ইসলামী বসন্ত (৬)
শায়খ আইমান আজ জাওয়াহিরি (হাফিজাহুল্লাহ)
অনলাইনে পড়ুন-
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৫৪৭ কেবি]
https://alfirdawsweb.files.wordpress.com/2017/10/robiul-islam-61.pdf
https://archive.org/download/robiul-islam-6/robiul-islam-6.pdf
http://www.mediafire.com/file/jhklr8prmwhcnjc/robiul-islam-6.pdf/file
https://archive.org/download/IslamiBosonto101_20190624_1627/robiul-islam-6.pdf
https://mega.nz/file/Qc4XTDCT#OGD6hbgzwp9f9YNGqbXgbPvhp1GAT91IaksE9SzOqbA
——————- ——————- ——————- ——————- ——————- ——————- ——————-
ইসলামী বসন্ত – শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরী (হাফিযাহুল্লাহ)
[পর্ব – ৬]
পূর্বে আলোচনা হয়েছে ইরাক ও শামে ক্রুসেড আক্রমণ এবং ওয়াজিরিস্তানে পাকিস্তানি আমেরিকানদের বর্বরতার বিরুদ্ধে আমাদের করণীয় কি? এবং খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ কী? সাথে তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন এবং বর্তমান পরিস্থিতি কি খিলাফাহ ঘোষণার জন্য উপযোগী? না হলে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কি?
আজ আমি মুসলিম উম্মাহর উপর আপতিত অনেক কঠিন এক বিপদ নিয়ে আলোচনা করবো। আর তা হল মুসলিম উম্মাহর উপর যুদ্ধরত ক্রুসেডারদের সঙ্গে ইরানী সাফাবীদের জোট গঠন।
আমি আমার মূল আলোচনা শুরু করার পূর্বে শায়েখ আবু হাম্মাম আশ-শামী রহ. ও ক্রুসেড বিমান বাহিনীর হামলায় শহীদ ভাইদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি এবং “জাবহাতুন নুসরার” সকল ভাইদের সান্তনা দিচ্ছি এবং তাদের ধৈর্য ধারণ করে দৃঢ়চিত্তে শত্রুর মোকাবেলা করার আহ্বান জানাচ্ছি। হে আল্লাহ ! আপনি এই আক্রমণে শহীদদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন। তাদের পরিবার-পরিজনকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফিক দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি জাবহাতুন নুসরার ভাইদের মাধ্যমে আপনার দ্বীন, আপনার কিতাব, আপনার নবীর আমানত রক্ষা করুন, আমীন!
প্রিয় উম্মাহ! বর্তমানে আমরা এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। আর তা হল, মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্রুসেড আক্রমনের সাথে সম্প্রতি ইরানের প্রকাশ্যে যুক্ত হওয়া। তারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে পারস্পরিক সহযোগিতায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাদের এই চুক্তি স্পষ্টভাবে আমেরিকার দুই শত্রু তথা ইরাক ও আফগানের বিরুদ্ধে। এটা ইরানের সেনাপ্রধানও স্পষতভাবে স্বীকার করে নিয়েছে।
আর শামে রাফেজী, সাফাবীরা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে যুদ্ধ শুরু করেছে। তারা ঘোষণা করেছে যে, তারা যে কোন মুল্যে আসাদ ও আসাদের সরকারকে রক্ষা করবে। আফগানিস্তান, ইয়েমেন, লেবানন থেকে যোদ্ধা সংগ্রহ অব্যাহত রাখবে। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে এক দিকে ন্যাটোর সাথে মিলিত হচ্ছে, অপরদিকে রাশিয়ার সাথে মিলে ইসলামের বিরুদ্ধে জোট গঠন করছে। এই তো কিছু দিন পূর্বে আমেরিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেছে, আসাদের সাথে বৈঠক ব্যাতীত সিরিয়ার সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।
কিন্তু অতি আফসোস ও দুঃখের সাথে বলতে হয় যে, আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কাফের মুশরিকরা এক জোট হচ্ছে। আর আমাদের নিজেদের মধ্য থেকে একটি দল মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে।
