আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ •
মেঘ দেখে তুই করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য্য হাসে
মুফতী হাসান আব্দুল বারী
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক কিছুই ঘটে চলছে। বেদনার শোকবার্তা যেমন আমাদের মনে বিরহ উসকে দিয়েছে। তেমনি অভূতপূর্ব আনন্দবার্তায় গুমোট বাতাবরণে স্বস্তির হাওয়া প্রবাহিত হয়েছে। কয়েকদিনের ব্যবধানে বিশ্বজিহাদের কজন গুণীমানুষকে আমরা হারিয়েছি। শায়খ উমর আব্দুর রহমান। শায়খ আবুল খায়ের মিসরী। মোল্লা আব্দুস সালাম আখন্দ। প্রথম দুজনতো আকাশের সুরাইয়্যাতারকা। উম্মাহ কি জানে তারা কাদের হারালো?
শায়খ উমর আব্দুর রহমান ছিলেন যুগের ইবনে তাইমিয়াহ। ইলমসাগরের ডুবোরী। জিহাদের ময়দানের ইবনুল মুবারক। তাগুতের সামনে আহমদ বিন হাম্বলের মূর্তপ্রতীক। আমৃত্যু আপোষহীন এ মর্দেমুজাহিদ কারাগারেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। অথচ ছিলেন জন্মান্ধ।
শায়খ আবুল খায়ের মিসরী। আল কায়দার নায়েবে আমীর। বিশ্ব জিহাদের এক অবিসংবাদিত নেতা। ছিলেন ক্লিন ইমেজের অধিকারী। যেখানে যেতেন সবাইকে আপন করে নিতেন। দলীয় চিন্তার উর্ধ্বে উঠে সব মহলের কাছে সমান প্রিয় ছিলেন।
মোল্লা আব্দুস সালাম আখন্দ। গজনী প্রদেশের তালেবান কমান্ডার। তারুণ্যের আদর্শ এ বীর তাগুতের যম হিসাবেই খ্যাত ছিলেন।
এবার বলি সুখের খবর। প্রথমেই আসি সিরিয়া প্রসঙ্গে। এ বিষয়ে দ্বিমত করার অবকাশ আশা করি নেই যে, সিরিয়াকে কেন্দ্রকরেই বিশ্ব কাফের এখন দাবার গুটি চালাচালি করছে। কখনো লাইম লাইটে ন্যাটো, তো কখনো রাশিয়া-ইরান। মুসলিম দেশগুলোর অথর্ব তাগুত শাসকরা তো শুধুদাবার গুটির মতো এ কোর্ট ও
কোর্ট মাথা ঠুকছে। স্মর্তব্য, ইরানকে মুসলিম দেশের বাইরে রাখা হয়েছে। এ দেশটিই মূলত মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ত্রাস সৃষ্টির পেছনে দায়ি। অন্য কোন পর্বে এদের নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে। খুলে বলছি। আলেপ্পোর কথাই ধরা যাক। যখন বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিভীষণ চলছিল,তখন অনেকটা অযাচিতভাবেই মঞ্চে আগমন ঘটে তুরস্কের। ‘স্যেভ আলোপ্পোর নামে’ পরিকল্পিতভাবে তুরস্ক-আমেরিকা বিদ্রোহীদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে। আইএস দমনের নামে তুরস্ক ফ্রি-সিরিয়ান আর্মিকে বাগিয়ে নেয়। আমি জানি অনেকে এরদোগানের ভূমিকাকে প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখে থাকবেন। তবে একটু অনুসন্ধানের দৃষ্টিতে তাকালে দেখবেন; যতুটুনা তিনি সিরিয়ার মানুষের জন্য কেঁদেছেন–তারচেয়ে বেশি নিজের দেশের সীমান্ত সুরক্ষা ও অখন্ডতা রক্ষার চিন্তায় বিভোর