JustPaste.it
এ দ্বীন তাওহিদের, এ জিহাদ আকিদার,
প্রসঙ্গ: আহমাদ শাহ মাসউদ

আহমাদ শাহ মাসউদ। আফগানিস্তানে রুশ বিরোধী জিহাদের অন্যতম পরিচিত ব্যক্তি। রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদে সে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান জিহাদ পরবর্তী এক কলংকজনক অধ্যায় রয়েছে তার। এসময়ে আহমদ শাহ মাসউদ শুধু তালিবান অর্থাৎ ইমারতে ইসলামির বিরোধিতাই করেনি বরং মৃত্যু পর্যন্ত আফগানিস্তান থেকে ইসলামি শাসন নির্মূল করে গণতন্ত্র কায়েম করার জন্য আমেরিকা ও পশ্চিমা কুফফারদের সাথে মিলে ইমারতে ইসলামির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গেছে।


আফগানিস্তানে তালিবানের ইসলামি শরিয়ার শাসন কায়েমের পর আহমাদ শাহ মাসউদ গণতন্ত্র কায়েমের জন্য আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলে ঘাঁটি গেড়ে তালিবানের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকে। এসময় সে আমেরিকা ও পশ্চিমা কাফিরদের সরাসরি সহযোগীতা লাভ করে।


 আহমাদ শাহ মাসউদ কী উদ্দেশ্যে এবং কীভাবে এই যুদ্ধ করেছে তা আমরা আজকে তার নিজের বক্তব্য থেকে কিছু অকাট্য প্রমাণাদি জানবো ইনশাআল্লাহ।  

.


১।  গণতন্ত্র কায়েমে সহযোগিতা চেয়ে আমেরিকার জনগণের প্রতি আহমাদ শাহ মাসউদের চিঠি:


১৯৯৮ সালে আহমাদ শাহ মাসউদ আফগানিস্তানের তালিবান সরকারকে উৎখাত করে গণতন্ত্র কায়েমে সহযোগিতা চেয়ে আমেরিকার জনগণের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি প্রেরণ করে। দেখুন তার চিঠিতে,


The goal is clear. Afghans want to regain their right to selfdetermination through a democratic or traditional mechanism acceptable to our people.

……………. We are willing to move toward this noble goal. We consider this as part of our duty to defend humanity against the scourge of intolerance, violence and fanaticism. But the international community and the democracies of the world should not waste any valuable time, and instead play their critical role to assist in any way possible the valiant people of Afghanistan overcome the obstacles that exist on the path to freedom, peace, stability and prosperity.

অর্থ: “আমাদের লক্ষ্য সুস্পষ্ট। আফগানিস্তানের জনগণ একটি গণতান্ত্রিক অথবা আমাদের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য প্রথাগত ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে চায়।” 

“ আমরা এই মহান লক্ষ্যে অগ্রসর হতে ইচ্ছুক। উগ্রতা, সংঘাত ও ধর্মান্ধ শক্তির বিরুদ্ধে  মানবতাকে রক্ষা করা আমরা আমাদের দায়িত্বের অংশ মনে করি। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোকে তাদের মূল্যবান সময়ের কোনো অপচয় করা উচিৎ নয়। তার পরিবর্তে স্বাধীনতা, শান্তি,স্থিতিশীলতা এবং উন্নতির পথে থাকা বাঁধাসমূহ অতিক্রম করতে আফগানিস্তানের সাহসী জনগণকে সম্ভাব্য যেকোনো উপায়ে সহযোগীতা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।”

.

আহমাদ শাহ মাসউদের উক্ত চিঠির লিংক.... https://www.afghanweb.com/biographies/biographyofahmadshahmasood/ahmadshahmassoudslettertothepeopleofamerica/

 

.

২।  আহমাদ শাহ মাসউদের জীবনের শেষ সাক্ষাৎকার থেকে অবিশ্বাস্য সব তথ্য ....

.

আহমাদ শাহ মাসউদ মৃত্যুর ১ মাস আগে অর্থাৎ ২০০১ সালে আগস্ট মাসে পশ্চিমা এক সাংবাদিককে এক সাক্ষাৎকার দেয়। উক্ত সাক্ষাৎকারে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, তালিবানদের ইমারতে ইসলামিকে নাকচ করে দেওয়া সহ তার চিন্তাধারা তুলে ধরা হয়। উক্ত সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশ নিম্নে উল্লেখ করছি।

.

তালিবানদের সাথে কোয়ালিশন সরকারের সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে আহমাদ শাহ মাসউদ বলেছে,

We do however only see the possibility of sharing a coalition government with the Taliban for a transformation period, at the end of which we should go to democratic elections. That is the only acceptable solution in our opinion. Otherwise to come up with a permanent solution in which the Taliban are involved seems extremely difficult, if at all possible.

