণনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, অহংকারীরা জাহান্নামী এবং তাদের পুনরুত্থান দিবসে সরিষার দানার আকারে পুনরুত্থিত করা হবে।
অধ্যায়ঃ অত্যাচার করা নিষিদ্ধ
নবী (সাঃ) বলেছেনঃ অত্যাচারী ব্যক্তি পুনরুত্থান দিবসে কালো বর্ণ ধারণ করবে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি অন্যায় ভাবে দখল করলে তার গলায় সাত জমিন ঝুলিয়ে দেয়া হবে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি অন্যের এক টুকরো জমি যদি অন্যায় ভাবে দখল করে, কিয়ামতের দিন সে সাত জমিনের নিচে ডুবে যাবে।
নবী (সাঃ) তার প্রভু আয্যা ওয়া জাল থেকে বর্ণনা করেনঃ “হে আমার বান্দারা! আমি আমার জন্য অত্যাচারকে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের জন্য এটাকে হারাম করেছি। সুতরাং তোমরা একে অন্যের উপর অত্যাচার কোর না।
অধ্যায়ঃ অত্যাচারিত ব্যক্তির প্রার্থনাকে ভয় করা।
ইবনে আব্বাস রাঃ বর্ণনা করেনঃ নবী (সাঃ) ইয়ামেনে মু’আয রাঃ প্রেরণ করলেন এবং বললেনঃ “অত্যাচারিত ব্যক্তির প্রার্থনা থেকে সতর্ক হও। নিশ্চয় তার ও আল্লাহর মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকে না।“
শিক্ষাঃ প্রকৃতিগত ভাবেই অত্যাচার নিষিদ্ধ। শাহাদাত বরণকারী ব্যক্তিও এই ধরণের কাজের জন্য ক্ষমা পায় না। বিচার দিবসে এর জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে। অত্যাচারিত ব্যক্তি যখন প্রাথনা করে তখন তার ও আল্লাহ্র মাঝে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকে না। একজন বান্দার উচিৎ মানুষকে অত্যাচার করা হতে সতর্ক হওয়া।
অধ্যায়ঃ চলার পথের হক
সাহল রাঃ তার পিতা মুয়ায রাঃ হতে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেনঃ আমি রাসুল (সাঃ) এর সাথে অমুক অমুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি। মানুষ অনেক জায়গা দখল করে ফেলেছিল এবং তারা চলার পথও অনুমতি ছাড়া দখল করে নেয়। তখন রাসুল (সাঃ) একজন ঘোষণাকারীকে জনসাধারণের নিকট ঘোষণা করতে পাঠালেন যে, “যারা অধিক জায়গা দখল করে বা বলপূর্বক রাস্তা দখল করে, তাদেরকে জিহাদের স্বীকৃতি দেয়া হবে না। ”
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ যারা অধিক জায়গা দখল করে বা বলপূর্বক রাস্তা দখল করে অথবা বিশ্বাসীদের ক্ষতি করে তাদেরকে জিহাদের স্বীকৃতি দেয়া হবে না।
রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা রাস্তায় বসা থেকে বিরত থাকো। তারা (সাহাবাগণ) বললেনঃ হে রাসূলাল্লাহ্ (সাঃ) আমরা নিরুপায় কারণ আমাদের (এই রাস্তায়) সভা করতে হয় এবং বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে হয়। তারপর রাসুল (সাঃ) বললেনঃ যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক ঠিক ভাবে আদায় কর। সাহাবাগণ বললেনঃ রাস্তার হকগুলো কী ? রাসূল (সাঃ) বললেনঃ দৃষ্টি নিচু রাখা, মানুষের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা, সালামের উত্তর দেয়া, ভাল কাজের আদেশ দেয়া এবং মন্দ কাজে নিষেধ করা।
অধ্যায়ঃ রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা
আবু বারজা রাঃ বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহ্র নবী (সাঃ) আমাকে এমন কিছু শিক্ষা দিন, যেন আমি তার মাধ্যমে উত্তম প্রতিদান লাভ করতে পারি। তিনি বললেনঃ মুসলমানদের পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেল।
শিক্ষাঃ মুমিনের ক্ষতি করা, বলপূর্বক রাস্তা দখল করা অথবা অধিক জায়গা দখল করার মাধ্যমে মুজাহিদ তার জিহাদের ক্ষতি করা থেকে সতর্ক থাকবে। রাস্তার অধিকার গুলোর মধ্যে রয়েছেঃ দৃষ্টি নম্র রাখা, মানুষের ক্ষতি থেকে বিরত থাকা, সালামের উত্তর দেয়া, ভাল কাজের আদেশ দেয়া এবং মন্দ কাজে নিষেধ করা। যে কাজের মাধ্যমে উত্তম প্রতিদান লাভ করা যায় তা হলঃ মুসলমানদের পথ হতে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেল এবং এটা হল ঈমানের একটি অংশ।
