শোক বার্তা
بسم الله الرحمن الرحيم
জামাআ’ত কায়েদাতুল জিহাদ-এর প্রধান কার্যালয় হতে
শায়খ আবুল খায়ের আল-মিসরী’ রহ. এর শাহাদাত প্রসঙ্গে কিছুকথা
وَدَّت طَّآئِفَةٌ مِّنْ أَهْلِ الْكِتٰبِ لَوْ يُضِلُّونَكُمْ وَمَا يُضِلُّونَ إِلَّآ أَنفُسَهُمْ وَمَا يَشْعُرُونَ يٰٓأَهْلَ الْكِتٰبِ لِمَ تَكْفُرُونَ بِـَٔايٰتِ اللَّهِ وَأَنتُمْ تَشْهَدُونَ يٰٓأَهْلَ الْكِتٰبِ لِمَ تَلْبِسُونَ الْحَقَّ بِالْبٰطِلِ وَتَكْتُمُونَ الْحَقَّ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
‘আর যারা আল্লাহর রাহে শহীদ হয়, তাঁদেরকে তুমি কখনোই মৃত মনে করো না; বরং তাঁরা জীবিত। তাঁদেরকে তাঁদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে রিযিক দেওয়া হয়। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাঁদেরকে যা কিছুদান করেছেন; তাঁরা তাতে প্রফুল্ল। আর যারা তাঁদের পেছনে রয়ে গেছে, এখনও তাঁদের কাছে এসে পৌঁছে নি; তাঁদেরকে তাঁরা এই বলে সুসংবাদ প্রদান করে–তাঁদের কোন ভয়-ভীতি নেই এবং তাঁরা দুঃখিতও হবে না। তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত ও অনুগ্রহের কারণেও আনন্দ উদযাপন করে। এবং এ কারণেও যে, আল্লাহ ঈমানদারদের কর্মফল বিনষ্ট করেন না’। -সূরা আলে ইমরান: ১৬৯-১৭১
الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على المبعوث رحمة للعالمين، سيد الأولين والآخرين، نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين، وبعد
সকল প্রশংসা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের জন্যে। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সকল যুগের সকল মানুষের নেতা আমাদের নবী মুহাম্মদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর; যিনি জগতের জন্য রহমত স্বরুপ প্রেরিত হয়েছেন এবং তাঁর পরিবার ও সকল সঙ্গীদের উপর। শাহাদাত এক মহা নেয়ামত; মহান রবের পক্ষ থেকে বিশেষ করুণা ও সম্মান। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের থেকে যাকে ইচ্ছে, তাঁকে দান করেন এ মহান মযার্দা। তিনি আপন প্রিয় বান্দাদের এ নেয়ামত দানের জন্য নির্বাচন করে নেন। আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন–
إِن يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِّثْلُهُۥ ۚ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ ءَامَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنكُمْ شُهَدَآءَ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظّٰلِمِينَ
‘এভাবে আল্লাহ জানতে চান কারা ঈমানদার? আর তিনি তোমাদের মধ্য থেকে কিছুলোককে শহীদ হিসেবে গ্রহণ করতে চান। আর আল্লাহ অত্যাচারীদেরকে ভালোবাসেন না’। -সূরা আলে ইমরান: ১৪০
তিনি আরও বলেন
وَمَن يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولٰٓئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّۦنَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَآءِ وَالصّٰلِحِينَ ۚ وَحَسُنَ أُولٰٓئِكَ رَفِيقًا
‘আর যে কেউ আল্লাহর হুকুম এবং তাঁর রাসূলের হুকুম মান্য করবে; তাহলে যাঁদের উপর আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন, সে তাঁদের সঙ্গী হবে। তাঁরা হলেন–নবী, ছিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীল ব্যক্তিবর্গ’। -সূরা নিসা: ৬৯