"যাইহোক, আমরা মনে করি তালিবানদের সাথে সাময়িক/অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য একটি জোট সরকারে অংশীদার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেই সময়ের পরে আমাদেরকে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনে যাওয়া উচিৎ। আমাদের বিবেচনায় এটিই হচ্ছে একমাত্র গ্রহণযোগ্য সমাধান। অন্যথায় তালিবানরা যে পন্থায় চাচ্ছে সেভাবে স্থায়ী সমাধানে যাওয়া যদি আদৌ সম্ভব হয়ও তবে তা অত্যন্ত কঠিন।"   

.

তালিবানদের সাথে লড়াইয়ের কী কী কারণ রয়েছে এই প্রশ্নের জবাবে আহমাদ শাহ মাসউদ,

One of them is way the of thinking about today’s Afghanistan and the conception of the Afghanistan of the future. The Taliban say: “Come and accept the post of prime minister and be with us”, and they would keep the highest office in the country, the presidentship. But for what price?! The difference between us concerns mainly our way of thinking about the very principles of the society and the state. We can not accept their conditions of compromise, or else we would have to give up the principles of modern democracy. We are fundamentally against the system called “the Emirate of Afghanistan”.

"(তালিবানদের সাথে লড়াইয়ের) অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে আফগানিস্তানের বর্তমান নিয়ে চিন্তার পদ্ধতি ও ভবিষ্যত আফগানিস্তানে চিন্তাধারা নিয়ে। তালিবানরা বলে: "আসো, প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ করো এবং আমাদের সাথে থাকো"। আর তালিবানরা দেশের সর্বোচ্চ পদ রাষ্ট্রপতিত্ব রাখবে। কিন্তু কীসের বিনিময়ে ?!  আমাদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে মূলতঃ সমাজ ও রাষ্ট্র নিয়ে চিন্তাধারার পদ্ধতিতে। আমরা তাদের আপোষনামার শর্ত কিছুতেই মানতে পারি না । তাহলেতো আমাদেরকে  আধুনিক গণতন্ত্রের মূলনীতি পরিত্যাগ করতে হবে। আমরা মৌলিকভাবে সেই সিস্টেমের বিরুদ্ধে যাকে "আফগানিস্তান ইমারত" বলা হচ্ছে।" 

.

তালিবানের বিরুদ্ধে আহমাদ শাহ মাসউদের যুদ্ধের লক্ষ্য কী ? এই প্রশ্নের উত্তরে তার বক্তব্য,

Ahmad Shah Masud: ......................................................Our aim is not to have the upper hand in Afghanistan. No at all! What we struggle for is something else: there should be Afghanistan where every Afghan finds himself or herself  irrespective of sex  happy. I am deeply convinced that this can only be ensured by democracy and a democratically elected government, based on consensus.

"আমাদের লক্ষ্য এটা নয় যে, আফগানিস্তানে আমরা প্রভাবশালী হবো। এটা আদৌ নয়। আমরা অন্য কিছুর জন্য লড়াই করছি। এমন এক আফগানিস্তান হবে, যেখানে লিঙ্গভেদে সকল আফগান পুরুষ কিংবা নারী নিজেকে সুখী পাবে। আমি দৃঢ় বিশ্বাসী যে, ঐক্যমতের ভিত্তিতে এটি গনতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা সম্ভব।"

.

আফগানিস্তানে রক্ষণশীল ইসলামী ভাবধারা পরিবর্তনে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে আহমাদ শাহ মাসউদের বক্তব্য,


PB: You are renowned for your modernist, liberal views and special emphasis on democracy, democracy understood very much in the Western sense. Isn’t it sometimes difficult for you to compromise your progressive, reformist vision of the society and the state with more traditional, conservative values characteristic of the population in Badakshan or elsewhere in Afghanistan?


Ahmad Shah Masud: Of course it is not so easy. In the present situation, it is not possible to ignore traditional system of values completely. But we should gradually undertake actions to bring about some change and modernise the society. One of such measures is education and instilling democratic thinking among common people.

সাংবাদিক:   পশ্চিমা ভাবধারার আলোকে আপনার আধুনিকতাবাদী, উদার দৃষ্টিভঙ্গি, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের জন্য আপনি বিখ্যাত।  সমাজ এবং রাষ্ট্রের ব্যাপারে আপনার প্রগতিশীল, সংস্কারবাদী ভাবধারার সাথে  বাদাখশান ও আফগানিস্তানের অন্যান্য এলাকার অধিক প্রথাগত, রক্ষণশীল মূল্যবোধের বৈশিষ্ট্যের সাথে আপোষ করা কিছুটা কঠিন নয় কী ?

.

আহমাদ শাহ মাসউদ:

অবশ্যই এটি খুব সহজ কাজ নয়। বর্তমান অবস্থায় মূল্যবোধের প্রথাগত সিস্টেমকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। কিন্তু পর্যায়ক্রমে আমাদেরকে তা পরিবর্তনে এবং সমাজের আধুনিকায়নে পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। এর মধ্যে একটি পদক্ষেপ হচ্ছে সাধারণ মানুষের মাঝে শিক্ষা এবং গণতান্ত্রিক চিন্তাধারার  প্রবর্তন করা।

.

তালিবানদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কুফুরি শক্তির সাহায্যের ব্যাপারে তার বক্তব্য,

On the top of that, we notice that the support of the international community for the antiTaliban resistance this way or another is increasing.

"সর্বোপরি বিষয় হলো, আমরা লক্ষ্য করছি, তালিবান বিরোধী প্রতিরোধের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা এই পন্থায় হোক বা অন্যভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।"

.

পুরো সাক্ষাৎকারের লিংক(ইংরেজি)....

https://web.archive.org/web/20060925043421/http://www.orient.uw.edu.pl/balcerowicz/texts/Ahmad_Shah_Masood_en.htm   


৩। সিআইএ'র কর্মকর্তাদের সাথে মিলে তালিবান বিরোধী পরিকল্পনার প্রমাণ:

১৯৯৯ সালের অক্টোবর মাসে তালিবানকে উৎখাত করার যুদ্ধে পানশিরে সিআইএ'র দুইজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা Rich Blee (সিআইএ'র আল কায়ে দা নির্মূল ইউনিটের প্রধান) ও  David Tyson (সিআইএ'র উচ্চপদস্থ অফিসার) এর সাথে আহমদ শাহ মাসউদের সামরিক পরিকল্পনারত অবস্থার ছবি প্রকাশ করেছে মার্কিন সাংবাদিক Toby Harnden.

অবিশ্বাস্য সেই ছবি মার্কিন সাংবাদিক Toby Harnden এর নিজের টুইটার থেকে দেখে আসুন। https://twitter.com/tobyharnden/status/1568200327744176130    

 .

৪।  শাইখ উসামাকে হত্যা বা বন্দী করার জন্য সিআইএ'র সাথে চুক্তি:

শাইখ উসামা বিন লাদেনকে হত্যা কিংবা বন্দী করার বিনিময়ে আহমাদ শাহ মাসউদ সিআইএ'র সাথে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়। আহমাদ শাহ মাসউদের মৃত্যুর পর ২৯ সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে সিআইএ এই তথ্য প্রকাশ করে। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্যা গার্ডিয়ান থেকে এই রিপোর্ট দেখে আসতে পারেন।

The CIA offered Afghanistan's antiTaliban opposition leader a substantial bounty three years ago for the capture of Osama bin Laden, dead or alive, it emerged yesterday.

অর্থ: "৩ বছর আগে উসামা বিন লাদেনকে মৃত কিংবা জীবিত করার বিনিময়ে আফগানিস্তানের তালিবান বিরোধী নেতাকে মোটা অংকের অর্থ প্রদান করে, গতকাল এই তথ্যটি প্রকাশিত হয়। "

.

ব্রিটিশ পত্রিকা দ্যা গার্ডিয়ানের উক্ত রিপোর্ট....

https://www.theguardian.com/world/2001/oct/01/afghanistan.terrorism5 

.

৫।  ক্রুসেডার ফ্রান্সের সাথে সখ্যতা:

এছাড়া আহমাদ শাহ মাসউদ ফ্রান্সের ক্রুসেডারদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়েছে তালিবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য। ফ্রান্সের ক্রুসেডার নেতাদের সাথে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন.....  

Video thumb
 

.ক্রুসেডার ফ্রান্সের সাথে সখ্যতার পুরস্কার হিসেবে আহমাদ শাহ মাসউদের নামে ফ্রান্সের প্যারিসে একটি চত্বরের নামকরণ করেছে ক্রুসেডার ফ্রান্স।

https://tolonews.com/afghanistan169791 

.

ইসলামি ইমারত না চেয়ে এবং তা উৎখাত করে গণতন্ত্র কায়েমের লক্ষ্যে আমেরিকার সাথে একজোট হয়ে ইমারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হচ্ছে তার সর্বশেষ অবস্থা। আর হাদিস অনুযায়ী إنما الأعمال بالخواتيم  অর্থাৎ আমলসমূহ শেষ অবস্থার আলোকে হয়ে থাকে। ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ক্রুসেডার কাফিরদেরকে এই সহায়তা ছিল স্পষ্ট কুফর।

.


সুরাহ মায়িদার ৫১ নং আয়াতের তাফসিরে ইমাম কুরতুবি রাহি. বলেন,

قوله تعالى : ومن يتولهم منكم أي : يعضدهم على المسلمين . فإنه منهم [ ص: 158 ] بين تعالى أن حكمه كحكمهم ; وهو يمنع إثبات الميراث للمسلم من المرتد ، وكان الذي تولاهم ابن أبي ثم هذا الحكم باق إلى يوم القيامة في قطع الموالاة

আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ  ‘যে ব্যক্তি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে’ অর্থাৎ মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদেরকে (কাফিরদেরকে) সাহায্যসহযোগিতা করবে, নিশ্চয়ই সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, তার হুকুম উক্ত কাফিরদের হুকুমের মতই হবে। আর তা একজন মুসলিমের জন্য মুরতাদ থেকে মিরাস প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে বিরত রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই কাফিরদের সাথে মুওয়ালাত বা সুসম্পর্ক করেছিলো। অতঃপর কাফিরদের সাথে মুওয়ালাত বা সুসম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে এই বিধান কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে। (তাফসীরে কুরতুবী)