লূত আ. এর সম্পদ্রায়
ও
বর্তমান জাহিলিয়্যাত
উস্তায আহমাদ নাবীল হাফিজাহুল্লাহ
- লূত্ব আ. এর সম্প্রদায়–
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِۦٓ أَتَأْتُونَ الْفٰحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّنَ الْعٰلَمِينَ إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّن دُونِ النِّسَآءِ ۚ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُونَ
“আমি লূত্বকেও পাঠিয়েছিলাম; সে তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিল–তোমরা এমন কুকর্ম করছ; যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করে নি। তোমরা তো কাম-তৃপ্তির জন্য নারী ছেড়ে পুরুষের নিকট গমন কর।” -সূরা আরাফ: ৮০, ৮১
এ সম্প্রদায়ের মূল অপরাধ ছিল দু’টি। এক. তাওহীদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করা। দুই. সমকামিতায় লিপ্ত হওয়া।
‘সমকামিতা’ এমন এক জঘন্য অপরাধ; যে অপরাধে এ সম্প্রদায়ের পূর্বে বিশ্ব জগতের কেউ লিপ্ত হয় নি। যার উল্লেখ রয়েছে পবিত্র কুরআনে “তোমরা এমন কুকর্ম করছ; যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে কেউ করে নি।”
লূত্ব আ. তাঁর সম্প্রদায়কে এ হীন পাপাচার পরিত্যাগ করতে বললেন। তারা তাঁর আহবানে কোন সাড়া দেয় নি। তাঁর নিষেধের প্রতি কোন পরওয়া করে নি। মাত্রাতীত সীমালঙ্ঘনের কারণে তারা কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হল। আর আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এ জঘন্য অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলেন। কি ছিল সেই শাস্তি?
فَلَمَّا جَآءَ أَمْرُنَا جَعَلْنَا عٰلِيَهَا سَافِلَهَا وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهَا حِجَارَةً مِّن سِجِّيلٍ مَّنضُودٍ مُّسَوَّمَةً عِندَ رَبِّكَ ۖ وَمَا هِىَ مِنَ الظّٰلِمِينَ بِبَعِيدٍ
“অতঃপর যখন আমার ফরমান জারি হল; তখন ভূখন্ডটির উপরিভাগকে নিচু করে দিলাম। এবং ওর ওপর ঝামা পাথর বর্ষণ করতে লাগলাম; যা ছিল একাধারে এবং যা বিশেষভাবে চিহ্নিত ছিল তোমার প্রভূর ভান্ডারে। আর উক্ত জনপদটি এ জালিমদের থেকে বেশি দূরে নয়।” -সূরা হূদ: ৮২-৮৩
কতই না ভয়ানক ছিল সেই শাস্তি! পুরো সম্প্রদায়কে জমিন সহ উল্টিয়ে দেয়া হল; তার ওপর একাধারে ঝামা পাথর বর্ষণ। অপরাধ–তাওহীদের প্রতি অবিশ্বাস; আর চরম পাপাচার সমকামিতায় লিপ্ততা।
- বর্তমান জাহিলিয়্যাত–
আমরা এক নব্য জাহিলিয়্যাতের মধ্য দিয়ে সময় পার করছি। এটা এমন এক জাহিলিয়্যাহ; ইতিহাসে যার কোন দৃষ্টান্তনেই। পূর্বের উম্মতদের অনেক জাহিলী সমাজকে আল্লাহ তাআলা নিঃশেষ করে দিয়েছেন। আর ঐ সব জাহিলিয়্যাতের সমন্বয়েই সৃষ্ট আমাদের এই অত্যাধুনিক (!) সমাজ! এই জাহিলী সমাজের একটা অপকর্ম নিয়ে আলোচনা করছি–লূত্ব আ. এর সম্প্রাদায় ছিল এক ধরনের জাহিলিয়্যাতের মধ্যে। নব আবিষ্কৃত অপকর্ম সমকামিতার মধ্যেই তারা লিপ্ত ছিল। আচ্ছা! বর্তমান সমাজে কি এই অপকর্মটি বিদ্যমান নেই?! হ্যাঁ আছে। তবে নব্য জাহিলিয়্যাত এই অপকর্মের কিছু আধুনিকায়ন করেছে। তাদের সমকামিতা ছিল শুধু পুরুষে-পুরুষে। কিন্তু এই নব্য জাহিলিয়্যাত এটাকে মেয়ে-মেয়ে গন্ডিতে উন্নতি (!) করেছে। তাদের মাঝে সমকামিতা ছিল, কিন্তু সমকামীরা পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে; এমন কোন দৃষ্টান্ত নেই। কিন্তু এই জাহিলিয়্যাতের মধ্যে পুরুষ-পুরুষ, নারী-নারী বিবাহকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধতা প্রদান করা হয়েছে। এই হচ্ছে আধুনিক জাহিলিয়্যাত।
- তবে প্রশ্ন জাগে–
সীমালঙ্ঘনের এত জঘন্য পর্যায়ে পোঁছার পরও কেন আল্লাহ তাআলা তাদেরকে ধ্বংস করছেন না!? কেন তাদেরকে তল-উপর করে দিচ্ছেন না!? কেনই বা তাদের উপর ঝামা পাথর বর্ষণ করছেন না!? অথচ, এরা তাদের চেয়ে হাজার গুণ বেশী সীমালঙ্ঘনে লিপ্ত। এর জবাব আল্লাহ তাআলা দিচ্ছেন–
قٰتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ
“তোমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। আল্লাহ তাআলা তোমাদের হাত দিয়ে তাদেরকে শাস্তি দেবেন।” -সূরা তাওবা:১৪
সুতরাং নব্য জাহিলরা আল্লাহ তাআলার শাস্তির পূর্ণ উপযুক্ত হয়ে আছে। পূর্বের বিভিন্ন সম্প্রদায়কে আল্লাহ তাআলা যে অপরাধে লিপ্ত হওয়ার কারণে ধ্বংস করেছেন; সেগুলোর এমন কোন ক্ষেত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না, যাতে এদের বিচারণ ঘটে নি। কিন্তু ঐ সব সম্প্রদায়কে আল্লাহ তাআলা ধ্বংস করেছেন তাঁর ফিরিশতাদের মাধ্যমে, আর এই আধুনিক জাহিলিয়্যাতকে ধ্বংসের দায়িত্ব দিয়েছেন আমাদের কাঁধে। তাই আল্লাহ তাআলার বান্দারা যদি এই সমস্ত সমকামীদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করে; তাহলে আল্লাহ তাআলা আপন বান্দাদেরকে সাহায্য করবেন। সমকামীরা কোনভাবেই আল্লাহ তাআলার বান্দাদের সামনে টিকতে পারবে না। কেননা, তারা তো শাস্তির উপযুক্ত হয়ে আছে। আল্লাহ তাআলা বলেন–
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ رُسُلًا إِلٰى قَوْمِهِمْ فَجَآءُوهُم بِالْبَيِّنٰتِ فَانتَقَمْنَا مِنَ الَّذِينَ أَجْرَمُوا ۖ وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ
“আর মুমিনদের সাহায্য করা আমার দায়িত।”–সূরা রুম: ৪৭
আল বালাগ
ম্যাগাজিন ইস্যু-২