আমাদের উচিৎ মুজাহিদ গ্রুপগুলোর মাঝে যে ছোটখাটো সমস্যা আছে, সেগুলো দূর করার চেষ্টা করা; কিন্তু তা না করে একদল আবার নতুন করে ফেতনা সৃষ্টি করেছে! এবং আমাদের মাঝে বিভেদের রাস্তা তৈরী করেছে। তারা নিজেদের জন্য এমন পদ-পদবী দাবি করছে-বাস্তবতা এবং শরীয়ত কোন দিক থেকেই যার উপযুক্ত তারা নয়। বিভিন্ন ভাবে বাড়াবাড়ি করে ফিতনা ছড়িয়ে শামের জিহাদকেই নষ্ট করছে। তারা নূন্যতম সন্দেহের ভিত্তিতে কোন দলীল ছাড়া আবার কখনো উল্টো দলীল দাঁড় করিয়ে মুজাহিদদের তাকফীর করচেহ। এর মাধ্যমে ক্রুসেডারদেরই তো মঙ্গল হচ্ছে। নুসাইরী, সাফাবী ও রাফেজীদেরই উপকার হচ্ছে।
কেউ কেউ মনে করে শুধু তারাই হক জামাত এবং টিকে থাকার অধিকার শুধু তাদেরই। আর অন্য সকলকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে এবং যে করেই হোক তারা ব্যাতীত আর কোন মুজাহিদ জামাতকে টিকতে দেয়া যাবেনা। কারণ এটা ছাড়া তো নিজদের এককভাবে খাঁটি ইসলামী দল ঘোষণা করা যাবেনা! তাই তারা অন্যদের কাজকে কুফুরী, রিদ্দাহ, খিয়ানত, সীমালঙ্ঘন ও বিদ্রোহমূলক কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করছে।
হায়রে নির্বোধ! তারা কি একবারও ভেবে দেখেছে যে, এর মাধ্যমে তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবে ও হচ্ছে। তাদের পূর্বে অন্যান্য জিহাদী দলগুলোই তো ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেড, রাফেজী, নুসাইরী ও নাস্তিকদের আক্রমণ প্রতিহত করেছে এবং এখনও করছে, ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতেও করবে; বরং তারাও তো সে দলেরই একটা অংশ। মানুষতো তার অস্তিত্ব সম্পর্কে জেনেছে এরই মাধ্যমে।
আফসোস! আমরা আজ পূর্ববর্তীদের পথ ত্যাগ করে কোন পথে হাঁটছি! আমরা পুরো উম্মাহকে অথবা জমহুর উম্মাহকে কেনো একত্র করার চেষ্টা করছিনা, যাতে করে এর মাধ্যমে আমরা এমন ইসলামী রাষ্ট্র গঠন করতে পারি, যার ভিত্তি হবে মজলিসে শুরা। যেমনটি সাইয়্যেদুনা ওমর রা. সিদ্ধান্ত দিয়েছেন,
“ইমারা গঠিত হবে মজলিসে শুরার মাধ্যমে।”(মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক- ৯৭৬০)
যারা আজ খোলাফায়ে রাশেদীনের পথ ত্যাগ করে কারো সাথে পরামর্শ না করে নিজেকে খলীফা বলে দাবি করছে- শুধু তাই নয়, এরপর সকলকে তার বাইয়াত দিতে বলছে, যারা বাইয়াত না দিবে তাদেরকে পথভ্রষ্ট বলছে। তারা পুরো বিষয়টাকে একেবারে গুলিয়ে ফেলেছে। কারণ, আমরা জানি খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত হল, বাইয়াত দেয়া হবে স্বেচ্ছায় ও সন্তুষ্টচিত্তে। অতঃপর যখন অধিকাংশ মুসলমান এক হবে তখন বাইয়াত সংগঠিত হবে। অথচ আমরা দেখছি তার পুরোপুরি উল্টো চিত্র। সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে কেউ প্রচার করছে যে, এটাই হল “খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ”। তাই সবাই একে বাইয়াত দিতে হবে। অথচ সে আমীরের বাইয়াত ভঙ্গ করেছে। একদিকে তারা অন্যদেরকে আনুগত্যের আদেশ দেয় অন্য দিকে নিজেই স্বীয় আমীরের অবাধ্য হয়। সেতো আমীরুল মুমিনীন মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদের হাতে বাইয়াত প্রাপ্ত। তার মুখপাত্রও তো এক সময় মোল্লা মুহাম্মাদ ওমর মুজাহিদকে সুউচ্চ পাহাড় অভিধায় ভূষিত করতো এবং তার অনুসারিরাও এর ন’রা উচ্চকিত করতো।
পরবর্তীতে সে যা করার ইচ্ছা করেছে। আসলে এর মাধ্যমে সে যা করছে, তাহল, মুজাহিদদের মধ্যে ভাঙ্গন ও
ফাটল সৃষ্টি। ইতিমধ্যে সে তার অনুসারীদের আদেশ করেছে যে বা যারা তার আহ্বানে সারা না দিবে তারা যেনো তাদের মাথা গুড়িয়ে দেয়। কারণ, তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে এবং মুসলমানদের ঐক্য নষ্ট করছে !!
