JustPaste.it

04 jihader-protidan

দারসুল হাদিস

 জিহাদের প্রতিদান

     লাভের শর্তাবলী

আবুল হাসান সাঈদ আস সাহমী

 

الحمد لله  الذى وحده والصلوة والسلام على من لا نبى بعده اما بعد

পৃথিবীতে ইসলামি খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করার একমাত্র পথ ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে কিতাল—লড়াই করা। যারা প্রতিনিয়ত ইসলামকে মিটিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত; সেই দাজ্জালী কফফার শক্তি ভালোভাবেই জানে- একমাত্র আল্লাহর পথের অস্ত্রধারী মুজাহিদগণই তাদের অসাড় দাম্ভিকতাকে সমূলে বিনাশ করতে সক্ষম। আর এ জন্যই তারা আল্লাহর পথের অস্ত্রধারী মুজাহিদগণ ছাড়া অন্য কাউকে নিজেদের শত্রু মনে করে না। যদিও আমাদের মসুলিমদের বহু লোকই কুরআন-হাদিসের প্রকৃত শিক্ষা ও বাস্তবতা বিমুখ হওয়ায় এ সহজ সত্যকে উপলব্ধি করতে পারছে না।

যাইহোক, আল্লাহ তাআলার মনোনীত একমাত্র পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসারী হতে হলে, একজন মুসলিমকে অবশ্যই একজন মুজাহিদ হতে হবে। মুজাহিদ হওয়া ছাড়া পূর্ণাঙ্গ দ্বীন মানা সম্ভব নয়; এ কথা শতভাগ সত্য। তবে জিহাদের পথে চললেই যে কেউ জিহাদের প্রতিদান পেয়ে প্রকৃত মুজাহিদ হিসেবে গণ্য হবে;বিষয়টি এমনও নয়। কারণ, মহান আল্লাহর দরবারে প্রত্যেকটি আমল কবলু হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। কেউ নামাজ আদায় করলেই যেমন নিশ্চিতভাবে বলা যায় না–তার নামাজ আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে গিয়েছে। ঠিক তেমনি–ভাবে জিহাদের শর্তাবলী না মেনে কেউ জিহাদ করলেই, তার জিহাদ আল্লাহর দরবারে কবুল হয়ে গিয়েছে; এ কথা বলাও সমীচীন নয়। যথাযথ শর্তাবলী না মানা হলে জিহাদের মত মহান ইবাদাতেরও ফজিলত লাভ করা যায় না; যদিও বাহ্যিকভাবে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাদিস দ্বারা এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বুঝে আসে-

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ‏: ”الْغَزْوُ غَزْوَانِ فَأَمَّا مَنِ ابْتَغَى وَجْهَ اللَّهِ، وَأَطَاعَ الإِمَامَ، وَأَنْفَقَ الْكَرِيمَةَ، وَيَاسَرَ الشَّرِيكَ، وَاجْتَنَبَ الْفَسَادَ، فَإِنَّ نَوْمَهُ وَنَبْهَهُ أَجْرٌ كُلُّهُ وَأَمَّا مَنْ غَزَا فَخْرًا وَرِيَاءً وَسُمْعَةً، وَعَصَى الإِمَامَ، وَأَفْسَدَ فِي الأَرْضِ، فَإِنَّهُ لَمْ يَرْجِعْ بِالْكَفَافِ.‏

মুয়াজ ইবনে জাবাল রাযি. রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেছেন; তিনি বলেছেন- যুদ্ধ দুই প্রকার: যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যুদ্ধ করল, ইমামের আনুগত্যকরল, উৎকৃষ্ট বস্তু খরচ করল, সঙ্গীকে সহায়তা করল; এবং জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি থেকে বিরত থাকল; তার নিদ্রা ও জাগরণ সবই প্রতিদান যোগ্য হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি যুদ্ধ করল যশ, খ্যাতি ও লোক দেখানোর জন্য, ইমামের অবাধ্যতা করল ও জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করল; সে কিছুতেই যথাযথ প্রতিদান নিয়ে ফিরতে পারবে না (সে খালি হাতে ফিরবে)। -আবু দাউদ: ২৫১৫

মুহাদ্দিসীনে কেরামের মতে এ হাদিসে যুদ্ধ দুই প্রকার দ্বারা যোদ্ধা দু’ধরনের বুঝানো হয়েছে। যে যোদ্ধার মাঝে উপরোল্লেখিত হাদিসে বণির্ত পাঁচটি গুণ পাওয়া যাবে; সে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করার প্রতিদান লাভ করবে।

 

  • জিহাদের প্রতিদান লাভের প্রথম শর্ত

আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করতে হবে একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টির আশায়। এ জন্য অন্তরে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভের বিশুদ্ধ নিয়ত রাখতে হবে। মুমিনের জিহাদ হতে হবে, আল্লাহর পবিত্র কালিমাকে বুলন্দ করার লক্ষ্যে; কোন