ছিলেন। সিরিয়ার স্বাধীন গণমাধ্যমসহ আন্তর্জাতিক একাধিক গণমাধ্যমে এ তথ্য উঠে এসেছে যে, রাশিয়া ও বাশারের সম্মিলিত শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী যখন আলেপ্পোতে পৈশাচিক বর্বরতা চালাচ্ছিল; তখন একাধিক বৃহদ বিদ্রোহী গ্রুপ অঘোষিতভাবে যুদ্ধ বন্ধ করে তাদের সাথে গোপন সন্ধির ভিত্তিতে ভেতরের তথ্য সরবরাহ করছিল। অন্যদিকে তুরস্কের বাহিনী আইএস দমনের উদ্দেশ্যে আল-বাব অভিযানে ব্যস্ত ছিল। তখন যদি তারা আলেপ্পো রক্ষায় বিদ্রোহীদের সাহায্য করতো কিংবা, অন্তত নিজেরা বিদ্রোহীগ্রুপগুলোর মাঝে বিভক্তি না ছড়াতো–তাহলে বাশারের জন্য আলেপ্পো দখল সম্ভব হতো না। আলেপ্পোর দখল ছিল তাদের কাছে স্বপ্নের মতো। তাদের সমর কৌশল ছিল ত্রাস সৃষ্টি করে মুজাহিদদের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা। পুতিন নিজেই স্বীকার করেছেন যে, আলেপ্পোর ব্যাপারে এরদোগানের সাথে তার সমঝোতা হয়েছে। সমঝোতা যে কিসের বিনিময়ে হয়েছে তা এখন আরো স্পষ্ট হয়েছে। আইএসের ক্রমবর্ধমান হুমকি আর কুর্দিদের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতেই এরদোগান সিরিয়ার অভ্যন্তরে সেনা অভিযান পরিচালনার অনুমতি লাভের বিনিময়ে আলেপ্পো নিয়ে ঘৃণ্য গেম খেলেছেন। এখন আল-বাব, মানবিজ ও দের আজ-জোরের দখলকৃত এলাকাগুলো বাশারের হাতে তুলে দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন। কিন্তু আল্লাহর সৈনিকরা থেমে থাকেন নি। ইদলিবে ফিরে গিয়ে নিজেদের সসুংগঠিত করার কাজ শুরু করেন। এক্ষেত্রে জাবহাতু ফাতহিশ-শামের আমীর ‘হাকীমুশ শাম শায়খ জুলানী’ অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন। দফায় দফায় আলোচনা-পর্যালোচনার পর অবশেষে ‘হাইয়াতু তাহরিরাশ-শাম’ নামে সংগঠিত হতে শুরু করেন মুজাহিদীনগণ। উম্মাহর স্বার্থে নিজে নেতৃেত্বের শীর্ষ আসন সানন্দে ছেড়ে দেন। আহরার আশ-শামের প্রাক্তন আমীর ‘শায়খ আবু জাবের’ হন আমীর। জিহাদী গ্রুপ গুলো ছাড়াও শামের আলেমগণ দলে দলে এসে যুক্ত হন ‘হাইআতু তাহরিরাশ-শামের’ সাথে। তবে, ‘আহরার আশ-শামে’র গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতৃবৃন্দ ও কিছু ব্রিগেড হাইয়ার সাথে যুক্ত হলেও ‘আহরার আশ শামে’র বড় অংশ এখনো পর্যন্ত আলাদাই রয়েছে। আমরা আশা করবো, শামের মাটিতে তাদের কুরবানী তাগুতরা কিনে নিতে সক্ষম হবে না। আহরার ঘরে ফিরবে। বাস্তবতা উপলব্ধি করে ছোটখাটো সমস্যা কিংবা ভুল বোঝাবুঝি নিরসন করে কাফেলায় যুক্ত হবে। যে সব কৌশল আলেপ্পোতে ব্যর্থ হয়েছে তার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। ইতোমধ্যে হিমসে এক অভাবনীয় ইস্তেশহাদি হামলায় বাশারের গোয়েন্দা বাহিনীর প্রথম সারির এক কমান্ডারসহ চল্লিশার্ধ সেনা-কর্মকর্তা