JustPaste.it

কাশ্মির একদিন ইসলামের ভুমি হবে!

মুল- কমান্ডার জাকির মুসা হাফিজাহুল্লাহ

 অনুবাদ- আহমাদ আব্দুল মালিক

 

লেখক পরিচিত

জাকির রশীদ ভাট ভারত শাসিত কাশ্মীরের একজন মুজাহিদ। তিনি কমান্ডার জাকির মুসা নামে পরিচিত। কমান্ডার জাকির মুসা হাফিজাহুল্লাহ ২০১৩ সালে কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদীনে যোগ দেন। তিনি হিজবুল মুজাহিদীনের একজন প্রাক্তন কমান্ডার ছিলেন, ইন্ডিয়ান আর্মির হাতে এনকাউন্টারে শাহাদাতের আগে এই পদে ছিলেন শহীদ বুরহান মুজাফফর ওয়ানী রহঃ। ওয়ানীর শাহাদাতে মুসলমানদের মাঝে অসন্তুষ্টি দেখা দিলে ২০১৬ সালে কাশ্মিরে বিক্ষোভ ও আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। কাশ্মিরের জনগণ প্রতিবাদে ফেটে পড়েন। হুররিয়াত নেতারা কাশ্মীর সমস্যাকে ইসলামী শরীয়াহ্‌র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বলার পরিবর্তে তাকে রাজনৈতিক সমস্যা বলায় তিনি হুরিয়াত নেতৃবৃন্দের মুন্ডুচ্ছেদ করার হুমকি দেন। তিনি তাদেরকে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার পথে কাটা না হওয়ার জন্যও সতর্ক করেন। এই বক্তব্যের একদিন পর হিজবুল মুজাহিদীন হুমকিসূচক সেই বক্তব্য থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয়। এর প্রতিক্রিয়ায় মুসা পদত্যাগ করেন।

২০১৭ সালের জুলাইতে গ্লোবাল ইসলামিক মিডিয়া ফ্রন্ট কমান্ডার জাকির মুসা হাফিজাহুল্লাহকে কাশ্মীরে আল-কায়দার নতুন শাখা আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের প্রধান হিসেবে ঘোষণা করে।

জাকির রশীদ ভাট দক্ষিণ কাশ্মীরের ট্রাল জেলার নুরপাড়া এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। কমান্ডার জাকির মুসা হাফিজাহুল্লাহ চান্দিগড় কলেজের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একজন ছাত্র ছিলেন। তাঁর পিতা সেচ বিভাগের একজন সরকারী কর্মকর্তা।

কমান্ডার জাকির মুসা হাফিজাহুল্লাহ ২০০৮ সালে পুলোয়ানার জওহর নাভোদায়া বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেনীতে ভর্তি হন এবং নুর পাবলিক স্কুলে তার ১০ম শ্রেনীর শিক্ষা সমাপ্ত করেন। তিনি ২০১১ সালে এইচ.এস.সি পাস করেন। কলেজ ছেড়ে দেয়ার পর তিনি ২০১৩ সালে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ইদরিসের অনুপ্রেরণায়  হিজবুল মুজাহিদীনে যোগ দেন।

২০১৬ সালের আগস্টে সর্ব প্রথম তার ভিডিও বার্তা প্রকাশিত হয়। তাঁকে “প্রযুক্তিপ্রিয় নতুন প্রজন্মের শিক্ষিত জিহাদী” বলা হয়ে থাকে। তিনি ২০১০ এর কাশ্মীর অসন্তোষে জড়িয়ে পড়েন। “কাশ্মীরীদের সংগ্রাম কোন রাজনৈতিক সংগ্রাম নয় বরং তা ইসলামী শরীয়াহ্‌ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম”– তার এমন বক্তব্য থেকে হিজবুল মুজাহিদীন সরে আসলে তিনি দল ত্যাগ করেন।