অথচ আমাদের শত্রুরা জোটবদ্ধ হয়েছে, আমরা কি শত্রুর কাছ থেকও শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি না?
আমি এখানে সীমালঙ্ঘনকারী ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীকে কিছুই বলবো না। আমি শুধু আমার জন্য এবং তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে হেদায়েতের দোআ করবো। হে আল্লাহ ! আপনি আমাদের হেদায়েত দান করুন। আমি জ্ঞানী, মুত্তাকী ও উঁচু মানসিকতার লোকদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনারা মুসলমানদের শত্রুদের বিরুদ্ধে এক হোন। আবারও বলছি, আপনারা শত্রুদের বিরুদ্ধে এক হোন সব বিভেদ ভুলে শত্রুদের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ হোন। কেউ কি আছে যে, আমার কথা শুনবে! কেউ কি আমার এ আহ্বানে সাড়া দিবে? আমি আপনাদের কয়েকটি বিষয়ের প্রতি আহ্বান করছিঃ-
১। আপনারা এখনই মুজাহিদদের পরস্পর সংঘাত বন্ধ করুন।
২। অমুক দল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে এই অজুহাতে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা ছেড়ে দিন।
৩। ইরাক ও শামের একটি স্বতন্ত্র শরইয়ি বিচারবিভাগ কায়েম করুন এবং যার ক্ষমতা বাস্তবায়নের দায়িত্ব এ দুই অঞ্চলের সকল মুজাহিদদের দায়িত্বে থাকবে।
৪। অতিতের তিক্ততা ভুলে গিয়েয়াম ক্ষমা ঘোষণা করুন।
৫। পূর্ণ উদ্দীপনার সাথে জনকল্যাণমূলক কাজে নিয়িজিত হোন। যেমন, আহতদের চিকিৎসা দেয়া, আশ্রয়হীন পরিবারকে আশ্রয় দেওয়া, বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঞ্চয় করা এবং সম্মিলিত অপারেশন পরিচালনা করা ইত্যাদি।
নিশ্চয় শামের মুবারক জিহাদের সাথে পুরো উম্মাহের দীর্ঘ দিনের আশা আকাঙ্ক্ষা মিশে আছে এবং তারা একটি সুন্দর ভোরের অপেক্ষা করছে। কেননা, শাম এবং মিসরই হল বাইতুল মাকদিস বিজয়ের পূর্বশর্ত। সুতরাং শামের জিহাদকে নষ্ট করা মানে পুরো উম্মাহের আশা আকাঙ্ক্ষা একেবারে ভেঙ্গে চুরমার করে দেওয়া। আর মুজাহিদদের মাঝে বিভেদ ও বিশৃঙ্খলার সংবাদের চেয়ে খুশির সংবাদ শত্রুর নিকট আর কি হতে পারে?
