নিষিদ্ধ সাক্ষাৎকার
মুল্লাহ মুহাম্মাদ উমার হাফিযাহুল্লাহ্ঃ আমি দুটি প্রতিশ্রুতি বিবেচনা করিঃ একটি আল্লাহর, অন্যটি বুশের…
(ভয়েস অব এমেরিকার একজন সাংবাদিক ইসলামিক ইমারাত আফগানিস্থানের আমির মুল্লাহ মুহাম্মাদ উমার হাফিযাহুল্লাহ্র সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন এবং এমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্ট ২০০১ সালের ২২, সেপ্টেম্বর এটার প্রচারনা নিষিদ্ধ করে। এরপরও, ভয়েস অব এমেরিকা কাটছাট করে ১৫০ টি শব্দ রেখে সাক্ষাতকারটি সম্প্রচার করে। anews সাক্ষাৎকারটির পুর্ন বক্তব্য প্রকাশ করেছে)
প্রশ্নঃ আপনি কেন উসামা বিন লাদেনকে বহিষ্কার করছেন না?
মুল্লাহ উমারঃ এটা উসামা বিন লাদেনের সাথে সম্পর্কিত কোন বিষয় না। এটা ইসলামের একটা বিষয়। ইসলামের মর্যাদা আজ হুমকির মুখে। হুমকির মুখে আফগানিস্তানের ঐতিহ্যও।
প্রশ্নঃ আপনি কি জানেন যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে?
মুল্লাহ উমারঃ আমি দুটি প্রতিশ্রুতি বিবেচনা করছিঃ একটি হচ্ছে আল্লাহ্*র প্রতিশ্রুতি, আর অন্যটি হচ্ছে বুশের। আল্লাহ্*র প্রতিশ্রুতি হচ্ছে যে আমার ভুমি বিস্তৃত। যদি তুমি আল্লাহ্*র পথে চলা শুরু কর তবে তুমি পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে বসবাস করতে পারবে এবং সুরক্ষিত থাকবে। অপরদিকের বুশের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে পৃথিবীতে এমন কোন জায়গা নাই যেখানে তুমি লুকাতে পার যে আমি খুজে পাব না। আমরা দেখব এই দুটি প্রতিশ্রুতির মধ্যে কোনটা পরিপুর্ন হয়।
প্রশ্নঃ কিন্তু আপনি কি জনগনের, নিজের, তালিবানদের ও দেশের ব্যাপারে ভীত নন?
মুল্লাহ উমারঃ সর্বশক্তিমান আল্লাহ...মুমিন এবং মুসলিমদের সাহায্য করছেন। আল্লাহ বলেন তিনি কখনো কাফিরদের প্রতি সন্তূষ্ট হবেন না। পার্থিব দিক বিবেচনায় এমেরিকা খুবই শক্তিশালী। এমনকি এটা যদি আরও দিগুন শক্তিশালী হত অথবা তার চেয়েও আরও দিগুন তারপরেও (আমি বলব) তারা আমদেরকে পরাজিত করার মত শক্তিশালী হতে পারবে না। আমরা কনফিডেন্ট যে আল্লাহ যদি আমাদের সাথে থাকেন তবে কেউ আমাদের কোন প্রকার ক্ষতি করতে পারবে না।
প্রশ্নঃ আপনি আমাকে বলছেন যে আপনি এই ব্যাপারে মোটেও উদ্বিগ্ন না, কিন্তু বিশ্বব্যাপী আফগানরা তো উদ্বিগ্ন?
মুল্লাহ উমারঃ আমরাও উদ্বিগ্ন। বিরাট বিরাট ইস্যু সামনে রয়েছে। কিন্তু আমরা আল্লাহ্*র দয়ার উপর ভরসা করি। এটা মনে হতে পারে যে আমাদের নিকট সত্য মুহুর্তটি এসে গেছে, কিন্তু আল্লাহ্*র অনুগ্রহ রয়েছে মুসলিমদের সাথে।
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করুনঃ আমরা যদি আজকে উসামাকে দিয়ে দেই, তবে সে সকল মুসলিম যারা আজ তাকে পরিত্যাগ করতে বলছে তখন তারাই আবার তাকে ত্যাগ করার কারনে আমাদের নিন্দা করবেঃ কেন তোমরা ইসলামের মর্যাদার ক্ষতি সাধন করলে, কেন তোমরা মুসলিমদের উপর লজ্জা বয়ে আনলে?