যেহেতু শাহাদাত মানে হল সম্মানের শীর্ষচূড়া। তাই আমরা যে কোন ভাইয়ের শাহাদাতে আনন্দিত হই, কখনও শোক প্রকাশ করি না। আমরা নিজেদের অশ্রু সংবরণ করি, বিলাপ করি না। এরই ধারাবাহিকতায় উম্মাহকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি সম্মানিত শায়খ আবুল খায়ের (আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ রজব) আল-মিসরী’র শাহাদাতে। ক্রুসেডার আমেরিকার বিমান হামলায় ইদলিবে তিনি ইন্তেকাল করেন। শায়খ আবুল খায়ের আল-মিসরী রহ. তিন দশক ধরে শাহাদাতের তামান্নায় জিহাদের ময়দানে ছুটে ছিলেন। এর মাঝে সম্মুখীন হয়েছেন নানান পরীক্ষার। এ পথে করেছেন কঠিন পরিশ্রম এ দীর্ঘ পথ চলায় তিনি কখনও ক্লান্ত হন নি; বরং প্রতিবারই তাঁর সংকল্প আর শাহাদাতের অদম্য বাসনা দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হচ্ছিল।
তিনি দির্ঘসময় ইরানে কারাবন্দি ছিলেন। অতঃপর কারাগার থেকে মুক্তির পর তিনি নিজের গন্তব্য শামের ভূমিতে স্থির করেন। প্রিয় ভাইদের সাথে আবির্ভূত হন নুসাইরিদের বিরুদ্ধে জিহাদের ময়দানে। পরিকল্পনা ও পরিচালনা অধিদপ্তরে থেকে তিনি নিরলসভাবে লড়াইয়ের কাজ চালিয়ে যান। অবিরাম আপন দায়িত্ব পালন করেন কঠিন রোগ আর বাধা-বিপত্তির মুখেও। শায়খ রহ. ছিলেন আফগানিস্তানে আরবের অগ্রবর্তী মুহাজিরদের অন্যতম। জিহাদের ময়দানে তিনি শায়খ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম, শায়খ উমর আব্দুর রহমান, শায়খ তামীম আদনানী, আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমর মুজাহিদ, আমীরুল মুমিনীন মোল্লা আখতার মনসুর, শায়খ আবু উবায়দা বানশিরী, শায়খ আবু হাফস আল-মিসরী’ (রহিমাহুমুল্লাহু) এর মত অকুতোভয় সিংহপুরুষদের সঙ্গী ছিলেন। তিনি ছিলেন এমন সম্মানিত মুজাহিদদের সাথী, যাদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে। কান্দাহারের দিনগুলোতে তিনি শায়খ উসামা বিন লাদেন রহ. এর সফর ও আবাসের একনিষ্ঠ সঙ্গী ছিলেন। তিনি কাজ করতেন নম্র তার সাথে। আল্লাহ তাআলা তাকে সম্মানিত করুন! তার মর্যাদা উঁচুকরুন! তিনি ইমারাতে ইসলামিয়ার পরামর্শ সভায় আল কায়েদার প্রতিনিধিত্ব করতেন। তাঁর সাথে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের নেতৃবৃন্দের সম্মান ও ভালবাসার এক অপূর্ব সম্পর্ক ছিল।
মুসলিম উম্মাহ ও মুজাহিদীননের প্রতি আমাদের বার্তাঃ
মুসলিম ভূমিগুলোতে প্রতিনিয়ত ইহুদী-খ্রিস্টানদের নির্যাতনের স্টিমরোলার চলছে; আর মহান আল্লাহ তাআলাও এই জামাআ’র নেতৃবর্গ, সৈনিক, শায়খ, যুবক, মহিলা ও শিশুদের থেকে আপন প্রিয় বান্দাদের শহীদ হিসেবে কবুল করেন। আর আমরা আল্লাহর কাছে ওয়াদা করছি- সর্বদা আমরা জিহাদের পথে অবিচল থাকবো; যতক্ষণ না তিনি তাঁর শত্রুদের পরাজিত করে আপন দ্বীনকে বিজয়ী করেন। কোন আমীরের, কোন নেতার নিহত হওয়ার কারণে আমরা বিরত হবো না; বরং অবিচলভাবে এ পথে সম্মুখে অগ্রসর হবো। কোন বিপদই আমাদের থামাতে পারবে না। আমেরিকা ও তার সঙ্গীদের থেকে ইসলামের হক ফিরিয়ে না আনা পর্যন্ত, মুসলমানদের ওপর তাদের কৃত অপরাধের প্রতিশোধ না নেয়া পর্যন্ত আমরা শান্ত হবো না। যারা আমাদের সিংহপুরুষদের হত্যা করেছে তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ না করা পর্যন্ত আমরা কোন কল্যাণের আশা করতে পারি না। মহান রবের বাণী,
وَكَأَيِّن مِّن نَّبِىٍّ قٰتَلَ مَعَهُۥ رِبِّيُّونَ كَثِيرٌ فَمَا وَهَنُوا لِمَآ أَصَابَهُمْ فِى سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الصّٰبِرِينَ
“আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুগত হয়ে জিহাদ করেছেন; আল্লাহর পথে তাঁদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে; কিন্তু আল্লাহর রাহে তারা হেরেও যায় নি, ক্লান্তও হয় নি এবং দমেও যায় নি। আর যারা সবর করে, আল্লাহ তাঁদেরকে ভালোবাসেন।” -সূরা আলে ইমরান: ১৪৬
জামাআ’ত কায়েদাতুল জিহাদ/প্রধান কার্যালয়
জুমাদাল আখিরাহ -১৪৩৮ হিজরী / মার্চ -২০১৭ ঈসায়ী
আল বালাগ
ম্যাগাজিন ইস্যু-২