মার্কিনীরা ইরাকে প্রবেশের পর থেকে এখন পর্যন্ত রাফেজী সাফাবিরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। এই যুদ্ধ শুধু মাত্র তাদের বিরুদ্ধে নয় যারা মাশওয়ারা ব্যাতীত নিজেদের খিলাফাহ দাবি করছে; এ যুদ্ধের পরিধি আরো বিস্তৃত। নিশ্চয় এটা এ অঞ্চলে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ। তথাকথিত খিলাফাহ ঘোষণার পূর্বেই আনবারে সম্মিলিতভাবে রাফেজী দলগুলো আক্রমণ করেছিল এবং এই খিলাফাহ ঘোষণার পূর্ব থেকেই শিয়া মিলিশিয়ারা সব জায়গায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিরুদ্ধে সবচেয়ে ঘৃণিত সব অত্যাচার করে চলছে।
আর বর্তমানে তাদের সম্মিলিত শক্তি পুরো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিরুদ্ধে ঘৃণিত সব অত্যাচার শুরু করেছে। যারা এই খিলাফতের সাথে একমত তাদের উপর এবং যারা এর সাথে একমত না তাদের উপরও। সুতরাং এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ। আর এসকল মিলিশিয়ারা যদি একবার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অঞ্চলগুলো দখল করতে পারে, তাহলে তারা কাউকেই ছাড় দেবে না।
আমি পূর্বের ন্যায় আবারও বলছি আমরা এই মনগড়া খিলাফাহ প্রত্যাখ্যান সত্ত্বেও ইরাক ও শামের সকল মুজাহিদদেরকে একতার আহবান জানাচ্ছি। আপনারা ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে, ধর্মনিরপেক্ষ নাস্তিক, রাফেজী-নুসাইরীদের বিরুদ্ধে এক হোন। আপনারা মুসলমানদের সম্ভ্রম রক্ষার জন্য এক হোন। আমি তাদেরকে বলছি, যারা আমাদের সাথে বিরূপ ব্যাবহার করেছে এবং যারা আমাদের সাথে ভালো ব্যাবহার করেছে তাদেরকেও বলছি। যারা আমাদের প্রতি জুলুম করেছে এবং যারা ন্যায়বিচার করেছে, যারা আমাদের সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করেছে এবং যারা অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। যারা আমাদের উপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে এবং যারা সত্য বলে, আমি তাদের সবাইকেই বলছি, এখন আমাদের পারস্পরিক দ্বন্ধের সময় নেই। শত্রুরা আমাদের বিরুদ্ধে এক হয়েছে।
সুতরাং আসুন, আমরা একসাথে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি এবং মুসলমানদের সম্মান রক্ষা করি।
মনগড়া খিলাফতের অধিকারীরা স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে তারা আমাদের ধবংস করবে, ইমারতে ইসলামিয়াকে গুড়িয়ে দিবে এবং তাদের ব্যাতীত অন্য সকল জিহাদী তানজীমকে নিশ্চিহ্ন করে ছাড়বে। এতো কিছুর পরও আমরা জ্ঞানী ও মুত্তাকীদের আহবান করে বলছি, আসুন! আমরা আপনাদের সব ধরণের সহযোগিতা করবো। আমরা একটি শরয়ী ট্রাইবুনাল গঠন করি। আমাদের মাঝে বিদ্যমান বিভেদ শরীয়তের আলোকে সমাধান হোক। আমরা মুসলমানদের সম্মিলিত শত্রুদের বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করতে চাই।
হে মুসলমানেরা, হে মুজাহিদেরা! তোমরা কি শোননি, খৃষ্টান পোপের প্রতিনিধি সকল রাষ্ট্রকে উগ্রবাদী, চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে এক হতে আহ্বান করেছে। হ্যাঁ এটাই ক্রুসেড যুদ্ধ। ওরা সকলেই আমাদের বিরুদ্ধে এক হয়েছে আর আমরা পরস্পর একে অপরকে তাকফীর করছি! একে অপরকে হত্যা করছি!!