প্রত্যেকে এমেরিকাকে ভয় করে এবং তাকে সন্তুষ্ট করতে চায়। কিন্তু আমাকে বলতে দিনঃ এমেরিকা এই ধরনের কর্মকান্ড প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না যা অতি সম্প্রতি ঘটে গেল। কারন আমেরিকা ইসলামকে জিম্মি রুপে গ্রহন করেছে। আর এমেরিকা এটা ইসলামি বিশ্বেই করছে, বিশেষত ইসলামি দেশগুলোতে।
যদি আপনি ইসলামি দেশগুলোর দিকে তাকান, দেখবেন যে লোকজণ হতাশাগ্রস্ত। তারা অভিযোগ করছে যে ইসলাম আজ সর্বস্বান্ত। ধর্ম নিরপেক্ষ আইন আজ ইসলামিক আইনের জায়গা দখল করেছে। কিন্তু জনগন তাদের ইসলামি বিশ্বাসে স্থির আছে। দুঃখ এবং হতাশায় তাদের কেউ কেউ আত্মহত্যা করে। তারা অনুভব করে যে তাদের হারানোর মত আর কিছু বাকি নাই। যদি এমেরিকা সত্যিকার অর্থে এই বিপদ মিটাতে চায়, তার জানা উচিত তাকে কি করতে হবে। তাকে ইসলামের উপর অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। ইসলাম কে তার নিজের মত করে চলতে দিতে হবে। এবং তার পরেই মুক্তি আসবে এবং প্রত্যেকে তার নিজের কাজ করতে পারবে।
প্রশ্নঃ আপনি এটা দ্বারা কি বুঝাতে চান যে এমেরিকা ইসলামি বিশ্ব কে জিম্মি রুপে গ্রহন করেছে?
মুল্লাহ উমারঃ এমেরিকা ইসলামি দেশগুলোর সরকার নিয়ন্ত্রন করে। এমেরিকা তাদের তত্বাবধান করে যাতে করে তারা তার চাহিদা পুরন করে। এ ধরনের একটি সরকার তার নিজের জনগনের থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। জনগন তাদেরকে ইসলাম অনুসরনের কথা বলে, কিন্তু সরকার তা শুনে না কারন তারা এমেরিকার কব্জায়। জনগন তাদের নিজেদের সরকারের উপর ক্ষমতাহীন কারন এই সরকারগুলো এমেরিকার হাতে। তাই সরকার দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় এসে পড়ে এবং সে তার জনগনকে ভুলে যেতে শুরু করে।
যদি কেউ ইসলামের পথ অনুসরন করে তবে সরকার তাকে গ্রেফতার করে, তাকে নির্যাতন করে অথবা হত্যা করে। এগুলো হচ্ছে এমেরিকার কাজ। যদি সে (এমেরিকা) এসকল সরকারকে সাহায্য করা বন্ধ করে এবং জনগনকে তাদের সাথে বুঝাপড়া করতে দেয়, তখন এধরনের ঘটনা আর ঘটবে না। এমেরিকা নিজেই বিপদের সৃষ্টি করেছে যা এখন তাকে আক্রমন করছে। এই বিপদ শেষ হবে না এমনকি যদি আমি মরে যাই, উসামা মরে যায়, এবং অন্যরা মরে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের উচিৎ পিছনে ফিরে গিয়ে পুনরায় তার নীতি পরিক্ষা করা। তার উচিৎ বিশ্ব জুড়ে তার সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা বাদ দেয়া, বিশেষ করে মুসলিম দেশ গুলোতে।
মানবিক সাহায্যর নামে এমেরিকা আফগানস্থানে হাজার হাজার বাইবেল এনেছিল এবং খ্রিস্টবাদকে উৎসাহিত করেছিল। যদি তারা এখানেই তা করার ধৃষ্টতা দেখায়, চিন্তা করুন আরব দেশগুলোতে তারা কি করে, মুসলিমরা এটা বুঝে। এবং তারা এটাও জানে যে তারা কোন কিছু করতে অক্ষম...একারনে আত্মঘাতী আক্রমন করে তারা নিজেদেরকেই হত্যা করছে। তারা এই পৃথিবীতে আর বেচে থাকতে চায় না।
প্রশ্নঃ তাই আপনি উসামা বিন লাদেন কে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিবেন না?
মুল্লাহ উমারঃ না, আমরা এটা করতে পারি না। যদি আমরা তা করতাম তবে এর অর্থ দাড়াতঃ আমরা মুসলিম না... যে ইসলাম খতম হয়ে গেছে। যদি আমরা আক্রমনের ভয় করতাম, তবে আমরা তাকে তখনই সমর্পন করতে পারতাম সর্বশেষ যখন আমাদেরকে হুমকি দেয়া এবং আক্রমন করা হয়েছিল।
প্রশ্নঃ যদি আপনি আপনার সর্বশক্তি দিয়ে এমেরিকার সাথে যুদ্ধ করেন...তালিবান কি সেটা করতে পারবে? এমেরিকা কি আপনাদের ধ্বংস করে দিবে না এবং আপনার জনগন কি আরও বেশি দুর্ভোগ পোহাবে না?
মুল্লাহ উমারঃ আমি অত্যান্ত আত্মবিশ্বাসী যে ব্যাপারগুলো এমন হবে না। দয়া করে নোট রাখুনঃ আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহ্*র উপর ভরসা করা ছাড়া আর কিছু করতে পারি না। যদি কেউ এটা করে তবে সে এই নিশ্চয়তা পাবে যে সর্বশক্তিমান তাকে সাহায্য করবেন, তার প্রতি দয়া করবেন এবং সে সফল হবে।
উৎসঃ ভয়েস অব এমেরিকা