আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিকে মাক্কী জীবনের সাথে তুলনা করা কী ঠিক হবে?
লেখকঃ শায়খ সুলায়মান আল-উলওয়ান
(আল্লাহ্ তাঁকে সৌদির কারাগার থেকে দ্রুত মুক্তি দান করুন)
মাক্কী জীবনে সাহাবীরা দুর্বল অবস্থায় ছিলেন। আর রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و سلم) বিভিন্ন কারণে মক্কার উদ্ভূত পরিস্থিতিগুলোকে মদীনার সময়ের থেকে ভিন্ন ভাবে মোকাবেলা করেছিলেন।
- প্রথম কারণ হচ্ছে মুসলমানরা দুর্বল অবস্থায় ছিলেন।
- দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে শরী’আহ পরিপূর্ণ ছিলো না।
- তৃতীয় কারণ হচ্ছে রাসূলুল্লাহর (صلى الله عليه و سلم) রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিলো না।
- চতুর্থ কারণ হচ্ছে ইসলাম তখনও দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েনি।
এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, মক্কার বাস্তবতা মদীনা থেকে ভিন্নতর ছিলো। তাই যখন কোনো ব্যক্তি দুর্বল অবস্থায় থাকবে, তখন শারী’আহ অনুযায়ী পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে।
তাই বলে ইসলামী মূলনীতিগুলোর ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যাবে না। সেই সাথে দীনের ব্যাপারে কোনোরকম আপস করা যাবে না।
আবার দুর্বল অবস্থায় প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাসীন ব্যক্তির ন্যায় আচরণ করা যাবে না। এই ধরনের পরিস্থিতিতে শারী’আহর চাহিদা অনুযায়ী উম্মাহর স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে এবং নৈতিক অধঃপতন থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
অর্থ্যাৎ এই ক্ষেত্রে একজন মুসলিমকে কিছু হিকমাহ [প্রজ্ঞা] প্রয়োগ করতে হবে। অপরপক্ষে এর বিপরীত অবস্থায় অর্থাৎ ক্ষমতাসীন অবস্থায় কুওয়্যাত [শক্তি] এবং আল-হাযম [গাম্ভীর্য] দ্বারা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে । এবং অবশ্যই হক্ব [সত্য] কথা বলতে হবে।
তবে আমাদের পরিস্থিতিকে সম্পূর্ণরুপে শুধু মাক্কী জীবনের সাথে মিলিয়ে ফেলাকে শারী’আহ অনুমোদন করে না।
আমরা রাসূলুল্লাহর (صلى الله عليه و سلم) শারী’আহ পরিপূর্ণরূপে পেয়েছি। আল্লাহ্* তাঁর রাসূলকে বলেন,
“আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম” [সূরা মায়েদাঃ ৩]
অপেক্ষাকৃত দুর্বল পরিস্থিতিতে অনেক সময় মানুষ অপমান কিংবা দ্বীনের ব্যাপারে পরীক্ষিত হওয়ার ভয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সামর্থ রাখে না।
কিন্তু ব্যাপারটি এমন নয় যে এই অক্ষমতার কারণে ইসলামের বিধান পরিবর্তিত হয়ে যায়। যদি মানুষ সামর্থ অর্জন করে এবং শক্তি ও ক্ষমতালাভ করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত হয়ে যায় তাহলে এটি প্রশংসাযোগ্য।
কারণ এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহর (صلى الله عليه و سلم) পক্ষ থেকে প্রমাণদি বিদ্যমান।
মাক্কী যুগ সম্পূর্ণ ভাবে আমাদের বর্তমান সময়ের সাথে তুলনা করাটা কিছু আধুনিক আলেম, ত্বলিব ও দা’ঈদের ভুল। এটি (ইসলামি) ইলমবিহীন বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তাভিত্তিক দাওয়াতের ফলে সৃষ্ট একটি ধারা।
এদের দা’ওয়াহ করার মূলে সাধারণত থাকে বিজ্ঞান ভিত্তিক, বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা তাত্ত্বিক, কিংবা কোন ইসলামি আন্দোলন ভিত্তিক ধ্যানধারণা।
এরা নিজেদের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে চায় এবং নিজেদের সুবিধার্থে মাক্কী যুগকে নিজেদের অবস্থার সাথে মেলায়। কিন্তু এটি ভুল!
কারণ আমরা মক্কার বাস্তবতা আমাদের বাস্তবতার সাথে তুলনা করতে পারি না। তাহলে আমরা নিজেদেরকে ইসলামী শারী’আহর অনেক মূলনীতি থেকে নিজেদের বিচ্যুত করে ফেলবো।
মক্কায় শারী’আহ পূর্ণাঙ্গ ছিলো না। কিন্তু আমাদের কাছে শারী’আহ পরিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, মক্কার এহেন [কঠিন] পরিস্থিতি সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و سلم) হক্ব [সত্য] গোপন করেননি।
হয়তো কিছু কারণে সবক্ষেত্রে মক্কায় কাফেরদের সার্বিকভাবে মোকাবিলা করেননি কিন্তু কক্ষণো সত্য গোপন করেননি।
কিন্তু এখন অনেকেই হক্ব কথা না বলে মাক্কী জীবনের দোহাই দিয়ে গোপনে সংস্কার কাজ বা এমন কিছু করার চেষ্টা করছে। এরা আসলে হক্ব গোপন করছে। এটা ঠিক নয় এবং এর কোনো ভিত্তি (ইসলামিক শারী’আহতে) নেই।
“বলুনঃ সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক” [সূরা কাহাফঃ ২৯]