হে জ্ঞানী ও মুত্তাকীগণ!! আপনাদের আহ্বান করছি, আসুন আমরা একটি নিরপেক্ষ শরয়ী ট্রাইবুনাল গঠন করি। শরীয়তের আলোকে আমাদের মাঝে চলমান বিভেদ মিটে যাক। হয়তো আমাদের পক্ষে ফয়সালা হবে নয়তো বিপক্ষে। তবুও আমরা পরস্পর বিভেদে লিপ্ত হতে চাইনা। প্রিয় ভাই! আমরা শরীয়ত অনুযায়ী বিভেদ মিটাতে চাচ্ছি। তবুও কেনো আপনারা পিছপা হচ্ছেন, অগ্রসর হচ্ছেন না কেনো? আমরা মুজাহিদদের এক করতে চাচ্ছি; আপনারা কেনো একতা নষ্ট করছেন? আমরা খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নত অনুযায়ী মজলিসে শুরা গঠন করতে চাচ্ছি; আপনারা কেনো তা প্রত্যাখ্যান করছেন? আমরা বারবার অঙ্গিকার পূরনের আহ্বান করছি; আর আপনারা এড়িয়ে যাচ্ছেন!! কেনো আপনারা এমনটি করছেন? আপনারা কি আল্লাহ তাআ’লার এই বাণী শুনেন নি? আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
“মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মাঝে ফায়সালা করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের দিকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম।”(সূরা আন নূর- ৫১)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
“হে মুমিনগণ!! তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করো।”(সূরা মায়েদা- ১)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “তোমরা পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়োনা, যদি তা করো, তাহলে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে।”(সূরা আনফাল- ৪৬)
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের কাফিরদের বিরুদ্ধে কঠোর ও এক করে দাও এবং মুমিনদের জন্য কোমল ও রহমদিল বানিয়ে দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের অন্তরকে এক করে দাও। আমাদের সকল তানজীমকে এক করে দাও। আমাদের মতানৈক্য ও বিভেদ দূর করে দাও। হে আল্লাহ! তুমিই সব কিছুর মালিক।
বর্তমানে ইয়ামানে হুথিরা রাফেজী, সাফাবীদের এক শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। হুথিরা তাদের কথা অনুযায়ী কাজ করছে। তারা সানাআ সহ কিছু অঞ্চল দখল করেছে এবং স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে, কয়েক বৎসরের মধ্যে তারা হারামাইন শরীফাইন দখল করে ফেলবে। আর ক্ষেত্রে তাদের প্রধান শত্রু হচ্ছে মুজাহিদরা। তারা মুজাহিদদের খুঁজে বের করতে ও তাদের উপর বোম্বিং করতে আমেরিকার সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
মহান আল্লাহর অনুগ্রহে ইয়েমেনে আল-কায়েদার মুজাহিদগণ এক মজবুত প্রস্তরখন্ডের ন্যায় কাজ করছে যার উপর এসে আছড়ে পড়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে রাফেজীদের সক্রিয় কর্মী হুথিদের সব ষড়যন্ত্র, আমেরিকানদের দাস ধর্মনিরপেক্ষদের সকল অপ-পরিকল্পনা। নিঃসন্দেহে এসকল বীর মুজাহিদগণ শায়েখ ওসামা বিন লাদেন রহ. এর মাদরাসায় গড়ে উঠা ছাত্র। তাদের আকাবীরগণ তাঁর একান্ত নিকটের সহচর। তারা তাঁর জিহাদের ঝান্ডা বহন করে জাজিরাতুল আরব রক্ষায় এগিয়ে এসেছেন। তাদের শহীদের তালিকা অনেক দীর্ঘ। তাদের মধ্যে খারিবা আল হাজ, ইউসুফ আল উয়াইরী, তুরকিদ দানদালী, শায়েখ আব্দুল্লাহ আল মাশহুদ, আব্দুল আজিজ আল মুকরিন, সালেহ আল উফী, আবু আলী আল হারিছী, আনোয়ার আল আওলাকী এবং সাইদ আশ শিহরী রহ.। এরা ছাড়াও আরো শতশত বীর মুজাহিদ শহীদের মিছিলে শরীক হয়েছেন। আল্লাহ তাআ’লা তাদের কবুল করে নিন এবং জান্নাতের প্রশস্ত ভুমিতে তাদের নিবাসী করুন। তাদের অনেক ভাই আহত অবস্থায় আছেন এবং অনেকে বন্দী হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে জেলে আটকে আছেন এবং এদের মধ্যে অনেকেই বন্দি অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। অথচ, রাফেজী বন্দিরা আটক হওয়ার পর খুব দ্রুতই বের হয়ে যাচ্ছে। কেননা, সৌদি সরকার এবং আমেরিকা ইরানের চাপের সামনে আত্মসমর্পণ করে। আমাদের ভাইয়েরা জাজিরাতুল আরবকে এবং ওহী অবতরণের স্থানকে পবিত্র করার জন্য এ সকল কুরবানি দিয়ে যাচ্ছেন এবং দিয়ে যাবেন। তারা রাসূল সা এর পবিত্র বাণীকে বাস্তবায়ন করবে ইনশাআল্লাহ।