২০১৭ সালের ২৭ জুলাই আল-কায়দা অ্যাফিলিয়েটেড মিডিয়া উইং গ্লোবাল ইসলামিক মিডিয়া ফ্রন্ট জম্মু এবং কাশ্মীরে আল-কায়দার নতুন প্রতিষ্ঠিত শাখা “আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ” এর প্রধান হিসেবে কমান্ডার জাকির মুসা হাফিজাহুল্লাহর নাম ঘোষণা করে। কমান্ডার আবু দুজানা রহঃ এবং আরিফ লেলহারি রহঃ শাহাদাতের পর কমান্ডার জাকির মুসা হাফিজাহুল্লাহ’র একটি বার্তা প্রকাশ করা হয়। বার্তাতে তিনি বলেন যে, আবু দুজানা রহঃ এবং লেলহারি রহঃ উভয়ই আল-কায়দায় যুক্ত হয়েছিলেন এবং তারা “আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ” গঠনে সাহায্য করেন। এদিকে মিডিয়াতেও কমান্ডার আবু দুজানা রহঃ ও আরিফ লেলহারি রহঃ এর একটি অডিও বার্তা ছড়িয়ে পড়ে এবং এনকাউন্টারের পুর্বে এটিই তাদের শেষ বার্তা বলে দাবী করা হয়। অডিওতে দুজনেই আল-কায়দার প্রতি আনুগ্যতের ঘোষণা করেন।

১২ আগস্টের এক রিপোর্টে বলা হয় যে, ট্রালে’র নূরপাড়া গ্রামে ইন্ডিয়ান আর্মির কথিত সন্ত্রাসী বিরোধী অভিযান চলাকালে জনগণের বাধায় কমান্ডার জাকির মুসা হাফিজাহুল্লাহ এবং তাঁর সহযোগী পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ৩১ আগস্টের এক অডিও বার্তায় কমান্ডার জাকির মুসা হাফিজাহুল্লাহ পাকিস্তানকে “কাশ্মীর জিহাদে বিশ্বাসঘাতকতার” অভিযোগ করেন। তিনি আরও বলেন “আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের উদ্দেশ্য হচ্ছে সংগঠনটিকে পাকিস্তান সরকার, সেনাবাহিনী, এবং তাদের গোয়েন্দা মুক্ত করা”। তিনি ভারতকে হিন্দুদের হাত থেকে মুক্ত করারও ঘোষণা দেন। হিজবুল মুজাহিদিন ২০১৭ সালে সোপরের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো পোষ্টারে তাঁকে ভারতের দালাল বলে অভিযুক্ত করে এবং প্রস্তরঘাতে তাকে হত্যার জন্য জনগণকে আহ্বান করে। কিন্তু কমান্ডার জাকির মুসা হাফিজাহুল্লাহ তাঁর বিভিন্ন বার্তায় তাদের সমুচিত জবাব দেন।

-------------------------

بسم الله والحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وآله وصحبه ومن والاه

সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তায়ালা এর জন্য এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবী এবং তাঁর অনুসারীদের উপর আল্লাহর শান্তি ও রহমত নাজিল হোক।

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ اسْتَعِينُوا بِاللَّهِ وَاصْبِرُوا ۖ إِنَّ الْأَرْضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ۖ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ

“মূসা বললেন তাঁর কওমকে, আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো এবং ধৈর্য ধারণ করো। প্রকৃতপক্ষে এই পৃথিবী মালিক একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা। তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেন এবং শেষ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্যে নির্ধারিত আছে”। (সূরা আল আ’রাফ-১২৮)

কাশ্মীর এবং উপমহাদেশের মুসলিম ভাইয়েরা!

আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন আল্লাহ আপনাদের সাহায্য করেন এবং আমরা যেন তাঁর হয়ে যাই আর তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর নিজের বানিয়ে নেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহ যেন কাশ্মীর আর উপমহাদেশের মুসলমানদের তাগুতদের হাত থেকে মুক্ত করেন আর এই অঞ্চলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করার তাওফিক দেন। আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।

আমি দোয়া করি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে যেন তিনি কাশ্মীর ও উপমহাদেশের প্রতিটি মুজাহিদ ভাইকে রক্ষা করেন ও অলৌকিক সাহায্য দেখান।

আমার প্রিয় ভাইয়েরা!

আমি আপনাদের কাছে আপনাদের এই ভাই ও ছাত্রের জন্য দোয়া কামনা করি, যেন আল্লাহ আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন এবং একটি পুণ্যবান জীবন আর শাহাদাতের মরণ দান করেন।

ও আমার প্রিয় কাশ্মীরের ভাই, বোন, মুরুব্বি এবং বন্ধুরা!

এই অন্ধকারের যুগে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে আমরা যেন আমাদের সবর ও দোয়া, দাওয়াহ ও সৎ কাজ এবং ঈমান ও আকিদাকে পরিত্যাগ না করি!