অধ্যায়ঃ মুসলিমদের সন্মান, সম্পদ এবং রক্তের পবিত্রতা ।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ এটা কি দিবস। আমরা বললামঃ আল্লাহ্ এবং তার রাসুল (সাঃ) ভাল জানেন। আমরা চুপ থাকলাম এবং আমরা ভাবতে লাগলাম তিনি হয়ত এই দিবসের অন্য কোন নাম দিবেন। তিনি বললেনঃ এটা টি আন- নাহর(ত্যাগ) দিবস নয়। আমরা হাঁ সূচক জবাব দিলাম। তারপর তিনি বললেনঃ তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের সন্মান কেউ লঙ্ঘন করবে না। যেমন করে এই দিবসটি অলঙ্ঘনীয়। এই শহরটি তোমাদের এবং এই মাসটি তোমাদের। সতর্ক হও। যে ব্যক্তি এখানে উপস্থিত আছে সে যেন আমার এই কথাটি , যে এখানে উপস্থিত নেই তার নিকটে পৌঁছে দেয়। আমনটা হতে পারে জারকাছে আমার এর বার্তাটি পৌঁছানো হবে তার সৃতিশক্তি , এখানে উপস্থিত হয়ে যে আমার কথা শুনছে তার চেয়ে বেশী হবে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ একজন ঈমানদের/মুমিন ব্যক্তি সর্বদা তার ইমানকে পাহারা দেয় এবং আল্লাহ্র দয়ার আশা রাখে। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে অন্যায় ভাবে রক্ত ঝরায়।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ একজন মুসলিমের যা রয়েছে, তা আরেকজন মুসলিম বিনষ্ট করবে না ; তার সন্মান, তার রক্ত এবং সম্পত্তি।
রাসুল (সাঃ) বলেন ,” একজন মুসলিমের অন্যায় হত্যা সারা বিশ্ব ধ্বংসের চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক গুরুত্ত রাখে।“
অধ্যায়ঃ মুজাহিদ এবং মুসলমানদের সন্মানের পবিত্রতা রক্ষা করা
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ একজন মুসলিমের যা রয়েছে, তা আরেকজন মুসলিম বিনষ্ট করবে না ; তার সন্মান, তার রক্ত এবং সম্পত্তি।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ ”যদি কেউ কোন মুসলিমের নামে মিথ্যা অপবাদ দেয়, তাহলে আল্লাহ্ তাকে জাহান্নামের দূষিত পানিতে থাকতে বাধ্য করবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তা ফিরিয়ে নিতে পারবে।”
রাসুল (সাঃ) এর স্বপ্ন থেকে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (সাঃ) বলেন,“ আমি কিছু লোকের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম যাদের হাতে ছিল তামার নখ এবং তারা সেই নখ দিয়ে তাদের মুখ ও বুক আচরাছিল। আমি বললামঃ হে জিবরাইল, এই মানুষ গুলো কারা। তিনি(জিবরাইল আঃ) বললেনঃ এরা হল তারা যারা অন্যের গোশত খেত( গীবত করত) এবং মানুষের সন্মান নষ্ট করত।”
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ “একজন মুজাহিদের বাসায় রেখে যাওয়া স্ত্রীদের ইজ্জত অপরদের(যারা জিহাদে অংশ গ্রহন করে নি) কাছে তার নিজের মায়ের মত। ”
কিছু আলেম বলেন এই যদি হয় স্ত্রিদের ইজ্জত তাহলে এক মুজাহিদের কাছে অন্য মুজাহিদের ইজ্জত কত বেশি?
শিক্ষাঃ একজন মুসলিমের রক্তের পবিত্রতা সম্পর্কে কঠিন হুশিয়ারি এসেছে; মুজাহেদের রক্ত তো আরো দামি। অস্ত্রবহনকারীকে এই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে যাতে কেউ তার অন্যায় শিকার না হয়। এবং জেনে রাখুন, যারা নুসারিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছে তারা মুজাহিদদেরই অন্তর্গত। যেখানে মুজাহিদ্দের মহিলাদের (স্ত্রীদের) সম্মান রক্ষার ব্যাপারে কঠিন সতর্কবাণী এসেছে, সেখানে মুজাহিদ্দের সম্মান কত বড় ব্যাপার। যে ব্যক্তি মুসলিমদের ব্যাপারে অসঙ্গত কথা বলে তাকে জাহান্নামে আবদ্ধ করা হবে যেখান থেকে বের হওয়ার কোন রাস্তা সে খুজে পাবেনা। একজন মুসলিমের সম্পদ ( হোক সে একই দলের অথবা ভিন্ন কোন ছোট দলের) অপর মুসলিমের নিকট আমানত।
অধ্যায়ঃ আল্লাহ্ তায়ালার কথা সবোচ্চ পর্যায়ে নেয়ার জন্য জিহাদ করা।
আবু মুসা আল আস’রি রাঃ বর্ণনা করেনঃ এক বেদুইন নবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করলেনঃ একজন ব্যক্তি গনিমত এর জন্য যুদ্ধ করতে পারে। একজন ব্যক্তি এজন্য যুদ্ধ করে যাতে করে মানুষ তাকে মনে রাখে, এবং তৃতীয় ব্যক্তি তার স্থান(মর্যাদা/বীরত্ব) দেখানোর জন্য যুদ্ধ করে। এদের মধ্যে কোন ব্যক্তির লড়াইকে আল্লাহ্র পথে বলা হবে। রাসুল (সাঃ) তখন বলেনঃ কোন ব্যক্তি লড়াই করে এজন্য যে আল্লাহ্ তায়ালার কথা (ইসলাম) সবোচ্চ পর্যায়ে থাকবে তার লড়াইকে আল্লাহ্র পথে/কারণে বলা হবে।
আবু মুসা রাঃ বর্ণনা করেনঃ এক ব্যক্তি নবী (সাঃ) আড় নিকটে আসল এবং জিজ্ঞাসা করলঃ এক ব্যক্তি লড়াই করে সন্মান ও আত্মমর্যাদার জন্য, আরেক ব্যক্তি লড়াই করে বীরত্বের জন্য, আরেকজন লড়াই করে লোক দেখানোর জন্য। এর মধ্যে কোনটি আল্লাহ্র পথে/কারণে ? রাসুল (সাঃ) উত্তর দিলেনঃ একজন লড়াই করে এজন্য যে আল্লাহ্ তায়ালার কথা (ইসলাম) সবোচ্চ পর্যায়ে থাকবে তার লড়াইকে আল্লাহ্র পথে/কারণে বলা হবে।
শিক্ষাঃ আল্লাহ্র পথে লড়াই এজন্য কর হয় যে, আল্লাহ্র কথা সবোচ্চ পর্যায়ে থাকবে। কোন ব্যক্তি বা দলের কথা উন্নত করার জন্য নয়।