‘তোমরা জাজিরাতুল আরব থেকে মুশরিকদের বের করে দাও।’(সহীহ বুখারী- ৩১৬৮)
তারা আস-সউদ পরিবারকে, রাফেজীদেরকে এবং ক্রুসেডারদের দোসর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদেরকে জাজিরাতুল আরব রক্ষায় প্রতিহত করছে এবং করে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ্! মুজাহিদ ভাইয়েরা তাদের কাজকে প্রসারিত করে জাজিরাতুল আরব থেকে ইউরোপ পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। সর্বশেষ কিছু দিন পূর্বে তারা প্যারিসে শার্লি হেবদোতে সফল আক্রমণ করতে সক্ষম হয়েছে।
এতসব গৌরবময় ইতিহাসের পরও এক লোক এসকল খোদাপ্রেমি জানবাজ মুজাহিদদের উদ্দেশ্য করে বলে, তোমরা তোমাদের আমীরের বাইয়াত ভঙ্গ করে আমাকে বাইয়াত দাও এবং তোমরা আমার আনুগত্য মেনে নাও। তাহলে দেখবে হুথিদের অবস্থা কি হয়।
অথচ তার বলা উচিত ছিল, “ভাই মহান আল্লাহ তাআ’লা আপনাদের উত্তম বনিময় দান করুন। আপনারা তো আমাদের অনেক আগ থেকেই জিহাদ ও হিজরতের ত্যাগ স্বীকার করে আসছেন। আল্লাহ তাআ’লা আপনাদের উত্তম কাজের বিনিময় দান করুন। আসুন, আমরা সকলে এক সাথে মিলে ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রু-ক্রুসেডার বাহিনী, নুসাইরী, রাফেজী ও মুরতাদ তাগুতদের মোকাবেলা করি। আমরা আমাদের আকাবীরে মুজাহিদীনদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সকল মুজাহিদদের নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বিচারবিভাগ কায়েম করার পক্ষে আছি। যার সাথে সম্পৃক্ত থাকবে কাছের দূরের ঐ সকল আকাবীরে মুজাহিদগণ যারা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের সত্যতা, যোগ্যতা ও খোদাভিরুতার মাধ্যমে জিহাদের ময়দানে তিকে আছেন। যাতে করে আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা নিয়োজিত হয় শত্রুর বিরুদ্ধে। আমরা কিছুতেই নিজেদের মাঝে মতানৈক্য সৃষ্টি করে আমাদের শক্তি নষ্ট করবো না। আমাদের মাঝে ফেতনা ছড়াতে দেবনা”।
যারা মুসলমানদেরকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করতে চায়, সাহায্য করতে চায় জালেমদের হাতে নির্যাতিত মুসলিমদের; তাদের উসলুব বা কর্মপন্থা এমনই হওয়া চাই।
আর সৌদি আরবের শাসক বর্গ পূর্ব থেকেই তো বৃটেন-আমেরিকার এজেন্ট এবং সেবাদাসের ভুমিকা পালন করছে। উপসাগরীয় অঞ্চলের তেল ব্যাবসায়ীরা, যারা আমেরিকাকে তাদের অভিভাবক ও মডেল হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং তাদের অনুগত দাস হয়ে কাজ করছে-ওরা কোন দিনও হারামাইন শরীফাইনকে রক্ষা করবে না। কারণ, তারা এবং তাদের পূর্বসূরিরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের দেশকে পূর্বেও বৃটিশদের কাছে বিক্রি করেছিল। আর বর্তমানে আমেরিকার কাছে বিক্রি করেছে। সাফাবি, রাফেজীরা যখন হারামাইন শরীফাইনের দিকে অগ্রসর হবে তখন তারাই সর্ব প্রথম পলায়ন করবে। যেমনিভাবে তাদের পূর্বে সাদ্দামের সাথে যুদ্ধে কুয়েতের আমীর পলায়ন করেছিল (এবং কিছু দিন পূর্বে আব্দে রব্বে মানসূর করেছে)। আরে, এরা তো নিজেদের রক্ষার জন্য আমেরিকার দিকে তাকিয়ে থাকে। অথচ আমেরিকা নিজ স্বার্থ ছাড়া কিছুই করে না। এই তো ইরান নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে আমেরিকার সাথে সমঝোতা করেছে। যাতে করে উপসাগরীয় অঞ্চলের শাসকদের যেদিকে খুশই সেদিকে পরিচালিত করা যায়।