ধৈর্য ধারণ করুন! কারণ আল্লাহ ধৈর্য ধারণকারীদের পছন্দ করেন। ধৈর্য ধারণ করুন! কারণ আল্লাহর সাহায্য অতিনিকটে।

আল্লাহর ইবাদতে জুড়ে থাকুন! আল্লাহ্‌ সেই লোককে পছন্দ করেন যে তাঁর সম্মুখে তাঁর জন্য-ই ইবাদত করে। আর এটাই নবীদের দেখানো পথ।

অধিক পরিমাণে সৎ কাজ করুন! কারণ এটা ছাড়া সকল সকল ইলম ও দোয়া বিফলে যাবে। আর এক ফোটা নিফাকও সকল ভাল কাজকে নষ্ট করে দেয়।

আপনার ঈমানকে হেফাজত করুন! কারণ এটাই আমাদের মুসলমান বানায়।

ঈমান বুঝা জরুরি। ঈমানের দাবী হল আমাদের সব দোয়া আর আশা যেন এক আল্লাহর সাথেই হয়। তিনি এমন সত্তা যার কোন শরীক নেই। না অন্য কোন খোদা! না কোন মূর্তি! না কোন মানুষ! না কোন দেশ! না কোন সেনাবাহিনী না! না কোন নমরুদ! না কোন ফেরাউন! ঈমান ছাড়া আমাদের কোন-ই মূল্য নেই। আমাদের শুরু আর আমাদের শেষ সবই আল্লাহর উপর ঈমান দিয়ে।

আমার শ্রদ্ধেয় ভাই, বোন আর বড়রা!

যদি আমরা ধৈর্য, দোয়া, দাওয়া, সৎ কাজ, ঈমান ও আকিদাকে ধরে রাখতে পারি, তাহলে কোন শক্তি-ই আমাদেরকে আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত রাখতে পারবে না। কাশ্মিরের ঈমানদার, মুজাহিদ ও শহীদদের গুরুত্ব ইসলামী বিশ্বে একটা ঝলমলে তারকার মতো। ১৯৩১ সালের অন্ধকার যুগে যখন মুসলিম বিশ্ব নিষ্ঠুর পশ্চিমাদের জুলুমের মধ্যে ছিল তখন কেউ গোষ্ঠীতন্ত্রের কেউ গণতন্ত্রের আবার কেউ কেউ সমাজতন্ত্র আর রাজতন্ত্রের আশ্রয় গ্রহণ করেছিল, কিন্তু আপনাদের পূর্বপুরুষরা আযানের পবিত্রতা রক্ষা করার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছিলেন এবং নিজেদের জান ও মালের পরোয়া না করে ইসলামের পতাকা সমুন্নত রেখেছিলেন। তাঁরা শাহাদাত বরণ করেছেন কিন্তু মাথা নত করেন নি।

তখন থেকেই চরম জুলুম, আশাহীনতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা থাকা সত্ত্বেও আপনারা ইসলামকে পরিত্যাগ করেননি। আপনারা ভারতীয় কাফেরদেরকে হুমকি দিচ্ছিলেন কখনো তাদের অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে আবার কখনো পাথর দিয়ে। যখন ভেড়ার আবরণের নিচে লুকিয়ে থাকা হিংস্র নেকড়েগুলো তাদের আসল পরিচয় প্রকাশ করে দিয়েছে তখনও আপনারা আপনাদের মনোবল হারাননি। বরং আপনারা একটি মাইল ফলক সৃষ্টি করেছেন কখনো কালাসনিকভ দিয়ে আবার কখনো পাথর দিয়ে।

আমার প্রিয় ঈমানদার ভাইয়েরা!

আল্লাহর কসম! আপনাদের ত্যাগগুলো মহান। আপনারা সামনের সারিতে দৃঢ়ভাবে দাড়িয়ে গেছেন এবং মুজাহিদদের রক্ষা করছেন। এটা কোন জিহাদের থেকে কম নয়। আল্লাহ আপনাদের ইবাদাত কবুল করুন! এটা আপনাদের ঈমান, যা আপনাদেরকে এমন বীরত্ব আর সাহস দ্বারা সম্মানিত করেছে। আল্লাহ আপনাদের আরও দৃঢ় করুন আর গাজওয়ায়ে হিন্দের শহীদদের মধ্যে উচ্চ মর্যাদা দান করুন! আমিন।

আমার প্রিয় ভায়েরা!

সম্প্রতি আমার ও আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের উপর অনেক অভিযোগ করা হয়েছে। আল্লাহ চাইলে, আমি এবং আমার সাথীরা এই অভিযোগের জবাব রক্ত দিয়ে দিব। আমরা আল্লাহর কাছে ওয়াদা করছি এবং তাঁর ওয়াদার উপর বিশ্বাস করি যে তিনি আমাদের সাহায্য করবেন এবং জান্নাত থেকে সাহায্য পাঠাবেন। কিন্তু যারা আমাদেরকে দোষারোপ করল তারা কিভাবে তাদের আত্মা পরিশুদ্ধ করবে?

যারা ইসলামের নামে জাতীয়তাবাদের মূর্তি তৈরি করেছে, দেশকে খোদা বানিয়েছে আর মদ্যপ জেনারেলদের ফেরেস্তা বানিয়েছে, তাদের আর সামেরি’র মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

আমাদের প্রিয় এবং সম্মানিত মুজাহিদ নেতা শহীদ আফজাল গুরু রহ. তাঁর তিহার জেলে বসে লেখা বই ‘আয়না’ গ্রন্থে এই মূর্তিগুলো ভেঙ্গে ফেলেছেন আর এদের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। শহীদ আফজাল গুরু ছিলেন শরীয়াহ ও শহীদি নীতির অগ্রগামী যার পতাকা আমরা তুলেছি। তিনি পরিষ্কার ভাষায় লিখেছেন যে “পাকিস্তানি সেনাদের প্রভাব ও নিয়ন্ত্রণে জিহাদের ফল নষ্ট হবে ও বিফলে যাবে”। তিনি লিখেছেন যে “কাশ্মির সমস্যার সমাধান রয়েছে শহীদ আশফাকের সামরিক পদ্ধতিতে”।

তিনি তাঁর বইয়ে আরও লিখেছেন- “একমাত্র পাকিস্তানী সরকারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও পলিসির হাত থেকে কাশ্মিরের জিহাদের নিয়ন্ত্রণকে সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে-ই পাকিস্তানি মুজাহিদদের রক্ত আর ত্যাগ বজায় রাখা যাবে। জিহাদের আশা ও ভরসা আইএসআই ও পাকিস্তানী শাসকদের হাতে ছেড়ে দেওয়া জিহাদের অবমাননা ছাড়া আর কিছুই না, যারা সত্যিকার অর্থে আমেরিকার গোলাম”। আমরাও এই একই মানহাজ নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি আর এটা আমাদের সঙ্কল্প যে আমরা আইএসআই’ এর প্রভাব থেকে কাশ্মিরের জিহাদি কর্মকান্ডকে মুক্ত করব আর শহীদ আফজাল গুরু রহ. এর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব।

ইসলামে-ই সম্পূর্ন জীবনব্যাবস্থা রয়েছে। কুরআন সম্পূর্ন হয়েছে। তাহলে এটা কোন তর্ক আর বিশ্বাস যেখানে তোমরা আল্লাহর উপর ভরসা ছেড়ে একটা দেশের উপর ভরসা কর!?

যারা আমাদেরকে দোষারোপ করেছে তাদেরকে এটা বলছি- আমরা হচ্ছি আল্লাহর সৈনিক এবং আমরা ওই দোয়া-ই করব যেটা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবারা করতেন- হাসবুনাল্লাহু ওয়ানি’মাল ওয়াকিল অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট, এবং তিনি আমাদের জন্য সর্বত্তোম কাজের নিষ্পত্তিকারী। তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক ও রক্ষাকারী!

আমার প্রিয় ভাই, বোন, মুরুব্বী ও বন্ধুরা!

আপনারা সবসময় আমাদের দোয়ায় আছেন এবং আমরা বিশ্বাস করি যে আমরাও আছি আপনাদের আন্তরিক দোয়ায়।

একটি ইসলামী সমাজ গড়া একটা দেয়াল গড়ার মতই। প্রতিটি ইট ভাল মতো বসানো গ্রুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ইটের জায়গা ও ভূমিকা আছে। প্রতিজন মুসলিম-ই একটা ইটের মতো এবং নিজেকে ঈমান দ্বারা শক্ত করা জরুরি। নিয়মিত সালাত আদায় করবেন, গুনাহ থেকে বিরত থাকবেন, এবং নীতি ভ্রষ্টকারী বিভিন্ন বিষয় থেকে বিরত থাকবেন এবং আল্লাহ ও আল্লাহর বান্দাদের হক সম্পর্কে সচেতন থাকবেন।

কাশ্মিরে জিহাদের পতাকা উত্তোলনকারী আমার প্রিয় আর মহান ভাইয়েরা!

আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা হচ্ছি এক পবিত্র আন্দোলনের উত্তরাধিকারী এবং ভারতের আসন্ন বিজয়ের সাহায্যকারী। আল্লাহ আমাদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে (ভারতে) পাঠিয়ে অনেক বড় নেয়ামত দিয়েছেন। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা ও শহীদ হওয়ার চেয়ে বড় কোন পুণ্যের কাজ নেই। কাশ্মিরের মুজাহিদদের গত ৩০ বছরের ত্যাগের উত্তরাধিকারী আমরা। ভাই আব্দুল্লাহ বাংরু আর নাসিরুল ইসলাম এবং আফজাল গুরু থেকে নিয়ে বুরহান ওয়ানী, আব্দুল কাইয়ুম নাজার, ফারদিন এবং মানযুর পর্যন্ত সবার রক্তের ঋণ আমাদের উপর। তাঁরা নিজেদের রক্ত কাশ্মিরে শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রবাহিত করেছেন।

আমার সম্মানিত ও প্রিয় ভাইয়েরা!

আমি আপনাদের পায়ের ধুলার সমানও না বরং ইসলামের একজন সাধারণ যোদ্ধা মাত্র। আপনারা সব সময় আমার দোয়ায় থাকেন। আপনারা আমাদের ঈমানের ও জিহাদের ভাই। এটি যে কোন রক্তের সম্পর্কের থেকে বেশি গভীর। আল্লাহ যেন আমাদের একটি পুণ্যবান জীবন ও শাহাদাতের মরণ দান করুন! আল্লাহ আমাদেরকে সত্য চিনতে এবং বুঝতে ও সেই অনুযায়ী কাজ করতে সাহায্য করুক এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য করতে সাহায্য করুক।

আমার সম্মানিত ও প্রিয় ভায়েরা! আমাদের জিহাদ ও রক্ত ঝরানো আল্লাহর কাছে অনেক বড়, কারণ জিহাদ একটা বড় কাজ।

আর কাশ্মিরের জিহাদ গত ৩ বছর ধরে চলে আসছে কিন্তু এর সুফল পাকিস্তানী সংস্থা গুলোর হস্তক্ষেপ ও প্রভাবের কারনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আপনারা মুজাহিদরা আল্লাহর যোদ্ধা, কোন তাগুতি সরকার বা সংস্থার যোদ্ধা না। আপনারা আপনাদের ঘর ছেরেছেন শরীয়াহ বাস্তবায়নের জন্য।

আপনারাও একই রকম, আপনারা স্বল্প সংখ্যক হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয়দের হুমকি দিয়েছেন। আপনারা সূরা আনফাল ও সূরা তাওবা পড়ে মাঠে নেমেছেন, পাকিস্তানী সেনার হুকুমে অথবা তাদের আশা-ভরসায় নামেন নি।

এই সব বিষয় মাথায় রেখে আমার প্রিয় ভায়েরা! এটাই কি সঠিক না যে আপনারা আল্লাহর সাহায্যে একাই এই জিহাদকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। মনে রাখবেন! বিজয় আল্লাহর হাতে। কোন সংস্থা, দেশ বা ব্যক্তি বিশেষের হাতে নয়। ভারতীয়দের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া অস্ত্র হাতে নিয়ে আপনারা নিজেরাই এর সাক্ষ্য দিচ্ছেন। শুধু আল্লাহ রজ্জু শক্ত করে ধরুন আর আল্লাহর সাহায্যে এগিয়ে যান। আনসার গাজওয়াতুল হিন্দের ভাইয়েরা আপনাদের সাহায্য করার জন্য তাদের রক্তের শেষ ফোটাটাও ঝরাবেন।

আমার প্রিয় পাকিস্তানী, আফগানিস্তানী ও অন্যান্য মুসলিম ভূমির মুহাজির মুজাহিদিন  ভাইয়েরা!

কাশ্মিরের ভূমি গড়ে উঠার ইতিহাস ও ভবিষৎ আপনাদের ছাড়া অসম্পূর্ণ। আপনারা ছোটকাল থেকেই যুদ্ধের ডাক দিয়েছেন যে, “যদি শাহাদাত প্রয়োজন হয় তাহলে কাশ্মিরে যাও” এবং আপনারা কাশ্মিরের উঁচু উঁচু পাহাড়গুলো পাড়ি দিয়েছেন। এখানে মনে রাখবেন! শহীদ সাজজাদ আফগানী, শহীদ আকবর ভাই, শাইখ আহসান আজিজ, শহীদ ইলিয়াস কাশ্মীরি, শহীদ গাজি বাবা, শহীদ আবদুল্লাহ উনি, শহীদ আবু কাসিম অথবা শহীদ আবু দুজানা যেই হোক না কেন তাঁরা কেউ কোন রাষ্ট্রের হুকুমে আসেননি আবার কোন রাষ্ট্রের হুকুমে তা পরিত্যাগ করেননি। তাঁরা একের পর এক ত্যাগ ও উৎসর্গের মহান উদাহরণ দিতেই থেকেছেন। আল্লাহ তায়ালা যেন এই মুহাজির মুজাহিদদের শাহাদাত কবুল করেন এবং তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আমিন।

আমার প্রিয় কাশ্মিরের মুজাহিদিন ভাইয়েরা!

পাকিস্তান পরিচালিত স্বাধীন কাশ্মির এমন এক সরকার ও সেনাবাহিনীর অধীনস্ত, যারা হল আমেরিকার গোলাম। এই পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনী মুজাহিদদের বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে লড়াই করছে। তাদের মুনাফিকি এত বেশি যে ইসলাম ও জিহাদকেও তারা ছাড়েনি।

ভারতের সাথে যখন তাদের সম্পর্ক ভাল থাকে তখন তারা আপনাদের জেলে বন্দি করে আর যখন খারাপ থাকে তখন আপনাদেরকে সীমান্তে ছেড়ে দেয়। জিহাদ কি এই ধরনের উদ্ধ্যত লোকদের অধীনে হতে পারে? আল্লাহর কসম কখনোই না!

আমরা আপনাদের মনের ইচ্ছা বুঝি এবং জানি যে আপনাদের মনের চাওয়া হচ্ছে কোন পাকিস্তানী সৈনিকের কাছে অনুমতি না নিয়ে কাশ্মির উপত্যকায় প্রবেশ করতে পারা। আল্লাহর কসম! আপনারা আমাদের চোখের তারা এবং আপনাদের সাহায্য করা ও রক্ষা করা প্রতিটা মুসলিম একটি দীনী বাধ্যবাদকতা মনে করে। মুহাজির মুজাহিদদের কোন গ্রামে কবর হবে সেটা নিয়ে ঝগড়া লেগে যায়। এই হল আল্লাহ জন্য ভালবাসা।

আমার প্রিয় ও সম্মানিত ভাইয়েরা!

কাশ্মিরের প্রতিটা মুসলিম আপনাদের সাহায্য করা ও রক্ষা করা দীনী বাধ্যবাদকতা মনে করে। কাশ্মিরের প্রতিটা মুসলিমের হৃদয় আপনাদের সাহায্য করার জন্য কাতর হয়ে আছে।

আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধরুন এবং শুধু তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করুন এবং নিজেদেরকে ও নিজেদের জিহাদকে তাগুত গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর থেকে মুক্ত করুন। এটা চিন্তা করবেন না যে অস্ত্র কোথা থেকে আসবে! আল্লাহর সাহায্য কখনো পাখির আকারে আসে এবং কখনো এমন জায়গা থেকে আসে, যার ব্যাপারে কল্পনাও হয়তো করা হয়নি।

আমার পাকিস্তানের প্রিয় আন্তরিক ও ইসলাম প্রিয় ভাইয়েরা, বোনেরা ও বড়রা!

আল্লাহর কসম আপনারা আমাদের হৃদয় স্পন্দন। কোন কিছুর পরোয়া না করে আপনারা আপনাদের ছেলেদেরকে জিহাদের জন্য কাশ্মিরে পাঠিয়েছেন এবং তারপর তাঁদের শাহাদাতের জন্য আল্লাহর প্রশংসা করেছেন। বোনেরা তাদের অলংকার দিয়ে দিয়েছেন কাশ্মিরের জিহাদের জন্য।

ও আমার প্রিয় ভাই এবং বোন! আপনাদের জান এবং মাল উভয়-ই কাশ্মিরের জিহাদে ব্যবহৃত হয়েছে।

আপনারা তখনও জিহাদ পরিত্যাগ করেননি যখন আমেরিকার গোলাম সরকার ও পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আপনাদের উপর পাহাড় পরিমান জুলূম করেছে এবং এখনো করছে। নিশ্চই ইহা ইসলামিক ভ্রাতৃত্বের একটা বড় নমুনা। আমরা দুয়া করি আল্লাহ যেন আপনাদের সাহায্য করেন ও আপনাদেরকে জুলুম ও অত্যাচার থেকে মুক্তি দেন এবং আল্লাহ যেন আপনাদেরকে শরীয়াহর হেফাজতের নিয়ে আসেন। পাকিস্তানের আন্তরিক মুজাহিদরা আপনাদের কল্যাণকামী। তাঁরা তাঁদের জীবন দিয়ে পাকিস্তানে শরীয়াহ বাস্তবায়নের রাস্তা চিহ্নিত করেছেন এবং আপনারাও তাদের হতাশ করেন নি। এই ভাইয়েরা আমেরিকা ও তাদের দালাল পাকিস্তানী সরকার ও সেনাদের বিরুদ্ধে জিহাদের পতাকা তুলে সাহস ও ত্যাগের একটা বড় উদাহরণ তৈরি করেছেন।

আমার প্রিয় মুজাহিদিন ভাইয়েরা!

আমাদের দাওয়াত কোন সংস্থার, দেশ অথবা দলের জন্য নয়। এই দাওয়াত যেকোন আসাবিয়াহ ও সংস্থার উর্ধে। ইসলাম কোন ব্যক্তি, দল অথবা দেশের চাইতে উর্ধে। ইসলাম ও জিহাদ জাকির মুসার জন্য নয় বরং ইসলাম ও জিহাদের জন্য-ই জাকির মুসা। আমাদের অবশ্যই জিহাদকে যে কোন সংগঠন অথবা ব্যক্তির উর্ধে রাখতে হবে আর আমাদেরকে দলপূজা ও ব্যক্তিপূজা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

আমার মুজাহিদিন ভাইয়েরা!

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল আমরা যেন জিহাদের ময়দানে আমাদের শত্রুকে খুব ভাল করে বুঝি ও অনুধাবন করি। আমরা যেন এদের শক্তি ও দূর্বলতা বুঝতে পারি। আমরা যেন যেখানে শত্রু শক্তিশালী সেখানে তার শক্তি চুরমার করি আর যেখানে সে দূর্বল সেখান থেকে তাকে আঘাত করি। আমাদের জিহাদের প্রথম শত্রু হচ্ছে ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনী। এই বাহিনীর বহরগুলোতে হামলা করা ও এদের চলাচলে ব্যাঘাত ঘটানো গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এই কাজে প্রতিটা যুবক অংশ গ্রহণ করতে পারে এবং এর জন্য পেট্রল বোম ব্যবহার করতে পারে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী ছাড়াও এই তালিকায় ওই সকল সমর্থনকারীও অন্তর্ভুক্ত, যারা এই অত্যাচারী ও ধর্মনিরপেক্ষ নাস্তিক সরকারকে পরিচালনা করে, প্রতিরক্ষা করে ও সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। চাই তারা পুলিশ হোক অথবা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি হোক অথবা ভারতীয় সরকারের সাথে সংযুক্ত কোন কোম্পানি হোক অথবা বিদেশি কোম্পানী-ই হোক যারা ভারতে বিনিয়োগ করতে চায়।

আমার মুজাহিদ ভায়েরা!

এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে আমরা সত্যের বানী প্রচার করতে থাকবো এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকবো যে তিনি আমাদের এক পুণ্যবান জীবন দান করেন এবং শহীদের মরণ দেন।

আল্লাহ যেন আমাদেরকে হক চিনতে, বুঝতে, হক ও সত্য অনুযায়ী কাজ করতে ও সত্যকে মিথ্যা হতে পার্থক্য করতে সক্ষম করেন। আমিন।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، وصلى الله  على سيدنا محمد وآله وصحبه وسلم. والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته

-আপনাদের ভাই জাকির মুসা (হাফিজাহুল্লাহ)

আমির- আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ, কাশ্মির

জুমাদাস সানি, ১৪৩৯ হিজরি

আল হুর মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত অডিও বার্তা থেকে বাংলায় অনূদিত