রকমের যশ, খ্যাতি বা লোক দেখানোর জন্য নয়।

حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، عَنْ عَمْرٍو، عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ أَبِي مُوسَى ـ رضى الله عنه ـ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ الرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلْمَغْنَمِ، وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلذِّكْرِ، وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِيُرَى مَكَانُهُ، فَمَنْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ قَالَ ‏ "‏ مَنْ قَاتَلَ لِتَكُونَ كَلِمَةُ اللَّهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ‏"‏‏.‏

সুতরাং আল্লাহর রাস্তায় লড়াইকারীকে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় তারই কালিমাকে বুলন্দ করার লক্ষ্যে জিহাদ করতে হবে।

 

  • জিহাদের প্রতিদান লাভের দ্বিতীয় শর্ত

ইমামের আনুগত্য করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ عَنْ شُعْبَةَ عَنْ أَبِي التَّيَّاحِ عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم اسْمَعُوا وَأَطِيعُوا وَإِنْ اسْتُعْمِلَ عَلَيْكُمْ عَبْدٌ حَبَشِيٌّ كَأَنَّ رَأْسَهُ زَبِيبَةٌ.

তোমরা (আমিরের কথা) শোনো! এবং (আমিরের) আনুগত্য করো! যদিও তোমাদের ওপর কোন নিগ্রো ক্রিতদাসকে (নেতা) নিযুক্ত করা হয়; যেন তার মাথাটা কিশমিশের মত। (অর্থাৎ কিশমিশের ন্যায় ক্ষুদ্র ও বিশ্রী তবুও)! -বুখারী: ৭১৪২

 

  • জিহাদের প্রতিদান লাভের তৃতীয় শর্ত

আল্লাহর রাস্তায় উৎকৃষ্ট বস্তু খরচ করা। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় নিজের উত্তম মাল ব্যয় করতে চায় না; সে কিভাবে নিজের জান উৎসর্গ করবে? পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেন

لَن تَنَالُوا الْبِرَّ حَتّٰى تُنفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَىْءٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِۦ عَلِيمٌ

তোমরা কিছুতেই পূণ্যের স্তরে উপনীত হতে পারবে না; যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের প্রিয় বস্তু হতে (আল্লাহর জন্য) ব্যয় করবে। তোমরা যা কিছুই ব্যয় কর, আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ অবগত। -সূরা আলে ইমরান: ৯২

 

  • জিহাদের প্রতিদান লাভের চতুর্থ শর্ত

সঙ্গিদের সহায়তা করা। আর আল্লাহর রাস্তার সৈনিকগণ একে অপরকে সর্বোত্তম সহায়তা তখনই করতে পারবে; যখন একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল ও বিনয়ী হবে। এ জন্য হতে হবে সাথীদের সাথে খুব কোমল ও উদার। পবিত্র কুরআনে সূরা ফাত্হ ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর অনুসারীদের সম্পর্কে ইরশাদ করেন,

مُّحَمَّدٌ رَّسُولُ اللَّهِ ۚ وَالَّذِينَ مَعَهُۥٓ أَشِدَّآءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَآءُ بَيْنَهُمْ ۖ

মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল; তাঁর সঙ্গে যারা আছে, তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং পরস্পর একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র। -সূরা ফাত্হ: ২৯

আর এমনই গুণে গুণান্বিত হতে হবে আল্লাহর রাস্তায় লড়াইরত বীর সৈনিকদের। হতে হবে পরস্পর সীসা ঢালা প্রাচীরের মত।

 

  • জিহাদের প্রতিদান লাভের পঞ্চম শর্ত

সব ধরনের ফাসাদ থেকে বিরত থাকতে হবে। একজন অপরজনের দোষ চর্চা, গীবত, হিংসা, এক কথায় ফাসাদ সৃষ্টি হতে পারে এমন সব কর্মকান্ড অবশ্যই একজন মুজাহিদকে পরিহার করতে হবে। আল্লাহর রাস্তায় লড়াইরত একজন যোদ্ধার মাঝে যদি এই পাঁচটি শর্ত বা বৈশিষ্ট্যের কোন একটিরও ঘাটতি থাকে, অথবা তার মাঝে হাদিসে বর্ণিত বিপরীত বৈশিষ্ট্যগুলো পাওয়া যায়; তাহলে সে জিহাদের মত মহান ইবাদাতে শামিল হয়েও প্রতিদান লাভ করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে জিহাদের শর্তাবলী মেনে তাঁরই পথে অবিচলভাবে জিহাদ করার তাওফিক দান করুন। জিহাদের সকল আজরসহ শাহাদাতের নেয়ামত লাভে ধন্য করুন। আমীন!

 আল বালাগ

ম্যাগাজিন ইস্যু-২