হারামাইন শরীফাইনকে একমাত্র মুজাহিদগণই রক্ষা করবে। বিশেষ করে জাজিরাতুল আরবের মুজাহিদরা-যারা সাহাবায়ে কেরামদের উত্তরসুরী। পূর্ব পশ্চিমে ইসলাম প্রচারকদের উত্তরসূরী। তাদের উত্তরসূরীদের মধ্য থেকে নবি পরিবারের এবং গামেদ, জাহরার, বনী শাহর ও বনী হারব গোত্রের ১৫ জন আত্মোৎসর্গি “বাজ” টুইন টাওয়ার নামে পরিচিত আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্যিক টাওয়ারে শহীদী হামলা চালিয়ে পুরো কুফফার বিশ্বকে বলে দিয়েছে যে, সাবধান আমাদের প্রাণ কেন্দ্র হারামাইন শরীফাইনের দিকে চোখ তুলে তাকাবে তো চোখ উপড়ে ফেলবো। আল্লাহ তাআ’লা তাদের উত্তম প্রতিদান করুন, আমীন।
আর বর্তমানে এদের নেতৃত্বে আছে জাজিরাতুল আরবের তানজীম কায়েদাতুল জিহাদের ভাইয়েরা। এদের মাধ্যমেই মুজাদ্দিদুল মিল্লাত শায়েখ উসামা বিন লাদেন রহ. ফিলিস্তিনী ভাইদের সুসংবাদ দিয়ে বলেছেন, ‘হে ফিলিস্তিনি ভাইয়েরা! তোমাদের সুসংবাদ দিচ্ছি, আল্লাহর ইচ্ছায় ইসলামের বিজয় অতি নিকটে এবং ক্রমাগত ইয়েমেনের বিজয় অর্জিত হচ্ছে।ধী রে ধীরে ইয়েমেন বিজয়ের দিকে এগুচ্ছে।’’
সুতরাং হে মুসলিম উম্মাহ! হে সাহাব্যে কেরামের স্বাধীন, সম্মানিত গর্বিত উত্তরসূরীরা ! হে আমলদার উলামায়ে কেরাম! হে প্রভাব শালী, সম্মানিত গোত্রের লোকেরা! হে বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীরা! হে আত্মমর্যাদাশীল নেতারা! হে জাজিরাতুল আরবের মুসলমানরা! হে সারা দুনিয়ার সকল দেশের মুসলমানেরা! আপনারা নিজেদের মুজাহিদ ভাইদের রাফেজী, সাফাবীদের বিরুদ্ধে জাজিরাতুল আরব রক্ষার যুদ্ধে সাহায্য করুন।
রাফেজী, সাফাবীরা জাজিরাতুল আরবের পূর্বদিকে হতে কুয়েত, কাতীফ, দাম্মাম বাহরাইনের এবং দক্ষিণ দিকে নাজরান, ইয়েমেন এবং উত্তর দিকে ইরাক ও শামে পরিকল্পিত পদক্ষেপে অগ্রসর হচ্ছে; বরং সাফাবী নব্য সংগঠনগুলো তো এখন মদীনাতুর রাসুলে তৎপরতা শুরু করেছে। এইত হুথিরা সউদি সীমান্তে গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছে। আপনারা নিজেদের জান-মাল, তথ্য, পরামর্শ এবং দোআর মাধ্যমে নিজেদের মুজাহিদ ভাইদের সাহায্য করুন। আপনাদের উপর ধর্ম ব্যবসায়ী এবং পর্দার পিছনে ট্যাক্স গ্রহণকারীরা ক্ষমতা দখল করার পূর্বেই আপনারা স্বীয় মুজাহিদ ভাইদের সাহায্য করুন সম্মান বিনষ্ট হওয়ার আগেই। শয়তানের দলেরা একবার ক্ষমতা দখল করতে পারলে আপনাদের অবস্থাও ঠিক ঐরকম হবে যেরকম ইরাকে এবং শামে আমাদের ভাইদের হয়েছে। তারা সেখানে আমাদের ভাইবোনদের সম্মান ভূলুণ্ঠিত করেছে। হারামাইন শরীফাইনে সাহাবায়ে কেরাম ও উম্মাহাতুল মুমিনীনদের প্রকাশ্যে গালিগালাজ শোনার আগেই আপনারা মুজাহিদ ভাইদের সাহায্য করুন। নব্য সাফাবীরা ইরানে আপনাদের ভাইদের সাথে পূর্বেকার সাফাবীদের মত আচরণ করার পূর্বেই আপনাদের জাগতে হবে। সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার পূর্বেই তার সদ্ব্যবহার করুন।
আল্লাহর শোকরিয়া আদায়ের সাথে শেষ করছি। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক নবীজি, তাঁর পরিবার ও সাহাবাদের উপর।
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু