JustPaste.it

মুজাহিদ আব্দুল্লাহ আযযাম (র.) এর পক্ষ থেকে কিছু উপদেশ

 

মানুষকে তার প্রাপ্য সম্মান দিনঃ

“…এবং তোমার পকেটগুলো লেবেল দ্বারা পরিপূর্ণ। আবার প্রত্যেকটি পকেট একটি লেবেল দ্বারা চিহ্নিত করা; একটি পকেট থাকে ‘কাফির’ লেবেল দ্বারা পরিপূর্ণ, এবং যখনি তুমি কাউকে দেখে তোমার অপছন্দ হয়, তখনি তুমি তাঁর সাথে এই লেবেল লাগিয়ে দাও। অন্য পকেটটি পরিপূর্ণ থাকে ‘বিদ’আতি’ লেবেল দ্বারা, এবং তৃতীয় পকেটটি যে লেবেল দ্বারা পরিপূর্ণ সেটি হল ‘নগণ্য’ এবং আরেকটি হল ‘মূর্খ’, ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবেই, তুমি প্রত্যেককে তোমার পকেট হতে একটি করে লেবেল এঁটে দাও…

পেশোয়ারের অনেক পরিবার স্থানীয় মার্কেটে ওয়াশিং পাউডার না পাওয়ায় তাদেরকে তা ইসলামাবাদ থেকে কিনতে হয় যাতে তারা তাদের কাপড়গুলো সমস্ত ময়লা থেকে পরিষ্কার করতে পারে। ঠিক তদ্রুপ আপনাদেরকেও এমন ওয়াশিং পাউডারের খোজ করতে হবে যা আপনাকে আপনার ভিতর থেকে পরিষ্কার করতে পারে। আপনি যদি কোন ইসলামিক দলের সদস্য হন তবে অবশ্যই এটা ধরে নিবেন না যে ভাল শুধু এই দলের মাঝেই সীমাবদ্ধ এবং সমস্ত মন্দ অন্য সকল দলের মাঝে বিদ্যমান। যেভাবে পূর্বের অহংকারী মানুষগুলো বলত যেঃ আমাদের সমস্ত কাজ সঠিক সামান্য কিছু ভুল থাকতেও পারে আর অপরদিকে অন্যদের সমস্ত কাজ ভুল সামান্য কিছু সঠিক থাকতেও পারে।” এ ধরনের চিন্তাধারা মারাত্মক ধ্বংসাত্মক। অনেক সংগঠন আস্তাবলে নিক্ষিপ্ত হয়েছে এবং অনেক ব্যাক্তি দ্বিধা বিভক্ত হয়ে গেছে এই ধরনের চিন্তা-ভাবনার কারণে!

 

আপনার অন্তরের দিকে নজর দিন এবং নিজেকে অন্যদের চেয়ে বড় মনে করার ব্যাপারে সতর্ক হোন এবং অন্যদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হতে বিরত থাকুন। কত মানুষ ইসলামের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করছে এবং সেটা তাদের ও আল্লাহ্‌র মাঝে সীমাবদ্ধ রাখছে! এটাও হতে পারে যাকে তাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ও উপহাস করা হচ্ছে, তারা হয়ত ইসলামের জন্য এমন ত্যাগ স্বীকার করছে যা কি না আপনার মত হাজারো ব্যাক্তিকে এককরলেও সম্ভব হবে না। তাই নিজের প্রতি মনোযোগী হোন, আল্লাহ্‌ এমন সব ব্যক্তির প্রতি রহমত দান করুন যারা তাদের সীমাবদ্ধতা জানে এবং এই সীমাবদ্ধতার ভিতর থাকে। গুণী ব্যক্তি তারাই যোগ্য ব্যক্তিদের প্রাপ্য সম্মান দেয়। বিশেষ করে ইসালামি স্কলারগন, বয়োজ্যেষ্ট, এবং পিতামাতা।

তাই আমার ভাইয়েরা আপনার ভালো কাজগুলো ধ্বংস হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে আপনি মনে করেন আপনি ইসলামের জন্য অনেক কিছু করছেন ।

মহান আল্লাহ্‌ বলেনঃ

১। যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য দুর্ভোগ,

২। যারা লোকের কাছ থেকে মেপে নেয় তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয়,

৩। এবং যখন তাদের মেপে দেয় অথবা তাদের জন্য ওজন করে তখন কম করে।

(আল কুরআন ৮৩; ১-৩)

যখন কেউ নিজের কথা বলে তখন শুধু তার ভালো কাজগুলোর কথা বলে এবং অন্যের কথা বললে শুধু তার দোষগুলো বলে। যেভাবে আল্লাহ্‌র রাসুল (স.) বলেনঃ “তোমরা নিজের ভাইয়ের ছোট ছোট ভূলগুলো দেখবে কিন্ত নিজের বড় বড় ভূলগুলো দেখতে ব্যর্থ হবে।” (তারগীব ওয়াত তারহীব)

আপনি একটা ভালো দলের অংশ হতেন পারেন, তাই বলে আপনি অন্যদের থেকে অনেক ভালো এটা মনে করার কোন কারণ নেই। আপনি ভালো কিছু বই পড়েন তাই বলে বিষয়টা এই না যে আপনি অন্যদের থেকে ভালো
বা আলাদা। ইখওয়ানের যেমন কিছু ভালো আছে তেমনি কিছু ভালো তাবলীগ ও সালাফীদের মাঝেও আছে। তাই আমাদের চেষ্টা করা উচিত তাদের কাছ থেকে সমস্ত ভালোগুলো নেয়া। কারন তারা অনেক স্কলারদের অনুসরন করে ও পড়তে অভ্যস্ত। তাই তাদের হাদীসের শিক্ষক একজন ও কুরআনের শিক্ষক আরেকজন এবং তদ্রুপ তাদের আত্মিক শিক্ষক একজন ও আরবীর শিক্ষক অন্যজন। তাবলীগ থেকে তাদের আচার-ব্যবহার নিয়ে নিন এবং চিন্তা করুন এটা কত ভালো হবে আমরা তাদের থেকে মানুষদের সম্মান করা শিখছি, স্কলারদের সাথে কেমন ব্যবহার করতে হবে শিখছি। তাবলীগরা অনেক ভালো ভালো কথা বলে, তারা যা বলে তারা সেটা মেনে চলে, ফলাফল স্বরূপ এগুলো ম্যাজিকের মত কাজ করে। এবং অনেক ক্ষেত্রে যারা তাবলীগের বিরোধিতা করে তারাও বিরোধিতা থেকে সরে আসে। ইখওয়ানের থেকে তাদের ঐতিহাসিক আন্দোলন এবং বৈপ্লবিক চিন্তাদ্বারা গ্রহণ করুন, সালাফিদের থেকে গ্রহণ করুন তাদের সত্যনিষ্ঠ বিশ্বাস। নিজের ভিতর এই সমস্ত ভালোগুলোর সংমিশ্রণ ঘটান এবং একজন শিক্ষার্থী হওয়ার চেষ্টা করুন। অবশ্যই শুধু আপনার শাইখের উপর নির্ভর করবেন না। সত্য যেখান থেকে যার কাছ থেকে আসুক না কেনো তা নেয়ার চেষ্টা করুন এবং যার যার প্রাপ্য সম্মান দিন।

[‘আন-নাস আসনাফ’ নামক খুতবা থেকে নেয়া হয়েছে, যা ১৯৮৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রদান করেন]

 

অসন্তুষ্টি প্রকাশ না করে পরামর্শ দিনঃ

এই জন্য, আল্লাহ্‌র নবী তাদের কথা আমাদের কাছে বলে গেছেন, যারা মুখোমুখি প্রশংসা করে থাকে। তিনি (স.) বলেছেন “তাদের মুখে ধূলা নিক্ষেপ কর” অর্থ যারা কোন ব্যক্তির সামনে ওই ব্যক্তিরই প্রশংসা করে, তাদের মুখে। তিনি (স.) আরও বলেন যখন তোমরা সামনাসামনি তোমার ভাইয়ের প্রশংসা করলে মানে তুমি তার মাধ্যমে মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিলে। এটা শুধু সেই ক্ষেত্রেই করা যেতে পারে যখন আপনি তার ভুলগুলো শুধরে দিতে চান। এই ধরনের ক্ষেত্রে তার কিছু ভালো গুণ আগেই উল্লেখ করাতে দোষের কিছু নেই। যেমন তাকে বলাঃ ভাই তুমি অত্যন্ত বুদ্ধিমান। মানুষরা তোমায় পছন্দ করে এবং তোমাকে নেতা হিসেবে মানে। কিন্তু আমি তোমার কিছু দোষ লক্ষ্য করেছি। তোমার পক্ষে কি এগুলো শোধরে নেয়া সম্ভব হবে? যদি সেই ব্যক্তির কর্তৃত্ব তোমার উপর থাকে, তোমার সিনিয়র অথবা তোমার মাতাপিতা হোন সেই ক্ষেত্রে তাদেরকে চিঠি (বা মেসেজ) পাঠাতে পার। উদাহরণ স্বরূপ-

হাসান আল-বান্না (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ “আমরা অভ্যস্ত হয়ে গেছি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ এই নীতিতে। আমাদের একজন শাইখ ছিলেন যিনি আমাদের আমাদের পড়াতেন আর দেখাশোনা করতেন। একদিন আমি উনাকে মাসজিদের দুটি পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে নামাজ পড়তে দেখলাম। তাই আমি উনাকে বলতে চাইছিলাম যে পিলারের মধ্যে নামাজ পড়া মাকরুহ। অতঃপর আমি একটি চিঠি লিখি এবং প্রেরক হিসেবে দিলাম “একজন উত্তম উপদেশদাতা”। লিখলাম, ‘হে শাইখ আমি আপনাকে দেখেছি মাসজিদের পিলারের মাঝে আপনি নামাজ পড়েন কিন্তু আল্লাহ্‌র রাসুল (স.) তা অপছন্দ করতেন’। আমি সেটা উনার ডাক বিভাগের মাধ্যমে পাঠিয়েছিলাম। তিনি চিঠি পড়ে উত্তর দিলেন, ‘হে যুবকেরা আমি এক ব্যক্তির চিঠি পেয়েছি যে কিনা আমাকে দুই পিলারের মাঝে নামাজ না পড়তে উপদেশ দিয়েছে এবং আমার তা আগে জানা ছিল না যে পিলারের মধ্যে নামাজ পড়া মাখরুহ, তোমরা কেউ এটা করো না’।

হাসান আল-বান্না আরও বলেনঃ “আমি সেই যুবকদের মধ্যে থেকে ছিলাম যাদের সামনে উনি কথা গুলো বলেছিলেন। সুতরাং, আমরা আমাদের শিক্ষককে কোন অপমান না করেই ভালো একটা কাজ করে ফেললাম…”

অতএব সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ দেয়া ব্যক্তির জন্য আবশ্যক সে যেন মানুষদের ভালোবাসে; সে যেন দূরদর্শি হয়; সেন যে জিহ্বা সংযত রাখতে পারে। কারো কাছে গিয়ে এরূপ বলো না যে “আপনাকে আমি আল্লাহ্‌র জন্য ঘৃণা করি কারন আপনি এইটা করেছেন বা অইটা”। এর পরিবর্তে, আপনি কি এভাবে বলতে পারেন না “আমি আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালবাসি, আমার ভাই! যদিও, আমি আপনার মাঝে সাধারন এবং ছোট একটি ভুল দেখেছি।”

আল্লাহ্‌র কসম, এক ভাই আমাকে নিচের ঘটনা বর্ণনা করলেনঃ

“কেউ একজন আমার কাছে আসল এবং বলল, ‘আমি তোমাকে আল্লাহ্‌র জন্য ঘৃণা করি’।”

তাই আমি তাকে বললাম, ‘কেন? কেন তুমি আল্লাহ্‌র জন্য আমাকে ঘৃণা কর?’

সে জবাবে বললঃ “কারন তোমার বাবা ইখওয়ানুল মুসলিমীনের সদস্য ।”

লা হাউলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। ইসলাম কি তাই? আমি তাকে ঘৃণা করি আল্লাহ্‌র জন্য- কিন্তু কেন? কারন তার বাবা ইখওয়ানুল মুসলিমীনের সদস্য! আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে আল্লাহ্‌ই যথেষ্ট, এবং এই ব্যাক্তি মনে করল যে সে ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজের নিষেধ করেছে এবং সে সত্যের ঘোষণা দিয়েছে এবং সে চিন্তা করল যে সে পুরস্কৃত হবে যে সিদ্ধান্ত একজন মুসলিমের উপর সে চাপিয়ে দিয়েছে তাঁর কারণে……………

[ফি দিলাল সুরাহ তাওবা – পৃ-৭৫]

 

আলকুরআনঃ

“সুতরাং, এটি আপনার উপর যে, আপনি কুরআনের প্রতি যত্নবান হবেন কি, যা আপনার হৃদয়ের স্পন্দন , অন্তরের আলো ও হতাশা দূরকারী। আর এখনই হল কুরআন মুখস্থ করার সময়। আমি এটি শুরু করে খুবই উপকৃত হয়েছিলাম ১৯৬৬ সালে (ফিলিস্তিনের যুদ্ধের সময়) প্রশিক্ষনের দিনগুলো থেকে। আমি খুবই ভালো ফলাফল পেয়েছিলাম কুরআন মুখস্থ করে এবং সেই সময়টা ছিলো আমার হৃদয় ও আত্মা বিশুদ্ধকরনের সোনালী সময়। তাই এখানে এটা আপনার জন্য মুখস্থ করা সহজ; খুবই সহজ ……হ্যাঁ। আমার কাছে বড় ছাপার একটি কুরআনের কপি ছিল এবং যখন আমি রাত্রে পাহারা দিতাম তখন আমি যা দিনে মুখস্থ করতাম তা পুনরায় তিলাওয়াত করতাম। যদি আমি কোথাও ভুল করতাম তখনই আমি তা খুলে দেখতাম এবং চাঁদের আলোতে তা পড়তাম। আর এখন, আমি দিনের আলোতেও ভালোভাবে দেখি না, সুতরাং আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের চোখের জ্যোতি বৃদ্ধির জন্য দু’আ করি…

 

তাই চেষ্টা করুন দৈনিক পাঁচটি আয়াত মুখস্থ করতে এবং শুরু করুন সুরা আনফাল দিয়ে । প্রতিদিন সকালে ফযর নামাযের পর বসে পড়ুন কুরআন নিয়ে, মুখস্থ করুন সুরা আনফালের পাঁচটি করে আয়াত এবং পুনরাবৃত্তি করুন আগের দিনের পাঁচটি আয়াত। আপনি তা মুখস্থ করতে পারবেন ১৫ দিনেঃ ৭৫ টি আয়াত, ৫ টি আয়াত প্রতিদিন………এটা আপনার জন্য খুবই সহজ ।

 

আমাদের ভাই, খালিদ কালবান- যে শহীদ হয়েছে দুদিন আগে, রিয়াদের আবু আল ওয়ালিদ, শহীদ হয়েছে শুক্রবার দুপুর ২-৩০ মিনিটে। আমি তার ভাইয়ের কাছে গিয়েছিলাম, তখনো আমি তার শহীদ হওয়ার কথা জানতাম না, এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যে তার আশেপাশে থাকত তাঁর সম্পর্কে তারা বলল যে, তাঁর প্রতিটি কাজই ছিল আখিরাত মুখী। মধ্যরাত হতে রাত ১টা পর্যন্ত পাহারা দিত, অতঃপর, সে নামাজে থাকত ফযর পর্যন্ত। সকালে ফযরের আযান দিত এবং নামাজ পড়ত। তারপর সে যিকির করত। সে সোমবার ও বৃহস্পতিবার নিয়মিত রোযা থাকত এবং রোযা থাকত প্রতি আরবি মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখ এবং শাওয়ালের ৬ দিনও। তারা আরও বলল শুক্রবার রাতে অর্থাৎ তার জীবনের শেষ রাতে – সে রাতে ১টার পর্যন্ত পাহারার কাটালো এবং তারপর নামায পড়লো ফযর পর্যন্ত। সে নিকে ফযরের আযান দিল এবং নামায পড়ল। তারপর সকালের যিকির করলো। তারপর আমরা ঐ দিনের জন্য নির্ধারিত যুদ্ধক্ষেত্রে রওয়ানা করলাম। পথিমধ্যে, সে সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করল এবং প্রার্থনায় বেশি করে মুহাম্মদ স. এর উপর দরূদ পড়ল। যখন আমরা পৌছালাম, তার ইয়েমেনের সাথী বলল- আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমার কি সুরা কাহাফ তিলাওয়াত করা শেষ এবং সে বলল “হ্যাঁ”। তারপর আমরা মর্টার বর্ষণ শুরু করি এবং মর্টারের ১৯তম শেলটি ভিতরেই বিস্ফোরিত হয় এবং শেলের বেশকিছু টুকরো তার শরীরে ঢুকে পড়ে। এরপর সে মাত্র দুইবার খিঁচুনি দিলো এরপর, তার আত্মা মহাবিশ্বের রবের কাছে সমর্পণ করে।

[ফি আত তারবিয়া আল জিহাদিয়া ওয়াল বিনা; ২/৪০-৪২]

 

তাঁদের নিকট কঠোর হয়ঃ

“…এবং এই কারনে তারা হাজার আল হাইসামিকে বলেছিল, ‘একজন মুসলিমের জন্যে কি এটা জায়েজ যে, সে একজন খ্রিষ্টানকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য হাত বাড়িয়ে দিবে যাতে সে তার সাথে মুসাফাহা করতে পারে?’ তিনি উত্তর দিয়েছিলেন না। কারন একজন ক্রিষ্টান তখন শান্তি অনুভব করবে যখন আপনি মুসাফাহা করবেন। সুতরাং ইহার অনুমোদন নেই যে আপনি একজন ক্রিষ্টানকে শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য হাত বাড়িয়ে দিবেন।

…এটি আমাকে জর্ডানের ইসলামিক আন্দোলনের নেতা আমাদের শিক্ষক মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান খালিফাহ বর্ণনা করেছেনঃ

“আত্মসম্মান কি জিনিস, এই গল্প থেকে আমি বুঝতে পারলাম । যখন আমি কিশোর ছিলাম, জর্ডানের আস-সালত এর জজ অসুস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। সেটি ছিল আমার স্কুলের ষষ্ট বর্ষ এবং আমি সিদ্ধান্ত নিলাম তাকে দেখতে যাব। এ জন্য আমি তার বাড়িতে গিয়ে কলিং বেল চাপ দিলাম। তিনি দরজার নিকটে আসলেন এবং আমি তাকে বললাম আমি আব্দুর রহমান খলিফার পুত্র। আমাকে আমার আব্বা আপনাকে দেখতে পাঠিয়েছেন। তখন জজ আমাকে বললেন, ‘ভেতরে এসো বাবা’।”

অতঃপর, আমি ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম যে, ক্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতারা তার অসুস্থতার জন্য তাকে দেখতে এসেছেন। সেখানে ছিল অরথডক্স এবং ল্যাটিন চার্চের পুরোহিত। যাই হোক, আস-সালত এ তখন দুটো গির্জা ছিল। আমি যখন রুমে প্রবেশ করেছিলাম তখন আমি ছিলাম সেখানে একমাত্র তরুন। তিনি প্রধান যাজককে বললেনঃ ‘উঠ এবং ওখানে গিয়ে বসো’। এবং তিনি আমাকে বললেন, “আস আমার বাবা, আমার পাশে বস।” তারপর তিনি যাজককে বললেন এই হল আমার ধর্ম যা আমাকে নির্দেশ দেয় এভাবে ব্যবহার করতে। সুতরাং আমি যদি তোমার বাড়িতে যাই তুমিও আমার সাথে সেরুপ ব্যবহার করো যা তোমার ধর্ম নির্দেশ দেয় ।

“তারপর মুহাম্মদ খলিফা আমাকে বললেনঃ ‘সেই মুহূর্তে আমি উপলব্ধি করলাম যে মুসলিমরা হলেন মহান, সে মানুষের মাঝে সবচেয়ে সম্মানিত’।

[আফগান-পাকিস্তান সীমান্তের একটি ক্যাম্প এ দেয়া বক্তৃতা থেকে নেয়া হয়েছে, যা ১৯৮৭ সালের ২৯ অক্টোবর তিনি প্রদান করেছিলেন]

 

শুধুমাত্র আবেগই যথেষ্ট নয়ঃ

আল্লাহ্‌র নামে বলছি, একজন তরুন আমার কাছে এসেছিল এবং সে প্রায়ই আমার কাছে আসত। সে আমাকে ভালবাসত এবং সে ছিল জর্ডানিয়ান । সে শাকেরি মুস্তফাকে নেতা হিসেবে মানত এবং তার চিন্তা ধারা প্রবলভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। আমি তার নিজের বিশ্বাসে সুদৃঢ় কোন তরুণ কে দেখি নি। সে একজন ফার্মাসির ছাত্র ছিল এবং সে কায়রোতে মাঝে মাঝে আমার সাথে ইফতার করত।

একদিন সে শাকেরি মুস্তফার সাথে সাক্ষাতের পর আমার কাছে আসল। সে আমার সাথে আলাপ শুরু করল এবং আমিও তার সাথে আলাপচারিতা শুরু করলাম। হঠাৎ সালাতের সময় হল। আমি লক্ষ্য করলাম সে আমার পিছনে সালাত পড়তে অনিচ্ছুক। তখন আমি তাকে বললামঃ ‘দয়া করে তুমি ইমামতি কর’। তারপর সে সামনে গিয়ে আমাদের ইমামতি করল। তারপর প্রত্যেক সময় আমি যখন ইমামতির পদক্ষেপ নিতাম সে বলত যে সে সফরে আছে (এ জন্য তাকেই ইমামতি করতে হবে)। তারপর আমি সরাসরি তাকে বললাম “তুমি আমার সম্পর্কে কি মনে কর?”

সে জিজ্ঞাসা করলঃ “আমি কি আপনার সাথে স্পষ্টভাষী হতে পারি।”

আমি বললামঃ “হ্যা, তুমি স্পষ্টভাষী হতে পারো।”

সে বললঃ “আমি আপনাকে কাফির হিসেবে বিবেচনা করি।”

আমি বললামঃ “কেন বৎস? কারন কি?”

সে জবাবে বললঃ “আপনি ইখওয়ানুল মুসলিমীনের সদস্য।”

আমি বললামঃ “আচ্ছা।”

সে বলে যেতে লাগলঃ “ইখওয়ানুল মুসলিমীনের সব কাফির।”

আমি বললামঃ “কেন?”

সে বললঃ “কারন তারা কাফির আল-হুদাইবিকে তাকফির করে না(কাফির হিসেবে গন্য করে না)।” [*]

চিন্তা করুন! তখন আমি তাকে বললামঃ “আসো, আমি তোমাকে বলিঃ শাফি(র.) এবং আহমেদ বিন হাম্বল (র.) দুজনের মধ্যে মতভেদ রয়েছে এমন কাউকে নিয়ে যে নামায অলসতার কারনে ছেড়ে দিল। শাফি (র.) বলেন সে কাফির নয়, আর আহমেদ বিন হাম্বল (র.) বলেন সে কাফির, এবং তারা এর উপর যুক্তি তর্ক পেশ করলেন, কিন্তু তারা একে অপরকে কাফির বলে নি।”

সুবাহানাল্লাহ্‌ ! আর উগ্র আবেগ নিয়ে জন্য সে আমাকে বলল,তার ভাষায় “যদি আমি সেইসময় থাকতাম এবং আশ-শাফি (র.) এর সাথে বিতর্ক করতাম, এবং তিনি যদি তাকফীর করতে প্রত্যাখ্যান করতেন, তাহলে আমি শাফি (র.) কে কাফির বলে আখ্যায়িত করতাম

লা হাউলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। আমরা এখানেই শেষ। এখান থেকে বের হয়ে যাও। যদি ব্যাপারটা এতদূর গড়ায়, তাহলে সম্পর্ক আমাদের এখানেই সমাপ্ত।

এবং হ্যাঁ, সে শাকেরি মুস্তফা কে অনুসরন করল এবং ১৫ বছরের জেল সাজা প্রাপ্ত হল এবং এখন পর্যন্ত সে জেলে আছে। এই যুবকেরা তাদের জ্ঞানহীনতা এবং উগ্র আবেগের কারণে তারা তাদের প্রবৃত্তকে অনুসরণ করে।

[ফি যিলাল সুরাহ তাওবা- প-১০৪]

[*] আল হুদাইবি(আল্লাহ্‌ তার উপর রহম করুক) যিনি ইখওয়ানের একজন স্কলার ছিলেন এবং গ্রেপ্তার হয়েছিলেন আবদ-আন-নাসেরের দ্বারা। তিনি নিজে আবদে নাসেরকে একজন কাফির হিসেবে বিবেচনা করতেন। যখন তিনি জেলে নির্যাতিত হলেন এবং আবদে নাসেরকে কাফির বলার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হলেন, তখন তিনি জবাব দিলেনঃ ‘তাকে কাফির ঘোষণা দেই অথবা না দেই এতে আমাদের কি লাভ হবে?’- যা তিনি হিকমার সাথে বলেছিলেন, যাতে তারা তাকে সরাসারি অভিযুক্ত করতে না পারে। অতঃপর, তাঁর এইরূপ জবাবের দরুন শাকরির দল আল-হুদাইবিকে তাকফির করে বসল। এরপর তারা সেখানেই থেমে থাকলো না বরং ইখওয়ানকেও তাকফির করল কারণ তারা আল-হুদাইবিকে তাকফির করে না।