নিহত ও অর্ধশতাধিক গুরুতর আহত হয়েছে। শুধু সম্মুখ লড়াই কার্যকরী হবে না। তাই ফেদায়ী স্কোয়াড ও টাগের্ট হামলার পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। দামেস্কের অভ্যন্তরে পুনরায় উম্মাহর শার্দুলরা মরণ-অভিযান পরিচালনা করে তাগুতের ঘুম হারাম করে দিচ্ছে। অন্যদিকে উপকূলীয় শহর লাতাকিয়ায় চালানো হচ্ছে সংগঠিত অভিযান। অথচ দেখুন, আইএস রহস্যজনকভাবে পালমিরা পূণর্দখল করলেও গত দুসপ্তাহের ভেতর পালমিরা, আল-বাব, মানবিজসহ রাকার পল্লী এলাকাগুলো ছেড়ে ক্রমেই কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, ইতোমধ্যে মসুলের অনেক এলাকা থেকেও পিছু হটেছে। আর কয়েক লাখ সুন্নি মুসলিম সেখানে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আল্লাহ মুজাহিদীনদের সে এলাকাগুলো উদ্ধারের তওফিক দিন।
নিবন্ধের রেশ টানতে হচ্ছে। তবে আরো কিছু সুসংবাদ দেয়ার ইচ্ছাটা দমন করতে পারছিনা! ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিষেকের উপহার কিন্তু ইয়েমেনের মুজাহিদরা বেশ সুদৃশ্য গিফট হ্যাম্পারেই দিয়েছেন। বেটা চেয়েছিল মেরিন কমান্ডোদের দিয়ে একটা রুদ্ব-শ্বাস অভিযান চালাতে! উল্টো নিজ বীর(!) সৈন্যদের লাশের কফিনই ভাগ্যে জুটলো!! দারুন হয়েছে না উপহারখানা!? এখানে বলে নিই, আল-কায়দার ‘আরব পেনিনস্যুলা’র যে ক’জন শায়খ গত বছর শহীদ হোন -এর পেছনে আইএসের হুম্মাম হামিদ নামে এক কুলাঙ্গার সি আই এর সাথে গোয়েন্দা তথ্য আদান প্রদানে যুক্ত ছিল। অন্যদিকে লিবিয়ায় চলছে বেনগাজীর সিংহদের পাল্টা অভিযান। বেচারা হাফতারের প্রভুমিসর ও আমিরাত একবারে হাপিয়ে উঠেছে! আর সাহারা ভূমির সৈনিকরা মালিতে একতাবদ্ধ হয়ে আল-কায়দার হাতে বায়আত দিয়েছে। ইতোমধ্যেই ফ্রান্স ও তাগুতবাহিনীর কোমর ভেঙ্গে দিতে একের পর এক হামলা করে যাচ্ছে। সবচেয়ে হৃদয় প্রশান্তকারী কথা হচ্ছে সোমালিয়ায় মুজাহিদীনরা রাজধানীর ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে চলে এসেছে। শেষ করছি আফগানিস্তানের কথা দিয়ে। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরো আফগানিস্তানের ৭৫% এলাকা এখন ‘ইমারাতে ইসলামিয়া’র সুশীতল ছায়ায় চলে এসেছে। এই তো কয়েকদিন আগে পাকিস্তান সরকার দুদিনের জন্য বর্ডার খুেল দিয়েছিল। ফলে ৫০ হাজার আফগান উদ্বাস্তু তালিবান নিয়ন্ত্রিত এলাকাতে ফিরে গেছে। কেন গেছে? তালিবানরা যদি এদের ওপর নিমর্ম তাই চালাবে তো এরা যাচ্ছে কেন? বাপু, তোমাদের এসব মিথ্যের বাস্তবতা মানুষ বুঝতে শুরু করেছে। আশা করি মসুলিম উম্মাহ কাগুজে সুপার পাওয়ারদের চোখ রাঙানিকে তুড়ি মেরে এ মোবারক কাফেলায় শামিল হবে। মেঘ যতই গজর্ন করুক তার ফাঁকেই কিন্তু সূর্য্য হাসে।
আল বালাগ
ম্যাগাজিন ইস্যু-২