জিহাদ যদি করা হয় সন্মান ও আত্মমর্যাদার জন্য অথবা কোন দলের প্রতি আনুগত্যের জন্য অথবা লোক দেখানোর জন্য, এটাকে আল্লাহ্র পথে লড়াই করা বলে গণ্য করা হবে না। আমাদের দায়িত্ব হল শরীয়াহ সঠিক ভাবে বুঝার মাধ্যমে আল্লাহ্র পথে অগ্রসর হওয়া, যা জিহাদে মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করবে না। যা আমাদের ইসলামের মূল ধারার দিকে ধবিত করবে। যা আমাদের জাতিতে / বিভক্তির দিক হতে বিরত রাখবে।
অধ্যায়ঃ আল্লাহ্র পথে রিবাতের গুরুত্ব
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ্র পথে একদিন রিবাতে ( আল্লাহ্র জন্য/উদ্দেশ্যে ইসলামিক সীমান্ত প্রহরা) থাকা দুনিয়া এবং দুনিয়াতে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ্র পথে একদিন রিবাতে ( আল্লাহ্র জন্য/উদ্দেশ্যে ইসলামিক সীমান্ত প্রহরা)) থাকা, এক মাস সাওম রাখা এবং সারা রাত সালাতে দাড়িয়ে থাকার চেয়ে অনেক গুণ উত্তম। রিবাতে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় কোন ব্যক্তি মারা যায়, তবে তার এই প্রশংসনীয় কাজের জন্য, সে অবিরত ভাবে পুরস্কার পেতে থাকবে এবং সে ফাতান(fataan=কবরের আজাব) হতে নিরাপদ থাকবে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ মুরাবিত (যে ব্যক্তি আল্লাহ্র জন্য/উদ্দেশ্যে ইসলামিক সীমান্ত প্রহরা দেয়) ব্যতিত প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির কর্ম সে মারা যাওয়ার সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যায়। মুরাবিত ব্যক্তির কর্মফল পুনরুথান দিবস পর্যন্ত বাড়তে থাকবে এবং কবরের ফিতনা থেকে সে নিরাপদ থাকবে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ্র পথে একমাস রিবাতে ( আল্লাহ্র জন্য/উদ্দেশ্যে ইসলামিক সীমান্ত প্রহরা) থাকা, সারাজীবন সাওম রাখার চেয়ে উত্তম। রিবাতে নিয়োজিত থাকা অবস্থায় কোন ব্যক্তি মারা গেলে, তাকে আল্লাহ্ তায়ালা ভয়াবহ ভীতি হতে রক্ষা করবেন। সকাল-বিকাল সে জান্নাত হতে রিজিক প্রাপ্ত হবে। পুনরুথান দিবসের আগ পর্যন্ত মুরাবিত তার পুরস্কার পেতেই থাকবে।
অধ্যায়ঃ আল্লাহ্র পথে পাহারা দেয়ার গুরুত্ব
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে একরাত পাহারার জন্য দাড়িয়ে থাকা। যে ব্যক্তি দিনে সাওম পালন করল এবং রাতের সালাত আদায় করলো – এমন করে একহাজার দিন। এর চেয়ে উত্তম।
শিক্ষাঃ মুজাহিদের জন্য বাধ্যতামূলক/আবশ্যক যে সে রিবাতের গুরুত্ব থেকে অমনোযোগী হবে না। সে রিবাতে অংশগ্রহণ করবে, যেমন করে সে অংশগ্রহণ করে লড়াই ও আক্রমণে। রিবাতের যে মহান গুরুত্ব এবং সুউচ্চ মর্যাদা রয়েছে তা কোন ব্যক্তি অন্য কোন উপায়ে অর্জন করতে পারবে না।
অধ্যায়ঃ শত্রুর ব্যূহ ভেদ করে শত্রুর ভিতরে প্রবেশ করার গুরুত্ব
নবী (সাঃ) বলেছেনঃ আমাদের প্রভু দুইজন ব্যক্তিকে দেখে আশ্চর্য বোধ হন। একজন ব্যক্তি তার জাতি এবং পরিবারের অভ্যন্তর হতে তার বিশ্রাম স্থল ছেড়ে সালাতের জন্য দাঁড়ায়। তখন আল্লাহ্ আজ ওয়া জাল তার ফেরেশতাদের বলেনঃ আমার বান্দাকে দেখ। সে তার জাতি ও পরিবারের অভ্যন্তর হতে তার শয্যা ও বিশ্রাম স্থল ছেড়ে সালাত আদায় করছে। সে আমার কাছে রহমতের/পুরস্কার এর আশা করছে এবং আমার শাস্তির ভয় করছে। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ্র পথে লড়াই করতে থাকে, পরে তার সাথীরা পলায়ন করতে থাকে। কিন্তু সে জানে যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন করা গুনাহের কাজ। সুতরাং সে ময়দানে ফিরে আসে এবং তার রক্ত প্রবাহিত হয়। তখন আল্লাহ্ আজ ওয়া জাল তার ফেরেশতাদের বলেনঃ আমার বান্দাকে দেখ। আমিটার জন্য যে পুরস্কার রেখেছি তার জন্য সে ফিরে এসেছে এবং আমার শাস্তির ভয় করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত না তার রক্ত ঝরে পড়ে।
রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলঃ কোন কাজটি সর্বোত্তম? তিনি উত্তর দিলেনঃ সালাতে দীর্ঘক্ষণ দাড়িয়ে থাকা। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ কোন সাদকা উত্তম? তিনি উত্তর দিলেনঃ যে ব্যক্তি তার শ্রমের মাধ্যমে কিছু সম্পদ অর্জন করেছে এবং তার মাধ্যমে সে সাদকা করেছে। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ কোন হিজরত/হিজরা উত্তম? তিনি উত্তর দিলেনঃ আল্লাহ্ যা করতে নিষেধ করেছে তা পরিহার করা। তিনি আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ কোন জিহাদ উত্তম? তিনি উত্তর দিলেনঃ যে ব্যক্তি জান ও মাল দিয়ে লড়াই করে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেনঃ কোন মৃত্যু সর্বোত্তম? সে উত্তর দিলঃ যে ব্যক্তি রক্ত প্রবাহিত করতে থাকে যখন তার ঘোড়ার পা তলোয়ার দিয়ে দ্বিখণ্ডিত করা হয়।
আউফ বিন হারিথ হতে বর্ণিত হাদিসে, রাসুল (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলঃ কি কারণে আল্লাহ্ তার বান্দাদের দেখে হাসেন। তিনি বললেনঃ একজন ব্যক্তি যখন বর্ম ছাড়া আল্লাহ্র পথে জিহাদের ময়দানে অবতীর্ণ হন।
শিক্ষাঃ শত্রুর প্রতিরোধ ভেদ করে ভিতরে ঢুকে পরার সুউচ্চ মর্যাদা ও সন্মান রয়েছে। আমরা দৃঢ়বিশ্বাস ও আশা করি—আল্লাহ্ আজ ওয়া জাল ঐ ব্যক্তির এই কাজের জন্য সন্মানিত মর্যাদা দিবেন।যে ব্যক্তি ধৈয ও কাজের মাধ্যমে শত্রুর ভিতরে ঢুকে পরে তাকে সকল মুজাহিদ হতে আলাদা ভাবে/চোখে দেখা হয়। কতই না উত্তম কাজ এই বান্দা সম্পাদন করেছে এবং আল্লাহ্ তাকে দেখে আনন্দিত হন।
অধ্যায়ঃ শত্রুর সঙ্গে মিলিত হওয়ার সময় ধৈয ধারণের গুরুত্ব
আবি দারদা রাঃ বর্ণনা করেন যে নবী (সাঃ) বলেছেনঃ তিন ব্যক্তি রয়েছে যাদের আল্লাহ্ ভালোবাসেন, দেখে আনন্দিত হন, এবং তাদের শুভ সংবাদ দেন।
যে ব্যক্তি কোন দলের সাথে যুদ্ধের ময়দানে আল্লাহ্র জন্য যুদ্ধ করে। হয় সে নিহত হবেন অথবা আল্লাহ্ তাকে বিজয় অ পরিতৃপ্তি দান করবেন। তখন আল্লাহ্ বলেনঃ আমার এই বান্দাকে দেখ; সে কিভাবে আমার উদ্দেশ্যে ধৈয ধারণ করেছে।
যে ব্যক্তির রয়েছে সুন্দর স্ত্রী ও আরামদায়ক বিছানা কিন্তু সে তা ত্যাগ করে রাতের সালাতের জন্য দণ্ডায়মান হয়। তখন আল্লাহ্ বলেনঃ আমার এই বান্দা আমার স্মরণে তার কামনা/আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করেছে। সে যদি চাইত তাহলে সে তো ঘুমাতে পারতো।
যে ব্যক্তি তার সাথীদের সাথে ভ্রমণে বের হয়। তারা সবাই ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে যায়। তারপর সে ব্যক্তি শেষ রাতে সালাত আদায় করার জন্য জাগ্রত হয়। হতে পারে সেই সময়টা তার জন্য সহজ বা কঠিন( সে সর্বঅবস্থায় আল্লাহ্কে স্মরণ করে )।
শিক্ষাঃ যারা আল্লাহ্র পথে শত্রুর সাথে মিলিত হওয়ার সময় ধৈয ধারণ করে। তারা আল্লাহ্র ভালবাসা ও আনন্দ লাভ করে। তাদের কাজের জন্য আল্লাহ্ তার ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করে। হয় তারা বিজয় অথবা শহীদ হবে।
অধ্যায়ঃ লড়াই এর গুরুত্ব
আবু মুসা আল আশারি (রাঃ) বর্ণিতঃ রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ নিশ্চয় জান্নাতের দরজা হল তরবারির ছায়াতলে।
মানুষের মধ্যে জীর্ণশীর্ণ অবস্থার এক ব্যক্তি বললঃ হে আবু মুসা ! আপনি যেটা রাসুল (সাঃ) হতে বর্ণনা করলেন, আপনি কি তা নিজ কানে শুনেছেন। আবু মুসা রাঃ বললেনঃ হাঁ। তখন সে ব্যক্তি তার দলনেতার কাছে গেল এবং তাকে সালাম দিয়ে বিদায় জানালো। সে ব্যক্তি তার তরবারীটি কোষ মুক্ত করল এবং লড়াই শুরু করল, যতক্ষণ পর্যন্ত না, সে নিহত হয়।
এবং আরেকটি হাদিসে রয়েছে, সে ব্যক্তি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলোঃ কোন জিহাদ উত্তম। তিনি উত্তর দিলেনঃ যে ব্যক্তি মুশরিকদের বিরুদ্ধে জান ও মাল দিয়ে লড়াই করে।
শিক্ষাঃ এই যুগ ও সময়ে তলোয়ারের জায়গা দখল করেছে বিভিন্ন রকম অস্ত্র। যা দিয়ে মুজাহিদগণ তাদের শত্রুর সাথে যুদ্ধ করে। যখন জিহাদ ফরজ হয়ে যায় তখন নিজের জান ও প্রাণের বিকল্প/পরিপূরক কিছুই হতে পারে না।
অধ্যায়ঃ আল্লাহ্র পথে লক্ষ্যভেদ/নিশানাভেদ করার গুরুত্ব
সালমাহ বিন আকওয়া রাঃ বর্ণনা করেনঃ আসলাম গোত্রের লোকেরা যখন তীর নিক্ষেপ অনুশীলন করছিল তখন রাসুল (সাঃ) তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তখন রাসুল (সাঃ) বললেনঃ হে ইসমাইলের সন্তান/বংশধরেরা ! নিক্ষেপ করো ! তোমাদের পিতা একজন মহান নিক্ষেপকারী ছিলেন। আমি তার সন্তানদের পক্ষে। রাসুল (সাঃ) এর এই কথা শোনার পর অনুশীলনকারী দুই দলের মধ্যে একদল তীর নিক্ষেপ করা বন্ধ করে দিলও। রাসুল (সাঃ) বললেনঃ তোমরা কেন নিক্ষেপ করছো না। তখন তারা বললঃ হে আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ)! আমরা কিভাবে নিক্ষেপ করব যখন আপনি বিপক্ষ দলের পক্ষে রয়েছেন। রাসুল (সাঃ) বললেনঃ নিক্ষেপ করো। আমি তোমাদের সবার সাথে।
উকরাহ বিন আমির রাঃ বলেনঃ আমি শুলাম রাসুল (সাঃ) একটি উঁচু জায়গা/মঞ্চ থেকে( pulpit) তেলাওয়াত করছে (وَأَعِدُّوا۟ لَهُم مَّا ٱسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍۢ ) (আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে) (৮:৬০)
জেনে রাখো, শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপ করা। জেনে রাখো, শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপ করা। জেনে রাখো, শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপ করা।
আবু নাজিহ আস-সুলামি রাঃ বলেন আমরা রাসুল (সাঃ) এর সাথে তায়েফের দুর্গ/প্রাসাদ অবরোধ করে ছিলাম। আমি শুনলাম রাসুল (সাঃ) বলছিলেনঃ কেউ যদি আল্লাহ্র পথে একটি তীর নিক্ষেপ করে এবং তা যদি লক্ষ্য ভেদ করে। প্রত্যেকটি তিরের বিনিময় জান্নাতে এক স্তর উন্নতি হবে। সেই দিন আমি ১৬টি তীর নিক্ষেপ করি এবং তা লক্ষ্যভেদ করি।
তিনি বলেনঃ আমি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ কোন ব্যক্তি আল্লাহ্র পথে একটি তীর নিক্ষেপ করলে; এর জন্য সে একটি দাস মুক্তির সমান সওয়াব পাবে।
শিক্ষাঃ রাসুল (সাঃ) আমাদের নিক্ষেপের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন এবং নিক্ষেপের পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন এবং বলেছেন অবশ্যই এটা হল সামর্থ্য। এটা বর্তমান যুদ্ধে দৃশমান। শক্তিমত্তা অর্জনে মিসাইলের বড় রকমের গুরুত্ব রয়েছে। এটা কারো অজানা নয় যে, যোদ্ধারা কিভাবে হাওইন(মর্টার) এর মাধ্যমে শত্রুর অভ্যন্তরে ক্ষতি সাধন করে। একই রকম সামর্থ্য রয়েছে স্নাইপিং(sniping ) এবং যুদ্ধ ক্ষেত্রে স্নাইপার(snipers) এর ভূমিকায়। আমরা রাসুল (সাঃ) এর আদেশ থেকে শিক্ষা নিতে পারি এবং তিনি নির্দেশ দিয়েছেনঃ জেনে রাখো, শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপ করা। জেনে রাখো, শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপ করা। জেনে রাখো, শক্তি হচ্ছে নিক্ষেপ করা। একই ভাবে নিক্ষেপ করা শিখে নেয়ার পর তা ছেড়ে দেয়ার কুফল সম্পর্কে যে হুশিয়ারি এসেছে, তার ব্যাপারেও আমাদের সতর্ক থাকা উচিত।
অধ্যায়ঃ আল্লাহ্র পথে শহীদ হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ ছয়টি বস্তু আল্লাহ্ তায়ালা শহীদের জন্য সংরক্ষিত রেখেছেনঃ- * শহীদের রক্তের প্রথম বিন্দু পরার সাথে সাথে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে, * জান্নাতে তার স্থান দেখানো হবে, * কবরের ফিতনা/পরীক্ষা থেকে তাকে নিরাপদ রাখা হবে, * মর্যাদার একটি মুকুট তার মাথায় পরানো হবে এবং এই মুকুটের একটি রত্ন পৃথিবী এবং এতে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম, * জান্নাতে তাকে ৭২ জন হুরের সাথে বিবাহ দেয়া হবে, * এবং সে তার নিকটজনের মধ্য হতে ৭০ জনের জন্য সুপারিশ করতে পারবে।
রসিদ ইবনে সাদ বর্ণনা করেনঃ সাহাবা রাঃ এর মধ্যে একজন রাসুল (সাঃ) কে বললেনঃ হে রাসুল (সাঃ) ! কেন শহীদ ব্যতিত সকল বিশ্বাসীদেরকে কবরের পরীক্ষা দিতে হবে? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ “তার মাথার উপর তলোয়ার এর ঝিলিক তার পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট হবে।”
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ শহীদের আত্মা সবুজ পাখির ভিতরে ঢুকিয়ে জান্নাতের বাতির ন্যায় ঝুলিয়ে রাখা হবে। পুনরুথান দিবস পর্যন্ত আল্লাহ্ তায়ালা তাদেরকে এই রকম অবস্থায় রাখবেন।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ শহীদের আত্মা সবুজ পাখির অন্তরে ঢুকিয়ে জান্নাতের গাছে ফলের ন্যায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ শহীদের আত্মা সবুজ পাখির ভিতরে বাস করে। এবং এই সবুজ পাখি আল্লাহ্র আরশে বাতির ন্যায় ঝুলন্ত থাকে। তারা জান্নাতের ফলমূল তাদের ইচছামত ভোগ করে। এবং তারপর তারা বাতির ভিতরে বাস করে।
শিক্ষাঃ একজন শহীদ আল্লাহ্ আজ ওয়া জাল কতৃক তার সত্যবাদী বান্দা হিসেবে বাছাইকৃত। তারা তাদের প্রভুর কাছে জীবিত ও রিজিকপ্রাপ্ত। আল্লাহ্ তাদের যা অর্পণ করেছে তার জন্য তারা আনন্দিতও। পরম দয়াময়ের আরশে তারা ঝুলন্তও। তারা জান্নাতে ঘুরে বেরায়, জান্নাতের ফল খায় এবং নদী থেকে পান করে। আল্লাহ্ আজ ওয়া জাল শহীদের এমন ৬টি পুরস্কার দিবেন যা অন্য কাউকে দিবেন না।
অধ্যায়ঃযুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করা নিষিদ্ধ
সহিয়ানে (বুখারি ও মুসলিম) রয়েছেঃ রাসুল (সাঃ) হতে বর্ণিত তিনি কবিরা গুনাহর তালিকা দিয়েছেন এবং উল্লেখ করেছেনঃ যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন...............।
শিক্ষাঃ শত্রুর ভয়ে পালিয়ে যাওয়া বড় ধরনের নিষিদ্ধ কাজ। ইবনে হাজম মতামত দেন শত্রুর ভয়ে পালিয়ে যাওয়া হারাম যদিও কোন ব্যক্তি একা থাকে। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে কোন দলকে সরিয়ে ফেলা অনুমতিযোগ্য এবং শত্রুর ভয়ে ও প্রতারণা করে পালিয়ে যাওয়া হারাম।
অধ্যায়ঃ আল্লাহ্র পথে গাজওয়া (লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়া)
আল্লাহর নামে যুদ্ধে (গাযওয়া) অংশ গ্রহন
সুলায়মান বিন বুরায়দাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল (সাঃ) যখন কাউকে সেনাবাহিনীর প্রধান অথবা দূরে কোথাও পাঠাতেন তখন তাদের কে বিশেষ করে আল্লাহকে ভয় করতে এবং সাথের মুস্লিমদের সাথে ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ দিতেন। তিনি আরও বলতেন, “আল্লাহর নামে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর। যারা আল্লাহকে অস্বীকার করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। লড়াই কর কিন্তু কারো সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করবেনা, গনিমতের থেকে চুরি করবেনা, মৃতদের অঙ্গহানি করবেনা, শিশুদের হত্যা করবেনা। মুশরিকদের সাথে লড়াইয়ের সময় তাদের কে তিনটি প্রস্তাব পাঠাবে। তারা যদি যেকোনো একটি গ্রহণ করে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবেনা। প্রথমে তাদেরকে ইস্লামের দাওয়াত দিবে যদি তারা এই প্রস্তাব গ্রহণ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আর লড়বেনা। এটি না করলে তাদেরকে এই ভূমি ছেড়ে মুশরিকদের এলাকায় চলে জেতে বলবে। তাদের কে বলবে যদি তারা এটি করে তাহলে তারা মুজাহিরিনদের সমান অধিকার ভগ করবে। যদি তারা মুশরিকদের এলাকায় জেতে না চায় তাহলে তাদেরকে বেদুইনদের মত জীবন যাপন করতে হবে এবং তারা আল্লাহর হুকুমে অন্যান্য মুস্লিদের ন্যায় সুবিধা পাবে কিন্ত কোন গনিমতের মালে তাদের ভাগ থাকবে না, যদি না তারা অন্যান্য মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুস্লিমদের পক্ষে লড়াই করে। যদি তারা এই প্রস্তাব গ্রহন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আর লড়বেনা। ইস্লামের দাওাত অস্বীকার করলে তাদের জিজিয়া কর দিতে বলবে। যদি তারা এই প্রস্তাব গ্রহন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আর লড়বেনা। কিন্তু যদি তাও না করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে যুদ্ধে জাপিয়ে পর। তুমি যদি তাদের কে অবরধ কর এবং তারা যদি তমাদের কাছে আল্লাহ ও তার রাসুলের নামে নিরাপত্তা চায়, তার পরিবর্তে তাদের কে তোমার, বংশীয় এবং তোমার সাথিদের মাধ্যমে নিরাপত্তা দিবে। কারণ এটি আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) ের দেয়া নিরাপত্তার চেয়ে সহজে লংঘন করা যায়। পর। তুমি যদি তাদের কে অবরধ কর এবং তারা যদি তমাদের কাছে আল্লাহ ও তার রাসুলের নীতি অনুযায়ী সুবিচার চায় তাহলে তাদেরকে তোমার পক্ষ থেকে বিছার করে দিবে , আল্লাহ ও তার রাসুলের নিতির ওয়াদা তাদের দিবে না। কারণ তুমি জানোনা তাদের ব্যাপারে তুমি আল্লাহ কে রাজি করাতে পারবে কিনা?
গাযওয়া (যুদ্ধ) দুই প্রকার
মু’আয বিন জাবাল (রাঃ) বলেন রাসুল সাঃ বলেছেন “যুদ্ধ দুই প্রকার : যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি চাইবে, আমিরের কথা শুনবে, সাথিদের সাথে সদয় আচরণ করবে, সদকা করবে এবং দুষ্কর্ম থেকে বিরত থাকবে – এরা ঘুমন্ত অথবা জাগ্রত উভয় অবস্থাতে সওয়াব লাভ করে। কিন্তু যারা দম্ভ সহকারে যুদ্ধ করে, লোক দেখানো সম্মানের জন্য , যারা আমিরের নির্দেশ অমান্য করে এবং জমিনে অন্যায় করে তারা কোন পুরুস্কার পাবেনা। ”
অধ্যায়ঃ যুদ্ধ ক্ষেত্রে খাদ্য ভাগাভাগি করে খাওয়া
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ পবিত্র যুদ্ধের সময় যখন আসারি গোত্রের মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দিল অথবা মদিনায় তাদের পরিবারের খাদ্য সংকট দেখা দিলো। তখন তারা তাদের অবশিষ্ট সকল খাদ্য একটি শীটে/কাপড়ের উপরে নিলো এবং একটি পাত্র দ্বারা তারা সেই খাদ্যকে সকলের মধ্যে সমান বণ্টন করে দিল। তারা আমার এবং আমি তাদের।
শিক্ষাঃ এই হাদিসে বেস কয়েকটি নিয়ম, মাসায়েল এবং ফজিলত বরনিত হয়েছে। তাদের মধ্যে অল্প কিছু হলঃ
১) আল্লাহ তায়ালার ভয় (তাকওয়া) এবং মুজাহিদিন্দের সাথে উত্তম আচরণ নেতাদের উপর অবশ্যপালনীয় দায়িত্ব।
২) জুদ্ধের পূর্বে নেতাদের উচিত তার বাহিনিকে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া।
৩) জুদ্ধের পূর্বে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া এবং সুধু মাত্র আল্লাহর জন্যই কাজ করা।
৪) জুদ্ধে লব্ধ গনিমতের মাল থেকে চুরি নিসিদ্ধ করা।
৫) বিশ্বাসঘাতকতা নিসিদ্ধ করা; শত্রুকে দেওয়া নিরাপত্তা, চুক্তি , প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা।
৬) আমাদের মৃতদেহ বিক্রিত না করলে তাদের মৃতদেহও বিক্রিত করা যাবেনা।
৭) শিশুদের হত্যা নিষিদ্ধ।
8) যুদ্ধ সুরু করার পূর্বে কাফিরদের কে ইসলাম, অথবা জিজিয়া অথবা জিহাদ এই তিনটির দিকে আহব্বান জানাতে হবে।
৯) তারা যদি তমাদের কাছে আল্লাহ ও তার রাসুলের নিরাপত্তা চায়, তার পরিবর্তে তাদের কে তোমার, বংশীয় এবং তোমার সাথিদের মাধ্যমে নিরাপত্তা দিবে। প্রমানিত ইসলামিক বিচারের পরিবর্তে নিজের ইজতিহাদের উপর নির্ভর করে বিচার করবেনা।
১০) যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ঘর ছাড়বে, আমিরের সঠিক নির্দেশ গুলো মানবে, জাকাত দিবে, সাথীদের প্রতি নম্র হবে এবং ফাসাদ থেকে বিরত থাকবে সে জেগে অথবা ঘুমিয়ে থাকলেও পুরস্কার তার জন্য।
১১) যে ব্যক্তি জিহাদের জন্য জন্য বের হল কিন্তু কোন পুরস্কার ছাড়া ফিরে আসল আসলে সে একজন গোনাহগার কেননা এই ব্যক্তি হল সেই ব্যক্তি যে নফসের খায়েশ এর জন্য, লোক দেখানো, সম্মান অর্জনের জন্য, আমিরের নির্দেশ অমান্যকারি এবং জমিনে ফ্যাসাদকারি।
১২) উত্তম সাহচর্য, কুরবানী, দান ও ঐক্য- হোক সেটা খাবারের ক্ষেত্রে- শারিয়াহ্র দৃষ্টিতে প্রশংসনীয়। রাসূল (সা) এর এই কথা থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়- “আমি তাদের ও তারা আমার”।
অধ্যায়ঃ শোনা এবং মানা
যার নেতৃত্বে আমরা সন্তুষ্ট তার অনুগত থাকাঃ
আবু হুরায়রা রাঃ হতে বর্ণিতঃ রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করল সে আল্লাহ্র আনুগত্য করলো। আর যে ব্যক্তি আমার অবাধ্যতা করল সে আল্লাহ্রই অবাধ্যতা করলো। যে ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য করল সে আমারই আনুগত্য করলো, আর যে ব্যক্তি আমীরের অবাধ্যতা করল সে আমারই অবাধ্যতা করল।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ শুনো এবং অনুগত থাকো। একজন আবাসিনিয়ার দাস যার মাথা কিসমিসের মত তাকে তোমাদের উপর নেতৃত্ব দেয়া হলেও।
যে কথা আল্লাহ্র আনুগত্যের বাহিরে যায়না, তা শুনো এবং মান্য করো।
আলী (রাঃ) বলেন “রাসুল (সাঃ) একবার একটি অভিযান পাঠান যার নেতৃতে ছিলেন আনসারদের একজন। তাকে নিয়োগ দেয়ার সময় রাসুল(সাঃ) সবাইকে বলে দেন যেন তার কথা মান্য করা হয়। কিন্তু তারা কোন একটি ব্যাপারে তার নির্দেশ অমান্য করল। তিনি বললেন “আমার জন্য শুষ্ক কাঠ যোগার কর।“ তারা তা করলে তিনি বলেন “আগুন জালাও।“ আগুন জ্বালানো হলে তিনি বলেন “রাসুল(সাঃ) কি তোমাদের কে বলেন নি আমার কথা শুনতে এবং মানতে।” তারা বলেন “অবশ্যই।” তিনি বলেন “যাও আগুনে প্রবেশ কর।” বর্ণনাকারী বলেন, তারা একে অপরের দিকে তাকালেন এবং বললেন “আমরা আগুন থেকে বাচার জন্য রাসুল(সাঃ) (আর তুমি আমাদের আগুনে প্রবেশ করতে বলছ!)” যতক্ষণ না সেই আনসার এর রাগ প্রশমিত হয় এবং আগুন না নিভে তারা দাড়িয়ে থাকলেন। ফিরে আসার পড় তারা ঘটনাটি রাসুল(সাঃ) কে জানালে রাসুল (সাঃ) বলেন “যদি তারা তাতে প্রবেশ করত তাহলে তারা ফিরে আসত না। আমিরের যে নির্দেশ গুলোতে খায়ের আছে শুধুমাত্র তা মান্য করতে হবে। ”
রাসুল সাঃ বলেন “ শাসকের নির্দেশ মানতে প্রতিটা মুস্লিম বাধ্য যদিও সে এটা পছন্দ করুক আর না করুক। কিন্তু যদি নির্দেশটি গুনাহ করতে বলে সেক্ষেত্রে কোন বাধ্যতা নেই।”
শিক্ষাঃ যেটাতে দ্বীনের উন্নতি আছে সেসব ক্ষেত্রে শাসকের আদেশ মানতে হবে। এর মাধ্যমে কুরআন, সুন্নাহ, শক্তি ও সম্মান অর্জন করা যাবে। উত্তম আদেশ মানার মধ্যেই বিজয় নিহিত এবং তা না মানার পরাজয়ের কারণ। অবাধ্যতার মাধ্যমে শৃঙ্খলা নষ্ট হয় এবং সেনাবাহিনী দুরবল হয়ে পড়ে যার ফলে মুসলিমরা পরাজিত হয়।
অধ্যায়ঃ নেতৃত্ব (তোমরা সবাই অভিভাবক এবং তোমাদের অধীনে যারা রয়েছে তাদের ব্যাপারে তোমরা দায়বদ্ধ)
ন্যায়পরায়ণ শাসকঃ
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ যে দিবসে আল্লাহ্র ছায়া ব্যতিত কোন ছায়া থাকবে না, সে দিন আল্লাহ্ সাত ব্যক্তিকে ছায়া দিবেনঃ একজন ন্যায়পরায়ণ ইমাম(নেতা)।
মানুষের সাথে দয়া ও নম্রতা প্রদর্শন
আয়েশা (রাঃ) বলেন, যখন রাসুল (সা:) আমার ঘরে সালাত পড়ছিলেন, তখন আমি শুনলাম তিনি বলছিলেনঃ“ হে আল্লাহ্ ! যারা আমার উম্মাহকে কঠোরভাবে শাসন করে, তাদের সাথে তুমি কঠোরতা প্রদর্শন করো এবং যারা আমার উম্মাহকে উত্তম রূপে শাসন করে, তাদেরকে তুমি তোমার দয়া প্রদর্শন করো। ”
মাকিল বিন ইয়াসার(রাঃ) বর্ণনা করেনঃ আমি রাসুল (সাঃ) কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ্ যদি তার কোন বান্দাকে কারো অধীনে নিযুক্ত করে। সে ব্যক্তি যাদের শাসন করত তাদের সাথে সে যদি অসৎ কাজ করে থাকে এবং ঐ অবস্থায় যদি তার মৃত্যু হয়। জান্নাত তার জন্য হারাম হয়ে যাবে।
রাসুল (সাঃ) বলেছেনঃ কোন শাসকে যদি মুসলমানদের ব্যাপারে বিশ্বাস করা হয়। কিন্তু সে যদি মুসলমানদের ভালর জন্য চেষ্টা না করে এবং সঠিক ভাবে সেবা না করে। তবে সে তাদের সাথে জান্নাতে প্রবেস্করতে পারবে না।
হাদিসে এসেছে “কোন দলে আমির থাকার পরও যদি কেউ দলের অন্য কাউকে (যে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়) খুঁজে, সে আসলে আল্লাহ, তার রাসুল(সাঃ) এবং বিশ্বাসীদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে।”
আমির উল মুমেনিন (বিশ্বাসীদের নেতা) উমর ইবনুল খাত্তাব রাঃ বলেন “ যদি কেউ মুস্লিমদের আমিরের দায়িত্ব নেয়ার পর কাউকে ভালবাসা বা পারিবারিক সম্পরকের কারনে নেতৃত্ব প্রদান করে , সে আসলে আল্লাহ, তার রাসুল(সাঃ) এবং বিশ্বাসীদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। ”
অধায়ঃ নেতৃত্ব চেয়ে নিলে জিজ্ঞাসিত হতে হবে (আল্লাহর সাহায্য পাবে না)
রাসুল সাঃ বলেন “হে আব্দুর রাহমান বিন সামুরা! কখনো নেতৃত্ব চেয়ো না, কেননা তাহলে তুমি তোমার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে(আল্লাহর সাহায্য থাকবে না)। কিন্তু তমাকে যদি না চাইতেই দায়িত্ব দেয়া হয়, তাহলে তুমি সাহায্য প্রাপ্ত হবে(আল্লাহর তরফ থেকে)।”
শিক্ষাঃ প্রত্যেক জিম্মাদার কে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। এবং ন্যায়বান শাসক হাশরের মাথে আল্লাহ তায়ালার আরসের ছায়ার নিচে অবস্থান করবে, যারা অন্যের সাথে নম্র ব্যবহার করবে আল্লাহ তাদের সাথে নম্র ব্যবহার করবেন, যারা অন্যের সাথে কঠিন ব্যবহার করবে আল্লাহ তাদের সাথে কঠিন ব্যবহার করবেন। যে আত্র প্রজাদের ব্যাপারে অসৎ, আন্তরিক ভাবে প্রজাদের ভালর জন্য কাজ করবে না জান্নাত তার জন্য হারাম। উপযুক্ত ব্যক্তিকে বাদ দিয়ে যদি কেউ ভালবাসা অথবা পারিবারিক সম্পর্ক অথবা অনুগ্রহ লাভের জন্য কাউকে নেতৃত্ব প্রদান করে তাহলে সে একজন বেঈমান এবং সে তার অধিনস্তদের উপর জুলুমকারী।
অতএব, যারা নেতৃত্ব পাবে তারা যেন দায়িত্তের অবহেলার যে হুমকি দেয়া হয়েছে সে ব্যাপারে যেন সতর্ক হয়। কিয়ামত দিবসে এই কারনে সে লাঞ্ছিত, অনুতপ্ত হতে পারে। অবশ্য যারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন তারা ভিন্ন। আমির হওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তি থাকলে যে আমির হতে চায় অথবা যে দুর্বল অথাবা যার সম্মান অন্নদের চেয়ে কম তাকে আমির বানানো যাবেনা।
পরিশেষঃ হে আল্লাহ! পরিস্থিতি মুজাহিদদের অনুকুলে করে দিন, তাদের আখলাক সমুন্নত করে দিন এবং তাদের কে আপনার শত্রু তথা তাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন।
সমস্ত প্রসংসা আল্লাহর যিনি সারা জাহানের মালিক।
https://almuwahideenmedia.wordpress.com/2015/01/29/advise-of-rasoolullah-to-the-mujahideen/#more-300 |
শিক্ষা: আমাদের আরও নিষেধ করা হয়েছে পরস্পরকে হিংসা না করতে, অশুভ কামনা না করতে এবং পরস্পরের মধ্যে লড়াই না করতে। মুসলিম ভ্রাতৃত্ব মানুষের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। কিন্তু এই মিথ্যা দুনিয়ার মিথ্যা আশায় এবং মিথ্যা সন্দেহের কারণে যদি এই ভ্রাতৃত্বের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় তবে তার ফলে মুসলমানদের শক্তিমত্তায় দুর্বলতা সৃষ্টি হবে, মুসলমানরা শাসন ক্ষমতা থেকে দূরে সরে যাবে এবং মুসলমানদের শত্রুরা মুসলমানদের শাসন করবে।